আমার সঞ্চারী পর্ব-৫+৬

0
2

#আমার_সঞ্চারী
পর্ব-(৫+৬)
#শ্রীমতি_প্রজ্ঞা_মঞ্জরী (লেখিকা)

🚫এলার্ট (এই পর্ব প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত। কিছু নৃশংস বর্ণনা এবং এডাল্ট সিন আছে।)

“আমার একটা শর্ত আছে।”
হাসিখুশি মহলে সঞ্চারীর কথাটা যেন হঠাৎ বজ্রপাতের ন্যায় মনে হলো।

“বিয়ে করতে চাও না?কিন্তু তুমি রাজি না থাকলেও এই বিয়ে হবে।মুড এসে গেছে বিয়ের।পিছ-পা হওয়ার অবকাশ নেই।”

সাহিলের মুখে এমন বেফাঁস কথায় যেন সকলের চক্ষুচড়ক গাছ।সাহিল পাটোয়ারি এমন কথা বলছে!এ ও কি সম্ভব?

সঞ্চারী সাহিলের কথায় অবাক হলেও প্রকাশ করলো না।সাহিলের সামনে এসে চোখে চোখ রেখে দাঁড়ালো।কণ্ঠে অদ্ভুত দৃঢ়তা এনে বললো,
-“আপনি তো আমায় কয়েক ঘন্টা আগেই অপমান করলেন।আমি নির্লজ্জ,বেহায়া,অশালীন আরো কতো কি!এখন আমায় বিয়ে করতে চাইছেন।”

ভ্রু কুচকালো সাহিল।সঞ্চারীর এমন কথা ভালো ঠেকলো না তার নিকট।

সঞ্চারী একটু দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করলো,

-“একটু আগের করা অপমান আমি ভুলি কি করে বলুন? এতো অপমান,অবজ্ঞা,অবহেলা সব ভুলে যাবো? আদৌ সম্ভব?”

-“কি চাইছিস তুই সঞ্চারী?” জান্নাতি প্রশ্ন করলো সঞ্চারীকে।

-“আমি স্বীকৃতি চাই।আমার ভালোবাসার স্বীকৃতি,সবার সামনে যেভাবে আমার ভালোবাসা অস্বীকার করেছিলেন সাহিল পাটোয়ারি ঠিক সেভাবেই সকলের সামনে আমার ভালোবাসাটা গ্রহণ করতে হবে তাকে!আমি শুধু তার প্রচ্ছন্ন অনুভূতি ই না এই ধরনীর বুকে তার জীবনেও একচ্ছত্র আধিপত্য চাই।প্রত্যেকটা মানুষ জানবে সঞ্চারী শিকদার সাহিল পাটোয়ারির ওয়াইফ,তার হৃদয়ের সত্ত্বাধিকারীনি,তার ইহকাল ও পরকালের একমাত্র সঙ্গিনী।”

-“সবাই বাইরে যাও,আমার বউয়ের সাথে আমার কথা আছে।”

সাহিলের কথায় সবাই একে অপরের দিকে তাকায়।সঞ্চারী তখন সাহিলকে দেখতে ব্যাস্ত।সে অত্যধিক দুঃসাহসের কাজ করে ফেলেছে।কিন্তু সে বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্ককে সে আড়াল করতে চায় না।জানুক না পুরো দুনিয়া যে সাহিল শুধুই সঞ্চারীর;অন্য কারোর না।

-“আই সেইড লিভ এভ্রিওয়ান” সাহিলের ধমকে সঞ্চারীকে রেখে সবাই বাড়ির বাইরে চলে গেলো।

ঘরের ভিতর এখন শুধু সাহিল আর সঞ্চারী।সাহিলের দৃষ্টি সঞ্চারীতেই নিবন্ধিত আর সঞ্চারীও সাহিলের দিকেই তাকিয়ে আছে।

সাহিল কিছুটা এগিয়ে সঞ্চারীর সামনে এসে দাঁড়ালো।সঞ্চারীর হাইট সাহিলের থেকে অনেকটাই কম।দু’জন পাশাপাশি দাঁড়ালে সঞ্চারী সাহিলের বুক অবধি আসে।

সাহিল এক হাতে সঞ্চারীর শাড়ির ফাঁকে হাত গলিয়ে উন্মুক্ত কোমর পেঁচিয়ে ধরে।অন্য হাত সঞ্চারীর গালের উপর রেখে বলে ওঠে,

-“তুমি আমার সবথেকে চমৎকার অনুভূতি নিরুপমা।আমার ঘুম না হওয়ার কারণ,আবার আমার শান্তিতে ঘুমোনোর কারণ ও তুমি।তুমি আমার হৃদয়ের অস্থিরতা আবার তুমিই আমার একমাত্র প্রশান্তি।তুমি আমার হৃদয়ের চৈত্র মাসের খাঁ খাঁ রোদ্দুর আবার তুমিই আমার হৃদয়ের শ্রাবণের তুমুল বর্ষণ।তোমায় ছাড়া আমি নিঃস্ব,বেদুঈন যাযাবর।আবার তোমার জন্য আমি ঘরকুনো শান্ত পুরুষ।তুমি চাইলে এই সাহিল পাটোয়ারি এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডর সকল মানুষের সামনে চৎকার করে বলবে এই সাহিল পাটোয়ারি শুধুই মিসেস সঞ্চারী সাহিল পাটোয়ারির জন্য বরাদ্দ।বাকি সকল নারী আমার জন্য হারাম।আমি শুধু তোমার হালাল পুরুষ আর বাকি সকলের নিষিদ্ধ পুরুষ।কখন বলা চাই বলো?তখনি বলবো।”

সঞ্চারী মুগ্ধ নয়নে অবলোকন করলো সাহিলকে।অত:পর একটু কাছে এসে দু’জনের মধ্যকার দূরত্ব কমিয়ে সাহিলকে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো।সাহিল যেন মেঘ না চাইতেই জল পেয়ে গেছে।শক্তপোক্ত হাতের দ্বারা সঞ্চারীকে জাপটে ধরলো সে।

-“আপনি আমার প্রণয় পুরুষ সাহিল পাটোয়ারি।আমি শুধু চাই আপনি আমার থাকুন,আমায় ভালোবাসুন, আমার স্বামী হয়ে বাকি সকলের জন্য আজীবন নিষিদ্ধ হয়ে যান।আর বাকি সব ঠুঙ্ক আমার নিকট।আপনি হলেই চলবে,আমার আপনি হলেই চলে।”

-“বিয়ে করবে এবার?”

-“হু”
সাহিলের বুকে মাথা গুজেই হালকা স্বরে উত্তর করে সঞ্চারী।

সাহিল মুচকি হাসে।

-“দেখো বউ এভাবে জড়িয়ে রেখো না,বিয়ে হয়নি এখনো।তুমি কি বাই এনি চান্স আমায় সিডিউস করতে চাইছো?বিয়ে ছাড়া ইন্টিমেট হতে পারবোনা নিরুপমা।”

সাহিলের কথায় ঝট করে মুখ তুলে তাকায় সঞ্চারী।এমন নির্লজ্জ কথায় সঞ্চারী লজ্জা পায় বেশ।ধাক্কা দিয়ে দূরে সরে যেতে নেয় সাহিলের থেকে, তবে ব্যর্থ হয়।সঞ্চারীর হাত ধরে পুনরায় কাছে টেনে নিয়ে তাকে কোলে তুলে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে যায়।সঞ্চারী শক্ত করে সাহিলের কাঁধ জড়িয়ে ধরে।

বাইরে নীদ্র,জান্নাতি,রুমি আর হাবিব অপেক্ষা করছিলো।সাহিল আর সঞ্চারীকে ওভাবে বেরিয়ে আসতে দেখে মুখ টিপে হাসতে থাকে সবাই।এদিকে সঞ্চারী বেচারির লজ্জায় লাল-নীল অবস্থা।

সাহিল সঞ্চারীকে কোলে নিয়ে গাড়ির দরজা খুলে ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে সিটবেল্ট টা বেঁধে দিলো।

-“সঞ্চারীকে নিয়ে আমি কাজি অফিসে যাচ্ছি।নীদ্র তুই রুমি,হাবিব ভাই আর জান্নাতিকে নিয়ে আয়।”

সাহিলের কথায় নীদ্র মাথা নাড়লো। সাহিল ড্রাইভিং সিটে বসে সিটবেল্ট টা বেঁধে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

বাকি সবাই নীদ্রর সাথে নীদ্রর গাড়িতে উঠলো।ড্রাইভিং সিটে নীদ্র,পাশে হাবিব;ব্যাকসিটে জান্নাতি আর রুমি।

সঞ্চারী লজ্জায় সাহিলের দিকে তাকাতে পারছে না।আজ যেন এক নতুন সাহিলকে আবিষ্কার করলো সঞ্চারী,একদম প্রেমে অন্ধ পুরুষমানুষ।

সাহিল মনযোগ সহকারে ড্রাইভ করছে,হঠাৎ সঞ্চারীর একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চুমু খেলো সাহিল।সঞ্চারী একটু কেঁপে উঠলো,মনের মধ্যে অদ্ভুত রকমের অনুভূতি হচ্ছে তার।

-“আর কিছুক্ষণ নিরুপমা,এরপর সঞ্চারী শিকদার থেকে সঞ্চারী পাটোয়ারি হবে।ওয়াইফ অফ সাহিল পাটোয়ারি।”

সঞ্চারী উত্তর করেনা,শুধু লাজুক হাসে।
……………

রাজধানীর বিলাসবহুল পাঁচ তারকা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট “ফ্লোরিশ”।দিনের আলোয় এখানে সমাজের সুশীল শ্রেণীর লোকেদের পদচারণায় ব্যস্ত থাকে এই স্থান।বিজনেস মিটিং,ফ্যামিলি নিয়ে সময় কাটাতে আসেন উচ্চবিত্ত লোকেরা।তবে রাতের চিত্র পুরোই ভিন্ন।সুশীল সমাজের মুখোশধারী লোকেদের মুখোশ খসে পড়ে হোটেলের বাহারি রঙা আলো আর আবেদনময়ী নারীর ছোঁয়ায়।পনেরো তলা এই বিলাসবহুল হোটেলের বারো থেকে পনেরো তলা পুরোটাই বরাদ্দ থাকে রাতের এই রমরমা দেহ*ব্যবসা, ড্রাগ ডিল, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা আর প্রভাবশালী গণের অনৈতিক কর্মপরিকল্পনার জন্য।

ফ্লোরিশের তেরো তলার ১৩০২ নং রুম।রুমের ভিতর থেকে ভেসে আসছে এক নারীর কামুকতাপূর্ণ চিৎকার; এক পুরুষ তার শরীরের নিজের আধিপত্য বিস্তারে ব্যাস্ত।হোটেলের সাদা চাদরে মোড়ানো নরম বিছানায় নিজেদের শারীরিক খায়েশ মেটাতে ব্যাস্ত দুই নর-নারী।সাদা ব্ল্যাংকেটের নিচ থেকে মেয়েটা তৃপ্তি আর সুখের চিৎকার করছে যা তার উপরে থাকা পুরুষকে আরো উন্মাদ করে তুলছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর এক অদ্ভুত কাঁপুনি দিয়ে মেয়েটার নগ্ন বুকের উপর শুয়ে পরলো পুরুষটি।মেয়েটা চোখে মুখে তখন তৃপ্তির হাসি।চোখ বন্ধ করে পুরুষটির চুলের ভাজে হাত ডুবিয়ে ম্যাসাজ করতে লাগলো মেয়েটি।

-“রেজওয়ান?ভোর হতে চললো।তোমার বউ অপেক্ষা করবেনা?”

রেজওয়ান উত্তর করেনা;টিনার অনাবৃত বুকে নিজের নাক ঘষতে ঘষতে ঠোঁট দাবায়।টিনা শিউরে ওঠে;দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজের মুঠোয় থাকা রেজওয়ানের চুলগুলো টেনে ধরে সে।

টিনা একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী,রেজওয়ান হক তার প্রেমিক।প্রেমিক বললে ভুল হবে, এক হিসেবে রেজওয়ান তার মনিব আর টিনা তার রুক্ষিতা।ইউনিভার্সিটির এক ইভেন্টে রেজওনের সাথে দেখা হয়েছিলো টিনার।টিনার লাস্যময়ী লুকে ফিদা হয় রেজওয়ান।নারী দেহের লোভ তার বরাবরই ছিলো,তবে টিনাকে দেখে তার অন্যরকম লেগেছিলো।প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসলো রেজওয়ান টিনাকে।টিনা শুরুতে রাজি হয়নি,তবে ধীরে ধীরে সেও রেজওয়ানের প্রেমে পড়ে।প্রেমের এক মাসের মাথায় ডিনারের নাম করে টিনাকে ফ্লোরিশে নিয়ে আসে রেজওয়ান।সদ্য শহরে আসা টিনা জানতো না এই শহরের চাকচিক্যের আড়ালে থাকা ভয়াল রূপ।সেদিন রেজওয়ান টিনার কাছে আবদার করে বসে তাকে কাছে পাওয়ার।টিনা প্রথমে না করলেও রেজওয়ানের কথায় আর না করতে পারেনা।
সেদিন নিজের একুশ বছরের জমিয়ে রাখা সতীত্ব টিনা তুলে দেয় রেজওয়ানের হাতে।নিজের প্রেমিককে সপে দেয় নিজের সবটা।কিন্তু টিনা জানতো না রেজওয়ান বিবাহিত।

আজ দ্বিতীয় বারের মতো টিনা আর রেজওয়ান মিলিত হয়েছে।কিন্তু আর রেজওয়ান না টিনা ডেকেছে রেজওয়ানকে ফ্লোরিশে।

রেজওয়ানের হাতের এলোমেলো অথচ দৃঢ় আধিপত্য মূলক ছোঁয়ায় টিনা আবারো উন্মাদ হয়ে ওঠে।নিজের থেকেই আবারো কাছে টেনে নেয় রেজওয়ানকে।আবারো দু’জনে লিপ্ত হয় এক অবৈধ সম্পর্কের কামনার খেলায়।

এমন সময় পুরুষালী কণ্ঠের ডাকে রেজওয়ান ঘাবড়ে গিয়ে মাথা তুলে তাকায়।টিনা তড়িঘড়ি করে ব্ল্যাংকেট টেনে নিজেকে ঢেকে নেয়।রেজওয়ান নিজের কোমরে একটা তোয়ালে পেঁচিয়ে উঠে দাঁড়ায়।

-“কে রে তুই?আমার রুমে ঢুকলি কি করে?” রাগান্বিত কণ্ঠে বলে ওঠে রেজওয়ান।

সামনে থাকা ছাঁয়া-মানবটি উত্তর করেনা।নিজের হাতে থাকা রিভলভার টা চেক করে নেয় ফুল লোডেড কিনা।
অত:পর বলে,
-“তোর এই থ্রি-ডি প* ভিডিও দেখার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।আমার কাজ করেই চলে যাবো।”

-“তোর এখানে কি কাজ?বাইরে যা,দরকার হলে বাইরে গিয়ে কথা বলবো।”।

-“চুপ!একদম চুপ।আমাকে অর্ডার করিস তুই?স্ক্রাউনডেল,ব্লাডি মা*দফা*র তোর সাহস কি করে হয় আমার প্রাণের দিকে নজর দিস তুই?” বলেই লোকটা রেজওয়ানের নাক বরাবর এক প্রবল ঘুষি মারে।রেজওয়ানের নাক ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে।

লোকটা এবার রিভলভার টা নিয়ে রেজওয়ানের মুখে পুরে দেয়।

-“আমার প্রাণকে নিয়ে এই মুখেই নোংরা শব্দচয়ন করেছিলি না?শ্যুট করে দেই?”

রেজওয়ান কথা বলতে পারছে না।শুধু গোঙ্গানি দিচ্ছে।

লোকটা রেজওয়ানের মুখ থেকে রিভলভার টা বের করলো।অত:পর নিজের পকেট থেকে একটা ধারালো ছুড়ি বের করে রেজওয়ানের জিহ্বা টা মাঝ বরাবর চালিয়ে দিলো।

রেজওয়ান গলা কাটা মুরগির ন্যায় ছটফট করতে করতে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো।বিলাসবহুল হোটেলের মেঝেটায় লাল রঙা স্রোত প্রবাহিত হতে লাগলো।

রেজওয়ানকে এমন শাস্তি দিয়ে ক্ষ্যান্ত হলো না লোকটা।রেজওয়ানের কপালের মাঝ বরাবর পর পর তিনটা বুলেট দিয়ে শ্যুট করলো।অত:পর রেজওয়ানের গোপনাঙ্গ কেটে ফেলে রাখলো পাশে।

-“সন অফ আ বি*চ।আমার প্রাণের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালেও ওর চোখ আমি উপড়ে ফেলবো, সেখানে তুই ওকে নিয়ে নোংরা কথা বলেছিস।বাস্টার্ড।”

টিনার ওদিকে প্রাণ যায়যায় অবস্থা।চোখের সামনে এমন করুণ পরিনতি দেখে ভয়ে নীল হয়ে গেছে সে।

সামনের লোকটা এক হাঁটু গেড়ে রেজওয়ানের সামনে বসলো।রেজওয়ানের মাথায় তখন তিনটা বুলেটের অস্তিত্ব স্পষ্ট। নিজের হাতের ছুড়িটা রেজওয়ানের চোখ বরাবর ঢুকিয়ে দিয়ে মোচড়াতে থাকলো লোকটা।এ এক বিভৎস দৃশ্য!রেজওয়ানের চোখ দুটোয় বারংবার আঘাত করে লোকটা সোজা হয়ে দাঁড়ালো।

তখনই রুমে ঢুকলো কালো পোশাক পরিহিত কয়েকজন গার্ড।

-“ডু এভ্রিথিং এক্রডিং টু প্ল্যান।” বলেই লোকটা চলে গেলো।

গার্ডগুলো বিছানায় চেয়ে দেখলো টিনা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।তারা রেজওয়ানের লাশটা নিয়ে বিছানায় রেখে দিলো।লাশের পাশেই পড়ে থাকা ছুড়িটা মুছে টিনার হাতে ধরিয়ে দিলো;যেই রিভলভার দিয়ে শ্যুট করা হয়েছিলো সেটায় টিনার হাতের ছাপ রেখে পাশে ফেলে রাখলো তারা।তাদের মধ্যে একজন কল করলো পুলিশে।অন্যজন টিনার চোখে-মুখে পানির ছিটে দিয়ে দিলো।টিনার জ্ঞান ফিরছে দেখে তারা প্রস্থান করলো রুম থেকে।

ফুল স্পিডে কার ড্রাইভ করছে এক যুবক।একটু আগে নির্মম ভাবে হত্যা করা লোকটার গা থেকে ছিটে রক্ত এখনো সাফেদ শার্টে লেগে আছে।গাড়িটা এসে থামলো শুনশান এক নদীর পাড়ে।গাড়ির থেকে নেমে সিগারেট ধরালো সেই যুবক;চেহারায় এখনো সেই হিংস্রতা বিদ্যমান।নিজের ফোনটা হাতে নিতেই লকস্ক্রিন ওয়ালপেপারে ভেসে উঠলো গোলগাল মুখের এক মেয়ের হাস্যোজ্জল ছবি।

-“কি করে এমন যাদু করলি তুই আমার উপর?বল দেখি প্রাণ!এইযে আমার দাবানলের ন্যায় জ্বলতে থাকা হৃদয় আর উত্তপ্ত অগ্নিকুণ্ডের ন্যায় মস্তিস্কে এক লহমায় শীতলতা নেমে এলো তোকে দেখে!ওই বাস্টার্ড টাকে মেরে দিয়েছি প্রাণ।তোর দিকে কু-দৃষ্টি দিয়েছিলো না?মেরে দিয়েছি আমি।তুই আমার প্রাণ;শুধুই আমার।তোর দিকে কেউ তাকালে তার পরিণতি এমন ভয়াবহ ই হবে।”

পকেট থেকে একটা পাসপোর্ট সাইজের ছবি বের করলো যুবকটি।

-“জানো মা?আজ একটা খুন করে এসেছি।ওই লোকের সাথে একটা মেয়েও ছিলো।ওই মেয়েটাও জেনেশুনে পরকিয়া করছিলো মা!তোমার ঘরটা যেমন এক বাইরের রুক্ষিতা ভেঙ্গে দিয়েছিলো ঠিক সেভাবে ওই মেয়েটাও একটা মেয়ের ঘর ভেঙ্গেছিলো মা।তাই ওকে আমি খুনের অপরাধে অপরাধী সাজিয়ে এসেছি। সকালে হয়তো পুরাও নিউজ মিডিয়ায় খবর ছড়াবে রেজওয়ানুল করিমকে তার অবৈধ সম্পর্কের প্রেমিকা খুন করেছে।”

বলেই ছবিটা পকেটা পুরে সিগারেটে সুখ টান দিতে লাগলো যুবকটি।সিগারেটটা শেষ হতেই গাড়িতে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো সে।

কাজি অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সঞ্চারী আর সাহিল।নীদ্ররা এখনো এসে পৌঁছায়নি।সাহিল গাড়ি থেকে নামার পর এক মূহুর্তের জন্যও সঞ্চারীর হাত ছাড়েনি।

অন্যদিকে সঞ্চারী ভীষণ নার্ভাস ফিল করছে।কপালে চিকন ঘামের রেখা দেখা দিচ্ছে।মন অজানা শঙ্কায় বারংবার কেঁপে উঠছে।সে সাহিলের হাতটা আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরে বড় দু’টো শ্বাস ফেললো।

-“ফার্স্ট নাইটের কথা ভেবে ভয় পাচ্ছো নিরু?ডোন্ট ওয়ারি আই উইল ট্রিট ইয়্যু সফটলি।আই ওন্ট বি ডেস্পারেট।” সঞ্চারীর মুখের দিকে এগিয়ে কপালের ঘাম মুছে দিতে দিতে বললো সাহিল।

এতোটা কাছে আসার দরুণ সাহিলের উষ্ণ নিঃশ্বাস সঞ্চারীর গালে লাগছে।লজ্জায় সঞ্চারী চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো।

সঞ্চারীর এহেন কাণ্ডে সাহিল বেশ মজা পেল।সে সঞ্চারীর কানের কাছে নিজের মুখটা নিয়ে হাস্কি স্বরে বললো,

-“ইম্যাজিন করা অফ করো বউ।আই উইল পারফর্ম ফার বেটার দ্যান ইয়্যুর ইম্যাজিনেশান!প্রমিস।”

কথাটুকু বলে সঞ্চারীর কানের লতিতে ভেজা চুমু খেয়ে সরে আসে সাহিল।সঞ্চারী কিছু বলার আগেই নীদ্ররা সবাই চলে আসে।সবাইকে দেখে সঞ্চারী দমে যায় আর মনে মনে ভাবে এর জবাব বাড়ি গিয়ে দেবে সে।

কাজি অফিসের ভিতরে ঢুকতেই নজরে এলো চারজন কালো পোশাক পরিহিত গার্ড।একজন কাজির পাশে দাঁড়িয়ে আছে আর বেচারা কাজির ঘুমের ঝিমটি এলেই মুখে পানির ছিটে দিচ্ছে।বাকিরা রুমের বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে আছে।

সাহিল সঞ্চারীর হাতটা ধরে কাজির ডেস্ক এর সামনে রাখা চেয়ারে বসালো;নিজেও বসলো পাশের চেয়ারটায়।

-“বাবা,জলদি তোমাদের ভোটার আইডি কার্ড দাও আমি সব রেডি করি।এতো রাতেও কারো বিয়ের শখ জাগে!”

কাজির কথায় সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।সাহিল নিজের মানিব্যাগ থেকে জাতীয় পরিচয় পত্রটা কাজিকে দিলো।সাহিলের সব ডিটেইলস লেখার পর কাজি সঞ্চারীর ডকুমেন্ট চাইলে সবাই পড়ে বিপাকে।সঞ্চারীর এখনো জাতীয় পরিচয় পত্র হয়নি আর জন্মনিবন্ধন ও কাছে নেই।

-“আমি সবটা বলছি,আপনি লিখুন।”
সাহিলের কথায় কাজি মাথা নাড়িয়ে লিখতে শুরু করলো।

-“নাম- সঞ্চারী শিকদার,পিতা-ওয়াসির শিকদার, মাতা-মরহুমা মেহেরিন সুলতানা। জন্ম তারিখ-১৫ অক্টোবর,২০০৫।”

-“দেনমোহর কত লিখবো বাবা?”

কাজির কথায় সাহিল একবার সঞ্চারীর দিকে তাকায়।সঞ্চারী তখন কাজির লিখতে থাকা কাগজের দিকে তাকিয়ে আছে।

-“দশ লিখুন।”

-“কিরে ভাই?তুই অলমোস্ট এক কোটির গাড়ি চালাস আর বউকে মাত্র দশ টাকা দিবি?এগুলা কেমন ছোটলোকি!”

নীদ্রর কথায় কপাল কুচকায় সাহিল।

-“দশ কোটি লিখুন।আমার সমস্ত ব্যবসার ৭০% শেয়ার আর আমার কবরের জন্য কিনে রাখা জমিটুকুও আমার বউয়ের দেনমোহর হিসেবে লিখুন।”

কাজি অবাক হয়,তবে দ্রুত হাত চালিয়ে সবটা লিখে ফেলে।

অত:পর কাজি সাহেব দোয়া পড়ে বিয়ে পড়ানো শুরু করেন।

“কন্যা,সঞ্চারী শিকদার;পিতা ওয়াসির শিকদার ও মাতা মরহুমা মেহেরিন সুলতানা। আজহার পাটোয়ারি ও মাতা সাম্মি পাটোয়ারির জ্যেষ্ঠ পুত্র সাহিল পাটোয়ারির সহিত
দশ কোটি টাকা নগদ অর্থ, তার ব্যবসার ৭০% শেয়ার এবং তাকে করবস্থ করার জন্য ক্রয় করে রাখা জমি মোহরানা ধার্য করিয়া আপনার সহিত বিবাহ দেওয়া হইলো।আপনি কি এই বিবাহ কবুক করিলেন?”

সঞ্চারী রীতিমত কাঁপছে;ঘাম ছুটে গেছে মেয়েটার।সাহিলের হাতটা শক্ত করে ধরে চোখ জোড়া বন্ধ করে আছে সে।

-“টেক আ ডিপ ব্রিথ সঞ্চারী।রিল্যাক্স,আস্তে ধীরে বলো কোনো তাড়া নেই।”

সাহিলের কথায় সঞ্চারী চোখ মেলে তাকায়।চোখজোড়া অশ্রুতে সজল হয়ে উঠেছে।

-“আমার মা নেই সাহিল,বাবা আমাকে ছোট থেকে বড় করেছে।আজ তাকে ছাড়াই জীবনের এতো বড় একটা ডিসিশন নিচ্ছি আমি!আল্লাহ আমায় মাফ করবেন তো?”

-“কিচ্ছু হবেনা সঞ্চারী।আমি সব সামলে নিব,আই প্রমিসড ইয়্যু নো?”

সঞ্চারী মাথা নাড়ায়, অত:পর সামনে ফিরে একটা লম্ভা শ্বাস নিয়ে বলে ওঠে,

“কবুল।”

“কবুল।”

“আলহামদুলিল্লাহ কবুল।”

কাজি সাহেব এবার সাহিলের কাছে যান।

“বর,সাহিল পাটোয়ারি।পিতা আজহার পাটোয়ারি ও মাতা সাম্মি পাটোয়ারি।ওয়াসির শিকদার ও মরহুমা মেহেরিন সুলতানার একমাত্র কন্যা সঞ্চারী শিকদারের সহিত দশ কোটি টাকা নগদ অর্থ, আপনার ব্যবসার ৭০% শেয়ার এবং আপনাকে করবস্থ করার জন্য ক্রয় করে রাখা জমি মোহরানা ধার্য করিয়া আপনার সহিত বিবাহ দেওয়া হইলো।আপনি কি এই বিবাহ কবুক করিলেন?”

সাহিল সময় নিলো না,দ্রুতই বলে উঠলো-

“কবুল, কবুল, আলহামদুলিল্লাহ কবুল”

সাহিলের কবুল বলা শেষ হল সবাই আলহামদুলিল্লাহ পড়লো।সাহিলের বিয়ের সাক্ষী হলো নীদ্র,জান্নাতি,রুমি আর হাবিব।

কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শেষে মোনাজাত করে নব দম্পতির জন্য দোয়া চাইলেন।

-“এবার আমায় দিয়ে এসো বাবা।ঘুমে ঢলে পড়ে যাচ্ছি। রাত দু’টোর সময় আমাহ ঘর থেকে চ্যাঙদোলা করে নিয়ে এসেছে এই দানবীয় আকৃতির লোকগুলা।কি খায় এরা কে জানে!মোষের মতো শক্তি শরীরে।”

কাজি সাহেবের কথায় সঞ্চারী মুখ টিপে হেসে উঠলো আর বাকিরা শব্দ করেই হেসে উঠলো।

সাহিল তাকয়ে দেখলো তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে।এই শাড়িটা আর গয়নাগুলো সাহিলের মায়ের বিয়ের সময়কার।তিনি সাহিলকে বলেছিলেন সাহিলের বউকে তিনি এই শাড়িটা পড়িয়েই বরণ করবেন।সাহিল তাই মায়ের ইচ্ছেতেই নিজের বউকে এই শাড়িতে সাজিয়ে তুলেছে।

সাহিল সঞ্চারীর হাতটা ধরে সামনে এনে কপালে গাঢ় এক চুমু খায়।

-“ওয়েলকাম টু মাই লাইফ মিসেস সাহিল পাটোয়ারি ; মাই ওয়াইফি।” বলেই সঞ্চারীর নাকের উপর ছোট্ট করে চুমু খায় সাহিল।

সঞ্চারী সাহিলের হাতটা ধরে বলে ওঠে,
-“ওয়েলকাম এগেইন টু মাই হার্ট মিস্টার সাহিল পাটোয়ারি;মাই হাসবেন্ড।”

চলবে…