আমার নিঠুর মনোহর ২ পর্ব-০৭

0
116

#আমার_নিঠুর_মনোহর
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_সাত

“আত্মহ’ত্যা সব কিছুর সমাধান?”
নিহার জ্ঞান ফিরতেই এমন হাজারটা প্রশ্নের সম্মুখীন হবে তা ও আগের থেকেই জানতো৷ তারিন নিহার মাথার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তামজিদ পাশে দাঁড়ানো। নেওয়াজ নিহার বিছানায় বসে নিহার হাতটা শক্ত করে ধরে প্রশ্নটা করলো। নিহা কিছুক্ষণ এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো নেওয়াজের দিকে। পরক্ষণেই অপরাধবোধে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। নেওয়াজ পুনরায় শক্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,
“তোমার কি মনে হয়? তুমি মরে গেলে তো বেঁচে গেলে? পরকালের ভয় নেই?”
নিহা চুপ করে আছে। উত্তর দিচ্ছে না। কি উত্তর দিবে? উত্তর নেই তো। তারিন এবার মুখ খুললো। নেওয়াজের উদ্দেশ্যে শান্ত বাক্যে বলল,
“ভাইয়া, এই মুহূর্তে ওর সাথে এমন শক্ত কণ্ঠে কথা বলবেন না। ও ভয় পেয়ে আছে৷ আপনি ছাড়া ওকে সামলানোর কেউ নেই৷ তাই আপনি একটু এখন শান্ত থাকুন।”
নেওয়াজ চুপ রইলো। সেকেন্ড কয়েকের মাথায় বলে উঠল,
“আর আমার কে আছে?”
নিহা চকিতে তাকালো। অশ্রুসিক্ত সে নয়ন। দুজনের একবার অশ্রুসিক্ত আঁখিতে চোখাচোখি হয়ে গেলো। নেওয়াজ পুনরায় প্রশ্ন করল,
“মানুষ যখন একা হয়ে যায়, তখন সবদিক থেকেই একা হয়ে যায়। যে জানে সে ছাড়া আমার জীবনে কেউ নেই তবুও কেন সে এমন সিদ্ধান্ত নিলো? আমার মুখ কি তার একবার ও মনে পড়েনি? কেমন ভালোবাসে আমাকে?”
নিহা নিঃশব্দে কাঁদছে। কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। নেওয়াজকে জড়িয়ে ধরার বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু পারছে না। তামজিদ এবার মুখ খুললো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“তোমাদের অভিমান তোমরা একান্তে মিটিয়ে নাও। আমরা আসি। তবে যাওয়ার আগে কিছু কথা বলে যাই। নিহা এদিকে তাকাও।”
নিহা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকালো। তামজিদ মুচকি হেসে নিহাকে অভয় দিলো। পুরদমে বলা শুরু করলো,
“আত্মহ’ত্যা মহা পাপ জানো না তুমি? সামান্য একটা ফলাফলের কাছে হেরে গিয়ে তুমি এত বড় একটা স্টেপ নিয়ে ফেললে? জীবন কি এত সস্তা মনে হয়? এই মেয়ে মন দিয়ে শুনো, রেজাল্ট শুধুমাত্র একটা বাক্যমাত্র। তা ছাড়া কিছু না। তোমার রেজাল্ট খারাপ মানে তুমি খারাপ ছাত্রী এমনটা ভাবা বোকামি। মানুষের মেধাই আসল। মুখস্ত বিদ্যা ধারণ করে হাই রেজাল্ট করা খুব সহজ। কিন্তু দিনশেষে তুমি কতটুকু শিখলে, কতটুকু বুঝলে, কতটুকু নিজের ব্রেনে ধারণ করতে পারলে____ এটাই গুরুত্বপূর্ণ। শুনো মেয়ে, একটা রেজাল্ট ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারেনা। তাহলে হেরে যাচ্ছো কেনো? নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস নেই? নিজের স্বপ্নের প্রতি ভালোবাসা নেই? তাহলে স্বপ্ন দেখেছিলে কেনো? জানোনা স্বপ্ন দেখতে হলে সেটা পূরণ না করা অব্দি থামতে নেই। স্বপ্ন পূরণের রাস্তা এত সোজা না। অনেক বাধা বিপত্তি রয়েছে। সেগুলোর সাথে মোকাবিলা করে চলতে হবে। তোমাকে এখন যারা কটুবাক্য শুনাচ্ছে, খোচা মা’রছে, অবহেলার চোখে দেখছে তাদের সবার কথা সহ্য করে নাও। অসুস্থ হলে সুস্থ হওয়ার লোভে যখন তেতো সিরাপ গিলে ফেলো, তেমন করে মানুষের কথাও গিলে ফেলো। চোখ বন্ধ করে নিজেকে সময় দাও। সহ্য করতে না পারলে একান্তে কেঁদে নাও। মানুষকে মনের ব্যাথা না বলে উপরওয়ালাকে বলো। বেশি করে প্রার্থনাতে মনোনিবেশ করো। তুমি কেনো ভুলে যাচ্ছো, তোমার রব আছেন। তিনি তোমাকে এত সুন্দর একটা জীবন দান করেছে। সেই জীবনে একটা ধাক্কা সামলাতে না পেরে বেঁচে থাকার সাধ হারিয়ে ফেলছো? কি বোকা তুমি! আজ থেকে লড়াই করতে শিখো। পেছন ফিরে তাকাবে না আর। একদম তাকাবেনা। সব ভুলে যাও। নিজেকে নিজের মতো গড়ে তুলো। আত্মবিশ্বাসী, সংগ্রামী হও। বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে, আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস ছাড়ো৷ নিজেকে এমন ভাবে প্রতিষ্ঠিত করো যেনো, আজ যারা তোমাকে মূল্যায়ন করছে না, তারাই তোমাকে একদিন মাথায় তুলে রাখবে। এগিয়ে যাও। অনেক দূর যাও। পথের মাঝে কাটা দেখে পেছন ফিরে এসো না। কাটা যদি সরাতে বা উপরে ফেলতে না পারো, তাহলে কাটায় পা ক্ষতবিক্ষত করে হলেও সামনে এগিয়ে যাবে। তুমি পারবে। পারতে তোমাকে হবেই। বুঝেছো?”
তামজিদ কথাগুলো বলেই থামলো। দীর্ঘশ্বাস ফেললো। অতঃপর পুনরায় মুখে হাসি টেনে শান্ত স্বরে বললো,
“আত্মহ’ত্যা সব কিছুর সমাধান না। মরে গেলে তো হেরে গেলে। জীবন একটাই, বাঁচার মতো বাঁচতে পারলেই তুমি সুখী। বুঝতে পারছো?”
নিহা ঠোঁটের কোনে হাসি টানলো। মাথা নাড়ালো। অর্থাৎ ‘হ্যাঁ’। তারিন এবার নিহার মাথায় হাত বুলিয়ে নরম স্বরে বলে উঠল,
“তুই এবার রেস্ট কর। আমরা আসি। কাল ছেড়ে দিবে তোকে। তারপর বাসায় গিয়ে দেখা করে আসবো।”
তারিনের কথা শেষ হতেই ও উঠে দাঁড়ালো। তামজিদের উদ্দেশ্যে বললো,
“চলুন।”
তামজিদ কিছু বলার আগেই নিহা শান্ত বাক্যে বলে উঠল,
“আমার কিছু কথা আছে।”
এর মধ্যেই রুমে ঢুকলো নিহার বাবা-মা। দরজার দিকে তাকাতেই নিহার চোখে, মুখে রাগ, ক্ষোভ অভিমান ফুটে উঠলো। ঘৃণায় চোখ নামিয়ে নিলো। মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে শান্ত স্বরে বলল,
“তারু, উনাদের এখান থেকে চলে যেতে বল প্লিজ। আমাকে একটু আমার মতো শান্তিতে থাকতে দিতে বল। উনারা আমার বাবা-মা। আমি চাইনা তারা আমার চোখে উনাদের প্রতি সম্মান,, ভালোবাসার বদলে ঘৃণা দেখুক।”
নিহা মা এবার শব্দ করে কান্না করে উঠলেন, নিহার কাছে এগিয়ে আসতেই নেওয়াজ সরে গিয়ে অন্য পাশে দাঁড়ালো। নিহার মা এসে নিহার হাত জোড়া প্যাঁচিয়ে ধরলেন। কান্নারত স্বরে বলতে লাগলেন,
“আমাকে ক্ষমা করে দে, মা। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি তোর মা হিসেবে সত্যিই অযোগ্য। মা হয়েও আমি তোর কষ্ট, দুঃখ বুঝিনি৷ আমাকে ক্ষমা করে দে, মা। এতগুলো বছর তোকে যেই শাসন, অবহেলায় বড় করেছি, সেই ভুলের কোনো ক্ষমা হয়না জানি। তবুও ক্ষমা চাইছি, মা। আমার দিকের থেকে এভাবে মুখ ঘুরিয়ে রাখিস না।”
নিহা তবুও কোনো টু-শব্দ করলো না। বরং আলতো করে মায়ের থেকে হাত সরিয়ে নিলো। এবার আসলেন নিহার বাবা। নিহার মাথায় হাত বুলিয়ে করুন স্বরে বলতে লাগলেন,
“আমার দিকের থেকে অন্তত মুখ ঘুরিয়ে রাখিস না, মা। তোকে দিয়ে আমাদের কত স্বপ্ন ছিলো, কত আশা ছিলো। তোর ভালোর জন্যই তোর মা তোকে একটু-আধটু বকাঝকা করতো। শাসন করতো। তাই বলে তুই এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিবি? আমাদের জন্য কি তোর একটুও মায়া হলো না?”
নিহা হাসলো। হাসতে হাসতেই বলা শুরু করলো,
“মায়া! তাও আবার তোমাদের জন্য? কেনো হবে বলো তো? আমাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলানোর মতো ভালো করতে চাইছিলে তাইনা? আচ্ছা বাবা, তুমি বলো তো? মা আমার সাথে কবে ঠিক করে কথা বলেছে? আমার সাথে বন্ধুর মতো আচরণ করেছে? আমার ভালো, মন্দ, খারাপ লাগা, ভালো লাগা বুঝেছে? স্কুল থেকে আসলে কখনো ভাত মেখে খাইয়ে দিয়েছে? চুল বেঁধে দিয়েছে? কখনো স্কুলের গল্প শুনতে চেয়েছে? যখন থেকে স্কুলে ভর্তি হয়েছি, তখন থেকে একা একা ড্রেস পড়েছি, জুতা পড়েছি তারপর স্কুলের জন্য বেড়িয়েছি। তাও কখনো দারোয়ান চাচার হাত ধরে, নয়তো ড্রাইভার চাচার হাত ধরে। তোমার মনে পড়ে বাবা, তুমি কবে আমাকে হাত ধরে স্কুলে নিয়ে গেছিলে? আমাকে সাথে করে তোমরা ঘুরতে বেড়িয়েছিলে? আমার সাথে বসে গল্প করেছিলে? মনে পড়ে? পড়েনা, তাইনা? আমারও মনে পড়ে না। আচ্ছা মা, তোমার মনে পড়ে আমাকে শেষ কবে ভাত খাইয়ে দিয়েছিলে? আমার যখন বয়স ৪ তখন থেকে আমার বিছানা আলাদা করে দিলে। কেনো মা, আমার কি মনে চায়না তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে? আমার খারাপ লাগলে কখনো তোমাদের কাউকে পাশে পাইনি। পাবো কি করে? তোমরা তোমাদের চাকরি নিয়ে খুব ব্যস্ত। আমাকে জন্ম দেওয়া অব্দিই বোধহয় তোমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে গিয়েছিলো, তাইনা মা? আমার শরীর খারাপ করলে কখনো আমার মাথার পাশে বসে এভাবে হাত বুলিয়েছো, বাবা? মা তুমি কখনো আমার জন্য রাত জেগেছিলে? মনে পড়ছে না আপাতত। আমার পড়ালেখায় কখনো হেল্প করেছিলে আমাকে? শুধু রেজাল্টের বেলায় যত অভিযোগ শুনেছি। এডমিশন টেস্টের জন্য কত রাত জেগেছি, পড়েছি, তখন তো একদিনও জিজ্ঞেস করো নি আমি কি পড়ছি? কিভাবে পড়ছি? প্রিপ্রারেশন কেমন? তারপর যখন কোথাও চান্স হলো না তখন আসলে আমাকে জন্ম দেওয়া নাকি তোমাদের ভুল হয়েছে সেসব শুনাতে। হা হা হা। জানো মা, তুমি শুধুই আমার জন্মদায়িনী মা। আর কিছু না। একমাত্র ভাইয়ু বাদে আমার আপনজন কেউ ছিলো না। ভাইয়ু ছিলো আমার খারাপ, ভালোর সঙ্গী। আমার ভাই আমাকে বাবা-মা দুজনের আদর দিয়েছে। অভাব পূরণ করেছে। কিন্তু সেই ভাইকেও তোমরা দূরে পাঠিয়ে দিলে, শুধুমাত্র তোমাদের স্বপ্ন, আশা পূরণ করার জন্য। আর কত স্বপ্ন, আশা আছে তোমাদের? কত? আর কিছু বলতে মন চাইছে না। প্লিজ তোমরা এখান থেকে যাও। প্লিজ, যাও৷ তোমাদের আমার সহ্য হচ্ছে না। যাও। যাও না। যাচ্ছো না কেন?”
নিহা কথাগুলো বলতে বলতে কাঁদছিলো। কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে গেছে। এবার পাগলের মতো চিৎকার করার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। তামজিদ কোনো রকমে নিহার বাবা-মাকে রুম থেকে বের করে ডাক্তার ডাকতে গেলো। নেওয়াজ নিহাকে বুকে জড়িয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছে। তারিন পাশে বসে নিহার মাথায় হাত বুলাচ্ছে। তারিনও কাঁদছে। মেয়েটার মনে কত কষ্ট চেপে ছিলো অথচ এই তিন বছরে একদিনও বুঝতে দিলো না। নেওয়াজ ও কাঁদছে। নিহা চিৎকার করে কাঁদছে আর বার বার বলছে,
“আমি কেন বাবা-মায়ের ভালোবাসা পেলাম না? তাদের ভরসা, সাপোর্ট পেলাম না? কি দোষ ছিলো আমার? কেনো আমাকে ভালোবাসলে না, মা? কেনো আমাকে বুঝলে না? কেনো বুঝলে না, আমাকে?”
নেওয়াজ কিছু বলছে না। কাঁদুক। যত কষ্ট আছে কেঁদে ভাসিয়ে দিক। নিহা নেওয়াজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলছে,
“আপনি ছাড়া আমার কেউ নেই। আমাকে ছেড়ে যাবেন না। আমাকে আদর করবেন। অনেক অনেক ভালোবাসবেন৷ আমাকে আপনার বুকে আগলে রাখবেন। আমাকে একটু ভরসা দিবেন। আমি আর কিছু চাইনা। বিশ্বাস করেন, ছোট থেকে আমার কোনো কিছুর অভাব ছিলো না। অভাব ছিলো শুধু ভালোবাসার। আমার ভালোবাসার অভাব পূরণ করে দিবেন, প্লিজ। আমাকে ছেড়ে যাবেন না। বলেন না আমাকে ছেড়ে যাবেন না?”
নেওয়াজ নিহাকে বুকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে শান্ত স্বরে বলতে লাগলো,
“যাবো না। কোথাও যাবো না। কোনোদিন যাবো না। তোমার ভালোবাসার অভাব আমি পূরণ করে দিবো। কোনোদিন কোনোকিছুর অভাব তোমাকে ছুঁতে পারবে না৷ আমি আছি তো। তোমার আছি, তোমারেই থাকবো। আমার বুকে এভাবেই আগলে রাখবো।”
তামজিদ ডাক্তার নিয়ে আসতে আসতে নিহা জ্ঞান হারিয়েছে। তারিনের মাথা ঘুরাচ্ছে, তামজিদ তারিনকে এক হাতে বুকে জড়িয়ে ধরে পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ডাক্তার নিহাকে দেখে চেক-আপ করে বললো,
“অতিরিক্ত প্রেশারে জ্ঞান হারিয়েছে। চিন্তার কিছু নেই।”
ডাক্তার চলে যেতেই তামজিদ নেওয়াজের উদ্দেশ্যে বলল,
“আমি তারিনকে নিয়ে বাসায় যাই৷ তুমি সব সামলাতে পারবে তো?”
নেওয়াজও সায় জানালো। তামজিদ পুনরায় বললো,
“তাহলে কাল সকালে আসবো আবার।”
নেওয়াজ উঠে দাঁড়ালো। বললো,
“কাল কাজি নিয়ে আসবে একেবারে।”
তামজিদ আর তারিন দুজনেই অবাক হলো। আকাশ থেকে পড়লো যেনো৷ তারিন অবাক সুরে প্রশ্ন করলো,
“কাজি কেনো?”
নেওয়াজ হাসলো। বলল,
“কেনো আবার। তোমার বান্ধবীকে আমার বউ বানানোর জন্য।”
তারিনের মুখটা হা হয়ে গেলো। তামজিদ কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“এখানে?”
নেওয়াজ হেসে জবাব দিলো,
“হ্যাঁ, এখানেই। আমাদের বিয়েটা এই হসপিটালে হলে হসপিটালের এই রুমটা সহ, বিয়েটাও স্মরনীয় হয়ে থাকবে। বুঝলে?”
তামজিদ তারিন দুজনেই একসাথে হেসে ফেললো। নেওয়াজ বলল,
“আমি চাইনা, নিহু আবার ওই বাসায় যাক। যে বাসায় নিহু অবহেলায় বেড়ে উঠেছে। যাদের জন্য নিহুর আজ এই অবস্থা তাদের ছায়া নিহুর গায়ে পড়ুক আমি চাইনা।”
তামজিদ নেওয়াজের কাঁধে হাত রেখে ভরসা দিয়ে বলল,
“ অল দ্যা বেস্ট, ব্রো। আমরা আছি তোমাদের পাশে।”
তারিন হেসে বলল,
“তাড়াতাড়ি বাসায় চলুন, মাস্টার মশাই। গিয়েই আমাকে শাড়ি সিলেক্ট করা লাগবে। কাল আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়ে বলে কথা। না সাজলে হবে?”
তামজিদ মুখ টিপে হেসে নেওয়াজের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
“বুঝলে নেওয়াজ এবার থেকে একটু সাবধানে থাকবে। কী আপদ ঘাড়ে উঠাচ্ছো টের পাবে হারে হারে। নিজ ইচ্ছায় কোরবানি হওয়ার জন্য তোমাকে অগ্রীম ধন্যবাদ।”
নেওয়াজ হাহা করে হেসে দিলেও তারিন রেগে বোম হয়ে উঠলো। যেকোনো মুহূর্তে ব্লাস্ট করবে। তামজিদ সেদিকে এক নজর তাকিয়ে মিনমিনিয়ে বলে উঠল,
“লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনায যোয়ালিমিন। বোম ব্লাস্ট হলো বলে। আল্লাহ আমাকে বাঁচাও।”
বলেই এক দৌড় লাগালো৷ তামজিদের এমন দৌড়ে যাওয়া দেখে তারিন রাগ ধরে রাখতে পারলো না৷ হেসে দিলো। ছেলেটা দিন দিন বড় হচ্ছে নাকি বাচ্চা হচ্ছে বুঝতে পারেনা।

#চলবে