#আমার_বধু!
#আফসানা_ইমরোজ_নুহা।
#পর্ব_০২
তারপর আর কেউ কোনো কথা বললো না। বলেও অবশ্য লাভ হবে না। তারা একে অন্যের মুখ দেখে চুপ হয়ে গেলেন। একমাত্র ছেলে হওয়াতে মা বাবাও দ্বিমত করলেন না। ছেলে এক নাম্বারের ঘাড়ত্যরা, জেদী, একরোখা। ঘাড়ের উপরের একটা রগ তার সবসময় বাঁকা থাকে। কথা তো শোনেই না জীবনে। ঘরে ছেলের কথাই শেষ কথা। বিয়ের জন্য মা মাথা খেয়ে ফেলছেন বহুদিন ধরে। রাজি হচ্ছিল না। যদিও শেষমেষ রাজি হয়েছে কিন্তু মেয়ে দেখতে যাবে না। কত কসরত করে তাকে এখানে আনা হয়েছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তন্নী কে আবারও বসানো হলো। তন্নী ঘোমটার নিচেই শ্বাস ফেললো বড় করে। নাকের শ্বাসের তোপে ঘোমটার কাপড় নড়ে উঠলো। ছেলের মামা সেটা সুক্ষ্ম চোখে পরোখ করলেন। মেয়ে যে কিছুটা বোকা তা তিনি আবিষ্কার করে ফেলেছেন। বলা বাহুল্য, ভদ্রলোক একসময় বেশ মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বললেন,
“ আরবি কিছু পারো? ”
নুরজাহান জবাব দিলেন,
“ পারে। আমার নাতনী সব পারে। ”
পাত্র হিসেবে বসে থাকা রোবট ছেলেটা ফের নুরজাহানের দিকে তাকালো। আগের মতোই খুরখার, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। নুরজাহান পুনরায় থতমত খেলেন। ঠোঁটের ভেতরে দাঁত গুলো কিড়মিড় করলেন। দুধের বয়সী ছেলে ওনার দিকে তাকাচ্ছে কেনো এভাবে? বিয়ে তো এখনি হয় নি! হলে কি করবে? উনি দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। রোজিনা বেগম পুনরায় মুখ খোলার আগেই ছেলেটা বললো,
“ আমি ওর সাথে আলাদা কথা বলতে চাই! ”
এপাশে শিলা চমকে তাকালো। কোথাকার কোন ছেলেকে নিয়ে এসেছে কে জানে? ছেলেমেয়ে আবার আলাদা কথা বলে কিভাবে? তাঁদের গাঁয়ে এসব কখনো হয় না। আদব কায়দা নেই নাকি? এটা আবার কোন পৃথিবীর নিয়ম? ওদের সবার কাছে কথাটা জমিনে দাঁড়িয়ে থেকে আকাশ ধরতে চাওয়ার মতো ঠেকলো। নুরজাহান ত্যাক্ত হয়ে বললেন,
“ কিসের কথাবার্তা? আমাদের এখানে কথাবার্তা হয় না! ”
“ আমাদের এখানে হয়! ”
তন্নী কাঁধের উপর রাখা দাদীর হাতটা খামচে ধরলো। নুরজাহান ঝুঁকে এলেন। তারপর আবারও তন্নীর ভয় দেখে বললেন,
“ আমার নাতনীর কুনু সমস্যা নাই। ”
“ সমস্যা থাকলেও সমস্যা নেই। আমার কাছে সমস্যার কোনো সমাধান নেই। ”
এই ছেলের সাথে কথায় পেরে ওঠা অসম্ভব। নুরজাহান বুঝতে পেরেছেন এতটুকু। তন্নী তখন কাঁপছে। পা গুলো থরথর করছে। সে ফিসফিস করে আওড়ালো,
“ তোমাদের আগেই বলেছিলাম। ও দাদী! এই ছেলের কাছে আমি বিয়ে বসবো না। মাগো মা! কেমনে কথা কয়! ”
নুরজাহান আশ্বাস দিলেন,
“ থাক ডরাইছ না। আমিও তোর সাথে যামু! ”
তন্নী আর কথা বললো না। তার গলাটা কাঁপছে। একা একা কি বলবে? ওদেরকে পাঠানো হলো তন্নীর ঘরে। নুরজাহানের সাথে তন্নী হাঁটছে। পিছু পিছু পাত্র ছেলেটা। ঘরে গিয়ে দাঁড়ানোর পর ছেলেটা বললো,
“ আপনি যাবেন না? ”
নুরজাহান গো ধরলেন। এতক্ষণের জেদ বের করে বললেন,
“ আমি গেলে আমার নাতী ভয় পাইবো! ”
“ বিয়ের পরেও রাতে নাতীর সাথে থাকবেন? ”
কি লাগাম ছাড়া মুখ! বাবা গো বাবা! তিনি ফুঁসে উঠলেন একপ্রকার,
“ ওই পোলা! তোমারে তহন থাইকা দেখতাছি খালি! এত ভাব কিসের? ”
“ একটু বাইরে গেলে খুশি হতাম। ”
নুরজাহান আরেকবার পরাজিত হয়ে চোখ রাঙালেন। ছেলেটা ভয় পেল না মোটেই। বুড়ি ক্ষনে ক্ষনে আশ্চর্য হচ্ছে। এতটাই আশ্চর্য যে ওনার এখন ছেলেটার মাথা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। তিনি তন্নীর কানে কানে বললেন, “ আমি দরজার পেছনেই আছি। ভয় পাস না মা*গী! সাহস রাখ। নাইলে জামাই টাইট দিতে পারবি না। ”
তন্নী থুরি ভয় পায়? তার একটু অস্বাভাবিক লাগছে। অস্বস্তি হচ্ছে। কিন্তু অস্বস্তি কি জিনিস সেটাই সে জানে না এখনো। তার উল্টাপাল্টা লাগছে আর কি সবটা! আর নাহলে কিচ্ছু না। ছেলেটা বয়সে একটু বড় বলে। নয়তো ওর সমবয়সী থাকলে এতক্ষনে সে নিজেই আলাপ জুড়ে দিত। মুখ বন্ধ করে থাকা যায়? এর থেকে কষ্টের কাজ পৃথিবীতে আছে? ছেলেটা বিছানায় বসলো। বসলো তন্নী নিজেও। ঘোমটার কারনে তার মুখ দেখা যাচ্ছে না। এটা একটা বিরাট সুবিধা ওর জন্য। বেশ মজার খেলা তো! মুখ দেখছে না যেহেতু তাই সে ঘোমটার নিচে সব করতে পারবে। তন্নী একটু হেসে নিল দাঁত বের করে। তারপর মুখ ভেঙচি কাটলো। কি আনন্দ। ঘোমটা দিয়ে বসে থাকলে এত মজা? ও তো জানতই না। তন্নী হাতটাও ঘোমটার নিচে নিল। তারমধ্যেই তার পাশে বসে থাকা লোকটা জিজ্ঞেস করলো,
“ তোমার নাম কি? ”
তন্নী ভয়ে কেঁপে উঠলো। রোবটের মতো গলার স্বর। কি গমগমে! সে নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসে বললো,
“ তন্নী আফরোজা! ”
তারপরের বাক্যটা এলো আদেশ সমেত, “ ঘোমটা সরাও! ”
তন্নী অবশ্য একবাক্যে ঘোমটা সরিয়ে দিল। এক ঝটকায় সেটা সরে গিয়ে সম্পুর্ন মাথা দৃশ্যমান হলো। কাজলে আবৃত দুটো চোখ সরাসরি আঁচড়ে পড়লো সামনে বসে থাকা অতি সুদর্শন পুরুষ টার দিকে। ইন করা স্কাই ব্লু রঙের শার্ট। গুটানো তার হাতা। কালো লোমে আবৃত হাত। বা হাতে একটা রোলাক্সের ঘড়ি। বসার কি দারুন ভঙ্গিমা! প্রথমবারের মতো দুজনের চোখাচোখি হলো। একইসাথে। তারপর? তারপর হুট করে জানালা বেয়ে বাতাস আসা শুরু হলো। আর, তন্নীর জগৎ এলোমেলো হয়ে এলো। বক্ষস্পন্দনে আন্দোলন শুরু হলো। শরীর ঘেমে উঠলো অজানা সুখে। বেটা তো দেখি জব্বর সুন্দর। মইনুল ইসলাম ঠিক বলেছেন। তন্নীর পছন্দ হয়েছে। সে হা করে কতক্ষন চেয়ে থাকলো। ছেলেটা গলায় শব্দ করলো। তন্নীর ধ্যান ভাঙলো। সে মুখ ঘুরিয়ে নিল। জানালার দিকে উঁকি দিয়ে দিঘীর জলে তাকালো। খুশিতে নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরলো। নাচতে মন চাইছে। কিন্তু এই মুহুর্তে সেটা সম্ভব না। তন্নী খেয়াল করেছে, লোকটার কপালে হাজারখানেক ভাঁজ। খুবই বিরক্ত সে। তাই শান্তই থাকলো। কিছু বললো না আবারও। ছেলেটাই বললো,
“ আমি তৃনয় সিদ্দিকী। ডু ইউ ওয়ান্ট টু নো এনিথিং এবাউট মি? ”
তন্নী ইংরেজি বোঝে। কিন্তু এটা বুঝতে পারলো না। বিদেশী বেটা এত ভালো ইংরেজিও জানে? সে বিরবির করলো, তৃনয়, তৃনয়। সুন্দর নামটা। ওর নামের সাথে মিলেছে। তন্নী আস্তে করে বললো,
“ আমি ততো ইংরেজি পারি না। মুখে বললে বুঝতে পারি না। পড়লে ধরতে পারি। ”
তৃনয় শুনলো। কিন্তু জবাব দিল না। উল্টো জিজ্ঞেস করলো,
“ তুমি কেঁদেছিলে? ”
তন্নী আর মাথায় ঘোমটা টানলো না। চিবুক নামিয়ে বললো,
“ হ্যাঁ! একটু! ”
নুরজাহান এপাশে বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। কখন কি বলে বসে কে জানে! ওনার কলিজাটা ধুকপুক করছে। তৃনয় পুনরায় জিজ্ঞেস করল,
“ কেনো? ”
“ পাত্রের বয়স শুনে। বয়সের এতো পার্থক্য বলে! ”
লোকটা বোকার মতো বললো, “ বয়স? আমি বুড়ো? ”
“ তা নয় তো কি? ”
তৃনয় রাগে দাঁতে দাঁত চাপলো। উচ্চারণ করলো কর্কশ কন্ঠে,
“ স্টুপিড। ”
তন্নী শুনেও উত্তর দিল না। এত তর্ক এখনই করা যাবে না। সময় হোক। ছেলেটা উঠে দাঁড়ালো। পকেটে হাত গুঁজে আরো কতক্ষন তাঁর দিকে ভ্রু কুঁচকেই তাকিয়ে রইলো। তন্নী তখন বেশ বিরক্ত। সে মনে মনে পণ করলো, বিয়ের পর একটা বেলন কিনবে। সেটা দিয়ে বেলে বেলে গুটানো কপাল সোজা করে দেবে। একটু সুন্দর, আর তন্নীর পছন্দ হয়ে গেছে বলে! নয়তো বিয়েটা সে নিজেই ক্যান্সেল করে দিত। প্রথম জন বলেই তন্নী মেনে নিল। অবশ্য ছেলেটা ভালো আছে। কি সুন্দর আলাদা দেখা করার বললো। নইলে তন্নী একবারে বিয়ে ছাড়া মুখটা দেখতেও পারত না। এখন থেকে বিয়ের আগ পর্যন্ত সে সারা পাড়া রটিয়ে বেড়াবে। তার জামাই সুন্দর। ভীষণ সুন্দর। মাথায় কালো, ঘন অনেকগুলো চুল। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। লম্বা, খাড়া নাক। কি ভীষণ কঠিন চিবুক। কপালের ভাঁজ টা জনাবের সৌন্দর্য্য আরো বাড়িয়েছে। সে আরো একবার খুশি হলো। চেহারায় একটা তিলও আছে।
তন্নী আর কথা খুঁজে পেল না। লোকটার চেহারাটা আরেকটু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে মন চাইছে। কিন্তু বেটা যেভাবে তাকিয়ে আছে তাতে তন্নী এমনিতেই মরে যাচ্ছে লজ্জায়। দেখবে কিভাবে? সে কথা খুঁজে না পেয়ে বললো,
“ লোকে বলে, আমি নাকি একটু পাগল। ”
তৃনয় আরো কতক্ষন তাকিয়ে থেকে তারপর ধীরে সুস্থে জবাব দিল, “ ঠিক করে নেব। ”
ওর পছন্দ হয়েছে। তারমানে বিয়ে এখানেই কনফার্ম। তৃনয় আর দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। সে এক পা পিছিয়ে গিয়ে মুখ ঘুরায়। সঙ্গে সঙ্গে তন্নী এদিকে তাকালো। মুখটা না দেখুক। পিঠটা তো দেখতে পারবে। লোকটার দেহ কি বিশাল। বাপরে! দরজার একটা কপাট বন্ধ। সেখানে কান পেতে দাঁড়িয়ে আছেন নুরজাহান। তৃনয় বুঝতে পারে বেশ। তাই সে আস্তে করেই এগোয়। পায়ের জুতোয় শব্দ হয় না। তারপর এগিয়ে গিয়ে ধপ করে দরজাটা মেলে দিতেই নুরজাহান চেঁচিয়ে উঠলেন,
“ ও মা গোওও! ”
তন্নী নিজেও চমকে উঠলো। সে নিচে তাকালো মেঝেতে পড়ে থাকা নুরজাহান কে দেখতে। নিশ্চয়ই হাড় ভেঙেছে। অথচ মেঝেতে কেউ নেই। তন্নী আরেকটু উপরে চোখ তুললো। উনি পড়ার আগেই খপ করে ধরেছে তৃনয়। বুড়ি বেশ ভারী। ফলে তৃনয়ের সাদা চামড়া ভেদ করে নীল রগ ফুলে উঠেছে। তন্নী আশ্চর্য হলো। এরা স্বামী-স্ত্রী নাকি? কি রোমান্টিক হিন্দি সিনেমার দৃশ্য! ওরে বাপরে! তারপর বিরবির করলো, “ কি শক্তি গো বাবা। ”
নুরজাহান নিজেও পড়ে গেছেন ভেবেছে। উনি পিটপিট করে চোখ মেললেন। কিছু একটা খামচে ধরেছেন। তৃনয়ের হাত। ওনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে। নুরজাহানের কাছে স্বামী সন্তান বাদে সবাই পরপুরুষ। তিনি নাক সিঁটকায় তুললেন। দ্বিগুণ জোরে চেঁচিয়ে উঠলেন,
“ ধুর যা, ধুর যা! মাঙ্গের নাতী ছাড় আমারে। মাইয়া দেখলেই ছুঁতে মন চায়? ”
তৃনয়, তন্নী হতভম্ব হলো। বুড়ি সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তন্নী মুখ ভেংচি কেটে বললো,
“ কি মাইয়াডো গো হে! যুবতী। বুড়া বয়সে যৌবন উতলে উঠছে। ”
তৃনয় সেটা শোনে নি। সে নিজের হাতটা দেখলো। রক্তের আভাস বের হয়েছে। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে নুরজাহানের দিকে তাকালো। বিদ্রুপের সহিত বললো,
“ তোমার শরীরে কিছু আছে নাকী? আমার শরীরের একটা পশমও দাঁড় হলো না। নিজেকে যুবতী ভাবো? ”
বুড়ি ফুঁসে উঠলেন, “ তুই আমারে তুমি কস কোন সাহসে? সম্মান দিয়া কথা কবি! ”
“ আমি টাকা দেই? তুমি একটু সম্মান কিনে আনো? ”
“ এ্যাই বাঙ্গীর পোলা! আমারে টাকার গরম দেহাস? ”
তন্নী দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে মুখটা চেপে ধরলো, “ তুমি আমার বিয়েটা আর হতে দেবে না। ”
তৃনয় বক্র হাসে। নুরজাহানের মুখ বরাবর ঝুঁকে আসে,
“ মাননীয় বুড়ি, একবার বিয়েটা হোক। প্রথম বাসর তোমার সাথেই করতে হবে দেখছি। ”
নুরজাহান হায় হায় করে উঠলেন,
“ ও মায়া মায়া গো। কি বেশরম পোলা গো। এই বিয়া হইবো না গো! নির্লজ্জ রে নির্লজ্জ। ”
তারপর তিনি চলে গেলেন। তৃনয় মাথা ঘুরিয়ে তন্নী কে দেখলো। রুপসী আছে। কিন্তু মাথার তার ছেঁড়া। এ কোন পাগল খানায় এসে পড়লো সে?
***
দেখাসাক্ষাৎ হওয়ার পর তন্নী কে পাত্রপক্ষ একহাজার এক টাকা দিয়ে গেছে। মহিলারা আলোচনা করছেন মেয়ে পছন্দ হয়েছে। তন্নীর বাবা মইনুল ইসলামের কিশোরগঞ্জে কয়েকটা কাপড়, ফার্মেসির দোকান আছে। ছেলেকে তিনি সেখানেই দেখেছিলেন। বেশ ভদ্র সভ্য দেখতে। ওনাদের পছন্দ হয়েছে বলেই দেখতে আসার তারিখ হয়েছিল। এখন তো আরো পরিষ্কার। ছেলে পক্ষেরও মেয়ে পছন্দ হয়েছে। শোনা গেল, ছেলের পছন্দ হয়েছে বেশি। তাই মা বাবার আপত্তি নেই। তন্নীর এক ফুফু থাকেন সেখানে। উনিও খোঁজ নিয়েছেন। ভালোই বেশ। দোতলা বাড়ি। ছেলেরা তিন চাচা। সবাই আলাদা আলাদা বাড়ি করেছে। তৃনয়ের বাবার বড়সড় ধানের কারবার। ছোট দুটি বোন। একটা এবারে ইন্টারে আরেকটা পড়ছে ক্লাস সেভেনে। বছর দেড়েক হলো, তৃনয় কলেজের টিচার হিসেবে যোগ দিয়েছে। বাবার ব্যবসাতেও হাত আছে তার। ফ্যামিলি সম্ভ্রান্ত, ভালো। এবারে এখান থেকে লোক যাওয়ার পর পাকা কথা হবে। বিয়ের তারিখ, দেনমোহর সব।
তন্নী শোনার পর থেকেই আকাশে উড়ছে। শিলাদের বাড়ি থেকে ধরে আরো যত বান্ধবী তার ছিল সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে, তার জামাই শিক্ষক। দেখতে হ্যান্ডসাম।
ওর পাগলামী দেখে নুরজাহান অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। তিনি শুধু বলছেন,
“ বেডা মাস্টার। উল্টাপাল্টা কাজ করলেই মাইরা রাখবে না তোকে। সাবধানে থাকবি। তোর কাছ থেকে আমারে কয়েকটা টাকা দে তো! ”
তন্নী মুখ ভেংচি কেটেছে, “ এ্যাঁ। এগুলো আমার বরের টাকা। টয়লেটের মলমুত্র চেনো? ওগুলো এনে হাতে ধরিয়ে দেব। ”
“ তুই যদি গু হাত দিয়ে ধরতে পারিস তাইলে আমি নিলে কি সমস্যা? ”
নুরজাহানের সাথে তন্নীর ঝগড়া আদোতে কখনো শেষ হয় না। নাতী দাদী সারাটাক্ষন সতীনের মতো লেগেই থাকে। হয়তো নুরজাহানের জন্যই বেশ বড়সড় কষ্ট অপেক্ষা করছে। নাতীকে ছাড়া উনি কিভাবে থাকবেন? এখান থেকে ওখানে যাওয়ার তারিখ ঠিক হয়েছে। খুব দ্রুতই তন্নী বিবাহিত হয়ে যাবে। তারপর জামাই নিয়ে বেড়াতে আসবে। তার কতদিনের শখ। জামাইকে গাঁয়ের সবগুলো ফসলের মাঠ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাবে। যেগুলো তন্নীর মনপ্রাণ মুগ্ধতায় লেপ্টে দেয়। যেগুলো দেখে তন্নী সারাদিন কাটিয়ে দিতে পারে।
চলবে…..!