#আমার_চন্দ্রাবতী
লেখিকা- সালসাবিল সারা
৩৪.
পরদিন দুপুরে ঢাকা পাড়ি দেওয়ার সকল বন্দোবস্ত করলো ইয়াদ।ফ্লাইটে ফিরছে তারা।জিয়ার বাগদান উপলক্ষে আহেলী এবং ইদ্রিস জমিদার তাদের গাড়ি করেই রওনা দিলো ঢাকার উদ্দেশ্যে।রিজোয়ান এবং তার মা মাইশা সমেত হাসপাতালেই আছেন।দুআর শরীর অতো উন্নত নয়।বেশি খারাপের দিকে যাওয়ার পূর্বেই ইয়াদের যতো তাড়াহুড়ো।জমিদারদের গাড়ি ইয়াদ এবং দুআকে এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিয়ে ঢাকার যাত্রায় শরিক হয়েছিল।
এয়ারপোর্টে সর্বকাল ইয়াদ মাস্ক, ক্যাপ দুইটাই ব্যবহার করে। ফ্যান ফলোয়ারদের ভিড় তার নিকট বড্ড অস্বস্থিকর।দুআ ইয়াদের নির্দেশে মাস্ক পড়লেও,আজ এই মাস্ক তার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে যেনো।মেয়েটার শ্বাস আটকে যাচ্ছে বারংবার।সাথে অসময়ের বমিভাব একেবারে ফ্রী।ফ্লাইটের অপেক্ষায় দুইজনে বসে।ইয়াদ মোবাইলেই তার সকল কর্ম সাধন করছে।তার কাঁধে প্রেয়সীর ক্লান্ত তনু লেপ্টে আছে নির্বিঘ্নে।
মিনিট দশেক বাদে দুআর নিকট এই মাস্কের আস্তরণ মৃ’ত্যুপুরী বলে মনে হলো।সে এক টানেই খুললো “মাস্ক” নামক মৃ’ত্যুপুরীকে।ইয়াদ দুআর এহেন কান্ডে চমকালো,
–“করছো কি?”
দুআ হাতের সাহায্যে বাতাস করার চেষ্টায় ব্যস্ত আর বলে,
–“অসহ্য লাগছে,ইয়াদ।আমি এইসব পড়বো না।”
–“তোমায় কেউ চিনলে ভিড় হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।”
ইয়াদ বেজায় চিন্তিত।
–“গার্ড ডাকুন।আমি এইসব পড়বো না।”
দুআ জিদ করলো।
–“আচ্ছা,পড়তে হবে না।আসো এইদিকে।”
ইয়াদ নিজের বক্ষদেশে মেয়েটাকে আঁকড়ে ধরলো পরম আবেশে। ফোনে এয়ারপোর্টের কর্তার সমেত আলাপ করতেই চার পাঁচ জনের একটা গ্যাং এসে হাজির হলো সেথায়।ক্রিকেটার মানুষদের জন্যে সর্বদা সেবা নিয়োজিত রয়েছে এয়ারপোর্টে। শুধু তাই নয়,বড় বড় সেলিব্রেটি বা পলিটিশিয়ান বা যেকোনো নামি দামি ব্যক্তির জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা থাকে অত্র স্থানে।
দুআ এবং ইয়াদকে অনেকে চিনতে পারলেও, ইয়াদের কড়া নিষেধাজ্ঞায় কেউ ছবি তোলা তো দূরের কথা; আশে পাশে ঘেঁষতে পারলো না।
নির্দিষ্ট অ্যানাউন্সমেন্ট শুনে ইয়াদ দাঁড়িয়ে পড়লো দুআ সমেত।দুইজন গার্ড তাদের ট্রলি ব্যাগ নিয়ে সামনে এগিয়ে।
প্লেনে নির্ধারিত সিটে বসেও দুআর তনু স্বস্তি পাচ্ছে না একরত্তি।বিচলিত ইয়াদ,বারংবার শান্তনা দিয়ে যাচ্ছে মেয়েটাকে।সবেমাত্র প্লেন তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে উড়াল দিলো,অমনি মেয়েটা হুরহুর করে বমি করলো।ইয়াদ পূর্ব হতেই প্রস্তুতি নিয়েছিল এই বিষয়ে।তাই দুইজনেই বমির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।ক্লান্ত দুআ ইয়াদের বাহুডোরে আবদ্ধ। দুই সিটের মধ্যকার হাতল তাদের বিন্দু পরিমাণ বিরক্ত করছে না।অসুস্থ অবস্থায় এতো ভেজাল দুআর একেবারেই অপছন্দ।তার উপর লোকটাকে কতো না বিপত্তি ঠেলতে হচ্ছে, শুধু দুআর কারণেই।
ফিচেল কণ্ঠে সে ইয়াদকে বললো,
–“বাড়িতে থাকলে কি এমন ক্ষতি হতো?”
ইয়াদের হাতের আঙ্গুল মেয়েটার মসৃণ চুলে বিলি কাটতে ব্যস্ত,
–“সেটাই।তোমার আসল বাড়িতেই তোমার ভালো লাগবে।চুপচাপ বসে থাকো।আর মাত্র ত্রিশ মিনিট।”
দুআ বুঝলো ইয়াদের খোঁচাযুক্ত কথার ভাষা।সে ইয়াদের বাহুতে চিমটি কেটে জবাব দিল,
–“আমি আমার বাড়ির কথা বলেছি।”
–“আমার বাড়িই তোমার বাড়ি।চোখ বুঁজে একটু রেস্ট নাও,বাবা।কথা বললে আবারও বমি পাবে।”
–“বাজে লোক।”
দুআর এমন বাক্যে হাসলো ইয়াদ।শব্দহীন বাক্যে অধর ছোঁয়ালো মেয়েটার মাথার তালুতে।দুআ মুহূর্তেই নিদ্রায় মশগুল।আদুরে ভঙ্গিতে ইয়াদের উদরের উপর হাতখানা আবদ্ধ রেখেছে।
,
ঢাকায় পৌঁছে ইয়াদের নির্দেশে এয়ারপোর্টের ভেতরকার রাস্তাটুকু দুআ মাস্কের আস্তরণ পড়েছিলো।তবে,বাহির হতেই মারিয়া এবং রামিসা তার দৃষ্টির সীমানায় এলে দুআ মাস্ক খুলে সেইদিকে হাত নাড়ালো।দুআর অপর হাত ইয়াদের দখলে।সে আপাতত লাগেজ গাড়িতে তোলার নির্দেশনা দিলো সেখানকার লোকদের।
মারিয়া দ্রুত এগিয়ে এসে দুআকে জড়িয়ে ধরতে নিলেই ইয়াদ ধমকে উঠলো হঠাৎ,
–“বি কেয়ারফুল,মারু।”
ইয়াদ গাড়িতে লাগেজ রাখার নির্দেশনা দিচ্ছে অন্যদের।
মারিয়া এবং দুআ ইয়াদের কথা পাত্তা না দিয়ে
দুজনে আলিঙ্গন করলো দৃঢ়তার সাথে। রামিসাও যোগ দিলো তাদের সহিত।ইয়াদের তাড়নায় তিনজন রমণী গাড়িতে উঠে পড়লো।আশ্চর্যের বিষয়,গাড়িতে উঠতেই দুআ মারিয়ার কাঁধে হেলান দিয়েই তন্দ্রাসক্ত।মারিয়া অবাক হয়ে বলে উঠলো,
–“ভাবী?ও চাঁদ ভাবী!ঘুম তুমি?কথায় তো বললে না।অমনি ঘুমিয়ে পড়লে?”
মারিয়ার বাক্য ইয়াদের কর্ণ গভীরে প্রবেশ করতেই ঘাড় বাঁকালো সে,
–“ঘুমাতে দাও। ডেকো না।”
ইয়াদ নিজেও সিটে গা এলিয়ে দিলো।মেয়েটার খেয়াল রাখার চক্করে নিজের আঁখিতে তার তন্দ্রা হানা দিচ্ছে এই মুহূর্তে।
–“মারু,তুই কি বেকুব?জানিস না দুআ এখন একা নেই?তোর ভাইয়ের বাচ্চা আসতে চলেছে।তাই এখন দুআর এমন হুটহাট ঘুমিয়ে যাওয়া একেবারে জায়েজ।”
মারিয়া ফিসফিস করে শুধালো।
–“আমি কিভাবে জানবো এইসব?”
মারিয়া আঁখি বাঁকা করলো।
–“আমি বলেছি তো।এখন থেকে জেনে রাখ।”
মারিয়া হাসলো রামিসার উক্তিতে,
–“আচ্ছা।”
গাড়ি থামলো ইয়াদের বাড়ির ফটকের সম্মুখে।দুআ এখনো ঘুমে।মেয়েটাকে মারিয়া এবং ইয়াদ বার কয়েক ডাকলো।ফলাফল শূন্য।এমন ঘুম কাতুরে ইয়াদ ইহকালে একজনকেও দেখেনি।এমনকি দুআর এই রূপ ইয়াদের নিকট একেবারে নবীন।তার প্রেয়সী এমন ছিলো না।নিজ অংশের কারণেই মেয়েটার এমন করুণ অবস্থা।ইয়াদ হাসলো।সন্তর্পনে আলগোছে মেয়েটাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো নিজ বাহুদ্বয়ে।
ভেতরে প্রবেশ করতেই সকলে ইয়াদের এহেন কান্ড লক্ষ্য করে হেসে কুটিকুটি।ডালিয়া,জিয়া ইয়াদের পিছু নিলো।ডালিয়ার কণ্ঠে চিন্তা স্পষ্ট,
–“আব্বা,কি হলো ওর?”
–“দুআ ঘুমিয়ে।ঘুম ভাঙছে না।ক্লান্ত হয়তো।”
ইয়াদ দুআর পানে দৃষ্টি জ্ঞাপন করে জবাব দিলো।এতো মানুষ মেয়েটাকে কেন্দ্র করে হাসছে,আর মেয়েটা কি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে!দুআ যদি এই অবস্থায় সগাজ থাকতো,তাহলে নিশ্চয় মেয়েটা লজ্জায় রাঙা হতো!
তাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে ইয়াদ উঠে পড়লো।গলায় তাওয়াল ঝুলিয়ে কাবার্ড হতে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বাথরুমে প্রবেশ করলো তার অবয়ব।
ডালিয়া নিজ দায়িত্বে দুআর তনু ঢাকলো কম্বলের সাহায্যে।দুআর মাথায় হাত বুলিয়ে উনি জিয়ার উদ্দেশ্যে বললো,
–“মেয়েটার স্বাস্থ্য ফিরেছে।দেখেই মনে হচ্ছে আমার ইয়াদের বউ।”
–“এখন তোমার ছেলের হবু বাচ্চার মাও সে।স্বাস্থ্য ফিরবে তো অবশ্যই।”
জিয়া হাসলো নির্দ্বিধায়।
–“সব ঠিক আছে কিন্তু এইভাবে অনুষ্ঠান করার পূর্বে পোহাতি হলো মেয়েটা।ব্যাপারটা সবাই ভালো চোখে দেখবে কি?”
ইয়াদের চাচীর প্রশ্নে ডালিয়া মুখে হাত রাখলো,
–“এমন বলো না।ইয়াদ শুনলে রেগে যাবে।এইসব বিষয়ে আমাদের কারো হাত থাকে না।মহিলা হয়েও এইসব বলো কিভাবে?”
চাচীর জবান তালাবদ্ধ।
–“চাচী,আমার ভাইয়ের বউ; অনুষ্ঠান করলেও আমার ভাইয়ের বউ,আর না করলেও।এটা কেউ চেঞ্জ করতে পারবেনা।ওদের বিয়ের খবর বিয়ের পরের দিনই ইয়াদ ঘোষণা করার,পরপর তিনমাস দেশের টপ নিউজে আমার ভাইয়ের বিয়ে নিয়েই আলোচনা হয়েছে।বিয়ে হওয়ার পর কেউ সাধু সেধে বসে থাকে না।বিয়ের পর বাচ্চা হবে এটা স্বাভাবিক।হোক না সেটা বড় অনুষ্ঠান ছাড়া বিয়ে!”
জিয়ার জ্ব’লন্ত বাক্যে জ্ব’ললো চাচীর সত্তা।
বিনাবাক্যে তিনি রুম ত্যাগ করলেন।অবশ্য নিজ দোষ বুঝতে পেরে লজ্জায় নাক কা’টলো তার।ভেবেছিল দু চারটে কথা শুনাবে।কিন্তু হলো, হিতের বিপরীত।
–“এনিথিং রং?”(কোনো সমস্যা)
ইয়াদের প্রশ্নে ডালিয়া এবং জিয়া দুইজনই তার পানে ফিরলো।
–“নাহ আব্বা।ঘুমাবে কি?”
–“হ্যাঁ আম্মি। ব্যাক পেইন করছে।”
ইয়াদের সাবলীল জবাব।
ডালিয়া পুনরায় দুআর মাথায় হাত বুলিয়ে বেরিয়ে পড়লো জিয়া সমেত।
ইয়াদ বিছানায় যাওয়ার পূর্বে লাগেজ দেখে স্থির হলো।বাঁক ঘুরিয়ে বিছানার বদলে সে এগিয়ে গেলো লাগেজের পানে,
–“ঘুম থেকে উঠে এইসব লাগেজ দেখে ম্যাডাম আবারও কাজে লেগে পড়বে।নিজে অসুস্থ সেটা দেখার সময় আছে তার?”
অগত্য ইয়াদ নিজ হাতে একে একে সকল কাপড় আলমিরায় সাজিয়ে নিলো।কাজ শেষ হতেই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ক্লান্ত তনু শায়িত করলো বিছানায়। বক্ষদেশে টেনে নিলো অর্ধাঙ্গিনীর সত্তা।পরম সুখে আঁখিজোড়া বুজলো তার।
___
দুআ সজাগ হতেই ইয়াদের রুমে নিজেকে আবিষ্কার করে চমকালো যেনো।মাথা তার একেবারে ফাঁকা।তবে এমন গভীর ঘুমের কারণে তার শরীরটা বড্ড হালকা ঠেকছে।জিয়া সোফায় বসে ম্যাগাজিনে ডুবে।জিয়াকে দেখতে পেয়ে দুআ আওড়ালো,
–“জিয়া আপু,কেমন আছো?”
দুআর প্রশ্নে জিয়া ম্যাগাজিন টি টেবিলে রেখেই আলগোছে উঠে এলো,
–“ভালো চাঁদ।তোমার শরীরের কি অবস্থা?”
–“আলহামদুলিল্লাহ্,আপু।উনি কোথায়?”
–“তোমার উনি নিচে আছে।কাজে ব্যস্ত।সবাই নিচে কালকের অনুষ্ঠানের জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে।”
জিয়া কথাটা বলে বিছানা হতে উঠলো।বেড সাইডে অবস্থিত টেলিফোন যোগে ফোন করলো নিচের ল্যান্ডলাইনে,
–“মাকে বলো,দুআ উঠেছে।নাস্তা পাঠিয়ে দিতে।”
খাবারের কথা শুনতেই দুআর শরীরে সৃষ্টি হলো ঝিনঝিন।জিয়া টেলিফোন রাখলে সে ভীত সুরে বললো,
–“কিছু খাবো না আপু।”
–“খেতে হবে দুআ।এখন যে তুমি একা নেই।আমার ভাই তোমায় নিয়ে বড্ড চিন্তিত।তাকে আর চিন্তায় ফেলো না।বোন হয়ে আমি ভাইকে অনেক জ্বা’লিয়েছি,অনেক অভি’শাপ দিয়েছি।কিন্তু আমার ভাই দেখো,কোনো দিন আমাকে ফেলে দেয়নি।গোপনে আমাকে ঐ জামাল হতে রক্ষা করেছে।আমি প্রেমে অন্ধ ছিলাম,কিন্ত আমার ভাই ঠিকই আমার অন্ধত্বে নতুন আঁখি দান করেছে।এইযে ভাইয়ার মাধ্যমেই রিয়াদের সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে।আমি খুশি দুআ।ভাইয়ের জন্যে দেওয়া অ’ভিশাপ যেনো আল্লাহ্ দোয়ায় কবুল করে।আমি বোন হিসেবে কি খুবই জ’ঘন্য?”
জিয়ার আঁখি অশ্রুজল।তার আঁখির তেজে দুআর নেত্র ভিজে উঠে,
–“একদমই না আপু।তুমি অনেক ভালো। ইয়াদ তোমাকে নিয়ে চিন্তায় থাকতো অনেক।কিন্তু,তোমাদের মাঝের সকল ভুল বুঝাবুঝি দূর হয়েছে দেখে খুশি হলাম অনেক।এইভাবেই একসাথে থাকবে আপু।ইয়াদ আপনাদের দুই বোনকে নিজ হতে বেশি ভালোবাসে।”
–“হুম হুম, ভাবীজান।আমি সবটা জানি।তুমি উঠো।রেডি হয়ে নাও।নাস্তা সেরে নিচে নামবে।ওহ হ্যাঁ,তোমার বাবা মাও এসে পড়বে রাতের সময়ে।রাস্তায় প্রচুর ট্র্যাফিক।”
জিয়া কথা শেষ করে বেরিয়ে পড়লো কক্ষ হতে।দুআ সময় নিয়ে বিছানা ছাড়লো।দৃষ্টি তার লাগেজের সন্ধানে। পেলোও লাগেজ।তবে আলমিরার উপরে স্থায়ী।ভ্রু কুঁচকে এলো তার।এতো উপরে ভারী লাগেজ উঠিয়েছে কে?ইয়াদ?কিন্তু কেনো?দুআর কথা কি ভাবলো না ছেলেটা?ওড়না গায়ে জড়িয়ে ফোন করলো সে ইয়াদকে। জরুরী তলব জানিয়ে তাকে রুমে আসার অনুরোধ করলো দুআ।
–“ঠিক আছো?”
রুমে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম ইয়াদের প্রশ্ন।
–“আমি ঠিক আছি। আপনি ঠিক নেই।লাগেজ এতো উপরে কেনো?আমি কিভাবে কাপড় নিবো,এইসব কি মাথায় নেই?”
মেয়েটা কোমরের দুই ধারে হাত রেখে প্রশ্ন করলো।চেহারায় বেশ গমগমে ভাব।ইয়াদের ঘোর লেগে যায়।হাসলো ছেলেটা।দুআর ভ্রু-দ্বয়ের কুঁচকানো বাড়লো খানিকটা।মেয়েটার হাত টেনে নিজের সত্তার সমেত মেশালো ছেলেটা।আলমিরার সামনে দাঁড়িয়ে দুআকে পেছন হতে আলিঙ্গন করে আলমিরার দ্বার খুললো,
–“এইযে তোমার সবকিছু এইখানেই।”
–“কে গোছালো?আপনার জিনিসে কেউ হাত দিক এটা আপনি পছন্দ করেন না।এটা বলবেন না যে,আপনি আম্মুকে দিয়ে এইসব করিয়েছেন!আপনার কাপড় পর্যন্ত ঠিক ছিলো,কিন্তু আমার কাপড় কেনো?ইয়াদ,
আপনি বেশ খারাপ।”
–“আরে আরে বিনা দোষে আমি খারাপ হলাম?মিসেস খেলোয়ার,সবটা আমি করেছি।আপনার শাশুড়ি না।”
ইয়াদ অধর স্পর্শ করলো মেয়েটার কানে।
দুআ নিজেকে ছাড়িয়ে নিল ইয়াদ হতে,
–“ছাড়ুন।আমি ফ্রেশ হবো।”
মেয়েটা লাল রঙের সুতি শাড়ি বের করলো।ইয়াদ মেয়েটার ওড়না টেনে থামালো বিশেষ কারণে,
–“চাদর কে নিবে?পুরো বাড়ি ঠান্ডা হিম।”
নিজ পছন্দ অনুযায়ী ইয়াদ দুআর জন্যে চাদর পছন্দ করলো।
–“আমি আছি।জলদি ফ্রেশ হও।গোসল করবে না।জাস্ট হাত মুখ ধুয়ে এসো।”
দুআ ইশারায় কাছে ডাকলো ছেলেটাকে।ইয়াদ হাসিমুখে দুআর মুখোমুখি হতেই দুআ নিজের অধর ছোঁয়ালো ইয়াদের খরশান চোয়ালে,
–“আই লাভ ইউ।”
ইয়াদ কিংকর্তব্যবিমূঢ়।তবে,প্রেয়সীর এমন প্রণয় অনুভব করে সে চিল্লিয়ে দুআর উদ্দেশ্যে বললো,
–“আজ রাতে কিছুতেই ছাড় পাবে না,চন্দ্র।রাতের জন্যে প্রস্তুতি নাও।তোমার শরীর খারাপের বাহানা আজ মওকুফ করা যাবে না।একদমই না।”
_______
সকলে তৈরি।জিয়ার বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্যে সকলে ব্যস্ত।দুআ চারিদিকের অবস্থা লক্ষ্য করে নিজের রুমে এলো।সকলেই এখন চকচকে কাপড়,ভারী গহনা,সাজ সজ্জায় সজ্জিত।কেবল দুআ ব্যতীত।মেয়েটাকে যাওয়ার নির্দেশনা ইয়াদ দেয়নি। জিয়ার বাগদান, হলুদেও দুআ অনুপস্থিত ছিলো।কেবল ইয়াদের কারণেই।ছেলেটার মাথায় কি খেলা চলছিল সেটা কেবল আল্লাহ্ই জানে।জিয়ার বাগদানের অনুষ্ঠানে দুআ আহেলীর সমেত থাকলেও,হলুদের আগের দিন ইয়াদ জেনিকে আনিয়াছে গ্রাম হতে। ইয়াদের প্রবীণ কিছু আত্মীয়,দুআ,জেনি ব্যতীত সকলেই অনুষ্ঠানে যাচ্ছে।
ইয়াদের দেখা সাক্ষাৎ নেই।দুআ মুখ গোমড়া করে বসে রইলো কামরায়।ইয়াদ আসলো আরো কিছু সময় বাদে।
লোকটা আজ কালো রঙের স্যুট পড়ছে।চুলের আস্তরণে জেল মেখে পরিপাটি করলো চুল।হাতে ঘড়ি লাগিয়ে,গায়ে পারফিউম মেখে দুআর নিকট এলো সে,
–“মন খারাপ?”
–“আপনি যান।আমার মন খারাপে আপনার কি কাজ?”
দুআর সবকিছু বিষাক্ত লাগছে যেনো।
–“এতো মানুষের ভিড়ে অস্বস্তি হবে তোমার।”
ইয়াদ দুআর মাথায় হাত বুলাতে নিলে দুআ বিরক্ত দেখালো,
–“ধুর। যান তো।কতো মেয়েকে আপনার ঢং দেখাবেন আজ,আল্লাহ্ জানেন।আমার বাচ্চা আর আমি একাই থাকি।”
অভিমানী চেহারায় মেয়েটার নাক লাল।চোয়ালে বিন্দু বিন্দু লাল দানা হয়েছে তার।ডাক্তারও দেখিয়েছিল এর কারণে,ডাক্তার বলেছে প্রেগন্যান্সিতে এইসব স্বাভাবিক।ছেলেটার বুক শীতল হয়।হাত স্পর্শ করলো প্রেয়সীর উদরে,যেথায় তাদের অংশ অবস্থানরত।
দুআ তার হাত ঠেলে,তবে সরাতে অক্ষম।
–“আমি দ্রুত চলে আসবো।মন খারাপ করে না।”
–“একদম না।আপুর বিদায় শেষে আসবেন।আপনি যান।আমি মন খারাপ করিনি।”
ছেলেটা হঠাৎই মেয়েটার অধরে অধর ছুঁয়ে দিলো।চোখ খিঁচে বন্ধ করলো দুআ।অসময়ে আক্রমন করবে ছেলেটা একদমই বুঝনি সে।
মেয়েটার চোয়ালে আঙ্গুল স্পর্শ করে ইয়াদ শুধালো,
–“আমাদের প্রোগ্রাম দ্রুতই হবে।তখন অনেক ধকল যাবে তোমার উপর।কিন্তু, তুমি কেবল প্রয়োজনীয় আত্মীয়ের সাথে স্টেজে থাকবে।এরপর তোমার জন্যে বিশেষ ব্যাবস্থা করা থাকবে।”
দুআ শুনলো কেবল।আচমকা হামলার কারণে মেয়েটা এখনো নিজেকে সামলিয়ে উঠতে পারেনি।
,
ইয়াদ এবং দুআর পরিণয়ের ছোট অনুষ্ঠান বাড়িতেই হলো। উদ্দেশ্যে স্মৃতি হিসেবে ছবির।তবে রিসিপশনের তারিখ নির্ধারণ করা হলো।নানান সোসিয়াল মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে তা।এখন শুধু সেই দিনের অপেক্ষায় সকলে।বিখ্যাত ক্রিকেটারের রিসিপশনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত দেশ বিদেশের অনেকেই।ইয়াদ পার্সোনালি দাওয়াত করেছে তাদের।
অন্যদের মতো এই অনুষ্ঠানের তারিখের অপেক্ষায় ছিলো ইশফাক।ইয়াদ,দুআ হতেও এই তারিখের খোলাশায় সবচেয়ে বেশি আনন্দিত সে।ক্যালেন্ডারে দাগ কেটে ছেলেটা মলিন হাসলো,
–“সুখের দিনে প্রিয়জন হারানোর বেদনা অত্যন্ত কষ্টদায়ক হবে,দুআ।তবে কিছু করার নেই।আমি যেমন দহনে জ্ব’লেছি,তেমন তুমিও জ্ব’লো।অল্প দহনে কিছু হয়না।মনের দহনের কাছে শরীরের দহনের যন্ত্রণা কিছুই না।”
চলবে…..