আমার অদিতি পর্ব-০৮

0
2

#আমার_অদিতি
#পর্ব – ৮
#নয়োনিকা_নিহিরা

প্রায় দুই ঘণ্টা পর জ্ঞান ফিরে আহনাফের। আহনাফের মাথায় ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। বাম হাতের হাড় ভেঙে গেছে। মাত্রাতিরিক্ত ড্রিংক করার কারণে মাথাটা এখনো ভার ভার লাগছে আহনাফের।

আহনাফের জ্ঞান ফিরার কথা শুনার সাথে সাথেই আহনাফের বাবা – মা অস্থির হয়ে ছুটে আসেন আহনাফের কাছে। আজমেরী ওয়াহিদ ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্না জুড়ে দেন।

আহনাফ মৃদু স্বরে বলে,” আমি এখন ঠিক আছি মা। তুমি দুশ্চিন্তা করো না।”

আলভী হসপিটালের দরজার সামনে অপরাধীর ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। আহনাফ উঠে বসার চেষ্টা করে বলতে থাকে,” আলভী অদিতির কোনো খোঁজ পেলি?”

আলভী সাথে সাথেই এগিয়ে এসে আহনাফকে বেডে হেলান দিয়ে বসতে সাহায্য করে। তারপর চোঁখ মুখ নিচু করে তাকিয়ে থাকে মেঝের টাইলসের দিকে।

আজমেরী ওয়াহিদ এইবার নিজেকে খানিকটা শান্ত করে চোঁখ মুছে বললেন,” আপনাদের ক্ষমা করে দাও আহনাফ বাবা। অদিতির ব্যাপারটা নিয়ে এতো বেশি বাড়াবাড়ি আমার করতে দেওয়া উচিত হয়নি।”

অদিতির কথা শুনে অস্থিরতায় আহনাফের বুকের ভেতরটা অজানা আতঙ্কে আবার ধড়ফড় করতে থাকে। আহনাফ উতলা হয়ে জিজ্ঞেস করে,” মানে? কি বলতে চাচ্ছো তুমি মা? এক মিনিট অদিতির কোনো খোঁজ পেয়েছো তোমরা? অদিতি ঠিক আছে না? বেঁচে আছে না? কোথায় সে?”

_” আহনাফ ব্রো প্লিজ কুল ডাউন। আমি সব বলছি তোমাকে।”

এই কথা বলে আলভী আহনাফের থেকে কয়েক কদম পিছিয়ে দাঁড়ায়। আহনাফ হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছে আলভীর দিকে।

আলভী মিনমিনে আওয়াজে বলে,” আসলে ব্রো তুমি মিষ্টি ভাবীকে কারো সামনে স্বীকার করতে চাচ্ছিলে না দেখে তোমাকে শেয়েস্তা করার জন্য আমি আর প্রিয়তা মিলে ভাবীকে এতোদিন লুকিয়ে রেখেছিলাম। যা.. যাতে তুমি ভাবীর মূল্য বুঝতে পারো।”

আলভীর কথা কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই আহনাফ যেনো কয়েক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো। বিস্ময়ে হতবিহ্বল হয়ে চেয়ে রইলো আলভীর দিকে। সমস্ত ঘটনাবলি বুঝতে পেরে রাগে আহনাফের মস্তিষ্ক জ্বলন্ত লাভায় টগবগ করে উঠলো।

আলভীর দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আহনাফ চেঁচিয়ে উঠলো,” আলভীর বাচ্চাআআআ! তোর সাহস কি করে আমার সাথে এতদিন ধরে এই বদমাইশি করার!”

অকস্মাৎ আহনাফের গর্জনে ভয়ে কেঁপে উঠলো আলভী। আলভী পালানোর জন্য দৌঁড় দিতেই যাবে তার আগেই আহনাফ তার হাতে থাকা ক্যানোলা খুলে বেড থেকে নেমে খপ করে আলভীর ঘাড় চেপে ধরলো।

_” ব্রো প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। I’m so sorry ব্রো।”

আহনাফ রাগে কাঁপতে কাঁপতে আলভীকে কয়েকটা গালি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারা শুরু করলো।

_” রাস্কেল! তোকে আমি ফুটন্ত গরম পানিতে চুবাবো শালা। কতবড় সাহস তোর তুই আমার অদিতিকে আমার কাছ থেকেই লুকিয়ে রেখেছিস। তোকে তো আমি…”

_” আহনাফ বাবা মাথা ঠান্ডা কর। আলভী একা দোষী না। তোর বাবা আর আমিও সবটা জানতাম।”

আজমেরী ওয়াহিদের কথা শুনে আহনাফ বাকরুদ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে তার বাবা মায়ের দিকে। আলভী যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।

_” তোমরা কেনো করলে আমার সাথে এরকম? দুশ্চিন্তায় আমার কতটা খারাপ অবস্থা হয়ে গিয়েছিল সেটা জেনেও তোমরা এতদিন চুপ করে ছিলে!”

আহনাফের বাবা আশরাফ ওয়াহিদ গম্ভীর স্বরে বললেন,”এই কাজ না করলে তুমি নিজের করা অন্যায় কখনো উপলব্ধি করতে পারতে না।”

আহনাফ রাগে চিৎকার করে বলে,” আমি সেইদিন অফিস থেকে ফেরার সময়ই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম অদিতিকে আমি সবার সামনে স্বীকার করে নিবো। কিন্তু তোমরা সবকিছু এলোমেলো করে দিলে বাবা।”

আহনাফ এইবার এক হাত দিয়ে আলভীর কলার চেপে ধরে ক্ষিপ্ত স্বরে বলে,” আমার বউকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার স্পর্ধা করার সাহস কি করে হয় তোর? কতবড় কলিজা তোর! কোথায় আমার অদিতি? কোথায় রেখেছিস ওকে?”

আজমেরী ওয়াহিদ উৎকণ্ঠিত স্বরে বললেন,” তোর দুশ্চিন্তায় আমরা অদিতিকে তোর এক্সিডেন্টের ব্যাপারে জানানোর কথা ভুলেই গেছি। আলভী যা তাড়াতাড়ি অদিতিকে নিয়ে আয়।”

_” এক পাও আগাবি না রাস্কেল। আমার বউকে আমি গিয়ে নিয়ে আসবো। তোমাদের কাউকে আর আমার কথা ভাবতে হবে না।”

আহনাফ তাড়াহুড়া করে কাপড় পাল্টে অদিতিকে আনার জন্যে বেরিয়ে যায়। আজমেরী ওয়াহিদ আহনাফকে এই অবস্থায় আটকানোর অনেক চেষ্টা করেন। কিন্তু আহনাফ কারো কোনো কথা পাত্তা না দিয়েই বেরিয়ে যায়। আলভীও আহনাফের পিছে পিছে অপরাধীর ন্যায় চলতে থাকে।
___

আলভী ভয়ে ভয়ে ড্রাইভ করছে আর আহনাফের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। এই মুহূর্তে মুখ দিয়ে কোনোরকম কথা বের করার সাহস আলভী পাচ্ছে না। আহনাফ রাগে দাঁতে দাঁত বসে আছে। কিভাবে পারলো অদিতি তাকে এতটা কষ্ট দিতে? সবকিছুর হিসাব নিবে আজ আহনাফ অদিতির কাছ থেকে।

আহনাফ আনমনেই বলতে থাকে,” একবার কাছে পেয়ে নেই তোমাকে অদিতি তারপর আমার কাছ থেকে এতদিন পালিয়ে থাকার মজা বুঝাবো।”

আলভী আর আহনাফ সরাসরি ফ্ল্যাটে পৌঁছে যায়। আহনাফ অস্থির হয়ে ফ্ল্যাটের ভেতরে প্রবেশ করে অদিতিকে ডাকতে থাকে,” অদিতি কোথায় তুমি? আর লুকিয়ে লাভ নেই আমি সব জেনে গিয়েছি বেরিয়ে আসো।”

অনেক্ষন অদিতিকে ডাকার পরও অদিতির কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে আলভী আর আহনাফ এইবার পুরো ফ্ল্যাটের আনাচে কানাচে অদিতিকে খুঁজতে থাকে। অদিতিকে খুঁজে না পেয়ে আহনাফ রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে আলভীর কলার চেপে চিৎকার করে বলে,” আলভীর বাচ্চা আমার অদিতি কোথায়? কোথায় রেখেছিস ওকে?”

আলভী এইবার নিজেও চিন্তিত স্বরে বলে,” ব্রো আমি নিজেও জানি না। দাঁড়াও আমি প্রিয়তাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করছি।”

আলভী সাথে সাথেই প্রিয়তাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে,” প্রিয়তা, অদিতি ভাবী কোথায়?”

প্রিয়তা ওপাশ থেকে অবাক কন্ঠে শুধায়,” কেনো অদিতি আবার কোথায় থাকবে? ফ্ল্যাটেই আছে হয়তো?”

_” প্রিয়তা, ভাবীকে আমি আর ব্রো পুরো ফ্ল্যাটে খুঁজেছি। ভাবী কোথাও নেই। আর তোমাকে আমি বলেছিলাম না ভাবীর সাথে থাকতে।”

_” কি বলছো তুমি আলভী? আমি তো আজ রাতেই বাসায় এসেছি মা বারবার কল করছিল দেখে। অদিতিকেও আমি সাবধান করে গেছি একা কোথাও বের না হতে।”

আলভী আর প্রিয়তার কথপোকথন শুনে আহনাফের মনে আবার দুশ্চিন্তা এসে ভর করতে থাকে। এইতো কিছুক্ষণ আগে অদিতির সন্ধান পাওয়ার সাথে সাথেই শান্ত হয়ে উঠেছিল আহনাফের গুমরে মরা অশান্ত মন। অথচ আবার হুট করেই উধাও হয়ে গিয়ে আহনাফকে আবারো দুশ্চিন্তায় পাগল করে দিলো অদিতি।

আহনাফ রাগে আলভীর হাত থেকে ফোন ছুঁড়ে মেঝেতে ফেলে দিয়ে চেঁচিয়ে বলে,” রাস্কেল! অদিতি তো দায়িত্বে ছিলো! এই খেয়াল রেখেছিস তুই এতদিন? আমার অদিতির গায়ে একটা আঁচড় ও যদি লাগে তোকে আমি জ্যান্ত মাটিতে পুঁতে ফেলবো।”

আহনাফ কথাগুলো বলে হুড়মুড় করে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যায়। গাড়িতে সজোরে লাথি মেরে চিৎকার করে ওঠে আহনাফ। হৃদয়ের আবার সেই অশান্তি আর আতংক শুরু হয়েছে তার। মাথাটাও ব্যথায় ফেটে যাচ্ছে আহনাফের। আহনাফ সজোরে মাথা চেপে ধরে অস্থির কন্ঠে বলতে থাকে,” আবার কোথায় চলে গেলে তুমি জানবাচ্চা? আমাকে পাগল না করতে পারলে তোমার শান্তি হবে না।”

আলভী আহনাফের সামনে এগিয়ে আসতেই আহনাফ অস্থির কন্ঠে শুধালো,” অদিতিকে কোনো ফোন কিনে দিসনি যোগাযোগ করার জন্য?”

_” না ব্রো, অদিতি ভাবী তো তার ফোন তোমার বাসাতেই ফেলে রেখে এসেছিল। আমারো আর যোগাযোগ করার জন্য ভাবীকে কোনো ফোন কিনে দেওয়ার কথা মনে ছিলো না।”

_ ” গর্দভ কোথাকার! এখন কিভাবে খুঁজবো আমি আমার অদিতিকে?”

আলভী অসহায় মুখ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আহনাফ আর আলভী ফ্ল্যাটের আশেপাশে অদিতির খোঁজ করার চেষ্টা করছে। তখনি আহনাফের ফোনে আননোন নাম্বার থেকে কল আসে।

আহনাফ কল রিসিভ করার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে উদ্ভট কন্ঠে একজন বলে ওঠে,” আপনিই কি আহনাফ ওয়াহিদ?”

_” হ্যাঁ আমিই আহনাফ।”

_” শুনুন, মিস্টার আহনাফ ওয়াহিদ আপনার স্ত্রী অদিতি আমাদের কাছে আছে। নিজের স্ত্রীকে যদি ফিরে পেতে চান তাহলে আমাদের আস্তানায় আপনাকে লাখ খানেক টাকা নিয়ে আসতে হবে। বেশি চালাকি করে পুলিশ ডাকার চেষ্টা করলে কিন্তু নিজের স্ত্রীকে আর জীবিত ফিরে পাবেন না।”

কথাগুলো শুনে আহনাফ উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,” Who the hell are you? আর আমার স্ত্রী কোথায় আছে? আমি ওর সাথে কথা বলবো।”

আগন্তুক লোকগুলো আহনাফের মোবাইলে অদিতির একটি ভিডিও সেন্ড করলো। অদিতির হাত পা বেঁধে তাকে একটি চেয়ারে সাথে আটকে রাখা হয়েছে। অদিতির চোঁখে থেকে অশ্রুজল গড়িয়ে পড়ছে।

ভিডিও ফুটেজটি দেখার সাথে সাথেই অস্থিরতায় কেঁপে ওঠে আহনাফের হৃদয়। আহনাফ সাথে সাথেই কিছুক্ষন আগে আসা আননোন নাম্বারে কল করে অস্থির কন্ঠে বলে,” আমার স্ত্রীর কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করবে না। তোমাদের যতো টাকা লাগবে আমি দেবো। কিন্তু আমার স্ত্রীর গায়ে যেনো একটা আঁচড়ও না লাগে।

ওপাশ থেকে লোকগুলো উদ্ভট হাসি দিয়ে বললো,” ঠিক আছে স্যার। কালকে সকালের মধ্যে টাকা নিয়ে আমাদের আস্তানায় চলে আসেন। আর বেশি চালাকি করার চেষ্টা করিয়েন না।”

লোকগুলো ফোন রেখে দেওয়ার সাথে সাথেই আহনাফ আলভীর দিকে চেয়ে বলে,” অদিতিকে কিডন্যাপ করা হয়েছে।”

আলভী অবাক কন্ঠে বলল,” কি বলছো তুমি ব্রো? এখন কি করবো আমরা!”

_” অদিতিকে নিয়ে আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না আলভী।”

_”তাহলে কি করবে ব্রো?”

আহনাফ আলভীর দিকে চেয়ে কুটিল হাসি দিলো।

_____

অদিতি ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে অচেনা অজানা কিছু লোকদের সামনে। ভয়ে আত্মার পানি শুকিয়ে গেছে অদিতির। কাল রাতে প্রিয়তা অদিতিকে ভালোমতো দরজা লক করে ফ্ল্যাটের ভেতরে থাকতে বলে নিজের মায়ের সাথে দেখা করতে চলে গিয়েছিল। এর কিছুক্ষণ পরেই নিউজ চ্যানেলে আহনাফের কার এক্সিডেন্টের খবর পেয়ে অদিতি থমকে দাঁড়ায়। নিজেকে আর ধরে রাখতে না পারে না অদিতি। কান্না করতে করতে তখনি হসপিটালে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ওই সময় অদিতিকে চিনে ফেলে কিছু আগন্তুকরা। দেশের টপ বিসনেসম্যান আহনাফ ওয়াহিদের স্ত্রীকে কিডন্যাপ করতে পারলে তারা অনেক টাকা মুক্তিপণ দাবি করতে পারবে। তাই তারা অদিতিকে সেই রাতেই জোর করে ধরে নিয়ে যায়।

বর্তমানে __

অদিতি ভয় আর আতঙ্কে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। আহনাফ ঠিক আছে কিনা সেটাও অদিতি জানে না ভালোমতো। চোঁখ দিয়ে অনবরত অশ্রুজল গড়িয়ে পড়ছে অদিতির। কিন্তু অদিতির এই দুশ্চিন্তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না তার আগেই আহনাফ টাকার ব্যাগ হাতে নিয়ে কিডন্যাপারদের আস্তানায় প্রবেশ করে।

আগন্তুক লোক দুটো উদ্ভট হেঁসে বলে,” আরে আরে দেশের শীর্ষ বিসনেসম্যান আমাদের এক ডাকেই দেখছি চলে এসেছে।”

_” আমার স্ত্রী কোথায়?”

_” আছে ওই টিনের ঘরটাতেই আছে। কিন্তু আগে টাকার ব্যাগ আমাদের হাতে দিন।”

আহনাফ টাকার ব্যাগ হাতে দিতেই কিডন্যাপারগুলো কথা ঘুরিয়ে ফেলে। অদিতির কাছে যেতে না দিয়ে আহনাফকে উল্টো মারার জন্য প্রস্তুত হয়।

আহনাফ ডেভিল হাসি দিয়ে বলে,” আহনাফ ওয়াহিদকে এতো কাঁচা খেলোয়াড় ভেবেছো তোমরা?”

কিডন্যাপারগুলো উদ্ভট হেঁসে ছুরি দিয়ে যেই না আহনাফকে আঘাত করতে যাবে তার আগেই আলভী পুলিশ নিয়ে এসে সেখানে হাজির হয়। পুলিশকে দেখে ভয়ে পালানোর চেষ্টা করতে থাকে কিডন্যাপাররা।

আলভীকে এদিকটা সামলানোর ইশারা করে আহনাফ দৌঁড় দিয়ে টিনের ঘরের তালা ভেঙ্গে পরিত্যাক্ত ঘরটিতে ঢুকে পড়ে। অদিতি ভয়ে চোখমুখ বন্ধ করে রেখেছিলো।

এতদিন পর অদিতিকে স্বচক্ষে দেখতে পেয়ে জানে জান ফিরে আসে আহনাফের। আহনাফ অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করে,” অদিতি!”

আহনাফের কন্ঠস্বর শুনার সাথে সাথেই অদিতি চোঁখ তুলে তাকায়। অদিতির চোঁখে মুখে খুশির ঝিলিক ফুটে ওঠে। আহনাফ এক প্রকার ছুটে আসে অদিতির পানে। অদিতির হাতের বাঁধন খুলে দিতেই অদিতি কান্না করতে করতে আহনাফের বুকে ঝাপটে পড়ে।

_” কিচ্ছু হবে জানবাচ্চা আমার। এইতো আমি এসে পড়েছি তোমার কাছে। এখন আর কোনো ভয় নেই।”

অদিতিকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আহনাফ। কপালে গাঢ় চুমু এঁকে দিতে থাকে। খুশিতে কেমন যেন পাগল পাগল লাগছে আহনাফের।

অন্যদিকে, আলভীকে ধন্যবাদ জানিয়ে কিডন্যাপার গুলোকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। আহনাফ অদিতিকে নিয়ে পরিত্যক্ত ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।

আলভী অদিতির দিকে এগিয়ে এসে অস্থির কন্ঠে শুধায়,”ভাবী তুমি ঠিক আছো তো? আর তোমাকে ওরা কিভাবে তুলে নিয়ে গেলো?”

_ ” টিভিতে ওনার এক্সিডেন্টের খবর শুনে আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। হসপিটালে যাওয়ার পথে ওই লোকগুলো কিভাবে যেনো আমাকে চিনে ফেললো। তারপর জোর করে তুলে নিয়ে আসলো এখানে।”

আহনাফ গম্ভীর গলায় বললো,” তোমাকে এখন সবাই চিনবে অদিতি। প্রেস কনফারেন্সে আমি তোমার ছবি দেখিয়ে আমাদের বিয়ের কথা স্বীকার করেছি।”

অদিতি কিছু না বলে আহনাফের দিকে পিটপিট করে চেয়ে রইলো। আলভী ভয়ে শুষ্ক ঢোক গিলে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লো।

আহনাফ অদিতির কোমড় জড়িয়ে তাকে নিজের কাছে নিয়ে এসে গম্ভীর গলায় বললো,” কিভাবে পারলে তুমি আমাকে এতটা কষ্ট দিতে? তোমাকে এর জন্যে শাস্তি পেতে হবে বউপাখি। আপাতত বাসায় চলো।”

আহনাফ অদিতির হাত ধরে তাকে গাড়িতে বসিয়ে বাসায় ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

চলবে…