আমার স্নিগ্ধপরী পর্ব-১১

0
7

#আমার_স্নিগ্ধপরী
#পর্ব_১১
#লেখা: #নীল_মালতীলতা

কপি নিষিদ্ধ ❌❌❌
প্রাপ্ত মনস্কদের জন্য উন্মুক্ত 🚫🚫🚫

স্নিগ্ধাও আকস্মিক হতভম্ব হয়ে গেলো, তার সামনে একগুচ্ছ গোলাপ হাতে হাটু মুরে বসা এক যুবককে দেখে,,,,,

প্রথম যেদিন স্নিগ্ধা ভার্সিটি পা রেখেছিল সেদিনই এই ছেলের সাথে দেখা হয়েছিল। চোখের সানগ্লাসটা খুলতে খুলতে স্নিগ্ধার নামটা জিজ্ঞেস করেছিল। স্নিগ্ধাও ভদ্র মেয়ের মত নামটা বলেই পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছিল। এরপর থেকে এই কটা দিন তো স্নিগ্ধার আগ পিছে বেশ ঘোরাঘুরি করেছে। দু একটা কথা বলতে চেয়েছে তবে স্নিগ্ধা বরাবরই ইগনোর করেছে। আর আজ তো একেবারে সীমালংঘন করে ফেলল।

আই লাভ ইউ স্নিগ্ধা,,

স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে তাকালো ছেলেটার দিকে, কত সহজ তিনটা শব্দ বলে দিল, কেন শব্দ তিনটা বললেই ভালোবাসাবাসী হয়ে যায়, ভালোবাসা কি এত সহজ নাকি? অদ্ভুত!

ফাইয়াজ ততক্ষণে একপা একপা করে এগিয়ে আসছে, শব্দ তিনটা সেও শুনেছে,, তার বউকে এখনো সে নিজেই এই তিন শব্দ বলতে পারেনি, আর কোথাকার কোন শয়তানের নাতি এসে বলে দিল? যে মুখ দিয়ে এই শব্দগুলো উচ্চারণ হয়েছে সেই মুখ ফাইয়াজ আস্ত রাখবে না বলে ভেবে নিল,,

স্নিগ্ধাকে কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ছেলেটা আর অপেক্ষা করলো না, সোজা হয়ে দাড়িয়ে আচমকাই স্নিগ্ধার হাতটা ধরল,,

যা ফাইয়াজকে চূড়ান্ত পর্যায়ে রাগিয়ে দিতে সক্ষম,,

আশে পাশে কেউ কেউ মজার কোন সিন হবে ভেবে ভীর জমায় দেখার জন্য,, তো আবার কেউ কেউ এক পলক দেখে নিজের কাজে চলে যাচ্ছে আর ভাবছে আজকালকার যুগে এগুলো নরমাল,

ফাইয়াজ আর এক মুহূর্ত দেরি না করে এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিলো স্নিগ্ধার হাতটা, এতে স্নিগ্ধা খানিকটা ব্যথাও পেল, ফাইয়াজের চোখের দিকে তাকিয়ে স্নিগ্ধা আৎকে উঠলো,,
এর আগে স্নিগ্ধা কখনো ফাইয়াজের এমন রুপ দেখেনি,

ফাইয়াজ ছেলেটার কলার ধরে মুখ বরাবর একটা ঘুসি মেরে দিল, মুখ ফেটে খানিকটা রক্ত বেরোলো। আরো মারার জন্য হাত উঠাতে স্নিগ্ধা ফাইয়াজকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে হাতটা টেনে ধরল, যা ফাইয়াজকে সম্পূর্ণ নিরব করে দিতে সক্ষম।

আশেপাশে যারা ফাইয়াজকে চিনে তারাতো অবাক, ফাইয়াজ ও রাহাত দুই বন্ধুকে কখনো কোনো মেয়েজনিত কারবারে দেখা যায় নি। হয়তো ক্লাসে বা বাইরে দুয়েক ক্লাসমেটদের সাথে পড়া বিষয়ক কথা হয়ে থাকে। কিন্তু তাই বলে কোনো মেয়েকে কোনো ছেলে প্রপোজ করলে সেখানে তেড়ে যাওয়ার মত ছেলেতো ফাইয়াজ নয়। এগুলো অহরহ হয় কখনো ফাইয়াজকে এসবে দেখা যায় নি,, তবে এ মেয়ে এমন কে যে ফাইয়াজ এতটা রেগে গেলো?

ফাইয়াজ সুদর্শন ছেলে, তার ভার্সিটি জীবন শেষ পর্যায়, আর এই যুগে এসে যে প্রেমের প্রস্তাব পায়নি এমনটা মোটেও নয়। পেয়েছে বহু প্রপোজাল,, তবে সে বরাবরই এড়িয়ে চলেছে বিষয়গুলো। সেই রমনীদের মধ্যেও কেউ কেউ ঘটনাটির সাক্ষী,, সাথে একটু ঈর্ষান্বিতও বটে,,

ছেলেটা নিজেকে সামলে যখন দেখলো ফাইয়াজ থেমে গেছে তখন সে আর থেমে থাকলো না সেও তেড়ে গেল ফাইয়াজের দিকে, ছেলেটা ফাইয়াজের জুনিয়র, হয়তো কোনো বড়লোক বাবার বখে যাওয়া ছেলে ,, ফাইয়াজকে ধাক্কা দিয়ে আবারো স্নিগ্ধার দিকে এগোতে নেয়,, এতে ফাইয়াজের রাগ আবারও মাথায় চড়ে বসে, ছেলেটাকে আবারও মারতে শুরু করে,,,

স্নিগ্ধা আবারও ফাইয়াজকে আটকানোর চেষ্টা করে বলে,, কি করছেন টা কি ছেড়ে দিন, এত ঝামেলার তো কোনো প্রয়োজন নেই,, ঠান্ডা মাথায় সবকিছু মিটমাট করলেই তো হয়ে যায়??

স্নিগ্ধার কথাটা ফাইয়াজের রাগকে আরো বাড়িয়ে দিল,, ছেলেটাকে শাসিয়ে বলল,, তোকে তো আমি পরে দেখিনিব,, আমার স্নিগ্ধপরীকে টাচ করা, তোর এই হাত আমি ভেঙে ফেলব,, এরপর স্নিগ্ধার হাতটা শক্ত করে ধরে বলল,, পরপুরুষ টাচ করলে খুব ভালো লাগে তাই না?? তখন সবকিছু ঠান্ডা মাথায় মিটমাট করার চিন্তাভাবনা আসে, আর আমি টাচ করলে তো তোমার গায়ে ফোসকা পড়ে যায়? আজকে তোমার সমস্ত মিটমাট যদি না করেছি আমার পরী, এই বলে টানতে টানতে নিয়ে গেল স্নিগ্ধাকে,,

এতক্ষণ সমস্ত কিছু দূর থেকে তীক্ষ্ণ ভাবে দেখছিল একজোড়া চোখ, সে ব্যক্তি প্রতিদিনই স্নিগ্ধার ভার্সিটি আসা-যাওয়া লুকিয়ে দেখে, আজকের ঘটনাটা ও সে শুরু থেকেই দেখেছে, তবে ফাইয়াজ কাছাকাছি থাকায় এগিয়ে আসেনি, সে এতটাই রেগে আছে যে রাগ নিবারণ করার জন্য শক্ত করে দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করার ফলে আঙ্গুলের নখ হাতের তাড়ায় দেবে গেছে, দাঁতের সঙ্গে দাঁতের ঘর্ষণে বাইরে থেকে আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। নিজেকে ঠিক রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেও সে ব্যর্থ হচ্ছে।
,
,

ফাইয়াজ স্নিগ্ধা কে টানতে টানতে গাড়ির ফ্রন্টসিটে নিয়ে বসিয়ে দিয়েছে, নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভারকে পিছনে বসতে বলে ফুল স্পিডে গাড়ি চালানো শুরু করে। যা দেখে ড্রাইভার এবং স্নিগ্ধা দুজনই আৎকে ওঠে।

ড্রাইভার রহমত বলেন, বাবা আপনি বোধহয় রেগে আছেন ভীষণ, দয়া করে আপনি গাড়িটা থামিয়ে পিছনে এসে বসুন আমি গাড়িটা চালাচ্ছি,

স্নিগ্ধাও বারবার বোঝাতে লাগলো,, তবে ফাইয়াজ টু শব্দটিও করল না, ২০ মিনিটের রাস্তা ১০ মিনিটেই পৌঁছে গেল। গাড়ি থেকে নেমে ফ্রন্ট সিটের দরজা খুলে আবারো স্নিগ্ধার হাতটা ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেল বাড়ির ভেতর এরপর সোজা ফাইয়াজের ঘরে,

ফারজানা তালুকদার ড্রয়িং রুমের সোফায়ই বসা ছিলেন, স্নিগ্ধার হাত ধরে ফাইয়াজকে এভাবে টানতে টানতে নিয়ে যেতে দেখে তিনি বার কয়েক ডাকলেন তবে ফাইয়াজ সেখানে বিন্দুমাত্র সময়ও ব্যয় করল না, আর নাতো স্নিগ্ধা কে কিছু বলতে দিল, তবে ফারজানা তালুকদারও ছেলে আর ছেলের বউয়ের ব্যাপারে নাক গলালেন না,,

ফাইয়াজ সোজা নিজের ঘরে গিয়ে বেশ শব্দ করে দরজাটা বন্ধ করে এক হাতে লক করে দিল, আরেক হাতে স্নিগ্ধার হাত শক্ত করে ধরা ছিল যেটা সেই কতক্ষণ থেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে তবে সে বড়াবড়ি ব্যর্থ,,

ফাইয়াজ এবার স্নিগ্ধার অন্য হাতটাও নিজের হাতের মধ্যে বন্ধি করে ফেলে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে স্নিগ্ধার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে,,,

স্নিগ্ধা ফাইয়াজের এমন আচরণের সাথে পরিচিত নয়, তাই বেশ ঘাবড়ে গিয়েছে, আবার ফাইয়াজ এত কাছে আশায় নিজের ভেতরে কেমন একটা অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে, আবার অস্বস্তিও হচ্ছে,, সে তোতলাতে তোতলাতে বলল,, ক- ক – কি করছেন ছারুন,,,

ফাইয়াজ এবার একটু স্নিগ্ধার দিকে ঝুকে গেল, এতে স্নিগ্ধা চোখ জোড়াকে খিচে বন্ধ করে নিল, তা দেখে ফাইয়াজ একটা বাঁকা হাসি দিল, স্নিগ্ধার মুখের উপরে ফু দিয়ে সামনে থাকা চুলগুলো উড়িয়ে দিল,,

চোখ খোলো স্নিগ্ধপরী, তাকাও আমার দিকে, স্নিগ্ধার কোনো হেলদোল না দেখে আবারও বলল,, চোখ খুলে ঠান্ডা মাথায় আমার সবকিছু মিটমাট করে দাও,,

এমন কথা কানে যেতে স্নিগ্ধা পিটপিট করে চোখ দুটো খুলে তাকালো ফাইয়াজের চোখের দিকে,,

ফাইয়াজ কেমন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, সেই চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না বা চোখটা নামিয়ে নিল,
স্নিগ্ধার হাত এখনো ফাইয়াজের হাতে বন্দি আর স্নিগ্ধা দেয়ালের সঙ্গে তার আর ফাইয়াজের মধ্যে কোন ফাঁকা ফাইয়াজ রাখেনি,

কি হলো মিটমাট করে দাও??

ক- কি মিটমাট করব??

এই যে, আমার বউ আমার কাছে থাকে না আমার কাছে আসে না, আমার সাথে কথা বলে না, বিয়ের আজ হুনেগুনে ১৫ দিন কেটে গেলো বউকে কাছে পেলাম না,,

আপনিইতো দুরে সরিয়ে দিয়েছন,,

তাই? বেশ তাহলে এখনি কাছে টেনে নেই?

ম-মানে?

ফাইয়াজ আর একটা কথাও বলল না, তার দৃষ্টি স্নিগ্ধার কাঁপতে থাকা ঠোঁটের দিকে,

ছাড়ুন, আ,,

ফাইয়াজ স্নিগ্ধাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে তার ঠোঁট দিয়ে স্নিগ্ধার ঠোঁট দুটো বন্ধ করে দিল,,,

চলবে????

ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ।