আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব-৩১+৩২+৩৩

0
103

#আমার_প্রেমিক_ধ্রুব — ৩১
#অবন্তিকা_তৃপ্তি

সবসময় নিঃসঙ্গ, আধার রাতের ন্যায় স্থবির ইয়ামিন বাড়িতে আজ বড্ড কোলাহল। আশপাশে মানুষের বড্ড ভিড়! পুলিশ ব্যারিকেড, পুরো রাস্তাটা জুড়ে দুই সারি পুলিশ রক্ষী দাঁড়িয়ে, তাদের চোখে কোনো সমঝোতা বা দয়া দেখা যাচ্ছিল না। সাংবাদিকদের ক্যামেরার ফ্ল্যাশ একটার পর একটা চমকাচ্ছে, এখানকার ভাইরাল নিউজের প্রতিটা মুহূর্তে ক্যাপচার করতে পারলেই টিআরপি তুঙ্গে।

এইসব কিছুর মধ্যে, খাদ্য মন্ত্রী সৌরভ ইয়ামিনের একমাত্র ছেলে, তার ডান হাত ধ্রুব ইয়ামিন ভিড় ঠেলে বাড়ির ভেতরে ঢুকলো। বাড়ির ভেতরটা আজ খুব অস্বাভাবিক লাগছে।বাড়িতে ঢুকে সদর দরজার সামনে ঠাঁই ধ্রুব দাঁড়িয়ে গেল। সামনের সোফাটায় ভীষণ নীরব হয়ে বসে আছেন সৌরভ! তার চোখ স্থির,চোখের নিচে গভীর কালি, শরীরটা কিছুটা যেন একদিনেই ভেঙ্গে আসতে চাইছে। দুহাত একটার ভিতরে আরেকটা ঢুকিয়ে নিজের মুখের সাথে চেপে চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে আছেন। ধ্রুব কেন যেন নিজের জন্মদাতার বাবার দিকে বহুদিন পর এভাবে তাকাল। সৌরভ ভেতরে ভেতরে এতটা ভেঙ্গে পড়েছিলেন; এসব ধ্রুবর নজরে কিভাবে পরলো না? কোথায় ছিলো ধ্রুব? অদিতির মধ্যে এতটাই ডুবে ছিলো; আশপাশ প্রায় ভুলতেই বসেছিল ধ্রুব।

ধ্রুব চোখ সরিয়ে আশেপাশে তাকাল। সোফার টেবিলের ওপর হরেক রকমের ফাইল ছড়ানো, কিছু ফাইল উন্মুক্ত হয়ে পরে আছে দুদুকের টিম মেম্বারদের হাতে। দুদকের টিম একটার পর একটা ফাইল চেক করে যাচ্ছে, তাদের মুখাবয়ব তীক্ষ্ণ, গভীর মনোযোগে দিয়ে সৌরভ ইয়ামিনের কীর্তিকলাপ আজ খুঁজে পেলেই প্রমোশন আটকায় কে?

সৌরভের দুপাশে পুলিশ দাঁড়িয়ে।তার থেকে একটু দূরে সোফায় দ্বিতীয় স্ত্রী তৃণা বসে আছে। বারবার সৌরভের দিকে চেয়ে ফুপিয়ে উঠছে। সেদিকে ধ্রুবর মন নেই। সে ধীর পায়ে এগিয়ে গেল; দুদকের টিম প্রধান ধ্রুবকে দেখে ফাইল থেকে মাথাটা তুলে ঠোঁটটা বাকিয়ে হাসল। বড় বিশ্রী ঠেকলো সেই হাসিটা ধ্রুবর কাছে! ধ্রুব হেঁটে তার সামনে দাঁড়াতেই, দুদকের টিম প্রধান রাকিব হোসেন উঠে দাঁড়িয়ে ঠোঁটে বিজয়ীর হাসি ঝুলিয়ে হাত বাড়িয়ে বললেন——-‘হ্যাই ইয়াং ম্যান। ভেরি ভেরি নাইস টু মিট ইউ।’

ধ্রুব উত্তরে নিজেও হাসে, মাথা নত করে ঠোঁট চেপে হেসে আবার তাকালো। কিছুই যেন এই মুহূর্তে এখানে হচ্ছে না; যেন রাকিবকে দেখে তার নাকে ঘুষি বসাতেও ধ্রুবর একটুও ইচ্ছে হচ্ছে না; সেরকম ভাবভঙ্গি নিয়েই ধ্রুব হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলো, উত্তরে বলল——-‘থ্যাংক ইউ! ফাইল-গুলো থেকে কিছু পেলেন?’

সৌরভ ছেলের দিকে মাথা তুলে তাকালেন। ধ্রুব এত্ত স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছেটা কি করে? ধ্রুবর আচরণ সুবিধার ঠেকল না। রাকিব হাতের উন্মুক্ত ফাইলের দিকে চেয়ে বলল———-‘বড়সড় গণ্ডগোল তো আছেই। যা পেয়েছি তাতেই জেল, হান্ড্রেড পার্সেন্ট। বাকি যা চেক করছি, তার তো বোনাস! ই‍্যয়ু নো!’

বলেই রাকিব চোখ টিপে হাসলো। ধ্রুব গা-ছাড়া ভঙ্গিতে সোফায় বসল। পায়ের উপর পা তুলে; অভদ্রের ন্যায় পা নাড়াতে নাড়াতে দুহাত সোফার হাতলে রেখে রাকিবের দিকে চেয়ে বললো————“জেল? উমম… গুড ওয়ার্ড!আচ্ছা, মন্ত্রী মানুষের জেল আদৌ হতে দেখেছেন কখনো? আপনি যে আগে সরকারের পা চাটতেন, তাদেরকেও দেখেছেন, তাদের কারো কোনো কারণে জেল হয়েছে? ওসব জেল নয়; নতুন মোড়কে জাস্ট একটা হাওয়া বদল আমাদের জন্যে! রাইট?’

ধ্রুবর পা নড়ছে; রাকিব ধ্রুবর নাড়ানো পায়ের দিকে তীক্ষ চোখে চেয়ে আবার ধ্রুবর দিকে তাকাল। ধ্রুব রাকিবকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আচমকা বড্ড বিনিয় নিয়ে তড়িগড়ি করে বলল———‘ আরে; দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসুন; জাস্ট হ্যাভ অ্যা সিট।’

রাকিবের মেজাজ গরম হচ্ছে ধীরে ধীরে। অথচ ধ্রুবর ঠোঁটে অসভ্যের ন্যায় একটা হাসি। সেই হাসি দেখে গা-পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে রীতিমত। রাকিব আলগোছে সোফায় বসল। তারপর নিজে বিশ্রী ভাবে বললো———-‘ বড্ড উড়ছ ধ্রুব! এত বিশ্বাস ভালো নয়।’

তারপর নিজের মুখটা ধ্রুবর দিকে এগিয়ে এনে ফিসফিস করে বলল———‘মিডিয়াকে খবরটা আমিই পাচার করেছি! জেল নাকি হাওয়া বদল তা তো দেখতেই পারবে সামনে। ওয়েট!’

বলে ক্রূর হাসল রাকিব! ধ্রুব উত্তরেদাঁত ঠোঁটে চেপে মাথা নিচু করে হেসে আবার তাকাল; ও রীতিমত হেসে উড়িয়ে দিল রাকিবের কথা-গুলো! তাদের কথার মধ্যে, দুদকের টিম মেম্বারদের একজন এসে রাকিবের কানে কিছু বলল—‘স্যার, এই ছেলেটার সম্পর্কে কিছু পাওয়া যায়নি।’

রাকিব রেগে তাকাল ওই মেম্বারের দিকে। শীট, সমস্ত প্ল্যান ভেস্তে গেছে! সে ধ্রুবর দিকে চেয়ে দাঁত খিঁচিয়ে বললো———‘অন্যায় করে প্রমাণও লুটপাট করেও ফেলেছো দেখছি?’

ধ্রুব উত্তরে হাসল, তার হাসি ছিল এবার ভিন্ন! ওসোফা থেকে হাত দুটো সরিয়ে একটা কুশন নিয়ে সেটি কোলের ওপর রেখে আরাম করে বসে বড় একটা শ্বাস টেনে বলল———‘ করতে হয় স্যার। আশেপাশে কিছু কুত্তার-বাচ্চা গুলো আছে না? ঘেউঘেউ করে কানের পোকা নাড়ানোর জন্য সবসময় বসে থাকে। সো সিলি, না?’

রাকিবের মুখটা ধ্রুবর গা-লি শুনে অপমানে লাল হয়ে গেল! চুপচাপ উঠে দাঁড়াল সোফা থেকে।ধ্রুবর দিকে চেয়ে বলল ——-‘ শীঘ্রই দেখা হচ্ছে কোর্টে। সারাজীবন জেল তো দিতে পারব না; কিন্তু হয়রানি তো করবোই! গুড বাই!’

বলেই সামনের পুলিশের দিকে চেয়ে কিছু একটা ইশারা করে চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে বেরিয়ে গেল সদর দরজা দিয়ে। পুলিশ কর্মচারী সৌরভের দিকে চেয়ে নিচু গলায় বলল——-‘স্যার, যেতে হবে।’

সৌরভ বড় করে শ্বাস ফেললেন! তৃণা এবার এগিয়ে আসলেন সৌরভের দিকে। অস্থির গলায় পুলিশ-গুলোর দিকে চেয়ে বললেন——-‘উনি একদম যাবে না। তোমাদের টাকা দিয়ে রাখে কেন? কিছু করতে পারছো না তোমরা?’

পুলিশ কর্মচারী গলাটা একটু নিচু করে বলল——‘সরি ম্যাম! মিডিয়া জেনে গেছে পুরো ব্যাপার। এখন চাইলেও কিছু করার নেই আমাদের হাতে।’

তৃণা বহু কষ্টে কান্না আটকে রেখেছিল। সৌরভ উঠে দাঁড়াতেই সে দৌড়ে সৌরভের কাছে গেলো; বললো———‘বারবার বলেছিলাম মন্ত্রী পদ ছেড়ে বিজনেসে হাত লাগান। এখন কি হবে? আমার এই দুনিয়ায় কেউ নেই সৌরভ! তুমিও চলে গেলে আমি একা হয়ে যাব।’

সৌরভ আলগোছে তৃণার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন ———‘ফিরব আমি। ফিরে কিছু মানুষকে জ-বাইও করবো। কেদো না।’

বলে সাদা পাঞ্জাবি ঠিকঠাক করে পুলিশকে বললেন———‘চলো।’

সৌরভ ধ্রুবর দিকে একবার চেয়েই চোখ সরিয়ে আগে-আগে হাটা ধরলেন। সৌরভ চলে গেলেন পুলিশের গাড়ি করে। সৌরভ যেতেই তৃণা এবার ধ্রুবর দিকে এগিয়ে গেল। ধ্রুব তাকিয়ে ছিল সদর দরজার দিকে। তৃণা এসে সোজা ধ্রুবর সামনে দাঁড়িয়ে গেল; অধৈর্য‍্য ভঙ্গিতে বললো———-‘ধ্রুব, প্লিজ তোমার বাবাকে নিয়ে আসো! তার জন্যে যা কিছুর দরকার করো, যা ইচ্ছা। তাও তাকে প্লিজ নিয়ে আসো! তোমার কাছে হাতজোড় করছি আমি।”

ধ্রুব তৃণার দিকে তাকাল; তার এবার অস্বস্তি হচ্ছে। এই মহিলাকে সে দু-চোখে দেখতে পারে না। সেটা উনিও জানেন। তাই নিজেও কখনো আগ বাড়িয়ে ধ্রুবর সামনে আসেননি। তবে আজ তার কথাগুলো ধ্রুবকে অস্বস্তি দিচ্ছে। ধ্রুব উঠে দাঁড়াল সোফা থেকে। তৃণা আবারো বলল——-‘ভালো লোয়ার আছে আমার কাছে, ধ্রুব। তুমি বললে আমি যোগাযোগ…”

ধ্রুব তৃণার কথা থামিয়ে দিল। চোখ তুলে একবারের জন্যেও ওই মহিলাকে না দেখে, তীব্র অস্বস্তি নিয়ে স্রেফ বলল——-‘আমি দেখছি। আপনি চিন্তা করবেন না।”

বলে এক মুহূর্তে দাঁড়াল না, বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে।তৃণা সেখানটায় সোফায় হেলে বসে পরলো!
___________
আজ ঠিক গুনেগুনে দুই দিন পর, ধ্রুব সেক্রেটারি রাহুলকে সাথে নিয়ে পপুলার ব্যাংকে এসেছে। ব্যাংকে ঢুকতেই, ব্যাংকের ম্যানেজার দ্রুত এগিয়ে গেল;———-‘ ধ্রুব স্যার! আপনি? কোনো দরকার?’

ধ্রুব আশপাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখল। কর্মচারীরা বারবার আড়চোখে ওর দিকে তাকাচ্ছে, ধ্রুর চোখে চোখ পরতেই দ্রুত লুকিয়ে নিচ্ছে নিজেদের নজর! ধ্রুব মনেমনে হাসে! এখানের সবাই বিক্রি হয়ে গেছে! ধ্রুব সবার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে বলল——-‘কোক আনান। কথা বলি কিছুক্ষণ।”

ধ্রুবর বলা এটুকু শুধু কতগুলো শব্দ ছিলো না; বরং আতঙ্কিত বো*ম ছিলো! ম্যানেজারের গলা যেন শুকিয়ে এল, তবে সে হাসি মুখে বলল——-‘জি, জি। আসুন, ওই রুমটায় বসি।এই ছোটন, দুই ক্যান কোক এবং দুটো প্যাটিস নিয়ে আয়। আসুন ধ্রুব স্যার।’

ধ্রুব নির্বিকার হেঁটে চলল। ম্যানেজার তাকে নিয়ে একটি ঘরে ঢুকল। ঘরটিতে ঢোকার পর ধ্রুব পায়ের ওপর পা তুলে বড় শ্বাস ফেলে শরীর স্ট্রেচিং করতে করতে ঘরটাকে একটু ভালোভাবে দেখে নিল। তারপর চেয়ারে বসতে বসতে ম্যানেজারের দিকে না চেয়েই বলল——-‘রোলেক্সের ঘড়ি কবে থেকে পরা শুরু করলে, ওসমান?’

ব্যাংকের ম্যানেজার ওসমান এ কথা শোনা-মাত্রই তাড়াহুড়ো করতে করতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে হাতটা আড়াল করার চেষ্টা করলো,ফাঁকা ঢোক গিলে বললো ——-‘সবই আপনার দয়া ভাই।”

ধ্রুবর স্রেফ হাসল; রুমটা ভালো করে দেখতে দেখতে জবাব দিলো———-‘দয়া! ভালো বলেছো কিন্তু।’

ওসমান ঢোক গিলে। আজকে ধ্রুবকে কিছুই স্বাভাবিক লাগছে না। সৌরভ ইয়ামিন জেলে যাওয়ার পর, ধ্রুব প্রথমদিনেই এসেছিল ব্যাংকে। তার সেদিনের কথা বলার ভঙ্গিমা আর আজকের কথা বলার মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত! আজ যেন অন্য এক ধ্রুব!

ওসমান সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো; তীক্ষ্ম চোখে ধ্রুবর মতিগতি বোঝার চেষ্টা করছে আপাতত। কিছুক্ষণের মধ্যে একটা ছেলে কোক এবং প্যাটিস এনে রাখল। ধ্রুব কোকের বোতল খুলে সেটাতে চুমুক দিল। কোকের ঠাণ্ডা তরল তার গলায় ঢালতে ঢালতে হঠাৎ বলে উঠলো———-‘ওসমান, আমাকে এক মাস আগের ১১ তারিখের সিসি টিভি ফুটেজটা একটু দেখাও তো। কষ্ট করে এলাম, সিনেমা দেখে যাই। কী বলো?”

‘সিনেমা? সোজা ১১ তারিখের?’—-
ওসমান একটু হকচকিয়ে গেল। ধ্রুব….ধ্রুব কি কোনোভাবে সব জেনে গেছে? না জানবে কিভাবে? জানার কোনো চান্সই নেই।ওসমান শিওর হওয়ার জন্যে আবার মাথা সামনে এনে জিজ্ঞেস করলো——-‘জি স্যার?’

ধ্রুব ওসমানের চোখের দিকে তাকালো! তীক্ষ্ম চোখে ওসমানের চোখ দেখতে দেখতে বলল——‘১১, ১১ তারিখ! সিসিটিভি ফুটেজ লাগবে আমার। এনে দাও।’

ওসমান রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছল, তারপর কম্পিত গলায় বলল——-‘ জি স্যার, আনছি।’

ওসমান বলল এবং দ্রুত বেরিয়ে গেল। রাহুল তখন আরাম করে প্যাটিস খাচ্ছিল। ধ্রুব খাওয়ার মচমচ শব্দে কিছুটা বিরক্ত হয়ে তার দিকে তাকাল এবং বলল——-‘খেতে এসেছ নাকি এখানে?খাওনি জীবনে এগুলো?”

রাহুল খাবার খাওয়া থামিয়ে কিছুটা ভ্যাবলার মতো ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বলল——-‘স্যার জেলে যাওয়ার পর আমার উপর দিয়ে রোলার কোস্টার যাচ্ছে স্যার। আজকে একটু রিল্যাক্স আছি। একটু খেয়ে নেই প্লিজ?’

ধ্রুব চোখ উল্টে হতাশ হয়ে শ্বাস ফেলল এবং ছোট্ট করে শ্বাস ফেলে বলল——-‘ঠিকাছে; গেলো।’

কিছুক্ষণ পর, ওসমান সিসিটিভি ফুটেজ ল্যাপটপে নিয়ে হাজির হলো। ধ্রুব আরাম করে ফুটেজ দেখতে বসে! ১১ তারিখের সকাল থেকে টেনে ভিডিও দেখে যায়। দুপুরের টাইমে আসতেই হুট করে ভিডিও ক্র্যাক হয়ে গেল। ওসমান বাঁকা হাসল মনেমনে! চান্দু এবার কি করবে? ওসমান মুখটা বড্ড দুঃখী বানিয়ে বললো——-‘ শিট; ভিডিও ক্র্যাক হয়ে গেছে স্যার। আমাদের কাছে তো এটার আর এক্সট্রা মেমরি নেই।”

ধ্রুব রাগার ভান করে চেঁচিয়ে বললো———‘শিট এখন কি হবে?’

ওসমানও ঠোঁট উল্টে তাকালো ধ্রুবর দিকে! ধ্রুব ওই মুখের দিকে চেয়ে হঠাৎ ওর ডান চোখটা টিপে হেসে বলল ———‘ডোন্ট ওরি, আমার কাছে এর এক্সট্রা ফুটেজ আছে।”

বলে পকেট থেকে একটা পেনড্রাইভ বের করে ল্যাপটপে লাগাল। ওসমানের চোখ বড় হয়ে গেল। পেনড্রাইভ? এটা তো হারিয়ে গিয়েছিল! ধ্রুব কোথায় পেল? ওসমানের মেরুদণ্ড দিয়ে যেন একটা শীতল স্রোত চলে গেল। তাদের ব্যাংকের মধ্যেই কেউ ধ্রুবের সাথে হাত মিলিয়েছে! কে করেছে এই গাদ্দারি! হঠাৎ করে বুকের মধ্যে যেন একটা কঠিন চাপ অনুভব করতে লাগল। সামনে যা হবে; ভাবতেই গলাটা শুকিয়ে এলো!

ধ্রুব ফুটেজে দেখল, ১১ তারিখের দুপুরে, বিরোধী দলের মন্ত্রী কামরুল ব্যাংক অফিসে এসেছে, সঙ্গে দলবল। ওসমান ওদের রিসিভ করেছে। ওদের দলের একজন লোক ব্যাংকের সকল কর্মচারীর হাতে লুকিয়ে টাকার বান্ডিল তুলে দিচ্ছে, ওসমানের মুখে হাসি লেগেই আছে। তারপর ওসমানের হাতে কয়েক বান্ডেল টাকা তুলে দিতেই ওসমান একটা ফাইল এগিয়ে দিল কামরুলের দিকে। ফাইলটা দেখেই ধ্রুব নিজের মোবাইল বের করে একটা ফটো দেখিয়ে ওসমানকে বলল ——-‘দেখো তো ওসমান; এই ফাইলটাই আমার বাপের হারানো ব্যাংকের সেই ফাইল কিনা?’

ওসমান ভয়ে হেলে পরে দেয়ালের ওদিকে। দেয়াল হাতে চেপে আতঙ্ক নিয়ে; ভয়ার্ত চোখে ধ্রুবর দিকে তাকায়। ধ্রুব এবার রেগেমেগে উঠে দাঁড়ায় চেয়ার থেকে, চিৎকার করে বলে——-‘ কু—ত্তার বাচ্চা; তুই গা—দ্দারী করস আমার বাপের লগে? মাস শেষে কম টাকা নিস? তোর টাকার নিচেই শা—লার বাচ্চা তোরে পুঁ—তে রাখবো আমি ধ্রুব! শুয়——‘

বাকি কথা বলার আগেই ওসমান রীতিমত মাটিতে শুয়ে ধ্রুবর পা চেপে ধরে কেঁদে ফেলে———-‘মাফ করে দেন স্যার! আল্লাহর ওয়াস্তে! মাফ করে দেন। আমি নিজে কোর্টে সাক্ষী দিব, ইয়ামিন স্যারের পক্ষে। আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো! আর এমন ভুল হবে না স্যার। আজকের মতো মাফ দেন।’
_____________
ধ্রুব ব্যাংক থেকে বের হয়ে এসেছে! আকাশের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে লম্বা করে শ্বাস টানল নিজের ভেতর! অনেকদিন পর একটু খোলা হাওয়া শ্বাসনালীতে পৌঁছাল যেন! রাহুল তার পিছনে এসে দাঁড়াল. এতদিন পর রাহুল একটু স্বস্থির শ্বাস ফেললো! বললো———‘আল্লাহ আপনার উপর রহম করুক স্যার। আজকে বাসায় গিয়ে লম্বা ঘুম দিব। কালকে তো আদালতের শুনানি।’

ধ্রুব আকাশের দিকে চেয়ে রইল; জবাবে সময় নিয়ে বলে উঠলো——‘কিচ্ছু শেষ হয়নি এখনো! অনেক কিছু এখনো বাকি, রাহুল। লেটস সি।’

রাহুল ভ্রু কুঁচকাল, তার মুখাবয়বে একটু সন্দেহ ফুটে উঠল। কিছুটা ভাবনা মনে রেখে বলল——-‘মানে? আর কী করবেন আপনি এখন?’

ধ্রুব মৃদু হাসল, হাসির মধ্যে কিছু একটা তো অবশ্যই ছিলো! ধ্রুব আকাশ থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকাল! শার্টের মধ্যে ঝুলিয়ে রাখা সানগ্লাস একহাতে চোখে লাগিয়ে, স্রেফ বলল——-‘বলে দিলে তো ক্লাইম্যাক্স ফিল করতে পারবে না। সো…’

রাহুল দুদিকে মাথা নাড়াল! ধ্রুব স্যার ঠিক বলেছে! ধ্রুব বাইকের দিকে এগুচ্ছে; রাহুল সেটা দেখে বললো——-‘আপনি বাড়ি যাবেন স্যার?’

ধ্রুব বাইকের দিকে এগোতে এগোতে, আঙ্গুলের ডগায় বাইকের চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে জবাব দিলো——-‘ইয়াহ! বাড়ি; মাই ওয়ান অ্যান্ড অনলি হোম!”

রাহুল হেঁটে চলা ধ্রুবর সুডৌল পিঠের দিকে চেয়ে হেসে কৌতুক গলায় বললো ——-‘অদিতি ভাবি?’

ধ্রুব মুচকি হেসে বাইকে উঠলো! হাত দিয়ে হেলমেট মাথায় গলিয়ে নিয়ে; হ্যান্ডেল ধরে ইঞ্জিন চালু করতে করতে বলল——-‘দিন দিন চালাক হয়ে যাচ্ছো, রাহুল।’

রাহুল মাথা চুলকে হেসে বলল——-‘কাদের সাথে থাকি, দেখতে হবে না?’

ধ্রুব হাসল, তার হাসিতে কিছুটা নস্টালজিক অনুভূতি ছিল। হেলমেট মাথায় লাগিয়ে, বাইকের ইঞ্জিন চালু করে, শো আওয়াজে বেরিয়ে গেল নিজের পার্সোনাল হোমের উদ্দেশ‍্যে!
__________
অদিতি ধ্রুবকে মেসেজ পাঠিয়েছিল কয়েকটা, কিন্তু এখনও তার একটারও রিপ্লাই আসেনি। অস্থির অদিতি তার পড়ার টেবিল থেকে উঠে বিছানায় অস্থিরভাবে এলোমেলো ভঙ্গিতে পুরো রুম-ময় পায়চারী করে যাচ্ছে! ধ্রুবকে অদিতির একবিন্দুও বিশ্বাস নেই। সেদিনের পর না ফোন; না কোনও টেক্সট! কিচ্ছু নেই। কি করছে; কোথায় যাচ্ছে; কি ভাবছে কিছুই জানতে দেয়নি অদিতিকে। ও কল দিলেও কলটা রিসিভ করার ফুরসত তার নেই। এদিকে টেনশনে ওর মাথা ফেটে যাবার উপক্রম! ধ্রুব ইয়ামিন…অদিতি নিজে আস্ত এক টেনশনের বস্তা নিজের ইচ্ছায় মাথায় তুলেছে! রাগ লাগছে ভীষণ!

অদিতির এসব ভাবনার মধ্যে হঠাৎ ওর ফোনে মেসেজ এলো না। রিপ্লাইয়ের বদলে ডাইরেক্ট কল এলো, ধ্রুবর কল! অদিতি দ্রুত কল রিসিভ করল, কানে ধরে, দ্রুত গলাতে অস্থিরতা নিয়ে বললো———‘ধ্রুব? কোথায় আপনি এখন ? ঠিক আছেন তো? কল দিলে কল ধরেন না; মেসেজ দিলে সিন করেননা। কি করছেন, কোথায় যাচ্ছেন কিছু জানান ন…

ধ্রুব হেলমেট খুলে বাইকের হ্যান্ডেল ঝুলিয়ে, তৃপ্তির হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে ফোন কানে ধরে বললো——‘রিল্যাক্স অদিতি! অ্যা’ম কমপ্লিটলি ফাইন।’

অদিতি স্বস্থির শ্বাস ফেলল। ধ্রুব এবার ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে বলে উঠল———‘আইসক্রিম নাকি কফি ডেট? হুইচ ওয়ান উড বি প্রেফারেবল ফর ম্যাই লেডি?’

আচমকা এত ঝামেলার মধ্যে ধ্রুবর এমন কথাতেই অদিতি ভ্রু কুঁচকে ফেলল, ডাকলো—-‘ধ্রুব?’

অপাশ থেকে ফিরতি জবাব এলো——‘হু?’

অদিতি কিছুটা সন্দেহ নিয়ে বললো———‘আপনি ঠিক আছেন তো?’

ওপাশ থেকে এবারেও ঠোঁট চেপে হেসে জবাব এলো—-‘অ্যাবসুলেটলি, কমপ্লিটলি, টোটালি।’

অদিতি এবার আরো সন্দেহ হলো! ধ্রুব তো এতটা ফুরফুরে মেজাজে কখনো কথা বলে না। অদিতি ভ্রু বাঁকিয়ে প্রশ্ন করলো———‘ধ্রুব, আপনার কথার টোন বদলে গেল কেন হঠাৎ?’

ধ্রুব জবাবে বড় একটা নিঃশ্বাস নিজের মধ্যে টেনে নিয়ে; অন্যরমম গলায় বললো———‘অ্যাই ডোন্ট নো! বাট অ্যাই অ্যাম ফিলিং লাইক…লাইক অ্যা স্কাই! সামথিং…সাম ফিলিংস ইজ জাস্ট কিলিং মি; অদিতি! নিচে এসে একটা শক্ত হাগ দিলে মেইবি আই উইল ফিল বেটার?’

#চলবে

#আমার_প্রেমিক_ধ্রুব — ৩২(স্পেশাল)
#অবন্তিকা_তৃপ্তি

ধ্রুব জবাবে বড় একটা নিঃশ্বাস নিজের মধ্যে টেনে নিল। হালকা শীতল বাতাস তার চুলের গোছা উড়িয়ে দিচ্ছিল। রাতের অন্ধকারে, ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলোয় তার ধারালো চোখে কিসের এক অদ্ভুত তৃপ্ততা; মুগ্ধিত; তেমনি কণ্ঠটাও একরকম ভারী শোনালো——‘আই ডোন্ট নো! বাট আই অ্যাম ফিলিং লাইক… লাইক অ্যা স্কাই! সামথিং… সাম ফিলিং ইজ জাস্ট কিলিং মি, অদিতি! নিচে এসে একটা টাইট হাগ দিলে মেবি আই উইল ফিল বেটার?”

অদিতি ফোনের ওপাশে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। বুকের ধুকপুক বেড়ে যাচ্ছে! অস্থির তন-মন-রুহ! অধরে হাসি ফুটলো অযথাই! ধ্রুবর এমন স্বরে কথা বলা সে খুব কমই শুনেছে। ওর কণ্ঠের এই অতিরিক্ত ভারী টোন তার হৃদয়ের কোথাও যেন একটা বড়সড় কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে! অদিতি কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিচু গলায় বলল——‘নিচে দারোয়ান আছে!’

ধ্রুব ভ্রু বাঁকালো, চোখ দুটো একটু সংকুচিত করে বললো —-‘সো হোয়াট?’

অদিতি একহাতে ওড়নার কোনা চেপে ধরে শ্বাস ফেলে; অপ্রস্তুত গলায় বলল——-‘যদি যেতে না দেয়?’

বলেই চোখ খিচে ফেলল! ধ্রুব এবার ভ্রু কুঁচকে ফেলল! পরপর ফোন কানে চেপে মাথাটা নামিয়ে নিঃশব্দে হেসে ফেলল! হাসি থামিয়ে; ভ্রু বাকিয়ে কথা বলে কৌতুক করে——-‘তাই? দারোয়ান আছে? দিনদিন চুড়ান্ত লেভেলের দুষ্টু হয়ে যাচ্ছো, তোফাজ্জল হায়াতের ভদ্র-সভ্য মেয়ে! তুমি কিন্তু এতোও ভোলা নও, অ্যাই নো!’

ধ্রুব সুযোগ পেলেই বাবাকে টেনে আনে! বোঝা যাচ্ছে; ভবিষ্যতে খুব ভালো জামাই সে হবে না। অদিতি ঠোঁট ফুলিয়ে, কপট রাগ দেখিয়ে বলল——-‘মোটেও না! মিথ্যে জানেন আপনি!’

ধ্রুব এবার ভীষণ অবাক হওয়ার ভান করলো; সামান্য চেঁচিয়ে বললো—-‘ও? আচ্ছা?’

তারপর সোজা হয়ে দাড়িয়ে; থেমে থেমে, অদিতিকে লজ্জায় ডুবিয়ে এক্টিং করে বলে গেলো——‘ধ্রুব, ধ্রুব, বিয়ের পর আপনার সব হুডি আমার হয়ে যাবে…!’

তারপর থেমে; ভ্রু কুচকে—-‘এসব কে বলেছিল সেদিন?’

অদিতি লজ্জায় মুখে ওড়না চেপে ধরেছে! ছিহ্! এসব কথা সেদিন না বললে কে পেটাত অদিতিকে? এখন লজ্জা পাচ্ছে! ধ্রুব ও কত বড় ফাজিল ছেলে; সেটা এখন হারে হারে বুঝছে অদিতি। ও লজ্জায় মুখ লুকিয়ে ফেললো। একহাতে মুখের অর্ধেকটা হাত দিয়ে ঢেকে মিনমিন করে বলল——-‘আ…আমি বলিনি এসব!’

ধ্রুব হাসলো! আর লজ্জা দিল না টেলিফোনের অপাশের প্রেমিকাকে। হালকা স্বরে বললো——-‘ওকে, মেনে নিলাম বলোনি! এখন নিচে আসো! আই অ্যাম ওয়েটিং!’

তারপর ধ্রুব আর এক মুহূর্ত দেরি করল না, ফোন কেটে দিল!এখন কল না কাটলে এই মেয়ে কথা ঘুরাতেই থাকবে।

অদিতি ফোনের স্ক্রিনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল; ঠোঁটের কোণে হাসি, পেটে বাটারফ্লাই উড়ছে যেন। যা সে থামানোর চেষ্টা করছিল, কিন্তু পারছিল না। লজ্জায় দুহাতে মুখ ঢেকে নিল ইশ! প্রেমে পড়া কতটা সুন্দর এক অনুভূতি! ইশ;ইশ, ইশ!

ওর মুখ ঢেকে হাসির শব্দ ঘুমন্ত তানিয়ার কানে যেতেই ও কম্বল মাথার উপর থেকে সরিয়ে বলল——-‘প্রেমের জোয়ারে ভাসা আমার রুমমেট। লাইট নিভিয়ে যা, আমি ঘুমাবো!”

অদিতি মুখ থেকে হাত সরিয়ে পেছনে তাকাল। তানিয়া চোখ বন্ধ করে আছে, কিন্তু ঠোঁটের কোণে সেই দুষ্টু হাসিটা ঠিকই লেগে আছে। অদিতি লজ্জা পাওয়া বন্ধ করে মুখ-চোখ স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো।

আলমারি খুলে একটা নীল রঙা শাল বের করল,মাথায় ওড়না দিয়ে; শাল দিয়ে পুরো গা ঢেকে নিল। একবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে নিল— গালে একটু লালচে আভা ফুটে উঠেছে; লাজুকতা পুরো মুখ-জুড়ে! একটা গভীর শ্বাস নিল, নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো। বেরিয়ে যাবে; তার আগে পেছন ফিরে সামনে ব্যাগে কাজল আর লিপস্টিক দেখে। কি মনে করে পিছিয়ে এসে কাজল চোঁহে লাগাল; গোলাপি রঙের লিপস্টিক হালকা করে ঠোটে দিয়ে দিল। আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিয়ে তারপর লাইট নিভিয়ে নিচে নেমে গেল।

দারোয়ান ওকে দেখেই সহাস্যে দরজা খুলে দিল! অদিতি অপ্রস্তুতভাবে তার দিকে তাকাল। পরপর তার পকেট থেকে এক হাজার টাকা উকি দিতেই যা বোঝার বুঝে গেল ও। প্রেম করার জন্যে মন্ত্রীর ছেলে ঘুষ দেওয়া-নেওয়া করছে আজকাল।

ধ্রুব তখন রাস্তার ধারে একটা ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল, নেভি ব্লু হুডি পরে, তার দুই হাতে ছিল দুটো আইসক্রিম কোন। অদিতি ধীর পায়ে এগিয়ে গেল। ধীর পায়ে একটু ইতস্তত করে প্রেমিকের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। পাশে অদিতির অস্তিত্ব উপলব্ধি করে ফিরে তাকালো ধ্রুব। অদিতি হাতের আইসক্রিমের দিকে ইশারা করে জিজ্ঞেস করলো——‘ঠান্ডায় আইসক্রিম খাচ্ছেন? জ্বর উঠবে আবার!’

ধ্রুব একদৃষ্টিতে চেয়ে ছিলো অদিতির দিকে; জবাব এল ভারি গলার——-‘উঠলে উঠবে। কেয়ার করবে তখন। দায়িত্ব পালন করা এখন ঠেলেই শেখো তোফাজ্জল….”

অদিতি সঙ্গে সঙ্গেই ধ্রুবকে থামিয়ে দিয়ে বলল——-‘আমার বাবার সঙ্গে আপনার কোন জন্মের শ ত্রুতা একটু বলবেন? সবকিছুতে বাবাকে টানতেই হয় আপনার?’

ধ্রুবর চোখ-মুখ বদলে গেল্ক; বড় আফসোস নিয়ে বলল——‘তোমার বাবাই তো আমার সব সমস্যার মূল! তিনি আমাদের মেনে নিলেই আরো এক মাস আগে তুমি আমার বউ হয়ে যেতে! তারপর এই এক মাস আমরা একই রুম শেয়ার করতাম! একই টাওয়াল, একই বারান্দা, এন্ড অভিয়াসলি একই হুডি, এন্ড ফাইনালি একই বেড….”

আবার সেই এক হুডির লজ্জা! অদিতির চোখ বড়বড় হয়ে গেল! ধ্রুবর কথার মাঝখানেই সে দ্রুত বাড়িয়ে বলা ধ্রুবকে থামিয়ে দিয়ে বললো ——‘হয়েছে, বুঝেছি! আর বলা লাগবে না।’

ধ্রুব চোখ টিপে হাসল। এক হাতে আইসক্রিম অদিতির হাতে ধরিয়ে দিল, বলল——‘খাও!’

অদিতি গাল ফুলিয়ে আইসক্রিম ধরল। আইসক্রিম খেতে খেতে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল, এতক্ষণ আইসক্রিম খাওয়া বাদ দিয়ে ধ্রুব কেমন অন্যরকম চোখে তাকিয়ে রয়েছে। অদিতি আইসক্রিম খেতে খেতে বললো——-‘কি দেখেন? আইসক্রিম গলে যাচ্ছে আপনারটা!’

ধ্রুব উত্তরে ঠাণ্ডা গলায় বলল——‘ইউ নো, অদিতি? শেয়ারিং ইজ কেয়ারিং!’

অদিতি ভ্রু কুঁচকালো——‘মানে?’

ধ্রুব এক মুহূর্তও দেরি করল না। দ্রুত নিজের আইসক্রিম অদিতির হাতে ধরিয়ে দিয়ে ওরটা নিজে নিয়ে নিলো! অদিতি হাতে ধ্রুবর আস্ত না খাওয়া আইসক্রিম নিয়ে হতবম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।

ধ্রুব এসবের ধার ধারে না; এক কামড়ে আইসক্রিম খেয়ে চোখ বন্ধ করে একদম তৃপ্তির শ্বাস ফেলল। তারপর চোখ খুলে ভ্রু বাকিয়ে বলল——-‘তোমার আইসক্রিমের ফ্লেভার জোস! একটা লিপস্টিক লিপস্টিক স্মেলও পাচ্ছি!”

অদিতি লজ্জায় মুখ অন্যপাশে সরিয়ে ফেলল! ধ্রুব বুঝতে পেরেছে, অদিতি সেজে এসেছে আজ! লজ্জায় আর তাকালো না ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব স্রেফ লজ্জা দেখল, কিন্তু মুখে কিছু বলল না। আইসক্রিম খেতে খেতে অদিতির দৃষ্টি একটা গাজরার দোকানে আটকে গেল! অদিতি চেয়ে রইলো সেখানে।

ধ্রুব চুপচাপ ওর মুখের অভিব্যক্তি লক্ষ করল। ওর চোখের দৃষ্টি লক্ষ করে পেছনে তাকালো। তারপরই যা বোঝার বুঝে গেল। ডাকলো ও——‘অদিতি?’

অদিতি চোখ সরিয়ে নিল! ধ্রুবর দিকে তাকালে; ধ্রুব ঠান্ডা গলায় স্রেফ বললো———-‘যা পছন্দ হয়; বলতে বলেছিলাম। বলিনি?’

অদিতি তাকিয়ে রইল; ——‘মানে?’
ধ্রুব এবার আইসক্রিমের খোসা রাস্তায় ফেলে অদিতির হাত চেপে ধরলো। টেনে নিয়ে যেতে লাগলো গাজরার দোকানের দিকে। অদিতি বুঝতে পেরে সঙ্গেসঙ্গে বললো ——‘আরে! আমার লাগবে না এসব! আমি তো এমনি এমনি….’

ধ্রুব শুনেনি। ও দোকানদারকে বললো——-‘সব রঙের কি বলে এসবকে…ওহ গাজরা; তিনটা করে দিন।’

অদিতি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল; ——-‘আল্লাহ! এতোগুলো কেন? এখানে তো অন্তত বিশটা হবেই!’

ধ্রুব নির্বিকারভাবে টাকা বের করে দোকানিকে দিলো। গাজরা একটা নিজেই হাতে নিয়ে অদিতির হাত টেনে পড়াতে পড়াতে বললো———‘আমি প্রেমিক হিসেবে মেইবি এক্সপেরিয়েন্সড না, অদিতি। জানি না গার্লফ্রেন্ডকে কীভাবে ট্রিট করতে হয়। এন্ড আমি চাই এই ব্যাপরেগুলোতে ইউ শুড হেল্প মি আউট!’

অদিতি নিঃশব্দে চেয়ে রইলো ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব এক হাতে গাজরা নিয়ে অদিতির হাতে পরানোর চেষ্টা করছিল, কিন্তু কিছুতেই কিছু মিলছিল না; এবার ও বিরক্ত হলো ভীষণ; ——-‘কি বা* এটা! কিভাবে পড়ায় এটা?’

ধ্রুব বিরক্ত হয়ে বলার সাথেসাথে অদিতি ফিক করে হেসে ফেলল!ধ্রুব শাসালো——‘ডোন্ট লাফ! ডিস্ট্র্যাক্ট হচ্ছি!’

অদিতি এবার হাসতে হাসতে বলল——-‘দিন, আমি শিখিয়ে দিচ্ছি!’ তারপর ও ধ্রুবকে শিখিয়ে দিল কিভাবে গাজরা পরাতে হয়। ধ্রুব ধীরে ধীরে শিখল, তারপর নিজে থেকে আরেকটা গাজরা নিয়ে অদিতির চুলে পরিয়ে দিল। তারপর ওকে ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে দেখে উজ্জল কণ্ঠে বলল——-‘পারফেক্ট!’

ধ্রুব-অদিতি রাস্তার এক কিনারা ধরে হাঁটছে! হাঁটার মধ্যেই হঠাৎ করে অদিতির পা মোচড় দিয়ে গেল। ব্যথায় ‘আহ্’ বলে রাস্তাতেই পা চেপে হাঁটু ভেঙে বসে গেলো! মুখ ব্যথাতে নীল হয়ে গেছে রীতিমত। ধ্রুব সাথে সাথে উদ্বিগ্ন হয়ে অদিতির পাশে বসে পরলো——‘আর ইউ অলরাইট? কী হয়েছে তোমার?’

অদিতি বড়বড় নিঃশ্বাস ফেলছে; ——-‘আমার পা…’

ধ্রুব আর অপেক্ষা করে না; অস্থির হয়ে বলল———‘দেখি আমি! পা মোচকে গেছে মেইবি!’

বলে পায়ের গোড়ালির কাচের পায়জামার দিকে হাত বাড়াতেই অদিতি চমকে সরে গিয়ে বললো——-‘ঠিক আছি আমি! পায়ে হাত দিবেন না।’

ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে ফেলল! অদিতি অস্বস্থিতে ভুগছে! সেটা দেখে ধ্রুব বলল———‘ওকে, ফাইন! হাঁটতে পারবে? ডক্টরের কাছে যেতে পারবে?’

ধ্রুব অদিতি বলল———‘ আমি ঠিকআছি! আপনি….’

‘যেতে পারবে কি না! হ্যা কি না?’ — ধ্রুব ঠান্ডা গলায় বলল!

অদিতি দমলো; হাল ছেড়ে মিনমিন করে বললো—-‘একটু হেল্প করলেই পারব!’

ধ্রুব অদিতিকে এবার পাজকোলে তুলে নেওয়ার জন্যে দুহাত বাড়াতেই; অদিতি চমকে দ্রুত বলে উঠলো——-‘এভাবে না ; এভাবে না!’

ধ্রুব সরে গিয়ে রেগে তাকাল; অদিতি ওই রাগী চোখ দেখে নিচু গলায় বললো—‘কেউ দেখবে ধ্রুব!’

ধ্রুব অন্যপাশে চেয়ে নিজের রাগের নিঃশ্বাস ছেড়ে সামলানো চেষ্টা করে, অদিতির দিকে তাকাল!

ধ্রুব ঠান্ডা গলায় বলল——‘ফাইন! হাত ধরতে তো প্রবলেম নেই? নাকি এটার জন্যে বিয়ে করা লাগবে! তাহলে চলো কাজী অফিসও সামনেই আছে।’
অদিতি চমকে দ্রুত মাথা নাড়াল; অর্থাৎ হাত ধরতে ওর সমস্যা নেই। ধ্রুব আস্তে করে অদিতির হাত ধরে উঠিয়ে নিল! এক মিনিটের হাঁটা রাস্তা পরেই হসপিটাল আছে একটা। ওটাতেই যাবে ওরা!
________________
‘ওয়েসিস হসপিটাল’

ধ্রুব অদিতিকে চেয়ারে বসিয়ে রিসেপশনের দিকে এগিয়ে গেলো। গম্ভীর; হুডিতে ধ্রুবকে আসতে দেখে রিসিপশনের মেয়েটার আচার-আচরণই যেন বদলে গেলো! চুল ঠিক করে দ্রুত নিজেকে ঠিকঠাক করলো! দূর থেকে এই মেয়ের এমন আচরণ দেখেই মুহূর্তেই ভ্রু কুঁচকে গেলো অদিতির। ও তীক্ষ্ম চোখে মেয়েটাকে দেখে যেতে লাগলো।

অথচ ধ্রুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে রিসিপশনের মেয়েটার সামনে দাঁড়িয়ে বলল——‘ডাক্তার অনিরুপ শেখ জয় আছেন আজকে?’

মেয়েটির চোখ হাসে; কণ্ঠে সবটাই মিষ্টি ঢেলে বললো——‘জি, আছেন!’

অদিতির চোখে মেয়েটাকে এই মুহূর্তে চুড়ান্ত বিশ্রী দেখাচ্ছে। ইচ্ছে করছে মাথার সবগুলো চুল টেনে ধরতে। ধ্রুবর সামনে এভাবে নেচে নেচে কথা বলার কি আছে? ধ্রুব কি ভুলেও ওর দিকে তাকাবে নাকি? অদিতি এবার ধ্রুবকে লক্ষ্য করলো!

ধ্রুব নিজের মতো করে গম্ভীর গলায় বলল——‘একটা টিকিট লাগবে।’

মেয়েটি হেসে হেসে বললো——-‘জি! আমি কল করে স্যারকে জানাচ্ছি।’

ধ্রুব টিকিট নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ধ্রুব অদিতির কাছে ফিরে এলো।পেছন থেকে ধ্রুবর ম্যানলি হাঁটা দেখে সেই রিসেপশনের মেয়েটির থুতনি ঝুলে গেলো; গালে হাত দিয়ে বলে ফেলল——‘উফ! হ্যান্ডসাম!’
অদিতির মুখ কুচকে গেল এমন কথায়! ও চোখ রাঙিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলো। পাশ থেকে অন্য আরেকটা মেয়ে অদিতিকে দেখে; ওই মেয়েকে বলল——-‘বেশি উড়িস না! গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এসেছে, তোর দিকে কেমনে তাকিয়ে আছে দেখ।’

অদিতি মেয়েটার দিকে চরমভাবে চোখ রাঙিয়ে তাকাল, তারপর ইচ্ছে করে হাতের গাজরা দেখিয়ে ঝাঁকালো; বোঝাল এই গাজরাটার মালিক হচ্ছে এই ছেলে! সঙ্গে এই হাতের মালিকও! চোখ রাঙাল।

ধ্রুব টিকিট নিয়ে অদিতির সামনে এসে দাড়ালো——‘ফুলগুলো পড়বে তো সব! এভাবে নাড়াচ্ছো কেন?’

অদিতি এক মূহুর্তের জন্য একটু থমকাল, তারপর অস্বস্তিতে গাজরা নাড়ানো থামিয়ে দিল। ধ্রুব হাত বাড়িয়ে দিলো; ——-‘উঠে আসো!’

অদিতি এক মুহূর্তে ওই মেয়েটার দিকে তাকাল; পরপর ইচ্ছে করে ধ্রুবর হাত শক্ত করে ধরে উঠে দাঁড়াল! ধ্রুব এভাবে; এত গভীর ভাবে হাত ধরাতে কিছুটা অবাক হয়েছে! অদিতির চোখ লক্ষ করে পেছনে তাকাতেই এক মুহূর্তের জন্য ধ্রুব অবাক হলো; পরপর মাথাটা নিচু করে নিঃশব্দে হেসে ফেলল; ——-‘ চলো; যাই?’
_____________
ধ্রুব ও অদিতি কেবিনে ঢুকতেই, অনিরুপ মাথা তুলল! অদিতি-ধ্রুব চেয়ারে বসলো! অনিরূপ পুরো ডিটেইলস শুনলো ধ্রুবর থেকে। তারপর অদিতির দিকে চেয়ে বললো——-‘ আপনার পা দেখা লাগবে।পাজামা নীচ থেকে তোলা লাগবে।’

অদিতি এটা শুনে অস্বস্তি নিয়ে ধ্রুবর দিকে তাকালো! ধ্রুব ওর অস্থিরতা বুঝে, দীর্ঘ নিঃশ্বাসে ছেড়ে, পরপর উঠে গিয়ে জানালার দিকে ফিরে দাঁড়াল।

অদিতির পা পরীক্ষা শেষে, অনিরুপ ধ্রুবকে ডাকল——-‘আপনি এসে বসতে পারেন!’

অদিতি মাথাটা নামিয়ে রেখেছে। ধ্রুব গিয়ে আগের জায়গায় বসলো! অনিরূপ বললো———‘ প্যাসেন্ট আপনার কে হয়?’

ধ্রুব এক মুহুর্ত দেরি না করে স্বাভাবিক গলায় বলল—-‘বউ!’

প্রেসক্রিপশন লিখতে লিখতে অনিরুপের ঠোঁটের কোণে একটু হাসি দি। সে জানে, ধ্রুব মিথ্যা বলছে। অদিতি তখন অবাক হয়ে ধ্রুবর দিকে চেয়ে রয়েছে।

অনিরূপ বললো——-‘আমার কাছে মনে হচ্ছে; আপনার স্ত্রীর পায়ের প্রপার ট্রিটমেন্ট দরকার। মিস অদিতি; পায়ে কি ছোটবেলায় ব্যথা পেয়েছিলেন?’

অদিতি মাথা নাড়ল——-‘ ছোটবেলায় গাড়ি এক্সিডেন্টে ওয় ভেঙ্গেছিলো একবার।’

ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে ফেলল! অনিরূপ বলল——‘ যা আন্দাজ করেছিলাম। ধ্রুব, উনার এক্স-রে করিয়ে রিপোর্ট আমাকে দেখাবেন।’
ধ্রুব মাথা নাড়িয়ে উঠে দাড়ালো। অদিতির হাত ধরে ওকেও উঠে দাড়াতে হেল্প করলো। দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় অদিতি ফিসফিস করে বলল——-‘আমি আপনার বউ?’

ধ্রুব উত্তর দিল না!
_______________
অনিরুপ চেয়ারে হেলান দিয়ে পেছন ঘুরে বসে, ভীষণ ক্লান্ত লাগছে ওর। ওহ; আশার আজ হসপিটাল আসার কথা ছিলো। অনিরুপ কল লাগাল আশাকে। রিং হচ্ছে; ওপাশ থেকে আশা কল রিসিভ হলো না। অনিরুপ আবার কল লাগায়! ওর কলের মধ্যেই কেউ ওর দরজায় টোকা দিল———‘মে আই কাম ইন?’

অনিরুদ্ধ আশাকে কল করতে করতে উত্তর দিল——-‘ইয়াহ, কাম ইন!’

আশা নিজের মোবাইলের দিকে চেয়ে মাথা নিচু করে হাসল। কিন্তু ভেতরে ঢুকল না, বরং আবার নক করল——‘মে অ্যাই কাম ইন?’

একে তো আশাকে কলে পাচ্ছে না; তারউপর এই মেয়ে বারবার কাম ইন; কাম ইন বলে চেচাচ্ছে! অনিরুপ এবার আরও বিরক্ত হয়ে চেয়ারসমেত পেছন ফিরে তাকানোর আগেই বলল——‘ইয়াহ, কাম ই…’

অনিরূপ থমকে গেলো যেন। তার ওয়ান এন্ড অনলি ওয়াইফ আশা দরজায় খিল তুলে; সেই খিল তোলা দরজায় কোমর বাকিয়ে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।তাকে লাগছে অস্থির, এক লাস‍্যময়ীর মতো, জেম অনিরূপকে দুহাতে নিজের দিকর আকৃষ্ট করে যাচ্ছে। দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সে। অনিরুপ বিস্ময়ে থমকে গেলো। আশা ওই থমকানো মুখ দেখে আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে ভ্রু বাকাল!

এবার যেন অনিরুপের হুট করে গরম লাগতে শুরু করলো! সে আর নিজেকে সামলাতে পারল না, হাত দিয়ে টাইয়ের নট ঢিলে করতে করতে দুষ্টু হেসে বললো———‘উফ! কী হট!’

আশা হাসল! সোজা হয়ে দাড়িয়ে মডেলদের মত করে এগিয়ে আসতে লাগলো অনিরূপের দিকে। টেবিলের সামনে এসে তার দুহাত দিয়ে ঠেসে রাখতেই, অনিরুপ ঢোক গিলে তাকাল। আশা তার চোখে চোখ রেখে ভ্রু নাচিয়ে বলল——-‘ডক্টর সাবের পিপাসা পাচ্ছে বুঝি?’

অনিরু এবার আর আটকে রাখতে পারল না নিজেকে, দ্রুত উঠে দাঁড়ালো! পরপর আশাকে টেনে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে অস্থির গলায় বললো——-‘নিড সাম ড্রিংক! এ্যা হট ড্রিংক!’

বলেই চোখ টিপলো। আশা হাসলো,অনিরূপের বুকে ওর নরম হাত ঠেসে বললো—-— ‘বাসায় ড্রিংক থাকতে, এখানে কেন পরে আছেন? চলুন আমার সাথে।’

অনিরুপ নিঃশব্দ হাসি ফেলল! পরপর ভ্রু উঁচিয়ে——-‘বাসায় ড্রিংক আছে?’

আশা জবাবে বললো———‘ইয়াহ, এক্সপেন্সিভ ওয়ান!’

অনিরুপ যেন আকাশ থেকে পরল; এমনভাবে বললো——-‘আমার আনরোম্যান্টিক বউয়ের আজকের এ কি দশা! সূর্য কোন দিকে উঠছে সেটাই ভাবছি!’

আশা অনিরূপের বুকে চিমটি কেটে চোখ রাঙিয়ে তাকালো! কথা ঘুরিয়ে বলল——‘তুলি’র সঙ্গে কথা হয়েছে, টেস্ট করাবো। আপনি যাবেন আমার সঙ্গে?’

অনিরূপ ঘড়ি দেখে বলল———‘এখন যদি যাই, তাহলে তোমার সঙ্গে একসঙ্গে বাড়ি ফিরতে পারব না! বাট অ্যাই নিড ড্রিংক অ্যাজ আর্লি অ্যাজ পসিবল!’

আশা এবার লাজুক হেসে বললো———তাহলে আমি করিয়ে আসি? একসঙ্গে নাহয় বাসায় ফেরা যাক!’

অনিরুপ হাসল, আশার কপালে চুমু খেয়ে সে ফিসফিস করে বললো——-‘টেস্ট পজিটিভ এলে, আমাকে সবার আগে জানাবেন ম্যাডাম। স্বামী হই কিন্তু আপনার।’
________________
গাইনকোলজিস্ট ড. প্রত্যাশা হোসেন তুলি নিয়ামত চেম্বার করে এই হাসপাতালে। আশা তার কেবিনের দরজায় নক করল——-‘তুলি আসব?’

তুলি রিপোর্ট দেখছিল, মাথা তুলে আশাকে দেখে ও একগাল হেসে বলল——-‘আসো, আসো! ডক্টর সাহেবের বউ।’

আশা হেসে গিয়ে চেয়ারে বসল! তুলি রিপোর্ট একপাশে ঠেলে রেখে পুরো মনোযোগ দিলো আশাকে, বলল———‘কিট দিয়ে পরীক্ষা করেও শিউর হচ্ছো না এখনও! কেন?’

আশা বললো——-‘কিট মাঝে মাঝে ফলস রেজাল্ট দেয়! আমি এবার তাকে আশাহত করতে চাইছি না।’

তুলি হাসলো, চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে বলল— ‘চলো আমার সাথে! টেস্ট করিয়ে নেই!’

টেস্ট করানো শেষ হয়েছে! আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে আশার প্রেগন্যান্সি টেস্ট পজিটিভ এসেছে! তুলি রিপোর্ট আবার দেখতে দেখতে হেসে বলল— ‘খুশি এবার? আমি কি তোমার বাচ্চার দাই–মা হব, আগেই হলে রাখলাম!’

আশার চোখ-মুখ হাসছে যেন। অদ্ভুত এক তৃপ্ততা মুহূর্তেই ছড়িয়ে গেছে মুখ শরীর-জুড়ে! ও উত্তর দিল——-‘সে তোমকে ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাসও করবে না আমার ডেলিভারির ব্যাপারে!’

তুলি মুচকি হাসল——‘অনিরূপ ভাই আসলেই তোমার প্রেম পাগল হয়ে গেছে! শুভ্র স্যার তো প্রায়ই বলে, উনার কথ। কী ছিলেন, আর কী হয়ে গেছে তোমার স্বামী।’’

আশা এ কথায় ভাব দেখিয়ে বলল——-‘এটা হচ্ছে আমার হাতের খেল! বাঁকা কে একদম সোজা করার পন্থা আমার জানা আছে!’

আশা-তুলি দুজনেই হেসে ফেলে! হঠাৎ তুলির ফোন বাজল; শুভ্রর কল দেখে তুলি কল রিসিভ করল! সালাম দিতেই ওপাশ থেকে বলা হলো——‘তোমার শেষ’

তুলি উত্তর দিল—‘ প্রায় শেষ। আশা এসেছিল।’

শুভ্র এটা শুনে হেসে; কৌতুক করে বললো——‘কি ব্যাপার? তাহাদের কি আশা পূর্ণ হচ্ছে?’

তুলি আশার দিকে চেয়ে উত্তর দিল— ‘ইয়াহ! আশা প্রেগন্যান্ট!’

আশা লাউডস্পিকারে দিল! শুভ্র খুশিতে উচ্ছাস নিয়ে হেসে বলল—‘বন্ধু, বাবা হচ্ছে, এটা কি জানে সে? কী ভাবি, জানাব?’

শুভ্র একথা বলতেই; আশা লাজুক হেসে বলল— ‘আমি নিজে তাকে জানাব! ততক্ষণ তড়পাতে থাকুক!’

শুভ্র মেনে নিলো, বলল— ‘বন্ধুর কষ্ট তো আর চোখে দেখা যাচ্ছে না!তবে আপনি যা বলবেন! তুলি, শুনো।’

তুলি আবার ফোন সাইলেন্ট করলো!ফোন কানে লাগাতেই, শুভ্র ফিসফিস করে বলল— ‘আজকে আম্মুকে বলে দিয়েছি; মেয়ে আম্মুর ঘরে ঘুমাবে। তুমি ওকে ভুলেও আনতে যাবে না আজ আমাদের ঘরে!”

শুভ্র যেন শাসালো! তুলি লজ্জায় শেষ! তবুও মিছে রাগ দেখিয়ে বলল——-‘মেয়ে আমাদের ছাড়া কখনও ঘুমায়নি! আপনি সবসময়….”

শুভ্র ওকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলল— ‘অভ্যাস করতে হবে তো! এভাবে কয়দিন আমি উপোস থাকবো? দয়া করো তুলি! ভেবে দেখো; আমার মেয়েরও তো ভাই-বোন দরকার!”

ভাই-বোন! তুলির নিজেরও তো ইচ্ছে ও আবার মা হবে। কিন্তু শুভ্রকে সেটা বুঝতে না দিয়ে তুলি লজ্জা পেয়ে বলল— ‘উহু! আমি আমার মেয়েকে নিয়েই পূর্ণ!’

শুভ্র তারাহুড়ো দেখিয়ে বলল— ‘আমিও পূর্ণ! তবে আমাদের একটা ছেলেও দরকার! যেন আমাদের ঝগড়া হলে; আমাদের দুজনের পক্ষই ভারী থাকে!’

তুলি হাসে! মানুষটা এত উন্মাদ কেন? কই যাবে তুলি একে নিয়ে? শুভ্র আবারও ফিসফিস করে বলল— ‘মনে থাকে যেন! আজকের রাত আমাদের দুজনের হবে শুধু!’

তুলি লাজুক হাসল! কেশে কথা ঘুরিয়ে বলল— ‘আমাকে নিতে আসবেন আপনি? আমার প্রায় প্যাশেন্ট শেষের দিকে!’

শুভ্র ঘড়ি দেখে নিয়ে অবাক হয়ে বললো——-“ও গড! আজকে এতো তাড়াতাড়ি শেষ! রাতটা দীর্ঘ পাবো মনে হচ্ছে! অ্যাই অ্যাম কামিং. ওয়েট ফর মি!’

তুলি হাসে! লজ্জা পেয়ে নিচু গলায় শুধু বলল— ‘আসুন!’

কল কাটল! তুলির রিপোর্ট দেখছে;তার চোখে-মুখে লাজুকতা! আশা ওকে বকা চোখে দেখতেই আছে। তুলি চেয়েও নিজের মুখের রক্তিম আভা সরাতে পারছে না এক-ফোটা! আশা এবার টিপ্পনি কেটে বললো——-‘বাহ! শুভ্র ভাই কল কাটার পর থেকে তার বৌর মুখ থেকে হাসি সরছে না এখন! কি বললেন আপনার জামাই?

তুলি কি বলবে? নিজেও কম যায় নাকি! টিপ্পনি কেটে বলল——-‘আজকের রাতে আপনাদের মুখ থেকেও হাসি সরবে না! সেসব কথা তুলবো এখন?’
আশা হাসে! লজ্জিত ভঙ্গিতে শাড়ির আঁচল ঠিক করে মুখ অন্যপাশে ঘুরিয়ে ফেলে। তুলি সেটা দেখে শব্দ করে হেসে উঠল।
___________
এক্সরের রিপোর্ট হাতে ধ্রুব রাস্তার কিনার ধরে হাঁটছে! পাশেই অদিতি ভিতু ভঙ্গিতে হাঁটতে হাঁটতে ধ্রুবকে দেখছে! হসপিটাল থেকে বের হবার পর থেকেই ধ্রুব ভীষণ নীরব হয়ে আছে! এখন অব্দি একটা কথাও বলেনি। অদিতির ধ্রুবর এসব নিরবতা একটুও স‍হ‍্য হচ্ছে না! একপর্যায়ে অতিষ্ট হয়ে অদিতি দুহাতে ধ্রুবর পেটানো বাম হাতটা টেনে ধরল! ধ্রুব পা থামলো; কিন্তু পেছনে ফিরে অদিতিকে দেখলোও না একবারের জন্যেও! অদিতি ভাঙা গলায় ডাকলো——‘ধ্রুব! এদিকে তাকান না!’

ধ্রুব তাকাল না; অদিতি এবার আরও শক্ত ভঙ্গিতে টেনে ধরল ধ্রুবর হুডির হাতা! এবার ফিরে তাকাল ধ্রুব! স্বাভাবিক ভঙ্গিতে অদিতিকে দেখতে থাকল! অদিতি ওই চোখ দেখে চোখ নামিয়ে মিনমিন করে বলল ——‘সরি; এটা লুকানোর জন্যে! আমি চাইছিলাম না আপনি অযথা এসব জানেন।তাছাড়া আমি তো এখন ফাইন আছি! এই দেখুন পা-ও নাড়াতে পারছি।’

বলে পা নাড়িয়ে দেখাতে গেলো অদিতি; পরপরই চোখ- মুখ কুচকে ব্যথায় ঠোট চেপে ধরলো! ধ্রুব ভ্রু বাকিয়ে তাকাল; স্বাভাবিক চোখ ওর! অদিতি আস্তে করে পা মাটিতে রাখল; অপ্রস্তুত গলায় বললো ——‘সরি!’

আবার এই সরি! ধ্রুব এবার বিরক্ত হয়ে বলল ——‘আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হতে পারি অদিতি! কিন্তু বিয়ে করা ছাড়া কি আমি তোমার ব্যাপারে কিছুই জানতে পারিনা? আমার সেই রাইট নেই? তোমার পা ভালো না; ডক্টর জয় নিজে আমাকে ডেকে বলেছে! তোমার প্রপার ট্রিটমেন্ট দরকার পায়ের! এত ইম্পর্টান্ট কথা তুমি লুকাও কিভাবে আমার থেকে? অ্যানবিলিভেবল!’

অদিতি চুপ হয়ে গেলো; বলার চেষ্টা করলো কিছু ——‘আমি…আমি বলতে চেয়েছি—-‘

হঠাৎ অদিতির কথার মাঝখানে ওদের পাশ থেকে একটা মেয়ে পাশ কেটে চলে গেলো! অদিতির পেছন ফিরে ওই মেয়ের দিকে তাকাল; পেছন পেছন আরেকটা ছেলো বড়বড় পা ফেলে এগুচ্ছে! ছেলেটার চোখে রাগ; জেদ! অদিতি হা হয়ে দেখতে থাকল ছেলে-মেয়ে দুটোকে!

সাইদ গিয়ে সরাদরি হৈমির হাত পেছন থেকে টেনে ধরল! হৈমি রেগে পেছন ফিরে তাকাল! ওর চোখে জল চলে এসেছে রীতিমত! সাইদ হৈমির চোখে পানি দেখে একপ্রকার হতবম্ব হয়ে গেলো। চেঁচিয়ে বললো ——‘গড, হুয়াই আর ইউ ক্রাইং? বাচ্চা কি হবে না নাকি কোনোদিন! ছোট একটা বিষয় নিয়ে এত ত্যাড়ামো ভালো লাগে না আমার হৈমি।’

হৈমি সাইদের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দুহাতে চোখ মুছলো ; মাথাটা নিচু করে নাক টেনেটেনে বললো——-‘আমি সব শুনেছি ডক্টর কি বলেছে! বাচ্চা না হলে আপনি ছেড়ে দিবেন আমাকে ; সব জানি আমি! মাইশা ভাবি বলেছে আমাকে!’

সাইদ হতবম্ব! কি ভাবছে হৈমি ওকে নিয়ে? ও কোথাও; ঠিক কোন জায়গায় ভালোবাসার খামতি রেখে দিয়েছে?

সাইদ অন্যদিকে চেয়ে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে আবার চক্ষু লাল করে হৈমির দিকে ফিরল! খিঁচিয়ে খিচিয়ে বলল ——‘ওকে ফাইন! তোর বাচ্চার গুষ্টি কিলাই আমি! আজকে রাতের আদর তুই সারাজীবন মনে রাখবি! যতক্ষণ পর্যন্ত তুই কনসিভ না করছিস; ততক্ষণ অব্দি আমি সাইদের হাত থেকে তোর নিস্তার নেই! লেটস গো!’

বলে আচমকা পাজকোলে তুলে নিল হৈমিকে! হৈমি দুহাতে ভয় পেয়ে সাইদের গলা জড়িয়ে ধরে! ভয়ার্ত চোখে; বড়বড় চোখে সাইদের দিকে চেয়ে দেখে! সাইদের চোখ-মুখে রাগের ফুলকি ঝরছে! হৈমি বুঝতে পারে- সে ভুল মানুষের সঙ্গে পাঙা নিয়েছে! কি হবে এখন! খোদাতালা রহম না করলে আজকে সাইদের হাত থেকে হৈমিকে কেউ বাঁচাতে পারবে না!

হৈমি ভয়ার্ত গলায় বলার চেষ্টা করলো কিছু——-‘আপনি…আমি এসব মিন করিন…’

‘জাস্ট শাট অ্যাপ! আমি তোকে ছেড়ে দিবে জাস্ট বিকজ অফ একটা বেবির জন্যে- এটা বলার আগে তোর ভাবা উচিত ছিলো! নাও অ্যাই হ্যাভ নো আদার অপশনস!’ —- সাইদ হৈমিকে কোলে নিয়ে বড়বড় পা ফেলে গাড়িতে বসিয়ে দিল!

পুরো ব্যাপারটা ধ্রুব-অদিতির নজরে থাকলো! অদিতি ওদের এসব কথা; কোলে তোলা দেখে ঠোট চেপে চুড়ান্ত লজ্জায় অন্যপাশে মুখ ঘুরিয়ে নিল! ধ্রুবর এসব দেখে ভীষণ হাসি পাচ্ছে কেন যেন। ও দুষ্টু হেসে আড়চোখে অদিতিকে দেখল! তারপর কি মনে করে অদিতির দিকে ঝুঁকে এসে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো———‘কি ব্যাপার তোফাজ্জল হায়াতের ভদ্র কন্যা! কাউকে দেখে আপনার মধ্যেও কিছু-মিছু হচ্ছে নাকি?’

ইস!অদিতি লজ্জায় যেন মাটির নিচে ঢুকে যাবে! ও মিছে রাগ দেখিয়ে চোখ রাঙালো ধ্রুবকে!

ধ্রুব ওই তাকানো দেখে ভয় পাওয়ার ভান করে বুকের বা পাশে হাত চেপে মাথাটা হালকা পিছিয়ে নিয়ে আতঙ্কিত গলায় বললো——‘অপস! ই‍্যয়ুর আইজ ইজ স্ক‍্যারিং মি! ডোন্ট গিভ মি দিস লুক!’
অদিতি হেসে ফেলল ধ্রুবর বাড়তি অভিনয়-টুকু দেখে!

#চলবে

#আমার_প্রেমিক_ধ্রুব — ৩৩
#অবন্তিকা_তৃপ্তি
(বিয়ে স্পেশাল-।)

আজ একুশে ফেব্রুয়ারি! আজ খাদ্যমন্ত্রী সৌরভ ইয়ামিনের মুক্তির দিন! আজ আদালত থেকে বিনাশর্তে মুক্তি পেয়েছেন উনি। আদালত থেকে; মাথা উঁচু করে, বুক চওড়া করে বেরিয়ে আসতেই পুরো জায়গা-জুড়ে কোলাহল লেগে জেল একপ্রকার! চারপাশে পুলিশের ঘেরাও; সাংবাদিকরা উৎ পেতে আছে রীতিমিত।! সৌরভ বেরিয়েই সাংবাদিক আর জনগণের ভিড়ে আটকা পরে গেলেন। পুলিশ এত মানুষের ধাক্কাধাক্কি সামলানোর চেষ্টা করার জন্যে লাঠি উঁচাতেই, সৌরভ চোখের ইশারায় তাদের থামালেন। পুলিশ সদস্যগণ একপাশে সরে গেল!

সৌরভ সাংবাদিকদের দিকে তাকালেন! একজন সাংবাদিক শুরুতেই বললো———‘স্যার, আপনার মানি লন্ডারিং-এর মিথ্যা মামলার পেছনে কারা থাকতে পারে? আপনি কাকে সন্দেহ করছেন?’

সৌরভ মুচকি হাসলেন, চোখের ভেতরে কিছু একটা তো ছিলোই; জবাব এলো —-‘সন্দেহ আছে! তবে এখন সেটা বিশ্বাসে বদলে গেছে। বাকিটা আপনারা খুব শিগগিরই দেখতে পাবেন!’

সাংবাদিকদের মাঝে এ-কথা শোনামাত্রই সাড়া পড়ে গেল! একজন এগিয়ে এসে বলল———‘স্যার, শোনা যাচ্ছে, আপনার ছেলের হাত আছে আপনাকে মুক্ত করতে! তাহলে কি ধরা যায়, তিনি রাজনীতিতে আসতে চলেছেন?’

ধ্রুব দূরে বাইকের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কালো সানগ্লাস চোখে,আরেক হাতে সিগারেট ফুকছে; তো আরেক হাতে কোকাকলার ক্যান! ঠোঁটে তার সেই চিরচেনা উদাসীনতার ছাপ! সৌরভের তাকানো তার গায়েই লাগলো না যেন।

সৌরভ ধ্রুবর দিকে এক ঝলক তাকিয়ে চোখ সরালেন, তারপর জবাবে বললেন——‘আমার ছেলে আমার সব! আমি আজও টিকে আছি, কারণ আমার ছেলে পাশে ছিল! আমাকে নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন, কিন্তু আমার ছেলেকে নিয়ে নয়! ওর এই জগতের প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। ওর জগৎ আলাদা!’

এক মুহূর্তের জন্য সবাই চুপ হয়ে গেল, সৌরভের কণ্ঠে যে দৃঢ়তা, তাতে আর কোনো সাংবাদিক প্রশ্ন করার সাহস পেল না। সৌরভ পুলিশের দিকে তাকালেন, সঙ্গে সঙ্গেই তার ইশারায় পুলিশ দিয়ে ঘিরে ফেলা হলো।সাদা পাঞ্জাবি পরে যেমন রাজার মতো কারাঘরে এসেছিলেন; তেমনই সম্মান নিয়ে আদালত থেকে বেরিয়ে মার্সিডিজের দরজা খুলে গাড়িতে বসলেন।

সৌরভ গাড়িতে বসতেই বাকি-টুকু সিগারেট রাস্তায় ফেলে দিল ধ্রুব! কোকের বোতল পাশে থাকা সৌরভের দলের এক ছেলের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাইক স্টার্ট দিলো! তারপর গাড়ির আগে চলল বাইক নিয়েক আর পেছন পেছন সৌরভের গাড়ি এগোল!
__________
বাড়ির দরজায় এসে সৌরভ নামলেন, সাদা পাঞ্জাবির বোতাম ঠিক করলেন! ‘ ইয়ামিন বাড়ি’ এর সামনে এক মুহূর্ত দাঁড়ালেন। ধ্রুব সানগ্লাস খুলে বুকের খোলা শার্টের মধ্যে ঝুলিয়ে এগিয়ে গেল! সৌরভের পাশে দাঁড়াল গম্ভীর মুখে! মুখে কোনো ভাবান্তর নেই, যেন সবকিছুই তার কাছে নিতান্ত স্বাভাবিক!

তারপর বাপ-ছেলে একসঙ্গে ঢুকলো সদর দরজা দিয়ে।ড্রয়িংরুমে ঢুকতেই সৌরভের শুরুতেই চোখ গেল তৃণার দিকে!তৃণা সোফায় বসে আছে, চোখেমুখে ক্লান্তি, অভিমান! সৌরভ ধীরপায়ে এগিয়ে গেলেন। তৃণা উঠে সৌরভের দিকে চেয়ে উঠে দাঁড়াল আস্তে করে, ওর চোখে জল!

সৌরভ তৃণার পাশে দাঁড়াতেই তৃণা উনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো—-—‘শান্তি আপনি এখন? রাজনীতি আপনাকে অনেক কিছু দিয়েছে না? আর কিছু পাওয়ার আশা আছে এখনো? বলুন আমাকে? নেক্সট কোন কারাঘরে যেতে মন চাইছে?’

তৃণা কথা বলতে বলতে একসময় ফুপিয়ে উঠল! সৌরভের পাঞ্জাবির বুকের অংশ মুষ্টিতে চেপে মাথাটা হেলিয়ে দিয়েছে কঠোর-কঠিন বুকের উপর! সৌরভ আড়চোখে ছেলের দিকে তাকালেন। ধ্রুব তখন ডাইনিং টেবিলের সামনে জগ থেকে পানি গ্লাসে ঢালছে। ওর এসবে মন নেই একবিন্দুও; ইচ্ছেও নেই নিজের বাবার অন্য নারীর সঙ্গে মান-অভিমানের গল্প শুনতে! ফেডআপ ধ্রুব এসবে!

সৌরভের ইচ্ছে করছিল তৃণাকে বুকের ভেতর শক্ত করে চেপে ধরতে! কিন্তু সে অধিকার কি আর তাঁর আছে? তিনি তৃণার মাথায় হাত রেখে আবারও ধ্রুবর দিকে তাকালেন। ধ্রুব তখন শিষ বাজাতে বাজাতে নির্বিকার মুখে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে।

ধ্রুব যেতেই, সেই মুহূর্তে আর কোনো বাধাই সৌরভের সামনে রইল না! তিনি দুহাতে তৃণাকে টেনে বুকে আগলে নিলেন। আশকারা পেয়ে এবার সৌরভের শক্ত কাঁধে মাথা রেখে তৃণা হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল।

সৌরভ আস্তে করে স্ত্রীর পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন——‘থামো, মানুষ আছে বাসায়! কী ভাববে ওরা?’

তৃণা বুকের পাঞ্জাবি মুঠো করে ধরে অশ্রু ভেজা চোখ তুলে সৌরভের দিকে তাকাল; নাক টেনে সমস্ত রাগ ঝেড়ে বললো—‘আমি চাইনি আমার জীবন এভাবে কাটুক! আমি চাইনি আপনি আমার সংসারে থেকেও না থাকুন! আপনি আপনার ছেলেকে ভালোবাসেন; আমি মানি সেটা। বিশ্বাস করুন; আমি ওমন সিনেমার মতো সৎ মা কোনোদিন হতেও চাইনি। কিন্তু আমি কি মানুষ নই? আমার কি ইচ্ছে হয়না একটা স্বাভাবিক দাম্পত‍্য-জীবনের? মাঝে মাঝে আফসোস হয়, কেন আমি আপনার আগের বউ হলাম না! কেন আপনি শুরুতেই আমাকে বিয়ে করলেন না? কেন, কেন সৌরভ?’

সৌরভ চুপচাপ শুনলেন সব-টুকু অভিযোগ! একটুও বিরক্তি নেই, নেই কোনো নিজের ব্যক্তিগত অভিযোগ-চাওয়া! শুধু তৃণার মাথায় হাত রেখে বললেন——‘তোমাকে আমি এ বাড়িতে আনব! ক’টা দিন অপেক্ষা করো। ধ্রুব হয়তো একদিন আমাকে বুঝবে। সে দিন আসছে সামনে!’
_______
গোসল শেষ করল ধ্রুব! আজ প্রায় দুদিন পর; গায়ে একটু পানি ঢাললো। সারাদিন ডিওডোরেন্ট দিয়েই চলা ধ্রুবকে আজ বাধ্য হয়ে গোসল করতেই হলো! কারণ, একরোখা এক মেয়ে আছে এখন ওর জীবনে! যে ধ্রুবকে একদিন গোসল না করলে; একদিন খাওয়ায় অনিয়ম করলে চোখ রাঙায়! ধ্রুব টিশার্টটা হাতে নিয়ে উদোম গায়ে আয়নার সামনে অনেকক্ষণ দাড়িয়ে রইল! একেবেকে নিজেকে দেখতে লাগলো আয়নায়!হঠাৎ খালি বুকের পাশটায় আঙ্গুল চেপে ধরে আয়নায় ভ্রু বাকিয়ে চেয়ে হালকা হাসল; বলল ——-‘ইচ্ছে করছে নিজের এই অবস্থাতে তোমাকে জাস্ট চেপে ধরতে! কবে বউ হবে আমার; গড নউজ! অ্যাম বিং সো মাচ ডেসপারেট; মিসেস ধ্রুব!’

বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলল ধ্রুব! বিয়ে; এই জীবনে বোধহয় ওর কপালে বিয়ে-টিয়ে আর লেখা নেই। ধ্রুব টিশার্টটা পরে নিল! তারপর এক লাফে বিছানার বালিশে উদোম হয়ে শুয়ে পড়লো! বালিশে মুখ চেপে একহাতে বিছানায় শুয়ে ফোন ডায়াল করল—— অদিতি নাম্বার! রিসিভ হচ্ছে না! একবার… দু’বার…তাও না।

ধ্রুব এবার টেক্সট পাঠাল——‘Hi! Receive the call!’

আবারও অপেক্ষা, কোনো রিপ্লাই নেই! ধ্রুব এবার সত্যিই বিরক্ত হলো! বালিশে মুখ চেপে ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলল। দুইদিন ধরে একটুও কথা হয়নি অদিতির সঙ্গে! অথচ আজ যখন সে নিজে থেকে ফোন করল, তখন এই মেয়েটি কলই ধরল না? এই চুপচাপ অবস্থা, এই নিরবতা বিয়ের আগেই; না জানি এই মেয়েকে বিয়ে করলে ধ্রুবকে কতটা পুড়তে হয়! ওহ গড! ধ্রুবর ভাবতেই ভয় লাগছে।

অশান্তি হচ্ছে ভীষণ! অদিতির সঙ্গে কথা বলাটা দরকার। ধ্রুব বালিশ থেকে মাথা তুলে উঠে বসল। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকার পর, ধ্রুব আবার ফোনটা হাতে তুলে নিল। শেষবারের মতো তর্জনী দিয়ে স্ক্রিন সোয়াইপ করল, তখনই—ফোনের স্ক্রিনে এক চমকালো —-‘Dhruv’s Enamorada’ is calling……….

ধ্রুব যেন চমকে গেল। এখন এই মেয়েটাকে সে একটা ধমক দিবে! ধ্রুব কোনরকম নিজের ক্ষোভ চেপে রেখে কল রিসিভ করলো————‘হ্যাই! কল করার সময় ফাইনালি তোমার হলো? প্রাইম মিনিস্টার হওয়া উচিত তোমার, এত বিজ….’

বরাবরের মতো এবার সালাম এলো না! বরং পরিচিত নয়, বরং আরও ছোট একটি কণ্ঠস্বর ভেসে এলো ওপাশ থেকে—‘দুলাভাই, আমি আমি ইফাজ।’

ধ্রুব এই নাম শোনা-মাত্রই এক মুহূর্তেই সোজা হয় বসল, ভ্রু কুঁচকে গেল তার——‘ইফাজ?’

ইফাজ ভয়ে-ভয়ে হঠাৎ কোনো আনুষঙ্গিক আলাপে না গিয়েই বলে উঠলো——-‘দুলাভাই, আপুর আকদ হয়ে যাবে আগামীকাল! আপু কাদে!’

ধ্রুবর শরীর মুহূর্তের মধ্যে যেন অবশ হয়ে গেল! মনে হলো, মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবী হঠাৎ করে যেন থেমে গেল! মাথার ভেতর একের পর এক বিশাল বিস্ফোরণের মতো শব্দ হচ্ছিল! তার শরীর যেন এই খবরটা এক মুহূর্তে গ্রহণ করতে পারছিল না! সে দ্রুত উঠে দাঁড়াল, ঠোঁট চেপে ধরে অস্থির গলায় বলল——‘আকদ? কিসের আকদ?’

ইফাজ জবাব দিল আরও নিচু গলায়——-‘আপুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে! কালকে আকদ হবে!’

ধ্রুবর মেরুদণ্ড বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেল! তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিল যেন! সমস্ত পৃথিবী এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেল, আর সে শুধু শুনছিল, দুনিয়ার সবচেয়ে বিরক্তিকর শব্দ—আকদ!

কিন্তু…কিন্তু অদিতি বাড়ি গেছে কখন? ওর সঙ্গে তো পরশু কথা হয়েছে! তখন তো কিছুই বলল না। পরশু….ওহ গড! ধ্রুব মাথার চুল মুষ্টি করে চেপে ধরল! পরশু কথা হয়েছে! গতকালকে তো অদিতির কল এসেছিলি! মামলার কাজে এত ব্যস্ত ছিলো; ধ্রুব কল রিসিভ করতে পারেনি। শিট…শিট….শিট!

ধ্রুব ব্যস্ত গলায় বলল ———‘তোমার আপু কোথায়? ও ঠিক আছে? বিয়েতে ও রাজি?’

‘না, দুলাভাই! আপু রাজি না; কাঁদছে শুধু! আব্বু ওকে জোর করেই বিয়ে দিচ্ছে!’ ——- ইফাজ জবাব দিল!

ধ্রুবর নিশ্বাস ভারী হয়ে গেল। যেন তার শিরায় আগুন ঢেলে দেওয়া হয়েছে! তার মনে একটাই প্রশ্ন—অদিতি কি ওর কথা তোফাজ্জল হায়াতকে একবারের জন্যেও বলেনি?পরমুহূর্তে ধ্রুবর মনে পরে; বলার কথা আসছে কোথা থেকে? ধ্রুব ওকে প্রপোজ করার সময়ই বলেছে—- যা করার ও করবে। অদিতি শুধু ভালোবাসবে; ব্যাস!’

ধ্রুব নিজেকে সামলে বললো——-‘তোমার আপুর কাছে ফোনটা দাও!’

ইফাজ ভয় পেয়ে গেল;———‘পারব না দুলাভাই! আব্বু নিষেধ করেছে!’

ধ্রুব দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভাবলো! তারপর বলল———‘ইফাজ, শোনো বাচ্চা! আমি আসছি! এক্ষুনি আসছি! তুমি তোমার আপুকে একা রেখো না! যা কিছু হোক, ওকে একদম একা রেখো না! আমি সব ঠিক করে দেব! ওকে বেবি?’

ইফাজ মাথা নাড়ল! ধ্রুব ফোন রেখে দিল, তারপর এক মুহূর্তও সময় নষ্ট না করে দরজা খুলে নিচে নেমে এল!

নিচে এসে, সৌরভ ইয়ামিনের সামনে দাঁড়িয়ে একপ্রকার হাঁপাতে সৌরভ টিভির সাউন্ড বাড়িয়ে অবাক হয়ে হাপাতে থাকা ছেলের দিকে তাকালেন; ———‘ কি ব্যাপার? কি হয়েছে তোমার?’

টিভির খবরের সাউন্ড ডাইরেক্ট কানে এসে লাগছিল! ধ্রুব রেগে সোফার উপর থেকে রিমোট নিয়ে ঠাস করে টিভি বন্ধ করে দিল! রেগে বললো —-‘তুমি এখানে দেশের নিউজ দেখছো! আর ওদিকে আমার দিন-দুনিয়া ভেসে যাচ্ছে, খবর আছে তোমার? এক্ষুনি, আমি জাস্ট এক্ষুনি অদিতির বাড়ি যাব! তুমি আমার সঙ্গে যাবে, আর বিয়ের কথা ফাইনাল করবে! ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?’

সৌরভ ইয়ামিন ধীর-স্থিরভাবে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলেন। অবাক হয়ে বললেন ——‘আমি গেলে সব সমাধান হয়ে যাবে?’

ধ্রুব উত্তেজিত হয়ে বলল——‘তুমি যা ইচ্ছে করো! কিভাবে মানাবে, ইটস অল আপ টু ইউ! আমি তোমাকে জেল থেকে বের হতে হেল্প করেছি; এখন আমার হেল্প করো! আই নিড অদিতি অ্যাজ ম্যাই ওয়াইফ!’

সৌরভ চুড়ান্ত হতাশ! পাশেই তৃণা ধ্রুবর বেফাঁস কথায় লজ্জায় রান্নাঘরের দিকে এগিয়েছে। ধ্রুবর সেসব ভ্রুক্ষেপ নেই! সৌরভ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন——-‘কবে যেতে চাও? কাল যাই? আজ মাত্র এলাম।’

ধ্রুব সোফার উপর হাত দুটো দিয়ে থাবা দিয়ে চোখ রক্তিম করে বলল—‘নো, আমি এখনই যাব।যে কাপড়ে আছো, ওই কাপড়েই চলো! আমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি! একসঙ্গে যাব!’

সৌরভ ধীরেসুস্থে বললেন——‘আরে! মেয়ের জন্যে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছি; খালি হাত যাব? কিছু কিনে আনতে দাও! আর আংটি লাগবে না?’

ধ্রুব বলল——‘আংটি আছে আমার কাছে, মায়ের! ওটা দিয়েই দেব! উঠবে তুমি?’

সৌরভ এবার এক সেকেন্ড সময় নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে নিলেন। তৃণার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বললেন——-‘তোমার অদিতি চাই? আমারও তোমার ছোট মা চাই! আমি তোফাজ্জলকে জোর করে মানাতে পারি; কিন্তু আমারও শর্ত থাকবে তখন!’

ধ্রুব বাঁকা চোখে তাকাল, পরপর কিছু একটা বুঝতে পেরে দ্রুত বলে ফেলল———‘অসম্ভব! আমার মায়ের ঘরে—‘

সৌরভ হালকা হাসি দিয়ে আবার সোফায় বসে গেলেন, যেন কোনো কিছুই ঘটছে না! তার মুখের অভিব্যক্তি গম্ভীর হয়ে গেল; বললেন—-‘তাহলে ভুলে যাও অদিতির কথা! তোফাজ্জলকে মানানো এমনিতেই সম্ভব নয়!’

ধ্রুব ভ্রু কুচকে তৃণার দিকে তাকাল! তৃণাও বড়বড় চোখে সৌরভের দিকে তাকিয়ে আছে; নিজেও বিশ্বাস করতে পারছে না সৌরভ এ কথা নিজে ধ্রুবকে বলেছেন।

ধ্রুব চোখ উল্টে ফেললো; হতাশ শ্বাস ছেড়ে বললো——-‘ওকে, ফাইন! তুমি এনে রাখো তোমার বউকে! কিন্তু সে আমার মায়ের ঘরে শোবে না! এটার ব্যাপারে নো কম্প্রোমাইজ!’

সৌরভ হাসতে হাসতে তৃণার দিকে তাকিয়ে বললেন——-‘যাও…শাড়ি পরে নাও! ছেলের জন্যে মেয়ে দেখে আসি!’
_______________
অদিতি বদ্ধ রুমের বেডের কাঠ ঘেষে হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসেছিলো। বারবার নরম-দুর্বল শরীরটা কেপে-কেপে উঠছে! একসময় হাঁটু থেকে মাথা তুলে তাকাল। এই অদিতিকে চেনাই যাচ্ছে না! চোখ-মুখ ফুলে কি এক ছন্নছাড়া অবস্থা! ধ্রুব ইয়ামিনের নরম-কোমল প্রেমিকা তো এমন নাই কোনোদিন। বরং ছন্নছাড়া শব্দটা তো ধ্রুবর জন্যে স্বয়ং…

অদিতি দুহাতে ব্যস্ত-ভঙ্গিতে চোখ মুছে উঠে দাঁড়াল! ইফাজকে বলেছিল কোথাও ওর ফোন আনার জন্য। কিন্তু ও কোথায় গেছে, কে জানে? ধ্রুবকে জানানো দরকার। এই বিয়ে তো সে করতে পারবে না!
কিন্তু ধ্রুবকে বিয়ে করা কি আদৌ সম্ভব? অদিতি…ও তো একসময় ধ্রুবকে বলেছিল, বুঝিয়ে দিয়েছিল যে তাদের মধ্যে কিছুই সম্ভব নয়। তবুও কেন ধ্রুব বুঝল না? কেন অদিতি নিজের প্রেমে এত গভীরভাবে ফাসিয়ে দিল। এখন এই যন্ত্রণা কাকে বোঝাবে? কাকে বলবে?

তোফাজ্জলের সামনে ধ্রুবর নাম নেওয়ার সাহস কোনোদিনই ছিল না অদিতির। তোফাজ্জল যদি জানতেন, জবাই করে ফেলতেন অদিতিকে। তবুও যা জেনেছেন; তাতেও এখন অব্দি কম লাঞ্ছনা সহ‍্য করতে হয়নি। টেনে-হিচড়ে শহর থেকে গ্রামে এনেছেন। বন্দী করে জোর করে বিয়ে করিয়ে মাথা থেকে বোঝা হালকা করতে চাইছেন। অদিতিকে বিয়ে দিয়ে জমজম পানিতে গোসল করে হারাম প্রেমের পাপ থেকে তোফাজ্জল নিজেকে মুক্ত করবেন।

হারাম প্রেম…হারামই তো। অদিতিকে বারবার বলা হয়েছে; শহরে কিছু করিস না; ছেলে-পেলেদের থেকে দূরে থাকিস। অথচ কি করল অদিতি? জড়িয়ে গেল প্রেমে? মুখ কালো করে দিল সবার? এই অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত কি করে করবে ও? কি করলে গা থেকে ধ্রুব ইয়ামিনের প্রেমের এফেক্ট মুছা যাবে?

ভাবতে ভাবতে অদিতি দুহাতে মুখ ঢেকে আবারও কেঁদে ফেলল। কান্নার মাঝে হঠাৎ দরজায় টোকা পড়ল। অদিতি দ্রুত চোখ-মুখ মুছে দরজা খুলল। ওপাশে দাঁড়িয়ে ছিল ইফাজ, মাথাটা নিচু করে, অপরাধীর মতো। তার হাত খালি, কিছুই আনেনি। অদিতি ভাঙা গলায় বলল,——‘ফোন পাসনি?’’

ইফাজ হতাশ মুখে ফিসফিস করে বলল,——‘আমি দুলাভাইকে বলে দিয়েছি, তোমার বিষয়ে। সে সম্ভবত আসছে।’’

অদিতি লম্বা করে শ্বাস নিল। ধ্রুব আসছে! অদিতি জানে; ধ্রুব পাঁচ ঘণ্টার রাস্তা তিন ঘণ্টাতেই পেরিয়ে আসবেই! ধ্রুব এলে, এবার নিশ্চয়ই কিছু ভালো কিছু হবে। ইফাজ কথাটা বলে মাথাটা নিচু করে চুপচাপ ঢুকে গেল অদিতির রুমে। অদিতি দরজা বন্ধ করে ফিরে তাকাল। কান্না এখনও গলায়, বলল——‘তুই এখানেই থাকবি?’’

ইফাজের মুখে অন্ধকার। ও নিচু গলায় বলল———‘দুলাভাই আমাকে বলেছে, তোমার কাছে থাকতে। তো, থেকে যাই? শব্দ করব না, প্রমিজ!’’

অদিতির চোখে অসহায়ত্ব ফুটে উঠল। এত ভালোবাসা, অথচ কেন ধ্রুবকে কি দিয়েছে ও? বাবার সামনে ওর নাম মুখে বলার সাহস হয়নি? এটাকে প্রেম বলে না! এটাকে কিছুই বলে না। কিচ্ছু না….

তখন আবার দরজায় আবার টোকা পড়ল। অদিতি দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজা খুলে দিল। ওপাশে ফাহিমা। তিনি অদিতির ভেজা চোখ দেখে, সঙ্গেসঙ্গে ভ্রু কুঁচকে ফেললেন। হাতে এনগেজমেন্টের শাড়ি ও জুয়েলারি। ওসব নিয়ে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললেন———‘আমার মন বলে, তুই প্রেম করেছিস অদিতি! এখনো সময় আছে বল। ছেলেটা কে? নাম কি?’

অদিতি মাথা নিচু করে ফেলল। ফাহিমা খ্যাকরে উঠে বললেন——-—‘তোর চোখ-মুখ বলছে তুই প্রেম করেছিস! এখন কেঁদে আমাদেরও কি পাপের ভাগীদার করছিস? হ্যারে,তোর বাপের সম্মান একবারের জন্যেও ভাবলিনা? তোর বাপ কি? কি করে? তুই জানস না? হারামি মেয়ে আমার গর্ভ থেকেই জন্ম নিতে হলো?’

ফাহিমা একটু থেমে, জল চোখে নিয়ে বললেন———‘ক্যান করলি এটা তুই? তোরে আমার শহরে পড়তে পাঠানো ভুল ছিল? তোর বাপের সামনে আর কত ছোট করবি আমাকে? তোর বাপ নাহয় তোদের কড়া শাসন করে? এই এই, আমি তোদের কোনোদিন কোনও কিছুতে মানা করছি? যা চাইছিস; বাপরে লুকিয়েও দিয়েছি। দেইনাই? বল আমারে, দেইনাই আমি? তাও কোন পাপের শাস্তি তুই আমারে দিলি?’

ফাহিমা আই যাই বলুক, অদিতি সেগুলো সহ্য করল। সে শুধু চুপ ছিল, নিজের শাড়ি ও জুয়েলারি সরিয়ে বিছানায় বসল; মাথাটা সেভাবেই নামিয়ে নিচু গলায় শুধু বললো ———-‘স…সব পা..পাপ আমার মা। আমি দ..দোষী! তোমরা ক..কেউ নও!’

ফাহিমা এ কথা শুনে আবারও বললেন উঠলেন————-‘তুই তোর বাপের সম্মানের কথা একবারও ভাবলিনা! হারাম কাজ তো হারামই! লোক জানজানি করার আগে তোরে বিদায় করলেই তোর বাপ বাঁচে। ছিহ! তুই শেষ পর্যন্ত এমন একটা কাজ করেছিস, আমি ভাবতেও পারছি না। ছেলের হাতের গাজরা পড়ল? ছেলে তোর হাত ধরে? চিন্তা করতেই আমার লজ্জা হচ্ছে! ওই ছেলের মুখ দেখলে তোর বাপ খু*ন করত, খু*ন. মুখ না দেখায় ছেলে বেচে গেছে।’

অদিতি কান্নাভেজা মুখে, গিলে নিলো সব কথা-টুকু। ফাহিমা শান্ত গলায় আবার বললেন——-‘ছেলেটা কে অদিতি? আবার বলতেসি, নাম বল আমারে!’

অদিতি তাকাল, ভাঙা গলায় বলল———‘আমার কেউ নেই। কেউ নেই! তোমরা এখন আমাকে যতই বলো, আমার উত্তর একই থাকবে। বিয়ে তো করছি তোমার পছন্দের ছেলেকে! তবুও ছেলের নাম বারবার জানতে চেও না। ভালো লাগে না আমার।’

ফাহিমা এই কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। চেঁচিয়ে বললেন———‘ম*রে যেতে পারিস না তুই কলঙ্কিনী!’

এ বলে ফাহিমা ঘর ছেড়ে চলে গেলেন। অদিতি চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়াল; বিড়বিড় করে বললো ———‘বিয়েটা হয়ে যাক; ম…মরে যাব। তোমাদের পাপ শেষ হবে আমার লা..লা শ দেখে!’

ফাহিমা ঘর থেকে বেরুতেই দেখেন , তোফাজ্জল বারান্দায় দাঁড়িয়ে সবকিছু শুনেছেন এতক্ষণ। ফাহিমা ঢোক গিললেন! সামনে আসতেই, তোফাজ্জল তার দিকে তাকালেন। স্ত্রীর দিকে চেয়ে শান্ত হয়ে বললেন———‘তোমরা মা-মেয়ে মিলে এসব লোক জানজানি করতে চাচ্ছো? তোমাদের এসবের কারণে, এই বিয়ে না হলে তোমার ও হারামি মেয়েরে আমি খু*ন করতে বাধ্য হব।’

এ বলে তিনি রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেলেন। ফাহিমা মুখে কোনো কথা না বলে শুধু এক-দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।
________________
তোফাজ্জল উঠোন পেরিয়ে বাড়ির বাইরে বেরুতেই দেখলেন, উঠোনের সামনে দুটো মার্সিডিজ দাঁড়িয়ে! তিনি থামলেন; ভ্রু কুঁচকে তাকালেন গাড়ির দিকে!

একটু পর গাড়ি থেকে সৌরভ নামতেই তোফাজ্জলের মুখে মুহূর্তেই হাসি নেমে এলো! তিনি দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলেন! সৌরভের পাশে নামল শাড়ি পড়া, তৃণা আহমেদ।

‘আরে সৌরভ যে…’——তোফাজ্জল দ্রুত এগিয়ে গিয়ে সৌরভকে জড়িয়ে ধরলেন! সৌরভও হেসে ম্যানলি ভঙ্গিতে হেসে জড়িয়ে ধরলেন তাকে।

তোফাজ্জল সৌরভকে দেখে যতই খুশি হয়েছেন; সেটুকুর মধ্যে মুহূর্তেই ভাটা পরে গেল। পরের মুহূর্তে গাড়ির সামনের সিট থেকে নেমে এলো স্বয়ং ধ্রুব ইয়ামিন! আজ আর ময়লা শার্ট নেই! সুন্দর ইস্ত্রি করা শার্ট, চোখে সানগ্লাস! হাতে ওয়াচ, পায়ে ব্র্যান্ডেড শু! পুরো দস্তুর তরুণ হয়ে এসেছে মেয়ে দেখতে! তার পাশে একে একে ধ্রুবর থ্রি ইডিয়টের দল; সুমন; রাজন; ইমন এসে দাঁড়াল!

ধ্রুব তোফাজ্জলের দিকে তাকিয়ে; সানগ্লাস চোখ থেকে নামিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলল———‘হ্যাই আংকেল! ভালো আছেন?’

তোফাজ্জল ধ্রুবকে দেখেই মুহূর্তে রেগে গেলেন! সৌরভের দিকে তাকিয়ে বললেন———‘তুই তোর ছেলেকে নিয়ে এসেছিস? ও আমার সাথে গাদ্দারি করেছে, এটা বলার পরেও?’

সৌরভ মুচকি হেসে তোফাজ্জলের কাঁধে হাত রাখলেন——-‘আরেহ! কী জন্য এত গম্ভীর হচ্ছো? সবসময় বাড়ি আয়, বাড়ি আয় বলে এখন এসব? বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাও তো আগে আমাদের?’

তোফাজ্জল যেন মুহূর্তেই লজ্জায় পড়ে গেলেন! দ্রুত বললেন———‘আমি তো ভুলেই গেছি! আয়, আয়, বাড়িতে আয়! কই, অদিতির মা? দেখো কে এসেছে!’

তোফাজ্জলের সঙ্গে বাড়ির ভেতর ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে সৌরভ পেছনে ইশারা করতেই লোকেরা গাড়ি থেকে বোঝাই করে মিষ্টি, চিপস, সফট ড্রিংকস নিয়ে এগিয়ে এলো। ধ্রুব যত এগোচ্ছে, তত বারবার তার চোখ চুপি চুপি খুঁজছে অদিতিকে। সে এক ঝলক দেখতে চাইছে তার প্রাণ-ভোমরাকে! জাস্ট একবার…!

ইফাজ যখন ধ্রুবকে উঠোনে দেখতে পেল, তখন এক মুহূর্তের জন্য ধ্রুবর দিকে ছুটে যাওয়ার জন্যে এগুলো! ধ্রুবও ইফাজের দিকে তাকাল! কিন্তু পরমুহূর্তে ইফাজ তোফাজ্জলকে দেখতে পেয়ে থেমে গেল। মুহূর্তেই চোখ-মুখ বদলে গেল ইফাজের। ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ফেলল এটা দেখে। একবার বিয়ে হয়ে গেলে; এই ইফাজ নামক শালাবাবুকে ধরে ধরে এই পৃথিবীর সব রিমোট কন্ট্রোল কার, বিডির সবচেয়ে বেস্ট ক্যামেরা একে গিফট দিবে ধ্রুব। এত লক্ষ্মী একটা ছেলে!

ফাহিমা তখন মাথায় আঁচল দিয়ে বাইরে এসে দেখলেন বাড়িতে মেহমানদের ভিড়। প্রথমে বিস্মিত হয়ে তাকালেন, কিন্তু তারপর এক মুহূর্তে নিজেকে স্বাভাবিক করে অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

তৃণাকে প্রথমে চিনতে ফাহিমা চিনতে পারেনি। সেটা দেখে চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে তৃণা নিজেই নিজের পরিচয় দিলেন——‘আমি তৃণা আহমেদ, সৌরভের স্ত্রী!’

ফাহিমা মৃদু হেসে বললেন ———‘ ওহ! আসলে সৌরভ ভাইয়ের প্রথম স্ত্রীকেই চেনা হয়েছিল আমার। আপনাকে আমাদের বাড়িতে দেখে ভালো লাগছে। আসুন, আসুন!’

তৃণা হাসল! তৃণাকে সঙ্গে নিয়ে ফাহিমা ভেতরের ঘরে চলে গেলেন।
সৌরভ পুরুষদের নিয়ে বসার ঘরে গিয়ে বসলেন, ধ্রুব পাশে বসে। তার চোখ তখনও বারবার অদিতির খোঁজে চলে যাচ্ছিল। কোথায় ও? নির্ঘাত কাঁদছে! ছিচকদুনে তো একটা!

ভেতর থেকে ফাহিমা সেমাই, পিঠা, সরবত নিয়ে এসে সামনে রাখলেন। সৌরভ পিঠার একটা টুকরো তুলে নিতে নিতে বললেন——-‘মেয়ের বিয়ের জন্য তো ভালোই আয়োজন করেছো! বাড়িটা বেশ সুন্দর লাগছে!’

তোফাজ্জল মুচকি হাসলেন; তাল দিয়ে বললেন——-‘এখনো মাত্র শুরু! মেঝো মেয়েটা তো….. এখন একটাই মেয়ে আমার; ওর বিয়েতে খরচা করবো না তো কি করব!’

ধ্রুব ভ্রু কুচকে তাকাল এ কথা শুনে! ওর তাকানো দেখে সৌরভ চোখের ইশারায় ছেলেকে ঠান্ডা থাকে বললেন! ধ্রুব থামল; সামলালো নিজেকে!

সৌরভ একটু চাপা গলায় এবার বিষয়টাকে গম্ভীর করে বললেন——-‘তোফাজ্জল, আমি আজ তোমার কাছে একটা দাবি নিয়ে এসেছি। আশা করি, তুমি রাখবে!’

তোফাজ্জল একটু বিভ্রান্তি নিয়ে তাকালেন; হাসার চেষ্টা করে মাথা নেড়ে বললেন——-‘বলো, কী দাবি? আমি চেষ্টা করব রাখতে!’

সৌরভ ধ্রুবর কাঁধে হাত রেখে, গম্ভীর গলায় বললেন——‘এটা আমার ছেলে ধ্রুব! হয়তো একটা দুর্ঘটনার কারণে তুমি ওকে চিনো! ও এবার ইউনিভার্সিটি শেষ করেছে! আমার ব্যবসা ও-ই সামলাবে! আমি আমার রাজনীতি নিয়েই ঠিক আছি!’

তোফাজ্জল ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে আবার সৌরভের দিকে ফিরলেন। সৌরভ একটি বড় নিশ্বাস নিয়ে বললেন——-‘আমি আমার ছেলের জন্য তোমার মেয়ে অদিতির হাত চাইতে এসেছি! আমি চাই, তোমার মেয়ে আমার বাড়ির বউ হোক!’

তোফাজ্জলের মাথায় যেন বজ্রপাত হলো! অবিশ্বাস নিয়ে তিনি তাকালেন ধ্রুবর দিকে!

ইফাজ এ কথা শোনামাত্রই চোখ বড় বড় করে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে রইল! তারপর মুহূর্তের মধ্যে সে এক দৌড়ে চলে গেল অদিতির ঘরের দিকে!

তোফাজ্জল অবিশ্বাস নিয়ে বললেন——-‘অসম্ভব! এ দাবি আমি মানতে পারব না!’

ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে, শ্বাস আটকে বসে রইল! সৌরভ আবারও বললেন —-‘প্লিজ তোফাজ্জল! আমি কখনো তোমার কাছে কিছু চাইনি! আমার ছেলের কথা ভাবো একবার। ওর মা মারা যাওয়ার পর ওকে আমি এখনো কিছু দিতে পারিনি! আমার কাছে ও-ই সব! কখনো ও আমার কাছে কিছু চায়নি। ওর জন্যে তোমার মেয়েটাকে আমার পছন্দ হয়েছে। সরল- ভালো তোমার মেয়েটা। ছেলেটার একটা হিল্লে করলে আমার আত্মা শান্তি পাবে তোফাজ্জল! আমাকে দয়া করো! দয়া করে, আমার ছেলেকে তোমার মেয়েটাকে দাও!’

তোফাজ্জল আর কথাই শুনলেন না। এক লম্বা শ্বাস ফেলে হঠাৎ করে উঠে দাঁড়িয়ে গেলেন। ধ্রুবর দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে; পরপর মুখ ঘুরিয়ে বললেন——-‘আমার মেয়ের বিয়ে কাল! দাওয়াত খেতে আসায় আমি ভীষণ খুশি হয়েছি! আমাকে আর এসব বলে লজ্জা দিও না, সৌরভ! তোমরা বসো; আমি খাবারের ব্যবস্থা করছি!’

#চলবে