#আমার_বধু!
#আফসানা_ইমরোজ_নুহা
#পর্ব_০৮
তন্নী সময় নিয়ে সাজগোজ করে তৈরি হলো। তার এত আনন্দ লাগছে যা বলার বাইরে। মনে হচ্ছে এক যুগ পর বাপের বাড়িতে যাচ্ছে সে। এত খারাপ লাগছে বাড়ির জন্য। সে একটা লাল শাড়ি পরে, চোখে কাজল দিল, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। কানে, হাতে গয়না। নতুন নাকফুলটায় তাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। কেমন বউ বউ রব শরীরে। তৃনয় নিচে গেছে। তন্নীর জন্যই বোধহয় অপেক্ষা করছে। আয়নায় তাকিয়ে থাকতে থাকতেই তৃনয় ঘরে এলো। তন্নীর কাল রাত থেকেই সরাসরি লোকটাকে দেখলে লজ্জা লাগছে। ভীষণ লজ্জা। সে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে ডানপাশে তাকালো। তৃনয় বিছানায় বসে ঘড়ি পড়ছে হাতে। ভুলে গিয়েছিল বোধহয়। সেও তখন তাকালো। তন্নী আরো একবার থতমত খায়। আগের মতই চাহনী চোখের। মুখটা পুরো প্যাঁচার মতো। ওর দিকে বেহায়ার মতো আরো কতক্ষন চেয়েই রইলো। তন্নী পুনরায় নুরজাহানের কথা স্মরণ করলো, ছেলেটার দৃষ্টি ভালো না। ওর দিকে কিভাবে যেনো একটা তাকায়। তন্নী শেষমেষ মাথায় ঘোমটা টানলো কপাল পর্যন্ত। ঘুরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,
“ কেমন লাগছে? ”
তৃনয় বিছানায় বহু কষ্টে বসে থেকে মতামত দিল,
“ সুন্দর লাগছে। নতুন বউয়ের মতো। ”
তন্নী আবারও মুখ ঘুরিয়ে হাসলো। তৃনয় টের পেল, এই তো ওর মরণ। এখানেই তো লুকিয়ে তার সর্বসমগ্র! দুজনে বের হওয়ার পর গাড়িতে বসলে নুরজাহান কল দিলেন। তৃনয় ওকে দিয়ে দিল ফোনটা। নুরজাহান জিজ্ঞেস করলেন,
“ তোরা আসবি কখন? ”
তন্নী উত্তর দিল,
“ আমরা গাড়িতে আছি। বেশিক্ষণ লাগবে না। ”
ওরা এলো ঠিকঠাক বিশ মিনিট পর। বাড়িতে হৈচৈ শুরু হলো। আসমা, মইনুল তৃনয়কে ঘরে তুললেন। তন্নী গিয়ে একে একে সবাইকে জড়িয়ে ধরলো। তার ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। সে কতক্ষন ঘুরে ঘুরে বাড়িটা দেখলো। দেয়ালগুলো ছুঁয়ে দিল। ওরা তন্নীর ভীষণ আপন। ছোট থেকে এই ইট পাথরের বাড়িটা তার অতীব পছন্দের ছিল। কত শত,কত সহস্র স্মৃতি জড়িয়ে। একদিনেই কি সব ভোলা যায়? যায় না। হাঁটতে হাঁটতে তন্নী টের পেল, বাড়ির মাটি টুকুর সংস্পর্শটা পর্যন্ত আলাদা। এমন মাটি কোথাও নেই। এমন মাটির অপুর্ব মিশেল গন্ধ পৃথিবীর কোথাও নেই। বিয়ের পর মেয়েরা কেবল প্রিয় মানুষ ছেড়ে যাওয়ার দুঃখে কাঁদে না। তাদের হাজারটা দুঃখের একটা হলো, পরিচিত জায়গা ছেড়ে যাওয়া। একটা কমফোর্ট জোন হারিয়ে ফেলার ভয়েও তারা কাঁদে। পাখির মতো উড়তে পারার সুখ হারিয়ে ফেলার ভয়ে তারা কাঁদে। চিরায়ত অভ্যাস গুলো ছেড়ে দেওয়ার ভয়ে তারা কাঁদে।
বউয়ের বাড়ির সবাই খোঁজ পেয়ে বরকে দেখতে এলো। শুনেছে, তন্নীর জামাই খুব সুন্দর। তৃনয় বসেছে ঘরের মাঝখানে। তন্নী কিছুটা দুরে বসে বসে আঙুর খাচ্ছে আয়েশ করে। শত জনমের ক্ষুধার্ত লোকের মতো আসার পর থেকে খেয়েই যাচ্ছে মেয়েটা। তন্নী খাওয়া দাওয়া পছন্দ করে। তৃনয় বিরক্তি নিয়ে ফোন হাতে তুললো। এর আগেই কোথা থেকে কতগুলো মহিলা দলবেঁধে এলো তার কাছে। তৃনয় ফোনটা রেখে দিল। মহিলারা সবগুলোই বেশ বয়স্ক। দাদীর বয়সী বোধহয়। একজন তৃনয়ের পাশ ঘেঁষে বসলেন। তার অস্বস্তি হচ্ছে। মহিলা জিজ্ঞেস করলেন,
“ তোমার নাম কি? ”
তৃনয়ের গলা রসকষহীন,
“ তৃনয় সিদ্দিকী! ”
“ কঠিন নাম। ”
আরেকজন জিজ্ঞেস করলেন,
“ তোমার আম্মা আব্বা কি করে? ”
“ আব্বুর ব্যবসা আছে। আম্মু করেন না কিছু। বাড়িতেই থাকেন। ”
তৃনয় বড্ড উসখুস করছে। এখান থেকে পালানোর উপায় কি? তন্নী কি বোকা? এদিকে আসছে না কেনো? বউ ছাড়া এ মুহূর্তে সে নিজেকে খুব অসহায় হিসেবে ঘোষনা করলো। উনি আবারও বললেন,
“ তোমরা ভাই-বোন কয়ডা? ”
তৃনয় জোর করেও হাসতে পারছে না। তার বাড়িতে তার ভাই-বোন, মা বাবাও তার সাথে এত কথা বলে না। সে বললো,
“ জ্বি, আমি একা আর দুই বোন! ”
কিসে পড়ে, কতটুকু বয়স জিজ্ঞেস করলে তৃনয় এখান থেকে উঠে যাবে। মনস্থির করেছে সে। সহ্য করা যাচ্ছে না। তন্নী খাওয়া বাদ দিয়ে এখানে তাকিয়ে আছে। পাশের মহিলাটা বললেন,
“ হুনছি জামাই মাস্টার! ”
তৃনয় চোখ বুজে ফেললো বিরক্তির চোটে। মাস্টার? কি আজব শব্দ! তন্নী হেঁসে ফেললো। সে উঠে এগিয়ে এলো। বুঝতে পারলো রেগে যাচ্ছে। সে কাছাকাছি আসার পর শুনতে পেল এক মহিলা ওনার নাতীকে বলছেন,
“ জামাই দুই তিনদিন থাকবেই এখানে। পড়া-টরা না বুঝলে আসিস। বুঝিয়ে দেবে না হয়! ”
তৃনয় নিজের কপাল টা আঙুল দিয়ে চেপে ধরলো। তন্নী ফিক করে শব্দ করে হেঁসে উঠলো। তারপর সবাইকে ডিঙিয়ে বললো,
“ তোমরা যাও তো এখন। ওর মাথা ব্যথা করছে। তুমি আমার সাথে এসো! ”
বলার সাথে সাথে সে দাঁড়িয়ে পড়লো। মাথা গরম হয়ে পড়েছে ততক্ষণে। সবথেকে বেশি রাগ আসছে তন্নীর উপর। ওরা চলে যেতেই সবাই বিরবির করলো, “ তুমি? বাহ্! ”
তন্নী ওকে নিয়ে নিজের ঘরে এলো। কারেন্ট চলে গেছে কতক্ষন হলো। তৃনয় হেঁটে এসে বিছানায় বসে ধপ করে শুয়ে পড়লো। তন্নী চলে যেতে নিলেই হাতটা টেনে ধরলো। সে পেছনে তাকালে বললো,
“ বাতাস দাও। ”
তন্নী হাতপাখা নিয়ে বসলো। আস্তেধীরে বাতাস দিতে দিতে হাঁপিয়ে উঠলো। তৃনয় চোখ বন্ধ করেই আবারও বললো,
“ জোরে! ”
কারেন্ট এলো তখন। বন্ধ চোখগুলো দেখে তন্নী পা টিপে টিপে বের হয়ে গেল। তৃনয় ধরতে পারলো না। ঘর্মাক্ত শরীরে ফ্যানের বাতাসে শরীর জুড়িয়ে এলে চোখ ভর্তি ঘুম নামলো তার। সে ঘুমিয়ে পড়লো।
***
তন্নী সেখান থেকে বের হয়ে দিঘীর পাড়ে এলো। থৈ থৈ জল দেখতে পেয়ে সে বড়, লম্বা করে শ্বাস ফেললো। দুটো চোখ মুদে নিল চেনা ঘ্রানের সংস্পর্শে এসে। দিঘীর অপর দিকে বড়বড় ধানের মাঠ। আধা পাকা ধানের শীষ গুলো বাতাসে দুলছে। শিলাদের বাড়ি উত্তর দিকে। তন্নী কয়েকটা পেয়ারা পারলো। তারপর গলা ছেড়ে ডাকলো,
“ শিলা? শিলা! ”
শিলা এলে দুই বান্ধবী বহুদিনের স্বভাববশত বসলো গাছের গোড়ায়। তন্নী শিলার কাঁধে মাথা রাখলো। পুকুরের পার জুড়েই বাতাস। শিলা স্বলজ্জিত গলায় বললো,
“ তোর বাসরঘরের কাহিনী বল! ”
তন্নী জিজ্ঞেস করে, “ কেনো? ”
“ বল না। তুই না বলেছিলি বলবি! ”
তন্নী শরীরের শাড়িটা একটু ঢিলেঢালা করলো। গলাটা তখন পুরোপুরি উন্মুক্ত হলো। শিলা হকচকিয়ে উঠলো সেটা দেখে, “ ব্যথা পাসনি? ”
তন্নী লজ্জা পেয়ে মিনমিন করলো,
“ যাহ। ব্যথা পাবো কেনো? ”
“ তোর বর এমন রাক্ষস কেনো? ”
“ এভাবে বলবি না। ও কিছুই করে নি জানিস? সবাই আমাকে এত ভয় দেখিয়েছে। অথচ রাতে উনি আমার সাথে কি সুন্দর করে কথা বললেন। আমার কোনো ইচ্ছে আছে কিনা, স্বপ্ন আছে কিনা, সব জিজ্ঞেস করেছেন! আমি তো আশ্চর্য হচ্ছিলাম ভীষণ! ”
শিলা সন্দেহী গলায় আওড়ায়, “ তার মানে… ”
তন্নী আটকে দিল,
“ কিছুই না। বোধহয় রাগটা একটু বেশি। ”
“ মোহনা বললো কাল। ” শিলা স্বায় জানালো। তারপর নড়েচড়ে বসল, “ রাগ বেশি থাকার কুফল কি জানিস? ধর, কোনদিন যদি রাগের মাথায় তোর গায়ে হাত তোলে? ”
তন্নী মুখ ভেংচি কাটে,
“ কেন হাত তুলবে? অপরাধ করলে বোঝাবে আর নাহলে মুখে বলবে। পুরুষ যদি ধৈর্য্যবান না হয় তাহলে কিসের পুরুষ! ”
“ যাদের রাগ বেশি তারা বউদেরকে ভালোবাসে। এক আধবার হাত তুলে তারপর ঠিক মানিয়ে নেয় ইনিয়ে বিনিয়ে! ”
তন্নী শ্যাওলা পড়া জলের দিকে তাকালো। কঠিন হলো তার কন্ঠস্বর,
“ আমাকে লালন পালন করেছে আমার বাবা। আমার বাবা কোনোদিন আমার শরীরে ফুলের টোকাও দেয় নি। ও কেনো দেবে? শরীরে হাত তোলা বিষয়টা কতটা জঘন্য তুই ভাবতেও পারিস না। এতো ঘৃনিত ছোঁয়া সহ্য করা যায় না। তারপর আবার ভালোবাসা? ও যদি কোনোদিন ভুলেও আমার শরীরে হাত দেয় আমি চলে আসবো। মেরে সরি সরি মানার প্রশ্নই আসে না। ভালোবাসলে আমার শরীরে হাত তোলারও প্রশ্ন আসে না। ”
“ তোর বরকে এটা আগেভাগেই বলে দিস। ”
তন্নী আর উত্তর দিল না। কথাগুলো সে বলেছে সেটা বিশ্বাসই হচ্ছে না। জ্ঞানী লোকের সাথে একদিন থেকেই জ্ঞানী হয়ে গেল নাকি? তন্নী পিঠ পেছনে নিয়ে নিজের ঘরের জানালার দিকে তাকালো। বিছানায় তৃনয় বসে। হাতে ওটা কি? তন্নী সেখান থেকে উঠে এলো। বললো,
“ আমি যাই। কালকে আসিস আরেকবার! ”
সে দ্রুত পায়ে এলো। ঘরের ভেতরে ঢুকে দেখলো তৃনয়ের হাতে তার খাতা। হাতের লেখার অবস্থা ভীষণ বাজে। তৃনয় ওর উপস্থিতি বুঝতে পারলো। তন্নী তখন কাচুমাচু করছে। লোকটা জিজ্ঞেস করলো,
“ পরিক্ষা দিয়েছিলে? ”
তন্নী মিনমিন করলো, “ হুম! ”
“ রেজাল্ট? ”
“ বেশি ভালো না! ”
তৃনয় ওর দিকে তাকালো চোখ কুঁচকে, “ কলেজে ভর্তি হলে না কেনো? ”
তন্নী অবাক হলো বেশ, “ মেয়েরা কলেজে যায়? লোকে কি বলবে? ”
“ লোকে কি বলবে মানে? পড়াশোনা করলে লোকে কিছু বলবে কেনো? ”
“ এমা! বলবে না? মেয়ে মানুষ এসএসসি পর্যন্ত পড়েছে এটাই তো বেশি। ওরা আবার ছেলেপেলেদের মাঝে গিয়ে কলেজ পড়বে কেনো? ”
তৃনয় জিজ্ঞেস করলো, “ তোমার পড়াশোনার শখ নেই? ”
তন্নী ঘনঘন মাথা নাড়ল, “ না। ”
তৃনয় শান্ত কন্ঠে ওকে বললো,
“ আমি ভর্তি করিয়ে দেব। মহিলা কলেজে। ”
তন্নী আতকে উঠলো। এগিয়ে এলো আরেকটু। অনুনয় করলো,
“ আমি পড়বো না! ”
“ কেনো? ” তৃনয় তাজ্জব হয়েছে।
“ পড়ালেখা কত কঠিন জানো? আমাকে মেরে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখলেও আর পড়বো না! ”
তৃনয় অশান্ত হলো। এটা কোন মেরুর মানুষ? মেয়েরা না পড়ালেখা করতে পাগল? সে বোঝাতে চাইলো, “ ছেলেমেয়ে অশিক্ষিত হোক সেটা তুমি চাও? ”
তন্নী হাত দুটো আঁকিবুঁকি করছে,
“ টেন পর্যন্ত কি যথেষ্ট নয়? তুমি তো পড়ালেখা জানোই…. ” তারপর আরেকটু এগিয়ে এসে পাশে বসলো। বাহুতে হাত রাখলো, “ আমি পড়ব না! ”
তৃনয় ওর কোমড় জড়িয়ে ধরলো। তন্নী আরেকটু গুটিয়ে যায়। কথায় কথায় স্পর্শ। তৃনয় চোখে চোখ রাখে,
“ পড়বে না? ”
তন্নী বুকের কাছের শার্ট আঁকড়ে ধরেছে। চোখেই তাকিয়ে উচ্চারণ করলো,
“ না। ”
“ আরেকবার বলো! ”
“ পড়বো ন….. ”
বাকীটা তন্নী উচ্চারণ করতে পারলো না। তৃনয় ঠোঁট চেপে ধরলো ঠোঁটে। রাগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দলিতমথিত হলো ঠোঁটটা। তন্নী শরীর ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু দরজা টার ছিটকিনি আটকানো হয় নি। কি বেসামাল স্পর্শ! নতুন নতুন স্পর্শ, অনুভূতি তন্নী নিতে পারে না। বেশিরভাগ সময় এমন আগুন ছোঁয়ায় সে হাঁসফাঁস করে।
***
তখন রাত হয়েছে। আসমা বেগম বেশ আদর যত্ন করে খাইয়েছেন তৃনয়কে। সবাই সবার ঘরে। তন্নীও নিজের ঘরে। তৃনয় একটু বাইরে গেছে। ফোনে নেটওয়ার্ক পাচ্ছে না। কথা বলতে হবে একটু। নুরজাহান এলেন তখন। তন্নী বিছানায় বসে হেসে ডাকলো,
“ এসো, সুন্দরী! ”
নুরজাহান ঢুকতে ঢুকতে জিজ্ঞেস করলেন,
“ জামাই কই? ”
“ একটু বাইরে গেছে। বসো তুমি! ”
নুরজাহান পাশে বসলেন। তন্নীর মাথায় কাপড় নেই। উনি চোখ কুঁচকে গলাটার দিকে তাকালেন। বুঝতে পেরে দুষ্টুমি করলেন,
“ জামাই রাতে সোহাগ করছে? আদর তো দেখা যায়! ”
তন্নী গলা ঢাকলো না। বুক ফুলিয়ে বললো,
“ তুমি দেখো না! ”
উনি পরপর তার হাতটাও দেখলেন। সেটাকে টেনে নিজের কাছে নিলেন। জিজ্ঞেস করলেন,
“ হাতে দাগ কিসের? ”
তন্নীর কন্ঠস্বর নিভু, “ আমিই দিয়েছি! ”
“ জামাইডা কি বেশি ভালা না, বু? ক আমারে! ”
তন্নী গাল ফুলিয়ে নিল,
“ একদিনেই কি বোঝা যায়? ”
“ রাতে কি হইছে সেগুলো ক তুই আমারে! ”
তন্নী হাত নাড়লো মাছি তাড়ানোর ন্যায়,
“ কিচ্ছু হয় নি। ডরে আমার শরীর কাঁপছিল। তোমরা এতো ভয় দেখিয়েছো। উল্টো ও আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, শখটক, ইচ্ছে-টিচ্ছে আছে কিনা! আরো অনেক কথা। তারপর ঘুম! ”
নুরজাহান বোধহয় সন্তোষ হলেন। পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন,
“ আর কিছু বলে নি? ”
“ বলেছে। তাড়াতাড়ি বড় হওয়ার কথা বলেছে! ”
উনি এবারে হেসে ফেললেন চট করে, “ ধৈর্য্য বেশিদিন থাকবো না। জানি জানি। পুরুষ মানুষের সাথেই তো এত বছর সংসার করলাম। তুই মিলাইয়া নিস আমার কথা! ”
“ কিসের কথা মেলাবে? ”
তৃনয় ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করলো। গিয়ে বসলো নুরজাহানের পাশে। উনি জিজ্ঞেস করলেন উল্টো,
“ নাতী কেমন আমার? ”
তৃনয় মাথা দুলিয়ে বললো,
“ ভালোই, তবে লজ্জা কম। ”
সকালে ঘুমের মধ্যে চুমু দেওয়ার কারনে কথাটা বলেছে। তন্নী বেশ বুঝতে পারলো। নুরজাহান মিটিমিটি হাসলেন,
“ ভালো হইছে তোর। আমাগো লজ্জা ভাঙতেই দুই তিনবছর লাগছিল। সময় বাঁচবে। ”
তারপর তিনি তন্নীর দিকে তাকালেন,
“ বু, আজকে আমার সাথে থাকবি? ”
তৃনয় তাকিয়ে আছে। তন্নী ভণিতা করলো না। এমনিতেও বলেছে, ওর নাকি লজ্জা কম। সে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো,
“ নতুন বিয়ে হয়েছে কি তোমার সাথে থাকার জন্য? যাও তো! ”
তৃনয় বললো, “ দেখলে বুড়ি? জীবনটা ভীষণ হতাশায় ভরা। খাইলে ক্ষিদে লাগে না, ঘুমাইলে চোখে দেখি না। ”
নুরজাহান পাল্টা বললেন,
“ সব ঠিক হয়ে যাবে। একবার শুধু মধু খাও! ”
“ তুমি বুড়ি সত্যিই নির্লজ্জ। দাদা কি তোমার লজ্জা গুলে খেয়েছিল? ”
“ না, তুই খাইস। খাইস্টার ঘরের খাইস্টা। পারে না আমার সাথে; যায় আমার লাউ গাছটার কাছে। ”
উনি রাগে কাঁপতে কাঁপতে চলে গেলেন। মৃত স্বামীর নামে কথা শুনতে উনি রাজি না। তন্নী দেখলো, কেবল নুরজাহান সঙ্গে থাকলেই তৃনয় একটু আকটু হাসে। সে কল্পনা করে, কি এমন হতো দুজনের বিয়ে হলে? তারপর নিজের ভাবনায় নিজেই চমকে উঠে। তওবা তওবা, আস্তাগফিরুল্লাহ!
রাতে সে আবিষ্কার করলো, পাশের লোকটা কেমন যেনো। তন্নী ভাবে, একটা অপরিচিত, অজানা মেয়েকে এরা জড়তা ছাড়া চুমু খায় কিভাবে? তাও চেপে ধরে? তার দমবন্ধ হয়ে যায় যখন দু হাতে জাপটে ধরে তৃনয়।
চলবে….!