#আমার তুমি
#পর্বঃ৩১
#তানিশা সুলতানা
ডাক্তার বলে গেছিলো দুই ঘন্টা পরেই ঙ্গান ফিরবে। কিন্তু চার ঘন্টা পার হয়ে যাওয়ার পরও ঙ্গান ফিরে না। সায়ানের ভীষণ টেনশন হচ্ছে।
তুলতুলের হাত পা মালিশ করে দিচ্ছে। ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। মনে হচ্ছে দমকটা বেরিয়ে যাবে।
“এই তুলতুল কথা বল না প্লিজ
সায়ান তুলতুলের হাত ধরে বিচলিত কন্ঠে বলে।
তুলতুল চোখ পিটপিট করে। সায়ানের মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
সোজা হয়ে বসে সায়ান। তুলতুলের হাত ছেড়ে দেয়।
তুলতুল চোখ পিটপিট করে তাকায়। মাথার ওপরে থাকা সাদা দেয়ালের দিকে নজর যায় তুলতুলের। ঘাড় ঘুরাতে গিয়ে পারে না তুলতুল। ব্যাথায় টনটন করছে মাথা।
চোখ বন্ধ করে মাথায় হাত দেয় তুলতুল। মাথায় ধরে ডান বায়ে তাকায়।
ডান পাশে সায়ানকে শুয়ে থাকতে দেখে বুকটা কেঁপে ওঠে তুলতুলের। মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে আছে। চোখ দুটো বন্ধ করে আছে। দুই হাত বুকে গুঁজে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। সিল্কি চুলের সামনের কিছু অংশ কপালে এসে পড়েছে। নাক ফুলিয়ে শ্বাস টানছে।
কতোটা মায়া জমে আছে এই মুখটাতে। শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়। আচ্ছা এই মুখটা না দেখে তুলতুল সারাজীবন থাকবে কি করে?
তুলতুল কাঁপা কাঁপা হাতে সায়ানের গালে হাত দেয়। চোখ দুটো টলমল করছে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পারছে না।
কান্না চেপে রাখা খুব কষ্ট।
হঠাৎ করে সায়ান নরে চরে ওঠে। তুলতুল তারাহুরো করে নিজের হাত গুটিয়ে নিতে গিয়ে মাথায় ব্যাথা পায়। তবুও কোনো রকমে শব্দ করে না। দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাথা সয্য করে।
সায়ান তুলতুলের দিকে ঘুরে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে তুলতুলকে। পেটের ওপর এক হাত দিয়ে অন্য হাত বাম হাতের আগুলের ভাজে রাখে। মুখটা তুলতুলের ঘাড়ে রাখে।
শিওরে ওঠে তুলতুল। হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। শ্বাস নিতে ভুলে গেছে। সায়ানের ভাড়ি নিশ্বাস তুলতুলের ঘাড়ে পড়তেই চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয় তুলতুল।
“ছাছাছাড়ুন
তুলতুল কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে। এতে সায়ানের কোনো হেলদোল নেই। সে নিশ্চিন্তে ঘুমচ্ছে।
তুলতুলকে হাসফাস করতে দেখে মুচকি হাসে সায়ান। মুখটা আরও একটু এগিয়ে এনে তুলতুলে ঘাড়ে ঠোঁট ছোঁয়ায়।
তুলতুল সায়ানের হাতটা আঁকড়ে ধরে।
এভাবে হাসফাস করতে করতে একটা সময় ঘুমিয়ে পড়ে।
নতুন ভোর নতুন কিছুর সূচনা ঘটায়।
পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তুলতুলের। কারো বুকের উষ্ণতায় তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ঘুমিয়েছিলো।
চোখ মেলে তুলতুল। সায়ানের ঘুমন্ত মুখের দিকে মাথা উঁচু করে এক পলক তাকায়।
” আজকে থেকে আমি সেটাই করবো যেটা আপনি চান। আমি বাঁধা হবো না। মুক্তি দিয়ে দেবো আপনাকে।
তাচ্ছিল্য হাসে তুলতুল। সায়ানের হাত ছাড়িয়ে উঠে বসে আড়মোড়া ভাঙে।
এখনো গায়ে সায়ানের সেই শার্ট টা।
বিছানা থেকে নামতেই নিজের লাগেজটা দেখতে পায়।
লাগেজ খুলে নীল শাড়ি বের করে।আজকে শাড়ি পড়বে। খুব ইচ্ছে ছিলো বিয়ের পর প্রতিদিন শাড়ি পড়ার। কিন্তু সময় আর পরিস্থিতির জন্য পড়া হয় নি। কিন্তু এখন তুলতুল এসব ভাবতে চায় না। সময় খারাপ যাবেই। এটাই সময়ের নিয়ম। আমাদেরকেই সময়টাকে ভালো করতে হবে, নিজেদের মনের শক্তি দিয়ে।
বাবাকে কল করে তুলতুল৷ ডিভোর্স পেপার বানাতে বলে। তৌফিক রহমান পাল্টা কোনো প্রশ্ন করে না। কারণ তিনি জানে তার মেয়ে সায়ানের সাথে ভালো নেই।
ইউটিউব দেখে ভালোই শাড়ি পড়া শিখে নিয়েছে তুলতুল। এখন আর শাড়ি পড়তে অসুবিধা হওয়ার কথা না।
মাথার ব্যান্ডেজ খুলে ফেলে দেয়। এই টুকু ঘায়ের জন্য এতো বড় ব্যান্ডেজের দরকার নেই।
ব্যান্ডেজ খোলার পরই একটু খানি রক্ত বের হয়। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে ফেলে তুলতুল।
তারপর শাড়ি পড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়।
একটু খানি সেজে নেয়।
সায়ান এখনো ঘুমচ্ছে।
আড়চোখে সায়ানের দিকে এক পলক তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় তুলতুল।
তুলতুল চলে যাওয়ার দশ মিনিট পরে সায়ানের ঘুম হালকা হয়ে যায়। বুকটা শূন্য শূন্য লাগাতে ধপ করে চোখ খুলে। আশেপাশে তুলতুলকে দেখতে না পেয়ে ভয় পেয়ে যায় সায়ান।
তুলতুল কি চলে গেলো?
বুকটা কেঁপে ওঠে। তারাহুরো করে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।
তুলতুল হাঁটতে হাঁটতে অনেক দুরে চলে এসেছে। কোন দিক দিয়ে এসেছে সেটাই ভুলে গেছে তুলতুল। তবুও সেদিকে খেয়াল নেই। এক মনে হেঁটেই চলেছে।
“তুলতুল
খুব পরিচিত একজনের গলার শব্দ শুনে থেমে যায় তুলতুল। মুচকি হাসে। ইফাদ গাড়ি থেকে নেমে তুলতুলের সামনে এসে দাঁড়ায়।
” তুমি এখানে?
অবাক হয়ে বলে ইফাদ।
“হাসবেন্ডের সাথে হানিমুনে এসেছি।আপনি এখানে?
তুলতুল মুচকি হেসে বলে।
” তুমি বিয়ে করেছো?
অবাক হয়ে বলে ইফাদ।
“কেনো করতে পারি না?
বুকে হাত গুঁজে পাল্টা প্রশ্ন করে তুলতুল।
” সেরকম টা না
আসলে বেপারটা হলো
ইফাদ আমতাআমতা করে বলতে যায়।
“ভেবেছিলেন কেউ বিয়ে করবে না। বাবার ঘাড়ের বোঝা হয়ে থাকবো। তারপর কয়েকদিন পরে আপনি আমার সাথে যোগাযোগ করবেন। আমি আপনাকে বিয়ে করার জন্য আপনার পায়ে ধরবো। তাই তো মিস্টার?
ইফাদ ঘাবড়ে যায়। মাথা নিচু করে ফেলে।
” আমি তাহমিনা তুলতুল। এটিটিউট আগেও ছিলো আর বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরেও ছিলো।
“আই এম সরি
মাথা নিচু করে বলে ইফাদ।
” থ্যাংক্স
আমার জীবন থেকে সরে যাওয়ার জন্য।
আসছি এখন
তুলতুল এক গাল হেসে বলে।
ইফাদ তুলতুলের হাসি দেখছে। কখনো এই মেয়ের মুখের হাসি দেখার সৌভাগ্য হয় নি ইফাদের।
চার বছরে এই প্রথম দেখলো।
তুলতুল দু পা এগোতেই হাঁপাতে হাঁপাতে তুহিন এসে দাঁড়ায় তুলতুলের সামনে।
ইফাদ ধরে নেয় এটাই তুলতুলের বর।
তুহিনকে দেখে তুলতুল মুচকি হাসে।
“তোমাকে দেখলাম সকাল সকাল বের হতে তাই পিছু নিলাম। আবার হারিয়ে না যাও।
তুহিন মাথা চুলকে বলে।
” হারিয়ে যাওয়ার ভয় নেই।
তুলতুল হাঁটতে হাঁটতে বলে।
“একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
তুলতুল বলে।
“হুমম বলো না?
” পাখি আপুর সাথে ভাইয়ার কি সম্পর্ক?
তুহিন তুলতুলের দিকে এক পলক তাকায়।
“যত দুর শুনেছি ওনারা রিলেশনশিপ এ আছে। চাকরিটা চলে যাচ্ছিলো ওনার পাখির সাহায্যে পেয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি ছিলো সায়ান অনেক দিন। পাখি নিজের শরীর থেকে দুই ব্যাগ রক্ত দিয়ে সুস্থ করেছে সায়ানকে।
জানি না কি হয়েছিলো।
এখনো তিন মাস পর পর পাখি সায়ানকে রক্ত দেয়।
তুমি জানো না?
অবশ্য নাও জানতে পারো। সায়ান তো কখনোই মুখ ফুটে কিছু বলে না।
তুলতুলের গাল বেয়ে টুপটাপ কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।
তুলতুল সায়ানকে ভেঙে দিয়েছিলো আর পাখি সায়ানের গড়েছে।
তুলতুলের কোনো অধিকার নেই সায়ানের সাথে থাকার।
” চলো এবার ফিরে যাই?
তুলতুল মুচকি হেসে তুহিনের কথায় সায় দেয়।
হোটেলের কাছাকাছি আসতেই দেখতে পায় সায়ান পাখির হাত দুটো শক্ত করে ধরে কিছু বলছে। পাখি সায়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
তুলতুল চোখ ফিরিয়ে নেয়।
বড়বড় পা ফেলে এগোতে থাকে। উদ্দেশ্য সায়ানের এখান থেকে তারাতাড়ি চলে যাওয়া।
“কোথায় গেছিলি?
সায়ানের চিৎকার করে বলা কথাটা শুনে দাঁড়িয়ে যায় তুলতুল। পেছন ফিরে সায়ানের দিকে তাকায় না। তাকানোর সাহস নেই ওর। চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়।
সায়ান ঝড়ের বেগে এসে তুলতুলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না তুলতুল।
তুলতুলের মাথাটা সায়ানের বুকে। তুলতুল স্পষ্ট ফিল করতে পারছে সায়ানের বুকের ভেতর ধকধক করছে৷ কাঁপছে সায়ান।
কিন্তু কেনো? তুলতুলকে হারানোর ভয়ে?
“কোথায় গেছিলি তুই? কতোটা ভয় পেয়েছিলাম জানিস? কেনো এমন করিস? আমাকে কি তোর মানুষ মনে হয় না?
তুলতুল ঘাড়ে ভেজা অনুভব করে৷ তাহলে কি সায়ান কাঁদছে? কিন্তু কেনো?
চলবে
#আমার তুমি
#পর্বঃ৩২
#তানিশা সুলতানা
“কেনো গেছিলি বল আমায়? কতোটা টেনশনে ছিলাম আমি। জানটা বেরিয়ে যাচ্ছিলো আমার। তোর কিছু হয়ে গেলে আমি কি করতাম? মাকে কি বলতাম?
সায়ান তুলতুলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বিচলিত কন্ঠে বলে।
তুলতুল তাচ্ছিল্য হাসে।
মাকে কি বলবেন এটার জন্যই আমার খোঁজ চলছিলো? কতোটা গুরুত্ব আমার আপনার কাছে।
” চলে এসেছি তো।
তুলতুল বলে। সায়ানকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরায়।
তুহিন আর পাখি তাকিয়ে আছে। পাখির চোখ টলমল করছে।
তুলতুল পাখির দিকে এক পলক তাকায়।
সায়ান চোয়াল শক্ত করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তুলতুলের দিকে তাকিয়ে আছে।
“টেনশন করবেন না। আপনাকে ডিভোর্স না দিয়ে আমি কোথাও যাবো না।
ঝুলিয়ে রাখা দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা এসব আমার ক্যারেকটার নয়।
আমি হয়ত শক্ত করে ধরি নয়ত মুক্ত করে দেই।
তুলতুল মুচকি হেসে বলে।
সায়ান সরু চোখে তাকায় তুলতুলের দিকে। কি হলো হঠাৎ করে এই মেয়েটার? এমন কেনো করছে?
তুলতুল পাখির কাছে যায়।
” সরি আপু
ভুল করে থাকলে মাফ করে দেবেন। আর খুব তাড়াতাড়ি ডিভোর্স পেপারে আমি সাইন করে দেবো।
কান্না করবে না প্লিজ।
পাখির চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে তুলতুল। পাখি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
“তুহিন ভাইয়া চলেন কফি খেয়ে আসি।
” হুমম চলো।
পাখি যাবে?
তুহিন পাখিকে জিজ্ঞেস করে।
“নাহহ আসলে আমি আর সায়ান একটু বেরোবো। অনেক আগেই যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তুলতুলকে পাওয়া যাচ্ছিলো না বলে সায়ান যায় নি এতখন।
পাখি সায়ানের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে।
” বেপার না আপু
তোমরা যাও।
এনজয় করো। তুহিন ভাইয়া চলো।
বলেই তুলতুল বড়বড় পা ফেলে চলে যায়। বুকে চিঁড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে। এটাই হওয়ার ছিলো। কোনো অধিকার নেই তুলতুলের।
পাখির জন্য সায়ান আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। পাখিকেই সায়ানের পাশে মানায়।
সায়ান এতখনে ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তুলতুলের বোকাবোকা কথা গুলো হজম করেছে। আজকে রক্ত নিতে হবে। পাখিই দেবে রক্ত। তাই কোনোরকমে সিনক্রিয়েট করতে চায় না সায়ান।
তুলতুলকে এক ধমক দিলে তুলতুল আরও পাগলামি করবে সায়ানের রাগ আরও বেরে যাবে শেষমেশ রক্ত নেওয়ার ইচ্ছেটাই মরে যাবে।
আজকেই রক্ত নেওয়ার শেষ ডেট। আজকের পর আর রক্ত নিতে হবে না সায়ানের ইনশাআল্লাহ।
তুলতুলের চলে যাওয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে সায়ান।
পাখি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সায়ানের পাশে বসে।
তুলতুল যথাসাধ্য চেষ্টা করছে হাসিখুশি থাকার। এটা সেটা নিয়ে তুহিনের সাথে বেশ মজা করছে। উপরে উপরে হাসিতে ফেটে পড়ছে কিন্তু ভেতরে রক্ত হ্মরণ হচ্ছে। কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে।
“তুমি সেদিন ভাইয়া বললা কেনো সায়ানকে? কেনো বলো নি উনি তোমার বর?
তুহিন কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে।
” বিবাহিত বললে আপনি তো ফ্লাট করতে না। মিস করতাম তো। তাই বলে নি। জাস্ট এটেনশন পাওয়ার জন্য।
এক গাল হেসে বলে তুলতুল।
যদিও তুহিন তুলতুলের কথা বিশ্বাস করে নি। তুলতুল আর যাই হোক এটেনশন পাওয়ার জন্য এসব করবে না।
“তারপর নেক্সট প্লান কি?
” অনেক কিছু
“যেমন
“একটা বছর নষ্ট হয়ে গেছে আমার। এবার বাংলাদের ফিরে ভার্সিটিতে এডমিশন নেবো। চারটা টিউশনি নেবো। হোস্টেল উঠবো। সায়ানের বাড়িতে আর থাকবো না।
ছোট থেকেই ব্যাংকার হওয়ার খুব ইচ্ছে আমার। তো চেষ্টা করবো স্বপ্ন পূরণ করার।
” ডিভোর্স?
“অলমোস্ট পেপার রেডি হচ্ছে। হাতে চলে আসলেই সাইন করে দেবো।
” তারপর?
“বললাম
” নতুন করে জীবন সাজাতে চাও না?
তুলতুল এবার কথা বলায় বেশ বিরক্ত হচ্ছে।
“আমার কফি শেষ। উঠি এবার?
ভীষণ ঘুম পাচ্ছে।
তুলতুল হাই তুলে উঠে দাঁড়ায়।
” বিল দিয়ে দিয়েন।
বলেই হনহনিয়ে চলে যায় তুলতুল।
তুহিন শব্দ করে হেসে ফেলে। মেয়েটা সত্যিই অদ্ভুত।
অচেনা জায়গা, অচেনা হাসপাতাল, অচেনা ডাক্তার। পেশেন্টের প্রচুর ভির। তাই রক্ত নিতে অনেকটা দেরি হয়ে যায়। পাঁচ ঘন্টা সময় লেগে যায়।
তুলতুল রুমে এসে ঘুমিয়েছে। মাথা ব্যাথায় টনটন করছে। কফি খাওয়ার পর যদিও একটু ভালো লাগছিলো কিন্তু চোখ খোলা থাকলেই সায়ানের চিন্তা মাথায় আসে। আর মাথায় চিনচিন ব্যাথা করে।
তাই ঘুমিয়েছিলো।
সাড়ে পাঁচঘন্টা করে তুলতুলের ঘুম ভাঙে। শুয়ে শুয়েই পুরো রুমে এক বার চোখ বুলায়। নাহহহ সায়ান এখনো আসে নি। আসবেই বা কি করে? ভালোবাসার মানুষটির সাথে ঘুরতে বের হয়েছে যে। তাকে ছেড়ে কি আসতে ইচ্ছে করে?
শাড়ি চেন্জ করতে গিয়েও করে না তুলতুল। ঘুমানোর ফলে কুচকে গেছে৷ টেনেটুনে ঠিক করে নেয়। মাথাটা একটু আঁচড়ে নেয়।
সকাল থেকো কফি ছাড়া আর কিছুই খাওয়া হয় নি৷ ভীষণ খিধে পেয়েছে। কিন্তু তুলতুলের কাছে টাকা নেই। এখানে কিচেনও নেই। তাই পেটে হাত দিয়ে তুলতুল বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।
চার দেয়ালে বন্দি থাকতে জাস্ট অসয্য লাগে।
“ইডিয়েট খাস নি কেনো?
হঠাৎ করে ধমক খাওয়াতে চমকে ওঠে তুলতুল। চট করে পেছনে ঘুরে। সায়ান খাবার ট্রলি হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
চোখ মুখে রাগ বিদ্যমান।
তুলতুল কোনো কথা না বলে ট্রলি থেকে খাবার নিয়ে বেলকনির দোলনায় বসে খাওয়া শুরু করে।
সায়ানের দিকে একবার ফিরেও চায় না।
সায়ান তুলতুলের দিকে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ এতে পরিবর্তন কেনো? সায়ান তো কিছু করে নি। বা বলেও নি?
তাহলে এমন কেনো করছে?
পবলেম কি ওর?
চেয়েও জিজ্ঞেস করতে পারছে না সায়ান। জিজ্ঞেস করলেই ত্যাড়াব্যাকা করে উপর দেবে এটা জানা আছে সায়ানের।
খাবারের ট্রলিটা এক পাশে রেখে সায়ান তুলতুলের পাশে এসে বসে।
” পবলেম কি?
তুলতুল উওর না দিয়ে খেতে থাকে।
“রাগিয়ে দিস না আমায়।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান।
তুলতুল খাওয়া বন্ধ করে। সায়ানের দিকে তাকায়।
” আপনি এখন রেগে নেই?
চোখ পিটপিট করে প্রশ্ন করে তুলতুল।
“জাস্ট সয্য হয় না তোকে।
তুলতুল একটু হাসে।
” জানি আমি। তাই চলে যাওয়ার প্লান করে ফেলেছি। খুব দ্রুতই চলে যাবো।
মুখে খাবার পুরে বলে তুলতুল।
সায়ান তুলতুলের থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয়। তুলতুল ভেংচি কাটে। একটুও অবাক হয় নি তুলতুল। ও মনে মনে জানতো এমনটা হলেও হতে পারে। সেটাই হলো।
সায়ান আচমকা তুলতুলকে দোলনার সাথে চেপে ধরে। রাগে থরথর করে কাঁপছে।
তুলতুল ফোঁস করে শ্বাস নেয়।
“কিস করবেন আমায়?
এটা তো জীবনেও করবেন না্ তাহলে কথায় কথায় আমাকে চিপে ধরে কি বোঝাতে চান?
আপনার অনেক শক্তি?
তুলতুল সায়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে।
” দেখুন মিস্টার আমার সাথে এরকম চিপে থেকে কোনো লা
আর কিছু বলতে পারে না তুলতুল। তার আগেই সায়ান নিজের ওষ্ঠদ্বয়ের ভাজে তুলতুলের ওষ্ঠদ্বয় মিলিয়ে দেয়। স্তব্ধ হয়ে যায় তুলতুল। আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে। খামচে ধরে সায়ানের শার্টের কর্লার।
চলবে