আমার চন্দ্রাবতী পর্ব-২৩

0
788

#আমার_চন্দ্রাবতী
লেখিকা- সালসাবিল সারা

২৩.
–“বাহুডোরে আরো বেশি সময় আবদ্ধ থাকার পরিকল্পনা থাকলে,বলো।দরজা লক করে দিই?কেউ
এইভাবে আমাদের দেখলে,শেষে তুমিই অজ্ঞান হবে।”
ইয়াদের এমন উক্তিতে হিম হলো দুআর তনু।সে তো এই লোকের রাগ কমার জন্যেই এমন আটকে ছিল তার বাহুডোরে।এইযে দুআর হাতে এখন ঝিনঝিন করছে,
অবশ মনে হচ্ছে হাত দুটো,সে তো এই লোকের জন্যেই সহ্য করে ছিলো।হাতের এমন করুণ অবস্থার কথার ভাবেনি সে একটিবার।দুইজনের মধ্যেখানে হাতের অবস্থান থাকায় বর্তমানে হাতের অবস্থা অবশ।আর লোকটা কিসব বলছে তাকে!ইয়াদের কথা দুআর কর্ণ গহ্বরে আসতেই দুআ সরে যেতে চাইলো দ্রুত। কিন্তু পারলো না।ইয়াদের হাত এখনো প্রেয়সীর কোমরে আটকে।তবে তাদের মধ্যকার দূরত্ব বেড়েছে।
হঠাৎই ইয়াদের পানে তাকানোর ইচ্ছে জাগলো মেয়েটার।চোখ মেলে তাকালো প্রেমিক পুরুষের পানে।লোকটার রাগী চেহারা,চোখের লাল ভাব সবটাই যেনো উবে গেলো কোথায়।

ইয়াদ ভ্রু নাচিয়ে পুনরায় দুআকে প্রশ্ন করলো,
–“শেষ জড়িয়ে ধরা?”
দুআ নজর ঝুকাঁলো।এতো পাজি এই লোক!নিজেই বাহুডোরে আবদ্ধ করে এখন সবটাই সহজ সরল দুআর উপর চাপিয়ে দিচ্ছে।এই মুহূর্তে দুআর সহ্য হলো না এমন দোষী সাব্যস্ত হওয়া।সে মিনমিন সুরে জবাব দিলো,
–“আপনি শুরু করেছেন।আপনার রাগ বেড়ে যাবে বলে আমি সরিনি।নাহলে আমি কখনোই নিজ থেকে এইসবের কথা ভাবিনা।”

প্রেয়সীর কপালে অবাধ্য চুলের নাচ পছন্দ হলো না প্রেমিক পুরুষের।ধীর স্পর্শে কপালের চুলগুলো সরিয়ে দিলো সে।প্রেয়সীর অধর কম্পনরত।এই দিকটায় নজর দেওয়া ইয়াদের পক্ষে দুষ্কর।মস্তিষ্ক বলে,একটু ছুঁয়ে দেখো এই শুভ্র মেয়ের অধর!তবে মন বলে,আমার প্রেয়সী হুট করে এমন স্পর্শ সহ্য করতে পারবে না।এই অধিকারের জন্যে সম্পর্কের গভীরতা বাড়ানো বাধ্যতামূলক।

মুখশ্রীর নিষিদ্ধ স্থান থেকে নজর সরিয়ে দুআর বটে থাকা হাত সটান করে টেনে ধরলো ইয়াদ,
–“হাতে চিনচিন ব্যথা করছে?হাত নড়াচ্ছো না কেনো?”
–“একটু পরে ঠিক হয়ে যাবে।”
ইয়াদ দুইবার ব্যান্ড করলো দুআর হাত।ধীরে ধীরে তার প্রেয়সীর হাতের অবশ ভাব দূর হতে আরম্ভ করলো।
–“বাহুডোরে আবদ্ধ অবস্থায় হাতের এই দশা করেও চুপ করে ছিলে! শুধু আমার জন্যেই? উম,আমার প্রেয়সী আমার ব্যাপারে অনুভূতির তীব্রতা পাকাপোক্ত করছে?যাক,এখন থেকে তোমার জড়তা কাটানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো আমি।”
এই লোকটা সব কিভাবে বুঝে যায়?দুআ বিস্ফোরিত নজরে চেয়ে রইলো ইয়াদের আঁখির গভীরে।এই তীক্ষ্ণ নজরের মানুষের নজর থেকে কিছুই অগোচর হওয়ার সম্ভাবনা নেই,দুআর মনের কথাগুলোও নয়। অবিশ্বাস্য মনে হলেও দুআ বিশ্বাস করে নিলো,এই লোকের দৃষ্টি থেকে তার মনের না বলা কথাটাও এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব।

–“মারিয়া রুমে এসে পড়েছে হয়তো,রুমে যাও তুমি।আমার সাথেই নিচে নামবে।”
ইয়াদের কণ্ঠ সুমধুর শোনালো।
দুআ ঘাড় কাত করলো,
–“ঠিক আছে।আসছি।হাতে ব্যথা করলে এর ব্যবস্থা করে নিবেন।”
–“কিছুই হয়নি।আজকের ঘটনা, আমার রাগের একটা ছোট্ট বহিঃপ্রকাশ।এইসব আমার জন্যে একেবারে নরমাল।”
ইয়াদ হাসলো।
দুআর নিকট চমৎকার মনে হলো তার এই হাসি। ঘোরে ডুব দেওয়ার পূর্বে মেয়েটা অন্যপাশে দৃষ্টি জ্ঞাপন করলো।এই মানবের কাছে আসলেই দুআর মনে উথাল পাথাল সৃষ্টি হয়।মনে সঞ্চার ঘটে,ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে লোকটাকে পর্যবেক্ষণ করার।ব্যাপারটা লজ্জাজনক ভেবে দুআ আর ভাবলো না কিছু।পেছনে বাঁক ফিরে কামরা ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলো।দরজা অব্দি যেতেই আবারও ইয়াদের কণ্ঠ শুনলো সে।অতঃপর পা দাঁড়িয়ে পড়লো আপনা আপনি।
–“চুড়ির বক্স নিয়ে যাও।তোমার জন্যে কেনা।”
কিছু বললো না দুআ।ইয়াদ নিজে এসেই দুআর হাতে বক্স তুলে দিলো।খুশিতে গদগদ হওয়া দুআ সন্তর্পনে হেসে “ধন্যবাদ” জানালো ইয়াদকে।বিনিময়ে ইয়াদ তার প্রেয়সীর গালে হাত রেখে জবাব দিল,
–“হাসিমুখ দেখতেই দিয়েছি গিফট।ধন্যবাদ শুনতে নয়।আর এমন উচ্ছ্বাসিত হয়ে হাসবে না,আমি অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারি।”
দু’কদম পিছিয়ে গেলো মেয়েটা।পুনরায় সেই কম্পন অনুভব করলো দেহে।প্রেমিক পুরুষ‌টা যখন তখন এই মেয়েকে লজ্জায় ফেলতে প্রস্তুত।লাজুক ভঙ্গিতে মেয়েটা সামনের দিকে পা বাড়ানোর পূর্বে ধীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
–“আপনি একটা ঠোঁটকাটা খেলোয়াড়।”
দুআর কথায় ইয়াদ চমকালো,কানে বাজ পড়লো যেনো।মেয়েটার এমন উত্তর তার জন্যে একেবারে অপ্রত্যাশিত ছিলো।যাক,ধীরে ধীরে মেয়েটার জড়তা ভাঙছে।এটাই যেনো ইয়াদের জন্যে একরাশ প্রশান্তি।এই প্রশান্তির অনুভূতি একেবারে অন্যরকম,প্রচণ্ড ভালো লাগায় সিক্ত।
.
রামিসার রুমে যেতেই দুআ মারিয়া এবং জেনির দেখা পেলো।তাদের দুজনকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে।দুআ ভ্রু নাচিয়ে তাদের প্রশ্ন করলো,
–“এতো ক্লান্ত কেনো?”
–“এই যে একটু পূর্বেই এসেছি।ইয়াদ ভাইয়ার নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়ার পূর্বে।কিন্তু, এসে দেখি তুমি’ই নেই।নিচে আমরা ইচ্ছেমত নেচে এসেছি।”
মারিয়া এসির রিমোটে হাত রাখলো।
–“এর মানে ভাইবোন মিলে সব প্ল্যান করেছো।বড্ড পাজি তুমি,মারু।”

–“উফফ,এইসব বাদ। জানো,আমি আর জেনি আপু আজ অনেক ডান্স করেছি।বলতে গেলে, হাড় কাঁপানো নাচ।তাইতো রুমে এসেও জিরানো ফুরাচ্ছে না আমার।”
মারিয়ার কণ্ঠে ক্লান্তির ছাপ।

–“মালকিন, বক্সটা আমারে দেন।আমি সামলায় রাখবো এডা।ইয়াদ দুলাভাই দিছে এডা, আমি জানি।”
জেনির কথায় দুআ সন্দেহভাজন চোখে মারিয়ার দিকে তাকালো।বিনিময়ে মারিয়া হাসলো আর বলে,
–“আমি বলতে বাধ্য হয়েছি।নাহলে মেয়েটা যাচ্ছিল না নিচে তোমাকে ছাড়া।”

–“তোমরাও পারো বটে।”
দুআর হাসিতে সকলে হেসে উঠলো একত্রে।

ঘন্টা খানেক পর দরজায় ঠক্ ঠক্ শব্দ হলো।
পরপরই ভেসে এলো ইয়াদের কন্ঠ,
–“মারু?”

–“আসো ভাইয়া।”

মারিয়ার উত্তর পেয়ে ইয়াদ দরজা বরাবর দাঁড়িয়ে নির্দেশনা দিলো,
–“নিচে চলো।
মারিয়া উঠে সরাসরি ভাইয়ের হাত জড়িয়ে ধরলো।

দুআ প্রশ্নবোধক নজরে ইয়াদের পানে তাকাতেই ইয়াদ বলে উঠলো,
–“চলো,চন্দ্র।”

ইয়াদের নির্দেশনা পেয়ে দুআ খুশি হলো বেশ।অতঃপর লোকটা নিচে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।ভাইও অনেকটা নির্দেশের সুরে এই লোকের কথা শুনতে বলেছিল।তাই কিছুতেই এই দুই পুরুষের বিপক্ষে যাওয়ার ক্ষমতা ছিল না দুআর।

দুআ ইয়াদের নিকট আসতেই সকলে বেরিয়ে পড়লো নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।মারিয়া ভাইয়ের হাত চেপে নানান কথা বলে যাচ্ছে।দুআ ধীরে হাঁটার সাথে সম্মুখে বেগমান লোকটাকে পর্যবেক্ষণ করতে ভুলছে না।লোকটা বেশ নজর কাড়ে দুআর।মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয়;সারাটা দিন শুধু লোকটার বাচনভঙ্গি,ভালোবাসার নজরে তাকানো, রাগী চোখে তাণ্ডব চালানো সবটাই এক পলকে উপভোগ করতে।কিন্তু,এই অসহায় মেয়েটা কিছু করতেই পারে না।পারবে কিভাবে!প্রেমিক পুরুষ যে আস্ত এক ঠোঁটকাটা।না জানি কখন কি বলে পুনরায় লজ্জার সাগরে মেয়েটাকে ডুবিয়ে ফেলে!
ভাবলেশহীন হাঁটছিলো দুআ। যার কারণে থেমে থাকা ইয়াদের দেহের সাথে ঠেকলো মেয়েটা।

দুআ হচকালো।ইয়াদ পেছনে ফিরে যত্নের সুরে বলল,
–“বি কেয়ারফুল,চন্দ্র!দেখে হাঁটো।”

দুআ পলক ফেলে সম্মতি জানালো কেবল।

অনুষ্ঠানের জন্যে সাজানো স্থানে যেতেই দুআ চমকালো।গিজগিজে ভাব তো নেই নেই,
এইখানে এখন সকল মানুষই পরিবারবর্গ।দুআ বেশিরভাগ মানুষকে চিনে।আত্মীয় স্বজন মানুষ চিনবে নাই বা কেনো?
দুআ আসতেই তার সই দুজন,সঞ্জয় এগিয়ে এলো তার কাছে,
–“ছাড়লো তবে এই লোক?নিজে তো নিচেই ছিলো।আর তোকে নামতে দেয়নি, আজব।”
মাহি মুখ কুচঁকালো।
–“সার্জা চুন্নিটার জন্যেই ভাইয়া দুআকে নামতে দেয়নি।মহিলাটা বড্ড পাজি।”
রামিসা দুআর পাশে দাঁড়িয়ে বললো।
–“এতো ভালোবাসা? ইস,স্বচক্ষে দেখলাম না কেনো আমি?”
সঞ্জয়ের কথায় আফসোসের সুর।

–“উফ,অসহ্য! থামবি তোরা?”
দুআ প্রশ্ন করে তাকালো চারদিকে পুনরায়।

ইয়াদ দূরে দাঁড়িয়ে আছে তার মায়ের সাথে,তবে লোকটার নজর এখনো দুআর পানেই।সেই নজরে দুআর প্রতি একরাশ ভালোবাসা বুঝতেও দুআর বেগ পেতে হলো না।নজর ফেরালো মেয়েটা।লোকটার এমন তাকানো ইতোমধ্যেই দুআর শরীরে তাপের সৃষ্টি করেছে।

–“থামাথামি নেই।সত্যি তো,ইয়াদ ভাইয়া তোকে অনেক ভালোবাসে।আজকের সার্জার সাথে বলা কর্কশ কথা যদি তুই শুনতি!”
হেসে উঠলো রামিসা।মেয়েটা যেনো ভারী মজা পেলো সার্জার অপমানিত হওয়াতে।
–“আমার একটা প্রশ্ন আছে।একটু আগেও অনেক মানুষ ছিলো,এখন সবাই কই গেলো?”
মারিয়া অবাকভঙ্গিতে প্রশ্ন করলো।
–“গ্রামে সবাই এমনই হয়।যারা কাছের আত্মীয়, উনারা ব্যতীত বাকিরা খাবার পর্ব শেষে চলে যায়।এইখানে খাবারের পর্ব আটটার পর থেকেই চালু হয়।”
মারিয়া বুঝতে পেরে মাথা নাড়লো।অস্ফুট স্বরে বলল,
–“ওহহ। গট ইট।”

মাইশার সইগণ স্টেজ থেকে নামতেই রামিসা গেলো মাইশার নিকট।
–“পরশু দেখা হবে বাসায়।রিজোয়ান ভাইয়া অপেক্ষায় আছে তোমার।”
দুআ কথাটা বলে মুখ টিপে হাসলো।
কথাটার অর্থ বুঝতে পেরে মাইশা লাজুক ভঙ্গিতে জবাব দিলো,
–“দুআ ননদিনী,আমার কথা ছাড়ো।নিজের কথা বলো।আমার ভাই কি দিলো আজ তোমাকে?মারিয়া অল্প স্বল্প বলেছিল আমাকে।তাই তো তোমার খোঁজ নিইনি আমি।রিজোয়ানের বাকি কাজিন তোমার খোঁজ নিতে এসেছিল,তাদের বলেছিলাম ;তুমি অসুস্থবোধ করছিলে তাই উপরেই আছো।”
–“ভালো বলেছো।”
দুআ ছোট্ট স্বরে জবাব দিলো।
ননদ-ভাবী মিলে ছবি তুললো প্রচুর।একে একে রামিসা,
মাহি,মারিয়া গেলো তাদের নিকট।সবাই মিলে নানান ভঙ্গিতে ছবি তুলতে মশগুল।জিয়ার খোঁজে দুআ সম্মুখে তাকাতেই দেখলো,কৃত্রিম গাছের পাশেই ইয়াদ,তার মা এবং জিয়া কিছু বলছে।মূলত দুআর মনে হলো ইয়াদ রেগে আছে।জিয়া এবং ইয়াদ দুইজনকেই উত্তেজিত মনে হলো দুআর।

ছবির পর্ব শেষ হতেই খাবারের পর্বে ধাপিত হলো সকলে।ইয়াদ দুআর সম্মুখে তবে আরো দুই চেয়ার পরে।লোকটা নিচু নজরে খেয়ে যাচ্ছে।নাকটা লাল দেখাচ্ছে।নিশ্চয় আবারও রেগেছে এই লোক!
আশেপাশে জিয়ার অস্তিত্ব নেই।এতো ভাবনার মাঝে হঠাৎই দুআর হিচকি উঠলো।নাকে মুখে পানি এসে নাজেহাল অবস্থা।মুখশ্রী রক্তিম রঙে রঞ্জিত।
ডালিয়া দুআর পাশেই ছিলো।মহিলা সযত্নে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো দুআর।তার উদ্দেশ্য কিছু বললো দুআর পিঠে মালিশ করা অবস্থায়,
–“ঠিক আছে।বিষম খাওয়া স্বাভাবিক।পানি খাও ধীরে।”
গ্লাসে চুমুক দিতেই ইয়াদের তীক্ষ্ণ নজর দুআর আয়ত্বে এলে মেয়েটা সে নজরে ভস্ম হলো যেনো।
নিচু দৃষ্টিতে পুনরায় খাওয়া শুরু করলো।লোকটার হঠাৎ কি হলো,জানা নেই দুআর।

খাবার পর্ব শেষ।গানের শব্দ এখন তীব্র। সকলেই ধুম নাচছে।শুধু বাঁধ সাধলো দুআ।মেয়েটা স্বভাবগত লাজুক হলেও ভাইয়ের অনুষ্ঠানে ধুম নাচবে বলে ঠিক করে রেখেছে।আপাতত মেয়েটা স্থির চেয়ে রইলো যুবক যুবতীর আকর্ষণীয় নাচ।তবে,গানের তীব্রতায় দুআর মাথায় প্রচুর ব্যথা অনুভব হচ্ছে।এই মুহূর্তে এইখান থেকে কেটে পড়াটা দুআর উত্তম মনে হলো।তবে,আফসোস!পথ নেই কোথাও যাওয়ার।চোখ জোড়ার রং পরিবর্তন হচ্ছে ব্যথায়।

–“আমার ছেলেটা কিন্তু খুবই জেদী।তার জিদ সামলাতে পারবে তো,মা?”
ডালিয়ার কথা ভাসা ভাসা।গানের শব্দে ঠিক বুঝলো না দুআ।ডালিয়ার দিকে আরেকটু চেপে গিয়ে সে বললো,
–“জ্বী,আন্টি?বুঝিনি।”

–“আম্মি,ভেতরে যাও।উচ্চস্বরে বসে থাকা তোমার জন্যে ভালো না।”
ইয়াদ মায়ের কানে কানে বললো।
–“মেয়েটা একা তো।সবাই তো নাচে ব্যস্ত।”
মায়ের কথায় ইয়াদ, দুআ এবং ডালিয়ার মাঝামাঝি এসে পুনরায় ঝুঁকলো,
–“চোখ লাল হচ্ছে কেনো?খারাপ লাগছে?”
–“হুম,ভেতরে যাবো।আওয়াজ ভালো লাগছে না।কিন্তু,আমি মারিয়া বা বাকিদের মজা নষ্ট করতে পারবো না।”
দুয়ার স্ফীত কণ্ঠ।আসলেই এইভাবে উচ্চস্বরে বসে নাচ দেখাটা আর সম্ভব হচ্ছে না।নিজেদের অনুষ্ঠান হলে,বলে কয়ে শব্দ কমানো যেত। কিন্তু তার এমন পাকনামি এইখানে ঠেকবে না।বাকিদেরও মনঃক্ষুন্ন হবে।

–“আম্মির সাথে যাও।রিজোয়ান ভাই বলেছেন,আজকে আর না ফিরতে।রাত বেশি।রাস্তাঘাট সুবিধার না।তাছাড়া আমি এমনিও এই রাতে তোমাকে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিতাম না।”
ইয়াদ নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে সোজা হলো।
ইয়াদের বড় ফুফু ভাইয়ের ছেলের সাথে এই মেয়ের আদিক্ষেত্য দেখে মুখ কুঁচকে রেখেছে।তার নিকট বসে থাকা তাসনিমকে নানান ফন্দি এটে দিচ্ছে কানে।দুই মহিলাই একেবারে বজ্জাত।তাসনিম সুযোগের অপেক্ষায় শকুনের নজর নিক্ষেপ করে আছে।কোনো এক গন্ডগলের সূত্র কষছে সে।

–“তোমার সাথে যে মেয়েটা থাকে,তাকে নিচ্ছো না কেনো?”
ইয়াদের কণ্ঠ দুআর কানে তেজী শোনালো।জেনি মেয়েটা অনুষ্ঠানের সখিন।তার এই অধিকার দুআ নষ্ট করতে চায় না,
–“থাকুক না।আমি আন্টির সাথে ঠিক আছি।”
–“খেয়াল রাখবে নিজের। আম্মির সাথে থাকবে।চোখ লাল কেনো হচ্ছে?”
ইয়াদের গম্ভীর প্রশ্ন।
–“মাথা ব্যথা করছে প্রচুর।”
দুআর নিচু স্বর।
–“পেইন কিলার নিয়ে নাও।আম্মির কাছে আছে।ঘুমিয়ে পড়বে।”
ইয়াদ কথাটা শেষ করে বাহিরের দিকে যাওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে।

ডালিয়া মুচকি হাসলো ছেলের কান্ডে,
–“মা-বোন ছাড়া,আমার ছেলে কখনোই এমন চিন্তা করেনি অন্য মেয়ের জন্যে।ছেলেটা সত্যি তোমার জন্যে পাগল।কবে যে জিদ করে বসে, আজই তোমায় বিয়ে করবে!সেদিন সে ঠিকই এসে যাবে।ছেলেটা বড্ড মরিয়া হয়ে আছে তোমার প্রতি। ছেলেটার অনেক জিদ,সামলাতে পারবে তো?”
দুআ নুয়ে গেলো লজ্জায়।লোকটা দুআকে ভালোবাসে,এই কথা কি লোকটা সকলকে ঢোল পিটিয়ে বেড়াচ্ছে?
দুআ নিশ্চুপ থাকায় ডালিয়া দুআর মাথায় হাত বুলিয়ে চুমু খেলেন নিজের আঙ্গুলে,
–“পারবে তো জেদী ছেলেটার দায়িত্ব নিতে?”
–“জ্বী,পারবো।”
দুআর মুখোশ্রীতে লাজুকে ভরপুর।

–“আম্মি,জিয়ার ঘরে যাবে না।অযথা চেঁচাবে তোমায়।”
ইয়াদের হঠাৎ পুনরায় আগমনে দুআ, ডালিয়া দুইজনই হতবাক।
ইয়াদ তার নির্দেশনা দিয়ে আবারও বাহিরের দিকে চললো।আগেরবার ফিরে যাওয়ার সময় ইয়াদের ভেতরে ছিলো জিয়ার ব্যবহারের জন্যে রাগ,তবে প্রেয়সীর স্বীকারোক্তি শুনে এখন ইয়াদের ঠোঁটের কোণে হাসির দেখা মিললো।মেয়েটা যেনো ইয়াদের রাগ কমানোর ফোয়ারা!

ডালিয়া শুয়ে পড়লো।দুআ পেইন কিলার খেয়ে ডালিয়াকে জানিয়ে রামিসার রুমের দিয়ে এগুচ্ছে।মুখের এই ভারী সাজ তোলা এখন বাধ্যতামূলক।মুখটা কেমন চুলকাচ্ছে তার।
রামিসার রুমে মেকাপ উঠানোর সকল সরঞ্জাম বিদ্যমান।দুআ বাথরুমে ঢুকতেই কেউ একজন সযত্নে দুআর বাথরুমে যাওয়ার ফায়দা তুললো।ছোট নেভানো দিয়া পুনরায় জ্বালালো সে।দিয়া রাখলো জানালার পর্দা বরাবর।জ্বলজ্বল করে জ্বলছে পর্দা।মানুষটা যেনো জানতো,দিয়া নিভন্ত।শিকারের আশায় মানুষটা শিকারকে একা পেয়ে তার দুর্ব্যবহার করলো না।জানালা বন্ধ করে দিলো সে।আগুনের লেলিহান শিখা ছড়াচ্ছে ধীরে ধীরে।দুআ বাথরুম থেকে বেরুনোর শব্দ পেয়ে কামরার দরজাটা সামনের দিকে টেনে ধরলো।

অন্যদিকে স্বচক্ষে আগুন দেখে পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো দুআর।চিৎকার করে বলে উঠলো,
–“আগুন,আগুন!”

চলবে…..