আমার বাহুডোরে আবদ্ধ তুমি পর্ব-২১

0
403

#আমার_বাহুডোরে_আবদ্ধ_তুমি
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব ২১

মেহরুন এবার আদ্রিশের অনেকটা কাছাকাছি চলে আসে। মুখে তার দুষ্ট হাসি ফুটে ওঠে। ভড়কে যায় আদ্রিশ। বউয়ের একটু এটেশন পাওয়ার জন্য এসব করা, এবার আবার তার মান ইজ্জত নিয়ে টানাটানি না পড়ে যায়। মেহরুন আদ্রিশের আরও কাছে এসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কাজটা করে বসল। যা ভাবতেও পারেনি আদ্রিশ।

ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় আদ্রিশের গালে মেহরুন। আদ্রিশ ভাবতেও পারেনি মেহরুন এমন কিছু করে বসবে। গালে হাত দিয়ে তাই হতভম্বের ন্যায় তাকিয়ে থাকে মেহরুনের দিকে কিছুক্ষণ। সে ভেবেছিল এক আর হলো তো আরেক! আদ্রিশকে এমন হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুখে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বিদ্রুপ করে মেহরুন বলল

-‘ আমার কোমল হাতের থাপ্পড় খেয়ে এখন কেমন বোধ করছেন মিস্টার আব্রিশাম খান আদ্রিশ?

আদ্রিশের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। শক্ত কন্ঠে সে বলল

-‘ এসবের মানে কি মেহরুন?

মেহরুন কিছু বলে না। মুখে তার বিদ্রুপের হাসি ফুটে ওঠে।

আদ্রিশ এবার বেশ রাগ নিয়ে চেচিয়ে বলল

-‘ তোমায় কিছু বলা হয় না বলে বেশি বাড় বেড়ে যাচ্ছো কিন্তু তুমি, মেহরুন।

মেহরুন দাঁতে দাঁত চেপে বলল

-‘ বেশি বাড় আমি বাড়িনি, আপনি বেশি বাড়াবাড়ি করছেন। এই থাপ্পড়টা আপনাকে আরও আগেই মারা উচিত ছিল আমার। আর যদি কখনো সিগারেট খেতে দেখেছি তো আপনার একদিন আর আমার যে কয়দিন লাগে।

মেহরুনের থাপ্পড় মারার কারণটা এবার বুঝতে পারল আদ্রিশ। তবুও ভ্রু কুচকে গম্ভীর কণ্ঠে বলল

-‘ ছাড়ব না আমি সিগারেট কি করবে তুমি?

আদ্রিশের গাল শক্ত করে চেপে ধরে মেহরুন। মুখের কাছে মুখ এনে দাঁত কিড়মিড় করে বলল

-‘ দুই ঠোঁটের মাঝে রেখে সিগারেট খাওয়া, আপনার ঠোঁট আমি কেঁটে নেবো একদম।

মেহরুনের এমন কথায় হাসি পায় আদ্রিশের। তবুও তা বুঝতে না দিয়ে ভয় পাওয়ার ভান করে শুকনো ঢোক গিলল। ভয়ার্ত কন্ঠে সে বলল

-‘ আমার ঠোঁট কেটে নিলে তোমায় চুমু খাবে কে বউ?

মেহরুন তব্দা খেয়ে যায় কিছুক্ষণের জন্য। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল সে। ভয় দেখাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে যাচ্ছে। মুখে এ মুহুর্তে লজ্জার লাল আভা ফুটে উঠেছে তার। তা দেখে বাঁকা হাসে আদ্রিশ। মেহরুনকে নিজের কাছে টেনে এনে শক্ত করে আকড়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় আদ্রিশ। আজ আর অন্য দিনের মতো মেহরুন ছোটাছুটি করছেনা, একদম চুপচাপ গুটিশুটি মেরে বসে আছে আদ্রিশের কোলে। মেহরুনের চিবুক উঁচু করে ধরে আদ্রিশ ঠাট্টা করে বলল

-‘ ঠোঁট কাটতে হবে না, আমায় প্রতিদিন নিয়ম করে চুমু খেলেই হবে, বউ। যদি মানতে পারো তবেই সিগারেট ছাড়ব, নইলে কিন্তু না।

মেহরুন চোখ মেলে তাকায় আদ্রিশের দিকে। তার চোখ আজ যেন কি বলতে চাইছে। আদ্রিশ মেহরুনের চোখে চোখ রাখে। হুট করে মেহরুন শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আদ্রিশকে। হু হু করে কেঁদে ওঠে সে। আদ্রিশ স্তব্ধ হয়ে যায় মেহরুনের এহেন কর্মকান্ডে। মেহরুনের পিঠে মাথায় হাত বুলিয়ে আদ্রিশ উত্তেজিত কন্ঠে বলল

-‘ কি হয়েছে তোমার, মেহরুন? তুমি কাঁদছ কেন এভাবে? আমি এতোক্ষণ মজা করছিলাম তোমার সাথে। মেহরুন, এই মেহুরানী।

আদ্রিশকে ছেড়ে দেয় মেহরুন। ছলছল চোখে তাকায় সে। ওষ্ঠাধর এখনো ক্ষনে ক্ষণে কেঁপে উঠছে। আদ্রিশ সযত্নে চোখের পানি মুছে দেয়। কাঁপা কন্ঠে মেহরুন বলল

-‘ ভালোবাসেন আপনি আমায়?

-‘ ভালোবেসে কি লাভ? আমার সামনে থাকা মানুষটা তো আমায় পাত্তাই দেয় না।

ভারাক্রান্ত মনে উক্ত কথাটি বলে মুখ ফিরিয়ে নেয় আদ্রিশ। তা দেখে মেহরুন হেসে ফেলে। অরনী তাকে সব বলেছে। আজ বিকেলে ফেরার পথে অরনীই তাকে বলেছিল যে আদ্রিশ কতোটা ভালোবাসে তাকে। তার অসুস্থতায় আদ্রিশ কতোটা কেয়ার করেছে। সব শুনে তার নিজের প্রতি ভীষণ রাগ হচ্ছিল। শুধু শুধু ভুল বুঝে আদ্রিশকে কষ্ট দেওয়ার জন্য নিজের ভেতর কেমন অপরাধবোধ হচ্ছিল তার।

মেহরুনকে অনমনস্ক দেখে খুকখুক কেশে ওঠে আদ্রিশ। মেহরুন পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় আদ্রিশের দিকে। আদ্রিশ এবার ভ্রু নাচিয়ে বলল

-‘ আর কতো কোলে চড়ে বসে থাকবে, মেহরুন? পায়ে যে ব্যথা হয়ে গেল আমার। ওহ বুঝেছি, তোমার তো আবার আমার আদর পেতে মন চাইছে, এজন্য উঠছো না। কি ঠিক বলেছিনা, মেহুরানী? ইশ বেচারী মেয়েটা লজ্জায় মুখ ফুটে বলতেও পারছে না কিছু। আমি কতো দ্বায়িত্বশীল স্বামী দেখেছো, না বলতেও বউয়ের মনের কথা বুঝে ফেলি।

আদ্রিশের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায় মেহরুন। কি বলবে ভেবে পায় না সে। আদ্রিশকে শায়েস্তা করতে এসে নিজেই তো ফেঁসে গেল। এই লোকটা নির্লজ্জ, ঠোঁটকাটা হলো কবে? যা দেখে সবই যেন কেমন নতুন নতুন লাগে তার।

আদ্রিশ পুনরায় বলল

-‘ আচ্ছা, তোমায় আর মুখ ফুটে কিছু বলতে হবে না। আমার যা বোঝার তা বোঝা হয়ে গেছে। নাও চলো বউ তোমার যত্ন আত্তি করি। আমি কিন্তু আবার যত্নবান স্বামী, তোমার যত্নের কোনো ত্রুটি রাখবো না।

আদ্রিশের কথা শুনে মাথা ঘুরে ওঠে মেহরুনের। লজ্জায় মন চাচ্ছে মাটি খুঁড়ে মাটির তলদেশে চলে যেতে। ইতোমধ্যে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তার। ছোটাছুটি করেও যে কোনো লাভ হবে না তা বোঝা হয়ে গেছে তার। এই লোক আগের তুলনায় আরও শক্ত করে চেপে ধরে আছে তাকে। ছাড়ার কোনো নামই নেই। যেন ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে সে। এসব ভাবতে ভাবতে মাথায় হাত চলে যায় তার। মাথায় হাত দিয়ে মেহরুনকে এভাবে বাংলার পাঁচের মতো মুখ করে বসে থাকতে দেখে আদ্রিশ ভ্রু কুচকে বলল

-‘ কি হলো তোমার আবার?

মেহরুন উত্তর দিতে না চাইলেও দাঁতে দাঁত চেপে বলল

-‘ মাথা ঘোরাচ্ছে আমার।

মেহরুনের কথা শুনে আদ্রিশ অবাক হয়ে বলল

-‘ ওমা, মাথা ঘোরানোর মতো তো এখনো কিছুই করলাম না আমি, তাহলে?

মেহরুনের এবার মাথার সাথে সাথে আশপাশের জিনিসগুলোও ঘুরতে থাকে। ডাক্তাররা আসলেই ভালো হয়না। সব একেকটা ফাজিলের হাড্ডি হয়! নইলে কত্তো বড় বজ্জাত হলে এসব কথা বলতে পারে একটা মানুষ! শেষমেশ ইনোসেন্ট ফেসের আড়ালে এমন একটা হাড়ে বজ্জাত ব্যাটার সাথে তার বিয়েটা হতে হলো! জীবনটা তেজপাতা হয়ে গেল তার। এই ভেবে কপাল চাপড়ায় মেহরুন। তা দেখে আদ্রিশ হো হো করে হেসে ওঠে। আদ্রিশ মনে মনে বলল, ‘আমায় অপদস্ত করতে এসে নিজেই কেমন নাস্তানাবুদ হয়ে গেলে।’ হেহে 😂

হাসি থামিয়ে হুট করে মেহরুনকে কোলে তুলে নেয় আদ্রিশ। হকচকিয়ে যায় মেহরুন। ছোটাছুটি করতে নিলেই আদ্রিশ শীতল কন্ঠে বলল

-‘ ছোটাছুটি করছ করো, হাত ফোসকে গেলে কিন্তু সোজা মেঝেতে পড়ে কোমড় ভাঙবে। এখন তুমি কি চাচ্ছ, কোমড় ভেঙে আমার কোলে চড়ে থাকতে?

মেহরুন আর কোনো কথা বাড়ায় না। এ লোকের সাথে কথা বাড়ালে তাই লজ্জায় পড়তে হবে। তাই চুপচাপ মাথা নুইয়ে থাকাটাই এখন শ্রেয়।

মেহরুনকে বিছানায় বসিয়ে মেহরুনের একদম কাছে চলে যায় আদ্রিশ। এতোটা কাছে যে একে অপরের নিঃশ্বাস শুনতে পাচ্ছে। আদ্রিশ এগিয়ে যেতে থাকে মেহরুনের ঠোঁটের কাছে ঠিক তখনই আদ্রিশের ফোনটা বেজে ওঠে। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে ফোন রিসিভ করে সে। ইমার্জেন্সি কল এসেছে তার। গুরুতর রোগীর যায়যায় অবস্থা, এখনই যেতে হবে তাকে। শুনে কপাল চাপড়ায় আদ্রিশ। ফোনটা রেখে করুন কন্ঠে বলল

-‘ সবই আমার কপাল। কেন মরতে ডাক্তার হইতে গেলাম। রোগীগুলা অসুস্থ হওয়ার আর সময় পায়না। আমার রোমান্টিক মুডটাই নষ্ট করে দিল শালার আনোমান্টিক রোগী। তোর বিয়ে হলেও বউয়ের আদর পাবিনা, বেদ্দপ রোগী। ধুর ছাঁই।

আদ্রিশের দুঃখী দুঃখী ফেস দেখে হেসে ওঠে মেহরুন। বেচারা আদ্রিশের জন্য খারাপ লাগলেও হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খায় মেহরুন। 🤣

#চলবে ~