#আমার_নিষ্ঠুর_ভালবাসা
#পর্ব_2
#লেখিকা_সালমা_খাতুন
সকাল বেলা……
আরমানের যখন ঘুম ভাঙে তখন নিজের শরীরের উপর ভারী কিছুর অবস্থান টের পায়। খুব সুন্দর একটা ঘ্রাণ নাকে এসে বারি খায়। ঘুমের ঘোরেই প্রাণ ভরে শ্বাস টেনে সেই ঘ্রাণ নিজের মধ্যে ভরে নেয়। ধীরে ধীরে চোখ খুলে ফেলে ও, কিন্তু কিছু দেখতে পাই না। কারণ ওর চোখ মুখ মায়ার চুলে ঢাকা। আলতো হাতে চুল গুলো সরাতেই একটা নিষ্পাপ মায়া মাখা মুখ চোখের সামনে ভেসে ওঠে। বেশ কিছুক্ষণ সেই মুখের দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে ও।
মায়া ওর বুকের কাছে হাতের বাহুতে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। অর্ধেক শরীরের ভার আরমানের উপর। মায়া হালকা নড়তেই, হুঁস ফিরলো আরমানের। ধীরে ধীরে মনে পড়ে গেলো কাল রাতের ঘটনা। হঠাৎই আরমানের মুখের ভঙ্গি শক্ত হয়ে গেলো। চোখ জ্বলে উঠলো। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো মায়াকে নিজের উপর থেকে। বেড কিছুটা বড়ো হওয়াই মায়া বিছানা থেকে পড়লো না। তবে ওর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। প্রথমে বুঝতে পারলো না, কি হলো ওর সাথে, আর ও কোথায় আছে। তারপর চোখ পড়লো আরমানের উপর, আরমান কোমরে একটা চাদর পেঁচিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
মায়ার ও ধীরে ধীরে মনে পড়ে গেলো কাল রাতের কথা। পুরো শরীরে বিষাক্ত ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। ধীরে ধীরে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো ওর। ওভাবেই কেটে গেলো বেশ কিছুক্ষণ। ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে মায়া তাড়াহুড়ো করে চোখের পানি মুছে নিলো।
আরমান শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। মায়া তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় এবং দরজা বন্ধ করে দেয়। ভিতরে যেতেই মায়ার সমস্ত যন্ত্রণা এবং কষ্ট তার চোখের অশ্রু হয়ে ঝরতে থাকে। মুখের উপর হাত চাপা দিয়ে নীরবে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ঝরনার জল তার শরীরে পড়ছিল, তার শরীরে লাল এবং নীল চিহ্ন ছিল, যা বোঝায় যে আরমান কতটা নিষ্ঠুরভাবে তাকে আঁচড়ে খেয়েছে। তার শরীরে থেকে বেশি আত্মায় ব্যাথা লেগেছে। মায়া তার কণ্ঠস্বরকে চাপা দিয়ে কাঁদতে থাকে, কিছুক্ষণ পরে ব্যথাযুক্ত শরীর নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে।
আরমান পোশাক পরে রেডি হয়ে নিয়েছে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। যাওয়ার আগে সে তার কোট থেকে একটি চেক বের করে মায়ার কাছে এসে চেকটি মায়ার দিকে ছুড়ে দেয়, “এই ধরো, তোমার রাতের সেবার মূল্য।”
মায়া, নিজের ভেতরের কষ্ট লুকিয়ে, নির্লজ্জভাবে চেকটা তুলে নিয়ে তাকায়। চেকে লেখা পরিমাণ দেখে মায়ার ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে।
আরমানের দিকে তাকিয়ে বলল, “ধন্যবাদ স্যার, পরিমান দেখে মনে হচ্ছে আপনি আমার সার্ভিস খুব পছন্দ করেছেন, আশা করছি আবার আসবেন আমার কাছে।”
আরমান মায়ার চুল মুঠো করে ধরে একটু কাছে নিয়ে আসে, এতে মায়া ব্যাথা পাই কিন্তু মুখে প্রকাশ করে না। আরমান রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বলল, “প্রশ্নই আসে না, এই আরমান শাহরিয়ার একবার যেই জিনিস ব্যবহার করে তাতে দ্বিতীয়বার আর হাত দেয় না।”
মায়া একটু মন খারাপের ভান করে বলে, , “ওহ, এর মানে আপনাকে আমি আর আমার ক্লাইন্ট হিসাবে পাবো না। সমস্যা নেই, আপনি না হলে অন্য কোন মোটা পার্টি ঠিকই পেয়ে যাবো, শহরে এমন লোকের অভাব নেই। যাইহোক, আজ রাতে আমার আরেকজন বড়ো ব্যবসায়ীর সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে, তার জন্যও প্রস্তুত হতে হবে। আমি এখন ভীষণ ব্যস্ত, আপনার সাথে দেখা করে ভালো লাগলো মিস্টার আরমান শাহরিয়ার।”
এই বলে মায়া চেক নিয়ে রুম থেকে চলে যায়।
আজ রাতে অন্য কারো সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট?? মায়ার এসব কথা শুনে আরমান অবাক হয়ে গেল। কেন জানি ওর খুব রাগ লাগছিল। এতে আরমান কনফিউজড হয়ে বিরক্ত নিয়ে মনে মনে বলে, “ও সারা শহরের মানুষ নিয়ে রাত কাটাক তাতে ওর কি?”
এই ভেবে আরমান সেখান থেকে সোজা তার অফিসের জন্য রওয়ানা দেয়।
.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._.._
ক্লাব ছাড়ার পর মায়া প্রথমেই ব্যাঙ্ক এ যায় চেক ভাঙ্গানোর উদ্দেশ্য। ব্যাঙ্ক এ নিজের কাজ সেরে তারপর যায় একটা নামকরা প্রাইভেট হাসপাতালে।
মায়া তারাহুরো করে একজন ডাক্তারের কেবিনে ঢুকে যায়। মায়াকে দেখে ডাক্তার বলেন, “ওহ আপনি এসেছেন? হসপিটাল থেকে অনেক বার কল করা হয়েছিল আপনাকে। আপনি কল রিসিভ করেননি।
ক্ষমা চেয়ে মায়া খানিকটা নার্ভাস কন্ঠে বলল, “ I’m sorry, doctor. আমি একটা কাজে আটকে গিয়েছিলাম। আমার পাপা এখন কেমন আছে?”
ডাক্তার মায়াকে বললেন, “আসলে গতরাতে ওনার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল, বারবার আপনার সাথে দেখা করতে চাইছিল। তাই আপনাকে এতবার ফোন করেছি।”
ডাক্তারের কথা শুনে মায়ার হৃৎপিণ্ড হঠাৎ থেমে যায়, “এখন কেমন আছেন ডাক্তার?”
ডাক্তার মায়াকে শান্ত করে উত্তর দিলেন, “উনি এখন ভালো আছেন, চিন্তা করবেন না।”
এই কথা শুনে মায়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, ডাক্তার মায়াকে বললেন, “উনাকে কেমোথেরাপি দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। জানেনই তো ওনি ক্যান্সারের শেষ পর্যায়ে আছে, আমি আপনাকে কোন মিথ্যা সান্ত্বনা দিতে চাই না, আমরা জানি উনার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। আপনি কি নিশ্চিত যে আপনি এত টাকা খরচ করতে চান?”
কথাটা শুনে মায়ার চোখে পানি চলে আসে, “আমার পাপা ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার আর কেউ নেই। আমি আমার পাপাকে কোনো মূল্যেই হারাতে চাই না। যতো টাকাই খরচ হোক না কেনো, আমি করতে রাজি আছি। আপনারা নির্দ্বিধায় উনার ট্রিটমেন্ট চালু রাখুন।”
ডাক্তার মায়াকে শান্ত করে বলেন, “আমি বুঝতে পেরেছি, চিন্তা করবেন না, উপর ওয়ালার উপর ভরসা করুন। ওনার কেমোথেরাপি শুরু করার সময় হয়ে গেছে, আপনি বিলটা জমা করে দিন। আর হ্যাঁ ওনার কিন্তু অনেক দামি দামি মেডিসিন লাগবে, তাই সবসময় টাকা রেডি রাখবেন।
মায়া একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে মাথাটা একটু নেড়ে বলল, “হ্যাঁ অবশ্যই। টাকা রেডি আছে। চিন্তা নেই আপনারা আপনাদের কাজ করুন।”
___________________
ডক্টরের কেবিন থেকে বেরিয়ে মায়া প্রথমেই বিল কাউন্টারে যায়। সেখানে বিল পরিশোধ করে, এরপর হসপিটালের একটা নির্দিষ্ট কেবিনে প্রবেশ করে ও।
ওখানে একজন লোককে শুয়ে থাকতে দেখা যাই। ওনাকে বেশ প্রাণহীন দেখাচ্ছিল, মাথা থেকে বেশ কিছু চুল উঠে গেছে। জামা পড়ানো না থাকলে শরীরের সব হাড় গোনা যাবে। ওনাকে দেখতে অবিকল একটা মৃতদেহের মতো লাগছে। এই অবস্থায় লোকটিকে দেখে মায়া খুব কষ্ট পাচ্ছিল। কারণ ওই লোকটি আর কেউ নয় মায়ার জন্মদাতা পিতা, যিনি ক্যান্সারের সাথে লড়াই করছিলেন।
ধীরে ধীরে ক্যান্সারের কারণে তার শরীর সম্পূর্ণ ফাঁপা হয়ে গেছে, মায়া তার সাহস জোগাড় করে এবং তার বাবার বেডের কাছে এগিয়ে যাই, হাসির আড়ালে তার মুখের দুঃখ লুকিয়ে রাখে। বিছানায় নির্জীব শুয়ে থাকা লোকটি মায়াকে দেখে যেন তার শরীরে প্রাণ ফিরে আসে, চোখ চকচক করে ওঠে, উনি উনার কাঁপা কাঁপা হাত এগিয়ে দিয়ে মায়াকে কাছে আসতে ইশারা করে।
মায়া ওর পাপার হাত ধরে বেডের কাছে একটা টুল টেনে নিয়ে বসে, “পাপা, কেমন আছো তুমি? জানো, আমি এইমাত্র ডক্টরের সাথে কথা বলে আসলাম, ডাক্তার কি বলেছে জানো? তিনি বললেন যে, তুমি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে। ঠিক আগের মতো।”
লোকটা জানতেন মায়া তাকে মিথ্যা শান্তনা দিচ্ছে। সে যে অবস্থায় আছে, সেখান থেকে শুধু মৃত্যুর দিকে যেতে পারে। জীবনে বেঁচে থাকার দিকে নয়, তবুও মায়া তাকে উৎসাহ দিচ্ছিল, উনি জানতেন মায়া খুব কষ্ট পাচ্ছে আর সেই কষ্ট তার হাসির আড়ালে লুকিয়ে রেখেছে। বাবা তো তাই সব বুঝেন। ওনি নিজের জন্য নয়, তার মেয়ের জন্য চিন্তিত ছিল, মায়া দেখতে খুব সুন্দর এবং নিষ্পাপ ছিল, জানেননা ওনি থাকলে ওনার মেয়ে এই দুনিয়ায় কিভাবে বাঁচবে।
ওনার নাম আশরাফ তালুকদার। মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ তিনি। ওনার বাবা অর্থাৎ মায়ার দাদা এবং আরমানের দাদা ছিলেন ছোটো বেলার বন্ধু। অনেক আগেই তারা দুজনেই মায়া আর আরমানের বিয়ে ঠিক করে রেখেছিল। আরমানের পরিবার জোর করেই মায়াকে আরমানের সাথে বিয়ে দিয়েছিল। আর আরমান বিয়ে করে নিলেও তা মানতে রাজি ছিল না। যেহেতু তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়েটা দেওয়া হয়েছিল। মায়াকে ওদের বাড়িতেও আনতে দেয়নি এই বলে যে “ওই মেয়ে যদি এই বাড়িতে আসে তাহলে আমি এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবো।
আরমানের দাদা শেষ ইচ্ছা হিসাবে চেয়েছিল দুজনের বিয়ে হোক। দাদার ইমোশনাল ব্লাকমেইল এ বাধ্য হয়ে আরমান মায়াকে বিয়ে করে নেয় কিন্তু তারপর মায়ার মুখও দেখেতে চাইনি। বিয়ের কিছু মাস পরই আরমানের দাদা মারা যান।
বর্তমান….
আশরাফ:- আমাকে মিথ্যে সান্ত্বনা দিও না মামনি, আমি জানি আমার হাতে বেশি সময় নেই। পৃথিবীর কোনো চিকিৎসাই আমাকে সারিয়ে তুলতে পারবে না। আমি নিজেকে নিয়ে চিন্তিত নই, আমি তোমাকে নিয়ে চিন্তিত। তুমি আমাকে এত বড়ো হাসপাতালে ভর্তি করেছো আমার চিকিৎসার জন্য কিন্তু এখন তার খরচ তুমি কিভাবে বহন করবে? তুমি আমায় বাড়ি নিয়ে চলো। আমি তোমার সাথে সময় কাটাতে চাই। আমি এই হাসপাতালে মরতে চাই না।”
মায়া সাথে সাথে তার বাবাকে বাঁধা দিয়ে বললো, “পাপা, থামো তুমি, তোমাকে কতবার বলেছি এমন ফালতু কথা বলবে না, তোমার কিছুই হবে না। ঠিক আগের মতো সুস্থ হয়ে যাবে, দেখো।”
হঠাৎই আশরাফ সাহেবের নজর যায় মায়ার গলার দিকে। যদিও মায়া মাথা সহ গলা ঢাকা দিয়ে রেখেছে, কিন্তু ওর একটু অসাবধানতায় ওরনা টা হালকা সরে গেছে। আর সেই কারণেই দৃশ্য মান হয়ে আছে গলা ও ঘাড়ের মাঝ বরাবর একটা লাল দাগ।
উনি কাঁপা কাঁপা হাতটা তুলে আঙ্গুল বারিয়ে বললেন, “তোর গলায় কি হয়েছে মা? এমন লাল হয়ে আছে কেনো?”
মায়া চমকে উঠলো। তাড়াতাড়ি করে গলায় হাত দিলো। হাত দিতেই জায়গাটিতে হালকা ব্যাথা অনুভব হলো। ও তাড়াতাড়ি ওরনা ঠিক করে বলল, “ওহ কিছু না পাপা। পোকায় কামড়ে ছিল, চুলকানোর ফলে হয় তো লাল হয়ে গেছে।”
আশরাফ সাহেব চিন্তিত গলায় বললেন, “সেকি ওখানে কিভাবে পোকা কামড়ালো? ডক্টর দেখিয়েছিস? কোনো বিষাক্ত পোঁকা নয় তো?”
মায়া মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, “না পাপা, কোনো বিষাক্ত পোঁকা নয়। তুমি চিন্তা করো না তো।”
আশরাফ:- “এই হসপিটাল টা তো প্রাইভেট হসপিটাল। অনেক টা খরচ হয়। এক এক দিনের জন্য অনেক বিল লাগে। এতো টাকা কোথায় থেকে পাচ্ছ তুমি? কোনো ভুল কাজ….”
আশরাফ এই কথা বলতেই মায়া তাড়াতাড়ি উত্তর দেয়, “পাপা, আমি একটা বড় কম্পানিতে চাকরি পেয়েছি, এই চাকরির ভিত্তিতে তোমার চিকিৎসার জন্য লোন নিয়েছি। তোমাকে এতো ভাবতে হবে না।
আশরাফ সাহেবের মুখটা দুঃখী দুঃখী হয়ে যায়, লোনের কথা শুনে। মায়া তার পাপাকে এমন দেখতে পারে না। ও ওর পাপার হাতে হালকা চুমু খেয়ে বলে, “পাপা, তুমি জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি, তোমার কিচ্ছু হতে দেব না, কিছু না।”
আশরাফ হালকা হেসে মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
বাবাকে এমন নিষ্প্রাণ অবস্থায় দেখে মায়ার খুব কষ্ট হয়, আল্লাহই জানে তাকে নিয়ে কি খেলা খেলেছে, ছোটবেলায় তার মাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে উনি, এরপর বিয়ের এক বছরের মাথায় ডিভোর্স। এখন ওর বাবাই ওর শেষ ভরসা, আল্লাহতায়ালা এখন তাকেও ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ও ওর বাবাকে বাঁচানোর জন্য নিজের কতটা মূল্যবান জিনিস হারিয়েছে তা একমাত্র ওই জানে। কিন্তু সবকিছুর উর্ধ্বে ওর কাছে ওর বাবার জীবন।
মায়া মনে মনে বলে, “I am sorry papa, আমি কি করছি তা বলতে পারব না। তবে তোমার জীবন বাঁচাতে আমি যেকোনও প্রান্তে যেতে প্রস্তুত। আমি জানি আমি যা করছি তা খুবই অন্যায়, যেই রাস্তায় আমি নেমেছি এতে আমার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। এবং আমি কখনই এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারব না, তবে আমিও তোমাকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখতে পারব না, প্লিজ তুমি আমায় ক্ষমা করে দিও।”
পাপাকে খাবার ও ওষুধ দেওয়ার পর মায়া তার বাড়িতে ফিরে আসে। রান্না করে খাওয়ার মতো মানসিক বল ও শরীরে শক্তি কোনো টাই নেই। তাই বাইরে থেকে খাবার কিনে নিয়ে এসেছে ও।
জানে এতো সহজে খাবার গলা দিয়ে নামবে না। কিন্তু ওকে বেঁচে থাকতে হবে, ওর পাপার জন্য। তাই কোনোমতে সেই খাবার অল্প একটু খেয়ে একটা পেইন কিলার খেয়ে নেয়। কারণ ওর শরীরে প্রচুর ব্যাথা হচ্ছিল। আর হবে নাই বা কেন আরমান তো পুরো পশুর মতো আচরণ করেছে ওর সাথে।
বিছানায় শরীর টা এলিয়ে দিতেই ক্লান্তিতে দুই চোখে ঘুম নেমে আসে।
🔹🔸🔹🔸🔹🔸🔹🔸🔹🔸🔹🔸🔹🔸🔹🔸🔹🔸🔹🔸🔹🔸
রাতে মায়া রেডি হয়ে ক্লাবে পৌঁছালে ক্লাবের মালিক সুইটি ব্যানার্জি মায়াকে তার কাছে ডাকে। মায়া ক্লাবের মালিকের কাছে পৌঁছে বলল, “ম্যাম, আমাকে আপনি ডেকেছিলেন?”
ক্লাবের মালিক মায়ার দিকে তাকিয়ে বলেন, আরে মায়া, তুমি এসেছ ভালোই হলো, আমি তোমার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম। তোমার ফোনে ঠিকানা পাঠিয়েছি, আজ রাতে তোমাকে ওখানে যেতে হবে।
মায়া ঠিকানা দেখার সাথে সাথে অবাক চোখ তাকায়, “শাহরিয়ার ম্যানশন!!”
ক্লাবের মালিক একটু উত্তেজিত হয়ে বললেন, “জানো, তোমার সার্ভিস উনারর এত ভালো লেগেছে যে তোমাকে পুরো এক মাসের জন্য ভাড়া করে নিয়েছে। তোমার ভাগ্য খুলে গেছে মায়ি, তুমি টাকার সমুদ্রে সাঁতার কাটবে।”
মায়া যেন আকাশ থেকে পড়লো। কারণ ও এটা মোটেও আশা করেনি। মায়াকে অবাক হতে দেখে উনি বললেন, “কি খুব অবাক হয়েছ তো? হওয়ারই কথা।”
মায়া যেনো নিজের হুঁশ ফিরে পেলো, “ম্যাম, একমাস? খুব বেশি হয়ে গেল না?”
ক্লাবের মালিক চোখ ঘুরিয়ে বললেন, “তো?? এতে আশ্চর্য হওয়ার কি আছে? মেয়েরা এই সুযোগের জন্য মুখিয়ে থাকে। আর তুমি এতো ভালো সুযোগ পেয়েও খুশি নও? যাও তাড়াতাড়ি ওই অ্যাড্রেসে চলে যাও। আমি ওনার থেকে টাকা নিয়ে নিয়েছি। এখন তোমাকে যেতেই হবে নাহলে আমার ব্যাবসা লাটে উঠে যাবে।
উনার কথা শোনার পর মায়া শুধু মাথা নাড়ল, ও তখনও বিভ্রান্ত এবং অবাক ছিল। কিন্তু এখন ওর অনেক টাকার প্রয়োজন, কিচ্ছু করার নেই।
মায়া মনে মনে বলে, “জানি না আমার ভাগ্যে আর কি কি আছে।”
চলবে….??