আমার ললিতা পর্ব-০২

0
562

#আমার_ললিতা
#পর্ব:২
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“তুমি কী কখনো কোনো কাজ ঠিকঠাক করতে পারো না কহনা?দেখতে পাওনি আমি খুব জরুরি কাজে যাচ্ছি।এখন আমার ড্রেসটা ন’ষ্ট করার কোনো মানে হয়না।”

নিজ স্বামীর বিরক্তভাবকে কহনা সামান্য হাসিতে লুকানোর চেষ্টা করলো।হাত বাড়িয়ে বলল,

“আমি অন্য স্যুটটা বের করে দিচ্ছি।আপনি বদলে আসুন সিকান্দার।”

“থাক।তোমার দয়া দেখাতে হবেনা।খুব করেছো।গত বত্রিশ বছর ধরে করে চলেছো।আজ যদি তোমার জায়গায় তোমার বোন হতো…।”

“আপনি সামান্য ব্যাপারে অতীত টেনে নিয়ে এলেন কেন?”

কহনার গলার সুর কেঁপে উঠলো।কিন্তু চুপ হয়ে গেলো সে।তারা জমজ দুটো বোন ছিল।আশ্চর্যভাবে কহনা ও অহনার স্বভাবও পুরোপুরি এক।সিকান্দার মূলত অহনাকে পছন্দ করলেও তার ভুল বর্ণনায় কহনা স্ত্রী হয়ে গিয়েছে।তবে সেই শোক মানুষটি ভুলতে পারেনি।তাইতো কহনাকে স্ত্রী রুপে এতো বছর পরেও দ্বিধাভরে মেনে চলে।দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সে ডিভানে বসে টিভি অন করলো।রান্না বড় প্রিয় তার।তাই নতুন নতুন রেসিপি দেখে রোজ।

“কী দেখে আমার বাবাকে বিয়ে করেছিলেন মা?অন্তত তাকে তেতো পান বলা চলে।না ঠিকঠাক ফ্লেভার না অন্যকিছু।”

“কোথা থেকে আসা হলো দুষ্টু ছেলে?আর এলি বা কখন?সারারাত তুই বাসায় ছিলি না।”

অনল কপালে হাত রেখে বলল,

“মা বিয়ে করেছি তো।বউ আসতে দেয়নি রাতে।”

কহনা দৃষ্টি ছোট ছোট করে ফেললো।ছেলেটি তার এমন মজা সবসময় করে।মাঝেমধ্যে মনে হয় সত্যি বলে কীনা।অনলের হাতখানা চেপে ধরে বলল,

“সত্যি তো বিয়ে করিসনি?”

“মিথ্যা বিন্দুমাত্র নেই।একটা কথা জানো পাশের বাসায় ঠিক মি.সিকান্দার টু আছে।নাম যেন কী মনে নেই।একদম তার মতোন।আমার ধারণা মেলাতে হারিয়ে যাওয়া দুই ভাই।”

“ওইযে সেই লোকটা যে অনিমের বিরুদ্ধে কে’স করতে চেয়েছিল?”

“জি।তার স্ত্রী অনেক সুন্দর মা।আমি ক্রাশ খেয়েছি।”

“স্ত্রী?নাকী দুটো মেয়ে আছে তাদের মধ্যে কাওকে?”

অনল হেসে উঠলো।এ পুরুষটির বুদ্ধিদীপ্ত চোখজোড়া সবসময় মুখের কথার ভিন্ন কিছু বলে।কিন্তু শুনতে বড় মধুর লাগে।সকলে কহনাকে বলে তার ছেলে নাকী অনেক বেশী গম্ভীর।কিন্তু এতো হাসে যে সে কীভাবে গম্ভীর হয়?

“ভুল।আমার আন্টিকে পছন্দ হয়েছে।তোমার সাথে বন্ধুত্ব করিয়ে দিবো।এখন ঘুমাতে যাবো আমি।সারারাত বউ অনেক কাজ করিয়েছে।”

অনল উঠে দাঁড়ালো।ছেলেটির চেহারা কহনা নিজের দাদার সঙ্গে তুলনা করে মাঝেমধ্যে।সাদাকালো ছবিতে দেখেছিলো লোকটির যুবক বয়সের ছবি।সুদূর ইরান থেকে বলে এসেছিল।তার মনে হয় রুপ,বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতায় অনল সেই তার দাদা।

অনলের রুমটিকে একটু স্পেশালভাবে তৈরী করা হয়েছে।পুরো তিনতলার অর্ধেক জুড়ে।যেখানে সুবিশাল লাইব্রেরি রয়েছে।বইতে ঠাসা যা।কিন্তু সেখানে সকলের প্রবেশের অনুমতি নেই।ওটা তার একান্ত নিজের জায়গা।দ্রুত রুমে প্রবেশ করে সে গোসল করে নিলো।তার পেটানো শরীরকে শিল্প বলা চলে।একটা ফোন কল আসায় বাথরোব পরে তা রিসিভ করে বাহিরে এলো।যেখানে শরীরের অধিকাংশ অনাবৃত হয়ে আছে।

বেলী আজ অনেকদিন পর ডান দিকের জানালাটি খুললো।যেন রুমে একটু রোদের দেখা মিলে।আগে এই জানালা দিয়ে রামীমের সাথে প্রেম করতো সে।স্মৃতি থেকে বাঁচতে খুব বেশী খুলে না।খোলার পরে মৃদু সমীরণে তার চুলগুলো দোলা খেলো।উষ্ণ শ্বাস ফেলে উপরে তাঁকিয়ে দেখলো একজন সুপুরুষ দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।শারীরিক গঠনে অনুমান হলো এটি সেই ছেলেটি যাকে সে Bad boy বলে সম্বোধন করেছিলো।সেদিন মাস্ক থাকায় চেহারা দেখা হয়নি।বেলী খেয়াল করলো ছেলেটিকে সুন্দর না না বেশ সুন্দর বলা চলে।ওইযে শরৎচন্দ্রের বিপ্রদাস চরিত্রের মতোন।সুগঠিত নাকটাও একদম পার্ফেক্ট।ছেলেদের এতো সৌন্দর্য বেলীর পছন্দ নয়।আবার একটি বিষয়ে রাগ লাগলো।কী দরকার এরকম উন্মুক্ত হয়ে ঘোরার?বেলী কী তবে মানুষকে জাজ করছে?নিজের সাথে ফিসফিস করে বলল,

“দরকার কী ছেলেটাকে এভাবে দেখার?”

প্রশ্নটি করে ভাবুক হয়ে গেলো বেলী।সে খেয়ালও করেনি যে সে অনলের পানে তাঁকিয়েই ভাবছে।হুট করে পুরুষটি তার দিকে সরাসরি তাঁকালো।এবং বাথরোবের উপরের অংশ নামিয়ে দিলো।বিস্ময়ে অক্ষিকোটর বৃহৎ হয়ে গেলো বেলীর।এখনও অনল তার দিকে তাকিয়ে আছে।কী বিভ্রান্তময় করে তুলে সেই দৃষ্টি।অনল তড়িঘড়ি করে জানালা বন্ধ করে দিলো।জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে বেলী।অনলের নামে বা’জে কিছু বলতে মুখ খুলবে তখন আপনা-আপনি শব্দ বের হয়ে এলো,”hot!’ পরক্ষণে ঠোঁটে হাত দিলো।আশ্চর্য তার কণ্ঠ, ব্রেইন এমনি বেইমানি করলো কেন?

(***)

বেলী পূর্বে যা উক্ত জানালা খুলতো কিন্তু সেই দিনের পর থেকে আর কখনো খুলেনি।পরবর্তীতে ছেলেটিকে নিছক খারাপ ব্যক্তি মনে হয়েছে।কিন্তু খুব বেশী মাথায় সে রাখেনি।সে পুরুষ বিদ্বেষী।সেখানে কোথাকার অনলকে কেন তার অনুভূতি পো’ড়া’তে দিবে?

কফিশপে বসে বেলী মন দিয়ে একটি বই পড়ছিলো।এটা তার নিজস্ব সময়।সকলের থেকে দূরে থেকে যা সে অতিবাহিত করে।কিন্তু পিছনে বসে থাকা একটি মেয়ের কথাবার্তা খুব বিরক্তবোধও হচ্ছে।যে কীনা কোনো একজন পুরুষকে প্রেম নিবেদন করে চলেছে।এক সময় তো কান্না করে অনুনয় করছে।বেলীর এবার কৌতুহল হলো।সে পিছন ফিরে উক্ত টেবিলে তাঁকিয়ে চমকে উঠলো।সেই সুগঠিত কান্তিমান পুরুষটি তার পানে তাঁকিয়ে আছে।একদম চোখের দৃষ্টিও যেন ফেলছেনা।সামনের মেয়েটি আরেকটু কেঁদে একটু টিস্যু তার উপর ছুঁড়ে দিয়ে চলে গেলো।তাতে অবশ্য অনলের কিছু হলো না।বেলী বিরক্ত হয়ে বইতে মনোযোগ দিলো।

“তো কেমন দেখলে ললিতা আমাকে?”

চমকে উঠলো বেলী।এতো অল্প সময়ে অনল কীভাবে এখানে এলো?

“ললিতা?আমি নই।”

“তুমি সেই চেঙ্গিস খানের মেয়ে নও?আমার প্রতিবেশী?”

“এই কী বলছেন এসব?”

অনল একটু সামনে ঝুঁকে বলল,

“আমাকে সেদিন কেমন দেখলে?ভেবেছিলাম আর একটু হলে আমার সৌন্দর্যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে।”

“আমি আপনাকে দেখিনি সেদিন।আকাশে মেঘ জমেছিল কীনা পরীক্ষা করছিলাম।আবহাওয়ার রিপোর্ট পড়ার প্র্যাকটিস করছি।”

কথাটা বলে বেলী বইতে নিজের মুখ লুকালো।অনল হিসেব করলো মেয়েটির বয়স কতো হতে পারে?কথাবার্তা মুখটিতে এখন বাচ্চামো স্পষ্টত।

“দারুণ মিথ্যাবাদী।আচ্ছা দেখি তো মিথ্যা কথা বলা ব্যক্তিদের কফি নোনা স্বাদের হয় কীনা।আমি কোথাও পড়েছিলাম।”

অনল অনুমতির অপেক্ষা না করে কফিতে চুমুক দিলো।বেলী তেতে উঠলো তার।স্বভাবে কিছুটা সে নিজের পিতা তোফায়েলের মতোন।

“আপনার সাহস কীভাবে হলো আমার কফি খাওয়ার?”

“এভাবে।”

পুনরায় কফিতে চুমুক দিলো অনল।বেলীর এতো বেশী পরিমাণ রাগ উঠলো যে চোখে অন্ধকার দেখছে।সে জানে এমন পুরুষদের কীভাবে শা’য়ে’স্তা করতে হয়।উঠে এসে অনলের শার্টের কলারে ধরে বলল,

“জানেন,আপনাকে এখুনি চাঁদের দর্শন করিয়ে আনতে পারি?”

“চাঁদ হবেনা জুপিটারে যাবো।চাঁদে তোমার মতোন রোমান্টিক মেয়েরা যায় মাই ললিতা।”

“আবার ললিতা?আমি রোমান্টিক নই।”

“পুরোদস্তুর।”

হাত কাঁপছে বেলীর।সে কী অনলকে একটি ঘু’ষি দিবে?যদি উল্টো তাকে দেয়?অনলের শার্টের বন্ধনে ফুলে থাকা আর্মস দেখে সেই চিন্তা বাদ দিলো সে।ওদিকে পুরুষটি তার কফি পুরোটা খেয়ে ফেললো।বেলী অতিরিক্ত রাগে কেঁদে ফেললো।আশ্চর্য সে এতো অদ্ভূত বিহেভ করছে কেন?অনল কোনো প্রতিক্রিয়া না দিয়ে বলল,

“হয় রাগ দেখাও তা নয় কান্না করো।তবে দুটোতে তোমাকে সুন্দর লাগছে ললিতা।”

“আমি ললিতা নই।”

“তাহলে?”

বেলী নিশ্চুপ থেকে বই নিয়ে দ্রুত চলে যেতে গেলো।কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরে এসে বলল,

“ধরুন,আমি তিনটা সিপ নিয়েছিলাম কফির সেটির দাম।দশ টাকা।আমি আবার পুরুষদের ঋণ রাখিনা।এবং হ্যাঁ আমি আর একটাও বেশী দিবো না কিন্তু।”

চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।সকলে রেসপন্স করবেন।

কবীর শাহ ও বেলাডোনার বইটি প্রি-অর্ডার করেছলন তো?তা নয় দ্রুত করে ফেলুন।

“মিঠা মিঠা রোদ” কাহিনী সংক্ষেপ—

এক রুপকথাকে তাড়া করে চলে কবীর শাহ। বাজপাখি সম্বোধনে যাকে সকলে চিনে। ইতিহাসে হারিয়ে যাওয়া কবি ইফ্রাতের বর্ণনার পার্শুমাসের সুন্দরী লায়লার হৃদয়টিকে গভীর সমুদ্রে সন্ধান করে চলেছে। নিয়ন্ত্রিত এ পুরুষটির জীবনে হঠাৎ তার আশেপাশের দৃঢ় দেয়ালে ফাঁটল ধরিয়ে শত্রুর কিশোরী কন্যা তোশার আগমন ঘটে। মেয়েটা স্বপ্ন দেখে অদ্ভুতভাবে কিংবা স্বপ্নে বাঁচে।যেখানে বয়সের পার্থক্য বিশ বছর সেখানে কেমন অদ্ভূত অনুভূতি তৈরী হয়ে গেলো।

সমুদ্র,একটি রুপকথা,ভালোবাসা, ঘৃণা,ভয়,ষড়যন্ত্র,ধোঁকা সবকিছুর ঝড়কে অতিক্রম করে এক সূর্য উঁকি দিবে।তোশার ভাষ্যমতে সেটিই
” মিঠা মিঠা রোদ

চলবে।