#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_৪৭
Writer #পুষ্পিতা_প্রিমা
খাওয়া দাওয়া শেষে সুজানা বেরোনোর জন্য তৈরি। সবাই একে একে বখশিশ দিল। সুজানা লজ্জা পেলে সালমা বেগম ধমক দিয়ে বললেন
আনিকা নিতে ভাঁড়ামো করেছে? তোমার এত সমস্যা কেন? খুশি হয়ে দিচ্ছে। নাও।
সুজানা ভয়ের চোটে নিঃশব্দে নিয়ে নিল। বখশিশ না নিতে কে চায়? একদম ফ্রেশ নতুন টাকা।
মমতাজ বেগম সুতির রুমালে করে সুজানাকে বখশিশ দিয়ে বলল
তিন নাতি বউয়ের জন্য বখশিশ রেখেছিলাম। দুটোকে দিয়ে দিয়েছি সকালে। তোমাকে দেয়ার জন্য আঁচলো বেঁধে রেখেছি। এই নাও। আগামী বছর আমার ভাইয়ের পকেট থেকে চুরি করে হলেও বেশি করে দেব।
সুজানা হাসলো।
আমার ভাই তোমাকে বখশিশ দিয়েছে তো?
সুজানা মাথা দুলালো।
বাহ! কিছু শিখিয়ে দিতে হয় না আমার ভাইটাকে। মসজিদ থেকে ফিরে আমার ভাইগুলো আমাকে বখশিশ দিয়েছে। তাদের তো আমার বখশিশের প্রয়োজন নেই। সেই ছোটবেলায় দিতাম। আমার বখশিশ পেয়ে কত খুশি হতো। এখন দিলেও নেয় না। তবে বৌমাদের দিই। আমি ছাড়া ওদের বখশিশ দেয়ার কেউ আছে? সে যাহোক এই বাড়িতে কবে আসছ? তোমাকে আনার তোড়জোড় তো শুরু করে দিয়েছে তোমার শ্বাশুড়ি।
কি?
ওই যে ফার্নিচার টার্নিচার বানাতে দিল না। ছেলের ঘর থেকে এখন সেটা ছেলের বউয়ের ঘর বানাতে হবে তো।
ছেলের ঘর আর মেয়ের ঘর আলাদা হয়?
হয় তো। মেয়েদের কত কিছু লাগে। ওই ঘরে শোকেস নেই, ড্রেসিং টেবিল নেই। ওই বড় বড় শেলফে কিসব বই রাখা আছে। আর তার যত সরঞ্জাম, লতাপাতা দিয়ে কেমন করেছে তুমি দেখোনি?
ওটুকুতে অনেকটা সুন্দর।
এই দেখো! মেয়ে কি বলে? বরের দিকে টেনে কথা বলছে। বৌমা তুমি কার জন্য এসব করছ বলোতো?
সালমা বেগম জানতে চাইলেন
কি হয়েছে?
দাদুভাইয়ের ঘর নাকি এটুকুতেই ভালো। সুজানাই বলছে।
সে তো দেখার মুখে আমিও বলেছি। তারপর এই বাড়িতে এসে দেখি আপনার খোকার ঘর তার ফুটবল আর ক্রিকেট খেলার মাঠের মতো ফাঁকা । আমি তার মায়ের মতো নই তাই ছেলে বউয়ের কথা ভাবতে হয় আমাকে। আপনার নাতি তার বাবার মতো ফাঁকা করে রাখেনি। সেই গাদাগাদা বই আর লতাপাতা দিয়ে ঘরটা ভর্তি করে রেখেছে। যেন বই আর সবজির দোকান। বাপ ছেলে দুটোই এক। এক পাগলের সাথে সংসার করে এখন আরেক পাগলের সংসার গুছিয়ে দিতে হচ্ছে।
সবাই মিটমিট করে হাসলো।
মমতাজ বেগম ফিসফিস করে বললেন
দেখেছ তোমার শ্বাশুড়ির কথা? এভাবেই আমাকে খোঁচা মারে। আমার খোকা নাকি পাগল?
সুজানাও হাসলো। বলল
আপনারা এভাবে ঝগড়া করেন?
দেখছ না? কিন্তু দেখো তুমি ঝগড়া করার সাহসটুকু পাবেনা শ্বাশুড়ির সাথে। আমাকে তো যা তা শুনিয়ে দেই কিছু বলিনা দেখে।
সুজানা খিক করে হেসে উঠে বলল
হায় আল্লাহ!
তাদের হাসাহাসির মধ্যে ভাটা পড়লো অভিক আসায়। সে বলল
সুজানা রেডি?
জ্বি।
ওকে চলুন।
মমতাজ বেগম বললেন,
এত তাড়া কেন ভাই? একটু বসুক আমার সাথে।
না অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে। রাত বাড়ছে। সুজানা উঠুন।
মামী বলে উঠলেন
আজ রাতটা থেকে যাক না। কত ভালো লাগছে!
সুজানা ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। বলল
না মামিমা । আম্মা চলে যেতে বলেছে। অন্য একদিন।
আনজুমা বেগম বললেন
অন্য একদিন আবার কবে? সেই অন্য একদিন তুমিই মামিকে এবাড়িতে থেকে যেতে আবদার করবে।
সবাই হাসলো।
সুজানাও মৃদু হাসলো। সবার কাছে বিদায় নিয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পথে সালমা বেগম বললেন
তোমার মা সময় চেয়েছিল। সময় দিয়েছি। তুমিও নাকি বলেছ বিয়েশাদির কথা পড়াশোনা শেষ করার পর ভেবে দেখবে?
সুজানা বিস্ময় নিয়ে তাকালো। উনি স্বাভাবিক ভাবে বললেন
আমাকে সব বলেছে তোমার মা। আমি এসব কথা অভিকে বলিনি। শোনো মেয়ে আমি গত ঈদের পর থেকে মেয়ে খুঁজে চলেছি। এখন যখন পেয়ে গেছি আর অপেক্ষা করব না। বিয়ের পর তুমি যা মন চায় করো। বিয়ের আগে আমি যা বলছি তাই করো। ঠিক আছে?
সুজানা মিনমিন করে জানতে চাইলো।
আমি একটা চাকরি করি আন্টি।
তোমাকে আমি কখনও বলেছি চাকরি ছেড়ে দিতে হবে?
না।
তাহলে চাকরির কথা উঠছে কেন? তোমরা বর বউয়ের সম্পর্ক ঠিক রেখে যা করার করো। এই একটা বছর কি তোমার কম মনে হচ্ছে? ততদিন আমি অপেক্ষা করতে পারব না বাপু। যা বলার তোমার মাকে বলে দিয়েছি। এবার তোমার মায়ের সিদ্ধান্ত।
অভিক এসে বলল
মা কি কথা বলছ এত? এবার ছাড়ো। সুজানা চলুন।
সুজানা সবার কাছ থেকে আবারও বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেল। সবাই সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তার যাওয়া দেখলো।
**
রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে অভিক জানতে চাইলো
মা কি বলছিল?
অনেক কিছু।
কি কি?
বলেছে আপনার ঘরটা বই আর সবজির দোকান।
অভিক হেসে উঠলো। বলল
মা ওসব প্রায়ই বলে। আর কি বলেছে?
বলেছে উনার ছেলেটা একদম বাপের মতো।
বাবা মায়ের প্রতি খুবই যত্নশীল। ছেলেটা অবশ্যই বাবার মতো।
সুজানা হাসলো। মৃদু তালে পা ফেলতে ফেলতে বলল
গত ঈদে আমি আপনাকে চিনতাম না।
আর আমি ঈদের পরের দিন একটা মেয়ে দেখতে গিয়েছি।
সুজানা কপাল কুঁচকে তাকালো।
মেয়েটা কেমন?
দেখার চোখে সবাই সুন্দর। কিন্তু তাদের অনুভব করতে না পারাটা আমার আনন্দের ছিল।
কেন?
আমি আমার মতো কাউকে অনুভবে রাখতে চেয়েছিলাম।
আপনার মতো?
মনের মতো।
সুজানা নির্মল হাসলো। অভিক তার হাতটা ধরে এপাশ ওপাশে রাস্তা পার হলো। সুজানা বলল
কি করছেন?
আপনি সাথে থাকলে দুষ্টুমি করতে ইচ্ছে করে। অন্য দুষ্টুমি এখন বারণ তাই কি আর করার?
কান গরম হয়ে এল সুজানার। নিত্যনতুন আবিষ্কার করছে সে এই মানুষকে। এত ঠোঁটকাঁটা তো কভু ছিল না।
তারপর অনেক দূর হেঁটে আসার পর রিকশা পেল তারা। সরিষাবাড়ির গেইটের কাছাকাছি এসে সুজানা রিকশা থেকে নেমে এল।
অভিক বলল
এত তাড়াতাড়ি পথটা ফুরিয়ে যায়।
সুজানা হাসলো। বলল
অনেক টাকা বখশিশ পেয়েছি। ভাড়াটা আমি দেই?
ফাইন।
সুজানা হেসে ভাড়াটা দিয়ে বলল
আসি? সাবধানে যাবেন। হুম?
অসাবধানে গেলে যদি আপনি সাথে আসেন তাহলে সাবধানে যেতে রাজী নই।
সুজানা হেসে বলল
সবসময় মজা। আসি। আল্লাহ হাফেজ।
অভিক তাকে আবারও ডাকলো।
সুজানা!
সুজানা ফিরলো।
অভিক মন খারাপ করে বলল
এসব আর ভালো লাগে না।
সে হেসে চালককে বলল
মামা যাওয়ার পথে উনাকে একটা ভালো লাগার ঔষধ কিনে দিয়েন তো।
অভিক চালককে বিল্ডিংয়ের তিন তলায় আঙুল ইশারা করে বলল
ঔষধের দোকানটা ওইখানে মামা।
সুজানার সাথে সাথে চালকও হেসে উঠলো।
_______________
ঈদ উপলক্ষ কেটে যাওয়ার পর বিয়ের ধুম নেমে এল। নবকুঠিরে বাড়ির বড়রা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল বিয়ের দিন সুজানার মায়ের উপর অত চাপ দেয়াটা খারাপ দেখায়। সুজানা বাবা আর বড় ভাই থাকলে একটা কথা ছিল। কয়েকজন গিয়ে মেয়ে তুলে আনবেন তারপর বিয়ের পরের দিন নবকুঠিরে বড় করে ওয়ালিমায় আত্নীয় স্বজনের মেহমানদারির ব্যবস্থা করবেন।
সাজিয়া বেগমকে তা জানালে উনি বেকায়দায় পড়ে যান। উনার একটামাত্র মেয়ে। বাবা নেই এই কারণে মেয়েকে কোনো কথা শুনতে দিতে রাজী নন উনি। উনি একাই সুজানার মা আর বাবা।
আশেপাশের প্রতিবেশী এসে বলে গেল যে না খাইয়ে দাইয়ে মেয়ে বিয়ে দিলে মেয়েকে পরে কথা শুনতে হয়। যেখানে উনারা অন্য কোনো পণ দাবি করছেনা সেখানে বিয়েতে ভালো আয়োজন না করলে মানুষে কথা শোনাবে মেয়েকে।
সাজিয়া বেগম সেসব শুনে একেবারেই মত দিলেন না। উনার সাধ্যমত আয়োজন করেই উনি মেয়ে দেবেন এমন পণ করলেন।
উনার সিদ্ধান্তঃ শুনে ও-ই বাড়ির লোক কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছে সাজিয়া বেগম কি ভাবছেন সেটা।
তাই সবটা উনার উপর ছেড়ে দিলেন। উনার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো উচিত। উনি সুজানার একমাত্র অভিভাবক।
টাকা পয়সা হাতে আসামাত্রই সাজিয়া বেগম জানালেন আগামী বৃহস্পতিবারে মেহেদী সন্ধ্যা আর শুক্রবারেই বিয়ের দিন তারিখ ফেলতে। সালমা বেগম ভীষণ খুশি হলেন। বিলম্ব হওয়ায় উনি খুব টেনশনে ছিলেন এতদিন। অবশেষে কাঙ্ক্ষিত দিনটা এল। বিয়ের কার্ড ছাপিয়ে বিলি করা হলো তিন চারদিনের মধ্যে।
তারপর বিয়ের বাজার সাজার।
সুজানার ভীষণ সর্দি কাশি হওয়ায় সে বলে দিয়েছে সবকিছু যাতে অভিকের পছন্দ মতো কিনে নেয়। তাছাড়া আনিকা জিনিয়া ওরা তো সবাই আছেই। কিন্তু অভিক নাছোড়বান্দা। সে ফোনে ফোনে জানালো। টিস্যু বস্তা করে নিয়ে যাব। তাও সর্দি-কাশি নিয়ে আপনাকে যেতে হবে।
সুজানা এমন নাছোড়বান্দা মানুষ আর দেখেনি। অগত্যা তাকে যেতে হলো।
__
ভালো জানাশোনা একটা ব্রাইডাল শপিংমল বেছে নিয়ে ওখানে কেনাকাটা করবে মনস্থির করেছে অভিক। গতরাতেই সবাই মিলে, ফোনের অপর পাশে সুজানাকে রেখে ফর্দ রেডি করেছে । সুজানা ফোনের ওপাশে বসে মাঝেমধ্যে হাঁচি-কাশি দিচ্ছিল। আর একেক জনের একেক মতামত শুনে হেসে কুটিকুটি হচ্ছিল। কেউ বলছে বিয়ের দিন শাড়ি পড়বে, কেউ বলছে লেহেঙ্গা। অনেক কথা-কাটাকাটি পরে সিদ্ধান্তে এল বিয়ের জন্য শাড়ি আর ওয়ালিমার দিন লেহেঙ্গাটা পড়বে। মেহেদীর শাড়ি, বিয়ের শাড়ি,লেহেঙ্গা,বিয়ের পরের শাড়ি, সুতি শাড়ি, ত্রিপিছ, বউয়ের মা ভাইয়ের জন্য কাপড়চোপড়, ফুলের গয়না, আর বউয়ের সাজগোজের জিনিস। আরও কতকিছু। বাড়ির সবার কেনাকেটা তো আছেই।
ছেলের বউয়ের গয়না সালমা বেগম আগে থেকে জুড়ে রেখেছেন। তাই সেসব নিয়ে চিন্তা নেই।
—–
সর্দি-কাশি নিয়েই সুজানা বিয়ের বাজারে যাওয়ার জন্য সরিষাবাড়ির গেইটে দাঁড়িয়েছে। অভিক বলেছিল তাকে গাড়িতে তুলে নেবে। সুজানা প্রায় সাত আট মিনিটের মতো দাঁড়ানোর পর গাড়িটা এসে থামলো তার সামনে । সেখানে সালমা বেগম, আনিকা আর জিনিয়া বসা। সুজানা সবার সাথে কুশল বিনিময় শেষে ড্রাইভারের দিকে তাকালো। অভিককে দেখলো না।
এমা, উনি কোথায়?
সালমা বেগম ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলল
অভি ওখানে আছে। তুমি উঠে বসো।
সুজানা আনিকার পাশে গিয়ে বসলো। আনিকা বলল
শরীর এখন কেমন আপনার?
মোটামুটি।
তারা গল্প করতে করতে নিউমার্কেটে চলে আসলো। সালমা বেগম ছেলের সাথে ফোনে ফোনে চিল্লাচিল্লি করছেন। আজব ছেলে সবাইকে এখানে রেখে বন্ধু নিয়ে ঘুরছে। বাপের মতো আক্কেল হয়নি ছেলেটার।
সবার প্রথমে সবাই শাড়ির দোকানে চলে গেল। মেহেদীর শাড়ি আর আরও কয়েকটা শাড়ি দেখার পরে বিয়ের শাড়ির দেখা শুরু হলো। সালমা বেগম শাড়ি দেখতে দেখতে সুজানাকে বললেন
আমার পছন্দ তোমার অপছন্দ হলে বলবে। ঠিক আছে?
সুজানা মাথা দুলালো।
পুরো শাড়ির মেলা বসে গেল চারপাশে। সালমা বেগম অনেকক্ষণ দেখার পর একটা বেনারসি আনিকাকে দিয়ে বললেন
এটা দেখো তো।
আনিকা সুজানার পেছনে এসে বেনারসিটা মেলে সুজানার গায়ের উপর দিয়ে বলল
দেখুন তো এটা পছন্দ হয়েছে কিনা। ছোটমার পছন্দ আছে।
সুজানায় আয়নায় চোখ রাখলো। আনিকা অন্য শাড়িগুলো দেখায় মনোযোগ দিয়ে বলল
ভালো করে দেখুন।
সুজানা আয়নায় চোখ রেখে বেনারসিটা আরেকটু ভালো করে মেলে মাথায় তুলে ঘোমটা দিল।
আয়নায় নিজেকে দেখলো অনেকক্ষণ। জীবনটা হুট করে এত রঙিন মনে হলো। অথচ কেমন ছিল এই বিয়ে বিয়ে শব্দগুলো তার কাছে। কত ভয়ের ছিল। কত আশংকার।
আয়নায় নিজেকে দেখার সময় অনেক হলো। তারপর দেখতে পেল ওই দূরে দোকানের ভেতরের কাঁচের দরজা ঠেলে ঢুকে পড়া মানুষটাকে। তার দিকে চোখ পড়ায় চোখেমুখে দারুণ পুলক। মুগ্ধতা। এভাবে কখনো তাকানো হয়নি।
সুজানা ওই চাহনি দেখে লজ্জায় রাঙা হলো।
অভিক ভুরু নাচাতেই সুজানা মৃদু হেসে মুখটা পুরো ঢেকে নিল শাড়ির আড়ালে।
অভিক তা দেখে হাসলো। মেয়েটা নাতিপুতির নানী হলেও তাকে লজ্জা পাবে।
চলবে…..
#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_৪৮
Writer #পুষ্পিতা_প্রিমা
অভিক এসে মায়ের পাশে গিয়ে বসলো। সালমা বেগম ঘাড় ফেরাতেই ছেলেকে দেখে বলে উঠলেন
তোর এতক্ষণে আসার সময় হলো? সিজান কোথায়?
ও ফোনকলে আছে। বাইরে।
সুজানা মাথার উপর থেকে শাড়িটা নামিয়ে রাখতে রাখতে অভিকের দিকে তাকালো। অভিক ভুরু নাচিয়ে জানতে চাইলো
কি?
সুজানা দুপাশে মাথা নাড়ালো। সালমা বেগম তা পরখ করে বললেন
ও কোনগুলো পছন্দ করেছে দেখ তো। বিয়ের শাড়িটা ওদিকে। যাহ একটু দেখ।
অভিক মায়ের পাশ উঠে গিয়ে বলল,
ওকে।
সুজানার দিকে যাওয়ার সময় জিনিয়ার মাথা চাপড়ে দিয়ে যেতে যেতে বলল
এ কি করছে এখানে?
জিনিয়া মাথার পেছনে চেপে ধরে বলল
আহ মারলে কেন?
এটাকে মাইর বলে জানতাম না।
সালমা বেগম ডাক দিলেন।
অভি হচ্ছেটা কি? এখানেও মশকরা করবি?
অভিক নিজের বাম কান টেনে বলল,
সরি সরি। আর করব না। কি জ*ল্লাদ মেয়েরে বাবা!
জিনিয়া বলল
মামি দেখেছ দেখেছ কি বললো? আপু তুমি শুনেছ? সুজানা আপনি শুনেছেন ?
আনিকা আর সুজানা হাসলো।
অভিক সুজানার পাশে গিয়ে বসলো। বলল
এটা পছন্দ?
আপনার পছন্দ হয়েছে?
অভিক শাড়িটা উল্টেপাল্টে দেখলো। জিনিয়া বলল
এটা জোস। আমি অলরেডি মা আর ভাবিকে ছবি পাঠিয়ে দিয়েছি। তারা পছন্দ করেছে। স্পেশালি নানুও এটা পছন্দ করেছে। যদি সুজানার পছন্দ হয় তাহলে এটা নিতে বলেছে।
অভিক সুজানার দিকে তাকালো। সুজানা মাথা নাড়ালো। অভিক বলল
মা এটা সুজানার পছন্দ হয়েছে।
সালমা বেগম বললেন
তোরও পছন্দ হয়েছে?
আমার মায়ের পছন্দ বলে কথা। অপছন্দ হওয়ার প্রশ্নই উঠেনা।
সালমা বেগম একগাল হাসলেন। সুজানা বোধহয় এই প্রথম উনার হাসি দেখলো। সুজানাকে দেখার সাথে সাথে উনি হাসি থামিয়ে দিলেন। বললেন
সত্যি কথা বলবে মেয়ে। আবার পরে মনে হবে আমার পছন্দ তোমার উপর চাপিয়ে দিয়েছি।
সুজানা দু’পাশে মাথা নেড়ে বলল
নাহ।
অভিক তাকে নকল করে বলল
নাহহহ।
সুজানা কপাল কুঞ্চন করলো।
বাকিরা হেসে উঠলো।
_____
সবার বাজার সাজার শেষ করতে করতে গভীর রাত নেমে এল। আজীম সাহেব অফিস থেকে ফিরে সবাইকে দেখতে চলে এলেন। এসেই দেখলেন বিশাল কারবার। সালমা বেগম আনিকাকে সাথে নিয়ে ঘর সাজানোর অনেক জিনিসপত্রও কিনে নিলেন ফাঁকেফাঁকে। ঘরের মাঝে ঝুলিয়ে দেয়ার জন্য একটা বড় সাইজের ঝুলানো দোলনাও কিনলেন। আনিকার ঘরে একটা আছে। আরও কত কিছু কিনলেন তার হিসেব নেই। নিজের হাতে ছেলের সংসারটা সাজিয়ে দেয়ার মতো এত আনন্দ আর কোনোটিতে উনি পাননি । এই ছেলেটাকে নিয়ে কতই চিন্তায় না ছিলেন উনি। যতই প্রতিষ্ঠিত আর বিলেত পাস হোক উনার কাছে ছেলেটা সেই সাদাসিধা বোকাসোকা হাবাগোবা। যদি কোনো বাজে মেয়ের পাল্লায় পড়তো তখন কি হতো? ভাগ্যিস সুজানার দিকে তার মন গেঁথেছিল। মায়ের মতো ছেলেটাও মেয়েটাকে ওই বাড়ির একজন করে চেয়েছিল!
বউয়ের কেনাকাটা শেষ হওয়ায় সবাই দম ছাড়লো। যদিও আরও অনেক কেনাকাটা বাকি পড়ে রয়েছে।
কিন্তু বউয়ের কেনাকাটা শেষ হয়েছে মানে অনেক বেশি কিছু। গায়ে হলুদের শাড়ি থেকে শুরু করে বিয়ে, ওয়ালিমা আর অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য কেনা শাড়ি, গহনা, সাজগোজের জিনিসপত্র সবকিছু বাড়িতে বসে সবাই রেডি করে তারপর বউয়ের বাসায় পাঠিয়ে দেবেন। শপিংমল থেকে বের হয়ে সবাই রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়া করলো বেশ। জ্বর থাকায় সুজানা বেশি খাওয়াদাওয়া করতে পারলো না। সবাই তা দেখে তাকে বেশি জোরাজোরি করলো না।
অভিক সাজিয়া বেগম আর সায়েমের জন্য করা বাজার-সদাইগুলো নিয়ে সুজানাকে বাসায় দিয়ে আসলো। বাকিরা নবকুঠিরে ফিরে গেল।
গায়ে হলুদের আগের দিনই সুজানাদের বাসায় তার সব জিনিসপত্র দিয়ে গেল আহনাফ আর আজীম সাহেব। হুট করে বিয়ে নামানোতে মেহমান দাওয়াত করা নিয়ে তারা বেশ দৌড়াদৌড়ির উপর ছিল। তাই স্যুটকেসগুলো বাসায় ঢুকিয়ে দিয়ে চা খেয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন উনারা।
গায়ে হলুদের দিন সকালে সুজানা দাদার বাড়ি থেকে তার বৃদ্ধা দাদিমা, চাচী আর চাচাতো ভাই-বোনরা এল। মামার বাড়ি থেকে মামা মামী, আর ছোট খালাম্মার পরিবার। তার বড় ফুপু আর ছোট ফুপুরাও এসেছে। ভেতরকার মনোমালিন্য থাকলেও বিয়েতে দাওয়াত করায় কেউ না এসে থাকতে পারেনি। সাজিয়া বেগমও মেয়ে বিয়ের সবকিছু একা হাতে সামলাতে গিয়ে কেমন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাই সবাইকে ডেকে নিয়েছেন।
মেয়েটাকে ছেড়ে কেমন দশা হবে ভেবেই উনি কূল পাচ্ছেন না। এতদিন বিয়ে বিয়ে করে নিজেই অস্থির হচ্ছিলেন। আর এখন মেয়েটা পাশে নেই ভাবতেই গেলেই দমবন্ধ লাগছে। কি করে থাকবেন মেয়েটাকে ছেড়ে? যদিও সান্ত্বনা পান এই ভেবে একটা মানিকের মতো ছেলে পেয়েছেন মেয়ে জামাই হিসেবে। আর কোনো দুঃখ থাকার কথা নয়।
_______
নবকুঠিরের সম্মুখ পথ থেকে শুরু পুরো বিল্ডিংটা লাইটিং দিয়ে সাজানো হয়েছে। লাইটিংয়ের আলোয় ঝলমল করছে দ্বিতল ভবনটি। বাড়ির গেইট থেকে শুরু করে বাড়ির ভেতরেও অসম্ভব রকমের সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে দলে দলে মেহমান আসা শুরু হয়েছে। অভিক দুপুরের দিকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল বিশেষ বিশেষ কাজে। সাথে তার বন্ধুরা ছিল। যখন ফিরলো তখন আত্মীয় স্বজনের সাথে কুশল বিনিময় করতে গিয়ে সে অস্থির। যার বিয়ে সে এতক্ষণ পর বাড়ি ফিরছে কেন, কোথায় গিয়েছে এতসব প্রশ্ন তার সম্মুখে। সে সবার প্রশ্নের উপর দিয়ে ব্যাপারটা সেখানে মিটিয়ে নিল।
আজীম সাহেব এসে জানতে চাইলে
কি ব্যাপার বৎস? সব ভালো লাগছে? অভিক ফারদিনের বিয়ে বলে কথা। ঝাক্কাস করে সাজিয়েছি।
অভিক চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলল
দারুণ। আমার একটা প্রশ্ন ছিল।
বলে ফেলো।
মায়ের পছন্দ হয়েছে সবটা?
আমি যাহাই করি তোমার মায়ের তাহাই অপছন্দ। আমাকে বলে গেল সে নাকি সদর দরজার বাইরে চোখ দিতেই চোখগুলো ঝলসে গেল। লাইটফাইটগুলো এমন ঝিকঝিক করছে, যেমন মানুষ তেমন তার রুচি। এখন আমার রুচি নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল।
অভিক সশব্দে হেসে উঠলো। বলল
সুজানা এভাবে আমাকে বললে দারুণ শোনাবে কিন্তু।
আফসোস সুজানা এভাবে কখনোই বলবে না। সুজানা ভারী মিষ্টি মেয়ে। তোমার মা কপাল করে এমন ছেলের বউ পাচ্ছে। আনফরচুনেটলি সুজানার সাথে ঝগড়া করে তোমার মা কোনো মজাই পাবে না।
তাহলে মা ঝগড়া করাটাই বন্ধ করে দেবে।
এটাতে আবার আমার লস। তোমার মায়ের সাথে ঝগড়া না করলে আমার দিনটাই ভালো যায় না।
অভিক হেসে ফেলল আবার।
আহনাফ এসে বলল
চাচ্চু ছোটমা তোমাকে এক্ষুণি ডাকছে। কি নিয়ে কথা হচ্ছে এখানে?
অভিক হাসতে হাসতে বলল
তোমার ছোটমাকে নিয়েই কথা হচ্ছে।
আহনাফ হাসলো। বলল,
চাচ্চু দ্রুত যাও। নাহলে..
আমি জানি কি হবে। যাইহোক অল দ্য বেস্ট অভিক। ওদিকের কি অবস্থা ফোন করে জেনে নিও।
ওকে।
______________
সুজানার বন্ধুরা সবাই মাগরিবের পরেই চলে এল। সুজানা পুরোটা দিন কাজে ব্যস্ত ছিল। নিজের বিয়েতে সে নিজেই কূল পাচ্ছে না এত কাজ করে। চাবির তোড়াটা তার ওড়নার কোণায় ঝুলছে সেই সকাল থেকে। মাকে হঠাৎ করে কেমন নরম দেখাচ্ছে। শরীরটা খারাপ লাগছে কিনা তাও বুঝা যাচ্ছে না। সুজানা কতবার জিজ্ঞেস করেছে উনি এড়িয়ে গেলেন প্রত্যেকবার। সুজানা মনটা কেমন আকুপাকু করছে সেই সকাল থেকে। এত তাড়াতাড়ি জীবনের মোড়টা কেমন ঘুরে গেল। মা ভাইকে নিয়ে ছিল তার পৃথিবীটা। তারপর মাস্টারমশাইয়ের আগমন। আগে তার লড়াইটা একার ছিল এখন পাশে একজন আছে। কিন্তু তারপরও মনটা কাঁদছে খুব। আজকে বাবা নামক মানুষটাকে একটু বেশি করেই মনে পড়ছে তার।
বাবা থাকলে হয়ত মা ভাইকে নিয়ে চিন্তাটা তার একটু কম হতো। আম্মা আর ভাইকে ছেড়ে সে থাকবে কি করে? বারবার তার চোখ ভিজলো সবার আড়ালে। এত চিন্তা ব্যাথা সে কোথায় লুকোবে?
পার্লারের মানুষ এসে সুজানাকে সাজিয়ে গেল। আনিকা ঠিক করে দিয়েছে সব। সেখানে আরও অনেকজন সাজলো। মেহুল আর শান্তা থেকে শুরু করে রোজা আর সুজানার খালাতো, চালাতো বোনগুলো সব। সবার গায়ে হলুদ শাড়ি।
ছাদে স্টেজ সাজানো হয়েছে। সেখানে বেশ সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হয়েছে। সবগুলো সাইফ করেছে দায়িত্ব নিয়ে। সায়েম তার বন্ধু বান্ধবের সাথে ওখানে ক্যামেরা সেটআপের কাজে ব্যস্ত। আপার বিয়ে নিয়ে তার আনন্দের শেষ নেই।
সুজানাকে সাজিয়ে ছাদে নিয়ে যাওয়ার সময় সাজিয়া বেগমকে ডেকে নিয়ে এল সবাই। তার দাদিমা বলল মাকে সালাম করে তারপর স্টেজে যা বোন। বড় বউ তুমি ওকে দোয়া করে দাও। সাজিয়া বেগম আগে তার দাদিমাকে সালাম করার জন্য ইশারা করলো। সুজানা দাদুকে সালাম করতে যেতেই উনি মাথায় হাত বুলাতে গিয়ে কাঁদলেন। তার বড় নাতিন। তার বড় ছেলের বড় মেয়ে। ছেলেটা যাওয়ার পর নাতি নাতনি দুটো আর ছেলে বউয়ের সাথে কত দূরত্ব বেড়ে গেল হুট করে।
সুজানা দাদিমাকে জড়িয়ে ধরে বলল
আব্বা তোমাকে দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিল আম্মাকে দেখে রাখার। তুমি দেখে রাখোনি কেন?
তুইও অভিযোগ শোনাচ্ছিস বোন? আমার কি করার ছিল।
আমার আম্মা অনেক কষ্ট পেয়েছে। অনেক কষ্ট করেছে। আজও করছে। তার বিনিময়ে আম্মা কিচ্ছু পাইনি। কিচ্ছু না। তোমরা সবাই স্বার্থপর।
সুজানাকে মেহুল ছাড়িয়ে নিল। বলল
গাধী এখন কেঁদেকেটে ভাসাচ্ছিস। আন্টিকে সালাম করে চল।
সুজানা মাকে সালাম করতেই উনি উনি মেয়ের মুখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। বললেন,
মাথায় ব্যাথা লাগছিল। চা নিয়েছিলাম। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে বোধহয়। যাই।
সুজানা যেতে দিল না মাকে। ঝাপটে জড়িয়ে ধরে ডাকলো
আম্মারে আমিও তোমাকে কিছু দিতে পারিনি।
সাজিয়া বেগম চোখের জলে হেসে মেয়ের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন
তুই সুখী হ। ভালো থাক। এটাই আমি চাই। আমাকে আর কিছু দিতে হবে না।
সুজানা ডুকরে ডুকরে উঠলো। বলল
আমি একটা ঘর বেঁধে সেখানে তোমাকে নিয়ে যাব আম্মা। তোমাকে একা রাখব না। আমি তোমাকে একা রেখে শান্তিতে থাকতে পারব না আম্মা। আমি কি করে থাকব তোমাকে আর ভাইকে ছাড়া।
মা হেসে মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বললেন
আমিও তোকে ছাড়া কি করে ভালো থাকব সোনা? নবকুঠির আর কতদূর? রোজ গিয়ে তোকে দেখে আসব। তোর মাস্টারমশাই আছে তো। কাল আমায় বলেছে সুজানা যখন চায় তখন সে নিয়ে আসবে আমার কাছে।
সুজানা ফুঁপিয়ে উঠলো আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। উপস্থিত সকলের চোখ ভিজিয়ে দিল মা মেয়ের এই ব্যাথাতুর কথোপকথন। অনেক কষ্টে মা মেয়েকে ছাড়িয়ে নিল সবাই।
ছাদের স্টেজে গিয়ে বসামাত্রই সুজানার ফোন নিয়ে শান্তা ছুটে এল। বলল
দেখি দেখি স্বাভাবিক হ। স্যারের বাড়ি থেকে ফোন এসেছে।
সুজানা ফোনটা নিল। ভিডিও কলের স্ক্রীনে আনিকাকে দেখা গেল। বলল
সাজ খুব সুন্দর হয়েছে। ছোটমা তাড়াতাড়ি এসো। সুজানাকে দেখতে চাইলে না।
কিছুসময় পর সালমা বেগম ফোনের ওপাশে এলেন। সুজানা সালাম দিতেই উনি সালাম নিয়ে বললেন
তোমার গলা বসে গেছে কেন? কেঁদেছ নাকি? এত কাঁদাকাটির কি আছে? তোমার শ্বশুরবাড়ি কি লন্ডনে?
সুজানাকে কিছু বলতে না দিয়ে উনি একাই বকবক করে থামলেন। তারপর আনিকাকে ফোন দিয়ে চলে গেলেন। জিনিয়া আর তরীদের সাথে টুকটাক কথা বলছিল সুজানা। অভিক এসে ফোনটা কেড়ে নিয়ে ঘরে থেকে বেরিয়ে গেল। সে গতকাল থেকে সুজানার সাথে একটা কথাও বলেনি। সুজানাও সময় পায়নি, সেও না। এখন একটু কথা বলবে। তাই ফোনটা নিয়ে তার ঘরের দিকে চলে গেল। ওখানে জিনিসপত্র নিয়ে এসে গাদাগাদি করে দরজা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। অভিক দরজা খুলে আবার বন্ধ করে দিয়ে চেয়ার টেনে বসলো। সুজানা ফোনের ওপাশে এখনো চেয়ে আছে। অভিক ক্যামেরা তার দিকে ঘুরিয়ে নিল। সুজানা তাকে দেখে মৃদু হাসার চেষ্টা করলো। গায়ের রঙে আকাশী রঙের পাঞ্জাবি তাকে বেশ মানিয়েছে। অভিক তাকে ভালো করে পরখ করে প্রশ্ন করলো
ওখানে সব ঠিকঠাক?
সুজানা মাথা নাড়ালো।
সকালে ডালিম গাছে একটা সুন্দর হলুদ পাখি দেখেছিলাম। আপনাকে তার মতো দেখাচ্ছে।
পরোক্ষ প্রশংসায় সুজানা নির্মল হাসলো। অভিক বলল,
কাল দেখা হচ্ছে। কালকের পর আর কাঁদা যাবে না ম্যাডাম।
সুজানা কিছুটা বিস্ময় নিয়ে চোখ নামিয়ে নিল দ্রুত।
কোথায় কেঁদেছি?
সেটার প্রমাণ দিতে চাই না। কিন্তু কালকের পর আর কাঁদা যাবে না। কাল থেকে আপনার সব সুখদুঃখের ভাগীদার আমি। এই সবকিছুতে আপনি খুশি?
ছোট্ট প্রশ্নটি সুজানাকে ভড়কে দিল। সে একটু করে ভেবে নিল অভিক ফারদিন নামের কেউ তাকে চেনেনা সেও ওই নামের কাউকে চেনেনা। তখন এই মস্ত বড় পৃথিবীটাতে নিজেকে বড়ই অসহায় মনে হলো।
সে উত্তর দিতে পারলো না। শুধু আবদার করলো..
ফোনের ওপাশে আপনি আর কিছুক্ষণ থাকুন।
উত্তর এল..
আমি আছি।
চলবে…..