আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব-১০+১১+১২

0
95

#আমার_প্রেমিক_ধ্রুব |১০|
#অবন্তিকা_তৃপ্তি

ধ্রুব স্বভাবতই তার আড্ডাখানা ‘বট তলায়’ এসে দাঁড়িয়েছে, সঙ্গে আছে ওর থ্রি ইডিয়েটস গ্যাং। ধ্রুবর হাতে নষ্ট গিটারটা। ও সেটা বাইকের উপর রেখে এসে বেঞ্চে পা ছড়িয়ে আরাম করে বসেছে। দুহাত বেঞ্চের উপর ঠেস দিয়ে পিঠ পেছনের দিকে হেলিয়ে শিষ বাজাতে বাজাতে আশপাশে তাকাচ্ছে শুধু। ইমন এবং বাকিরা একে অপরের দিকে অবাক চোখে চেয়ে দেখছে। আজ ধ্রুবকে বড্ড অন্যরকম দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে- ওর মেজাজ ভীষণ ফুরফুরে আজ। ইমন ধ্রুবর দিকে চেয়ে খোঁচা দিয়ে বললো-

‘খোকাবাবু কি প্রেমে পরেছেন?’

ধ্রুব উত্তর দিল না। অথচ শিষ বাজানো বন্ধ করে দিয়ে ইমনের দিকে চেয়ে ভ্রু বাঁকাল। ইমন এবার ধ্রুবর দিকে চেয়ে নিজেও ভ্রু কুঁচকে কৌতুক গলায় শোধালো-

‘প্রেম; আহা! আশপাশে বইছে প্রেমের ধারা! কে জানে, এই প্রেম কখন ছড়িয়ে গেছে আমার, তোমার, বা আওয়ার রাফ টাফ ধ্রুবর মনেও। ‘

নিজের মনে কবিতা তৈরি আবৃত্তি করে বলল ইমন। কবিতা বলে বড্ড খুশিখুশি হয়ে বাকিদের দিকে তাকিয়ে বলল-‘দেখ, কেমন কবিতা বানায় তোদের ভাই। আমাকে যে কেন সাংস্কৃতিক ক্লাব থেকে রজেক্ট করলো, ওই ব্যাডাদের ধরে ধরে কাচা গু খাওয়ানো উচিত। ট্যালেন্ট চিনে না, অথচ বসে গেছে জাজ আসনে।’

বলে কলার ঝাঁকাল ইমন। ধ্রুব তাকিয়ে ছিলো ওর দিকে, ইমনের কথা শুনে বাকিরা একে অপরের দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে তারপর আচমকাই ধ্রুব ফিক করে হেসে উঠল। ধ্রুবর সাথেসাথে এবার হাসল বাকি দুজন। ইমন বোকার মতো ওদের হাসি দেখছে। ধ্রুব হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়িয়ে ইমনের কাঁধে হাত রেখে ওর উপর শরীরের পুরো ভর ছেড়ে দিয়ে লুটিয়ে পরলো। প্রচণ্ড মজা পেয়েছে যেন ইমনের কথাটায়, ধ্রুব হেসে বলল -‘এটা কবিতা আবৃত্তি ছিলো? মামা, গো এন্ড গেট সাম ব্যাসিক হিউমার বুকস।’

বাকিরাও একে একে শব্দ করে হেসে ইমনের গায়ে লুটিয়ে পরলো। ইমন মুখ ভার করে ওদের দিকে চেয়ে দেখল। তারপর ধাক্কা দিয়ে সবাইকে নিজের গায়ের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে ভারিক্কি গলায় বলল-

‘বন্ধু নামে তোর একেকটা কলঙ্ক। তোদেরতো জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া উচিত মানহানির মামলায়।’

ধ্রুব হাসি থামে, আবার বসল বেঞ্চে। সিগারেট ধরাল এবার একটা। ইমন ওদের সবাইকে অনেকটা এখনও কড়া মেজাজে দেখে যাচ্ছে। হঠাৎ ইমনের চোখ গেলো বাইকের উপর; গিটার বেঁধে রাখা যেখানে। ইমন গিটারের এত করুন অবস্থা দেখে আঁতকে উঠে গিটার ছুঁয়ে হতভম্ব গলায় বলল -‘আই ধ্রুব; এই গিটারের এতো করুণ অবস্থা ক্যান?’

ধ্রুব হেলায় তাকাল গিটারের দিকে।পরে কাঁধ ঝাঁকিয়ে গা-ছাড়া ভাবে বলল- ‘আমি করেছি।’

‘তুই?’ – ইমন এবার যারপরনাই অবাক। ধ্রুব নিজের হাতে তার এত শখের গিটারের এই করুন হাল করেছে!

ধ্রুব সিগারেটের ধোঁয়া উপরের দিকে ছাড়তে ছাড়তে নিজের মতো করেই জবাব দিল -‘হ্যাঁ, কারণ এটা কেউ ঠিক করে দিতে আসছে।’

‘ঠিক করে দি…’ ইমন বাকি কথা শেষ করতে পারেনি; তার আগেই রাজু ফিসফিস করে সবাইকে বলল –

‘ভাই, ভাবি এদিকেই আসছে।’

ধ্রুব সিগারেট মুখে নিয়ে তাকাল সামনে। অদিতি জোরোসরো ভঙ্গিতে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। এক পা এগুচ্ছে, তো আরেকবার আশপাশে তাকাচ্ছে। ধ্রুব মনেমনে হাসে; মেয়েটা ভরা ভার্সিটিতে ভয় পাচ্ছে, কেউ বুঝি ওর ছবি তুলে ফেলল, ওর ছেলেদের সাথে বলা কথাগুলো লিক করে দিল। অথচ বোকা মেয়ে এটা জানেনা: এটা ধ্রুবর ভার্সিটি। এখানে ধ্রুব যা চায়, যেভাবে চায়, সেভাবেই সব ঘটে এসেছে এবং ঘটে যাবে। ধ্রুব ইয়ামিনের কাউকে ভালো লেগেছে, কোনো শালার সাহস হবে না ধ্রুবর ওই জিনিসের দিকে নজর দেওয়ার! ছবি তোলা তো দূরের কথা।

অদিতি ধীরে ধীরে হেঁটে ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো। ধ্রুব ততক্ষণে অদিতির থেকে চোখ সরিয়ে আনমনে সিগারেট ফুঁকছে। যেন সে অদিতিকে এতক্ষণ লক্ষ্যই করেনি। অদিতি ধ্রুবর সামনে দাঁড়াতেই, ইমন নিজের হতভম্ব ভাব কেটে স্বাভাবিক গলায় হেসে জিজ্ঞেস করল-

‘আরে ভা- অদিতি কেমন আছো? কোনো দরকার?’

অদিতি হাসার চেষ্টা করলো, ফাঁকা ঢোক গিলে ধ্রুবর দিকে চেয়ে বলল-‘আপনার গিটারটা-‘

ধ্রুব এবার তাকাল অদিতির দিকে। অদিতি ওই তাকানোতে অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে সেঁটিয়ে গেলো। ধ্রুব সেসবের ধার আজ ধারলো না। ইমনের দিকে ইশারা করে বলল -‘ইমন, গিটারটা ওকে দিয়ে দে।’

ইমন ধ্রুবর দিকে চেয়ে ভ্রু বাঁকালো, ধ্রুব নিজের মতো করে বসে আছে। হয়তো এটা ধ্রুবর কোনো প্ল্যান, তাই ইমন আর দুবার ভাবলো না। চুপচাপ গিটার খুলে অদিতির হাতে ধরিয়ে দিলো। অদিতি গিটার হাতে নিয়ে, ওটাকে দেখে রীতিমত হতবম্ব হয়ে অল্প আওয়াজ চেঁচিয়ে উঠল-‘আল্লাহ, এ কি অবস্থা এটার? আমি তো এটাকে এতটাও নষ্ট করিনি।’

ধ্রুব ভ্রু বাঁকিয়ে তাকালো। অদিতি ধ্রুবর ওই চাওনি দেখে বিড়াল ছানার ন্যায় মিনমিন করে থেমে গেলো। ও আলগোছে গিটার কাঁধে ঝুলিয়ে বলল -‘আ…আমি ঠিক করে আনবো কালকে।’

‘ গুড গার্ল।’ — ধ্রুব আগের মতোই নির্বিকার!

অদিতি তারপর আর একবারও ভুলক্রমেও তাকালো না ধ্রুবর দিকে, গিটার হাতে চলে যাচ্ছে ও। ধ্রুব ও যেতেই সিগারেট রাস্তায় ফেলে পা দিয়ে পিষে ধরে উঠে দাঁড়ালো। ইমন পাশ থেকে বলল -‘অযথা মেয়েটাকে জ্বালাচ্ছিস। পছন্দ করলে ডিরেক্ট বলে দে না।’

ধ্রুব বাইকে চেপে বসে ইঞ্জিন চালু করতে করতে জবাব দিল শান্ত স্বরে-

‘যত জ্বলবে, তত ধ্রুবকে চিনবে। যতদিন না ধ্রুবকে চিনছে, ততদিন জ্বলুক না?’
________
সেদিনের কয়েকদিন পরেই আসে ‘কালচারাল প্রোগ্রামে ২০২৪’ এর ফাইনাল দিনটা।পুরো বিশ্ববিদ্যালয় যেন আজ নতুন রঙে সেজেছে।সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন বাতি দিয়ে সাজিয়ে রাখা,হরেক রকম ফুল দিয়ে সদর গেইট সাজানো হয়েছে, অতিথিদের বরণ করার জন্যে মালা আনানো হয়েছে, ফুল-চকলেটস এর ঢালা সাজানো হয়েছে। যাকে বলে হইহই-রইরই অবস্থা পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে।

ওদিকে কাঠের পুরনো দিনের আলমারির সামনে ভ্রু কুঁচকে, কোমরের দু পাশে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে অদিতি। ও আজ কি পরবে সেটাই এতক্ষণ ধরেও ভেবে পাচ্ছে না। ওর আজ পারফরম্যান্স আছে। গান গাইবে সে ওতগুলো মানুষের সামনে। তবে সেটা লুকিয়ে। তানিয়া কথা দিয়েছে ওকে, কেউ অদিতির ভিডিও করবে না, ছবি তুলবে না। এটা দেখার দায়িত্ব তানিয়ার নিজের।অদিতির বাবা কোনোদিন জানবে না, অদিতি আজ ওতগুলো লোকের সামনে গান গেয়েছিলো। অদিতি তানিয়ার কথায় কিছুটা ভরসা পাচ্ছে এখন।

প্রথমে অদিতি ভেবেছিল, লাল রঙের আনারকলি জামা পরবে। কিন্তু তানিয়া কোথা থেকে একটা নীল শাড়ি এনে ওর হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। অদিতি মানাও করতে পারেনি, তানিয়া রীতিমত ধরেবেঁধে শাড়িটা পরিয়ে হালকা সাজিয়েও দিয়েছে। এতগুলো গনমান্য লোক আসবে, যে-সে ভাবে তো তাদের সামনে পারফর‍ম্যান্স করা যায়না।

সাজ শেষে তানিয়া ঘড়ি দেখলো। দেরি হয়ে যাচ্ছে ওদের। তানিয়া তাড়া দেখালো এবার, অদিতি রুম থেকে বেরোনোর আগে ধ্রুবর গিটার তুলে নিলো হাতে। তানিয়া ধ্রুবর গিটার মুহূর্তেই চিনে ফেললো, অবাক হয়ে প্রশ্ন করল -‘অ্যাই, এটা ধ্রুব ভাইর গিটার না? এটা তোর রুমে কেন?’

অদিতি চাপা স্বরে মুখ লুকিয়ে বলল -‘অব…ঠিক করাতে এনেছিলাম।’

‘তুই ঠিক করাতে এনেছিস? ধ্রুব ভাই নিজে দিয়েছে ঠিক করাতে?’ —তানিয়া কিছুটা সন্দেহ নিয়ে বললো।

অরিতি সরল মনে জবাব দিলো—-‘ আমি সেদিন এটা নষ্ট করে ফেলেছিলাম না? তাই আমাকে এরা ঠিক করানোর জন্যে জোর করে হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। এত বাজে অবস্থা ছিলো এটার, আমার কতগুলো টাকা গচ্ছা গেছে জানো?’

তানিয়া হা করে অদিতির বলা ধ্রুবর প্রতি অভিযোগগুলো শুনছিল। অদিতির কথা শেষ হতেই, তানিয়া এবার ফিক করে হেসে উঠলো। অদিতি বোকার মতো ওর হাসি দেখে বলল -‘হাসছো কেন?’

তানিয়া ঠোঁট চেপে হাসি আটকানোর চেষ্টা করে এগিয়ে এসে দু-কাঁধ আগলে ধরলো অদিতির, ওর গালটা টেনে দিয়ে হেসে বলল —‘হাসছি কারণ তুই অনেক ভোলা। আহারে, কিভাবে যে সামনে তোর মতো একটা মেয়ে ওমন রাফ-টাফ মানুষকে সামলাবে, গড নোউজ।’

অদিতি ভ্রু বাঁকালো— ‘আমি আবার কাকে সামলাবো?’

তানিয়া হেসে উঠে অদিতিকে ঠেলতে ঠেলতে রুমের বাইরে নিতে নিতে বলল -‘সেটা সময় বলবে, গার্ল। এখন চল, দেরি হচ্ছে আমাদের।’

#চলবে

#আমার_প্রেমিক_ধ্রুব |১১||
#অবন্তিকা_তৃপ্তি

কালচারাল প্রোগ্রামের আয়োজনের কাজে জুনিয়ররা মিলে ধ্রুবকে ধরেছে। সকল কাজে ধ্রুব ওদের গাইড দিবে আজ। ধ্রুব প্রথমে মানা করেছিল। কিন্তু একটাপর্যায়ে রাজি হয়ে যায়। জুনিয়রদের ধ্রুব বরাবর অন্য চোখে দেখে। ওর নিজের মধ্যে কোনো বিকাশ, যোগ্যতা খুঁজে না পেলেও ওই ছোট ছোট ছেলেপেলেগুলোকে দেখলেই ওর ভালো লাগে; ওদের চোখে ভাসা স্বপ্নগুলো ধ্রুবকে একবার হাসিয়ে তুলে নিজের ভাগ‍্যের প্রতি, তো আরেকবার কোথাও না কোথাও নিজেকেও স্বপ্ন দেখতেও শেখায়।

ধ্রুব কাজ শেষ করে সবে এসে বসেছে।আজ ইমন, বাকিরা কেউ নেই। ওরা রেডি হতে হোস্টেলে ফিরেছে। ধ্রুব তাই একাই একটা ছোট মাফিন কেক নিয়ে খেতে খেতে বসেছে বেঞ্চের উপর। হঠাৎ কয়েকটা জুনিয়র দৌঁড়ে এসে ধ্রুবর সামনে দাঁড়ালো, ধ্রুব তাকাল ওদের দিকে। একেকজন বললো- ‘ধ্রুব ভাই, রেডি হবেন না? প্রোগ্রাম শুরু হয়ে যাবে তো।’

ধ্রুব নরম কেকে কামড় বসাতে বসাতে বলল —‘ওসব রেডি হওয়ার ঝামেলায় আমি নেই। আমি আমার জিন্স-টিশার্টেই ঠিক আছি।’

জুনিয়ররা শুনলো না। বরং সবাই ধ্রুবকে ঘিরে দাঁড়িয়ে জোড়াজোড়ি করতে লাগলো-‘ভাই, প্লিজ! আজকের দিনটা নিজেকে তৈরি করেন। হিরো লাগবে আপনাকে পাঞ্জাবিতে ভাই।’

‘পাঞ্জাবি? দূর হ বে, আমার পাঞ্জাবি নেই।’ —-ধ্রুব বিরক্ত হলো এবার।

জুনিয়র এবার একে অন্যের দিকে চেয়ে কাঁচুমাঁচু করতে করতে বলল —‘ভাই , আপনরা আপনার জন্যে কিছু এনেছিলাম। যদি রাগ না করেন—‘

ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে মাথা তুলে চাইলো। সবার দিকে একবার চেয়ে গম্ভীর স্বরে চাপা রাগ দেখিয়ে বললো—-‘তোরা পিচ্চি ছেলেপেলে টাকার গাছ লাগাস নাকি? পাগলামি যত্তসব; দূর হ।’

ধ্রুবর কথা কেউই মানলো না। কেউ পা বাড়ালো না সামনে। জুনিয়র একটাকে সবাই মিলে ইশারা করলো। ছেলেটা ধ্রুবর দিকে ভয়েভয়ে একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দিল। ধ্রুব কেকের প্যাকেট দলাই-মলাই করে রাস্তায় ফেলে দিয়ে ময়লা হাত জিন্সের উপরেই মুছে প্যাকেট হাতে নিল। প্যাকেট থেকে বেরিয়ে এলো একটা ভীষণ সুন্দর কালো কুর্তা, আর সাদা পায়জামা।

ধ্রুব এসব দেখে ওদের দিকে কড়া মেজাজ নিয়ে তাকাল, বাকিরা ধ্রুবর এমন চাওনি দেখে গুটিয়ে গেছে ততক্ষণে। ধ্রুব রেগে গিয়ে বলল —‘এগুলা কি বাল-ছাল এনেছিস? আমাকে এগুলা পরতে দেখেছিস কোনোদিন? বাপের জন্মেই আমি পরিনা এসব। নিয়ে যাহ।’

ধ্রুব প্যাকেটের সবকিছু এলোমেলো করে আবার প্যাকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে প্যাকেট বাড়িয়ে দিল জুনিয়র ছেলেটার দিকে। সবাইকে এড়িয়ে চলে যাবে বলে, উঠে দাঁড়াতে গেলে সবাই জেদ করে প্যাকেট হাতে দাঁড়িয়ে রইল, অনুনয় করে বললো–‘নিয়ে নিন না ভাই। আমরা অনেক শখ করে এনেছি। আজ একবার অন্তত পড়েন।’

একটা ছেলে ধ্রুব সম্পর্কে তখনও তেমন কিছু জানে না। ও এবার পাকনামি করে সস্তা মস্করা করে বসলো ধ্রুবর সঙ্গে। টিপ্পনি কেটে বললো —‘ ভাই পরে নিন এটা, ভাবিও আজকে আপনার উপরে ক্রাশ খাবে একদম পাক্কা।’

ছেলেটা কথাটা বলে ফিক করে হাসল। ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে ফেলল! বাকি জুনিয়রদের তখন মাথায় হাত পরলো। হতাশ চোখে, ভয়ভয় চোখে ধ্রুবকে দেখতে লাগলো ওরা। সবাই একে অন্যের মুখের দিকে তাকাতে লাগল। ধ্রুব রেগে যাচ্ছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। ধ্রুব রেগে যাওয়ার আগে এখন থেকে কেটে পরাই উত্তম। ওরা প্যাকেটটা কোনরকমে বেঞ্চের উপর রেখে বোকার মতো হেসে বললো—

‘মাফ করে দিয়েন ভাই। ও নতুন, বুঝে নাই। সরি ভাইইই।’

বলেই দাঁত কেলিয়ে, তারপরই এক ভো দৌঁড়। ধ্রুব সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। ওর ভেতরে এতক্ষণ হাসি এলেও, ছেলেপেলেদের একটু ভয় দেখাতে ইচ্ছে হয়েছে বিধায় ওমন যমের মতো মুখ বানিয়ে ছিলো। ছেলেগুলো যেতেই ও কপালে দু-আঙুল চেপে হেসে উঠল নিঃশব্দে । প্যাকেটে রাখা কুর্তা বের করে গায়ের সঙ্গে মেলাতে মেলাতে ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো-

‘সত‍্যি কি এসব ভদ্র সমাজের পোশাক পরলে তুমি আমার প্রেমে পরবে, অদিতি? হাহ; যতসব ছেলেমানুষী কথা।’
________________
অদিতি শাড়ির কুচি সামলে তানিয়ার সঙ্গে এগুচ্ছিল। তানিয়া ওকে ইনস্ট্রাকশন দিচ্ছিলো কিভাবে আজ সবার সামনে পারফর্ম করলে পুরো বিষয়টা সুন্দর দেখাবে। অদিতিও মন দিয়ে সেসব শুনছিলো। গেইট দিয়ে ঢোকার সময় দেখে প্রধান অথিতির গাড়ি এসে পৌঁছেছে ততক্ষণে। তানিয়া সেটা দেখে ওকে দ্রুত টেনে নিয়ে যেতে লাগলো সামনে।

পারফরম্যার আরেকটা জায়গায় সবাইকে একসাথে রাখা হয়েছে। এখন সাহিত্যিক পারফরম‍্যান্স হবে, তারপরেই গানের পালা। অদিতি বসে বসে অপেক্ষা করছে। ওর চেয়ারে ঠেস দিয়ে রাখা ধ্রুবর গিটার। ও আশেপাশে চোখ দিয়ে খুঁজছে ধ্রুবকে। আজ একবার এখন অব্দি ওই ছেলেকে দেখা গেলো না। কোথায় সে কে জানে?

অদিতি আশপাশে ধ্রুবকে দেখতে না পেয়ে দোনামনা করে পাশে থাকা তানিয়াকে জিজ্ঞেস করলো -‘তানিয়া, তাকে দেখেছিস?’

তানিয়া স্ক্রিপ্ট পরছে, ও ছোট গল্পে অভিনয় করবে আজ। অদিতির কথা শুনে স্ক্রিপ্ট পড়তে পড়তেই মিটমিট হেসে জবাব দিল -‘কাকে দেখার কথা বলছিস? আমি তো কখন থেকেই কাউকেই দেখিনা।’

অদিতি তানিয়ার এমন টিটকারি করায় বিরক্ত হলো যেমন। চাপা গলায় গিটারের দিকে ইশারা করে বললো—-‘এই গিটারের মালিককে। আমাকে এটা ধরিয়ে দিয়ে নিজেই লাপাত্তা। একটু পরেই আমার পারফরম‍্যান্স আসবে। তখন এটা যদি কেউ চুরি করে নিয়ে যায়? তখন আবার আমাকেই ধরবে।’

তানিয়া সব শুনে স্ক্রিপ্টে মন দিয়ে দাঁত দিয়ে নখ খুঁটতে খুঁটতে জবাব দিলো—‘ডোন্ট ওরি অদিতি। ধ্রুব ভাইর গিটার তো? কেউ চুরি করবে না। রিল্যাক্স।’

অদিতি শুনলো। ও তবুও নিশ্চিন্ত হতে পারছে না। হাফ ছেড়ে মুখ বেজার করে কিছুক্ষণ বসে রইলো। তারপর কি মনে করে আবার সোজা হয়ে উঠে দাঁড়াল, গিটার হাতে এবার হেঁটে হেঁটে খুঁজতে লাগলো ধ্রুবকে। আশপাশে ওর চোখ দুটো খুঁজতে লাগল ওই বখাটে, গুন্ডা, একঘুঁয়ে মানুষটাকে। হঠাৎ কেউ পেছন থেকে ‘অ্যাই ধ্রুব’ বলে ডেকে উঠে। অদিতি ডাকের উৎস অনুসারে সামনে তাকাল।

ওটা কি ধ্রুব? ধ্রুব ইয়ামিন? অদিতির বুক ধপাস করে যেন লুটিয়ে পরলো। গায়ের সমস্ত লোম দাঁড়িয়ে গেল সম্ববত।

ধ্রুব ইয়ামিন আজ কালো রঙের কুর্তা পরেছে। আজ অবাক করা ব্যাপার হিসেবে অত্যন্ত ডিসেন্ট ভঙ্গিতে ওর এলোমেলো চুল জেল দিয়ে সেট করা, কুর্তার হাত ফোল্ড করে রাখা; যার দরুন হাতের পুরুষালি লোম-ভেইনস দেখা যাচ্ছে। কি সুন্দর দেখতে লাগছে সেগুলো!

অদিতি চোখ বড়বড় করে ধ্রুবর দিকে চেয়ে রইল বেহায়া-চুড়ান্ত নির্লজ্জের মতো। ধ্রুব আসছি বলে বড়বড় পা ফেলে এগুচ্ছিল। অদিতির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ওর নাকে ধ্রুবর ম্যান পারফিউমের কড়া ঘ্রাণ ভেসে আসে।অদিতি মুহূর্তের মধ্যেই মোহে পরে যায় যেন। নিজের স্বভাবের বাইরে গিয়ে পেছন ঘুরেও আবারো তাকিয়ে থাকে ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব কথা বলছে, কথা বলার ফাঁকে হাত নাড়াচ্ছে নিজস্ব ভঙ্গিতে, মাঝেমধ্যে কপাল চুলকে নিঃশন্দে হাসছে। আশেপাশে যেতে যেতে অনেকেই সালাম দিচ্ছে তাকে, সে হাত উঁচু করে ওদের ইশারা করে দেখাচ্ছে।

সব কিছুই অদিতির নজরে এলো। পুরোটা সময় ও অদ্ভুত ভাবে নির্লজ্জের মতোই চেয়ে রইল ধ্রুব ইয়ামিনের দিকে। অদিতি ভুলেই গেলো, ওর পারফরম‍্যান্স আছে।সঙ্গে এও ভুলে গেল, ও কেমন ফ্যামিলি থেকে এসেছে, কি ওর পরিচয়। জাত-মান-পরিচয় ভুলে কখন যে অদিতি হঠাৎ-একদম আচমকা ওই বখাটে, একঘুঁয়ে ধ্রুবর প্রেমে আ/হত—-ক্ষ/তবি/ক্ষত হয়ে গেল সেটা ও নিজেও বুঝতে পারেনি।

অদিতির ডাক আসবে আর দুজন পরেই। তানিয়া দৌঁড়ে এলো ডাকতে ওকে। অদিতি তখনও সম্মোহনের ন্যায় চেয়ে ছিলো ধ্রুবর দিকে। তানিয়া এসে অদিতিকে ধাক্কা দিল, এবার এতক্ষণে ধ্যান ফিরল যেন ওর। চমকে তাকাল ও তানিয়ার দিকে।

তানিয়া বিরক্ত হয়ে বলল -‘তোর পারফরম্যান্স আছে আর দশ মিনিট পরেই। দৌঁড়ে যা সামনে।’

অদিতি লজ্জায় পরে গেল। এভাবে ও একটা বাইরের ছেলের দিকে চেয়ে ছিলো এতটাসময়। ছিঃ; ভাবতেই গায়ে কাটা দিল যেন! অদিতি মুখটা অপরাধবোধে লুকিয়ে ফেলল, গিটার দেখিয়ে বললো–‘ এটা দিয়ে আসি আমি, তুমি এখানেই অপেক্ষা করো প্লিজ।’

‘দ্রুত যা।’ -তানিয়া তাড়া দেখালো।

অদিতি শাড়ির কুঁচি একহাতে সামলে,অপরহাতে গিটার নিয়ে এগিয়ে গেল ধ্রুবর দিকে।যতই ধ্রুবর দিকে একপা এগুচ্ছে, ওর বুকের ধুকপুকানি ততই বাড়ছে। যেন হৃদপিন্ড ফেঁটে বেরিয়ে আসবে এখনি। ওর মনের মধ্যে যেন ভয়াবহ ঝড় বইছে। যেকোনো মুহূর্তেই ও এখানেই, এই অবস্থাতেই লুটিয়ে যাবে। অদিতি নিজেকে সামলাতে পারছে না আজ। ধ্রুবকে যতবার দেখছে, ও অন্যমনষ্ক হয়ে যাচ্ছে শুধু।

অদিতি তবুও নিজেকে শক্ত করে এগিয়ে গেল। ধ্রুবর পেছনে দাঁড়িয়ে ডাকলো—-

‘শুনুন।-‘ অদিতির গলা কাঁপছিল।

ধ্রুব কথা বলার মধ্যে ফিরে তাকাল। নীল শাড়ি পড়া অদিতিকে আপাদমস্তক দেখে ওর চোখ হঠাৎ করে ছানাবড়া হয়ে গেল। বুকটা যেন ধ্বক করে উঠলো। ধ্রুব তবুও নিজেকে সামলে গলার স্বর স্বাভাবিক রেখে বলল —‘ হু, বলো।’

অদিতি গিটার বাড়িয়ে দিল। ধ্রুব সেটা দেখে গিটার নিতে নিতে বললো- -‘ঠিক করে ফেলেছো?’

ধ্রুব যদি খেয়াল করতো, দেখতো অদিতির হাতও কাঁপছিল। ধ্রুব সেটা লক্ষ করেনি তখনও। ও গিটার কাঁধে ঝুলিয়ে নিল। নিজের দিকে আড়চোখে একবার চেয়ে তারপর আবার অদিতির দিকে তাকাল। অদিতি কি ওকে লক্ষ‍্য করেনি? ধ্রুব ইয়ামিন আজ কালো কুর্তা পরেছে? এতক্ষণে হাজারটা প্রশংসা শোনা শেষ ওর, সবাই বলেছে ধ্রুবকে নাকি আজ মারাত্মক লাগছে। অথচ অদিতি ওকে খেয়ালই করেনি?হঠাৎ করেই যেন ভীষণ আফসোস হলো ধ্রুবর।

অদিতি দাঁড়িয়ে আছে দেখে, ধ্রুব নিজের হীনমন্যতা লুকিয়ে নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলো -‘কিছু বলতে চাও, অদিতি?’

অদিতি মাথা তুলে তাকাল। দুজনের চোখে চোখ পরলো।আজ দুজনের মনই বেইমানি করছে বারবার। একে অপরকে দেখলেই দেখলেই অসভ্য হয়ে যাচ্ছে শুধু। শুরুতেই অদিতি বহু কষ্টে চোখ ফেরালো ধ্রুবর নেশালো চোখ-দুটো থেকে। মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দিল – ‘কিছু বলার নেই, আমি আসি।’

অদিতি ছুঁটে পালিয়ে এলো সেখান থেকে। ধ্রুব আহাম্মক হয়ে চেয়ে রইল ওর যাওয়ার দিকে। একটাসময় নিজেই নিজের দিকে চেয়ে বিড়বিড় করল -‘ও কি আমাকে লক্ষ্যই করলো না?’

#চলবে

#আমার_প্রেমিক_ধ্রুব |১২|
#অবন্তিকা_তৃপ্তি

আয়োজিত সে রাতে, অতশত মানুষের সামনে বারবার, বারবার অদিতির চোখ পরে যাচ্ছিলো ধ্রুবর উপর। ধ্রুব হাঁটছে, ব্যস্ত ভীষণ আজ, বারবার এ-ওকে অর্ডার দিচ্ছে। সবকিছু কেমন অধৈর্য‍্যর মতো দেখে যাচ্ছে অদিতি। মাঝেমধ্যে ধ্রুব নিজেও এদিকে তাকালে, সঙ্গেসঙ্গে ও চোরের মতো চোখ সরিয়ে মুখ লুকিয়ে ফেলে। ধ্রুব তখন মাথাটা একটু নিচু করে মৃদু হেসে, আবারও কোনা চোখে ছয়! ম্যাডামের নজরে পরেছে তাহলে সে।

প্রধান অতিথির আসনে যখন ধ্রুবর বাবা এসে বসলেন, দেখা গেল ধ্রুব তখন চোখ-মুখ কুঁচকে সে জায়গা থেকে সরে এসেছে। ধ্রুবর বাবাকে নিয়ে স্যাররা নানা ভালো কথা শোনাচ্ছিলেন সবাইকে,ছেলে হয়েও সেদিকে ওর একটুও মন নেই। ও নিজের মতো করে সবকিছু থেকে অনেকটা দূরে এসে সিগারেট ধরালো।

হঠাৎ করে মেয়ে কাউকে কেশে উঠার শব্দে ধ্রুব সিগারেট মুখে ধরিয়ে পাশে তাকাল, অদিতি মুখে হাত চেপে কাশছে, আশেপাশে সিগারেটের ঘন ঘূর্ণায়মান ধোঁয়া। ধ্রুব থতমত খেয়ে সিগারেট ফেলে দিল, জুতো দিয়ে সিগারেট পিষে নিয়ে, হাত দিয়ে এলোমেলো ভঙ্গিতে ধোঁয়া কাটানোর চেষ্টা করলো কিছুক্ষণ। ও সরতে সরতে কখন এসে অদিতির পাশে দাঁড়িয়েছে, খেয়ালই ছিলো না ওসব। কিছুক্ষণ পর অদিতির কাশি কিছুটা থামলো। ধ্রুব অপরাধী ভঙ্গিতে কিছুটা এগিয়ে এসে বলল—-‘ঠিক আছো তুমি?’

অদিতি মুখ থেকে হাত নামলো। কানের পেছনে বেবি হেয়ার গুঁজতে গুঁজতে নম্র গলায় বলল -‘হ্যাঁ।’

ধ্রুব শুনে আর দ্বিতীয়বার তাকালো না অদিতির দিকে।চোখ সরিয়ে নিল। স্টেজে পারফরম্যান্স চলছে। বুকে হাত আড়াআড়ি ভাঁজ করে সেটাই দেখতে লাগল। অদিতি পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে তখনও ধ্রুবকে। ধ্রুবর পাশে দাঁড়িয়ে ওকে দেখার জন্যে অদিতির হৃদয়ে নেশা কাজ করছে যেন। মস্তিষ্ক বলছে- ফেঁসে যাবি অদিতি, আগাস না ওদিকে; দয়া করে আগাস না। কিন্তু ওর মন যেন আজ ভুল করতে উঠেপরে লেগেছে। এইযে ধ্রুবকে বারবার দেখা, ওর প্রতি হঠাৎ করেই ফল করা-এসব কিছু অদিতির অনিচ্ছাকৃত। তবুও অদিতি ফেঁসেছে। কিন্তু ও তো ফাঁসতে চায়নি।তবুও কেন?

অদিতি নিজেকে আটকালো, লাগাম টানলো নিজের এলোমেলো, নিষিদ্ধ ভাবনাগুলো। কথা বললো না, দাঁড়ালো না ধ্রুবর পাশে। চলে এলো ওখান ঘেকে। ওর পারফরম্যান্সের জন্যে ডাক এসেছে ততক্ষণে। ধ্রুব সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল, দূরে দাড়িয়ে থেকে দেখছে— অদিতি স্টেজে উঠছে।

ধ্রুবর হঠাৎ কি মনে পরলো। ও পাশ থেকে হাত উঁচিয়ে একজনকে ডাকলো-

‘ওই নিরব; এদিকে আয়!’

নিরব কোকের গ্লাস নিয়ে ছুটছিলো। ধ্রুব ডাকতেই তড়িগড়ি করে এগিয়ে এসে একশ্বাসে বলে উঠলো—-‘কি ধ্রুব ভাই? কোক খাবেন? এই নিন।’

ধ্রুব একটা ক্যান নিলো, তারোএ সেটার ছিপি খুলতে খুলতে নির্বিকার গলায় বলল -‘-তোদের ভাবি পারফর্ম করছে, কেউ যেন ছবি বা ভিডিওস না তুলে; খেয়াল রাখ।’

‘ভাবি—‘ —নিরব অবাক হয়ে স্টেজের দিকে তাকাল। অদিতি সেখানে জোরোসরো ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। নীরব এবার দাঁত বের করে হাসলো, বললো—-‘ওকে ভাই, কাজ হয়ে গেছে ভাবো।’

নীরব আবারদৌড়ে গেল ভিড়ের মধ্যে। ধ্রুব বুকে আড়াআড়ি হাত ভাঁজ করে তখনও স্থির ভঙ্গিতে দেখছে নীল শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে থাকা অদিতি হায়াতকে।

অদিতি মাইক হাতে গান গাইছিল, চোখ বুজে। গান গাওয়া শেষ করতেই, সবাই একসঙ্গে করজোরে হাততালি দিয়ে উঠলো। মেয়েটা যেন লজ্জায় পরে গেল; এসব অনুপ্রেরণা, হাততালি সবকিভুই ওর জন্যে বড্ড নতুন। তবে এই নতুন অনুভূতিগুলো ওর দারুণ লাগছে। অদিতি লাজুক হেসে সবার দিকে তাকিয়ে হেসে, নিচে নেমে এলো।

অদিতি নিচে নামতেই একজন প্রফেসর এগিয়ে এলেন—-‘অদিতি, লিসেন!’

অদিতি ডাক শুনে এগিয়ে গেল, প্রফেসর বললেন-‘বিরিয়ানির প্যাকেট দশটা কম পরেছে, রেস্টুরেন্ট থেকে এনে দিতে পারবে?’

অদিতি অবাক হয়ে বলল —‘স্যার আমি একা?’

—‘কাউকে লাগবে? ওকে বলছি।অ্যাই ইমন।’

ইমন পাশে দিয়েই যাচ্ছিল ধ্রুবর কাছে, প্রফেসরের ডাক শুনে ও কিছুটা বিরক্ত হলো যেন। তবুও মুখে হাসি বের করে এগুলো;— ‘জ্বী স্যার?’

‘অদিতির সঙ্গে যাও, রেস্টুরেন্ট থেকে আরো দশ প্যাকেট বিরিয়ানি লাগবে, দুজন মিলে নিয়ে আসো।’

ইমনের অদিতির দিকে তাকাল বিরক্ত হয়ে। পরপর ওর চোখ-মুখ হঠাৎ করে যেন উজ্জল হয়ে এলো! ও অদিতির দিকে বাঁকা চোখে দুষ্টু ভঙ্গিতে তাকালে, অদিতি কেশে উঠে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিল। ইমন প্রফেসরের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল —-‘স্যার,কিন্তু ধ্রুব তো ওদিকেই যাচ্ছে, ওরে বলি?’

প্রফেসর ধ্রুব যাবে শুনে যেন আকাশ থেকে যেন পরলেন। চশমা নাকের ডগা থেকে আঙুল দিয়ে ঠেলে তুলে, থমথমে গলায় বললেন—-‘তোমাদের ধ্রুব ভাই যাবে? এ কি শুনছি আমি?’

ইমন দ্রুত বলল -‘হান্ড্রেড পার্সেন্ট যাবে স্যার, আমি বন্ধু হয়ে ওকে অর্ডার দিব এখন, ও না গেলে আজকেই আমাদের বন্ধুত্বের এখানেই টাটা; বাই-বাই হয়ে যাবে। মার্ক ম্যাই ওয়ার্ড, স্যার।’

প্রফেসর ইমনের কথায় খুব একটা পুলকিত হলেন বলে মনে হলো না। তিনি দায়ছাড়া ভাবে অদিতির দিকে একবার চেয়ে আবার ইমনের দিকে তাকালেন, ধ্রুবর যাওয়ার কথা একবিন্দুও পাত্তা না দেওয়ার ভান করে বললে——‘যাও দেখো সে রাজি হয় কিনা। মন্ত্রীর ছেলেকে তো আমার কিছু বলার সাধ্য নেই। সে রাজা, আমরা তো প্রজা মাত্র। যাও বলো এখন।আমার কাজ ঠিক মতো হলেই আমি খুশি।’

ইমন মাথা নিচু করে সালাম দিল। প্রফেসর চলে গেলেন। ধ্রুব যাবে শুনে, অদিতি কোনঠাসা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো ইমনের সামনে। ইমন ধ্রুবকে ডাকল-

‘এই যে আমাদের ধ্রুব, আসুন তো এদিকে।’ —ইমনের কণ্ঠ ফুরফুরে, মেজাজ আজ ভীষণ আমেজে আছে মনে হচ্ছে। যেন দুজন মানব-মানবীর মধ্যে প্রেম করিয়ে দেওয়ার মতো মহৎ কাজ করতে পেরে সে অত্যন্ত গর্বিত।

ধ্রুব ইমনের এভাবে ন্যাকামো করে ডাকাতে বড্ড বিরক্ত হয়ে তাকাল, ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে এসে দাঁড়ালো ইমনের সামনে। পাশে অদিতি দাঁড়িয়ে আছে,ধ্রুব ওর দিকে একবার চেয়ে; ইমনকে বলল —‘ সবার সামনে ন্যাকামো না করলে চলে না তোর?’ ’

ইমন দাঁত কেলিয়ে হেসে অলক্ষে অদিতিকে ইশারা করে বলল ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল —‘তোর প্রেমের জন্যে রাস্তা ক্লিয়ার করছি ব্যাডা। অদিতি রেস্টুরেন্টে যাবে বিরিয়ানির প্যাকেট আনতে। তুই ওরে কোম্পানি দিবি।’

ধ্রুব কান সরিয়ে ফেলল ইমনের কাছে থেকে, অদিতির দিকে ভ্রু বাঁকিয়ে চেয়ে বলল —‘তুমি রেস্টুরেন্টে যাচ্ছো?’

অদিতি ঢোক গিলে, আস্তে করে মাথা নাড়লো —-‘জ্বী।’

ধ্রুব ইমনের দিকে তাকাতেই, ইমন চোখ টিপলো; রাস্তা ক্লিয়ার। ধ্রুব ইমনের এমন অদ্ভুতরকম ন্যাকামো দেখে চোখ উল্টে ফেলে হতাশ শ্বাস ছাড়ে।তারপর নিজেও ন্যাকামোর চুড়ান্তে গিয়ে অদিতিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল —-‘তো তুই যা না, আমাকে টানছিস কেন এখানে?’

অদিতি অবাক হলো; ধ্রুব কি ওর সঙ্গ চাইছে না? ওর বুকটা মুচড়ে উঠল হঠাৎ যেন। ইমন ধ্রুবর হঠাৎ বদলে যাওয়া দেখে যারপরনাই অবাক হলো , বললো —‘তুই যাবি না?’

ধ্রুব ভ্রু বাঁকালো,ইশারা করলো কিছু। ইমন সঙ্গেসঙ্গে শুধরে গিয়ে বলল —‘না রে আমার কাজ আছে, ওই গেইটের দিকে নজর দিতে হবে এখন। ফুল-বেলুন নাকি কে যেন ছিঁড়ে ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রফেসর থাকতে বলেছে।’

ধ্রুব-ইমন অদিতির আড়ালে একে অন্যের দিকে চেয়ে হেসে উঠলো নিঃশন্দে। ইমন এটা বলার পরপরই দৌড় লাগালো সামনে।ও যেতেই ধ্রুব ওর ডান হাত হাতটা জেন্টেলম্যানের মতো সামনে এগিয়ে ইশারা করে বললো—‘লেডিস ফার্স্ট।’

অদিতি ধ্রুবর হাতটা দেখল, যা ধ্রুব রাস্তার দিকে ইশারা করে আছে। অদিতি মনেমনে আরো একবার ভীষণ মুগ্ধ হলো। ও মৃদু হেসে, আবার দ্রুত হাসি লুকিয়ে ফেলে এগিয়ে গেল সামনে, ধ্রুব হাত আবার সরিয়ে নিয়ে পেছন পেছন হাঁটছে।

রেস্টুরেন্ট পাশেই যেহেতু, ওরা হাঁটছে দুজন ফুটপাথ ধরে। অদিতি বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, কেউ কি ওদের দেখছে? ধ্রুব হয়তো সেটা লক্ষ‍্য করল, ও সামনের রাস্তার দিকে চেয়েই হেঁটে হেঁটে বলে উঠলো——-‘তুমি কোনো সেলিব্রেটি নও যে সব জায়গায় মানুষজন তোমার ছবি তোলার জন্যে ডেসপারেট হয়ে থাকবে।’

ধ্রুবর আচমকা বলা কথায় চমকে উঠলো অদিতি। লজ্জায় পরে গিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে; বেবি হেয়ারগুলো কানের পেছনে গুঁজতে গুঁজতে নিচু গলায় বলল—-‘তেমনটা নয়। আমি তো এমনি—‘

‘বাবাকে অনেক ভয় পাও, রাইট?’—ধ্রুবর নির্বিকার গলা।

অদিতি অবাক হলো, ধ্রুব ওর ফ্যামিলি সম্পর্কে এসব কিভাবে জানে? অদিতি ধ্রুবর দিকে অবাক চোখে চেয়ে ছিলো, ধ্রুব সেটা বুঝতে পেরেছে হয়তো। ও অদিতির দিকে তাকাল এতক্ষণে, বললো —‘অবাক হওয়ার কিছু নেই। যেদিন গুজব শুনে কেঁদে কেঁদে আমার কাছে এসেছিলে, সেদিনই বুঝেছিলাম।’

অদিতি এবার মৃদু হাসল, হাঁটতে হাঁটতে আনমনা হয়ে জবাব দিলো——‘আমার ব্যবহারগুলো হয়তো মানানসই নয় সব জায়গায়; বারবার আপনাদের অপ্রস্তুত করেছি আমি। কিন্তু এই ব্যবহারগুলো আমার ইচ্ছাকৃত নয়, আমি ঢাকা শহরের সঙ্গে এখনও ফিট হতে পারিনি সম্ভবত।’

‘ঢাকা শহর? নাকি বয়েজদের সঙ্গে?’ -ধ্রুবর গম্ভীর কন্ঠ।

অদিতি থামল, কি বলবে ভেবে পেল না বোধহয়। ও লজ্জিত ভঙ্গিতে শাড়ির কুঁচি সামলে নিতে নিতে বলল -‘হু, হয়তো ওটাই।’

অদিতিকে না বোঝালেও; ধ্রুব মনেমনে ভীষণ স্বস্তি পেল। ওর মতোই ওর গার্লফ্রেন্ডও একই আচরণ-বৈশিষ্টের হবে। ধ্রুব ইয়ামিন এত পপুলার হওয়া স্বত্বেও নিজের হীনমন্যতা, নিজেই নিজেকে ছোট করে দেখার জন্যে আজ অব্দি কোনো মেয়ের কাছে ঘেঁষেনি। ওর গার্লফ্রেন্ডও হবে তেমনি, বাবার ভয়ে আজ অব্দি ও-ও কোনো ছেলের পাশে ঘেঁষেনি। ধ্রুব নিজেই নিজেকে খুশি হয়ে মনেমনে বাহবা দিলো; হিরা জুটিয়েছে ও নিজের জন্যে।

ধ্রুব রেস্টুরেন্টের দরজা খুলে অদিতিকে ইশারা করলে আগে ঢোকার জন্যে। ও ধ্রুবর চোখে একবার চেয়ে দেখল, ধ্রুব হাত দিয়ে দরজা খুলে রেখে চোখের ইশারায় অদিতিকে আগে ঢোকার জন্যে ইশারা করছে। মনেমনে ও মুগ্ধ হলো আরেকবারের মত; ধ্রুবর থেকে চোখ সরিয়ে ভেতরে ঢুকলো। ধ্রুব তারপর দরজা ঠেলে অদিতির পেছন পেছন রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। সেখানে অদিতির কিছুই করা লাগলো না। ধ্রুব নিজেই পেমেন্ট করে বিরিয়ানির প্যাকেটগুলো দুটো বড় পলিথিনে নিয়ে নিলো। অদিতির ক্যারি করতে চেয়েছিল ব্যাগ, ধ্রুব মানা করে বসেছে; অগ‍্যতা অদিতি থেমেছে।

এবার দরজা খোলার সময়, ধ্রুব দাঁড়িয়ে পরলো। ওর হাত দুটো বাধা, পলিথিন হাতে। ধ্রুব কাঁচুমাঁচু ভঙ্গিতে অদিতির দিকে তাকালো। অদিতি হেসে উঠল নিঃশব্দে,রাজার বড়াই এখানেই শেষ তবে!

অদিতি আলগোছে এগিয়ে গিয়ে নিজেই দরজা খুলে দিল, তারপর ইশারা করলো ধ্রুবকে আগে যেতে। ধ্রুব এগিয়ে গেল আগে,অদিতি দরজা আটকে পেছনে পেছন এগুলো।

ধ্রুব একা একা এতকিছু বইছ; এভাবে অদিতির কেমন একটা লাগছে। ও তাই আবারও জোর করলো- -‘পলিথিন আমাকে কাছে একটা দিন, দুটো একা সামলাচ্ছেন।’

ধ্রুব হাঁটার মধ্যে নিজের মতো করেই জবাব দিলো—-‘মেয়েরা ব্যাগ ক্যারি করে না। ওসব আমাদের কাজ।’

অদিতি হেসে উঠল, যেন কৌতুক শুনছে। ও যেহেতু ধ্রুবর পেছনে হাঁটছে; তাই ধ্রুব দেখতে পেলো না ওর হাসি। অদিতি কৌতুকভরা হাসি ঠোঁটে টেনে রেখেই, হাঁটতে হাঁটতে বলল —‘মেয়ে-ছেলেদের এই নিয়ম কি কোথাও লেখা আছে?’

ধ্রুব হাঁটতে হাঁটতে জবাব দিল -‘ওগুলো আমার ভাবনা, আমি আমার মা কে কখনো ব্যাগ বইতে দেখিনি। আমি নাহয় উনি বইতেন।’

‘উনি?-‘ অদিতি চিনতে পারলো না।

ধ্রুব এবার হাঁটার গতি কিছুটা কমালো। গম্ভীর স্বরে; ছোট করে জবাব দিল —-‘ম্যাই বায়োলজিকাল ফাদার।’

অদিতি অবাক হলো। হয়তো বুঝতে পেরেছে- ধ্রুব কোনো কারণে তার মন্ত্রী বাবার প্রতি অসন্তুষ্ট। এই সেনসেটিভ ব্যাপারে গভীর যাওয়া ঠিক হবে না, তাই ও এ ব্যাপারে তেমন কথা বাড়ালো না।

ওরা প্রায় চলেই এসেছে ভার্সিটির কাছে। ভার্সিটি এরিয়ায় আসতেই ধ্রুবকে এ-ও সালাম দিতে শুরু করেছে। ধ্রুব ওদের দিকে একবার চেয়েই চোখ সরিয়ে নিচ্ছে। অদিতি দেখছে; আশপাশের মানুষ ওকে ধ্রুবর সঙ্গে দেখে বাঁকা বজরে দেখছে। এতক্ষণ কোনো এক অজানা কারণে স্বাভাবিক থাকলেও; এবার যেন অদিতির হুশ ফিরলো। ও নিজের মাথায় শাড়ির আঁচল তুলে নিল দ্রুত; মুখ আঁচলের এক কোণায় লুকিয়েও নিলো।

ধ্রুব বিরিয়ানির পলিথিন বেঞ্চের উপর রাখতে রাখতে কেন যেন অলক্ষ্যে অদিতির দিকে তাকালো। অদিতি তখন শাড়ির আঁচল মাথায় তুলে ইতি-ওতি দেখছিল। ধ্রুব থমকে গেল যেন; অবাক হয়ে শাড়ির আঁচল মাথায় তুলে রাখা অদিতির দিকে চেয়ে রইলো হা হয়ে। নীল শাড়িতে আঁচল মাথায় তোলা অবস্থায় সম্পূর্ণ বউ-বউ দেখাচ্ছিল ওকে তখন।

ধ্রুব সামনা-সামনি অদিতির এমন মারাত্মক রূপ কখনোই দেখেনি। সবসময় ঢিলে সালোয়ার-কামিজে ঢেকে থাকা অদিতির এমন ভোবনমোহিনী সৌন্দর্য‍্যে থমকে রইলো যেন ধ্রুব।

অদিতি চলে যাবে কিনা ভাবছিলো তখন। এখনও কাজ বাকি; প্যাকেটগুলো ওদেরই সার্ভ করতে হবে।একটা মানুষ শুরু থেকে এত কাজ করছে, তাকে এভাবে অর্ধেক কাজের মধ্যে রেখে চলে যাওয়াটাও তো অনুচিত। তাই ও সেভাবেই দাঁড়িয়েই রইলো,অথছ ভয় এখন কাটেনি ওর। বারবার এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে; সবাই যেতে যেতে একবার হলেও ; ধ্রুব-অদিতির দিকে চোখ যাচ্ছিল। অদিতি সেটা বুঝতে পারছে; মূলত এইজন্যেই অদিতি আরো কোনঠাসা হয়ে গেছে।

ধ্রুবর এসবে মনোযোগ নেই। ওর সম্পূর্ণ ধ্যান-ধারণা অদিতির সরলতায় ঘেরা মুখের উপর এসে আটকে গেছে। আচমকা ধ্রুব এক অদ্ভুত কাজ করে বসলো। অদিতির চোখের দিকে চেয়ে নিজের মতো করেই স্প্যানিশ ভাষায় বলে বসলো-

‘অ্যারেস মি এনামোরাদা; মি আমোর।’

এ কি বলছে ও? ধ্রুব কথাটা বলে নিজেই থতমত বনে গেল। ওর মস্তিষ্ক যেন এবার সচল হলো! অদিতি কথাটা শুনে ফেলেছে;ও ভ্রু কুঁচকে ধ্রুবর দিকে চেয়ে বলে উঠল -‘জ্বি?’

‘কিছু না।’ —-ধ্রুব অদিতির দিকে পিঠ দেখিয়ে তড়িগড়ি করে পলিথিন থেকে প্যাকেটগুলো বের করা শুরু করেছে। অথচ অদিতি বুঝতে পেরেছে; ধ্রুব কিছু একটা বলেছে ওকে, চাইনিজ ভাষায় কি যেন! ধ্রুবকে তাড়াহুড়ো করে কাজ করতে দেখে ও আর সেটা নিয়ে ঘাটাল না। কাজে হাত লাগালো ধ্রুবর সঙ্গে।

ওদিকে দূর থেকে সৌরভ ইয়ামিন ধ্রুব-অদিতির দিকে চেয়ে আছেন মুগ্ধ দৃষ্টিতে। ওরা কাজ করছে; একে অপরের এতটা কাছে থাকছে; এসব কিছুই সৌরভের চক্ষু শীতল করছে যেন। উনি একসময় পাশে থাকা সেক্রেটারিকে জিজ্ঞেস করলেন—-‘এটাই কি ওই মেয়ে?’

—-‘জ্বী স্যার।’

—‘মেয়েটার বাড়ি, নাম-ধাম বের করো। আমি চাইছি- দ্রুতই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতে মেয়েটার বাড়িতে। ধ্রুবকে এবার আমি সারপ্রাইজ দিতে চাইছি; রাহুল। আমার ছেলেটার খুশি আমি দ্রুত নিজের দুই চোখে দেখতে চাইছি। ছেলেটা আমার বড্ড একরোখা;গম্ভীর। হয়তো মুখ ফুটে নিজের পছন্দ বলবে না কোনদিন, তবে বাবা হিসেবে আমার তো একটা কর্তব্য আছে, বলো। তুমি সব ব্যবস্থা করে ফেলো দ্রুত।’

—-‘ ওকে স্যার।’

#চলবে