#আমার_সঞ্চারী
পর্ব-২
#শ্রীমতি_প্রজ্ঞা_মঞ্জরী
হাসপাতালের করিডোরের বেঞ্চের উপর বসে আছে জান্নাতি। অদূরেই সাহিল ভেজা পোষাক নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে গত আধ ঘন্টা ধরে।
কেবিনের ভিতরে হাসপাতালের বেডে শুয়ে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে সঞ্চারী। ডাক্তার ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে গেছেন, বলেছেন আগামী দুই ঘন্টা সঞ্চারী এভাবেই ঘুমোবে।
“মামাকে একটা কল করা দরকার না? সঞ্চারীর শারীরিক অবস্থা মামাকে জানানো দরকার।” মাথা তুলে সাহিলের দিকে তাকিয়ে বললো জান্নাতি।
সাহিল পকেট থেকে নিজের ফোনটা বের করলো;হাতে নিয়ে কিছু একটা করতে করতে বললো,”দরকার নেই;আমি আছি।”
জান্নাতি চুপ করে বসে রইলো।তার মনে প্রশ্নেরা ঝড় তুলছে বারংবার, কি এমন হলো?সঞ্চারীর এই অবস্থা কি করে হলো? মেয়েটার চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছিলো কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে সে।
“সাহিল… ” অপরিচিত কারো কণ্ঠে সাহিলের নাম শুনে মাথা তুলে তাকালো জান্নাতি।
হাতে শপিং ব্যাগ নিয়ে করিডোর দিয়ে হেঁটে সাহিলের সামনে এসে দাঁড়ালো ছেলেটা।
“এনেছিস?গিভ ইট টু মি।” বলেই অপরিচিত ছেলেটার হাত থেকে শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে জান্নাতির কাছে এলো সাহিল।
“এখানে দুই সেট ড্রেস আছে।ভেজা কাপড়ে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে,নিজেও চেইঞ্জ করে নাও আর সঞ্চারীকেও চেইঞ্জ করিয়ে দাও।”
জান্নাতি সাহিলের হাত থেকে শপিং ব্যাগ গুলো নিলো। দ্রুত পায়ে ঢুকে পরলো সঞ্চারীর কেবিনে।
“সাহিল,কি করেছিস বল তো? সঞ্চারীর এই অবস্থা কি করে…”
“পরে বলছি নীদ্র,আই নিড টু চেইঞ্জ ফার্স্ট।” বলেই একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে চলে গেলো সাহিল।
“কবে নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করবি সাহিল? নিজের জেদটাকে প্রাধান্য দিয়ে ভালোবাসাটাকে নজর-আন্দাজ করছিস। ভুল করছিস সাহিল;বড্ড ভুল।” বলেই একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো নীদ্র।
“তোকে এভাবে হাসপাতালের বেডে মানায় না সোনা,দ্রুত উঠে পর সঞ্চারী। তোর হাসি,তোর চঞ্চলতা সবকিছু আমি খুব মিস করছি রে;খুব মিস করছি।” সঞ্চারীর ক্যানোলা পড়ানো হাতটা ধরে বলে উঠলো জান্নাতি।
সঞ্চারীর কপালে চুমু খেয়ে ধীর পায়ে বেরিয়ে কেবিনের বাইরে পাতিয়ে রাখা স্টিলের ধাতব চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ জোড়া বন্ধ করে।
এক কাপ গরম কফি এনে জান্নাতির সামনে ধরে নীদ্র; চোখ বন্ধ থাকায় তা টের পায়না রমণী।
“মিস জান্নাতি;কফি।”
নীদ্রর ডাকে চোখ খোলে জান্নাতি।কফির কাপটা নীদ্রর হাত থেকে নিয়ে মাথা নিচু করে কফির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে।
“কফি খাওয়ার জন্য দিয়েছি।দেখার মতো আরো অনেক জিনিস আছে আশেপাশে।” কফিতে চুমুক দিতে দিতে বলে উঠলো নীদ্র।
নীদ্রর এহেন কথায় একটু লজ্জা পেল জান্নাতি।ইতস্তত করতে করতে কফিতে চুমুক বসালো।এতোক্ষণ বৃষ্টিতে ভেজার পর এই কফিটা তার খুব দরকার ছিলো;মাথাটা হ্যাং হয়ে ছিলো সব মিলিয়ে।
“ধন্যবাদ” নীদ্রর দিকে তাকিয়ে বললো জান্নাতি।
“কেন? কফির জন্য?”
“হ্যাঁ”
কফিটা শেষ করে কাপটা ডাস্টবিনে ফেললো জান্নাতি।অনেক্ষণ দ্বিধা দ্বন্দে ভোগার পর নীদ্রকে বলে উঠলো, “সাহিলের সাথে আপনার কি সম্পর্ক? আপনি কি হন তার?”
“সাহিল আমার ভাই,আমার বস,আমার বন্ধু।” ডাস্টবিনে ওয়ান টাইম কফি কাপটা ফেলতে ফেলতে জবাব দিলো নীদ্র।
“ঠিক বুঝলাম না।” হতভম্ভ হয়ে বলে উঠলো জান্নাতি।
জান্নাতির অবাক হয়ে যাওয়া মুখটা দেখে হেসে উঠলো নীদ্র।অত:পর সব খোলসা করে বলে উঠলো,
“আমি সাহিলের ফুফাতো ভাই। ইউসুফ তালুকদার নীদ্র।”
এবার জান্নাতির কাছে পুরো বিষয়টা পরিষ্কার। নীদ্রকে এই প্রথম দেখলো জান্নাতি,সাহিল আর ওর এনগেইজমেন্ট এর দিন নীদ্র উপস্থিত ছিলো না।তাই নীদ্রর সাথে এর আগে কখনো দেখা হয়নি জান্নাতির।
জান্নাতির ভাবনার মাঝে ছেদ ঘটালো সাহিলের উপস্থিতি। সাহিল নিজের ফরমাল গেট-আপ ছেড়ে একটা স্কাই ব্লু রঙের শার্ট আর ট্রাউজার গায়ে জড়িয়েছে।শার্টের হাতা ফোল্ড করে কনুই অবধি গোটানো।চুলগুলো এখনো ভেজা;ফর্সা কপালে চুলগুলো লেপ্টে আছে;গালের ছোট ছোট দাড়িতে লেগে থাকা পানির বিন্দুগুলো হাসপাতালের হলদেটে লাইটের আলোয় চকচক করছে।
নীদ্রর পাশে এসে দাঁড়ায় সাহিল।নীদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
“নীদ্র,জান্নাতিকে রুমির বাসায় রেখে আয়।”
“সঞ্চারীকে এখানে একা রেখে আমি কোথাও যেতে পারবো না।” দৃঢ় কণ্ঠে বলে ওঠে জান্নাতি।
“ও একা নেই,আমি থাকবো। তোমার বাবাকে কল দিয়ে বলে দিয়েছি তুমি আর সঞ্চারী বৃষ্টির জন্য আজ রুমির বাড়িতে থাকবে।ডোন্ট টক টু মাচ জান্নাতি,গো ইউথ নীদ্র।”
জান্নাতি দ্বিধায় পড়ে গেলো,কি করবে এখন সে? শরীরটাও আর সায় দিচ্ছেনা কিন্তু মন আর মস্তিষ্ক যে অন্য কথা বলে।
“তোমার ভরসায় তো ওকে রেখে গিয়েছিলাম সাহিল,ফলস্বরুপ মেয়েটা এখন অচেতন হয়ে হাসপাতালের বেডে পড়ে আছে। দ্বিতীয় বার এই রিস্ক আমি নিতে পারবো না।মামার কাছে জবাবদিহি করতে হবে আমায়।”
“আপনি প্লিজ আমার সাথে আসুন,সাহিল থাকতে সঞ্চারীর কোনো ক্ষতি হবেনা। এখানে সবার থাকার দরকার নেই;রাত ১২ টার কাছাকাছি। ভোর হলেই আবার আপনাকে নিয়ে আসবো হসপিটালে।” জান্নাতি কে উদ্দেশ্য করে বললো নীদ্র।
জান্নাতি একনজর সাহিলের দিকে তাকায়।তার অভিব্যক্তি বোঝার চেষ্টা করে;তবে বরাবরের ন্যায় ফলাফল শূণ্য।
“বেশ, আমি যাচ্ছি। তবে সাহিল,আমি যদি এসে জানতে পারি সঞ্চারীর সাথে তুমি কোনো রকম বাজে ব্যবহার করেছো তাহলে এর পরিণতি কিন্তু ভয়াবহ হবে।” বলেই স্থান ত্যাগ করলো জান্নাতি।
“ভাই আমি ওকে রেখে আসছি,তুই একটু বোস।বিশ্রাম দরকার তোর।” বলেই জান্নাতির পিছু পিছু হাঁটা ধরলো নীদ্র।
সাহিল স্বল্প মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। অত:পর লাল হয়ে ওঠা চোখজোড়া বুজে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
“এতোটা অবুঝ কি করে হও তুমি নিরুপমা?আমি তোমায় দূরে সরাতে চাইলে তুমি আরো নিজের সাথে আমায় জড়িয়ে নাও;ফলাফল সম্পর্কে তুমি অবগত নও মানলাম কিন্তু আমার চোখের ভাষাও কি তুমি বুঝতে পারো না?তুমি না আমায় ভালোবাসো?” বিরবির করে বলে উঠলো সাহিল।
মনটা অসহ্য ব্যাথায় জর্জরিত সাহিলের;মন আর মস্তিস্কের এই দোলাচল সে আর নিতে পারছে না। নাহ,একবার তার নিরুপমাকে না দেখলে মনটা শান্ত হবেনা তার। দ্রুত পায়ে হেঁটে গেলো সঞ্চারীর কেবিনের দিকে।
একটু আগেই জ্ঞান ফিরেছে সঞ্চারীর।মাথাটা বড্ড ভারী লাগছে তার,ক্যানোলার সাথে সংযুক্ত স্যালাইনটা শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ আগেই। জ্ঞান ফেরার পর আশেপাশে কাউকে দেখতে পেলো না সঞ্চারী।খানিকক্ষণ বাদেই মনে পড়লো সাহিলের সেই ভয়ংকর দুরব্যবহার,
আশেপাশের লোকেদের সেই অপমানজনক বাণী। মনটা বিষিয়ে গেলো সঞ্চারীর,ফর্সা কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো দু ফোঁটা উষ্ণ জল।
“আমি আর কাঁদবোনা আপনার জন্য,মৃত বৃক্ষের গোড়ায় যেমন জল ঢেলে কোনো লাভ হয়না; সেখানে আর কখনোই ফুল ফোটে না।ঠিক তেমনি আমার চোখের জল বা ভালোবাসার বর্ষণ কোনোটাই আপনার মনে আমার জন্য বিন্দুমাত্র ভালোবাসার জন্ম দেবে না। আমি হেরে গেলাম সাহিল,আমার ভালোবাসা হেরে গেলো।আপনার যুক্তির বেড়াজালে আটকে আমার ভালোবাসা ছটফট করতে করতে মৃত্যু বরণ করলো।”
গাল বেয়ে পড়া উষ্ণ চোখের জল টুকু হাত দিয়ে সন্তোর্পনে মুছে নিলো সঞ্চারী;চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো,কার্ণিশ বেয়ে আবারো গড়িয়ে পড়লো অবাধ্য অশ্রু।
কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো সাহিল।সঞ্চারী চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে দেখে ভাবলো এখনো হয়তো উঠেনি মেয়েটা। ধীর পায়ে এগিয়ে এলো সঞ্চারীর কাছে, ধাতব টুল টা নিয়ে নিঃশব্দে বসলো সঞ্চারীর মাথার কাছে। সঞ্চারীর মেয়েলী নরম একটা হাত তার পুরুষালী রুক্ষ দু’হাতের মাঝে নিয়ে পূর্ণ দৃষ্টি ফেললো মেয়েটার দিকে। সঞ্চারীকে অজ্ঞান অবস্থায় গাড়িতে তোলার সময় সঞ্চারীর গালে থাকা পাঁচ আঙ্গুলের দাগ খেয়াল করেনি সাহিল।
“মেয়েটার গালে এমন আঙ্গুলের দাগ আসলো কিভাবে? আমিতো… শিট তার মানে ও নিজেই নিজেকে এভাবে মেরেছে?” ভেবেই চোয়াল শক্ত হয়ে এলো সাহিলের।
নিজের হাতের মুঠোয় থাকা সঞ্চারীর হাতটায় ঠোঁট ছোঁয়ালো সাহিল।
“কবে বড় হবে নিরুপমা?তুমি ছোটই রয়ে গেছো।তুমি আবারো প্রমাণ করে দিলে তুমি ইমম্যাচিয়্যুর,আমি যত চাই তুমি নিজেকে গুছিয়ে নাও ততোই তুমি নিজেকে এলোমেলো করে তোলো।তুমি জেগে থাকলে তোমায় আমি শাস্তি দিতাম নিরুপমা কিন্তু তোমার এই ঘুমন্ত মুখটা দেখে আমার তোমার শাস্তি দিতে মনে চায়না।”
“আমার ভিতরটা এলোমেলো করে দিয়ে কতো শান্তিতে ঘুমোচ্ছো তুমি ; অথচ দেখো আমি গত দশটা মাস শান্তিতে ঘুমোতে পারিনা। বুকের ভিতরটা ভীষণ জ্বলে জানো নিরু? তুমিও আমায় ভালোবাসো এটা ভেবে অন্তরটা প্রশান্তিতে ভরে ওঠে;কিন্তু তোমায় পাবোনা ভাবলেই আবার সেখানে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে।”
“আমার কি মুক্তি নেই প্রিয়তমা?কেন এই অদৃশ্য বেড়াজালে আটকে আছি আমরা?তুমি আজকের পর আমার ঘৃণা করবে তাইনা নিরুপমা? আমিও এটাই চাইতাম, কিন্তু এখন এটা ভাবতেই দেখো চোখ দিয়ে অবাধ্য অশ্রুরা ছোটাছুটি করছে।”
সঞ্চারীর হাতের ক্যানোলা থেকে স্যালাইনের লাইনটা সযত্নে খুলে দেয় সাহিল। সঞ্চারীর মাথা বুকে নিয়ে চোখটা বন্ধ করে কেবিনের ছোট্ট বেডটায় শুয়ে পড়ে সে।
সঞ্চারী এতক্ষণ সবই শুনেছে।সাহিলের তাকে “প্রিয়তমা”, “নিরুপমা” বলে সম্বোধন,সঞ্চারীর জন্য বলা তার প্রতিটা ভালোবাসাময় বাক্য সব শুনেছে সে। মনটা পুলকিত হয়ে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। কাঁপা কাঁপা হাতে সাহিলের পিঠের কাছের শার্ট টা খামছে ধরে সঞ্চারী,শব্দ করে কান্না শুরু করে সাহিলের বুকে সাথে মিশে।
“আমি হেরে যাইনি সাহিল,আপনিও আমায় ভালোবাসেন।আমি সব শুনে নিয়েছি;আপনি আমায় ফেলে কোথাও যেতে পারবেন না।আমি সব স্থানে আপনার পিছু নিব,আপনার নিরুপমা শুধুই আপনার।আপনি ব্যতিত আমি নিঃস্ব, বড্ড একা আমি।আমায় ফেলে যাবেন না দয়া করে,আমি বাঁচতে পারবো না বিশ্বাস করুন মরেই যাবো আমি।” কাঁদতে কাঁদতে এক নাগাড়ে কথা গুলো বললো সঞ্চারী।
সাহিল নিজের হাত আলগা করে সঞ্চারীকে ছাড়াতে চাইলে সঞ্চারী নিজের হাতের বাঁধন শক্ত করলো। নিজের মাথাটা সাহিলের বুকের সাথে আরেকটু মিশিয়ে নিলো,চোখ বেয়ে এখনো নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে মেয়েটার।
“নিরু?”
সাহিলের ডাকে মাথা তুলে তাকালো সঞ্চারী।হাতের বাঁধনও কিছুটা আলগা হয়ে এলো।
সাহিল কিছু বলবে তার আগেই সঞ্চারী বলে ওঠে, “আপনি আমার মারুন,বকুন, অপমান করুন যা ইচ্ছে হয় করুন কিন্তু আমি আপনাকে অন্য কাউকে দিতে পারবো না সাহিল।আপনি আমার হয়ে থাকবেন,সাহিল শুধুই সঞ্চারীর। কয়েক মূহুর্ত আগেও আমি এই অধিকার নিয়ে কথা বলার সাহস পাইনি কিন্তু এখন আমার সেই অধিকার আর সাহস দুটোই আছে।” সাহিলের চোখে চোখ রেখে বললো সঞ্চারী।
“আমার সাথে অভিনয় করছিলে এতোক্ষণ?ঘুমিয়ে না থেকেও ঘুমের ভান করে সব কথা শুনে নিলে,পানিশমেন্ট তো তোমার প্রাপ্য।” বলেই বাঁকা হাসলো সাহিল।
“অভিনয় তো আপনিও কম করেননি। এতোগুলো দিন কি আমায় কম আমায় যন্ত্রণা দিয়েছেন?আপনার পাপ লাগবে দেখবেন; হৃদয় ভাঙ্গার পাপ।” অভিমানি কণ্ঠে জবাব দিলো সঞ্চারী।
“পাপ তো আমি করে বসেই আছি নিরুপমা।তোমায় ভালোবেসে অনেক গুলো পাপ একসাথে করে বসে আছি আমি,কিন্তু এই পাপে শাস্তির থেকে স্বস্তির পরিমাণটা বোধহয় বেশি।তাই তো আমি শাস্তির স্বরুপ তোমায় পেয়েছি। যা আমার জীবনের একমাত্র স্বস্তির কারণ।” বলেই সঞ্চারীর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো সাহিল।
“আপনি আমায় কতটুকু ভালোবাসেন সাহিল?”
আবেগী কণ্ঠে সুধালো সঞ্চারী।
“ভালোবাসা পরিমাপের বস্তু নয় নিরুপমা।তবে যদি তুমি পরিমাপ জানতে যাও তবে বলে রাখি,ভালোবাসার পরিমাপ দণ্ডে তুমি আমায় যতটা ভালোবাসো তার থেকে আমার ভালোবাসার ওজনটা এক তোলা হলেও বেশি থাকবে সবসময়।”
অশ্রুসিক্ত নয়নে হাসলো সঞ্চারী।
সাহিল সঞ্চারীকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে পিঠের পিছনটায় বালিশ দিয়ে বসিয়ে দিলো। সঞ্চারীর হাতটা ধরে বললো,”খাবার নিয়ে আসছি,এখানে বসে থাকো। কোথাও যাবেনা।”
সঞ্চারীও বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
সঞ্চারীর কেবিনের বাইরে এসে নীদ্রকে কল করলো সাহিল। নীদ্র তখন ড্রাইভ করছিলো। কানে ব্লুটুথ ডিভাইস টা পড়ে কল রিসিভ করলো সে। ওপাশ থেকে সাহিলের কথা শুনে দ্রুত গাড়ির ব্রেক কষলো নীদ্র।
চলবে…?
#আমার_সঞ্চারী
পর্ব-৩
#শ্রীমতি_প্রজ্ঞা_মঞ্জরী (লেখিকা)
🚫(এলার্ট!)
-“আর ইয়্যু সিরিয়াস সাহিল?তোর কথার কোনো।মাথামুণ্ডু খুঁজে পাচ্ছিনা আমি।” সাহিলের কথায় হতভম্ভ হয়ে বলে ওঠে নীদ্র।
-“ডু ইয়্যু থিংক আ’ম কিডিং উইথ ইয়্যু নীদ্র?ইয়্যু হ্যাভ থার্টি মিনিটস;যা বলেছি দ্রুত রেডি কর।” বলেই কল কেটে ফোনটা পকেটে পুরে নিলো সাহিল।
-“আই কান্ট টেইক এনি রিস্ক এবাউট ইয়্যু নিরুপমা।আই নিড ইয়্যু ফর মাইসেল্ফ।ইয়্যু আর মাইন;অনলি সাহিল পাটোয়ারি’স।” সঞ্চারীর কেবিনের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলেই খাবার আনতে চলে গেলো সাহিল।
ক্লান্ত শরীরে সবে মাত্র ঘুমের ঝিমটি ধরেছিলো জান্নাতির।আকর্ষাৎ নীদ্রর এমন ব্রেক কষায় ঘুম ছুটে গেলো মেয়েটার;ধরফরিয়ে চোখ মেললো সে।
-“আপনার সমস্যা কি?এভাবে কেউ ব্রেক করে?হার্ট এটাক করিয়ে ছাড়বেন মনে হচ্ছে।” বুকে হাত দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো জান্নাতি।বুকটা তড়িৎ গতিতে লাফাচ্ছিলো তার।
নীদ্র জান্নাতির প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে ইয়্যু-টার্ন নিয়ে আবারো হসপিটালের দিকে রওনা হলো।
হাসপাতালে,
সাহিল ঠিক যেভাবে সঞ্চারীকে বসিয়ে রেখে গিয়েছিলো সঞ্চারী এখনো সেভাবেই বসে আছে। বুকের ভিতরটায় একটু আগের অযাচিত ঘটনার রেশ একনো বিদ্যমান।
সাহিলের পারফিউমের ঘ্রাণ এখনো আসছে সঞ্চারীর সারা শরীর থেকে।নিজের পড়নের জামাটার দিকে ঝুঁকে সেই ঘ্রাণ টাই নেওয়ার চেষ্টা করছিলো সঞ্চারী।
হাতে চিকেন স্যুপ,গার্লিক ব্রেড আর অরেঞ্জ জুস নিয়ে সঞ্চারীর কেবিনে প্রবেশ করে সাহিল।সঞ্চারী মনোযোগ দিয়ে নিজের গায়ের কাপড় থেকে সাহিলের পারফিউমের গন্ধ নিচ্ছিলো। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে খানিকটা কেঁপে ওঠে সঞ্চারী;সাহিলকে দেখে স্বাভাবিক হয়ে বসে সে।
-“আমার পারফিউমের স্মেল তোমার এতো পছন্দের তা আমায় আগে বলতে পারতে।” হাতের খাবার গুলো কেবিনে রাখা কাউচের সামনের টেবলটায় রাখতে রাখতে বলে ওঠে সাহিল।
-“আমি আসলে,,,, মানে,,, আপনার পারফিউমের স্মেলটা বড্ড মোহনীয়।কি ব্রান্ডের পারফিউম ইউস করেন আপনি?” মাথা নুয়িয়ে বলে উঠলো সঞ্চারী।লজ্জায় বেচারির গাল দুটো পাকা টমেটোর মতো হয়ে উঠেছে।
সঞ্চারীর অবস্থা থেকে মৃদু হাসলো সাহিল।নিজের হাত দু’টো আড়া আড়ি ভাবে বুকে বেঁধে সঞ্চারীর দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সে।
মেয়েটা ভীষণ সুন্দরী।গায়ের রঙ টাও মাশাল্লাহ,ঘন কালো চুলগুলো কোমর ছুঁয়েছে, টানাটানা চোখ দুটোর গভীরতা এতোই যে সাহিলের মতো কাটখোট্টা পুরুষকেও তা বিভ্রান্ত করে ছাড়লো।উঁহু,বিভ্রান্ত বললে ভুল হবে, রীতিমতো হাবুডুবু খাচ্ছে সাহিল তার অষ্টাদশী নিরুপমার প্রেমে।মেয়েটার ঠোঁট দু’টো সাহিলের সব থেকে বড় দূর্বলতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপরের ঠোঁটটা যেন সুনিপুণ করে আঁকা, নিচের ঠোঁটটা অনেকটাই কমলালেবুর কোয়ার ন্যায় লাগে সাহিলের কাছে।মেয়েটার দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে নিজেকে আর ২৭ বছরের যুবক মনে হয়না সাহিলের, মনে হয় কৈশোর শেষ করে সদ্য নবযৌবনে পা রাখা এক প্রেমিক সে।
সাহিল ধীর পায়ে সঞ্চারীর দিকে এগিয়ে গেলো।সঞ্চারীর হাতের ফাঁকে নিজের হাত গলিয়ে নিজের কাছে টেনে নিলো।সাহিলের এহেন আচরণে হকচকিয়ে গেলো সঞ্চারী,সে দু’হাতে আঁকড়ে ধরলো সাহিলের প্রশস্ত কাঁধ।সাহিল ফুঁ দিয়ে সঞ্চারীর মুখের উপরে পড়ে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দিলো;এতে সঞ্চারী চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো দু’হাতের বাঁধন শক্ত করে দৃঢ়ভাবে আকড়ে নিলো সাহিলের কাঁধের কাছের শার্ট টুকু।
সাহিল মেঝেতে দাঁড়িয়ে, আর সঞ্চারী হসপিটালের বেডের উপর হাঁটু মুড়ে দাঁড়িয়ে আছে।হাতে শক্ত করে ধরে রেখেছে সাহিলের শার্ট।নিঃশ্বাস বেগ দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে। এমন সময় সঞ্চারী চোখ মেললো,সামনে তাকিয়ে সাহিলে দেখে ভীষণ লজ্জা পেলো সঞ্চারী।এই লোকটা হুটহাট করে কেন সঞ্চারীর এতোটা কাছে চলে আসে?সঞ্চারীর বুঝি লজ্জা করেনা?
-“নিরুপমা?” ধীর অথচ আকুল কণ্ঠে ডেকে উঠলো সাহিল।
নিরুপমার হৃদয় আরেকবার থমকালো,আরেকবার হার্ট এর একটা বিট মিস করলো বোধ হয়।প্রিয় পুরুষের এমন সম্মোহনী ডাকে লজ্জারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো সঞ্চারীর।
-“ওপেন ইয়্যুর আইস নিরু।লুক এ্যাট মি জান।” দু’ হাতের অজলায় নিরুর মুখটা নিয়ে বলে উঠলো সাহিল।
সঞ্চারীএবার অবাকের চরম সীমায় পৌঁছালো।ঝট করে চোখ তুলে তাকালো সাহিলের দিকে।কি চাউনি!কি নেশালো অভিব্যক্তি। লোকটার কথায়, কাজে বারবার খেই হারিয়ে ফেলে সঞ্চারী।
সাহিল এক হাতে সঞ্চারীর কোমর পেঁচিয়ে ধরলো, অন্য হাতটা সঞ্চারীর গালের উপর রেখে বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে নিচের ঠোঁটটা স্লাইড করতে লাগলো।
-“নিরু,ক্যান আই কিস ইয়্যুর লোয়ার লিপস?” সঞ্চারীর ঠোঁটের দিকে নিজের দৃষ্টি নিবন্ধিত রেখে বলে উঠলো সাহিল।
সঞ্চারী চোখজোড়া বন্ধ করে মিহি কণ্ঠে বলে উঠলো,”ইয়েস।”
সাহিল আর সময় নিলো না।সঞ্চারীর কোমরে নিজের হাতের বন্ধনটা দৃঢ় করে বাকি দূরত্বটুকুও ঘুচিয়ে দিলো।অন্য হাতে সঞ্চারীর মাথার পিছনের দিকে চুলগুলো আকড়ে দখল করে নিলো মেয়েটার ওষ্ঠপুট।
সঞ্চারীর শরীরে ঝটকা লাগলো,চোখদুটি বড় বড় হয়ে গেলো কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হলো না।সাহিলের অপ্রতিরোধ্য চুম্বনের আবেশে চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো সঞ্চারী।নিজেও সায় দিলো একটু পরে। সাহিলের শার্ট ছেড়ে এক হাতে কাঁধের কাছটা আকড়ে ধরে অন্য হাতে মাথার পেছনের দিকের চুলগুলো সর্বশক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরলো।
সাহিল সঞ্চারীর আশকারা পেয়ে আরো গভীরভাবে সঞ্চারীকে কাছে টেনে নিলো।অষ্টাদশীর কোমল অধরোষ্ঠে, শরীরের বাঁকে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে একটুও ভুল করলো না সাহিল।প্রথমে নরম ভাবে সঞ্চারীর ঠোঁটজোড়ায় চুমু খেলেও সময়ের সাথে সাহিলের উন্মাদনা বাড়তে লাগলো।একপ্রকার শুষে নিচ্ছিলো সে সঞ্চারীর ঠোঁট জোড়া।
সঞ্চারী এমন এগ্রেসিভ সাহিলকে সামলাতে হিমসিম খাচ্ছিলো।খেই হারিয়ে ফেলছিলো বারবার।শ্বাস আটক আসছিলো কিন্তু সাহিলকে ছাড়তে নারাজ ছিলো সঞ্চারী।নিজের শরীরটা আরেকটু টেনে সাহিলের সাথে লেপ্টে থাকলো সে।
এক পর্যায়ে সঞ্চারীর নিচের ঠোঁটটায় কামড় দিয়ে বসলো সাহিল;মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো সঞ্চারী।পরমূহুর্তেই কামড় দেওয়া ঠোঁটটায় পরম আবেশে চুমু খেয়ে সঞ্চারীকে ছেড়ে দিলো সাহিল।
ছাড়া পেয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো সঞ্চারী।সাহিলের ঠোঁটে লেগে আছে দুষ্টামি ভরা হাসি।সে সঞ্চারীর ডান গালে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে পাজাকোলে তুলে নিলো। সঞ্চারী হঠাৎ এমন ঘটনায় তড়িঘড়ি করে সাহিলের গলা জড়িয়ে ধরলো।
-“পরেরবার আমার শরীরের ঘ্রাণ নিতে ইচ্ছে হলে আমায় বলবে নিরু।আই উইল মেইক শিউর এভরি পার্ট অফ ইয়্যুর বডি এক্সাকলি স্মেল লাইক মি।” বলেই দুষ্টু হাসি দিলো সাহিল।
-“আমায় নিচে নামান প্লিজ।আপনার কষ্ট হচ্ছে না?” আড়ষ্ট ভঙ্গিতে বলে ওঠে সঞ্চারী।
-“কষ্ট হচ্ছেনা।তোমার বয়স অনুযায়ী যদিও তুমি ভারী আছো কিন্তু ব্যাপার না, আই লাভ মাই চাবি (chubby) নিরুপমা।”
সাহিলের কথায় অবাক হলো নিরু।হ্যাঁ সে মানছে সে একটু গুলুমুলু, তবে তার থেকেও কতো মোটা মেয়েরা আছে। সাহিল তাকে ঘুরিয়ে-পেচিয়ে মোটা বললো?
-“আপনি কি আমায় ইনডিরেক্টলি মোটা বললেন?” ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো সঞ্চারী।
-“ইনডিরেক্টলি বলিনি, আমি ডিরেক্টলি-ই বলেছি।তবে।মোটা বলিনি আই সেইড চাবি(chubby)” ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে জবাব দিলো সাহিল।
অন্যদিকে,
নীদ্র ইতমধ্যে হাসপাতালে চলে এসেছে। গাড়ি পার্কিং এরিয়ায় থামিয়ে জান্নাতিকে বলে উঠলো -“বের হন, কুইক।”
জান্নাতি এবার চরমভাবে মেজাজ হারালো।
-“গত ত্রিশ মিনিট ধরে আপনাকে আমি কন্টিনিউয়াসলি জিজ্ঞেস করে যাচ্ছি কি হয়েছে,আপনি আমায় কোনো উত্তর-ই দিচ্ছেন না।সমস্যা কি আপনার? আপনারা দুই ভাই সেইম ক্যাটাগরির,ধুর আপনার সাথে যেতে রাজি হওয়াটাই আমার ভুল হয়েছে।” এক নাগাড়ে কথা গুলো বলতে বলতে গাড়ি থেকে নামলো জান্নাতি। ঠাস করে গাড়ির দরজা টা লাগিয়ে দ্রুর পায়ে হেঁটে চললো হাসপাতালের ভিতরে।
-“হায় আল্লাহ্! ইয়া মা”বুদ আমায় রক্ষা করো।এই সাহিলের জন্য আমার পঁচাত্তর লাখ টাকার গাড়ির উপর দিয়ে ভূমিকম্প যাচ্ছে।ওর তুমি বিচার করো আল্লাহ্। ” কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে কথা গুলো বলে গাড়ি থেকে বের হলো নীদ্র।
-“হে আমার অডি সুন্দরী আমায় ক্ষমা করিও,তোমায় আমি আঘাত পাওয়া থেকে বাঁচাতে পারিনি।” নিজের গাড়ির গায়ে হাত বুলিয়ে কথাটা বলে উঠলো নীদ্র। অত:পর দৌঁড়ে হাসপাতালের ভিতরে প্রবেশ করলো।
-“আপনি নামান আমায়,আমি মোটা না? একটু আগে মনে ছিলো না?” কপট রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো সঞ্চারী।
-“কেন?একটু আগে কি হয়েছে?”
-“একটু আগে যখন চুউউউ…. ” আর বলতে পারলো না সঞ্চারী। একহাতে মুখটা চেপে ধরলো।
-“কি হলো বলো?একটু আগে চুউউউ কি?”
সাহিলের কথায় সঞ্চারী কোনো উত্তর করলো না।মুখটা ওভাবেই চেপে ধরে ডানে বামে মাথা নাড়লো, বোঝাতে চাইলো কিছুনা।
সাহিল আর সঞ্চারীরকে জ্বালাতন করলো না।কেবিনে রাখা কাউচের উপর বসে সঞ্চারীকে নিজের কোলের উপর বসালো।সঞ্চারী সরে আসতে চাইলে তার কোমর ধরে রাখলো শক্ত করে।কাউচের সামনের টেবিল থেকে স্যুপের বাটিটা এনে খাওয়াতে শুরু করলো সঞ্চারীকে।
এমন সময় কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে হুরমুড়িয়ে প্রবেশ করলো জান্নাতি।সাহিল আর সঞ্চারীকে এভাবে দেখে থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সে।তার পিছনেই দৌঁড়ে এলো নীদ্র।নিজের গতি সামলাতে না পারায় ধাক্কা লাগলো জান্নাতির সাথে।
-“উফফ… দেখে চলতে পারেন না?তেলাপোকার মতো।উড়ছেন কেন?” নাক মুখ কুঁচকে বলে উঠলো জান্নাতি।
নীদ্রর এসবে খেয়াল নেই।সে সঞ্চারী আর সাহিলকে দেখে অবাকের চরম সীমায় অবস্থান করছে।
অন্যদিকে সঞ্চারীর তো লজ্জায় প্রাণ যায় যায় অবস্থা।সে প্রাণপণ ছুটতে চাইছে সাহিলের থেকে। কিন্তু সাহিলের এতে কোনো হেলদোল নেই।সে আগের ন্যায় সঞ্চারীর কোমর জড়িয়ে ধরে বসে আছে।
-“এভাবে গরুর মতো হা করে আছিস কেন?” নীদ্রকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে সাহিল।
-“ভাইইইইই,,, এটা তুই?” চিল্লিয়ে বলে ওঠে নীদ্র।
নীদ্রর এমন আচরণে বিরক্ত হয় জান্নাত।কানের কাছে এতো জোড়ে কেউ চিল্লায়?কানটা বোধহয় কালা-ই হয়ে গেলো তার।
-“এই আপনি ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছেন কেন?এটা হসপিটাল, আপনার বাসা না।” রাগী কণ্ঠে বলে ওঠে জান্নাতি।
নীদ্র এবার স্বাভাবিক হয়। আসলেই সাহিলের এই রূপ মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে নীদ্র-র।
সঞ্চারীকে কোল থেকে নামিয়ে উঠে দাঁড়ায় সাহিল। শার্টের ফোল্ড করে রাখা হাতাটা ঠিক করতে করতে বলে ওঠে, ” লেটস গো এভরিওয়ান।উই আর গেটিং লেইট।”
সঞ্চারী যেত হাফ ছেড়ে বাঁচলো।এতোক্ষণ দম আটকে সাহিলের কোলে বসে ছিলো সে। জান্নাতিকে দেখে সঞ্চারীর অপরাধবোধ কাজ করলো নিজের মাঝে। জান্নাতি সাহিলের ফিয়োন্সে।আর করেকদিন গেলেই সাহিল আর জান্নাতির বিয়ে। সেই হিসেবে সাহিল সঞ্চারীর হবু দুলাভাই; আর সঞ্চারী কি না তার বোনের সামনেই বোনের ফয়ন্সের কোলে উঠে বসে ছিলো? জান্নাতি যদি সঞ্চারীকে প্রশ্ন করে এ বিষয়ে? কি করবে তখন জান্নাতি? বাবা যদি জেনে যান? তখন কি হবে? ভেবেই হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে তার।
এমন সময় সাহিল সঞ্চারীর হাতটা কোমল ভাবে নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিলো। সাহিলের পুরুষালী রুক্ষ আঙ্গুলের ভাজে পুরে সঞ্চারীর মেয়েলী নরম হাতের আঙ্গুল গুলো। সঞ্চারীর দিকে তাকিয়ে কোমল কণ্ঠে বলে উঠলো,
– “একটা যায়গায় নিয়ে যাবো তোমায় সঞ্চারী।
যাবে আমার সাথে?”
চলবে…?