আমায় রেখো প্রিয় শহরে পর্ব-১৭+১৮

0
10

#আমায়_রেখো_প্রিয়_শহরে
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_সতেরো

-‘খারাপ যখন হতেই হবে কিছু না করে খারাপ হবো কেন? বরং খারাপ কিছু ঘটিয়ে খারাপ হই। এতে নিজের কাছে লয়্যাল থাকতে পারব।’

একথা বলে রিদওয়ান কুহুর দুই হাতের আঙ্গুলের ভাঁজে আঙুল গুঁজে দেওয়ালে আঁটকে ফেলল। ঠোঁটে রাখল ঠোঁট। পুরুষালি শক্তির সঙ্গে না পেরে কুহু ছটফট করতে থাকল। হাতে ছাড়ানোর শতচেষ্টায় ব্যর্থ হলো
তার ক্ষীণ শক্তি। তখনই লোডশেডিং হলো। বজ্রপাত হলো। তাও ছাড়ল না রিদওয়ান। আঁধারে ডোবা পুরো রুমে যেন আরো সুবিধা হলো। তার ছোঁয়া গাঢ় হলো। এক বুনো উন্মাদনা ভর করেছে তার মাঝে। সে উন্মাদ হয়ে সারাদিনের রাগ ক্ষোভ ঢেলে দিতে লাগল কুহুর ঠোঁটের উপর। সব দোষ যেন কহুর ঠোঁটের। তাই নিষ্ঠুরের মতো শাস্তি দিচ্ছে তার গোলাপি ঠোঁটজোড়াকে। হঠাৎ হাত শিথিল হলো রিদওয়ানের। থামল। আর এই সুযোগে পিঠে খামছি বসিয়ে দিলো কুহু। রিদওয়ান কুহুর ধাক্কা, খামছি উপেক্ষা করে নিজের কাজে মগ্ন। না বারণ শুনছে আর না বারণ শোনার অবস্থায় আছে। সঙ্গে ভুলে যাচ্ছে বন্ধুর অগাধ বিশ্বাসের কথা। রুপক যে তার বোনকে ফাঁকা বাসায় শুধু তার ভরসায় নিশ্চিন্ত আছে, একথা সেও জানে। মানে। তবুও সে এই মুহূর্তে অবুজ, দিশেহারা……!
সে এই মুহূর্তে মাথায় আনতে পারছে না এই ভুলই হতে পারে তার বন্ধুত্ব নষ্টের মুখ্য কারণ। হতে পারে বন্ধুত্বের চরম অপমান। বিশ্রীভাবে কহুর গায়ে লেপ্টে যেতে পারে তার দেওয়া কলঙ্ক। রটে যেতে পারে ছাত্রী আর শিক্ষককে নিয়ে করুচিপূর্ণ নোংরা কথাবার্তা। হেরে যেতে পারে একজন মায়ের বিশ্বস্ত ভালোবাসা। ইসমত আরা বেগম খুব ভালোবাসে। এমনকি ভালোবেসে জোর করেই এই বাসায় এনেছিল। তার ভরসাতেই মেয়েকে রেখে গেছেন উনি। বার বার বলে গেছে কুহুকে দেখে রাখার জন্য। যেন মেয়েটা সাবধানে থাকে। কোনো বিপদ না হয়। রিদওয়ানও উনাকে কথা দিয়েছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে তার কিচ্ছু মনে নেই। কিচ্ছু না। মনে করতেও চাচ্ছে না সে। কারন সে পাগলামিতে মত্ত। চরম তৃষ্ণার্তের মতো শুষে নিতে ব্যস্ত কুহুর ঠোঁট। তার এমন অবাধ্যতায় চোখ ফেটে জল। আর জল গড়িয়ে ভিজে গেছে কুহুর দুই গাল। রিদওয়ান অনুভব করে থামল। তারপর ঠোঁট সরিয়ে মুখ গুঁজল কুহুর কানের নিচে। কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। এরপর কয়েকটা চুমু খেয়ে আদুরে সুরে বলল,
-‘এবার রাজি হও!
-‘না। আজকে পর থেকে আপনাকে ভালোবাসা তো দূর ঘৃণা করতেও ঘৃণা লাগবে আমার। আপনি দুশ্চরিত। লম্পট। ঘৃণা লাগছে আপনাকে। ভাইয়া এলে আমি সব বলে দেবো, সব।’
-‘কি বলবে?’
-‘যা করেছেন সব বলব?’
-‘সব?’
-‘হ্যাঁ সব।’
-‘তা কি কি বলবে? আমি শিখিয়ে দেই?’
-‘না তার প্রয়োজন নেই।’
-‘ জানি তো। তারপরেও শিখিয়ে দেই একটু। শোনো তোমার ভাইয়াকে বলবে যে, ‘ভাইয়া তোমার বন্ধুকে আমি তার শরীর মুছে দিতে চেয়েছি৷ অবিবাহিত মেয়ে হয়ে অবিবাহিত ছেলের শরীর স্পর্শ করতে চেয়েছি। বৃষ্টিতে ভিজে পুরে একাকার হতে ছাদে গিয়েছিলাম। আমাকে খুঁজতে সেও ছাদে গিয়েছিল, তারপর তাকে আমার ভেজা শরীর দেখিয়েছি। সেও দু’চোখ ভরে দেখেছে আমার ভেজা শরীরে ভিজে থাকা শরীরের ভাঁজ। সুস্পষ্টভাবে ভেসে ওঠা অন্তবার্সের উপস্থিতি। ভেজা চুল। ভেজা চোখ। তিরতির করে কাঁপতে থাকা ভেজা ঠোঁটের প্রলোভন দেখিয়েছি। তার শরীর নিষিদ্ধ অনুভূতি জাগাতে সক্ষম হয়েছি। এইটুকু করেও থামি নাই। এসব করে পুনরায় তাকে রিজেক্ট করার কথা বলে খুঁচিয়েছি। এই টুকু বলে তারপর আমার লিপকিস করার কথাটা বলবে, তাহলেই হবে।’
-‘আমি আপনাকে শরীর দেখিয়ে প্রলোভন দেখিয়েছি?’
-‘অবশ্যই।’
-‘মোটেও না নয়।’
-‘তাহলে আমি তোমাকে রেপ করতে এই রুমে এসেছি মোটেও তা নয়।’
-‘তবে কি করতে এসেছেন?’
-‘তোমার অবাধ্যতার শাস্তি দিতে।’
-‘এটা শাস্তি? এটা কেমন শাস্তি? লজ্জা লাগে না আপনার? ছিঃ!’
-‘লজ্জা সেটা সেটা আবার কি?’
-‘ঘৃণা লাগছে আপনি আমার টিচার। ঘৃণা লাগছে আপনার মতো ছেলে
আমার ভাইয়ার বন্ধু। খুব আফসোস হচ্ছে আমার আম্মুর বিশ্বাসের উপর। ‘
-‘এগুলো তোমার সমস্যা আমার না।’
-‘তাই তো। সরুন। আমার ঘৃণা লাগছে। ঘৃনায় গা গুলিয়ে আসছে। এবার না সরলে চেঁচাব আমি।’
-‘চেঁচাও নিষেধ করেছে সে?’
-‘আপনি বর্বর! বেয়াদব! অসভ্য একটা লোক।’
-‘আই নো, ড্রালিং।’

আবারও শুরু হলো কুহুর জোরজবরদস্তি। এবার গলায় স্বর বাড়ল। সে
চেঁচাতে লাগল। রিদওয়ান তাকে ছেড়ে ছুঁড়ে মারল বিছানার দিকে। সে ছিঁটকে গিয়ে পড়ল বিছানার মাঝবরাবর। রিদওয়ান আশেপাশে দেখে কুহুর ওড়না খুঁজল। পেয়েও গেল। সেটা নিয়ে ঘুরে দেখে কুহু পালানোর
জন্য উঠে দাঁড়িয়েছে। তাকে চট করে ধরে পুনরায় বিছানায় ফেলে তার উপরে নিজের শরীরের অর্ধেক ভর ছেড়ে দিলো। অসহায় কুহু হাত পা ছুঁড়লেও উঠতে পারল না। রিদওয়ানের বুকের নিচে চাপা পড়ে থাকল। রিদওয়ান ওড়নার একটা কোণা দিয়ে তার হাত বেঁধে দিলো। তারপর কুহুকে বলল,
-‘হাত বাঁধলাম। এবার মুখ বাঁধব। একটা টু শব্দ করলে খবর আছে। যা হচ্ছে হতে দাও। বরং চেঁচালেই আশপাশের মানুষ জেনে আমার সঙ্গে তোমার বিয়ে দিয়ে দেবে। তখন সারাজীবন আমার সঙ্গে থাকতে হবে।’
-‘আপনি! আপনি একটা চরম লেভেলের অসভ্য।’
-‘পুরুষ মানুষ অসভ্য, অভদ্র, না হলে ভেড়া আর পুরুষের মধ্যে কোনো তফাৎ থাকে না। বুঝলে?’
-‘আপনি রেপ না করলে এমন ব্যবহার কেন করছেন? কি উদ্দেশ্যে আপনার?’
-‘ইশ! অনেক কথা বললে এবার আমার কথা শুনো।’
-‘আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাই না। আল্লাহর দোহায় লাগে আপনি সরুন। নিজের রুমে যান।’
-‘তুমিই তো আমাকে খারাপ তো বাধ্য করলে। এখন আমার দোষ দিচ্ছো কেন?’
-‘আমি! আমি কখন খারাপ হতে বাধ্য করলাম। আপনি কিন্তু.…!’
রিদওয়ান হাসল। তখনই কারেন্ট এলো। রিদওয়ান হাতের কাছে থাকা ল্যাম্প অন করল। শুভ্র আলোয় ভরে গেল রুম। স্পষ্ট হলো কুহুর কেঁদে কেটে লাল হওয়া মুখ। রিদওয়ানের মাথায় আবারও দুষ্টুমি ভর করল। সে কুহুর পায়ের সঙ্গে পা পেঁচিয়ে নখ বসাল কুহুর পায়ে। ব্যথা পেয়ে কুহু উহ! জাতীয় শব্দ করে উঠল। তা দেখে রিদওয়ানের হাসি চওড়া হলো। সে এবার কুহুর টিশার্টের গলার কলার সরাতেই কুহু ছটফটিয়ে বলল,
-‘প্লিজ না।’
-‘প্লিজ হ্যাঁ।’
-‘প্লিজ, দয়া করুন, এমন করবেন না।’
-‘জাস্ট দেখব।’
-‘কি আশ্চর্য! কি দেখবেন?’
-‘মাইন্ড ফ্রেশ করো। যা ভাবছো তা নয়।’

একথা বলে রিদওয়ান কুহুর টিশার্টের কলার সরিয়ে দিলো। কুহুর ঠিক কন্ঠনালির উপরে জ্বলজ্বল করছে কালো কুচকুচে একটা তিল। অদ্ভুত সুন্দর সেটা দেখতে। সে হাত বাড়ালো তিলটার দিকে। আলতো স্পর্শে
আঙুল বুলাল। নখ দিয়ে খুটল। এই তিলটাই তার জীবনে সর্বনাশ ডেকে এনেছে। নজর কেড়ে ভাবতে বাধ্য করেছে। ভাবতে ভাবতে ভাবনা জুড়ে তার মনে দখলদারি শুরু করেছে। আর এটা তার নজরে পড়েছিল এই বাসায় আসার চারদিনের দিন। অদ্ভুতভাবে আকৃষ্ট হয়েছিল সে। এরপর কুহুর অসাবধানতার বশে আরো একদিন এটার দেখা পেয়েছে। ছোঁয়ার স্পৃহা জেগেছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ভীষণ এ্যাট্রাকটিভ তিলটি। তিল
কাউকে এতটা আকৃষ্ট করতে পারে সেটা নিজের সঙ্গে না ঘটলে অজানা থেকে যেতো তার। এমনিতেই নারী শরীরের প্রতি পুরুষদের আকৃষ্টের শেষ নেই। আর যদি থাকে এমন কিছু লোভনীয় ব্যাপার তাহলে কথায় নেই। কুহু নিঃশব্দে কাঁদছে। তাকে কাঁদতে দেখে রিদওয়ান তার শরীরের ভর কমাল। তারপর কুহুর কপালে চুমু এঁকে আদুরে সুরে বলল,

-‘শুধু ঠোঁট ছুঁইয়েছি আর এই তিলটা। এখনো তো বাজে স্পর্শ করি নি।
তুমি খেয়াল করো আমি পুরোপুরি তোমার শরীর জাপটে ধরি নি। রেপ করার মতো কামুকতার স্পর্শ করি নি।আর না তোমার ড্রেস এলোমেলো করেছি। আগে তো নিজেকে দেখো! উপলব্ধি করো। আর কাছে আসা মানেই নোংরা স্পর্শ নয় কুহু। কাছে আসা মানে শরীরের ক্ষুধা মেটানোর
তাড়া নয়। তবে কাঁদছো কেন? কেঁদো না। ভালোবাসো না বলেই আমার স্পর্শ উপলব্ধি করতে পারো নি, পারছো না। যদি ভালোবাসতে তাহলে অনুভব করতে পারতে আমার স্পর্শে কামুকতা নেই। কামুকতার স্পর্শ এমন হয় না। কামুকতার স্পর্শ কপালে নয় হয় বক্ষবিভাজনে। ঠোঁটে চুমু খাওয়া মানেই কামুকতা নয়, ভালোবাসার প্রকাশও হয়। সেটা স্পর্শের মাঝে অনুভূত হয়। আর এই যে,তোমার এই তিলটা আমাকে পাগল করে দেয়। যখনই দেখি আমার মাথা কাজ করে না। পাগল পাগল লাগে আমার। আমি ভুলে যায় সম্পর্কের কথা। কে কার বোন, কে কার ছাত্রী আমার স্মরণে আসে না। মন বলে তিলটাকে আঁচড়ে, কামড়ে, আমাকে জ্বালানোর সাধ মিটিয়ে দেই। কিন্তু পারি না। সম্ভব হয় না। বহুকষ্টে তখন
নিজেকে সামলায়। তাছাড়া তোমাকে বন্ধুর বোন কিংবা ছাত্রী হিসেবে ভালোবাসিনি আমি। ভালো লেগেছে তোমায়, প্রতিনিয়ত মনের টান কাজ করে তাই ভালোবেসেছি। তাহলে বার বার এক কথা বলো কেন? আমাকে খোঁচাতে ভালো লাগে? আর স্যার হয়েছি তো কি? স্যাররা কি ভালোবাসতে পারে না? তাদের কি মন নেই? নাকি মন থাকা অপরাধ?
নাকি বন্ধুর বোনকে ভালোবাসা যাবে না এমন আইন জারি করা আছে? কোনটা? যদি দুটোর একটা আইনও থাকে তবে আমি রিদওয়ান সেই আইন সবার আগে ভঙ্গ করব।’
-‘(নিশ্চুপ)
-‘আর শুনুন, এবার থেকে আমি বাসায় থাকালীন কারো শিক্ষকও নয়। কারো বন্ধুও নয়। আমি শুধু আপনার উন্মাদ প্রেমিক। সবকিছুর ঊর্ধ্বে আমার আপনাকেই চাই, ব্যস।’
-‘পতিতালয়ে যান। আমার থেকেও সুন্দরী কাউকে পেয়ে যাবেন। শুধু শুধু কথা দিয়ে আমাকে ভুলানোর চেষ্টা করতে হবে না। এনার্জি লসও হবে না।’
-‘ এখন যদি একটা থাপ্পড় দেই দোষ তো হবে আমার। কথাবার্তা এমন কেন?’
-‘আপনি করতে পারলে আমি বলতে পারব না?’
-‘ কুহু! আমি লিমিটের মধ্যে আছি থাকতে দাও। আর পতিতালয়ে গেলে
শরীরের ক্ষুধা মিটবে, মনের না। আমার মনের ক্ষুধা মেটানো প্রয়োজন, শরীরেরটা এখন অবধি কনট্রোলে আছে। যখন মনে হবে কনট্রোললেস তখনই তোমার এই বাসায় থাকার মেয়াদ ফুরাবে।’
-‘যতটুকু সম্ভবনা ছিল সেইটুকু শেষ। যতটুকু সন্মান পেতেন তাও পাবেন না। ভালোবাসা তো দূর।’
-‘দেখা যাবে।’
-‘অবশ্যই দেখা যাবে। তবে একটা কথা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নাও
তুমি যত বেপরোয়া হবে আমিও তত উন্মাদ হবো। সকালে সুন্দরভাবে
মার্জিত ভঙ্গিতে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করেছি। শুনলে না। পাত্তায় দিলে না। বরং বোকামি করে তিল দেখিয়ে আমাকে পাগল করে তুললে।
রুড হতে বাধ্য করলে। এই রুপে যখন আসতেই হলো এভাবেই মানতে হবে আমাকে।’
-‘মরে যাব তবুও আপনাকে ভালোবাসব না। কখনো না।’
একথা শুনে রিদওয়ান হাসল। উঠে দাঁড়িয়ে টি শার্ট ঠিক করে আয়নার সামনে দাঁড়াল। চুলগুলো ঠিকঠাক করে আয়নার ভেতর দিয়ে কুহুর দিকে তাকাল। তারপর ফিচেল হেসে তার রুমে যেতে যেতেই বলল,

-‘আমিও ছাড়ানোর জন্য ধরি নি; সরানোর জন্য কাছে টানি নি।’

To be continue……….!!

#আমায়_রেখো_প্রিয়_শহরে
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_আঠারো

পরেরদিন সকালবেলা,
দিনটি রবিবার। সকাল সাড়ে সাতটা। ইসমত আরা বেগম কিংবা রুপক কেউ ফেরে নি এখনো। ইসমত আরার ভাইয়ের অবস্থা ভালো না। ধারণা করা যাচ্ছে উনার জীবন আয়ু শেষের পথে। আইসিইউতে রাখা হয়েছে। কখন মৃত্যু ডাক এসে যায় তা বলাও মুশকিল। তবে উনি বের হয়েছেন এখন বাসার দিকে আসছেন। এসে রান্নাবান্না করে আবার যাবেন। কাল থেকে ছেলে মেয়ে দুটো বাসায় একা। কি খাচ্ছে, কি করছে, কে জানে! গতরাত উনার দুঃচিন্তায় কেটেছে। দু’চোখের পাতা এক করতে পারে নি।
খালি কুহুর কথা মনে হয়েছে। মেয়েটা কি করছে,, কেমন আছে, কোনো ঝামেলা পাকালো কি না এসব ভাবতে ভাবতে সময় কেটেছে। রাতে কত বার কল করেছিল কিন্তু ঘুমের ঘোরে কি সব বলল উনি বুঝতে পারেনি।মেয়ে ঘুমাচ্ছে ভেবে আর কল করে বিরক্ত করে নি। এদিকে রুপক প্রায় বাসার কাছাকাছি। বাস থেকে নেমে সিএনজি নিয়েছে।তার চোখজোড়া লাল হয়ে আছে। সারারাত দুঃচিন্তায় ঘুম হয় নি। বোন আর বন্ধুকে একা বাসায় রেখে সেও নিশ্চিন্তে একফোঁটা স্থির থাকতে পারে নি। কত কী যে ভেবেছে তা আল্লাহ মালুম। তার বাবা এখনো অফিসেই আছেন দুপুরের দিকে আসবে। যে ঝামেলার জন্য গিয়েছিলে সেটা কোনোমতে সমাধান করা গেছে। তবে এই নিয়ে পুনরায় ঝামেলা হওয়ার আশঙ্কা রয়ে গেছে।
কেউ ইমপ্লয়িদের বেতন বাড়ানোর কথা বলে বার বার উস্কে দিচ্ছে। এই কেউ কে খুঁজে বের করার কাজ চলছে। তাকে ধরে ইচ্ছেমতো ধোলাই না দিলে এই সমস্যা থামবে না।

এদিকে কুহু গতকাল রাত থেকে রুম থেকে বের হয় নি। একা রুমে বসে বসে কেঁদেছে। রিদওয়ানকে সে সন্মান করে। কোনো সম্পর্কের রেশ ধরে নয় একজন মানুষ হিসেবেই সন্মান করতো। কিন্তু গতকাল রাতে সে যা করেছে তার পছন্দ হয় নি। ভালো লাগে নি৷ যার প্রতি কোনো ফিলিংস নেই তার স্পর্শ তার গায়ে কাঁটা হয়ে বিধেঁছে। নিজেকে তুচ্ছ মনে হচ্ছে।
রাগ হচ্ছে বাবা মায়ের উপর। কেন তারা তাকে বাসায় একা রেখে গেল? সঙ্গে নিয়ে গেলে কি হতো? রিদওয়ান ভাইয়ের বন্ধু ভাই তো আর নয়, তাহলে কোন ভিত্তিতে তারা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করছে। গতরাতের
ব্যবহারের জন্য রিদওয়ানকে কখনো মাফ করবে না সে। কখনোই না। এখন সকাল সাতটা বেজে দশ মিনিট। রিদওয়ান সকালে উঠে জগিং সেরে নাস্তা বানিয়ে বসে আছে। তাকে আর কুহুকে কলেজে যেতে হবে।
যদিও দু’জন আলাদা যায় তবুও আজ যেহেতু ইসমত আরা নেই তাকে বলে যাওয়া উচিত। নয়তো দেখা যাবে খুঁজবে। সময় যাচ্ছে। কিন্তু কুহু এখনো দরজ খোলে নি। কয়েকবার নক করেছে তাও খোলে নি। ফোনে কল দিয়েছে। রিং হচ্ছে রিসি়ভ করছে না। ইচ্ছে করে রিসিভ করছে না। নতুবা ফোন সাইলেন্স। এইদিকে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। তার ক্লাস আছে। এখন না বের হলে ক্লাসে দেরি হয়ে যাবে।সে আর না পেরে বিরক্ত হয়ে রুপককে কল দিলো। রুপক যেন ফোন হাতে নিয়েই বসেছিল। তার কল ফোনে ঢুকামাত্র রিসিভ হলো। তখন রিদওয়ান বিরক্ত সুরে বলল,
-‘তোর বোন ঘুম থেকে উঠছে না। ডাকলেও না। জন্মের মতো দরজা এঁটে ঘুমাচ্ছে। আমি কি বাসা লক করে চলে যাব? নাকি তুই আসবি?’
-‘এসে গেছি প্রায়। আর আধাঘন্টা।’
-‘তোর গলা এমন শোনাচ্ছে কেন? টায়ার্ড নাকি অন্যকিছু?’
রুপক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তারপর কথা ঘুরাতে আমতা আমতা করে বলল,
-‘কুহুকে ডাকিস না। ঘুমাক। সারারাত ঘুমায় নি।’
-‘কেন, ঘুমায় নি কেন? আর তুই জানলি কিভাবে সে ঘুমায় নি।’
-‘কারণ আমাকে ভোরের দিকে কল করে প্রচুর কেঁদেছে।’
-‘কেঁদেছে? কিন্তু কেন?’
-‘কারণ তুই নাকি তাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছিস না।’
-‘আমি? আমি আবার কি করলাম?’
-‘ গতরাতে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে কি বলেছে জানিস?’
-‘কি আশ্চর্য! তোর বোন তোকে কি বলেছে আমি কি করে জানব?’
-‘বলেছে, তুই গতরাতে ওর রুমে গিয়েছিলি। ওকে দেওয়ালের সঙ্গে জাপটে ধরে কিস করেছিস। তাকে স্পর্শ করেছিস। সে কেঁদেছে তবুও ছাড়িস নি। তুই ইতর! লম্পট! চরিত্রহীন এক পুরুষ মানুষ!’

এইকথা শোনার মাত্র রিদওয়ান সোফা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। তার কানে যেন কেউ সীসা ঢেলে দিয়েছে। গায়ের পশম যেন কাঁটা দিয়ে উঠল। সে কিয়ৎকাল অনড় হয়ে সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। জবাবে কিছু বলার শব্দ খুঁজে পেল না। তারপর স্বজোরে চেঁচিয়ে উঠল। এত জোরে চেঁচালো যে
মনে হলো তার গলার ভোকাল কর্ড ছিঁড়ে যাবে। মারদাঙ্গা বাঁধিয়ে দেবে। রুপক আর কিছু বলতে পারল না রিদওয়ান তার সুরে চেঁচিয়ে উঠল,
-‘হোয়াট রাবিশ? আর ইউ ক্রেজি ইয়ার? আমি? আমি তোর বোনের সঙ্গে জড়াজড়ি করেছি? লিপকিস করেছি? মাথা ঠিক আছে তোর? কি বলছিস তুই? গতকাল রাতে খেয়ে আসার পর তুই আর আমি রাত প্রায় একটা অবধি ফাইল রেডি করেছি। অডিও কল না ভিডিও কলে। তুইও দেখেছিস আমি ওয়াশরুম ছাড়া এক পাও রুমের বাইরে বের হইনি। না তোর বোনকে আমার রুমে ডেকেছি তাহলে কোন বিবেকে এসবসকথা বলছিস?’
-‘(নিশ্চুপ)’
-‘প্রতিটা জিনিসের একটা লিমিট থাকে রুপক। এবার অতিরিক্ত হচ্ছে।
এসব নোংরা কথাবার্তা আমি মোটেও সহ্য করব না। ভুলে যাস না আমি কে!’
-‘(নিশ্চুপ)’
-‘আমি আগেই বলেছি কুহু যতবারই আমার রুমে আসে অদ্ভুত ব্যবহার করে। কিসব বলে না বলে। কখনো আবার অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে হাসে। এই সমস্যার কথা আন্টিও জানে। অথচ তুই বলছিস….!’
-‘(নিশ্চুপ)’
-‘আমাদের মধ্যে যদি তেমন কিছুই থাকত তাহলে আমি সরাসরি বিযের কথা বলতাম। প্রস্তাব দিতাম।। আমি যে ঘুপিজুপি পছন্দ করি না সেটা
তোর থেকে ভালো কেউ আর জানে না। তাহলে আমি কেন এসব করতে যাব? বুঝা আমারে?’
-‘(নিশ্চুপ)’
-‘এই কারণেই আমি বাসায় থাকতে চাচ্ছিলাম না। ধারণা করেছিলাম এমন কিছুই হতে পারো। ধারণা যে সত্যি হয়ে যাবে কল্পনাও করি নি।’
-‘কুহু যা যা আমাকে বলেছে তাই বললাম।’
-‘আর তুই বিশ্বাস করে নিলি?’
-‘আমার কথা এত..!’
-‘তোরা দুই ভাইবোনই চরম লেভেলের মিথ্যাবাদী। সত্যি মিথ্যার তফাৎ বুঝিস না। তোর বোন মিথ্যা দোষ দিচ্ছে আমার চরিত্রে। এটা কখনোই মানব না রুপক। কখনো না। এসব সস্তা মেন্টালিটি নিয়ে তোর বাসায় পা রাখি নি আমি।’
-‘কুহু তো…!’
-‘বাকি পরিকল্পনা কিভাবে সাকসেস করবি তা জানি না। তবে আর এক মুহূর্তও এখানে থাকব না আমি। এক মুহূর্তও না। আমি যেমন নোংরামি করি না তেমনি নোংরামিকে প্রশয়ও দেই না। এবার তোদের পারিবারিক ব্যাপার তোরা বুঝে নে।’

একথা বলে রিদওয়ান কল কেটে দিলো। রুপক একনাগাড়ে কল দিতেই থাকল। তাও ধরল না। কথাও বলল না। আর কোনো কথা নেই। যতটুকু বলার বলে দিয়েছে। সে রাগে গজগজ করতে করতে জামা কাপড়সহ যাবতীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে লাগেজে ভরতে লাগল। এখনই চলে যাবে।
এত অপমানের পর এখানে থাকার মানেই হয় না। অনেক হয়েছে। তার এবার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। এটা কত্ত বড় বেয়াদব মেয়ে ভাবা যায়। তার সঙ্গে নাকি সে জড়াজড়ি করেছে। লিপকিস করেছে! আরো কি কি যেন বলল সব৷ যেখানে কুহুর থেকেও হাজারগুন সুন্দরীকে অবলীলায় রিজেক্ট করেছে সেখানে কি ওই পুঁচকে মেয়ে কি না! ছিঃ! এতদিন কুহুর
করা প্রত্যেকটা অভিযোগ, পাগলামি, লিমিটে থাকলেও আর নয়। আজ সে লিমিট ক্রস করে ফেলেছে। চরম বেয়াদবী করেছে। অপমান করেছে তাকে। রুপকের কাছে তার মাথা হেট করে ছেড়েছে। এজন্য তাকে শাস্তি পেতেই হবে।

ওদিকে কুহু একেবারে গোসল সেরে কলেজ ড্রেস পরে রেডি হচ্ছে। তার মনটা ফ্রেশ। গুনগুন করে গান গাইছে। চুল আঁচড়াচ্ছে। চোখ মুখের এই অবস্থা দেখে সে মলিন হাসল। চোখ মুখ ফুলে বিশ্রী দেখাচ্ছে। সে ফোলা ভাবটা ঢাকতে হালকা করে ফেস পাউডার দিলো। চোখে কাজল দিলো। হাতঘড়ি পরল। তারপর চুল শুকিয়ে দু’টো বিনুনি গেঁথে বের হলো। নাস্তা করতে এসে দেখে খাবারগুলো ঢাকা দেওয়া আছে। সে বেজার মুখে সব ঢাকনা তুলে দেখল। ভেবেছিল অপছন্দের খাবার পাবে। কিন্তু সব তার পছন্দের খাবার দেখে চেয়ার টেনে খেতে বসল। খেতে খেতে আড়চোখে তাকাল রিদওয়ানের রুমের দিকে। রুমের পর্দাটা টেনে দেওয়াতে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সে একটা চিকেন স্যান্ডুইচ আর জুস খেয়ে উঠে পড়ল।
ঘড়িতে তখন সাতটা আটচল্লিশ। কাঁধের ব্যাগটা এনে সে কিছুক্ষণ বসে রইল। তারপর যখন দেখল রিদওয়ান বেরই হচ্ছে না তখন নিজেই গেল রিদওয়ানের রুমে। তারপর হাস্যোজ্বল মুখে পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
-‘রিদ ভাইয়া কলেজে যাবেন না? গেলে এখনি যাবেন নাকি থেমে যাবেন?

রিদওয়ান নিজের মতো গোছগাছ করতে ব্যস্ত। কুহু আবার ডাকল। সে নিশ্চুপ। ফিরেও তাকাল না। জবাব না পেয়ে কুহু অপমানিতবোধ করল।
কারো রুমে এসে কিছু জিজ্ঞাসা করলে উত্তর না পেয়ে অপমানিতবোধ করাটাই স্বাভাবিক। রিদওয়ান একটা লাগজে গুছিয়ে মেঝেতে রাখল।
লেপটপ ব্যাগে ভরলো। তখন কলিংবেল বেজে উঠল। রিদওয়ান যাচ্ছে না দেখে কুহু গেল দরজা খুলতে। দরজা খুলে রুপককে দেখামাত্রই মিষ্টি করে হাসল। হাসল রুপকও। তারপর তারা ভাইবোন কথা বলতে বলতে ড্রয়িংরুমে এসে বসল। যেন সব স্বাভাবিক। কিছু রটে নি কিচ্ছু ঘটে নি।
ভাইকে ক্লান্ত দেখে কুহু পানি এনে দিলো। তার মা তাকে না বলে গেছে দেখে ভাইকে অভিযোগ দিলো। অভিযোগ শুনে রুপক হাসল। হাসিতে আমেজ নেই। প্রাণ নেই। রুপক পানিটুকু খেয়ে সোফায় শরীর এলিয়ে দিলো। ভীষণ টায়ার্ড সে। ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে আসছে। মাথার ব্যথায় অসহ্য লাগছে সবকিছু। তখন রুপকের কথা শুনে রিদওয়ানও লাগেজ টেনে নিয়ে বেরিয়ে এলো। সে রেডি। চলে যাচ্ছে সে। রুপক তাকে দেখে
উঠে দাঁড়াল। রিদওয়ান হাতের ইশারায় তাকে থামিয়ে চাবিরগোছা তার দিকে ছুঁড়ে দিলো। তারপর অত্যন্ত সর্পশীতল চাহনিতে তাকিয়ে বলল,
-‘ ভালো থাকিস।’
-‘রিদ! শোন আগে আমার কথাটা….!’
-‘আন্টির সঙ্গে দেখা হলো না। বলিস তার বিশ্বাস ভাঙি নি। আমিও এক মায়ের সন্তান। আমার ঘরেও মা আছে। ছোটো একটা বোন আছে।’

বন্ধুর কথা শুনে রুপক হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। কাকে কি বলবে সে বুঝে উঠতে পারছে না। জীবনে এত অসহায়বোধ করে নি সে। সঙ্গে সে এটাও জানে বলেও কোনো লাভ হবে না। রিদওয়ানকে চেনে। খুব ভালো করে চেনে। সে যখন বাসা ছেড়ে যাবে বলেছে তখন যাবেই। তাকে আর
আঁটকানোর সাধ্যি কারোর নেই। তবুও লাস্ট চেষ্টা করল সে।।রিদওয়ান বন্ধুর করুণ দৃষ্টি উপেক্ষা করে লাগেজ টেনে বেরিয়ে যেতে লাগল, তখন কুহু অবাকের সুরে বলল,
-‘রিদ ভাইয়া! আপনি কোথায় চললেন? লাগেজ কেন? আপনি কি চলে যাচ্ছেন? আর থাকবেন না আমাদের বাসায়? কিন্তু কেন?’

কুহুর কথা শুনে রিদওয়ান পিছু ফিরে তাকালও না। জবাবও দিলো না।
শুধু চোয়ালজোড়া শক্ত করে গটগট করে হেঁটে বেরিয়ে গেল। এই চরম লেভেলের বেয়াদব মেয়েটার সঙ্গে আর কখনো কথা বলবে না সে। যত কিছুই হোক কথা বলবে না। এদিকে জবাব না পেয়ে কুহু রুপকের দিকে তাকাল। কি হচ্ছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না। সে এবার রুপককে বলল,
-‘রিদ ভাইয়া চলে গেল কেন? ঝগড়া করেছো তোমরা?’
-‘তেমন কিছু না। কলেজে যা তুই। দেখে শুনে যাস।’
একথা বলে রুপক চোখের উপর হাত রেখে সোফায় মাথা এলিয়ে শুয়ে রইল। না বন্ধুকে বোঝাতে পারল বর্তমান অবস্থা আর না বোনকে বলতে তার তার অসহায়ত্বের কথা। এদের দু’জনের মতিগতি না বুঝে কুহু বের হলো কলেজের উদ্দেশ্যে। রাস্তায় গিয়ে রিকশা নিয়ে চলে গেল কলেজে।
রিদওয়ান চলে যাওয়াতে তার খুশি হওয়া উচিত নাকি মন খারাপ করা উচিত তাও বুঝল না। সে চুপ করে রিকশায় বসে আছে। রোদ চড়েছে। তাপ বেড়েছে। রিকশাওয়ালা মাথা গলায় ঝুলানো গামছা দিয়ে কপালে
মুছে একা একা বলতে লাগল,
-‘আল্লাহ জমিনের বুকে একটু পানি দেও। গরমে মানুষজন আধমরা হইয়া গেল। এত গরম! এত রোদের তাপ।’
একথা শুনে কুহু ভ্রুঁ কুঁচালো তাকাল। তারপর রিকশাওয়ালা মামাকে বলল,
-‘ কেন মামা একথা বললেন কেন? কাল বিকালেই তো কত ঝড় বৃষ্টি হইল। আবহাওয়া শীতল ছিল।’
-‘হে, হে, আম্মা পাগল হইছেন? কাইল কখন পানি হইল? গত বিশদিনের মধ্যেই তো একফুড়াও পানি হয় নাই। মানুষজন গরমে আধমরা। আপনি
বোধহয় জাইগা জাইগা এসব স্বপ্নে দেখছেন।’
কুহু কথা বলল না। চুপ করে রাস্তা দেখতে লাগল। দেখল পথে চল কত মানুষ। তারপর কলেজে পৌঁছে ভাড়া মিটিয়ে কলেজ প্রবেশ করল। দুই মিনিট হাঁটতেই দেখে পিয়াস, মিরাজ, নিকিতা, চন্দ্রা, কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে বাদাম খাচ্ছে। হাসাহাসি করছে। কুহুও গিয়ে বসল। কিন্তু তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে কিছুক্ষণ আগের ঘটে যাওয়া ঘটনা। কালকে বৃষ্টি হয় নি? সত্যি হয় নি? বৃষ্টির কথা নাহয় বাদ কিন্তু রিদওয়ানের কি হলো?
সে এমন করলো কেন? মাথার মধ্যে কিসব চিন্তা করতে করতেই চন্দ্রার থেকে বাদাম নিয়ে মুখ পুরল। চিবুতে চিবুতে আনমনেই গলা চুলকাতে চুলকাতে নিকিতাকে বলল,
-‘নিকি? আমার গলায় কিছু হয়েছে নাকি দেখ তো? তিলটার কাছে খুব চুলকাচ্ছে।’
নিকিতা বাদাম রেখে কুহুর গলা ভালোভাবে দেখল। কিছু পেল না। তাই সে বলল,
-‘কই কিছুই তো নেই।’
-‘ধুর বাল! তিলটার কাছে দেখ। ভীষণ চুলকাচ্ছে। ‘
-‘আরে বাল তোর গলায় তিল এলো কোথা থেকে? আমি তো তিল টিল দেখি নি কখনো। রাতারাতি তিল উদয় হলো কিভাবে?’
-‘কি যা তা বলছিস। এই যে কন্ঠনালির উপর তিল। ভীষণ সুন্দর তিল।’
বন্ধুরা কুহুর কথা শ়ুনে মুখ চাওয়া চাওয়ি করল। কিন্তু কথার পরিবর্তে কেউই আর কথা এগোতে পারল না। ক্লাসের সময় হয়ে গেছে। সবাই গিয়ে ক্লাসে বসল। যথারীতি ফাস্ট ক্লাস করাতে মোবারক স্যার এলেন।
রোল প্রেজেন্ট করলেন। তারপর গল্প জুড়ে দিলেন। কেউ উনার গল্পে আগ্রহী না সবাই যে যার গল্পে মশগুল। শুধু উনার দিকে তাকিয়ে আছে তাই। তখন মিশকা নামের একটা মেয়ে স্যারকে জিজ্ঞাসা করল,
-‘স্যার! রিদওয়ান স্যার কি আজ আসে নি?’
-‘কেন বলো তো?’
-‘না এমনি!’
-‘না। উনি রিজাইন করেছেন। কিছুদিনের জন্য গেস্ট টিচার হয়ে এসেছিল। কাজ শেষ তাই রিজাইনও করেছেন।’
-‘আর কখনোই আসবে না উনি?’
-‘না। তাছাড়া উনি প্রফেশনাল টিচার নন উনার পেশা অন্যকিছু। আমি সঠিকটা জানি না যদিও। তবে শুনেছি আর কি! তবে উনাকে কলেজ থেকে অফার করা হয়েছিল থেকে যাওয়ার জন্য। কিন্তু উনি থাকেন নি। কিছুক্ষণ আগে শুনলাম দেশ ছাড়ছেন। আগামীকালকে সন্ধ্যায় ফ্লাইটে চলে যাচ্ছেন।’
-‘কোথায় যাচ্ছে?’
-‘যেখান থেকে এসেছিল, সম্ভবত সেখানে।’

To be continue……..!!