আমার সঞ্চারী পর্ব-০৪

0
2

#আমার_সঞ্চারী
পর্ব-৪
#শ্রীমতি_প্রজ্ঞা_মঞ্জরী (লেখিকা)

🚫(এলার্ট- এই পর্বে কিছু স্ল্যাং ওয়ার্ড আছে।)

“একটা যায়গায় নিয়ে যাবো তোমায় সঞ্চারী।
যাবে আমার সাথে?”

সাহিলের এমন কোমল কণ্ঠের সাথে পরিচিত নয় সঞ্চারী। তবে আজ সাহিলের এই রূপ তাকে ক্ষণে ক্ষণে অবাক করছে।সঞ্চারী সাহিলের মুখের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি রাখলো;সাহিলের চোখের আকুলতা টের পেলো সঞ্চারী।লোকটার চাউনিতেও কেমন গলে যায় সঞ্চারী।এতোটা মুগ্ধতা কাজ করে তার জন্য! ভাবতেই অবাক লাগে সঞ্চারীর।

-“যাবো;আপনি আমায় যেখানে নিয়ে যাবেন বিনা বাক্যে আপনার সাথে আমি যাবো।” সাহিলের হাতের মাঝে নিজের নিবন্ধিত হাতের বাঁধনটা দৃঢ় করে জবাব দিলো সঞ্চারী।

সাহিল সঞ্চারীর হাতটা ওভাবেই ধরে রেখে তাকে নিয়ে কেবিনের বাইরে চলে গেলো।

-“আপনি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি?চলুন বাইরে চলুন ম্যাডাম কটকটি।” জান্নাতিকে উদ্দেশ্য করে বললো নীদ্র।

নীদ্রর এহেন সম্বোধনে জান্নাতি তার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠলো, “এই আপনি আমাকে কি বললেন?”

-“আপনি সিরিয়াল দেখেন নি?কিরণমালা।ওখানে রাক্ষসী রাণী কটকটি! সেটাই বললাম আরকি!” জবাব করলো নীদ্র।

-“আমি কটকটি হলে আপনি কি?আপনি তো বিটকেল… না না ডঙ্কার,,,আপনি হলেন ডঙ্কার। অসভ্য তেলাপোকা কোথাকার।” বলেই নীদ্রকে এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো জান্নাতি।

-“আজকের দিনটাই আমার খারাপ। একজন হবু বউকে ফেলে শালিকা কে নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে।আর এদিকে তার হবু বউ আমাকে ডঙ্কার, তেলাপোকা আর না জানি কি কি বানিয়ে দিচ্ছে।” বলেই নীদ্রও স্থান ত্যাগ করলো।

সঞ্চারীকে নিজের গাড়ির ফ্রন্টসিটে বসিয়ে সিটবেল্ট লাগিয়ে দিলো সাহিল। সঞ্চারীর গালে আলতো করে হাত রেখে বলে উঠলো,
-“এই মূহুর্তে তোমার মনে অনেক প্রশ্ন তা আমি জানি।সব প্রশ্নের উত্তর তুমি পাবে নিরু।ইয়্যু ট্রাস্ট মি রাইট?ডোন্ট ইয়্যু?”

-“আই ট্রাস্ট ইয়্যু মোর দ্যান মাইসেল্ফ সাহিল।আপনি যেখানে নিয়ে যাবেন আমি যেতে রাজি।” এক বিশ্বাসভরা কণ্ঠে জবাব এলো।

সাহিল আর কিছু বললো না।গাড়িত দরজাটা আটকে দিয়ে ঘুরে ড্রাইভিং সিটের কাছে এলো সে।

-“নীদ্র,জান্নাতিকে তোর সাথে নিয়ে আয়।” কথাটা বলতে বলতে গাড়িত দরজা খুললো সাহিল।

-“অসম্ভব আমি এই তেলাপোকার সাথে কোথাও যাবো না। ”

-“আমিও এই কটকটিকে নিয়ে কোথাও যাবো না।”

-“আমি দরকার পরলে পায়ে হেঁটে যাবো, তাও এই তেলাপোকার সাথে না।”

-“আপনাকে কে নিচ্ছে আমার সাথে হ্যাঁ? ”

এভাবে কয়েকদফায় কথা কাটাকাটি হলো নীদ্র আর জান্নাতির মাঝে।

-“জাস্ট শাট-দ্যা ফা* আপ গাইস। বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছিস তোরা। স্টপ ইট।” চিল্লিয়ে উঠলো সাহিল।

সাহিলের রাগ সম্পর্কে সবাই অবগত।জান্নাতি আর নীদ্র আর কথা বাড়ালো না। চুপচাপ গাড়িতে উঠে পড়লো।

সঞ্চারী-সাহিল একটা গাড়িতে আর জান্নাতি-নীদ্র আরেকটা গাড়িতে।

দু’পাশে বড় বড় গাছ,মাঝখান দিয়ে পিচ-ঢালাই করা রাস্তায় শা-শা করে ছুটে চলেছে দুটো গাড়ি।

সামনের দিকে তাকিয়ে এক মনে ড্রাইভ করছে সাহিল।চোখে মুখে চিরচেনা গাম্ভীর্য। সঞ্চারী একটু ঘুরে সাহিলের দিকে মুখ করে বসে;এক হাতের উপর নিজের মাথাটা ঠেকিয়ে সাহিলকে দেখতে থাকে।

-“তোমার মতলব আমার সুবিধাজনক ঠেকছে না নিরুপমা। একটু আগে পারফিউমের স্মেল নেওয়ার নাম করে চুমু খেয়ে নিলে এখন আবার এভাবে তাকিয়ে আছো!আবার চুমু খাবে?”

সাহিলের কথায় হতবাক হয় সঞ্চারী। নিজেই সঞ্চারীকে কাছে টেনে নিলো, এখন মেয়েটার দোষ দিচ্ছে!
অভিমান করে মুখ ফোলায় সঞ্চারী,সাহিলের থেকে মুখ ঘুরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে সোজা হয়ে বসে।

-“তুমি চাইলে আরেকবার চুমু খেতেই পারো!আই অন্ট মাইন্ড এট অল,আফটারঅল ইয়্যু আর মাই ওয়ান এন্ড অনলি শালিকা।”

শালিকা শব্দটা একটু টেনেই বলে সাহিল। এতে সঞ্চারী চোখ দুটো গোল গোল করে সাহিলের দিকে তাকায়।

-“এই আপনি কি বললেন?আমি আপনার শালিকা?” রাগে কটমট করতে করতে বলে ওঠে সঞ্চারী।

-“হ্যাঁ, শালিকা। শা*লি বললে ওটা স্ল্যাং এর পর্যায়ে চলে যাবে। বাট শালি আধি ঘারওয়ালি ইয়্যু নো না?” বলেই সঞ্চারীকে উদ্দেশ্য করে চোখ মারে সাহিল।

-“আপনার মনে এই ছিলো? ছিহঃ কি নোংরা লোক!অসভ্য।” বলেই মুখ ঝামটা দেয় সঞ্চারী।

-“এখনো কিছুই করি নি নিরুপমা।সবে ঠোঁটের ভার্জি*নিটি শেষ করলাম, তুমি এখনো অক্ষত আর পিওর আছো।তাই আমাকে অসভ্য বলে বিনা অপরাধের অপরাধী করো না।”

সাহিলের কথায় স্তম্ভিত হয়ে যায় সঞ্চারী। মনে মনে ভাবে বাকি পথটা সাহিলের সাথে কোনো কথাই বলবেনা সে।কি মারাত্মক ঠোঁটকাটা স্বভাবের লোক!অথচ সবার সামনে কি ডিসেন্ট সেজে ঘুরে বেড়ায়।

গত বিশ মিনিট ধরে নীদ্রর গাড়িতে একদম পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে।জান্নাতি মুখটা গোমরা করে বসে আছে,তার পাশেই ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করছে নীদ্র। জান্নাতির মনের ভিতর প্রশ্নেরা জট পাকিয়ে জগাখিঁচুড়ি হয়ে গেছে। অবশেষে নিজেকে আর ধরে রাখতে না পেরে নীদ্রকে বলে ওঠে,
-“এইযে মিস্টার তেলাপোকা, আমরা কোথায় যাচ্ছি?”

তেলাপোকা সম্বোধন টা নীদ্রর বেশ গায়ে লেগেছে। তার মতো সুদর্শন পুরুষ কে কিনা শেষে তেলাপোকা ডাকছে এই মেয়ে?নাহ,নীদ্র কিছুতেই এই মেয়ের কথার উত্তর করবে না।

নীদ্রর উত্তর না পেয়ে জান্নাতির বেশ রাগ হলো। সে পা দিয়ে সজোরে আঘাত দিলো নীদ্রর গাড়িতে। এবার কাজ হলো। নীদ্র গাড়ির ব্রেক কষে চোয়াল শক্ত করে বললো, “দেখুন মিস কটকটি আপনি এভাবে আমার অডি সুন্দরীর উপর নির্যাতন করলে আপনাকে এই ভুতুড়ে রাস্তায় একা ফেলে রেখে চলে যাবো।”

জান্নাতি একটু বিষম খেলো নীদ্রর কথায়। গলায় জোর নিয়ে বলে উঠলো,”আপনাকে একটা প্রশ্ন করেছিলাম, উত্তর দিচ্ছেন না কেন? কোথায় যাচ্ছি আমরা?”

-“অপেক্ষা করুন।পাঁচ মিনিট লাগবে।” বলেই গাড়ি স্টার্ট দিলো নীদ্র।

সাহিলের গাড়িটা একটা ছোট্ট বাড়ির সামনে এসে থামলো। একতলা বাড়িটা বর্তমানের বিলাসবহুল দালানকোঠার ভীরে নিতান্তই সাদামাটা;তবে যে কারো মনে প্রশান্তি আনার জন্য যথেষ্ট। সাহিলকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে সঞ্চারী ও গাড়ি থেকে নামলো। ধীর পায়ে সাহিলের পাশে দাঁড়িয়ে বাড়িটা দেখতে লাগলো।

ছোট একটা পকেট গেট দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে হয়। দু’পাশে বাহারি ফুলের গাছের মাঝখানে মোটামুটি প্রসস্ত রাস্তাটা দিয়ে বাড়ির সদর দরজা পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে।

এরই মধ্যে নীদ্রর গাড়ি এসে থামলো।জান্নাতি গাড়ি থেকে নেমে দরজা আটকাতে যাবে এমন সময় নীদ্র চিৎকার করে উঠলো, “এইইই মিস কটকটি খবরদার বলছি আমার অডি সুন্দরীকে কষ্ট দিবেন না। গাড়ির দরজার সাথে যুদ্ধ করবেন না বলে দিলাম।”

নীদ্রর কথায় জান্নাতির হাতটা থেমে গেলো।সে নীদ্রর দিকে তাকিয়ে মনোমুগ্ধকর এক হাসি উপহার দিলো। নীদ্র পৃথিবী যেন এক মূহুর্তের জন্য থমকে গেল।

জান্নাতি মেয়েটা ভীষণ সুন্দরী। বিশেষ করে তার হাসি!জান্নাতি হাসলে সামনের একটা গজদাঁত বেরিয়ে আসে,মারাত্মক সুন্দর হাসি মেয়েটার। হাসলে যেন ঠোঁটের সাথে চোখও হাসে। ছোট হয়ে আসা চোখ দু’টো কি সুন্দর দেখায়!

নীদ্র হা করে তাকিয়ে আছে জান্নাতির দিকে।এই মেয়ের চাউনি,হাসি,চোখ,দাঁত সবই যেকোনো পুরুষকে ঘায়েল করতে যথেষ্ট। নীদ্র মুগ্ধ দৃষ্টিতে অবলোকন করছিলো জান্নাতিকে এমন সময় জান্নাতির হাসি মুখটা মূহুর্তেই গম্ভীর রূপ ধারণ করলো।সজোরে নীদ্রর গাড়ির দরজাটা লাগিয়ে হনহনিয়ে চলে গেলো জান্নাতি।

হঠাৎ করে এমন হবে তা নীদ্র ভাবতে পারেনি।দরজা বন্ধ করার শব্দে লাফিয়ে ওঠে নীদ্র,অবাকে চোয়াল ঝুলে যায় তার। অসহায় দৃষ্টিতে গাড়ির দরজার দিকে তাকায় নীদ্র। বিড়বিড় করে বলে ওঠে, “কি ছলনাময়ী নারীজাতি! রাক্ষসী একটা,কটকটি।” বলেই গাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে।

সাহিল,সঞ্চারী,জান্নাতির সাথে বাড়িটার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় নীদ্র।
-“ভিতরে চল ভাই।সব রেডি আছে।” সাহিলের কাঁধে হাত রেখে বলে ওঠে নীদ্র। সাহিল মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। সঞ্চারীর হাতটা শক্ত করে ধরে পা বাড়ায় বাড়ির ভিতরে। তাদের পিছু পিছু জান্নাতি আর নীদ্রও ভিতরে ঢুকে।

বাড়ির সদর দরজার কাছে যেতেই ২৪/২৫ বছরের এক তরুণী এসে দরজা খোলে।তার পাশেই এক যুবক হাসি মুখে দাঁড়িয়ে। নীদ্র গিয়ে জড়িয়ে ধরে অপরিচিত যুবকটাকে। “কেমন আছেন দুলাভাই?” লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে নীদ্র।

-“অল গুড শালাবাবু। তোমার কি অবস্থা?আর এই জরুরি তলব? রাতের বেলা বউ নিয়ে একটু সুখ-দুঃখের গল্প করবো, তা তোমাদের জন্য আর পারিনা।” বলেই নীদ্রর পিঠে হালকা কিল বসায় হাবিব।

-“রাতের বউ নিয়ে সুখ-দুঃখের আলাপ কে করে ভাই? ছ্যাহ্! অবশ্য আপনার যে ইমোশনাল বউ, সব কিছুতে ফ্যাচফ্যাচ করে কান্নার স্বভাব। আপনি বলেই এতোদিন টিকে আছে,অন্যকেউ হলে কবেই ওই মেয়েকে বাপের বাড়ি রেখে আসতো!” বলেই বিস্তর হাসে নীদ্র আর হাবিব।

-“দেখলে দাদাই!মেজো দাদাই আবার লেগপুল করছে আমায়। এই লাইফলেস তোর কাজ নেই হ্যাঁ? আমার জামাইর কানে বিষ ঢালছিস কেন?” কপাল কুচকে রাগী স্বরে বলে ওঠে রুমি।

-“এই আমি তোর থেকে ৪ বছরের বড়। তুই-তুকারি করবিনা একদম। আর ভুল কি বলেছি আমি? হাবিব ভাই,ও নিশ্চই আপনি অফিস থেকে ফেরার পর আপনার মা আর বোনের নামে কুটনামি করে।তাইনা?”

বেচারা হাবিব পড়েছে অথৈজলে।একদিকে বউ অন্যদিকে শালা।

– “নীদ্র,স্টপ ইট। মানছি আমাদের রুমি ক্রাইবেবি কিন্তু এখন ও অতো কান্নাকাটি করেনা। তাইনা রুমু?”
সাহিলের কথায় রুমি হেসে দেয়। সে জানে নীদ্র ওকে যতই লেগপুল করুক সাহিল ঠিক ওর হয়ে স্ট্যান্ড নিবে।

এতো কিছুর মাঝে জান্নাতি আর সঞ্চারী একে অপরের দিকে চেয়ে বোঝার চেষ্টা করছে আসলে এখানে হচ্ছেটা কি। সাহিল এবার সঞ্চারীর হাত ছেড়ে পকেট থেকে নিজের ফোনটা বের করে ড্রয়িং এ রাখা সোফায় গা এলিয়ে বসলো। রুমি এসে সঞ্চারীর হাত ধরলো। টেনে পাশের রুমে নিয়ে গেলো তাকে ; সাথে জান্নাতিকেও বললো রুমে আসতে।জান্নাতি,সঞ্চারী আর রুমি চলে গেলো।

নীদ্র আর হাবিব এসে সোফায় বসলো। নীদ্র এবার সাহিলকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো, “ভাই,যা করছিস ভেবে করছিস তো?মামু বা সঞ্চারীর বাবা জানলে শহরে আগুন জ্বলবে।”

সাহিলের মধ্যে কোনো ভাবাবেগ দেখা গেলো না। নীদ্র এবার হাবিবের দিকে তাকালো। “দেখ সাহিল, এই মূহুর্তে এই সিদ্ধান্তটা কতটা যৌক্তিক আমি বুঝতে পারছি না। জান্নাতি সঞ্চারীর ফুফাতো বোন হয় সম্পর্কে;আর জান্নাতির বাবার সাথে মামার মানে তোমার বাবার যে সাপে-নেউলে সম্পর্ক তা তুমি ভালো করেই জানো।”

সাহিল নিজের কাজ শেষে ফোনটা ট্রাউজারের পকেটে পুরে সোজা হয়ে বসলো। “ভিতরে রুমি সঞ্চারীকে সাজাতে নিয়ে গেছে। জান্নাতিকে আমি টেক্সট করে সব বলে দিয়েছি। বাকিটা আমি সামলে নিবো। আর সাপে-নেউলে সম্পর্ক থেকে বেয়াই সম্পর্ক হলে মন্দ নয় আশা করি।”

এদিকে জান্নাতি সাহিলের ম্যাসেজে থম মেরে বসে আছে। এখন রাত প্রায় তিনটা বাজে,এমন সময় নিশ্চই সাহিল মজা করবে না। কিন্তু এরপর কি হবে? নাহ আর ভাবতে পারছে না,জান্নাতির মতের বিরুদ্ধে বিয়েটা ঠিক করেছিলো জান্নাতির মামা অর্থাৎ সঞ্চারীর বাবা আর জান্নাতির বাবা। সঞ্চারী সাহিলকে ভালোবাসে জানার পর জান্নতির আরো মন উঠে যায় এই বিয়ের থেকে। নিজের বা’হাতের অনামিকা আঙ্গুলের আংটিটা খুলে পার্সে ঢুকায় জান্নাতি।

রুমি বসে বসে সঞ্চারীকে সাজাচ্ছে।সঞ্চারীর মনে বারংবার প্রশ্ন জাগছে। কিন্তু রুমিকে প্রশ্ন করেও লাভ হচ্ছেনা। রুমি এখন সঞ্চারীকে কাজল পড়াতে ব্যাস্ত। জান্নাতি উঠে এসে শপিংব্যাগ থেকে একটা শাড়ি বের করে। সিঁদুরে লাল রঙের জামদানী;সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ ও আছে। জান্নাতি শাড়িটা রেখে আনুষঙ্গিক পোষাকগুলো হাতে নিয়ে সঞ্চারীর কাছে যায়। রুমির ততক্ষণে সঞ্চারীকে সাজানো প্রায় শেষের দিকে।
জান্নাতি একটু পরে সঞ্চারীকে শাড়ি পড়ানো শুরু করে। সঞ্চারীর ছোট্ট মস্তিস্কে এবার সব বোধগম্য হয়;এভাবে সাজিয়ে, লাল শাড়ি পড়িয়ে তাকে ঠিক কিসের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে তা বুঝতে আর বাকি নেই সঞ্চারীর। মনের মধ্যে অদ্ভুত এক অনুভূতি হতে থাকে তার,সাহিল আজই তার ভালোবাসার কথা সঞ্চারীকে বলেছে, সঞ্চারীর ভালোবাসাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আর আজই সে সাহিলের জন্য বউ সাজছে!ভেবেই শরীরে অদ্ভুত শিহরণ দিচ্ছে সঞ্চারীর। কিন্তু অনাগত ভবিষ্যৎ, তার বাবার সম্মুখীন সে কিভাবে হবে এসব ভেবে ভয়ে কলিজা শুকিয়া আসছে তার। এসবের মাঝে জান্নাতির কথায় ধ্যান ফেরে সঞ্চারীর।
“হাতটা উপরে তোল সঞ্চারী, আঁচলটা উঠাবো তো!” সঞ্চারী সামনে চেয়ে দেখলো শাড়ির আঁচলটা হাতে নিয়ে জান্নাতি তাকিয়ে আছে তার দিকে।

-“আপু! আপু এগুলো ঠিক হচ্ছেনা। এভাবে বাবাকে না জানিয়ে, আর তোমার সাথে সাহিলের বিয়ে ঠিক করা। আর মাত্র পনেরো দিন আছে বিয়ের। আপু উনি কোথায়?আমি কথা বলতে চাই ওনার সাথে।” জান্নাতির হাত ধরে বলে ওঠে সঞ্চারী।

জান্নাতি সঞ্চারীর হাতের উপর নিজের হাতটা রেখে সঞ্চারীকে আশ্বস্ত করতে বলে ওঠে, “চিন্তা করিস না; সাহিল সব সামলে নিবে। আমার শাড়িটা পড়াতে দে।”

সঞ্চারী নিজের হাতটা সরিয়ে নিলো।জান্নাতি সুনিপুণ হাতে সঞ্চারীকে শাড়িটা পড়িয়ে দিলো।

কিছুক্ষণ পর,
রুমের দরজা খোলার শব্দে ফিরে তাকালো সঞ্চারী।রুমি আর জান্নাতি দু’জন সঞ্চারীকে নিয়ে রুম থেকে বের হলো। সঞ্চারীর বুকটা ক্ষণিকে ক্ষণিকে মৃদু কেঁপে উঠছে। সে ধীর পায়ে হেঁটে জান্নাতি আর রুমির সাথে ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হলো।

-“দাদাই,তোমার বউ নিয়ে এসেছি।” বলেই হেসে উঠলো রুমি।
সাহিল তাকালো সঞ্চারীর দিকে।সিঁদুররঙা জামদানী শাড়িতে কি অপূর্ব লাগছে তার নিরুপমাকে।গায়ে হালকা কিছু গয়না, হালকা মেকাপে সঞ্চারীর সৌন্দর্য যেন বহুগুণ বেড়ে গেছে।টানাটানা চোখজোড়ায় কাজল দেওয়ায় তার সৌন্দর্য দ্বিগুণ হয়েছে।কোমর ছুঁই ছুঁই চুলগুলো ছেড়ে রাখা,গলায় ছোট একটা হার,কানে ঝুমকো,দু’হাতে শাড়ির সাথে ম্যাচিং সিঁদুরে রঙের ভেলভেটের চুড়ি সাথে দু’টো সোনার বালা, কপালে টিকলি আর সবশেষে লাল একটা দোপাট্টা দিয়ে সঞ্চারীকে সাহিলের বধু হিসেবে সাজানো হয়েছে।তবে সাহিলের হঠাৎ কি হলো কে জানে! সে দ্রুত পায়ে সদর দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলো ড্রয়িংরুম থেকে।

সঞ্চারীর মনে হলো সাহিলের হয়তো তার সাজসজ্জা পছন্দ হয়নি।বেচারির মুখে অমাবস্যার আঁধার নেমে আসলো। মাথাটা নিচু করে নিজের দৃষ্টি মেঝেতে নিবন্ধিত রাখলো।

মিনিট দেড়েকের মাথায় সাহিলের আগমন ঘটে। হাতে কয়েকটা লাল গোলাপ। সে দ্রুত পায়ে সঞ্চারীর সামনে আসে,গোলাপগুলো সাবধানে সঞ্চারীর কানের পিঠে হেয়ার পিন দিয়ে সেট করে দেয়। সঞ্চারী মুখ তুলে তাকায় সাহিলের দিকে। ফুলগুলো গুঁজে দিয়ে সঞ্চারীর থেকে কিছুটা দূরত্বে দাঁড়ায় সাহিল। একবার কানের পিঠে গুঁজে রাখা ফুলগুলোর দিকে তাকায় অত:পর প্রেয়সীর মুখশ্রী তে দৃষ্টি রেখে বলে ওঠে, “নাও ইটস পারফেক্ট। এতোকিছুর মাঝেও কোথাও একটা খামতি নজরে আসছিলো, এবার একদম পারফেক্ট। একদম সাহিল পাটোয়ারির বঁধুয়া লাগছে।”

চোখদুটি বড় বড় করে তাকায় সঞ্চারী,লজ্জায় গালদু’টো রক্তিম হয়ে উঠেছে তার। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে সবাই মিটিমিটি হাসছে,সঞ্চারী আবার মাথা নিচু করতেই সবাই জোরে হেসে ওঠে।

-“সঞ্চারী? চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে। কাজি নাকি ঝিমুচ্ছে বসে বসে,আর লেইট করা যাবেনা।” বলেই সঞ্চারীর হাত ধরে হাঁটা দেয় সাহিল। কিন্তু সঞ্চারী নড়ে না;সে স্থির হয়ে আছে। সঞ্চারীর এহেন আচরণে ভ্রু কুচকে পিছনে ফিরে সাহিল। সঞ্চারী এবার মাথা উঁচু করে বললো,

-“আমার একটা শর্ত আছে।”

চলবে???