আমার ললিতা পর্ব-৩+৪

0
499

#আমার_ললিতা
#পর্ব:৩
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“তোমাকে কেন আমি লিও বলে সম্বোধন করি সেটা জানো অনল?কারণ তুমি সিংহ।যুদ্ধে যাকে হারানো কঠিন।”

“ভালো কথা বলো মৌনতা।তোমার সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক নয় যে বসে বসে সুন্দর কথা গুলো শুনবো।”

মৌনতার মুখবিবর জুড়ে আরক্ত মেঘ জুড়ে গেলো।সামনের কাগজগুলো অনলের দিকে ধাক্কা দিয়ে দিলো।বিরসমুখে বলল,

“পড়ো এগুলো।তুমি যা চাও সেটা কখনো সম্ভব নয়।”

অনল সেদিক পানে তাঁকিয়ে বলল,

“পড়বো না।তুমি নিজের মুখে বলো মৌনতা।”

“এতে কাগজের কথাগুলো বদলে যাবে?”

“তোমাকে কথা বলতে দেখতে ভালো লাগে।”

মৌনতা ভ্রু কুঞ্চিত করে শুধালো,

“তুমি নিজেকে কী ভাবো অনল?এইমাত্র…।”

“তোমার লিও।শুধু তোমার লিও।”

শব্দগুলোর সঙ্গে যেন হিমালয়ের শীতল সমীরণ ছড়িয়ে পড়লো বাতাবরণে।যে উষ্ণতা মৌনতার মস্তিস্কে ছড়িয়ে পড়েছিলো তা সামনে বসে থাকা কান্তিমান পুরুষটি মাত্র গুটি কয়েক শব্দে নিভিয়ে দিলো।অনল নামক এ ব্যক্তিকে মৌনতা ভালোবাসেনা।কিন্তু কিছু একটা আছে যা তাকে দূর্বল করে।ভাবিয়ে তুলে ক্ষণে ক্ষণে।মৌনতা বিবাহিত একজন নারী।সেক্ষেত্রে আরো শক্ত হওয়ার কথা ছিল নয় কী?

“মৌনতা,তুমি বলো পেপারস গুলোতে কী লেখা আছে?আমি নিশ্চিত যা লেখা তা আমার জন্য অনেক হীতকর।”

বিব্রত ভঙিতে মৌনতা বলল,

“আমি কাল তোমার সঙ্গে কলে কথা বলে নিবো।আজকে না হয় থাকুক।”

“কিন্তু পেপারস গুলো তো তৈরী?”

“এটা কিছু নয়।কাল কথা হোক আমাদের?”

অনল শীতল কণ্ঠে কিছু একটা বলে হাসলো।যার অর্থ মৌনতা ধরতে পারলো না।

“মৌনতা, আমরা কাল সকালে একসাথে জিম করবো।ঠিক আছে?”

“অবশ্যই।এটা ভালো হবে।এখন তুমি আসতে পারো।”

অনল উঠে দাঁড়িয়ে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।পুরুষটির চওড়া বক্ষ যেন রুপকথার সমুদ্র।শুধু শুধু কালো রঙের স্যুটের আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়।রুম ফাঁকা হতে মৌনতা উষ্ণ শ্বাস ছাড়লো।সে ভীষণ অদ্ভূত আচরণ করে ফেলে এই পুরুষটির সামনে।আপাতত অনলকে সে কাজটা করে দিবে।সে জানে বিষয়টি জানলে তার স্বামী আবার তাকে বোকা বলে হাসবে।কিন্তু পুরুষটি যে আসলেও আগুন।মস্তিস্কের সব পু’ড়ি’য়ে দেয়।

গাড়ীর দরজা শব্দ করে লাগিয়ে ড্রাইভিং সীটে এসে বসলো অনল।ছাব্বিশ বছরের এই পুরুষটি পুরোদস্তুর রহস্যময়।বা গুপ্তধন পাওয়ার জন্য কঠিন ধাঁধা।কোনো সন্ধানী আজ অবধি যা সমাধা করতে জানেনি।মৌনতার কথা মনে হতে অনল নিজের সঙ্গে বলল,

“চতুরতায় জড়ানো নির্বোধ নারী।”

পাশ থেকে ফোনটা বের করে কারো নাম্বারে কল করলো।ওপাশ থেকে রিসিভ হতে বলল,

“আপনি অতি মাত্রায় বোকা একজন নারীকে বিয়ে করেছেন এমাদ ভাই।সে এবারও রাজী হয়ে গেলো আমার কাজ করতে।”

ওপাশ থেকে উত্তেজিত সুরে কেউ বলল,

“সত্যি?মৌনতা বলেছিল তোমার বাবাকে মটেও এবার ডিলটা দিবেনা।আশ্চর্য ছেলে।কীভাবে যে আমার বউকে বোকা বানাও।”

“কারণ সে মস্তিস্কের দিক থেকে আমার কাছে দূর্বল।আপনি তো সেটা বিশ্বাস করেন না।”

“ভুল।সে আমার কাছে সবদিক থেকে দূর্বল।কিন্তু অতি মাত্রাতে তুমি বুদ্ধিমান।এবং সে নিজেও তা।তবে কখনো কখনো তাকে কনফিউজড করে দাও।তুমি মানুষকে দারুণভাবে নিজের দিকে টানতে পারো।আমি খুশি ওকে হারতে দেখতে।”

“আচ্ছা এমাদ ভাই আপনার স্ত্রী আমার কিছু ছোট ছোট কথায় বিভ্রান্ত হয়ে যায় এতে আপনার রাগ হয়না?আমি সত্যি কথায় তার সাথে ফ্লার্ট করি।”

“মটেও না।কথা বললে কী হয়?”

অনলের একবার স্মরণে হলো সে জবাবটা দিবে এটা বলে যে, “কোনো পুরুষের সাথে এভাবে কথা বললে অনেক কিছু হয়।নারী শুধু তার প্রিয় পুরুষের কথায় বিভ্রান্ত কিংবা হতবুদ্ধি অবস্থায় চলে যাবে।”
কিন্তু কথাটি বলা হলো না কারণ মানুষকে ধোঁকাতে বাঁচতে দেখতে সে ভীষণ খুশি অনুভব করে।এমাদের কথাকে সায় দিয়ে সে বলল,

“সঠিক বলেছেন।আপনার সাথে পরবর্তীতে কথা হবে।আপাতত সিকান্দার বন্ধুকে খুশির খবরটা দিয়ে নেই।”

“তোমার বাবা যদি জানেন এভাবে বন্ধু বলে ডাকো তবে তোমাকে নির্বাসিত করবেন।”

“এই কারণে জানবেনা।”

ফোন রেখে দিলে ড্রাইভ করে সোজা বাড়ীতে এলো অনল।সে পড়াশোনা শেষ করেছে মাত্র অল্প সময় হলো।সিকান্দার সাহেবের সঙ্গে টুকটাক ব্যবসায় মনোযোগ দিচ্ছে।যদিও এখন সে ভিন্ন জগতে নিজের সবথেকে গোপন কাজটি সমাধানে ব্যস্ত।কোম্পানিতে ছেলেকে হালকা পাতলা দেখতে পেয়েই খুশি সিকান্দার সাহেব।আর যা হোক নিজের খরচ নিজে বহন করার মতোন সামর্থ্যবান অনল।

অনল সোজা নিজের লাইব্রেরিতে চলে গেলো।একটা গুরুত্বপূর্ণ বই নিয়ে আবার বের হবে এমন সময় দেখলো ডান দিকের আড়াল করার জায়গাটিতে একটি মেয়ে বসে কিছু একটা করছে।নিজের বইগুলো নিয়ে খুব যত্নশীল অনল।তাই মেয়েটিকে দেখতে পেয়ে শুধালো,

“কে আপনি?”

চমকে উঠলো যেন কন্যাটি।সোজা হয়ে দাঁড়ালো।এতোক্ষণে বেলীর মুখ দর্শন হলো অনলের।তবে মুখের ভাব পরিবর্তন না করে বলল,

“এখানে কেন?”

প্রশ্নটির সঙ্গে নিচে তাঁকিয়ে দেখলো তার একটি ভিন্টেজ বই কমপক্ষে কয়েক খন্ড হয়ে নিচে পড়ে আছে।পুনরায় বলল,

“এই বইটির এহেন অবস্থা কেন হলো?”

বেলী খুব নিচু সুরে বলল,

“রেয়ার এডিশন দেখে হাতে নিয়েছিলাম।পরবর্তীতে হয়ে গেলো এমন।”

“ললিতা,তুমি কিন্তু কারো ঋণ রাখো না।এই বইটার এখন কোনো সৌন্দর্য নেই।তাহলে বলো কীভাবে আমার ক্ষতি পূরণ করবে?”

“দেখেন।”

“আমি অন্ধ নই।দেখতে জানি।”

“আমি অবশ্যই ক্ষতির জন্য পেমেন্ট করতে রাজী আছি।”

“বইটা নিলামে উঠেছিলো।এবং তা ফোর্টি থাউজেন্ড ডলারে কিনেছি।করো ক্ষতিপূরণ।আমি অবশ্যই চাইবো করো।”

অনলের মুখ ভঙি দেখে মটেও মনে হচ্ছে না সে মজা করছে।বেলী চোখ ঘুরিয়ে আশেপাশে রাহিমাকে খুঁজলো।যে অনলের ছোট বোন।এবং যার সুবাদে এখানে এসেছে।ভীষণ খারাপ লাগছে বেলীর।কেন যে এখানে এলো?

“দেখুন।”

“তুমি এতোটা দেখাদেখির মধ্যে কেন যাও ললিতা?সোজাসাপটা বলো।”

“আমি বইটাকে বাঁধিয়ে এনে দিবো।”

“আমি ক্ষতিপূরণ চাই।বিষয়টা তো আগের মতোন হবেনা।”

“টাকার এমাউন্ট তো অনেক।কিস্তির ব্যবস্থা আছে?নিজের পকেট মানি থেকে দিবো।”

বেলী চট জলদি যেকোনো কিছুর সমাধান বের করতে পারে বলে বিশ্বাস করে।কিস্তিতে অবশ্যই অনল রাজী হবে।এটা তার ধারণা।

“আমার কাছে এর থেকে বেটার অপশন আছে।এবং তা হলো রোজ আমার এই লাইব্রেরি এসে গুছিয়ে যাবে।হয়ে যাবে আমার ক্ষতিপূরণ।”

“শুধু এতোটুকু?যদি না করি?”

“তুমি ঋণ রাখো না।তোমার বাবা সামান্য কথায় আমার ভাইকে জেলে পাঠাতে চায়।আমিও তাই করতে পারি?এখানে একটু না হয় রঙ মিশাবো।”

“দেখুন সেসব করতে হবেনা।সামান্য লাইব্রেরি গোছানো এ আর কী?”

“ভেবে বলছো তো?”

বেলী ভ্রুঁ কুঞ্চিত করে বলল,

“এখানে কোনো ভেজাল নেই তো?”

অনল রহস্যময় ভাবে হাসলো।একটু ঝুঁকে বলল,

“নাম কী?”

“বইটির?”

“ললিতা,তোমার নাম কী?”

“বেলী।”

অনল হাসলো।পুনরায় আরেকটু কাছাকাছি এলো তারা।বেলীর নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম।হঠাৎ অনল ফিসফিস করে বলল,

“কিন্তু তোমার থেকে তো ডেইজির সুগন্ধ আসছে।ওকে ললিতা রহস্য কাল জানতে পারবে।আপাতত অনল খুব ব্যস্ত।”

অনল কিছু না বলে দ্রুত বের হয়ে গেলো।পিছনে বেলীকে একরাশ প্রশ্নে কিংবা দুশ্চিন্তায় রেখে গেলো।মেয়েটি মেঝেতে পড়ে থাকা বইয়ের দিকে তাঁকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।

চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।সকল পাঠক রেসপন্স করবেন কাইন্ডলি।

কবীর শাহ ও বেলাডোনার বইটি প্রি-অর্ডার করেছেন তো?তা নয় দ্রুত করে ফেলুন।

“মিঠা মিঠা রোদ” কাহিনী সংক্ষেপ—

এক রুপকথাকে তাড়া করে চলে কবীর শাহ। বাজপাখি সম্বোধনে যাকে সকলে চিনে। ইতিহাসে হারিয়ে যাওয়া কবি ইফ্রাতের বর্ণনার পার্শুমাসের সুন্দরী লায়লার হৃদয়টিকে গভীর সমুদ্রে সন্ধান করে চলেছে। নিয়ন্ত্রিত এ পুরুষটির জীবনে হঠাৎ তার আশেপাশের দৃঢ় দেয়ালে ফাঁটল ধরিয়ে শত্রুর কিশোরী কন্যা তোশার আগমন ঘটে। মেয়েটা স্বপ্ন দেখে অদ্ভুতভাবে কিংবা স্বপ্নে বাঁচে।যেখানে বয়সের পার্থক্য বিশ বছর সেখানে কেমন অদ্ভূত অনুভূতি তৈরী হয়ে গেলো।

সমুদ্র,একটি রুপকথা,ভালোবাসা, ঘৃণা,ভয়,ষড়যন্ত্র,ধোঁকা সবকিছুর ঝড়কে অতিক্রম করে এক সূর্য উঁকি দিবে।তোশার ভাষ্যমতে সেটিই
” মিঠা মিঠা রোদ”

#আমার_ললিতা
#পর্ব:৪
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“তুমি তো ভালো মেয়ে নও।আমার এক বান্ধুবীর হাজবেন্ডকে খুব পছন্দ করতে শুনেছিলাম।”

“কে বলেছিল একথা?আপনার বান্ধুবী?”

“নাহ ওর স্বামী।”

মেয়েটি মুঠো ভর্তি করে বাদাম মুখে দিলো।যেন তা পৃথিবীর সবথেকে সুস্বাদু খাবার।বেলী নির্লিপ্ত শুধালো,

“সত্যি রামীম বলেছিল কথাটা?আপনি তাকে চিনতেন কীভাবে?”

“রামীমের বাসায় একদিন গিয়েছিলাম।তখন তুমি জানালায় দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাঁকিয়ে ছিলে।ওসময় বলেছিল।”

“শুধু একথা যে আমি তাকে পছন্দ করি?”

“হ্যাঁ।”

বেলীর কণ্ঠনালীতে কথা আঁটকে গেলো।তবুও অতিকষ্টে সে হেসে বলল,

“প্রতিবেশী হিসেবে পছন্দ করতাম।দেখেন তো লোকটা কতো অসুস্থ ছিল।মায়াদয়া হতো বুঝলেন।”

“মায়া!মনে তো হয়নি তখন।”

“আমার এই সুন্দর চেহারা দেখে মনে হয় যে বেলী অন্যের স্বামীকে ভালোবাসবে?দেখুন তো।বরং অনেক সুন্দর সুন্দর ছেলেকে আমি পিছনে ঘুরাতে জানি।”

মেয়েটি হকচকিয়ে গেলো।এভাবে কেউ তাকে কখনো শুধায়নি।সে পার্কে বেলীকে দেখে কথা বলার নিমিত্তেই এসেছিল।ভালো মেয়ে নয় একথাটা পরিচিত হওয়ার সময় মুখ দিয়ে নিজে থেকে বের হয়ে গিয়েছে।মানুষ মস্তিস্কে যা রাখে সেটি তো মুখ দিয়ে বের হয়।

“হ্যাঁ তুমি সুন্দরী।”

“আপু আপনার নাম যেন কী?ফোন নাম্বারটা দিবেন আমাকে যেসব ছেলেরা পছন্দ করে তাদের লিস্ট দিবো।এতে বুঝতে পারবেন রামীম আসলেও আমার পছন্দ ছিল কীনা।অন্তত বিয়ের পর।”

“না থাক।আমি বুঝেছি।”

মেয়েটি হন্তদন্ত হয়ে উঠে গেলো।বেলী এতোক্ষণে ঠোঁট চেপে নিজের ভেতরের কষ্ট গুলো আটকে রাখলেও তা বের হতে সময় লাগলো না।চোখের কার্ণিশ জড়িয়ে ছোট্ট এক বিন্দু পানি গড়িয়ে পড়লো।তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়ালো সে।আজ আর বাহিরে বসে পড়া হবেনা।মিষ্টি রোদকে নিজের অবলম্বন করে হেঁটে চলেছে বাসার দিকে।সদর দরজা দিয়ে ঢুকতে গিয়ে দেখতে পেলো তার বাবা বসে আছে।নিজেকে ধাতস্থ করে নিলো।মেয়েকে দেখে তোফায়েল ডেকে বলল,

“বেলী,এদিকে এসো।আমার পাশে বসো।”

বেলী বুঝতে পারলো তার বাবা কিছু নিয়ে খুব রেগে আছে।সে কোনো কথা না বলে পাশে এসে বসলো,

“জি বাবা।”

“সিকান্দার সাহেবের বড় ছেলে এসেছিল।তুমি তার দামী একটি জিনিস নষ্ট করেছো বলে।বিষয়টা কী সঠিক?”

“হ্যাঁ।”

“অন্যের বাড়ীতে গিয়ে তাদের পারমিশন ছাড়া কিছু স্পর্শ করার শিক্ষা কী আমি দিয়েছি মেয়ে?তুমি কেন গিয়ে তাদের ক্ষতি করে এলে?এরপর যখন ছেলেটা তোমাকে শাস্তি স্বরুপ রোজ নিজের লাইব্রেরি গুছিয়ে দিতে বলল।তাও যাওনি।এতোটা বেয়াদব কবে থেকে হলে?”

“আমি ভুলে গিয়েছিলাম বাবা।”

বেলীর মনে বাস করা ত্রিমাথা শয়তান প্রতিবাদ করে উঠলো এ কথায়।সে ভুলে যায়নি।বরং অনলের কথাগুলো হেলাফেলা করেছে শুধু।সত্যি যে ছেলেটা বাড়ী অবধি আসবে তা কে জানতে?মেয়েটিকে ভাবনার অতল সাগর থেকে উঠিয়ে আনলো তোফায়েল।

“অনল একজন সত্যিকারের সুশিক্ষিত ছেলে।ওর জায়গায় অন্য কেউ হলে টাকা পয়সা নিয়ে চিল্লাতো।কিন্তু সে এই বিষয়ের ধারের কাছেও যায়নি।বরং তুমি যেন শিক্ষা পাও তাই লাইব্রেরি গুছানোর মতোন মহৎ কাজ দিয়েছে।শুনলাম ওর কাছে দুই হাজার বই আছে।তুমি এখুনি যাবে।”

“কিন্তু বাবা লাইব্রেরি গুছানো কীভাবে মহৎ কাজ হয়?”

“তুমি আমার উপরে কথা বলবে?”

তোফায়েল এরপর হুংকার দিয়ে উঠবে সেটা জানে বেলী।তাই চুপচাপ উঠে দাঁড়ালো।এমনি মনটা ভেঙে আছে তার।আবার অনল নামক পুরুষটির অত্যাচার থামছেনা কেন?অবসাদ নিয়ে গেটের দিকে পুনরায় হাঁটা ধরলো।

(***)

বিকেলের শেষ রোদ পুরুষটির মুখের একপাশে এসে লেগেছে।যেন তার ত্বকের সঙ্গে মিশে তা হীরার মতোন উজ্জ্বল করে তুলছে।চোখে বন্ধ করে তন্দ্রাতে মগ্ন সে।বুকের উপর “Julian and Maddalo” বইটি স্বমহিমায় পড়ে আছে।বেলীর ভ্রম হলো।পিছন থেকে অনলের ছোট বোন রাহিমা বলল,

“কী ভাবছো?ভাইয়া ঘুমাচ্ছে দেখে চলে যাবে?”

“না।আসলে…।”

রাহিমা মিষ্টি করে হেসে বলল,

“ভাইয়াকে ঘুমাতে দাও।বরং তুমি নিজের কাজ করে চলে যাও।দেখা যাক তা নয় আবার বিচার দিতে যাবে।”

রাহিমা মেয়েটা মিষ্টি।বেলীর সাথে প্রথমবার দেখায় আপন করে নিয়েছে।এমনকি বেলীর ধারণা এ বাড়ীর সকলে ভালো।এবং একজন ভালো হওয়ার নাটক করে সে অনল।

“দেখো তো আমি তোমাকে কী বিপদে ফেলে দিলাম।আসলে হয়েছে কী?ভাইয়া নিজের বইগুলো নিয়ে খুব পজেসিভ।এখানে যা দেখছো এগুলো শেষ নয়।আরো আছে।যখন বাসা তৈরী করলো তখন বাবাকে স্পষ্ট জানালো বড় লাইব্রেরি না হলে সে আসবেনা।বাবা আবার ভাইয়াকে একটু ভয় পায়।”

“ভয়?কেন?”

“আছে কারণ।আমার ভাইয়ের একটিমাত্র খারাপ গুণ।যদিও আরো একটা আছে।চলো আমরা বই গুছাতে গুছাতে কথা বলি।”

“তুমি হেল্প করবে আমাকে?”

“কেন নয়?”

বেলী খুব কৃতজ্ঞবোধ করলো মাহিমার উপর।সে বুঝতে পারছেনা একজন ব্যক্তির লাইব্রেরি একদিনে এতো অগোছালো হয় কীভাবে?রাহিমা মেয়েটা দেখতে সুন্দরী।ভদ্রও বটে।

“অনল ভাই হচ্ছে প্রেমদূত।যার কাছে বিশেষ বাণ আছে।”

“মানে?”

“মেয়েরা লোভীর মতোন সেটির দিকে ছুঁটে আসে।”

“এরকম হয় নাকী আবার?”

“হয়।অনল ভাইয়া কতোগুলো প্রেম করেছে হিসেব নেই।”

“যে ব্যক্তি কতোগুলো প্রেম করেছে এই হিসেব না থাকলে তাকে প্রেমিক পুরুষ নয়।বরং চরিত্রহীন বলবে।”

বেলী অধরযুগল চেপে ধরলো।মুখটা একটু বেশী চলে তার।কিন্তু আশ্চর্যভাবে পিছনে থাকা রাহিমার কোনো প্রতিক্রিয়া শোনা গেলো না।সে তৎক্ষনাৎ মাফ চাওয়ার জন্য পিছনে ঘুরে দেখলো মেয়েটা নেই।

“রাহিমা আপু।কোথায় তুমি?”

লাইব্রেরির বাহির থেকে জবাব এলো,”আমি সিঁড়িতে।একটুপর আসছি বেলী।”

কথাটি শুনেনি দেখে বেলী খুশী হতে গিয়েও পারলো না।অনলের দিকে দৃষ্টি স্থাপন হতেই দেখলো ছেলেটা তাঁকিয়ে আছে তার দিকে।নিষ্পলক যেন হিমালয়ের শীতল শক্ত বরফখন্ড চোখের মণিদুটো।বেলী বিমোহিত হলো।নিজেকে ধাতস্থ করে বইগুলো তাকে তুলে রাখছে।পিছনে আগুন্তকের অনুভূতি পেলো।

“দেখুন,আপনার সব বই গুছিয়ে রাখছি অনল..।”

বাকীটা বলার শক্তি কোথায় মেয়েটির।পিঠে নরম কিছুর ছোঁয়া পেলো।সে তৎক্ষনাৎ পিছন ফিরে দেখলো ময়ূরের পালক।

“এটা কেমন আচরণ করছেন অনল?”

“মাই ললিতা।”

বেলীর মন নিস্তেজ হয়ে উঠলো।কী ছিল এই সম্বোধনে?ভাবনা চিন্তা একেবারে মিটে গেলো মস্তিস্ক থেকে।ওদিকে কোমল গাঢ় হরিৎ পালকটি তার কপাল থেকে ধীরে ধীরে নেমে এসে গলাতে গিয়ে ঠেকলো।তা তৎক্ষনাৎ বেলীর অধরযুগলে পৌঁছাতে সময় লাগলো না।বেলী কী বলবে?কেমন প্রতিক্রিয়া দিবে?এর পূর্বে অনল সন্নিকটে এলো।উষ্ণতার ঝড় উঠলো দুজনের মনে।ফিসফিস করে অনল বলল,

“যদি এই পালকের জায়গায় আমার স্পর্শ হতো তাহলে সেটি হতো চরিত্রহীনতা।আর এখানে পালক আছে সেটি হলো রোমান্টিসিজম।তুমি কেন হতবিহ্বল হয়ে গেলে?উচিত কী ছিলনা আমাকে কষিয়ে চড় মা”রা?”

“আমি আমি..।”

“তুমি কী মাই ললিতা?”

বেলীর কান্না পেলো।এই লাইব্রেরিকে এখন অভিশপ্ত মনে হচ্ছে।আর শনি হচ্ছে স্বয়ং অনল।ছেলেটা কীভাবে অবর্ণনীয়ভাবে তাকে দেখছে।একপাশে হেসে বলল,

“ললিতা,তুমি চাও বা না চাও এখন থেকে আমার বিশেষ বাণে জড়িয়ে গেলে।”

চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।সকল পাঠক রেসপন্স করবেন সুন্দর মতো।তা নয় বুঝবো কীভাবে কেমন হচ্ছে?

গতকাল আপনাদের সকলের প্রিয় কবীর শাহ ও বেলাডোনার বইটি পাব্লিস হয়েছে “মিঠা মিঠা রোদ” রুপে।এখনও কিনেননি তারা দ্রুত ক্রয় করে ফেলেন।

ফ্ল্যাপ:
এক রুপকথাকে তাড়া করে চলে কবীর শাহ। বাজপাখি সম্বোধনে যাকে সকলে চিনে। ইতিহাসে হারিয়ে যাওয়া কবি ইফ্রাতের বর্ণনার পার্শুমাসের সুন্দরী লায়লার হৃদয়টিকে গভীর সমুদ্রে সন্ধান করে চলেছে। নিয়ন্ত্রিত এ পুরুষটির জীবনে হঠাৎ তার আশেপাশের দৃঢ় দেয়ালে ফাঁটল ধরিয়ে শত্রুর কিশোরী কন্যা তোশার আগমন ঘটে। মেয়েটা স্বপ্ন দেখে অদ্ভুতভাবে কিংবা স্বপ্নে বাঁচে।যেখানে বয়সের পার্থক্য বিশ বছর সেখানে কেমন অদ্ভুত অনুভূতি তৈরী হয়ে গেলো।

সমুদ্র, একটি রুপকথা, ভালোবাসা, ঘৃণা, ভয়, ষড়যন্ত্র, ধোঁকা সবকিছুর ঝড়কে অতিক্রম করে এক সূর্য উঁকি দিবে। তোশার ভাষ্যমতে সেটিই ” মিঠা মিঠা রোদ ”

চলবে।