আমার স্নিগ্ধপরী পর্ব-০৫

0
1

#আমার_স্নিগ্ধপরী
#পর্ব_৫
#লেখা: #নীল_মালতীলতা

কপি নিষিদ্ধ ❌❌❌

হে তো আমনেরই বিয়া করা বউ আব্বা,, ফাইয়াজ কেবল পানিটা মুখে নিয়েছিল গিলবে বলে, এর মধ্যেই আসমা বেগমের কথায় তার কাশি উঠে গেল, আর তার মুখের সমস্ত পানি গিয়ে পড়ল স্নিগ্ধার চোখে মুখে,,,,

ঘটনাটা এত তাড়াতাড়ি ঘটল যে,, সবার মুখের কথাই গায়েব হয়ে গেল। আজকে শুধু অবাক হওয়ার দিন। সকাল থেকে প্রত্যেকটা ঘটনাই অপ্রত্যাশিত ঘটেই চলেছে। সকালবেলায় ছেলেটা বাড়িতে এলো,, এসেই বউটাকে ঘর থেকে বের করে দিল, এখন আবার সেই বউ কেই চিনতে পারল না। ছেলেযে বউকে দেখে ছোটখাট একটা শখ খেয়েছে তা ফারজানা তালুকদার ছেলের দিকে তাকিয়ে ঢের বুঝতে পেরেছেন। ফজলুল তালুকদার যে কিছু বোঝেননি এমনটাও কিন্তু নয়,, দেশের নামকরা একজন সফল ব্যবসায়ী সে তো আর বোকা নয়, সবাই মনে মনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে,, তবে কেউ শব্দ করছে না,, কারণ তা তাদের ব্যক্তিত্বের সাথে এই মুহূর্তে যায় না,,

ফজলুল তালুকদার নিজেকে যথেষ্ট গম্ভীর রেখে রাগি সরে ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,,

এই কথা শুনে এমন বেষম যাওয়ার কি হল?? নাকি তুমি যে বিয়ে করেছ সেটাই ভুলে গেছো?? অবশ্য তোমার মত অপদার্থ আহাম্মক ছেলের দ্বারা সবকিছুই সম্ভব।

আব্বু কি সব বলছ??

কি বলব?? দিলেতো তুমি মেয়েটাকে নোংরা করে,,

স্নিগ্ধা ফজলুল তালুকদারের কথাগুলো শুনে মনে মনে হাসছিল আর অপেক্ষা করছিল সে কখন একটু কথা বলার সুযোগ পাবে,, অবশেষে সে সেই সুযোগটা পেয়ে সাথেসাথেই লুফে নিয়ে,, কাঁদো কাঁদো সরে ফজলুল তালুকদারের দিকে তাকিয়ে বলল,,, আব্বু তোমার ছেলেটা কি নোংরা, ছি, ইয়াক,, মনে হয় সকালে ব্রাশ করেনি,, দেখো না পানিটায় কি বিচ্ছিরি গন্ধ ইয়াক 🤧

সদ্য ক্রাশ খাওয়া রমনীর মুখ থেকে এমন কথা শুনে আহাম্মক বনে গেল ফাইয়াজ,,

আসমা বেগম আর ফারজানা তালুকদার এবার শব্দ করেই হেসে উঠলেন,,

স্নিগ্ধা আহ্লাদের সুরে বলল,, আম্মু তুমি হাসছো, দেখো আমার মুখ থেকেও এখন গন্ধ আসছে ছি ইয়াক, আমি কিছু খাবই না আর বলে উঠে যাওয়ার ভান করল,, আড় চোখে একবার অবশ্য ফাইয়াজের মুখটাও দেখে নিল বেশ জব্দ করা গেছে,,

ফারজানা তালুকদার স্নিগ্ধাকে আটকে দিয়ে বললেন,, ওমা খাবি না একি কথা,, মুখটা ধুয়ে তারপর খেয়ে নে,, প্রথম দিন ভার্সিটি যাবি, একদম খেয়ে পরিপাটি হয়ে তবেই যাবি,,

দেখোনা আমার শরীর থেকে ও কেমন দুর্গন্ধ আসছে এখন আমার আবার শাওয়ার নিয়ে তবেই যেতে হবে,,

ফাইয়াজ একপ্রকার স্তব্ধ হয়েই এতক্ষন স্নিগ্ধাকে দেখছিল আর তার কথাগুলো শুনছিল,, সেতো ভেবেছিল গ্রামের মেয়ে হবে ক্ষ্যাত আনস্মার্ট বোকাসোকা একটা মেয়ে,, যে তার স্ট্যাটাসের সাথে মোটেও যায় না,, (গল্পটা যাদের কাছে ভালো লাগে তারা আমার পেজ Story of Neel Maloti Lota ফলো করে রাখবেন, আর আমার পেজে গিয়ে লাইক কমেন্ট করে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু ) কিন্তু এখন তো পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন,, প্রথম দেখায় হার্টবিট ফাস্ট করে দিলো এই মেয়ে,, আর কথাগুলো দেখো,,, শেষের কথাটা শুনে তার মস্তিষ্ক সজাগ হয়ে গেল,,

বেশ ঝাঝালো কন্ঠে বলতে শুরু করেছিল,, এই মেয়ে,,,

এতোটুকু বলার পর আর একটি শব্দ বলার সুযোগ না দিয়ে স্নিগ্ধা বলল,,

দেখো আম্মু আব্বু আমার গায়ে পানি ফেলে আমাকেই বকা দিচ্ছে,,,

তার জন্য তালুকদার কপাট রাগ দেখিয়ে ছেলেকে বললেন,, কি হচ্ছে ফাইয়াজ? একই তো ভুল করেছো তার ওপর আবার মেয়েটাকে বকা দিচ্ছ??

ফাইয়াজের যেন আজকে শুধুই অবাক হওয়ারই দিন,, আর মা তাকে সামান্য কারণে রাগ দেখাচ্ছে??

মা আমি তো কিছু বলতেই পারলাম না,, সব কিছু তোমরাই বলছো!!

ফজলুল তালুকদার এবার গম্ভীর স্বরে বললেন,, আর একটাও কথা নয় সবাই খাওয়া শুরু করো,, মা স্নিগ্ধা ফ্রেস হয়ে এসো খাওয়া দাওয়া করে আব্বু তোমাকে নিয়ে যাবো

ঠিক আছে আব্বু আমি এখনি আসছি

—————

ফাইয়াজ বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান,, আদর আহ্লাদের তার কোনকালেই কোন শেষ নেই,, তাছাড়াও বন্ধু মহলের সেই হচ্ছে ক্যাপ্টেন,, আর সেই কিনা আজ একটা মেয়ের সামনে এভাবে ছোট হলো,, তাও আবার যে সে মেয়ে নয় যাকে দেখে প্রথমবারই তার হাত বুকের বা পাশে চলে গেল,, উহ,, আবার যখন মনে হলো মেয়েটা তার বিয়ে করা বৌ,, নিজের অজান্তে শরীরে কেমন যেন একটা শীতলতা বয়ে গেল,, বড্ড আফসোস হতে লাগলো কেন সে বিয়ের আগে একবারও ছবি দেখলো না, ছবি দেখেনি সেটাও না হয় ঠিক আছে,, কিন্তু মাঝপথে কেন যে ছেড়ে গেল,, খাবার নড়াচড়া করছে আর এসবই ভাবছে ফাইয়াজ,,

ফারজানা তালুকদার ছেলেকে বেশ লক্ষ্য করছেন,, কি হলো ফাইয়াজ খাচ্ছ না কেন??

আম্মু আমার মুখ থেকে কি আসলেই গন্ধ আসছে??

ছেলের এমন কথা শুনে সবাই মুখ টিপে হাসছে,,

হাসছো কেনো আশ্চর্য! আমাকে কি জোকার মনে হয়??

না তা কেনো,, তুমি এমন একজন যে বিয়ে করেনা করবেনা বলে বিয়ে করেও আবার মাঝ রাস্তায় গাইয়া ক্ষ্যাত বলে বউ ফেলে পালিয়ে গিয়ে আবার তার দিয়েই নির্লজ্জের মত তাকিয়ে থাকো,,

ফাইয়াজ এবার নিজেকে স্বাভাবিক ফর্মে এনে জবাব দেয়,, আমি কি জানতাম নাকি যে আমার বউ এত সুন্দর! বলতে বলতে আবারও সিড়ির দিকে তাকালো,, আর এবারও তার কয়েকটা হার্টবিট মিস করল,, স্নিগ্ধা এক কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে নেমে আসছে,, এক দেখায় এই মেয়ের সবকিছুই তার কাছে এত ভাল লাগছে কেন??? উত্তর খুঁজে পেল না ফাইয়াজ , তবে আর কথা বাড়াতে চাইল না তাই চুপচাপ খাওয়ায় মনোযোগ দিল মঝে মাঝে আড় চোখে স্নিগ্ধাকে পর্যবেক্ষণ করতে ভুলল না,,

স্নিগ্ধাও খাওয়ায় মনোযোগ দিল,, তাকে যে ফাইয়াজ বারবার দেখছে সেটা সে অনুভব করতে পারছে,, বিয়ে হচ্ছে একটা পবিত্র বন্ধন,, বিয়ের আগে স্নিগ্ধা ফাইয়াজের ছবি দেখেছিল,, আর যখন তাদের বিয়ে ঠিক হল,, স্নিগ্ধার চোখে মুখে ছিল হাজারো কল্পনা হাজারো স্বপ্ন, যেটা প্রত্যেকটা মেয়েরই থাকে,, সবকিছু তো ঠিকই ছিল, কিন্তু ফাইয়াজের প্রথম ব্যবহারটাই মনে এক আকাশ সমান অভিমান আর কষ্টের পাহাড় তোলার জন্য যথেষ্ট ছিল,, আর এই এক সপ্তাহে মানুষের কানাঘুষা তো কানে এসেছেই,, তার ওপরে আবার দ্বিতীয় দেখার ব্যবহারটাও ছিল অপ্রত্যাশিত,, সব মিলিয়ে এই অভিমান পাহাড় সমান,, যদিও যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে অভিমান দেখাতে নেই।।

সবার খাওয়া-দাওয়া শেষ হয়েছে প্রায় মিনিট পাঁচেক আগে,, এখন সবাই অবস্থান করছে ড্রইংরুমে,, আর ডাইনিংটা আসমা বেগম পরিষ্কার করছেন,, স্নিগ্ধা ড্রয়িং রুমে অপেক্ষা করছে মূলত ফজলুল তালুকদারের জন্য, তিনি তৈরি হতে গিয়েছেন,,

চলো মা, আমি রেডি,,

হ্যা আব্বু চলো,, আম্মু দোয়া করো প্রথম দিনটা যেনো ভালো কাটে,

ফারজানা তালুকদার স্নিগ্ধার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,, আল্লাহ ভরসা,, বাবা মায়ের সঙ্গে কথা বলেছো??

হ্যা আম্মু কথা বলেছি,,

ফাইয়াজ অনেকক্ষণ থেকেই তাদের লক্ষ্য করছে,, স্নিগ্ধ যে ভার্সিটি যাচ্ছে সেটুকু সে বুঝতে সক্ষম হয়েছে,, কিন্তু কোন ভার্সিটিতে যাচ্ছে সেটা এখনো বুঝতে পারছে না,, ইস সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তার বাবার জায়গায় এখন সে থাকতো আফসোস,,, এখন আর আফসোস করে লাভ নেই যা ভুল করার তা তো করেই ফেলেছি,, এখন সবকিছু ঠিকঠাক করতে হবে আমাকে তবে বহুৎ কাটখড় পোড়াতে হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই,, নিজের ভেতরের অস্থিরতা দমন করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত বলেই ফেলল,,

আমি নিয়ে যাই????

চলবে।