আমার তুমি পর্ব-২৫+২৬

0
378

#আমার তুমি
#পর্বঃ২৫
#তানিশা সুলতানা

তুলতুল মিষ্টি করে হাসে। সায়ান তুলতুলের গলায় হাত ডুবিয়ে দেয়। তুলতুল সায়ানের চোখের দিকে তাকায়। লোকটার চোখ দুটো টকটকে লাল হয়ে আছে। হয়ত মনে পড়ছে সেই সব দিনের কথা। তুলতুল জানতো এটাই হবে। তাই ভয় পায় নি।
তুলতুল সায়ানের গলা জড়িয়ে ধরে।

“ভাইয়া আর কতোখন দাঁড়িয়ে থাকবো বলেন? পেছনে তো পাখি মেডাম দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখিয়ে এটলিস্ট একটা কিসও করে ফেলেন। আর কিছু না হয়

তুলতুলের ফিসফিস করে বলা কথায় সায়ান বড় বড় চোখ করে তাকায়। এক ঝটকায় তুলতুলের থেকে দুরে সরে আছে।

” পাখি শো
বলতে বলতে পেছনে তাকিয়ে দেখে পাখি নেই।
তুলতুল এই ফাঁকে এক দৌড়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে যায়। খিলখিল করে হেসে ওঠে তুলতুল। সায়ান দাঁত কটমট করে তাকায় তুলতুলের দিকে।

“পাখি নামটা আপনার মুখ থেকে না মুছে আমি নাতিনাতনি মুখ দেখবো না।
বুজলেন মিস্টার অন রোমান্টিক। বাংলা ভাষায় যেটাকে বলে বেরসিক।

ঠাস করে ওয়াশরুমে দরজা বন্ধ করে দেয় তুলতুল।

” দরজা খোলো।
সায়ান দরজা ধাক্কা দিয়ে বলে। তুলতুল দরজার পাশে বসে হাসতে থাকে।

“কতোখন থাকবো ওয়াশরুমে?
সায়ান দাঁত কটমট করে বলে।

” যতখন না আমার শাড়ি পড়া শেষ হচ্ছে। এটাই হচ্ছে তুলতুলের পেছনে লাগার শাস্তি।
গলা উঁচু করে বলে তুলতুল।

“ইডিয়েট
লাস্ট বার বলছি দরজা খোলো।

” খুলবো না।

“খুন করে ফেলবো তোমায়।

” আগে ওয়াশরুম থেকে তো বের হন তারপর নাহয় খুন করিয়েন।

সায়ান আর কিছু বলে না। সুস্থ সবল মানুষদের বোঝানো যায়। পাগলদের বোঝানো যায় না। একে ডাকাডাকি করলে শুধু শুধু নিজের এনার্জি নষ্ট হবে।

“আস্ত একটা পাগল
স্টুপিট

তুলতুল শাড়ি পড়তে জানে না। শাড়িটা উল্টেপাল্টে দেখছে শুধু। কোথা থেকে শুরু করবে বুঝতেই পারছে না।
অবশেষে মাথায় আসে ইউটিউব মামার কথা। ইউটিউবে সার্চ দিয়ে শাড়ি পড়তে থাকে তুলতুল।
ভালোই পেরেছে। কিন্তু পবলেম হচ্ছে শাড়িটা পাতলা হওয়াতে পেট দেখা যাচ্ছে। এটার কি করবে?
আবার ইউটিউবে সার্চ দেয় কিভাবে পেট ঢেকে শাড়ি পড়তে হয়।
এটাও পেরে যায়।
মনের মতো করে সেজে নেয়। সাজতে তো হবেই। ওই পাখির থেকেও বেশি কিউট দেখাতে হবে তো।
ঠোঁটে গাড়ো লাল লিপস্টিক চোখে মোটা করে কাজল মুখে পাউডার।

সব শেষে কয়েকটা সেলফি তুলে নেয় তুলতুল।

সায়ান ওয়াশরুমে পায়চারি করছে। ইচ্ছে করছে তুলতুলকে গিলে খেয়ে ফেলতে। কতো বড় ইডিয়েট হলে এভাবে ওয়াশরুমে আটকে রাখতে পারে?
একবার বের হতে পারলে তুলতুলকে সত্যি সত্যি এই বিল্ডিংয়ের ছাঁদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে।

এবার পবলেম হচ্ছে তুলতুল হাঁটতে পারছে না। ইউটিউব এ শাড়ি পড়ার ভিডিও থাকলেও শাড়ি পড়ে কিভাবে হাঁটতে হয় এটার কোনো উওর নেয়। গুগলেও সার্চ দিয়েছিলো তুলতুল কিন্তু ফলাফল শূন্য.।

কি আর করার শাড়ি উঁচু করে ব্যাঙের মতো লাফাতে হবে। এটাই একমাত্র উপায়।

তুলতুল দুই হাতে শাড়ি উঁচু করে ওয়াশরুমের দরজা ওবদি এসে দরজা খুলে দেয়।
হুরমুর করে বের হয়,সায়ন। সায়ানকে দেখে তুলতুল দৌড়ে পালাতে গিয়ে ধাপ করে পড়ে যায়৷ কোমরে বেশ ব্যাথা পায়। সায়ান বুকে দুই হাত গুঁজে ভ্রু কুচকে তুলতুলের দিকে তাকিয়ে থাকে।
তুলতুল শুকনো ঢোক গিলে। বুক ফুলিয়ে জোরে শ্বাস নেয়। ভয় পাওয়া যাবে না।

“খুব সাহস বেড়েছে তোর তাই না? আমাকে ওয়াশরুমে আটকে রেখেছিলি? সায়ান মাহমুদকে?
আঙুল তুলে নিজেকে দেখিয়ে বলে সায়ান

” আআআমি সসরি।
ভুল হয়ে গেছে।
তুলতুল থেমে থেমে বলে।

“আজকে তোকে আমি খুন করবোই।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান।

তুলতুল বিরক্ত হয়৷
” হ্যাৃ হ্যাঁ জানি তো খুন করবেন। এটা ছাড়া আর পারেন বা কি? যতসব
বিরবির করে বলে তুলতুল জোরে বলার সাহস নেই।

“ওই কি বিরবির করছিস?
সায়ান ধমক দিয়ে বলে। তুলতুল কেঁপে ওঠে।
তুলতুল ভেবেছিলো সায়ান হয়ত ওকে টেনে তুলবে। কিন্তু নাহহহ। এর চেহারার যে হাল তাতে টেনে ওঠানো দুর পারলে ছাঁদ থেকেই ফেলে দিলো।

তুলতুল নিজেই উঠে দাঁড়ায়।

সায়ান এবার ভালো ভাবে খেয়াল করে তুলতুলকে। এরকম সাজ দেখো রাগটা তরতর করে বেরে যায়।

” জঙ্গলি বিড়াল কেনো সেজেছিস? এটা তোর পারসোনাল রুম না৷ এখানে তুই একটা ছেলের সাথে রুম শেয়ার করছিস।

তুলতুল মুখ বাঁ কায় কিছু বলে না।

“কথা বলছিস না কোনো?
তুলতুল চুপ করে থাকাতে বিরক্ত লাগছে সায়ানের।

” কথা বললেই তো ধমক দিবেন।কিন্তু আমি এখন ধমক খেতে চাইছি না।
নরম সুরে বলে তুলতুল।

“ড্রামা করতে ভালোই শিখেছিস?

” তাতে আপনার কি?

সায়ান তেরে আছে তুলতুলের দিকে।

“আই হেইট ড্রামা।
তুলতুল সায়ানের সাথে পাল্লা দিয়ে পিছিয়ে যায়। ভয়ে কলিজাটা শুকিয়ে গেছে।
পিছতে পিছতে তুলতুল খাটের ওপর বসে পড়ে।সায়ান ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় তুলতুলকে। চোখ বড়বড় করে তাকায় তুলতুল।

সায়ান আশেপাশে খুঁজে একটা বালিশ নেয়। তারপর বালিশটা তুলতুলের ওপর রেখে তাতে ভর দিয়ে তুলতুলের দিকে ঝুঁকে।

” এমন করেন কেন ভাইয়া?
কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে তুলতুল।

“সাট আপ
আবার ধমক দিয়ে বলে সায়ান।
তুলতুল ছিটকে ওঠে। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।
সায়ান তোয়ালে দিয়ে তুলতুলের লিপস্টিক মুছে দেয়। সাথে সাথে তুলতুল বড়বড় চোখ করে তাকায়।
তারপর তুলতুলের মাথায় চাটি মারে সায়ান সাথে সাথে ব্যাথা পেয়ে আহহহ শব্দ করে চোখ বন্ধ করে ফেলে তুলতুল।

সায়ান তোয়ালের এক আংশে থুথু শব্দ করে তুলতুলের চোখ মুছিয়ে দেয়।

” ইয়াকুব” নাক মুখ সিঁটকে ফেলে তুলতুল। সায়ান বাঁকা হাসে।

কাজ শেষ করে সায়ান উঠে বসে।

“এটা কি করলেন?
তুলতুল ও লাফ দিয়ে উঠে বসে। রাগী গলা বলে সায়ানকে।

” এখনো কিছুই করি নি। জাস্ট ওয়েট এন্ড সী। বলে সায়ান।

চোখ দুটো বড়বড় করে ফেলে তুলতুল। এতো দামি লিপস্টিক মুছে দিলো থুথু দিয়ে কাজল মুছে দিলো আর বলছে এখনো তো কিছুই করি নি। আর কি করার বাকি আছে?
তুলতুলের ভাবনার মাঝেই সায়ান কুঁচি ধরে টান দেয়৷ সাথে সাথে সব গুলো কুঁচি এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে যায়।
অবাক হয়ে যায় তুলতুল। দুই ঠোঁটের মাঝে কিঞ্চিত ফাঁকা হয়ে যায়। চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে তাকায় সায়ানের দিকে।

“চেঞ্জ করে আয়।
সায়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে টেবিলের ওপর থেকে পানির বোতল নিয়ে তার ছিপি খুলতে খুলতে বলে।
তুলতুল রাগে ফুঁসছে।

” জঘন্য একটা লোক আপনি। আমি চাইছিলাম আপনার সাথে মানিয়ে নিতে। কিন্তু ইম্পসিবল। আপনার মতো একজন বেরসিক খুতখুতে লোকের সাথে থাকা অসম্ভব।
দুই হাজার টাকা দিয়ে লিপস্টিকটা কিনে ছিলাম। পঞ্চাশ টাকার লিপস্টিক আজকেই ঠোঁটে দিলা আর আপনি নষ্ট করে দিলেন?

হনুমান এএকটা। জীবনেও বউ পাবেন না অভিশাপ দিলাম।

তুলতুল রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।
সায়ান এক মনে পানি খেয়ে যাচ্ছে। তুলতুলের কথা কানেই তুললো না।

চলবে

#আমার তুমি
#পর্বঃ২৬
#তানিশা সুলতানা

গাল ফুলিয়ে বসে আছে তুলতুল। একদম কথা বলবে না সায়ানের সাথে। বজ্জাত লোক একটা। পঞ্চাশ টাকার লিপস্টিক নষ্ট করে দিলো? এতো কষ্ট করে শাড়ি পড়লো সেটাও নষ্ট করে দিলো? এই লোকটার সাথে কোনো দিনও প্রেম হবে না। প্রেম তো দুরের কথা “প” ও হবে না।
এতো কতশত পোজে ছবি তোলা বাকি ছিলো। ভাগ্যি কয়েকটা পিক তুলেছিলো নাহলে সেগুলোও হতো না।

সায়ান প্রতিদিনকার তুলনায় আজকে একটু বেশিই মাঞ্জা দিয়েছে। সাদা শার্ট কালো জিন্স চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়েছে। চোখে কালো সানগ্লাস। হাতে কালো ফিতার ঘড়ি। কড়া করে পারফিউম দেয়। তুলতুল আড়চোখে দেখছে শুধু।

“বের হবো আমি?

সায়ান তুলতুলের কাছে গিয়ে বলে।
তুলতুল মুখ বাঁকায়।

” ফিরতে লেট হবে। খাবার অর্ডার করে খেয়েনিস।

বলে সায়ান যেতে নেয়। তুলতুল এক লাফে উঠে দাঁড়ায়। সায়ানের আগেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়। একটু হাসে সায়ান।

পাখি আজকে কালো শাড়ি পড়েছে। হাতা কাটা ব্লাউজ। পাতলা ছিলছিলে শাড়ি। শরীরে ফিফটি পার্সেন্ট বের হয়ে আছে। মুখে ভারি মেকাপ।

পাখির বাবাও আছে পাখির সাথে। এখানকার একটা ব্যাংকে যাবে। সেখানে ট্রেনিং নেবে ওনাদের। পুরো টিমে পাখি আর তুলতুলই মেয়ে। বাকিরা বিয়ে করে নি আর তাদের ফ্যামেলিও আসে নি।

পাখির বাবা সায়ানকে বলে দেয় ওকে যেতে হবে না। উনি একাই যাবে। সবাইকে নিজেদের মতো করে ঘুরতে বলে। কেনোনা কালকে থেকেই কাজে লেগে পড়তে হবে তেমন সময় পাবে না

তুলতুল এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তার দুই পাশ দিয়ে ঝাউ গাছ। তুলতুল সেগুলোর ছবি তুলতে ব্যস্ত। পাখির দিকে এখনো ওর চোখ পড়ে নি।

“আমাকে কেমন লাগছে?

পাখি এক গাল হেসে সায়ানের দিকে এগিয়ে এসে বলে।
সায়ান ফোন দেখছিলো। পাখির প্রশ্ন শুনে তাকায় পাখির দিকে।

তুলতুলও ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায়।

” কুত্তার মতো লাগছে।

জোরে বলে তুলতুল। সায়ান চোখ বড়বড় করে তুলতুলের দিকে তাকায়। পাখি কপালে তিনটে ভাজ ফেলে তাকায় তুলতুলের দিকে।

“হোয়াট
হোয়াই ডু ইউ মিন
পাখি অগ্নি দৃষ্টিতে তুলতুলের দিকে তেড়ে এসে বলে।

তুলতুল এমন ভাব ধরে যেনো ও কিছু বলেই নি।
পাখি সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই তুলতুল মাথা তুলে তাকায়।

” আমাকে কিছু বলছো?
ইনোসেন্ট লুক দিয়ে বলে তুলতুল।
সায়ান মুখ টিপে হাসছে। পাখি হা হয়ে যায়। স্পষ্ট শুনতে পেলো তুলতুল বললো কুত্তার মতো লাগছে।
এখনই অস্বীকার করছে।

“তুমি না মাএ আমাকে কমেন্ট করলা

” আমিহহহহহহহ
তোমাকে কমেন্ট করবো?
ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছো না কি?

মুখ বাঁকিয়ে বলে তুলতুল।
পাখি দাঁত কটমট করে।

“পাখি দারুণ লাগছে তোমায়। এসো পিক তুলে দেই।
সায়ান বলে।
পাখি তুলতুলের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে চলে যায়।

” আল্লাহ আর কতো কি যে দেখমু।
বিরবির করে বলে তুলতুল।

সায়ান পাখিকে পিক তুলে দিচ্ছে। ভীষণ রাগ হয় তুলতুলের। থাকবোই না এদের মধ্যে। রিলেশনশিপ এ আছে স্বীকার করলেই হয়।
এই জন্যই বুঝি তুলতুলের শাড়িটা খুলে দিলো? আবার পাখির সাথে ম্যাচিং করে জিন্স পড়া হয়েছে।
থাক তোরা। সুখে সংসার কর।

তুলতুল রাগে গিজগিজ করতে করতে সামনের দিকে হাঁটতে থাকে।
সায়ান সেটা খেয়াল করে।

“পাখি চলো ওদিক থেকে হেঁটে আসি।

পাখি মিষ্টি করে হেসে সায়ানের হাত ধরে। সায়ন ছাড়িয়ে নিতে চাইলে আরও শক্ত করে ধরে।

কিছুখন হাঁটার পরেই তুলতুল অনুভব করে ওর সাথে কেউ হাঁটছে। ঘাড় বাঁকিয়ে পাশে তাকায় তুলতুল। পাশে দুটো ছেলে। এই ছেলেদের পাখি চেনে। সায়ানের কলিগ। ওদের সাথেই এসেছে ওরা।
তুলতুল একটু হাসার চেষ্টা করে।

” কোথায় যাচ্ছো?
সুমন নামের ছেলেটা বলে।
তুলতুল রেগে চলে যাচ্ছে। এটা এদের বুঝতে দেওয়া যাবে না। নাহলে সায়ানকে বলে দেবে।

“একটু পরিবেশটা ফিল করছিলাম।
তুলতুল মিষ্টি হেসে বলে।

” নাম কি তোমার?
তুহিন নামের ছেলেটা বলে।

” তাহমিনা তুলতুল। আপনাদের?

“আমি তুহিন আর ও সুমন।

” আচ্ছা।

“সায়ান কে হয় তোমার?

” ফুপাতো ভাই।

“তুমি একাই এসেছো ওর সাথে?

” হ্যাঁ
আসলে আমি ঘুরতে ভীষণ ভালোবাসি। তাই ভাইয়াকে বললাম ঘুরতে নিয়ে আসতে। ভাইয়া আমাকে আপন বোনের মতো ভালোবাসে।
তুলতুল হেসে হেসে বলে

“তোরা এখানে?
সায়ান কর্কশ গলায় বলে। দাঁড়িয়ে যায় ওরা। আগুন ঝড়ছে সায়ানের চোখ দিয়ে। এই বুঝি ভর্স করে দেবে তুলতুলকে। ঢোক গিলে তুলতুল।

” তুই তো চলে এসেছিস?
তোর বোনের সাথে পরিচিত হচ্ছিলাম।
তুহিন সায়ানের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে।

“শেষ?
সায়ান তুলতুলের দিকেই দৃষ্টি রেখে বলে।

” হ্যাঁ মানে একটু পরিচিত হলাম আর কি? এখনো চেনা জানা ফিলিং শেয়ার করা বাকি।
এক গাল হেসে বলে তুহিন।
সায়ান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। রাগে চোয়াল শক্ত করে ফেলে।

“শোন না
তোর বোনকে ভীষণ ভালো লেগে গেছে আমার। একটু সেটিং করিয়ে দে না প্লিজ।
তুহিন সায়ানের কানে কানে বলে।
সায়ান তুলতুলের দিকেই তাকিয়ে আছে।
তুলতুল কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ায়।

” এই সায়ান চলো। তুমি না বললা ঘুরতে যাবো এদিকে।
পাখি সায়ানের হাত ধরে টান দিয়ে বলে।
সায়ান তবুও তুলতুলের থেকে দৃষ্টি ফেরায় না।

“ভাইয়া আমি রুমে গেলাম।
থেমে থেমে বলে তুলতুল।

” চলো আমি পৌঁছে দিয়ে আসি। আমিও রুমেই যাবো।
তুহিন বলে।
তুলতুল জীভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। এই ছেলের এখন আবার এটা কেনো বললো? ইচ্ছে করছে ছেলেটার মাথা ফাটাতে।
তুলতুল বিরক্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।
তুহিন দিকে তাকিয়ে একটু মৃদু হাসে।

“পাখি তোমাদের দুজনকে কিন্তু বেশ মানিয়ে। একেই বলে পারফেক্ট কাপাল।

সুমনের কথা শুনে পা দুটো থেকে যায় তুলতুলের। দুই কদম এগিয়েছিলো। সায়ানের দিকে এক পলক তাকায়। সায়ান এখনো তুলতুলের দিকেই তাকিয়ে আছে।
পাখি খুশিতে গদগদ হয়ে যায়। থ্যাংক ইউ বলে।

নিজে অন্য মেয়ের সাথে ঢলাঢলি করবে তাতে কোনো দোষ নেই। আর আমার বেলায় ফাল্লুকের মতো তাকিয়ে থাকবে। ডিসগ্রাসটিং
তুলতুল ভেংচি কাটে সায়ানকে।
তারপর বড়বড় পা ফেলে চলে যায়।

” সুমন তুমি পাখিকে নিয়ে ঘুরে এসো। আমি আসছি।

বলেই সায়ান হনহনিয়ে চলে যায়।

পাখি মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে থাকে।

তুহিন এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে তুলতুলকে। তুলতুল হু হা করে উওর দিচ্ছে। এই মুহুর্তে এই লোক টার সাথে কথা বলতে বিরক্ত লাগছে। এতোখনে অনেক দুর চলে যেতে পারতো। এই ফালতু লোকটার জন্য আটকে গেলো। এখন আবার সেই পাখি আর সায়ানের নিকনিক দেখতে হবে।

হঠাৎ ঝড়ের গতিতে সায়ান এসে তুলতুলের হাত ধরে তুফানের গতিতে হাঁটতে থাকে।
চমকে ওঠে তুলতুল। তুহিনও চমকে ওঠে।
সায়ানের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে পারছে না। হোঁচট খেয়ে খেতে সামলে নেয় নিজেকে।
সায়ানের রাগে লাল হওয়া মুখ টার দিকে এক পলক তাকায় তুলতুল। ভয়ে কলিজা কেঁপে ওঠে।
তুহিন ওখানেই থেকে যায়। সায়ানের রাগ সম্পর্কে ধারণা আছে। কিন্তু রেগে গেলো কেনো বুঝলো না?

“কককোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
তুলতুল জিজ্ঞেস করে।

” আমি তোর কি লাগে সেটা দেখাতে।

তুলতুল কাঁদো কাঁদো ফেস করে তাকায় সায়ানের দিকে।

“এটা কিন্তু ঠিক না।

” সেটাই বোঝাবো তোকে। কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক।

সায়ান তুলতুলকে রুমে এনে রীতিমতো ছুঁড়ে ফেলে। বেডে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায় তুলতুল। সায়ান শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে এগোয় তুলতুলের দিকে। চোখ দিয়ে আগুন ঝড়ছে সায়ানের। এই টুকু সময়ের মধ্যেই ঘেমে গেছে। ঘামে শার্ট ভিজে গেছে। কপাল বেয়ে টপটপ করে ঘাম পড়ছে।

“তোর ভাই হই আমি? খুব ভালোবাসি তোকে তাই ঘুরতে নিয়ে এসেছি? আপন বোনের মতো ভালোবাসি?
আজকে ভালোবাসা দেখাবো তোকে।
বলেই তুলতুলের দিকে তেড়ে আসে।

” আল্লাহ এই যাএায় বাঁচিয়ে দাও।
আর জীবনেও ভাই বলবো না। এবার থেকে সবাইকে বলবো আপনি মামা কাকা আংকেল লাগেন আমার।

চোখ মুখ খিঁচে বলে তুলতুল।

“জাস্ট সাট আপ
এতো কথা কেনো বলিস তুই? তুই কি চাস আমি তোর মুখটা থাপ্পড়ে ভেঙে পড়ি?

মেঘের মতো গর্জন দিয়ে বলে ওঠে সায়ান। তুলতুল ভয়ে সিঁটিয়ে যায়। দুই হাতে কান চেপে ধরে।

সায়ান তুলতুলের পাশে বসে এক টান দিয়ে তুলতুলকে কোলে বসিয়ে দেয়। তুলতুল সায়ানের শার্ট খামচে ধরে। ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।

“খুব সাহস বেড়েছে তোর? ডানা গজিয়ে গেছে? ডানা কেটে দিতে আমার জাস্ট দুই মিনিট লাগবে।
ফিসফিস করে বলে সায়ান।

সায়ানের ফিসফিস করে বলা কথায় তুলতুল কেঁপে ওঠে। বুকের ভেতর টিপটিপ করছে। সায়ানের ওষ্ঠদ্বয় তুলতুলের কানে লেগে যায়। তুলতুল আরও শক্ত করে সায়ানের শার্ট খামচে ধরে।
তুলতুল লম্বা শ্বাস নেয়। চোখ মেলে তাকায় সায়ানের চোখের দিকে। চোখ দুটোতে রাগ ছাড়া আর কিছুই নেই। কিন্তু এই রাগী রাগী গভীর চোখ দুটো তুলতুলের মনের কোনে গভীর দাগ কেটে যায়। বুকের ভেতর ঝড় তুলে নেয়।

” ভালোবাসেন আমায়?

তুলতুলের এর উওরটা জানে। তবুও প্রশ্নটা করতে ইচ্ছে হলো। একটা সম্পর্ক কতোদিন আর টানাপোড়ে চলবে? একটা বিহিত হওয়া দরজার। চোর পুলিশ খেলা আর কত দিন?

“মাই ফুট,
ভালোবাসা তো দুর সামান্য সম্মানটুকুও করি না তোকে।
সায়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
তুলতুল তাচ্ছিল্য হাসে।

” তাহলে নেক্সট টাইম আমাকে টাচ করার সাহসটা ভুলেও দেখাবেন না মিস্টার সায়ান মাহমুদ।
আমার যা ইচ্ছে আমি সেটাই করবো।

সায়ানকে ধাক্কা দিয়ে বলে তুলতুল। সায়ান এটার জন্য প্রস্তুত ছিলো না তাই একটু নরেবরে হয়ে যায়। তুলতুল দুরে সরে আসে সায়ানের থেকে।
তরতর করে রাগটা বেরে যায় সায়ানের।

“আমাকে রাগাস না।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান।

“এতোখন কি রেগে ছিলেন না?
ভ্রু কুচকে বলে তুলতুল।
” আপনি আমাকে রাগীয়ে দিয়েন না৷ তাহলে আপনাকে আমি ওয়াশরুমে সারাজীবনের মতো বন্ধ করে দেবো। বলে দিলাম।

আর হ্যাঁ এখন আমি যাচ্ছি তুহিন বেবির কাছে। ওনার ফিলিং শুনতে।
মিষ্টি করে হেসে বলে তুলতুল।

তুলতুল রুম থেকে বেরতে নেয়।

“আর এক পা এগোলে তোর পা আমি ভেঙে দেবো।

“আমি কারো হলে তোমার কেনো জ্বলে রে বন্ধু তোমার কেনো জ্বলে?
জ্বলে না কি চলে?
পাখি ম্যাডামের সাথে কি তলে তলে?
ভেংচি কেটে সুর টেনে গায় তুলতুল।

আরও এক পা এগিয়ে যায়। সায়ান ঝড়ের গতিতে তুলতুলের দিকে তেরে এসে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।

চলবে