আমায় রেখো প্রিয় শহরে পর্ব-১২+১৩

0
10

#আমায়_রেখো_প্রিয়_শহরে
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
#বারোতম_পর্ব

অনিন্দ্য এই ধরাধামে যা কিছু ঘটে তার বেশিরভাগই রহস্য বটে। আর সবচেয়ে রহস্যময় হচ্ছে মানুষের মন। এই মন কখন কি বলে। কখন কি চায়, বলা মুশকিল। বোঝা মুশকিল। এই মনের চাওয়ার কত রুপ। কত ধরণ। কত ধৃষ্টতা। কারো মন চায় ভালো থাকতে; কেউ বা চায় ভালো রাখতে। কেউ বা চাই নিজেও ভালো থাকব না কাউকে থাকতেও দিবো না। কি অদ্ভুত!

রুপক কেবিনের বেডে শুয়ে আছে। তার মা ইসমত আরা বেগম ছেলের মাথা হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। পায়ের টিউমারটা অনেক আগেই অপারেশন করার কথা ছিল। আজ করছি, কাল করছি, করতে করতে করাই হয়ে ওঠে না। গত সপ্তাহে ফুটবল খেলতে গিয়ে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছিল।
সেই ব্যথা কম তো দূর বেড়েই যাচ্ছিল। ডাক্তারের কাছে এলে উনি বলে দ্রুত টিউমার অপারেশন করে নিতে। ভয়ের কিছু নেই টিউমারের অবস্থা ভালো। তবে অসুখ শরীরে পুষতে নেই। কখন কি হয় বলা যায়। একথা শুনে ইসমত আরা বেগম সেদিনই অপারেশনের ডেট ঠিক করে আসেন। আর সুযোগ বুঝে কাজটা আজ সেরে নিলেন। আল্লাহর রহমতে কোনো
সমস্যা হয় নি। কয়েকদিন রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। রুপক চোখ বন্ধ করে আছে। স্যালাইন চলছে৷ তখন ইসমত আরা বেগম বললেন,
-‘আব্বু ঘুমিয়েছিস?’
-‘না আম্মু। বলো শুনছি।’
-‘খুব কষ্ট হচ্ছে?’
-‘অবশ ছুটছে বোধহয় তাই..! ‘
-‘ঠিক হয়ে যাবে বাবা। কষ্টের পরেই স্বস্থির দেখা মিলে তাই না?’
-‘হুম। কুহু বাসায় ফিরেছে?’
-‘হুম। রিদওয়ান ফোন করে জানাল তারা কেবল বাসায় ফিরল।’
-‘ওহ।’
-‘একটা কথা বলব বলব করেও..!’
-‘ভয় নেই। রিদওয়ানের জান চলে যাবে তবুও আমাদের সন্মানে ঠুনকো আঘাত হানতে দেবে না। তুমি ওকে না চিনলেও আমি চিনি আম্মু। ওই ঠিক নারিকেলের মতো। উপরে শক্ত খোলসে আবৃত আর ভেতরটা খুব নরম।’
-‘সেটাও বুঝেছি আমি। ছেলেটাকে ভীষণ পছন্দ হয়েছে আমার। পাত্র হিসেবে মন্দ হবে না তাই না?’
মায়ের কথা শুনে রুপক ঝট করে চোখের ঝাঁপি খুলে ফেলল। হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল একরাশ বিষ্ময় নিয়ে। মায়ের কথার অর্থ বুঝতে তার সময় লাগল না। ছেলেকে এভাবে তাকাতে দেখে ইসমত আরা একটুও ভড়কালেন না। বরং অত্যন্ত স্বাভাবিক থেকে বললেন,
-‘সব মায়েরা চান মেয়েকে সুপাত্রের হাতে পাত্রস্থ করতে। আমার চাওয়া এর ব্যক্তিক্রম নয়। ছেলে ভালো। কর্ম করে। নেশাভান করে না। বিনয়ী।
পরিবারও ছোটো। হ্যাঁ তার পরিবারটা এতদিন ভাঙাচোরা থাকলেও খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে। সুপাত্র হিসেবে আর কি চাই?’
-‘তোমার মাথা ঠিক আছে? তুমি কাকে নিয়ে কি বলছো? রিদওয়ান আমার বন্ধু। ছোটোবেলার বন্ধু! আর কুহু আমার বোন! বন্ধু আর বোন
একসঙ্গে ভাবতেই পারি না আমি।’
-‘কেন পারিস না? সে তোর ছোটোবেলার বন্ধু বলেই তো তুই ভালো করে জানবি রিদওয়ান আসলে কেমন। তার নেগেটিভ দিকগুলোও জানবি।
এবার তুই রিদওয়ান কেমন হবে আমাদের কুহুর জন্য?’
-‘রিদওয়ান ছেলে হিসেবে যথেষ্ট ভালো। এ নিয়ে আমার অভিযোগ নেই।
কিন্তু ওর একটাই সমস্যা ভীষণ রাগ ওর। রেগে গেলে কনট্রোল করতে পারে না। ওর রাগের মাত্রা এতটা ভয়াবহ তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।’
-‘ঠিক আছে মেনে নিলাম। আর তোর বোন কি? কোনো গুন আছে তোর বোনের? তার কি রাগ জেদ কম? পড়াশোনায় ভালো? ভালো রেজাল্ট? চেহারা সুরুৎ সুন্দর হলেই হয় না৷ গুন থাকা লাগে। যার গুন আছে তার চেহারা সুরৎ ভালো না হলেও সে পড়ে থাকে না। আর যার গুন নাই সে আহামরি সুন্দর হলেও সংসার টেকাতে পারে না। আমি স্বার্থপরের মতো কথা বলছি হয়তো কিন্তু আমার মনে হয় কুহুর মতো পাজিকে একমাত্র রিদওয়ানই সামলাতে পারবে। আমি তোকে জানালাম শুধু। তুইও ভেবে
দেখ।’
-‘এজন্যই কি জোর করে ওকে হোটেল থেকে বাসায় এনেছিলে?’
-‘না। ভালোবেসেই এনেছি। আর এসব চিন্তা করেছি কিছুক্ষণ আগে।
কুহু আর সে বাসা একা আছে এটা নিয়ে টেনশন করব বলে রিদওয়ান কি বলেছে জানিস? বলেছে আমরা বাসায় না ফেরা অবধি যেন কলে থাকে। কথাটা শুনে আমি নিজেও অবাক হয়েছিলাম। পরে আমি যখন বারণ করি তখন কি করল জানিস? প্রতি ঘন্টায় কুহুর আপডেট দিচ্ছে আমায়। ছেলেটা ভালো না হলে এমন করতো?’
-‘কিন্তু ওকে বলবো কিভাবে আমি? আর কি বা বলব’ বন্ধু তুই আমার বোনকে বিয়ে কর।’ এটা বলা যায়?
-‘তা বলবি কেন? এসব কিছু বলতে হবে না। যদি দেখি রিদওয়ান নিজে আগ্রহী তবেই আমরা এগোবো। এখন শুধু তোকে জানিয়ে রাখলাম যে ছেলেটাকে আমি মেয়ে জামাই করতে ইচ্ছুক।’
-‘রিদওয়ান আর তোমার মেয়ের কোপাকুপি সম্পর্ক। তোমার মেয়ে পারে না রিদওয়ানকে খুন করতে। আর তুমি বলছো তাকে মেয়ে জামাই বানাবা। আর তুমি বলবা আর তোমার মেয়ে সুরসুর করে বিয়েতে রাজি হয়ে যাবে। এত সোজা?’
-‘ বলছি মানে এই তো যে তাকেই মেয়ে জামাই বানাব।’

রুপক আর জবাব দিলো না। কিছুক্ষণ ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে থেকে চোখ বন্ধ করে নিলো। কিছুক্ষণ আগে একটা নার্স এসে হিপের উপর একটা
ইনজেকশন দিয়ে গেল। বলে গেল ব্যথা কমে যাবে। কই কমছে না তো।
এই জ্বালাপোড়া কখন থামবে? চিনচিনে ব্যথাতে পা নড়ানোই যাচ্ছে না।
নার্সটাকে কি আবার ডেকে আনাবে? এলে কি বলবে, ব্যথা কমছে না? একথা বললে যদি আবার হিপের উপরে ইনজেকশন দেয়? বার বার কাউকে হিপের দেখানোর মতো বেশরম হয়নি এখনো সে। তখন লজ্জা পেয়েছিল ভীষণ। আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করানোর ইচ্ছে নেই তার। এরচেয়ে চুপ করে কাঠ মেরে পড়ে থাকা উত্তম।

কুহু বাজার থেকে ফিরে ধপ করে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে পড়ল। যেন বাজারের ব্যাগগুলো সেই টেনে এনেছে৷ এনার্জি লস হয়ে এমন নেতিয়ে পড়েছে। রিদওয়ান দুইহাতে থাকা ব্যাগগুলো রান্নাঘরে রেখে এলো। সে নিজেও ঘেমে নেমে একাকার। বাইরে যা রোদ। না ঘেমে উপায় আছে?
আগে ফ্রেশ হওয়ার দরকার। একথা ভেবে সে ফ্রেশ হতে গেল। মিনিট পাঁচেক পরে ফিরে এসে দেখে কুহু মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে বসেছে। গপগপ করে মিষ্টি মুখে পুরছে। টিভিতে সিরিয়াল চলছে। গতরাতে দেখতে পায় নি তাই পূর্ণপ্রচার দেখছে। রিদওয়ান দাঁড়াল না ভদ্রভাবে রান্নাঘরে চলে গেল। এই পাগলকে না ক্ষ্যাপানোই উত্তম। যা করছে করুক। করে তাও স্থির থাকুক। সে সবজিগুলো আগে গুছিয়ে নিলো। তারপর কেটে আনা মাছের তাকিয়ে ভাবল, মাছ রান্না করবে মাংস? এই বাসার আসার পর সে খেয়াল করেছে কুহু মাছ খায় না। তার পাতে মাছ তুলে দিলে বাহানা শুরু করে। এককাজ করা যাক কুহুকেই জিজ্ঞাসা করা যাক। সে যেটা বলবে সেটাই রান্না করবে। রিদওয়ান এসব ভেবে সরল মনে ড্রয়িংরুমে গেল। কুহু টিভির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। হিরো আর হিরোইন খুব কাছাকাছি। ঠোঁট ছুঁই ছুঁই অবস্থা। রোমান্টিক গানের টোন বাজছে। সে বিরক্ত হয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। তারপর জিজ্ঞাসা করল,
-‘লাঞ্চে কি খাবে? মাছ নাকি মাংস?’
-‘উম ক কি..স।
-‘হুয়াট!’
কারো উচ্চকন্ঠে বলা ‘হুয়াট’ শব্দ শুনে কুহু অবাক হয়ে তাকাল। টিভিতে তখন পুরোদমে লিপকিস চলছে। এই লোক আবার কখন এসে দাঁড়াল?
সে মুখ কাঁচুমাচু করে রিমোট খুঁজতে লাগল। খুঁজে পেলে ঠিকই কিন্তু চড় থাপ্পড় মেরেও রিমোটে কাজ করল না। এ কোন জ্বালা! সে বিব্রত মুখে উঠে দাঁড়িয়ে রিমোটে আরো দুটো থাপ্পড় লাগিয়ে টিভি কোনোমতে বন্ধ করল। তখন রিদওয়ান ভ্রুঁ কুচকে বলল,
-‘লাঞ্চে কি খাবে? কিস?’
-‘না, না, কিস না, মিসমিস।’
-‘মিসমিস? এটা আবার কি?’
-‘মিসমিস না ইয়ে মানে কিসমিস! তখন এটাই বলতেই চেয়েছি, হে হে। ‘
-‘লাঞ্চে শুধু কিসমিস খাবে? আর কিছু না?’
-‘আপ না মানে আমি স..ব সব খাই। সমস্যা নেই। যা ইচ্ছে রান্না করুন।’
-‘ওকে।’
রিদওয়ান আবার চলে গেল রান্নাঘরে। তারপর মাংস রেখে মাছ ফ্রিজে তুলে রাখল। সবজি কেটে রাখল। তখন গুঁটি গুঁটি পায়ে কুহু এসে এক কোণে দাঁড়াল। তারপর কিছুক্ষণ নীরব থেকে জিজ্ঞাসা করল,
-‘আমি হেল্প করি?’
-‘করো।’
-‘ রাইসকুকারে ভাত বসিয়ে দেই?’
-‘দাও।’
কুহু রাইস কুকারে ভাত বসিয়ে দিলো। পেঁয়াজ কেটে দিলো। রিদওয়ান মাংসের মশলা রেডি করতে করতে আড়চোখে তাকাল। তারপর মনে মনে কিছু একটা ভেবে বলল,
-‘সাফিক্স পিফিক্স পারো?’
-‘একটু একটু।’
-‘তাহলে বলো, ‘লাভ’ এর সাফিক্স কি হবে?’
-‘এটা পারি আমি। কিন্তু এখন পেটে আসছে মুখে আসছে না।’
-‘ওহ আচ্ছা। রোমান্স তো ভালোই বুঝো। দিনরাত ড্যাবড্যাব করে ওসব দেখো। ‘রোমান্স’ এর পিফিক্স পারবে নিশ্চয়ই, তাহলে বলো শুনি।’
-‘স্যার থুরি রিদ ভাইয়া আমার ফোন বাজছে। আমি আসছি।’

একথা বলে দৌড়ে পালিয়ে গেল। আসলে ফোন টোন কিছু বাজছে না। পালানোর অজুহাত মাত্র। ওকে পালাতে দেখে রিদওয়ান ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে রইল। এই মেয়ে এসএসসি পাশ করল কিভাবে ভেবে পায় না সে। তারপর রান্নার কাজে মন দিলো। রুপককে কল করে খোঁজ খবর নিলো।

মজনু মিয়ার চায়ের দোকানে চলছে জরুরি আলোচনা। আলোচনার মধ্যেমণি স্বপন। পাড়ার টোকাই মাস্তান। বড় বড় চুলে পেছনে মোরগ ঝুঁটি করা। মোরগ ঝুঁটি নাম ফেলেছে কুহু। কারণ মোরগের লেজেও নাকি এমন ঝুঁটি থাকে। স্বপনের গলায় চেইন। চেইনের সঙ্গে ঝুলছে একটা ব্লেড। ব্লেড ঝুলানোর কারণ সেটা মুখে নিয়ে ভাব নেওয়া যায়।
এতে নাকি গ্যাংস্টার গ্যাংস্টার ফিল আসে। আসলে গ্যাংস্টার দূর তাকে দেখতে তখন মদন মদন লাগে। তার সব শার্টের রং কালো। কারণ সে ব্ল্যাক লাভার। ব্ল্যাক হচ্ছে রাজকীয় রং। যারা ব্ল্যাক লাভার তারা নাকি
উদার মনের হয়। দেশ সামলানোর ক্ষমতা রাখে৷ এজন্য আগে আকাশি রং পছন্দ করলেও বর্তমানে সে খাঁটি ব্ল্যাক লাভার। পায়ের জুতো থেকে শুরু করে ফুটপাত থেকে কেনা হাতের আংটিটাও কালো। এমনিতে সে দেখতেও কালো, পরেও কালো। কালো মানুষ কালো পরতে পারবে না এমন কোনো বিধান নেই। তবে মার্জিত ভাব থাকা প্রয়োজন। তার মধ্যে সেটা কখনো দেখা যায় নি। তার শার্টের বোতাম সব সময় থাকে খোলা। তাও একটা না, উপরে তিনটে বোতামই খোলা। হাঁটলে বা বসলে খোলা শার্টের ফাঁকে দেখা যায় তার বুকের হাঁড় গুলো। দেখতে গাঁজাখোরের মতোই লাগে। টি-শার্ট পরলে টেনে বড় করে। দেখে মনে হয় মেয়েদের টপস্ পরেছে। তো সে এখন তার মহামূল্যবান ভাষণ পেশ করছে,

-‘আমাগো পাড়ার মাইয়া কুহু। হেরে চক্ষের সামনে বড় হইতে দেখছি।
হেই এহন ডাঙ্গর মাইয়া। পাড়ার এক নাম্বার সুন্দরী। ভদ্র। ও শিক্ষিত।
ওরে ভালোবাসার প্রস্তাব দিসি এর ওর মাধ্যমে। হেতি গ্রহন করে নাই। এই নিয়ে আমার মুৃনে দুঃখও নাই। কিন্তু আমাগো চক্ষের সামনে থাকা খাওন অন্য কেউ থাবা বসাবে মানুম না আমরা। এহন আমরা কুহু গো বাসায় যামু। বাসার ভিত্রে ঢুকমু। ওই ছোকড়া আর কুহু সুন্দরী যেমন অবস্থাতেই থাকুক ওগোরে একলগে কইরা আমি চিৎকুর দিমু। লোক জড়ো করুম। কমু হেরা আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ছে। আমি নিজে দেখছি। তখন তরাও আমার লগে তাল মিলাবি।’

To be continue……!!

#আমায়_রেখো_প্রিয়_শহরে
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
#তেরোতম_পর্ব

-‘আমাগো পাড়ার মাইয়া কুহু। হেরে চক্ষের সামনে বড় হইতে দেখছি।
হেই এহন ডাঙ্গর মাইয়া। পাড়ার এক নাম্বার সুন্দরী। ভদ্র। ও শিক্ষিত।
ওরে ভালোবাসার প্রস্তাব দিসি এর ওর মাধ্যমে। হেতি গ্রহন করে নাই। এই নিয়ে আমার মুৃনে দুঃখও নাই। কিন্তু আমাগো চক্ষের সামনে থাকা খাওন অন্য কেউ থাবা বসাবে মানুম না আমরা। এহন আমরা কুহু গো বাসায় যামু। বাসার ভিত্রে ঢুকমু। ওই ছোকড়া আর কুহু সুন্দরী যেমন অবস্থাতেই থাকুক ওগোরে একলগে কইরা আমি চিৎকুর দিমু। লোক জড়ো করুম। কমু হেরা আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ছে। আমি নিজে দেখছি। তখন তরাও আমার লগে তাল মিলাবি।’

স্বপণের কথা শেষ হতেই মোবারক চাঁন বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়ালো।
অর্থাৎ সে সব বুঝছে। ব্যাপারটা এখন তার কাছে ফকফকা পরিষ্কার।
তাও মনের মধ্যে একটা খাটকা থাকায় জিজ্ঞাসা করল,

-‘বস! আফনে সিওর বাসায় আর কেউ নাই?’
-‘সিওর না হইলে এমন প্ল্যান করতাম রে বোকা চু**।’
-‘না মানে কাজে একটু গড়বড় হলেই কিন্তু আমরা কেস খাইয়া যামু। তাই কইলাম আর কি! তয় বস, এইহানে আফনের লাভ ডা কি? একটু বুঝায়া কন তো আমারে।’
-‘এখানেই তো আমার লাভ রে পাগলা। যখন ওরা ধরা খাবে সবাই থুথু দিবে। বাজে কথা বলবে৷ সন্মানের ভয়ে কুহুকে তাড়াতাড়ি বিয়া দিতে চাইবে তার বাপ মা। তহন নায়কের লাহান আমি গিয়া সামনে দাঁড়ামু। আর কুহুকে আমি বিয়া কইরালাইলামু। তহন কুহু সুন্দরী হইব আমার বউ।’
-‘বস, প্ল্যান ডা খুব কাঁচা মনে হইতাছে আমার কাছে। এডি তো ছিনেমা না যে যা ঘটাব চাইব তাই হইব। আর রুপক ভাইয়ে আপনার লগে ওর বুইনের বিয়া দিবো? এডি কুনোদিনও সম্ভব?আমার বিশ্বাস হেই তার বুইনকে কাইট্টা গাঙে ভাসাইয়া দিবো, তাও হের বুইনের লগে আফনের বিয়া দিবে না।প্ল্যান অনুযায়ী মাস্টার আর কুহু ধরা খাইলে ওগোরে বিয়া হইব। কারণ আকাম তো মাস্টারের লগে করছে, আপনার লগে না। তয় আফনের লগে ক্যান বিয়া দিবো? আর আফনে নিজে ওদের ধরাই দিয়া নিজেই বিয়া করনে প্রস্তাব রাখবেন? এডি মাইনা নিবো ওর বাপ মায়ে? এমন কিছু ঘটালে কুহু নিজেই আফনের গলায় বটি ধইরা মারবো টান। হেরে যতটুকু চিনি বহুত ডেঞ্জারাস মাইয়া।’
-‘আবে শালা আমি তোর বস? নাকি তুই আমার বস, এডি ক আগে?’
-‘আফনে আমার বস।’
-‘তাইলে চুপ থাক। যখন যা করতে কইব শুধু তাই করবি।’
-‘আমার কথাগুলানও ভাইবা দ্যাখেন। আমি কিন্তু আফনের ভালোর লাইগা কইলাম। তাছাড়া মাস্টারের পিছনে গোয়েন্দা কইরা যা বুঝছি, হেই কিন্তু সোজা পোলা না। খুব ঘাড়ত্যাড়া। বিদেশে থাকতো ঠিকই। তয়
রক্ত গরম। কলেজে আসার পরেই কলেজ ছাত্রদের কাছে মতিন গাঁজা বিক্রি করতে, হেই বিক্রির ব্যবসা লাটে তুইল্লা দিসে। মতিন এখন জেলে। টাকা ঢাইল্লাও ছাড়া পাইতাছে না। আর আফনে যদি তার লগে লাগেন,
তার সন্মান ধইরা টান দেন মনে হয় না হেই আপনার পাছার চামড়া না তুইল্লা ছাইড়া দিবো।’

মোবারকের কথা শুনে স্বপন ব্লেড মুখে পুরে কিছুক্ষণ ভাবল। আসলেই তো, ব্যাপারটা যতটা সহজ হবে ততটা সহজ না। মাস্টারের লগে ধরা খাইলে বিয়া মাস্টারের লগে হইব। আর তার কপালে জুটবে লবডঙ্কা।
না, না, এই প্ল্যান ফ্লপ। আরো ভাবতে হবে। নতুন কোনো প্ল্যান করতে হবে। এমন কিছু করতে হবে যাতে কুহু তার হয়। ভাগ্যিস মোবারক চাঁন
কথাগুলো বলল। নয়তো এ প্ল্যানে কুহুকে সারাজীবনের জন্য হারাতো।
স্বপন আর দাঁড়াল না। কাজের বাহানায় সটকে পড়ল। আপাতত প্ল্যান ডিসমিশ। তাকে যেতে দেখে মোবারক গোপনে চাপা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
মনে মনে নিজের বুদ্ধির তারিফ নিজেই করল। সত্যি বলতে, সে স্বপনের সঙ্গে থাকলেও রুপককে সে ভীষণ ভালোবাসে।শ্রদ্ধা করে। কারণ রুপক একবার তার বড় বোন রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছিল। যে মানুষটা তার বোনকে বাঁচিয়েছিল সে মানুষটার বোনের ক্ষতি হতে দেবে কিভাবে? তাও জেনে শুনে? পাড়ার বখাটে হতে পারে তবে বিবেকটা একেবারে পঁচিয়ে ফেলে নি। সুযোগ বুঝে তার বিবেক জেগে ওঠে। আর সেটাকে কাজে লাগায়।
তাছাড়া স্বপন মাথামোটা। মোটা বুদ্ধির অধিকারী। বেশির ভাগ সময়ই নেশার টাল হয়ে কখন কি ভাবে, কি করে, নিজেও জানে না। আর ওই করবে কুহুকে বিয়ে, কথাটা ভাবাও হাস্যকর। ওর দ্বারা কিছু করা সম্ভব না। শুধু মুখেই ফটরফটর। ওর মতো পাতি মাস্তান সব পড়াতেই থাকে।
এরা আবার এমনই মাস্তান চ্যালা ছাড়া চলতে পারে না। তবে মোবারক মনেপ্রাণে নিয়তিকে বিশ্বাস করে। এই চার আঙুলের কপালে যার ভাগ্যে যাকে লেখা থাকবে তার সঙ্গেই তার জোড়া বাঁধবে। যতই পরিকল্পনা করে উল্টে দিক ভাগ্যে লেখা না থাকলে কোনোকিছুই সম্ভব না। বিয়ে, বন্ধন, সৃষ্টিকর্তার হাতের খেল। উনার হাতের সাজানো গুঁটি বদলানোর সাধ্য কার? দুষ্টু মানুষরা দুষ্টু বুদ্ধি আঁটবেই। ভালো কাজে বাঁধা দেবেই। তবে থামলে চলবে না। ভয় পেলেও হবে না। বুকে সাহস আর মনে বল নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে। এইরকম স্বপনকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে হবে। নিজের ভালোটা নিজেকে বুঝে নিতে হবে। তবে মোবারক চায়ে চুমুক দিয়ে আরেকটা কথা ভাবল, এসব কথা রুপককে জানাবে। খুব তাড়াতাড়িই জানাবে। কারণ বাসায় বোন থাকলে ভাইদের সর্তক থাকা জরুরি। আর স্বপন কখন কি করে বসে বোঝা দায়।

যোহরের আজান হচ্ছে। রিদওয়ানের রান্না করা শেষ। সে গোসল করতে গেছে। কুহু আগে গোসল সেরে লুটোপুটি গ্যাংয়ের মেসেঞ্জার গ্রুপে চ্যাট করছে। সে এখনো কাউকেই বলে নি রিদওয়ানের কথা। সবাই শুনলে হয়তো চমকে যাবে। তবে চমকটা আরেকটু বড় করে দেওয়ার জন্য সে সুযোগের অপেক্ষায় রইল। দেখা যাক কবে আসে সেই সুযোগ। এরপর সে খাবার বেড়ে টেবিল সাজিয়ে রিদওয়ানের ঘরের সামনে গিয়ে খেতে ডাকল। রিদওয়ানের সাড়াশব্দ পেল না। ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে। অগত্যা সে চলে এলো। একা একাই খেতে বসল। একটুপরে, রিদওয়ান এসে বসল। তবে কারো মুখে কথা নেই। একা একা অস্বত্বিও হচ্ছে। তাই দু’জনে চুপচাপ খেয়ে যে যার রুমে চলে গেল। কুহু রুমের দরজা আঁটকে ঘুমিয়েছে দেখে রিদওয়ান দরজা বাইরে থেকে তালা আঁটকে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বের হলো। ইসমত আরা একাই আছে সেখানে। দু’জনে কি খেয়েছে কে জানে! তাই সঙ্গে খাবারও নিয়েছে।
কুহুর বাবাও নেই। জরুরি ফোনকল পেয়ে আবারও অফিসে ছুটেছে।
রুপককে একা আনতে পারবে না ইসমত আরা। এত বড় ছেলেকে ধরে আনবে নাকি ব্যাগপত্রগুলো ধরবে? মেডিসিনও তো নিতে হবে। এসব ভেবেই বারণ সত্ত্বেও সে হসপিটালে গেল। তাছাড়া বিচ্ছুরানী ঘুমিয়েছে সমস্যা নেই। সে ঘুম থেকে ওঠার আগেই তারা চলে আসবে। তারপর সে
হসপিটালে পৌঁছে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে রুপকের ডিসচার্জের কাজ সারল। ইসমত আরা বেগম জিনিসপত্র গুছাচ্ছে। এক্ষুণি বেরিয়ে পড়বে
তারা। সেই মুহূর্তেই রুপকের ফোন এলো। স্কিণে ভেসে আছে কুহুর নাম।
রুপক কল রিসিভ করতেই কুহু বাজখাঁই গলায় বলে উঠল,
-‘তাত্তাড়ি বাসায় এসো তোমরা। এতক্ষণ থাকা লাগে মানুষের বাসায়?’
-‘আরে, কি হয়েছে? রাগ আছিস কেন?’
-‘রাগব নাতো ধৈই ধৈই করে নাচব?’
-‘আরে বাবা কি হয়েছে বলবি তো নাকি।’
-‘তোমার গুনধর বন্ধু আমাকে বাসায় রেখে বাইরে থেকে তালা মেরে চলে গেছে। এটা কেমন ভদ্রতা বলবে? কি এমন রাজকার্যে গেছে যে বলে যাওয়া গেল না। বললে কি আমি যেতে চাইতাম?’
-‘জরুরি কাজ ছিল বোধহয় তাই…!’
-‘তুমি চুপ করো। একদম বন্ধুতালি করবে না। আসুক বাসায় মরিচ চা না খাওয়ালে আমার নাম কুহু না।’
-‘ কাকে খাওয়াবি মরিচ চা, রিদওয়ানকে? হা হা হা।’
-‘এখন কোচিংয়ে যাব কিভাবে? রেডি হয়ে দেখি দরজায় তালা।’
-‘আজ আর যেতে হবে না। তাছাড়া জানিসই তো, ‘পড়াশোনা করে যে গাড়ি চাপা মরে সে।’ তুই বরং টিভি দেখ আমরা বিশ মিনিটের মধ্যেই আমরা বাসায় পৌঁছে যাব।’
-‘ঠিক আছে। সাবধানে এসো। আর শোনো আসার সময় নাহিদ মামা হালিম আনবা।’
-‘আচ্ছা আনব।’
তারপর কল কাটল কুহু। কিন্তু এই সময়ে কি করবে সে? উম! কিছু তো করা দরকার। কিন্তু কি করবে? হঠাৎ তার মাথাতে দুষ্টু বুদ্ধি ভর করল। সে রিদওয়ানের রুমের দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করল। পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে মুখ ভেংচাল। রুমটা পরিপাটি করে সাজানো গোছানো।
বেডশীট টান টান করা, লেপটপ চার্জে দেওয়া, ড্রেসিংটেবিলের সামনে হাজিবাজি অনেককিছুই যত্ন করে গুছানো, আর পুরো রুমজুড়ে মিষ্টি একটা সুগন্ধ। সুগন্ধটা কিসের? কাঁচা বেলি ফুলের? সম্ভবত! রিদওয়ান
আসার পর এই প্রথম এই রুমে এলো সে। আর এসে বিরক্তই হলো। এটা কোনো ছেলের রুম হলো? দেখে মনে হচ্ছে মেয়েদের রুম। ছেলের রুম হবে, অগোছালো, নোংরা। যেখানে সেখানে এটা ওটা ফেলে রাখা, সব কোণে ময়লা, সিগারেটের গন্ধ, ঘামের গন্ধ ওয়ালা জামা কাপড়ের স্তুপ, ময়লা মোজার ভয়াবহ অবস্থা। সিগারেটের ছাঁই ভর্তি এ্যাশ ট্রে, এসব কোথায়? এই লোককে এত গোছানো হতে বলেছে কে? এত গোছানো ছেলেকে তার ছেলেই মনে হয় না। সে গোছানো বেডে চার হাত পা ছেড়ে ধপ করে শুয়ে পড়ল। হঠাৎ তার নাকে বারি খেলো মিষ্টি একটা সুগন্ধ। এই সুগন্ধটা সে রান্নাঘরেও পেয়েছিল। যখন রিদওয়ান রান্না করছিল।
তাহলে এই পারফিউমটাই বোধহয় ইউজ করে স্যার মশাই। সে উঠে রিদওয়ানের সব পারফিউমগুলোর নাম দেখল। সব গুলোই বিদেশী ব্র্যান্ডের। নামিদামীও বটে। সে খেয়াল করল, এতগুলো পারফিউমের মধ্যে একটা পারফিউম আলাদাভাবে রাখা। সে সেটাই নিলো। নাকে শুঁকে দেখল আসলেই চমৎকার এটা। কোনোকিছু না ভেবে তার গায়ে স্প্রে করে নিলো। হাতে মাখল। তারপর আবার আগের জায়গায় রেখে দিলো। কতগুলো সানগ্লাস আর ঘড়ির কালেকশন দেখল। হঠাৎ করে কলিংবেশ বেজে ওঠার চমকে উঠল। বিশ মিনিট হয়ে গেছে? আম্মুরা চলে এসেছে ভেবে সে দৌড়ে বের হলো। মুখভর্তি হাসি নিয়ে দরজা খুলতেই দেখে রুপক দাঁড়িয়ে আছে। রিদওয়ান তাকে ধরে রেখেছে। কুহু আপাদমস্তক ভাইকে দেখে কিছু বলার আগে রুপক বলল,
-‘বুঝলি বনু, ভয়ের কাজ টা সেরেই ফেললাম। যতটা ভয় পেয়েছিলাম তেমন কিছুই হয় নি। ওটিতে না আমার কাজটা ডাক্তার তার চেম্বারে বসেই করে দিয়েছে। এখন কদিন রেস্টে থাকলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’
-‘ভেতরে এসো। বাকিটা পরে শুনছি।’
বোনের কথা শুনে রুপক ভেতরে ঢুকে পা ছড়িয়ে সোফায় শুয়ে পড়ল।
তারপর বানিয়ে বানিয়ে অনেক গল্পের জোড়াতালি দিয়ে কুহুকে বুঝাল। কুহু সরল মনে বিশ্বাস করে নিলো। বিশ্বাস করার আরেকটা কারণ হচ্ছে মেজর অপারেশন হলে কেউ বাসায় আসতে পারে না। কয়েকদিন তো হসপিটালে থাকতেও হয়। রুপক যেহেতু এসেছে তাহলে সিরিয়াস কিছু না। সিরিয়াস না দেখে মনে মনে শুকরিয়া আদায় করল। রুপক হাসতে হাসতে হসপিটালের গল্প করল। হিপে ইনজেকশন দেওয়ার কাহিনিটাও বলল। শুনে কুহু খিলখিল করে খুব হাসল। তাকে হাসতে দেখে অদূরে
দন্ডায়মান তিনমূর্তি হাফ ছেড়ে বাঁচল। তারপর রুপক আর বসতে চাইল না। রিদওয়ানকে বলল তাকে রুমে দিয়ে আসতে। রিদওয়ান তাই করল। রুপককে রুমে দিয়ে আসার সময় দেখে কুহু মেঝেতে বসে পুঁতি কুড়িয়ে বোলে রাখছে। হাত থেকে পড়ে গেছে হয়তো। সে এবার কুহুকে ডাকল। ডাক শুনে শুনে কুহু মাথা তুলে তাকাতেই রিদওয়ান বলল,
-‘বিনা অনুমতিতে কারো জিনিস ব্যবহার করা বেয়াদবী।’
একথা শুনে কুহু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল। তারপর বুঝল একথার মানে। সে পুঁতি কুঁড়াতে কুঁড়াতে বলল,
-‘এই বাসায় যেখানে যা আছে সবকিছু আমার। এই বাসা, এই বাসার রুম, রুমের প্রতিটক জিনিস সবকিছুর অঘোষিত মালকিন আমি। আর নিজের জিনিস ব্যবহার করতে কারো পারমিশন লাগে না।’
-‘ তাহলে সরল মনে একটা কথা বলি?’
-‘বলুন।’
-‘যুক্তি অনুযায়ী এ বাসাটা আপনার। বাসার রুমগুলো আপনার। রুমের জিনিসগুলোও আপনার। আমিও তো এখানে থাকছি তাহলে আমিটাও কি এখান থেকে ‘আপনার’?
-‘হুম।’
-‘হুম? সত্যি?’
রিদওয়ানের কথাটা আবারও আওড়ে কুহুর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল। কথার অর্থ বুঝে তাৎক্ষণিক জবাব দিলো,
-‘না, না, মোটেও না।’

কুহুর মুখ দেখে রিদওয়ান আর হাসি আঁটকাতে পারল না। হো হো হেসে উঠল। তাকে হাসতে দেখে কুহু লজ্জা পেয়ে দৌড়ে পালাল। ওর দৌড় দেখে রিদওয়ানের হাসির মাত্রা বাড়ল। হাসতে হাসতে সোফায় বসে পড়েছে সে। আর তার হাসির শব্দ শুনে রুমে বসে হাসলেন ইসমত আরা বেগম। বয়স তো আর কম হলো না। অভিজ্ঞতাও। কারো চোখের ভাষা পড়তে ভুল হওয়ার কথা না।

To be continue………!!