আমার নিষ্ঠুর ভালবাসা পর্ব-৫৯

0
11

#আমার_নিষ্ঠুর_ভালবাসা
#পর্ব_59
#লেখিকা_সালমা_খাতুন

🚫 কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫

সকাল আটটা….

একে একে বাড়ির সবাই মায়ার সাথে দেখা করেছে। মায়া সবার সাথেই স্বাভাবিকভাবেই কথা বলেছে। এখন সামিরা, রুবি, মাইশা, আবির, আয়ান মায়ার কেবিনে বসেই আড্ডা দিচ্ছে। ওপরওয়ালার ইচ্ছা আর ডক্টর ক্যামেলিয়া ডিসুজা এর চিকিৎসা এর ফলে মায়া পুরোপুরি সুস্থ।‌ কোনো অসুবিধা হয়নি, এই মাঝের দুই মাসের সব স্মৃতিও মনে আছে। আর আগের সব কিছুও মনে পড়ে গেছে। ইমারজেন্সি ফ্লাইট এ ডক্টর ক্যামেলিয়া ডিসুজাকে কালকে রাতেই আনিয়েছে আরমান।

ক্লান্তিতে ভরা শরীর নিয়ে আরমান প্রবেশ করলো মায়ার কেবিনে। আরমানকে দেখে সবাই হাসি মজা থামিয়ে দিলো। মায়া নিজেও ওর মুখটা গম্ভীর করে নিলো। মাইশা বসে ছিল মায়ার বেডের পাশে টুলে, ও উঠে গেলো সেখান থেকে। আরমান সোজা সেই টুলে গিয়ে বসলো নির্বিকার ভঙ্গিতে। ক্লান্তি মিশ্রিত কন্ঠে মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো, “দেখো মায়াবত…”

পুরোটা শেষ করতে পারলো না আরমান। মায়া বেডে হেলান দিয়ে বসে ছিল। আরমান মায়ার দিকে তাকিয়ে কথাটা শুরু করতেই মায়া নিজের মুখটা অপরদিকে ঘুরিয়ে নিলো। আরমান সেটা দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

আরমান:- “দেখো মায়া, তোমার তো আগের সবকিছু স্পষ্ট ভাবে মনে পড়ে গেছে। মাঝের এই দুই মাসের ঘটনাগুলোও তোমার অজানা নেই। আমি মানছি—জেদের বশে তোমার সঙ্গে অনেক অন্যায় করেছি, কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু আমার ভালোবাসা তুমি দেখোনি, শুধু অবহেলাটাই দেখে আমার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে চেয়েছিলে। এখন যেহেতু সবকিছুই তুমি জানো, তবুও যদি তুমি আমার থেকে মু..মক্তি চাও… আমি তোমাকে মু..মুক্তি দিয়ে দেবো।”

শেষের কথাটা বলার সময় আরমানের গলটা কেঁপে উঠলো। ওর চোখ গুলো টকটকে লাল হয়ে আছে। যেনো ভিতরের কষ্ট টাকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে, চোখ দিয়ে ঝড়ে পড়তে দিচ্ছে না।

আরমান:- “তোমার সিদ্ধান্তই হবে চুড়ান্ত। এখন আর তোমাকে কোনো রকম কষ্ট দিতে চাই না। তুমি যেটা চাও সেটাই হবে।”

মায়া আরমানের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল, “ভাইয়া আমি আমার বাড়ি ফিরতে চাই, ব্যাবস্থা করো। হসপিটালে থাকতে ভালো লাগছে না।”

মায়া নিজের বাড়ি ফিরতে চাই কথটা শুনে, আরমানের হৃদয়টা টুকরো টুকরো হয়ে গেলো যেনো। তাহলে সত্যিই মায়া ওর থেকে মুক্তি পেতে চাই। আরমান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবিরকে উদ্দেশ্য করে বললো, “আমি ডক্টরের সাথে কথা বলে আসছি, ডিসচার্জ এর ব্যাপারে। তুই মায়াকে একটু ওর বাড়িতে পৌঁছে দিস, আর হ্যাঁ রুবিকে সাথে নিস। রুবি থাকবে মায়ার কাছে, এই অবস্থায় ওকে একা ছাড়িস না। যদিও মায়াদের বাড়িতে দুইজন কেয়ার টেকার আছে, ওরা হাসব্যান্ড ওয়াইফ। বাড়ির সমস্ত কাজ ওরাই করে দেবে।”

কথাটা বলেই আরমান উঠে দাঁড়ালো কেবিন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য। আরমান ঘুরে দাঁড়িয়ে এক ফেলতেই মায়া চিৎকার করে উঠলো, “ভাইয়া উনাকে বলে দাও আমি আমার বাড়ি ফেরার কথা বলেছি, আমার বাবার বাড়ি নয়।”

মায়ার কথায় সবাই থতমত খেয়ে গেলো, প্রথমে কেউ কিছু বুঝলো না।‌ আরমানও থমকে গেছে।

মায়া তাচ্ছিল্য হেসে বলল, “এতো বড়ো বিজনেস ম্যান হয়েও জানে না যে একটা মেয়ের শ্বশুর বাড়িটাই নিজের বাড়ি হয়। বাবার বাড়িটা নয়।”

মায়ার কথায় সামিরা ফিক করে হেসে ফেললো। বাকি সবাইও মুখ চেপে হাসলো। আরমান পুরোই বোকা বনে গেছে যেনো, কি হচ্ছে ও বুঝতে পারছে না। যখন মায়ার কথার মানে বুঝলো তখন পিছনে ঘুরে এক ঝটকায় মায়াকে জড়িয়ে ধরলো। মায়া আমার বাড়ি মানে শাহরিয়ার ম্যানশন বুঝাতে চেয়েছে। আরমানের চোখ থেকে এক ফোঁটা পানিও গড়িয়ে পড়লো, যা কারোর চোখে পড়লো না।

এদিকে আরমান মায়াকে এইভাবে সবার সামনে জড়িয়ে ধরাই, মাইশা মায়ার বড়ো বোন হিসাবে লজ্জা পেয়ে রুমে থেকে বেরিয়ে গেলো, পিছু পিছু রুবি, আয়ান ও বেরিয়ে গেলো। সামিরা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে, সেটা দেখে আবির সামিরার চোখে হাত দিয়ে ওকে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে যেতে যেতে বলল, “ছিহ! শামুক ছিহ! তোর লজ্জা করা দরকার। বড়ো ভাইয়ের রোমান্স দেখছিস এভাবে।”

বলতে বলতে সামিরাকে টেনে নিয়ে বেরিয়ে গেলো আবির। এদিকে মায়া ছটফট করছে। আরমানকে নিজের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।

মায়া:- “ছাড়ুন আপনি আমাকে! ছাড়ুন বলছি। সেই কোন ভোরবেলা ঘুম ভেঙেছে আমার, আর আপনি এখন এসেছেন? এসে আবার কি বলছেন, মুক্তি দিবেন আমায়? মুক্তি? দেওয়াচ্ছি আমি আপনাকে মুক্তি। এখন সব মনে পড়ে গেছে আমার। আমাকে দেওয়া প্রতিটা আঘাত গুনে গুনে ফেরত দেবো আপানাকে। আমিও বুঝিয়ে দেবো আপনাকে, এই মিসেস মায়া শাহরিয়ারকে কষ্ট দেওয়ার মূল্য।”

আরমান:- “তোমার ফেরত দেওয়া সমস্ত আঘাত আমি হাসি মুখে গ্রহন করবো মায়াবতী। তুমি যে শাস্তিই দাও না কেনো, মাথা পেতে নিতে রাজি আছি। শুধু তার বিনিময়ে ‘তোমার ওই তুমিটাকে’ আমার নামে করে দাও। শুধু সারাজীবনের জন্য থেকে যাও আমার কাছে, আর কিচ্ছু চাই না। তুমি ছাড়া আমি যে একেবারে অপূর্ণ, অচল হয়ে যাবো।”

আরমানের কথায় মায়া শান্ত হয়ে গেলো। ওর চোখ থেকেও পানি গড়িয়ে পড়লো। কান্না ভেজা কন্ঠে বলে উঠলো মায়া, “আমার এই আমি টাকে অনেক আগেই আপনার নামে করে দিয়েছি গম্ভীর সাহেব, সেই বিয়ের দিন থেকেই। আপনি নিজেই কখনো বুঝেননি সেটা।”

——————

কেটে গেছে বেশ কিছুদিন। এর মধ্যে বিয়ের সব আয়োজন শেষ হয়েছে। মায়া শুধু জানে আয়ান আর মাইশার বিয়ের কথা কিন্তু একইসাথে ওর আর আরমানেরও বিয়ে হবে, এটা ও জানে না। এই নিয়েই মন খারাপ মায়ার, যদিও সেটা কাউকে বুঝতে দিতে চাইছে না। তবুও ও যতই লুকানোর চেষ্টা করুক, সবাই ঠিকই বুঝতে পারছে। আরমান অবশ্য সবাইকে কড়া করে মানা করে দিয়েছে, তাই কেউ মায়াকে কিছু জানাতেও পারছে না।

বিয়ের সমস্ত সপিং করাও হয়ে গেছে, মায়া মন খারাপ নিয়েই টুকটাক কেনাকাটা করেছে নিজের জন্য। আর আরমান মায়ার জন্য বিয়ের শাড়ি লেহেঙ্গা থেকে শুরু করে গহনা পর্যন্ত নিজে নিয়েছে।

গায়ে হলুদের দিন….

বিয়ের সমস্ত অনুষ্ঠান হবে আরমানদের গ্রামের বাড়িতে। তাই সবাই সেখানেই উপস্থিত হয়েছে। ওদের বাড়িটা রাজপ্রাসাদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়, তবে চোখে পড়ে এটা অনেক দিনের পুরোনো একটি বাড়ি। বর্তমানে এখানে থাকেন আরমানের দাদুর ছোট ভাইয়ের পরিবার। দাদুর ছোট ভাই ও তার স্ত্রী দুজনেই জীবিত আছেন, আর এখন গ্রামের জমিদার তাদেরই বড়ো ছেলে। বাড়ির অর্ধেক অংশ আরমানের দাদুর, তাই আরমানদেরও সমান অধিকার আছে। মাঝেমধ্যেই সবাই গ্রামে আসে, একসাথে সময় কাটিয়ে যায়। আনোয়ার সাহেবেরও চাচাতো ভাইদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক, আর আরমান-আয়ানদেরও কাজিনদের সঙ্গে মিল আছে।

হলুদের অনুষ্ঠান দিনে হবে আর রাতে হবে মেহেন্দীর অনুষ্ঠান। পার্লার থেকে মেয়ে আনা হয়েছে, মাইশাকে সাজানো শুরু হয়ে গেছে।‌ কিন্তু ঝামেলা বেঁধেছে মায়াকে নিয়ে। মায়াকে এখনো জানানো হয়নি কিছু। ঠিক হয়েছিল শুধু মাত্র বিয়ের কনে পড়বে হলুদ শাড়ি, আর বাকি কাজিন মেয়েগুলো পড়বে কলাপাতি রঙের শাড়ি আর ছেলেরা কলা পাতি রঙের পাঞ্জাবি।

সামিরা মায়াকে বোঝানোর চেষ্টা করে বলল, “আসলে ভাবি মনি হয়েছে কি, একটা কলাপাতি রঙের শাড়ি কম পড়ে গেছে। আর একটাও নেই ওই শাড়ি, সবাই যে যার মতো নিয়ে নিয়েছে। এটা বড়ো ভাইয়াকে জানানোয় ভাইয়া তোমার জন্য এই শাড়ি সহ ফুলের গহনা ব্যাবস্থা করেছে।”

মায়া:- “তোমার ভাইয়া যখন আমার জন্য শাড়ি আর গহনার ব্যবস্থা করলো তখন তোমাদের মতো কলা পাতি রঙের শাড়ির ব্যাবস্থা করলো না কেনো? কে বলেছে উনাকে এই হলুদের ব্রাইডের শাড়ি আনতে?”

সামিরা বিরক্ত হয়ে বলল, “সেটা তুমি ভাইয়াকেই জিজ্ঞাসা করো গিয়ে, আর পারছি না তোমাকে বোঝাতে। ওয়েট! আমি বরং ভাইয়াকেই ডেকে নিয়ে আসি।”

বলেই সামির রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। মাইশা বলে উঠলো, “মায়া বোন আমার, জেদ কেনো করছিস বল তো? পড়ে নে না শাড়িটা। এই শাড়িটা তো আমার শাড়িটার থেকেও সুন্দর।”

মায়া:- “সেটাই তো বলছি আপু। বিয়ের কনে হচ্ছো তুমি, তাহলে আমি কেনো তোমার শাড়ির থেকেও সুন্দর শাড়ি কেনো পড়বো? থাক আমি বরং আমার একটা সবুজ রঙের শাড়ি আছে সেটাই পড়ে নিই, তাহলেই ঝামেলা শেষ।”

মাইশা নিজের কপাল চাপড়ালো, এই মেয়েও ভীষণ ঘাড় ত্যাড়া স্বভাবের। অতো সহজে কোনো কিছু মানতে চাই না। এই মেয়েকে একমাত্র আরমানই সামলাতে পারবে অন্য কেউ না।

মায়া নিজের রুমে গিয়ে নিজের সেই সবুজ রঙের শাড়িটা বের করছে। ঠিক তখনি রুমে প্রবেশ করলো আরমান, পিছু রুবি ও এলো মায়ার জন্য আনা সেই শাড়ি এবং গহনা গুলো নিয়ে। রুবি সেগুলো বিছানায় রেখে চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, রুমের দরজাটাও টেনে দিয়ে গেলো ও।

মায়া আরমানের মুখের ভাব ভঙ্গি দেখে একটা শুকনো ঢোক গিলল। নিজে সাহসী দেখানোর চেষ্টা করে বলল, “কিহ? এভাবে তাকাচ্ছেন‌ কেনো হ্যাঁ? সবার জন্যই তো গুনে গুনে একই শাড়ি কেনা হয়েছিল, তাহলে কম পড়লো কিভাবে? আর কম যখন পড়লোই তখন আমার বেলাতেই?”

আরমান:- “হুম তার জন্যই তো আমি তোমার জন্য শাড়ির ব্যবস্থা করেছি।”

মায়া:- “হুম ব্যাবস্থা করেছেন ঠিক আছে, তাই বলে এই শাড়ি কেনো? যেই শাড়ি সবার পড়ার কথা, সেই শাড়ির ব্যবস্থা কেনো করেননি?”

আরমান:- “ওই শাড়ি ছিল না, শেষ হয়ে গেছে।”

মায়া রাগী গলায় বলল, “একদম মিথ্যা বলবেন না আমায়। সমস্ত শাড়ি ড্রেস আপনার সপিং মল থেকে নেওয়া, আর একটা কালেকশন কতগুলো করে বানানো হয় আপনার কারখানায় সেটাও আমার জানা আছে।”

আরমান:- “দেখো অতো কিছু আমি জানিনা।‌ আমি চাই না সবার মতো একই সাজে সজ্জিত হোক আমার মায়াবতী। তাই আমি তার জন্য বেস্ট শাড়িটা নিয়ে এসেছি।”

মায়া দাঁত কিড়মিড় করে বলল, “বিয়েটা আমার হচ্ছে না যে আমি সব শাড়ি থেকে বেস্ট শাড়ি পড়ে বসে থাকবো। এই আপনি যান তো আমার রুম থেকে, সহ্য হচ্ছে না আপনাকে আর। আপনি যান আমি রেডি হবো।”

আরমান ভ্রু কুঁচকে বলল, “তোমার বিয়ে তো একবার হয়েছে, আবার কেনো হতে যাবে? আচ্ছা আমি পার্লারের মেয়ে গুলোকে পাঠিয়ে দিচ্ছি, আমার দেওয়া এই শাড়ি পড়ে রেডি হয়ে নিও তাহলে।”

মায়া:- “সেই বিয়েটা কি আদেও কোনো বিয়ে ছিল? ওই বিয়ে কি আপনি মন থেকে করেছিলেন? নাকি মেনে ছিলেন?”

এরপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, “বাদ দিন সেই সব কথা। আমি এই শাড়ি কিছুতেই পড়বো না। এই হলুদের শাড়িটা একটা বিয়ের কনের শাড়ি, এই শাড়িটা আমি কিছুতেই পড়তে পারবো না। বিয়েটা আপুর হচ্ছে, আমি আপুর শাড়ির থেকে ভালো শাড়ি কিছুতেই পড়তে পারবো না। তার উপর আবার এই গহনা গুলোও আপুর গহনার থেকেও সুন্দর, এই সবকিছু পড়লে আমাকেই গায়ে হলুদের কনে ভাববে সবাই।”

আরমান গম্ভীর মুখ করে বলল, “ কিন্তু এখন তো মন থেকে মেনে নিয়েছি সেই বিয়ে। আর তোমাকে এই শাড়ি টাই পড়তে হবে, বুঝতে পেরেছি এভাবে আমার মুখের কথায় কাজ হবে না। আমাকেই কিছু করতে হবে।”

মায়া ভ্রু কুঁচকে বলল, “কি করবেন আপনি?”

আরমান বাঁকা হেসে বলল, “তুমি যদি নিজে থেকে এই শাড়ি না পড়ো তাহলে আমি নিজে পড়াবো তোমায়। নিজের হাতে শাড়ি পড়াবো তোমায়। আমার মনে হচ্ছে তুমিও এটাই চাও, তাই এতো বাহানা করছো।”

মায়া:- “নাহ!! একদম না। কিছুতেই পড়বো না আমি আপনার কাছে শাড়ি।”

আরমান মুখে কিছু না বলে মায়ার দিকে এগিয়ে এলো, মায়াও এক এক পা করে পিছতে পিছতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো। আরমান একদম মায়ার কাছে এসে, মায়ার গলায় থাকা ওরনা টা এক টানে খুলে নিলো, এরপর মায়ার কিছু বুঝে ওঠার আগেই আরমান ওর হাত বাঁধতে শুরু করলো।

মায়া:- “আরে কি করছেন টা কি? এই আপনি সব সময় এমন ভাবে বাঁধেন কেনো আমায়?”

আরমান:- “না বাঁধলে যে তোমার এই হাত দুটো প্রচন্ড ডিস্টার্ব করবে আমাকে আমার কাজ করতে। সেটা তো আমি ভালোই বুঝতে পারছি, তাই আগে থেকেই তার ব্যাবস্থা করছি।”

বলতে বলতেই বাঁধা শেষ। এরপর আরমান মায়ার পিঠের কাছে হাত দিয়ে এক টানে মায়ার চুরিদারের চেইন টা খুলে ফেললো। সাথে সাথে মায়া চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে উঠলো, “না!! না!! না!! প্লিজ এমন করবেন না। আমি পড়বো, পড়বো ওই শাড়ি। সত্যি বলছি পড়বো।”

আরমান মায়ার কথা শুনে বাঁকা হাসলো। এরপর আবারও একটানে জামার চেইন টা লাগিয়ে দিলো। এরপর আরমান মুখের ভঙ্গি কঠিন করে বলল, “সত্যি পড়বে তো?”

মায়া চোখ বন্ধ রেখেই বলল, “একশো পার্সেন্ট সত্যি। না না এক হাজার পার্সেন্ট সত্যি। আমি পড়বো। প্লিজ আপনি যান।”

আরমান মায়ার হাতের বাঁধন খুলে দিতে দিতে বলল, “ওকে! আমি যাচ্ছি। এরপর পার্লারের মেয়েগুলো পাঠিয়ে দিচ্ছি। তাদেরকে বলাই আছে, কিভাবে সাজাতে হবে। তাই তুমি একটাও কথা বলবে না, বুঝতে পেরেছো। আমি জেনো দেখি আমার কথা মতো এই শাড়ি পড়েই তুমি রেডি হয়েছো, নাহলে কিন্তু আমি আবারও প্রথম থেকে নিজে হাতে রেডি করাবো। কথাটা মনে থাকে যেনো।”

মায়া:- “হুম! মনে থাকবে।”

আরমান মায়ার গালে হাত দিয়ে বলল, “ এই তো গুড গার্ল এর মত কথা।”

বলেই আরমান রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। এদিকে মায়া ইচ্ছা মতো বকতে থাকলো আরমানকে, “বজ্জাত লোক একটা। গম্ভীর মুখো হুলো বিড়াল। সব সময় খালি ধমক আর ভয় দেখাবে। যেটা উনি বলবেন সেটাই করতে হবে। জমিদারের নাতী। ওহ উনার দাদু তো আবার জমিদারই ছিলেন, দাদু তো ছিল তো কি হয়েছে? উনি তো নয়। এমন ভাব করেন যেনো, এই গোটা দেশের প্রধানমন্ত্রী, না না দেশের না গোটা পৃথিবীর প্রধানমন্ত্রী উনি। হুঁ।” 😏 😏

নিজের মনেই বকবক করে চলেছে মায়া। ঠিক তখনি রুমে সামিরা রুবি এবং পার্লারের দুটো মেয়ে প্রবেশ করলো।

সামিরা:- “আগেই বললাম, পড়ে নাও। শুনলে না আমাদের কথা। এখন ভাইয়াকে বকাবকি করা শেষ হলে আসুন, দিয়ে দয়া করে রেডি হয়ে নিন গোটা পৃথিবীর প্রধানমন্ত্রী বউ।”

সামিরার কথায় মুখ বেঁকালো মায়া। এরপর পেটিকোট ব্লাউজ নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। সামিরা রুবি মুখ চেপে হেসে ফেললো।

————-

অন্য দিকে…

“এই নে। এই ওষুধ টা ধর। ভালো করে রাখবি। হারিয়ে ফেলবি না কিন্তু। রাতে যখন আমি বলবো, তখন এই ওষুধ টা মায়ার খাবারে মিশিয়ে দিবি। আর খেয়াল রাখবি সেই খাবার যেনো মায়া খাই।”

মেয়েটি:- “ক.. কিন্তু কোনো অসুবিধা হবে না তো স্যার? এটা বি..বিষ টিস কিছু নয় তো?”

“আরে না, এটা বিষ কেনো হতে যাবে? এটা একটা ড্রাগস। ‘অ্যাফ্রোডিসিয়াক’ এটা খেলে মানুষ মারা যায় না। শুধু একটু নেশা হয়। তাই একদম চিন্তা করিস না, মানুষ মারার মতো কাজ আমি করবো না। আর হ্যাঁ তোর টাকাটা আমি তোর ব্যাঙ্ক একাউন্ট এ পাঠিয়ে দিচ্ছি। চিন্তা নেই কোনো অসুবিধা নেই।”

মেয়েটি:- “কিন্তু আপনি ভাবি মনিকে নেশা কেনো করাতে চান?”

“সেটা তোর না জানলেও চলবে। যেটা তোকে বলা হয়েছে সেটা কর, তাহলেই হবে।”

মেয়েটি:- “কোনো রকম ভাবে যদি আমি ফেঁসে যায়?”

“আমি তো বলেছি, ফাঁসবি না তুই। তুই ফেঁসে গেলে আমাকেও ফাঁসাতে পারবি। কোনো ভয় নেই, নির্ভয়ে তুই তোর কাজ কর। এখন যা, আর হ্যাঁ ড্রাগস টা ভালো করে রাখবি যেনো। যেগুলো বললাম, সেগুলো মনে রাখিস।”

মেয়েটি মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। অজ্ঞাত সেই ব্যক্তি হেসে উঠলো, “এখন কি করবি আরমান? এবার তো তোর মায়া আমারই হবে। এখন আর কেউ আঁটকাতে পারবে না মায়াকে আমার হওয়া থেকে। কাল সকালে ধামাকা হবে, ধামাকা। আর সেই ধামাকা দেখার জন্য রেডি থাক।”

চলবে….