#আমার_ললিতা
#পর্ব:২৫
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
কড়া রোদে বের হয়ে বেলীর স্মরণে হলো দিনটা আজ তার খারাপ যাবে।ভীষণ খারাপ।একে তো সকালে এক চোট বাবার সাথে টেবিলে বসে তর্ক করেছে।দ্বিতীয়ত ভার্সিটির এক সিনিয়র বেশ কিছুদিন যাবত ভীষণ ঝামেলা তে রেখেছে তাকে।বেলী ভেবে পায় না সাধারণ ছাত্র হয়ে যখন উপরের ধাপে উঠে তখন কেন তাদের মধ্যে এক ধরণের অহংবোধ চলে আসে।
“এখানে দাঁড়িয়ে কী ভাবছিস?”
সিয়ামের ভাবুক বেলীর পাশাপাশি এসে দাঁড়ালো।মেয়েটা এক ধ্যানে আকাশ পানে তাঁকিয়ে আছে।আশেপাশে কী হচ্ছে যেন ইয়ত্তা নেই।
“বের হতে মন চাচ্ছে না আজ।দেখেছো কতো গরম?”
“বছরের এই শেষবেলায় এতো গরম সত্যি অবাক করে দিচ্ছে।তুই চাইলে লিফট দিতে পারি বাইকে।”
“সত্যি? তবে আজ যে তোমার কোচিং এ শেষ ক্লাস।দুদিন পর পরীক্ষা।এরমধ্যে বিপরীত পথে গিয়ে সময় কেন নষ্ট করবে?”
“উমম লজিক্যালি তুই কথাগুলো ঠিক বলেছিস।কিন্তু আমি সেই রকম স্টুডেন্ট কখনো ছিলাম না যারা পরীক্ষার দশ মিনিট আগেও পড়তে পড়তে যায়।এখন মাইন্ড ফ্রেশ থাকা দরকার।প্রচন্ড চাপ গেলো।”
বাক্যটির শেষাক্তে সিয়ামের কণ্ঠে থাকা ক্লান্তি অনুভব করতে পারে বেশী।ভাইয়ের জন্য সে মন থেকে দোয়া করে যেন বিসিএসটা হয়ে যায় তার।যদি না হয় তবে পিতার থেকেও কম টিপ্পনি পাবেনা।
“আমি যেতে পারি তোমার বাইকে যদি মাঝ রাস্তায় আইসক্রিম খাওয়াও।”
“একজন বেকার মানুষের কাছে তুই আইসক্রিম খেতে চাচ্ছিস?উল্টো তুই নিজে চাকরি করিস।”
“এটাকে জব বলে তোমার মনে হয়?আজ অবধি কোনো কাজ আমাকে দিলো না। মাঝেমধ্যে মনে হয় শুধু দেখার জন্য আমাকে বসিয়ে রাখে মি.কাশফ।কী অদ্ভূত নাম।”
“যেটাই হোক।এই মাসের স্যালারি নিশ্চয় আমি পাইনি।চল বাকী কথা পরে হবে।বাই দ্য ওয়ে তুই এতো গুলো টাকা দিয়ে কী করলি?”
“মহারানীর গুপ্তধন সেসব।বলা যাবেনা।”
বিরক্তিকর ঘ্যানঘ্যানে শব্দে বাইক স্টার্ট করলো।বেলী ভাইকে শক্ত করে ধরলো যাতে পড়ে না যায়।আগে কতো মিল ছিল তাদের তিন ভাই বোনদের মধ্যে।সময়ের চাপে সবকিছু কেমন ভোঁতা হয়ে গিয়েছে।মিনিট দশেক বাদে বাইক অফিসের সামনে এসে দাঁড়া করালো সিয়াম।বেলী নামতে নামতে বলল,
“রোজ রোজ আমাকে এমন রাইড দিলে মন্দ হয়না।”
“হ্যাঁ আমার বয়ে গিয়েছে তোর সেবা করতে।দাঁড়া তোর আইসক্রিম এনে দিচ্ছি।”
বাইকটা একপাশে করে সিয়াম চলে গেলো আইসক্রিম আনতে রাস্তার ওপাশের দোকান থেকে।তৎক্ষনাৎ সেখানে এসে অনলের গাড়ী থামলো।রোদ চশমার আড়ালে কৌতুহলী চোখে সে একবার স্বীয় ললিতাকে পর্যবেক্ষণ করলো।মাথায় উঁচু করে বাঁধা খোঁপাকে প্রাচীন মিশরের পিরামিডের সঙ্গে সহজে তুলনা করা চলে।ভাইয়ের অপেক্ষা করতে করতে অজান্তে সে যে নিজের অধরযুগল কাঁমড়ে ধরেছে তা কী জানে?যা মুহুর্তে খারাপ ছেলে অনলকে আরো দশগুণ খারাপ হতে বাধ্য করে।সিয়াম আইসক্রিম এনে বেলীর সামনে ধরতেই তার ঠোঁট বিস্তৃত হয়ে গেলো চওড়া হাসিতে।বিদায় নিয়ে চলে গেলো উপরে।অনল একটু ধাতস্থ হয়ে গাড়ী থেকে নেমে এলো।রোদ চশমাটা ড্রাইভিং সীটেই ফেলে রাখলো।কাওকে ঘা’য়ে’ল করতে হলে চোখ নামক অস্ত্রতে কেন সুরক্ষাবন্ধনী দিয়ে রাখবে?
(***)
নির্জন কেবিনে একমনে আইসক্রিম থেকে ব্যস্ত বেলী।এসির বাতাস সঙ্গে ঠান্ডা ঠান্ডা আইসক্রিম মুহুর্তে মনটা ভালো করে দিয়েছে তার।
“হ্যালো ললিতা।”
অনলের হুট করে এমন চলে আসায় বেলী হকচকিয়ে উঠলো।অথচ পুরুষটি একবার তার দিকে তাঁকায়নি।এসে ল্যাপটপ খুলে বসেছে।বেলীর একবার মনে হলো আইসক্রিমটা শেয়ার করা উচিত।
“তুমি আমাকে অভিবাদন ফিরিয়ে দাওনি।এটা কিন্তু ঠিক নয়।”
“ভাবছিলাম একটা বিষয়।কারো সামনে বসে বসে খাওয়া উচিত নয়।আবার মুখের খাবারও এভাবে দেওয়া…।”
“জানো তো শেয়ার করলে ভালোবাসা বাড়ে।”
“এমন যদি সত্য হতো তাহলে আজকাল ডিভোর্সের সংখ্যা বেশী হতো না।”
“কারণ তারা ঠিকঠাক ভালোবাসতে জানেনা।একটু ছোট হতে জানেনা।অপর মানুষকে চাইতে জানেনা।এই জেনারেশনের মাথা অনেক সুন্দর করে ব্রেইন ওয়াশ করা হয়েছে একটা বিষয় দিয়ে।ভালোবাসার মানুষকে পেতে হবে এমন কোনো কথা নেই এবং দূর থেকে সুন্দর।প্রথমত ভালোবাসা মটেও দূর থেকে সুন্দর নয়।তাছাড়া ভালোবাসার মানুষটাকে অর্জন করতে হবেই সমস্ত বৈধ ও সৎ পন্থা দিয়ে।অর্জন করার মতোন সাহস না থাকলে এসব ভোগাস কথা ছড়ানোর কোনো অধিকার নেই।”
বেলী পলকহীন অনলের কথাগুলো শুনলো।কথার গভীরতা অনেক।অথচ তার মাথায় সেটি ভালোভাবে ঢুকেনি।আইসক্রিম গলে তার হাতে স্পর্শ করতেই টনক নড়লো।ঈষৎ হেসে বলল,
“যদি অপর মানুষ না চায় সম্পর্কটা হোক।তখনও ফোর্স করা যাবে?”
“না।সেটা কখনো বৈধ হয়না।এদিক থেকে দেখতে গেলে ভালোবাসা সুন্দরই না।আমি দুটো উদাহরণ দিতে পারি।আমার বাবা-মা ও তোমার বাবা-মায়ের মধ্যে কিন্তু কিঞ্চিত পরিমাণে ভালোবাসা নেই।সমাজ ও সন্তানের দায়বদ্ধতাতে নাটক করে।আমি এই কথাগুলো বলতে ভীষণ পছন্দ করি।তবে চিরন্তন সত্য।”
অনলের মুখের রঙটা বিবর্ণ হতে দেখা গেলো।বেলী এই ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন করলো না।কারণ নেপথ্যে কাহিনী সম্পর্কে সে অবগত।বাহির থেকে হঠাৎ দরজাতে শব্দ হলো।একজন আস্তে করে আয়েশার আসার সংবাদ দিলো।অনলের মুখে এক ধরণের পৈশাচিক হাসি ফুঁটে উঠলো।কৌতুহলী বেলী শুধায়,
“আয়েশা?”
অনলের কাঠখোট্টা জবাব,
“আমার ফিউচার গার্লফ্রেন্ড।ভেরী বিউটিফুল ওমেন।তুমি নিজে দেখলেও ছেলে হওয়ার বাসনা করবে।হেনরির উপন্যাসের আয়েশার মতোন।”
বেলী তৎক্ষনাৎ প্রতিক্রিয়া করতে পারলো না।স্মরণে হচ্ছে অন্ত:করণে কোথাও গোলাপের কাঁটা এসে লাগলো।আশ্চর্য!এমন অনুভূতি হচ্ছে কেন?উৎসুক দৃষ্টিতে সে দরজার পানে আয়েশার আগমনের আশায় চেয়ে রইলো।
চলবে।
#আমার_ললিতা
#পর্ব:২৬
#লেখা::সামিয়া_খান_প্রিয়া
“আপনাকে দূর থেকে অতি সাধারণ দেখায় অনল।তবে কাছে এলে স্মরণে হয় একটি উত্তপ্ত মরুভূমির মাঝে দাঁড়ানো শত বছরের সজীব বৃক্ষ।দেখতে সুন্দর।সইতেও সুন্দর।”
“দারুণ উপমা দিলেন আয়েশা।আমি আপনার ব্যাপারে বলতে পারি আপনি ভীষণ এপ্রিশিয়েট করতে জানেন।”
“থ্যাংক ইউ।”
দুজন মানুষের এই মিষ্ট বার্তালাপ মটেও সহ্য করতে পারছেনা বেলী।আশ্চর্যের বিষয় খাবারের সাথে এই উদ্ভট কথাগুলোও হজম করে নিতে হচ্ছে।একটি পাঁচ তারকা রেস্ট্রুরেন্টে এসেছে তারা।অনলের কথা মেহমানকে ভালোভাবে আপ্যায়ন করা জরুরি।এতে নাকী বরকত আসে।বেলীর নিজের উপর খুব মায়া হচ্ছে।এক তার পোশাক দেখে মনে হচ্ছে সে বহু বছর ধরে ভালো পোশাক কেনাকাটা করেনা।দ্বিতীয়ত কীসব অর্ডার করেছে অনল।সবথেকে খারাপ স্বাদ হচ্ছে “রোস্টেড ডাক” বলা ডিশটা।চামচে গেঁথে আরেকবার মুখে দিয়ে হাল ছেড়ে দিলো।আয়েশা অবশ্য তাকে একবারও খেয়াল করেনি।পুরোদস্তর অনলে মজে আছে।
“মি.অনল কাশফ।আমরা এবার একটু জরুরি কথাবার্তাতে আসি।আমি আপনার বিষয়টা ভেবেছি।কিন্তু সেই ফর্মুলটা আমি কিনেছি কয়েক মিলিয়ন দিয়ে।আমি এতো সহজে তা ছাড়বো না।এমন হতে পারেনা যে আমরা দুজন পার্টনারশিপে…।”
“নো।”
“পুরো কথা না শুনে ঋণাত্বক জবাব দেওয়া কিন্তু উচিত নয়।”
“যা আমার তা শুধু আমারই।আয়েশা!জানেন আমি কখনো আমার প্রিয় নারীকে কোনো ছেলের সঙ্গে মিশতে দেইনা।কারণ যা আমার সে সবদিক থেকে শুধু আমার দিকেই ফোকাস রাখবে।”
“এটাকে বলে টক্সিক বিহেভিয়ার।”
“আমি বিজনেসের ক্ষেত্রেও টক্সিক।একজন চোরের থেকে কেনা ফর্মুলাকে আপনি নিজের বলে চালিয়ে দিতে পারেন না।”
“সেক্ষেত্রে সমঝোতা কী?আপনাকে এমনি দিয়ে দেওয়া?আপনি এতোটা বোকা যে অন্য কোনো ডকুমেন্টস রাখেননি।”
অনল অলস ভঙিতে হাসলো।বেলী তার দিকে তাঁকিয়ে আছে আগ্রহ ভরে।খাবার ইন্টারেস্টিং না হলেও এখানকার আলোচনার টপিক বেশ সুস্বাদু মনে হচ্ছে।দুম করে হঠাৎ অনল শক্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,
“ললিতা।কাঁটা চামচ এভাবে ঠোঁটে লাগাবেনা।আমার অস্বস্তি হয়।”
“হাহ!অনল কিন্তু…।”
অধরযুগল ঈষৎ ফাঁকা করে বেলী বার কয়েক চোখের পলক ফেললো।অনল তো একবারও তার দিকে তাঁকায়নি।
“আই সেইড নো ললিতা।বুঝতে পেরেছো?”
বেলী মাথা দুলিয়ে বলল,
“জি।”
“এখন চামচ রেখে দাও।আর খেতে খারাপ লাগছে সেটা আগে বলা উচিত ছিল।মেন্যুতে দেখো দারুণ এক সুইট ডিশ আছে।সেটা অর্ডার করো।তো আয়েশা কীযেন বলছিলেন আমি ডকুমেন্টস রেখেছি কীনা।এই প্রশ্নের জবাব তো আপনিই দিবেন।আমাকে দেখে আপনার নিশ্চয় বোকা মনে হয়না।”
“হয়না।ডকুমেন্টসের কপি যদি থাকে তাহলে আপনি ফর্মুলটাকে বাজারে নিয়ে আসুন।”
“এবং সেটাকে চুরি করে আপনি পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে দেন।সঙ্গে অতি দ্রুত পেটেন্টও করে ফেলবেন।মোস্ট ইম্পর্টেন্ট পার্ট।ইউ উইল স্যু মি।”
“আমি এমন করবো তা কীভাবে মনে হয়?”
“অর্থের কাছে কেউ সত্যবাদী নয়।মামলা হওয়ার পর আমি কখনো জিততে পারবো না।এর থেকে সহজ উপায় আমার জিনিস আমার কাছে ফেরত আসা।আমি যতোদূর জানি এখনও কাগজটা পুরোপুরি ডিকোড করতে পারেননি।”
আয়েশার খয়েরি অধরযুগল বিস্ময়ে প্রসারিত হলো।সে ফিসফিস করে বলল,
“আমার পিছনে গুপ্তচর লাগিয়েছেন?”
“না।এগুলো আমি আপনার চেহারা পড়ে বলে দিতে পারি।”
“এতো বুদ্ধিমান একজন মানুষের সাথে এতো সহজে হেরে যাওয়া বোধহয় ঠিক হবেনা।আমি চেষ্টা করবো যেন ফর্মুলটা আমার কাছ থেকে না নিতে পারেন।উল্টো সম্পূর্ণ বেইসটা আপনি দিতে বাধ্য হবেন।”
“আপনার স্বপ্নে আয়েশা এমনটা হবে।খাবার শেষ করুন।বাই দ্য ওয়ে আপনাকে সুন্দর লাগছে আজ।কিন্তু চুলের ডিজাইনটা চেঞ্জ করার চেষ্টা করবেন।”
“আপনি দারুণভাবে ম্যানিউপুলেট করতে পারেন অনল।”
“বিশ্বাস করুন আয়েশা।আমি এখনও আপনাকে নিজের বৈশিষ্ট্য কিছুই দেখাইনি।”
“আমি পুরোটা দেখার অপেক্ষাতে আছি।”
পরবর্তী সময়ে টুকটাক অন্য বিষয়ে কথা হলো তাদের মধ্যে।বেলী এখনও হাঁসের মাংস চিবিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।আয়েশা খাবার শেষ করে বলল,
“চলুন সাভারে একটা গলফ ক্লাব আছে।সেখানে কিছুক্ষণ কাঁটানো যাবে।”
“স্যরি আয়েশা।আমার বের হতে একটু সময় লাগবে।কারণ ললিতা এখনও কিছুই খায়নি।”
“ললিতা?বাট সে তার নামটা বেলী বলেছিল।ললিতাও নাইস নেইম।”
“এই নামে শুধু আমি ডাকি।শুধু আমি।অন্য কেউ না।”
আয়েশা বুদ্ধিমতী একজন মেয়ে।অনলের দৃষ্টিতে তীব্রভাবে এক অনুভূতি দেখতে পেলো।বেলী নামের মেয়েটা প্রচন্ড সাদামাটা।একটা তিরস্কারমূলক হাসি ফুঁটে উঠলো চেহারায়।একটু ঝুঁকে অনলকে ফিসফিস করে বলল,
“আপনার বুদ্ধির মতোন মেয়ে চয়েজের প্রশংসা করতে পারলাম না।আশা করি ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড ছাড়া কিছুই না।”
অনল নিশ্চুপ হয়ে শুধু তাঁকালো।ভেতরে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের মতো গর্জে উঠেছে সে।তবে এটি সঠিক সময় না।এজন্য বিদায় সম্ভাষণ না করে ওয়েটারকে ডাক দিলো।টেবিল ফাঁকা হতে বেলী ঈষৎ কেশে বলল,
“আপনি এই মেয়েকে নিজের জিএফ বানাবেন?প্রচন্ড করপোরেট চিন্তাভাবনা করে মেয়েটি।”
“বানালে তোমার নিশ্চয় কোনো সমস্যা নেই ললিতা।”
“আমার কী সমস্যা হবে?হুহ।আর বলবেন না আজ এখানে আসবো।একটা ভালো ড্রেস পরে আসতাম।”
“এখনও মন্দ লাগছেনা।”
“হুম।বাই দ্য ওয়ে আপনাদের ফুড চয়েজ ভীষণ বিদঘুটে।”
“তুমি এসব খেয়ে অভ্যস্ত নও।এজন্য ভালো লাগেনি।আমার প্রায়ই চাইনিজ এসব ডিশ ট্রাই করা হয়।একটা সহজ সমাধান আছে।”
“কী?”
অনলের মুখে শয়তানি হাসি ফু়টে উঠলো।বেলীর দিকে ঝুঁকে বলল,
“আমাকে খাও।এরপর থেকে অটোমেটিক এসব খাবার ভালো লাগবে।আর তুমি যা ভাবছো আমি তাই বলেছি।”
“ডাবল মিনিং কথাবার্তা।”
“নো।ত্রিপল মিনিং কথাবার্তা।”
প্লেটে করে একটা সুইট ডিশ নিয়ে এলো ওয়েটার।বেলী মুখে দিতে চোখ বন্ধ করে ফেললো।এতো।সুস্বাদু জিনিস সে বহুদিন খায়নি।হঠাৎ কী মনে হলো।চামচে করে ভেঙে অনলের মুখের সামনে ধরলো।কান্তিমান পুরুষটি মুহুর্তে হকচকিয়ে উঠলো।বেলী জিহবাতে কামড় দিয়ে বলল,
“স্যরি।এই চামচে আমি খাচ্ছিলাম।আমি অন্য চামচ দিচ্ছি।দেখুন কেকটা অনেক মজার।”
বেলী অন্য চামচ নিতে গেলে তাকে থামিয়ে দিলো অনল।ঠিক প্রিয় নারীর চোখ পানে দৃষ্টি রেখে বেলীর হাতে হাত রেখেই চামচটা মুখে ঢুকালো।অনলের মাতাল করা চাহনী।এডামস আপেলের ওঠানামায় শিরশির করে উঠলো বেলীর শরীর।সহসা চামচটি সরিয়ে দিলো না।বরং মুখের ভেতর রেখেই কামুকভাবে পুরো কেকটি খেলো অনল।বেলী সহ্য করতে পারলো না।চোখ বন্ধ করে ফিসফিস করে বলল,
“এভাবে কে খায়?”
“ওহ স্যরি।আমি ভেবেছিলাম চামচটা তুমি।”
“ছি:।ব্যাড বয়।”
হাত টেনে নিলো বেলী।তবে এখন সবথেকে কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হলো।নতুন চামচ দিয়ে খাবে নাকী অনলেরটা দিয়ে?অনল ভুরু কুঁচকে দেখছে তাকে।মন থেকে হঠাৎ একটি কণ্ঠ উচ্ছাসিত হলো।অনেকটা না চিন্তা করে সেই চামচ দিয়েই খাচ্ছে বেলী।অনল আড়ালে হাসলো।দূর থেকে এই মিষ্টি মুহুর্ত দেখে আয়েশার অধরযুগলেও রহস্যময় হাসি ফুটে উঠলো।পাশে দাঁড়ানো স্বীয় ম্যানেজারকে বলল,
“মেয়েটির ব্যাপারে খোঁজ নাও।আমার অনলকে পছন্দ হয়েছে।সেখানে কোনো থার্ড পার্সন এমন চামচ নিয়ে খেলুক তা চাইনা।”
চলবে।
#আমার_ললিতা
#পর্ব:২৭
“আস্তে পরে যেওনা যেন ললিতা।”
অনলের স্বাবধান বাণী কর্ণকুহর হলো না বেলীর।সে নিজস্ব ভাবনায় মগ্ন।এলেমেলো পা ফেলে দ্রুত শ্যাওলামাখা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলো।বৃষ্টি কণা তীর্যক ভঙিতে তার গা ছুঁয়ে যাচ্ছে।লাল রঙের শাড়ীটা ভিজে গায়ে লেপ্টে আছে তার।কচুপাতায় সংগ্রহ করা জলগুলো দ্রুত এনে দিঘীর জলে মিশালো।অনল শুধালো,
“এতে লাভ কী হলো?সেই তো বৃষ্টির পানি দিঘিতে যাচ্ছে।”
“লাভ হলো না।তবুও এইযে কচুপাতায় সংগ্রহ করতে পেরেছি।এই সময়টুকু আনন্দের।”
বেলীর মুখ বিবরে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো।অনল সেই হাসিকে নেশা ভেবে গিলে নিলো।তার ঘন কালো ভ্রু গুলো খুশিতে নেচে উঠলো যেন।কালো রঙের শার্ট পরেছে সে।ভীষণ দেখতে সুন্দর লাগছে।ভেজা অবস্থাতে বোধহয় সব পুরুষকে সুন্দর লাগে।একটি মোটা বাদামী কাষ্ঠল উদ্ভিদের দেহে গা ঠেকিয়ে বলল,
“তোমরা মেয়েরা সবকিছু তে আনন্দ পাও।অতি তুচ্ছ বস্তুতেও।কিন্তু আমার মনে হয় বৃহৎ কোনো ঘটনা ব্যতীত মানুষদের আনন্দ পাওয়া উচিত না।”
“যেমন-আপনার আনন্দ মেয়েদের মধ্যে।তাইতো?”
সোজাসাপটা খোঁচা দিলো অনলকে।অবশ্য সে হেরে যেতে রাজী নয়।পা ফেলে বেলীর নিকট এসে বসলো।একদম গা ঘেষে। এতো বড় স্পর্ধা তার হলো কীভাবে?কিন্তু ব্যাড বয় শুরু থেকে সাহসী।বেলী চকিতে সরে যেতে চাইলো।কথা ঘুরানোর প্রসঙ্গে বলল,
“আমার পিছন পিছন আসতে হলো কেন আপনার?যদিও এই বাড়ীটা ভৌতিক।আমার পছন্দ হচ্ছে না।”
“বাড়ীটা দেড়শ বছরের পুরোনো।আমার যে ক্লায়েন্ট তার পূর্ব পুরুষ তৈরী করেছিলো।মিটিং এর জন্য পার্ফেক্ট জায়গা।এজন্য চলে এলাম এখানে।যদি আজকে ফিরতে না পারি তাহলে থাকতে হবে এখানেই।তা নিশ্চয় খারাপ হবেনা।”
“পুরোনো বাড়ী ভূতের আনাগোনা যদি হয়?”
“ভূত!আধুনিক ও বাস্তববাদী মেয়ে হয়ে এমন কথা বলা অন্যায়।এই মেয়ে তুমি না বই পড়ো অনেক?একটু লজিক্যাল আলাপ করো।”
বেলী খেয়াল করলো অনল ভূত নিয়ে কথাটাকে খুব বেশী পছন্দ করছেনা।সেক্ষেত্রে গম্ভীর কারণ কী হতে পারে?
“আপনি ভূত ভয় পান?”
“আমি আগুন মাই ললিতা।ভূতে তো ভয় পায় দূর্বল মনের মানুষেরা।”
“তাহলে অপছন্দ করার কারণ কী?”
ভাবুক দেখা গেলো অনলকে।দিঘির পানে তাঁকিয়ে ঢোক গিললো।এতে গলায় উঁচু হয়ে থাকা এডামস আ্যপেল উঁচু নিচু হলো।বেলীর শরীর শিরশির করে উঠলো।
“বিষয়টা একটু অদ্ভূত।আমার মা ভূত জিনিসটাকে ভয় পায় অনেক।ফলস্বরুপ বাবা এই ভয় দেখিয়ে অনেক কথা মানিয়ে নিতো।অনেক সময় অহেতুক কথাও।সবথেকে খারাপ ছিল বাবা তার এক মেয়ে কলিগের সাথে কক্সবাজারে যেতে চেয়েছিল।কোনো স্ত্রী তা মেনে নিবেনা।”
“স্বাভাবিক।এরপর কী হলো?”
“স্ক্রিপ্টেড হরর গল্পের মতোন একটা ভূতের পরিবেশ তৈরী করেছিলো।যেখানে রক্ষাকর্তা ছিল বাবা।ব্যস মা কে বাধ্য হয়ে হ্যাঁ বলতে হয়।সত্য বলতে ফোবিয়া বিষয়টি মারাত্বক।এখানে কেউ লজিক্যালি ভাবতে পারেনা।আমি তখন সেভেনে পড়তাম।বিষয়গুলো বুঝতে পেরে এবং মায়ের কান্নারত মুখগুলো আমাকে কষ্ট দিয়েছিল অনেক।”
“আঙকেল কী?”
“না।আমার বাবা চরিত্রহীন নয়।তবে ওনি স্বাধীনচেতনায় বিশ্বাসী।”
“ওহ।”
অনল মেয়েটির মুখের পানে তাঁকালো।সে চাচ্ছে তাকে নিয়ে প্রশ্ন করুক বেলী।কিন্তু বরাবরের মতোন মেয়েটি নির্লিপ্ত হয়ে আছে।হঠাৎ সে নিজে থেকে বলল,
“আমার সবথেকে দুঃখের বিষয় জানো কী?আমার নিজের মধ্যে এই গুণটা আছে।যার জন্য প্লে বয় বলো।”
“এ আলাপ থাকুক।বৃষ্টি বেড়ে চলেছে।আমাদের এখন যাওয়া উচিত।”
কথাগুলো বেলী পাশ কাঁটিয়ে চলে গেলো।তা যেন ঢের বুঝতে সক্ষম হলো অনল।তবে কোনো প্রকার বাক্য সে নিজের পক্ষেও বলতে পারলো না।
(***)
বেলী চুলগুলো মুছে নিচ্ছে।অনবরত ফোনে কল বেজে চলেছে তার।শশীর নাম্বারটা দেখে রিসিভ করতে মন চাইলো না।অনলকে নিয়ে অহেতুক প্রশ্ন বাণে জর্জরিত করবে তাকে।অনল তো তার অফিসের বস।এটা মিথ্যা নয়।যেভাবে হোক চাকরিটা সে করছে।দরজায় শব্দ হলে গায়ে ওড়না জড়িয়ে এগিয়ে গেলো খুলে দেওয়ার জন্য।সামনে কেয়ার টেকার লোকটি দাঁড়িয়ে আছে।আজকে তারা এখানেই থাকবে। ভাগ্যিস অফিস থেকে পলি নামের মেয়েটা সঙ্গে এসেছিল।তা নয় বিব্রত বোধ হতো।এমনিতে ক্লায়েন্ট তার পুরো পরিবার সমেত এসেছে বাড়ীতে।
“আপনার জন্য চা নিয়ে এলাম।রেখে যাবো ভেতরে?”
“না আমাকে দিন।”
চায়ের কাপটা হাতে তুলে দরজা লাগওয়ে দিলো বেলী।বৃষ্টির মধ্যে বিকেল বেলায় চা খেতে ভালো লাগবে।পেয়ালাতে অধর স্পর্শ করতে ভালো লাগায় জড়িয়ে গেলো মন।এহেন সময় হুট করে জোরে কোথাও শব্দ হলো।তীব্র চিৎকার ভেসে এলো অনলের।বেলী দ্রুত দরজা খুলে বের হয়ে গেলো।অনলের রুমের দরজা বন্ধ।সামনে মানুষ জড়ো হয়েছে।
“কী হয়েছে?অনল চিল্লিয়ে উঠলো কেন?আর ভেতরে শব্দ কীসের?”
মি.সেলিম তাদের ক্লায়েন্ট ব্যস্ত হয়ে বলল,
“জানিনা।আমরা দরজা ভাঙি।ডেকে দেখলাম।শব্দ করেনি।”
কয়েকজন মিলে দরজা ভাঙতে যাবে এহেন সময় তা খুলে গেলো।মুখটি ব্যাথায় বিকৃত করে অনল বলল,
“জানালা ভীষণ নড়বড়ে ছিল।আমার উপর এসে পড়েছে।”
“আমি এখুনি ডক্টরকে কল দিচ্ছি।আপনি ঠিক আছেন তো?”
“এতো তাড়াহুড়োর দরকার নেই।কোথাও র” ক্তপাত হয়নি।শুধু ব্যাথা পেয়েছি।আপনি একটু ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা করুন মি.সেলিম।”
“এখুনি নিয়ে আসছি।”
বেলীর পানে তাঁকিয়ে ভেতরে চলে গেলো অনল।পিছন পিছন সে নিজেও গেলো।
“আপনার কিছু হয়নি তো অনল?দেখি আমি ব্যাথার জায়গাটি।”
“নো নিড ললিতা।”
“কেন?আমি দেখলে কী হবে?আপনি হঠাৎ এমন করছেন কেন?অনল!”
বেলী নিজে থেকে হাত এগিয়ে পিঠের জায়গাটি ধরতে গেলে তার হাতটি ধরে দেয়ালে নিয়ে পিঠ ঠেকালো।দুজনের ঘন নিশ্বাসের মেলবন্ধন ঘটলো।অনল ব্যাথাতে নাকী এক চাপা আক্ষেপে বলল,
“আমাকে বুঝতো পারো না কেন তুমি মাই ললিতা?আমি কিছু বলতে চাই।তোমাকে জানাতে চাই।তা কী কখনো দেখবে?”
চলবে।
#আমার_ললিতা
#পর্ব:২৮
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“আপনার থেকে আমার শোনার মতোন কিছু নেই অনল।আমার গায়ে যখন তখন স্পর্শ করা বন্ধ করুন।”
হাত মুচড়ে নিজেকে সরিয়ে নিতে চাইলো বেলী।কিন্তু সে অপারগ।হাজার হোক অনল তার থেকে শারীরিক শক্তিতে বেশী শক্তিশালী।এক ধরণের উন্মাদনাময় সুগন্ধ ভাঙা জানালা থেকে আসছে।বৃষ্টির পর পরিবেশ এতো মাতোয়ারা সুগন্ধে ভরে যায় তা বেলী ভুলে গিয়েছিল।বুকের মধ্যিখানে কেউ কঠিন থাবায় চেপে ধরলো।অনল ফিসফিস করে বলল,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
“একথা রোজ কয়বার উচ্চারণ করেন?”
“সহস্র কোটিবার।শুধু তোমাকে একথা বলি আমি।”
“মিথ্যুক।”
“সবাই কী আর তোমার সো কল্ড প্রেমিক রামীমের মতোন।”
“অনল মুখ সামলে কথা বলেন।সে একজন মৃ”” ত মানুষ।”
“বাহ!এতো প্রেম এখনও?”
অনলের হাত একটু নরম হলে তাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো বেলী।দাঁতে দাঁত ঘর্ষণ করে বলল,
“আমাকে মটেও দূর্বল ভাববেন না।জীবনে এসেছেন থেকে অনেক কিছু করে যাচ্ছেন।কিন্তু আমি আজ অবধি কিছু বলিনি আপনাকে।ভালোবাসি শব্দটা আপনার নিকট অনেক সাধারণ হতে পারে।সহজলভ্য হতে পারে।কিন্তু আমার কাছে তা খুব দামী।যাকে তাকে বলা যায়না।”
“আমার নিকট তুমি যে সে মানুষ নও ললিতা।তুমি জানো না আমি কতো রাত ধরে তোমাক চিনি।”
অনলের কণ্ঠে ব্যকুলতা।সে কী অধৈর্য্য হয়ে গিয়েছে বেলীকে পাওয়ার জন্য?বোধহয়।বিরহে পুড়তে পুড়তে এই আগুনের রাজা আজ নি:স্ব।কিন্তু বেলী কোনোভাবে অনলের মুখ থেকে কথাগুলো মেনে নিতে পারছেনা।সে সোজাসাপ্টা জানান দিলো,
“আপনি জোর করে অফিসের কাজে রেখেছেন আমি তাতে না করিনি।আমাকে দিয়ে নিজের লাইব্রেরি গুছান তাতেও না করিনি।এমনিতে আব্বুর সাথে সম্পর্ক খারাপ।সেখানে গিয়েও আপনি বদনাম করেছেন।আর এতোগুলো মেয়ের সাথে সম্পর্ক রেখে আমাকে ভালোবাসি বলছেন?বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছিলাম।বিছানাতে শুয়ে পড়ার না।”
বাক্যের সমাপ্তিতে বেলীর গালে সপাটে একটি চড় বসলো।মেয়েটির মাথা ঝিমঝিম করে উঠলো।অবাক হয়ে সামনে তাঁকিয়ে দেখলো অনল কাঁপছে।তা বাহির থেকে শীতল সমীরণ হতে আসার জন্য নিশ্চয় না।বরং এতোটা রাগ উঠেছে যে দ্বিতীয়বারের মতোন মেয়েটির গালে হাত ওঠালো।
“চোখ থাকতেও যে মেয়ে অন্ধ তাকে আমার কিছু বলার নেই আর।রুম থেকে বের হয়ে যাও বেলী।”
“আপনার সাহস কতো বড়!”
“ওহ প্লিজ।চড় খেলে সবাই এক ডায়লগ দেয়।আমার সাহস বরাবর বেশী ছিল।আগেও বলেছি তোমাকে শাসন করতে সাহস লাগেনা।বের হও।বের হও এখুনি।এমন একটা চড় নিজের প্রাক্তনকে অতীতে দিতে পারলে আমি বুঝতে পারতাম যে তুমি সাহসী।”
বেলীর চোখে অশ্রু চলে এলো।সিক্ত ঢোক গিললো সে।অপমানে শরীরটা কেমন যেন করছে তার।অনলকে পাশ কাঁটিয়ে সে চলে যেতে নিলে পিছন থেকে পুরুষটি ডেকে বলল,
“আর কী বললে যেন?আমি মেক আউট করার ধান্দাতে ঘুরি।”
“বাক্যকে বিকৃত করবেন না।”
“শুয়ে পড়ার কথা আর মেইক আউট একই অর্থ বহন করে।বেহুদা তর্ক করো না।তো শুনে রাখো আমি তোমাকে এমন পরিস্থিতি তে নিয়ে আসার সামর্থ্য রাখি যেখানে আমাকে পাওয়া তোমার সমস্ত ধ্যান ধারণা হবে।যাও এখন বের হও।”
বেলী কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে চাইলে অনল শুনলো না।উল্টো তেড়ে এসে দরজার বাহিরে বের করে দিলো।কী আশ্চর্য টক্সিক মানুষ ছেলেটা।বেলী মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো সে বাসায় ফিরে রিজাইন করবে।আর একবারও অফিসে যাবেনা।
(***)
খাবার টেবিলে বেলীকে খুব উদাসীন দেখাচ্ছে।রেবেকা কতোক্ষণ ধরে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে।কিন্তু সে খুব একটা কথা বলছেনা।কীভাবে সে মা কে বলবে যে অনলের নিশ্চুপ ব্যবহার তাকে ভাবিয়ে তুলেছে।গতকালের সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর থেকে পুরুষটি তার সঙ্গে কথা বলেনা।আসার সময় যখন চাকুরী ছাড়ার কথা বলল তখনও চুপ।এভাবে যেন নিজের সম্মতি দিয়েছে।বেলী মানছে যে ঋণাত্মক জবাব সে আরো ভালো পন্থায় দিতে পারতো।অনলের মুখে ভালোবাসি শব্দটা শুনে সে মেনে নিতে পারেনি সত্য বলতে।বোনকে চিন্তায় মগ্ন দেখে সিয়াম জোরে বলল,
“কী ব্যাপার বেলী?কিছু নিয়ে চিন্তিত?”
“না ভাইয়া।”
“তাহলে ঠিকঠাক ভাবে খাবারে মনোযোগ দে।”
“আমি সবাইকে একটা কথা বলতে চাচ্ছি।”তোফায়েল ঘোষণার সুরে বলল।লোকটা কিছু বলতে চাচ্ছে এর মানে তা গুরুত্বপূর্ণ।রেবেকার দিকে তাঁকিয়ে বলল,
” এতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আমি নিজে নেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট বিচক্ষণ।কিন্তু তবুও জানানো দরকার।সিকান্দার সাহেবের খুব কাছের একজন জানালো অনলের বিয়ের কথা ভাবছে।এখন আমি বললাম তাহলে শশীর কথা বলতে।আমার মনে হয় দুই পরিবার থেকে কোনো রকম সমস্যা হবে।”
ব্যস এরকম কিছু হওয়াটা বাদ ছিল বেলীর জীবনে।মুখে থাকা খাবার সে গিলতে ভুলে গেলো।সে কাল অনলকে প্রত্যাখান করেছে।সে জানে পুরুষ মানুষের ভীষণ বদ অভ্যেস আছে।প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে থাকে।অনলও যদি এমন করার জন্য বিয়ে করে শশীকে?না নিজের বোনের এতো বড় সর্বনাশ সে হতে দিতে পারেনা।এসব বেলীর নিজস্ব ভাবনা।এই অহেতুক ভাবনাকে অতিক্রম করে অনলের ভালোবাসা দেখার সামর্থ্য যেন মেয়েটির কস্মিনকালেও হবেনা।
“আমি কিছু বলতে চাচ্ছি।”
“তোমার বড় বোনের বিয়ের ব্যাপারে কথা হচ্ছে।তোমার নয়।এখানে কোনো কথা থাকতে পারেনা।”
তোফায়েলের কথাতে বেলীর মুখটা কালো হয়ে গেলো।কিন্তু সিয়াম তার হয়ে বলল,
“বেলীর কথা এখানে জরুরি বাবা।কারণ সে অনেকটা অনলের কাছাকাছি থেকেছে।আমাদের থেকে বেশী চিনে।”
“একথা আমি মানতে রাজী নই।বেলী ছোট মানুষ।এছাড়া সিয়াম তুমি হয়তো দেখোনি কিন্তু অনলকে সে পছন্দ করেনা।বেলীকে শাসন করেছিলো তাই।আমি মতামত নিতে চাচ্ছি রেবেকা তোমাদের তিনজনের কাছ থেকে।শশী কোনো কিছু বলার আছে তোমার?”
“না বাবা।আপনি যা ভালো বুঝবেন।”
“আর রেবেকা?”
নারীটি মলিন হেসে বলল,
“শশীর যখন কিছু বলার নেই আমারও না।” রেবেকা কথাগুলো খুব শংকা রেখে বলল।কারণ অনলের চোখে সে অন্য কিছু দেখেছে।সেটা কী ভুল?বেলী শব্দ করে উঠে দাঁড়ালো।রেবেকা শশব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কী হলো?”
“আমি যখন এই বাসার কেউ নই তখন এখানে থাকা মানায় না।”
উত্তরের অপেক্ষা না করে সে ছাদে উঠে এলো।হাতটা পাশে থাকা ট্যাপের পানিতে ধু্য়ে কার্ণিশ ছুঁয়ে দাঁড়ালো।পুরো আকাশ নিকষ কালো অন্ধকারে লেপ্টে আছে।বেলীর মনে পড়ে গেলো ছোটবেলায় পুরো আকাশ জুড়ে তারার মেলা বসতো।সেসব এখন আর দেখা যায়না।কতো গোণার চেষ্টা করেছে সে।তবে পারেনি।অকস্মাৎ অচেনা সুরে হারমোনিকা বেজে উঠলো।কী অদ্ভূত সেই সুর।বেলী শব্দের উৎস খোঁজার জন্য পিছন ফিরে তাঁকালো।অদূরে বাড়ীটার ছাদে অনল দাঁড়িয়ে আছে।সেখান থেকেই হারমোনিকার শব্দ আসছে।তিমিরেও বেলী ঠাহর করতে পারে অনলের মধ্যে থাকা বেদনার আগুনকে।এই প্রথম কেন যেন পুরুষটার জন্য তার মায়া হচ্ছে।ট’ক্সি’ক,শয়তান ব্যড বয় অনলের জন্য ললিতার মায়া হচ্ছে।
চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।সকল পাঠক রেসপন্স করিয়েন।