আবার প্রেম হোক ২ পর্ব-১০+১১

0
314

#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম

১০.
“প্রণয়কে আজ রাতের মধ্যেই ফা*সি দেয়া হবে আপু!”

অরিনের ক্রন্দনরত মুখে বাক্যখানা শুনতেই মাথা চক্কর দিয়ে উঠে চাঁদের।ঘনঘন শ্বাস নেয় সে।অতঃপর ঢোক গিলে বলে,

“কিন্তু জজ তো সেদিন বাদ জুমার কথা বলেছিলেন?”

নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে অরিন বলে,

“হা….হ্যা বলেছিলেন তবে তিনি তা লিখেননি।শুক্রবারই ফা*সি হবে তবে রাতের মধ্যেই।বারোটার পরপরই।আমি প্রতিবাদ করেছিলাম।কিন্তু…..”

অরিনকে ঝাঁকিয়ে চাঁদ বলে,

“কিন্তু কী?”

“কিন্তু এটাই নিয়ম আপু!একজন আসামির ফা*সি কবে কার্যকর হবে এটা কাউকে জানানো হয়না।বিশেষ করে তার পরিবারকে।আর বাংলাদেশের নিয়মানুযায়ী রাত বারোটার পরেই ফা*সি দেয়া হয়।আমার মাথা থেকে বিষয়টা বের হয়ে গিয়েছিলো।ধরতে পারিনি”

“কিন্তু পরিবারের সাথে শেষবারের ন্যায় দেখাও তো করানো হয়!এটাতো নিয়ম অরিন”

“হ্যা দেখা করানো হবে তবে শুধু হাতেগুনা দুই থেকে তিনজন।কিন্তু চিন্তার বিষয় তা নয়।কাল যাও হাতে সময় ছিলো আহিন ভাইয়ার প্ল্যান আমায় বলেছিলো তারা কাজে নেমেও পড়েছে।তোমরা তো দেশের খবর জানোনা।জেলায় জেলায় মিছিল হচ্ছে।আন্দোলন করা হচ্ছে।ডক্টর লিমা চার দফা আন্দোলনে নেমেছেন।আহিন ভাইয়াও সাথে আছেন।যেখানে মেয়র নিজেই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন সেখানে আশাহত হওয়ার কথা নয় কিন্তু এখন সাতটা বাজে।আমাদের হাতেতো সময় নেই!আমি এটাও জানিনা প্রণয়কে ওরা নিয়েছে কোন জেলে”

বলেই নিজের মাথা চে!পে চুল টেনে ধরে অরিন।সমুদ্র অরিনকে জিজ্ঞেস করে,

“চার দফা কী কী?”

“দাড়ান আমি নিউজ দেখাচ্ছি”

বলেই নিজের রুমে রাখা ল্যাপটপ অন করে তাতে আজকের সরাসরি খবরের চ্যানেল লাগায় অরিন।তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে জায়গায় জায়গায় আন্দোলন হচ্ছে,বেশিরভাগই নারী।পুরুষেরাও আছে।পুলিশ হাজার চেষ্টা করেও কাউকে থামাতে পারছেনা।জনগণ বেশ ক্ষু*ব্ধ বর্তমান সরকারের প্রতি।অতঃপর চ্যানেল বদলাতেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে মিছিল করতে দেখা যাচ্ছে লিমাসহ আহিন আর আহানকেও।লিমার দুই হাতে দুই ব্যানার।একটাতে স্পষ্ট লেখা ‘আমাদের দাবি মানতে হবে!ডক্টর প্রণয়ের ফা*সি আমরা মানিনা’ অপর ব্যানারে লেখা,

আমাদের চার দফা দাবি,
১.ডক্টর রুহায়ের প্রণয়ের ফা*সি অকৃতকার্য করে তাকে মুক্তি দিতে হবে।
২.ধ!র্ষণের শাস্তি কেবল ধ!র্ষকের মৃ*ত্যুই হবে এরূপ নতুন আইন জারী করতে হবে।
৩.ধ!র্ষক যদি তার প্রাপ্য শাস্তি না পায় এবং ছেড়ে দেয়া হয় তবে তাকে রাস্তার যেখানেই দেখা হোক না কেনো সেখানেই মে*রে ফেলার নিয়ম জারী করতে হবে।এক কথায়,নারীর সম্ভ্রম কে!ড়ে নেবার শাস্তি ধ!র্ষকের প্রাণ কে*ড়ে নিয়ে হবে।এতে কোনো আইন বাঁধা দিতে পারবেনা।
৪.উপরের তিনটি দফা মানা না হলে বর্তমান সরকারকে তার গদি ছাড়তে হবে।আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নারীদের সুরক্ষিত রাখতে পারবে এরূপ সরকার দেশে চাই!না কি অপরা*ধীদের সমর্থনকারী সরকার।যদি এমনটা না হয় উনিশশো একাত্তরে যেমন ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল বাঙালি ঝেপে পড়েছিলো দেশের মুক্তি জন্য।তদ্রুপ আমরা নারীরাও নেমে পড়বো ধ!র্ষণের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে!

নিউজ রিপোর্টাররা কেবল এ কথাই বলে চলেছেন,

“এবার সরকারের কী সিদ্ধান্ত হবে?তারা কি চার দফা মানবেন?নাকি দেশে ফের যু*দ্ধের আমন্ত্রণ দেবেন?কী ভাবছেন দেশপ্রধান?”

এরূপ সংবাদ দেখে লোমকূপ দাঁড়িয়ে যায় চাঁদের সে কোনোকিছুই ভাবতে পারেনা।মস্তিষ্ক তার অচল হয়ে পড়ছে।ধপ করে ফ্লোরে পড়ে যেতেই অরিন তাকে ধরে।সামনে আসে উশ্মিও।চাঁদকে সামলাতে সামলাতেই অরিন সমুদ্রকে বলে,

“মিস্টার সমুদ্র আপনি কাইন্ডলি আহিন ভাইয়াকে কল দিয়ে বলুন প্রণয়কে ঢাকা কারাগার থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।সেখানে সে নেই।তারা যেনো খোঁজ করে তাকে কোথায় নেওয়া হয়েছে”

অরিনের কথা মোতাবেক সমুদ্র আহিনের নাম্বারে ডায়াল করে।সে ধরছেনা বলে লিমার নাম্বারেও করে।তবে সেও ধরেনা।এবারে সমুদ্র অরিনকে বলে,

“ধরছেনা কেউ।এই সমাবেশ,বিক্ষো*ভের মাঝে ফোনের আওয়াজ শুনবে কী করে?”

অরিন কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে,

“চাঁদ আপুর সাথে তোমরা থাকো।আমি আ……সমুদ্র আপনি,উশ্মিপু আর মির ভাইয়া আমার সাথে চলো”

অরণ প্রশ্ন করে,

“কোথায় যাবি?”

“প্রণয়ের জন্য শেষ চেষ্টাটুকু করবো ভাই”

অতঃপর সমুদ্র,উশ্মি আর মিরকে সাথে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় অরিন।অরিন চলে যেতেই চাঁদ চুপচাপ একধ্যানে বসে থাকে ফ্লোরে।কোনোকিছুই ভাবতে পারেনা।মস্তিষ্ক তার ফাকা ফাকা লাগছে।এমতাবস্থায় শিফা তার কাধে হাত রেখে বলে,

“চিন্তা করো না ভাবি।ভাগ্যের উপর ছেড়ে দাও।সব ঠিক হবে।আল্লাহ ভাইয়ার কপালে যা লিখেছেন তাই হবে।তুমি নিজের…..”

হঠাৎ চেচায় চাঁদ,

“জাস্ট শাট আপ শিফা!শাট ইওর মাউথ!কী ঠিক হবে আর?কী ঠিক হবে?আর কেনোই বা চিন্তা করবোনা?নিজের মতো ভাবছো?যে ভালোবাসা হারিয়ে যাচ্ছে হারাতে দেবো?চুপচাপ সেটা সহ্য করবো?ভাগ্যের কাছে ছেড়ে দেবো?আসলে তুমি ভালোবাসার কী মর্ম বুঝবে?নিজের ভালোবাসাইতো আটকাতে জানোনা,পারোনা।অন্যের আশায় থাকো।শুধু কাদতেই জানো।কেদে ভালোবাসা পাওয়া যায়?যায়না!তার জন্য সংগ্রাম কর‍তে হয়”

রিদি চাঁদকে ধরতে এলে চাঁদ তার দিকে আঙুল তাক করে বলে,

“খবরদার!খবরদার রিদি!যদি সামনে এসেছো তো!এই মেয়ের কোনো তরফদারি আমি শুনবো না।ও একটা দুর্বল চিত্তের মেয়ে!আমি এরূপ দুর্বল মানুষ মোটেও পছন্দ করিনা।মেয়ে হয়েছে বলে কি দুর্বল হতে হবে?আরে!উশ্মিতো শুধু শুধু ওর জন্য রায়হান ভাইকে ছেড়েছিলো।উশ্মি নিজেও ভালোবাসার মর্ম বুঝেনা।বুঝলে কোনোদিনই রায়হান ভাইয়াকে ছাড়তে পারতোনা তাও আবার এই দুর্বল মেয়েটার জন্য।বাচ্চা বয়সে কাউকে মন দিতে পেরেছে কিন্তু সেই মানুষটাকে একবার বলতে পারেনি আমি তোমাকে ভালোবাসি?আর উশ্মির কথাই বা কী বলবো!ও নিজেইতো এই অযুহাতে রায়হান ভাইকে ছেড়েছে।ভালোবাসা কি এতটাই ঠুনকো যে একজনের জন্য আরেকজনকে ছাড়বো?তারপর আরেকজনকে ধরবো?আর এই শিফা?চোখের পানি ফেলে ফেলে কী বুঝাতে চায়?রায়হান ভাইকে খুব ভালোবাসে?খুব!ভালোবাসলে তার প্রমাণ কোথায়?শুধু কাদলেই ভালোবাসা হয়?একবারও চেষ্টা করেছে নিজের ভালোবাসা পাবার?করেনিতো!করবেও কী করে ও তো অন্যের ভালোবাসা সহ্য করতে পারেনা।তাদের দিকে ঠিকই নজর রাখে।আরে!ওর সাহস কী করে হয় আমাকে আমার প্রণয়ের চিন্তা কর‍তে মানা করতে?কে ও হ্যা?কে?আমি আমার স্বামীর চিন্তা করে করে ম*রে যাবো তাতে ওর কী?ওর কী?ও কি জানে আমার ভেতর দিয়ে কী যাচ্ছে?বুঝতে পারবে কখনো?পারবেনাতো!রায়হান ভাইতো আর ওকে ভালোবাসেনা!বুঝবে কী করে?রুবা!এই মেয়েকে আমার চোখের সামনে থেকে নিয়ে যাওতো।আমার ওকে একদমই সহ্য হচ্ছেনা।তোমরা এক্ষুনি বের হও এখান থেকে।জাস্ট গো!আমার প্রণয়ের কিছু হলে কাউকে ছেড়ে কথা বলবোনা আমি”

রিদি কিছু বলতে নিলেই মিরা তাকে ইশারায় বাকি দু’জনকে নিয়ে বের হতে বলে।তিনজনই বের হতে গেলে দেখতে পায় দরজার কাছে বিস্ফোরিত নয়নে রায়হান আর রামিম চেয়ে আছে চাঁদের পানে।রায়হান আর রামিমকে দেখে শিফার বুকে দহন য*ন্ত্রণা হয়।সেদিকে তাকাতে পারেনা সে!দৃষ্টি নত করে সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে বের হয় শিফা।যাওয়ার সময় তার ওড়নার ঝাপটা এসে রায়হানের বাহুতে এসে লাগে।শিফার পানে তাকায় রায়হান।শিফাকে যেতে দেখে দৌড়ে রিদি আর রুবাও তার পিছু যায়।আর চৈত্র চাঁদের কাছে এসে তাকে ধরে বলে,

“শান্ত হ!শান্ত হ ছোটি।এভাবে হাইপার হলে চলবে?তুই শুধু শুধু মেয়েটাকে এতগুলো…..”

ভাইয়ের বুকে ঝাপটে পড়ে চাঁদ হাউমাউ করে বলে,

“আমি কী করে শান্ত হবো ভাই?কী করে হবো?বছরের পর বছর যাকে হৃদয়ে সযত্নে লালিত করেছি সে আমার চিত্ত চি!ড়ে চলে যাচ্ছে আমি কী করে শান্ত হই রে ভাই!কী করে হই!ও ভাই!আমার প্রণয়কে বাঁচা না ভাই।ভাইরে!আমার প্রণয়….আমার প্রণয়কে ওরা মে*রে ফেলবে ভাই।ও ভাই!ভাইরে!”

বলতে বলতেই ধীরে ধীরে ভাইয়ের বুক থেকে নেমে হাত ধরে তার পায়ের কাছে পড়ে চাঁদ।অতঃপর চৈত্রের পা ধরেই কাদতে কাদতে বলে,

“আমি তো এভাবে কাউকে বলতে চাইনি রে ভাই!বলতে চাই নি!আমার প্রণয় কে এনে দে না ভাই!এনে দে।আমি ম*রে যাচ্ছি।আমা…..আমাকে বাঁচা”

বলেই ঢলে পড়তে নিলে তৎক্ষণাৎ দৌড়ে আসে রায়হান।এসেই চাঁদকে ধরে দাড় করায়।অতঃপর তার দুই গালে আলতো থাপ!ড়াতে থা!পড়াতে বলে,

“চোখ বন্ধ করবেনা চাঁদ।তোমাকে সজাগ থাকতে হবে।চোখজোড়া খুলে রাখতে হবে প্রণয়ের জন্য।কেউই তোমার কাছে প্রণয়কে এনে দেবেনা।তোমার নিজেকেই প্রণয়ের কাছে যেতে হবে।তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে।সেজন্য পথ খোঁজো!তোমাদের অতীতের দিনের কথা ভাবো যখন সমস্যাগুলো শুরু হয়েছিলো।কী করে প্রণয়কে আনা যায় তাই ভাবো!তোমাকেই আনতে হবে চাঁদ।তুমিই পারবে আমার ভাইকে ফেরাতে”

চাঁদ আকস্মিক চোখ খুলে রায়হানকে জড়িয়ে ধরে বলে,

“ভাইয়া!ও ভাইয়া!আমায় একটা উপায় বলুন না।বলুন না।আমি তো কিছুই ভাবতে পারছিনা”

চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে চাঁদকে বিছানায় বসিয়ে ইশারায় চৈত্রের কাছে পানি চায় রায়হান।অতঃপর চাঁদকে পানি খাইয়ে বলে,

“আগে নিজেকে ঠান্ডা করো।আমরা একটা ব্যবস্থা অবশ্যই করবো!তুমি আগে নিজের মাথা ঠান্ডা করো।লম্বা শ্বাস নাও।ভাইয়া তোমার পাশেই আছি।আমি প্রণয়কে নিয়ে আসবো।তোমার জন্য আমি প্রণয়কে ছাড়িয়ে আনবো”

রায়হানের বুকে মাথা রেখেই চাঁদ বলে,

“সত্যি ভাইয়া?”

“হ্যা সত্যি”

অতঃপর ঘনঘন শ্বাস নিয়ে রায়হানের সাথেই লেপ্টে থাকে চাঁদ।রায়হান চাঁদকে ধরে রেখেই বাকিদের নিকট প্রশ্ন করে,

“কারো কাছে কোনো উপায় আছে?এই বিক্ষোভে আদোতে কিছু হবে?যদি প্রণয়ের সত্যিই!”

হঠাৎ চাঁদ চেচায়,

“না!… ”

ফের চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে রায়হান বলে,

“হিশ!শান্ত হও।কিছু হবেনা প্রণয়ের।অরিন গিয়েছেতো। আমরাও কিছু না কিছু করবোই।কিন্তু কী?কী করবো রে রামিম?কিছু করা যাবে?খোঁজ পেলি প্রণয়কে কোথায় নিয়েছে?”

রামিমের থেকে আশানুরূপ জবাব আসেনা।তাই দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে অরণই বলে,

“চাঁদ আর প্রণয়কে কি দূরে কোথাও পালাতে দেবো?কিন্তু প্রণয়কে ছাড়িয়ে আনবো কী করে?অরিন কি পারবে?”

হঠাৎ রিহা বলে,

“অহেতুক কথা বলিস না।প্রণয়কে সেখান থেকে আনা সম্ভব না।আর আনলেও কোথায় পালাবে ওরা?যেখানেই যাবে খুঁজে ঠিকই বের করবে”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে রায়হানের বুক থেকে মাথা তুলে গম্ভীর কন্ঠে চাঁদ বলে,

“আমার প্রণয় এরূপ কাজ কখনোই করবেনা।আমিও চাইনা এমন কিছু করতে।আমি আমার প্রণয়কে স্বসম্মানে বের করবো”

অতঃপর অরণের দিকে নির্লস চাহনী নিক্ষেপ করে শান্তস্বরে বলে,

“আপনাকে যে আমি তাদের বিরুদ্ধের সকল প্রমাণস্বরূপ একটা ফোন দিয়েছিলাম সেই ফোনটা কোথায় অরণ?”

চাঁদের কথা শুনে কপাল মাত্রাতিরিক্ত কুচকে অরণ বলে,

“হ্যা!ফোনটা!ফোনটাতেই তো সব প্রমাণ ভিডিও করা ছিলো।সেটা দেখালেই প্রণয়কে ওরা ছাড়তে বাধ্য!কিন্তু ফোনটা?ফোনটা?”

বলতে বলতেই চোখজোড়া বুজে অরণ।অতঃপর চোখমুখ কুচকে চিন্তা করতে করতেই চাঁদের কন্ঠ শুনে চোখ খুলে চাঁদের পানে তাকায় সে,

“কোথায় রেখেছিলেন অরণ?”

অরণ অনেক্ক্ষণ চিন্তা করে হঠাৎ ই বলে,

“জুতা!হ্যা জুতার ভেতর রেখেছিলাম।যেনো ওরা বুঝতে না পারে।কিন্তু তুমি যখন আমায় আ*ঘা*ত করলে তারপর আর কিছুতো আমার জানা নেই।তোরা পেয়েছিলি ফোনটা?”

রিহা প্রশ্ন করে,

“কীসের ফোন?”

রবিন জবাব দেয়,

“তুই জুতার ভেতর ফোন রেখেছিলি অরণ?কিন্তু আমরাতো এমন কিছু পাই নি”

চাঁদের নিকট এসে গম্ভীরভাবে মিরা বলে,

“সে কি তার মোজার ভেতরে ভরে ফোনটা রেখেছিলো কিনা জিজ্ঞেস করো তো চাঁদ!”

মিরার কথা শুনে মিরার নিকট এগিয়ে এসে তার দুই বাহুতে হাত রেখে নিজের দিকে মিরাকে ঘুরিয়ে অরণ বলে,

“তুই পেয়েছিস?তুই পেয়েছিলি মোবাইল টা?আমি মোজায় ভরে জুতার ভেতরই রেখেছিলাম মিরু।তুই ই পেয়েছিস তাইনা?এখনো ফোনটা রেখেছিস নাকি ফেলে দিয়েছিস?”

অরণের চোখে চোখ রাখতে পারেনা মিরা।যন্ত্রের ন্যায় দাঁড়িয়ে থেকে অরণের বুকের দিকে চোখ রেখে বলে,

“না।আছে আমার কাছে।রেখে দিয়েছিলাম”

“কোথায় এখন?”

“বাসায়”

“চল তাহলে”

“কিন্তু একটা সমস্যা আছে”

ভ্রু কুচকে অরণ বলে,

“কী সমস্যা?”

সেভাবে থেকেই ধীরকন্ঠে মিরা বলে,

“ফোনটা ভেঙেচুরে গিয়েছে।আমি জানিনা তোরা সেটা দিয়ে কীভাবে কী করবি”

মিরার কব্জি ধরে তাকে নিজের সাথে নিতে নিতে অরণ বলে,

“আগে চল তো!এই চাঁদ চলো”

চাঁদও অরণ মিরার পিছু আসে।সেখানে উপস্থিত সকলেই রওয়ানা হয় তাদের সাথে তবে রুবাদের সাথে রিহা আর রামিমকে রেখে যায় তারা।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে হাতে মাইক নিয়ে হাজির হয় অরিন।সাথে আছে সমুদ্র,মির আর উশ্মি।মিরের হাতে ফোন।সে তার ফোনটা অরিনের দিকেই তাক করে রেখেছে।অরিনের ফেসবুক পেইজ থেকে লাইভে এসেছে মির।সেটাই ব্যাক ক্যামেরা দিয়ে অরিনের দিকে করে রেখেছে।আর অরিন সামান্য কেশে মুখের সামনে বড় মাইকটা এনে বলতে আরম্ভ করে,

“হ্যালো?হ্যালো?অ্যাটেনশন এভ্রিওয়ান।আমি ধাণমণ্ডি থানার মেইন জেলার এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির সহকারী কমিশনার।লাইভে কেনো এসেছি সেটাও বলছি তার আগে ডক্টর লিমা?এখানে আসুনতো একটু!”

অরিনের জোরালো কন্ঠ মাইকে শুনতে পেয়ে তার নিকট লিমা এগিয়ে আসতেই অরিন মিরকে ইশারা করে আর মির লিমার দিকে ফোন ঘুরায়।অতঃপর অরিন লিমার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে মাইকের সামনে মুখ রেখেই ক্যামেরার দিকে চেয়ে ফের বলা শুরু করে,

“এতক্ষণে তো সকলেই সকল খবর জানেন।তবে যা জানেন না সেটা হচ্ছে ডক্টর রুহায়ের প্রণয়কে আগামীকাল বাদ জুমা নয়,বরং আজ রাতের মধ্যেই ফা*সি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।এবং তার উদ্দেশ্যে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সেই বিকেলবেলাই নিয়ে যাওয়া হয়েছে।এখন তাকে কোন কারাগারে নেয়া হয়েছে এবং কোথায় ফা*সি দেয়া হবে তা আমরা কেউই জানিনা।কাইন্ডলি যারা যেখান থেকে যেই স্থান থেকেই আন্দোলন করে যাচ্ছেন যদি প্রণয়কে কোথাও দেখেন!অথবা কোন জেলে নেওয়া হয়েছে তার কোনো খবর পান ইমিডিয়েট এই লাইভের ক্যাপশনে কয়েকটা নাম্বার দেওয়া হয়েছে তাতে ফোন করে জানাবেন প্লিজ!আপনাদের একটা পদক্ষেপ একজন ভালো এবং নিষ্পাপ মানুষকে বাঁচাতে পারে।একজন খু*নীকে নিষ্পাপ বলায় বিব্রত হবেন না!কেনোনা সে যাদের খু*ন করেছে তারা একেকটা নর্দমার কী*ট থেকেও জঘন্য!ধ!র্ষকদের শাস্তিস্বরূপ প্রণয় তাদের মৃ*ত্যু দিয়েছে।আমি নিজেও তাতে সন্তুষ্ট।যেখানে মেয়র আহিনেরই তার বাবার মৃ!ত্যুতে কোনো আফসোস নেই সেখানে অন্যকারোও থাকার কথা নয়।তাছাড়া অধিরাজ শেখ এবং তার চেলারা শুধুই ধ!র্ষক নয়।তাদের প্ল্যান আরও বড় ছিলো এবং সেটা ছিলো দেশের বিরু*দ্ধে।তারা ছিলো দেশদ্রো*হী।দেশদ্রো!হীদের মে*রে প্রণয় অবশ্যই কোনো অন্যায় করেনি।বরং তার সাথে এতদিন জেলের ভেতর অন্যা*য় হয়েছে।তাকে রিমাইন্ডে নেয়া হতো প্রতিদিন!তবুও সে কিছুই বলতোনা।হাসিমুখেই মেনে নিতো।কার্ডিয়াক সার্জন রুহায়ের প্রণয় সম্পর্কে আপনাদের বেশিরভাগেরই জানার কথা!তার ডাক্তারী সম্পর্কেও জানার কথা।সে অপারেশন করেছে এবং তাতে কারো মৃ*ত্যু হয়েছে এরূপ রেকর্ড এখনো পাওয়া যায়নি।বরং তাকে সকলে সম্মান করে।আর আপনারা সেই প্রণয়কেই ভুয়া ডাক্তার,ভন্ড,খু*নী,ঠক,প্রতারক বলছেন।কিন্তু কেনো?তার দোষ টা কোথায়?সে কেবলই ধ!র্ষকদের শাস্তি দিয়েছে সেজন্য?এমন ফা*সি মানিনা!আমিও চার দফার পক্ষে।এই যে এই চার দফা সরকারকে মানতেই হবে!’ধ!র্ষণ’ নামক সামাজিক এই ব্যাধি দেশ থেকে পরিত্রাণ করতেই হবে!আমরা মেয়েরা কেনো ধ!র্ষণের ভয়ে ধুকে ধুকে ম*রবো?এই আন্দোলনে যোগদান এবং চার দফার পক্ষে থাকার জন্য যদি আমার পদবী ত্যাগ হয়।আমাকে বরখাস্ত করা হয় তাতেও আমার কোনো আফসোস নেই!তবে প্রণয়ের ফা*সি আমি মানিনা!আমরা মানবোনা!ঠিক কিনা আপুরা?”

সেখানে উপস্থিত সকল মেয়েই সমস্বরে বলে উঠে,

“হ্যা!হ্যা মানিনা।মানবোনা”

অতঃপর সমুদ্র আর উশ্মি এগিয়ে আসে সামনে।তাদের হাতেও মাইক।এবারে মির তাদের দিকে ফোন তাক করতেই উশ্মি মুখের সামনে মাইক রেখেই বলা শুরু করে,

“আসসালামু আলাইকুম!আমি ব্যারিস্টার উশ্মিতা উশ্মি। ডক্টর রুহায়ের প্রণয়ের সেকেন্ডারি অ্যাডভোকেট।সেইসাথে এও জানিয়ে দেই আমি তার চাচাতো বোনও।সে আমার ভাই বলে তার পক্ষ নিচ্ছি ভাবার কোনো প্রয়োজন নেই।সর্বপ্রথম আমি একজন নারী।আর একজন নারী হয়ে অপর নারীর সংসার উজার হতে তো দেখতে পারি না তাই না?আমার ভাবি ডক্টর চাঁদ।প্রণয় ভাইয়ার ওয়াইফ,সে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা।এখন আপনারাই বলুন এমন কয়েকজন মানুষের খু*নের দায়ে আমার ভাইকে ফা*সি দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত যারা কিনা ধ!র্ষক ছিলো!আমার ভাবি কতটা প্রেশারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে বোঝাতে পারবোনা।আচ্ছা পারিবারিক জিনিস সাইডে রাখলাম।যুক্তি দিয়েই ভাবুন সে দোষের কী করেছে?শুধু এটাই যে আইন নিজ হাতে তুলে নিয়েছে।ব্যাস এইটুকুই!হয়তো বলতেই পারেন আমি তার বোন বলে অহেতুক কথা বলছি।একজন ব্যারিস্টারের মুখে আইনবিরো*ধী কথা মানায় না।তবে আমি এটাই বলবো যে এটা কেমন আইন যেই আইনে ধ!র্ষণের কোনো শাস্তি নাই?বরং যে ভিক্টিম তাকেই দোষারোপ করা হয়?একজন মেয়েকেই বলা হয় সে নিজেকে প্রদর্শন করিয়ে বেরিয়েছে বলেই তার সাথে অমন হয়েছে!সেও তাতে স্বায় দিয়েছে?এমনটা কেনো?আরে ভাই!বোরকা পরেও তো আজকাল মেয়েরা সুরক্ষিত নয়।নোংরা লোকেদের নোংরা দৃষ্টি কয়েকটা জায়গায় গিয়েই আটকে যায়!হোক সেটা বোরকা পরেই অথবা হোক হিজাব পরিধান করলেও।তার চোখ সেখানে যাবেই!লোলুপ দৃষ্টি দিয়ে চাইতেই হবে!মানে কেনো?এরকম টা কেনো?দেশে প্রতিদিন প্রতিনিয়তই ধ!র্ষণ হচ্ছে।ধ!র্ষিতা কেউ আত্মহ*ত্যা করছে তো কাউকে আবার মে*রেও ফেলা হচ্ছে।সেই খবর কি আমরা জানি?খোঁজ রাখি?আমাদের জানানো হয়না!এতটা সাহস কারো মাঝে নেই যে এসব বিষয় সামনে আনবে!একজন ভিক্টিমেরই কেনো সবসময় দোষ হয়?তাকে কেনো দুর্বল ভাবা হয়?সে মেয়ে বলে?কেনো?সবসময় এমনটাই কেনো!এখন যদি আমার ব্যারিস্টারী ডিগ্রি বাতিলও হয় তো হোক!তবুও আমি,আমরা এই ফা*সি মানিনা!মানবোই না!চার দফার পক্ষে আমিও আছি!প্রণয় ভাইয়াকে একবারের জন্য ছেড়ে দিতে বলবোনা।এতই যেহেতু আইন এই দেশে মানা হয় তাকে কয়েক মাস?কয়েক বছরের শাস্তি দিক!ফা*সি কেনো দিতে হবে?আমার ভাইয়ের দোষ টা কোথায়?তার বাচ্চা কেনো বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হবে?দেশের আইন এমন কেনো?এখন কি মেয়র আহিনকেও মেয়র পদবী থেকে বাদ করা হবে নাকি?কয়জনকে কয় জায়গা থেকে বাদ দেবে এই সরকার?কেনো দেবে?অপরাধ কী?”

অতঃপর উশ্মি থামতেই সমুদ্র ধীরকন্ঠে মাইক নিয়ে বলে,

“আমি ব্যারিস্টার সমুদ্র চৌধুরী।আর আমি কিন্তু ডক্টর প্রণয়ের কিছু লাগিনা।আত্মীয়ও নই।তবে আমি তার পক্ষের অ্যাডভোকেট।আমি ব্যাস এতটুকুই চাইবো আইনের মধ্যে থেকে তার সঠিক বিচার করা হোক।না কি অহেতুক ফা*সির মতো কোনো বিবেচনাহীন শাস্তি।আমিও বলতে চাই প্রণয় ভাইয়ার ফা*সি আমিও মানিনা।তার মুক্তি কামনা করছি।চার দফা দাবি আন্দোলন করছি।আমাদের দাবি মানতেই হবে।না মানলে দেশে কী ধরণের প্রলয় আমরা ঘটাতে পারবো তার ধারণাও কারো নেই।তাতে আপনাদের সকলের সাহায্যের প্রয়োজন!প্লিজ আসুন,সাহায্য করুন।যেখানেই প্রণয় ভাইয়ার কোনো খোঁজ পাবেন আমাদের তৎক্ষনাৎ জানানোর অনুরোধ”

সমুদ্রের পরপরই ফের অরিন মাইক হাতে নিয়ে বলে,

“যে যেখানে যেভাবেই আছেন বের হয়ে পড়ুন!আজ নয় তো আর কোনোদিনই নয়।ধ!র্ষণ রুখতে হলে আজই বের হতে হবে বোনেরা,ভাইয়েরা!আমি সাব-কমিশনার অরিন আপনাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিচ্ছি!আসুন সাহায্য করুন!”

To be continued……

#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম

১১.
প্রকৃতি নীরব।কোথাও একটা কাকপক্ষীর দেখা নেই।বাতাসের শো শো শব্দ এতক্ষণ যাবৎ ঠিকই প্রণয়ের কর্ণকুহর হয়েছে।তবে আপাতত হট্টগোল আর দূর হতে শোরগোলের শব্দ ভেসে আসছে কানে।প্রকৃতি আর নীরব বসে থাকেনি।দুই হাতেই হাতকড়া পরাবস্থায় হাজতের ভেতরে একপাশে বসে আছে প্রণয়।সে খুব ধ্যানমগ্ন হয়ে শোনার চেষ্টা করছে বাইরে কী নিয়ে এত আওয়াজ চেচামেচি হচ্ছে।বেশকিছুক্ষণ নীরব থেকে চোখজোড়া বন্ধ রেখে মনোযোগ দিতেই কানে ভেসে আসে,

“ডক্টর প্রণয়ের ফা*সি আমরা মানিনা,মানবোনা!”

“ডক্টর প্রণয়ের মুক্তি চাই,মুক্তি চাই”

“আমাদের চার দফা মানতে হবে”

মুহূর্তেই কপাল ঈষৎ কুচকায় প্রণয়ের।কপাল কুচকে রেখেই চোখজোড়া খোলে সে।সে কি সঠিক শুনলো?নাকি তার ভ্রম কোনো?আদোতে সে ঠিক শুনেছে তো?যদি শুনেই থাকে তবে এরকম টা কেনো?মানুষ এসব বলছে কেনো?পাঁচ-ছয়দিন আগেইতো তার ফা*সির জন্য পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছিলো।তবে আজ এমন কী হয়ে গেলো যে তারা তার মুক্তি চাচ্ছে?খু*নী ডাক্তার বলে বলে জেলে আসার পথে ছোট ছোট ইট,টমেটো,ডিম মে*রেও যারা ক্ষান্ত হয়নি ফা*সি লাগবে বলতে তাদের লাগবেই তারাই বা কেনো তার ফা*সি এখন মানছেনা?হঠাৎ করে কী এমন বিশেষ কার্য ধার্য হলো?কিছুই বোধগম্য হয়না প্রণয়ের।তাই সে হাজতের শিকের সামনে এসে হাবিলদারকে ডেকে প্রশ্ন করলো,

“বাইরে কীসের এত শোরগোল হচ্ছে মামা?”

“আপনি জানেন না?”

প্রণয়ের গম্ভীর উত্তর,

“না”

“ওহ হো!জানবেন ও কী করে ছিলেন তো থানায়ই।আসলে বিকাল থেকে মিছিল,বি*ক্ষোভ হচ্ছে।আপনাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য।চার দফা দাবিতেও জনগণ নেমেছে”

কপাল মাত্রাতিরিক্ত কুচকে প্রণয় বলে,

“কিন্তু এরকম টা কেনো?জনগণই তো আমার ফা*সিটা দ্রুত চেয়েছে।তাহলে এখন কী হলো?”

“অধিরাজ শেখ আর যাদেরকে আপনি খু*ন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে বেশকিছু তথ্য লাইভে এসে ডক্টর লিমা,কমিশনার ম্যা’ম অরিন বলেছেন।তারাই বি*ক্ষোভ আর চার দফার দাবি করেছেন”

“কা….কীসের তথ্য?কী তথ্য দিয়েছে তাদের নামে?”

“তারা নাকি ধ!র্ষক ছিলো।তাদের একটা পতিতালয়ও ছিলো কিন্তু সেটা নাকি আপনি আর মেয়র আহিন মিলে বিনষ্ট করেছেন।যদি এটা শুধু ডাক্তার ম্যাডামই বলতেন তাও অবিশ্বাস করা যেত কিন্তু মেয়র আহিন আর অরিন ম্যা’ম বলেই বেশ অস্বস্তিতে ফেলেছেন।বিশ্বাসও করা যাচ্ছেনা,আবার অবিশ্বাসও।তবে আমি মনে করি তারাই ঠিক।আপনার সম্পর্কে আমি অনেক কিছুই জানি।কেউ কাউকে শুধু শুধু মা*রবেনা তাও আবার এতটা জঘ*ন্যভাবে!”

মনে মনে বেশ অস্থির হয়েও লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে প্রণয় বলে,

“আর কী বলেছে?কার ধ!র্ষণ কিছু বলেছে?”

“হ্যা বলেছে তো”

এবারে চোখজোড়া খানিক ছোট করে ঘনঘন শ্বাস নিয়ে স্বাভাবিক হয়ে প্রণয় প্রশ্ন করে,

“কী বলেছে?”

“ঢাকা মেডিকেলের অনেক ডাক্তার মেয়েদের কথাই বললো।মেয়েরা নিজেরাই সেসব স্বীকার করেছে।মানে মহিলা ডাক্তারগুলো।আরও অনেক কিছুই বলেছে”

প্রণয় বেশ অস্থির হয়ে আছে।সে কপাল কুচকে মনে মনে ভাবছে সে যেই সত্যটা লুকিয়ে রেখে ধামাচাপা দেয়ার জন্য এতকিছু করলো তা কি এবার বেরিয়ে আসলো?কেউ কি সেই সত্যিটা বলে দিয়েছে?কলঙ্কের দাগ কি তার প্রাণেশ্বরীর গায়ে লেগে গেলোই?এরূপ বিভিন্ন প্রসঙ্গ চিন্তা কর‍তে করতেই একজন পুরুষের গলার স্বরে ধ্যান ভাঙে প্রণয়ের।আর সে তার পানে চায়,

“কী হয়েছে?একজন খু*নের আসামীর সাথে কীসের এত কথা তোমার মোকবুল?”

মোকবুল হাবিলদার হকচকিয়ে যায় লোকটার কথা শুনে।সে আমতা আমতা করে বলে,

“আ…..আসলে স্যার ওনি জিজ্ঞেস করছিলো বাইরে কীসের এত আওয়াজ”

“তো তুমি বলে দিয়েছো সবটা?”

“হা….হ্যা!”

হাবিলদারের কথায় বেশ বিরক্তি নিয়ে তখনই লোকটা প্রণয়ের সামনে এসে শিকের উপর হাত রেখে গম্ভীর দৃষ্টিতে প্রণয়কে পরখ করে বলে,

“ভুলেও ভাববেন না এসব বি*ক্ষোভ,মিছিল বা কোনো দফা টফা আপনার মতো ব্লা!ডি কিলারকে বাঁচাতে পারবে।এতগুলো খু*ন করার পরেও আশা রাখছেন আপনি বেঁচে যাবেন?হাউ সিলি!”

হাজতের শিক ধরে রেখেই বাকা চোখে লোকটার পানে চেয়ে বেশ গম্ভীর কন্ঠে প্রণয় বলে,

“সাচ আ ফুলিশ ইন্সপেক্টর!আপনাকে কে বললো আমি কোনো আশা রাখছিও?”

“দাম্ভিকতা কমে না তাইনা?জেলের ভেতর দাঁড়িয়ে আছেন।একটু বাদেই ফা*সির দুয়ারে হাজির হবেন।অতঃপর ম*রে যাবেন দাম্ভিকতা তাও কমেনা না?”

খানিক কেশে গম্ভীরসুরেই প্রণয় শুধায়,

“প্রণয়ের কোনোকালেই দাম্ভিকতা ছিলোনা।তার একটাই দম্ভ,একটাই গর্ব তার প্রাণেশ্বরী কেবলই তার।তাছাড়া জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে?”

কপাল বেশ কুচকে ইন্সপেক্টর বলে,

“প্রাণেশ্বরী?ইউ মিন আপনার ওয়াইফ হা?”

বেশ তীক্ষ্ণ আর ধারালো দৃষ্টি লোকটার পানে নিক্ষেপ করে প্রণয় বলে,

“ডোন্ট ট্রায় টু থিংক আ ব্লা!ডি শি*ট ‘বাউট হার।অর ট্রায় টু কিপ আই অন হার।আদারওয়াইজ আয় ওন্ট স্পেয়ের ইউ মিস্টার রুবায়েত” [তার সম্পর্কে একটা খারাপ চিন্তা অথবা তার উপর নজর রাখার চেষ্টাটুকুও করবেন না মিস্টার রুবায়েত।নাহয় আমি আপনাকে ছেড়ে দেবোনা]

প্রণয়ের কথায় যেনো বেশ মজা পায় ইন্সপেক্টর রুবায়েত।সে খানিক হেসে বলে,

“কী করবেন আপনি মিস্টার প্রণয়?আপনার বউকে নিয়ে যদি আমি কিছু ভাবিও কী করবেন টা কী আপনি?কিছু করার জন্য আপনার বেঁচেও তো থাকতে হবে তাইনা?একটু পরেইতো পগারপার হয়ে যাবেন!”

বলেই আরেকদফা হাসে রুবায়েত।আর প্রণয় তার পানে ধারালো দৃষ্টি বজায় রেখেই বলে,

“ইউ হ্যাভ নো আইডিয়া হোয়াট আয় রিয়েলি ক্যান ডু অর কান্ট।আমার বউয়ের জন্য আমি কী কী করতে পারি সেটা সম্পর্কে দুঃস্বপ্নে ভাবার ক্ষমতা আমার বউয়ের নিজেরও নেই!তাছাড়া আমি যদি বেঁচে নাও থাকি হাউ ক্যান ইউ থিংক আপনি আমার ওয়াইফের ধারেকাছেও যেতে পারবেন?শি ইজ নট লাইক দুজ টাইপ অফ ব্লা!ডি গার্লস।আমিতো জিভ টেনে ছুড়ি দিয়ে কে*টে ফেলেছি কিন্তু সে?সে হাত দিয়ে টেনেই ছি*ড়ে ফেলবে।ডোন্ট ট্রায় টু বি ওভারস্মার্ট।দ্যাট গার্ল ওয়াজ অলওয়েজ মাইন!অ্যান্ড অলওয়েজ উইল বি মাইন।চন্দ্রময়ীর জন্মই হয়েছে প্রণয়ের হৃদয়ে বসবাস করার জন্য।সে অন্য কারো হৃদয়ে পা টুকু পর্যন্ত দেয়ার চেষ্টা করবেনা।বিকজ!শি ইজ প্রণয়’স বেটার হাফ অ্যান্ড অনলি অ্যান্ড অনলি হিজ রেডরোজ।গট ইট?মিস্টার রুবায়েত!”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রাত আটটা বেজে দশ মিনিট,
মিরার বাড়িতে এসেই তার রুমে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে চাঁদ।অতঃপর মিরাকে জিজ্ঞেস করে,

“কোথায় রেখেছো আপু?কোথায় রেখেছো মোবাইল?”

মিরা চাঁদকে শান্ত করিয়ে বিছানায় বসিয়ে বলে,

“শান্ত হয়ে বসো।আমিই বের করে দিচ্ছি”

অস্থির ভঙ্গিমায় চাঁদ বলে,

“কী করে শান্ত হই আপু?সময় তো ফুরিয়ে যাচ্ছে!প্লিজ তাড়াতাড়ি”

অতঃপর নিজের আলমারির ভেতরে রাখা ছোট্ট ওয়ারড্রব চাবি দিয়ে খুলে সেখান থেকে একটা ভাঙাচুরা মোবাইল বের করতেই চাঁদ উঠে আসে সামনে।এসেই মিরার হাত থেকে তা নিয়ে অন করার চেষ্টা করে তবে সম্ভব হচ্ছেনা।চাঁদ পারছেনা বলে তার হাত থেকে অরণ ফোনটা নিয়ে নিজেও চেষ্টা করে তবে সেও ব্যর্থ হয়।অতঃপর মিরা অসহায় কন্ঠে বলে,

“আগেইতো বলেছিলাম ফোনটা ভেঙে গিয়েছে।সম্ভবত তুই মোবাইল পায়ে রেখে দৌড়েছিলি তাই এরকম টা হয়েছে”

মিরার কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে অরণ বলে,

“হয়তো তাই ই”

এবারে রায়হান প্রশ্ন করে,

“তাহলে এখন?”

চাঁদ অরণের হাত থেকে মোবাইলটা নিতে নিতে বলে,

“এখন আর কী?অবশ্যই এটা ঠিক করিয়ে আমাদের প্রণয়ের কাছে যেতে হবে”

চৈত্রের প্রশ্ন,

“কিন্তু এত পুরোনো ফোন আদোতে ঠিক হবে?আর এটা তোর ফোন না?”

চাঁদ জবাব দেয়,

“হিম।আমি জানি ভাই ফোন ঠিক হবে।ঠিক হওয়াই লাগবে।আমার প্রণয়ের কিছু হতে পারেনা।আমি হতে দেবোনা।আমার বাচ্চা তা হতে দেবেনা”

বলেই খানিক থেমে বলে,

“রায়হান ভাইয়া আপনি আর রবিন ভাইয়া অরিনদের কাছে গিয়ে বলবেন প্রণয়ের খোঁজ পেলে সাথে সাথে জানাতে আমরা ফোন রিপেয়ার করাতে যাচ্ছি।আর অরিনকে বলে রাখবেন সে যেনো উপরমহলে কথা বলে রাখে,তার প্রয়োজন পড়বে”

তখনই মিরা বলে,

“সবটা সম্ভব হবে চাঁদ?”

চাঁদ অস্থিরচিত্তে বেরুতে বেরুতে বলে,

“অসম্ভবকে সম্ভব আমার করতেই হবে আপু!”

“কিন্তু সময়তো বেশি নেই চাঁদ”

“সময়কে আজ আমার সাথে থাকতেই হবে আপু!এবার চলো।জলদি!”

অতঃপর ঘন্টা দেড়েকের পথ অতিক্রম করে রিপেয়ারিং অফিসে এসে হাজির হয় তারা।দোকানে দোকানে মোবাইল দেখিয়ে রিপেয়ার করার কথা বললেই চাঁদকে দেখে অনেকেই নাকচ করে দেয়।বহু চেষ্টা করেও চাঁদ যখন কিছু থেকে কিছু করতে পারেনা তখন হতাশ হয়ে বসে পড়ে সে ফ্লোরে।পেটে প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে।মাথাও খানিক ঘুরাচ্ছে।এমতাবস্থায় মিরা চাঁদের পাশে বসে তাকে ধরে বলে,

“বেশি খারাপ লাগছে চাঁদ?চলো কোথাও বসবে”

চাঁদ উঠার চেষ্টা করে বলে,

“না আপু।আমি ঠিক আছি চলো অন্য মলে যাই”

বলে উঠতে নিলেই ফের পড়ে যায় চাঁদ।তবে এবারে একপাশ দিয়ে অরণ আর অপরপাশে মিরা ধরে তাকে।বোনের করুন অবস্থা দেখে মাত্রাতিরিক্ত মেজাজ খারাপ হয় চৈত্রের।অতঃপর আকস্মিক গ‌!র্জে উঠে সে,

“সমস্যা কী?আপনাদের মধ্যে ন্যূনতম মনুষ্যত্ববোধ আছে?মনুষ্যত্ব বলতে আদোতে কিছু বোঝেনও?খু*নীর স্ত্রী বলে বলে দূর করছেন?আপনারা কেউ কি কমিশনার অরিন,ডক্টর লিমাসহ ঢাকার মেয়র আহিন শেখের লাইভ দেখেননি!তাদের দেখানো প্রমানসমূহ চোখে পড়েনি?একজন প্রেগন্যান্ট মেয়ে তার স্বামীর জন্য জানপ্রাণ লাগিয়ে দিচ্ছে আর আপনারা তাকে মানসিকভাবে আ*ঘা*ত করে যাচ্ছেন?আবার কটুক্তিও করছেন ছিহ!আপনারা আদোতে মানুষ?সেই কাতারে পড়েনও?চল ছোটি অন্য কোথাও যাবো আমরা!”

বলেই চাঁদকে নিয়ে যেতে চাইলে এক মেয়ে এসে চাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে চৈত্রকে বলে,

“প্লিজ ভুল বুঝবেন না ভাইয়া।আসলে পুলিশের গেঞ্জাম কেউ চাচ্ছেনাতো তাই আরকি কেউ আপনাদের হেল্প করতে চাইছেনা।কিন্তু আপনারা আমার সাথে চলুন।আপুর অবস্থাতো ভালো না।একটু পানি খেয়ে নিবে।আসুন”

বলে চাঁদকে নিয়ে নিজেদের দোকানে নিতে গেলেই মেয়েটার ভাই বলে,

“দেখ রিমু শুধু শুধু ঝামেলা পাকাবিনা।এখানে আয়।দোকান বন্ধ করে আমরা চলে যাবো।জলদি আয়”

ভাইয়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে কপাল কুচকে রিমু মেয়েটা নাকমুখ ফুলিয়ে কিছু বলার পূর্বেই চাঁদ রিমুর প্রস্তাব নাকচ করে বলে,

“থ্যাংক ইউ আপু কিন্তু পানি খাওয়ার মতো সময় এখন আমার হাতে নেই।আমার প্রণয়কে আমার বাঁচাতে হবে”

বলে যেতে নিলেই ফের মাথা তার চক্কর দিয়ে উঠে।আর রিমু মেয়েটা তাকে ধরে বলে,

“প্লিজ আপু আপনার অবস্থা ভালোনা।বেবির সমস্যা হতে পারে।বসুন একটু।আমার ভাই যদি না পারে এই ফোন আমিই আপনাকে রিপেয়ার করে দেবো আসুন প্লিজ!”

মেয়েটার কথা শুনে আশার আলো দেখে চাঁদ।অতঃপর মেয়েটার সাথে যেতে নিলেই রিমুর ভাই বলে,

“রিমু তুই কিন্তু এবার….”

ভাইকে চুপ করিয়ে রিমু বলে,

“শাট আপ ভাইয়া।মেয়েটা প্রেগন্যান্ট।এতদূর থেকে এসেছে।নিশ্চয়ই তার হাজবেন্ড ভুল কিছু করেনি।আর করলেও কী?ডক্টর প্রণয় ঠিকই করেছে।আমি প্রণয়কে চিনি।সে বেশ উচ্চমানের আর ভদ্র ডাক্তার।অযথা কথা বাড়াবেনা।এবার আর তোমাদের কারো কথা শুনছিনা।চুপ থাকো।আমার সময় নষ্ট করবেনা।একেকটা সেকেন্ড বেশ মূল্যবান”

বলেই চাঁদকে পানি খাওয়ায় মেয়েটা।তার ভাই ফের কিছু বলতে নিলেই মেয়েটা এবার চেচিয়ে উঠে,

“আমি চুপ থাকতে বলেছি কিনা?”

বোনের গর্জনে ছেলেটা চুপ মেরে যায়।আর চাঁদ পানি খেয়েই বলে,

“প্লিজ আপনারা ঝগড়া করবেন না”

চাঁদের কথা শুনে ছেলেটা কিছু বলতে চাইলে রিমু তার দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে চোখ পাকাতেই ছেলেটা তার দৃষ্টি অন্যদিকে করে।আর চাঁদ মেয়েটার পানে চেয়ে বলে,

“আপনি পারবেন আপু শিওর?”

চাঁদের কথা শুনে রিমু নিজের ভাইয়ের দিকে আড়চোখে চেয়ে বলে,

“যারা পারে তারা যদি করতে না চায় আমাকেতো করতেই হবে!একজন মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের সর্বনা!শতো আর আমি দেখতে পারিনা।লাইভগুলো আমিও দেখেছি।আন্দোলনে যেতে চেয়েছিলাম মা আর ভাইয়া কেউই যেতে দেয়নি!তবে এখন আপনার ফোন ঠিক করে দিয়ে আন্দোলনে আমি যাবোই!দেখি আমায় কে আটকায়”

বলেই রিমু ফোন নিয়ে তার প্রতিটা পার্ট খুলে বোঝার চেষ্টা করছে আসলে ফোনে সমস্যাটা হয়েছে কী!কিন্তু কিছুতেই কিছু সে করতে পারছেনা।ঘামছে বারংবার।চাঁদ,মিরা বারবার মেয়েটাকে তাড়া দিচ্ছে তবে মেয়েটার দ্বারা কিছুই সম্ভব হচ্ছেনা।তা দেখে অরণ বেশ বিরক্ত হয়ে গম্ভীরভাবেই বলে,

“আপনি কি ফোনটা ঠিক করতে পারবেন আপু?একটু জলদি করুন অলরেডি দশটা বেজে গিয়েছে।বারোটার আগে প্রণয়কে খুঁজে আমাদের যেতেও হবে।প্লিজ জলদি করুন!”

মেয়েটা হকচকিয়ে বলে,

“জ্বি আমি চেষ্টা করছি”

তখনই মেয়েটার বড় ভাই এসে মেয়েটার হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে গম্ভীরভাবে বলে,

“যে যেটা পারেনা তার সেটা করাও উচিত না”

অতঃপর সে নিজেই মোবাইল নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ নানানধরণের জিনিস দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালায়।পরিশেষে আরও ঘন্টাখানেক যেতেই চৈত্র ছেলেটাকে তাড়া দেয়,

“একটু জলদি করুন ভাই এগারোটা বাজে।হাতে সময় নেই প্লিজ!প্লিজ একটু জলদি করুন।আমার বোনের শ্বাস বাড়ছে।একটু তাড়াতাড়ি করুন প্লিজ”

ছেলেটা বেশ বিরক্ত হয়ে বলে,

“ফোনটা বেশ পুরোনো মনে হচ্ছে!হয়েছিলো কী এটার সাথে?আর এত পুরোনো ফোন ঠিক করে করবেনই কী?আর এতে করে কীভাবে ডক্টর প্রণয়কে বাঁচাবেন?”

চাঁদ এবার অস্থির হয়ে বলে,

“প্লিজ ভাইয়া প্লিজ!একটু তাড়াতাড়ি করুন!এই ফোনটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ আমার আর প্রণয়ের জন্য।প্লিজ!”

অতঃপর আরও মিনিট পনেরো কিছু কারিগরি করে ছেলেটা পাওয়ার বাটন চেপে ফোনটা চাঁদের হাতে দিয়ে বলে,

“নিন আপনার ফোন!দেখুন সব ঠিক আছে কিনা”

ফোন চালু হতে দেখে চাঁদের চোখজোড়া খুশিতে ঝকমকিয়ে উঠে।আর ছেলেটা আড়চোখে নিজের বোনের দিকে তাকায়।মেয়েটাও তার ভাইয়ের দিকে চেয়ে ভাইকে মুচকি এক হাসি উপহার দেয়।কিন্তু তাদের হাসি নিমিষেই মিলিয়েও যায়।যখনই চাঁদ বাকিদের নিয়ে বের হতে নেবে এমন সময় সেখানে পুলিশ এসে তাদের ঘেড়াও করে।চাঁদ কপাল ঈষৎ কুচকে বলে,

“আপনারা?আপনারা এখানে কী করছেন?সমস্যা কী?”

“আপনি বেশ ভালো করেই জানেন আমরা কেনো এসেছি!এখান থেকে আপনাদের ব্যাপারে ফোন এসেছে।ঝামেলা পাকিয়েছেন নাকি?আমি বুঝতে পারছিনা সামান্য একজন খু*নীর ফা*সি নিয়ে এত মাতামাতির কিছুইতো দেখছিনা!”

অরণের হাতে ফোনটা বেশ সাবধানে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে লোকটার দিকে এগিয়ে যায় চাঁদ।অতঃপর তার গলা চে!পে ধরে হিংস্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

“কী বললি?কী বললি তুই?আমার প্রণয়কে তুই খু*নীতো বলছিসই আবার সামান্য বলছিস?তার নখের যোগ্য হওয়ার যোগ্যতাও তোর নেই!টাকাখোর চামচা!সর সামনে থেকে”

বলেই লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে তার বাকি সহকারীদের উপর ফেলেই অরণের হাত ধরে পেছন দিয়ে দৌড় দিয়ে চেচাতে চেচাতে বলে,

“ভাই,মিরাপু তোমরা প্লিজ এদেরকে দেখো আমি অরণের সাথে গেলাম।আর প্লিজ!দয়া করে আপনারাও প্লিজ তাদের একটু সাহায্য করুন।এটা একজন অসহায় মায়ের আর দিশেহারা স্ত্রীর অনুরোধ।প্লিজ!প্লিজ!”

অতঃপর অরণের হাত ধরেই প্রাণপণে দৌড়ায় চাঁদ।আর মিরা,চৈত্র পুলিশদের ধরে রাখার চেষ্টায় মত্ত।তাদের সাহায্য করতে রিমুও আসে।আসে তার ভাইও।একে একে সকলেই তাদের সাহায্য করার জন্য উদ্যত হয়।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
অরণের সাথে দৌড়াতে দৌড়াতেই চাঁদ অরণকে জিজ্ঞেস করে,

“কয়টা বাজে অরণ?”

অরণ পকেট থেকে ফোন বের করে তা দেখে দৌড়াতে দৌড়াতেই বলে,

“সাড়ে এগারোটা বাজে চাঁদ”

অতঃপর চাঁদের কব্জি ধরে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

“এই অবস্থায় এভাবে দৌড়ালে বাচ্চাকে তুমি মে*রে ফেলবে চাঁদ।প্লিজ থামো।আমরা গাড়ি নেই”

বেশ রুক্ষ কন্ঠে চাঁদ বলে,

“আমার প্রণয় ওখানে ম*রে যাচ্ছে আর আপনি আমাকে থামতে বলছেন?”

বেশ বিরক্ত হয়ে অরণ বলে,

“তুমি প্রণয়ের কথা ভেবে ভেবে বাচ্চার তো ক্ষ*তি করতে পারোনা।বাচ্চার কিছু হলে প্রণয় তোমায় মাফ করবে বলো?তোমাদের একমাত্র অংশ!এভাবে পাগলের মতো করলেতো হবেনা চাঁদ।তুমি এমনিতেই বাচ্চার অনেক ক্ষ*তি করে ফেলেছো।এবার ঠান্ডা হও।এখনো আধা ঘন্টা আছে।আমরা প্রণয়কে…..”

“কী বলতে চাইছেন আপনি?আধঘন্টায় প্রণয়কে খুঁজে তার ফা*সি আটকেও ফেলবো?যেখানে এখনো পর্যন্ত জানিই না তাকে কোন জেলে নেওয়া হয়েছে”

অরণ কিছু বলতে নিলেই চাঁদের ফোনে কল আসে।সে তার গায়ে থাকা প্রণয়ের র*ক্তেমাখা এপ্রোণের পকেটে রাখা মোবাইলটা হাতে নিতেই অপরিচিত নাম্বার দেখে ভ্রু কুচকায়।তবুও সেটা রিসিভ করে সালাম দিতেই অপরপক্ষ থেকে সালামের জবাব নিয়ে একজন লোক বলেন,

“ডক্টর প্রণয়কে ফতুল্লা থানায় নেয়া হয়েছে।এই মাত্রই জিপে করে কোথাও নেয়া হচ্ছে।হয়তো ফা*সি দেয়ার জন্যই…..”

সঙ্গে সঙ্গে চাঁদ ফোন কে*টে দিয়ে রায়হানকে কল দিয়ে এই পাশের সব খবর জানায়।আর এও বলে চৈত্রকে যেনো জানানো হয়।তখনই রায়হান বলে,

“আমরা অলরেডি নারায়ণগঞ্জের পথে বের হয়ে গেছি।কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে যাবো।অরিনের সেক্রেটারি আমাদের জানিয়েছে প্রণয়কে কোথাও নেওয়া হচ্ছে।সে তাদের ফলো করছে।লোকেশন ট্রেস করেই আমরা যাচ্ছি।তুমি অরণের ফোন দেখো লোকেশন পাঠিয়েছি।ওভাবে ওভাবেই এসে পড়ো”

রায়হানের সাথে কথা বলে ফোন কেটেই অরণের দিকে চেয়ে চাঁদ বলে,

“বেশি সময় নেই অরণ চল্লিশ বেজে গিয়েছে।ফতুল্লা থানা এখান থেকে সামনেই তাড়াতাড়ি চলুন”

“দাড়াও সিএনজি নিচ্ছি”

বলেই মিনিট দুয়েকের মাঝেই সিএনজিতে উঠে বসে দু’জনে।চাঁদ বেশ ঘেমে গিয়েছে।দুই হাটুতে দুই হাতের কনুই ঠেকিয়ে কপালে হাতজোড়া ঠেকিয়ে রেখে চোখজোড়া বুজে আছে।তার চোখের সামনে বারংবার বিকেলে দেখা সেই দুঃস্বপ্নই ভেসে উঠছে।প্রচন্ড ঘেমে গিয়েছে চাঁদ।অস্থির হয়ে উঠছে চিত্ত।শ্বাস নিচ্ছে ঘনঘন।বুকের ধুকপুকানি ক্রমশই বাড়ছে।দাঁত দ্বারা ঠোট কামড়ে চোখ খিচে হাটুর কাছের কামিজ আর এপ্রোণ চেপে ধরে রেখেছে।মনে মনে বেশ কিছু সূরাহও পড়ছে।বারংবার একটাই প্রার্থণা তার প্রণয়ের যেনো কিছু না হোক!তবে ভাগ্য কি অতটা সহায় হয়?সর্বদা লোকে যা চায়,যা প্রার্থণা করে তাই কি পায়?সৃষ্টিকর্তা সবসময় কি সবার চাওয়া পূর্ণ করেন?তিনি তার সেরা সৃষ্টি মানবজাতির জন্য যা অতি কল্যাণকর,যা তার জন্য অতিব গুরুত্বপূর্ণ তাইতো তাকে দেন!তাইতো তার সাথে ঘটে।এটাইতো তার নিয়তি!

বারোটা বাজার আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি!তখনই সিএনজি এসে পৌঁছায় লোকেশন অনুযায়ী।চাঁদ তৎক্ষণাৎ নেমে আশেপাশে কাউকে খুঁজতেই অরিনকে দেখে অস্থির হয়ে বলে,

“প্র….প্রণয় কোথায় অরিন?তাকে কোথায় নেয়া হয়েছে?”

অরিন কোনো কথা না বলেই চোখে অশ্রু নিয়ে তৎক্ষণাৎ চাঁদের হাত ধরে তাকে নিয়েই দৌড়ায় থানার ভেতরের দিকে।আর অরণ ভাড়া মিটিয়ে নিজেও তাদের পিছু নেয়।অতঃপর ভেতরে আসতেই চাঁদ দেখতে পায় পুলিশে ঘেড়াও করা থানার ভেতরের দিকটা।তার নয়ন কেবলই প্রণয়কে খুঁজে চলেছে।অতঃপর চট করেই ফা*সি দেবার স্থানে একদম সামনে বরাবর পাটাতনের উপরে কারো মুখ লাল কাপড় দ্বারা বাঁধাবস্থায় গলায় মোম গলানো মোটা দড়ি লাগানো দেখতে পায়।দু’হাত পেছন থেকে বাঁধা।শরীরের গড়ন দেখে চাঁদের বিন্দুমাত্র সময় লাগেনা লোকটাকে চিনতে।কেনোনা এই সেই তার প্রিয় মানব!তার একমাত্র অর্ধাঙ্গ,তার বিড়ালাক্ষী মানব।যাকে সে সর্বদা তার হৃদয়ে সযত্নে,অতি গোপনে লালিত করেছে সকলের আড়ালে,আবডালে।অতঃপর ঘড়ির কাটায় বারোটা পাঁচ বাজতেই কারা কর্তৃপক্ষ হাতের সাদা রুমালটি মাটিতে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে চোখের পলকেই জল্লাদ ফা*সির মঞ্চের লিভারটি টান দেয়।তৎক্ষণাৎ প্রণয়ের পায়ের নিচের পাটাতন সরে গিয়ে নিচের দিকে ঝুলে যায় চাঁদের অতি প্রিয় প্রাণেশ্বর।তার একমাত্র,প্রথম এবং শেষ প্রেম।তার স্বামী,তার হৃদয়ে সূক্ষ্ম ব্যথা জাগ্রতকারী ডক্টর রুহায়ের প্রণয়।লোকটা চেচাচ্ছেনা কেনো?কেনো বিন্দুমাত্র আওয়াজ তার গলা দিয়ে বেরুচ্ছে না?চাঁদের কি এতটুকু অধিকারবোধ নেই তার প্রিয় সেই কন্ঠস্বর শেষবারের ন্যায় শোনার?একাংশ আওয়াজ গলা দিয়ে না বেরুলেও প্রণয় তার দুই পা ছটফটাচ্ছে,ঝাপটাচ্ছে বারংবার।জান টা কি তার অতি নি!র্মমভাবে বেরুচ্ছে?কেমন সেই অনুভূতি?অতি হৃদয় বিদারক কি?ইশ!দৃশ্যখানা সহ্য হলোনা কারোর।সকলেই চোখজোড়া বুজে নিলো।কেউ কেউ হাতের দুই আঙুল দ্বারা চোখের পাতা বন্ধ করলো।তো আবার কেউ তাদের দৃষ্টি পাকায় নিবদ্ধ করলো।চোখজোড়া বন্ধ করলোনা সেখানে উপস্থিত কেবল তিনজন।প্রণয়ের স্ত্রী চাঁদ,তার সর্বোপ্রিয় বন্ধু অরণ।আর?আর তাকে যে বিনা স্বার্থে ভালোবেসেছে সেই মেয়েটা।তবে সেকেন্ড দুয়েকের মাঝেই চোখজোড়া বুজতে বাধ্য হলো অরিনও।অতঃপর?অতঃপর প্রণয়ের প্রণয়পাতার সমাপ্তি হয়তোবা এভাবেই হলো!গগণবিদারী চিৎকার করলো চাঁদ,

“প্রণয়!”

সুমধুর কন্ঠের আ!র্তনাদ কর্নকুহর হলো প্রণয়ের।মুখে ঢাকা কাপড়ের আড়াল হতেই সে মুচকি হাসলো।ঠোটের একপাশ বাকা হলো তার।অবশেষে শান্তি পেলো সে!শেষবারের ন্যায় তার প্রেমমানবী এসেছিলো।হ্যা এসেছিলো!দর্শন করেছিলো তার অতি করুন পরিণতি।তার জন্য হৃদয় ছলাৎও করে উঠেছিলো তার।আ!র্তনাদও করেছিলো সে।চন্দ্রময়ীর ঐ সর্বনা!শা চোখ দিয়ে ধ্বংসা*ত্মক অশ্রু কি ঝড়েছিলো?বুক কি তার খা খা করে উঠেছিলো?দম কি তারও বদ্ধ হয়েছিলো?মস্তিষ্ক কি অচল হয়নি?অতঃপর প্রণয়ের ছটফটানো পা জোড়া থমকে গেলো।হাসি বহাল রইলো সর্বমুখে।এ যেনো বিজয়ের হাসি।সর্বকিছু পাওয়ার হাসি।পরিতৃপ্তির জোয়ার ভাসলো চিত্তে।অনেক না পাওয়ার মাঝেও শেষবারের ন্যায় কিছু একটা পাওয়া হয়তোবা তার হলো!

To be continued……