আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব-৩৯+৪০

0
97

#আমার_প্রেমিক_ধ্রুব —৩৯
#অবন্তিকা_তৃপ্তি
|🔕বাসর স্পেশাল পর্ব|
~ ১৮+ এলার্ট~

ধ্রুব ইয়ামিনের ‘Biological Father’ সৌরভ ইয়ামিনের সার্জারি শেষ। ডক্টর মানব ওটি থেকে বেরিয়ে আসতেই; অদিতি উঠে দাঁড়াল। ও অদূরে সিগারেট ফুঁকতে থাকা ধ্রুবর দিকে কাতর তাকাল; ধ্রুব সিগারেট ফেলে এগিয়ে আসছে তখন। তৃণা ততক্ষণে দাড়িয়ে গেছে ডক্টরের সামনে। ধ্রুব তৃণাকে দেখে ওখানে ডক্টরের সামনে দেখে, ওভাবেই দাড়িয়ে গেল; এগুলো না আর সামনে।

ডক্টর মানভ ধ্রুবকে দেখেন; বুঝেন এই ছেলের বাবার প্রতি কি অসম্ভব রাগ। তাই তিনি স্নেহ নিয়ে ডাকেন——‘আসো ধ্রুব।’

ধ্রুব তৃণার দিকে বাঁকা চোখে চেয়ে এগুলো। ডক্টরের সামনে দাঁড়াতেই তৃণা ইতস্তত ভঙ্গিতে সরে দাঁড়ালো। ডক্টর ধ্রুব-তৃণা দুজনের দিকেই চেয়ে বললেন——‘অপারেশন সাক্সেসফুল। আমরা কেবিনে শিফট করবো শীঘ্রই। কিন্তু ধ্রুব, তোমাদের কাজ কিন্তু এখন অনেক বাড়ছে। প্রপার টেইক কেয়ারের প্রয়োজন তার। নিয়মত হেলদি খাবার, একটা হেলদি লাইফ; হেলদি হাইজিন এসব মেইনটেইন করতে হবে।’

তৃণা এবার কিছুটা আকুল গলায় বলল——-‘কোনো কমপ্লিকেশন আছে, মানব ভাই?’

ডক্টর জবাবে বললেন——‘নেই একেবারে তা বলছি না। তবে কেয়ার জরুরি! নিয়মিত মেডিসিন নেওয়া, হেলথ এর আপডেট; ব্লাড প্রেশার রেকর্ড করে আমাকে মাস শেষে চার্ট করে জমা দিবেন।’

তৃণা চিন্তিত মুখে মাথা হেলাল; অস্থিরভাবে বারবার ওটির জানালার দিকে তাকাচ্ছে, একবার যদি উইন্ডো দিয়ে সৌরভের মুখ-টুকু দেখতে পারত! ডক্টর মানব এবার গম্ভীর চোখে ধ্রুবর দিকে তাকালেন; ধ্রুবর কাঁধে হাত রেখে বললেন——‘তুমি একটু সাইডে আসো আমার সঙ্গে।’

ধ্রুব ওটির দিকে একনজর চেয়ে, ডক্টরের সাথে একটু দূরে গেল। ডক্টর মানভ স্বাভাবিক গলায় ধ্রুবর কাঁধে হাত রেখে বললেন——-‘ডোন্ট গেট মি রং ধ্রুব! তবে তোমার মা যদি জানতে পারেন; তুমি নিজের বাবার প্রতি এতটা রাগ রেখেছো; ওপারে ভাবি বোধহয় খুব একটা খুশি হবেন না।’

ডক্টর মানব থামলেন। ধ্রুব থমথমে চোখে ওটির দিকে চেয়ে রয়েছে তখনো। ডক্টর মানব আবার বললেন——-‘রাগ ফেলে দাও এক্ষুনি বলবো না। ওই রাগ অনেক বছর ধরে মাথায় রেখেছো, একদিনে সম্ভব না ফেলে দেওয়া। কিন্তু নিজের দিক থেকে সৌরভকে বাঁচিয়ে রাখতে কিছু রাগ নাহয় স্যাক্রিফাইজ করো, কোপারেট করো আমার সাথে! খেয়াল রেখো তার। বাবা হারিয়ে গেলে আর বাবা পাওয়া যায়না ধ্রুব। সৌরভ তোমার মুখে বাবা ডাক শোনার জন্যে রোজ কতটা তোরপায় এটা আমরা জানি। ডোন্ট ডিসাপয়েন্ট হিম এন্ড ই‍্যয়ুর মাদার!’

ধ্রুব উত্তরে শুধুই নীরব থাকল! ডক্টর মানব ধ্রুবর কাঁধে হালকা চাপড় দিয়ে চলে গেলেন নিজের রুমের দিকে।ধ্রুব তখনো হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ওভাবেই ভেয়ে রয়েছে ওটির দিকে; যেখানে সৌরভ শুয়ে আছেন অসুস্থ অবস্থাতে!
________
সৌরভকে বাড়িতে আনা হয়েছে। বাড়িতে অসুস্থ সৌরিভকে নিয়ে রীতিমত হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটছে। সবাই ব্যতিব্যস্ত তাকে নিয়ে। সঙ্গে পার্টির লোকেদের নিয়মিত বাসায় আনাগোনা। তৃণা একাহাতে সবটা সামলাচ্ছেন দেখে অদিতি নিজেও হাতে হাত মেলাচ্ছে। সেদিক থেকে এক বিন্দুও বসার ফুরসত-টুকুও পাচ্ছে না। সারাক্ষণ রান্নাঘরেই থাকছে। এক্সাম সামনে ওর। অথচ পড়াশানা বিয়ে; প্রেম: অসুস্থতা মিলিয়ে ওসব পড়াশোনা রীতিমত লাটে উঠেছে।

দুপুরে খাওয়া-দাওয়া পরে এ বাড়ির লোকেরা চা-কফি সর্বদাই খায়। আজ আবার দুপুরে সৌরভের পার্টির বেশ কজন লোক এ বাড়ি খেয়ে এখন বসার ঘরে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। সৌরভও অসুস্থতা নিয়ে কোনরকমে বসেছেন ওদের সাথে। সামনে ইলেকশন। দলের লোকেদের বলে বলে না দিলে, একেকটা কাজে ফাঁকি দেওয়া শুরু করে। তাই ওমন চুড়ান্ত অসুস্থ অবস্থাতেও মুখে মুখে নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনায় বসেছেন দলের লোকের সাথে।

অদিতি রান্নাঘরে চা বানাচ্ছে সবার জন্যে। তৃণা সবেই সৌরভের জন্যে গ্রিন টি নিয়ে বসার ঘরে গেছেন। অদিতি যখন চায়ের কাপে দুধ-চিনি মেশাচ্ছে; ঠিক তখন ধ্রুব রান্নাঘরে এলো। অদিতি ওকে দেখেওনি শুরুতে, ও চা বানাতে ব্যস্ত তখন।

তখুনি শুনতে পেল একটা কর্কশ গলার স্বর———-‘হালিমা, আমার কফি কোথায়? এতদিনেও আপনাদের বলে দেওয়া লাগে এটা?’

অদিতি ওমন রাগান্বিত, উঁচু গলা শুনে চমকে উঠে পেছন ফিরে তাকাল। ধ্রুব ওর দিকে কড়া চোখে একবার তাকিয়েই চোখ সরিয়ে হালিমার দিকে আবারও তাকাল। হালিমা মাছ কাটছিল রাতের জন্যে। উনি ধ্রুবর গলায় সটান দাড়িয়ে গেছে বটি ছেড়ে, আমতা আমতা করছে কিছু বলে———‘স্যার; আপনে তো নিজেই ক——‘

ধ্রুব এবার অদিতির রাগ-টুকু ওর সঙ্গেই দেখালো, চেঁচিয়ে উঠল——-‘তো? সবসময় নিজে বানাই দেখে এখনো বানানো লাগবে? দ্রুত কফি রুমে পাঠাবে।’

অদিতি ঢোক গিলে শুধু তাকিয়ে রইল ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব ওমন রাগ দেখিয়ে তারপর বড়বড় পা ফেলে চলে গেল। অদিতি তখনও ওভাবেই চায়ের কেতলি হাতে শুধু চেয়ে রিয়েছে ধ্রুবর যাওয়ার দিকে। ধ্রুব এলো; কতক্ষণ শুধুশুধু কাজের মেয়েটার উপর চেচালো! বুঝেনা অদিতি ওসব? কার রাগ কাকে দেখাচ্ছেন? ওর চোখ টলমল করে উঠল মুহূর্তেই। আজ এক সপ্তাহ ধরে ধ্রুব ওর সঙ্গে কথা বলেনা। রাতেও দূরে দূরে থাকে। অদিতি কথা বলার কত চেষ্টা করেছে, লাজ ভুলে কতবার এম জড়িয়েও ধরেছে। অথচ ধ্রুব নিজেই সরে সরে থেকেছে পুরোটাসময়। অদিতিকে ধ্রুবর এই বদলে যাওয়া আজকাল ভীষণ পোড়ায়! ধ্রুব রাগী ও জানে, জেনেবুঝেই জড়িয়েছে এই সম্পর্কে। তাই বলে বিয়ের পরেরদিন থেকেও নিজের রাগী সত্তাটুকু অদিতিকে দেখানো লাগল? অদিতি কত আশা রেখেছিলো, বিয়ের পর এই করবে-সেই করবে। অথচ রিসেপশনের দিন চলে এলো, ধ্রুবর সঙ্গে তেমন কোয়ালিটি টাইমটুকুই কাটানো হলো না। ধ্রুব ওভাবে ব্যবহার দিতে পারল ওকে? এই তার ভালোবাসা! মুখে তো বড় করে বলে—- আমি তোমাকে পাওয়ার জন্যে সাফার করেছি অদিতি। আমি জানি, তুমি আমার কতটা শখের।

ধেৎ! কিছু শখের না। সব ফাউল কথা ছিলো ওগুলো! কথায় বলেনা, যখন কেউ কাঙ্ক্ষিত জিনিস পেয়ে যায়, তখন সেটার মূল্য থাকেনা। অদিতির বেলায় বোধহয় তাই ঘটতে যাচ্ছে। ধ্রুব চায়না অদিতি ওর বাবা-ছেলের মধ্যে ঢুকুক, তাইতো? যাও, ঢুকবে না ও। তবুও ধ্রুব একটু কথা বলুক ওর সাথে: একটু আদর করে ছুয়ে দিক আগের মতো, আরো একটু কাছেও আসুক সময়ে-অসময়ে!

‘ভাবি, স্যারের জন্যে কফিটা কি আমি বানামু?’ —— হালিমা একহাতে ভাবুক অদিতিকে ঠেললো।

অদিতির ভাবনা ভেঙে গেল! ও চমকে উঠে দ্রুত শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে ফেলল। তাড়াহুড়ো করে কেতলি থেকে চা ঢেলে ভাঙা গলায় বলল———‘আমি বানাচ্ছি; তুমি মাছ কেটে নাও।’

হালিম শুধু ফ্যালফ্যাল চোখে অদিতির চোখ-মুখ দেখল; ওর ভাঙা গলা-টাও শুনল! অদিতি মানুষ দিয়ে চা পাঠিয়ে দিল সৌরভের বসার ঘরে।কারণ ধ্রুবর নিষেধ আছে সৌরভের পার্টির লোকের সামনে যাওয়া নিয়ে।

তচা পাঠিয়ে কফি বানানো শুরু করল। হালিম মাছ বানানো বাদ দিয়ে শুধু দেখতে লাগল টলমলে চোখ-ওয়ালি অদিতিকে। আহারে, নতুন এলো মেয়েটা বিয়ে করে। ধ্রুব স্যারের রাগ উনারেও ছাড়লো না। এই ছেলেরে দিয়ে আসলেই কিছু হবে না। কত করে হেদিন বসার ঘরে বলল— ভাবিরে বিয়ে করবার চায়। তয় এখন? ভাবিরে কাদাইতেসে এ বাড়ি এনে। ব্যাডা মানুষগোরে এইজন্যেই হালিমার ভাল্লাগে না কোনোদিনই।

হালিমা মনে কিছুটা সাহস করে এগুলো অদিতির দিকে। ব্যস্ত অদিতির দিকে চেয়ে ডাকল নরম গলায়—-‘ভাবী; একটা কথা কমু? মানে আপনে যদি সাহস দিলে পরে?’

অদিতি কফি বানাতে বানাতে জবাবে দিলো———‘বলো।’

হালিম আশপাশ দেখে নিলো ভালো করে। এসব শরমের কথা বাইর কেউ হুনলে ওয়না। ওসব লুকায় বলা লাগে। আশপাশে মানুষ নেই দেখে হালিমা কিছুটা এগিয়ে অদিতির কানের কাছে মুখ এনে আস্তে করে বলল———‘স্যার আর আপনের মধ্যে ওই কি বলে, সব ঠিক আছে? কিছু হয়নাই আপনাগো মধ্যে? ওই স্বামী-ইস্তিরি গো মধ্যে ওই যা হয় আরকি!’

অদিতি ভ্রু কুচকে গেলো। কফি বানাচ্ছিল, তাই ওসব কথার অর্থ শুরুতেই ধরতে পারলো না। কাপে কফি পাউডার দিয়ে আনমনে প্রশ্ন করে বসলো—-——‘মানে? কি হ…’

পরমুহূর্তে বোকা হয়ে গেল। চোখ বড়বড় করে হালিমার দিকে তাকাল। হালিম ওমন চাহনি দেখে হয়তবা ভয় পেয়েছে। ও আমতা-আমতা করে পিছিয়ে গেল দু কদম! অদিতি আহাম্মকের ন্যায় তাকিয়ে রয়েছে। এই কি হবে ব্যাপারটা মাথায় যেতে কুণ্ঠায় ছেয়ে গেল পুরোটা শরীর। ও নিজেকে ব্যস্ত রেখে মিনমিন করে বলল——-‘এগুলা বাইরের কাউকে বলার মতো কথা নয় হালিমা।’

হালিমা ওসব ম্যানার্সের কথা কি শোনে। কই ওদের বস্তিতে তো সব্বাই জানে কোন মেয়ের বাসর দিনে কি কাম হইসে, ক্যামনে হইসে? এগুলা তো হক্কলেই বলে। ও তাই এসব গায়ে মাখে না, নিজের মনে বলে যায়———‘আরে শুনেন না আমার কথাটা একবার। ধ্রুব স্যার কিন্তু অনেক রাগী। তাও আপনেরে খুব ভালাপায় একথা কিন্তু হক্কলে জানে। তাই বলছিলাম——-‘

‘কি বলছিলে?’—- অদিতি এবার কেন যেন মনোযোগ দেবার চেষ্টা করে।

হালিম আরো নিচু করে গলার স্বর, কেউ যেন না শুনে ওমন করে বলে উঠলো———‘বলছিলাম যে, নাইটি আছে আপনের?’

‘হোয়াট?’ —— অদিতি বিষম খেলো একপ্রকার। হালিমা ভীষণ আগ্রহ নিয়ে ওর দিকে চেয়ে রয়েছে। অদিতি ওর আগ্রহী চোখ দেখে পরমুহূর্তে চোখ-মুখ লুকিয়ে ফেলল দ্রুতই!

কফিতে চামচ নেড়ে নেড়ে অস্বস্তি নিয়ে বলল————‘হালিমা খালা, এ..এসব কথা থাক। তুমি মাছটা কা..কাটো যাও প্লিজ।’

হালিমা হাসে অদিতির লজ্জা দেখে। এর মানে এ দুগো জামাই-বৌর মধ্যে কিছুই হয়নাই এখন অব্দি। হায়রে! ধ্রুব স্যারের কতই না ধৈর্য‍্য! ভালা মানুষ দেখেই তো বউয়ের এতদিনেও বৌরে ছোঁয় নাই।এমন ব্যাডা পাওয়া যায়না আজকাল। পোলাগো তো বিয়ের দিনই সব ছাই, বাচ্চাও হেগো ওইদিনই চাই; খাচ্চর একেকটা।

ওসব থাক! হালিমা এবার আরও আগ্রহী হলো, অদিতির দিকে এগিয়ে চোখ ছোট করে, আগের চেয়ে আরও নিচু স্বরে ফিসফিস করে বললো—-‘আরে লজ্জার কিবা আছে? হুনেনই না আগে। ওসব ব্যাডাগো রাগ মাইয়া মাইনষের কাছে পানিভাত একদম। আপনি আজ নাইটিটা নিবেন; পরবেন আর হেতের সামনে যাইবেন। দেখবেন বাকি কাজ হেরাই করে ফেলতেসে।’

অদিতি লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে একদম। ধ্রুবর সামনে ওসব পরে যাবে। ভাবতেই গায়ে কাটা দিল। ধীরে ধীরে অদিতির কানও গরম হয়ে যাচ্ছে; ও কোনরকমে কফির কাপ হাতে নিয়ে বলল——-‘জি! আমি বুঝতে পেরেছি হালিমা। আসি এখন? কফি ঠান্ডা হচ্ছে।’

বলেই কোনরকম পালিয়ে এলো রান্নাঘর থেকে। নিজেদের রুমের দরজার সামনে এসে শুনে; ভীষণ জোরে জোরে গান বাজছে।বাড়িতে অসুস্থ মানুষ; এটি মেহমান— আর তার কাণ্ড দেখ! একপ্রকার বিরক্ত হয়েই অদিতি কফির কাপ হাতে দরজা খুলে রুমে ঢুকলো। ধ্রুব টিভি দেখছে বিছানার সোহে হেলান দিয়ে বসে; কোলের উপর ওয়াটারমেলন পিলো! টিভিতে গানের দিকে ভীষন আগ্রহ নিয়ে চেয়ে আছে ধ্রুব; চোখে-মুখে অদ্ভুত একটা ভাষা! অদিতি যে এসেছে ও সেটা দেখেওনি তখন। অদিতি ধ্রুবর ওমন মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখা দেখে নিজেও টিভির দিকে তাকাল। একটা আইটেম গার্ল নানারকম অঙ্গভঙ্গি করে নাচছে কতগুলো ছেলের সামনে। গায়ে কেবল সামান্য কয়েকটা কাপড়। এটা দেখামাত্রই মুহূর্তের মধ্যে অদিতির মেজাজ চড়া হয়ে গেল। ওর ভ্রু-ট্রু কুচকে গেল; হাসফাস করে উঠে একপ্রকার ঘেন্নায় চেঁচিয়ে উঠলো——‘ছিঃ, ধ্রুব এসব কি দেখেন আপনি?’

ধ্রুব অদিতির আওয়াজ শুনে মুহূর্তেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। অদিতির রাগি চোখ দেখে; সতর্ক হয়ে এল ওর হাত-দুটো! তাড়াহুড়ো করে বিছানা হাতড়ে টিভির রিমোর্ট খুঁজে বের করে চ্যানেল বদলে ফেলল। ধ্রুব নিজেও কিছুটা অপ্রস্তুত হয়েছে। অদিতি লজ্জা-রাগে আর তাকালোও না একবার ধ্রুবর দিকে।

চোখ রাঙানো দেখিয়ে ওভাবেই কফির কাপ শব্দ করে টেবিলের উপর রাখল। ধ্রুব ঢোক গিলে; পরমুহূর্তে এক্সপ্লেইন করতে যায়———‘লিসেন, এটা জাস্ট অ্যা সং।’

অদিতি কিছুই বলে না। ওভাবেই রাগ দেখিয়ে কফি রেখে বাথরুমের দিকে চলে যায়। ও যেতেই ধ্রুব নিজেই নিজের গালে মেকি চড় বসালো——-‘ধ্রুব, ধ্রুব! পাগল তুই? নাও ই‍্যয়ু আর ম্যারেড, ড্যাম। এসব দেখার আগে ভাববি না একবার? এখন ঠেলা সামলে।’

ধ্রুব কফির কাপ ওভাবেই টেবিলের উপর রেখে উঠে দাঁড়াল। পায়চারি করতে লাগলো পুরো রুম জুড়ে অস্থিরভাবে। অদিতি কি ভাবছে ওকে? ক্যারেক্টারলেস? ভাবতেই পারে। ধ্রুব ওসব দেখে না আজ কয়েক বছর। তবে আজ নিজের কিশোর বয়সের প্রিয় গানটা সামনে আসায় সামলাতে পারেনি নিজেকে, শুনেই ফেলেছে একটু। এবার এটার মাসুল কিকরে গুনবে সেটাই ভাবছে। নিজের পূর্বের রাগ কখন মাথা থেকে টুপ করে পালিয়ে গেছে। সংসার বাঁচানোই এখন সবচেয়ে বড় ধর্ম!

অদিতি বেরিয়ে এলো মুখে পানি চিটে দিয়ে। ধ্রুবকে দেখে মুখ ঝাঁমটি দিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। ধ্রুব আবারও ঢোক গিলে। কি লুক মাইরি! অদিতি আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। ধ্রুব গিয়ে ওর পাশে দাঁড়াল, নার্ভাস গলায় ডাকল———‘অদিতি? প্লিজ শুনো।’

অদিতি চিরুনি হাতে তাকালো, ভাবলেশহীন ভাবে। ধ্রুব হাসার চেষ্টা করে বলল——-‘আমি এসব দেখিনা অনেক বছর হয়ে গেছে। বাট কিছু নস্টালজিয়া বলতেও তো কিছু আছে। ফেব্রেট গান ছিলো এটা একসময় আমার।’

অদিতি শুনলো মন দিয়ে এক্সপ্লেনেশনটা। তারপর ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে আবার চুল আঁচড়াতে মন দিল। ধ্রুবর এবার রাগ হলো কেন যেন। বেশি বাড়াবাড়ি হচ্ছে এখন। ও এক্সপ্লেইন করেছে, করেছে না? অদিতি কি আদৌ জানে, ও ধ্রুবর লাইফে আসার পর কি কি বাজে অভ্যাস ধ্রুব ছেড়ে দিয়েছে? তারপরও সামান্য এইটা বিষয় নিয়ে এত সিনক্রিয়েট সহ‍্য হলো না ধ্রুবর। ও অদিতির হাত থেকে চিরুনি একপ্রকার কেড়ে নিয়ে নিলো, অদিতি ভাবলেশহীন ভাবে তাকালো আবারও। ধ্রুব কিছুটা জোর দেখিয়ে বলল——-‘সরি বলছিনা আমি? তারপরেও চুপ কেন?’

অদিতি এবার কথা বলল——-‘আপনি বিয়ে করেছেন?’

ধ্রুব ভ্রু কুচকালো——-‘মানে?’

‘উত্তর দিন আমাকে আগে।’ —- অদিতি কড়া গলায় বলল!

ধ্রুব হতাশ গলায় উত্তর দিয়ে দিল—-—-‘হু!’

‘আমি যদি এখন একটা ছেলেকে ওভাবে তাড়িয়ে-তাড়িয়ে দেখি, আপনার ভালো লাগবে?’ ———- অদিতি সরাসরি উত্তর চাইল।

ধ্রুব চোখ উল্টে ফেলল। কোথার কথা কোথায় গিয়ে গড়াচ্ছে? ও ওভাবেই চোখ উল্টে হতাশ গলায় বললো——‘ডোন্ট ট্রাই টু মেইক মি জেলাস অদিতি। ওসবের সময় এখন আমাদের দুজনের কারোরই না। আমরা ম্যারেড, ইয়ার।’

অদিতি এবার রেগে গেল হঠাৎ, রাগী গলায় বলল——-‘এটা জেলাসিরই প্রশ্নই। আমার সামনে আপনি ওই আইটেম গার্লের পেট দেখছেন; বুক দেখছেন। আমার ভালো লাগছে? জ্বলছে আমারও।’

বলে রাগ দেখিয়ে ধ্রুবর হাত থেকে চিরুনি টেনে আবার চুল আঁচড়াতে মন দিল। ধ্রুব ওভাবেই তাকিয়ে রইলো অদিতির দিকে।মেয়েটা এত পোড়ায় ওকে আজকাল! অদিতির রাগ দেখলেই ধ্রুব সবসময় কেন কথা হারিয়ে ফেলবে? ও তো ধ্রুব; ধ্রুব ইয়ামিন! ও তো আগে এমন ছিলোই না কখনও। এই মেয়েটা একদিন ওকে নির্ঘাত পাগল করেই ছেড়ে দেবে।

ধরুন হার মানলো! পরাজিত সৈনিকের ন্যায় অদিতিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে থুতনি রাখল। অদিতি চুল আঁচড়ানো থামিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। রাগে-অভিমানে আয়নায়ও তাকালো না ধ্রুবর দিকে।বারবার মনের মধ্যে আশি কেজি জেলাসির আগুনফুটছে! ধ্রুব কেন ওই মেয়েকে ওভাবে দেখেছে? ওর চোখ শুধু অদিতির দিকে থাকা উচিত ছিলো।

অদিতি এটা ভেবেই আবার ছটফট করতে শুরু করে দিল———‘ছাড়ুন আমাকে। যান ওসব খারাপ গান শুনুন গিয়ে।’

ধ্রুব অস্থির, অদিতিকে সামলানোর চেষ্টা করে বলল——-‘স্টপ অদিতি। এমনভাবে বলছো যেন ওটা পর্ন ছিলো। ইটস জাস্ট অ্যা সং। এন্ড আমি বলেছিও; ওসব আমি আর দেখিও না।তাও আবার বলছি আমি ধ্রুবর চোখ শুধুমাত্র আমার ওয়াইফ অদিতি হায়াতের পেট-বুকের দিকেই দিকেই থাকবে। অন্য কারো দিকে যাবে না কখনো।’

অদিতি এ কথা শোনামাত্র লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো। ধ্রুব ওভাবে বলে কেন? এত ঠোঁট-কাটাও মানুষ হয়? লজ্জায় অদিতি ছটফট বন্ধ করে দিল। ধ্রুব ওর কানের লতিতে চুমু খেলো একটা; গাঢ় ভাবে। অদিতি চোখ বুজে জোরে শ্বাস ফেলল। ধ্রুব ওর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসালো———- ‘ছোটবেলার গান ছিলো এটা। তখন একটা ড্রিম ছিলো আমার। বলবো?’

অদিতি তাকিয়ে রইলো আয়নায় ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব আবার বলল——-‘রাগ করলে বলবো না।’

অদিতি মন ছটফট করছে ধ্রুবর ইচ্ছে শোনার জন্যে; তাই আগেপিছে না ভেবে ওভাবেই বলে দিল———‘কি ড্রিম?’

ধ্রুব ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল কিছু একটা। কথা-গুলি কানে যেয়েই পরমুহূর্তে অদিতি সেটা শুনেই ছিটকে সরে গেল ধ্রুবর থেকে। মুহূর্তেই নাক-মুখ কুঁচকে ফেললো—-‘ছিঃ, আমি এটা পারবনা। আপনার মাইন্ড এত অশ্লীল।’

ধ্রুব ওর হাত টেনে ওকে আবারও নিজের বুকে ফেলল। দুহাতে কোমর চেপে ওকে টেনে নিলো নিজের দিকে। অদিতি ধ্রুবর বুকে হাত রেখে ওকে ঠেলছে। ধ্রুব ওভাবে চেপে রেখেই বললো——‘বউ হও আমার। হক আছে আমার তোমাকে ওভাবে দেখার।’

অদিতি নিচু স্বরে বললো, ———‘বউ হলেও। ওসব আমি পারিনা। কোনদিন করিও নি।’

‘কোনদিন করোনি মানে। হ্যালো, ওসব ডান্স হাজবেন্ডের সামনেই ঠিক আছে। আর কারো সামনে করলে খু-ন করে দেব।’ —- ধ্রুব ধমক দিয়ে বলল!

অদিতি দুহাতে কোমরে রাখা ধ্রুবর হাতে হাত চেপে রেখে কাতর গলায় বলল———‘ধ্রুব। আমি সত্যিই পারিনা এসব।’

ধ্রুব এ যাত্রায় দীর্ঘশ্বাস ফেলল, ছেড়ে দিল অদিতিকে। স্বাভাবিক গলায় বলল——-‘ ওকে ফাইন। না পারলে নো প্রেশার!’

বলে হাসার চেষ্টা করে টেবিলের উপর রাখা কফি কাপের দিকে এগুলো! অদিতি ওভাবেই দাড়িয়ে রইল! ধ্রুব বারান্দায় যেতেই ও নিজের দিকে একবার তাকাল। দুপুর তিনটা বাজে এখন। হালিমার কথা-গুলি কানে বাজছে। সঙ্গে বাড়ির একটা কাজিনের কথাও মাথায় আসছে——-‘স্বামীকে নিজের বশে আনার একটাই উপায় আছে; এদের সুখ দেওয়া। দুইভাবেই; মানসিক ও শারীরিক!’

ধ্রুব চাইছে ওমন! অদিতি মানা করায় হয়তবা ও অদিতিকে তেমন প্রেশার দেবে না কখনো। কিন্তু অদিতি যদি পারে, তবে কখনো ধ্রুব ওসব আইটেম গার্লের নাচ দেখনে না কখনো! বাড়িতে যেটা মিলবে, ওটা টিভিতে কেনো দেখতে যাবে? এসব কথা বলে নিজেই নিজেকে প্রবোধ দিল ও। মনের মধ্যে হুট করে জ্বলন অনুভব করল। ধ্রুব ওভাবে ওই মেয়েকে দেখেছে। অদিতিকে কেন দেখবে না? দেখবে; অবশ্যই দেখা উচিত। ধ্রুব তখন কফি খাচ্ছে বারান্দায় দাড়িয়ে। অদিতির জেদ হলো হঠাৎ ভীষণ। নরম-সরল অদিতি কেমন যেন স্বামীর অ্যাটেনশন পেতে মরিয়া হয়ে উঠল। ও আলমারি থেকে সেদিনের ধ্রুবর দেওয়া নীল রঙা সিল্কের ট্রান্সপারেন্ট শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ছুটল!

ধ্রুব তখন বারান্দার দোলনায় বসে কফি খাচ্ছে; আর ফোন অযথাই স্ক্রক কয়েছে। বেচারার হার্টব্রেক হয়েছে আজ। ওয়াইফের কাছে এমন আশা করাটা হয়তবা শোভনীয় নয়। তারউপর সেটা আবার অদিতি, তোফাজ্জল হায়াতের ওই ভদ্র মেয়ে অদিতি হায়াত! রিজেকশন পাবারই কথা! মুখটা তেতো করে ওভাবেই তেতো কফিতে চুমুক দিতে দিতে সেসবই ভাবছে ধ্রুব।

হঠাৎ ঘরের ভেতর থেকে হালকা মিউজিক ভেসে এলো। ধ্রুব প্রথমে ভ্রু কুচকালো! গানের মিউজিক একটু শুনেই ধ্রুব আশ্চর্য হয়ে সটান দাঁড়িয়ে গেল দোলনা থেকে। এটা …এটা তো ওই গানটাই। ধ্রুবর কিশোর বয়সের আইটেম গান, যেটা ধ্রুব বন্ধুদের সাথে নিয়ে দরজা বন্ধ করে লুকিয়ে শুনতো! ধ্রুব দ্রুত হাতে কফি রেখে দিল মাটিতেই। ব্যস্ত পেয়ে এগুলো বারান্দার দরজার দিকে।

বারান্দার দরজার সামনে এসে হঠাৎ ধ্রুব আটকে গেল। আহাম্মক হয়ে তাকিয়ে রইল দুপুরবেলায় মোমবাতি দিয়ে সাজানো ধ্রুব-অদিতির নিজেদের ঘরের দিকে। ওই তো অদিতি; মেঝেতে বসে আছে। শাড়ির আঁচল ছড়িয়ে আছে, মাথায় লম্বা ঘোমটা টানা!

ধ্রুব চোখ কচকালো দুহাতে, অস্ফুটে ডাকল আবার—‘অ…অদিতি?’

গান শোনা গেল-
Hmm, Bhitar Bhitar Aag Jale
Baat Karu To Sape Lage

অদিতি ধীরে ধীরে ঘোমটা খুললো! ধ্রুব ওভাবেই অবাক চোখে বারান্দার দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অদিতি আবেদনময়ী চোখ রাখল ধ্রুবর অবাক চোখে, গাইল আবারও-
Ajji Bhitar Bhitar Aag Jale
Baat Karu To Sape Lage

বলে উঠে কোমর বাঁকিয়ে উঠে দাঁড়াল! ধীর পায়ে কোমর হেলিয়ে ধ্রুবর দিকে এগুচ্ছে, সঙ্গে গাইছে—
ho Main Chaand Nikal Gayi Daiyya Re
Aang Pe Aise Chhaale Padee
Tez Tha chaunka Ka Karu

ধ্রুবর সামনে আসতেই ধ্রুব ওর দিকে নেশালো চোখে তাকিয়ে রইল। ধ্রুবর নিজেরই বুক কাঁপছে! ওর এতদিনের ফ্যান্টাসি অদিতির পূরণ করছে দেখে কোথাও না কোথাও অসম্ভব ভালো লাগাও অনুভব করছে। অদিতি সামনে আসতেই ধ্রুব হেলান থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াল। ও আলতো করে দুহাতে অদিতির কোমর টেনে ওকে নিজের বুকের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো, নিচু গলায় ফিসফিসালো———‘সিরিয়াসলি, কান্ট বিলিভ! ই‍্যয়ু আর গনা মা-র্ডার মি, আর ইউ?’

অদিতি জবাব দিল না;মৃদু হেসে ধ্রুবর বুকে আঙুল দিয়ে আঁকিবুঁকি করতে করতে গাইতে লাগল—
Sisi Karti, Sisi Sisi
Si si Karti Main Maroon

ধ্রুবর হাসি আসছে ভীষন। ও খপ করে অদিতির আঙুল চেপে ধরে ফেলল।অদিতির আঙুল ধ্রুবর আঙুল চেপে রেখেছে। অদিতি চোখের ইশারায় শাসিয়ে আঙুল ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করলো। ধ্রুবর হাসি আসছে তখনও অদিতি আনাড়িপনায়। ধ্রুব অদিতির কপালে চুমু খেতে যাবে, অদিতি সরে গেল ধ্রুবর বাঁধন থেকে। ধ্রুবর ঠোঁটে আঙুল চেপে মৃদু হেসে গাইল——
Zabaan Pe Laga ji Laga ji re..
Zubaan Pe Laga,
Zubaan Pe Laga Laga Re Namak Isaq Ka

থামল অদিতি। ধ্রুবর ঠোঁট থেকে আঙুল সরিয়ে হাসল। ধ্রুবর তখন কেমন যে বোধ হচ্ছে, এটা একমাত্রই ওই, একটা পুরুষ জানে। ওর ভালো লাগছে ভীষণ! অদিতির আনাড়িপনার ডান্স, কোমর বেকিয়ে উদ্দীপিত চাহনি- সবকিছুই এতটা মুগ্ধ করে যাচ্ছে ওকে ক্রমশই।

অদিতি ধ্রুবকে হঠাৎ জড়িয়ে ধরল; ধ্রুবর অদিতির বাচ্চামোকে আহ্লাদ দেখিয়ে হেসে ওকেও জড়িয়ে ধরল দুহাতে। অদিতি ধ্রুবর বুকে নাম-মুখ ঘষে গাইল—-
Haaye, Tere Isaq ka
Zubaan Pe Laga Laga Re
Namak Isaq Ka,
haaye Tere Isaq Ka

ধ্রুব ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল——-‘অ্যাই অ্যাম ডায়িং ম্যাডাম! প্লিজ কন্ট্রোল মি।’

অদিতি ঠোঁট চেপে হেসে মাথা নুইয়ে সরে গেল। একটু দূরে দাড়িয়ে কোমর হেলিয়ে নাচতে নাচতে গাইল—-
Balam Se Maanga, Maanga Re
Balam Se Maanga Re…
Balam Se Maanga, Maanga Re
Balam Se Maanga re…

ধ্রুব বুকে আড়াআড়ি হাত ভাঁজ করে দেখে যাচ্ছে অদিতির ওকে খুশি করতে করা নাচ-টুকু! ওর ঠোঁটে তখনও মৃদু হাসি। এই প্রথম বোধহয় ধ্রুব এতটা মন খুলে হাসছে। ধ্রুব ইয়ামিনের হাসির কারণ ওর একমাত্র স্ত্রীর আনাড়িপনা, ওকে খুশি করতে তার বাচ্চামো ড্যান্স!

অদিতি নিজের সিল্কের শাড়ির আঁচল একহাতে মেলে ধরে এগুচ্ছে ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব ওকে এগুতে দেখে ওভাবেই হেসে দুহাত বাড়িয়ে দিল। লাই দিল নিজেকে জড়িয়ে ধরার। অদিতি ওর বুকে মাথা ঠেকাল! তারপর শাড়ির আঁচলে দুজনের মাথা একদম ঢেকে দিতেই ধ্রুব দুহাতে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে টেনে নিলো ওকে নিজের দিকে, অদিতি ধ্রুবর চোখে চোখ রেখে নিচু গলায় ধীরে ধীরে গাইল—-

Namak Isaq Ka Tere Isaq Ka
Zabaan Pe Laga Laga Re,
Namak Isaq Ka
Haaye Re Tere Isaq Ka
Haan Re Tere Isaq Ka…..
Tere Isaq Ka….

গান শেষ হয়েছে সেই কখন! অদিতি-ধ্রুব তখনও একজন আরেকজনের চোখের দিকে চেয়ে রয়েছে। হারিয়েই গেছে যেন দুজন! কথা নেই কারোর মুখে, অথচ চোখে চোখে হাজারও কথোপকথন চলছে।

একটাসময় ঝড় এলো, বাতাস এলো বারান্দা বয়ে, শাড়ির আঁচল সরে গেল দুজনের মাথা থেকে। ধ্রুবর ঝাকরা চুল এলোমেলো হয়ে গেল; অদিতির চুল এলোমেলো! ধ্রুব তখন নেশায় মারাত্মকভাবে মোহিত। আস্তে করে মুখটা বাড়িয়ে চুমু খেলো অদিতির ঠোঁটে! ভেসে গেল ওরা দুজনেই। অদিতি হারিয়ে গেল; দুহাতে আঙুল চালালো ধ্রুবর চুলের পেছনের দিকটায়।

ওরা চুমু খাওয়া অবস্থাতেই ধ্রুব সামনে এগুলো; অদিতি পেছাল। অদিতি পেছাতে পেছাতে বিছানায় হুট করেই দুজন শুয়ে গেল! ধ্রুব ওর উপরে শুয়ে চুমু খেয়ে যাচ্ছে আনমনে; প্যাশনেটলি।

অদিতি একসময় হাপিয়ে উঠল, ছাড়িয়ে নিলো নিজেকে ধ্রুবর থেকে! ধ্রুব সরে গেল, অথচ এখনো উপুড় হয়ে শুয়ে আছে অদিতির গায়ের উপর।

দুজনেই হাপাচ্ছে। ধ্রুবর হাপাতে হাপাতে হঠাৎ হেসে ফেলল। অদিতি ভ্রু কুঁচকে তাকাল ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব হাসছে; শব্দ করে, উচ্চশব্দে। একপ্রকার পেট চেপে হাসি যাকে বলে। ও ওভাবেই হাসতে হাসতে উঠে বসল। অদিতিও বসল, হাসির কারণ না বুঝে অবুঝ গলায় বলল———‘হাসছেন কেন আপনি?’

ধ্রুব বহু কষ্টে হাসি থামিয়ে, আবার হেসে হেসেই বললো———‘সিরিয়াসলি; তুমি এন্ড আইটেম সং ডান্স? তুমি আমাকে লিটারেলি থম করে রেখে দিয়েছিলে।’

অদিতি মুখ ফুলিয়ে ফেলল; অভিমান নিয়ে বলল——-‘ভালো হয়নাই?’

ধ্রুব হাসি থামাল। হুট করে অদিতির হাতটা টেনে ওকে নিজের বুকের উপর ফেলে দিল। আচমকা আক্রমণে চমকে উঠল অদিতি। ধ্রুবর বুকের উপর শুয়ে, মাথা তুলে ওর চোখের দিকে তাকাল।

ধ্রুব একহাতে আঙুলের ফাকে চুল গুছিয়ে দিল অদিতির! কানের কাছে ঠোঁট এনে ধিমে;অথচ হাস্কি স্বরে বলল———-‘ইট ওয়াজ অ্যা বেস্ট হট ডান্স অ্যাই হ্যাভ এভার সিন! অ্যাই ফিলিং নাও সুপার হট! প্লিজ হেল্প মি আউট না?’

অদিতি ভীষন রকম লজ্জায় পরে গেল। চোখ নামিয়ে ধ্রুবর থেকে ছাড়া পেতে মরিয়ে হয়ে অস্ফুটে বলার চেষ্টা করল——-‘এ…এখন দুপুর ধ..ধ্রুব!’

ধ্রুব ওকে শুয়ে দিল ওভাবেই বিছানায়। তারপর উঠে গিয়ে পর্দা মেলে; দরজা জানালাআটকে দিল। অন্ধকার হয়নি; তবে সন্ধ‍্যা-সন্ধ‍্যা লাগছে দেখে। ধ্রুব আবার অদিতির উপর শুয়ে পড়ল; চোখ টিপে বলল——-‘এইতো রাত। এখন শুরু করি?’

অদিতির ভয় হচ্ছে হঠাৎ! দুহাতে বিছানার চাদর খামচে ধরে ঘামছে রীতিমত, ধ্রুব ওকে ওভাবে অস্থির হতে দেখে ওর চুল গুছিয়ে দিয়ে কাতর গলায় বলল———‘এতগুলো রাত পেরিয়ে গেছে অদিতি।এখনো এত ভয় তোমার। এমন হলে আমি সাহসটুকু কোথায় পাব; বলো!’

অদিতি থামল! ঢোক গিলে ধ্রুবর দিকে একবার চেয়েই চোখ নামিয়ে নিলো! ধ্রুব হতাশ; চুড়ান্ত হতাশ! ও উঠে যেতে নিলে; হঠাৎ ওর শার্টের কলার চেপে ধরে ওকে আবার নিজের উপর শুইয়ে দিল অদিতি। অবাক ধ্রুবর চোখে চোখই রাখলো না এবার; দুহাত মেলে ধ্রুবকে ওভাবেই জড়িয়ে ধরল! ধ্রুব যা বোঝার বুঝে যায়। ঘাড়ে নাক ঘষতেই অদিতি ঘাড় সঙ্কুচিত করে ফেলল! ধ্রুব ওভাবেই নাক ঘষতে ঘষতে ধিমে আওয়াজে বলল——-‘প্লিজ আনবাটন ম্যাই শার্ট; মিসেস ধ্রুব!’

ওমন লো ভয়েজ শুনে অদিতির শিহরণে কেপে উঠলো রীতিমত। কাঁপা হাতেই ধীরে-সুস্থে ধ্রুবর শার্টের বাটনে হাত রাখল! একটা একটা করে খুলতেই; ধ্রুব বাটন-খোলা শার্ট খুলে মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দিল! তারপর অদিতির দিকে চেয়ে চোখ টিপে, দুষ্টু ইঙ্গিত দিয়ে বলল———‘নাও ইটস ম্যাই টার্ন!’

বলেই আস্তে করে ধ্রুব তার বধূর গায়ের শাড়ির আঁচল ফেলে দিল! লজ্জায় দু-চোখ বন্ধ করে নিলো অদিতি।

বাকিটা দুপুর কাটল; ভীষণ আদরে-সোহাগে! বখাটে ধ্রুব ইয়ামিন; ধীরে ধীরে নিজের একজীবনে জমিয়ে রাখা আদর-টুকু ঢেলে দিয়ে লাগলো নিজের স্ত্রীর প্রতি! আর গ্রামের ছাপোষা মেয়ে অদিতি হায়াতও তৃষ্ণার্তের ন্যায় বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বামীর ওটুকু আদর শুষে নিতে লাগলো নিজের মধ্যে অবলীলায়, অথচ লাজে রাঙা হয়ে!

#চলবে

#আমার_প্রেমিক_ধ্রুব —৪০
#অবন্তিকা_তৃপ্তি

ধ্রুব অদিতির দিকে চেয়ে চোখ টিপে, দুষ্টু ইঙ্গিত দিয়ে বলল—‘নাও ইয়েস ম্যাই টার্ন!’

বলেই আস্তে করে ধ্রুব তার বধূর গায়ের শাড়ির আঁচল ফেলে দিল! লজ্জায় দু-চোখ বন্ধ করে নিলো অদিতি।

বাকিটা দুপুর কাটল; ভীষণ আদরে-সোহাগে! বখাটে ধ্রুব ইয়ামিন; ধীরে ধীরে নিজের একজীবনে জমিয়ে রাখা আদর-টুকু ঢেলে দিয়ে লাগলো নিজের স্ত্রীর প্রতি! আর গ্রামের ছাপোষা মেয়ে অদিতি হায়াতও তৃষ্ণার্তের ন্যায় বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বামীর ওটুকু আদর শুষে নিতে লাগলো নিজের মধ্যে অবলীলায়, অথচ লাজে রাঙা হয়ে!

দুপুর গড়িয়ে যখন সন্ধ‍্যা ছেয়েছে আকাশ জুড়ে, ধ্রুব-অদিতির সুখ নিদ্রা তখন ভাঙল! অদিতি তখনও ধ্রুবর বাম হাতের উপর মাথা রেখে ডান হাতটা ওর নরম-কোমল দুহাতে চেপে গভীর ঘুমে মগ্ন।
ধ্রুব তখন ধীরে ধীরে চোখ খোলে! চোখ-দুটোতে হাত দিতে যাবে বিরক্ত ভঙ্গিতে, অথচ হাত বাধায় পেল। মাথাটা এলিয়ে পাশে তাকালে দেখে এই তামাম দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর একটা দৃশ্য!ধ্রুব ইয়ামিনের পাশে তার বহু আকাঙ্ক্ষিত; শখের বধূ শুয়ে আছে। কাঁথা দিয়ে মসৃণ-উন্মুক্ত শরীর ঢেকে রাখা অদিতির দিকে নজর পরলো। পরপর ধ্রুবর মনে পড়লো; আজ দুপুরের একের পর এক দৃশ্য!

অদিতির ড্যান্স, ওর কাঁপা হাতের ছোয়া; শেষ সময়ে লাজুক অদিতির অস্থির কান্না, আর ধ্রুবর প্রতি অদিতির এক আকাশ আবেগ! পুরোটাসময় যেন স্বপ্নের মতো ছিল ধ্রুবর কাছে। ধ্রুব কখনও ভাবেনি; এক জীবনেও ওরও নিজেরও কেউ হবে। কেউ ওকে ভালোবাসবে; ও যেমন তেমনভাবেই ওকে গ্রহণ করবে, যত্ন নিবে। হয়তো সারা জীবনে অভাগার ন্যায় বাউন্ডুলে হয়ে ঘুরে বেড়ানো ধ্রুবর প্রতি খোদার দয়া হয়েছিল কখনো, তাই না চেয়েও তোফাজ্জল হায়াতের এই ভদ্র কন্যা এখন ওর ঘরে ওর বিছানায় শুয়ে আছে; ওর-ই আদর-ভালোবাসার চিহ্ন বহন করে।

এসব কথা ভেবেই হঠাৎ লাজুক ভঙ্গিতে হেসে ফেলল ধ্রুব! এই একটা দুপুর বা রাত যাই বলুক, এই একটা সময়ের জন্যে ধ্রুব কত জনম অপেক্ষা করেছে, কত সাধনা করেছে; কত রাত ছটফট করেছে—- এটা কেবল ওই জানে। এই ঘুমিয়ে থাকা অদিতির ক্লান্তিতে ভেজা এই মুখ-টুকু ওর কত আগ্রহের বিষয়, ওর কত সাধনার ফল— এটা বোধহয় একমাত্রই ধ্রুব ছড়া কেউ জানেনা, কেউ বুঝবেও না কখনো!

ধ্রুব আলতো করে মাথাটা বালিশে এলিয়ে অদিতির দিকে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে তাকাল! তারপর তাকাল অদিতির দুহাতের ফাকে চেপে রাখা ওর হাতের দিকে। হাসলো আবারও ধ্রুব! কতটা ভালো লাগছে এই মুহূর্তে ওর সেটা মুখে বা শব্দে কিছুতেই প্রকাশ করা কখনোই সম্ভব নয় ধ্রুবর জন্যে। এই জন্যে পুরুষ হওয়া লাগে; প্রেমিক পুরুষ!

অদিতির চুল-গুলো এলোমেলো হয়ে মুখে ছড়িয়ে রয়েছে। অবাধ্য ও দুষ্টু চুলগুলোকে বাধ্য করতে, ধ্রুব আলগোছে অদিতির হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো! তারপর কিছুটা এগিয়ে এসে চুল গুছিয়ে সরিয়ে দিল বড় আদরে-,যত্নে! সঙ্গে কণ্ঠে অসম্ভব মায়া নিয়ে ডাকলোও ধ্রুব———‘অদিতি; সোনা? উঠো? সন্ধ্যা হচ্ছে!’

অদিতির ঘুমটা বোধহয় তখনই ছুটল! ও পিটপিট করে চোখ খুলে তাকাল! ধ্রুব ওর ঘুমন্ত চোখ-দুটোর দিকে চেয়ে নিজেও সামান্য ফিরতি হাসল! অদিতি ঘুম ভেঙে শুধু একদৃষ্টিতে চেয়ে রইল ধ্রুবর ওই মারাত্মক ঠোঁট এলিয়ে হাসার দিকে! ধ্রুব মুখ ঝুকিয়ে ওর ঠোঁটের কোণে আরও একবার চুমু খেলো; অদিতি লজ্জায় চোখ বুজে ফেলল! ধ্রুব মৃদু হেসে ডাকল——-‘উঠে যাও? আরো ঘুমুতে ইচ্ছে করছে?’

অদিতি চোখ খুলে দুদিকে মাথা নাড়ল; অর্থাৎ না! কিন্তু মুখে অদিতি কিছুই বলল না। শুধু আলগোছে ধ্রুবর হাতদুটো টেনে মেলে দিয়ে; ওকে জড়িয়ে ধরে ধ্রুবর নগ্ন বুকে নাক ঘসলো! ধ্রুবও ওর হাতের ম্যাসালের মধ্যে আগলে নিলো অদিতির নগ্ন পিঠ; সঙ্গে অপর হাতে কাথাটা ভালো করে মেলে দিল অদিতির পিঠের উপর।

তারপর কেমন দুষ্টু ইঙ্গিতে বলল———‘আমাদের তো অদিতি; বাসর রাত নাহয়ে বাসর দুপুর হয়ে গেল! ইউনিক কাপলের ইউনিক বাসর, হা?’

বলে হেসে ফেলল ধ্রুব! অদিতি লজ্জায় শেষ! ও অস্থির লজ্জায়; পরপর ধ্রুবর বুক থেকে মাথা তুলে সরে গেল বালিশের উপর! কাথা দুহাতে বুকের উপর চেপে ধরে আশেপাশে খুঁজতে লাগলো কিছু। ধ্রুব হয়তবা সেটা বুঝল। ও ওভাবেই দেখতে লাগল; অপেক্ষা করতে লাগল অদিতি মুখে কিছু বলুক।

অদিতি আশেপাশে কিছু না পেয়ে; ধ্রুবর দিকে অসহায় চোখে তাকাল। ধ্রুব ভ্রু উচালো তখনই———‘কি? কিছু বলবে?’

অদিতি লজ্জায় চোখ নামিয়ে অস্ফুটে বলার চেষ্টা করল——-‘আ-আমার শা-শাড়িটা দিন প্লিজ!’

ধ্রুব তখনও বাম ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে রয়েছে। ধ্রুবর হুডেড চোখের ওমন দুষ্টু ইঙ্গিতে একপ্রকার মুষড়ে গেল অদিতি। কাথাটা দিয়ে চোখ-মুখ ভালো করে ঢেকে ল্যাপ্টে গেল একদম বিছানার সঙ্গে। ধ্রুব মৃদু হেসে কাঁথার উপরেই অদিতির কপালে চুমু খেলো। অদিতি চোখ বুজে হাসফাস করে উঠল যেমন। ধ্রুব কোনোরকম পাশে থাকা একটা টাওয়াল ঝটপট কোমরের নিচের অংশে প্যাচিয়ে নিয়ে বিছানা থেকে নেমে, কাবার্ড থেকে নতুন সুতির শাড়ি বের করে বিছানার উপর রাখল। নিজেও ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বলল———-‘শাওয়ার নিতে যাচ্ছি। কাঁথার ফাকে আর লুকিয়ে দেখতে হবে না আমাকে। উঠে পড়ো।’

অদিতি চোরের মতো ধরা পরে জিহ্বা কামড়ে ধরে চোখ খিঁচে ফেলল! ইশ, সে বুঝে গেছে! বাথরুমের দরজা আটকানোর শব্দ কানে আসলো, অদিতি কাঁথা সরালো মাথার উপর থেকে। মৃদু হেসে বিছানার উপর ধ্রুবর বের করে দেওয়া রাখা শাড়ির দিকে তাকাল; শাড়িটার রং গাঢ় লাল!

অদিতি আশেপাশে পুরনো শাড়ি-টাও আবার খুঁজলো;পেল না। তাই কাঁথাটা গায়ে প্যাচিয়ে নিয়েছে যখন, ধ্রুব তখন দরজা খুলে বেরিয়েছে। গায়ে স্রেফ টাওয়াল জোরানো। অদিতি ওকে দেখেই আঁতকে উঠে দু কদম সরে ফাঁকা ঢোক গিলে ধ্রুবর দিকে তাকাল। ধ্রুব রীতিমত তাজ্জব ভঙ্গিতে হা করে কাঁথায় আপাদমস্তক প্যাচানো অদিতিকে দেখছে। হতবম্ব গলায় ধ্রুব বলল——-‘এ কি হালত তোমার? কাঁথা প্যাচিয়েছো কেন?’

অদিতি ফাঁকা ঢোক গিলে আবারও। ধ্রুবর সামনে ওভাবে দাড়িয়ে আছে? খোদা, মাটি ফাঁক হোক, ও ভূগর্ভে আশ্রয় নিক! অদিতি মাথাটা নামিয়ে নিলো; জবাবে অস্ফুটে বলল———‘পু-পুরনো শাড়ি পাইনি। নতুন শাড়ি নষ্ট করব?’

ধ্রুব তখনও অবাক; বলল——‘পুরোনোটা আমি বাথরুমে ভিজিয়ে রেখে এসেছি। বুয়া ধুয়ে দিবে।’

অদিতি কম্বল প্যাচিয়ে ওভাবেই হাসফাস ভঙ্গিতে বলল——‘আপনি ওদিকে ফিরুন প্লিজ। আমি বাথরুমে যাব।’

ধ্রুব শুনে না যেমন।ততক্ষণে ওর অবাক হওয়া চোখে ধীরে ধীরে দুষ্টুমি খেলে গেল। হুডেড চোখ দুটো আরো ছোট করে; ভ্রু কুঁচকে ধীর পায়ে এগুচ্ছে, এক পা; দু পা; তিন পা করে!

ধ্রুব যত এগুচ্ছে; অদিতির গলা ততই শুকাচ্ছে। আজকের এমন একটা দুপুরের পরও অদিতির লজ্জা কমে ভয় বেড়ে গেছে কেন যেন। অদিতি মাথাটা নামিয়ে রেখেছে; চোখ তখনও ওর ধ্রুবর এগুতে থাকা পায়ের দিকে, ও নিজেও কম্পিত ভঙ্গিতে পিছিয়ে গেল দু কদম! তারপরেই পিঠের সঙ্গে পেল দেয়ালের সংঘর্ষ; ঢোক গিলে থেমে যেতে হলো অদিতিকে।

ধ্রুব ধীর পায়ে এগিয়ে অদিতির সামনে এসে দাঁড়াল। যেহেতু ধ্রুব অদিতির থেকে অনেক লম্বা; তাই দেখা যায় যখনই অদিতির সঙ্গে ধ্রুব কথা বলে ওকে ঝুঁকতে হয়। এবারেও তাই হলো। ধ্রুব ঝুঁকে মুখটা অদিতির মুখের দিকে নিতেই; জেন্টস শ্যাম্পুর কড়া সুঘ্রাণ নাকে এসে লাগলো অদিতি। ভেসে গেল ও! ধ্রুব মুখটা বাড়িয়ে অদিতির নরম-লাল টুকটুকে গালে চুমু খেতেই; দুহাতে কাঁথা খামচে ধরে চোখ বুজলো অদিতি; অস্ফুটে বলার চেষ্টাও করল কিছুর————-‘আ-আজ আর না।’

ধ্রুব ভ্রু কুচকালো, বুঝল না অদিতির কথার অর্থ শুরুতে। গাল থেকে ঠোঁট সরিয়ে ওভাবেই ভ্রু কুঁচকে অদিতির দিকে চেয়ে বললো————‘কি আর না?’

অদিতি কিছু বলার আগেই কিছু একটা ভেবে আচমকা হেসে ফেলল ধ্রুব! হাসতে হাসতে বলল————‘এটুকুটেই কাহিল? বাকি রাত তো এখনও পরেই আছে।’

ধ্রুব কথাটা বলামাত্রই অদিতি ভয়ার্ত চোখে তাকাল! ধ্রুব হাসল ওই তাকানো দেখে! মৃদু হেসে অদিতিকে কাঁথাসহ পাজকোলে তুলে নিতে নিতে বলল——-‘ডোন্ট ওয়ারি! যেটুকু তুমি হ্যান্ডেল করতে পারবে; ওইটুকুতেই আমিও পুষিয়ে নেব। স্বামী তোমার, কোনো পশু নই।’

অদিতি মুগ্ধ চোখে ধ্রুবর দিকে চেয়ে রইলো! এবার বোধহয় আরো একবার অদিতি এই বখাটে; যে এখন বখাটে নয় তার প্রেমে একদম ক্ষতবিক্ষত করে ফেলল নিজের একটুখানি হৃদয়! ধ্রুব ওকে ওভাবেই কোলে নিয়ে বাথরুমে রেখে আসলো। যেতে যেতে বলল——-‘শাওয়ার নিয়ে আসো! আমি বাইরে আছি।’

ধ্রুব যাওয়ার আগে কাঁথায় প্যাকেট করা অদিতির কপালে চুমু খেতেও ভুললো না।
______________________
রিসিপশনের দিন এগিয়ে আসছে। আগামীকাল ধ্রুব-অদিতির রিসিপশন! ধ্রুব চেয়েছিলো কদিন পর রিসিপশনের ডেট ফেলত; কারণ সৌরভ ইয়ামিন অসুস্থ! কিন্তু সৌরভের এক কথা—- উনি তোফাজ্জলকে কথা দিয়েছেন। যা বলেছেন, তাই হবে। আজ অব্দি তার কথার নড়চড় হয়নি, তাহলে আজকেও হবে না। তাছাড়া উনি অসুস্থ; পঙ্গু হননি এখনো।

ইয়ামিন বাড়িতে বিশাল তোড়জোড় চলছে। ধ্রুবর রুমে অদিতি মেরুন রঙের একটা ভারি লেহেঙ্গা পরে আয়নার সামনে বসে আছে। ওকে সাজিয়ে দিচ্ছে বাহির থেকে আনা কিছু মেকআপ আর্টিস্ট! ধ্রুব যে কতবার এই রুমে আসতে চেয়েছে ইনিয়ে-বিনিয়ে বলার বাইরে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ওকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অগ‍্যতা ধ্রুব অন্য রুমে গিয়ে রেডি হয়েছে।

সাজানো শেষ হতে হতে লেগে গেল প্রায় তিন-তিনটে ঘণ্টা; সঙ্গে ওদিকে ধ্রুব দিল নিজের ধৈর্য্যের সর্বোচ্চ পরীক্ষা। এতটা ঘণ্টা ধ্রুব রীতিমত মুখটা তেতো করেই রেখেছিল। মেকআপ আর্টিস্ট সাজানো শেষে আয়নায় অদিতির দিকে তাকাল! অদিতি নিজেও নিজের দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। কখনো ওমন ভারি সাজ সাজে নি ও। তাই বোধহয় আজ ওকে এই সাজে মারাত্মক দেখাচ্ছে। অদিতি আয়নায় তাকিয়ে গলার চোকার ঠিকঠাক করতে করতে মৃদু হাসল। একজন মেকআপ আর্টিস্ট এবার কিছুটা দোনামোনা করে বলল———‘ম্যাম আপনার গলায় লাভ বাইট দেখা যাচ্ছিল।আমরা এখন কালার কারেক্ট করে ফাউন্ডেশন লাগিয়ে দিয়েছি। একটু খেয়াল রাখবেন প্রোগ্রামে।’

অদিতি চমকে উঠে আয়নায় নিজের গলার দিকে তাকাল। এতক্ষণে গলার ওই চিহ্নের দিকে ভালো করে খেয়াল করা হলো বোধহয়! কিন্তু এখনও তো বোঝা যাচ্ছে ওই দাগ-টুকু, বিবাহিত যে কেউ ধরে ফেলবে। এই ধ্রুব কি আদৌ পাগল? এভাবে কেউ লাভ টর্চার করে? যখনও কাছে আসে সে; অদিতির গলা আর গলা থাকে না। রীতিমত ধ্রুবর অত্যাচারে জর্জরিত হয় ওই স্থান-টুকু! কতবার ধ্রুবকে বলেছে ও; একটু বুঝেশুনে কিস করতে। অথচ ধ্রুব; তার ওই এক কথা—— সে বুঝেই কিস করে, অদিতির স্কিনে প্রবলেম তাই দাগ বসে যায়। আজকে এত মেহমান আসবে; ওরা কেউ দেখে নিলে? অদিতির মুখটা শুকিয়ে গেল একদম।

সাজানো শেষ হওয়ার আগে আবারও দরজায় টোকা এলো;দরজার নব ঘুরিয়ে ধ্রুব ডাকছে———‘অদিতি; শেষ হলো তোমার?’

অদিতি হতাশ চোখে তাকালো আর্টিস্টের দিকে; ওরাও এবার বিরক্ত সম্ভবত! অদিতির ওদের বিরক্ত হওয়া মুখের দিকে চেয়ে নিচু গলায় বলল———‘আপনাদের শেষ হলে; দরজা খুলে দেই?’

মেকআপ আর্টিস্ট এবার হেসে ফেললেন, বললেন ———-‘আপনার হাজবেন্ড আসলেই আপনার উপর ফিদা। তিন ঘণ্টার সাজে তিনশোবার এসে ডেকে গেছেন।’

অদিতি লজ্জায়; ইতস্তত ভঙ্গিতে হাসল! এই লোককে নিয়ে অদিতি আর পারছেই না, এটা ওদের কিভাবে বলবে। মেকআপ আর্টিস্টরা নিজেদের ব্যাগপত্র গুছিয়ে দরজা খুলে দিল। দরজার ওপাশে ধ্রুব দাড়িয়ে আছে। কালো রঙের স‍্যুট পরা; ওল ব্ল্যাক ম্যান!

মেকআপ আর্টিস্টদের দরজার সামনে দেখে ধ্রুব মাথা নিচু করে সরে দাঁড়াল; জায়গা করে দিল ওদের যাওয়ার। ওদিকে মেকআপ আর্টিস্টরা ধ্রুবকেই দেখে যাচ্ছে হা করে। এই মেয়ের হাজবেন্ডটা তো আসলেই জোস; এত্ত হ্যান্ডসাম। এখন তো ওদের মেয়ের ওই গলার লাভ বাইটের উপর হিংসা হচ্ছে। কেন যে সবসময়ই সুন্দর ছেলেগুলোই হাত থেকে ফস্কে যায় কে জানে।

মেকআপ আর্টিস্টরা চলে যেতেই; ধ্রুব দরজা খুলে ঢুকলো ভেতরে। অদিতি আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে। ধ্রুবকে দেখে ও ঘোমটা ঠিক করে উঠে দাঁড়াল! ওদিকে ধ্রুব তো রীতিমত হা! জীবনের প্রথম ও অদিতিকে ওতো ভারি মেকআপে দেখছে। বিয়ের দিনও অদিতি ভীষণ সিম্পল সেজেছে। আজ তৃণা একপ্রকার যুদ্ধ করে বাড়িতে মেকআপ আর্টিস্ট ডেকেছেন। ধ্রুব শুরুতে রাজি ছিলো না। কিন্তু এখন অদিতিকে দেখে ওর চোখের পলক-টুকুই পড়ছে না। ধ্রুব আস্তে করে পেছন ঘুরে দরজা লক করে দিল। তারপর আবারও ঘুরে তাকাল অদিতির দিকে। দরজা লক করার শব্দে হাসফাস করে উঠল যেন অদিতি। মাথাটা নামিয়ে নিলো লাজুক ভঙ্গিতে।

ধ্রুব ধীর পায়ে এগুলো; আবারও সময় নিয়ে এক পা, দু পা করে করে; শব্দ হচ্ছে জুতোর! অদিতি আবারও ধ্রুবর পায়ের দিকে চেয়ে রয়েছে; ধ্রুবর হাঁটার ভঙ্গি দেখে অদিতির নিজের হঠাৎ অস্থির লাগছে; হৃদপিণ্ড লাফাচ্ছে।

ধ্রুব সামনে এসেই এক মুহূর্ত দেরি না করে, সোজা লেহেঙ্গার ফাকে আঙুল গলিয়ে অদিতির কোমর টেনে একদম নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো তার সাজে সজ্জিত বধুয়াকে! অদিতি চমকে উঠে ধ্রুবর বুকে হাত রাখলো। ধ্রুবর বুকের উপর লেপ্টে যাওয়া মেহেদী রাঙা হাতটা ধ্রুব মাথা নিচু করে দেখল তুষ্ট হয়ে। তারপর মাথাটা তুলল; অদিতি তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে লাজুক চোখে!

ধ্রুব মাথাটা ঝুঁকে বধূর কপালে চুমু খেলো বহু ধৈর্য‍্য নিয়ে। তারপর বধূর কানের লতিতে চুমু খেয়ে বলল————‘লুকিং লাইক অ্যা এঞ্জেল! ধ্রুব’স এঞ্জেল!’

কানের কাছে ওমন শিরশিরানি অনুভূতিতে শিউর উঠে ধ্রুবর বুকের কোট খামচে ধরল অদিতি, বলবে না বলবে না করেও অস্ফুটে বলে ফেললো——-‘আ-আপনাকেও কালো স‍্যুটে ভালো দেখাচ্ছে।’

ধ্রুব অবাক, কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে নিজের দিকে চেয়ে দেখে আবারও জিজ্ঞেস করলো——‘আসলেই ভালো লাগছে আমাকে? স‍্যুট পড়া হয়নি কখনো আমার। ইমন বললো, ভালো ড্রেসআপ করলে বৌরা নাকি পটে; অ্যাই মিন ইমপ্রেস হয়। তাই ট্রাই করলাম।’

অদিতি হেসে ফেলল ধ্রুবর ওমন বাঁচন-ভঙ্গি দেখে। ধ্রুবর কোট হাত বাড়িয়ে ঠিকঠাক করে দিয়ে বলল———‘হু, মানুষ লাগছে এখন।’

ধ্রুব ভ্রু কুচকালো———‘হেই, মানুষ লাগত মানে? আগে কি লাগতো?’

অদিতি হেসে টিটকারি করে বলল——-‘বখাটে!’

‘হোয়াট ননসেন্স, আমি মোটেও বখাটে ছিলাম না কোনদিন। এ জীবনে কাউকে র্যাগ দেয়নি; ইফটিজিংও করিনি। বখাটে মানে বুঝো?’———ধ্রুব ইয়ামিন নিজের ইমেজ ঠিক রাখতে বৌর সামনে সাফাই গাইছে যেমন।

অদিতি জবাব বলল———‘মারামারি তো করতেন। মিথ‍্যা বলবেন না, আমি দেখেছি।’

ধ্রুব হার মানে না, ও উত্তরে বললো———‘আমার কাজে পা দিলে, মারব না? আর এগুলোকে মারামারি বলেন। মেডিসিন দেওয়া বলে।’

অদিতি হেসে কুটিকুটি হয়ে গেল———‘আপনি আর আপনার লজিক।’’

ধ্রুব চুপ করে অদিতির হাসির দিকে চেয়ে রইলো! অদিতি হাসছে তখনও! ধ্রুবর কি হলো কে জানে। ভেতর ভেতর হঠাৎ একটা স্বামী-স্বামী অনুভূতি উতলে উঠল যেন। নিজের বধূর নেশায় আবারও পড়লো, বরাবরের মতোই। ঘোরে পরে, আলগোছে অদিতির গলার দিকে মুখ বাড়িয়ে আচমকা নেক কিস করে বসলো। হাসি থামিয়ে চমকে উঠে অদিতি! চোখ বড়বড় করে তাকাতেই, অনুভব করে নিজের গলায় অপর মানুষের দাঁতের স্পর্শ, যাকে অদিতি কবুল বলেছে; দিয়েছে এই অধিকার-টুকুও অবলীলায়!

আবারও ওই অসহ্য; সুখকর অনুভূতি খেলে গেল পুরো দেহ জুড়ে! হরমোনদের জ্বালাতনে দুজনেই অতিষ্ট! ধ্রুব ঘনিষ্টতা আরও বাড়াতেই, অদিতির মনে পরে গেল; মেকআপ আর্টিস্টের কথা। চমকে উঠে চোখ খুলে দুহাতে ঠেলে দিল ধ্রুবকে——-‘ধ্রুব এ-এখন না।’

বারবার ওভাবে ঠেলছিল অদিতি, ধ্রুব এক সময় বিরক্ত হয়ে সরে গিয়ে বলল———‘কি? ঠেলছো কেন? কিস করছি জাস্ট! খেয়ে ফেলছি তোমাকে?’

অদিতি লজ্জায় কোথায় চোখ দিবে, কোথায় চোখ মেলাবে তখন ঠাহর করতে পারছে না।ও অস্ফুটে চোখ এলোমেলো ঘুরাতে ঘুরাতে বলল———-‘ও-ওরা ম-মানা করেছে।’

‘কে বলেছে? গড আমার বৌকে আমি কিস করবো না? কি ফালতু লজিক এসব?’—- ধ্রুব চুড়ান্ত বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করল! ওর চোখে-মুখে তাকানো যাচ্ছে না। নাকের পাটা লাল হয়ে পিটপিট করছে।

অদিতি কি বলবে? ও হাতের ইশারায় তখন গলার একপাশে ফাউন্ডেশনের স্তূপ দেখিয়ে বলল———‘ওরা আপনার লাভ বাইটের উপর ফাউন্ডেশন লাগিয়ে দিয়েছে। আরেকবার এমন লাল হলে,সবাই কি ভাববে দেখে?’
টিভি
ধ্রুব চোখ ছোটছোট করে অদিতির গলার ওই পাশের দিকে চেয়ে রইল। তারপর হতাশ গলায় মুখ অন্যদিকে সরিয়ে বিড়বিড় করল———-‘শান্তিমত কিসটাও করতে পারবো না নাকি এখন? এত সফ্ট স্কিন ক্যান?’

অদিতি লজ্জায় হাসফাস করে বললো——-‘এটা স্কিনের দোষ না।’

ধ্রুব বিরক্ত হয়ে বললো——-‘তো কিসের দোষ? আমি তো ক্যাসুয়ালি কিস করেছি। ডিড অ্যাই রাফ টু ইউ?’

অদিতি লম্বা শ্বাস ফেলল! এসব ব্যাপারে ধ্রুব যতবার ডিসকাস করে ওর সাথে; লজ্জায় একপ্রকাশ শ্বাস আটকে বসে থাকে অদিতি। অদিতি কিছু বলবে তার আগেই দরজায় টোকা এলো; ডাকছে ওপাশ থেকে ওদেরকে।

ধ্রুব একবার দরজার দিকে চেয়ে আবারও অদিতির দিকে তাকাল। কিছু একটা মনে পরে গেল ওর; তাই আগেভাগেই বলে ফেলল——-‘লিসেন অদিতি। মেইবি রিসিপশন পর বউদের ওদের বাবার বাড়ি যাওয়া লাগে। কিন্তু আমি আগেই ক্লিয়ার করি; আমি কিন্তু তোমাকে পারমিশন দেইনি। সো ইউ আর স্টেইং উইদ মি; ইন ম্যাই হাউজ!’

#চলবে