#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_১২
Writer #পুষ্পিতা_প্রিমা
অভিক যেতে না যেতেই আনিকা বলল আপনাকে আমি ডেকে পাঠিয়েছিলাম সুজানা।
সুজানা মিনমিন করে বলল
ওই আসলে স্যারের সাথে অনেক মানুষ দেখলাম তো।
আনিকা কাষ্ঠ হাসলো।
এমা এত লজ্জা পেলে চলবে? আমি আপনার বয়সে থাকতে এত উড়া উড়েছি মা বাবাকে জ্বালিয়ে মারতাম। এখন বাচ্চাকাচ্চার মা হয়েছি তাই একটু শান্ত হয়েছি তারপরও আহনাফ ফারদিনকে প্রচুর জ্বালায়। আপনি খুব লাজুক। তবে লাজুক মানুষ আমার ভীষণ ভালো লাগে।
আনিকার পিছু যেতে যেতে হাসলো সুজানা।
ওরা তাহলে আপনার মতো দুষ্টু হয়েছে।
আনিকা একটু আওয়াজ করে হাসলো এবার।
আপনিও বলছেন একথা? ওদের আব্বু সারাক্ষণ আমাকে একথা বলে পঁচায়।
সুজানা তাল মিলিয়ে আরেকটু হাসলো। পথিমধ্যে সালমা বেগমের সাথে দেখা হয়ে গেল। কফির মগ হাতে নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন তিনি। সুজানাকে আগাগোড়া একপলক দেখে নিলেন তিনি । সুজানা সালাম দিলে ছোট্ট করে সালামের জবাব দিয়ে বলল
কি ব্যাপার মেয়ে? তুমি এসেছ কিন্তু সোজা উপরে গিয়ে বসে আছ? মুরব্বিদের সাথে দেখা করতে হয় সেটা জানোনা? এসব আদবকায়দা বুঝেছ? আজকে বলছি মাথায় রাখো। শ্বশুরবাড়িতে গেলে তখন শ্বাশুড়ি তোমাকে মা কিছু শেখায়নি বলে কথা শোনাবে। এরকম ভুল আর করোনা যেন। আজকালকার মেয়ে ছেলেদের তো আবার কোনো কিছু শেখাতেও নেই। তাদের ধাতে লাগে।
সুজানা মাথা নত করে মাথা নাড়ালো হালকা।
আনিকা ঠোঁট টিপে হালকা হেসে সুজানার দিকে তাকালো।
তুমি হাসছ কেন বউ?
আনিকা জিভে কামড় দিল।
না ছোটমা আমি ওকে এমনিতেও রান্নাঘরে তোমাদের সাথে দেখা করাতে নিয়ে যাচ্ছিলাম।
সালমা বেগম এবার সুজানার দিকে তাকালেন।
দেখেছ? ওকে শিখিয়েছি তাই মনে রেখেছে। তোমাকে যেন দ্বিতীয়বার আর বলতে না হয়।
কাঠকাঠ গলায় কথা বলে উনি চলে গেলেন। উনি যেতেই আনিকা বলল
কিছু মনে করবেন না সুজানা। ছোটমা এমন কিন্তু খুব ভালো মনের মানুষ।
না আমি কিছু মনে করিনি। স্পষ্টবাদী মানুষ আমার ভালো লাগে।
আনিকা মৃদু হাসলো। বলল
আমার দাদীশ্বাশুড়ির সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ডেকেছি।
আচ্ছা। অনা আর আবিদ কোথায়?
ওদেরকে অভি নিয়ে গেছে সাজিয়ে পড়িয়ে দেয়ার জন্য।
ওহ আচ্ছা।
দুজনেই কথা বলতে বলতে ড্রয়িংরুমে চলে এল। বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠর পাশে অনেকে বসে আছেন। উনার গায়ে সাদা আর হালকা আকাশী রঙা শাড়ি। গায়ের রঙ হলুদাভ । ভাঁজ পড়া চামড়ায়ও কেমন লাবণ্যতা। চোখে পাওয়ারী চশমা। মাথার চুল লাল। ডানপাশের ভুরুর শুরুতেই কালো বড় তিল। বৃদ্ধা হয়েও কেমন দীপ্তি উনার চেহারায়। সুজানা দেখতে দেখতে অবাক হলো। এত সুন্দর! নিশ্চয়ই যুবতী থাকতে আরও বেশি সুন্দর ছিলেন।
বৃদ্ধা সবার সাথে টুকটাক খোশগল্পে মত্ত। আনিকা সুজানাকে নিয়ে গেল। বলল
দাদু সুজানাকে এনেছি। ইনি সুজানা। ওদের টিচার।
বৃদ্ধা চাইলেন সুজানার দিকে। সুজানা সালাম দিতেই সালামের উত্তর দিলেন। বললেন
বসো।
আনিকা বলল
দাদু আমাদের অন্য কাজ আছে। উনি পরে বসবেন।
আচ্ছা।
বৃদ্ধা আবারও খোশগল্পে মজে গেলেন। সুজানা বলল
উনি অনেক সুন্দর মাশাল্লাহ।
আনিকা তার কথায় হাসলো। বললো
উনি এই বয়সেও কত আধুনিকা জানেন।
বুঝতে পারছি খানিকটা হলেও।
দুজনেই হাসলো।
সুজানাকে নিয়ে আনিকা আবারও চলে গেল উপরে। সুজানা মনে মনে পণ করলো সে আনিকার ঘর হতে বেরোবে না একদম।
_____________________
ড্রয়িং রুমে মাঝারি সাইজের টেবিলটা সাজানো হয়েছে ফুল দিয়ে। তার মাঝ বরাবর দুটো কেক আর জেলি মোমবাতি। দুটো কেকেই লেখা আছে আবিদ ফারদিন আর অনামিকা ফারদিন। কেক কাটার সময় হয়ে আসায় সবাই প্রকান্ড ড্রয়িংরুমে এসে ভীড় জমালো। উনাদের আত্মীয়সরূপ বেড়াতে আসা অল্পবয়সী ছেলেপেলেগুলো গান টান ছেড়ে হুলস্থুল অবস্থা। সালমা বেগমের চেঁচামেচিতে কিছুক্ষণ তা থামলেও ছেলেগুলো আবারও গান ছেড়ে দিল। আনজুমা বেগম বললেন থাক ছোট কিছু বলিস না। বাচ্চারা আনন্দ করছে। আনিকা আহনাফের সাথে কি বিষয়ে ভারী গম্ভীর হয়ে কথা বলছে। সুজানা একদম এককোণায় গিয়ে দাঁড়ালো। তার কমবয়সী কয়েকটা মেয়ের সাথে ভালোই আলাপ জমেছে। এখন ঠিকঠাক লাগছে কারণ অনেক মানুষের ভীড় হয়েছে। তাকে আপতত দেখা যাবেনা। কেউ জানতে চাইবেনা মেয়েটা কে মেয়েটা কে। এ পর্যন্ত অনেকের মুখে এই প্রশ্ন শুনতে বিরক্তি ধরে গেছে সুজানাকে। আনিকাও উত্তর দিতে দিতে বেহাল।
অনা আর আবিদকে আর একবারও দেখতে পায়নি সুজানা। ওদের যেখানে সাজগোছ চলছিল ওখানে একঝাঁক তরুণ আর যুবকের হাসির আওয়াজ ভেসে আসছিল বিধায় ওদিকে পাও বাড়ায়নি সুজানা। কেকটা কাটা হয়ে গেলে আর একমুহূর্তও থাকবেনা সে এখানে।
হৈহৈ রব উঠলো চারপাশে। তরুণ আর যুবকের দল নেমে এল অনা আর আবিদকে সাথে করে। আবিদ আগেই নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে নাচের তালে তালে। কেক ছুঁতে যেতেই আনিকা তার হাত ধরে ফেলল। পুরোটা আপনার। কিন্তু এখন ধরা যাবেনা।
আম্মুনি ভালু নয়।
আনিকা তাকে কোলে তুলে নিয়ে গালে গাঁঢ় চুম্বন করে আহনাফকে উদ্দেশ্য করে ভুরু উঁচিয়ে বলল
মিস্টার আমার বাচ্চাদের গিফট কোথায়?
আবিদ মায়ের সাথে সাথে জানতে চাইলো।
কুথায় কুথায়, গিফ কুথায়?
আহনাফ হেসে ঝুঁকে তার কপালে চুমু দিল। বলল
অনেক বড় গিফট আছে মশাই। কিন্তু মাদারের গিফট কোথায়?
আনিকা হেসে আবিদকে জড়িয়ে ধরে মাথায় দুটো চুমু দিয়ে বলল
এগুলোর চাইতে বড় গিফট আর আছে?
আহনাফ হাসলো। বলল
এসব বলে লাভ নেই ম্যাডাম।
আনিকা আবিদকে বুকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় দুলতে দুলতে বলল
আছে আছে। অনেক বড় গিফট আছে।
অভিকের কোল থেকে অনা ডাক দিল। সবাই তাকালো তার দিকে। গায়ে লাল রঙের শাড়ি মাথায় লম্বা চুল লাগিয়েছে। সুজানা দূর থেকে ওকে দেখে একগাল হাসলো। পাকা বুড়িটাকে কত্ত কিউট লাগছে।
আহনাফ তাকে হাত বাড়িয়ে কোলে নিয়ে বলল
এত লম্বা চুল লাগিয়েছে । এসব কে করেছে।
অভি অভি।
অভিক ঘাড়ে হাত মালিশ করে বলল
বউ সাজিয়েছি।
আহনাফ চুমু খেল মেয়ের গালে। বলল
কার মতো লাগছে। কার মতো মতো।
অনার চুল সুজানের মোতো এত্তো বড়ো।
আহনাফ ফোকলা হাসলো। বলল
ঠিক। কিন্তু কোথায় আপনার টিচার? আনু সুজানা কোথায়?
আনিকা বলল
এমা কোথায় গেল মেয়েটা!
জেলী মোমবাতিতে আগুন লাগাতে লাগাতে অভিক চোখ তুলে ওই দূরে ভীড়ের ফাঁকে কালো পোশাকের মেয়েটার দিকে তাকাতেই মেয়েটা সংকোচে আবারও নিজেকে আড়াল করে দাঁড়ালো।
_____________________
দুজনেই চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে মোমবাতি নেভাতেই জন্মদিনের শুভেচ্ছান্তে মুখোরিত হলো পুরো ড্রয়িংরুম। হ্যাপী বার্থডে মিউজিক চলছে অন্যদিকে। করতালিতে মুখোরিত হলো চারপাশ। আবিদ মোমবাতি নিভিয়ে একটা আঙুল কেকের একপাশে চট করে ঢুকিয়ে তারপর আঙুলটা গালে পুরলো। হায়হায় করে উঠলো আনিকা আর তরুণ তরুণী গুলো। অভিক হেসে বলল
জুনিয়রের আর তর সইছেনা।
আবিদ বলল
আবিকে কেক এত্তু বড়ো দাও।
অনা বলল
আবি পঁচাআআ। পঁচা ছিলে তুমি।
আবিদ ধমক দিল।
ছোপপপ। তুমার কেক ফেলি দিবো।
অনা চোখ রাঙিয়ে চাইলো। সুজানা ওদের ঝগড়া দেখে হাসলো। কেক কাটার পর্ব শুরু হলো। আগে ওদের খাইয়ে ওদের হাতে সবাই কেক খেল। সালমা বেগম আর আনজুমা বেগমকে টেনে নিয়ে এল অভিক। কেক খাইয়ে দিল জোর করে। সালমা বেগম একটু করে খেয়ে বাকিটুকু ছেলেকে খাইয়ে দিয়ে বললেন..
আমি তোর বাচ্চাকাচ্চা কবে কোলে নেব অভি? আমার কি ছেলের ভবিষ্যৎ দেখে মরতে ইচ্ছে হয় না?
কিসব বাজে কথা মা। দাদুকে দেখে কিছু তো শেখো।
বলেই চলে গেল সে।
সালমা বেগম মৃদু হাসলেন।
অনা আর আবিদ তখনও সবাইকে একে একে কেক খাওয়াচ্ছে। একসময় দুজনেই কানে ফিসফিস করলো। অভিক তার বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজনের সাথে মজামাস্তিতে ব্যস্ত। ওদের দিকে চোখ পড়তেই সে এগিয়ে এল। বলল
দুজন কি ফিসফিস করছেন?
অনা হাত বাড়িয়ে ডাকলো
অভি অভি শুনো।
অভি এসে মাথা নামালো তাদের মুখের কাছে।
সুজানকে আনি দাও। সুজান কই?
অভিক সুজানা যেখানে দাঁড়িয়েছিল সেদিকে তাকালো। সুজানা সেখানে নেই। গেল কোথায়? আবিদ ততক্ষণে সুজানার আঙুল ধরে টেনে নিয়ে এসেছে। সবার নজর এবার তার উপর পড়লো। যারা চেনেনা তারাও জানতে পারলো যে মেয়েটা ওদের টিচার। আবিদ চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে কেক নিয়ে বলল
সুজান সুজান হেপি বার্থডে বোলো।
সুজানা মিষ্টি করে হেসে বার্থডে উইশ করে আদর করলো দু’জনকে। ছোট ছোট হাতে দুজনেই কেক বাড়িয়ে দিল। সুজানা একটু একটু করে খেয়ে তাদেরও খাইয়ে দিল। আবিদ বাকিটুকু নিজের গালে পুরে দিল। অনা সুজানার হাত থেকে কেক খেতে খেতে বলল অভি অভি সুজানকে কেক খায়ি দাও।
সুজানা কেক খেতে খেতে কেশে উঠলো।
দেখলো অভিক ঠিকই ওদের কথামতো কেক বাড়িয়ে দিয়েছে। ভুরু উঁচিয়ে খেতে ইশারা করলো। সুজানা খাবেনা বলে কিছুক্ষণ চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
কিন্তু কেকটা একদম মুখের সামনে নিয়ে আসাতে একটুখানি খেল সে । লজ্জায় তার কেমন কেমন লাগছে।
অভিক বাকি কেকটা নিয়ে যেতে যেতে মুখে পুরলো।
একদম পানসা।
চলবে..
#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_১৩
Writer #পুষ্পিতা_প্রিমা
অনা আর আবিদের রিডিংরুমে ফ্লোরে বিছানো মাদুরে গল্পের আসর জমেছে। এই ঘরের খাটটা ছোট হওয়ায় মাদুর বিছিয়ে দিয়েছে আনিকা। তার বাপের বাড়ির লোকজন, আহনাফ আর অভিক মামী খালারা সবাই এসেছেন। বয়োজ্যেষ্ঠা মমতাজ বেগমও এসে মোড়া নিয়ে বসলেন সবার সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য।
বাচ্চাদের চেঁচামেচি, মহিলাদের গল্পসল্পে পুরো রুমজুড়ে কলতান।
সুজানা মাদুরের এককোনায় বসে অনা আর আবিদের হাতে মেহেদী রাঙাচ্ছে । তার হাতে মেহেদী পড়ার জন্য আরও অনেকে মুকিয়ে আছে। অনাকে শেষ করে মাত্রই আবিদের হাতে মেহেদী দেয়া শুরু করেছে সে। একবার ঘড়ি দেখছে আরেকবার মেহেদী দিচ্ছে। হাত ব্যাথা করছে তার। এখনো অনেকেই বাকি। অনা মেহেদীতে ফুঁ দিচ্ছে। আবিদ পিটপিট করে মেহেদীর দিকে তাকিয়ে আছে। তার শর্ত হলো তাকে দুহাতের দু’পাশেই মেহেদী দিতে হবে। একটা টাইগার এঁকে দিতে হবে। পাশে তার নাম লিখতে হবে। দুইটা পাশাপাশি বসালে হবে আবিদ টাইগার। ভাবতেই খুশিতে সে খিকখিক করে হাসলো। সুজানা মহাবিপদে আছে।
এদিকে তার হাতে আর মাত্র বিশ মিনিট সময় আছে। ঠিক ন’টায় সাইফ আসবে। সে আসার সময় তার বাইকে চড়ে চলে এসেছিল। এখন যদি সাইফ ভাই চলে আসে আর তারমধ্যেই এদের মেহেদী দিয়ে শেষ করতে না পারে তখন তো হুলস্থুল কান্ড লেগে যাবে। বাচ্চাগুলোর সাথে মিষ্টি হেসে টুকটাক কথা বলতে বলতে সুজানা দ্রুত হাত চালালো। বড় বড় ফুল এঁকে ছোট ছোট হাতগুলোতে কোনোমতে প্রলেপ দিতে লাগলো।
বেশকিছুক্ষণ পর আনিকা এল। বলল
সুজানা সময় তো হয়ে এল। আর একঘন্টার মতো কি থাকা যাবেনা?
সুজানা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল
না না। নীচে কি কেউ এসেছে?
আমি তো কিছু জানিনা। আপনি উনাকে বাড়িতে আসতে বলেননি?
না উনি আসবেনা। আচ্ছা আমি ফোন দিয়ে দেখি।
আরও দুটো বাচ্চা হাত বাড়িয়ে বলল
মিহিদি দাও।
আবিদ বলল
সুজান ডাকো।
সুজান মিহিদি দাও।
সুজানা হতাশ হলো। আবারও মেহেদী দিতে শুরু করলো। মমতাজ বেগম আনিকাকে জিজ্ঞেস করলো
কি হয়েছে নাতবউ?
সুজানার যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে তাই উনি চলে যেতে চাচ্ছেন দাদু।
এমা কেন? খেয়েদেয়ে ধীরেসুস্থে যাবে। তুমি কোথায় থাকো মেয়ে?
সুজানা উত্তর করলো।
সরিষাবাড়ি।
আচ্ছা অতদূর তো না। সমস্যা নেই। আর কিছুক্ষণ বসো। তোমাকে পৌঁছে দেয়ার মানুষের অভাব হবেনা।
সুজানা মাথা নাড়ালো। ধীরেধীরে রুমটা ফাঁকা হয়ে এল। সুজানার মাথা ব্যাথা কমলো।
অভিক এল তখন। আনিকাকে বলল
আপু ডেকেছ?
আনিকা বলল
হ্যা রে শোন না। বাইরে নাকি একজন আসবে। সাইফ নাম বললো। উনি আসলে বাড়িতে নিয়ে আসবি। সুজানার টিচার নাকি।
অভিক এগিয়ে এসে সুজানার মেহেদী পড়ানোর দিকে তাকালো। বলল
এত তাড়া কিসের?
আনিকা ঠোঁট উল্টালো।
উনার মা চিন্তা করবে তাই হয়ত।
সুজানা মাথা নামিয়ে মেহেদী পড়িয়েই যাচ্ছে। হাতের তালু মেলতে ভীষণ পোহাতে হবে। মুখ থাকতেও বোবা প্রাণীদের এই এক জ্বালা। নাও বলতে পারেনা আবার হ্যা বলেও নিস্তার নেই।
অভিক মাদুরে এসে বসলো। কোলে অনাকে টেনে নিয়ে বলল
আপনি আজ যেতে পারবেন না সুজানা।
সুজানা চোখ তুলে সাথে সাথে নামিয়ে ফেলে বলল
নাহ। আমি ওরকম কথা বলে আসিনি। কথার নড়চড় হলে আম্মা রাতে আর বেরুতে দেবেনা।
অভিক না শোনার মত করে বলল
এহ?
মানে আর আসতে দেবেনা।
আপনি আরও আসতে চান?
সুজানা ভুরু কুঁচকাতে গিয়েও কুঁচকালো না । মাথা তুলে একবার তাকালো, আবারও নীচে নামিয়ে বলল
যদি আসতে হয় তখন। কথার নড়েচড় হলে আমারও ভালো লাগে না। আমি তো জাস্ট কেক কাটার পর চলে যাব ভেবে এসেছি।
আবিদ দু’হাতের তালু অভিককে দেখিয়ে অভিযোগ মিশিয়ে বলল
অভি অভি সুজান থাইগার লিখি দিচে। আবি থাইগার।
অভিক সেটা দেখে হেসে উঠলো আচমকা । সুজানা বোকাচোখে তাকালো। অভিক ঠোঁট কামড়ে হাসি থামিয়ে বলল
এটা তো গরু। টাইগার না। টিচার এভাবে আপনাকে বোকা বানালো? আপনি না জিনিয়াস!
আবিদ ঠোঁট উল্টে তাকালো। যেন এক্ষুণি কেঁদে দেবে।
সুজানা অভিকের দিকে আহত চোখে তাকালো। অভিক হাসি চেপে বলল
আপনি এখনও টাইগার আঁকতে জানেন না?
সুজানা দুপাশে মাথা নাড়ালো। বলল
আমি জাস্ট মেহেদী আঁকতে জানি।
আপনার টিচার আপনাকে একটা টাইগার আঁকাও শেখায়নি।
সুজানা এবার মাথা না তুলেই ভুরু কুঁচকালো। অনা বলল..
সুজান অভিকে মিহিদি দাও। সুজানা চমকে তাকালো। অভিক উঠতে গিয়েও উঠলো না। সুজানা পাণ্ডুর মুখে তাকালো। হাতের মেলতেই দেখা গেল হাতের তালু লাল হয়ে গিয়েছে। অভিক তা দেখে উঠে পড়ে বলল
যাক আরেকবার তাহলে আসতেই হচ্ছে।
সুজানা বিড়বিড় করলো
কচু।
_________________________
টেবিলে হরেক রকমের রান্না মেজবানি রান্না ছাড়াও। হয়ত ঘনিষ্ঠ কুটুমদের জন্য আলাদা করে আয়োজন করা হয়েছে। সুজানার খাওয়ার ডাক পড়লো। ড্রয়িংরুমে ইতোমধ্যে বাড়ির পুরুষদের আসর জমেছে। বেড়াতে আসা আত্মীয় আর আহনাফ আর অভিকের বন্ধুবান্ধব এছাড়া ব্যবসায়িক পরিচিতির খাতিরে পরিচিত মানুষজনও আছেন। কত ধরণের কথাবার্তা, হাসি তামাশা হচ্ছে সেখানে । ওদিকে কোনো মেয়েলোক আর যায়নি। বাড়ির উঠোনে বাবুর্চিদের রান্না আয়োজন আর খাবার দাবার চলছে।
আত্মীয়দের খাবার দাবারের আয়োজন ছাদে করা হয়েছে। ওখানে টেবিল চেয়ার বসানো হয়েছে। সুজানার সাথে অভিকের ছোট খালার মেয়ে তরী আর খড়ির সাথে বেশ ভাবসাব হয়ে উঠেছে তার মধ্যেই। তরী সবেই এডমিশন টেস্ট দিয়েছে। চবিতে পড়া তার স্বপ্ন । সুজানা আশ্বাস দিল ভাগ্যে থাকলে অবশ্যই সে সুযোগ পাবে। সুজানা আশ্বাসে বেশ খুশি হলো সে। খড়ি সবেমাত্র ক্লাস নাইনে উঠেছে। সুজানাকে পেয়ে দু’জনের কথা যেন থামেনা। ওরা তিনজন আর কয়েকজন মুরব্বি বসলো। মুরব্বি বলতে মমতাজ বেগম আর উনার ভাই ভাবি, আহনাফের মায়ের মামা, মামিরা। কারণ উনারা রাতেই চলে যাবেন। এদিকে সুজানা একা মুরব্বিদের সাথে খেতে বসতে চাইছেনা তাই তরী আর খড়িও বসেছে সুজানার সাথে।
মমতাজ বেগমের পাশে বসে জায়গা হলো সুজানার। তরী আর খড়ি তার বামপাশে বসেছে। মমতাজ বেগম গরুর মাংস খায় না তাই সবগুলো সুজানার পাতে তুুলে দিয়ে পুরো প্লেট ভরিয়ে ফেলল। বলল
বোন তুমি খাও। আমাকে শুধু শুধু এগুলো দিল।
সুজানা ঢোক গিললো। সে তরী আর খড়ির প্লেটে চালান করে দিল সেগুলো। মমতাজ বেগম হাসলেন। বললেন
কেমন মেয়ে!
সুজানা মিষ্টি করে হাসলো। বলল
আমি অত খেতে পারব না দাদু।
বেশকিছুক্ষণ পর আনিকা, সালমা বেগম আর আনজুমা বেগম এলেন। এসেই মমতাজ বেগম আর বাকিদের কাছ থেকে রান্নার ব্যাপারে জানতে চাইলেন। সবাই ভারী প্রশংসা করলো। আনিকা সুজানাকে বলল
সুজানা বেশি করে খান।
তখনি আনজুমা বেগমের ওর দিকে চোখ পড়লো।
এমা সুজানা বসে গেছে! অনা আবি যে সুজানের সাথে খাবে বললো।
সুজানা আহত চোখে আনিকার দিকে চাইলো। বলল
এমা! আমাকে আগে বলেননি কেন? এখন ডেকে দিন তাহলে।
কিন্তু ওদের হাতে তো মেহেদী।
আচ্ছা আমি না হয় খাইয়ে দেব।
আনিকা খুশি হলো।
ওরা খেলছে। আচ্ছা আমি গিয়ে বলি দেখি আসে কিনা। আপনি খান।
আনিকা যেতেই না যেতেই দলবলসহ এল অনা আর আবিদ।
পেছন পেছন অভিক তার বন্ধু-বান্ধবও। সালমা বেগম মমতাজকে বেগমকে বললেন
মা ওই তো আপনার নাতি আসছে। বেশিদূরে যায়নি বললাম না।
ডাকো ডাকো। আমার ভাইকে ডাকো।
সুজানার খাওয়া শেষ। সে অনা আর আবিদের জন্য প্লেটে ভাত নিচ্ছে। অভিক পেছনে এসে দাঁড়ালো। মমতাজ বেগমের গালের ডানপাশে কানের কাছে গিয়ে বলল
খাওয়া চলছে?
মমতাজ বেগম কোণা চোখ তুলে নাতিকে দেখে একগাল হাসলেন। বাম হাতটা পেছনে উঁচিয়ে গাল ছুঁয়ে হাত বুলিয়ে বললেন
আরেহ দাদুভাই কতগুলো বছর পর তোমাকে পেয়েছি। তুমি কই একটু বেড়েদেড়ে দাদুকে খাওয়াবে তা না। গা ঢাকা দিয়ে আছ।
অভিক মৃদু হেসে বলল
এখন তো এসেছি। বেড়ে দিই।
না না আমার তো খাওয়া শেষ তো।
অভিক কথা শুনলো না। ডাল মাংসের বাটি নিয়ে সবাইকে এটা ওটা দিতে দিতে সুজানার দিকে নজর গেল। সে উঠে যাচ্ছে। প্লেটে এখনো ভর্তি। জিজ্ঞাসা করলো
কোথায় যাচ্ছেন আপনি?
সুজানা চমকে তাকালো।
আমি?
ইয়েস।
ওদের খাইয়ে দেব।
অভিক অনা আর আবিদকে দেখে বলল ঠোঁট গোল করে বলল
ওহ।
সুজানার দিকে একটা চেয়ার বাড়িয়ে দিল সে। সুজানা চেয়ারে অন্য চেয়ারে পানির গ্লাস রেখে অনা আর আবিদকে বলল
মেহেদী কতটুকু শুকিয়েছে আপনাদের?
দুজনেই হাসিমুখে চাইলো। বলল
সুজানা মিহিদি সুন্দুর।
সুজানা মিষ্টি হেসে লোকমা তুলে দিল। আনজুমা বেগম তা দেখে হাসলেন। মেয়েটাকে আজ কেউ যেতেই দেবেনা মনে হয়।
অনা আর আবিদ এক দৌড়ে ওদিকে গেল আবার ছুটে এসে এক লোকমা খেল আবার কোথায় যেন দৌড়ে আবার ছুটে এল। সুজানার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। সে আর ভাই বাবার সাথে এরকম করতো।
ওদের দু’জনকে খাওয়াতে খাওয়াতে সুজানার সামনেই এসে চেয়ার পেতে বসলো একজন। বলল
সুজানা কেমন আছ?
সুজানা আচমকা চমকে উঠলো। ভাবুক দৃষ্টিতে তাকালো। যুবক মিষ্টি হাসলো।
সুজানা বলল
আপনাকে কি আমি চিনি? চেনা চেনা লাগছে যেন।
যুবক আবারও হাসলো। সুজানার এইবার মনে পড়লো।
নাহিদ ভাইয়া।
যুবক উচ্চস্বরে হাসলো খানিকটা।
সুজানাও হাসলো।
আপনি কেমন আছেন?
খুব ভালো। তুমি এখানে। তোমাদের আত্মীয় হয়?
না ওরা আমার স্টুডেন্ট। টিচারের হাতে খাবে বলে আবদার করেছে। এরকম তে সুযোগ তো আর আসেনা।
ভালো টিচার তুমি।
সুজানা আবারও হাসলো। বলল
আপনাকে তো ছবিতে দেখেছি। আর ওর সাথে আপনার মিল আছে।
পরপর আরও কয়েকজন এসে বসলো। রাহাত, সাফিন আর জিদান। জিদান অভিকের ফুপীর ছেলে যে মমতাজ বেগমের সাথে ইন্ডিয়া থেকে এসেছে। আর সাফিন মামার ছেলে। আর রাহাত নাহিদ দুজনেই বন্ধু। ওদের হাইস্কুল আর কলেজটা একসাথেই পড়া। তারপর আলাদা হতে হয়েছে।
সুজানা ইতস্তত বোধ করতেই সবার সাথে ওকে পরিচয় করিয়ে দিল নাহিদ। ‘ ও ভাইয়ের ক্লাসমেট, বলতে পারিস বেস্টু ‘ ।
সুজানা সম্মতি জানিয়ে মিষ্টি হাসলো। সবাই তার সাথে হাই হ্যালো করে পরিচিত হলো। সাফিন বলল
আচ্ছা অভি যে বললো ব্ল্যাক ড্রেস বিবাহিতা। সুজানাকে বললো না? আপু তুমি ছিলেনা ওইটা?
সুজানা মাথা নাড়ালো। ওরা সবাই অভিককে ডাক দিল।
এই অভি এদিকে আয় গাধা।
অভিক টিস্যু দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে এগিয়ে এল। চিরাচরিতভাবে কুঞ্চিত ভুরুদুটোকে আরও বেশি কুঞ্চন করে সবার দিকে একপলক তাকালো। তাকালো না জড়োসড়ো হয়ে বসা সুজানার দিকে।
নাহিদ বলল
আমি তো সুজানাকে ভালো করেই চিনি।
তুই বললি না সুজানা বিবাহিত। শ্লা নিজের ভাইপো ভাগনেকে পড়ায় আর তুই নিজেও জানিস না ও বিবাহিত নাকি অবিবাহিত।
অভিক হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঠোঁট মুছলো। বলল..
সো হোয়াট ক্যান আই ডু?
জিদান বলল
বসে বসে হাত কামড়াও ব্রো।
তাদের তর্কবিতর্ক হাসা তামাশার মাঝেই তরী আর খড়ি ছুটে এল। বন্ধুদের মাঝে রাহাত খড়িকে দেখিয়ে বলল
অভি এইটাকে আমার মনে ধরছে। পারমিশন দে। আজকেই তুলে নিয়ে যাব। একটা কানাকড়িও নেব না।
খড়ি মুখ মোচড়ালো। বলল
হুহ অত সোজা।
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। সাফিন বলল
শালা ঘরে বউ রেখে লুইচ্চামি শুরু করছোস?
নাহিদ তরীকে দেখিয়ে বলল
আমার তো বড়টাকে ভারী পছন্দ হয়েছে। যদি বলো রাজী ডেকে আনব কাজী।
সুজানাও ফিক করে হেসে উঠলো। তরী মশকরা বুঝলো। তবে লজ্জা পেয়ে অভিকের পেছনে দাঁড়িয়ে বলল
ব্রো তোমার বন্ধুগুলো পাজি।
টেক ইট ইজি বনু।
সুজানা অনা আর আবিদকে পানি খাইয়ে দিল। বলল
আর খাবেন?
দু’জনেই মাথা নেড়ে ঢেকুর তুললো। আবিদ শার্ট তুলে পেট দেখিয়ে বলল
ওবাপ পেটে আন জাগা নাই।
সবাই খিকখিক করে হেসে উঠলো। রাহাত পেটে গুঁতো মেরে বলল
অভি তোর বাপের পেটে নাকি আর জায়গা নেই।
অভিক তার মুখ টিস্যু দিয়ে মুছে দিতে দিতে বলল
পেটে টাইগার।
আবিদ খিকখিক করে হাসলো। তার পেটে টাইগার কথাটা ভারী গর্বের তারজন্য। নাহিদ অনার হাত ধরে টেনে এনে বলল
অভি আমাকে মেয়ের জামাই বানা ভাই । বাপের সব সম্পত্তি তোর নামে লিখে দিমু। আর তোরে রোজ একশবার শ্বশুর আব্বা ডাকুম।
সাফিন আর রাহাতের ধুমধাম চড় পড়লো তার পিঠের উপর। হো হো করে হাসলো সবাই। অনা চোখ লাল করে বলল
মিহিদি ছেচচ। আননননননননা…..
সবাই চোখ পাকিয়ে তাকালো। সুজানাও জিভে কামড় দিল। আনিকা আর সালমা বেগম ছুটে এসে বলল
এমা কি হলো কি হলো?
অনা কেঁদে উঠার আগেই সুজানা বলল
মেহেদী তো শুকিয়েছে ম্যাডাম। কান্না করতে হবেনা। দেখুন আপনার মেহেদী শুকিয়ে গেছে।
অনার কান্নার প্রস্তুতি বৃথা গেল। নাহিদ হাঁফ ছেড়ে বলল
বাঁচালে সুজানা। পঁচা বউ। লাগবেনা এমন বউ। কি বজ্জাত!
অনা ছাড়া পেয়ে দৌড় দিল। কিছুদূরে গিয়ে থেমে কপালের দুপাশে হাত তুলে ভেংচি কেটে বলল
নাহি ব্লাদি ব্লাদি সাকার।
সবাই আরেকদফা হাসলো। সুজানা তরী আর খড়ির সাথে হাত ধোঁয়ার জন্য চলে গেল। সালমা বেগমকে দেখে সাফিন চেয়ার ছেড়ে উঠে বলল
ফুপী বসো না।
সালমা বেগম বলল
ধুরর রাখ চেয়ার। বিয়েশাদি করে তো একেকটা কাজ সেড়ে ফেলেছিস। নাহিদের তো বিয়ে ঠিকঠাক হলো। আমার অভিটার জন্য তোরা একটা মেয়ে দেখতে পারছিস না? একটা আমার যাও পছন্দ হলো কিন্তু মেয়ের নাকি অন্যকোথাও…..
সে যাইহোক তোদের হাতে ভালো মেয়ের খোঁজখবর নেই?
রাহাত বলল
সেটা দুঃখের কথা নয় আন্টি। দুঃখের কথা হচ্ছে আমাদের একজনেরও শালী নাই।
জিদান বলল…
কিন্তু নাহিদের শালিকা আছে মেবি।
বউয়ের আগে শালীর বিয়ে ঠিক আছে।
সবাই খুকখুক করে কেশে উঠলো। অভিক বলল
মা থাক এসব।
তুই চুপ থাক অভি। আমি কথা বলছি তুই কোনো কথা বলবিনা।
অভিক দাদুর কাছে চলে গেল । উনাকে ধরে ধরে নীচে নামাতে হবে।
বন্ধুরা নড়েচড়ে বসলো। নাহিদ চেয়ারে গা এলিয়ে বসলো।
আন্টি এখন যে গেল তাকে দেখতে পারো অভির জন্য। মেয়ে ভালো হবে।
জিদান বলল
হ্যা মামী আমারও তাই মনে হয়।
সালমা বেগম ন্যানো সেকেন্ডও সময় না নিয়ে হেসে উড়িয়ে দিয়ে বললেন
ধুরর ওই মেয়ে তো ছোট। কতই বা বয়স! মাত্রই বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখবে। তাছাড়া অভি ওকে আর খড়িকে বোনের চোখে দেখে। ওসব বললে আমার উপর রেগে বোম হয়ে যাবে। ভালো মেয়ে পেলে আমাকে ফোন দিস কেমন? আচ্ছা বোস তোরা। আমি নীচে যাচ্ছি।
সালমা বেগম এক নিঃশ্বাসে সব কথা বলে চলে গেলেন।
বন্ধুরা একে অপরের দিকে তাকালো।
______________________
সাইফকে ফোন করতেই সে জানালো সুজানাকে আরেকটু অপেক্ষা করতে। সে একটা কাজে আটকা পড়েছে। সুজানা মহাবিপাকে পড়লো। তরী আর খড়ির সাথে গল্প করে যদিও ভালোই লাগছিল কিন্তু মায়ের কথা ভেবে ভয় লাগছে। মা একটা ফোনও করেনি। সুজানা জানে রাগে করেনি কারণ উনি কোনোমতেই সুজানাকে ছাড়তে রাজী ছিলেন না রাতের বেলা। তাও কয়েকদিনের পরিচিত একটা বাড়িতে। সুজানা ঘাড় গুঁজে বসে বসে তরী আর খড়ির বকবকানি শুনছে আর হ্যা না উত্তর দিয়ে যাচ্ছে।
রুমের বারান্দা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় অভিক সুজানার গলা শুনতে পেল। ঘাড় উঁচিয়ে দেখলো কথা বলছে। এখনো যায়নি। অথচ কি তাড়া! উনার টিচার আসেননি? আজব!
আনিকাকে পাঠালো সে। আনিকা বলল
তুই গিয়ে জিজ্ঞেস করে আয় না। আমার কত কাজ।
অভিক গেল না আনিকাকেই পাঠালো। আনিকা গিয়ে বলল
সুজানা কিছু কি হয়েছে? মুখ শুকনো দেখাচ্ছে।
আসলে উনার দেরী হবে বললো।
ওহ তাহলে বসুন না। নাকি সমস্যা হবে?
সমস্যা হবে ম্যাডাম। মা খুব রাগ করবে।
ওহ আচ্ছা আমি আমাদের ড্রাইভারকে বলি। বেশিদূর তো না। আপনি আগে বলবেন না? রাত এগারোটা ছুঁইছুঁই! আপনি দাঁড়ান। আমি আসি।
আনিকা গেল আর ফিরে এল না। বেশখানিক্ষণ পর অভিক এল। তরীকে বলল
তরী উনাকে আসতে বলো।
সুজানা ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে পড়ে বলল
আসি কেমন! আবার দেখা হবে।
সুজানা দ্রুত পায়ে এগোলো। অভিকের পেছন পেছন যেতে যেতে বলল
আসলে উনি নাকি কি একটা কাজে আটকা পড়েছেন। একটু দেরী হতে পারে। কিন্তু আম্মা তো আমাকে বকবে। আপনাকে কষ্ট দিলাম।
অভিক বলল
আমি বলেছি সেটা?
না বলেননি। কিন্তু আজকে তো খুব ব্যস্ত আপনি তাই বললাম।
আপনি বেশি বুঝা বন্ধ করুন।
সুজানা চুপসে গেল। আর কথা বললো না।
অভিক বলল
আমি যাচ্ছি না। ড্রাইভারের সাথে যাবেন। আপনার সমস্যা আমি বুঝতে পারি।
সুজানা লজ্জা পেল। মাথা নেড়ে বলল
আচ্ছা।
গাড়ির কাছাকাছি যেতেই ড্রাইভার ছুটে এল। অভিক বলল
কাকা উনাকে গেইটের সামনে নামিয়ে দেবেন। চেনেন তো।
হ্যা চিনি আব্বা।
খেয়েছেন?
হ্যা আব্বা।
ওকে। সুজানা গাড়িতে গিয়ে বসুন।
সুজানা গাড়িতে গিয়ে বসলো। অভিক দরজা ঠেলে বন্ধ করে দিয়ে মাথা একটু নীচে নামিয়ে বলল
কোনো সমস্যা হলে আমাকে ফোন ওহ সরি মানে কোনো সমস্যা হবেনা। কাকা আছেন।
সুজানা মাথা দুলালো এমনি এমনি মিছিমিছি। অভিক মাথা নাড়ানো দেখে রুষ্ট হলো। সবার সাথে বকবক করতে দ্বিধা নেই শুধু তার বেলায় মাথা দুলানো।
গাড়ি ছাড়বে তন্মধ্যে তরী আর খড়ি ছুটে এল।
গাড়ি ছেড়োনা গাড়ি ছেড়োনা।
গাড়ি ছাড়া হলো না। গাড়ির কাচের কাছাকাছি মুখ নামিয়ে তরী বলল
আপু ফোন নাম্বারটা দাও। মাঝেমধ্যে ফোন করব।
সুজানা মৃদু হাসলো।
তরীর হাত থেকে বড় স্মার্টফোনটি নিয়ে তার ফোন নাম্বারটা সেভ করে দিল। বলল
মিস দিও তাহলেই হবে।
ওকে আপু। বাই। আম্মুর ফোন থেকে দেব। লাস্ট থ্রি ফোর নাইন।
আচ্ছা।
গাড়ি ছাড়তেই অভিক ফোনটা কেড়ে নিল চট করে।
আমার ফোন কোথায় পেলে?
আবিদ সাহেব গেম খেলছিল। এখন কেড়ে নেওয়ায় বাড়িতে তুলকালাম কান্ড চলছে।
বলেই হাসলো তরী।
অভিক সেভ করা নাম্বারটার দিকে তাকিয়ে এগোতে এগোতে বিড়বিড় করলো
ওকে, তোমার কাজটা আমি করে দেব।
________________
মায়ের বকুনিঝকুনি খেয়ে মধ্যরাতে ঘুমিয়ে পড়েছিল সুজানা। ফোনটা বিরক্তিকর শব্দতুলে বাজছে সেই তখন থেকে। এমনিতেই মেজাজ তিরিক্ষি।
শেষমেশ বিরক্ত হয়ে ফোন তুলে দেখলো ওয়ান ফোর ত্রি নাম্বার থেকে ফোন। সে ফোন তুললো। বলল
হ্যালো। আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?
কোনো উত্তর নেই।
হ্যালো! হ্যালো!
কে রে বাবা! কে বলছেন? হ্যালো! কে! কাকে চাই! কেন ফোন দিয়েছেন? এসব কেমন ভন্ডামি রে বাবা! ধুরর।
কোনো উত্তর না পেয়ে সে এবার রেগে বলল
ঘুমের সময় এসবের কোনো মানে হয়? ফাইজলামি পেয়েছেন? ভন্ড কোথাকার। রাখেন। অসহ্য।
অভিক বালিশের নীচে মাথা রেখে গমগমে গলায় বলল
নিজেই বলেছেন মিস দিতে। ননসেন্স।
বালিশে নাক চেপে কথায় বলায় গলাটা ঠিক ধরতে পারলো না সুজানা।
রেগেমেগে বলল,,,
হাটটট …..
চলবে…