আমার স্নিগ্ধপরী পর্ব-১৩

0
12

#আমার_স্নিগ্ধপরী
#পর্ব_১৩
#লেখা: #নীল_মালতীলতা

কপি নিষিদ্ধ ❌❌❌

ফাইয়াজ সবার মুখের দিকে একবার করে তাকালো, বললো,

আমি বিয়ে করতে চাই আব্বু,

এমন কথা শুনে তালুকদার মেনশনে থাকা প্রত্যেকটা সদস্যই প্রায় চমকে উঠলো,

স্নিগ্ধার ভেতরেও ধক করে উঠলো, সে যতই ফাইয়াজকে ইগনোর করুক, ফাইয়াজের থেকে দূরে দূরে থাকুক ফাইয়াজই তার জীবনের প্রথম পুরুষ, তার স্বামী। তার মনের গহীনে ফাইয়াজের নাম তো সেই বিয়ে ঠিক হওয়ার পরই লিখে দিয়েছে। এখন যতটুকু দূরত্ব তা তো অভিমান আর অপমান থেকে,,

নীরবতা ভেঙে ফজলুল তালুকদার বললেন,, কি বলতে চাইছো পরিষ্কার করে বল,, তুমি যথেষ্ট ম্যাচিউর, আশা করি এমন কোন কথা বলবে না যা তোমার ব্যক্তিত্বের সাথে যায় না,

আব্বু তোমরা এত হাইপার হচ্ছ কেন? আগে আমার পুরো কথাটা শুনো,

হ্যাঁ সেটাই শুনতে চাচ্ছি তুমি পরিষ্কার করে বলো,,

আমি আমার ভুলগুলো শুধরে নিতে চাই,

এবার ফারজানা তালুকদার বললেন, হ্যাঁ সেটা তো খুব ভালো সিদ্ধান্ত, কিন্তু এর সাথে বিয়ের কি সম্পর্ক?

তোমাদের তো এই আমি একটাই ছেলে, তোমাদের নিশ্চয়ই সখ ছেলের বিয়ে খুব ধুমধাম করে দিবে?

হ্যাঁ তা তো ছিল কিন্তু সেখানে তো বাধা তুমিই দিলে,

আব্বু, আম্মু আমি চাই বড় আয়োজন করে স্নিগ্ধাকে রিয়ে করে আমার হাত ধরে এই বাড়িতে তুলতে

ফারজানা তালুকদার নিজের স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন, কি… বলেছিলাম বিয়ে হয়ে গেলে ছেলে ঠিকই আস্তে আস্তে বৌয়ের মায়ায় পড়বে, এখন তো দেখছি একদম দ্রুত গতিতে সব এগিয়ে গেল, একটা মাস কাটলো না তার আগেই ছেলে বউকে আবার বিয়ে করতে চাচ্ছে,,

রাহাত শান্ত চোখে একবার স্নিগ্ধাকে দেখে নিল.. এরপর ফাইয়াজের বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, আংকেল মামনি ফাইয়াজ কিন্তু ভুল বলেনি, তাছাড়া আমিও কিন্তু ফাইয়াজের বিয়েতে যেতে পারিনি, এবার জমিয়ে একটা অনুষ্ঠান করো, অন্তত আমার জন্য হলেও বলে হাসতে লাগে,,

ফজলুল তালুকদার বললেন আমরা তো তখনই অনুষ্ঠান করতে চেয়েছিলাম তোমার বন্ধুই তো বেঁকে বসলো,

সরি আব্বু আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি, আর আগামী সপ্তাহের মধ্যেই আমি আমার ভুলটা শুধরাতে চাই..

ফাইয়াজের কথা শুনে সবার চোখ বড় বড় হয়ে গেল,,

ফজলুল তালুকদার বললেন তাই বলে এত তাড়াতাড়ি? আয়োজন করতেও তো সময়ের ব্যাপার,

আমি কিছু জানিনা, আগামী শুক্রবার এর মধ্যে আমি আমার বউ ঘরে তুলতে চাই ব্যাস,

ফজলুল তালুকদার ফের বললেন, স্নিগ্ধা মায়ের পরিবারকেও তো জানাতে হবে.. তাদেরও তো একটা সময়ের ব্যাপার আছে,

অতশত আমি জানিনা আব্বু, আজকে শনিবার হাতে এখনো পাঁচ দিন রয়েছে ৫ দিনের মধ্যেই তোমাদের যা করার করতে হবে, নইলে কিন্তু আমি পালিয়ে বিয়ে করবো বলে রাখলাম,

ফাইয়াজের কথা শুনে সবাই হা হয়ে গেল, স্নিগ্ধা তার তো অবাক হওয়ার যেনো শেষই হচ্ছে না,,

রাহাত এবার হাসতে হাসতে বলল,, ব্যাপারটা কিন্তু বেশ ইন্টারেস্টিং, বউকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া হাহাহা,

ফাইয়াজ আর কিছুই বলল না সেখান থেকে চলে গেল তার রুমের উদ্দেশ্যে, স্নিগ্ধাও আর সেখানে দাঁড়ালো না,

রাহাত বলল, আংকেল তাহলে আয়োজন শুরু করে দিন,

দেখি আগে স্নিগ্ধার বাবার সঙ্গে কথা বলে নেই,

আঙ্কেল হাতে তো খুব একটা সময় নেই আপনি এখনই কাজ শুরু করে দিন,

হ্যাঁ বাবা ঠিকই বলেছ এখনই কথা বলা উচিত,

এরপর ফজলুল তালুকদার সাথে সাথে সিদ্দিক তালুকদারকে ফোন সব খুলে বললেন, সবকিছু ভালোভাবে বোঝালেন যাতে ভাইকে রাজি করাতে পারেন, শেষমেষ সিদ্দিক তালুকদারও সব দিক বিবেচনা করে রাজি হয়ে গেলেন, তিনি বুঝতে পারলেন না সেদিনই তো বিয়েটা হলো মেয়েকেও নিয়ে গেল এর মধ্যে আবার কি এমন হলো,
যদিও ফজলুল তালুকদার বলেছেন ছেলের এখন অনুষ্ঠান করার মত হয়েছে, তবুও ব্যাপারটা যেন তার কাছে কেমন লাগলো, তবে তিনি বেশি ঘাটলেন না, সিদ্দিক তালুকদার মেয়েকে কালকেই পাঠিয়ে দিতে বললেন,,

আজকের মধ্যেই দুই পরিবার তাদের সকল আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দেওয়ার কাজ শুরু করে ফেলে এবং আজকের মধ্যেই শেষ করার চিন্তাভাবনা করল, কারণ হাতে সময় মোটেও নেই ,

,
,

পরের দিন ফাইয়াজ খুব ভোরেই স্নিগ্ধাকে নিয়ে রওনা হয় গ্রামের উদ্দেশ্যে, গ্রামে তালুকদার বাড়িতে নতুন জামাই প্রথমবার এলো তাই আয়োজনে কোন কমতি ছিল না দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করেই ফাইয়াজ আবারো ঢাকায় ব্যাক করে যদিও সবাই আজকের দিনটা থাকতে বলেছিল তবে স্নিগ্ধা কিছুই বলেনি।
সেদিন ফাইয়াজের বাড়ি ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়।

পরের দিন খুব সকালে স্নিগ্ধা এবং ফাইয়াজ দুজনের কাছে আলাদা আলাদা দুটো পার্সেল আসে, তবে সেখানে প্রেরকের কোন নাম ছিল না, দুটো পার্সেল এর উপরেই খুব সুন্দর করে একটা চিঠি আটকে রাখা ছিল, কৌতুহলবশত দুজনেই চিঠিটা খুলল, দুজন দুই প্রান্তে তবে এই দুজনের চিঠিতে একই বাক্য ছিল,

জীবন চলার পথে ভুল হওয়া স্বাভাবিক,
তবে ভেঙে না পড়ে সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন ভাবে জীবন গড়াটাই হচ্ছে জীবনের মূলমন্ত্র……

তোমার অচেনা শুভাকাঙ্ক্ষী,

চিঠিখানা দেখে কৌতুহলবশত পার্সেল খুলল দুজনেই,

,
,

পেরিয়ে গেল আরো দুটো দিন কালকে ওদের গায়ে হলুদ, কিন্তু দুজনেই বেশ অন্যমনস্ক হয়ে আছে, দুই পরিবারের সদস্যই তাদের সন্তানদের লক্ষ্য করেছেন।

ফারজানা তালুকদার ফজলুল তালুকদার কে উদ্দেশ্য করে বললেন, হ্যাঁ গো বলছিলাম যে ছেলেটাকে দেখেছো কেমন মন মরা হয়ে আছে দুদিন ধরে, বিয়ে নিয়েতো ছেলেটা বেশ আনন্দে ছিল, স্নিগ্ধার বাবা মা রাজি হওয়ার পর ছেলেটার চোখের আনন্দ আমরা সবাই দেখেছিলাম, কি এমন হলো বলতো যে আজ দুদিন ধরে ছেলেটা কিছু একটা ভাবছে আনমনে,

আমিও লক্ষ্য করেছি ব্যাপারটা কিন্তু বুঝতে পারছি না,

রাহাত ও তাদের আশেপাশেই ছিল, বললো আঙ্কেল, মামনি তোমরা টেনশন করো না হয়তো কোন ব্যাপারে আপসেট হয়ে আছে ঠিক হয়ে যাবে ,

ফারজানা তালুকদার চিন্তিত হয়ে বললেন, কি জানি এবার সবকিছু ঠিকঠাক হলেই হয়, একবার মেয়েটাকে ভারী আঘাত দিয়ে ফেলেছি মেয়েটা তো ওর পরিবারের সামনে আমাদের লজ্জায় ফেলেনি সবটা কেমন গোপন করে নিজে নিজেই অপমান গুলো গিলে নিল, এবার যেন মেয়েটার উপর কোন ঝড় না আসে এই দোয়াই করি,

মামনি চিন্তা করোনা এবার এরকম কিছুই হবে না ফাইয়াজ যেহেতু নিজে থেকেই প্রস্তাব দিয়েছে এরকম হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই,

তাই যেনো হয়,, সব কিছু ভালোয় ভালোয় হয়ে গেলেই বাঁচি।

এর মধ্যেই নতুন বউ এবং তার পরিবারের জন্য শপিং করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে মেয়ের বাড়িতে, মেয়ের বাড়ি থেকেও ছেলের বাড়িতে শপিং পাঠানো হয়েছে। সবকিছুই খুব দ্রুততার সাথে করছে সবাই।

,
,

স্নিগ্ধার মা শারমিন তালুকদারও স্নিগ্ধাকে লক্ষ্য করলেন, মেয়েটা তো হাসি খুশি ভাবে এলো শ্বশুরবাড়ি থেকে এখানে আসার পরও বেশ হাসিখুশি ছিল , দুদিন ধরে বেশ মনমরা দেখছেন মেয়েটাকে কিছু একটা চিন্তা করছে সে, তবে তিনি বেশি একটা পাত্তা দিলেন না ভাবলেন মেয়েটা শ্বশুরবাড়ি থেকে এসে আবারো সেই শ্বশুরবাড়িতে বিদায় নিবে ভেবেই হয়তো মেয়েটার মন খারাপ, সব ভেবে তারও মনটা খারাপ হয়ে উঠলো, তিনি আর বেশি ঘাঁটাঘাটি করলেন না।

এবারের বিয়েতে ২ পরিবারেই আত্মীয়-স্বজনে ভরপুর, স্নিগ্ধা অনেক ভেবে চিন্তে নিজেকে ঠিক করলো নিজেকে হাসি খুশি উপস্থাপন করতে লাগল সবার সামনে,

ফাইয়াজও নিজের বিয়ে নিজের মতো উপভোগ করতে শুরু করল তার স্নিগ্ধপরীকে নিয়ে ভাবতে শুরু করলো, তার জন্যই তো এত আয়োজন তাকে এই বুকের গভীরে ঠাঁই দেওয়ার জন্যই এত এত আয়োজন ফাইয়াজের,

রাহাত শান্ত ভাবে ফাইয়াজের আনন্দ উল্লাস দেখছে, ফাইয়াজ রাহি কেও এই বাড়িতে বিয়ের কদিন এখানে রাখার জন্য রাহাতকে বলেছিল, রাহাত জানিয়েছে রাহি এখানে আসতে রাজি হয়নি, তাই ফাইয়াজও বেশি কিছু বলল না, সে তার স্নিগ্ধপরীর সামনে আর কোনো রকম ঝামেলাই চায় না,

ফাইয়াজের খুব ইচ্ছা ছিল স্নিগ্ধার গায়ে হলুদ লাগানোর। তার স্নিগ্ধপরীকে হলুদের সাজে হলুদ মাখানো গায়ে কেমন লাগছে তা সামনা সামনি দেখার জন্য, তবে এত দূরের পথ হওয়ার কারণে তা আর সম্ভব হয়নি ।

দুজনেই দুজনের সঙ্গে একটু কথা বলার জন্য মন ছটফট করছে, তবে তাদের দূরত্ব তাদেরকে সফল হতে দেয়নি।

চলবে???

ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ।