#আমার_ললিতা
#পর্ব:৪৪
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“আমার কাছে এখন এক টাকাও নেই।আমি রামীমের ছেলেকে দেখতে যাবো।ওর জন্য অনেক অনেক দামী কিছু কিনবো।তাই টাকা চাচ্ছি।আব্বু দিবে এতো টাকা সেটা তো স্বপ্নেও ভাবা যাবেনা।আর ভাইকে জানাতে চাচ্ছিনা।লাস্ট অপশন আপনি।”
বেলী গড়গড় করে সব কথা বলে ফেললো।লম্বা একটি শ্বাস নিয়ে নিজেকে সহজ করার বৃথা চেষ্টা করলো।পাশের জানালা থেকে সকালের হালকা বাতাস আসছে।এতে মেয়েটির কপালের চুলগুলো উড়ছে।অনল অল্প ভেজানো দরজার পানে তাঁকালো।
“তুমি আপাতত ধীরে কথা বলো।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।এভাবে সরাসরি আমার রুমে আসা ঠিক হয়নি।কল করতে পারতে।”
“দুঃখিত।”
বিছানা থেকে টিশার্টটি তুলে সেটা গায়ে জড়িয়ে নিলো অনল।পুরোপুরি ওঠার আগে এলেমেলো বিছানাটি গুছিয়ে নিলো।বেলী খেয়াল করলো পুরুষটির কাজ অনেক পরিপাটি।সচরাচর ছেলে মানুষেরা এমন হয়না।অনল অবশ্য এখন আর তাকে খেয়াল করছেনা।তার মাথায় হঠাৎ বেলীর এমন ইচ্ছা শুনে নানান প্রশ্ন ঘুরছে।ওয়াশরুমে যাওয়ার আগে সে দরজাটি বন্ধ করে গেলো।আপাতত ক্ষেত্রে তারা অবিবাহিত।স্বীয় ললিতার সম্মানে সে এতোটুকু আঁচ লাগতে দিবেনা।
“ললিতা।দরজা খুলবেনা।এবং জানালার কাছে যাবেনা।ঠিক আছে?”
“হুম।”
“ওয়েট আসছি।”
বেলী ঘুরেফিরে ঘরটা দেখছে।পুরো কক্ষটাতে অনলের ব্যক্তিত্বের ছোঁয়া পাওয়া যাচ্ছে।শেলফের কাছে এসে থেমে গেলো সে।এখানে কিছু পুরানো ছবি রাখা ছিল। একটি ছোট ফ্রেমে খুব কাছে থেকে তাকিয়ে দেখা গেলো অনলের একটি শিশু বয়সের ছবি। ছবিতে সে হাসছে।একটি শিশুর মধ্যে থাকা সমস্ত মায়া তার মধ্যে আছে।এতোটা নিরীহ লাগছে পুরুষটিকে।তার দৃষ্টিতে কিছু অজানা গল্প আছে। বেলী কিছুটা অবাক হয়ে ছবিটি ধরে ভাবলো এতো সহজ সরল ছিল মানুষটা এখন কতো শক্ত।এসময় অনল ফিরে এলো ওয়াশরুম থেকে। বেলী একটু সতর্ক হয়ে হাতটা তুলে ছবিটা ফেরত রেখে দ্রুত পেছনে সরে দাঁড়ালো।ফ্রেশ হওয়ার পর সিক্ত চেহারার সুন্দর পুরুষটি যেন এক জীবন্ত মূর্তি যার ত্বক হালকা ভেজা।প্রাকৃতিক দীপ্তিতে চকচক করছে।তার কুচকুচে কালো চুলগুলো বাতাসে ভেসে দুলছে।কিছুটা এলোমেলো।কিন্তু তাতে তার ব্যক্তিত্বের জৌলুস আরো বেড়েছে।চোখে গভীরতা স্নিগ্ধ জলাধারের মতো।এবং তার ত্বকের উপর পানি চিকচিক করছে যেন মুক্তদানার মতো।
“ললিতা স্বাবধান।ওখানে আমার একটা বার্থডে ড্রেস পরা ছবি আছে।সেটা দেখলে লজ্জা পাবে।”
“মানে?”
“জন্মক্ষণে মানুষ যা পরে বের হয় সেটা পরা অবস্থাতে ছবি আছে।”
বেলীর মস্তিস্ক স্বল্প সময় নিলো পুরো বিষয়টা বুঝতে।অনল ইতিমধ্যে তার রুমে থাকা ছোট শেল্ফ থেকে কফি তৈরীর সরঞ্জাম বের করলো।
“আপনি ভারী নির্লজ্জ তো অনল।”
অনল প্রসঙ্গ বদলে বলল,
“ব্ল্যাক কফি নাকী মিল্ক কফি?”
“কিছুনা। আপনি আমাকে বলেন যে টাকা দিবেন কীনা।”
“সেটা আমি দিতে পারি।কিন্তু তার আগে আমাকে কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।”
“বলুন।”
অনল দুই কাপ কফি বানিয়ে নিলো।ধূমায়িত পোড়া কফি বিনের সুবাস পুরো ঘরময় ছড়িয়ে গেলো।বেলীর দিকে এগিয়ে দিলে সে দ্বিধা নিয়ে তা হাতে তুলে নিলো।ডিভানের একপাশে বসলো অনল।
“তোমার হঠাৎ কেন মনে হলো যে রামীমের ছেলেকে দেখতে যেতে হবে?এটা অনেকটা সন্দেহজনক সিদ্ধান্ত। কেউ কিছু বলেছে?”
অরুণার নিষেধাজ্ঞা স্মরণে হলো বেলীর।আপাতত সে আড়াল করে বলল,
“আমি আমার অতীত থেকে বের হতে চাচ্ছি।এজন্য মুখোমুখি ফাইট করবো।”
“দারুণ সিদ্ধান্ত।কিন্তু তুমি প্রচুর দূর্বল।পরে দেখা যাবে কান্নাকাটি করছো।”
বেলী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“না আর কখনো কাঁদবো না রামীমের জন্য।সে নিজের জন্য কাঁদতে পৃথিবীতে তটিনী আর তার সন্তানকে রেখে গিয়েছে।একটা গোপন কথা বলি।আমি বোধহয় শুরু থেকে রামীমের নিকট সাইড চিক ছিলাম।”
“এক্সপ্লেইন।”
“বান্ধুবীর প্রতি রামীমের পূর্ব থেকেই অতিরিক্ত টান ছিল।আমার থেকে বেশী তটিনীর সাথে কথা শেয়ার করা।যেকোনো ডেটে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া।সবসময় আমার জন্য যা নিতো তা বেস্ট ফ্রেন্ডের জন্যও নিতো।জানেন রামীম চলে যাওয়ার আগে আমাকে বলেছিল তটিনী জোর করলো দেখে সে বিয়েটা করেছে।”
অনল হাসলো।যেটার অর্থ তার ললিতা বুঝলো না।
“ললিতা, জানো ‘পরকীয়া’ শব্দটা পৃথিবীর সবথেকে ঘৃণিত শব্দ?যেখানে একজনকে ভালোবাসলেও অন্য কারো প্রতি মন পুড়ে।”
“জানি।তবে একথা কেন বলছেন?”
“যারা পরকীয়া করে তারা পৃথিবীর সবচেয়ে লেইম এক্সকিউজ দেয়।যেমন ধরো দুজন মানুষ খুব অল্প বয়সে প্রেমে পড়লো।সেখানের ছেলেটা সামান্য ছোটখাটো কাজ করে সংসার চালায়।তার স্ত্রী এতিম।সবে এসএসসি পাশ করেছে।ছেলেটা ওই স্বল্প টাকায় মেয়েটাকে মাস্টার্স অবধি পড়ালো।তাদের একজন ছেলে সন্তান হয়েছে ইতিমধ্যে।এরপর হুট করে একদিন মেয়েটা ২৬ টা চিঠি লিখে তার নতুন শিক্ষিত প্রেমিকের হাত ধরে পালালো।তুমি বলতে পারবে এখানে কী সাইকোলজি কাজ করেছে মেয়েটার মধ্যে?স্বামীও তো তার প্রেমিক ছিল?তবে যার সাথে সারাজীবন একসাথে থাকার জন্য বিয়ে করলো তাকে ছেড়েই কেন চলে গেলো?যদি তুমি সেই নারীকে জিজ্ঞেস করো যে কেন এমন করলে?তাহলে দেখবে এমন লেইম আর বাজে এক্সকিউজ দিচ্ছে যার অর্থ নেই।তবুও সেসব শুনে অপর মানুষ ভাঙে।কষ্ট পায়।ওই মহিলার মতোন রামীমের এক্সকিউজও ছিল।সত্য বলতে তার দূর্বলতা ছিল তটিনীর প্রতি।যা মৃ” ত্যু”র আগ অবধি বিশ্বাস না করে মনকে ভুল বুঝিয়েছে।তবে তুমিও কিন্তু রামীমকে ভালোবাসতে না।”
বেলী চোখ বড় বড় অনলের পানে তাঁকালো।যেন এখুনি সে ভয়ংকর রুপ ধারণ করবে।মেয়েটা রাগলে আরো বাচ্চার মতোন দেখা যায়।
“আমি রাগ করার মতোন কিছু বলিনি আমার ললিতা।”
“আপনি এতো কিছু দেখার পরেও বলছেন যে আমি রামীমকে ভালোবাসতাম না?”
“না।বরং সত্য হলো তুমি মেনে নিতে পারোনি যে তটিনীকে সে বিয়ে করেছিলো।এখানে গভীর একটা ফাঁক আছে।তুমি রামীমের মৃ” ত্যু”র থেকে তার বিয়ের জন্য বেশী কষ্ট পাও।উদাহরণ ওর ছেলে বা স্ত্রীর নাম শুনলে পাগলামো করা।অথচ তুমি বছরে কয়বার ক”ব”রটা দেখতে যাও?এটা তোমার শয়তান মাথা মানতে চাইবেনা।তোমাদের যদি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিচ্ছেদ হতো তাহলে দেখা যেতো এতোদিনে তুমি তাকে ভুলে গিয়েছো।”
বেলী সত্যি খেয়াল করলো রামীমের মৃ”ত্যু”কে নিয়ে সে এতোটা ভাবেনি।বরং তটিনীর কথাটা তার মাথায় বেশী ঘুরতো।কপালে তার রেখার উদয় হলো।তাহলে এতো বছর সে মিথ্যা মরিচীকার পিছনে ঘুরে চলেছে।অনল তাকে ভাবনার জগত থেকে বের করে আনলো।হঠাৎ সে মেয়েটির সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো।হাতটা টেনে নিজের হৃদপিন্ডের উপর রেখে বলল,
“রামীমকে তুমি চাইলেই ভুলতে পারবে ললিতা।বাদ দাও।জীবন তো একটাই।তোমাকে বাঁচানোর জন্য আমি শুরু থেকে কষ্ট করে যাচ্ছি।অধিকাংশ মেয়ে বা পুরুষ বিচ্ছেদের পর নিজেকে শুধরে নেয়।কিন্তু কিছু থাকে যারা সংশয়ে থেকে পুরো জীবন হয় একেবারে তা নয় তিলে তিলে শেষ করে।তোমার কিছু হলে অনল সর্বহারা হবে।”
কী দারুণ বাক্য।নিজের দূর্বলতা অকপটে স্বীকার করে নেওয়া।অনলের চোখ পানে সরাসরি তাঁকিয়ে থাকে বেলী।হঠাৎ সে শুধালো,
“তাহলে আপনি এতো নিশ্চিত কীভাবে যে আমি আপনাকে ভালোবাসি?এই প্রশ্নটা আমি সবসময় করি।”
“জবাব জানতে চাও?”
“জি।”
“আমাকে হারিয়ে দেখো।এরপর দেখবে দু’জনের ব্যাথা একই।”
“হারাবো কীভাবে?আর কেন?”
অনলের ঠোঁটে রহস্যময় এক হাসি ফুঁটে উঠলো।ললিতা আগ্রহভরে জবাব জানতে চাচ্ছে।কিন্তু কে জানে সামনে কী হয়?
চলবে।
#আমার_ললিতা
#পর্ব:৪৫
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“আমি তোমাদের বাবাকে ডিভোর্স দিতে চাচ্ছি।”
সিয়াম পানি পান করছিলো।তবে সে পুরোপুরি তা গেলার পূূবেই মুখ দিয়ে বের হয়ে গেলো।রেবেকা খুব শান্তভাবে কথাগুলো উচ্চারণ করেছে।যেন বিয়ের পঁয়ত্রিশ বছর পর এসে বিচ্ছেদ খুব সাধারণ ব্যাপার।শশী হেসে উঠলো উচ্চসুরে।সে ধরেই নিয়েছে যে তার মা উপহাসে মেতে উঠেছে।তবে বেলী মায়ের দৃঢ় মুখখানা দেখে বিষয়টিকে উপহাস বলতে পারলো না।সিয়াম নিজের হাতে ধরা পানির বোতলটা টেবিলে রাখলো। চোখগুলো রেবেকার দিকে স্থির।তার ঠোঁট কাঁপছে। যেন কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু শব্দগুলো বের হতে পারছে না। শশী হাসি থামিয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।সত্যিই বুঝতে চাইছে এটা মজা কিনা। তবে রেবেকার চোখের গভীরতা তাকে বিভ্রান্ত করলো।বেলী ধীরে ধীরে প্রশ্ন করলো। তার কণ্ঠস্বরে ভয় এবং অবিশ্বাস মিশে ছিল।
“তুমি কি সিরিয়াস?”
রেবেকা চেয়ারটায় হেলান দিয়ে বসলেন। তার চোখ দুটোতে কোনো নড়াচড়া নেই।মনে হচ্ছে অনেক দীর্ঘ ভয়কে সে অতিক্রম করে এই কথাগুলো বলছে।শান্ত গলায় জবাব দিলো,
“হ্যাঁ আমি সিরিয়াস।আমি অনেক ভেবেছি তবে আর আমি আর পারছি না।ভেবেছিলাম শশীর বিয়ে অবধি অপেক্ষা করবো।কিন্তু মানুষটা আমার নিশ্বাস বন্ধ করে ফেলেছে।এখন যদি আমি মুক্তি না পাই তাহলে বাঁচতে পারবো না।তোফাজ্জল কখনো আমাকে স্ত্রী হিসেবে সম্মান করেনি।সিয়াম আর শশীকে আদর করলেও আমার আরেক সন্তান বেলীকে তুচ্ছ করেছে সবসময়।বেলীর বিয়ে ঠিক করেছে সে।কোনো এক ব্যবসায়ীর ছেলের সাথে।আমি মটেও এই বিয়ে হতে দিতে পারিনা।বেলীকে নিয়ে আলাদা হয়ে যাবো আমি।”
শশী এবার আর হাসলো না। সে অসহায়ভাবে মায়ের দিকে তাঁকিয়ে রইলো।
“বাবা জানেন?তার সিদ্ধান্ত কী?”
“না এখনও বলিনি।তোমাদের জানানোটা জরুরি মনে হলো আগে। এরপর তোমার বাবার সাথে কথা বলবো।”
সিয়াম হাত মুঠো করে বসে আছে।সে এমন এক ভাই ও ছেলে যে কিছু করতে বা বলতেও পারছেনা।চোখের সামনে এতোগুলো বছর অনেক অনাচার দেখেছে নিজের বাবার।
“কিন্তু মা এতগুলো বছর পরে হঠাৎ কেন এই সিদ্ধান্ত?জীবনের শেষ সময়টাতে এসে যদি সংসার ছাড়তে চাও তাহলে থাকবে কীভাবে বাকীটা জীবন।”
রেবেকা নিঃশ্বাস ফেললেন।মৃদু হেসে বলল,
“কিছু সিদ্ধান্ত হঠাৎ নেয়া যায় না সিয়াম। এগুলো বছরের পর বছর জমে থাকা আক্ষেপের ফল। আমি অনেক দিন চুপ থেকেছি।অনেক কিছু মেনে নিয়েছি। কিন্তু এবার আর পারলাম না।তাছাড়া শেষ বয়সে এসে কী একটু ভালো থাকা ডিজার্ভ করিনা?”
শশী যেন নিজেকে ধরে রাখতে পারছেনা।উত্তেজিত হয়ে বলল,
“এটা ঠিক না ম।তুমি কেন এমন করতে চাইছো? আমাদের কথা একবারও ভাবলে না?তাছাড়া আমার সামনে বিয়ে।সবাই জানলে বিষয়টা কতোটা উপহাসের হবে জানো?”
“তোমার বিয়েতে আমি থাকবো।এই বাড়ীতে না থাকতে দিলেও থাকবো।তোমাদের কথা সবসময় ভেবেছি শশী। কিন্তু কখনো নিজের কথা ভাবিনি। এবার একটু নিজের জন্য বাঁচতে চাই।তাছাড়া বেলীকে বাঁচানো জরুরি।”
“বেলী তোমার একার সন্তান না মা।ছোট মেয়ের জন্য বড় মেয়ের বিয়েটা তুমি নষ্ট করো না দয়া করে।নাকী আমি তোমার নিজের সন্তান না।”
“শশী।”
“চুপ থাকো মা।আমার তোমাকে এখন অসহ্য লাগছে।”
চেয়ার থেকে উঠে উপরে চলে গেলো শশী।পরিবেশে থমথমে নীরবতা নেমে এলো। সিয়াম যেন কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।বেলী রেবেকার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো এই সিদ্ধান্ত বদলানোর নয়।সে মায়ের হাত ধরে বলল,
“মা।আমি জানিনা বাবা বিয়ে নিয়ে তোমাকে কী বলেছে।কিন্তু সে বিয়ে দিতে চাইলেই তো হয়ে যাচ্ছে না।এই সামান্য বিষয় নিয়ে…।”
“তোমরা বোঝার চেষ্টা করো বিষয়টা সামান্য নয়।”রেবেকা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।বাহু থেকে আঁচল সরিয়ে কালসিটে জায়গাটিকে দেখালো।ক্ষতটা দেখে সিয়াম চমকে বলল,
” বাবা এমন করেছে?”
“এটা নতুন নয়।সে এমন জায়গায় আ” ঘা”ত করেছে যে কখনো তা দেখতে পায়নি কেউ।সবসময় এমন হয়েছে তা নয়।সর্বোচ্চ রাগ উঠলে।তবে বলো তো আমার সম্মান কোথায় এই বাড়ীতে?এভাবে হয়না কিছু।আমি খুব ক্লান্ত।”
বেলীর ভীষণ রাগ উঠলো তোফাজ্জলের উপর।পরক্ষণে তা পানি হয়ে গেলো যখন খেয়াল হলো পুরো বিষয়টির নেপথ্যে কারণ সে।হঠাৎ ভারী গমগমে একটা কণ্ঠ শোনা গেলো,
“বেড়িয়ে যাও এখুনি আমার বাড়ী থেকে তুমি আর তোমার মেয়ে।”
দরজায় দাঁড়িয়ে আছে তোফাজ্জল।সবাই চমকে উঠলো।ভদ্রলোক রাগে কাঁপছে বোধহয়।কয়েক পা এগিয়ে এসে বেলীকে নির্দেশ করে বলল,
“এই মেয়েটা কী সত্যি আমার রেবেকা?তা নয় তোমার কেন ভরসা নেই যে ওর জন্য আমি ভালো কিছু করবো।বলো এটা কার সন্তান।যার জন্য তুমি আমার ছেলে ও মেয়েকে ছেড়ে যেতে চাও।”
“বাবা।আপনি এই মুহুর্তে ঠিক কী বললেন তা খেয়াল করেছেন?বেলী আমার বোন।”
“তোমার মা কে জিজ্ঞেস করো আসলেও কীনা।আমার তো মনে হয়না।”
রেবেকা প্রতিবাদ করে উঠলো।তোফাজ্জলের সঙ্গে প্রচুর ঝগড়া লেগে গেলো তার।কিন্তু এরমাঝে কেউ খেয়াল করলো না নিশ্চুপ বেলীকে।যে অবাক হয়ে এখনও নিজের বাবার দিকে তাঁকিয়ে আছে।নিজ সন্তানকে কেউ এতো ঘৃণা করতে পারে?দ্রুত সে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।হাতের কাছে যা পেলো তা একটা ব্যাগে ভরে নিয়ে বাড়ী থেকে বের হয়ে গেলো।তর্কে মত্ত্ব থাকা মানুষ গুলো তা খেয়ালও করেনি।
(***)
“আপনি কী চান আয়েশা।আমি এখন আপনাকে শেষ করে দেই?অনেক তো খেললেন আমাকে নিয়ে।এবার না হয় সেই ডকুমেন্টস গুলো ফিরিয়ে দেন।তা নয় একটা ভিডিও আপনার পুরো সাম্রাজ্যকে শেষ করে দিতে পারে।”
পায়ের উপর পা তুলে কথাগুলো বলল অনল।সে আজ ভীষণ খুশি।অবশেষে আয়েশা নামক মানুষটা থেকে রেহাই পেতে চলেছে সে।একটা গোপন ভিডিও তার হাতে লেগেছে।যেখানে আয়েশা তার প্রতিপক্ষকে বিপদে ফেলার পরিকল্পনা করছে।যদি এটা পাব্লিক হয় তাহলে অনেক বড় আইনী ঝামেলা তে পড়বে সে।আয়েশা গর্জন করে বলল,
“আমি ভেবেছিলাম অবশেষে আপনি আমাকে ভালোবাসার কথা বলতে এসেছেন।এই সুন্দর পরিবেশ, রোমান্টিক ডিনার সব….।”
“সব আপনাকে ফাঁদে ফেলা ছিল।”
অনল হাসতে হাসতে বলল।অগ্নিকণার মতো দীপ্ত সেই হাসি। চোখে লেগে আছে এক অদ্ভুত উষ্ণতা যা মুহূর্তে চারপাশকে আলোয় ভরিয়ে তোলে।তার ব্যক্তিত্বের সৌন্দর্য যেন প্রকৃতির নির্মম আগুনের মতো।পোড়ায়!ভীষণভাবে দগ্ধ করে দেয় সব।আয়েশার চোখে পানি চলে এলো।সে নাক টেনে বলল,
“আমি আপনার অনেক বড় ক্ষতি করে দিতে পারি।”
“তাহলে এটা কোনোভাবে পাব্লিক হওয়া থেকে আঁটকাতে পারবেন না আয়েশা।এখুনি নিজের এসিস্ট্যান্টকে বলুন শেষ পৃষ্ঠাটা দিতে।সেখানে লেখা আছে বিশেষ ওই উপাদানটি।ভুলেও কপি রাখবেন না।অবশ্য রেখে লাভ নেই।শেষটা আমার হাতেই।”
আয়েশা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।এসিস্ট্যান্টকে কল করে ডকুমেন্টস গুলো আনতে বললো।সে এতোদিন অনলকে শুধু ঘুরিয়েছে।অবশেষে আজ বাজিমাত করে দিলো পুরুষটি।
এমন সময় অনলের ফোন বেজে উঠলো।তার বোন রাহিমা কল করেছে।অনল রিসিভ করতে না চেয়েও করলো।
“হ্যালো কী হয়েছে? আমি ব্যস্ত।”
“ভাই বেলীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।সিয়াম কল করেছিলো।”
“খুঁজে পাওয়া কেন যাবেনা?কোনো বান্ধুবীর বাসায় আছে নিশ্চয়।”
“না।আসলে তিনদিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে না।সিয়াম আজ আমাকে জানালো।”
“হোয়াট দ্য হেল।আর ও আজ জানাচ্ছে?এজন্যই বলি ললিতাকে কেন আমি দেখিনা।আমি আসছি।পুলিশকে জানিয়েছে?”
অনল দ্রুত উঠে গেলো।তার ললিতাকে পাওয়া যাচ্ছে না।এর থেকে কষ্টের কিছু আছে?অথচ হারানোর কথা ছিল তার।পিছন থেকে আয়েশা ডেকে বলল,
“আপনি নিবেন না ডকুমেন্টস?”
অনল শুনেও শুনলো না।সে এখন কোথায় খুঁজবে মেয়েটাকে?অথচ অনল অনুমানও করতে পারছেনা তার ললিতা বহু দূরে চলে গিয়েছে।দীর্ঘ এক বিচ্ছেদ কতোটা শান্ত ভাবে এলো অনল কাশফের জীবনে।
চলবে।