আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব-২২+২৩+২৪

0
97

#আমার_প্রেমিক_ধ্রুব |২২||
#অবন্তিকা_তৃপ্তি

সকাল-সকাল তোফাজ্জল তৈরি হচ্ছেন বাজারে যেতে! ধ্রুব তখন ঘুমাচ্ছিল। সারারাত অস্থিরভাবে এদিক-ওদিক পায়চারী করে সে অনেককিছু ভেবেছে; সঙ্গে ইমনের সঙ্গেও আলোচনা করেছে। এসব করতে করতে ভোররাতে চোখ লেগেছে। হঠাৎ ঘুমের মধ্যে ধ্রুবর এলার্ম বেজে উঠল! জীবনেও এলার্ম শুনে ঘুম থেকে না ওঠা ধ্রুব এবারেও ভ্রু-ট্রু কুঁচকে মহাবিরক্ত হয়ে হাত দিয়ে মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করে ফেলল। তারপর আবার আরেক ঘুম!

হঠাৎ করে ফ্যান-টাও বন্ধ হয়ে গেল! গরমে ধ্রুব অসহ্যভাবে চোখ খুলে ফেলল; বুঝলো কারেন্ট চলে গেছে।রেগেমেগে এলোমেলোভাবে-হেলেদুলে চোখ ঘষতে ঘষতে ধ্রুব ঘুম থেকে উঠে বসলো; চোখ উল্টে সিলিং ফ্যানের দিকে চেয়ে গালি দিয়ে বসল——‘বা//লের কারেন্ট!’

ধ্রুব ফোন হাতে নিল! ফোনের টাইম দেখতেই তার চোখ কপালে উঠল; ‘ শিট; শিট’—- ও দ্রুত বিছানা থেকে উঠে উদোম গায়ে শার্ট খুঁজতে লাগল! আজ তাকে পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে হবে! ধ্রুব দৌড়ে ড্রয়ারে শার্ট খুঁজছে; আর অপরহাতে ঘড়ি কব্জিতে লাগাচ্ছে। আজ তার পুরোদিন অভিনয় করতে হবে— বখাটে-উগ্র ধ্রুব থেকে হতে হবে ডিসেন্ট-শান্ত-ইনোসেন্ট ধ্রুব!

এসব মাথায় আগে কখনো আসেনি। গতকাল ইমন একটা বুদ্ধি দিয়েছে। ধ্রুব ফলো করতে চায়নি; কিন্তু ইমন বলেছে জোর দিয়ে— এটা করা জরুরি! প্ল্যানের অর্ধেক এটা। তাই না চাইলেও এসব করতে রাজি হয়েছে ধ্রুব। আপাতত ধ্রুবর কাছে অপশনাল প্ল্যান নেই; তাই এটাই স্বাহ ভরসা!

রেডি হয়ে ভাঙা আয়নার সামনে দাঁড়াল ধ্রুব! নিজেকে ঘুরে ঘুরে দেখে; হঠাৎ ঠোঁট উল্টে নিজেই নিজের কাঁধে থাপ্পড় দিয়ে বলল——-‘ গুড জব; ধ্রুব ইয়ামিন।’

তারপর চুল ঠিক করে বেরিয়ে এল মেহমানদের ঘর থেকে। নিচে নামতেই তার চোখ গেল— দুজন কাজের মহিলা বাড়িঘর পরিষ্কার করছে। ধ্রুব সেটা দেখে কিছুক্ষণ সেভাবেই দাড়িয়ে রইলো; একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর বড়বড় পা ফেলে হেঁটে গেল বড় ঘরে। তোফাজ্জল তখন সবে খেতে বসেছেন। পাশেই বাজারের ব্যাগ এনে রেখেছেন ফাহিমা। ধ্রুব যেতেই তোফাজ্জল তাকালেন তার দিকে; গম্ভীর স্বরে চেয়ার ইশারা করে বললেন——-‘খেতে বসো।’

ধ্রুব তোফাজ্জলের থেকে বেশ দূরের চেয়ারে গিয়ে খেতে বসলো! তোফাজ্জল খেতে খেতে ফাহিমাকে জিজ্ঞেস করলেন——‘ইফাজ কোথায়?’

ফাহিমা তোফাজ্জলের পাতে আটার রুটি তুলে দিতে দিতে উত্তর দিলেন——-‘ঘুমোচ্ছে।’

তোফাজ্জল শুনে রেগে গেলেন; রুটি ছেড়া বাদ দিয়ে কঠোর স্বরে বলে উঠলেন——-‘আজ বাড়িতে মেহমান আসবে; আর তোমার ছেলে ঘুমোচ্ছে? ডেকে তুলো ওকে; আমার সঙ্গে বাজারে যাবে।’

ফাহিমা কিছুটা অনুরোধ করে বললেন— ‘সবে ফজর হয়েছে; এখন ঘুম থেকে উঠাব?’

তোফাজ্জল কিছু বলবেন; তার আগেই ধ্রুব খাবার খাওয়া থামিয়ে বলল——-‘আঙ্কেল, আপনি চাইলে আমি যেতে পারি আপনার সঙ্গে।’

তোফাজ্জলের ভ্রু কুচকে গেল মুহূর্তেই; জিজ্ঞেস করলেন——-‘তুমি বাড়ির মেহমান হয়ে যাবে আমার সঙ্গে?’

ধ্রুব নিজেকে নম্র দেখানোর চেষ্টা করে বললো ——-‘আপনি-আন্টি আমার জন্যে এত করছেন; আ’ম গ্রেটফুল ফর দিস! তাই যাবার আগে কিছুটা শোধ করে দিতে চাইছি বলতে পারেন।’

ফাহিমা তো গদগদ হয়ে গেলেন ধ্রুবর এমন নম্র ব্যবহারে! তোফাজ্জল না করবেন ভেবেছিলেন। উনি চুপচাপ ধ্রুবর কথা পাশ কাটিয়ে গেলেন। ধ্রুব সেটা দেখে আবারও বললো—— ‘বাজার করা আমি তেমন পারি না। আপনার কাছ থেকে শিখতে চাইছিলাম।’

তোফাজ্জল এবার আর না করলেন না; খেতে খেতে বললেন—-‘আচ্ছা যেও।’

রাজি করিয়েই অবশেষে ধ্রুব থামল! তোফাজ্জল ধ্রুবকে নিয়েই বাজারে গেলেন। বাজারে সবাই ধ্রুব-তোফাজ্জলকে দেখে বারবার তাকাচ্ছিল। একজন তো জিজ্ঞেস করেই ফেলল——‘হায়াত সাব, মেয়ের জামাই নাকি?’

তোফাজ্জল অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন; ধ্রুব মনে-মনে হাসে! তোফাজ্জল আড়চোখে ধ্রুবকে দেখলে; ও দ্রুত এমন একটা ভাব করল যে জীবনেও ধ্রুব এমন আজব কথা শুনেওনি! তোফাজ্জল গলা পরিস্কার করে উত্তর দিলেন——-‘না, বাড়ির অতিথি।’

বলে আবার হাঁটা ধরলেন। ধ্রুব-তোফাজ্জলকে পাশাপাশি হাঁটার সময় একদম জামাই-শ্বশুর লাগছিল।শহুরে জামাই; তার গ্রাম্য গম্ভীর শ্বশুর! দারুণ মানিয়েছিল ওদের। তাই বোধহয় ওরা বাজারে যেতে যেতেই কয়েকবার একই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। ধ্রুব তো এতে ভীষণ মজা নিচ্ছে। অথচ মুখ করে রেখেছে—- চূড়ান্ত গম্ভীর-নিষ্পাপ! তোফাজ্জল এসব বারবার দেখে অস্বস্তিতে কাঠ হয়ে গেলেন। কিছুটা গম্ভীরভাবে ধ্রুবকে বললেন——-‘একটু দূরে থেকে হাঁটো আমার থেকে।’

ধ্রুব না বোঝার ভান করে বলল——-‘কেন আঙ্কেল?’

তোফাজ্জল জবাব দিলেন না; বরং নিজেই ধ্রুবকে ফেলে আগে আগে হাঁটা ধরলেন। ধ্রুব পেছন-পেছন হাঁটছে; তার ঠোঁটে অদ্ভুত মশকরা খেলা করছে।

ফেরার পথে ধ্রুব নিজে থেকে তোফাজ্জলের হাতে থাকা সব বাজারের ব্যাগ নিয়ে নিল নিজের হাতে। তোফাজ্জল মানা করতে চাইলেন; তখন ধ্রুব বলে ফেলল——-‘সমস্যা নেই আঙ্কেল। আপনি বয়স্ক লোক হয়ে এসব ক্যারি করার দরকার নেই; আমি সাহায্য করি না?’

তোফাজ্জল আর না করলেন না। ধ্রুব ইতিমধ্যেই তোফাজ্জলের মন কিছুটা জয় করে ফেলেছে। উনি বারবার ধ্রুবকে দেখছিলেন; ছেলেটা এত ভালো!

ধ্রুব যখন বাজার করে বাড়ি ঢুকেছে; তোফাজ্জল তখন গোসল করতে পুকুরে নেমেছেন। ধ্রুব বাজার নিয়ে ডাকলো বাড়ির বাইরে——-‘আন্টি, বাজার।’

ফাহিমা আসার আগেই চোখে পরলো অদিতিকে। তার মাথায় ঘোমটা টানা; চোখটা অদ্ভুতভাবে শান্ত আজ! ধ্রুবর দিকে অদিতি সেভাবেই চেয়ে এগিয়ে এলো। ধ্রুব অদিতির ওই চোখ দেখে অনেকককিছু বুঝে গেল। ধ্রুব অদিতির দিকে চেয়ে ভীষণ স্বাভাবিকভাবে ওর দিকে ব্যাগ এগিয়ে দিল। অদিতি ব্যাগ নিলো না; বরং চাপা গলায় এটুকু বলে উঠলো——‘আমার বিয়েতে আপনার আনন্দ দেখে ভালো লাগছে আমার!’

ধ্রুব চোখ তুলে দেখল অদিতিকে; ওর চোখের ভাষা অদিতি বুঝেনা। অদিতি চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল ——‘কি চাইছেন; কি করছেন—খোদ আপনি ছাড়া কেউই ভালো জানে না।’

ধ্রুব উত্তরে নিজেও চাপা গলায় ধীমে আওয়াজে বললো——‘ কিচ্ছু চাইবো না; যদি এক্ষুনি তুমি আমার প্রপোজের জবাব দিয়ে দাও! সময় আছে এখনো অদিতি; আমার এসব কিছু করার দরকারি ছিলো না। তুমি আমাকে ঘোরাচ্ছো নিজের পেছনে; আর আমি ধ্রুব ঘুরছিও; গড!’

অদিতি কিছু বলবে; তার আগেই ফাহিমা আঁচলে তখন হাত মুছতে মুছতে উঠোনে এলেন। ফাহিমাকে দেখে অদিতি দ্রুত বাজারের ব্যাগ ধ্রুবর হাত থেকে নিয়ে ঘরে ঢুকে গেল! ধ্রুব ফাহিমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে কপালের ঘাম মুছল; ফাহিম সেটা দেখে বললেন——-‘বাবা, বিশ্রাম নাও ঘরে গিয়ে; অনেক করেছ তুমি।’

ধ্রুব নম্রভাবে হাসল; উত্তর দিল——-‘নো প্রবলেম আন্টি।’

ফাহিমা ধ্রুবর এমন দায়িত্ববোধ দেখে হঠাৎ ভেবে বললেন——-‘বিয়ে করেছো তুমি?’

ধ্রুব বুঝল—প্ল্যান লাইন মতোই আছে। ও লাজুক গলায় মাথার পেছনটা চুলকে নত মুখে উত্তর দিল——-‘ মনমতো পাত্রী পাইনি আন্টি; পেলে করে ফেলার ইচ্ছে আছে।’

ফাহিমা এবার মশকরা করে বললেন——-‘খুঁজে দিই আমরা তোমার জন্যে পাত্রী? এই গ্রামে অনেক ভালো মেয়ে আছে কিন্তু ধ্রুব।’

ধ্রুব লাজুক ভাব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে উত্তর দিল——-‘আপনারা যা ভালো মনে করেন।’

ফাহিমা ধ্রুবর অভিনয়ের লজ্জা দেখে হেসে ফেললেন। ধ্রুব পাশ কাটিয়ে দ্রুত ঘরে চলে গেল। রুমে গিয়েই কল লাগাল ইমনকে; ওপাশে ইমন কল ধরলে ধ্রুব দিয়ে উঠে রাম ধমক——‘শা/লা! কী বুদ্ধি দিছোস এগুলা? একটিং অনেক লেইম হয়ে যাচ্ছে ইমন! আমি পারব না এসব। অন্য আইডিয়া দে।’

ইমন তখন খাচ্ছিল; ও খাবারের লোকমা হাতে তুলে আবার ফেলে দিল। মুহূর্তেই দ্রুত বলে উঠল——-‘আমার ভাই, ঠান্ডা হ। এছাড়া আর উপায় নাই। তুই আমার কথামতো কাজ করে দেখ না একবার; তারপর অদিতি তোরই; গ্যারান্টি।’

ধ্রুব চোখ ছোট ছোট করে তাকালো; বলল——-‘যদি তোর এই আজগুবি প্ল্যান ঠিকঠাক কাজে না লাগে, তোকে তো আমি খাইসি।”

ইমন হেসে, আত্মবিশ্বাসী গলায় বললো———‘করবে বাপ; করবে। তুই জাস্ট আমি যা বলছি ঠিকঠাক করে যা।”
____________
সন্ধ্যা থেকেই অদিতির ঘরে সাজসাজ রব। ছেলেপক্ষের জন্য নতুন কাপড়, মিষ্টি আর খাবারের আয়োজন চলছে। অদিতির মা ব্যস্ততায় শ্বাস ফেলার সময়-টুকুও পাচ্ছেন না। আর অদিতি? সে চুপচাপ, তার মুখ থমথমে। খোলা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে গাছের দুলতে থাকা পাতাগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। মনে এক অদ্ভুত শূন্যতা। ধ্রুবকে অত্যন্ত স্বাভাবিক লাগছে; বরং মনে হচ্ছিল ধ্রুব নিজে এই বিয়েটা নিয়ে ভীষণ আনন্দিত। অদিতির মুখটা থমথমে হয়ে এলো। হবে না কেন আনন্দিত! এক সময় যে ছেলে অদিতির সঙ্গে সামান্য কথা বলার জন্য মরিয়া হয়ে ছিল, তাকে অদিতি পরিবারের দোহাই দিয়ে পাত্তা দেয়নি। ধ্রুব অদিতিকে ছেড়ে দিলেও আজ অদিতি অবাক হবে না। অদিতিদের সঙ্গে তো এমনই হওয়া উচিত!

ধ্রুব ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে চেয়ার সাজাচ্ছে; হঠাৎ ওর চোখ গেল জানালার দিকে; অদিতিকে দেখে ও। ঠোঁটে একবারেও হাসি নেই; চোখ-দুটো মলিন! ধ্রুব চেয়ার হাতে নিয়ে সেভাবেই দাড়িয়ে রইলো; বিড়বিড় করে বলে গেল ——‘তোমার চোখ আমাকে ভালোবাসে ঠিকই; কিন্তু তোমার ঠোঁট আমার সঙ্গে বারবার বেইমানি কেন করে; অদিতি।’

ধ্রুব অদিতির দিকে তাকিয়ে ছিলো! অদিতির এলোমেলো দৃষ্টি হঠাৎ রে গেল ধ্রুবর চোখে; অদিতি সোজা হয়ে দাড়িয়ে মলিন হাসল। ধ্রুব চোখ নামিয়ে; ছোট করে শ্বাস ফেলে ভেতরে চলে গেল। অদিতি কিছুটা অবাক হয়ে গেল—- ধ্রুব কি ওকে পাশ কাটিয়ে; এড়িয়ে গেল এইমাত্র?

রাত হতেই গোটা গ্রাম হয়ে গেলো জমজমাট। তোফাজ্জল হায়াতের উঠোনে মানুষের ভিড়, আলো ঝলমল করছে। কিন্তু অদিতি নিজের ঘরে সাদা চাদরের ওপর বসে আছে। তার চোখ ফোলা, মুখ শুকনো। বারবার মনে পড়ছে ধ্রুবর সেই গম্ভীর মুখ, সেই নিরাসক্ত গলা।

ওদিকে ধ্রুব খাবারের তদারকি করছিল। তোফাজ্জল সারাদিন ধ্রুবর কাজ দেখে যারপরনাই খুশি! কিন্তু মুখে সেটা প্রকাশ করলেন না। তিনি ধ্রুবর কাছে এগিয়ে গেলেন; ধ্রুব উনাকে দেখেই আগবাড়িয়ে বলল ——‘ আংকেল মশলাপাতি কম হয়েছিল; আমি এক্সটা আনিয়ে রেখে দিয়েছি। আর চিকেন এক্সট্রা লেগেছে; ওগুলো আনতে পাঠিয়েছি বাজারে।’

তোফাজ্জল ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলেন ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব বাজারের এক্সট্রা ফর্দ এগিয়ে দিল উনার দিকে। তোফাজ্জল সেটা হাতে নিলেন; একবার দেখেই আবার ভাঁজ করে পাঞ্জাবির পকেটে রেখে দিলেন।

ধ্রুব আরও কিছু বলবে; তার আগে তোফাজ্জল শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে বসলেন——‘ তুমি আমাদের জন্যে এসব কেন করছো? কি উদ্দেশ্যে?’

ধ্রুব থেমে গেল; কি বলবে এখন? ওর মন বেপরোয়া হয়ে গেল হঠাৎ; বলতে চাইল নিজের আসল উদ্দেশ্য; কিন্তু বলতে পারেনা এবারেও। ও মাথাটা নিচু করে ফেলে: দোনামনা করে বলে——‘নিজের শান্তির জন্যেই করছি আমি। আপনাদের আমার অনেক আপন মনে হচ্ছিল; তাই করছি। এর অন্য কোনো উ..উদ্দেশ্য নেই।’

তোফাজ্জল এবার কিছুটা গলে গেলেন। যতই হোক! গ্রামের মানুষ তো। সহজেই লোককে বিশ্বাস করা উনাদের কাজ; যাকে একবার মনে ধরে তার প্রতিটা কাজ তখন চোখে পরে একে একে। তোফাজ্জল ধ্রুবর কাঁধে হাত রাখলেন।আবেগ যেটুকু প্রকাশ না করলেই নয় সেটুকু প্রকাশ করে বললেন ——‘তোমার কি আর বাকিদের মতো মনে হচ্ছে আমি খুব তাড়াহুড়ো করছি?’

ধ্রুব অবাক হলো——‘ জি আংকেল?’

তোফাজ্জল আবারও বললেন—-‘বাকিরা আমাকে দোষারোপ করছে; আমি মেয়েকে অল্প বয়সে নিজের কাছ থেকে বিদায় করে দিচ্ছি।’

ধ্রুব চোখ নামিয়ে নিচু গলায় বলল ——‘আমি এসব ভাবি নি আংকেল।’

তোফাজ্জল থামলেন; পরপর গম্ভীর স্বরে বলে যেতে লাগলেন—-‘ সবাই আমার সিদ্ধান্তে খুশি নয়। কিন্তু আমার আজকাল ভয় হয় ভীষণ! অদিতিকে বিয়ে দিয়েই আমার মুখ বাঁচে। আজকাল গ্রামের মানুষ আমার দিকে বাঁকা নজরে তাকায়—কেউ কেউ অপেক্ষা করছে আমার মেয়ের প্রেমের খবর রটানোর। তাই আমি ঠিক করেছি- আমি আজকে ওদের আকদ করিয়ে দিয়ে গ্রামের লোকদের মুখ বন্ধ করে ফেলতে পারে।’

ধ্রুব চুপচাপ শুনে গেলো এসব কথা; ও শান্ত চোখে চেয়ে তোফাজ্জলকে দেখে। তোফাজ্জল হয়তো বাইরে যতটা কঠোর প্রকাশ করেন; ভেতরে ভেতরে ততটাও নন। তার মধ্যেও আবেগ; ভালোবাসা আছে; তবে সম্মান হারানোর ভয়টা গ্রাস করেছে তার অন্তর সবচেয়ে বেশি। ধ্রুব অপরাধবোধে ভুগে ভীষণ;ও এসব কি করছে? ইমনের বুদ্ধি নেওয়াটা কি উচিত হয়েছে? তোফাজ্জল জানতে পারলে: কষ্ট পাবেন ভীষণ। ধ্রুব হালকা স্বরে বলে—-—‘ডোন্ট ওরি আংকেল; আকদ আজকেই হবে।’

তোফাজ্জল ধ্রুবর কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে ফেললেন; গলা পরিষ্কার করে বললেন ——‘ভালোয় ভালো সব কাজ মিটে গেলেই হয়। তুমি এদিকটা দেখো; আমি ঘর থেকে আসি।’

অদিতি জানালার দিকে তাকিয়ে নিজের আতঙ্ক ঢেকে রাখার চেষ্টা করছিল। ঠিক এমন সময় ধ্রুব খাবারের দিক সামলে উঠোনে এলো। ঘড়িতে প্রায় সন্ধ্যা। ছেলেপক্ষ আসার কথা, কিন্তু কেউ এখন অব্দি এসে পৌঁছায়নি। লোকজন কৌতূহলী হয়ে আছে। তোফাজ্জলের অন্তর এইপর্যায়ে মোচড় দিয়ে উঠল! তিনি কল লাগালেন ফারদিনকে। ওপাশ থেকে কল ধরতেই তোফাজ্জল শুরুতে শান্ত থাকার চেষ্টা করে বললেন——‘তোমরা কোথায় আছো?’

ফারদিন অকপটে জবাব দিল ——‘চাচা, আমি দুঃখিত। পারিবারিক কারণে আমি এই বিয়ে করতে পারব না। আমি পর্তুগাল চলে যাচ্ছি, ওখানেই সেটেল হওয়ার পর বিয়ের চিন্তা করব। আমাদের পরিবার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আপনি যদি কিছু মনে না করেন…’

অদিতির বাবা এসব শুনে রেগে গেলেন ভীষণ। পুরো উঠোন স্তব্ধ তখন। সবার মুখে চাপা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। তোফাজ্জল শেষ দেখে একটু দূরে গিয়ে নিচু কণ্ঠে বললেন ——‘গ্রামের মানুষদের দাওয়াত করা হয়ে গেছে ফারদিন; মশকরার সময় না এখন।’

তোফাজ্জল থেমে আবার বললেন —— ‘তোমার বাবা কোথায়? ওকে ফোন দিয়ে কেন পাচ্ছিনা? আমি ভেবে পাচ্ছিনা- তোমরা কথা দিয়ে এভাবে কিভাবে কথার বরখেলাপ করতে পারো।’

ফারদিন নম্র গলায় জবাব দিল ——‘আমি আসলেই অনেক দুঃখিত চাচা। পুরো সিদ্ধান্ত আমার; আব্বার এতে দোষ নেই। আমার প্লেনের টিকিট আজ রাত ১০টায়; আমি এয়ারপোর্ট যাচ্ছি চাচা। আপনার মেয়ের জন্য আশা রাখছি আমার চেয়ে ভালো কাউকে খুঁজে পাবেন।’

তোফাজ্জল আর শুনলেন না; উনার মুখ কঠিন হয়ে গেল। উনি ফোন কেটে দিলেন মুহূর্তেই। ধ্রুব পাশে দাঁড়িয়েই শুনছিল। যা হচ্ছে, ওর প্ল্যানমাফিক হচ্ছিল। ও এবার নিজের শেষ চালটা চালাল; তোফাজ্জলের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল ——‘আংকেল; ছেলে আসবে না?’

তোফাজ্জলের রাগে কাঁপছেন; উনি কঠিন গলায় কাপতে কাপতে বললেন ——‘বেইমানি করেছে ওরা আমার সঙ্গে- ওদের এতো বড় সাহস কি করে হলো আমি সেটাই বুঝতে পারছি না।’

ধ্রুব বলল ——‘আংকেল; গ্রামের মানুষ জানে আজ আকদ! এভাবে বিয়ে ভেঙে গেলে——আপনি বললে আমি ওকে শহর থেকে নিয়ে আসতে পারি।’

ধ্রুব এমনভাবে কথা বলছে- যেন ও কিছুই জানে না এ ব্যাপারে। তোফাজ্জল উঠে দাঁড়ালেন; লুঙ্গি সামলে নিয়ে শান্ত গলায় শুধু বললেন——‘আমাকে ভাবতে দাও।’
______
ছেলেপক্ষ না আসার খবর পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। চারদিকে গুঞ্জন, কানাঘুষা। তোফাজ্জল হায়াতের কপালে ঘাম জমেছে। তিনি নিজের সম্মানের কথা ভেবে গম্ভীর মুখে চুপ করে বসে আছেন। কিন্তু চারপাশের গ্রামবাসীর খোঁচা কথা তার মুখ আরও ফ্যাকাসে করে তুলছিল।

একজন তো বলেই ফেলল ——‘বড় গলায় সবাইকে জানালেন বিয়ে হবে। আর এখন জামাই না করে দিয়েছে।’

তোফাজ্জল দাঁতে দাঁত চেপে সব শুনছিলেন। অপমানে তার মুখ লাল হয়ে উঠছিল। তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন, ভেতরে চলে গেলেন। ক্ষোভের খবর ফাহিমার কানে পৌঁছতেই ফাহিম দ্রুত শোবার ঘরে সামির কাছে আসলেন। তোফাজ্জল জানালার পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন। ফাহিমা গিয়ে তোফাজ্জলের কাঁধে হাত রাখলেন; তোফাজ্জল কেঁপে উঠলেন। ফাহিমা বললেন——‘ভেঙে পড়বেন না। পাত্রের অভাব নেই দেশে। আমরা অদিতিকে এর থেকেও ভালো জায়গায় বিয়ে দেব।’

তোফাজ্জল জবাবে বললেন——‘কিন্তু সম্মান যা যাওয়ার তা আজকেই চলে গেল ফাহিমা। সবাই জানে আজ আকদ! অথচ আজ সবাইকে যখন দাওয়াত করা হয়েছে, তখন ফারদিন কীভাবে মানা করতে পারল? আগে বললেই আমি একটা ব্যবস্থা করে ফেলতে পারতাম।’

ফাহিম হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়ে ; উনি তোফাজ্জলের মুখের রাগী ভাবের দিকে চেয়ে দোনামনা করে বললেন——‘আ..আমার কাছে ভালো পাত্র আছে। আপনি সাহস দিলে বলতে পারি।’

তোফাজ্জল তখন গা-ছাড়া ভঙ্গিতে বিছানায় গিয়ে বসলেন; বললেন——‘কে?’

ফাহিমা সরাসরি বলে ফেললেন ——‘ধ্রুবকে কেমন লাগে আপনার?’

তোফাজ্জল অবাক হয়ে ফিরে তাকিয়ে বললেন——‘কোন ধ্রুব? আমাদের মেহমান?’

ফাহিমা বললেন——‘হ্যাঁ; ও আজ বলছিল ভালো পাত্রী পেলে বিয়ে করতে চায়। আমাদের অদিতির সঙ্গে ওকে মানাবেও ভালো; একটু ভেবে দেখুন না?’

তোফাজ্জল শুনলেন; তারপর বিরক্ত হয়ে বললেন—-‘ এভাবে একটা অজানা মেহমানের সঙ্গে— বেশি বুঝো তুমি?’

ফাহিমা বসলেন তোফাজ্জলের পাশে; মতামত দিলেন——-‘একবার খোজ নিয়ে দেখতে সমস্যা কোথায়? ছেলে আপনার সামনেই; বরিশালে ভালো চাকরি করে। দেখতে শুনতেও ভাল; লম্বা-উচা। ওকে কোনোদিক থেকে খারাপ মনে হয়েছে আপনার?’

তোফাজ্জল তারপর কি যেন মনে করলেন; ফোন নিয়ে উনি কল লাগালেন কাউকে; ওপাশ থেকে সালাম এলো! তোফাজ্জল গম্ভীর স্বরে নির্দেশ দিলে ——-‘ধ্রুব ইয়ামিন সম্পর্কে খোঁজ নাও তো।’

#চলবে

#আমার_প্রেমিক_ধ্রুব—| ২৩ |
#অবন্তিকা_তৃপ্তি

এত রাতেও তোফাজ্জল ফোনে কারো সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে কথা বলছেন। ফাহিমা কিছুসময়ের ওখানে থেকে তারপর অদিতির রুমে গেলেন। অদিতি বিছানার উপর বসেছিল। ওর মুখ সেভাবেই থমথমে; শূন্য! ফাহিমাকে দেখে অদিতি ঢোক গিলে; ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন—— ‘ওরা আসবে না মা?’

ফাহিমা কাপড় গোছাতে গোছাতে বললেন—— ‘না; ফারদিন পর্তুগাল চলে গেছে আজ।’

অদিতির মনটাই আচমকা এই খবরে দারুণ খুশি খুশি হয়ে গেল। এসব কার কাজ ওর বুঝতে একটুও অসুবিধা হচ্ছে না। অদিতি ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি ঝুলিয়ে জানালার বাইরে তাকাল; ধ্রুবকে এখান থেকে দেখা যাচ্ছে। ধ্রুব ওদের জানালার সামনে একটা চেয়ারে বসে আছে; ওর হাঁটুর উপরে ইফাজ বসে ক্যামেরা নিয়ে কিছু একটা করছে। ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে ইফাজকে দেখছে; মাঝেমধ্যে শিখিয়ে দিচ্ছে কিছু। অদিতি অপলক দেখতেই থাকলো ধ্রুবকে। ফাহিমা হঠাৎ বললেন—— ‘তোর বাবা ভীষণ আতঙ্কে আছেন। গ্রামবাসীর কাছে কী জবাব দেবেন!’

অদিতি দ্রুত চোখ সরিয়ে ফেলল ধ্রুবর দিকে। বিছানা থেকে উঠে মায়ের দিকে চেয়ে বলল—— ‘মা; এই গয়না-গাঁটি খুলে ফেলব? আমার অসহ্য লাগছে।’

ফাহিমা কিছু একটা ভাবলেন;তারপরে বললেন—— ‘মেহমানরা আছে বাইরে; আরও কিছু সময় পরে থাক।’

অদিতি অবাক হলো; মায়ের মুখ-চোখ সুবিধার লাগছিল না। মা মনে হচ্ছিল; কিছু একটা লোকাচ্ছে। এখনোও এগুলো আর পরে রাখার মানে কী? তবুও অদিতি বরাবরই বাধ্যগত মেয়ে; ও সেভাবেই গয়না-শাড়ি পরে থাকল!

ফাহিমা কাপড় ভাঁজ করে সেগুলো হাতে নিয়ে তোফাজ্জলের রুমে ঢুকলেন। তোফাজ্জল সবে ফোন কেটেছেন। উনি বিছানার উপর বসে আছেন; কিছু একটা ভাবছেন যেন। ফাহিমা শুকনো ঢোঁক গিলে উনার পাশে বসলেন; কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন—— ‘খবর পেলেন?’

তোফাজ্জল উঠে দাঁড়ালেন; পেছন ঘুরে গুরুগম্ভীর গলায় এটুকু বললেন স্রেফ—— ‘গ্রামবাসীদের চলে যাওয়া দরকার!’

ফাহিমা উঠে দাঁড়ালেন; বিস্মিত হয়ে বললেন—— ‘কী খবর পিন আগে সেটা তো বলুন। ধ্রুব সম্পর্কে কী বলেছে ওরা?’

তোফাজ্জল উত্তর দিলেন না। পাঞ্জাবি ঠিক করে বাইরে বেরিয়ে এলেন। ফাহিমা দাড়িয়ে রইলেন সেভাবেই! ধ্রুব তোফাজ্জলকে দেখে ইফাজকে রেখে উঠে দাঁড়াল। ওর ভ্রু কুঁচকানো; তোফাজ্জলকে দেখে সুবিধার লাগছিলো না। তোফাজ্জল সবার দিকে চেয়ে পুরনো স্বরে ফিরে; ভাবগম্ভীর কণ্ঠে বললেন—— ‘খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে আপনারা এবার বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম নিন।’

মেহমানদের মধ্যে এটা শুনে কিছুটা শোরগোল পরে গেল হঠাৎ। তোফাজ্জল সেটা দেখে বললেন—— ‘আমার মেয়ের পড়াশোনা শেষ হয়নি; তাই আমি নিজেই এই বিয়েতে মানা করে দিয়েছি। আমার মেয়ে রাজি না এই বিয়েতে; আমার মেয়ের ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা।’

কথাগুলো শুনে ধ্রুব আহাম্মকের ন্যায় তোফাজ্জলের দিকে তাকিয়ে রইলো! উনি কবে থেকে সন্তানদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার মূল্য দেওয়া শুরু করেছেন? আজ কেন যেন তোফাজ্জলকে দেখে স্বাভাবিক লাগছিল না।

অদিতি ঘর থেকে এসব কথা শুনে খুশিতে মুখে হাত চাপা দিয়ে পালঙ্গে বসে পরলো; ওর চোখে জল জমে গেছে রীতিমতো! তোফাজ্জলের এমন কথা ওর নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না।

ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে আছে এখনো; ওর এসব কাণ্ড বিশ্বাসযোগ্য লাগছে না মোটেও। তোফাজ্জল নিজের সন্তানদের ইচ্ছাকে এত দাম দেন না; অথচ গ্রামবাসীকে এভাবে বললেন যেন উনি একজন আদর্শ বাপ! শেষমেশ মেহমানেরা চলে গেলেন সবাই। তোফাজ্জল ইফাজকে ধ্রুবর কাছ থেকে টেনে নিয়ে ঘরে ঢুকে ঘরের খিল দিলেন। ধ্রুব বাইরেই দাঁড়িয়ে রইল তখনও।

ঘরে ঢুকে ধ্রুব সোজা ইমনকে কল দিলেন; ইমন সবে বাইরে থেকে ফিরে নিজের ঘরে ঢুকছিলো। ধ্রুবর কল পেয়ে ফোন লাউডস্পিকারে দিয়ে; ও শার্ট খুলতে খুলতে বলল —— ‘কীরে; ঘটনা কদ্দুর?’

ধ্রুব কিছুটা চিন্তা নিয়ে বলল —— ‘ডোন্ট নো! আমার অদিতির বাবাকে সুবিধার লাগছে না।’

ইমন গা থেকে টিশার্ট খুলতে খুলতে; অবাক হয়ে বলল —— ‘ওই ব্যাটা কি তোর অ্যাক্টিং ধরে ফেলল নাকি?’

ধ্রুব কোমরে হাত দিয়ে ভাবুক গলায় বলে গেলো—— ‘জানি না। আমার সন্দেহ হচ্ছে; মনে হচ্ছে উনি ভেতরে ভেতরে তালগোল কিছু একটা পাকাচ্ছেন।’

ইমন এবার হেসে হেসে বলল —— ‘তোর শ্বশুর তো! তোর মতোই ক্রিমিনাল মাইন্ডের। জমবে ভালো তোদের।’

ধ্রুব ভ্রু কুঁচকাল; চুড়ান্ত বিরক্ত হয়ে বললো —— ‘হয়েছে মজা করা? এখন আমাকে আইডিয়া দে; কী করব এখন?’

ইমন গাল চুলকে বিভ্রান্তি নিয়ে বলল——‘তুই তোর নিজের মতো কাজ চালিয়ে যা। এন্ড উনাদের প্রতিক্রিয়া দেখে যা। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে—রেজাল্ট পজিটিভ।’

ধ্রুব ভ্রু বাঁকিয়ে বলল——‘বাট আমার সেটা মনে হচ্ছে না।’

ইমন ভ্রু বাঁকিয়ে বলল——‘তুই আমার কথামতো কাজ কর; এটা তো মাত্র ডোজ নাম্বার ওয়ান দিলি। বাকিগুলো ধীরে ধীরে সময়মতো দিয়ে দিবি। এখন আরাম করে ঘুমা!’

তারপর আবার ইমন জিহ্বা কামড়ে বলল ——-‘ওহ, সবে মাত্র ১০টা বাজে। তুমি তো আবার রাত ৪টা না বাজলে ঘুমাও না। আচ্ছা বাই তাহলে।’

ধ্রুব ফোন কেটে দিল। তারপর সেটা টেবিলের ওপর রেখে বিছানায় বসলো। দুহাতে মাথার চুল খামচে ধরে মাথা নিচু করে বসে থাকল! ____
তোফাজ্জল ওইদিন রাতভর চিন্তায় ছিলেন। যে খবর দিয়েছে; তার মতে —-ধ্রুব বরিশালে থাকে, ভালো মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানিতে ফটোগ্রাফির কাজ করে। মাসে চৌত্রিশ হাজার টাকা স্যালারি। ছেলে ভালো, বাবা-মা দুজনেই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। ভালো পরিবার। অদিতির জন্য এমন ছেলে ভাবাই যায়।

তোফাজ্জল সেদিন পুরোটা রাত ঘুমাতে পারলেন না। শুধু ভাবলেন; ধ্রুবর সম্পর্কে! গ্রামের লোকদের যে হিংসা-প্রতিশোধপরায়নতার নজর তার পরিবারের উপরে পড়েছে তাতে যে কেউ যেকোনো ষড়যন্ত্র করে ফেলতে পারে। তোফাজ্জলের উচিত- দ্রুত অদিতির বিয়ে দিয়ে দেওয়া: গ্রামের লোকের থেকে নিজের সম্মান রাখতে এছাড়া আর উপায়ও নেই।

তবে যে ছেলের কাছে তিনি খবর নিয়েছেন, সে আধা ঘণ্টার ভেতরে দ্রুত ধ্রুবর সম্পর্কে সব বলে দিল যেন ও পূর্ব থেকেই জানত সব। ব্যাপারটা একটু খটকা লাগলেও পরে মনের ভুল ভেবে এড়িয়ে গেলেন উনি। তোফাজ্জল রাতের শেষ প্রহরে সিদ্ধান্ত নিলেন— তিনি ধ্রুবের সঙ্গে কথা বলবেন। অদিতির কথাও তুলবেন। ধ্রুব যদি ভালো ছেলে হয়, তাহলে তার ভদ্র-শান্তশিষ্ট মেয়ে অদিতির জন্যে ও মন্দ হবে না।

সকালে আগের মতোই; ধ্রুব সকাল সকাল উঠল। ঘড়ির কাঁটায় তখন সবে ৮টা। ধ্রুব খেতে বসেছে; পাশে তোফাজ্জল বসা। তোফাজ্জল গাঢ় চোখে তাকে নজরে রাখছেন। ধ্রুব ফাহিমার সঙ্গে মনখুলে গল্প করছেন। ইফাজের সঙ্গেও টুকটাক কথা চালাচ্ছে। তোফাজ্জল ওইদিন সারা দিন ধ্রুবকে নিজের চোখে দেখলেন। তার চলাফেরা, কথাবার্তার ধরন, গ্রামের লোকদের সঙ্গে ব্যবহার—সবকিছু দেখলেন। এসব দেখে তিনি একপর্যায়ে সন্তুষ্ট হলেন এবং সিদ্ধান্ত নিলেন—ধ্রুব অদিতির জন্য উপযুক্ত!

পরদিন সকালে তোফাজ্জল ঘুম থেকে উঠে ; ধ্রুবর বাংলোর সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। ধ্রুব তখন রুমে ফোনে ইমনের সঙ্গে কথা বলছিলো। তোফাজ্জল ঘরের বাইরে পায়চারি করতে করতে ভাবছেন—ধ্রুবর সামনে কথাটা কীভাবে তুলবেন! ফাহিমা কাপড় মেলে দিতে দিতে উঠোনে স্বামীকে উসখুশ করতে দেখে এগিয়ে উনার পাশে এসে দাঁড়ালেন; উনার দ্বিধা দূর করার জন্যে বললেন———‘এত কী ভাবছেন? বলে ফেলুন। মেয়ের জন্য ভালো পাত্র পেলে আমাদের ইগো সরিয়ে বলতে দোষ কী?’

তোফাজ্জল ফাহিমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা অন্যমনস্কভাবে বললেন——‘ধ্রুবকে কি আমরা নিজেদের ভুল ভেবে নিচ্ছি না তো? ও যদি——।’

ফাহিমা তার কথা থামিয়ে বললেন——‘ওমন কিছুই না। আপনি যান, কথা বলুন। আপনার বিচার কখনো ভুল হয়না।’

তোফাজ্জল-ফাহিমার কথোপকথন দূর থেকে শুনে ইফাজ এক দৌড়ে অদিতির ঘরে গেল। অদিতি তখন নিজের বিছানা গোছাচ্ছিল। ইফাজ গিয়ে বিছানার ওপর লাফিয়ে পরলো! ঝাড়ু হাতে অদিতি রেগে গেল; রাগ দেখিয়ে বলল——‘মাত্র বিছানা গুছিয়েছি,ময়লা করে ফেলবি। উঠ বিছানা থেকে।’

ইফাজ ভ্রু নাচিয়ে-নাচিয়ে বললো ——‘যা বলতে এসেছি না; শুনলে তুমি আমাকে কোলে তুলে নাচবে।’

অদিতি বিরক্ত হয়ে বলল——‘কী খবর?’

ইফাজ ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল——‘আগে চকলেট দাও; তারপর বলব।’

অদিতি পাত্তা দিল না; ইফাজ বোধহয় আবার ঢপ মারছে। ও ঝাড়ু দিয়ে বিছানার আরেক পাশ ঝাড়তে ঝাড়তে বললো ——‘আমার কাছে চকলেট নেই। ভাগ এখান থেকে।’

ইফাজ এবার অদিতির কাছে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল——‘তোমার আর ধ্রুব ভাইয়ার নামে খবর আছে গো; খবর আছে।’

অদিতির বুক কেঁপে উঠল;ঝাড়ু হাতে ও অবাক হয়ে ইফাজের দিকে তাকাল! ইফাজ হাসছে;অদিতি ফাঁকা ঢোক গিলে আশপাশে কেউ আছে কিনা দেখে নিল; দরজায় খিল তুলে দিল। তারপর ও দ্রুত ড্রয়ার থেকে চকলেট নিয়ে ইফাজের হাত থামিয়ে দিয়ে ওর পাশে বসল; কম্পিত গলায় বলল ——‘ক…কী খবর; বল আমাকে।’

ইফাজ চকলেট খেতে খেতে জবাব দিল ——‘আব্বা তোমার বিয়ের কথা বলবে আজ ধ্রুব ভাইয়ার সঙ্গে। আমি শুনেছি মা আর আব্বা কথা বলছেন; ধ্রুব ভাইয়ার কাছে তোমার নাম প্রস্তাব রাখবেন।’

অদিতির সমস্ত রূহ যেন এ কথা শুনে মুহূর্তেই কেঁপে খানখান হয়ে গেল। ও সটান দাঁড়িয়ে গেল; চোখ বড়বড় করে তাকাল ইফাজের দিকে। অবিশ্বাস্য গলায় বলল ——‘তুই ফ…ফাজলামো করছিস।’

ইফাজ হেসে হেসে বলল ——‘ফাজলামো না; যা শুনেছি তাই বলেছি। বিশ্বাস করলে করো, না করলে নাই।’

অদিতি থম হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ইফাজের কথা শুনে মনে হচ্ছেনা- ও মিথ্যা বলছে। অদিতিকে রোবটের মতো দাড়িয়ে থাকতে দেখে ইফাজ হেসে বিছানার উপরে উঠে অদিতির গলা জড়িয়ে ধরে বলল ——‘ধ্রুব ভাইকে আমার হেব্বি লাগে। তোমার সঙ্গে বিয়ে হলে আমি এখন থেকে তাকে সবার সামনে দুলাভাই ডাকব। আর একাকি ডাকতে হবে না।’

অদিতি ভ্রু কুঁচকালো; কাপা গলায় বলল ——‘এ.একাকী দু…দুলাভাই মানে?’

ইফাজ অদিতিকে ছেড়ে দিয়ে হতাশ গলায় ঠোঁট উল্টে বলল ——‘ধ্রুব ভাইয়া আমাকে উনার ক্যামেরা দিয়ে শর্ত দিয়েছেন যেন আমি তাকে একা পেলে দুলাভাই বলে ডাকি; আর কাউকে যেন দুলাভাই না ডাকি।’

অদিতি ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইল ইফাজের দিকে; পরপর শব্দ করে হেসে ফেলল। অদিতি ইফাজকে কোলে নিয়ে বলল ———‘ক্যামেরা একেবারে দিয়ে দিয়েছেন?’

ইফাজ কোল থেকে নামার জন্যে ছটফট করতে করতে উত্তর দিল———‘হ্যাঁ; সঙ্গে ফিল্ম দিয়েছে এত্তগুলা।’

অদিতি হেসে হেসে ইফাজের গালে চুমু খেলো। ইফাজ লজ্জা পেয়ে গেল যেন; ও কোল থেকে নেমে এক দৌড়ে বাইরে চলে গেল। অদিতি এবার বুকে হাত চেপে জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে লাগলো; ওর সারা শরীর কাঁপছে রীতিমত। কি শুনছে এগুলা? অদিতি সোজা দৌড়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো; কান পেতে শোনার চেষ্টা করল বাবা-মায়ের কথা।

হঠাৎ তোফাজ্জল-ফাহিমার কথার মধ্যে বাইরে এসে ঢুকল সেদিনের বিচারে সেই ছেলেটা; নাম সুমন। উঠোনের সামনে থেকে ডাকল ——‘চাচা; আছেন বাড়িতে?’

তোফাজ্জল কথার মধ্যে ভ্রু কুঁচকালেন; সদর গেইটের দিকে তাকালেন ফিরে। ফাহিমা মানুষ দেখে আঁচল দিয়ে মাথা ঢেকে ঘরের ভেতরে ঢুকে গেল। সুমনের হাতে ব্যাগ; সে এগিয়ে গিয়ে মুখোমুখি দাঁড়াল তোফাজ্জলের। তোফাজ্জল ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকালেন; সুমন হেসে বললো ——‘আপনার বিচারে আমি গ্রাম থেকে চলে যাচ্ছি, চাচা। তবে যাওয়ার আগে কিছু জানিয়ে যেতে চাই।’

তোফাজ্জল বললেন ——‘পরে জানিও; আমি ব্যস্ত এখন।’

তোফাজ্জল কথা বলে ধ্রুবর ঘরে ঢুকবেন, তার আগেই সুমন বলল ——‘আপনার ঘরে যে আপনি এক চরিত্রহীনকে জায়গা দিয়েছেন সেটা গ্রামবাসীকে জানিয়ে দিয়ে এলাম চাচা।’

তোফাজ্জল থেমে গেলেন মুহূর্তেই; ভ্রু কুঁচকালেন! সুমনের দিকে ফিরে বললেন ——‘মানে?’

সুমন তোফাজ্জলের বিস্মিত মুখের দিকে চেয়ে বিশ্রী হাসল! মুখ এগিয়ে আনলো উনার দিকে; হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে রেখেই বলল ——‘এই যে আপনি ধ্রুব ইয়ামিন নামক একজন বরিশালের লোক নিজের ঘরে জায়গা দিয়েছেন। সে আসলে ঢাকার মন্ত্রীর বজ্জাত, উগ্র চরিত্রহীন ছেলে। গ্রামে এসেছে গ্রামের মেয়েদের গোপনে ফুসলানোর জন্য। আপনি গ্রামের প্রধান হয়ে সেই ছেলেকে নিজেরই বাড়িতে জায়গা দিয়েছেন। আপনার যুবতী মেয়ে কি আদৌ প্রেম করছে না তার সঙ্গে; তার কী গ্যারান্টি? আর আপনি যে ইচ্ছে করে গ্রামের বাকি মেয়েদের বিপদে ফেলছেন না তারই বা কি গ্যারান্টি?’

অদিতি ওদের কথা শুনতে পারছে না; তবুও ওর মন কেন যেন কু ডাকছে। ওর হাসিখুশি মুখটা মুহূর্তের মধ্যে মলিন হয়ে গেল! ওদের কথা বলার ভঙ্গি ওর ভালো লাগছে না। অদিতি ধীর পায়ে জানালা থেকে সরে দাঁড়াল। আস্তে করে সদর দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পর্দার আড়ালে তাকাল বাইরে। তোফাজ্জল রেগে তাকালেন সুমনের দিকে; বললেন———-‘ আমার সঙ্গে বেয়াদবি আমি বরদাস্ত করব না সুমন। কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে? আমি খবর নিয়েছি; ধ্রুব ভালো ছেলে।’

সুমন হাসল কথাগুলো শুনে। ওর ফোন নিয়ে তোফাজ্জলকে একটা একটা করে ছবি দেখাল। তোফাজ্জল দেখলেন! ধ্রুব একটা নীল শাড়ি পরা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আছে; যার মুখ দেখা যাচ্ছে না; শুধু পেছনের দিক দেখা যাচ্ছে। পরের ছবিতে ধ্রুব ওই মেয়ের কপালে চুমু খাচ্ছে; আরেক ছবিতে ধ্রুব ওই মেয়ের গালে চুমু খাচ্ছে। এসব দেখে তোফাজ্জলের মাথায় রীতিমত বাজ পড়ল।

অদিতি দূর থেকে এসব ছবি দেখে আঁতকে উঠে মুখে হাত চেপে সরে গেল দু কদম। এটা…এটা তো ওর ছবি; ওর কিডন্যাপের দিনের ছবি। এটা…এটা সুমন ভাইয়ের হাতে কি করে এলো? অদিতির ঘাম ছুটে গেছে মাথার দিকে। কি হচ্ছে সামনে; ও এসব আন্দাজ করতে পারছে এক্ষুনি। অদিতি শ্বাস-প্রশ্বাস এলোমেলো হয়ে গেল। ধ্রুব! ধ্রুব কোথায় এই মুহূর্তে?

তোফাজ্জল হতভম্ব হয়ে গেলেন ছবিগুলি দেখে। উনি এবার চেঁচিয়ে ডাকলেন———‘ধ্রুব! বাইরে বেরোও।’

ধ্রুব রুমে ইমনের সঙ্গে কথা বলছিল। তোফাজ্জলের হাঁকডাক শুনে ও দ্রুত ফোন কেটে ভদ্র ছেলের মতো শার্ট ঠিকঠাক বেরিয়ে এলো বাইরে। তোফাজ্জলের পাশে সুমনকে বিশ্রী হাসি হাসতে দেখে ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে তাকাল; তোফাজ্জল সুমনের ফোন নিয়ে ধ্রুবর সামনে দাঁড়ালেন। শুরুতেই জিজ্ঞেস করলেন———‘তুমি কোথায় থাকো?’

ধ্রুব থমকাল; এই ধরনের প্রশ্ন এখন হুটহাট করার মতো নয়! ধ্রুব চুপ করে আছে দেখে তোফাজ্জল রেগে বললেন———‘কোথায় থাকো তুমি? আমার বাড়িতে কি উদ্দেশ্যে এসেছ?’

ধ্রুব মাথা বাকিয়ে দূরে অদিতির হতভম্ব-ভয়ার্ত চোখের দিকে তাকাল! অদিতির চোখ-মুখ ছিলো চূড়ান্ত ভয়ার্ত; ও ধ্রুবর দিকে চেয়ে শুকনো ঢোক গিলে চোখ নামিয়ে ফেলল! ধ্রুব বুঝতে পারলো- ও ধরা পরে গেছে। ও শান্ত চোখে তোফাজ্জলের দিকে তাকাল; কণ্ঠটা বোধহয় একটু কাপলোও! ও বললো———‘আমি ঢাকায় থাকি।’

তোফাজ্জল এবার যেন রেগে ফে/টে পড়লেন; বললেন———‘ঢাকায় থাকো; ঢাকার মন্ত্রী বাপের বজ্জাত উগ্র একটা ছেলে; এই গ্রামে ফস্টিনষ্টি করার জন্যে এসেছ;এর বাইরে আর কিছু বলার আছে তোমার?’

ধ্রুব রাগলো ভেতরে ভেতরে; আজ অব্দি কেউ ওর সঙ্গে এতটা গলা উঁচু করে চিৎকার করে কথা বলার সাহস পায়নি; ধ্রুব দেয়নি কেকে সেই সাহস-টুকু। অথচ তোফাজ্জল ওকে যা-তা গলায় বলে যাচ্ছেন। ধ্রুব রাগ নিয়ন্ত্রণ করে; শান্ত গলায় বলল———‘আমি এমন ছেলে নই আংকেল। আমার মিথ্যা বলার কারণ ছিলো। আপনি শান্ত হন; আমি এক্সপ্লেন করবো আপনাকে।’

তোফাজ্জল শুনলেনই না ধ্রুব কি বললো; উনি রেগে বললেন———‘কি এক্সপ্লেন করবে তুমি?’ এসব—-

বলে সুমনের থেকে ফোন নিয়ে ধ্রুবকে ছবি-গুলো দেখালেন। ধ্রুব ছবিগুলি দেখে; ওর চোখ বড়বড় হয়ে গেল।এটা তো ওর আর অদিতির ছবি! ও আহাম্মকের মতো দ্রুত মাথা তুলে দূরে অদিতির দিকে তাকাল। অদিতির চোখ টলমলে; অদিতি জানে জানে এখানে কেটে ফেলে দিলেও এই মেয়েটা যে অদিতি সেটা সে স্বীকার করবে না। বরং নিজের ঘাড়ে নিবে চরিত্রহীনের অপবাদ! কিন্তু অদিতি জানে; ধ্রুবর জীবনে অদিতিই সর্বপ্রথম নারী।

ধ্রুব অদিতির থেকে চোখ সরিয়ে ফেলল। মাথাটা নামিয়ে ফেলল;উত্তর দিল না কিছু। তোফাজ্জল বললেন———‘উত্তর দাও। আমার গ্রামে আমারই বাড়িতে তুমি মিথ্যা বলে থাকছিলে এতদিন; তোমার উদ্দেশ্য কি?’

তোফাজ্জল একটু থামলেন; অবিশ্বাস নিয়ে এবার বললেন———‘ধ্রুব; তুমি কি নারী পাচার করো?’

ধ্রুব থমকাল; মাথা তুলে হতভম্ব হয়ে তাকাল তোফাজ্জলের দিকে। বলল———‘আমি এমন ছেলে নই! আর ছবির এই মেয়েটাকে আমি ভালোবাসি! ব্যাস; আর কিছু না।আমাদের সম্পর্ক পবিত্র; ছবিতে যা দেখাচ্ছে আমাদের মধ্যে তেমন কোনো নোংরা সম্পর্কই নেই।’

তোফাজ্জল চোখ বুজে শ্বাস ছাড়লেন। হেসে তাচ্ছিল্য করে বললেন———‘বুঝতে পারছি; এ কেমন ভালোবাসা। এই মেয়ের বাপের জন্যে আজ আমার আফসোস হচ্ছে। এলোমেলো শাড়ি পরে ঢলাঢলি করে তোমার সঙ্গে। দোষটা এই মেয়েদের না; দোষটা ওদের বাবা-মায়ের; যারা ওদের ঘরে একটা নোংরা মেয়ে পয়দা করেছে।’

ধ্রুব এবার আর নিজের রা একটুও সামলাতে পারল না; আঙুল দিয়ে চেঁচিয়ে উঠল———‘এনাফ আংকেল; আপনি আমাকে বাজে বলার, খারাপ বলার, নষ্ট বলার যা ইচ্ছা বলুন; ওকে নয়। ওকে একদম নয়। আমি জানি; ও কতটা পিউর একটা মেয়ে। আপনি জানেন না; কিচ্ছু জানেন না আপনি।’

তোফাজ্জল রাগের মাথায় কি বলছেন, উনি নিজেও জানেন না। মূলত উনি আহত হয়েছেন—উনার গৌরব আজ আহত হয়েছে। ধ্রুবকে এত ভালো ভাবেন; উনার বিচার কখনো ভুল হয় না, সেটাই জানতেন উনি এতদিন। আজ উনার চোখের বিচার নস্যাৎ প্রমাণিত হয়েছে। নিজের প্রতি নিজেরই ঘেন্না ধরে গেল তোফাজ্জলের।

ধ্রুবর চোখ মারাত্মক লাল হয়ে আছে; যেকোনো মুহূর্তে ও তোফাজ্জলকেও——

ধ্রুব রেগে অদিতির দিকে তাকাল। অদিতি ততক্ষণে কেঁদে ফেলেছে। ফাহিমা চেঁচানো শুনে দৌড়ে এলেন বাইরে। ততক্ষণে যা ঘটার ঘটে গেছে। ধ্রুব নিজেকে শান্ত করলো; শুধুমাত্র অদিতির চোখের পানি দেখে। শুধু অদিতির বাবা বলেই,ও নিজেকে ছোট করে বলল———‘একটা মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হচ্ছে আংকেল। আপনি রাগের মেজাজে আছেন; আমরা বসে কথা বলি; প্লিজ?’

তোফাজ্জল থামলেন; শান্ত চোখে ধ্রুবকে দেখলেন। পরে সাফসাফ জানিয়ে বললেন———‘তুমি আজকেই এই গ্রাম থেকে এক্ষুনি এই মুহূর্তে চলে যাবে। তোমার ব্যাগপত্র গোছাও।’

ধ্রুব এবার যেন মারাত্মক অধৈর্য‍্য হলো; অস্থির ভঙ্গিতে এগিয়ে এলো দু কদম; বলল———‘আংকেল আমি এক্সপ্লেইন করব সব; প্লিজ! আমাকে জাস্ট দু মিনিট সময় দিন।’

অদিতি শুধু তাকিয়ে ছিল ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব যে জীবনেও কারো কাছে মাথা নত করে; কাউকে অনুরোধ করে কিভাবে শিখেনি; আজ অদিতির জন্যে ও কারো সাম্বে মাথা নত করল। অদিতি এসব দেখার আগে কেন ধ্রুবকে রাগ দেখিয়ে চলে যেতে বললো না; কেন ধ্রুবকে নিজের লাইফে আসার জন্যে লাই দিল—- আজ বড্ড আফসোস হচ্ছে অদিতির। অপরাধবোধে অদিতির গা জ্বলে উঠল যেন। ও মাথা নাড়িয়ে টলমলে চোখে চেয়ে বিড়বিড় করতে লাগলো—‘চলে যান ধ্রুব; চলে যান। আর কত আমার অ/পমান সইবেন?’

ধ্রুব অদিতির বারণ শুনলো না; ওর দিকে তাকাল না; বরং তোফাজ্জলের কাছে এগিয়ে এসে কাতর গলায় বলল———‘এই বেগ ইউ আংকেল; জাস্ট দু মিনিট।’

তোফাজ্জল চোখ বন্ধ করে শ্বাস ছাড়লেন; ধ্রুবর দিকে আর একবারের জন্যে তাকালেন না; পেছন ফিরে শান্ত গলায় স্রেফ বললেন———‘তোমার কাছে আর দশ মিনিট আছে; দশ মিনিট পরে তোমার মুখ আমি এই গ্রামের কোথাও দেখতে চাই না।’

তোফাজ্জল চলে গেলেন ঘরে। ঘরে ঢুকেই দরজায় খিল তুলে দিলেন। অদিতি জানালার পাশে দাড়িয়ে ছিলো; বাবা আসতে দেখেই ও ঘরে ঢুকে গেল। নিজের ঘরে ঢুকে ও জানালার পাশে পর্দা সরিয়ে তাকাল বাইরে! অদিতির চোখ টলমলে; কান্নায় ভেসে যাচ্ছে ওর দুই-চোখ! কি থেকে কি হয়ে গেল আজ? ড্রাইব-অদিতির বিয়ের কথা থেকে এখন এসব! এটা কি কোনোভাবে দুঃস্বপ্ন হতে পারেনা! ধ্রুবর মন থেকে অদিতির বাবার করা অপমান কি অদিতি কোনভাবে মুছে ফেলতে পারেনা?

ধ্রুব তখন হতাশ হয়ে সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। ওর চোখ-মুখ উত্তপ্ত; রাগে মাথার ভেতরটাও ফা/টছে। সুমন তার দিকে তাকিয়ে বিশ্রী হেসে চলে গেল। ধ্রুব অদিতির দিকে তাকাল; অদিতির কান্নাভেজা চোখ ধ্রুবর ভেতরটা অব্দি নাড়িয়ে ফেলল। ধ্রুব চোখ নামিয়ে ফেলল; ওর এতদিনের প্ল্যান- এতদিনের অভিনয় সব মুহূর্তেই জলে গেল। অদিতিওই বোধহয় আর ধ্রুবর পাওয়া হলো না। সেদিনই ধ্রুব নিজের ব্যাগপত্র নিয়ে ঢাকার দিকে রওনা দিল। শেষবারের জন্যেও অদিতির সঙ্গে দেখা করতে পারলো না; অদিতির কান্নাভেজা মুখ দেখেই ফিরে যেতে হলো ওকে খালি হাতে!

#চলবে

#আমার_প্রেমিক_ধ্রুব—-| ২৪ |
#অবন্তিকা_তৃপ্তি

বাস চলছে নিজের গতিতে। লক্ষ্মীপুর টু ঢাকার বাস শারীরিকভাবে ভাঙাচোরা; লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু তখন হুটহাট অন্য কোনও বাসের টিকিট না পেয়ে সেটাই কিনে উঠেছে ধ্রুব। দুটো সিটের টিকিট কিনেছে; ওর পাশের সিটটাসহ! রাগ ওর মাথার ভেতরটা আপাতত ধপধপ করছে। কেউ পাশে বসলে তাকেও খু/ন করতেও দ্বিধা করবে না ধ্রুব, এমন ভয়াবহ রাগ জমে আছে মাথায়।

ধ্রুব বাসে উঠে; বাসটা লক্ষ্মীপুরের গণ্ডি পেরোতেই ধ্রুবর ভেতর থেকে বড় এক দীর্ঘশ্বাস বেরুলো। ধ্রুব জানালার বাইরে, পথের দিকটাতে চেয়ে দেখতে দেখতে বিড়বিড় করলো ————‘ই‍্যয়ু মেইড ধ্রুব ইয়ামিন অ্যা বিগ লুজার, অদিতি। নাও; ইউ শুড সেলিব্রেট;রাইট! সিলেব্রেট বিকজ; ধ্রুব এখন থেকে তোমার কেউনা; হি ইজ নোওয়ান; জাস্ট অ্যা লুজার।’

বাস অনেকটা পথ পেরোতেই ধ্রুবর ফোনে ইমনের কল এলো; তখন সকালের দিকে হুট করে কল কেটে দেওয়ায় ইমন বুঝতে পেরেছে- গণ্ডগোল তো কিছু একটা হয়েছেই। ইমনের কল পেয়ে ধ্রুবর মাথা সচল হলো; ও কল রিসিভ করে কানে ধরল। ওপাশে ইমন কল ধরতেই চেঁচিয়ে উঠল——‘ওই কল ধরস না ক্যান আমার? গার্লফ্রেন্ড পেয়ে বন্ধুর লাগে গাদ্দারী করো?’

ধ্রুব ইমনের ওসব ফাজলামো কানে না তুলে;উল্টো ইমনের উপরেই চেঁচিয়ে উঠলো——-‘আগে তুই আমারে আনসার দে! সুমনের কাছে আমার-অদিতির পার্সোনাল ছবি কীভাবে গেল?”

ইমন খাচ্ছিল; ও খাওয়া থামিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল ——‘আরে এই সুমনটা আবার কে?”

ধ্রুব পরিচয় দিল পুরোটা; সঙ্গে সেদিনের বিচারের কথা-গুলো বলে; আজকের সকালের পুরো ঘটনা শর্টকার্টে বিবরণ দিল। সব বলা শেষে ধ্রুব এবার রাগ-জেদ নিয়ে বলে গেলো———‘অদিতির গ্রামের একটা লোক, আমাকে জানেও না ভালোভাবে। হি টার্নস আউট টু অ্যা স্পাই! ওর কাছে আমার আর অদিতির…’

ধ্রুব থামল; রাগ মাথায় এতটা চড়ে আছে যে বাকি বলতেও পারছে না। ইমন ভ্রু কুঁচকালো; সন্দেহ নিয়ে বললো ——‘তোর আর অদিতির?’

ধ্রুব হতাশ শ্বাস ফেলে; চোখ উল্টে উত্তর দিল ——‘আমাদের হাগ করার ছবি আছে ওর কাছে। এন্ড দিস বাস্টার্ড ছবিগুলো সোজা ব্লা/স্ট করেছে অদিতিরই বাবার সামনে। পুরো প্ল্যান রুইন করে ফেলেছে, ব্লা/ডি! আমি ওকে খু/ন করে ফেলব, ইমন; ট্রাস্ট মি।”

ইমন হুট করে অবাক হয়ে সটান দাঁড়িয়ে গেল, বলল ————‘হোয়াট? ছবিগুলো ওই পোলা পেল কীভাবে?”

ধ্রুব রেগে; বাম হাতের আঙ্গুলে কপাল চুলকাতে চুলকাতে বলল ———‘সেটা আমি কীভাবে জানব? ওই সময় ওই রুমে আমি আর তুই ছিলাম।’

ইমন ধ্রুবর বলার ইঙ্গিত দ্রুতই ধরে ফেলল; ভ্রু উঁচু করে সঙ্গেসঙ্গে নিজের দিক পরিষ্কার করে বলল ———‘ভাই কসম, আমি ছবি তুলিনি। আমার সামনে দুটো মানুষ লুতোপুতো করছে; এসব দেখতেই তো আমার শরম লাগে।”

ইমনের এই মুহূর্তে করা মজা ধ্রুবকে বিরক্ত করলো। ধ্রুব চোখ-মুখ কুঁচকে বলল ——‘ফাজলামো কমা। লিসেন; আমি ঢাকা আসছি আজ। আই অ্যাম শিওর ছবিগুলো ওই ছেলেগুলোই লিক করেছে। তুই এখন ওদের কাছে যাবি; আমি এড্রেস মেসেজ করেছি। তোর কাজ হচ্ছে তুই খবর বের করবি ওই ব্লা/ডি রা/স্কেল-গুলোর মুখ থেকে। বাকিটা আমি এসে দেখে নেব।’

ইমন মাথা নেড়ে সায় দিল। তারপর হঠাৎ জিজ্ঞেস করল ——‘আর অদিতি? ও ঠিক আছে?’

ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল ——-‘ইয়াহ, শি ইজ সেইফ। বাট অ্যাই অ্যাম ইন ডেঞ্জার। তুই যা বলেছি, ওগুলো কর আগে।’

ইমন ধ্রুবর আতঙ্ক; ওর চিন্তা বুঝে। এবার আর ফাজলামো না করে নরম গলায় বললো ——‘ওকে ওকে। দেখছি আমি; তুই সাবধানে আয়।’

_____
অদিতি বারবার ধ্রুবকে কল দিচ্ছে। বাসের মধ্যে ধ্রুব ওই কল কেটে দিচ্ছিল বারবার। রাগে ধ্রুব তখনো স্বাভাবিক হচ্ছে না। অদিতি শেষ পর্যায়ে দিশেহারা হয়ে মেসেজ করল ———‘ধ্রুব, আল্লাহর ওয়াস্তে কলটা রিসিভ করুন, প্লিজ।”

ধ্রুব মেসেজ দেখল, তারপর মেসেজবার থেকে সেটা সরিয়ে থম হয়ে বসে রইল। অদিতি আবার কল করলো; কেটে দিল ধ্রুব। এই পর্যায়ে অদিতি মেসেজ করলো ———‘অ্যাই অ্যাম সরি। আমার বাবার অপমানের শাস্তি আমাকে কেন দিচ্ছেন, ধ্রুব! আমি আপনাকে বারবার সতর্ক করেছিলাম; করিনি আমি?”

ধ্রুব এবারের যাত্রায় ফোন হাতে মেসেজ সিন করল! অদিতি সিন করেছে দেখে সঙ্গে সঙ্গেই আবার কল করল ধ্রুবকে। ওপাশ থেকে ধ্রুব কল রিসিভ করে কোনো ভনিতা না করে স্রেফ বলল ——‘কি বলবে বলো?”

অদিতি কান্না আটকে ব্যাকুল গলায় বলল ——‘আপনি ঠিক আছেন তো, ধ্রুব?”

ধ্রুব নিজের রাগ সামলে উত্তর দিল ——‘আই’ম ফাইন।”

অদিতি আবারও বললো ——‘সবকিছুর জন্যে আমি সরি, ধ্রুব।”

ধ্রুব এবার নিজের রাগ সংবরণ না করতে পেরে চেঁচিয়ে উঠল ——‘অদিতি: হোয়াট সরি? তোমার বাবা আজ আমাকে অপমান করেছে, আম ফাইন উইথ দ্যাট; ট্রাস্ট মি। কিন্তু উনি তোমাকে কেন নোংরা বলে? কে দিয়েছে উনাকে সেই রাইট? হু?”

অদিতি বোঝানোর চেষ্টা করলো ——‘আব্বা জানতেন না ওটা আমি।”

ধ্রুব আবার চেঁচিয়ে উঠল ——‘জানেন না তাহলে একটা মেয়েকে নিয়ে এমন কথা বলার অধিকারও উনার নেই। কিন্তু ওটা যদি তুমি না-ও হতে, অন্য কোনো মেয়ে তো হতো। উনি কিভাবে এসব বলেন? আই ক্যান্ট বিলিভ।”

অদিতি থেমে গেল; ধ্রুব দাঁত খিঁচে বলে গেলো ——‘ ই‍্যয়ু নো হোয়াট? তোমার বাবা একজন আস্ত সেলফিশ মানুষ! উনি উনার সম্মান, গৌরবের কাছে অন্ধ হয়ে গেছেন, লিটারেলি! আর তুমি তোমার সেই বাবার জন্যে আমাকে সাফার করাচ্ছো।”

অদিতি এসব শুনে তব্দা খেয়ে গেল। ও বলল ——‘আব্বা সেলফিশ নন, পরিস্থিতি এমন——”

ধ্রুব এবার চুড়ান্ত বিস্মিত হয়ে বলল ——‘ফর গড’স সেক, তুমি এখনো তোমার বাবাকে ডিফেন্ড করে যাচ্ছো!’

ধ্রুব ভুল ভাবছিল। অদিতি সঙ্গেসঙ্গে বোঝার ভঙ্গিতে বললো——‘আমি কাউকেই ডিফেন্ড করছি না, ধ্রুব; আপনি আমাকে ভুল ভাবছেন।”

ধ্রুব অদিতির এসব পক্ষ নিয়ে কথা বলাতে কথায় এবার বিরক্ত হতে শুরু করলো। ধ্রুব নিজের রাগ-টুকু অদিতির সামনে প্রকাশ করতে চাইল না। ও স্রেফ চাপা গলায় বললো——‘অদিতি, ফোন রাখো।’

অদিতি অবাক; কিছু বলতে চাইলো——‘আপনি…’

ধ্রুব এবারও চাপা গলায়; নরম থাকার ভান করে বললো ——‘আই সেইড, ফোনটা কাটো। আমি তোমার এসব পক্ষ ধরে কথা বলা জাস্ট নিতে পারছি না।”

অদিতি হতভম্ব হয়ে শুনে গেল ধ্রুবর কথা; পরমুহূর্তে ওর চোখ টলমল করে উঠল। এমন আচরণ করলো তো ধ্রুব! ঠিক আছে; ও আস্তে করে কলটা কেটে দিলো।

কল কেটে ফোনটা রীতিমত বিছানার উপরে ছুঁড়ে ফেলে দুহাতে মাথার চুল খামচে বিছানায় বসে গেল।ধ্রুব ওর সঙ্গে এমন করে কথা-গুলো কেন বলল? এখানে ওর দোষ কোথায়? ধ্রুবকে অদিতি বারবার; বারবার মানা করেছে। তারপরও কেন থাকল ওর বাড়িতে। ও তো ধ্রুবকে কোনো আশা দেয়নি। অদিতির বারবার মনে পরছে; ধ্রুবর সঙ্গে তোফাজ্জলের দেওয়া আচরণ-গুলো। দিলটা ছিড়ে যাচ্ছে সেসব মনে করে। কিন্তু…কিন্তু এসবে ওর এত খারাপ লাগবে কেন? ওরা তো প্রেম করছে না। তবে কিসের অদিতির এত দায়বদ্ধতা! ও ধ্রুবকে নিজের জায়গা থেকে বারবার সতর্ক করেছে! তবুও সে থেকেছে, অপমান সহ্য করেছে। এখানে অদিতির দোষটা কী? আর তোফাজ্জলের এই রূপ তো অদিতি জানতোই; এমনটা হবে সেটাও জানত। ধ্রুবকে কি বলেনি ও সেসব? এখন ধ্রুব কিসের এত রাগ; এগ্রেসিভ আচরণ দেখাচ্ছে।

অদিতি ভাবতে পারছে না আর; হঠাৎ নিজের ভাবনার এসব দন্ধের মাঝে ওর দরজায় ডাক পরলো —‘অ্যাই অদিতি, খেতে আয়।”

অদিতি থামল; চোখের পানি মুছতে মুছতে ভাঙা গলায় বলল——‘তোমরা খেয়ে নাও; আমি একটু ঘুমাবো।”

ফাহিমা আর ডাকাডাকি করলেন না; গত দু’রাত মেয়েটা একটুও ঘুমায়নি; সারাক্ষণ কেমন অন্যমনস্ক হয়ে থেকেছে। বাড়িতে এতগুলো ঝামেলা হয়ে গেল; এখন একটু বিশ্রাম নেওয়া উচিত। তিনি চলে গেলেন। অদিতি বিছানার উপরে মাথা রেখে শুয়ে পরলো; বালিশ ভিজে গেল তার চোখের জলে।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই অদিতির ফোনটা বেজে উঠল। ও দুহাতে চোখ মুছতে মুছতে উঠে বসল। ফোন হাতে নিয়ে দেখে তানিয়ার কল। এমন মুহূর্তে তানিয়ার ফোন পেয়ে অদিতির থামল কিছুসময়ের জন্যে। ও কল রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে তানিয়া অস্থির গলায় বলতে লাগলো———‘অদিতি,ধ্রুব ভাই এক্সিডেন্ট করেছে। আমরা এই মুহূর্তে উনাকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি। তুই কি আসবি?”

‘এক্সিডেন্ট!’— পুরো কথা শুনে থ হয়ে গেল অদিতি! সে ফোনটা আবার সামনে নিয়ে নাম্বার দেখল। কয়টা বাজে? এক ঘণ্টা হয়েছে ধ্রুবর সঙ্গে কথা হয়েছে। এই এক ঘণ্টার মধ্যে এক্সিডেন্ট! অদিতি হতভম্ব হয়ে বলল——‘তুমি মজা করছো নাকি? তানিয়া, আমি মজার মুডে নেই। আমার লাইফে এমনিতেই অনেক ঝামেলা চলছে।”

তানিয়া এবার অধৈর্য হয়ে বলল——‘তোকে আমি ছবি পাঠাচ্ছি। ভাইয়ার অবস্থা খারাপ; আই ডোন্ট নো কী হবে সামনে। তুই আয়, প্লিজ।’

অদিতি কেঁপে উঠল! চট করে কম্পিত হাতে ফোন কান থেকে নামিয়ে ছবি দেখল।ছবিতে ধ্রুবর পুরো মুখ র/ক্তে ভেসে যাচ্ছে; চোখ দুটি নিভু নিভু; কপাল ফেটে গেছে একপাশে। অদিতির বুক আচমকা ধ্বক করে উঠল! ওর সম্পূর্ণ শরীর যেন ঠান্ডা হয়ে গেল; মুখে হাত চেপে উঠে দাড়িয়ে গেল। তানিয়া ততক্ষণে কল কেটে দিয়েছে।

অদিতি দাড়িয়ে আছে; ওর তখনও স্থির হয়ে ছবি দেখছে। তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরেছে। বিশ্বাস হচ্ছে না- ছবিগুলো ধ্রুবর। ধ্রুব… আজ ধ্রুবর যদি কিছু হয়ে যায়, অদিতি জীবনেও নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না। সারাজীবন এই অপরাধবোধ বয়ে বেড়াতে হবে। আর তাছাড়া সে নিজেও মরে….!

এর পরেরটুকু আর ভাবে না অদিতি।তাড়াহুড়ো করে ফোন বিছানায় ফেলে ব্যাগ গোছাতে লাগল। ব্যাগ গোছাতে গোছাতে ফাহিমাকে সজোরে ডাকতে লাগলেন। ফাহিমা ডাক শুনে দৌঁড়ে অদিতির রুমে এলেন।

অদিতি তখন পুরো রুম এলোমেলো করে দৌঁড়ে দৌঁড়ে ব্যাগ গুছাচ্ছে; পাগলের মতো লাগছিল তাকে। ফাহিমা পুরো রুমে একবার চোখ বুলিয়ে; অবাক হয়ে অদিতির দিকে তাকিয়ে বললেন—‘কই যাচ্ছিস তুই?’

অদিতি ব্যাগে এলোমেলোভাবে কাপড় ঢোকাতে ঢোকাতে অস্থির গলায় জবাব দিল——‘ঢাকায় যাচ্ছি।’

ফাহিমা অবাক হয়ে বললেন—‘আজ কেন? তোর না পরশু যাওয়ার কথা?”

অদিতি থামল; তবে কিছু না ভেবেই তৎক্ষণাৎ জবাব দিল——‘আমার ফ্রেন্ড এ/ক্সিডেন্ট করেছে; অবস্থা ভীষণ খারাপ। আমার যাওয়াটা দরকার, মা। আব্বা কোথায়? আব্বাকে বুঝিয়ে দিও।”

ফাহিমা বললেন——‘তোর বাপ তো বাজারে গেছে। আসবে রাতে। কাল যা তাহলে। ফ্রেন্ডই তো শুধু।’”

অদিতি এবার ধীরে পিছন ফিরে তাকাল ফাহিমার দিকে।টলমলে চোখে; ভাঙা গলায় বলল এটুকু——-‘ও..ওর কিছু হলে আমি ম..মরে যাব, মা। আমার যাওয়াটা দরকার।”

ফাহিম ভ্রু কুঁচকালেন; অদিতির এমন পাগল-পাগল অবস্থা দেখে সন্দেহ নিয়ে বললেন——‘ফ্রেন্ডটা কে শুনি?’

অদিতি থমকে গেল; কি উত্তর দিবে এখন? ফাহিমার প্রশ্নের জবাব যে ওর কাছে নেই। অদিতি কখনো চোখে-চোখ রেখে মিথ্যা বলতে পারেনা। তেমনি আজও পারেনি; ও দৃষ্টি লুকাতে লুকাতে জবাব দিলো ——-‘আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড; নাম…নাম জান্নাত। আসি, মা। আব্বাকে বুঝিয়ে দিও তুমি, প্লিজ। আমি পৌঁছে কল করব।”

ফাহিমা মেয়ের দিকে তখনো অবাক হয়ে চেয়ে রইলেন। অদিতি দরজা খুলে দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হলো।
_________
ধ্রুবকে ডাক্তার চেকাপ করে দেখছিল; ধ্রুবর কপাল বেশি ফেটেছে। সেলাই লাগবে। আপাতত ধ্রুবর সেলাই চলছে। রুমের বাইরে ইমন ও ধ্রুবর থ্রি ইডিয়েটের দল অস্থির-ভাবে পায়চারি করছিল। পাশেই তানিয়া বসে আছে; তাকে খবর দিয়েছে ইমন। যেন ওর মাধ্যমে অদিতিকে টেনে বাড়ি থেকে এখানে আনা যায়। অনেক হয়েছে এদের ঝগড়া-বিবাদ। এবার যদি অদিতি ধ্রুবর অসুস্থতা দেখে একটু গলে! পা/ষাণ মেয়ে; চার আনা নেই গায়ে শক্তি। অথচ আস্ত এক ধ্রুবকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছে। সাহস কম না এই মেয়ের!

ইমনের পাশে সৌরভ দাঁড়িয়ে আছে; তিনি হাসপাতাল আসছে পর থেকে ফোনে কথা বলছেন। এতক্ষণ হাসপাতালে বসে থেকে তার জরুরি কাজগুলো নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ছেলের জন্য সব কাজ ফেলে রেখে এখানে বসে আছেন। যতই ধ্রুব তাকে বাবা না মানুক, তিনি তো ছেলে মানেন। তাই তার পিতৃ সত্ত্বা তাকে ছুটে নিয়ে এসেছে হাসপাতালে।

সৌরভের দিকে একপল চেয়ে ইমন ধীর পায়ে তানিয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়াল; তানিয়া দ্রুত সিনিয়রকে সম্মান দেখিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তানিয়ার পাশে দাড়িয়ে ইমন নিচু গলায় জিজ্ঞেস করল——‘অদিতিকে কল দিয়েছিলে?’

তানিয়া সঙ্গেসঙ্গেই বলল——‘জি ভাইয়া, আসছে ও।’

ফোন করার তিন ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে; এতক্ষণে এসে পৌঁছে যাওয়ার কথা। ইমন ভ্রু কুঁচকে ঘড়ি দেখে নিয়ে বলল——‘এত সময় তো লাগার কথা—-‘”

ইমনের কথা শেষ হওয়ার আগেই দেখা গেল অদিতি হাঁপাতে হাঁপাতে করিডোরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। হাতে ছোটখাটো ব্যাগ; চুল এলোমেলো; কোনো রকমে গায়ে ওড়না টেনে বেরিয়ে পরেছে বোঝাই যাচ্ছে। ইমন অদিতিকে দেখে খুশি হলেও মুহূর্তেই মুখটা গম্ভীর করে ফেলল ও। মেয়েটাকে ধ্রুব লাই দিয়েই এত সাহস বাড়িয়েছে; ইমন এতো লাই দিবে না ধ্রুবর মতো।যত লাই দেবে; তত এই চার আনার ছোটখাটো মেয়েটা তার বন্ধুর দিল ভে/ঙ্গেচুরে খানখান করে দিতে থাকবে।

অদিতি ইমনদের দেখে থমকে গেল; নিজের অনুভূতি সামলে ধীর পায়ে ওদের সামনে এসে দাঁড়াল। ইমন অদিতিকে দেখে ভ্রু বাঁকিয়ে বলল——-‘তোমাদের না মান-অভিমান চলছে? তো এখানে কী? ধ্রুবকে দেখতে এসেছো?’

অদিতি মাথাটা নামিয়ে ফেলল; চুড়ান্ত অপরাধবোধ নিয়ে জবাব দিল ——‘সে কেমন আছে এখন? কোন রুমে?’

অদিতির এত চিন্তা দেখেও ইমন রাগী গলায় বললো——-‘ধ্রুবকে মেরে ফেললেই তো পারো; খামোকা বেচারাকে কষ্ট কেন দিচ্ছো?’

অদিতি তাকিয়ে রইল ইমনের দিকে; পরপর ব্যাকুল গলায় বলতে লাগলো——-‘সব আমার জন্য হয়েছে ভাইয়া। আমার বাড়ি থেকে—‘

ইমন অদিতিকে পুরো কথা বলতে না দিয়ে সৌরভের দিকে চেয়ে দ্রুত থামিয়ে দিল——‘ওকে ওকে; বুঝে গেছি। পাবলিকলি আর আমার বন্ধুর কষ্টের কথা আর বলো না; বোন।’

অদিতি থামল। ওর চোখ দুটো ফাঁকা;কান্না দমিয়ে রাখার দরুন গলা বারবার ওঠানামা করছে। হয়তো ইমনকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইছে, কিন্তু বলতে পারছে না। ইমন সেটা বুঝে; অদিতিকে এ যাত্রায় আশ্বস্ত করে বলল——-‘ডোন্ট ওরি; তোমার হয়েও না হওয়া প্রেমিক ধ্রুব ঠিক হয়ে যাবে। সেলাই চলছে; বাকিটা আল্লাহ ভরসা।’

ডাক্তার রুম থেকে থেকে বের হতেই ইমন ওদিকে দৌড়ে গেল। অদিতি যাবে কি যাবে না ভাবছিল; ওপাশে সৌরভও দাঁড়িয়ে।তাই অদিতি সঙ্কোচ দেখিয়ে দূর থেকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে রইল ডাক্তারের দিকে। তানিয়া পাশ থেকে সেটা দেখলো! অদিতি-ধ্রুবর এই করুন প্রেমকাহিনি তানিয়াকে আকৃষ্ট করলো। ও ধীর পায়ে অদিতির পাশে এসে দাড়িয়ে ওর কাঁধে আলতো করে হাত রাখলো; বলল——‘ এখানে দাড়িয়ে না থেকে শুনে আয় যা।’

অদিতি দুহাতে চোখ মুছে; ভাঙা গলায় বললো শুধু—‘আমার জায়গা এখানেই।”

তানিয়া অদিতির ভাঙা মন বুঝে ওর কাঁধে হাতটা চেপে ধরে। এয়ক্ষ্ণে ভরসা পেয়ে এতদিনের জমিয়ে রাখা কান্না-গুলো যেন ছুটে বেরিয়ে আসতে চাইছে। অদিতি ফাঁকা ঢোক গিলে কান্না আটকে বললো——‘সব আমার জন্য হয়েছে; তানিয়া। আমি তার এই অবস্থার জন্য দায়ী। তার কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে কোনোদিন মাফ করতে পারব না, কোনোদিন না।’

বলে চোখের জল মুছে ফেলল অদিতি। তানিয়া অদিতির সামনে এসে দাড়ালো। ওর কান্নাভেজা মলিন মুখ দেখে বড্ড মায়া হলো তার। ও অদিতির গোলগাল-সরল মুখটা আগলে ধরে তার চোখের জল মুছে সান্ত্বনা দিয়ে বলল—‘ঠিক হয়ে যাবে সব; চিন্তা করিস না। একটা কথা; ধ্রুব ভাইকে নিয়ে তোর এত পুড়ছে কেন? তোর তো রিলেশনে নেই উনার সঙ্গে; রাইট? ফিরিয়ে দিয়েছিলি না ধ্রুব ভাইকে?’

অদিতি তাকিয়ে রইল তানিয়ার দিকে; এর কোনো জবাব যে ওর নিজের কাছেও নেই। তানিয়া সেই চাওনি রেখে হালকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো—-‘ দেখ অদিতি। তুই নিজেও কষ্ট পাচ্ছিস, বেচারা ধ্রুব ভাইকেও কষ্ট দিচ্ছিস। কেন এসব করে যাচ্ছিস, অদিতি? কিসের জন্যে? তুই এক পা এগোলে বাকিটা ভবিষ্যৎ আল্লাহ দেখবেন। কেন নিজেকে এভাবে আটকে রাখছিস?”

অদিতি সরে গেল; অস্থির গলায় বলল——‘তুমি জানো না আমার পরিস্থিতি। আমি এমন—-‘

তানিয়া ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল——-‘আমি জানি সব। সঙ্গে এও জানি, তুই অযথা বিষয়টাকে জটিল করে তুলছিস। নিজের উপর ভরসা রাখ। এমন হাজারো জটিলতার মধ্যেও মানুষ প্রেম করে বিয়ে করে। আপাতত নিজেকে একটা সুযোগ দে। প্রেম জীবনে বারবার আসে না, অদিতি। আর ধ্রুব, তার ময় বেপরোয়া-উগ্র একটা ছেলে শুধুমাত্র তোর জন্য নিজেকে এতটা বদলে ফেলেছে— এটার মানে তুই বুঝিস?’

অদিতি তানিয়ার থেকে চোখ সরিয়ে আলগোছে রুমের দিকে তাকাল; যেখানে ধ্রুব নিস্তেজ অবস্থায় শুয়ে আছে। তার মুখে লাগানো অক্সিজেন মাস্ক; হাত-পা অব্দি নড়ছে না। কপালে ব্যান্ডেজ; যার উপরে র/ক্তের ছোপ ছোপ দাগ। অদিতি ওদিকে চেয়ে রইল নির্নিমেষ। তানিয়া অদিতির চাওনি লক্ষ করে নিজেও তাকাল ওদিকে। একসময় অদিতি বলে উঠল——‘আমি তার সাথে শুধুমাত্র টাইম পাস করতে চাই না, তানিয়া। যদি কোনোদিন আমি তাকে কষ্ট দিই; বিয়ে করতে না পারি, সেদিন? সেদিন কী হবে? আমার ভীষণ ভয় হচ্ছে। তার মন ভেঙ্গে ফেললে আমার সারাজীবন অপরাধবোধ হবে।’

তানিয়া অদিতির মতো ওপাশে চেয়ে থাকতে থাকতে জবাব দি——‘টাইম সব বলে দেবে। আর তুই এটা চিন্তা কর; যে তুই যেন-তেন কাউকে ভালোবাসিস না। সে ধ্রুব, ধ্রুব ইয়ামিন! তোর জন্য সে সমস্ত পৃথিবী উল্টে ফেলতেও পারে। সম্ভব তার জন্য সেটা।’

অদিতি তাকিয়ে রইল অচেতন ধ্রুবর দিকে।ধ্রুবর ওই ফ্যাকাশে মুখটার অদিতি আজও বড় টানে। এই ছেলেটা প্রেমিক হিসেবে দুর্দান্ত হবে। আর অদিতি সবসময়ই মনেমনে ধ্রুবর মতোই কাউকে চাইত; যে ওর জন্যে দুনিয়ার শব্জে বাজি লড়তে পারে।একদম হঠাৎ করে, মনের কোথাও যেন এগিয়ে যাওয়ার একটা আশা দেখতে পেল অদিতি।তারপর হঠাৎ করেই ওর মন থেকে সমস্ত ভয় উবে গেল। গ্রামের চাপা স্বভাবের অদিতি হুট করে সিদ্ধান্ত নিল— ওপাশে যে ছেলেটি র/ক্তাক্ত অবস্থায় শুয়ে আছে, তার হাতে হাত মিলিয়ে অনেকটা পথ চলবে সে। একটা সুযোগ দিবে নিজের জীবনকে। যা হয়ে যাওয়ার হোক; ধ্রুব নামক ওই ছেলেটাকে ফিরিয়ে দেওয়ার সমস্ত পথ অদিতি হারিয়ে ফেলছে। বরং ওকে আকড়ে ধরার পথ খুলে দিচ্ছে একের পর এক। অদিতি অস্থির হয়ে উঠলো; ওই বখাটে-উগ্র ধ্রুবর প্রেমিক সত্ত্বা দেখার জন্যে। কবে সুস্থ হবে ধ্রুব ইয়ামিন?

#চলবে