#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৮০.
“উজান অন্য কাউকে ভালোবাসে রামিম।ওর আর রিদির বিয়ে সম্ভব না।আমার ভাইয়ের উপর জোর করিয়ে কোনো ডিসিশন থপে দিতে পারবোনা আমি”
সবেমাত্র নিজ বাড়িতে সমুদ্রের সাথেই পা দিয়েছিলো চাঁদ।এবং ড্রয়িংরুমে উশ্মি আর রামিমকে বসা দেখে তাদের দিকে এগোলেই শুনতে পায় উশ্মির বলা উক্ত বাক্যটি।চাঁদ বিস্মিত নয়নে চেয়ে আছে উশ্মি আর রামিমের পানে।অতঃপর সমুদ্রকে মৃদুস্বরে বলে,
“তুই ভাইয়ের রুমে যা ফ্রেশ হ”
“ওকে চান্দু”
বলেই কাধে ব্যাগ নিয়েই সমুদ্র হাটা ধরে চৈত্রের রুমের দিকে।আর চাঁদ এসে বসে উশ্মির পাশে।উশ্মির পাশে চাঁদ বসতেই রামিম চাঁদকে জিজ্ঞেস করে,
“কেমন আছো চাঁদ?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া।আপনি কেমন আছেন?”
“এইতো আলহামদুলিল্লাহ তবে বউকে ছাড়া আর ক’দিন থাকবো?এবারতো আমার বউকে আমার কাছে ফেরত দাও”
চাঁদ হঠাৎ করেই জিজ্ঞেস করে,
“তা যাবে তবে আপনারা উজান আর রিদিকে নিয়ে কিছু বলছিলেন?ওদের বিয়ে টাইপ সামথিং?”
হকচকিয়ে রামিম বলে,
“হ্যা না মানে আসলে হয়েছে কী!”
চাঁদ গম্ভীরভাবে বলে,
“কোনো পেঁচানো কথা না ভাইয়া।যেটা সত্যি সেটাই শুনতে চাচ্ছি”
রামিমও বেশ থমথমেভাবে বলে,
“আসলে চাঁদ ডিসিশনটা আমাদের নয়,বড়দের।তারাই উজান আর রিদিকে একসাথে দেখতে চান।রিদি যখন এইটের এক্সাম দিলো নাইনে উঠবে তখনই সকলে ডিসিশন নেয় উশ্মিকে আমাদের বাড়ি আনবে আর রিদিকে তাদের বাড়ি নেবে।কিন্তু উশ্মি এখন বলছে উজান নাকি অন্য কাউকে পছন্দ করে”
চাঁদ সোজাসাপটাভাবে বলে,
“হ্যা উজানের গার্লফ্রেন্ড আছে।এবং ওদের সম্পর্কও অনেক বছরের তাছাড়া রিদিও উজানকে ভাই বাদে অন্য নজরে দেখেনা।আপনাদের ওদের নিয়ে আর আগানো উচিত হবে না ভাইয়া”
উশ্মি প্রশ্ন করে,
“কিন্তু এটা ফ্যামিলিতে কী করে বলবো?উজানতো এখনও পড়ছে।চাইলেইতো ওর বিয়ে দিতে পারছিনা”
“কেনো পারবেনা?উজান পড়ছে মানলাম কিন্তু ও তো জবও করছে পাশাপাশি।আর চাচ্চুরও তো টাকাপয়সা কম আছে এমন না।উজান অবশ্যই সুপাত্র।মেয়ের বাড়ি থেকে অমত করবেনা”
রামিম বলে,
“হ্যা তা অবশ্যই করবেনা কিন্তু বাবা-মা’দের কী বোঝাবো বুঝতে পারছিনা”
চাঁদ কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা করে বলে,
“আপাতত কাউকে নিয়েই কিছু ভাবার প্রয়োজন নেই।যেভাবে আছে সেভাবেই চলতে দিন।আমি দেখছি কী করা যায়”
হঠাৎ ই উশ্মি বলে,
“সবার জীবনের প্রব্লেম সর্ট আউট করছো অথচ নিজেরটার করছো না কেনো?”
গম্ভীরভাবে চাঁদ বলে,
“আমায় নিয়ে চিন্তার প্রয়োজন নেই।ভাইয়া আপনি উশ্মিকে নিয়ে আপনাদের বাড়ি ফিরে যান।বউ ছাড়া থাকা হয়তো কষ্টদায়কই”
“আমার ভাইও তো কষ্ট পাচ্ছে”
রামিমের কথা চাঁদের কর্ণকুহর হলেও সে না শোনার ভান ধরে উশ্মিকে বলে,
“ভালোমতো যেও আর গিয়ে কল দিও আমায়”
আর একমুহূর্ত সেখানে বসে না চাঁদ।উঠে যায় সেখান থেকে।অতঃপর নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দেয়।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
আজিমপুর কলোনির এক ফ্লাট পুরোটাই প্রণয়ের জন্য বরাদ্দ ছিলো।যেহেতু তার নিজস্ব বাড়িই ছিলো তাই কখনো প্রয়োজন পড়েনি এখানে আসার।তবে মাস দুয়েক পূর্বেই যখন তার বাবা তাকে বাড়ি হতে বিতাড়িত করলেন সে ভেবেছিলো বন্ধুদের সাথে থাকলে কষ্ট কিছুটা হলেও ভুলতে পারবে তবে মিরের থেকে প্রত্যাখ্যান পাওয়ার পর সে আর কারও কাছেই যায়নি।ইচ্ছা জাগেনি যাওয়ার।মেয়ে বান্ধবীরা যতই ঘনিষ্ঠ হোক সে কোনোদিনও একজন মেয়ের বাসায় থাকাকে প্রশ্রয় দেয়নি,কেনোনা তা তার স্বভাব বহির্ভূত।সে সর্বদাই ছিলো মেয়ে এলার্জে!টিক,তবে ব্যতিক্রম কেবল তার একান্ত নারীর ক্ষেত্রে।তাই রিহা আর পূর্ণতার বাসায়ও যাওয়া হয়নি।এবং রবিনের বাসায় সে নিজে থেকেই যায়নি।ছেলেটা যতবার তাকে বারণ করেছে সে শোনেনি উলটো তাকে দিয়ে কঠিন কঠিন কাজ করিয়েছে যা সে করতে চায়নি।তাই অপরাধবোধ থেকেই তার বাড়িও যাওয়া হয়নি।অতঃপর কয়েকদিন ভবঘুরের ন্যায় রাস্তায় রাস্তায় ই ঘুরে বেড়িয়েছে।চাঁদের বাসার নিচে গেলেও ভেতরে যাওয়ার সাহসটুকু তার কখনোই হয়নি।ফ্যামিলির সকলেই চাইলো তাদের ডিভো!র্স করাতে তবে প্রণয়ের গাম্ভীর্যতার ন্যায় তার জেদ সম্পর্কেও অবগত তারা।তাই চেয়েও ডিভো!র্সটা করাতে পারেনি।তিনদিন যখন বাইরে বাইরে ছিলো,কোনো খাওয়া নেই কিছু নেই যেকেউ দেখলে তাকে পাগল উপাধি ছাড়া আর কিছুই দেবেনা।পরবর্তীতে তার আর কিছু মনে নেই।সে নিজেকে আবিষ্কার করেছিলো তারই মেডিকেলের এক প্রাইভেট কেবিনে।সকলকে জিজ্ঞেস করার পরও সে জানতে পারেনি আদোতে জ্ঞান হারানোর পর কে তাকে হাসপাতাল অব্দি এনেছিলো।তবে তার জানতে ইচ্ছা হয় সেই উদার মানুষটার সম্পর্কে।দিন গেলো মাস গড়ালো নিজেকে সে ফের শক্তপোক্ত করলো।চলে আসলো এই এপার্টমেন্টে।প্রফেশনাল লাইফ তার ঠিক থাকলেও ঠিক ছিলোনা ব্যক্তিগত জীবন।সারাক্ষণ কাজের মাঝে থাকার পর যখন আবার একলা হয়ে যেতো সে কি যাতনা!ছেলেদেরও যে দুঃখ হয় এটা কেউ বোঝার চেষ্টা করেনা কেন?কেনো কেউ একটু বুঝতে চায়না তাদের?এসব ভাবতে ভাবতেই একটা ড্রয়ারের কাছে গিয়ে তা খুলে সেখান হতে ডিভো!র্স পেপার টা বের করে সেখানে চাঁদের সাইন দেখার পরেও মৃদু হাসে প্রণয়।কখনো কারো সামনে না হাসা ছেলেটাও একলা ঘরে খানিক শব্দ করেই হাসে।কন্ঠনালি কাপে তার,বিড়ালাক্ষীজোড়া বন্ধ হয়।অতঃপর গলা উচু করে লম্বা শ্বাস ভেতরে টেনে মুখ দ্বারা বায়ু নির্গত করে হাতে থাকা ডিভো!র্স পেপারটা আবারও ড্রয়ারে রেখে তারই পাশে সন্তপর্ণে পড়ে থাকা চাঁদের শাড়ি পরা এক হাস্যোজ্জ্বল ছবি হাতে নিয়ে সে পানে একধ্যানে পলকহীন মগ্ন হয়ে মনে মনে সে বলতে লাগে,
“কত বোকা আপনি চাঁদ।কী করে ভাবলেন যাকে বছরের পর বছর হৃদয়ে লালিত করেছি তাকে এক নিমিষেই দূরে সরে যেতে দেবো?নাইবা হলো আপনার আর আমার প্রেম।নাইবা পেলাম কাছে আপনায়।আপনাকে কাছে পাওয়ার জন্যতো ভালোবাসি নি।ভালো কিন্তু আমিও আপনাকে বেসেছিলাম।তা তো আপনি দেখতে পারলেন না?উপলব্ধিও কি করতে পারলেন না?আমি আপনার সাথে কী খারাপ কাজগুলো করেছি শুধু সেইটুকুই দেখলেন?ভালো কতখানি বেসেছি তা কেনো দেখতে পারলেন না?ওহ আমি প্রকাশ করতে পারিনা বলে?আহিনের মতো আপনার পিছু পিছু ঘুরতে পারিনি বলে?নাকি ওর ন্যায় কখনো মুখ ফুটে ভালোবাসি বলিনি বলে?আচ্ছা বলুন তো ভালোবাসি না বললে কি ভালোবাসা হয়না?সকলেতো জানতো আমি আপনায় ভালোবাসি।আপনি নিজেও জানতেন।তবুও বোঝার চেষ্টা করেননি।আমি ইন্ট্রোভার্ট বলে মানুষের ন্যায় বারবার আপনাকে বলতে পারিনি আমি আপনাকে ভালোবাসি চাঁদ।সকলেই দেখলো আপনার জন্য বহু ছেলে পাগল।তারা নাকি আপনাকে ভালোবাসে।ভালো আপনাকে বাসতেই পারে।তবে প্রণয়ের ন্যায় ভালো আপনাকে কেউ বাসতে পারবেনা।সবাই ভাবে আপনাকে কষ্ট দেয়ার পর আমি খুব ভালো ছিলাম।অথচ কেউ এটা দেখলোনা আমার হৃদয় দহন যন্ত্রণায় কতটা পু*ড়েছে।নিজের অন্তরালের কথাগুলো কাউকে বলতে পারিনা বলে কেউ তো একটুও বোঝার চেষ্টা করতোনা।কারো থেকে অবশ্য আশা করিও না।তবে আপনিও করেন নি চাঁদ।আপনার ভাগের দুঃখগুলো সকলেই দেখলো, বুঝলো।তবে আমারটা কাকে বলবো?আমিতো কাউকে বলতে পারিনা।বলার চেষ্টাও করিনি কখনো।আর সেদিন কিন্তু ইচ্ছা করে আপনাকে ধাক্কাও দেইনি।ভুলবশত হয়ে গিয়েছিলো।আপনাকে র*ক্তাক্তবস্থায় দেখে প্রাণপাখিতো আমারও উড়াল দিতে চেয়েছিলো চাঁদ।কই সেটাতো কেউ দেখলোনা?সেদিন আপনি কেনো পালালেন?না পালালেই কি হতোনা?হ্যা আমি জানি এবং মানিও আমার আচরণ আপনার প্রতি ঠিক ছিলোনা কিন্তু কেউতো জানার চেষ্টা করলোনা আমি কেনো অমন করেছিলাম?যেমনভাবে কেউ জানেনা সে রাতে আপনার আর অরণের মাঝে কী হয়েছে?কোন ছেলে নাকি আপনাকে পছন্দ করে ফেলেছে সেখানে?পছন্দতো অনেকেই করে চন্দ্রময়ী।তবে ভালো ক’জন বাসে?অথবা বাসতে পারে?আপনি চলে যাওয়ার পরও এমন একদিন যায়নি আপনার বিরহে আমি দিনযাপন করিনি।মনের অন্তরালে শতশত প্রশ্ন অথচ জবাব দেবার জন্য ছিলেন না আপনি,ছিলোনা অরণ।আপনি যদি আমার প্রাণ হন অরণতো আমার নিশ্বাস।তাকে সেভাবে আপনার দ্বারা ক্ষ*তিগ্রস্ত হতে দেখে এবং আপনার বিরুদ্ধে এতশত প্রমাণ এমনকি নিজ চোখে দেখা জিনিস আমিতো ভুলতে পারিনা।যতবার আপনার চেহারাটুকু নজরে এসেছে,আপনাকে যতবার দেখেছি বি*শ্রী মুহুর্তসমূহ চোখের সামনে বারংবার ভেসে উঠেছে।তা কী করে বলবো কাউকে?এগুলোতো বলা যায়না।অন্তত আমি চাইনা সেসব কেউ জানুক।আপনি পূত-পবিত্র,কলঙ্কহীন এক চাঁদ চন্দ্রময়ী।আপনাকে আমি নাইবা পেলাম।তবে থাকুক না আপনার পাশে আমার নামটা?মরণের আগ অব্দি আপনি কেবল প্রণয়ের হয়েই বাঁচলেন নাহয়?আমিও নাহয় দূরে থেকেও আপনার হয়েই বাঁচি।তবে অন্য কারো হওয়ার কথা কেনো বলেন?কেনো বললেন আজও?জানেন না এ হৃদয় ক্ষ*তবি*ক্ষত হয় আপনাকে অন্যের সাথে চিন্তা পর্যন্ত করলে?অতীতের জিনিসগুলোর পূণরাবৃতি কেনো ঘটাতে চাচ্ছেন?এত এত রহস্য আমি কী করে উন্মোচন করবো?কী করেই বা আমার বন্ধুকে আবার আগের ন্যায় দেখবো?কতকিছু যে করা বাকি!আপনার আমার ভুল বোঝাবুঝি থেকে শুরু করে কে কী করেছে,কেনো করেছে,সে রাতে কী হয়েছে এতগুলো জিনিস কী করে কী করবো আমি?কার থেকে সাহায্য চাইবো?তার মাঝে আবার কী বললেন?আমায় ডি!ভোর্স দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করবেন?ইহিম!তাতো সম্ভব না।অন্তত প্রণয় বেঁচে থাকতে চাঁদ অন্য কারো হতে পারেনা,হতে দেবোনা।আপনি সর্বদা মিসেস চাঁদ রুহায়ের প্রণয় হিসেবেই বেঁচে থাকুন আমি তাই চাই তাই চাই।আপনার নামের পাশে আমার মরণের পরেও প্রণয় নামটা জ্বলজ্যান্ত থাকুক তাই চাই”
মনের অন্তরালের কথোপকথন শেষ করে ছবিটা আগের জায়গায় রেখে ডিভো!র্স পেপার ফের হাতে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই চার টুকরায় কাগজগুলো ছিড়তে কালবিলম্ব করলোনা প্রণয়।অতঃপর লম্বা শ্বাস ফেলে মৃদু হাসলো।হাসলো তার ঐ বিড়ালাক্ষীদ্বয়ও।হৃদয়ে ছেয়ে গেলো প্রশান্তির রেখা।এখন আর কোনো বাধা নেই বিপত্তি নেই।চাঁদ নামক ঐ চন্দ্রময়ী কেবলই প্রণয়ের নামে লিখিত এবং আমরণ থাকবে।হৃদয় চাইলো মরণের পরেও যেনো সে তারই থাকে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
পরেরদিন সকাল হতে না হতেই চাঁদ বেরিয়ে গেছে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে এবং সেখান থেকেই উজানকে একটা রেস্টুরেন্টে ডাকিয়েছে কিছু আলাপ-আলোচনার জন্য।আগে থেকেই চাঁদ কয়েকটা মেয়ের সাথে কথোপকথন করছিলো।উজানকে দেখতে পেয়ে সে উজানকে বললো,
“তুমি একটু খালি কোথাও বসো ওদের সাথে কথা বলেই আমি আসছি”
“ঠিক আছে ভাবি”
মিনিট বিশেক পর চাঁদের ফোনে মেসেজ এলো উজানের,
‘ভাবি আমি কি চলে যাবো?’
উজানের মেসেজ পেয়ে সকলকে বিদায় জানিয়ে উজানের দিকে এগিয়ে চেয়ার টেনে সামনাসামনি বসতেই উজান চাঁদকে প্রশ্ন করে,
“হাতে কী হয়েছে তোমার ভাবি?”
উজানের করা প্রশ্নে নিজ ডান হাতের দিকে নজর যায় চাঁদের।সে পানে তাকাতেই তার স্মৃতিপটে ভেসে উঠে গতকাল বিকালের কিছু মুহুর্ত,
চাঁদ আর সমুদ্রকে একসাথে হাটতে দেখে লম্বা শ্বাস ফেলতে ফেলতেই সেদিকে এগোয় প্রণয়।অতঃপর হঠাৎ করেই দু’জনের সামনে গিয়ে দাড়াতে চাঁদের পা জোড়া থমকায়,হাসিও বদ্ধ হয়।মুখ হয় গোমড়াটে।ঘাসপানে নজর রেখেই সে উপলব্ধি করে সামনে থাকা মানুষটা তার কোনো এক সময়কার অত্যন্ত প্রিয়,তারই হৃদমানব।যার দেহের সুভাসেই তাকে চিনতে কালবিলম্ব হয়না চাঁদের।তবে এখন আর আগের ন্যায় অনুভূতি জাগেনা।নিজেকে শক্তপোক্ত করে উপরের দিকে দৃষ্টি দিতেই দৃষ্টিমিলন ঘটে দুজনার।প্রণয়ের পানে তাকাতেই বুকের ভেতর কিছু একটা খিচে ধরে তার।সে যে কি যন্ত্রণা!লোকটাকে আগেতো কখনো এভাবে দেখেনি?এমন কেনো লাগছে?তার শুভ্র মুখশ্রীর সেই উজ্জ্বল ভাবটা কোথায় হারিয়েছে?ফর্সা মুখটা হালকা শ্যাম বর্ণের হলো কেমোনে?চোখের নিচের কালচে দাগগুলো কি কিছু বলতে চাইছে চাঁদকে?যেই আঁখিদ্বয়ের প্রেমে চাঁদ পড়েছিলো সেই অসম্ভব সুন্দর বিড়ালাক্ষীজোড়া এতটা নিরলস কী করে হলো?এতটা প্রাণহীন কেনো লাগছে তাদের?গালভর্তি ঘন দাড়িসমূহের আড়ালেও যে ভেঙে যাওয়া চোয়াল চাঁদের ষষ্ঠ ইন্দ্রীয়তে পৌঁছালো দ্রুতই।তবে তাকেতো দাড়িহীন অথবা হালকা দাড়িতেই বেশ লাগে।ঘন দাড়িতেতো মানায় না!চুলগুলোও বেশ অগোছালো,অযত্নে বোধহয় বেড়ে উঠেছে তারা?কাটেনা নাকি?নিজের যত্ন কেনো নেয়না?একজন ডাক্তারের তো আগে নিজেকে পরিপাটি রাখা উচিত।এই প্রণয়কেতো চাঁদ চেনেনা।কেমন অদ্ভুত লাগছে।এত বেশি শুকিয়েছে কেনো?খায়না নাকি ঠিক মতো?অতঃপর প্রণয়ের জন্য তার চিন্তাগুলো নিজের বিবেকেই বাঁধলো চাঁদের।যেই ছেলে তার কথা বিন্দুমাত্র ভাবেনি।অপমান,লাঞ্চণা-বঞ্চণার কথা স্মরণে আসতেই চোয়াল জোড়া শক্ত হলো চাঁদের।দাঁতে দাঁত চেপে নাসারন্ধ্র প্রসারিত করে লম্বা শ্বাস নিলো।দৃষ্টিতে একরাশ ঘৃ!ণা প্রকাশিত পেলো।আর বেশিক্ষণ এই মানবের চোখে চোখ রাখা যাবেনা।ঐ বিড়ালাক্ষীজোড়া যে তার ধ্বংসের মূল!যেকোনো সময় তার জীবনে প্রলয় ঘটাতে তারাই সক্ষম,অন্য কোনো পন্থার প্রয়োজন নেই।তাই চাঁদ তার দৃষ্টি অন্যদিকে করলো।অতঃপর সমুদ্রের হাত ধরে অন্যদিকে যেতে নিলে ভেসে আসলো প্রণয়ের গম্ভীর কন্ঠস্বর,
“কেমন আছেন চাঁদ?”
প্রণয়ের প্রশ্নে চাঁদ থামতে না চাইলেও সমুদ্র থামলো।থেমে প্রণয়ের দিকে চেয়ে বললো,
“কে আপনি?আর চাঁদের নাম কী করে জানেন?ওয়েইট আপনার ক্যাট আইজ দ্যাটস মি…..”
সমুদ্রের কথা সম্পন্নের পূর্বেই চাঁদ বললো,
“লোকটাকে আমি চিনিনা জান।জানিনা কী করে আমার নাম জানলো।চলোতো তুমি”
চাঁদের কথায় বিস্ফোরিত নয়নে তার পানে তাকালো প্রণয়।তাকালো সমুদ্রও।সে আপাতত বোঝার চেষ্টা করছে চাঁদ করতে টা কী চাচ্ছে?সামনে থাকা লোকটা যে প্রণয় সেটা তার বিড়ালাক্ষীর মাধ্যমেই বুঝতে পেরেছে কিন্তু চাঁদের কাছ থেকে যেরকম তার সম্পর্কে সে শুনেছিলো এখন মোটেও তেমন লাগছেনা।কেমন একটা রোগা রোগা ভাব তাতে বিদ্যমান।এই লোক নাকি আবার ডাক্তার?তাও আবার সার্জন?নিজেরইতো চিকিৎসার প্রয়োজন।অন্যকে কী চিকিৎসা দেবে সে?এসব ভাবনার মাঝেই প্রণয়ের গম্ভীর কন্ঠস্বর ভেসে আসে কানে,
“কী যা তা বলছেন?আপনি আমায় চেনেন না?আর…..আর এই লোকটাকে জান বলছেন কেনো?কে হয় ইনি আপনার?”
“তার কৈফিয়ত আপনাকে অবশ্যই আমি দেবোনা।যান তো,আদারওয়াইজ আমি লোক ডাকাবো”
“ডাকান।আমিও দেখি আমার বউ আর কতক্ষণ অন্য এক ছেলের সাথে এঁটে থাকে”
প্রণয়ের মুখে প্রথমবারের ন্যায় ‘আমার বউ’ শুনে অনুভূতি শূন্য হলো চাঁদ।কিছুক্ষণের জন্য স্মৃতিশক্তি লোপ পেলো তার।ধ্যান ভাঙলো সমুদ্রের ডাকে,
“এই চাঁদ ইনি কি প্রণয় ভাই……”
সমুদ্রকে ফের মাঝপথে আটকে দিয়ে চাঁদ বলে,
“হ্যা সোনা এই লোকই আমার প্রথম স্বামী।তুমি বেশিকিছু ভেবোনা।আমাদের খুব শীঘ্রই ডি!ভোর্স হয়ে যাবে”
কপাল কুচকে প্রণয় বলে,
“হোয়াট ডু ইউ মিন বাই ডি!ভোর্স হয়ে যাবে?আমি না ম*রা অব্দি আমার থেকে মুক্তি পাবেন না আপনি।ডি!ভোর্সতো পরেরই বিষয়”
কিয়ৎক্ষণের জন্য আঁখি জোড়া বন্ধ করলো চাঁদ।অতঃপর ঘনঘন শ্বাস নিয়ে বললো,
“আমি কী করবো কী করবো না সেটা অবশ্যই আপনার থেকে জানবোনা আমি?”
“তা জেনেও কী করবেন?ছেলেটা কে হয় বললেন না?”
চাঁদ বেশ দ্রুত গতিতেই বললো,
“বয়ফ্রেন্ড।আমার পুরোনো প্রেমিক হয় সে।আর আপনাকে ডি!ভোর্স দিয়ে আমি ওকেই বিয়ে করবো”
চাঁদের কথা শুনে হাসতে গিয়েও হাসলোনা প্রণয়।তবে চাঁদের কথা তার কাছে কৌতুকের থেকে কোনো অংশে কম মনে হলোনা।সে গম্ভীরভাব বজায় রেখেই বললো,
“সিরিয়াসলি চাঁদ?আপনি বলছেন এই ছেলেটা আপনার বয়ফ্রেন্ড?তাও আবার পুরোনো?এগুলো আমার বিশ্বাস করা লাগবে?সরি আয় জাস্ট কান্ট”
গম্ভীরভাবে চাঁদও বললো,
“বিশ্বাস করা না করা আপনার নিজস্ব বিষয়।অবশ্য কোন কালেই বা আপনি আমায় বিশ্বাস করেছিলেন?এখন আর আপনার বিশ্বাস পাবার আশায় থাকিও না”
বলেই সমুদ্রের দিকে চেয়ে বললো,
“এই জান এই লোকটাকে দেখিয়ে দাওতো আমরা আসলেই রিলেশনে কিনা?”
সমুদ্র ভ্যাবাচ্যাকার ন্যায় কেবল চাঁদের পানে চেয়ে আছে।সে চাঁদের পরিকল্পনার কোনোকিছুই বুঝতে পারছেনা।মেয়েটা করতে কী চাচ্ছে আসলে?সমুদ্রকে নিজের পানে তাকাতে দেখে মনে মনে বেশ বিরক্ত হয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে চাঁদ বলে,
“ওহ সমুদ্র!আমি বুঝিয়েছি টেক মি ইন ইওর আর্মস।কোলে নাও আমায়”
চাঁদের কথা শুনে রীতিমতো অবাক হয় সমুদ্র।চোখজোড়া বড় বড় করে চাঁদের পানে তাকিয়ে কিছু বলতে গেলেই দেখে চাঁদের কব্জি ধরে তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কপাল বেশ কুচকে প্রণয় বলছে,
“আর ইউ ইনসেন চাঁদ?কী যা তা বলছেন আপনি?”
“বলছিই না করেও দেখাবো ওয়েইট”
কথাখানা বলেই প্রণয়ের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে সমুদ্রের দিকে চেপে এসে আঙুলের উপর ভর দিয়ে কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে কী যেনো বলে চাঁদ।আর সমুদ্র একবার চাঁদের দিকে তাকায় তো আরেকবার প্রণয়ের।সে আসলে বুঝতে পারছেনা তার কী করা উচিত?চাঁদ সমুদ্রকে তাড়া দিতে দিতে বলো,
“কাম অন সমুদ্র।এখান থেকে দ্রুত নিয়ে চলো আমায়।এই লোককে দুচোখে আর সহ্য হচ্ছেনা আমার”
চাঁদের কথা শুনে তৎক্ষনাৎ সমুদ্রের দিকে তেড়ে এসে তর্জনী দ্বারা তাকে শাসাতে শাসাতে প্রণয় বলে,
“খবরদার আমার বউয়ের দিকে যদি এক হাতও বাড়িয়েছেন তো।আপনার হাত আর হাতের জায়গায় থাকবেনা।জাস্ট স্টে আওয়ে ফ্রম মাই ওয়াইফ”
প্রণয়কে নিজের দিকে আসতে দেখে ভড়কে গিয়ে এক পা পিছু হটে সমুদ্র।সমুদ্রকে ভয় পেতে দেখে রাগী চোখে তার পানে চাঁদের তাকাতেই সমুদ্র এখনও ভাবছে তার কী করা উচিত?দুই দিকেই তার বিরাট বিপদ।আপাতত আল্লাহকে ডাকা ছাড়া আর কোনো উপায় সে দেখছেনা।এমতাবস্থায়ই চাঁদ সমুদ্রকে বলে,
“দেখো তুমি আমায় কোল…..”
চাঁদের কথা সম্পূর্ণ হবার পূর্বেই প্রণয় চাঁদের দিকে এগিয়ে এসে চাঁদের হাটুর নিচে একহাত আর অপরহাত কোমড়ে দিয়ে তাকে কোলে নিতে নিতেই বলে,
“নিয়েছি কোলে।এবার চুপ থাকুন।আর পরপুরুষ থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন”
চাঁদের বেশ মেজাজ খারাপ হয়।সে তার হাত-পা ছুড়তে ছুড়তে বলে,
“দেখি ছাড়ুন,ছাড়ুন বলছি।মেজাজ খারাপ করবেন না আমার”
“এই ছেলেটা কে সেটা বললেই ছেড়ে দেবো আই মিন নিচে নামিয়ে দেবো”
এবার চাঁদ বেশ রুষ্ট কন্ঠে সমুদ্রের দিকে চেয়ে বলে,
“দেখ সমুদ্র তুই যদি আমায় এখন এখান থেকে না নিয়ে গিয়েছিস আয় উইল জাস্ট কি*ল ইউ টু বি অনেস্ট!এই লোকের কাছ থেকে নামা আমায়!”
সমুদ্র প্রণয়ের কাছে গিয়ে চাঁদকে ছুতে গিয়েও প্রণয়ের প্রখর চাহনীর কাছে হার মেনে আকুতি করে বলে,
“ভাই ভাই!চাঁদকে আপনি ছেড়ে দিন।আপনার ই তো বউ?আমি কি মানা করেছি নাকি?আমি কে আপাতত সেটা বললে আপনার বউ আমায় জ্যা!ন্ত রাখবেনা।দয়া করে আমার উপর একটু রহম করে মেয়েটাকে নামিয়ে দিন।পরবর্তীতে আমার সম্পর্কে জানতে পারবেন।আপাতত বিষয়টাকে ক্লোজ করুন প্লিজ!”
সমুদ্রের কথানুযায়ী চাঁদকে বেশ সাবধানে নামানো মাত্রই বেশ শব্দ করেই জোরেসোরে তার বাম গালে এক চ!ড় পড়ে।গাল গরম হয়ে গিয়েছে তার।কান দিয়ে কেমন এক বাশির সুরের ন্যায় সিটি বাজছে।গাল তার বোধহয় জ্বলে গিয়েছে।এইটুকুনি মেয়ের গায়ে এত জোর কোত্থেকে এলো?বিস্মিত নয়নে সে গালে এক হাত রেখে চাঁদপানে তাকালো।চাঁদকে ক্রোধান্বিত দেখে হকচকিয়ে গেলো প্রণয় এবং সমুদ্র দুজনেই।সেখানে উপস্থিত সকলের নজরই এখন তাদের দিকে।চড়ের শব্দটা যে বেশ জোড়ালো বোঝাই যাচ্ছে।এমন কিছু হবে না প্রণয় ভেবেছিলো আর না সমুদ্র।সমুদ্র অবাক চোখে কেবল চাঁদপানেই চেয়ে আছে।আর চাঁদ প্রণয়ের নাক বরাবর তর্জনী এনে বেশ চেচিয়েই বলছে,
“একবারতো বলেছি আপনাকে জীবনে আর চাইনা!যে সম্মান আর বিশ্বাস করতে জানেনা সে ভালোও বাসতে পারেনা।এবং আমিও আপনাকে ভালোবাসিনা।ডিভো!র্স পেপারতো পাঠিয়েছিই!সাইনও আছে তবুও বেশরম,বেহায়া এবং বেলাজের ন্যায় পিছু কেনো নিচ্ছেন?আপনার ব্যক্তিত্বের সাথে এসব একদমই যায়না প্রণয়।মোটেও যায়না!নিজের প্রতি ঘৃ!ণা কেবলই বাড়াচ্ছেন বৈ কমাচ্ছেন না।আর কোন কোন স্তরে আপনি নামবেন বলুন তো?কেনো বুঝতে চাচ্ছেন না আপনাকে আমার লাগবেনা!আপনার পাশে আর থাকতে চাচ্ছিনা আমি।দূরত্ব বজায় রাখবেন আমার থেকে”
কথাগুলো বলেই সমুদ্রের হাত ধরে সেখান থেকে চলে আসে চাঁদ।আর প্রণয় কেবলই তাকিয়ে থাকে চাঁদের চলে যাওয়ার দিকে।
পার্কের অন্যপাশে গিয়ে সমুদ্র আর চাঁদ বসতেই চাঁদের হাত নিজের দিকে টেনে এনে সমুদ্র বলে,
“তোর হাতের দিকে তাকিয়েছিস একবার?কতটা লাল হয়ে গিয়েছে?এত জোরে কেউ কাউকে মা!রে?”
সমুদ্রের কথার প্রেক্ষিতে বেশ গম্ভীরভাবে চাঁদ বলে,
“কষ্টের বদলে কষ্ট এবং প্রতিশোধের বদলে প্রতিশোধে বিশ্বাসী আমি”
চাঁদের পাশে বসে থেকে দৃষ্টি ঘাসপানে রেখেই সমুদ্র ভরাট কন্ঠে বলে,
“তাই বলে তুই প্রণয় ভাইয়াকে থা!প্পড় দিবি চাঁদ?”
শেষের বাক্যখানা মনে আসতেই উজানের ডাকে ধ্যান ভাঙে চাঁদের,বাস্তবে ফেরে সে।অতঃপর হাত হতে দৃষ্টি সরিয়ে বলে,
“তেমন বিশেষ কিছুনা।চোট পেয়েছি খানিক”
উজান চাঁদের কথার প্রেক্ষিতে হাতের দিকে চেয়ে থেকেই বলে,
“ব্যান্ডেজ করা আবার তাতে র*ক্তের ছোপও আছে আর তুমি বলছো বিশেষ কিছুনা ভাবি?”
To be continued…..
#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৮১.
“আমি চাই তুমি রিদিকে বিয়ে করো ভাইয়া”
আকস্মিক চাঁদের কথা শুনে কপালে বেশ কয়েকটা ভাজ পড়ে মিরের।সে চাঁদের পানে সেভাবে চেয়ে থেকেই বলে,
“পাগল হয়েছো?কী যা তা বলছো?”
“পাগল আমি হইনি।পাগল হয়েছো একচুয়ালি তুমি”
“এটা হাসপাতাল চাঁদ,চেচিয়োনা”
“তোমার কেবিনে চলো”
“কিন্তু?”
“কোনো কিন্তু না।আজ আমি বলবো আর তুমি শুনবে।জাস্ট কাম উইথ মি”
বলেই মিরের হাত ধরে তার কেবিনের দিকে এগোয় চাঁদ।অতঃপর কেবিনে প্রবেশ করতেই দরজা আটকে দিয়ে মিরের চেয়ারে মিরকে বসতে বলে নিজে তার সামনাসামনি রাখা চেয়ারটায় বসতে বসতে বলে,
“অনেক তো হলো লুকোচুরি?এবার নাহয় তোমার মিথ্যা খোলস থেকে বের হও ভাইয়া?”
কপাল কুচকে মির বলে,
“বুঝিয়ে বলো এক্সেক্টলি কী বলতে চাচ্ছো তুমি?”
থমথমেভাবে চাঁদ বলে,
“সবার সামনে নিজেকে খারাপ প্রিটেন্ড করিয়ে আসলে কী প্রমাণ করতে চাও তুমি?এটাই যে তুমি খুবই বাজে ছেলে?একজন প্লেবয় অথবা মারাত্মক লেভেলের প্লেবয়?”
চাঁদের কথায় খানিক হেসে শান্ত কন্ঠেই মির বলে,
“প্লেবয় তো প্লেবয়ই চাঁদ।এবং আমি যে প্লেবয় সেটা তো আজ থেকে না বহু আগে থেকেই।সেই স্কুল লাইফ থেকেই বলতে পারো।হঠাৎ এসব বলছো কেনো?”
“স্কুল লাইফে তুমি কোনো প্রেম করোনি।আমায় শেখাতে আসবেনা”
এবারে মির অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলে,
“ঐতো কলেজ লাইফ থেকে”
“তুমি রিদিকে ভালোবাসো কবে থেকে সেটা বলো আগে?”
এবার মাত্রাতিরিক্ত বিরক্ত হয়ে মির বলে,
“ননস্টপ উদ্ভট কথাবার্তা বলছো কেন চাঁদ?তোমার মুখে কিন্তু এসব আজগুবি কথাবার্তা মানায় না”
“আমি মোটেও আজগুবি কথা বলছিনা।বিগত এক মাস যাবৎ সবটাই পর্যবেক্ষণ করেছি।তোমার এক্সদের সাথেও কথা বলেছি আমি।তাই বলছি কথা ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলবেনা।যা বলবে ডিরেক্ট বলবে এবং সবকিছু সত্যি শুনতে চাই আমি”
বেশ গম্ভীরভাবেই মির বলে,
“আগে নিজের সমস্যার সমাধান করো।আপাতত যাও আমার ডিউটির সময় হয়ে যাবে”
“হলে হোক।আমি আমার প্রশ্নের উত্তর না নিয়ে যাচ্ছিনা”
এবারে মির প্রশ্ন করে,
“সে সন্ধ্যায় কী হয়েছে তুমি বলেছিলে কাউকে?বলোনি তো”
“সেসব বলার অযোগ্য বলেই বলিনি”
“আমারটাও বলার অযোগ্য তাই বলছিনা”
এবারে চাঁদ শান্ত কন্ঠে বলে,
“রিদি তোমায় ভালোবাসে ভাইয়া”
মিরও শান্ত কন্ঠে গম্ভীরভাবে বলে,
“জানি”
“তাও এমন করছো?”
“কেমন করছি?অথবা আমার কেমন করা উচিত?তুমি এসবের পেছনে কেন লেগেছো?মানে তোমার আর তোমার হাজবেন্ডের কি কারো পেছনে না লাগলে ভালো লাগেনা নাকি?”
“প্রণয়কে মাঝে দিয়ে টানবেনা”
“প্রণয়কে কিছু বললেতো তোমার সহ্য হয় না অথচ আমার বন্ধুকেই তুমি শতশত কষ্ট দিচ্ছো”
“তুমি নিজে কী করেছো?বাড়িতে জায়গা দাওনি কেনো তাকে?”
“তখন যা ভালো মনে হয়েছে করেছি।সেটা আমার আর আমার বন্ধুর ব্যাপার।মাঝে দিয়ে নাক গলাবেনা”
“তুমিও আমার আর আমার হাজবেন্ডের ব্যাপারে নাক গলাবেনা।আমি যা বলছি তা শোনো”
“কী বলবে তাড়াতাড়ি বলো”
“রিদি তোমায় ভালোবাসে আর….”
“সে আমি বহু আগে থেকেই জানি।কিন্তু এটা ওর নিছকই ভালোলাগা বৈ কিছুনা।ওর মতো শান্তশিষ্ট মেয়েকে আমার মতো প্লেবয় ডিজার্ভ করেনা।তাছাড়া ও আমার বয়সেও খুব ছোট।এসব জিনিসে ওকে আস্কারা দেবেনা চাঁদ”
“তুমি ওকে ডিজার্ভ করোনা?তাহলে কি উজান করে?”
এবারে খানিক হকচকায় মির।সে চাঁদের দিকে চেয়ে কপাল সামান্য কুঞ্চিত করে বলে,
“মাঝে দিয়ে উজান আসলো কেনো?”
“তুমি যে উজান আর রিদির বিয়ে ঠিক করা বলেই রিদির দিকে এগোচ্ছো না তা ভালো করেই জানি আমি।তবে নিজেকে কেনো সকলের সামনে খারাপ প্রমাণিত করেছো?”
“আন্দাজে ঢিল মারা বন্ধ করো চাঁদ।সবসময় ঢিল কিন্তু সঠিক জায়গায় লাগেনা।রায়হানের বেলা লাগলেও এবার আর লাগবেনা”
“রায়হান ভাইয়ার কথা তুমি কী করে জানো?”
“শিফা রায়হানকে আর রিদি আমাকে পছন্দ করে সেটা আমি আগে থেকেই জানি।এখন কীভাবে জানি সেটা জিজ্ঞেস করবেনা।আর বাচ্চা মেয়েগুলো অতিরিক্ত পাকনা।বেশি পাকনামি স্বাস্থ্যের জন্য হানিকারক সেটা না বুঝিয়ে তুমি উলটো কার সাথে কার সেটিং করা যায় সে ধান্দায় আছো?নিজের আর প্রণয়ের সম্পর্কটাকে সুযোগ দিচ্ছো না কেনো?নিজেদের মাঝেকার ভুল বোঝাবুঝি দূর করছোনা কেনো?তোমার কথাগুলো প্রণয়কে বলো আর তারটাও শোনো।দুই পক্ষ থেকেই সবটা শুনে তারপর ডিসিশন নাও।কিন্তু তুমি সেসব না করে অন্যের জীবন নিয়ে পড়ে আছো।এই স্বভাব কি যাবেনা নাকি?এত দয়ালু সাজারতো প্রয়োজন নেই”
“আমাকে নিয়ে ভাবা লাগবেনা।তুমি আমার ভাই ভাইয়া।তোমার ভালোমন্দ আমিই দেখবো।যেহেতু আমাকে ছোট বোনের মর্যাদা দিয়েছো।সে হিসেবেই তা পালন করছি।নিজের ভাইয়ের জীবনতো আর সাজাতে পারলাম না তোমার টাই নাহয় একটু গুছিয়ে দেই”
“অতো প্রয়োজন নেই।ঐ বাচ্চা মেয়ের সাথে আমার যায়না”
“বাচ্চা মেয়ে,বাচ্চা মেয়ে যে করছো অথচ সেই বাচ্চা মেয়েকেই যে মন দিয়েছো তা তোমার চোখ দেখলেই বোঝা যায়”
কথাখানা শুনতেই দৃষ্টি এলোমেলো হয় মিরের।সে খানিক কেশে বলে,
“অথচ নিজের চোখই তুমি পড়তে পারোনা”
“নিজের চোখ কী করে পড়ে জানিনা।সেসব রাখো”
“নিজের প্রসঙ্গ আসলে এভোয়েড করছো আর আমার পেছনে লেগেছো কেনো?”
“দেখো ভাইয়া,তুমি যে একটা রিলেশনও করোনি।সকলের সামনে প্রিটেন্ড করেছো তা আমি জানি।এবং প্রমাণও আছে আমার কাছে।এবার বলো এসব করে লাভটা কী হলো?”
থতমত খেয়ে মির কিছু বলতে নিলেই চাঁদ গম্ভীরভাবে বলে,
“অনেক মিথ্যা শুনেছি।আর কোনো মিথ্যা শুনতে চাচ্ছিনা”
“আমিও কিছুই বলতে চাচ্ছিনা।তুমি তোমার কাজে যাও।আমাকেও কাজ করতে দাও”
“উজান আর রিদির বিয়েটা সম্ভব না ভাইয়া।উজানের গার্লফ্রেন্ড আছে।আর মেয়েটাকেও ও বেশ ভালোবাসে।রিদিও তোমায় ভালোবাসে।তুমিও বাসো তাহলে সমস্যা কোথায়?”
হঠাৎ করেই চেয়ার ঘুরিয়ে চাঁদের দিকে পিঠ করে গম্ভীরভাবে মির বলা আরম্ভ করে,
“সমস্যা আসলে কোথাও না চাঁদ।সমস্যা আমাতে।আমি রিদির যোগ্য নই।আর রিদির সাথে আমার যায়ও না।মেয়েটা আমার থেকে দশ বছরের ছোট বুঝতে পারছো?দশ বছর!প্রণয় বা ওর কোনো ভাই ই আমাদের বিষয়টা মানবেনা।যেখানে পরিবারই ওদের বিয়ে ঠিক রেখেছে আমি আর কী বলবো অথবা কী বলা উচিত বলে তুমি মনে করো?আর রইলো রিদির ভালোবাসা।ওটা অ্যাট্রাকশন বৈ কিছুনা।ক্রাশ খেয়েছে জাস্ট,এটাকে আর যাই হোক ভালোবাসা বলেনা”
“ভালোবাসা কাকে বলে কাকে বলেনা শেখাতে আসবেনা আমায়”
“হ্যা তুমিতো ভালোবাসায় পিএইচডি করেছো তোমায় আর কীই বা শেখাবো আমি?”
“রিদি নাইনটিন প্লাস ভাইয়া ক’দিন বাদে বিশে পা দেবে।ও তোমার উপর ক্রাশ খেয়েছে নাইন না টেনে পড়াকালীন।তুমি যখন প্রায়শই প্রণয়দের বাড়ি যেতে।আর ও একবার ছুটি কাটাতে এসেছিলো তখন তোমায় দেখে”
“সেসব আমি জানি।মেয়েমানুষের নজর দেখলেই বোঝা যায় কে কীভাবে তাকাচ্ছে”
“বেশি প্লেবয়গিরি দেখাতে এসোনা।কাজের কথায় আসি।সেই তখন থেকে তোমায় পছন্দ করে এরপর এখন ক’দিন বাদে বিশে পা দেবে সেইসাথে এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষেও উঠে যাবে।এখন নিশ্চিয়ই ও বাচ্চা না?আমি কিন্তু তোমার বন্ধুর প্রেমে পড়েছিলাম আঠারো বছর বয়সে।সেই তুলনায় রিদি যথেষ্ট বড়”
মস্কারা করে মির বলে,
“আমার বন্ধুর প্রেমে যে পড়েছো স্বীকার করলে তবে?”
“ইম…..মাঝে দিয়ে উল্টাপাল্টা কথা ঢুকাবেনা।রিদি তোমায় ভালোবাসে তা আমি শতভাগ শিওর”
“ভালোবাসলেই যে তাকে পাওয়া লাগবে এমন তো কোনো কথা নেই চাঁদ”
“তোমাদের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেনো পাবেনা?আমার আর প্রণয়ের মতো কাহিনী করোনা।মনের অন্তরালে কথা রেখে দিয়ে পরে ভোগা সত্যিই কষ্টদায়ক।আর আমি চাইনা আমার মতো কোনোকিছু রিদির সাথে হোক।সেজন্যই বলছি বিয়েটা করো।মেয়েটাকে প্রোটেক্ট করো”
চাঁদের দিকে চেয়ার ঘুরিয়ে কপাল কুচকে মির বলে,
“প্রোটেক্ট করবো মানে?”
“ওর লাইফ ভীষণ রি*স্কে ভাইয়া।ঐ মেডিকেল সম্পর্কে এমন এমন তথ্য আছে যা তুমি জানোনা।আমি আপাতত কিছুই বলতে পারছিনা কিন্তু দু’জন যেহেতু ভালোই বাসো তাহলে সমস্যা কোথায় বিয়েতে?”
দৃষ্টি চাঁদ হতে সরিয়ে ডেস্কে রাখা পানির গ্লাসের দিকে নিক্ষেপ করে নিচুস্বরে মির বলে,
“ওর পরিবার মানবেনা চাঁদ।তাছাড়া প্রণয়ের পরিবার বা প্রণয়ও মানবেনা”
“মানবে সকলেই।তুমি বেশি ভাবছো।উজান রিদিকে কখনোই ভালোবাসেনা।ওরা দুজন একে অপরকে ভাইবোন ব্যতীত আর কিছুই ভাবেনা।শুধু শুধু সামান্য একটা জিনিস নিয়ে নিজের ক্যারেক্টারের যাচ্ছেতা অবস্থা বানিয়ে দিলে?তুমি কি পাগল?”
বেশ মৃদুকন্ঠে মির বলে,
“তুমি কিছুই জানোনা চাঁদ।আমি সত্যিই প্লেবয়।মানে হয়তো এখন না কিন্তু একসময় ছিলাম।ছিলাম বলতে কলেজ লাইফে।বাট ঐটা শুধু ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ।প্রেম শুধু একটাই করেছিলাম তাও আবার নতুন নতুন যখন কলেজে উঠি তখন।বাট ঐটা টেকেনি।এরপর এমনিতে মেয়েদের সাথে কথা হতো কিন্তু প্রথমবারের ন্যায় যখন সেই ফোরে পড়া বাচ্চা রিদিকে কিশোরী বয়সে দেখি।কত হবে তখন?বারো কী তেরো বছর।সেভেনের শেষের দিকের কথা।এইটে উঠবে বোধহয়।প্রথমে ক্রাশ আমিও খেয়েছিলাম।বাচ্চা একটা মেয়ে।মিষ্টি আচরণ,খুব কম কথা বলে ও।ভালোলেগেছিলো কিন্তু আমাদের এজ ডিফারেন্সটা অনেক বেশি চাঁদ।সেজন্য এসবে তোয়াক্কা দিইনি। কিন্তু সেই যে মেয়েটা মনে জায়গা নিলো মানে কিছুতেই ভুলতে পারছিলাম না।তো সেটা ভোলার জন্যই আরেকটা রিলেশনে যাই আমি।তখন মেডিকেলে পড়ি।মেইবি সেকেন্ড ইয়ারে উঠে গিয়েছিলাম।ওকে ভোলার জন্যই একেরপর এক রিলেশনে জড়াই বাট ফেসবুক কেন্দ্রিকই ছিলো সব।দেখাসাক্ষাৎ কিছুইনা ফোনেও কথা বলতাম না।কিন্তু রিদিকে ভোলাই যাচ্ছিলোনা।পরে যখন বুঝলাম মেয়েটাকে ভালোবাসি তখনই প্রণয় আর রামিমের থেকে শুনি রিদি আর উজানকে ওদের ফ্যামিলি নাকি একসাথে দেখতে চায়।এতে করে মনে বেশ আ!ঘা!ত লাগে।তাছাড়া এতদিনে প্রণয়সহ সবাই জানতো মির একটা প্লেবয়।তো যেচে তো আর প্রণয় তার সুশীল বোনকে একটা প্লেবয়ের হাতে তুলে দেবেনা?রিদিও বা কি বয়সে বড় কাউকে মেনে নেবে?সেসব কারণেই প্লেবয় ট্যাগ নিজের থেকে সরাইনি।দিনকে দিন পাক্কা প্লেবয় হয়ে যাই তবে হ্যা সবই মিথ্যা ছিলো।বাচ্চা মেয়েটার প্রেমে সেই যে পড়লাম আর উঠতেই পারলাম না।কিন্তু ওর আর আমার কোনোকিছুই সম্ভব না।আমি জানি প্রণয় জেনেশুনে রিদিকে আমার হাতে তুলে দেবেনা”
“প্রণয় রিদিকে তুলে দেওয়ার কে?রিদি তোমায় ভালোবাসে তুমি বাসো।উজানও আরেকজনকে বাসে।এবার তোমাদের সকলের বিয়ে হতে কে আটকায় তাও আমি দেখে নিচ্ছি”
“পাগল হয়েছো?”
“ওহ জাস্ট শাট আপ ভাইয়া।এবার আমি যা করবো তাতে কোনোপ্রকার বাঁধা তুমি দেবেনা।কারণ তোমার বলা সবকিছুই আমার ফোনে রেকর্ডেড আছে।বেশি তিড়িংবিড়িং করবে তো তোমার ফ্রেন্ডসার্কেলে সবাইকেতো এটা শোনাবোই সেই সাথে রিদিকেও শোনাবো।তারপর তোমার ইজ্জ!ত কই থাকে দেখছি আমি”
চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে হকচকিয়ে মির বলে,
“এই চাঁদ!ঘসেটি,ঘসেটি কোথাকার!তুমি তো দেখছি সত্যিকারের ঘসেটি বেগম!এসব কিছুই করবেনা তুমি”
“কিছুই করবোনা জাস্ট বলো যে রিদিকে তুমি বিয়ে করবে এবং আজই তা করবে!”
“কী যা তা বলছো?”
মিরের প্রশ্নে নিজের ফোন মিরকে প্রদর্শন করাতে করাতে চাঁদ জিজ্ঞেস করে,
“করবে কিনা বলো?”
কপাল কুচকে মির বলে,
“তুমি এর পরিণতি কী হবে ভাবতে পারছোনা চাঁদ”
“অতোকিছু ভাবতে চাইও না।বিয়ে করো নাহয় তোমার রহস্য ফাস করে দেবো”
চোখজোড়া বুজে লম্বা শ্বাস ফেলে দুই হাত ডেস্কের উপর রেখে মির বলে,
“করবো তবে এগুলো বিষয় কাউকে বলবেনা এমনকি রিদিকেও না।আমি চাইনা রিদি জানুক আমি ওকে ভালোবাসি”
“কিন্তু কেনো?বিয়ের পরে জানলে সমস্যা কী?”
নজর চাঁদের দিকে নিক্ষেপ করে মির বলে,
“সমস্যা আছে বলেই বলছি।সময় হলে আমি নিজে থেকেই বলবো কিন্তু তুমি আপাতত কাউকেই কিছু বলবেনা।তোমার আর আমার মাঝেই বিষয়গুলো সীমিত থাকবে ওকে?”
“চিন্তা করো না ভাইয়া।এই চাঁদের পেটে যে কতজনের কত কথা লুক্কায়িত,তা কেবল আমিই জানি”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সকাল দশটা,
প্রত্যেক দিনের ন্যায় আজও প্রণয় চাঁদকে লুকিয়ে চুরিয়েই দেখার জন্য নিউরোলজি বিভাগে কোনো এক বাহানার দরুনই এসেছে।তার এখানে কোনো কাজ নেই তবুও সে এসেছে ইন্টার্ন ডাক্তারদের সাথে কথা বলতে।তার যেই স্বভাব সেই স্বভাবই বহাল রইলো।কোনো মেয়ে ডাক্তারের সাথেই সে কোনোরূপ কথোপকথন করলোনা।যা করলো ছেলে ডাক্তারদের সাথেই।একজন ছেলে প্রণয়কে কিছু বলতে নিলেই সে তাকে হাত দ্বারা বাঁধা প্রদান করে উদ্ভ্রান্তের ন্যায় চাঁদের সাথে মির,রিহা আর মিরাকে যেতে দেখে কপাল সামান্য কুঞ্চিত করলো।অতঃপর হুট করেই নিজেও কাউকে কিছু না বলে তাদের পিছু নিলো।
কাজী অফিসের সামনে এসে সকলকে থামতে দেখে কপাল অতিরিক্ত মাত্রায় কুচকায় প্রণয়ের।বুকের ভেতরের হৃদযন্ত্রটা বেগতিক বেড়েছে তার।ভয় হচ্ছে খানিক।চাঁদ কি সত্যি সত্যি বিয়ে করতে এসেছে?সেই ছেলেটাকেই কি বিয়ে করবে সে?কিন্তু তাদেরতো ডিভো!র্স হয়নি।নাহ!তার চন্দ্রময়ীকেতো সে অন্যকারো হতে দেবেনা।এটা হতে পারেনা।নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণে রেখে গম্ভীরভাবেই সেও এগোলো কাজী অফিসের ভেতরে।ভেতরে গিয়ে বন্ধুবান্ধবসহ ভাইবোনদের দেখে বেশ অবাক হয় প্রণয়।এতজনকে একসাথে আনার মানে কী?কিছু জিজ্ঞেস করতে নিলেই চাঁদের পাশে সমুদ্রকে দেখে মেজাজ আরও খারাপ হয় প্রণয়ের।সে ক্ষীপ্র গতিতে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে এসে তার কাধের দিকের বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,
“সমস্যা কী?আপনায় বলেছিলাম না আমার চাঁদের থেকে দূরে থাকবেন?আপনার সাহস হলো কী করে তাকে বিয়ে করতে আসার?সে এখনও আমার স্ত্রী।ডিভো!র্স হয়নি আমাদের।আর না তাকে আমি কোনোপ্রকারের ডিভো!র্স দেবো।সো চাঁদের স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন।আর তোরা?তোরাই বা কী করে ওদের বিয়ে দিতে এভাবে সঙ সেজে সকলে এসেছিস?আর রিদি?রিদি এখানে কী করছে?বাচ্চাদের এখানে কীসের কাজ?”
হঠাৎ প্রণয়ের আগমনে হকচকায় সকলে।মিরের চোখেমুখে আ!তংক।এবার কী হবে কিছুই বুঝতে পারছেনা সে।চাঁদের দিকে তাকাতেই চাঁদ তাকে আস্বস্ত করে প্রণয়ের পানে চেয়ে খানিক উচ্চস্বরেই বললো,
“না মানে সমস্যা কী আপনার?স্বভাব কি কোনোদিন যাবেনা নাকি?মানে যখন যা ইচ্ছা না জেনেশুনে বলতেই হবে আপনাকে?আর আপনি এখানে কী করছেন?ফলো করে এসেছেন?”
“হ্যা ফলো করেই এসেছি।ফলো না করলেতো দেখা যেতো আপনি আমার সতীন নিয়ে এসে পড়েছেন আর আপনার সাথে মিলিত আমারই বন্ধুবান্ধবসহ ভাইবোনেরাও”
“দেখুন এবার কিন্তু বেশি বেশি হচ্ছে প্রণয়”
“আপনি কেনো বেশি বেশি করছেন?আপনার সাথে তো থাকছিনা।না থাকছি নিজের বাড়িতে।একাই থাকছি।শুধু এইটুকু চেয়েছি যে আমার নামটা আপনার পাশে থাকুক।কিন্তু আপনি এরকম করছেন কেনো?শুনুন!কোনো ডিভো!র্স হচ্ছেনা আমাদের।আমি ওসব পেপার্স ছিড়ে ফেলেছি।আমার থেকে দূরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পালটে ফেলুন।এ জনমে তা হচ্ছেনা,হবেনা কখনো”
চাঁদ মেজাজ খারাপ করে বলে,
“আপনি থামবেন?নিজের বাড়ি পেয়েছেন নাকি?আশেপাশে লোকজন দেখছেন না?”
সমুদ্রের দিকে চেয়ে থেকে চাঁদকে প্রণয় বলে,
“আপনি এই ছেলেটার সাথে সবসময় কী করেন?দেখুন ওসব বিয়ে টিয়ে…..”
আকস্মিক চাঁদ প্রণয়কে টেনে এনে একটা চেয়ারে বসায়।তাকে কিছু বলতে না দিয়েই হিজাবের পাশে থাকা ওড়নাটা নিয়ে প্রণয়ের হাত বাঁ!ধতে আরম্ভ করলেই প্রণয় কপাল কুঞ্চিত করে বলে,
“করছেন কী?”
“চুপ,একদম চুপ!অনেক বেশি বেশি করেন আপনি।আপনার জন্য আমার সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে যাক তা আমি চাইনা”
“দেখুন আপনি বি….”
প্রণয়ের কথা সম্পূর্ণের পূর্বেই প্রণয়ের হাত বেঁ!ধে তার দিকে ঘেষে দুই হাত দ্বারা প্রণয়ের মুখ চে!পে ধরে চাঁদ বলে,
“হ্যা বিয়ে করে পুরো গোষ্ঠী উদ্ধার করে ফেলবো।আপনি এক নম্বর জামাই না?আরও তিনটা বিয়ে করবো আমি।অতঃপর ছেলেদের মতো চারটা বিয়ে ফরজ করবো।খুশি?এবার চুপ থাকুন তো”
বলেই খানিকটা আরও প্রণয়ের দিকে চেপে আসে চাঁদ।প্রণয়কে নড়তে চড়তে পর্যন্ত দিচ্ছেনা।অতঃপর কাজীর দিকে চেয়ে বলে,
“আংকেল আপনি বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।এখন আর কেউ বাঁধা দেবেনা।এই তোমরা জলদি করো তো এই লোককে আর কতক্ষণ ধরে রাখবো আমি?”
প্রণয় এবার খানিক নড়ার চেষ্টা করলে চাঁদ বিরক্ত হয়ে বলে,
“এমন করছেন কেনো?”
প্রণয় চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করে কী হচ্ছে এখানে?চাঁদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে মৃদুকন্ঠে বলে,
“সবসময়ের মতো বেশি বোঝা বন্ধ করুন প্রণয়।এখানে অবশ্যই বিয়ে হচ্ছে তবে সেটা আমার নয়।মির ভাইয়া রিদি,উজান আর ইয়ানার”
কপাল কুচকে প্রণয় কিছু বলতে চাইলে চাঁদ প্রণয়ের মুখে রাখা হাতের বাঁধন আরও শক্ত করে বলে,
“একদম চুপ বেশি কথা বলবেন না।চুপচাপ বসে থাকুন এবং যা হচ্ছে হতে দিন”
প্রণয় এবার হালকা নড়ে তার বাঁধা হাত দ্বারা চাঁদের কোমড়ে হালকা টান দিতেই টাল সামলাতে না পেরে আকস্মিক প্রণয়ের উরুর উপর বসে পড়ে চাঁদ।অতঃপর বিরক্ত হয়ে উঠতে নিলেই ওড়নার বাঁধন চট করেই খুলে চাঁদকে টেনে নিজের কোলের উপর বসাতেই চাঁদের শরীরের প্রতিটা লোমকূপ তৎক্ষনাৎ দাঁড়িয়ে যায়,দাড়ায় প্রণয়ের নিজেরও।হৃদয় থমকায় প্রণয়ের।চাঁদের নিশ্বাস যেনো গলার কাছে এসে আটকে গেছে,বাইরে নির্গত হচ্ছেনা আর!কি দমবন্ধক!র পরিস্থিতি।হাসফাস লাগছে।সেইসাথে মাত্রাতিরিক্ত লজ্জাও সে পাচ্ছে।যার দরুন প্রণয়ের মুখে দিয়ে রাখা হাতদুটো আলগা হয়ে আসে।এবং প্রণয় সুযোগ বুঝে চাঁদের হাত সরিয়ে চাঁদের কাধের উপর নিজের থুতনী রেখে কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে,
“কার বিয়ে হচ্ছে কার হচ্ছেনা তাতে কিছুই যায় আসেনা।আপনি কেবল আমার থাকেন তাতেই চলবে”
প্রণয়ের ফিসফিসানো সহ উষ্ণশ্বাস চাঁদের ঘাড়ে পড়তেই কিঞ্চিৎ নড়ে চড়ে উঠে সে,চোখজোড়া বন্ধ করে ঘনঘন শ্বাস নিতে গেলেই শুনতে পায় প্রণয়ের পুরোনো প্রেমময়ী এক বাক্য,
“সে যখন লজ্জায় লালরাঙা হয়,প্রণয় হয় তখন সবচাইতে বেহায়া,নির্লজ্জ পুরুষ!”
প্রণয়ের ফিসফিসানো কন্ঠস্বর,সেইসাথে উষ্ণশ্বাসের গতি যত দ্রুত হচ্ছে ততই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসছে চাঁদের।শরীর অসাড় হয়ে এসেছে।নড়তে চড়তে পারছেনা,স্থির হয়ে যেনো জমে গিয়েছে চাঁদ।চোখজোড়া বন্ধ করে কেবলই ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে সে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
কাজী অফিস থেকে সকলেই হাসিমুখে বের হলো।তবে চুপচাপ কেবল প্রণয় আর চাঁদ।রিদিও বেশ জড়োসড়ো হয়ে চাঁদের সাথেই সেঁটে আছে।তা দেখে মৃদু হেসে চাঁদ বলে,
“এবার ভাবিকে ছেড়ে বরের কাছে যাওতো রিদু।আর মিরাপুকে নিয়ে টেনশন করোনা।বেশ ভালো ননাস পেয়েছো।তোমার শ্বশুর-শাশুড়িও আমার শ্বশুর-শাশুড়ির ন্যায়ই যথেষ্ট ভালো।সুখী এক পরিবার পাবে।এবার মিরাপুর সাথে যাওতো দেখি।আর কোনোপ্রকার চিন্তা করবেনা।সব ঠিক হবে।আমি ঠিক করে দেবো”
বলেই রিদিকে মিরা আর মিরের মাঝ বরাবর দাড় করিয়ে এগিয়ে যায় উজান আর ইয়ানার দিকে।অতঃপর ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“তুমিও একদম টেনশন করবেনা।নির্দ্বিধায় চৌধুরী বাড়ি যাও।সেখানে কেউই তোমায় পর করবেনা।আপন করেই নেবে।যেমনভাবে আমায় মেয়ে করে নিয়েছিলো ঠিক সেভাবে তোমায়ও নেবে।একদম চিন্তা করবেনা।রিহাপু তুমি ওদের সাথে যাও।পরে যদি সমস্যা হয় আমায় কল দিও”
রিহা জিজ্ঞেস করে,
“তুমি কোথায় যাচ্ছো?হাসপাতালে?”
“না,একটু কাজ আছে যাও তোমরা।জলদিই ফিরবো”
“ঠিক আছে সাবধানে যেও”
সকলের থেকে বিদায় নিয়ে হুট করেই মেয়েটা কোথায় যাচ্ছে?এই মেয়ের সাহসের তো কোনো ঠিক ঠিকানা নেই।এরূপ বিভিন্ন জিনিস চিন্তা করতে করতেই প্রণয়ের নজর থেকে অনেকখানি দূরে চলে গিয়েছে চাঁদ।বাকিরাও যারযার গন্তব্যে ছুটে চলেছে।আর প্রণয় ভাবতে ব্যস্ত,এই মেয়েকে আর একা ছাড়া ঠিক হবেনা।কখন কোন বিপদে পড়ে ঠিক নেই।বউ তার দুশমন তো কম জোটায়নি।আবার সামনে চলে এসেছে মিডিয়ারও।বিভিন্ন দিক থেকেই চাঁদের সংকটের আশা।তাই প্রণয় ফের পিছু নিলো চাঁদের।অতঃপর ফায়ানের বাসার সামনে আসতেই প্রণয় আড়ালে লুকালো এবং দেখলো চাঁদ ফায়ানের বাসার ভেতরেই ঢুকছে।কিন্তু ফায়ানের সাথে তার কী কাজ?অরণ?অরণ প্রাসঙ্গিক কিছু?ফায়ানও এখন অরণের সাথে দেখা করতে দেয়না প্রণয়কে।তাই বেশ হতাশ ভঙ্গিতেই চাঁদের যাওয়ার দিকে কেবল চেয়ে রইলো সে।কিছুক্ষণ সে পানে চেয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাটা ধরলো হাসপাতালের দিকে।
ফায়ানের বাসার কাছে এসে কলিংবেল চাপতেই ফায়ানের মা এসে দরজা খুলে দিতেই চাঁদ তার সাথে সালাম আর কুশল বিনিময় করে ভেতরে ঢুকেই ফায়ানের রুমে আসে যেখানটায় অরণকে রাখা হয়েছে।ফায়ান চুপচাপ বসে আছে তার রিডিং টেবিলে,জানালাপানে মুখ করা।মৃদু কেশে চাঁদ ডাকে,
“ফায়ান?”
চাঁদের কন্ঠ শুনে সবসময়কার ন্যায় এবারও হৃদস্পন্দন তীব্র হলো ফায়ানের।সেও খানিক কেশে ঘনঘন শ্বাস মুখ দ্বারা নির্গত করে পিছু ঘুরে চাইলো।অতঃপর হাসিমুখে বললো,
“আরেএ চাঁদ?শুনলাম তুমি নাকি দুইজোড়া বিয়ে দিয়ে এলে?তা তাদের বরণ টরণের ব্যবস্থা না করে এখানে যে?”
“এসেছিতো কাজেই”
বলতে বলতেই অরণের পাশে গিয়ে দাড়ালো চাঁদ।আর ফায়ান জিজ্ঞেস করলো,
“কী কাজ?”
“অনেক কাজ বাকি ফায়ান।তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অরণের সার্জারী।আমার বেশ ভয় লাগছে।আদোতে পারবো কিনা!”
“সেজন্যইতো বলছি দু’একটা সার্জারী করে ফেলো।তাতে করে শেখাও হলো”
“আর তো কয়েক মাসই বাকি তাইনা?অরণকে দিয়েই শুরু করতে চাচ্ছি।আর আমার বিশ্বাস আমি কাউকে নিরাশ করবোনা তবে তোমার বারবার নিষেধাজ্ঞায় ভয়ও লাগছে”
“নিষেধ করছি কারণ এরকম কেস এর আগে আমি কখনোই দেখিনি।আই মিন সার্জারী তো আমিও করেছি অনেকগুলোই কিন্তু অরণ ভাইয়ার মতো কেস কোনোদিনই চোখে পড়েনি।আর যেখানে বিদেশ নিয়েও ভাইয়াকে ঠিক করা যায়নি বাংলাদেশে রেখে কীভাবে কী?”
অরণের ইসিজি রিপোর্ট দেখতে দেখতেই চাঁদ ফায়ানকে জিজ্ঞেস করে,
“বিদেশ নিয়েছে?কিন্তু কবে?”
“ওহ হ্যা তোমাকে বলা হয়নি।আমি যখন ফাইনাল ইয়ারে উঠি তখন একবার নাকি অরণ ভাইয়ার ফ্যামিলি তাকে ক্যানাডা নিয়েছিলো।সেখানে ডাক্তাররাই নাকি বলেছে বডি ডে*ড বাট হার্ট আর ব্রেইন নাকি রানিং।তারা একচুয়ালি কী বলেছে আমি তখনও কিছু বুঝিনি।এখনও মাথার উপর দিয়ে যায় সব”
চাঁদ কপাল কুচকে ইসিজি রিপোর্ট পাশের টেবিলে রেখে ফায়ানের পানে চেয়ে বলে,
“ক্যানাডা?ক্যানাডা নিয়েছিলো?কতদিন থেকেছিলো সেখানে?”
“প্রায় মাস দুয়েকের মতোই নাকি ছিলো”
“তুমি এসব জেনেছো কার থেকে?”
“অরণ ভাইয়ার বোনের থেকে”
“অরিন?”
“হ্যা”
“অরিন এখন কোথায় আছে?”
“পুলিশ ফোর্সে আছে আপাতত”
“ওরাও কি আমায়ই দায়ভার দেয় অরণের এ দশার জন্য?”
“অরণ ভাইয়ার সাথে কী হয়েছে কে করেছে এসবকিছু প্রণয় ভাইয়ার বন্ধুমহলের বাইরে আর কেউই কিছু জানেনা।বাকিদের কী বলেছে জানিনা তবে আমি জানতাম ভাইয়ার এক্সিডেন্ট হয়েছিলো।আর তোমার মনে হয়না কেউ যদি কিছু জানতো তোমায় তন্য তন্য করে খুঁজতো?আর অরিনও অবশ্যই তোমায় ছেড়ে দিতোনা অ্যাজ আ পুলিশ অফিসার”
কিছুক্ষণ ভেবে চাঁদ বললো,
“হিম তা ঠিক বলেছো।ওয়েইট!অরিন পুলিশ?তার মানে অরিনের হেল্প নিতে পারবো?”
“কীসের জন্য?”
“অরণের অপরাধী খুঁজতে”
“তার জন্য সেদিন কী হয়েছিলো সবটাই জানাতে হবে।তুমিতো আমায়ই কিছু বলোনা।না বলেছো অন্য কাউকে।অরিনকে বলবে?”
কিছুক্ষণ ভেবে চাঁদ বলে,
“আচ্ছা ওসব রাখো।ক্যানাডা ক্যানাডা!কোথায় যেনো শুনেছি?কে যেনো বলেছিলো ক্যানাডা সম্পর্কে”
“কে বলেছে?”
“মনে পড়ছেনা।বাট হার্ট আর ব্রেইন যদি রানিং থাকে বডি কী করে ডে*ড হয়?আর বডি ডে*ড হলে এগুলো রানিং কীভাবে থাকে?আর অরণের ইসিজি রিপোর্টও মোটামুটি ঠিকঠাক আছে।যেই পর্যন্ত একজনের হার্ট চলছে হি অর শি কান্ট ডায়।বডিও ডে*ড হতে পারেনা।তোমরা এত বড় বড় ডাক্তার।তাছাড়া সে?সে নাকি আবার কার্ডিয়াক সার্জন তো এসব প্যাঁচঘোচ ধরতে পারলোনা?নাকি শুধু আমায় কীভাবে শাস্তি দেবে সে চিন্তায় থাকতো?”
“সেসব বাদ দাও।আপাতত তোমার পড়াশুনায় মন দাও।আর তুমি কি বাদ বাকি পড়তে ক্যানাডা যাবে?অর অন্য কোনো দেশে?”
“আগে নিজের দেশের পড়াশুনা শেষ করে নেই।ওহ তোমায়তো বলা হয়নি খুব শীঘ্রই বোধহয় সার্জারীর টুকিটাকি করা পড়তে পারে”
“কীভাবে?”
“ইপ্সির শ্বশুরবাড়ি পাবনা না?”
“হ্যা”
“সেখানে আমার একটা কাজ আছে তাছাড়া পাবনা মেডিকেলেই যাওয়া হচ্ছে সার্জারীর জন্য”
“কবে যাবে?”
“এখনও ঠিকঠাক হয়নি।দেখি”
“মির ভাইয়া আর রিদির বিয়ে বিষয়টা বুঝলাম না চাঁদ?”
“বুঝাচ্ছি।কিছু কারণবশত রিদিকে মেডিকেলে একা দিতে পারছিলাম না।তাই বেশ ভেবেচিন্তেই মির ভাইয়ার সাথে আলোচনা করেছি এবং বিয়েটা দিয়েছি।রিদি এবার ভয়ডরহীন ভাবেই মেডিকেল আসবে যাবে”
“মেডিকেলে ভয় কীসের?”
“সেসব বাদ দাও”
“কিন্তু মির ভাইয়া?”
“ইম…..বাদ দাও সেসব।আমার কাছে মনে হয়েছে বিয়েটা দিলে বেটার।ভাইয়াতো ডাক্তারই,রিদিকে খাওয়াতে পড়াতে পারবেনা এমনও তো না।হতে পারে অনেকেই আমার উপর ক্ষুব্ধ থাকতে পারে কিন্তু আমি মনে করি এবার অন্তত ভুল ডিসিশন নেইনি”
“এর আগে নিয়েছিলে নাকি?”
“কতই তো নিলাম!”
“ফর এক্সামপাল?”
“প্রণয়কে ভালোবাসা ছিলো আমার জীবনের বৃহৎ ভুল।তার চাইতেও বড় ভুল ছিলো……..”
“হিম?”
“ছিলো…….ছিলো একটা।আসি এখন আমি”
“কী ভুল বললেনা তো?”
“যে ভুলের মাশুল আজ অব্দি দিচ্ছি আমি সে ভুল”
To be continued……