#আমার_স্নিগ্ধপরী
#পর্ব_৩
#লেখা: #নীল_মালতীলতা
কপি নিষিদ্ধ ❌❌❌
স্নিগ্ধা যখন ফাইয়াজের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে বির বির করে নিজে নিজে কথা বলছিল তখনই শেষ শুনতে পেলো পেছন থেকে কেউ খুবই রুক্ষ ভাষায় ঝাঁঝালো কন্ঠে তাকে বলছে,,,
এই মেয়ে কে তুমি?? আমার রুমে কি করছ?? তোমার সাহস তো কম নয়?? কার অনুমতি নিয়ে তুমি আমার রুমে প্রবেশ করেছ??
এমন কথা শুনে কন্ঠটা কার হতে পারে সেটা বুঝতে একটুও সময় লাগলো না স্নিগ্ধার,, স্নিগ্ধার ভেতরে একটা শিহরণ বয়ে গেল,, স্নিগ্ধা একটা লং হিজাব পড়ে নামাজ পড়েছিল, হিজাবটা সম্পূর্ণ পা পর্যন্ত ঢেকে যায়। নামাজ পড়ার পর আর সেই হিজাব খোলা হয়নি। এখনো তো ভোরের আলো ওভাবে ফুটেনি। দরজা দিয়ে ঢুকলেই তার পেছনের দিকটা দেখা যায়,, মুখটা দেখা যাচ্ছে না,, তাই ফাইয়াজ মুখটা দেখেনি, অবশ্য দেখলেও জানতো না যে এটাই তার বউ,, সেই শুরু থেকে বিয়ে পর্যন্ত একবারও স্নিগ্ধার মুখটাই দেখেনি আর না ছবি দেখেছে।
এই মেয়ে কথা বলছো না কেন?? কে তুমি? আবার চিৎকার করে কথাটা বলল ফাইয়াজ।
এতে স্নিগ্ধা খানিকটা কেঁপে উঠলো, একটুখানি ঘাবড়ালোও বটে,, পরক্ষণেই আবার নিজেকে সামলে নিল। কিন্তু কি বলবে তা বোঝতে পারল না। পিছনে দাঁড়ানো মানুষটা তার স্বামী। বিয়েরও আজ সাত দিন পেরিয়ে আটে পড়লো, অথচ তারা এখনো পর্যন্ত একে অপরের কাছে সালাম বিনিময়ও করেনি। লোকটার হয়তো মনে নেই সে সাত দিন আগে কারো নামের সাথে কবুল বলেছে,, এসব ভাবতে ভাবতে আবারো শুনতে পেলো সেই ঝড়ঝালো কণ্ঠস্বর,,,
মা, মা, আম্মুুুুুুুু,,
ফারজানা তালুকদার ছুটে এনে ছেলের চিৎকার শুনে,,
কি হলো এভাবে চেঁচাচ্ছিস কেন?? আর তুই এসেছিস বা কখন??
তার আগে বল আমার ঘরে এই মেয়ে কে?? কার অনুমতি নিয়ে আমার ঘরে ঢুকেছে?? তুমি জানো না আমার ঘরে বাইরের কারো ঢোকা নিষেধ?
ফারজানা তালুকদার রাগ নিয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
ভদ্রভাবে কথা বল,, আর ও বাইরের কেউ হতে যাবে কেন? সে তোমার বিয়ে করা বউ, সম্মান দিয়ে কথা বলো তাকে,
ফাইয়াজের যেনো অবাক হওয়ার মাত্রা ছাড়িয়ে গেল,, মানে,, সিরিয়াসলি আম্মু,, সেই গাইয়া আনস্মার্ট ক্ষেত মেয়েটা আমার ঘরে?? হাহ আমিও আর কি বলি, গ্রামের গাইয়া ক্ষেত মেয়েদের আবার মানসম্মান আছে নাকি? নাহলে যার স্বামী মাঝপথে ফেলে রেখে যায় সে আবার সেই স্বামীরই ঘরে থাকে, নির্লজ্জ কোথাকার। লজ্জা থাকলে সে আর এই রুম তো দূরের কথায় বাড়িতেই আসতো না। আমি তো ভেবেছিলাম সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে কিন্তু দেখছি না, নির্লজ্জ যথারীতি আমার ঘাড়ে চেপে বসার পায়তারা করছে,,
কথাগুলো এতটাই তাচ্ছিল্যপুর্ন শোনানো যে,,, স্নিগ্ধার চোখে আপনা আপনি পানি চলে এলো। বুক ভার হয়ে এলো, অভিমানটা যেন আকাশ ছুঁলো,, সে কি এতটাই ফেলনা যে তার সদ্য বিয়ে করার স্বামীর এতটা তাচ্ছিল্যের শিকার। অথচ তাদের দেখাই হয়নি। এতটা অহংকারে ভরা ওই লোক?? এর পতন তো হবেই আপনার মিস্টার ফাইয়াজ তালুকদার।
ফারজানা তালুকদার যেন তার মুখের ভাষা হারিয়ে ফেললেন,, এ তিনি কাকে দেখছেন,, এটাই কি তার ছেলে?? এ কেমন ব্যবহার তার??
এসব তুমি কি বলছো ফাইয়াজ?? সে তোমার স্ত্রী,, সবচেয়ে আপন তুমি তাকে,,,
রাখো তোমার নীতি কথা, সবচেয়ে আপন,, আমি বাড়িতে ছিলাম না ভালোই ছিলে তোমরা এই মেয়েকে নিয়ে, তাহলে তাই থাকো আমার তো এখানে কোন প্রয়োজন নেই, আমি বরং এই বাড়ি ছেড়ে দেই,,
তার কোন প্রয়োজন নেই,, হঠাৎ স্নিগ্ধার কথায় মা ছেলে দুজনেই তার দিকে তাকায়,, স্নিগ্ধা এখনো উল্টো ঘুরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে আসলে ফাইয়াজের কথাগুলো শুনে যেন সে পাথর হয়ে গেছে , আজ পর্যন্ত এতটা অপমান তাকে কেউ করেনি।
মা স্নিগ্ধা তুই,,
আম্মু প্লিজ আমি তোমার মেয়ে,, তাই নিশ্চয়ই এই বাড়িতে আমার জন্য একটা রুমের ব্যবস্থা হয়ে যাবে? আমিও এখানে থাকতে চাই না,,
স্নিগ্ধা চাইলেই এখান থেকে চলে যাওয়ার কথা বলতে পারত,, কিংবা নিজের বাবা মাকে সবটা জানাতে পারতো,, কিন্তু সে সেটা করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিল,,
ফাইয়াজ বিরক্তি সহকারে অসহ্য কথাটা উচ্চারণ করে গট গট পায়ে ওয়াশ রুমের ভেতরে ঢুকে গেল,,
ফারজানা তালুকদার এগিয়ে গেলেন স্নিগ্ধার দিকে হাত রাখলেন কাঁধে,, খুব কষ্ট পেয়েছিস তাই না মা?? ক্ষমা করে দে,,
স্নিগ্ধা এবার পেছনে ঘুরে ফারজানা তালুকদারের দুই হাত ধরে বলল,, আম্মু আমি না তোমার মেয়ে,, তাহলে ওই খাটাশের কথায় কিচ্ছু আসবে যাবে না,,
আমাকে বোঝাতে এসোনা মেয়ে,, স্বামীর থেকে এমন অপমান কোন মেয়ে মানতে পারেনা। তবে আমার বিশ্বাস তোর এই চাঁদ মুখটা দেখলে সে এই দিনগুলোর জন্য বড় আফসোস করবে,,
স্নিগ্ধা এব্যাপারে আর কিছুই বলল না,, মুচকি হেসে বলল,, আমি বরং এর আগের বার যে রুমটায় থেকে ছিলাম ওখানে চলে যাচ্ছি,, আমি জানি তো তোমার ওই গরু মার্কা ছেলে আমাকে এখানে এলাও করবে না তাই আমার লাগেজপত্র সব গোছানোই আছে আমি ওখানেই চলে যাচ্ছি।
ফারজানা তালুকদার ছেলের এমন সম্বোধন শুনে হেসে ফেললেন,, আমার ছেলেটা আসলেই একটা গরু, ঠিক আছে তুই ওই রুমেই থাকবি আমার মেয়ের জন্য রুমের কোন অভাব পড়বে না ,, চোখ দেখে তো মনে হচ্ছে রাতে একটুও ঘুমাতে পারিস নি,,
স্নিগ্ধা লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,, তা আর বলতে?? আজ আমি আমার স্বপ্নের রাজ্যে যাব। ঘুম কি আর ধরা দেয় আমার চোখে বলতো?
ফারজানা তালুকদারও স্নিগ্ধার পিছনে বেরিয়ে যেতে যেতে বলেন ,, তাইতো মা আমার কত বড় স্বপ্নের পথে হাঁটছে, তবুও এখন একটু ঘুমিয়ে নে এখনো তো অনেকটা সময় বাকি আর ভার্সিটি তো খুব একটা দূরেও নয়,,
একেবারে তো কাছেও নয় আম্মু,,
আমি বরং ফাইয়াজকে বলবো তোকে নিয়ে যেতে ও তো ওখানেই পড়ে,,
ফাইয়াজ যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত সেটা স্নিগ্ধা আগেই শুনেছে,, তোমার ছেলে আমাকে অপমান করলে তোমার খুব ভালো লাগে তাই না??
ফারজানা তালুকদার এমন কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে থেমে গিয়ে বলেন,, এ তুই কি বলছিস??
তাহলে তুমি কিভাবে বলছো যে তোমার ছেলের সঙ্গে আমি যাব?? শোনো আম্মু আমি এতটাও সস্তা নয় যে এত বড় অপমান সহ্য করেও আমি তারই সঙ্গে কোথাও যাব,, আর তাছাড়াও তোমার ছেলেকে বললে মনে হয় সে আমাকে নাচতে নাচতে নিয়ে চলে যাবে।
ফারজানা তালুকদার গম্ভীর হয়ে বললেন, আমি তোমার শাশুড়ি হই, আর যার কথা বলছ সে কিন্তু আমারই ছেলে,,
ওমা তাই নাকি?? তা কে যেন বলল তার মেয়ের খুব শখ আমি তার মেয়ে?? আসলে সব শাশুড়িরাই এক এসব বলতে বলতে স্নিগ্ধা নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেল।
ফারজানা তালুকদার পেছনে দাঁড়িয়ে শব্দ করে হেসে ফেললেন,, স্নিগ্ধাকে শুনিয়ে বললেন আমি মজা করছিলাম আমার মায়ের সাথে,,,,
চলবে????