আমার বধু পর্ব-০৯

0
1

#আমার_বধু!
#আফসানা_ইমরোজ_নুহা
#পর্ব_০৯

বিয়ে আল্লাহ প্রদত্ত পবিত্র বন্ধন। এর মতো শক্ত, মজবুত বন্ধন সৃষ্টিকর্তা আর কিছুতেই দেন নি বোধহয়। দুটো ভিন্ন, বিপরীত মেরুর আত্মা কেমন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। একে অপরের দুঃখে দুঃখী হয়ে যায়। অথচ তারা একটা সময় একে অপরকে চিনত না, নামটা পর্যন্ত জানত না। কোনদিন চোখের দেখা হয় নি , মুখের কথা হয় নি। তবুও কেমন হুট করে দুজন সংসারী হয়ে যায়‌। এক বিছানায় দুদিন থেকেই অভ্যাস হয়ে যায়। মায়ায় মায়ায় মুড়িয়ে যায় দুটি মন। ভালোবাসা এসে যায় হুট করে আসা বৃষ্টির মতো। দেখতে হয়, তবে থামানো যায় না। উপভোগ করতে হয়, কিন্তু আটকানো যায় না। তন্নী একটু বেশিই চঞ্চল। তবে অবুঝ না। ছোট থেকে গ্রামে বড় হওয়ার তাগিদে সংসার জিনিসটা ও খুব ভালোভাবে জানে। শ্বাশুড়ি কখনো মা হয় না। কিন্তু তন্নী চেষ্টা করবে। প্রথম দিন রোজিনা কে দেখে তেমনটাই মনে হয়েছিল তার। মানুষ ভালো খারাপের মিশেলে তৈরি হয়। আর মানবের এক অলিখিত নিয়ম, তাদের চোখে নতুন মানুষের ভালোটাই আগে ধরা পড়ে।
বাড়ি থেকে ফিরে আসার পর তন্নী সংসার করতে চাইছে। নববধুর লাজ, স্বামীর হুটহাট ছোঁয়ার সংস্পর্শে গাল দুটো সবসময় লাল থাকে তার। হাঁটতে, বসতে এমনকি খেতে গেলেও স্বামীর বেসামাল ছোঁয়া মনে পড়লে ঠোঁট প্রসারিত হয়। গোধুলী নামে শুভ্র গালের জমিনে।
বাড়িতে দুপুরে ভাত রান্না হয়। সকালের খাবারটা তন্নী নিজে বানিয়েছে আজ। রান্নাঘরে আসার পর রোজিনা আস্তেধীরে চলে গেছেন। মেয়েটা হাঁপিয়ে উঠলেও সব করেছে। তবে বিপত্তি বাঁধল দুপুরে ভাত রাঁধতে গিয়ে। তন্নী ভাতের মাড় ফেলতে পারে না। গরম ভাতের মাড় ফেলতে গিয়ে হাতে পড়েছে অনেকটা। ফর্সা চামড়া টুকটুকে লাল হয়ে ফুলে গেছে। পুড়ে যাওয়ার এতো জ্বালা! তন্নী পারে না সারা বাড়ি উজাড় করে কাঁদতে। তার চিৎকারে রোজিনা এসে তাড়াতাড়ি পানি দিয়েছে, মলম দিয়েছে। তন্নীর কান্না থামে না। উনি বলেছেন,

“ রাঁধতে গিয়ে কত হাত পুড়েছি। মেয়েরা একটু শক্ত হতে হয়। আহ্লাদি হলে সংসার করবে কিভাবে? ”

প্রথম দিন তৃনয়ের ধমক মনে রেখে তন্নী কিছু বললো না। শ্বাশুড়ি মায়ের কাছ থেকে আরেকটু যত্ন সে আশা করেছিল। পেল না। কষ্টের তোপে সবার আগে মনে পড়লো মায়ের কথা। মা থাকলে কয়েক মাসের জন্য রান্না ঘরের কাছেই যাওয়ার জন্য দিতেন না। মায়ের মতো অনেকেই হয়। কিন্তু মা হয় না। যত্ন করে মলম শ্বাশুড়ি মাও লাগায়‌। কিন্তু মায়ের মতো মাথায় হাত বুলায় না। বলে না, এখানে আর আসিস না। হাত পুড়েছে, একটু শুয়ে থাক। মা হয় মা। যার সাথে তাবত দুনিয়ার কারো তুলনা হয় না। বাবারও না। তৃনয় বাড়িতে আসে তিনটার দিকে। তন্নী রান্নাবান্না শেষ করে গোসলের পর শুয়ে আছে। শরীর কাঁপছে। বোধহয় জ্বর আসবে। কয়েকটা দিন ধরে এত ঘুম পায়। সে অর্ধেক জাগ্রত, অর্ধেক ঘুমন্ত। তৃনয় ঘরে ঢুকলো শব্দ করে। তন্নী হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলো। তৃনয় তাকালো তার দিকে। চোখদুটো লাল। তৃনয় ঘড়ি, শার্ট কিচ্ছু খুললো না। লক্ষ্য করেই দরজার কাছ থেকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলো। বসলো বিছানায়। ওর গাল আঁকড়ে ধরলো,

“ কি হয়েছে? চোখ লাল কেনো? আফরোজা? ”

অভিমান গাড় হলে মেঘ হয়ে যায়। সেখানে আরেকটু মেঘ জমলে যেমন বৃষ্টি শুরু হয়; তেমনভাবে তন্নী কেঁদে উঠলো। একটা হাত কাঁথার নিচে। অপরহাতটা দিয়ে সে তৃনয়ের পিঠ আঁকড়ে ধরলো। বুকে মাথা চেপে রাখলো। শরীরটা দুলে উঠলো তার। তৃনয় পিঠে, মাথায় হাত বুলায়। অশান্ত কন্ঠে ফের জিজ্ঞেস করে,

“ বলো! কেউ কিছু বলেছে? আম্মু বলেছে কিছু? ”

তন্নী মাথা নাড়ে। তৃনয়ের শরীরটা ঘর্মাক্ত। দারুন একটা পুরুষালী সুবাস। অল্প কয়েকদিনেই তন্নীর প্রিয় হয়ে যাওয়া একটা সুবাস। সে কাঁথার নিচের হাতটা সামনে আনলো। তৃনয় চোখ বুঁজে ফেললো। বুঝেছে সে। তারপর হাতটা ধরলো। পাশের ড্রয়ার থেকে মলমের কৌটা নিয়ে একটু একটু করে লাগিয়ে দিল ফু দিয়ে দিয়ে। তার বুকে তন্নী মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। সে আরেকবার ফুঁপিয়ে উঠলো,

“ জ্বলছে! ”

তৃনয় বিন্দুমাত্র বিরক্ত হয় না। তার মুখটা গরমের কারনে লাল হয়েছে‌। সে আরেকটু যত্ন করে সেটা লাগিয়ে দিল। তন্নী যত্ন বোঝে না, উদ্বিগ্ন মুখ চেনে না। কিন্তু এই মুহুর্তে তৃনয়কে ঠিক মায়ের মতো আপন মনে হয়। যাকে কিচ্ছু বলতে হয় না, জানাতে হয় না। স্বামী আপন! ঠিক ততটাই আপন যতটা আপন হলে মেয়েরা দুঃখ ভুলে যেতে শিখে যায়। চোখের অপরপাশে কান্না রেখে হাসতে শিখে যায়। মলম লাগানো শেষ হলে তৃনয় ওর দিকে তাকালো। তখনো বুকে পড়ে আছে। সে হাতটা ঠোঁটের সামনে নিয়ে ঠোঁট ছোঁয়ালো। চেপেই রাখলো বহুক্ষণ। তন্নী গুটিয়ে গিয়ে গলাটা আরেকটু শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরে। বুকে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করে। তৃনয় ঠোঁট সরালো। কাজগুলো করার ইঙ্গিত বুকের কোথাও থেকে আসছে। নইলে এসব সম্পর্কে তৃনয় সম্পুর্ন অনবগত, অনভিজ্ঞ। সে বিছানায় হেলান দিল। তন্নীর মাথায় হাত রেখে বললো,

“ ঘুমাও! ”

তন্নী মুখটা উপরে তুললো, “ তুমি ওয়াশ রুমে যাবে না? শার্টটা খোলো, ঘড়ি…. ”

তৃনয় আটকে দিল,

“ মন চাইছে না এখন। ঘুমাও তুমি। এখানেই। আম্মু বলেছে কিছু? ”

তন্নী ভাঙা গলায় বললো, “ এতটুকু পুড়লে কিছু হয় না। মেয়েদের এতো আহ্লাদি হতে হয় না! ”

তৃনয় শুনলো। তারপর আদেশ করলো,

“ ঘুমানোর চেষ্টা করো! ”

কথা শেষে সে ঠোঁটে হালকা ঠোঁট ছুঁয়ে দিল। ঠোঁট টা কপালেও গেছে। তৃনয় কি করবে বুঝতে পারছে না। কি করা উচিত? খারাপ লাগছে, অসম্ভব খারাপ। তন্নীর হাতে দাগটা হওয়ার কথা ছিল না। তবুও হয়েছে। সম্পুর্ন দাগহীন একটা মেয়ে তার কাছে এসে দুই দিনেই হাত পুড়িয়ে ফেলেছে। দোষটা তৃনয়ের। স্ত্রী কে সুরক্ষা দিতে অপরাগ হয়েছে সে। বিষয়টা ভীষণ লজ্জাজনক। নিজের কাছে নিজের ছোট হওয়া। অথচ, তার উচিত ছিল মেয়েটাকে পুতুলের মতো আগলে রাখা। নারীরা নরম হয়, কোমল হয়। তাঁদেরকে বুকে রেখেই সংসার শেখাতে হয়। হাতে হাত রেখে দুঃখ শুষে নিতে হয়। তৃনয়ের মন চাইছে, পোড়ার দাগটুকু নিজের হাতে নিয়ে নেওয়ার। সে অধৈর্য হাতে ফোন তুললো। ভীষণ অপরাধবোধ কাজ করছে ভেতরে ভেতরে। কল রিসিভ হলো কয়েক মিনিট পর। অপরপাশের জন কিছু বলতে পারল না। সে বললো,

“ অঙ্কন? একটা কাজের বুয়ার হদিশ কর। তাড়াতাড়ি। আজকের ভেতরে। ”

তারপর আরো তিন জনকে ফোন দিল। সবাইকে একই কথা বললো পরপর। তন্নী ততক্ষণে ঘুমিয়ে গেছে‌। তৃনয় ওকে শুইয়ে দিল আস্তে করে। তারপর নেমে এলো নিচে। রোজিনা সোফায় বসে আছেন। ছেলেকে একই পোষাকে নেমে আসতে দেখে তিনি ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। তৃনয় নেমে এসে পাশে বসলো। উনি জিজ্ঞেস করলেন,

“ কিরে বাবা? ফ্রেশ হলি না? খাবি না? ”

তৃনয় সোফায় মাথা রাখলো। নিস্প্রভ কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

“ তোমাদের বউমার হাত পুড়েছে? ”

উনি একটু ইতস্তত করলেন,

“ হ্যাঁ। তোর বউ ভাতের মাড় ফেলতে পারে না সেটা আমাকে বলবে তো! ”

“ তুমি কোথায় ছিলে? ”

“ ঘরে! ”

তৃনয় চোখ বন্ধ করলো। মাকে কি বলবে সে? তার জীবনের প্রথম নারী তার মা! বউকে পেয়ে মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহারের কোনো মানে হয় না। তাই সে শান্ত কন্ঠে আওড়ালো,

“ ক’দিন হলো বিয়ে হয়েছে। এখনই তুমি ওকে একা একা রান্না করতে দিচ্ছো। আম্মু, তোমাকেও তো বুঝতে হবে। আজকে তুমি ওকে যেভাবে ট্রিট করবে, কালকে ও নিজেও তোমাকে সেভাবেই ট্রিট করবে। আমি কিছু বললে মুখের উপর তোমার করা কাজকর্মের হিসেব দিয়ে দেবে। আমি ওর মুখে তোমার ব্যপারে কোনো নেগেটিভ মন্তব্য শুনতে চাই না, মা! ”

তিনি গলা এগিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

“ তন্নী কিছু বলেছে? ”

তৃনয় সামনে তাকালো চোখ মেলে‌। শরীর ধুলোবালিতে চুলকাচ্ছে। সে হাত দিয়ে গলার টাই ঢিলে করলো,

“ বলে নি। হাত পুড়ে যাওয়ার পর একবার ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়া উচিত ছিল তোমার। আফরোজা কে আমি ততটুকু চিনেছি। আপন করে নিলে ও নিজেও আপন করতে জানে। খুব দ্রুত মিশতে জানে। যতটুকু সে আমার সামনে কেঁদেছে ততটুকু তোমার সামনে কাঁদা উচিত ছিল। তুমি এখনো ওর প্রিয়তে যাও নি। লোক প্রিয় মানুষ ছাড়া কারো সামনে কাঁদে না। ”

রোজিনা উত্তর দিলেন না। ছেলেকে ওনার চেনা আছে। কথায় কথা বাড়বে। এখন শান্ত আছে, তারপর হুট করে রেগে যাবে। উনি এগিয়ে এসে শরীর ঘেঁষে বসলেন। বাহুতে হাত রাখলেন,

“ আচ্ছা বাবা যা! ফ্রেশ হয়ে আয়। আম্মু খাবার দেই। বউমা ঘুমায়? ”

“ হ্যাঁ! আমার ভালো লাগছে না। বিয়ে করা উচিত হয় নি। একটু হাত পোড়া দেখেই অপরাধবোধে ম*রে যাচ্ছি। আমি কাজের জন্য মহিলা খুঁজছি। পেয়ে গেলে উনি আসবেন। রান্নাবান্না তোমার করতে হবে না। আফরোজাই করবে। যিনি আসবেন তিনি শুধু সাহায্য করবেন। এ নিয়ে কোনো কথা বলো না। আমি ঝামেলা চাইছি না। ওকে বিয়ে করেছি আমি, আগলে রাখার দায়িত্বও আমার। বউ সে আমার। কাজের লোক না। ”

তৃনয় উপরে চলে এলো। তন্নী তখনো বেশ ঘুমিয়ে আছে। সে তাকিয়ে থাকতে থাকতে গিয়ে খাট ঘেঁষে বসলো। তার বউটা কত সুন্দর দেখতে! ওর নানী বলতো, তুই একটা সুন্দর বউ পাবি! তৃনয় পেয়েছে। এবং অল্প কয়েকদিনেই কেমন একটা টান এসে পড়েছে। কি সুন্দর পুতুলের মতো দেখতে। এ মেয়েকে সে ধমক দেবে কিভাবে? শুধু মায়াবী মুখটার দিকে তাকিয়ে সে নিজেকে এখনো আটকে রেখেছে। চোখদুটো কি সুন্দর, লম্বা চুল। তন্নীর চুলগুলো তৃনয়ের খুব পছন্দ। সেগুলোর ঘ্রানটা দারুন। তৃনয় কয়েকটা চুল মুঠোতে তুলে নাকের কাছে নিল। তারপর আরেকটু এগিয়ে ফের কপালে চুমু খেল। প্রেম, প্রণয়, ভালোবাসা এত তাড়াতাড়ি সম্ভব না। ওর ক্ষেত্রে সম্ভব হয়েছে শুধু বিবাহের জোরে। বিয়ের এতটাই শক্তি! হালাল যে! তাই।

***
বিকেলে তৃনয় বের হয়েছিল। তন্নীর ঘুম ভেঙ্গেছে সন্ধ্যায়। রোজিনা এসে বারবার জিজ্ঞেস করেছেন,

“ খারাপ লাগছে কিনা? জ্বর এসেছে কিনা। ”

তন্নী অবাক হলো কতক্ষন। তারপর মিষ্টি করে হাসলো। আবদার করলো,

“ আমার চুলগুলো আঁচড়ে দেবে, আম্মা? ”

রোজিনা হাসিমুখে এগিয়ে এসেছেন। বহুক্ষণ বউ শ্বাশুড়ি বেশ কথাবার্তা চালিয়ে গেছেন। খেতে বসার সময়ও তৃনয় আসে নি। তন্নী সবার সাথেই খেতে বসলো। তৃনয় রাতে খাবে না। বিকেলে একটা মহিলা এসেছিল। তন্নী শুনেছে। উনি কাল থেকে তন্নী কে সাহায্য করবে রান্নাবান্নায়। সে খুব খুশি হয়েছে শুনে। খেতে খেতে জুঁই বললো,

“ ভাবীকে ভাবীর আব্বু কত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিয়েছে, তাই না! ”

তন্নী উত্তর দিল না। সবার সাথে কথা বলা ভালো লাগে না। রাত হয়ে গেছে। তৃনয়ের আসার খবর নেই। সে ঘরে এলো। রোজিনা বেণী বেঁধে দিয়েছেন ফিতে দিয়ে‌। লাল সবুজ ফিতেগুলো লম্বা বেণীর আগায় ঝুলছে। সে আয়নার সামনে দাঁড়াল। মুখে ক্রিম দিতে দিতেই তৃনয় এসে পড়লো। তন্নী দেখেও কথা বললো না। তৃনয় ঢুকেই আগে জিজ্ঞেস করলো,

“ হাতের জ্বলুনি কমেছে? ”

বলতে বলতে একটা ছোট প্যাকেট রাখলো বিছানায়। তন্নী মাথা নাড়লো। তৃনয় ওয়াশ রুমে ঢুকতেই সে দ্রুত পায়ে বিছানার কাছে এলো। প্যাকেট হাতে নিয়ে ছিঁড়ল সেটা। দু মুঠো চুড়ি। সোনালী আর সবুজ রঙের সিলভারের চুড়ি। তন্নী হা হয়ে গেল। সেগুলো নিয়ে বুকে চেপে ধরলো। চুরি তার ভীষণ প্রিয়। পেছন থেকে কেউ ওর বেণীটা টেনে ধরলো, “ চুলকে কি খাইয়েছো? ”

তন্নী চুড়িগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে দেখতে বললো,

“ কিছু খাওয়াতে হয় না! এমনিই বড় হয়! ”

তৃনয় আরেকটু কাছে এসে বেণীটা দিয়ে ওর গলায় প্যাঁচ দিল‌। তন্নী হাতে ধরলো। তৃনয় জিজ্ঞেস করে,

“ মেরে ফেলি? ”

তন্নী ভয় পায়, “ কেনো? ছাড়ো, ব্যথা পাচ্ছি! ”

তৃনয় একটু হেসে ছেড়ে দিল। বসলো বিছানায়। তন্নী সোনালী চুড়ি গুলো দেখিয়ে বললো,

“ আমার জন্য? ”

“ পছন্দ হয়েছে? ”

তন্নী আপ্লুত হলো‌। এসে কথাবার্তা ছাড়াই তৃনয়ের কোলের উপর বসলো।

“ চুড়ি আমার ভীষণ প্রিয়। কিন্তু এগুলোর থেকে বেশি সুন্দর রেশমী চুড়ি। রেশমী চুড়ি পাওয়া যায় না। ”

তৃনয়ের দুটো হাত পেছনের দিকে বিছানায় ভর দেওয়া। সে বললো,

“ আমি রেশমী চুড়ি চিনি না। এগুলোর কথা একজন বললো। মেয়েরা নাকি গিফট পেলে খুশি হয়! ”

“ কাঁচের চুড়িও চেনো না? সেগুলোই রেশমী চুড়ি। আমি এগুলো পড়ি? ”

তৃনয় চুড়ি গুলো হাতে নিল। তন্নীর চোখমুখ ভীষণ উজ্জ্বল। বিয়ের পর এতটা হাসতে এখন পর্যন্ত সে দেখে নি। কেবল কয়েকটা চুড়ি দেখে এত উল্লাসের কি আছে? সে কোমড় ধরে পাশে বসিয়ে দিল। প্রথমে সবুজ চুড়ি গুলো মুঠোয় রাখলো। তারপর একে একে সবগুলো চুড়ি ধীরে ধীরে পড়িয়ে দিল। তন্নী তাকিয়ে থাকে সম্পুর্ন সময়। তৃনয়কে সে যত দেখছে তত মুগ্ধ হচ্ছে, প্রেমে পড়ছে। ফর্সা হাতে সবুজ চুড়ি গুলো চকমক করছে। ভীষণ মানিয়েছে। হাতটা তুলে আরো একবার ঠোঁটে ছোঁয়ানোর মনোবাসনা তৃনয় বহু কষ্টে দমিয়ে রাখলো। উঁকি দিয়ে বাইরে তাকালো সে। চাঁদটা পরিপুর্ন না হলেও বেশ অনেকটা। সে জিজ্ঞেস করলো,

“ ছাদে যাবে? ”

তন্নীর তেমন আগ্রহ নেই। তৃনয়ের সাথে থাকতে পারবে ভেবে সে রাজি হলো। কি এমন আছে ছাদে? একসাথে চাঁদ দেখলেই বা কি হয়? তন্নী সে রহস্য আজ ভেদ করেই ছাড়বে। তৃনয় আরো কিছুক্ষণ হাতগুলো নেড়েচেড়ে দেখে মাথায় আঁচল তুলে দিল। বধু বধু দেখতে লাগছে তাঁকে। বিয়ের পর থেকে তন্নী শাড়িই পড়ে‌। তার ভালো লাগে। আজকাল আরেকজনকেও বেশ ভালো লাগে‌। তৃনয় কে! বিকেলের যত্ন টুকু তন্নী আজীবন মনে রাখবে। কখনো ভুলবে না।

চলবে….!