আমার বধু পর্ব-১৮

0
4

#আমার_বধু!
#আফসানা_ইমরোজ_নুহা
#পর্ব_১৮

বিয়ের এতমাস পর তন্নী এই প্রথম অসুস্থ হয়েছে। ওর শরীরটা আজকাল ভালো যায় না। মাথা ঘোরা, বমি, জ্বর লেগেই থাকে। একটু বৃষ্টিতে ভিজলেই ঠান্ডা, কাশি, গলাব্যথা। খেতে পারছে না কিছু। আজ তার শরীরটা অতিমাত্রায় খারাপ। কোনোভাবেই কিছু খেতে পারছে না। সব উগলে দিচ্ছে বমির সাথে। বিছানায় শুয়ে আছে মুর্তির মতো। তৃনয় বসেছে পাশে। কলেজ যাবে না আজ। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সে‌। মেয়েটা এমন এক পাগল। ডাক্তারের কাছে যাবে না। অসুখ এভাবে ভালো হবে?
তৃনয় দুশ্চিন্তায় মাথা চেপে রেখেছে। তন্নী হুট করে ফের দৌড়ে ওয়াশ রুমে ঢুকলো। পেছন পেছন তৃনয় নিজেও গেল। বমি করার সময় পেট চেপে ধরলো। তন্নী ক্লান্ত শরীর তৃনয়ের উপর ছেড়ে দিল। ওকে নিজের শরীরে হেলান দিয়ে তৃনয় মুখটা মুছে দিল। গালে মৃদু থাপড়ে বললো,

“ আফরোজা? চলো ডাক্তারের কাছে। ”

তন্নী মাথা নাড়লো। গলা জড়িয়ে ধরলো তৃনয়ের,

“ না। আমি ট্যাবলেট গিলতে পারি না। ”

“ এর ছাড়াও আরও ঔষধ আছে। চলো তুমি। ”

তন্নী জানে, তৃনয় ওকে ছাড়বে না। সে মেনে নিল। মৃদু স্বরে বললো,

“ আচ্ছা। কিন্তু এখন না। বিকেলে যাবো। ”

“ বোকা… ”

“ আমি কিন্তু এবারে কাঁদব। ”

তৃনয় কোলে তুলে নিল ওকে। হাঁটতে হাঁটতে বললো,

“ আচ্ছা, আচ্ছা। ”

ওকে সোফায় বসিয়ে তার পায়ের কাছে হাঁটু মুড়ে বসলো সে। মেয়েটা এক চোট হকচকিয়ে উঠলো,

“ এ্যাই! পাশে বসো। নিচে বসছো কেনো? ”

তৃনয় ওর গালে হাত রাখলো। সেখানে আঙ্গুল বুলিয়ে দিল ধীরে ধীরে,

“ সমস্যা নেই। আমি কিছু বুঝতে পারছি না। অসুখ বিসুখের সাথে আমি তেমন পরিচিত না‌। তোমার যত্ন কিভাবে করবো? ”

কন্ঠে অসহায়ত্ব তার। তন্নী ফিক করে হেসে উঠলো, “ পাগল লোক। কলেজ যাবে না? ”

তৃনয় হাসে না। আজকের তন্নীর হাসি ওর বুকের ব্যথা বাড়িয়ে দেয়। অসুস্থ তন্নী কে ভালো লাগছে না। চোখের নিচে একগাদা কালি পড়েছে। মুখটা মলিন। সে তন্নীর হাত আঁকড়ে ধরলো। চিকন সোনালী চুড়িটা মনোযোগ দিয়ে ঘোরাতে লাগলো হাতেই। সেখানে তাকিয়ে থেকেই উত্তর দিল,

“ না। তোমাকে ডাক্তার দেখিয়ে তারপর কাল থেকে যাবো। ”

তন্নী চোখ বুঁজে রাখলো। ঘরদোর সব ঘুরছে ভুমিকম্পের মতো। তৃনয়ের ফোন বাজছে। সে উঠে গিয়ে ফোন রিসিভ করলো। কথাবার্তা তন্নী শুনতে পাচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে কলেজ যেতে হবে। তৃনয় কথা শেষ করে শার্ট পাল্টে নিল। তন্নী দেখছে একধ্যানে। কয়েক মুহুর্তের ব্যবধানে তড়িঘড়ি তৈরি হলো সে। মেয়েটার কাছে এগিয়ে এসে প্রগাঢ় চুমু খেল কপালে। নাকে নাক ঘষে বললো,

“ আমি চলে আসবো, হ্যাঁ? বিকেলে ডাক্তারের কাছে যাবো। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও, বউ আমার। ”

তন্নী ঠোঁট এলিয়ে মাথা নাড়লো, “ সাবধানে যাবে। ”

তৃনয় বের হয়ে বাইরে এলো। জুঁই খাচ্ছে তখন। সে ডাক দিল। জুঁই জবাব দেয়,

“ বলো। ”

“ কলেজ যাবি? ”

“ তুমি কোথায় যাচ্ছো? ”

তৃনয় হাতঘড়ি দেখে বললো, “ ইমিডিয়েট যেতে হবে। ”

জুঁই মুখের খাবার শেষ করলো,

“ তুমি না বললে যাবে না। ভাবী অসুস্থ। আচ্ছা, তাহলে আমি যাবো না। ”

তৃনয় কয়েক পা এগিয়ে এলো। রোজিনার হাত ধরলো,

“ একটু খেয়াল রেখো, আম্মু। ”

“ যা তুই। পাগল ছেলে। ”

তৃনয় বের হয়ে গেলে উনি থালায় খাবার নিলেন। তন্নীর কাছে এসে ওকে টেনে তুললেন। তন্নী না করছে বারবার,

“ খাবো না, আম্মা। ”

“ চুপ! বেশি কথা। না খেলে শরীরে জোর পাবি? খাওয়ার উপরে কোনো ঔষধ আছে? খা, মা। কয়েকটা….আমি খাইয়ে দিচ্ছি। ”

তন্নী না করতে পারে না। রোজিনা বেশ যত্ন করে ওকে খাইয়ে দিল। মুখটা মুছে দিয়ে বললো,

“ চল আমার সাথে‌। ডাক্তারের কাছে। ”

“ তোমার ছেলে নিয়ে যাবে বলেছে। ”

উনি মিটিমিটি হাসলেন, “ তুই আমার সাথে আয়। উহু! একটা কথাও না। জামাই কি শ্বাশুড়ির থেকে বেশি? আমার সাথে গেলে তৃনয় কিছু বলবে না। চল। ”

তন্নী রেডি হলো একটু। জুঁই মাথাটা আঁচড়ে দিয়েছে। জবা গেছে স্কুলে। ওরা এগারোটার দিকে ডাক্তারের কাছে এলো।

***
“ বিয়ের কতদিন? ”

ডাক্তার ফাতেমা ঈশিতা। কয়েকটা পরিক্ষা দিয়েছিল তাঁকে। প্রস্রাব পরিক্ষা, রক্ত পরিক্ষা। রিপোর্ট এলো এইতো কিছুক্ষণ। তন্নী রোজিনার দিকে তাকালো। উত্তর দিল,

“ কয়েকদিন হলো বছর পেরিয়েছে। তেরো মাস শেষের দিকে। ”

ফাতেমা ঈশিতা রোজিনা কে জিজ্ঞেস করলেন,

“ আপনি বুঝতে পারেন নি। ”

রোজিনা হেসে ফেললেন, “ হ্যাঁ। বুঝেছি বলেই তো উল্টাপাল্টা ঔষধ খেতে দেই নি। ”

তন্নী বোকার মতো জিজ্ঞেস করে,

“ কি হয়েছে আমার? ”

“ পিরিয়ড মিস গেছে তোমার? ”

মেয়েটা স্বায় জানায়, “ হ্যাঁ। এ মাসে হয় নি আর। আরেকবারের তারিখ কাছাকাছি। ”

ফাতেমা ওর হাতের উপর হাত রাখলেন। আলতো কন্ঠে অভিনন্দন জানালেন,

“ তুমি প্রেগন্যান্ট। ”

তন্নী চমকে উঠলো। ওর গলা কাঁপলো, “ প্রেগ…. প্রেগন্যান্ট…. ”

“ মা হতে চলেছো তুমি। এখন আর একা নও‌। পেটে কিন্তু আরেকজন আছে। ”

তন্নীর শরীর অবশ হয়ে এসেছে। ভার ভার লাগছে। তার ডান হাতটা অজান্তেই গিয়ে পেটে পৌঁছাল। হাত পায়ের কাঁপুনি বাড়লো। শরীরটা শিরশির করে উঠলো।
সে পাশে তাকালো। রোজিনা কেমন হাসছেন। উনিও মাথা দোলালেন। তন্নী কেঁদে উঠলো শব্দ করে। তারপর শ্বাশুড়ি কে জড়িয়ে ধরলো। রোজিনা পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন,

“ কাঁদে না, মা। আল্লাহ খুশি হয়ে দিয়েছেন। ”

তন্নীর ছোট্ট শরীর তখনো থরথর করছে। গলা শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। ছোট একটা পেটের মধ্যে আরেকটা প্রাণ? তার কেমন হাঁসফাঁস লাগে। অস্থির অস্থির। বুকটা খালি হয়ে যায় তৃনয়ের জন্য।

আসার পথে রোজিনা কল করে বেয়াইন কে জানিয়েছেন। সবাই দারুন খুশি হয়েছে। তন্নী ওনার ফোনটা চাইলো, “ আম্মা, তোমার ফোনটা একটু দেবে? ”
দেওয়ার পর সেটা নিয়ে নিজের রুমে এলো সে। সারা রাস্তা রোজিনার সাথে, আর মায়ের সাথে আলাপ করতে করতে তার ভয় কমেছে। এখন খুশি খুশি লাগছে। তন্নী ফের আসমার ফোনে কল দিয়ে নুরজাহান কে দিতে বললো। নুরজাহান ওপাশ থেকে জিজ্ঞেস করলেন,

“ কি শুনলাম? ”

“ হ্যাঁ। তোমার বাচ্চা হবে। ”

নুরজাহান হাসলেন, “ আমার না, মা*গী। তোর। ” তারপর আস্তে করে শ্বাস ছাড়লেন, “ আল্লাহ রহমত করছে। আমি কত নামাজ পড়ছি। ”

তন্নী অবাক হয়,

“ কেনো? এভাবে বলছো কেনো, সুন্দরী? ”

“ মেয়ে মানুষের বিয়ের সাথে সাথে বাচ্চা হওয়া ভালা। তুই কি বুঝবি? কত মাইনষে কতকিছু কয়! ”

তন্নী মুখ ঝামটি দিল, “ বেশিদিন তো হয় নি। ”

“ বছর গেছে গা, তাও বেশিদিন হয় নাই? এ্যাঁ মা*গী? তুই ওষুধ খাইছিলি? ”

তন্নী মিনমিন করলো, “ তোমরা সবাই বলার পর খেতে চাই নি। তোমাদের জামাই খাইয়েছে। আমি নাকি ছোট। ”

নুরজাহান বসে পড়েন পিড়ি তে। নাটক করে বলেন,

“ ওরে আদর রে। ছুডো, ছুডো। চৌদ্দ বছরে বাচ্চা হইছিল আমার। তুমিই খালি ছোডো! ”

“ হ্যাঁ, তোমাদের জন্য এখন আমি আমার জামাইয়ের বিরুদ্ধে যাই? তাই না? ”

“ যাইস না। তোরে যাইতে কইছে কেডায়? মিলেমিশে থাক, বু। সাবধানে চলিস। ”

তন্নী সন্দেহী গলায় প্রশ্ন করে, “ একটা কথা কও, বুড়ি। আমার ক্লাসের রবিউল, ওর কথা তোমার নাত জামাই জানলো কেমনে? ”

নুরজাহান সতর্ক হলেন, “ তোরে এডা নিয়া কিছু কইছে? ”

“ না। তোমার নাত জামাই আমাকে বিশ্বাস করে। তুমি বলেছো নাকি সেটা বলো। ”

ওপাশে চুপ। তন্নী মুচকি হাসে, “ ও হো। বুঝলাম। কিন্তু বললে কখন? তোমরা দুজন আমাকে ফাঁকি দিয়ে সত্যি সত্যি সংসার করছো না তো? ”

নুরজাহান গম্ভীর গলায় বললেন,

“ হ। তোর কুনো সমস্যা? ”

“ সমস্যা তো আমারই। আমার জামাই। ”

“ আমার জামাই, আমার জামাই। গুলে খা আমার জামাই রে। ”

তন্নী হাসতে হাসতে কল কেটে দিল। দুপুর শেষ হয়েছে। তৃনয় ফিরবে কিছুক্ষণ পর। এখনো জানে না। আচ্ছা, তৃনয় কি খুশি হবে? তন্নী কল দিল তৃনয়ের নাম্বারে। চতুর্থ বারে রিসিভ হলো,

“ হ্যাঁ, আম্মু। বলো তাড়াতাড়ি। আমি একটু ব্যস্ত। আফরোজার শরীর কেমন? ”

তন্নী দাতে নখ কামড়ে বললো,

“ আফরোজার শুধু টক খেতে মন চায়। ”

কয়েক সেকেন্ড লাগলো তৃনয়ের। তারপর ফোনের অপরপাশে একটা শ্বাস ফেলার শব্দ হলো,

“ তুমি? শরীর কেমন এখন তোমার? ”

“ ভালো না গো। ”

“ আমি একটু পর আসছি, আফরোজা। এখন একটু ব্যস্ত আছি। শুয়ে থাকো একটু, লক্ষী। ”

তন্নী বরফের ন্যায় গলে গেল, “ আসার সময় মিষ্টি নিয়ে আসবে। ”

তৃনয় কথা প্যাঁচালো না,

“ আচ্ছা। ”

“ আর হ্যাঁ, আচার আনবে। ”

“ বুঝেছি, বুঝেছি। সব আনব। ”

বলেই তৃনয় কল কাটলো‌। তন্নী ফোনটার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিচ্ছু বোঝে না। বোকা কোথাকার। সে ব্যালকনি দিয়ে বাইরে তাকালো। কয়েকটা দালান পাড় করে একটা তিনতলা বিল্ডিং। ওটা তৃনয়ের চাচার। তন্নী পেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ঠিক পাঁচ মিনিট পর ফোনটা ফের বেজে উঠলো। তন্নী হেঁসে ফেললো। ওপাশ থেকে একটা অস্থির কন্ঠ ভেসে এলো,

“ আফরোজা, আফরোজা তুমি…তুমি…. ”

তৃনয় কথা শেষ করতে পারছে না। আটকে আসছে গলায়। তন্নী একহাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে আহ্লাদি হলো। জড়ানো গলায়, কেঁদে কেঁদে বললো,

“ আমাদের বাবু হবে। ”

কি সুন্দর, কি মিষ্টি মুহুর্ত। তৃনয় বুকে হাত চেপে ধরলো। তার শক্তপোক্ত শরীরটা অবশ হয়ে এলো। সে একহাতে চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিল। তারপর তন্নী কে বোঝালো,

“ কাঁদে না। আমি আসছি। তোমার কিছু লাগবে? কি চাও, বলো। ”

“ কিছু লাগবে না। তুমি এসো জলদি। বাবু ওর আব্বু কে মিস করছে। ”

আব্বু? কি কঠিন একটা শব্দ। কি ভয়াবহ অর্থ পুর্ন একটা শব্দ। তৃনয়ের বুক জুড়িয়ে যায়। আরেকটা নতুন প্রাণের দায়িত্ব কাঁধে বর্তালো। সে কিছুটা ভয় পায়। ঘাবড়ে যায় একটু। স্টেয়ারিংয়ে রাখা তার হাতটা তন্নীর শরীরের মতো থরথরিয়ে কেঁপে উঠে। নতুন সুখে, নতুন প্রাপ্তিতে ভরে যায় তাঁদের ছোট্ট আকাশ, প্রেমের বাতাস, আর নিজেদের একান্ত পৃথিবী।

***
তন্নী তখন শুয়ে আছে। তৃনয়ের বুকে। তৃনয় খাটের কার্নিশে পিঠ ঠেকিয়ে রেখেছে। বামহাতটা তন্নীর চুলের ভাঁজে। ওর পেট একটু একটু ফুলেছে‌। গালগুলোতে মাংস হয়েছে। শরীরেরও বেশ উন্নতি। দিনদিন মেয়ের সৌন্দর্য্য বাড়ছে‌। তৃনয় সেদিন নুরজাহান কে বললো সেটা। উনি বলেছেন, পেটে মেয়ে থাকলে মায়েরা সুন্দর হয়। ছোটখাটো পেটটায় ওকে কি ভীষণ আদুরে দেখায়। তন্নী তৃনয়ের বুকে আঁকিবুঁকি করতে করতে বললো,

“ আমি কিন্তু বাড়ি চলে যাব। আম্মার কাছে। ”

তৃনয়ের হাতটা একটু থামে, ফের চলতে শুরু করে।

“ মা কে এখানে নিয়ে আসব। ওখানে যেতে হবে‌ না। এখান থেকে হাসপাতাল কাছে আছে। ”

তন্নী মাথা তুলে জিজ্ঞেস করলো,

“ হাসপাতালের কি কাজ? ”

“ প্রয়োজন পড়লে? বিপদ কি বলে কয়ে আসে? যদি সিজার….. ”

তন্নী দ্রুত হাতে মুখ চেপে ধরলো, “ চুপ। মুখ থেকে বিষ বের হয় শুধু? আমার বাবু বাড়িতেই হবে। ”

তৃনয় ওর হাতের তালুতে চুমু খেল। তন্নী সরিয়ে নেয় হাতটা। তারপর আবারও বুকে মাথা রাখে।

“ আচ্ছা, একটা কথা বলো তো! একটা জলজ্যান্ত মানুষের পেট কাটা হয়। তাহলে সে বাঁচে কিভাবে? ”

“ ইঞ্জেকশন দিয়ে নেয় আগে। ব্যথা পাওয়া যায় না। ”

তন্নী সে কথার ঘোর বিরোধিতা করলো,

“ তারপর তো সারাজীবন ভুগতে হয়। আমি জানি এতটুকু। আমার না মাঝেমধ্যে ভয় করে জানো! ”

তৃনয় জিজ্ঞেস করলো,

“ কিসের ভয়? ”

“ আমি যদি মারা যা…. ”

তৃনয় এবারে ওর মুখ চেপে ধরলো। মাথা নাড়িয়ে বোঝালো, “ এভাবে বলতে নেই। ”
তন্নী তবুও বললো,

“ আমি না থাকলে আমার বাবুকে তুমি অনেক আদর করবে। ঠিক আছে? যদি পেট কাটতে হয়? আল্লাহ! ”

তৃনয় মাথার উপরিভাগে ঠোঁট বসালো, “ আমি আছি না? ”

“ এ্যাহ। পেট কাটবে আমার। তুমি থাকলেই কি? ”

তৃনয় ওর মুখটা হাতের আজলায় তুললো। কপালে, গালে, থুতনিতে, ঠোঁটে একে একে পুরো মুখে চুমু খেল। বাম গালে বহুক্ষণ ঠোঁট চেপেই রাখলো। টিশার্টের কলারটা তন্নীর হাতের মুঠোয়। চোখদুটো বন্ধ করে রাখা। ওকে ওর স্বামী আস্তে করে আশ্বাস দিল,

“ কিচ্ছু হবে না। কাঁদে না, আফরোজা। তোমাকে আমার জন্য হলেও বাঁচতে হবে। আমি তোমাকে ছাড়া মোটেই থাকতে পারব না। মানুষ অভ্যাসের দাস। আর আমার একান্ত অভ্যাস যে তুমি কেবল। ”

“ তুমি আমায় কোনোদিন ‘ভালোবাসি’ বলো নি। ”

“ এই যে বললাম। ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি! ”

তন্নী ডুকরে কেঁদে উঠলো। খুব, খুব, খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো লোকটাকে।

বিবাহ ভিত্তিক ওদের ভালোবাসা। কি ভীষণ মিষ্টি সুন্দর তার সুর। ভালোবাসার সুর। কি গভীর তাদের টান। কাছে থাকলে, দুরে থাকলেও যে ভালোবাসা কমে না কভু। এমন মিষ্টিময় ভালোবাসার স্মরণেই বুঝি রবীন্দ্রনাথ দুটো লাইন লিখেছিলেন বহু বছর আগে,

“ এই সুরে, কাছে দুরে,
জলে, স্থলে বাজায়….
বাজায় বাঁশি,
ভালোবাসি! ভালোবাসি! ”

চলবে…!