আবার প্রেম হোক ২ পর্ব-২২+২৩

0
538

#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম

২২.
“অরণকে মা*রার উদ্দেশ্য কখনোই আমার ছিলোনা।সেজন্যই ওর মাথায় কি*ল টা আমার প্রবেশ করাতে হয়েছিলো।তবে মানতেই হয় তোর চাঁদ বেশ বিচক্ষণ এবং অতিরিক্তই চালাক।অরণকে মা*রার দায়ে ওকে ফাসানো,ওর প্রতি তোর হেটরেড সবকিছু মিলিয়েও অরণের সমস্যাটা কেবল ও ই ধরতে পেরেছিলো।এবং আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম যখন অরণকে আমরা কোথাও খুঁজে পাইনি।পরিশেষে যখন নিজ পায়ে ওকে দাড়াতে দেখলাম তাও আবার চাঁদেরই অপারেশন দরুন।আমি মানতে বাধ্য হয়েছি এই মেয়ে অতিরিক্ত চালাক।বুদ্ধি বেশ প্রখর তবে ততটা নয় যতটা হলে ও আমায় ধরতে পারতো।কিন্তু একসময় আমারও মনে হয়েছিলো হয়তো আমায় ধরে ফেলতেও পারে।কিন্তু এইদিক দিয়ে তোর চাঁদ বেশ বলদ বের হয়েছে প্রণয়।ও চোখ বন্ধ করে তোর সব বন্ধুবান্ধবকে বিশ্বাস করে।এমনকি আমায়ও।অরণের ঠিক হতে হতে তুই যেই কান্ড করেছিস তাতে কোনো সন্দেহই ছিলোনা তুই সবটা জেনে গিয়েছিস।শুধু অহনা অর্থাৎ আমার বিষয়টা জানা তোর পক্ষে সম্ভব হয়নি।এমনকি কারো পক্ষেই তা সম্ভব ছিলোনা।ভুলটা আমি রিহাকে সবকিছু বলেই করেছি।আদারওয়াইজ আমায় ধরা কারো পক্ষেই সম্ভব হতোনা।এমনকি তোর পক্ষেও না।হয়তো অহনা আর পূর্ণতার মিসক্যালকুলেশন সম্পর্কে এখনো জানতে পারিস নি অথবা জানতে চাস।আমি সেটাও জানাবো।ভালোবাসি তোকে,এতটুকু জানাতেই পারি।তবে তার আগে তোর বাচ্চাকে কী করে মা*রলাম সেটা বলি নাহয়?”

কথাগুলো সম্পন্ন করেই লম্বা শ্বাস নিয়ে থামে পূর্ণতা।প্রণয় কেবল তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তার পানে রেখে চেয়ে আছে পলকহীন।প্রণয়ের পানে চেয়ে আলতো হেসে পূর্ণতা বলে,

“তোর চোখে আমি অসহায়ত্ব দেখতে পাচ্ছি প্রণয়।এই অসহায়ত্ব কি আমার জন্য?”

প্রণয়ের শীতল কন্ঠস্বর,

“যার জন্য রক্ষক থেকে ভক্ষক হতেও দ্বিধাবোধ করিনি,তার জন্য বন্ধু থেকে শত্রু হতেও পিছুপা হবোনা।তবে তুই বন্ধু হওয়া দূর বলারও যোগ্য নস।বাকিটুকু বল,শুনছি”

খানিক শ্বাস নিয়ে পূর্ণতা ফের শুরু করে,

“ডেসপারেট হস না,বলছি।তুই যেদিন ড্যাডসহ সবাইকে খু*ন করলি।ওটা আমিসহ সবার জন্যই আনএক্সপেক্টেড ছিলো।তার চাইতেও আনএক্সপেক্টেড ছিলো চাঁদের প্রেগন্যান্সির বিষয়টা।বাকিসবকিছু মেনে নিলেও ওটা মানতে পারছিলাম না।সেজন্যই শুরু থেকে পয়জন দিয়ে এসেছি।তোর বোকা বউ স্মরণে রেখে খেয়েছেও।যদিও বা তোর শোকে কয়দিন আধপাগল ছিলো।একেবারে শুরু থেকে যদি খেতো তাহলে আরও জলদি বাচ্চাটা মা*রা সম্ভব হতো।সেইসাথে তোর চাঁদেরও সমাপ্তি ঘটতো।কিন্তু মাঝে দিয়ে রিহা যেই বাগড়া টা দিলো।সেজন্যই ওর প্রতি আমি ক্ষু!ব্ধ হয়েছি।চাঁদকে আমার দেওয়া ঔষধ খেতে নিষেধ করেছিলো।সাথে এমনকিছু ঔষধ দিয়েছিলো যাতে করে পয়জন কাজ করা বন্ধ করে দেয়।কিন্তু পয়জন যা ক্ষ*তি করার করেই দিয়েছিলো।চাঁদের ক্ষতি না করতে পারলেও তোর বাচ্চার ক্ষ*তি শতভাগ করেছিলো।রিহা যেদিন চাঁদের আলট্রা করায়।তখনই ও দেখতে পেয়েছিলো বাচ্চার মধ্যে অবশিষ্ট আর কিছুই নেই।তখনই ও আমার কাছে আসে জবাবদিহি করতে।তবে ওকে আর ফিরে যেতে আমি দিই নি।এবং সেদিনও কিন্তু রিহুকে আমি মা*রতে চাইনি,মা*রার ছিলাম ঐ চাঁদকে বেশি পাকনামো করে মাঝে দিয়ে এসে বেশ সাধু সেজেছিলো।কিন্তু ওকে বাঁচতে দেওয়া ও আমার পক্ষে সম্ভব ছিলোনা।সেজন্যই ওর অপারেশনের পরপরই ওর স্যালাইনে আমি পয়জ*ন দেই।ও সচক্ষে তা দেখেছিলো ঠিকই তবে কাউকে কিছুই বলেনি।আমার বন্ধুবান্ধব বড্ড বোকা রে প্রণয়!ভালোবাসায় অন্ধ প্রায়।মেয়েটাকে তো চৈত্র ভাইও ভালোবাসলোনা।অথচ রিহু সত্যি সত্যি তাকে ভালোবেসেছিলো”

“তোর নাম ভুলবশত পূর্ণতা রাখা হয়েছে পূর্ণ।তোকে যদি গিরগিটিও বলা যায় তাও অসম্মানজনক হবে।তার তুলনায়ও দ্রুতগতিতে নিজ রঙ বদলাতে সক্ষম তুই।আমি বরাবরই মুগ্ধ হচ্ছি”

“যাক আমার কিছু একটাতে তো তুই মুগ্ধ হলি!”

“তারপর বল।অরণের মাথায় কি*ল কী করে প্রবেশ করিয়েছিস?কখন করেছিস এটা?তোর একার পক্ষেতো তা সম্ভব না”

“আমার একার পক্ষে কী সম্ভব আর কী কী সম্ভব না তা তুই ভাবতেও পারিস না প্রণয়।একবার তোর বউকে বলেছিলাম মানুষ খু*ন করা আমার প্রিয় নেশা।তাই আমার পক্ষে কোনোকিছুই অসম্ভব না।আমি চাইলে তোকেও মে*রে ফেলতে পারি”

“সে খবর আমার জানা”

“কিন্তু তোকে আমি মা*রবোনা প্রণয়।তোর শেষ নিশ্বাস ত্যাগের মুহুর্ত আমার পক্ষে দেখা সম্ভব না।আমি চাই তুই যুগযুগ বেঁচে থাক,একাই থাক তবে চাঁদের সাথে নয়”

“অযথা সময় নষ্ট হচ্ছে”

“দিশেহারা হচ্ছিস কেনো?আমি জানি আমায় তুই বাঁচতে দিবিনা।তো যতটুকুই বাঁচি তোর সাথেই নাহয় বাঁচি”

প্রণয়ের ধারালো কন্ঠ,

“তুই কি বলবি পূর্ণ?”

“বলছি।আহিন আর আহানের মায়ের সম্পর্কেতো জানার কথা তোর?”

“জানি”

“তো মম যদিও আমার সৎ মা তারপরেও আমায় বেশ আদর করে।সেই সুবাদেই ক্যানাডা যাওয়া,আসা নিয়ে বিশেষ কোনো প্রবলেম নেই।ক্যানাডায়ই ডাক্তারদের সাথে যুক্তি করে অরণের মাথায় কি*ল প্রবেশ করানো।আর ফেইক রিপোর্ট বানানো আমার জন্য বিশেষ কোনো বিষয়ই ছিলো না”

“তুই যদি…..”

প্রণয়কে মাঝপথে থামিয়ে পূর্ণতা বলে,

“জানি তোর কথা।আমিই বলছি।আমার পুরো নাম অহনা অধিরাজ শেখ পূর্ণতা।পূর্ণতা আমার ডাকনাম।অহনাই মূলত আসল নাম।কিন্তু ড্যাডের যে দুই বিয়ে সেই বিষয়টা লুকাতে গিয়েই আহানকে তিনি সামনে আনেননি।আমায়ও আনেননি।সকলে জানতো আহিনই কেবল তার একমাত্র সন্তান।সেজন্যই অহনাকে সবসময় এব্রোডেই রাখা হয়েছে।যদিও বা আমি সর্বদা এখানেই ছিলাম।সে খবর আহিন কখনোই জানতে পারেনি আর ড্যাডও কখনো আমায় সামনে আসতে দেন নি,মানে পূর্ণতাকে সামনে আনেননি।পূর্ণতাকে পূর্ণতা হিসেবেই রেখেছেন।বাংলাদেশী অ্যাকাডেমিক নাম আমার কেবলই পূর্ণতা কিন্তু এমনিতে আমার জন্ম নিবন্ধে অহনা অধিরাজ শেখ।ড্যাডের পরিচয় লুকাতে গিয়েই পূর্ণতার পর শেখ সারনেম টা ড্যাড লাগায়নি।সে শিওর ছিলো আমায় তার সবচাইতে বড় হাতিয়ার বানাবে।এজন্যই সর্বদা লুকিয়ে রেখেছিলো আমার মুখ্য পরিচয়।যাতে যদি কখনো তার রহস্য উন্মোচিত হয়ও আমার ক্ষ*তি যেনো না হয়।আর তার অসম্পূর্ণ কাজ আমি সম্পন্ন করতে পারি।আহিনকেও চেয়েছিলো তবে ও হয়েছে ড্যাডের সম্পূর্ণ বিপরীত।আহানকে ম্যানিউপুলেট করে এই পথে আনতে সক্ষম হয়েছিলো যদিওবা।কিন্তু আমি বেশ সূক্ষ্মভাবেই আমার পরিচয় আত্মগোপন রেখেছিলাম প্রণয়”

“অথচ সারাজীবনই শুনে গেলাম বাবা-মা স্যাপারেট হয়ে গিয়েছে।তুই আসলেই মানুষের ইমোশন নিয়ে একটু বেশিই খেলে ফেলেছিস পূর্ণ”

“তুই আমায় মে*রে ফেললেও আমার কোনো আফসোস থাকবেনা প্রণয়।কারণ চাঁদ আর তুই যে এক হয়েছিসও তোদের পরবর্তী প্রজন্মের কোনো অস্তিত্ব ধরণীতে থাকবেনা।এবং এটাই আমার প্রাপ্তি”

পূর্ণতার বাক্যসমূহ শেষ হতেই ধীরপায়ে তার নিকট এগিয়ে আসে প্রণয়।অতঃপর একটু জোরালোভাবেই চোয়াল তার চে!পে ধরে বলে,

“তোকে তো এত জলদি মা*রবোনা পূর্ণ।আমার বাচ্চাকে তুই যতটা কষ্টের সহিত মে*রেছিস তার তুলনায়ও বহুগুন কষ্ট তোকে দিয়ে তারপর আমি মা*রবো।অ্যান্ড আই মিন ইট”

বলেই ঝাড়া দিয়ে পূর্ণতার চোয়াল ছাড়ে প্রণয়।অতঃপর ফের মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে চোখজোড়া বেঁধে কামড়া হতে বেরুতে বেরুতে গম্ভীরস্বরে বলে,

“সবচাইতে নিকৃষ্ট এবং মানসিক মৃ*ত্যুটা আমি তোকে দেবো পূর্ণ”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
পরেরদিন খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠে সর্বপ্রথম প্রণয়ের রুমের কাছে এসেই দরজায় কড়া নাড়ে রুবা।বেশ রাত করে বাড়ি ফেরায় প্রণয়ের ঘুম একটু গাঢ়ই ছিলো।অগ্যতা চাঁদই উঠে আসে দরজা খুলতে।অতঃপর দরজার বাইরে রুবাকে দেখে কপাল সামান্য কুঞ্চিত করে প্রশ্ন করে,

“এত সকালে তুমি?”

“ভাইয়াই বলেছিলো ভাবি।এখনো উঠেনি ভাইয়া?”

“প্রণয় তোমায় ডেকেছিলো?”

“হ্যা”

“দরকারী কিছু?”

“হ্যা।তুমি একটু ভাইয়াকে ডেকে দাও প্লিজ”

“বেশ রাত করেই তোমার ভাইয়া ফিরেছিলো রুবা।এখনই ডাকাটা প্রয়োজন?”

খানিক চিন্তা করে রুবা বলে,

“হ্যা একটুতো জরুরী ছিলোই ভাবি…..”

চাঁদ আর রুবার কথোপকথনের মাঝেই টি-শার্ট গায়ে চাঁদের পাশে দাঁড়ায় প্রণয়।অতঃপর হাই তুলে বলে,

“এসেছো তুমি?ওখানে সব ঠিক হচ্ছে?”

“হ্যা ভাইয়া।আপাতত আর কী করা লাগবে?”

“আর কিছু না ওকে ওখানেই রাখো।পারলে বাইরে নিয়ে যেয়ো।আমি বেরুচ্ছি”

“তুমি শিওর সবকিছু ঠিক হবে?”

রুবার প্রশ্নে কেবল গম্ভীর চাহনী নিক্ষেপ করে প্রণয়।অতঃপর বাইরে বেরুতে নিলেই চাঁদ প্রশ্ন করে,

“কোথায় যাচ্ছেন প্রণয়?আর আপনারা ঠিক কী নিয়ে কথা বলছেন?”

চাঁদের পানে স্নিগ্ধ দৃষ্টির সহিত খানিক চেয়ে চোখের ইশারায় সামান্য হেসে প্রণয় বলে,

“দ্রুত ফিরবো।ফিরেই বলছি”

_________________________________

সকাল এগারোটার দিকে বাড়ি ফিরে হাপাতে হাপাতেই নিজ রুমে চাঁদকে না পেয়ে নিচে এসে মায়ের রুমের কাছে দাড়াতেই চাঁদ,ইয়ানা দু’জনকেই নজরে আসে প্রণয়ের।সাথে তার মা ও আছেন।প্রণয়কে দেখে পুষ্পিতা জামান ইশারায় ভেতরে ডাকেন।প্রণয় ভেতরে এসেই বলে,

“মা,চাঁদের সাথে কথা ছিলো”

“হ্যা নিয়ে যাও”

কথাখানা বলেই মুচকি হাসেন তিনি।সাথে মিটমিটিয়ে হাসে ইয়ানাও।এরূপ পরিস্থিতিতে বেশ বিব্রতবোধ করে চাঁদ।আর কিছু কাউকে না বলেই প্রণয় চাঁদের হাত ধরে বাইরে আসতে আসতে বলে,

“এখন আপনার হাসপাতালে যাওয়ার সময় না?ওখানে কী করছিলেন?”

প্রণয়ের সাথে বের হতে হতেই তার ঘাড় বরাবর চেয়ে চাঁদ বলে,

“আপনিতো তখনো ফেরেন নি তাই যাইনি”

“আচ্ছা শুনুন আজ যেতে হবেনা।রুবা আর শিফা কোথায়?বাড়িতেই?”

“না,কোথায় যেনো গিয়েছে”

“কোথায় গিয়েছে?”

কপাল কুচকে চাঁদ জবাব দেয়,

“বলে তো যায়নি”

“বাড়িতে ডেকোরেটর আসবে চাঁদ।আপনি বরং ঐ বাড়ি যান।আর রুবা,শিফাদের ওখানেই যেতে বলবেন।রিদি আর মিরাও থাকবে”

কপাল মাত্রাতিরিক্ত কুচকে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতেই পা জোড়া থামিয়ে প্রণয়কে নিজ পানে ঘুরিয়ে চাঁদ প্রশ্ন করে,

“আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা আপনারা করছেন টা কী?”

“বলছি,আসুন”

বলেই চাঁদকে কোলে তুলে নিজ রুমের দিকে এগোয় প্রণয়।প্রণয়ের বুকের কাছের টি-শার্টের অংশ দুই হাতে খা!মচে হকচকায় চাঁদ,

“প্রণয়!”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
দুপুর একটা চল্লিশ মিনিট,
প্রণয়ের ফুপি,মামা এবং খালার পরিবারের সকলেই হাজির চৌধুরী বাড়িতে।এসেছে তার বন্ধুমহলের সকলেই।চাঁদের বন্ধুমহলও আছে যদিওবা।কিন্তু প্রণয়ই সেখানে উপস্থিত নেই।না আছে রামিম।কপাল কুচকে পকেট হতে ফোন বের করে রিদির কানের কাছে মুখ নিয়ে বিড়বিড়ায় মির,

“তোমার দুই ভাই এত লেট লতিফ কেনো?আমি গেলে এতক্ষণে নিয়ে চলেও আসতাম!”

কপাল কুচকে রিদি প্রশ্ন করে,

“আপনি কার কার কথা বলছেন?”

“ও সরি,তিন ভাই বলা উচিত ছিলো না?”

চোখ রাঙায় রিদি,

“মির!”

ঠোট চেপে রিদির কানের কাছে মুখ রেখেই সেথায় আলতো চুমু এঁকে মির বলে,

“তবে আমিও একটু লেট লতিফ হয়ে গিয়েছি কী বলো?আরেকবার বিয়ে করি?”

মিরের কথায় মাত্রাতিরিক্ত লজ্জা পেয়ে দৃষ্টি নত করে রিদি।মিরের আকস্মিক স্পর্শে কেপে উঠেছে সে।শরীরের লোমকূপসমূহ দাড়িয়েছে তৎক্ষনাৎ।শ্বাস তার ঊর্ধ্বগতিতে বেড়েছে।গাল দু’টো তার একটু বেশিই যেনো জ্বলছে।সাথে হৃদস্পন্দনও তীব্র হয়েছে।মির আরও কিছু রিদিকে বলতে উদ্যত হতেই নজর যায় সিড়ি বেয়ে নামতে থাকা তিন রমনীর দিকে।মাঝে শিফা এবং তার দুই পাশে চাঁদ আর মিরা।তিনজনই কথা বলতে বলতে নামছে।শিফাকে একটু বেশিই ভয়ার্ত লাগছে।সে নামতে নামতেই চাঁদকে বলছে,

“ভাবি দেখো এটা কি ঠিক হচ্ছে?জানিনা কিছু না হুটহাট বিয়ের সিদ্ধান্ত।তাও আবার এঙ্গেজমেন্ট?আমার মতামত টা…..”

অসহায় মিশ্রিত কন্ঠে চাঁদ বলে,

“কী করবো বলো?হঠাৎ ই প্রণয় বললো আন্টি আর আংকেলও রাজি বিয়েতে।তাছাড়া প্রণয় নিজে সম্বোধন এনেছে আমি তাকে কিছুই বলতে পারিনি।ছেলের সাথে কথা পাকাপাকি।বেশ পছন্দ করে তোমায়”

“কিন্তু ভাবি আমারও তো একটা পছন্দের বিষয় আছে।তাকে যদি আমার পছন্দ না হয়?আর তুমিতো জানো আমি রায়…..”

শিফার কথার মাঝেই কথা বলে মিরা,

“ছেলেকে তোমারও পছন্দ হবে শিফা।বেশ সুদর্শন,শুধু শুধুইতো প্রণয় আর তোমার জন্য তাকে বাছেনি।সুদর্শনের পাশাপাশি দায়িত্ববানও”

“কিন্তু আপু আমি সত্যিই বিয়ের জন্য এখন রেডি….. ”

“প্রণয় তাকে কথা দিয়ে ফেলেছে শিফা”

চাঁদের কথায় তার আঁখিজোড়ায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেই সেথায় অসহায়ত্ব অবলোকন করে চুপ হয় শিফা।মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আঁখিজোড়া বদ্ধ করেই চাঁদ আর মিরার সহিত সিড়ি বেয়ে নেমে আসে।অতঃপর কপাল কুচকে গোমড়ামুখেই দাঁড়িয়ে থাকে চাঁদের পাশে।রিদি তার কাছে আসলে মুখ ঘুরিয়ে নেয় শিফা।শিফার ব্যবহার উপলব্ধি করে রিদি তাকে প্রশ্ন করে,

“কী রে কী হলো?খুশি হস নি?রুবার আগেই তোর বিয়ে হচ্ছে”

ভড়কায় শিফা,

“অনেক খুশি হয়েছি।হবো না কেন?তোদের মতো ঘসেটি বান্ধবী থাকলে কেই না খুশি হবে?”

তৎক্ষনাৎ কপাল কুচকে মির বলে,

“এই শালিকা,ঘসেটি আর মিরজাফরের সম্পর্ক কেবল আমার আর চাঁদের।ঐ ট্যাগ আমাদের জন্যই বরাদ্দ রাখো।তাতে আমাদের দু’জনেরই কপিরাইট আছে বুঝেছো?”

রাগী দৃষ্টি মিরের পানে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে শিফা বলে,

“বেশ মজা লাগছে তোমাদের?”

অতঃপর কপাল কুচকে আশেপাশে চেয়ে বলে,

“ঐ রুবা বেয়াদবটা কোথায়?”

পাশেই রবিন এসে বলে,

“তোমার বরের সাথে আসছে।হবু দুলাভাই কিনা!”

বেশ বিরক্ত হয়ে শিফা কিছু বলতে নিলেই সকলের মুখে গুঞ্জন ভাসে ‘বরপক্ষের লোক এসেছে’ সহ বিভিন্ন বাক্য।কথাগুলো কর্ণকুহর হতেই শ্বাস বাড়ে শিফার।বুকের ভেতর থাকা হৃদযন্ত্রের ‘লাব ডাব’ শব্দসমূহ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে,যেনো কান তার ফে!টে যাবার উপক্রম।অস্থিরতা ক্ষণে ক্ষণেই বাড়ছে শিফার।খানিক ঘেমেও গিয়েছে।ঘমার্ক্ত শরীর লালচে হচ্ছে ধীরে ধীরে।এক্ষুণি বোধহয় সে জ্ঞান হারাবে।আকস্মিক এত বড় ধাক্কা মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।মাথা তার ঘুরাচ্ছে।অতঃপর প্রবেশদ্বার হতে রায়হান,রামিম,প্রণয় আর রুবাকে আসতে দেখে শ্বাস থমকায় শিফার।গলার কাছে শ্বাস আটকে আসতেই চোখজোড়া বড় বড় হয়,নজর কেবল রায়হান পানেই নিবদ্ধ হয় তার।পলকসমূহ থামে।কিয়ৎক্ষণ বাদে রায়হানকে নিজের সম্মুখে এবং রুবার চঞ্চল স্বরে ধ্যান ভাঙে শিফার।রায়হানের বাম পাশে রুবা দাঁড়িয়ে হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রীসহিতই দুই হাত রায়হান পানে ইশারা করে বলছে,

“টানটানা!মিট মাই হবু দুলাভাই ওরফে আমার নিজের ভাই!”

To be continued…..

#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম

২৩.
আকস্মিক চৈত্রের দেয়া আ*ঘাতে কপাল কুচকে গালে হাত রেখেই তার পানে চেয়ে রয় রুবা।অপরদিকে চোখমুখ গরম করে মুখ দ্বারা কেবলই শ্বাস নিচ্ছে চৈত্র।আপাতত নিজ রাগ সংবরণ করা তার বড্ড প্রয়োজন।অন্যথায় এর চাইতেও খারাপ কিছু সে করে বসবে।অতঃপর দাঁতে দাঁত চেপে রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় চৈত্র বলে,

“আপনার কি ন্যূনতম লজ্জাবোধ নেই?”

গাল হতে হাত সরিয়ে চোখজোড়া বোজাবস্থায় সামান্য কুচকে চৈত্রের পানে মুখ রেখেই বেশ সোজাসাপটা জবাব রুবার,

“একদমই নেই মিস্টার চৈত্র।আপনাকে দেখলে লজ্জারা জানালা দিয়ে কোথায় যে পালায়!”

তৎক্ষনাৎ হাত মুষ্টিবদ্ধ হয় চৈত্রের।নিজেকে সামলে লম্বা শ্বাস নিয়ে সে বলে,

“আপনি এখনো কিন্তু বাচ্চা নন মিস রুবা।আপনার সিচুয়েশনগুলো বুঝতে হবে…”

চৈত্রকে মাঝ পথে থামিয়েই রুবা বলে,

“বাচ্চা নই এজন্যই তো আপনাকে বিয়ে করতে চাচ্ছি চৈত্রসোনা।আমার হয়ে যান না!এমন করেন কেনো?”

বলতে বলতেই চৈত্রের নিকট এগোতে চাইলে চৈত্র তাদের মাঝে হাত দ্বারা বাধা সৃষ্টি করে বলে,

“স্টপ!এক থা*প্পড়ে আপনার পোষাচ্ছে না?বেহায়া,নির্লজ্জের মতো ব্যবহার”

অতঃপর বিড়বিড়ায় ফের,

“রিজেক্ট করার পরেও কানের সামনে প্যানপ্যান শুরু করে দিয়েছে অসহ্য একটা!”

বিড়বিড় কর‍তে করতেই চৈত্র শুনতে পায় রুবার সহজ বাক্য তবে মেজাজ তার নিমিষেই চটে,

“বেহায়ার সর্বোচ্চ কাতারেও যদি পড়তে হয় তাও পড়ে যাবো আমার চৈত্রসোনা”

বলেই চুমু খাওয়ার ভঙ্গিমায় ঠোটজোড়া গোল করে চৈত্রের পানে ইশারা করে রুবা।রুবার কান্ডে হকচকায় চৈত্র।রাগের মাত্রা তার বাড়তেই রুবার দিকে পিঠ করে প্রস্থান নিতে গেলে চৈত্রের কব্জি ধরে নিজ পানে তাকে ঘুরিয়ে রুবা বলে,

“এই,এই কোথায় যাচ্ছেন?”

তৎক্ষনাৎ ঝাপটা মেরে রুবার হাত হতে নিজ হাত ছাড়ায় চৈত্র।অতঃপর চোখ বরাবর তর্জনী নিয়ে শাসায় তাকে,

“সাহস কী করে হয় টাচ করার?বেহায়ার চেয়েও নিম্ন কাতারে যাচ্ছেন থার্ড ক্লাস,বেয়াদব মেয়ে কোথাকার!”

বাক্যসমূহ শেষ হতে না হতেই পালটা জবাব আসে রুবার,

“সাহসের দেখলেনই কী?বেয়াদব বলতেই পারেন,বেহায়াও মানা যায়।তবে!তবে থার্ড ক্লাস মোটেও না।একদম চকাচক ফার্স্ট ক্লাস মেয়ে পেয়েছেন বেয়াই সাহেব!”

কপাল কুচকে অতিরিক্ত বিরক্ত হয়ে চৈত্র বলে,

“ওহ জাস্ট শাট আপ!বাচ্চাদের মতো ব্যবহার শুরু করে দিয়েছেন।বোঝার চেষ্টা করছেন না কেনো কিছু?দেখি সরুন!”

অতঃপর রুবাকে ধাক্কা দিয়ে সরাতে গেলেই খপ করে কাধের কাছে রাখা চৈত্রের হাত ধরে ফেলে রুবা।কপাল মাত্রাতিরিক্ত কুচকে রুবার পানে চাইতেই রুবা হাসিমুখে একহাতে চৈত্রের হাত ধরে অপরহাতে থাকা গোলাপটা তার বুকের কাছে এগিয়ে কপাট রাগ দেখাবার চেষ্টায় বলে,

“এবার যদি না নিয়েছেন না?কাটাসহ গোলাপ বুকে বিধিয়ে দেবো একদম!”

তৎক্ষণাৎ রুবার হাতের গোলাপ ছিনিয়ে নিতেই হাতের কয়েক জায়গায় চৈত্রের কাটা বিধে র*ক্তের ফোটা ঝড়ে।সেদিকে তোয়াক্কা না করেই গোলাপটা দূরে ছুড়ে গম্ভীরস্বরে সে বলে,

“রিজেক্ট করার মানে বোঝেন?আপনাকে এককথায় রিজেক্ট করেছি আমি!আর রইলো গোলাপ?তো,আমার গোলাপতো দূর কোনো ফুলই পছন্দ নয়।শেষবারের ন্যায় বলছি সরে দাড়ান।মেজাজ বিগড়াবেন না”

বলে পাশ কেটে যেতে নিলে ফের তাকে টেনে ধরে বিড়বিড়ায় রুবা,

“ফুল পছন্দ হবেই কী করে?করলার চেয়ে তিক্ত তো নিজেই!”

অতঃপর আকস্মিক রাগ নিয়ন্ত্রণে অক্ষম হয়ে সর্বশক্তি দ্বারাই রুবার হাত ঝাড়া দেয় চৈত্র।অতঃপর রুবা গিয়ে রাস্তার পাশে পড়তেই গর্জাতে বাধ্য হয় সে,

“কখন থেকে বেহায়ার মতো আচরণ করেই যাচ্ছেন,করেই যাচ্ছেন।রিজেক্ট করেছি শোনার পরেও বেয়াদবির মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে,মাথাব্যথা কোথাকার!”

বলে এক মুহুর্ত দেরি না করে হনহনিয়ে পা চালায় চৈত্র।আর রুবা রাস্তা হতে উঠে দুই হাত ঝাড়তে ঝাড়তেই গলার স্বর উচিয়ে বলে,

“মাথাব্যথা হিসেবেই আপনার মাথায় থেকে যাবো মিস্টার চৈত্র!এই মাথাব্যথা আপনি কখনোই সাড়াতে পারবেন না”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
স্টেজে বিদ্যমান সোফার দুইপাশে বসে আছে বর আর কনে অর্থাৎ রায়হান এবং শিফা।আপাতত সকলের খাওয়াদাওয়ার পর্ব চলছে।প্রায় ঘন্টাখানেক পূর্বেই দু’জনের আংটিবদল সম্পন্ন হয়েছে।বেশ কিছুক্ষণ ধরেই ক্যামেরাম্যান তাদের কাপল ফটো তুলছে তবে ভালো কোনো ফ্রেম সে পাচ্ছেনা।অগ্যতা দু’জনকে বারংবার কাছে আসতে বললেই শিফা বেশ হকচকায় আর রায়হান কপাল কুচকে বসে রয়।যার দরুন ক্যামেরাম্যান বিরক্ত হয়ে অন্যদের ফটোসেশনে ব্যস্ত হয়।এরই মাঝে সুযোগ বুঝে আকস্মিক রায়হান শিফার হাত ধরে টেনে নিজের পাশেই ফেলে তাকে।হঠাৎ রায়হানের কর্মে হকচকিয়ে শিফা বলে,

“কা..কী?….কী?”

শিফাকে নিজের কাছে এনে চট করেই তার কোমড় চেপে নিজের সাথে মিশিয়ে কানের কাছে ফিসফিসায় রায়হান,

“ফায়ানের সাথেতো বেশ ঢলাঢলিই করেছিস।এখন আমার পাশে বসতে এত সমস্যা কীসের?”

ভয় এবং লজ্জা দু’টোই কাবু করে শিফাকে।শরীরের লোমকূপসমূহ দাড়াতেই গলার কাছে শ্বাস আটকে তোতলায় সে,

“তা….তেমন তেমন কিছু….কিছু না”

শিফার কথায় ফের ফিসফিসায় রায়হান,

“তো কেমন কিছু মিসেস রায়হান?আমার উপর ক্রাশ খেয়ে আরেকজনের সাথে প্রেম?এর উসুল সুদে আসলে তুলবো,মনে রাখিস”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রাত্রি তখন দশটা বেজে চল্লিশ মিনিট,
ফের পূর্ণতার সম্মুখীন হয়েছে প্রণয়।পূর্ণতার পায়ের কাছেই চেয়ারে এক হাত হেলে বসে আছে সে।কিয়ৎক্ষণ বসে হঠাৎ ই দাড়িয়ে পূর্ণতার পিছু গিয়ে চোখের বাঁধন খোলে তার।আকস্মিক চোখের বাঁধন খুলতেই হকচকায় পূর্ণতা।হঠাৎ চোখে আলো বিঁধলে সহ্যসীমার বাইরে যায় তা।পুরো একদিন একইভাবে চোখসহ সর্বাঙ্গ বাঁধাবস্থায় বসে থেকে শরীর ম্যাজম্যাজ করছে তার।সেইসঙ্গে ক্ষুধায় বুকের কাছটা জ্বলছেও বেশ।তৃষ্ণাও যে পায়নি তেমনও না।তবে প্রণয়কে সে বলতে পারছেনা।কোথাকার এক ইগো এসে ভর করেছে সমস্তসত্তা জুড়ে।যার দরুন চেয়েও প্রণয়ের সাথে কথা বলতে মোটেও ইচ্ছা হচ্ছেনা।তাই চোখজোড়া বুজে রেখেই বসে থাকে সেভাবে।অতঃপর হঠাৎ চোখমুখে গরমপা*নির ঝলকানি পড়তেই চোখজোড়া বড় বড় হয় তার।আ!র্ত!নাদ করার চেষ্টা করে তবে মুখ বাঁধা থাকায় সক্ষম হয়না।কোমল মুখশ্রী জ্বলছে ভীষণ।তবুও কোনো এক দাম্ভিকতায়ই প্রণয়ের পানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চেয়ে থাকে পূর্ণতা।অতঃপর শুনতে পায় প্রণয়ের শীতল কন্ঠস্বর,

“জ্বলুনি কম মনে হচ্ছে না পূর্ণ?এই নে পানি খা,তৃষ্ণাও হয়তো পেয়েছে?বেশি ভাবিস না খা।এটা ঠান্ডা এবং ফ্রেশ পানি।মিনারেল ওয়াটার”

প্রণয়ের কথায় পূর্ণতা কপাল সামান্য কুঞ্চিত করতেই ফের প্রণয় বলে,

“ও সরি!দাড়া বাঁধন খুলছি,খেয়ে নে”

বলেই আকস্মিক জোরালোভাবেই পূর্ণতার মুখে থাকা স্কচটেপ টেনে তোলে প্রণয়।যার দরুন ব্যথা অনুভূত হলেও নিজেকে যথাসাধ্য সামলে রাখে পূর্ণতা।অতঃপর ফের কানে ভাসে প্রণয়ের গম্ভীর কন্ঠস্বর,

“গরম পানি দিইনি।ঠান্ডাই আছে খেয়ে নে”

বলেই বাম হাতে পূর্ণতার চোয়াল চে!পে ডান হাতে পানির গ্লাস মুখের কাছে নিয়ে একটু জোরালোভাবেই পানি তাকে পান করায় প্রণয়।পানি খাওয়া শেষে শ্বাস নেওয়ার সময়টুকুও পূর্ণতা পায়না,ফের প্রণয় তার ঠোটে স্কচটেপ লাগিয়ে তার পায়ের কাছে বসে রয়।আর পূর্ণতা বেশ কষ্টেই নাসিকা দ্বারা শ্বাস নেবার চেষ্টা চালায়।অসহায় দৃষ্টি প্রণয়ের পানে নিক্ষেপ করামাত্র প্রণয় বেশ ধীরকন্ঠে শুধায়,

“পানিতে যদি বি*ষ মিশিয়ে দিই?তোর সমাপ্তি নিশ্চিত না পূর্ণ?”

প্রণয়ের কথায় চোখজোড়া সামান্য ভয়ার্ত হয় পূর্ণতার।যা স্পষ্ট অবলোকিত হয় প্রণয়ের নিকট।অতঃপর ঠোট মৃদু বাকিয়ে প্রণয় বলে,

“অনেকতো পয়জন,পয়জন খেলেছিস।তোর সাথে পয়জন নিয়ে খেললে নিশ্চয়ই দোষের হবেনা?”

পূর্ণতা প্রণয়কে কিছু বলতে চাইলে পূর্ণতার অস্থিরতা নজরে আসে প্রণয়ের।অতঃপর ফের ধীরকন্ঠে প্রণয় শুধায়,

“চিন্তা করিস না।আমি তোকে ফ্রেশ পানিই দিয়েছি।এত সহজে তোকে মা*রলে আমার বাচ্চা বল,রিহা বল বা যাদেরই তুই মে*রেছিস তারা সন্তুষ্ট হবেনা।তাই তোকেও এভাবে মা*রলাম না তবে!”

বলে খানিকক্ষণ থেমে বসা থেকে উঠে নিকটে রাখা এক টেবিলের কাছে গিয়ে সেথায় থাকা ধারালো ছুড়ি হাতে নিয়ে ফের আগের ন্যায় বসে প্রণয়।অতঃপর পূর্ণতার ডান হাতের বাঁধন খুলে শক্ত করেই হাতের কব্জি ধরে তার।প্রণয়ের কান্ডে ভয়ের মাত্রা বাড়ে পূর্ণতার।হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়।সূক্ষ্ম ঘাম কপাল হতে কানের পাশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে।ঢোক গিলে সে।নিজ হাত এবং প্রণয়ের পানে চেয়ে থেকে বারংবার পলক ঝাপটায়।প্রণয়ের নৃ*শংসতা সম্পর্কে সে অবগত।কিয়ৎক্ষণ ছুড়ি নিয়ে নাড়াচাড়া করা প্রণয় যখন তার মৌনতা ভাঙে পূর্ণতারও ধ্যান ভাঙে।এবং সে ফের স্তব্ধ নয়নে প্রণয়পানে চাইতে বাধ্য হয়,

“তোর এই হাত দিয়েই আমার চাঁদের গায়ে হাত দিয়েছিলি না পূর্ণ?তার ওড়না নিয়ে কাড়াকাড়িও করেছিলি মনে আছে?আহহা!এই হাত দিয়েই তো আমার চাঁদের পরণের হিজাবও তুই নষ্ট করেছিলি।একের পর এক থা*প্পড়ও তার গালে তুই বসিয়েছিলি মনে আছে কিছুও?তবে আমার সবটাই স্মরণে আছে।আমার চাঁদের গায়ের ওড়না টানতেও তোর নারীসত্তা তোকে বাঁধা দেয়নি।সবচাইতে নিকৃষ্ট রূপটা তুই চাঁদ আর অরণের সামনেই নিজের দেখিয়েছিলি।আমারটা দেখবি না?আচ্ছা বল তো তোর এই হাতের কী করলে আমার প্রেমিক সত্তা অথবা আমার স্বামী সত্তা শান্তি পাবে?তোর সাথে কী এমন করলে তোর বাবাকে খু*ন করে পাওয়া আত্মতৃপ্তির চেয়েও বেশি তৃপ্ত হবো আমি?আয়,তার ছোট্ট একটা ডেমো তোকে আমি দেখাই”

বলেই পূর্ণতার ডান হাত টেনে নিজের সামনে রাখতেই পূর্ণতা তা ছাড়ানোর চেষ্টা করলে প্রণয়ের হিংস্র নজরে দমে যায় সে।স্পষ্ট সেথায় একইসঙ্গে প্রতিহিংসা এবং কষ্টের বোঝা উপলব্ধি করে সে।তার সঙ্গে ভয়াবহ কিছু যে নিশ্চিত হতে চলেছে সে সম্পর্কেও সম্পূর্ণ অবগত পূর্ণতা।অগ্যতা ঘাড় বাকিয়ে অন্যপানে চেয়ে রয় সে।এবং প্রণয় ঠোট বাকিয়ে ছু*ড়ি দ্বারাই তার হাতের তালুসহ পুরো কব্জিতেই এক এক করে আ*চড় কাটে।র*ক্ত টপটপ করে ঝড়ে সেথা হতে।পূর্ণতার জান বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলেও চোখজোড়া বুজে অশ্রু বিসর্জন করে কেবল।আ!র্তনাদের কোনো উপায় না থাকা সত্ত্বেও অন্তঃস্থলেই বেশ ভয়ানক আ!র্তনাদ করে সে,

“আল্লাহ!ও আল্লাহ গো!”

অতঃপর সেই পর্যন্তই ক্ষান্ত হয়না প্রণয়।পাশে রাখা বাটি ভর্তি মরিচের গুড়োয় পূর্ণতার হাতের কব্জির পুরোটাই সে ডুবিয়ে দেয়।তৎক্ষনাৎ চোখজোড়া বুজে বুকফাটা আ!র্তনাদ করে পূর্ণতা।তবে ভাগ্য তার সহায় নয়!আর্ত!নাদের বহিঃপ্রকাশ সে ঘটাতে পারছেনা।শুভ্ররাঙা আঁখিজোড়া য*ন্ত্রণায় রক্তিম পূর্ণতার।নেত্র বেয়ে অবিরাম অশ্রু গড়াচ্ছে।সে কেবলই সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা ভিক্ষা করছে।অতঃপর চোখজোড়া সে তখন খোলে যখন দেখে ফের প্রণয় তার হাত চেয়ারের সাথে বাঁধতে আরম্ভ করে।বেশ করুন দৃষ্টি প্রণয়ের পানে পূর্ণতা নিক্ষেপ করে কেবল চেয়ে থাকে।আর প্রণয় পূর্ণতার হাত বাঁধা হলে তার পানে চাইতেই দু’জনের চোখাচোখি হয়।এবং বাকা হাসে সে।পরিশেষে পূর্ণতার পিছু গিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ধীরকন্ঠে প্রণয় বলে,

“তোকে আরও কিছু নি!র্মমতা প্রণয়ের দেখানো বাকি।তবে এত সহজ মৃ*ত্যু কি তোকে দেওয়া যায়?ইহিম!তোকে শারীরিক মৃ*ত্যুর তুলনায় মানসিক মৃ*ত্যুটা অতি নিকৃষ্টভাবে দেবো”

বলতে বলতেই পূর্ণতার চোখজোড়া ফের কাপড় দ্বারা বাঁধতে আরম্ভ করে প্রণয়।এবং আরও কিছু বাক্য সে আওড়ায়,

“আজ এইটুকুই মিস অহনা অধিরাজ শেখ পূর্ণতা!আগামীকালের জন্য তৈরি থাকবি।টিল দেন ইঞ্জয় দিজ ট্রায়াল”

বলেই চলে যেতে গিয়েও ফিরে আসে প্রণয়।অতঃপর আকস্মিক হাতে থাকা ছু*ড়ি পূর্ণতার কা!টা হাতের চার আঙুল বরাবর রেখে চাপ দিতেই চার আঙুলেরই মাথা প*ড়ে যায়।র*ক্ত গড়ায় বিরামহীন।বাম পাশের ঠোট মৃদু বাকিয়ে হাতে থাকা র*ক্তাক্ত ছুড়িসহই ডান হাত উচিয়ে কামড়ার বাইরে বেরুতে বেরুতে প্রণয় শুধায়,

“ইঞ্জয় ড্যাডিস প্রিন্সেস”

To be continued……

#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম

২৩.(বর্ধিতাংশ)
পরেরদিন পূর্ণতার সাথে দেখা করার কথা থাকলেও সেথায় আর আসেনি প্রণয়।অতঃপর তার পরেরদিন বিকেলবেলাই সে হাজির হয় পূর্ণতার যত্নাদির দরুন।সাথে রয়েছে তার এক সঙ্গীও।ঘুমে কাবু থাকা পূর্ণতার মুখ হতে স্কচটেপ টেনে তুলতেই ঘুম তার আলগা হয় এবং খানিক শ্বাস নিয়ে অতি কষ্টে সে উচ্চারিত করে,

“কা……কে?প্রণ…প্রণয়?”

কথা তার শেষ হতে না হতেই কর্ণকুহর হয় এক পুরুষালি অতি গম্ভীর কন্ঠস্বর,

“আগে ভাবতাম পুরুষের জীবন ধ্বংসের জন্যই নারীর জন্ম।তবে আপনি আমায় ভুল প্রমাণিত করেছেন মিস পূর্ণতা।আপনি দেখিয়ে দিয়েছেন নারীরা সব পারে।এক নারী আরেক নারীর জীবন অতি রুক্ষ এবং তুষ্টভাবেই ধ্বংস করতে সক্ষম।আপনি নিজেই তার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ”

প্রণয়ের কন্ঠের বদলে ভিন্ন কন্ঠ কর্ণগোচর হতেই কপাল কুচকায় পূর্ণতার।অতঃপর প্রশ্ন করে সে,

“কা….কে?কে আপনি?”

পূর্ণতার পেছনে গিয়ে তার চোখের বাধন খুলতে খুলতেই লোকটা বলে,

“আমি তাদেরই অতি আপনজন যাদের সর্বোচ্চ ক্ষ*তিটা আপনি করেছেন।যার সর্বস্ব খোয়ানোর মূলে ছিলেন আপনি।চৈত্র,চাঁদের ভাই?বড় ভাই কিনা?ভাইয়েরা কী করে জানেন?বোনের সুরক্ষায় কখনো পিছুপা হয়না।তবে আমি আমার বোনকে রক্ষা করতে পারিনি।না পেরেছি আমার ভাগ্নের রক্ষক হতে।আপনি তাদের জীবিতই মে*রে দিয়েছেন মিস পূর্ণতা”

অতঃপর পাশে এসে দাঁড়ায় প্রণয়ের।এবং প্রণয় চৈত্রের কাধে হাত রেখে ধীরকন্ঠে শুধায়,

“দেরিতে হলেও সময় সবারই আসে ভাইয়া”

কথাখানা শেষ করে ফের পূর্ণতার পায়ের নিকট বসে প্রণয়।অতঃপর হকচকায় পূর্ণতা এবং বলে,

“কা….কী করছিস?আজ কী করতে এসেছিস তুই?”

জবাব আসে চৈত্র হতে,

“চিন্তা করছেন কেনো?আপনার যত্নই করবে”

কথা শেষে হাতে থাকা ফার্স্ট এইড বক্স প্রণয়ের নিকট এগিয়ে দেয় চৈত্র।আর প্রণয় তা নিয়ে পূর্ণতার কা*টা হাত ড্রেসিং করতে উদ্যত হয়।দিন দু’য়েক বাদে কাটা জায়গায় স্পর্শ লাগতেই ব্যথা টনটনিয়ে উঠে পূর্ণতার।দাঁত কিড়মিড়িয়ে মনে মনে কেবল এই যন্ত্রণা হতে পরিত্রাণ চায় সৃষ্টিকর্তার নিকট।তবে সে তার সনে হওয়া পরবর্তী যাতনা সম্পর্কে রয় সম্পূর্ণ অনবগত।

পূর্ণতার ড্রেসিং শেষে প্রণয় তার পিছু দাঁড়িয়ে হুডির পকেট হতে ছু*ড়ি বের করে গালের কাছে তা রাখতেই পূর্ণতা বলে,

“দা…..দোস্ত দোস্ত তুই….তুই কা….কী কর….ছিস?”

“ভয় লাগছে মিস অহনা,সরি পূর্ণতা?”

চৈত্রের গম্ভীরস্বরও ঠাট্টামূলক ঠেকে পূর্ণতার নিকট।অতঃপর ঘাড় ঘুরিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি চৈত্রের পানে নিক্ষেপ করে কিছু বলতে গেলে গালের চামড়ায় হঠাৎ জ্বলুনি এবং তীব্র ব্যথা অনুভূত হয় তার।সাথে তরল কোনোকিছু কপোল বেয়ে চিবুক ছুতেই লোমকূপসমূহ দাঁড়ায় পূর্ণতার।শ্বাস তার ভারী হয়।মৃদু কম্পন সৃষ্টি হয় শরীরে।বুঝতে তার কোনোপ্রকার অসুবিধা হয়না প্রণয়ই তার গালে আচড় কে*টেছে।অতঃপর পূর্ণতার গালে খানিক শক্তি প্রয়োগ করেই ছু*ড়ির মাথা চে!পে ধরলে মৃদু আ!র্তনাদ করে সে।আর প্রণয় খানিক গভীরতার সহিতই ছু*ড়ি চেপে ফের গালে টান দিতেই মাংস চি*ড়ে র!ক্ত গড়ায় পূর্ণতার।খানিক র*ক্ত প্রণয়ের কালচে বর্ণের হুডিতেও ছিটকে আসে।কিছুটা গালেও লাগে তার।ঠোট মৃদু বাকে।অতঃপর ছু*ড়ি সোজা হতে বাকা করে গালের মাঝ বরাবর প্রস্থাংশে টান দিতেই স্বল্প বিস্তর যাতনায় আ!র্তনাদ ভাসে পূর্ণতার।একই রূপে অপরপাশে কার্য ধারণ করলে পূর্ণতার প্রতিটা ছটফটানো চিৎকারে প্রশান্তি বয় হৃদয় জুড়ে তারই সম্মুখে বসে থাকা দুই মানবের।চৈত্র গম্ভীর দৃষ্টি পূর্ণতার পানে রেখেই এগিয়ে আসে প্রণয়ের নিকট।অতঃপর পেয়ালা ভর্তি মরিচের গুড়ো এগিয়ে দিতেই প্রণয় সেথা হতে দুই চিমটি পরিমাণ নিয়ে পূর্ণতার গালের চে*ড়া অংশসমূহে অতি ধীরে,সংগোপনে স্পর্শ করায়।তৎক্ষণাৎ উচ্চস্বরে আ!র্তনাদ করে পূর্ণতা।চোখ হতে গড়ায় তার বারিধারা।কা*টা গাল উষ্ণজলের সংস্পর্শে আসতেই জ্বলে উঠে নিমিষে।মৃদু আ!র্ত!নাদের সহিতই সে ডাকে,

“মা!”

“আল্লাহ!এম…এমন করিস না প্রণয়।আমায় তুই মা*রবিই।একবারে….একবারে মে*রে ফেল”

হুডির টুপি মাথা হতে সরাতেই প্রণয়ের এলোমেলো চুল নজরাবন্দী হয়।খানিক ছন্নছাড়াই লাগছে তাকে।চোখমুখ শুকনো।দৃষ্টি খানিক কমলাটে।চোখের নিচে দেবে গিয়ে হালকা কালচে বর্ণ দৃশ্যমান।ঘুমোয় না কত রাত?কিছুটা উন্মাদের ন্যায়ই পূর্ণতার চে*ড়া কপোলের মাংসের ভেতর ধীরেসুস্থে ম!রিচের গুড়ো ভরতে ভরতে গম্বীরস্বরে ধীরকন্ঠেই সে আওড়ায়,

“মা*রবোতো তোকে অবশ্যই।তবে মানসিক যা*তনা না ভুগিয়ে নয়।বল তো আমার চাঁদের সাথে তুই যা করেছিস।তোর বাপ যা করেছে।একই জিনিস যদি আমি অথবা আমরা মিলে তোর সাথে করি?”

চোখজোড়া বড় বড় হয় পূর্ণতার।শ্বাস বেড়ে গিয়ে গলার কাছে আটকাতেই বহু কষ্টে সে আওড়ায়,

“তা….তুই রা….রেপ রে*পের…….”

কথার মাঝপথেই আকস্মিক পূর্ণতার কা*টা কপোলদ্বয় চে!পে ধরতেই হাতখানা র*ক্তে রঞ্জিত হয় প্রণয়ের।এবং গর্জায় সে,

“শাট ইওর ব্লা!ডি মাউথ!”

খানিক থেমে মৃদু শক্তি প্রয়োগ করে চোয়াল চে!পে রেখেই ফের শুধায়,

“তোর ন্যায় নোংরা মস্তিষ্ক নিয়ে প্রণয় চলেনা।এবং চাঁদ ব্যতীত প্রণয়ের হৃদয়ে কোনো নারী কখনো ছিলোনা,নজরেও নেই।তোর উপর আমি থু ও দেবো না,ইউ ব্লা!ডি চিপ লেডি!”

অতঃপর আকস্মিকই পূর্ণতার নেত্রদ্বয়ের পাতা বা’ হাতের তর্জনী এবং মধ্যাঙ্গুলি দ্বারা টেনে ধরে অপরহাতের আঙুলসমূহে থাকা লা*লমরিচের ছোয়া আঁখি দু’টোয় ঘষে ঘষেই স্পর্শ করায় প্রণয়।সঙ্গে সঙ্গে চেচায় পূর্ণতা,

“ও আল্লাহ গো!”

উচ্চস্বর ভাসে প্রণয়ের,

“ডু ইউ রিমেমবার?রিমেমবার পূর্ণ?আমার চাঁদের আহাজারিসমূহ তোর কানে কি এখনো গুঁজেনা?গোঁজা উচিত।অন্তত আজকের পর অবশ্যই গোঁজা উচিত।তোর মনে রাখা উচিত প্রণয়ের হৃদমহলে থাবা মে*রেছিস তুই।সেই কব্জি কে*টে মহলেই পুতে না রাখতে পারলে আমার নামও রুহায়ের প্রণয় না!”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
নিত্যদিনকার ন্যায় আজও ভার্সিটি শেষে এলিফ্যান্ট রোড দিয়ে হেটেই টিউশনে যাচ্ছিলো রুবা।এমতাবস্থায় হঠাৎ ই তার নজরে আসে বিষণ্ণ এবং ধীরগতিতে পথ অতিক্রম করা চৈত্রকে।তৎক্ষণাৎ দৌড়ে তার পানে এগোয় রুবা।তার পাশেই দূরত্ব রেখে হাটতে হাটতেই মৃদু কাশে।তবে কোনো সাড়া পায়না চৈত্র হতে।তাই গলা পরিষ্কার করে নিজেই ডাকে তাকে,

“কোথায় যাচ্ছেন মিস্টার চৈত্র?”

আকস্মিক কোনো মেয়েলি কন্ঠে ঘাড় বাকিয়ে পাশে তাকায় চৈত্র।অতঃপর রুবাকে নজরে আসতেই কপাল সামান্য কুঞ্চিত হয় তার।এবং কোনো শব্দ ব্যয় না করেই পায়ের গতি দ্রুত করে সে।চৈত্রের কান্ডে অবাক হয়না রুবা।বরং ঠোট উলটে তার পানে চেয়ে ব্যাগ হতে মোবাইল বের করে কাউকে কল দেয়,

“আমার আসতে একটু দেরি হবে”

অতঃপর ধীরগতিতে পিছু নেয় চৈত্রের।হাটতে হাটতে মিন্টুরোডে এসে আশপাশ নীরব হতেই ফের হাজির হয় চৈত্রের নাগালে।চৈত্রের বা’পাশে দাঁড়িয়ে দুই হাত পিছু রেখে হাটতে হাটতেই সুর তোলে রুবা,

♪♪♪….চৈত্র বেয়াই চলেছে একা পথে,
সঙ্গী হলে দোষ কী তাতে?
হার মেনেছে দিনের আলো,
রাগলে তাকে লাগে আরও ভালোও হোহোহোও…♪♪♪

রুবার অতিষ্টপনায় মাত্রাতিরিক্ত বিরক্ত হয় চৈত্র।এমনিতেই পূর্ণতার সহিত দেখা করে মেজাজ তার চটে আছে।রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার দরুনই সে শূন্যপথে হাটছিলো।রুবাকে দেখেও বিশেষ কোনো তোয়াক্কা করেনি।কিন্তু রুবার বর্তমান কান্ডে রাগের মাত্রা তার বেগতিক বাড়ে।অগ্যতা সে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে রুবার গাল বরাবর হাত তুলে আকস্মিক থেমেও যায়।হুশে আসলে উঁচানো হাত মুঠিবদ্ধ করে নামায় সে।অতঃপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“সবসময় সবকিছু ভালো লাগেনা মিস রুবা!আপনার বেহায়াপনায় অতিষ্ট হচ্ছি আমি।যন্ত্রণায় মাথা ফে*টে যাচ্ছে”

বাক্যসমূহ আওড়িয়ে দু’হাত রুবার সম্মুখে খানিক শব্দ করেই মিলিয়ে চৈত্র বলে,

“দূরে থাকুন আমার থেকে।রেহাই দিন!ঘৃণা করতে চাচ্ছিনা,নিজেকে ঘৃণা করাতে বাধ্য করাবেন না প্লিজ!”

অতঃপর পিছু ঘুরে আগের ন্যায়ই হাটাধরে চৈত্র।আর রুবা কেবলই তার পানে চেয়ে রয়।দৃষ্টি তার স্থির দূর হতে দূরান্তে যাওয়া চৈত্র পানে।স্থির থাকাবস্থায়ই চৈত্রপানে সে ততক্ষণ চেয়ে থাকলো যতক্ষণ না চৈত্রের আবছা দৃশ্য তার নজর এড়ালো।সবসময়কার চৈত্রের তুলনায় কিয়ৎক্ষণ পূর্বের চৈত্রে বিশাল তফাৎ পরিলক্ষিত হলো রুবার।পূর্বে কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলেও আজ সে বিষণ্ণ এক চৈত্র,অসহায় এক চৈত্রকে দেখেছে।চৈত্রের এই রূপ আদোতে তার দেখা হয়নি।না এরূপ ব্যবহারের সম্মুখীন সে হয়েছে।চৈত্রের মন খারাপ ভেবে খানিক হাসাবার অথবা বিরক্ত করার চেষ্টায় ঘৃণ্যমান দৃষ্টি কি তার না দেখলেই হতোনা?এরূপ দৃষ্টি সহ্য করার সীমা কি রুবা রাখে?কস্মিনকালেও ভুল সিদ্ধান্ত না নেওয়া রুবার প্রথম আর শেষ ভুল কি এটাই?
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
ক্যাম্পাসের ভেতরেই অরণের পাশে ঘাসের উপর বসে আছে ফায়ান।পা দু’টো মেলে টাখনুর উপর অপর পা রেখে হাত দু’টো পেছনে দিয়ে আকাশপানে চেয়ে আছে সে।অরণও সচরাচরের ন্যায়ই বসে আছে।দু’জনের মাঝে খানিক সখ্যতাও হয়েছে বিগত কয়েক মাসে।হঠাৎ ফায়ান তাকে বলে,

“ভাই তুমি এত বই পড়ো কেনো?কলেজ লাইফ থেকেই দেখে আসছি।অভ্যাস বদলানো যায়না?”

ফায়ানের কথায় তার পানে চেয়ে হাতে থাকা বইটা ঘাসের উপর ডান পাশে রেখে নিজেও ফায়ানের ন্যায় পা মেলে বসে অরণ।অতঃপর আকাশপানে চেয়েই বলে,

“মানুষ অভ্যাসের দাস ফায়ান।চাইলেও অভ্যাস বদলানো যায়না।অথবা বলতে পারো আমরাই বদলানোর চেষ্টা করিনা”

অরণের কথায় তার পানে কিঞ্চিৎ কুচকানো দৃষ্টি সহিত চায় ফায়ান।অতঃপর নিমিষেই তা শিথিল করে দৃষ্টি সম্মুখে রেখে বলে,

“মানুষ পারেনা এমন কিছু নেই ভাইয়া।এই যেমন মির ভাইয়াকেই দেখো।আমরা কি তাকে প্লেবয় হিসেবে চিনতাম না?অথচ রিদির সাথে তাকে দেখলে একজন পার্ফেক্ট হাজবেন্ডের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই।এটা কি পরিবর্তন না?”

ভাবলেশহীন জবাব অরণের,

“ইহিম!”

কপাল কুচকে রেখেই ফায়ান প্রশ্ন করে,

“কেনো?”

“কারণ ও সর্বদাই রিদিকে ভালোবেসেছে।যেহেতু এখন রিদিকেই সঙ্গী হিসেবে পেয়েছে তখন নিজের সবটা উজাড় করেই ভালোবাসবে।অস্বাভাবিক কিছু?”

খানিক চিন্তা করে ফের ফায়ান প্রশ্ন করে,

“তুমি কী করে জানো মির ভাই রিদিকে ভালোবাসতো?”

“শুনেছি।তাছাড়া বন্ধুতো,বন্ধুর মনের খবর একটু হলেও তো রাখি!সন্দেহ ছিলো হয়তো কাউকে ভালোবেসেই দেবদাস হলো কিনা!তবে চৈত্র ভাই কেনো দেবদাস হয়েছে সে খবর এখনো অজানা।তুমি কি কিছু জানো?”

লম্বা শ্বাস টেনে ঠোট উলটে ভ্রুযুগোল উঁচিয়ে জবাব দেয় ফায়ান,

“না,আইডিয়া নেই”

ফায়ান থামতেই রসিকতা করে অরণ,

“তুমি বিয়ে করছো না যে?চৈত্র ভাইয়ের মতো দেবদাস হতে চাচ্ছো নাকি?”

“আমার বিয়ের বয়সতো এখনো পড়ে রয়েছে।তোমারটা বলো?তুমি করছো কবে?”

“শীঘ্রই”

অরণের জবাবে চমকায় ফায়ান।চট করেই ঘাড় ঘুরিয়ে তার পানে চেয়ে প্রশ্ন করে,

“কাকে ভাই?”

“যাকে আমি ভালোবাসি”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
দিন চারেক পরের কথা,
সকলে একসাথে খেতে বসেছে।প্রণয়ও তাই।ডান হাতে ভাত নেড়েচেড়ে বা’ হাতে পাশে বসে থাকা চাঁদের হাত টেবিলের নিচ হতেই ধরে রেখে খানিক কাছে গিয়ে ধীরকন্ঠে কিছু বাক্য আওড়াবার পূর্বেই শুনতে পায় টেবিলে বসা সকলের কাশির সুর।বিশেষ করে উজান।উজানের কাশির মাত্রা এতটাই তীব্র যে বিরক্তিতে কপাল সামান্য কুঞ্চিত হয় প্রণয়ের।সেভাবে থেকেই গম্ভীরকন্ঠে সে আওড়ায়,

“ছ’মাসের জন্য বউয়ের থেকে আলাদা হতে চাস?”

কাশি থামিয়ে হকচকায় উজান,

“কা….কা কাকে বলছো ভাই?”

ভাত মাখতে মাখতেই প্রণয় বলে,

“আমি আর তুই ব্যতীত এখানে যদি আর কেউ বিবাহিত থাকে তার নাম শুনতে চাচ্ছি”

খানিক কেশে এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে গিলে উজান।অতঃপর আমতা আমতা করে বলে,

“ভা…ভাই আমি কী করেছি?হঠাৎ এসব বলছো কেনো?”

“যক্ষ্মা রোগীকে অবশ্যই ঘরে বসিয়ে রাখবোনা”

হঠাৎ শিফার প্রশ্ন,

“উজান ভাইয়ার যক্ষ্মা হলো কবে ভাইয়া?”

“ওকেই জিজ্ঞেস করো”

শিফার প্রশ্নে কপাল কুচকায় উজান।অতঃপর চোখ রাঙাতেই শুনতে পায় ইয়ানার শীতল কন্ঠস্বর,

“পিপীলিকার পাখা গজে মরিবারই তরে”

ইয়ানার কন্ঠে হকচকায় উজান,

“আ….আমি কী করেছি?তোম…তোমরা এমন…..”

উজানের কথা সম্পূর্ণের পূর্বেই হঠাৎ ফোনকল আসে প্রণয়ের।সবেই খাওয়া শুরু করেছিলো সে।এক লোকমা মুখে পুড়তে গেলেই ফোন আসায় ফের তা পাতে রেখে চাঁদের হাত ছেড়ে বা’ হাত দিয়েই ট্রাউজারের পকেট হতে ফোন বের করে কানে লাগাতেই এমন কিছু বার্তা তার কানের কাছে বাজে যা সে কস্মিনকালেও চিন্তা করেনি।অতঃপর খাবার রেখে উঠতে উঠতেই বলে,

“আমি….আমি এক্ষুনি আসছি।তোমরা আগে বাড়ো,আসছি আমি”

বলেই হুরমুরিয়ে উঠে দাঁড়ায় প্রণয়।এতক্ষণের শীতল মুখশ্রী হঠাৎ ই প্রণয়ের গম্ভীর হওয়ায় অপ্রস্তুত হয় চাঁদ।প্রণয়ের পানে একধ্যানে চেয়ে থেকে উপলব্ধি করে ভালো কিছু যে হয়নি সুনিশ্চিত।প্রণয়ও যে তাকে বলবেনা সেও জানে।তবুও খাবার রেখে উঠে দাঁড়িয়ে চাঁদ প্রশ্ন করে,

“কোথায় যাচ্ছেন প্রণয়?”

চাঁদপানে স্থির দৃষ্টিসহিত কিয়ৎক্ষণ চেয়ে থাকে প্রণয়।অতঃপর লম্বা শ্বাস নিয়ে দৃষ্টি নত করে চোখ বোজাবস্থায় বলে,

“প্রশ্ন করবেন না,ফিরে আসবো আমি”

প্রণয়ের অদ্ভুত কথার ধরণে বুকের ভেতর সশব্দে যন্ত্রণার উৎপাত হয় চাঁদের।করুন দৃষ্টি নিজেও ফ্লোরপানে নিবদ্ধ রেখে শ্বাস টেনে সে বলে,

“তখনও বলেছিলেন,তবে ফেরেন নি তো!”

কথাখানা শেষ হতেই চোখজোড়া বুজে চাঁদ।আর প্রণয় তার দৃষ্টি উঁচিয়ে চাঁদের হাতজোড়া নিজ হাতের মুঠোয় নিয়ে নিজ কোমড়েরই দুইপাশে তা রাখিয়ে চাঁদের কপোলদ্বয় আলতো হাতে ছুয়ে দেয়।অতঃপর দু’হাতেই চাঁদের গালজোড়া ছুয়ে গভীর দৃষ্টি চাঁদের আঁখিপানে নিবদ্ধ করে বলে,

“ফিরবো চন্দ্র,ফিরে আসবো আমি”

To be continued……