#আমার_নিঠুর_মনোহর
#লেখিনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_উনিশ
“আমার মায়ের সংসার ফেলে রেখে তুমি বাইরে গিয়ে ডিঙিপনা করে বেড়াবে? পড়ালেখার এত শখ হলে বিয়ে করেছো কেনো?”
তানহার এমন এলোমেলো বাক্য শুনে তারিনসহ তামজিদও অবাকের শেষ সীমানায়। এর মধ্যেই কেটে গেছে সপ্তাহ খানেক। তারিন কলেজে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু ক্লাস শুরু হবে আরো দুইদিন পর। তারিনের কলেজে ভর্তি হওয়ার কথা শুনেই৷ আজ সকালেই তানহা এই বাসায় এসেছে। এসেই সেই বিষয়ে ঘোর আপত্তি জানিয়ে উপরোক্ত কথাগুলো বলে উঠল। তারিন আগেই কিছু বললো না। চুপচাপ তানহার মেয়েকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ সংগোপনে একবার শান্ত চোখে তামজিদের দিকে তাকালো। তামজিদের দৃষ্টিতে বিস্ময় স্পষ্ট। তানহা পুনরায় তামজিদকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,
“ভাই, তুই কি দুইদিনেই বউ পাগল হয়ে গেলি নাকি? বউ যা বলছে তাই শুনছিস। তারিন না হয় অল্পবয়সী মেয়ে, ওর মনে এখন সেই বয়সী মেয়েদের মতো শখ, আহ্লাদ জাগবে কিন্তু তাই বল তুই তো আর অল্পবয়সী না। যা করছিস ভেবে চিন্তে করছি তো? তারিন যদি এখন সারাদিন কলেজ, পড়ালেখার পেছনে ছুটে তাহলে আমার বাবাকে কে দেখবে? এই সংসার কে দেখবে?”
তারিন এবার মুখ খোলার জন্য প্রস্তুত হলো। তার আগেই তামজিদ বলে উঠল,
“আপা, তোমার কি তারিনের পড়ালেখা করা নিয়ে আপত্তি আছে?”
তানহা ঝটপট উত্তর দিলো,
“হ্যাঁ, আছে।”
তামজিদ পাল্টা প্রশ্ন করলো,
“কেনো?”
তানহা চোখ গরম করে তামজিদের দিকে তাকালো। বললো,
“কেনো বুঝতে পারছিস না?”
তামজিদ বেশ শান্ত স্বরে উত্তর দিলো,
“না! বুঝতে পারছি না। তুমিও একটা মেয়ে, তারিনও একটা মেয়ে। তুমিও এক বাড়ির বউ, তারিনও সেম। তুমি নিজে বিয়ের পর পড়ালেখা, চাকরি সব করতে পেরেছো, অথচ দেখো আমার বউয়ের বেলায় তোমার ভিন্ন মতামত। কেনো, আপা?”
তানহা আগের ন্যায় গরম চোখে তাকালো তামজিদের দিকে। উচ্চবাক্যে বলে উঠল,
“তুই আমাকে প্রশ্ন করছিস? আমার সাথে নিজের বউয়ের তুলনা করছিস? হ্যাঁ, আমি বিয়ের পর পড়ালেখা, চাকরি দুটোই করেছি। ঘরে এবং বাইরে দুই জায়াগায় মানিয়ে নিতে পেরেছিলাম, কারণ আমার সংসারে আমার শাশুড়ী মা আছেন। কিন্তু এই সংসারে আমার মা নেই৷ তারিনের শাশুড়ী নেই। আমার বয়সের সাথেও তারিনের বয়সের গ্যাপটা অনেক বেশি। কি করে পারবে ও?”
তামজিদ কিছু বলে উঠার আগেই এবার তারিন মুখ খুলল। বেশ দৃঢ় কন্ঠে বলল,
“আমার বয়স কম, আমার শাশুড়ী নেই এইসব এক্সকিউজ কে আমি আমার স্বপ্নের পথে বাঁধা মনে করি না, আপু। আমি সংসার সামলে পড়ালেখা কন্টিনিউ করতে পারবো।”
তানহা উচ্চস্বরে বলল,
“মুখে যা বলা সহজ, কাজে করে দেখানো বেশ কঠিন।”
তারিন পাল্টা উত্তর দিলো,
“আমি মুখে বলছি না। সময় দিন কাজেও করে দেখাবো, ইন শা আল্লাহ।”
তানহা এবার বেশ কঠিন স্বরে বলল,
“বেয়াদবের মতো বড়দের মুখে মুখে কথা বলছো কেনো? বড়দের কি করে সম্মান করতে হয় জানো না?”
তারিনও বেশ শান্ত হয়ে, গুছিয়ে বলল,
“শুধু বড়দের না। আমি ছোট৷ বড় নির্বেশেষে সব মানুষকেই সম্মান করতে জানি, আপু। সম্মানটা বয়স দেখে নয়, আচরণ দেখে করতে হয়। যে সম্মানের যোগ্য তাকেই সম্মান করা উচিত।”
তানহার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। উত্তেজিত স্বরে তামজিদের উদ্দেশ্যে বলল,
“তোর বউকে বল চুপ থাকতে। আমার সাথে কোন সাহসে ও এভাবে কথা বলছে?”
তামজিদ ও শান্ত স্বরেই বলল,
“আপা, ও তো ভুল কিছু বলে নি৷ তুমি একজন শিক্ষিত মানুষ হয়ে কিভাবে এমন অশিক্ষিতের মতো আপত্তি করছো? তুমি তো আমার বড় আপা। তার মানে তারিনের ও আপা। তুমি বললে না, তারিন তোমার থেকে বয়সে বেশ ছোট৷ তাহলে তো তোমার উচিত তারিনকে বোনের মতো আগলে রাখা, ওর পাশে থাকা, সাহস দেওয়া____তা না করে তুমি এইটুকু মেয়েকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় মত্ত হয়ে উঠেছো?”
তানহা এবার চুপ করে গেলো। একবার আড় চোখে তারিনের দিকে তাকালো। মেয়েটার চোখে, মুখে আলাদা একটা মায়া আছে৷ সেই প্রথম দিন থেকে মেয়েটার সাথে ওর ভালো সম্পর্ক গড়েছে। আজকেই প্রথম মতের অমিল হলো। তারিনের মুখের দিকে তাকিয়ে তানহার ভেতরে খারাপ লাগা শুরু হলো। ঠিকি তো, মেয়েটার বয়সেই বা কতটুকু? এই বয়সী একটা মেয়ে এত গুছিয়ে সংসার করছে এটাই তো অনেক বড় কিছু। মেয়েটার মনের জোর আর আত্মবিশ্বাস প্রবল। ওর পাশে থাকলে, ভরসা দিলে ও অনেক কিছু করতে পারবে। তামজিদ খানিক চুপ থেকে বলল,
“আপা, মা তো আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। এখন তুমি আছো। আমার আরেক মা যাকে মনে করি আমি। সেই তুমি আমাদের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছো___ এটা মানতে পারছিনা আমি। আপা, তুমি তো আমাকে সবসময় বুঝতে৷ আমার পাশে থাকতে। তাহলে এখন কেনো বুঝছো না? আপা, একটু বুঝো প্লিজ, তুমি আছো, আমি আছি, বাবা আছে। আমরা সবাই মিলে তারিনের পাশে থাকলে তারিন ঠিক মানিয়ে নিবে। ওর মধ্যে মানিয়ে নেওয়ার সেই ক্ষমতা, জেদ, আত্মবিশ্বাস আছে। ও ঠিক পারবে। আমি বলছি। আমাদের থেকে এভাবে দূরে সরে যেওনা, আপা। আমাদের তোমাকে বড্ড প্রয়োজন, আপা।”
তানহা চুপ করে আছে। তারিন বাচ্চাটাকে তামজিদের কোলে দিয়ে, তানিহার দিকে এগিয়ে গেলো। তানহার হাত জোড়া নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
“আপু, আপনি ছাড়া এখন আমাদের পাশে কেউ নেই। প্লিজ, আমার স্বপ্নে পূরণে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবেন না।”
তানহা তারিনের থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিলো। তামজিদের কোলের থেকে নিজের মেয়েকে কোলে তুলে নিলো। শান্ত হয়ে তামজিদের দিকে তাকিয়ে কঠিন স্বরে বলল,
“আমার বাবা, আর আমার মায়ের সংসারের কোনো অযত্ন হলে, আমি ভুলে যাবো তুই আমার ভাই, আর ও আমার ভাইয়ের বউ।”
বলেই দরজার দিকে পা বাড়াতেই তামজিদ পথ আটকে দাঁড়ালো। অনুরোধ বাক্যে বলে উঠল,
“আপা! আপা, এভাবে চলে যেও না৷ বাবা শুনলে কষ্ট পাবে। এক সংসারে থাকতে গেলে অনেক তর্ক, বির্তক হয় তাই বলে এভাবে রাগ করে চলে যেও না। প্লিজ, আপা।”
তানহা শুনলো না। কোনো শব্দ না করে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই তারিন এসে তানহার হাত ধরে ফেলল। শান্ত স্বরেই বলল,
“আজকে যদি মা বেঁচে থাকতো, তাহলে এভাবে রাগ করে বেরিয়ে যেতে পারতেন, আপু?”
তানহা নিঃশব্দে তাকালো তারিনের দিকে। তারিন পুনরায় বলে উঠল,
“মায়ের সংসার আগলে রাখবো। বাবাকে যত্নে রাখবো। নিজের পায়ে দাঁড়াবো। সে জন্য আমার তো আপনাদের সাপোর্ট প্রয়োজন। আপনারা যদি এভাবে মুখ ঘুরিয়ে নেন, তাহলে আমি দূর্বল হয়ে পড়বো। একটা মেয়ের শক্ত মনোবল, স্বপ্ন এভাবে ভেঙে দিবেন না। সব থেকে বড় কথা আপনি একজন শিক্ষিত স্বাবলম্বী নারী হয়ে অন্য একজন নারীকে এভাবে স্বপ্ন পূরণের পথে বাঁধা দিবেন না, প্লিজ আপু।”
তানহা চুপ করে অন্য দিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে আছে। তারিন অসহায় চোখে তামজিদের দিকে তাকালো। তামদিন আলতো স্বরে ‘আপা’ বলে ডেকে উঠতেই তানহা কাঠকাঠ গলায় বলে উঠল,
“যেদিন তোর বউ ঘরে, বাইরে দুটো সমান তালে সামলে দেখাতে পারবে, নিজেকে সঠিক প্রমাণ করতে পারবে, সেদিন আমি এ বাড়িতে আবার ফিরে আসবো।”
তানহার কথা শেষ হতেই তানহা কয়েকপা এগিয়ে যেতেই পেছন থেকে তামজিদ বলে উঠল,
“তোমাদের কাছে কেনো আমার বউ নিজেকে প্রমাণ করতে যাবে, আপা? বউটা তো আমার। যদি কখনো কোনো কিছুর জন্য নিজেকে প্রমাণ করতে হয়, তাহলে সেটা শুধু আর শুধুমাত্র আমার কাছে করবে। মা তো এই সংসারের দায়িত্ব আমার বউকে দিয়ে গেছে। তোমাকে না। তোমার তো আলাদা একটা সংসার আছে, তুমি সেদিকটা ঠিক করে সামলাও, আপা। মায়ের অবর্তমানে এই সংসারটা আমার বউয়ের। তো, আমার বউ নিজের সংসার কি করে সামলাবে এটা একান্তই ওর ব্যাপার। কেনো তুমি শুধু শুধু ঝামেলা করে সম্পর্কে তিক্ততা বাড়াচ্ছো, আপা?”
তারিন এক নজরে তামজিদের দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষটা ওর জন্য নিজের বড় বোনের সাথে এভাবে কাঠকাঠ গলায় কথা বলছে! একজন মেয়ে তখনেই শশুড়বাড়ি সুখী, যখন মেয়েটার স্বামী তার হয়ে পুরো পৃথিবীর সাথে লড়াই করে। তারিনের নিজেকে পৃথিবীর সবথেকে ভাগ্যবতী নারী মনে হচ্ছে। তামজিদের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে তানহা বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো। তানহা চলে যেতেই তামজিদ দরজাটা আটকে বড় করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। দুই হাতে মুখটা কিছুক্ষণ চেপে ধরে রাখলো। তারিনের দিকে চোখ পড়তেই তারিনের অসহায় মুখটা চোখে পড়লো। তামজিদ ঠোঁটে কোনে হাসি ফুটিয়ে তারিনের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। এক হাতে তারিনকে নিজের সাথে খানিকটা জড়িয়ে ধরে, ভরসা দিয়ে বলে উঠল,
“আমি আছি তো, বোকা। চিন্তা করছো কেনো? আপা, মায়ের শোকটা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তাই, মেনে নিতে পারছে না। দেখবে খুব শিঘ্রই আপা নিজেই তোমাকে বুঝবে। তোমার পাশে থাকবে।”
এত কথার মাঝে তারিনের মাথায় একটাই কথা ঘুরছে ‘আমি আছি তো’। ব্যাস! আর শান্তিতে থাকতে কি লাগে? এই কথাটাই তো যথেষ্ট।
#চলবে
#আমার_নিঠুর_মনোহর
#লেখিনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_বিশ[প্রথমাংশ]
ভরা ক্যাম্পাসে একটা ছেলের গায়ে সপাটে থাপ্পড় মে’রে বসলো তারিন। প্রথমদিন কলেজে এসেই এমন পরিস্থিতে পড়তে হবে, তারিন ভাবতেও পারেনি। ছেলেটা গালে হাত দিয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তারিনের দিকে। তারিনও রাগী দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে চেয়ে আছে। ওর পাশেই তামজিদ বেশ শান্ত হয়ে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়ানো। ক্যাম্পাসের উপস্থিত সবার দৃষ্টি ওদের উপর। কি হয়েছে কেউ বুঝছে না।
‘কিছুক্ষণ আগের ঘটনা’
–
–
প্রথম দিন কলেজে পা রাখতেই হুট করে কেউ একজন পেছন থেকে তারিনের বেনুনী টেনে ধরতেই, তারিন ব্যাথায় খানিকটা কুকিয়ে উঠলো। পেছন ফিরে দেখলো কয়েকটা ছেলে এক জোট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের দেখে তারিন মনে মনে বেশ ঘাবড়ে গেলেও মুখ স্পষ্ট রাগ ফুটে উঠল। ছেলে গুলোর মুখে রয়েছে হাসি। তারিন সোজাসাপটা কঠিন স্বরে প্রশ্ন করল,
“কারা আপনারা? আমার বেনুনী ধরে এভাবে টান কেনো দিলেন?”
ছেলে গুলোর মাঝে একজন বেশ হাস্যজ্বল স্বরে বলে উঠল,
“আমাদের চিনো না, মামনি? তাহলে চলো একটু চিনিয়ে দেই।”
“আপনাদের চেনার মতো সময় বা রুচি কোনোটাই আমার নেই। একবার অসভ্যতামি করেছেন আমি কিছু বললাম না। দ্বিতীয় বার ভুলেও একই কাজ করলে বুঝবেন আমি কে?”
বলেই তারিন সামনের দিকে হাঁটা ধরতেই, পেছন থেকে একজন বলে উঠল,
“আরে, আরে কোথায় যাচ্ছো? আমরা তো তোমাকে চিনতেই চাই, বেবি। তোমার ওই নরম হাতের ছোঁয়া পেতে চাই।”
তারিনের পা জোড়া থেমে গেলো। ছেলেগুলোর চাহনী আর কথা বলার ভঙ্গি দেখে রাগে শরীর রি রি করে উঠল। কিন্তু প্রথম দিন কোনো প্রকার ঝামেলায় জড়াতে চায় না বলে, তারিন চুপ রইলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করল।
“কি হচ্ছে এখানে?”
হুট করে চেনা কণ্ঠ স্বর পেতেই তারিন পেছন ঘুরে তাকালো। তামজিদকে দেখেই মুখে হাসি ফুটল। তারিন আর তামজিদ দুজনেই একসাথে এসেছিলো। তারিনকে নামিয়ে দিয়ে তামজিদ গাড়ি পার্কিং করতে গিয়েছিলো। তামজিদ গাড়ি পার্কিং করার সময় দূর থেকে সবটাই খেয়াল করেছে। তামজিদকে দেখেই ছেলেগুলো ভয় পেলো খানিকটা। আমতা আমতা করে একজন বলে উঠল,
“আসসালামু আলাইকুম, স্যার। ভালো আছেন।”
তামজিদও বেশ শান্ত স্বরে জবাব দিলো,
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ! তা তোমরা এখানে কি করছো?”
ছেলেগুলো কিছু বলার আগেই তারিন এগিয়ে এসে বলল,
“আমি বলছি, মাস্টার মশাই। এখানে কি হয়েছিলো।”
তারিনের মুখে ‘মাস্টার মশাই’ শব্দটা শুনে ছেলেগুলো একটু অবাক হলো বটে। সচারাচর সবাই ‘স্যার’ শব্দটা ব্যবহার করে। তারিন অন্যরকম ভাবে সম্মোধন করলো। তামজিদ তারিনের দিকে তাকিয়ে কঠিন স্বরে বলল,
“আমি আপনার কাছের থেকে শুনতে চাইনি। আপনি এখানে চুপচাপ দাঁড়ান।”
তারপর ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমরা চুপ করে আছো কেনো? বলো? এখানে সবাই মিলে দল বানিয়ে কি করছিলে? আর এই মেয়েটার সাথে কি সম্পর্ক তোমাদের?”
ছেলেগুলোর মধ্যে একজন আমতা আমতা করে বলল,
“কোনো সম্পর্ক নেই, স্যার। মেয়েটা নতুন আমাদের কলেজে, ক্লাস রুম খুঁজে পাচ্ছিলো তাই আমরা হেল্প করছিলাম। এই আর কি…?”
বলেই সবাই মাথা নাড়িয়ে মেঁকি হাসলো। তারিন এবার আর চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। গর্জে উঠে কিছু বলার আগেই তামজিদ হাতের ইশারায় থামিয়ে দিলো। ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বলল,
“বাহ! বেশ ভালো কাজ করেছো তো! তা ভালো কাজ করলে তো পুরষ্কার প্রাপ্য তাইনা বলো? তোমাদেরও তো একটা পুরষ্কার দেওয়া উচিত। কি পুরষ্কার দেই বলো তো?”
বলেই থুতনিতে হাত বুলিয়ে ভাবতে লাগলো। ছেলেগুলোর মধ্যে একজন হেসে হেসেই গর্বের সুরে বলে উঠল,
“আরেহ, স্যার.! কিছু লাগবে না। আমরা এখন আসি, স্যার।”
বলেই সবাই মিলে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। এর মধ্যেই তামজিদ পেছন ডেকে বলে উঠল,
“আরে, আরে! কোথায় যাচ্ছো? দাঁড়াও।”
বলেই তামজিদ তারিনের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। নিচু স্বরে বলে উঠল,
“এই তুমি প্রতিবাদী? কেউ তোমাকে অসম্মান করলো আর তুমি প্রতিবাদ না করেই চলে যাচ্ছো? ভয় পাচ্ছো?”
তারিন মাথা দুই দিকে নাড়ালো। অর্থাৎ ‘না’। তামজিদ পুনরায় ফিসফিস করে বলে উঠল,
“তাহলে ওদের পুরষ্কারটা তুমি নিজের হাতে দাও। আবার বলো না কি পুরষ্কার দিবে? আশা করি, তুমি সেটা জানো। রাইট?”
তারিনের ঠোঁটদ্বয়ে হাসি ফুটল। মাথা নাড়ালো। মানে ‘হ্যাঁ’। ওদের দুজনকে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে দেখে ছেলেগুলোর মধ্যে একজন অন্যজনকে বলে উঠল,
“এই মেয়েটার সাথে স্যার কি কথা বলছে? মেয়েটা কি স্যারের পরিচিত কেউ? গার্লফ্রেন্ড নাকি?”
অপরজন আবার বলে উঠল,
“আরে মামা। স্যার, বিবাহিত। স্যারের বউ আছে।”
তামজিদ ওদের কথার মাঝেই সুন্দর করে হেসে বলে উঠল,
“বয়েজ, পুরষ্কার নেওয়ার জন্য রেডি তো?”
তামজিদের কথাশুনেই ছেলেগুলোর মুখ কালো হয়ে গেলো। তামজিদ যে ভালো উদ্দেশ্যে কথাটা বলছে না তা বেশ বুঝতে পারছে। তাই একজন আমতা আমতা করে বলল,
“স্যার, আমাদের ক্লাসে দেরি হয়ে যাচ্ছে। এখন আসি। আসসালামু আলাইকুম। ”
বলেই পা বাড়াতেই তারিন এসে পথ আটকে সামনে দাঁড়ালো। মিষ্টি হেসে বলল,
“আরে চলে যাচ্ছেন যে? আমাকে চিনবেন না? আমার নামটাই তো এখনো জানলেন না। চিনবেন কি করে বলুন তো?”
তারপর ছেলেগুলোর উদ্দেশ্য বলে উঠল,
“শুনুন আপনারা সবাই। আমার নাম তুবাইতা তারিন। আমি এই কলেজের ইন্টার ফাস্ট ইয়ারের ছাত্রী। আর এইযে আমার…।”
বলেই তামজিদের দিকে তাকাতেই তামজিদ ইশারায় কিছু নিষেধ করতেই তারিন থেমে গেলো। প্রসঙ্গে পাল্টে বলল,
“আমার নরম হাতের ছোঁয়া পেতে চান, তাইনা?” ছেলেগুলো তামজিদের দিকে একবার তাকাল। তামজিদের মুখ দেখে ভয়ে ঢোক গিলতে শুরু করেছে ইতোমধ্যে। ভয়ে ভয়ে একজন অপরজনের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। তামজিদ এবার হাঁক ছেড়ে বলল,
“শোনো মেয়ে, শুধু শুধু কথা বাড়িয়ে সময় নষ্ট করছো। আজকে প্রথম ক্লাস কিন্তু আমার। লেট হলে একদম ঢুকতে দিবো না। ওদের পুরষ্কারটা দাও। আর তাড়াতাড়ি ক্লাসে আসো।”
তারিন এবার তামজিদের দিকে তাকালো। তামজিদ চোখের ইশারা করতেই তারিন সামনের ছেলেটাকে সজোরে একটা থা’প্পড় মে’রে বসলো। থা’প্পড় খেয়ে সামনে থাকা ছেলেটা চিৎকার করে বলে উঠল,
“এই মেয়ে!”
ছেলেটা চিৎকার করতেই তারিনও বেশ চিৎকার করে বলল,
“একদম গরুর মতো চিৎকার করবেন না। তাহলে আরেক গালেও আমার নরম হাতের ছোঁয়া পেয়ে যাবেন।”
ছেলেগুলো এমন চোখে তারিনের দিকে তাকিয়ে আছে যে মনে হচ্ছে এক্ষুনি ওকে গিলে খেয়ে ফেলবে। কিন্তু তামজিদ সামনে দেখে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। তারিন এবার আগের ন্যায় কঠিন স্বরে বলে উঠল,
“আর একদিন যদি দেখেছি কোনো মেয়েকে এমন নোংরা উদ্দেশ্য নিয়ে ডিস্টার্ব করেছেন, তাহলে এই যে দেখুন (পায়ের দিকে ইশারা করে) এই জুতো জোড়া আপনাদের গাল লাল করে দিবে। আজকে একজনের গালে আমার নরম হাতের ছোঁয়া লেগেছে। সেদিন সবার গালে নরম জুতোর ছোঁয়া পড়বে। আজকে এই অব্দি। আল্লাহ হাফেজ৷ ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।”
বলেই তারিন হনহন করে চলে গেলো। ছেলেগুলো ওর দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে রইলো। তামজিদ বেশ হেসে সে স্থান ত্যাগ করল।
–
–
–
তারিন একা একা ক্লাস রুমে ঢুকেই মাঝের সারিতে বসলো। বেশ অস্বস্তি হচ্ছে৷ অচেনা জায়গায়, এতগুলো অচেনা মুখের মধ্যে অস্বস্থি লাগাতেই স্বাভাবিক। তারিনের পাশেই একটা মেয়ে বসে আছে। চুপচাপ হয়ে। কিছুক্ষণ ধরেই তারিনকে কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছে না। তা খেয়াল করে তারিন হেসে প্রশ্ন করল,
“আসসালামু আলাইকুম। আমি তারিন। কেমন আছো?”
মেয়েটাও খুব সুন্দর করে হেসে সালামের জবাব নিয়ে বলল,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আমি নিহা৷ তোমার ক্লাসমেট। আসলে এখানে কাউকে চিনিনা তো তাই তোমার সাথে বন্ধুত্ব করার সুযোগ খুজছিলাম। কিন্তু কি মনে করবে ভেবে সাহস হচ্ছিলো না।”
এই নিয়ে ওদের দুজনের মধ্যে কথা শুরু হয়ে গেলো। প্রায় আধঘন্টা দুজনে মিলে বকবক করতেই চলে গেলো। ওদের দেখে কেউ বলবে না৷ ওরা সদ্য পরিচিত হয়েছে। ওদের কথা মাঝেই তামজিদ ক্লাসে ঢুকে। তামজিদ ক্লাসে ঢুকতেই তারিনের মুখে হাসি ফুটলো। তামজিদ সবাইকে বসতে বলে চারদিকে নজর বুলাতে লাগলো। তারিন বেশ বুঝতে পারছে তামজিদ ওকেই খুঁজছে। তারিনকে দেখতে পেয়েই তামজিদ হাঁফ ছাড়লো। সবার সাথে পরিচিত হওয়া শুরু করলো। সবার নাম, পরিচয় ও নিজের সম্পর্কে দুই লাইন বলতে বলেছে। একে একে সবার সিরিয়াল শেষ করে সিরিয়াল এসে থামলো তারিনের কাছে। তারিন দাঁড়িয়ে খুব সুন্দর করে হাসলো। ওর মাথায় চট করেই দুষ্টু বুদ্ধিরা হানা দিলো। বেশ হাসিখুশি ভাবে বলল,
“আমার নাম তুবাইতা তারিন। আমি বিবাহিত। আ…।”
তারিনের কথা সম্পূর্ণ শেষ না হতেই তামজিদ বেশ অবাকের সুরে বলে উঠল,
”বিবাহিত! সত্যি? এইটুকু একটা বাচ্চা মেয়ে নাকি বিবাহিত ভাবা যায়?”
তারিনের মুখটা চুপসে গেলো। মাথা থেকে সব দুষ্টু বুদ্ধিরা উধাও হয়ে গেলো। চোখে মুখে রাগে ফুটে উঠল। তবুও নিজেকে শান্ত রেখে অসহায় মুখে বলা শুরু করল,
“নিজের দুঃখের কথা কি আর বলবো, স্যার? ঘরের কথা কি বাইরে বলা যায় বলুন?”
তামজিদ তারিনের ফেস রিয়েকশন দেখে বেশ উৎসাহিত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
“সমস্যা নেই। তুমি বলো। আমরা একটু শুনি। দেখি কি এমন দুঃখ তোমার? কি বলো তোমরা সবাই? শুনবে?”
সবাই জোরে চিল্লিয়ে সমর্থন করলো। তারিন ও আগের ন্যায় দুঃখী দুঃখী মুখে বলতে লাগলো,
“স্যার, আমার বাবা মা আমাকে জোর করে একটা বুইড়া বেডার লগে আমারে বিয়ে দিয়ে দিছে। আমি কি করতাম বলেন?”
তারিনের কথা শেষ হতে না হতেই তামজিদ কাশতে শুরু করলো। কী সাংঘাতিক! সোজাসুজি তামজিদের মতো একটা হ্যান্ডসাম ছেলেকে ‘বুইড়া’ বলে দিলো!
#চলবে
#আমার_নিঠুর_মনোহর
#লেখিনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_বিশ[শেষাংশ]
[১৮+ এলার্ট]
“আমার স্বামী প্রতিদিন আমার গায়ে হাত তুলে। দেখেন, আমার গালে থা’প্পড়ের দাগ বসে আছে এখনো।”
তারিনের কথা শেষ হতেই সবাই ওর দিকে তাকালো বিস্মিত চোখে। তামজিদের বিস্ময়ের ঘোর যেনো কাটছেই না। নিজের মাথাটা দেয়ালে ঠুকে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। কে বলেছিলো এই মেয়ের সাথে কথা বাড়াতে? সবাই যখন তারিনের গালে দাগ খুঁজতে তখন তামজিদ নিজেকে শান্ত করে সন্দিহান গলায় বলে উঠল,
“কই, তোমার গালে তো কোনো দাগ নেই। বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলছো কেনো?”
তারিন থেমে গেলো। হাতটা নিজের অজান্তেই গালে চলে গেলো। এক হাত গালে দিয়ে আমতা আমতা করে বলল,
“আরে স্যার, দুইদিন আগের চিহ্ন তো চলে গেছে।”
তামজিদ এবার রাগী দৃষ্টিতে তারিনের দিকে তাকাতেই তারিন মেঁকি হাসলো। অতঃপর শান্ত বানীতে বলতে লাগলো,
“এতক্ষণ একটু আপনাদের সবাইকে এন্টারটেইনিং করার জন্য মজা করছিলাম। আমার স্বামী খুব ভালো। আমার শশুড় বাড়ির সবাই খুব ভালো। তাদের জন্য আমি নিজের স্বপ্ন পূরণ করার সুযোগ পাচ্ছি। আমার মতো খুব কম মেয়ে আছে যাদের ভাগ্যে এত ভালো একটা শশুড় বাড়ি জুটে। এদিক থেকে আমি খুব ভাগ্যবতী।”
তামজিদের মুখে এতক্ষণে হাসি ফুটলো। তারিন সে হাসি দেখে নিজেও হাঁফ ছাড়লো। কিন্তু পুনরায় মুখ অসহায় করে দুষ্টুমির ছলে বলে উঠল,
“তবে সত্যি স্যার, আমার স্বামী বুইড়া বেডাই। আমার থেকে গুনে গুনে কমপক্ষে ১৩বছরের বড়। এখন আপনিই বলেন, সে কি বুইড়া বেডা না?”
তামজিদের মুখটা পুনরায় চুপসে গেলো। তারিন ঠোঁট চেপে হাসি নিয়ন্ত্রণ করলো। তামজিদ এবার জোরালো শব্দে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“চুপচাপ বসো। শিট ডাউন। এই নেক্সট কে আছো? দাঁড়াও।”
তারিন বসে পড়লো ঠিকই। কিন্তু তামজিদের ফেস রিয়েকশন দেখে খুব বেশি হাসি পাচ্ছে। ক্লাস শেষ হতেই তামজিদ যাওয়ার সময় তারিনের দিকে তাকিয়ে ইশারায় বুঝিয়ে গেলো, ‘বাসায় চলো দেখাচ্ছি মজা’। তামজিদ চলে যেতেই তারিন ফিক করে হেসে দিলো। প্রথম দিন প্রতিটা ক্লাসেই পরিচয় পর্ব হয়েছে। ক্লাস শেষ করেই তামজিদ রাস্তায় এসে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ পর ওর সামনে তামজিদ গাড়ি নিয়ে এসে থামতেই তারিন দেরি না করে উঠে পড়ল। গাড়িতে বসতেই তামজিদের রাগী চেহারাটা দেখে তারিনের বেশ হাসি পেলো। তবুও নিজের হাসি নিয়ন্ত্রণ করে, কিছু না জানার ভান করে জিজ্ঞেস করলো,
“মাস্টার মশাই! ও মাস্টার মশাই! শুনছেন?”
তামজিদ চুপ করে রইলো। উত্তর দিলো না। কত্ত বড় সাহস তামজিদকে বুড়া বেডা বলে! আবার বলে কিনা তামজিদ বউ নির্যাতন করে। কত্ত বড় অপবাদ দিয়েছে! ভাবা যায়? তারিন এবার চিৎকার করে ডেকে উঠল,
“মাস্টার মশাই, শুনছেন?”
তামজিদ হঠাৎ জোরে আচমকা গাড়ি ব্রেক কষলো। আচমকা তাল সামলাতে না পেরে তারিন ঝুঁকে পড়েছে। মাথায় যে বড্ড জোরে আঘাত হানবে তা টের পেয়েই ভয়ে চোখ, মুখ বুঝে ‘মা গো’ বলে চিৎকার করে উঠলো। কিন্তু কিছুক্ষণ যেতেই যখন দেখলো ব্যাথা পেলো না৷ তখন চোখ খুলে দেখলো তামজিদের হাত তারিনের কপাল ছুঁয়ে আছে। তারিন নিজেকে সামলে উঠে, তড়িৎ গতিতে বলে উঠল,
“আরে মে’রে ফেলবেন নাকি?”
তামজিদ ও বেশ হাসি খুশি ভাবে উত্তর দিলো,
“অবশ্যই! মে’রেই তো ফেলবো।”
তারিন চোখ বড় বড় করে বললো,
“কিহ!”
তামজিদও সুর মিলে বলল,
“কিহ, না জ্বি।”
তারিন কোমরে হাত রেখে কপাল কুঁচকে বলে উঠল,
“আমাকে মে’রে ফেলে আরেকটা বিয়ে করার চিন্তা ভাবনা করছেন নাকি আবার ওই দিশা পেত্নীকে ফিরে আনার প্লেন করছেন? কোনটা?”
তামজিদের রাগটা তরতর করে বাড়লো। এই মেয়েটা এত বকবক করে কেনো? সেই প্রথমদিন থেকে কেমন ফড়ফড় করে কথা বলে। তামজিদ রাগী স্বরে বলল,
“চুপ করো। কিছুক্ষণ আগে না বললে, তোমার স্বামী তোমাকে নির্যাতন করে? তো সেটা সত্যি করতে হবে না?”
তারিনের মুখটা চুপসে গেলো। আমতা আমতা করে বলল,
“আমি তো মজা করছিলাম।”
তামজিদ এবার তারিনকে জব্দ করার সুযোগ পেলো। এক সেকেন্ডের ব্যবধানে তারিনের দিকে বেশ খানিকটা ঝুঁকে আসলো। তারিন আর তামজিদের নাকের মধ্যকার দূরত্ব দুই/তিন ইঞ্জি হবে হয়তো! তারিনের বুকের ভেতরটা ধুকপুক করে উঠলো। হৃদযন্ত্রটা শব্দ করে বাজতে শুরু করলো। গলা শুকিয়ে আসছে। এই প্রথম তামজিদ নিজের থেকে তারিনের এতটা কাছে এসেছে৷ তারিনের লজ্জা পাওয়া মুখটা দেখে তামজিদ ঠোঁট টিপে হাসলো। তারিনের লজ্জাটা দ্বিগুণ করে দেওয়ার জন্য বলে উঠল,
“আমি তোমার স্বামী, তাই না?”
তারিন কোনোরকমের উত্তর দিলো,
“হ্যাঁ।”
“আমি বুইড়া বেডা?”
তারিন ঝোঁকের বশে বলে ফেললো,
“হ্যাঁ।”
কথাটা বলেই জিভে কামড় দিয়ে তামজিদের চোখের দিকে তাকালো। তামজিদের রাগান্বিত চাহনী চোখে পড়তেই মেঁকি হাসলো। হাস্যজ্বল স্বরেই বললো,
“আরে না। কে বলেছে এ কথা? যে বলছে সে নিশ্চিত অন্ধ। নয়তো আপনার মতো একজন হ্যান্ডসাম মানুষকে কেউ বুইড়া বলে? ছিহ! কি লজ্জা! কি লজ্জা!”
তারিনের পাম শুনে তামজিদ হাসবে না কাঁদবে ভেবে পাচ্ছে। তবুও নিজেকে শান্ত রেখে তারিনের চোখে চোখ রাখলো। বললো,
“না, না। আমি আসলেই বুড়ো। আর বুড়ো মানুষের মধ্যে প্রেম বেশি থাকে জানো তো? আমারো এখনো অনেক প্রেম প্রেম পাচ্ছে। চলো না একটু প্রেম করি। বাড়িতে যাওয়ার জন্য তর সইছ না। এখানেই তোমাকে আদর করার বড্ড ইচ্ছে জাগছে। চিন্তা করো না কালো গ্লাস আছে, বাইরে থেকে কেউ কিছু দেখবে না।”
তামজিদের মুখে এমন কথাবার্তা শুনে তারিনের মাথা ঘুরতে শুরু করছে। তামজিদ এসব কথা বলছে? তারিন কি স্বপ্ন দেখছে? নাকি কল্পনা? নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। বিস্ময়ে চোখের পাতা ফেলতে ভুলে গেলো। তারিনের এমন মুখ দেখে তামজিদ কিছুতেই নিজের হাসি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তবুও খুব কষ্ট নিয়ন্ত্রণ করলো। তারিন লজ্জায় কোথায় মুখ লুকাবে খুঁজে পাচ্ছে না। ইচ্ছে করছে মাটি খুঁড়ে ভেতরে ঢুকে যেতে। তারিন দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। তামজিদ এবার আরো একটু ঝুঁকে আসতেই তারিন চোখ বন্ধ করে নিলো। হাত দুটো নিজের অজান্তেই তামজিদের শার্ট খামচে ধরলো। তারিন এই মুহূর্তে চোখ বন্ধ করে আছে। তামজিদ এক নজরে তারিনের মুখপানে তাকিয়ে আছে। এই প্রথম ও তারিনকে এতটা কাছের থেকে নিঁখুত ভাবে দেখছে। তারিনের ঠোঁট দুটো লজ্জায় তিরতির করে কাঁপছে। গোলাপি বর্ণের ঠোঁট জোড়ার নিচে কালো তিলটা বড্ড আকর্ষণীয়। তামজিদ এতক্ষণ মজার ছলে তারিনের কাছে আসলেও এবার আর ওর দূরে যাওয়ার সাধ্য নেই। তারিনের ঠোঁট জোড়া ছুঁয়ে দেখার অদম্য এক ইচ্ছে জেগেছে মনের কুঠুরিতে। কিছুতেই ইচ্ছাটাকে দমানো সম্ভব হচ্ছে না। তারিনের লজ্জামাখা মুখটা তামজিদকে বড্ড কাছে টানছে৷ তামজিদ আলতো করে তারিনের নাকে নাক ঘষলো। তারিন অজানা, অচেনা অনুভূতিতে সিক্ত হয়ে তামজিদের শার্ট আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো। তামজিদ এক হাত তারিনের ঘাড়ের পাশে রাখতেই তারিন নড়েচড়ে বসলো। তামজিদ নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। ইচ্ছাটা পূরণ করার বাসনায় তারিনের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবালো। গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিলো ঠোঁটের নিচে থাকা তিলটা কে। তারিন লজ্জায় তামজিদের ঘাড়ে মুখ লুকালো। শ্যাম্পু করা সিল্কিং চুলের ঘ্রান তামজিদের নাকে বিধলো। তামজিদও সেই চুলপানে নিজের মুখ ডুবালো। দুটো আত্মা আজ শান্ত। তাদের মস্তিষ্ক জুড়ে প্রেমের ছড়াছড়ি। তারিনের মনে হচ্ছে ওর হৃদপিন্ড টা এক্ষুনি বেরিয়ে আসবে। আজ কি তারিনের স্বপ্নের দিন ছিলো? কি থেকে কি হয়ে গেলো ভাবতেই পারছে না। তামজিদ সজ্ঞানে তারিনকে ছুঁয়েছে? ভাবতে পারছে না তারিন। তামজিদ চাইলেও তারিনের থেকে দূরে সরে যেতে পারছে না৷ কোনো এক অজানা বাঁধনে বাঁধা পড়েছে গেছে। বুকের ভেতরে নতুন কিছু অনুভূতির টের পাচ্ছে তামজিদ। তবে কি তামজিদ তারিনকে ভালোবাসতে শুরু করেছে? ভেবেই এক ঝটকায় দূরে সরে আসলো তামজিদ। তামজিদকে এভাবে দূরে সরে যেতে দেখে তারিন বেশ অবাক হলো। কি হলো? তবে কি তামজিদ ঝোঁকের বশে তারিনের কাছাকাছি এসে বলে এভাবে অনুশোচনায় দূরে সরে গেলো? নাকি অন্য কিছু?
#চলবে