আমার ললিতা পর্ব-৫+৬

0
823

#আমার_ললিতা
#পর্ব:৫
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আপনার সাথে জড়িয়ে যাবো?কী ভাবেন নিজেকে?আপনি কী ভেবেছেন আপনার ব্যাপারে খোঁজ নেয়নি?একজন নেহায়েৎ চরিত্রগত সমস্যা সম্পন্ন পুরুষ।দূরে সরে দাঁড়ান আমার থেকে।”

“বিশ্বাস করো ললিতা।তোমার এসব কথায় আমি একটুও ভয় পাইনি।”

“আমি তো ভয় দেখানোর ইচ্ছাতে নেই।”

বেলীর থেকে দূরে সরে দাঁড়ালো অনল।পানসে ঘোলাটে আলোতে পুরুষটিকে কীভাবে বর্ণনা করা যাবে?কিংবা কোন উপমায়?টেবিলে গাঁ ঠেকালো অনল।হাত দুটো আড়াআড়িভাবে বুকে রেখে বলল,

“আমার তোমাকে মনে হয় নির্বোধ ললিতা।যে চরিত্রহীনের সঠিক সংজ্ঞা জানেনা।এখন যদি দেয়ালে চেপে ধরে ফ্রেঞ্চ কিস চিনিয়ে দিতাম তবে হয়ে যেতাম চরিত্রহীন।আমার এই শব্দটা মটেও পছন্দের নয়।”

নিজেকে ধাতস্থ করলো বেলী।লম্বা একটি শ্বাস নিলো।তার ওয়াটার গ্লোসে ভেজানো পাতলা অধরযুগল মৃদু ছন্দে কাঁপছে।অনল সামান্য হেসে বলল,

“যদি ঠোঁটের কম্পন বন্ধ না করো তাহলে আমি সত্যি বলছি ললিতা এরপরে যতোটা রক্তিম হবে ঠোঁট।ততোটা দুনিয়ার সব লিপস্টিকেও আড়াল করতে পারবেনা।”

“আশ্চর্য!আপনি কী একটু বেশী অ’শ্লি’ল নন?দেদারসে একজন মেয়েকে যা খুশি তাই বলছেন।এবং সে অচেনা।”

“অচেনা?আমি অচেনা নই বেলী।নিজের স্মৃতিতে জোর দাও।আমাকে চিনো তুমি জুলিয়েট।”

প্রচন্ড জোরে কেউ আ’ঘা’ত করলো বেলীর অন্ত:করণে।জুলিয়েট!এ নামের চিঠিগুলো ছিল তিক্ততায় ভরা।অনলের মুখবিবর এখন অনুভূতিহীন।সে পুনরায় স্থিমিত কণ্ঠে বলতে লাগলো,

“অল্প বয়সী বেলীর জীবনে হুট করে একজনের আগমন ঘটেছিল মনে আছে?নাকী স্মৃতিশক্তি দূর্বল?”

“আমি জানিনা আপনি কার কথা বলছেন।”

“রাইট।তোমার স্মৃতিশক্তি দূর্বল।চলে যাও আজ।তা নয় আমি কী করবো জানিনা।”

বেলী খুব করে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে চাইলো।তার চোখেমুখে তা ফু্টেও উঠছে।কিন্তু সেটি মুখ দিয়ে উচ্চারণ করার সাহস হলো না।জুলিয়েট নামের সঙ্গে স্মৃতিগুলো ভীষণ বিচ্ছিন্ন।কিংবা অপ্রিয়।বেলী চলে যেতে গিয়েও থেমে গেলো।পিছন ফিরে বলল,

“এখন যে কথাগুলো বললেন আরেকদিন আমার সাথে এভাবে কথা বললে ছাড়বো না।বরং…।”

পাশ থেকে একটা বই উঠিয়ে তা ছুঁড়ে মেরে বলল,

“শেষ করে ফেলবো।”

অনল তৎক্ষনাৎ বইটি হাতে নিলো।সেটির গায়ে হাত বুলিয়ে বলল,

“যে মেয়ে অন্ধকারে ভয় পায় সে আমাকে শেষ করার হু’ম’কি দিচ্ছে?স্ট্রেঞ্জ।মনে হচ্ছে পাথরের গায়ে লেগে থাকা শ্যাওলা বলছে পাথরকে সে নরম করতে পারবে।বস্তুতপক্ষে শ্যাওলা নিজে নরম ও পিচ্ছিল।”

“দেখা যাবে।কাওকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই।কিন্তু কী বলেন অন্য মেয়েদের যেভাবে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেন মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে।আমাকে আপনি সেটা পারবেন না।”

“আমি তো চেষ্টাও করবো না ললিতা।”

“ইশ!প্রথমত আমাকে ললিতা বলা বন্ধ করুন।দ্বিতীয় নিজের প্রতি অহংকার কমিয়ে নেন।জীবনের জন্য ভালো হবে।’Pride and Prejudice’ হাতে আছে বলে নিজেকে মি.ডার্সি ভাববেন না।”

“ভাবছিনা।”

পুরুষটির সংক্ষিপ্ত কথাগুলো।তবুও শুনতে ভালো লাগছে বেলীর।এটা সে স্বীকার করবেনা।নিজেকে ছোট না করার নিমিত্তে বলল,

“গুড।কাল আমি সময় মতোন আসবো বাবার কাছে যেতে হবেনা।”

“যাবো না।”

বেলীর রাগ উঠে গেলো।এতো সংক্ষিপ্ত কথা কারো কাছে শুনলে মনে হয় সে ভীষণ পরিমাণে উদাসীন।বেলী সিঁড়ির কাছটায় নেমে যাচ্ছে এমন সময় পিছন থেকে অনল শুধালো,

“ললিতা শুনো।”

পিছন ফিরে তাঁকালো বেলী।অনল হেসে বলল,

“আজ রাতে ডেট আছে আমার রুমের বারান্দায়।ডেটে যাওয়ার পর দুশ্চরিত্রের লেভেলে আমার কতোটা উন্নতি হবে?”

“বুঝলেন Bad boy উন্নতির লেভেল ইনফিনিটি লেভেলে বাড়বে।”

বেলী দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলো।অনলের অধর যুগলে হাসি ফুঁটে উঠলো।বড় নিরোর্থক সে হাসি।

(***)

“তুমি স্ত্রী হিসেবে একেবারে আনফিট রেবেকা।রাতের খাবার গুলো জ’ঘ’ন্য ছিল একদম।”

স্বামীর মুখে এহেন মন্তব্য শুনে কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া দিলো না রেবেকা।বরং শান্তভাবে মাছের কাঁটা বেছে নিতে লাগলো।তিন সন্তানের সামনে মাঝেমধ্যে এমন অপদস্ত হতে হয় তার।এমন নয় রান্না সত্যিকার অর্থে খারাপ হয়েছে।মাঝেমধ্যে খু্ঁত ধরতে তোফায়েল পছন্দ করে।সিয়াম নিজের মায়ের প্রতি অনেক যত্নশীল।বাবার করা মন্তব্যের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বলে,

“মা, আজকে মাছের ডিশটা অনেক সুন্দর হয়েছে।আমাকে আরেকটু দাও।”

তোফায়েল শব্দ করে চামচ রেখে দিলো প্লেটে।একটু রা’গী কণ্ঠে বলল,

“আমাকে এভাবে শুনিয়ে বলার কিছু নেই সিয়াম।সত্যকে গ্রহণ করা বুদ্ধিমানের কাজ।”

“যে রোজ রোজ আমাদের কাছে বিনা বেতনের শেইফ হয়ে আছে তাকে একদিন এভাবে বলাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়।”

“মিথ্যা একদিন হোক বা দুদিন সেটি বলা সমান অপরাধ।আর স্ত্রী কোনো বেতনভুক্ত পেশা নয়।এগুলো তার কর্তব্য।”

“নিজ স্ত্রীর সাথে একদিন মিথ্যা বললে কী হবে বাবা?মা কতো কষ্ট পায় আপনি তা জানেন?”

“চুপ থাকো Moron ছেলে।তুমি ইদানীং অনেক বেশী কথা বলো।”

“সত্যকে গ্রহণ করা বুদ্ধিমানের কাজ।”

“শাট আপ।তোমার সাহস কীভাবে হলো আমার সাথে এভাবে কথা?”

তোফায়েল গ’র্জে উঠলো।বেলী অসহায় চোখে মা ও বোনের দিকে তাঁকালো।যারা দেদারসে খেয়ে যাচ্ছে।কিন্ত তার গলা দিয়ে খাবার নামলো না।বাবা ও ভাই এখন অনেকক্ষণ তর্ক করবে।এসব শোনার ইচ্ছা নেই দেখে সে উঠে পড়লো।কেউ থামালো না।বরং প্লেটে খাবার রেখে ওঠা একটি সাধারণ বিষয়।এমনভাবে অবহেলা করে গেলো।বড্ড খারাপ লাগলো বেলীর।তাদের পরিবারে স্বাভাবিক হয়েও কিছু একটা আছে যা অস্বাভাবিক।নাকী তার ভুল?

রুমে এসে সোশ্যাল মিডিয়াতে ঢুকলো বেলী।আগামীকাল ভার্সিটিতে ক্লাস টেস্ট আছে তার।মনটা এমনি খারাপ আরো একটু খারাপ হয়ে গেলো।বিছানাতে সোজা হয়ে শুয়ে পড়লো সে।অতীতের স্মৃতিগুলো মাথায় আসছে।যখন জুলিয়েট নামে চিঠিগুলো আসতো।কী ভয়াবহ ছিল সেসব দিন।অনলকে সে ওই চিঠি প্রেরক ভাবতে পারলো না।কারণ এ ঘটনা তখন সকলে জেনেছিল।কীভাবে বেলীর প্রিয় বন্ধুকে কেউ মে’রে গেইটের কাছে রেখে গিয়েছিল।শুধুমাত্র বেলীর সাথে অতিরিক্ত মেলামেশা করার জন্য।নিশ্চয় অনল ওই ঘটনা কারো থেকে জেনেছে।এমনকি বেলীর ব্যাপারে সব খোঁজ নিয়েছে।হতেও পারে।মূলত বেলী যখন কিশোরী ছিল তখন তাকে জুলিয়েট সম্বোধন করে চিঠি ও বই আসতো রোজ।একদিনও বাদ যায়নি।কিন্তু সাথে অনেক বিধিনিষেধও আসতো।এটা করবেনা ওটা করবেনা।এভাবে চলতে হবে।বাবার ভয়ে কাওকে জানায়নি বেলী।কিন্তু হঠাৎ প্রিয় বন্ধুর সাথে মেলামেশা বন্ধের বার্তা আসে।তখন বিষয়টা বেলী পাত্তা না দিলেও সমস্যা হয় পরের দিন।যখন বন্ধুটাকে ব্যাট দিয়ে কেউ প্রচুর মা”রে।এরপর থেকে চিঠি আসাও বাদ হয়ে গেলো।বেলী আর কিছু ভাবতে পারছেনা।ক্ষাণিকবাদে চোখে ঘুম নেমে এলো।কিন্তু অদ্ভূত এক স্বপ্নের সঙ্গে ঘুমালো সে।যেখানে অনল নামের পুরুষটি চাঁদের উপর বসে আছে।পরনে শুভ্র এক ধূতি শুধু।দেহের গঠণ সন্দেশ গড়নের।শুভ্র চকচকে।কান্তিমান শরীরটার দর্শনে বেলী নিজেও কেঁপে উঠলো।তার হাতে ফুলের তৈরী একটা বাণ।সে হঠাৎ বেলীর দিকে একটা ফুলের তৈরী তীর ছুঁড়ে দিলো।বেলীর বুকে এসে লাগলো তা।কী অসহ্য যন্ত্রণা।ছটফট করে উঠে বসলো বেলী।আসলেও স্বপ্নে প্রেমদূত হয়েছিল অনল।তড়িঘড়ি করে উত্তরের জানালা খুলে দিলো বেলী।কিন্তু আত্মাটা হঠাৎ কেমন করে উঠলো তার।অনল ও একটি মেয়ে বারান্দায় বসে গল্প করছে।বেলী বুকের বা পাশে আবার ব্যাথা অনুভব করলো।আশ্চর্য স্বপ্নে পাওয়া প্রেমবাণের আ’ঘা’ত বাস্তবে কেন হচ্ছে?

চলবে।

#আমার_ললিতা
#পর্ব:৬
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“বয়স হচ্ছে অথচ বিয়ের নাম নেই তোমার শশী।নিজের জীবন গুছিয়ে নাও।আমি ফিরে আসবো এমন কোনো গ্যারান্টি তোমাকে দিয়ে যাইনি।রোজ রোজ এসএমএস করা,কল করা সব বন্ধ করো।”

নোটিফিকেশন থেকে এসএমএসটি পড়ে নিলো শশী।সিন করার ইচ্ছা জাগ্রত হলো না মনে।পুরুষ মানুষকে তার ভীষণ অগোছালো লাগে।যারা নিজেদেরকে নিজেরা চিনতে পারেনা।কোন মেয়েটাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে চায় বা চায়না এক্ষেত্রে হাজার জনকে পরীক্ষা করে নিবে।ফাহিমের সঙ্গে শশীর প্রেম ছিল তখন যখন তারা উভয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতো।এরপর ফাহিম উচ্চতর ডিগ্রির জন্য বিদেশ চলে গেলো।আর রয়ে গেলো শশী এ দেশে।একা হয়ে।একদম একা।যদিও পুরুষটি বলে ছিল ফিরে এসে বিয়েতে আবদ্ধ হবে তারা।কিন্তু ইদানীং ফরেন মেয়েটির সাথে ফাহিমের প্রেমের গুঞ্জনে প্রতিশ্রুতিটি আড়াল হয়ে গিয়েছে পানসে মেঘে।তবে যার আশা ভাঙে সে জানে ভাঙনের শব্দটি কতো করুণ ও বিভৎস শুনতে।পাশে দাঁড়ানো বেলীও এ শব্দ শুনতে পাচ্ছে না।যে বইতে ডুবে আছে।বোনের হাত ধরে শশী বলল,

“বই মানুষকে জ্ঞানী করে তুলে।আর তোকে করেছে প্রতিবন্ধি।রাস্তাঘাটে কীভাবে চলতে হয় এটাও ভুলে গিয়েছিস?অন্ধের মতোন টেনে নিচ্ছি আমি।”

বেলীর সেসব বাক্যকে তোয়াক্কা করার সময় আছে নাকী?সে একটু অসহিষ্ণু হয়ে বলল,

“দাঁড়াও আপু।কোর্টরুম ড্রামা চলছে উপন্যাসে।তুমি জানো আমার রক্ত এখন কতো স্পিডে দৌড়াচ্ছে।”

“রক্ত দৌড়ায় না গাঁধা।”

“সেইম টু ইউ।”

শশী বেলীকে ভয়ংকরভাবে বকে দিতে চাইলো তাকে গাঁধা ডাকটি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।কিন্তু পরিচিত একটি মুখ দেখে নিজেকে সামলে নিলো।

“এটা সেই অনল না বেলী?”

বেলী আঁড়চোখে শশীর ইশারাকৃত জায়গায় তাঁকালো।অনল একটি মেয়ের হাত ধরে তাকে নিয়ে বইয়ের দোকানে ঢুকলো।একেবারে জ্বলে গেলো যুবতী ললিতার মন।ইশ,এতো নারী পৃথিবীতে আছে?আর সবার কেন অনল নামক স্বৈরাচারীর কাছে যেতে হবে?শান্তি, শান্তি বলে নিজের অভ্যেন্তরের জেগে ওঠা আত্নাকে সে শান্ত হতে বলল।বই বন্ধ করে বলল,

“হু তো?তুমি কথা বলবে নাকী ওনার সাথে?”

“বলা যায়।”

“আমি বলবো না।তোমাকে কথাও বলতে দিবো না।অসভ্য ছেলেপেলেদের সঙ্গে কথা বলা নিষেধ! নিষেধ!নিষেধ।”

“যেন তুই মহারাণী।সেভাবে নিষেধ জারি করা হলো আমার মতোন অধমের উপর।এইযে রাণী বাস্তবে ফিরে আসুন।আপনি নাস্তানাবুদ হয়েছেন দেখে আমি মানুষের সঙ্গে পরিচিত হবো না?”

বেলীকে বাক্য ব্যয় করতে না দিয়ে চলে গেলো শশী দোকানের ভেতর।বেলী একবার ভাবলো সে ফিরে যাবে।কিন্তু বোনকে সঙ্গে না নিয়ে গেলে যদি বাড়ীতে গিয়ে তুলকালাম করে?শিডনি সেলডনের ‘টেল মি ইওর ড্রিমস’ বুকে জড়িয়ে দোকানের স্বচ্ছ কাঁচের ভেতর অনল ও শশীর হেসে হেসে কথা দেখছে বেলী।ভ্রুগুলো কুঞ্চিত হয়ে উঠেছে তার।সামনে দাঁড়ানো পুরুষটি সুন্দর,দাম্ভিক,রহস্যময় পুরোটা মাকাল ফল।আর কী কী শব্দে ডাকবে তাকে?হঠাৎ অনল তার দিকে তাঁকালো।বেলীকে দেখে শশীকে কিছু একটা বলল।ক্ষণবাদে শশী বাহিরে এসে বোনকে টেনে নিয়ে ভেতরে গেলো।অনল তখন তার পাশে দাঁড়ানো অচেনা মেয়েটিকে বই কিনে দিচ্ছে।বেলীকে দেখে সরাসরি বলল,

“মেয়ে,বলো তো আমার বান্ধুবী প্রেম সম্পর্কে জানতে পারবে কোন কোন বই পড়ে?তোমার তো অনেক জ্ঞান।ওকে রোমান্টিসিজম শেখাবো।”

অনলের পাশে দাঁড়ানো সুন্দরী মেয়ে হেসে উঠলো।বড্ড মেকি হাসি তা।ওইযে পুরুষদের আকর্ষণের জন্য যা হাসা হয়।আরো এক দফা রাগ উঠলো বেলীর।অনল সেটি বুঝতে পারলো।তার ললিতা দাঁতে দাঁত ঘষে রাগ দমন করা তো দিনের আলোর মতোন পরিষ্কার।হঠাৎ শশী বলল,

“কী হলো বেলী?বল।”

“দ্য সাইনিং,কারমিল্লা।”

অনল হেসে ফেললো।মেয়েটির কাছে এসব রোমান্টিক বই?তবুও সে কোনো প্রতিক্রিয়া না দিয়ে পাশে দাঁড়ানো মেয়েটিকে কিনে দিলো।অনলের সাথে মুহুর্তে শশীর খুব ভাব হয়ে গেলো।দুজনে সমবয়সী প্রায়।

“অনল চলো পাশে একটা কফিশপে বসা যাক?তাড়া নেই তো?”বলল শশী।

“নেই।কিন্তু বেলীর আছে।একটু পর বিকেল হবে।আমার লাইব্রেরি গুছিয়ে দিতে হবে ওর।এক কাজ করা হোক।সে ফিরে যাক।আমরা কেন নিজেদের বিকেল নষ্ট করবো?রাইট নিতু?”

অনলের পাশে দাঁড়ানো মেয়েটির নাম নিতু।গা জ্ব’লে উঠলো বেলীর।সে প্রতিবাদ করবে এর পূর্বে শশী বলল,

“চলে যা তাহলে বেলী।আমি বাসায় আসবো একটু পর।”

আহত হলো বেলী।অন্তত নিজের বোনের থেকে এমনটা আশা করেনি।নিতু শুধালো,

“তোমার লাইব্রেরি ও কেন গুছাবে অনল?”

“লং স্টোরি।কিন্তু ওর যেতে হবে।তুমি এসো নিতু।”

অনল এগিয়ে গেলো সামনে।শশী বেলীকে জলদি নিজের কাজ শেষ করে চলে যেতে বলে নিজেও তাদের পিছনে যেতে লাগলো।হঠাৎ বেলী তাকে বলল,

“নিজের বোনের সাথে তুমি এমন করতে পারলে আপু?সে তো আমাকে বলতে পারতো আজ গুছাতে হবেনা কিছু।এটা অপমান হলো না?”

“এতে অপমানের কী?তুই না বেলী বেশী চিন্তা করিস।দেখেশুনে বাড়ীতে যাস।”

শশীর চলে গেলো দ্রুত।বই কেনার ইচ্ছাটি আর বেলীর মধ্যে রইলো না।ক্ষণবাদে সে নিজেও বইয়ের দোকান থেকে বের হয়ে এলো।

(***)

“ছেলেটা কে?তোমার সাথে কীসের সম্পর্ক ললিতা?”

অনলের সরাসরি প্রশ্নে হকচকিয়ে উঠলো বেলী।বইগুলো সঠিক তাকে রেখে এখুনি চলে যেতে নিয়েছিল।কিন্তু এই প্রশ্নে ভ্রু কুঞ্চিত হলো।সে পাল্টা শুধালো,

“মেয়েটা কে?আবার মেয়েটা কে?”

“কী বলতে চাও?ঠিকঠাক জিজ্ঞেস করো।”

“আপনি কী বলতে চাচ্ছেন সেটি বলুন আগে।”

“তোমাকে কী শশী বলেনি সরাসরি বাসায় ফিরে আসতে?তাহলে কেন একটা ছেলের বাইকে করে এলে?”

“আমার জীবন আমার মর্জি।আশ্চর্য!”

অনলের মুখ বিবর হঠাৎ রক্তিম হয়ে উঠলো।বেলী বেখেয়ালি হলো।পুরুষটির এই রাগান্বিত মুখকে কীসের সঙ্গে তুলনা করবে সে?কিছু ভাবার পূর্বে অনল জোরে টেনে তাকে টেবিলে বসালো।কোমড়ে হাত দিয়ে একদম কাছে টেনে শক্ত করে চোয়াল ধরে বলল,

“মাই ললিতা।তুমি জানো আমার কাজ কী নিয়ে?সুগন্ধ তৈরী করি আমি।তাও কীসের থেকে জানো?বি’ষ থেকে।তাই স্বাবধান আমার সঙ্গে তর্কে জড়াবেনা।একেবারে নদীর ঘোলা জল খাইয়ে ছাড়বো।”

এমন কথাগুলোতে বেলীর অধর শুষ্ক হয়ে উঠলো।সে ঢোক গিলে বলল,

“দেখুন অনল।আমার বন্ধুর বাইকে আমি উঠবো কী উঠবো না সেটা আমার ব্যাপার।তা নিয়ে আপনি বলার কে?তাছাড়া আমার মা,বাবা ওকে চিনে।তাদের তন্ময়কে নিয়ে ভয় নেই।এই কারণে আমি উঠতেই পারি।আপনাকে কেন কৈফিয়ত দিবো?”

অনল তাকে আরো কাছে টেনে নিলো।দূর থেকে দেখলে তাদের প্রেমে মত্ত্ব থাকা যুগল বলে ভেবে নিবে মানুষ।তবে পুরুষটিকে বাঁধা দেওয়ার জন্য তার মুখের দিকে তাঁকালে ভড়কে গেলো বেলী।সে হাসছে।অনল হালকা কেশে বলল,

“তুমি অজান্তে আমাকে কৈফিয়ত দিয়ে ফেললে ললিতা।আমাকে এতোটা প্রয়োজনীয়বোধ করিও না।তাহলে শেষে তোমারই বিপদ।”

বেলী পুরো বিষয়টি মস্তিস্ক দিয়ে ভেবে আর্তনাদ করে বলল,

“হায়!আমি কৈফিয়ত কেন দিলাম আপনাকে?”

চলবে।