আবার প্রেম হোক পর্ব-৮৫

0
810

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৮৫.
দিন দশেক বাদে,
একহাতে চাঁদের হাত ধরে অপরহাতে লাগেজ নিয়ে চৌধুরী বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করছে প্রণয়।চাঁদের মুখশ্রীর আনাচে কানাচে লেপ্টে আছে হাসির রেখা,বারকয়েক সে আড়চোখে তাকিয়েছে প্রণয়ের দিকেও।প্রণয়ও যে তাকায়নি তেমনও নয়।সেও তাকিয়েছে এবং যতবারই নজর পড়েছে,চাঁদকে তার পানেই চাইতে দেখেছে।অতঃপর ঠোটজোড়ার বামপাশ কিঞ্চিৎ বাকা হয়েছে প্রণয়ের,দেখা গিয়েছে বিড়ালাক্ষীজোড়ার অপ্রকাশিত হাসির রেশ।চৌধুরী বাড়ির দরজার সামনে এসে থামে দুজনেই।অতঃপর লম্বা শ্বাস নিয়ে প্রণয়ই প্রথমে মৃদু উচ্চস্বরে ডেকে উঠে,

“মা?আজও কি ভেতরে আসতে দেবেনা?”

প্রায় মাস সাতেক পর নিজের গম্ভীর ছেলের গম্ভীর কন্ঠস্বর পেয়ে তৎক্ষণাৎ রান্নাঘর থেকে ছুটে আসেন পুষ্পিতা জামান।অতঃপর দরজার কাছে আসতেই চাঁদ এবং প্রণয়কে একসাথে দেখে কান্নারা উপচে পড়ে তাঁর।শাড়ির আচল দ্বারা মুখ চেপে ধরেন তিনি।চোখে এসে ভীড় জমিয়েছে অশ্রুকণারা।এই বুঝি টুপ করেই গড়িয়ে পড়বে শুষ্ক কপোল গড়িয়ে।দু’এক ফোটা বুঝি পড়লো ও?সঙ্গে সঙ্গেই দৌড়ে এলেন ছেলে আর ছেলের বউয়ের দিকে।জাপটে ধরলেন একইসঙ্গে দু’জনকেই।প্রণয় আর চাঁদও সাদরে আলিঙ্গন করলো তাঁকে।ডুকরে উঠলেন পুষ্পিতা জামান।তিনি বললেন,

“আসতে মনে চাইলো তোদের?এই মা’কে মনে আদোতে পড়তো একজনেরও?”

চাঁদ ম্লান হেসে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

“মা’কে কি ভোলা যায় মা?”

পুষ্পিতা জামান দু’জনকে ছেড়ে চাঁদের পানে চেয়ে জবাব দিলেন,

“মা’কে ছাড়াইতো ছিলে।ফিরেও তাকালে না”

দৃষ্টি নত করে চাঁদ বলে,

“কিছু মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিলো মা”

“এখন সব ঠিক হয়েছে?”

চাঁদের বদলে শান্ত কন্ঠের জবাব এলো প্রণয়ের কাছ হতে,

“বাবার কথাই বহাল রেখেছি মা।তাঁর বাড়ির লক্ষ্মীসহ ফেরত এসেছি।বাবা কোথায়?”

সিড়ি বেয়ে নামতে নামতে তৌহিদুল চৌধুরী বলেন,

“আ’ম প্রাউড অফ ইউ মাই সান” [তোমার উপর আমি গর্বিত বাবা]

অতঃপর চাঁদ আর প্রণয়ের নিকট এসে চাঁদের মাথায় হাত রেখে তিনি বলেন,

“তোমায় একবার বলেছিলাম না?আমার এক ছেলে আমায় ভয় পায় আর অপর ছেলের একাকিত্ব পছন্দ,নিজেকে সর্বদা গুটিয়ে রাখে?আমার জ্যেষ্ঠ পুত্রকে তোমার হাতে তুলে দিলাম মা,তাকে নিজের মতো করে গুছিয়ে নিও”

চাঁদ মৃদু হেসে বেশ নম্র কন্ঠে বলে,

“তাকে গোছাবার প্রয়োজন অথবা ইচ্ছে কোনোটাই আমার নেই বাবা।সে যেমন আছে তেমনভাবেই কেবলই আমার আছে”

অতঃপর প্রণয়ের পানে চেয়ে বলে,

“এই বিড়ালাক্ষী মানবকেই হৃদয় আমরণ চায়”

চাঁদের কথা শুনতেই তৎক্ষনাৎ তার পানে চাইতে বাধ্য হয় প্রণয়।অতঃপর দুজনের দৃষ্টি মিলিত হতেই চাঁদ নিজ আঁখিদ্বয় অন্যপানে করে লজ্জাকে আড়াল করতে।কিন্তু ধরা বোধহয় সে পড়েই গেলো!প্রণয় কিছু বলতে চেয়েও থেমে গেলো সামনে তাকিয়ে।অতঃপর ঠোট বাকিয়ে কেবলই আড়ালে হাসলো।যা কারো নজরেই বোধগম্য হলোনা।তৌহিদুল চৌধুরী মৃদু কন্ঠে বললেন,

“ভেতরে এসো মা।আমার ছেলের সাথে সাথে ছোট্ট এই সংসার টাকেও নিজ মতোই সাজিয়ে গুছিয়ে নিও”

শ্বশুরের পানে চেয়ে মৃদু হেসে চাঁদ বললো,

“যথাসাধ্য চেষ্টা করবো বাবা”

অতঃপর একে অপরের হাত ধরেই বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো চাঁদ আর প্রণয়।তারা ভেতরে আসতেই পুষ্পিতা জামান আর তৌহিদুল চৌধুরী অন্যদিকে চলে যান।বাবা-মা চলে যেতেই সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতেই চাঁদের সন্নিকটে এসে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে প্রণয় বলে,

“সে কি জানেনা?হৃদয়ে প্রলয় তুলতে তার এক লজ্জারাঙা চাহনীই যথেষ্ট?এত কেনো লজ্জাময়ী সে?”

সঙ্গে সঙ্গে চাঁদের শ্বাস আটকে আসে,মৃদু শিরশিরিয়ে উঠে দেহের প্রতিটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।লোমকূপ দাঁড়ায় নিমিষেই।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সন্ধ্যা সাতটা,
হাসপাতাল থেকে ফিরে শান্ত ভঙ্গিমায় হলরুমে নজর বুলিয়ে রান্নাঘরের দিকে দৃষ্টিপাত করতেই হঠাৎ উজান সেখানে উপস্থিত হয়ে খানিক কেশে প্রণয়কে বলে,

“ইহিম!ভাবি কিন্তু রুমেই ভাইয়া!”

উজানের কথায় মৃদু ভড়কে বাকা চোখে তার পানে চেয়ে কোনোকিছু না বলেই হাতের ব্যাগ কাধের কাছে নিয়ে খানিক দৌড়ানোর ভঙ্গিমায়ই সিড়ি বেয়ে উপড়ে উঠতে লাগে প্রণয়।আর প্রণয়ের পানে চেয়ে মৃদু হেসে নিজেও রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে নিজ রুমের দিকে অগ্রসর হয় উজান।অতঃপর রুমে এসে ইয়ানাকে বিছানা গোছাতে দেখে তার দিকে এগিয়ে আসে।ইয়ানার অতি সন্নিকটে গিয়ে পেছন থেকে আলতো করে তার কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে,

“কী করে আমার বউটা?”

কপাল কুচকে ইয়ানা বলে,

“দেখতে পাচ্ছোনা নাচছি?তুমিও নাচবে?আসো নাচি”

ইয়ানার কথায় হুহা করে হেসে দিয়ে উজান বলে,

“স্বভাব আর গেলোনা না?একটু রোমান্টিক হলে কী হয়?এই মেয়ে বাবা হবো কী করে তাহলে আমি?”

উজানের কথা শুনে উজানকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বাহুতে হালকা চা!পড় মেরে ইয়ানা বলে,

“লজ্জাশরম সব গিলে ফেলেছো না?প্রণয় ভাইয়ারা এখনও পর্যন্ত বাচ্চা নেয়নি,বিয়ের প্রায় দুই বছর হয়ে যাচ্ছে।আর তুমি-আমি নিজেইতো বাচ্চা এ বয়সে আবার কীসের বাচ্চা নেওয়া নেওয়ি?”

বলতে বলতেই বিছানার উপর বসে ইয়ানা।ইয়ানাকে বসতে দেখে উজানও পাশে বসে স্ত্রীর গালে আলতো করে চুমু খেয়ে বলে,

“সঠিক বয়সে বিয়ে হলে তোমার-আমার এতদিনে দু’টো বাচ্চা থাকতো বুঝলে?”

বলেই এক বাহু দ্বারা আকড়ে ধরে ইয়ানাকে।আর ইয়ানাও উজানের বুকের কাছে লেপ্টে থেকে বলে,

“চাঁদ ভাবি আর প্রণয় ভাইয়াকে একসাথে দেখলে আমার এত ভালো লাগে জানো!”

ইয়ানার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে উজান বলে,

“হিম,আমার নজরে দেখা বেস্ট কাপল!কেউই কাউকে মুখ ফুটিয়ে বলেনা যে ভালোবাসে অথচ খুব সুন্দরভাবে ভালোবাসা উপস্থাপন করতে পারদর্শী”

“তাদেরতো অনেক বছরের প্রেম তাইনা?”

“হ্যা ভাইয়া যখন থার্ড ইয়ারে পড়ে তখন থেকে পরিচয় কিন্তু প্রেম করেনি।মানে পছন্দ করতো আরকি”

“কত বছর হবে?আমাদের থেকেও বেশি?”

“হ্যা আমাদের চেয়েতো বেশি হবেই।প্রায় নয় বছরের মতো তো হবেই হয়তো”

“তাহলেতো অনেক বেশি”

“মজার ব্যাপার কী জানো?”

“কী?”

“ভাইয়া আর ভাবি প্রায় পাঁচবছরের মতো দূরে ছিলো।কোনো দেখা নেই,সাক্ষাৎ নেই কিছুই নেই”

“তাই নাকি?তবুও একে অপরকে ভালোবাসতো?”

“অসম্ভবরকমের!আমিতো তাদের থেকে বেশ ইন্সপায়ার্ড হই”

“কীরকম?”

“তুমিতো জানোনা তবে আমার ভাই আর ভাবির পেছনে কম মেয়ে অথবা ছেলে ঘোরেনি।কিন্তু তারা দুজনেই দু’জনের প্রতি ছিলো ডেডিকেটেড”

বেশ উৎসুক হয়ে ইয়ানা আবদার করে,

“তাদের প্রেম কাহিনী শোনাও না!”

“আমি নিজেইতো পুরোটা জানিনা”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রুমে এসে আশেপাশে চাঁদকে দেখতে না পেয়ে ওয়াশরুমের দিকে তাকায় প্রণয়।সেখানেও তাকে খুঁজে না পেয়ে হাতের ব্যাগ,পরিধান করা এপ্রোণ সবকিছু খুলে রাখতে রাখতে উচ্চকন্ঠে শান্ত ভঙ্গিমায় শুধায়,

“চন্দ্র?চন্দ্রময়ী?”

সঙ্গে সঙ্গেই চাঁদের কন্ঠস্বর ভেসে আসে কানে,

“এইতো এখানেই।আপনিও আসুন না!একসাথে চন্দ্রবিলাস করি?”

চাঁদের কন্ঠানুযায়ী তার পানে তাকাতেই প্রণয় দেখতে পায় বারান্দার দরজার কাছ হতে উঁকি মেরে তার দিকেই চেয়ে আছে চাঁদ।অতঃপর হাতঘড়ি খুলে ড্রেসিং টেবিলের কাছ হতে সরে এসে বারান্দার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় প্রণয়।প্রণয়কে আসতে দেখে চাঁদ আবারও বারান্দার ভেতর দিকটায় চলে যায়।চাঁদকে যেতে দেখে দ্রুতই পা চালায় প্রণয়।অতঃপর চাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ মৌন রয় সে।মৌনতা অবলম্বন করে চাঁদ নিজেও।নিরিবিলি পরিবেশে বাতাসের শো শো শব্দের সঙ্গে শহুরে এলাকার গাড়ি গোড়া সহ রিক্সার চাবি বাজানোর টুংটাং শব্দ ভেসে আসে কানে।সেইসাথে হুট করেই কানে ভেসে আসে প্রণয়ের শীতল কন্ঠস্বর,

“আকাশের চন্দ্রকে নিয়েতো সকলেই নানান উপমা বিবৃত করে চন্দ্রময়ী।তবে আমার চন্দ্র অতুলনীয়,তাকে তুলনা দেবার সাধ্যি সেই গগণে অবধারিত রোজকার বিশাল গোলাকার সেই রূপোলি চন্দ্রেরও নেই চন্দ্রময়ী”

প্রণয়ের কথায় তৎক্ষনাৎ লজ্জায় গালদু’টো জ্বলে উঠে চাঁদের।সেইসাথে খানিক ফুলেও উঠে বোধহয়!এত কেনো লজ্জা দেয় এই লোকটা?লজ্জা দিতে এত কেনো পারদর্শী সে?একটু কম করে দিলে কি খুব ক্ষ*তি?এসব ভাবতে ভাবতেই আঁখি জোড়া বন্ধ হয় চাঁদের।সে কেবলই এই মৃদু বহমিত পবনকে উপলব্ধি করছে।প্রাণ ভরে শ্বাস নিচ্ছে,আর খানিক বাদে বাদেই ঠোট বাকিয়ে মনে মনেই লজ্জা পাচ্ছে।হুট করেই বাতাস আসা কমে যাওয়ায় কপাল সামান্য কুঞ্চিত হয় চাঁদের।অতঃপর চোখ খুলতেই নজরে আসে সে প্রণয়ের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ।যদিও প্রণয় তাকে মোটেও ছোয়নি।তবুও তার আপাতত তাই মনে হলো,কেনোনা প্রণয়ের দুই হাত চাঁদের বাহু স্পর্শ করে বারান্দার গ্রিলে নিবদ্ধ আর চাঁদের পিঠ ঠেকে আছে প্রণয়ের বুক বরাবর।প্রণয়ের আকস্মিক কাছে আসায় কিঞ্চিৎ কেপে উঠে চাঁদ।কাপুনি তার বাড়ে প্রণয় যখন তার থুতনি চাঁদের কাধে রেখে কানের কাছে ঘাড়ের দিকে ফু দিয়ে মৃদু কন্ঠে বলে,

“দ্যা মুন ইজ বিউটিফুল”

অতঃপর খানিক থেমে কানের কাছে মুখ নিয়ে আবারও বলে,

“ইজন্ট ইট?”

বাক্যখানা বলেই চাঁদের গালের সাথে গাল মেলায় প্রণয়।আর নিশ্বাস মাত্রাতিরিক্ত বাড়ে চাঁদের।শ্বাস রুদ্ধকর অবস্থা!ঘনঘন শ্বাস নিয়ে কেপে কেপে চাঁদ বলে,

“আপ….আপ……আপনি আপনি!”

চাঁদের কথায় ফের প্রণয় ফিসফিসিয়ে বলে,

“ইজন্ট ইট?”

তৎক্ষনাৎ চাঁদ চোখ বন্ধ করেই প্রণয়ের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে চোখ খুলে প্রণয়ের বুকের কাছে নজর রেখে মৃদু কাপা কন্ঠে বলে,

“আ….আপ…..আপনি সেদিনও,সেদিনও এটা……”

চাঁদের কথায় এবারে চাঁদকে মাঝপথে আটকে দিয়ে তার থুতনিতে তর্জনী রেখে মাথা উচিয়ে চোখে চোখ রেখে পলকহীন একধ্যানে চেয়ে দুই ভ্রু উচিয়ে ফের প্রণয় বলে,

“ইজন্ট ইট?”

প্রণয়ের কথায় চাঁদ চোখের ইশারায় প্রণয়কে কিছু একটা জিজ্ঞেস করতেই প্রণয়ও তাকে ইশারায় সম্মতি জানায়।আর চাঁদ তৎক্ষনাৎ তার আঁখি জোড়া নত করে দৃষ্টি প্রণয়ের বুক বরাবর রেখেই লম্বা শ্বাস নিয়ে বলে,

“ইয়েস!ইয়েস”

অতঃপর প্রণয়ের চোখে ফের চোখ আধখোলাবস্থায় রেখে বলে,

“ইয়েস প্রণয়!”

সঙ্গে সঙ্গেই বেশ লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিমায় প্রণয়ের দিকে পিঠ করে দাঁড়ায় চাঁদ।অতঃপর ঘনঘন শ্বাস নিয়ে গ্রিল ধরে দাড়াতেই প্রণয় তার হাত জোড়া চাঁদের হাতের সাথে মিলিয়ে নিজেও গ্রিল ধরে চাঁদের হাতে হাত রাখে এবং ফিসফিসিয়ে বলে,

“সে কি জানেনা?সে যখন লজ্জায় লালরাঙা হয়……”

প্রণয়ের কথা সম্পূর্ণের পূর্বেই চাঁদ বলে,

“জানি”

প্রণয় ফের ফিসফিসায়,

“হিশ!”

অতঃপর চাঁদের ঘাড়ের কাছে মুখ নিয়ে ধীরকন্ঠে শুধায়,

“সে হয় তখন উষ্ণতায় আবৃত উষ্ণময়ী নারী!”

প্রণয়ের প্রতিটা কথায় তার কম্পমিত ঠোটজোড়া চাঁদের ঘাড়ের কাছে লাগায় ঈষৎ কাপে চাঁদ।অতঃপর শ্বাস তার গলার কাছে এসে আটকে যায়।নাকমুখ দিয়ে ঘনঘন শ্বাস নিয়ে ঢোক গিলতেই প্রণয় তার কাছ হতে সরে পাশে দাঁড়িয়ে বেশ শান্ত কন্ঠে বলে,

“অরণের অপারেশন নিয়ে কিছু কি ভাবলেন?”

প্রণয়ের কথায় খানিক ভড়কে কপাল কুচকায় চাঁদের।কিন্তু পরক্ষণেই কপাল শিথিল করে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে মৃদু কেশে চাঁদ বলে,

“ইম….হ্যা,আমার আর ফায়ানের কথা হয়েছে।আমি যদিও এখনই সবটা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু ফায়ান বললো আমার গ্র‍্যাজুয়েশন কমপ্লিট হতে হতে হয়তো মোটামুটি পরিপক্ক হবো।তখন রিস্ক কিছুটা হলেও কম হবে।আপাতত ফায়ান কোনো রিস্ক নিতে চাচ্ছেনা।আমিও তাই ই ভাবলাম”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে বারান্দার বিপরীত পাশে একধ্যানে চেয়ে প্রণয় বলে,

“হিম!সেটাই ভালো হয়।আরও কিছু সময় পাওয়া যাবে”

কপাল কুচকে চাঁদ জিজ্ঞেস করে,

“কীসের?”

চাঁদের পানে ডানপাশে চেয়ে তার নাকের ডগায় তর্জনী দ্বারা স্পর্শ করে প্রণয় বলে,

“আপনার সাথে প্রেমে মজবার!”

চাঁদ কোনোকিছু না বুঝে জিজ্ঞেস করলো,

“মানে?”

To be continued…….

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৮৫.(বর্ধিতাংশ)
নিজেদের মাঝেকার দূরত্ব চাঁদই ঘুচায়।অতঃপর প্রণয়ের পাশ ঘেষে দাঁড়িয়ে নিজের বাম হাত প্রণয়ের ডান হাতের ভাজে গলিয়ে দিতেই প্রণয়ও বেশ সাবধানে আকড়ে ধরে চাঁদের হাতখানা।আর চাঁদ সেভাবে হাত ধরাবস্থায়ই প্রণয়ের বাহু জাপটে কাধে মাথা রেখে প্রশান্তির এক শ্বাস ফেলে বলে,

“মরণের পরেও আপনার সাথে আমার প্রেম হোক প্রণয়!”

“আমি আমার শেষ নিশ্বাস আপনার কোলে তথা আপনারই বাহুবন্ধনে ত্যাগ করতে চাই চন্দ্রময়ী!”

তৎক্ষণাৎ প্রণয়ের দিকে ঘুরে অপর হাত দ্বারা প্রণয়ের ঠোটজোড়া আলতো করে ছুয়ে চাঁদ বলে,

“হিশ!এভাবে বলবেন না,হৃদয় চূ!র্ণ হয়ে যায়”

লম্বা শ্বাস ফেলে বারান্দা হতে দূর আকাশের পানে চেয়ে প্রণয় বলে,

“মানুষতো অমর নয় চাঁদ,মানুষ মরণশী……”

ফের প্রণয়ের ঠোটজোড়ায় হাত রেখে বেশ করুন কন্ঠে চাঁদ বলে,

“প্লিজ প্রণয় আর বলবেন না।আমার পক্ষে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না”

চাঁদের কথা শুনে মৃদু হেসে চাঁদকে এক বাহু দ্বারা বক্ষপটে আকড়ে ধরে নিজ বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে প্রণয়।আর দ্বিতীয়বারের ন্যায় প্রণয়ের হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রীর অভূতপূর্ব হাসি অবলোকনের সুযোগ মেলে চাঁদের।সে পলকহীন চেয়ে থাকে প্রণয়ের পানে।প্রথমবার এ হাসি দর্শনের সুযোগ মিলেছিলো কলেজে পড়াকালীন।এবং আজ ফের দেখার সৌভাগ্য জুটলো প্রায় বছর সাতেক পর!একধ্যানে চেয়ে থাকলো প্রণয়ের পানে,সেকেন্ড খানেকের জন্যও দৃষ্টি এদিক ওদিক সরেনি তার।ধ্যান ভাঙে প্রণয়ের করা অবিশ্বাস্যনীয় কর্মে।চাঁদকে সেভাবে জড়িয়েই প্রণয় বলে,

“সে কি জানেনা?”

অতঃপর আকস্মিক চাঁদের বাম গাল আর কানের অতি সন্নিকটের এক স্থানে খানিক শব্দ করেই চুমু খেয়ে চাঁদের পানে দৃষ্টি জ্ঞাপন করে ফের প্রণয় বলে,

“সে আমার নিজস্ব ফুল”

কথাখানা বলে খানিক থেমে চাঁদের দুই গাল এক হাত দ্বারাই আলতো চেপে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কপালের ঠিক মাঝ বরাবর বেশ অনেক্ক্ষণ সময় নিয়ে চুমু দিয়ে চোখে চোখ রেখে বলে,

“আমার লালগোলাপ”

চাঁদ মাত্রাতিরিক্ত লজ্জা পেয়ে লজ্জা ঢাকতে প্রণয়ের শার্ট খা!মচে ধরে তারই বুকের কাছে মুখ লুকায়।অতঃপর মৃদু হেসে প্রণয় চাঁদকে আলিঙ্গন করে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
প্রায় সপ্তাহ খানেক পর প্রণয় এসেছে বুয়েট সড়কের পাশে।সময়টা ঠিক সন্ধ্যা ছয়টা বেজে সাতচল্লিশ মিনিট।হাতঘড়ি দেখতে দেখতেই আশপাশটা অবলোকন করছে।বেশ প্রখর তার চাহনী,একটা অলি গলিও বাদ পড়েনি সেই বিড়ালাক্ষীজোড়ার নিকটে।এবং অনেক্ক্ষণ ধরে আশপাশ খুঁজতেই তার নজর পড়ে শহীদুল্লাহ হলের থেকে খানিক এগিয়ে এসে এক সোডিয়াম লাইটের পাশ ঘেষে ফিট করা সিসি ক্যামেরার দিকে।নজর তার আটকে যায় সেথায়।বেশ তীক্ষ্ণ নজরে সে পানে চেয়ে থাকে প্রণয়।অতঃপর তৎক্ষণাৎ পকেট থেকে ফোন বের করে ক্যামেরা ধরে বেশ জুম করেই ক্যামেরা আর লাইটের কয়েকটা ছবি তুলে আশপাশের ভিডিও ধারণ করে কাউকে কল দিয়ে ছুটে চলে তার বাড়ির রাস্তার বিপরীত পাশে।অতঃপর কিছুক্ষণ যেতেই এক রিক্সায় চড়ে বসে সে।

প্রায় মিনিট বিশেক পর,
লালবাগ থানার ভেতরে চলছে তুমুল শোরগোল!উচ্চস্বর ভেসে আসছে সকলের।সেইসাথে শোনা যায় প্রণয়ের গম্ভীর কন্ঠস্বরও,

“আপনাকে বলেছি দু’হাজার দশ এর ঊনিশে সেপ্টেম্বরের ফুটেজ টা দেখান।অযথা তর্কাতর্কি করছেন কেনো?অবশ্যই সকলকিছুর রেকর্ডই আপনাদের কাছে থাকে”

“সাত বছর আগের ফুটেজ চাইলেই কি দেওয়া যায় নাকি মিস্টার প্রণয়?প্রফেশনাল ডাক্তার বলে যখন যা বলবেন তাই হবে?মোটেও নয়,যান এবার”

বেশ ঠান্ডাস্বরে প্রণয় জেলারকে বলে,

“শান্তভাবে চাচ্ছি শান্তভাবেই দিয়ে দিন আদারওয়াইজ বাকা পন্থে ছিনিয়ে নিতে বিলম্ব হবেনা মিস্টার অহেদ”

“আপনি আমায় হু!মকি দিচ্ছেন?”

“সতর্ক করছি”

“যা ইচ্ছা করুন!আপনার ডাক্তারী এই যে পাঁচ মিনিটের মধ্যে খালাস করতে আমারও বিলম্ব হবেনা”

দুই আঙুল দ্বারা চুটকি বাজাতে বাজাতেই কথাখানা বলেন জেলার অহেদ।তা দেখে ঠোটজোড়া কিঞ্চিৎ বাকিয়ে প্রণয় বলে,

“ইজ ইট প্রিটি ট্রু?লেট মি সি দেন!” [এটা কি আদোতে সত্যি?তাহলে আমাকেও দেখতে দিন!]

কথাখানা বলেই ফের কাউকে কল দেয় প্রণয়।ফোনে কথা বলা অবস্থায়ই তার পাশে এসে বসে আহিন।আহিনকে দেখে তৎক্ষনাৎ জেলার অহেদ বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলেন,

“সা….স্যার আপনি?হঠাৎ?”

“আসতে হলো।বসুন”

বলেই প্রণয়ের পানে চেয়ে আহিন বলে,

“বল জরুরী তলব দিয়ে আনালি যে?”

প্রণয়ের সাথে বেশ সহজভাবে আহিনকে কথা বলতে দেখে জেলার হকচকিয়ে বলেন,

“মিস্টার প্রণয় আপনার পূর্বপরিচিত স্যার?”

কথার মাঝখানে কথা বলায় বেশ বিরক্তিবোধ করে আহিন।অতঃপর বিরক্তি নিয়েই বলে,

“হ্যা,বন্ধু হয়।কেনো কী সমস্যা?আর তুই বল কী বলবি?আর থানায় কী করছিস?এখনতো তোর বউয়ের সাথে থাকার কথা না?”

“কাজেই এসেছি”

বলেই জেলারের দিকে চেয়ে প্রণয় শান্তকন্ঠে বলে,

“এখনও আপনি আপনার সিদ্ধান্তে বহাল থাকবেন মিস্টার অহেদ?”

ঢোক গিলে জেলার বলেন,

“দেখুন….আপ….আপনি রীতিমতো আমায় হু!মকি দিচ্ছেন”

কপাল কুচকে আহিন জিজ্ঞেস করে,

“হচ্ছে টা কী এখানে?”

জেলার বেশ দ্রুতই প্রণয়কে বলেন,

“দেখুন আপনি অযথাই আমার থানায় এসে ঝা!মেলা পাকাচ্ছেন।আপনার কাজ হাসপাতালে,হাসপাতালে যান”

এবারে জেলারের পানে চেয়ে বিরক্তি নিয়ে কপাল কুচকে আহিন বলে,

“উইল ইউ জাস্ট কিপ কুয়াইট ফর আ হোয়াইল?” [আপনি কি কিছুক্ষণের জন্য একটু চুপ থাকবেন?]

অতঃপর প্রণয়ের পানে চেয়ে বলে,

“তুই বল শুনছি আমি”

আহিনের কথা শুনে আহিনের বসে থাকা চেয়ারটা কাছে টেনে বেশ ধীরকন্ঠে প্রণয় তার সাথে আলাপ করতে ব্যস্ত হয়।তাদের কথা সমাপ্ত করে মিনিট পাচেকের ন্যায় চুপ থাকে আহিন।অতঃপর গম্ভীর কন্ঠে জেলারকে বলে,

“সমস্যা কোথায় ফুটেজ দেখাতে?”

জেলার কিছু বলার পূর্বেই সেখানে শোনা যায় এক মেয়েলি গম্ভীর কন্ঠস্বর,

“হোয়াটস দ্যা প্রবলেম মিস্টার অহেদ রশিদ?”

অসময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে দেখে তৎক্ষনাৎ দাঁড়িয়ে পড়েন জেলার অহেদ।অতঃপর সঙ্গে সঙ্গেই মেয়েটাকে স্যালুট করেন তিনি।স্যালুট করে সেখানে উপস্থিত সকল পুলিশ কর্মকর্তাই।স্যালুট দিয়ে খানিক কেশে জেলার বলেন,

“ম্যা’ম আপনি?এ সময়ে?আপনি কেনো আসলেন?আমায় একটা কল দিলেই……”

“স্টপ,তেলবাজি শুনতে আসিনি।ইফ ইউ ডোন্ট ওয়ান্ট টু লোস ইওর জব দেন গিভ দ্যা ফুটেজ টু হিম”

বলেই প্রণয়ের পানে চায় মেয়েটি।তৎক্ষণাৎ জেলার তার পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালের ঘাম মুছে বলেন,

“ম্যা’ম আপনি কী করে?”

অতি রুক্ষ কন্ঠে মেয়েটি বলে,

“আমি কী করে কী জেনেছি দ্যাটস নান অফ ইওর বিজনেস।যা বলেছি তা দ্রুত করুন।এবং যেখানে স্বয়ং মেয়র উপস্থিত তবুও আপনি তর্ক-বিতর্ক করে চলেছেন?এখনো যে আপনাকে আমি সাসপেন্ড করিনি তার জন্য আপনার ডক্টর প্রণয়কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা উচিত”

“কিন্তু ম্যাম?”

“কিন্তু কী?কী বলতে চাচ্ছেন?”

নিজেদের মাঝেই পুলিশদের ঝগড়া করতে দেখে চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে মেয়েটার বুকের কাছে থাকা নেমপ্লেটে তার নাম পর্যবেক্ষণ করে মৃদু কেশে আহিন বলে,

“মিস অরিন?প্লিজ স্টপ আরগুয়িং।আমি কথা বলছি”

আহিনের কথায় তার পানে চেয়ে অরিন বলে,

“ইউ ডোন্ট হ্যাভ টু ওয়েস্ট ইওর টাইম স্যার।ওনি যে কী করেন আর কী করেন না সবকিছুই আমার কানে আসে।আজ হয় এস্পার নয় ওস্পার।আপনি ফুটেজ দেবেন কিনা?”

শেষের কথাটা বেশ চেচিয়েই জেলারকে বলে অরিন।এবারে প্রণয় চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে বেশ গম্ভীর কন্ঠে বলে,

“হাইপার হয়োনা অরিন।জেলার মহাশয় অবশ্যই ফুটেজ দেবেন তবে সে যেনো সাবেক মেয়র অধিরাজ মোহাম্মদ শেখকে কোনো বার্তা না পাঠায় তা তোমার দেখা উচিত”

কপাল কুচকে অরিন বলে,

“মেয়র অধিরাজ শেখকে কেনো বার্তা পাঠাবেন ওনি?”

প্রণয় জবাব দেয়,

“সে তো জেলার অহেদই ভালো বলতে পারবেন।কী মি.অহেদ রশিদ?ঠিক বললাম কিনা?”

আহিন কিছু বুঝতে না পেরে বলে,

“তুই বাবাকে……”

আহিনকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে জেলারের পানে চেয়ে প্রণয় বলে,

“আপনি কি আপনার চাকরির মায়াটা করছেন না মিস্টার অহেদ?”

প্রণয়ের পরপরই বেশ গম্ভীরভাবে অরিন বলে,

“আই ওয়ান্ট আন্সার মিস্টার অহেদ।ডক্টর প্রণয় কী বলছেন এসব?সাবেক মেয়রের সাথে আপনার কীসের বার্তা আদান প্রদান?”

এবারে বেশ ক্ষে!পে গিয়ে জেলার অহেদ উচ্চস্বরে বলেন,

“এই ডাক্তার যাচ্ছেতাই বলে যাচ্ছে ম্যা’ম”

অত্যন্ত রেগে গিয়ে জেলারের টেবিলে থাবা দিয়ে বেশ জোরেসোরেই বারী মে*রে অরিন বলে,

“ওহ জাস্ট শাট আপ!এক মিনিটের মধ্যে যদি সম্পূর্ণ সত্য আপনি না বলেন আপনাকে আজীবনের জন্য সাসপেন্ড করতে বাধ্য হবো আমি!”

এবারে ঘনঘন শ্বাস নিয়ে মৃদু কেশে জেলার অহেদ মাথা নিচু করে ধীরকন্ঠে বলেন,

“অধিরাজ স্যার সেখানের সবকয়টা ক্যামেরা সরিয়ে ফেলেছিলেন এবং খুব সম্ভবত সেই বছরই তিনি প্রায় অনেক ক্যামেরার ফুটেজই ডিলিট করান।বর্তমানে ডক্টর প্রণয়ের বলা জায়গা গুলোয় কোনো ক্যামেরাই থাকার কথা না!”

প্রণয় সাথে সাথেই বলে,

“আছে।একটু আগেই দেখে এসেছি।বিশ্বাস না হলে আমার কাছে ভিডিও এবং ছবি আছে ওয়েইট”

বলেই আহিনসহ অরিন এবং জেলারকেও ঘন্টাখানেক পূর্বের করা ভিডিও আর ছবিসমূহ দেখায় প্রণয়।অতঃপর কপাল কুচকে অরিনের পানে চাইতেই তার তীক্ষ্ণ চাহনী দেখে ঢোক গিলে ফুটেজ দেখাতে রাজি হন তিনি।আহিন কিছু বুঝতে না পেরে প্রণয়কে বলে,

“বাবা ক্যামেরা কেনো সরাবেন?”

দুই ভ্রু উঁচিয়ে লম্বা শ্বাস ফেলে প্রণয় জবাবে বলে,

“এখনও তুই তোর বাবার অনেককিছুই জানিস না আহিন”

বলেই জেলারের পানে চেয়ে প্রণয় বলে,

“ড্রাইভ এবং ক্যামেরা দু’টো আমার হাতেই দেবেন।এবং আমি চাইবো ফুটেজের কোনো কপি আপনার অথবা কারো কাছে না থাকুক”

অরিন ঠান্ডাস্বরে বলে,

“চিন্তা করবেন না,আমি আছি এবং দেখছি সবটা”

অরিনকে কিছু বলতে নিলেই প্রণয়ের ফোনে কল আসে।বিরক্ত হয়ে কপাল সামান্য কুঞ্চিত করে পকেট থেকে ফোন বের করে স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই কপালের ভাজসমূহ শিথিল হয় প্রণয়ের।সে কল রিসিভ করে ফোন কানে লাগিয়ে কিছু বলার পূর্বেই চুপ হয়ে যায়।অরিন এবং আহিন দুজনেরই স্পষ্ট নজরে এসেছে স্ক্রিনে ভাসমান নাম খানা।নামটি ছিলো ‘অর্ধাঙ্গিনী’।প্রণয়ের চোখের দিকে বহুবছর পর এক ধ্যানে চায় অরিন।এবং আঁখি জোড়ায় প্রাণোচ্ছল হাসি নজরে আসে তার।প্রণয়ের বিড়ালাক্ষীজোড়া সূক্ষ্মভাবে হেসে উঠছে।কি প্রশান্তি বয়ে যাচ্ছে সেথায়!হঠাৎ করেই বুকে তীব্র ব্যথা হলো অরিনের।সে নিজ চোখজোড়া নামিয়ে নিলো তৎক্ষণাৎ এবং শুনতে পেলো প্রণয়ের শান্ত কন্ঠস্বর,

“আহহা!আমি ঠিক আছিতো চন্দ্র!শান্ত হন,শান্ত হন আপনি”

“হ্যা,একটু কাজে এসেছি”

“না আরও ঘন্টাখানেকের মতো লাগবে।আপনি চিন্তা করছেন কেনো?”

“ঠিক আছে কিন্তু আপনারতো গ্যাস্ট্রিক আছে আপনি বরং মা,উজান ওদের সাথে বসে খেয়ে ফেলুন,আমি দশটার মধ্যেই ফিরবো অথবা আরও দেরি হতে পারে”

“আহহা আপনি!”

প্রথমে কপাল কুঞ্চিত হলেও পরক্ষণেই ঠোট জোড়া খানিক বাকা হয় প্রণয়ের,কন্ঠনালিও মৃদু কাপে।এবং বেশ প্রাণোচ্ছল স্বরে সে বলে,

“আপনি এতো যত্নময়ী কেনো চাঁদ?আমি দ্রুতই ফিরছি।খাবেন কিছু আপনি?আইসক্রিম আনবো নাকি কোকা-কোলা?”

এবারে বেশ উচ্চশব্দেই হেসে উঠে প্রণয়।হাসতে হাসতেই বলে,

“আচ্ছা আসছি আমি”

কথা শেষ করে ফোন রাখতেই আহিনের কুঞ্চিত কপাল নিয়ে তারই দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রণয় বলে,

“কী হয়েছে?”

“কলেজ লাইফে প্রেম করে মন ভরেনি?ভরবেও কী করে?পেয়েছিসই এমন…..”

আহিনকে থামিয়ে প্রণয় বলে,

“বাজে বকবি না”

“ফোনালাপ শেষ হলে চলুন এবার”

বেশ গম্ভীর কন্ঠেই কথাখানা বলে দ্রুতই পা চালায় অরিন।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
দরজার কাছে আসতেই আকস্মিক প্রণয়ের সামনে এসে দাঁড়ায় চাঁদ।অতঃপর আপাদমস্তক তাকে অবলোকন করে বলে,

“এতো দেরি কেনো?”

চাঁদের পানে চেয়ে গায়ের এপ্রোণ খুলে তা তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে গলার স্টেথোস্কোপ হাতে নিয়ে দুই হাত দিয়েই তা চাঁদের গলায় পরায় প্রণয়।অতঃপর স্টেথোস্কোপে হাত রেখেই চাঁদকে কাছে টেনে চাঁদের নাকের ডগায় তর্জনী ছুইয়ে বলে,

“কাজে গিয়েছিলাম মিসেস রুহায়ের!”

অতঃপর চাঁদের বাহু আকড়ে কানের লতির কাছে ঘাড়ের দিকে আকস্মিক চুমু খায় প্রণয়।এবং সেকেন্ডের মাঝেই আবার স্বাভাবিকভাবে চাঁদের একহাত ধরে অপর হাতের পেছনে থাকা গোলাপের গুচ্ছ এগিয়ে দিয়ে সিড়ির কাছে যেতে যেতে সে বলে,

“আমার একান্ত ফুল,আমার লালগোলাপের নিকট এই র*ক্ত লাল গোলাপসমূহও যেনো ফিকে পড়ে যায়!”

প্রণয়ের একের পর এক দেয়া চমক এবং ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশে বরাবরের মতোই লজ্জায় লালরাঙা হয় চাঁদ।তা দেখতে পেয়ে প্রণয় সিড়ি বেয়ে উঠা থামিয়ে দিয়ে চাঁদকে আকস্মিক কোলে নিয়ে ফের উঠতে উঠতে চাঁদের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,

“সে কি বরাবরই ভুলে যায়?সে যখ……”

প্রণয়কে এবার শুরুতেই থামিয়ে দিয়ে তার বুকের কাছের শার্ট আকড়ে ধরে তারই বুকে মুখ লুকিয়ে ঘনঘন শ্বাস নিয়ে বেশ ধীরকন্ঠে চাঁদ বলে,

“প্রণয়ের বেহায়াপনা এবং নির্লজ্জামি দেখা আদোতে কখনো যাবেও?”

চাঁদের ফিসফিসিয়ে বলা বাক্য পুরোটাই প্রণয়ের কর্ণগোচর হয়।এবং বুকের কাছে চাঁদের ঠোটের কম্পিত স্পর্শ পেতেই সর্বাঙ্গ শিউরে উঠে প্রণয়ের,দাঁড়ায় লোমকূপসমূহও।হৃদস্পন্দন দ্রুত হয় তার।নিজেকে সামলে লম্বা শ্বাস মুখ দিয়ে ফেলে চাঁদকে ভালোভাবে নিজের বুকের সাথে আগলে নিয়ে হাটা ধরে নিজ রুমের উদ্দেশ্যে।

রাত তখন বারোটা বেজে সাত মিনিট,
কোলাহল পূর্ণ শহরে নেমে আসছে নিস্তব্ধতার রেশ।তবুও কিছুসংখ্যক ঘরের আলো স্তব্ধ হয়নি।তারা বহাল,এখনও বিদ্যমান।এবং সেসব আলোই বারান্দা দিয়ে প্রবেশ করে অন্ধকারাচ্ছন্ন রুমজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পুরো কামড়াকে করে তুলছে মৃদু উজ্জ্বল।সেইসাথে শোনা যাচ্ছে শহুরে গাড়ি গোড়ার শব্দসমূহও।যদিও কম তবুও কানে ভাসছে একটু পরপরই।নিস্তব্ধতার মাঝে হঠাৎ করেই শোনা যায় চাঁদের কাতর কন্ঠস্বর,

“আমি দুঃখিত প্রণয়!এত সুন্দর মুহুর্তকে আমি নষ্ট করে দিলাম।আই আম সরি!”

বুকের কাছে চাঁদকে জাপটে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে প্রণয় বলে,

“নষ্ট কোথায় হলো?এই যে আপনি আমার হৃদমাঝারে আছেন,আমার পাশে,আমার অতি সন্নিকটে আছেন।এইতো ঢের!”

প্রণয়ের বুকে শুয়ে থাকাবস্থায়ই ঘাড় কাত করে খানিক উঁচিয়ে তার দিকে দৃষ্টিপাত করে চাঁদ বলে,

“আপনি এত ভালো কেনো?”

বলেই প্রণয়ের উন্মুক্ত বুকের বাম পাশটায় শব্দ করেই চুমু খায় চাঁদ।আর প্রণয় ঈষৎ কেপে উঠে চাঁদকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,

“কারণ আমার বউ এত মিষ্টি।তার চাইতেও মিষ্টি তার সেই নরম মিষ্টত্বে ভরপুর অধরজোড়া!”

প্রণয়ের কথায় তার বাহুতে হালকা থা!প্পড় মেরে চাঁদ বলে,

“বেশ অসভ্যতো আপনি!”

“তখন যেনো কোলে চড়ে কে বলেছিলো?প্রণয়ের বেহায়াপনা আর নির্লজ্জামি দেখতে চায়?এখন তো একটুতেই সে কূপ কাত!”

প্রণয়ের কথা শুনে তাকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বেশ অসহায়ত্ব মিশ্রিত কন্ঠস্বরে চাঁদ বলে,

“কী করবো প্রণয়?আমি যে চাইলেও সেসব বিভ!ৎসকর স্মৃতি ভুলতে পারিনা।আমায় আপনি মা…..”

চাঁদের কথা সম্পূর্ণের পূর্বেই প্রণয়ও তাকে বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে বুকের সাথে মিশিয়ে বলে,

“হিশ!সেসব ভাবেনা।শুয়ে থাকুন।আমি আছি সর্বদা,সর্বক্ষণ।আপনার কাছে,আপনার পাশে।কেবল আপনারই হয়ে।আপনার সকল দুঃখসমূহ আমার হৃদয়ে সযত্নে লালিত আছে চন্দ্র”

To be continued……