#আমার_ললিতা
#পর্ব:৩২
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
বাড়ীর সামনে গাড়ী থামালো অনল।বেলী মুখ গোমড়া করে বসে আছে।অনেকটা জোর করে তাকে কনসার্ট থেকে নিয়ে এসেছে পুরুষটি।বেলী কোনপ্রকার ঝামেলা চায়নি বিধাায় ফিরে এসেছে।বেশ নরম মেজাজে গুনগুন করে গান গাইছে অনল।
“এতো রাগ করা ভালো না আমার ললিতা।তোমাকে কখনো আমি কনসার্টে একা ফেলে রাখার চিন্তাতে ছিলাম না।”
“কেন?আপনার কী অধিকার আছে আমার প্রতি?কয়েকদিন আগেও চড় দিয়ে কড়া কথা শুনিয়েছিলেন।”
“তো এই বলে তোমাকে কতোগুলো মাতালের মাঝে রেখে আসবো?”
“হাহ!আমাকে মাতালের গীত শোনাচ্ছে কে?মি.অনল কাশফ।যে কীনা রোজ বারে যায়।সিসা টানে।ভ্যাপিং করে।”
“আমি এলকোহলিক পার্সন নই।এটা তুমিও জানো।”
বেলী মুখে বিতৃষ্ণা ফুঁটিয়ে বলল,
“আপনাকে ওয়ার্নিং দিচ্ছি আমার থেকে দূরে থাকার জন্য।শুধু সকলের সামনে সম্মান করি।”
বেলী দরজা খুলে বের হতে নিলে থামিয়ে দিলো অনল।হাতটা টেনে ধরে বলল,
“জরিমানা হিসেবে ডিনার করাতে পারি।”
“নো নিড।”
“আমার মায়ের হাতের রান্না কিন্তু ভালো।তাছাড়া বাবার সাথে আমার বিচিং করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছো।এটা হাতছাড়া করো না।”
“আপনি কী করতে চান বলেন তো?আমি যতোদূর জানি আয়েশা এসেছে আপনাদের বাসায়।সেখানে কেন যাবো?”
“যদি যাও তাহলে হ্যারি পটার সিরিজের অটোগ্রাফ কপি দিবো।”
বেলীর চোখ দুটো চকচক করে উঠলো।এটা অনেক লোভনীয় অফার।তবে চেহারা তে শংকা ফুঁটিয়ে বলল,
“মতলব কী?”
“আপাতত তোমাকে সুন্দর একটা ডিনার করানো।এবং আমার মা বেস্ট শেইফ।”
“ধরেন আমি গেলাম।তো আজকেই বইগুলো দিবেন নাকী কয়দিন পর?ঝুলিয়ে রাখলে কিন্তু যাবো না।”
অনল হাসলো।মন চাচ্ছে বেলীর গালটা টেনে দিতে।বাচ্চাদের যেমন চকলেটের লোভ দেখিয়ে সমস্ত কাজ করানো যায় ঠিক তেমন যেন বেলীর বইয়ের প্রতি লোভ।
“ওকে ডিল।আমি সাথে সাথে দিয়ে দিবো।”
বেলীর ঠোঁট বিস্তৃত হলো।অনল তাকে গাড়ী থেকে নামতে সাহায্য করলো।তার এক দারুণ ইচ্ছা হচ্ছে।মেয়েটার হাত ধরে বাসার ভেতরে প্রবেশ করা।কিন্তু সেই অধিকার এখনও নেই।একটা দূর্বেধ্য দেয়াল নিজের আশেপাশে মেয়েটা গড়ে রেখেছে।অনল তা ভাঙতে জানে।
আয়েশা ড্রয়িং রুমে বসে অনলের অপেক্ষা করছিলো।ঘড়িতে এখন আটটা চল্লিশ বাজে।নয়টা অবধি ফিরে আসার ওয়াদা করেছিলো।সে গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।স্বার্থ ছাড়া সে এক কদমও ফেলে না।সেখানে পুরোটা সন্ধ্যা একজন মধ্যবয়স্ক নারীর সাথে কিচেনে কাঁটিয়েছে।আপাতত দৃষ্টিতে সে বিরক্ত।কিন্তু প্রকাশ করেনি।উল্টো সৌজন্যেতবোধে একটা লেবানিজ কোপ্তা তৈরী করেছে।যা তার জীবনযাত্রার সাথে যায়না।শেষ কবে সে রান্না করেছিলো?সম্ভবত দশ বছর পূর্বে।বয়ফ্রেন্ডের আবদারে করেছিলো তা।
“হ্যালো আয়েশা।আশা করি আপনাকে খুব বেশী অপেক্ষা করতে হয়নি।”
আয়েশা প্রসন্নমুখে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।অনলের পিছনে হেঁটে আসছে বেলী।মুখটা মুহুর্তে বির্বণ হয়ে গেলো তার।অনল ক্লান্ত ভঙিতে সোফায় বসে বলল,
“আপনাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য ললিতাকে নিয়ে এলাম।”
“ওহ।হ্যালো বেলী।”
“হ্যালো।কেমন আছেন?”
বেলীর প্রশ্নকে এড়িয়ে গেলো আয়েশা।যেন বুঝিয়ে দিলো যে এখানে সে মটেও গ্রহণযোগ্য নয়।চোখ ঘুরিয়ে অনলকে বলল,
“কোথায় গিয়েছিলেন?”
“বেলীকে নিয়ে কনসার্টে গিয়েছিলাম।মেয়েটা ছোট। এতো ভীড়ে একা রাখার ইচ্ছে হয়নি।”
“কেন?বেলীর ফ্যামিলিতে কেউ নেই?আপনার তাকে নিয়ে এতো কনসার্ন কেন?”
অনল জবাব দিবে এর পূর্বে অনলের বোন রাহিমা সিঁড়ি থেকে বেলীর নাম ধরে ডাকলো।উচ্ছাসিত কবুতরের মতোন নেমে এলো নিচে।
“তুমি কতোদিন পর এলে বেলী।ভাইয়ার সাথে রাগ করে আমাকে ভুলে গেলে?”
“না তেমন নয়।”
“চলো তোমার সাথে অনেক কথা আছে।”
বেলীর হাত ধরে তাকে উপরে টেনে নিয়ে গেলো রাহিমা।অনল স্বস্তির শ্বাস ছাড়লো।আয়েশা মেয়েটাকে অপমান করার পথ তৈরী করে ফেলেছিলো ইতিমধ্যে।
“বেলীকে এখানে আজ নিয়ে এসে আপনি বুঝিয়ে দিলেন নিজেকে নিয়ে ভয়ে আছেন মি.কাশফ।কখন আমাকে পছন্দ করে বসেন।আপনি নিজের কলেজ জীবনে প্লে বয় হিসেবে বিখ্যাত ছিলেন।পুরোনো নেশা কাঁটানো অনেক কষ্টকর। তাইনা?”
“আমি প্লে বয় ছিলাম কীনা এই খোঁজ করার আগে আপনার জানা উচিত ছিল আপনার এসএ কোম্পানির সাথে ডিলটা কেন ক্যান্সেল হলো ?”
চিন্তার ভাঁজ পড়লো আয়েশার কপালে।সে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“মানে?”
“খুব সহজ।আমার টার্কিশ এক্স সেই কোম্পানির বোর্ড মেম্বার।এজন্য ডিলটা ক্যান্সেল করলো।দেখুন আমি কতো ভালো এক্স।যেখানে আমার প্রাক্তনরা এখনও আমার কথার মর্যাদা রাখে।”
“কোনো সন্দেহ নেই আপনি বিছানাতে অনেক ভালো।যেকোনো মেয়ে তাই মনে রাখবে।বেলীকে এভাবে পটিয়েছেন?”
“নিজের মতোন সবাইকে মনে করলে তো সমস্যা।আমার মা সবসময় এই শিক্ষা দিয়েছেন যে কোনো মেয়ের সম্মান নিয়ে খেলবেনা।হতে পারে আমি রিলেশন করেছি।বাট তাদের সম্মানও করি।আমি তাদেরও সম্মান করি যারা অর্থের বিনিময়ে বারবনিতা হয়।তবে এক ক্যাটাগরীর মানুষকে আমি কখনো সম্মান করিনা।কাদের জানতে চান?”
আয়েশা উৎসুক হয়ে অনলের দিকে তাঁকিয়ে রইলো।পুরুষটি অতি সন্তপর্ণে পকেট থেকে ফোনট বের করলো।ফ্রন্ট ক্যামেরা বের করে তা আয়েশার দিকে ধরলো।ঈষৎ মুচকি হেসে বলল,
“স্ক্রিনে থাকা নারীদের যারা স্ব- ইচ্ছায় স্লা” ট হয়।আপনি বুদ্ধিমান।বাকীটা বুঝে নিবেন।”
(***)
“বেলী আমি কেমন মেয়ে?মানে স্ত্রী হিসেবে কেমন হবো?”
রাহিমার প্রশ্নে ভুরু কুঁচকে ফেললো বেলী।মেয়েটা যে এই প্রশ্নটা নিয়ে সিরিয়াস সেই বিষয়ে সন্দেহ নেই।
“হঠাৎ একথা কেন?”
কোলে বালিশ রেখে রাহিমা ফিসফিস করে বলল,
“তোমার ভাইয়াকে প্রপোজ করেছি গতকাল।এখনও জবাব দেয়নি।তবে বলেছে আমি ওয়াইফ ম্যাটেরিয়াল কীনা যাচাই করবে।”
“ভাইয়াকে?প্রপোজ!”
বেলীর চোখ কপালে উঠে গেলো।রাহিমা তার হাত ধরে বলল,
“আস্তে বলো।কেউ শুনলে খবর হয়ে যাবে আমার।”
“আমি একটা শক পেয়েছি।যদিও ধারণা আগেই করেছিলাম।”
“আমি অনেক চিন্তায় আছি বুঝলে ভাইয়ার ললিতা।যদি তোমার ভাই নিষেধ করে?ব্যাপার না অনল ভাইকে বললে সিয়ামকে কিডন্যাপ করে এনে দিবে।তবে জোর করে ভালোবাসা কী হয় বলো?”
“এক মিনিট।ভাইয়াকে কিডন্যাপ করবে কেন?বরং দেখো জবাব কী দেয়।আর আমাকে ললিতা বলো না।”
“তুমি অবশ্যই ললিতা।ভাইয়া তোমাকে কতো ভালোবাসে জানো?”
“ভালোবাসে?তুমি জানলে কীভাবে?”
“এটা কে না জানে?তোমাকে নিয়ে তো সেই কতো বছর ধরে পাগলামি করে।”
“বছর?”
রাহিমা থেমে গেলো।সে যে বেশী বলে ফেলেছে বুঝতে পেরে কথা ঘুরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো অন্য কথা বলে।বেলী বারবার বছরের বিষয়টা জিজ্ঞেস করলেও রাহিমা আর জবাব দেয়নি।মেয়েটার মনে এই থেকে এক ধরণের সন্দেহ তৈরী হলো।তাকে অজ্ঞাতভাবে একজন চিঠি দিতো সে যে অনল তা আগেই বুঝেছিলো।হঠাৎ মনে পড়ে গেলো রামীমের একটা কথা।একদিন তাকে জানিয়েছিল অচেনা এক ছেলে বেলীর জন্য পাগলামি করে হসপিটালে ভর্তি।সে তখন এতোটাই রামীমের বান্দরবান ট্যুর নিয়ে শুনতে আগ্রহী ছিল যে এসবে খেয়ালই করেনি।
চলবে।
#আমার_ললিতা
#পর্ব:৩৩
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
ধাতব চামচের টুংটাং শব্দ হচ্ছে।খাবারের টেবিলে বেশ কথা বলছে আয়েশা।সিকান্দার এদিক থেকে অচেনা মানুষের সাথে গল্পের আসর জমাতে পটু।অনল নিজের সাধারণ বৈশিষ্ট্যের বাহিরে গিয়ে একদম চুপচাপ বসে আছে।বেলীকে সে একদম নিজের কাছাকাছি বসিয়েছে।অকস্মাৎ হাঁটুর কাছটায় দুটো আঙুলের স্পর্শ পেলো।বেলী ছোট করে ইশারাতে তার দৃষ্টি আহবান করলো যেন।অনল সেদিকে তাঁকালে ফোনের দিকে ইশারা করতে বলল।
“আপনার কী মনে হয়না যে আজকে এখানে নিয়ে এসে আমাকে খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছেন?আমি বাসায় যাবো।খাওয়া আর হবেনা।”
ম্যাসেজটা পড়েও অনলের প্রতিক্রিয়া হলো না।বরং একটু বেশ জোরেই বলল,
“মা তোমার রান্না বোধহয় ললিতার ভালো লাগেনি। দেখো কিছু খায়নি সে।”
করুণা সায় দিয়ে বলল,
“সত্যি বেলী!”
“না আন্টি।আমি খাচ্ছি।খাবার দারুণ হয়েছে।কিন্তু আমি স্বল্পভোজী।”
চোখ দিয়ে অনলকে শাসালো বেলী।সে যা বলেছে পুরুষটি পুরো বিপরীত কাজ করলো।অগত্যা খেতে শুরু করলো সে।ডিনারের পরপর বের হয়ে গেলো আয়েশা।বেলী খেয়াল করলো নারীটির চোখেমুখে বেশ বিতৃষ্ণা।সম্ভবত এখানে যে উদ্দেশ্যতে এসেছিল তা পূরণ হয়নি।আচ্ছা অনল আজ তাকে এখানে কেন নিয়ে এলো?সোফায় বসে এসব ভাবনার মাঝে ফোনে ম্যাসেজ এলো।তাকে লাইব্রেরিতে ডেকেছে অনল। করুণা রান্নাঘরে কাজ করছে দেখে বেলী পা বাড়ালো দোতালার উদ্দেশ্যে।
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে বাহিরে। সম্ভবত এটি বছরের শেষ বৃষ্টি।মৃদু সমীরণের সঙ্গে হালকা জলের ঝাপটা আসছে জানালা দিয়ে।অনল একপাশে হেলান দিয়ে কার্ণিশ ছুয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কবুতরের ডানার মতোন শুভ্র পর্দা গুলো উড়ছে।বেলী জানে এই পুরুষটির রুপের সামনে সে অতি নস্যি।উপন্যাসের নায়কদের যেন তাকে দেখেই লেখা হয়।দরজার শব্দ করলো মেয়েটা।
“আমার পাওনা আমাকে বুঝিয়ে দিন অনল।”
“ওয়াও!পাক্কা ব্যবসায়ী।কাজ হয়ে গিয়েছে একটুও যেন সবুর নেই।”
“আমি বিশ্বাস করিনা আপনাকে।অন্তত বইয়ের ক্ষেত্রে অনল কাশফ যথেষ্ট কৃপণ।”
ভুরু কুঞ্চিত হয়ে গেলো অনলের।বেলী ইদানীং কথায় কথায় বেশ খোঁচা দিচ্ছে তাকে।যেমনটা দেয় টিপিক্যাল বাঙালি বউয়েরা।
“তুমি দিনদিন আমার বউ হয়ে যাচ্ছো।”
“এটা কেমন কথা হলো?”
কয়েক ধাপ এগিয়ে এসে চেয়ারে বসলো বেলী।ডিনারে বেশী খাওয়া হয়ে গিয়েছে তার।একটু হাঁপিয়ে উঠছে।
“টিপিক্যাল বউদের মতোন কথায় কথায় খোঁচা দাও।যাই হোক আমি পাওনা মিটিয়ে দিচ্ছি।একটা সমস্যা আছে।অটোগ্রাফটা আমার নামে।”
“ইশ!ভবিষ্যতে আমাকে মানুষ চোর ভাববে তাহলে।”
“বই চুরি তে পাপ নেই কিন্তু।”
অনল টুলের উপর দাঁড়িয়ে উপরের তাক থেকে বই নামানো শুরু করলো।বেলীর মাথাতে এখনও রাহিমার কথা ঘুরছে।উশখুশ ভঙ্গিতে সে বলল,
“আমাকে ঠিক কতো বছর ধরে চিনেন আপনি অনল?”
“হঠাৎ এই প্রশ্ন?”
“রামীমের একটা চিঠিও আপনার কাছে আছে।আপনি সত্য বলতে কে?সেই মানুষটা যে আমাকে চিঠি পাঠাতো?”
“হ্যাঁ।তোমার ধারণার বাহিরে আমি ঠিক কতোদিন ধরে চিনি তোমাকে।”
কোন ভনিতা নেই অনলের।বেলী চমকে উঠলো।সে ঘামছে।মুহুর্তে চিঠি গুলোর কথা মনে পড়ে গেলো।সেখানকার প্রত্যেকটা অক্ষর এক ধরণের বিভীষিকা ছিল।বোধহয় বেলী যে শুধু প্রেরকদাতার তা বোঝাতো।এতোদিনে বেলীর কাছে অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে উঠছে।সে ঘেমে গিয়েছে।
“আপনি ভয়ংকর।”
অনল পিছন ফিরে তাঁকিয়ে ঈষৎ হাসলো।বুকশেলফে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।এই দৃষ্টিটা প্রচন্ড মাদকময়।প্রিয়তমার ভয়ংকর সম্বোধনে সে শুধু বলল,
“তোমাকে ভালোবাসি।”
“চিঠিতে মনে হতো আপনি একটা সাইকো।যার কাছে আমি ব্যতীত অন্যসব তুচ্ছ।হায়!আমি এতোদিনেও কীভাবে চিনতে পারিনি?সন্দেহ আমার ছিল।কিন্তু মুখে স্বীকার করা আমি মেনে নিতে পারছিনা।”
“তোমার রিয়াকশন দেখে মনে হচ্ছে তোমাকে ভালোবাসা পৃথিবীতে সবথেকে গোপন বিষয়।”
“কাছে আসবেন না।”
“আমি নিজের জায়গাতে দাঁড়িয়ে আছি।”
“রামীম আমাকে বলেছিলো…।”
“শাট আপ বেলী।”
বেশ কঠিন সুরে থামতে বলল অনল।সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে সে।ঈষৎ হলদেটে আলোতে অনুমান করা যাচ্ছে তার ললাটের ভাঁজগুলো।এটা কী বিরক্তিতে?
“তুমি রামীম ছাড়া আর কাওকে কেন চোখে দেখো না?আই মিন সিরিয়াসলি!ও কী তোমাকে বশ করেছিলো?”
“দেখুন মৃ”” ত মানুষকে নিয়ে এসব বলবেন না।”
“ইচ্ছাও নেই।আই হেইট হিম।যতোটা আমি তোমাকে ভালোবাসি ললিতা।ঠিক ততোটা তোমার প্রাক্তনকে ঘৃণা করি।”
“আমি আপনাকে ভালোবাসিনা।আপনি ছলনার আশ্রয় নিয়ে আমার জীবনে এসেছেন।এই বাড়ীটা রামীমের পিতার অনেক পছন্দের ছিল।তাহলে বিক্রি করলো কেন?কী করেছিলেন?”
একে একে সব প্রশ্নের উপর থেকে যেন পর্দা সরে যাচ্ছে।অনলের মুখবিবর দৃঢ় হয়ে গেলো।
“সব প্রশ্নের উত্তর এখন জানতে নেই মাই ললিতা।তোমার আজকের পুরস্কার নাও।আর বের হয়ে যাও।”
“প্রসঙ্গ বদলে নিচ্ছেন?কী চান আমার শরীর?আপনার মতোন পুরুষের এ ব্যতীত কোনো চাওয়া থাকতে পারেনা।রামীম এই কথাটা আমাকে বলেছিলো।একজন প্লে বয়।চরিত্রহীন।শরীর নিয়ে ক্ষুদার্ত মানুষ আমাকে পছন্দ করে।ও আমাকে বলেছিলো যেকোনো পরিস্থিতিতে আমাকে রক্ষা করবে।”
সর্বচ্চো মাত্রাতে রাগ উঠে গেলো অনলের।মেয়েটির সঙ্গে তার দূরত্বকে কয়েক কদমে অতিক্রম করলো।কোমড়ে ধরে অনেকটা শূন্য তুলে টেবিলটাতে শুইয়ে দিলো।বেলীর প্রতিরক্ষা না থাকায় অনলের বৃহদাকার বক্ষের আড়ালে হয়ে গেলো সে।
“অনল!আমি কিন্তু চিল্লিয়ে মানুষ ডাকবো।”
“তুমি কী ভেবেছো বেলী।আমি অনেক সহজ কেউ?তুমি দুই চারটে কথা বলো তা সবসময় হজম করে যাই।কেউ ফ্লার্ট করলেই সে প্লে বয় হয়না।আমি নারীদের প্রশংসা করি একটা সীমার মধ্যে থেকে।”
“আপনি চিঠিতে আমার বিভিন্ন বডি পার্ট বর্ণনা করে সেখানে চুমো খাওয়ার কথা বলেননি?”
“কামনা ছাড়া ভালোবাসা তৈরী হয়না।বিয়ের পর বুঝতে পারবে আমি বিছানা তে কতোটা…।”
“ছি: নোংরা পুরুষ।”
বেলীর চোখের কার্ণিশে অশ্রু এসে জমা হয়েছে।অনল তা দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।প্রত্যেকটা প্রশ্নের জবাব তার কাছে আছে।কিন্তু মেয়েটা যে বিন্দুমাত্র তাকে বিশ্বাস করেনা।হঠাৎ তার বিভ্রম হলো।বেলীর গলায় কপাল ঠেকালো সে।
“মাই ললিতা!তুমি কখনো আমার ভেতরে থাকা ভালোবাসাকে দেখতে সক্ষম নও।আমি সবসময় ব্যর্থ।”
“ছাড়ুন। ছাড়ুন আমাকে।”
“আমি এমনই।জোর করে হলেও তোমাকে চাচ্ছি।এটা কী দোষ নিজের ভালোবাসাকে কাছে চাওয়ার?বিলিভ মি আই এম নট এ প্লে বয়।আমি কোনো মেয়ের সাথে জোর করে কিছু করিনি।হ্যা এটা সত্য যে আমি অতীতে চুমো খেয়েছি অন্য মেয়েকে।কিন্ত তখন সে আমার প্রেমিকা ছিল।বিয়ের জন্য ভাবতাম আমরা।এই রকম একটা পরিস্থিতিতে বিষয়টা স্বীকার করা খুবই লজ্জাজনক।কিন্তু যখন থেকে তোমাকে ভালোবাসি তখন থেকে অন্য কাওকে আমি ওভাবে দেখিনি।”
বেলী জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে।অনলের প্রত্যেকটি কথায় এক ধরণের বেদনাবোধ জড়িয়ে আছে।তবে বেলীর মনে যে এক ধরণের চঞ্চলতা তৈরী হচ্ছে তা থামার নয়।হালকা শীতল পরিবেশে উত্তেজনার উষ্ণতা তৈরী হলো।অনলের চোখের চাহনিতে এক ধরণের মাদকতা বিদ্যমান।বেলী নিজের শরীরেও হরমোনের প্রবাহ হচ্ছে।সরে গেলো অনল।দাঁড়িয়ে লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,
“আমি তবুও তোমাকে নিজের থেকে দূরে যেতে দিবো না।যা করার করতে পারো।বিয়ে তোমার আমাকেই করতে হবে।আমি দুনিয়ার নিকৃষ্ট পাপী হলেও তোমার জীবনসঙ্গী হবো।”
আলুথালু বেশে উঠে বসলো বেলী।এখন কান্না করছে সে।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে অশ্রু মুছে বলল,
“শা” লা বেয়াদব কোথাকার।”
“তোমার মুখে গা’লিও সুন্দর।”
“আপনাকে আমি ছাড়বো না।”
বেলী টেবিল থেকে নেমে দাঁড়ালো।বইটা হাতে নিয়ে দরজার দিকে হাঁটা আরম্ভ করলো।আশ্চর্য বিষয় হলো এতোকিছুর পরেও বইয়ের লোভটা সামলাতে পারেনি বেলী।এতো রাতে একা রাস্তা দিয়ে যাবে দেখে পিছন পিছন অনলও এলো।তা খেয়াল করেনি মেয়েটা।তাকে গেটে ঢুকতে দেখে অনল দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।প্রেমিকাকে পাওয়ার ক্ষেত্রে সবথেকে বড় শত্রু যেন তার প্রেমিকা নিজেই।পিছন ফিরে চলে যেতে নিবে ঠিক তখন গেইট দিয়ে তোফাজ্জল বের হয়ে এলো।পিছনে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে।অনলকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“বেলীর সঙ্গে তোমার কী চলছে?”
চলবে।
#আমার_ললিতা
#পর্ব:৩৪
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“আপনার মেয়ে যথেষ্ট বড় হয়েছে আঙকেল। তার আর আমার মধ্যে কী চলতে পারে সেটা তো পানির মতোন পরিষ্কার।আই লাভ হার।”
কথাটা বলতে একটি বারের জন্যও অনলের কণ্ঠস্বর কাঁপেনি।বরং দৃঢ় বলিষ্ঠ আওয়াজে সে ঘোষণা করে দিলো বেলীর প্রতি প্রণয়ের কবিতাকে।তোফাজ্জল অতি শান্ত ভাবে এগিয়ে এলো।
“তোমাকে আমি ভালো একজন ছেলে ভাবতাম।কিন্তু চোখ থাকতেও ভালো জিনিসকে তুমি দেখতে পাওনি।”
“ভালো বা মন্দের প্রশ্ন এখানে এলো কোথা থেকে?বেলীর থেকে ভালো কে আছে?”
“শশী অনেকাংশে বেলীর থেকে ভালো।”
“দুজনেই আপনার মেয়ে আঙকেল।নিজ সন্তানদের মধ্যে তুলনা কিন্তু খারাপ পিতার লক্ষণ।”
“থামো ছেলে।তুমি ডিসাইড করতে পারো না আমি কেমন।এক্ষেত্রে তোমাকে একটাই এডভাইস দিতে পারি যে বেলীর থেকে দূরে থাকো।যেখানে শশীর বিয়ে হয়নি সেখানে আমি বেলীকেও দিবো না।”
অনলের শরীর ঘেমে উঠলো।সে জানতো বেলীর বাবাকে মানানো কঠিন হবে।কিন্তু এভাবে সরাসরি না করে দিবে সেই ব্যাপারে ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি কখনো।
“আমি বেলীকে ভালো রাখবো।আপনার ধারণাও নেই ওকে আমি কতোটা ভালোবাসি।”
“বেলী তোমাকে পছন্দ করেনা।তা আমি ওর চোখ দেখে অনুমান করতে সক্ষম হয়েছি।রামীম চলে যাওয়ার পর থেকে বেলী অন্য কাওকে জীবনে আসতে দেয়নি।”
“আপনি রামীমের ব্যাপারে জানেন?”
তোফাজ্জলের চেহারাতে বিদ্রুপমাখা দাম্ভিকতা ফুঁটে উঠলো।এই অন্ধকারে অনলের মনে হলো লোকটাকে দেখতে পুরোদস্তুর চতুর প্রাণীর মতোন।হালকা বৃষ্টিতে এখন তার বিভৎস লাগছে।এই জলে এখন আর রোমান্টিকতা নেই।
“জানি।আমার চোখের সামনে দুজন প্রেম করবে আর আমি তা বুঝবো না এমন হয়না।সত্য বলতে বেলী আমার জীবনে একটা দূর্ঘটনা।দুটো সন্তানের পর কখনো ইচ্ছা ছিলনা আরেকজন আসুক।শুধু রেবেকা জেদ করলো দেখে পৃথিবীর আলো দেখতে পেরেছে।”
“আপনি আমার বেলীকে দূর্ঘটনা বলার সাহস রাখেন কীভাবে?”
প্রচন্ড উশখুশ করছে অনল।হাতটা বারংবার মুঠোতে ভরে নিচ্ছে।বয়স্ক এই মানুষটার জায়গায় অন্য কেউ হলে এতোক্ষণে বোধহয় সে মাটিতে মিশিয়ে দিতো।
“যা সত্য তা বলতে আমার ভয় নেই।আমার জন্য সিয়াম ও শশী যথেষ্ট ছিল।মেয়েটার জন্য এজন্য জন্ম থেকে তেমন টান অনুভব হয়নি।একটা অদৃশ্য দেয়াল বাবা-মেয়ের মাঝখানে তুলে দিয়েছিলাম।সেটা বেলী নিজেও কখনো অতিক্রম করেনি।তাছাড়া ও তোমাকে পছন্দ করেনা।আমার কথার খেলাপ করবে এমন সাহস নেই।”
দীর্ঘশ্বাস ও চোখ দুটো বন্ধ করে অনল নিজের ক্রোধকে সংবরণ করার চেষ্টা চালালো।খানিকটা এগিয়ে এসে তোফাজ্জলের মুখোমুখি দাঁড়ালে।অনল বৃহদাকার শরীরের পুরুষ।রেগে যাওয়ায় কেন যেন বাহুর মাংসপেশি গুলো ফুলে উঠেছে।
“আপনি এসব কথাবার্তা কখনো উচ্চারণ করার সাহস রাখবেন না।সৃষ্টিকর্তা যখন পৃথিবীতে পাঠিয়েছে বেলীকে তখন মানুষ হিসেবে তৈরী করেছে।ওর নিজের ভালো থাকার অধিকার আছে।রামীমের সাথে ভালো থাকতো এটা মিথ্যা নয়।কিন্তু আমি নিজের ভালোবাসাকে এভাবে সারাজীবন বিধবা হয়ে থাকতে দিতে ইচ্ছুক নই।তাই বিয়েটা হতে দেইনি।তবে দেখা যাচ্ছে যদি রামীম ও বেলীর বিয়ের প্রসঙ্গ উঠতো আপনি নিজের মেয়ের কথা ভাবতেন না।”
“ভুল।রামীম আমার স্ট্যাটাসের সাথে যায়না।”
“এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আপনি আমার স্ট্যাটাসের অনেক নিচে।”
হাসিমুখে বিদ্রুপ করে কথাগুলো উচ্চারণ করলো অনল।তোফাজ্জল অনেক রেগে গিয়েছে।দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“আমাকে তুমি চিনো না ছেলে।বয়সের দোষে শরীরের র”” ক্ত গরম।”
“আমার না হয় গরম।আপনার এক পা ক” ব”রে তবুও তো ঠান্ডা হচ্ছে না।”
“মুখ সামলে কথা বলো।”
অনল আরো এগিয়ে এলো।ঠিক তোফাজ্জলের চোখ বরাবর দৃষ্টি রাখলো।অন্তত আত্মবিশ্বাসী সুরে বলল,
“বেলীকে ভালোভাবে ট্রিট করবেন।আজ হোক কাল হোক আমার স্ত্রী হবে সে।একটা কথা মাথায় রাখবেন।আমি অনল কাশফ নিজের বাপকেও ছেড়ে কথা বলিনা।সেখানে তো আপনি শ্বশুর বাপ।ওয়াও!শ্বশুর বাপ শব্দটা নতুন আর ইন্টারেস্টিং তাইনা?”
“রাবিশ!”
“আপনার মানসিকতাকে সংক্ষেপে বলা আছে।আজকে আসছি।অনেক বড় দিন ছিল।”
তোফাজ্জল অন্য কোনো প্রতিক্রিয়া করার পূর্বে বাসার দিকে পা বাড়ালো অনল।ভীষণ রেগে গিয়েছে সে।পৃথিবীতে সব বাবা-মা নিজের সন্তানকে ভালোবাসে না।উদাহরণ দিতে বসলে শত কেন?হাজার হাজার দেওয়া সম্ভব।এদের উপর অজানা একটা রাগ এসে জমে অনলের।তার বাবা যেমন হোক কিন্তু নিজের তিন সন্তানকে সমান ভালোবাসে।হ্যাঁ অনল এক্ষেত্রে অনেকটা ভিন্ন হওয়ার কথা ছিল।কিন্তু হয়নি।সেখানে বেলীর মতোন এতো মিষ্টি একটা মেয়েকে কীভাবে তার বাবা দূর্ঘটনা বলতে পারে?অনলের রাগ এই কথা মনে হতেই আরো বেশী বৃদ্ধি পাচ্ছে।
(***)
বেলী আপ্রাণ চেষ্টা করছিলো দরজা খুলতে কোনো শব্দ যেন না হয়।তবে এতো স্বাবধানতার পরেও একধরণের বিরক্তিকর শব্দ উৎপন্ন হলো।মুখবিবরে অস্থির ভাব বিদ্যমান।এখন সময় বিকেল পাঁচটা।অনলের ফিরতে আরো এক ঘন্টা আছে।এই সময় রুমের ভেতর থেকে রামীমের সেই চিঠি খুঁজে বের করা।রাহীমাকে উল্টোপাল্টা বুঝিয়ে নিচে বসিয়ে এসেছে।অন্তত কিছু সময়ের জন্য সে নিরাপদে তল্লাশি চালিয়ে যেতে পারবে।
রুমের ভেতর প্রবেশ করে মটেও এটা কোনো ব্যাচেলরের রুম মনে হয়নি।বরং সবকিছু পরিপাটিভাবে গুছানো।বেলী খেয়াল করলো এখানকার বাতাবরণে মিষ্টি একটা সুবাস বিরাজমান।যেমন অনলের শরীর থেকে পাওয়া যায়।ভেতর থেকে তাকে এই সুবাসটি তরঙ্গায়িত করে তুলে।সময় ব্যয় না করে দ্রুত গতিতে খোঁজা শুরু করলো।আলমারিতে হাত রাখতে তা খুলে গেলো।বেলী ভেতরের পোশাক গুলো নেড়েচেড়ে দেখে নিজের সঙ্গে বলল,
“এতো সুন্দর পোশাক থাকলে মেয়েরা কেন?সঙ্গে তাদের মায়েরাও ও পটে যাবে।”
“ভুল ললিতা।আমি শুধু মেয়েদের পটাতে জানি।”
চমকে লাফিয়ে উঠলো বেলী।পিছন ফিরে দেখলো অনল বিছানাতে বসে আছে।
“আপনি?এখানে কেন?অফিস থেকে না আরো পরে আসার কথা।”
“আমার ভাগ্য ভালো নাকী তোমার খারাপ আমার জানা নেই।কিন্তু আজ দুপুরে একটা মিটিং ছিল।সেটা শেষ করে আর অফিসে যাইনি।ভালো হলো অন্তত তোমাকে তো দেখতে পেলাম।”
“ঢং করবেন না।আমি এখানে রামীমের দেওয়া চিঠি খুঁজতে এসেছি।তা খুঁজবো কিন্তু বাঁধা দিবেন না।”
“ওয়েল!মাই লাভ পুরো রুমটা তোমার।খুঁজতে থাকো।আমি না হয় ততোক্ষণ তোমাকে দেখি।”
“চুপ।চোখ বন্ধ করেন।”
অনল চোখ বন্ধ করে নিলো বেলীর কথা মতোন।মেয়েটা নিজ ছন্দে খুঁজতে লাগলো।সে এটা একবারও খেয়াল করছেনা অনল তাকে বাঁধা দিচ্ছেনা কোন কারণবশত।অবশ্য বেলীর মাথা যে একটু মন্থর গতিতে কাজ করে এটা অনল জানে।মেয়েটার বাচ্চামো দেখে হেসে ফেললো পুরুষটি।পরক্ষণে অন্তর থেকে দুঃখবোধ হলো।রামীমকে এতো ভালোবাসার কারণ হতে পারে যে বেলী জীবনে প্রথমবারের মতোন এমন কাওকে পেয়েছিলো যে তাকে সম্মান করে।তার কথা শুনে।তাকে বিশেষ কেউ অনুভব করিয়েছে।অনলের বারংবার দূর্ঘটনা শব্দটি মাথায় ঘুরছে।কতো বিভৎস শুনতে লেগেছে তোফাজ্জলের মুখ থেকে।অনল হঠাৎ বেলীর মনোযোগ আকর্ষণ করে বলল,
“আলমারির ডান সাইডে একটা ড্রয়ার আছে বেলী।সেটা খুলো তো।”
“কেন?”
“খুলে দেখো তো আগে।”
বেলী ড্রয়ারটা খুলে ফেললো।সেখানে থাকা জিনিসটা দেখে চমকে উঠলো সে।দ্রুত গতিতে হাতে তুলে নিলো।একটা পোষা বিড়াল ছিল তার।কিন্তু এক মাস পালার পরে তোফাজ্জল দূরে কোথাও ফেলে এসেছিলো।সেই বিড়ালের সাথে অনলের ছবি রাখা সেখানে।ছোট দেহটা কতো আনন্দে শুয়ে আছে কোলে।অনলের মুখের গঠন দেখে আরেকটু কম বয়সী লাগছে।
“তুতুন!ও আপনার কাছে?কীভাবে?”
“আমার কাছে নেই ঠিক।ফেলে দেওয়ার পর আমি রেস্কিউ করে এডপশনে দিয়ে দেই।এখন তুতুন আট কেজি ওজনের বিশাল বিড়াল।”
“আমি কী বলবো বুঝতে সক্ষম নই।ওকে নিয়ে সবসময় আমার অপরাধবোধ ছিল।থ্যাংকস অনল।”
বেলীর চোখে অশ্রু এসে জমা হয়েছে।অনল এবার সত্যিকার অর্থে চোখ বন্ধ করলো।মেয়েটা জানেওনা তার জীবনে এমন কত-শত ঘটনার সঙ্গে অনল জড়িত।সে তার ললিতার অশ্রু দেখতে ইচ্ছুক নয়।হোক না তা আনন্দের।অনল দীর্ঘশ্বাস টেনে নিজের সঙ্গে বলল,
“মেয়েটাকে সে এতো কেন ভালোবাসে?”
চলবে।