আমার স্নিগ্ধপরী পর্ব-১৯ এবং শেষ পর্ব

0
3

#আমার_স্নিগ্ধপরী
#পর্ব_১৯ ও শেষ
#লেখা: #নীল_মালতীলতা

কপি নিষিদ্ধ ❌❌❌

স্নিগ্ধাকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরে রাহাত। ফাইয়াজ ছটফট করছে ছাড়া পাওয়ার জন্য। আর রাহী সে এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে ভয়ে।

এমন সময় ফ্ল্যাটের ভেতরের প্রবেশ করল কয়েকজন পুলিশ। সাথে আছে ফাইয়াজ আর স্নিগ্ধার বাবা-মা।

পুলিশ এসে ফাইয়াজকে ছাড়িয়ে ফাইয়াজকে ধরে রাখা ছেলেগুলোকে ধরে নিয়ে যায়। ফাইয়াজ ছাড়া পেতেই দৌড়ে গিয়ে রাহাতকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে স্নিগ্ধাকে নিজের বাহুতে নিয়ে নেয়। ওদের বাবা-মা ওদের কাছে ছুটে আসে।

রাহাত রাহি পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে যায়। মেইন দরজাটাও পুলিশ ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। পালানোর পথ নেই। ছুড়িটাও তখন কোথাও একটা ছুড়ে ফেলে দিয়েছে।
ফাইয়াজ আর স্নিগ্ধার বাবা মা ফাইয়াজকে ফলো করতে করতে এসে যখন ফ্ল্যাটের সামনে থামে তখনই এখানকার লোকেশন দিয়ে পুলিশে ইনফর্ম করে। তাদের মেয়ে কিডন্যাপ হয়েছে সেখানে একা একা যাওয়া মোটেও ঠিক হবে না ভেবে এই পদ্ধতি অবলম্বন করে ফজলুল তালুকদার।

ফাইয়াজ পাগলের মত স্নিগ্ধাকে ডাকছে,, আম্মু ও চোখ খুলছে না কেনো? শারমিন তালুকদার চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখেন বেড সাইড টেবিলে একটা জগে পানি রাখা। তিনি দ্রুত জগ টা নিয়ে সেখান থেকে পানি নিয়ে স্নিগ্ধার চোখে মুখে ছিটিয়ে দেন। বেশ কয়েকবার এমন করার পর স্নিগ্ধা পিটপিট করে চোখ দুটো খুলে। স্নিগ্ধাকে চোখ খুলতে দেখে ফাইয়াজের কলিজায় পানি আসে, শক্ত করে জড়িয়ে ধরে স্নিগ্ধাকে।

ফজলুল তালুকদার রাহাতকে দেখিয়ে পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেন, এই রাসকেলটাকে এখানে এখানে রেখে দাঁড়িয়ে আছেন? নিয়ে যাচ্ছেন না কেন? এই ছেলে মেয়ে দুটোই আমার মেয়েটাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছে । ওদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।

ফাইয়াজ মাথা তুলে তাকায় রাহাতের দিকে, তাচ্ছিল্য করে বলে, এত কিছু করার সময় তোর কি একবারও মনে হয়নি সেই পুরনো দিনগুলোর কথা? একবারও কি মনে পড়েনি যে তুই কোথা থেকে কোথায় এসেছিস? একবারও মনে পড়েনি সেই বন্ধুত্বের কথা? একবারও কি মনে পড়েনি এই ভালোবাসা তোর সেই বন্ধুর ভালবাসা। একবারও কি মনে হয়নি যাকে ভালোবাসিস তার সম্মান নিয়ে খেলাবি কিভাবে? একবারও কি ভাবতে ইচ্ছে করেনি যাকে তুই ভালোবাসিস সে কিসে খুশি থাকবে? সে কাকে ভালোবাসে? ভালোবাসার মানুষের মানহানি করা যায় বুঝি? পুরো গ্রামের সামনে তুই মেয়েটাকে ছোট করে দিলি। ছোট করে দিলে তার বাবা মাকে। তোদের দুই ভাই বোনকে তো আমি নিজের ভাই বোন বানিয়ে ফেলেছিলাম। এই দিলি তার প্রতিদান? অফিসার নিয়ে যান ওদের।

স্নিগ্ধা চুপচাপ পড়ে আছে ফাইয়াজের বুকের মধ্যে। তার কিছু বলার শক্তি এখন আর নেই।

রাহাত আর রাহীকেও পুলিশ ধরে নিয়ে যায়, রাহাত যেতে যেতে শান্ত চোখে ফাইয়াজ আর স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে থাকে, যেন নিরব কোনো হুমকি দিচ্ছে।
,
,

সবাই তালুকদার ম্যানশনে আলোচনায় বসেছে, কত আয়োজন কত সুন্দর পরিবেশটা কিভাবে নষ্ট হয়ে গেল এখন কি করার উপায় সেটা নিয়েই আলোচনা করছে তারা।

স্নিগ্ধাকে বাড়িতে এনে খাবার খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে এখন সে ঘুমাচ্ছে।

ফাইয়াজ এক কোণে বসে আছে বাবা-মা দের আলোচনার পাশেই। মূলত তাকেও রাখা হয়েছে আলোচনায়। তার মনটা ভীষণ ভার, মনে পড়ে যাচ্ছে সেই বন্ধুর কথা, যাকে সে তার জীবনের প্রত্যেকটা আলোচনায় রাখতো। আর আজকে সেই বন্ধু কোথায় আর সে কোথায়।

,
,

অবশেষে তাদের আলোচনায় সিদ্ধান্ত হলো, বৌভাতের তারিখটা ঠিক থাকবে। যেহেতু গ্রামের বিয়েটা আর হয়নি সেখানে একটা গন্ডগোল হয়ে গিয়েছে সেটাতো বাতিল হয়েছে, এখানেও যেহেতু অনেক আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধব ইনভাইট করা রয়েছে তাই এই তারিখটা আর পেছাতে চাইলেন না তারা। কাজী ডেকে এখানেই আবার বিয়েটা সম্পন্ন করা হবে এবং বৌভাতটা ঠিক করা তারিখেই সম্পন্ন হবে।

গ্রাম থেকে স্নিগ্ধার ভাই-বোনদেরও আনা হয়েছে।

সিদ্দিক তালুকদার ফাইয়াজ এবং তার ছোট ছেলেমেয়েদের পাশে বসিয়ে ফাইয়াজকে উদ্দেশ্য করে বললেন,, এরা কিন্তু তোমার ছোট ভাই বোন, তুমি এদের বড় ভাই, বড়ভাইয়ের কোন ত্রুটি কিন্তু আমি মেনে নেব না বলে একটু হাসলেন, হাসেন পাশে থাকা ফজলুল তালুকদার।

ফাইয়াজ ওদের নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলে, হ্যাঁ এখন থেকে আমি তোদের বড় ভাই তোরা আমার ছোট ভাই বোন। কে বলেছে আমি একা আমার কোন ভাই বোন নেই? এই যে আমার কত সুন্দর দুটো ভাই বোন আছে বলে ওদের দুজনকে জড়িয়ে ধরল। ফারজানা তালুকদার শারমিন তালুকদারের চোখে পানি এসে গেল তারাও বেশ খুশি হলেন, দোতলার রেলিঙে দাঁড়িয়ে থাকা স্নিগ্ধার চোখেও পানি।

,
,

তালুকদার ম্যানশনে আজ খুশির আমেজ। ফাইয়াজ স্নিগ্ধার বউভাত। আজকে কাজী ডেকে কিছুক্ষণ আগেই তাদের বিয়ে পড়ানো হয়েছে।
এত আনন্দের মধ্যেও ফাইয়াজ খানিক শূন্যতা অনুভব করছে, চারপাশে চোখ বোলাচ্ছে কিন্তু তার পরিচিত কাঙ্ক্ষিত মুখ আর এখানে দেখা যাচ্ছে না আর যাবেও না। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তার ভেতর থেকে।

,
,

ফুলে সাজানো খাটে ঘোমটা টেনে বসে আছে স্নিগ্ধা। তার ভিতরে ভয় লজ্জা ভালোলাগা মিলেমিশে এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। সে যখন
ফাইয়াজের ছবি প্রথম দেখেছিলো তখনই তার অন্য রকম একটা অনুভূতি হয়েছিল। আর যখন বিয়ে ঠিক হলো তখনই তার সপ্নের রাজ্য পুরোপুরি দখল করে নিল এই পুরুষ। এরপর এই অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে কত কিনা ঘটে গেল। একদিন আগের ঘটনা গুলো মনে পড়লে স্নিগ্ধা এখনো ভয় কেঁপে ওঠে। সে পুরনো আর কিছুই মনে করতে চায় না

স্নিগ্ধার আকাশ পাতাল ভাবনার মধ্যেই দরজা খোলার শব্দ ভেসে আসে, আবার কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে দরজা আটকানোর শব্দ। স্নিগ্ধার মনে হচ্ছে তার হৃদপিণ্ড অত্যন্ত দ্রুত চলাচল করছে।

ফাইয়াজ দরজাটা বন্ধ করে খাটের দিকে ঘুরেই দেখতে পেলো তার কাঙ্খিত রমণীকে যে এই মুহূর্তে এক হাত ঘোমটা দিয়ে জড়সড়ো হয়ে তার খাটে বসে আছে। যাকে মানবে না বলে পালালো আজ তাকে পাওয়ার জন্য হৃদয়টা কত ব্যাকুল ভেবে মুচকি হাসলো ফাইয়াজ। ফাইয়াজ এক পা এক পা করে এগিয়ে যায়।

পায়ের শব্দ যত কাছে এগিয়ে আসছে স্নিগ্ধার ভেতরের ধুকপুকানি ততটাই বেড়ে যাচ্ছে। লজ্জায় আরষ্ট হয়ে সালাম দিতেও ভুলে গেল স্নিগ্ধা।
ফাইয়াজ খাটের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে গলাটা একটু পরিষ্কার করে নিয়ে সলাম দিলো,

স্নিগ্ধা আস্তে করে সালামের জবাব দিল। ফাইয়াজ আস্তে ধিরে স্নিগ্ধার পাশে গিয়ে বসলো। আস্তে করে ঘোমটাটা খুললো। উন্মুক্ত হলো ফাইয়াজের স্নিগ্ধপরীর স্নিগ্ধ মুখখানা। মন ভরে কিছুক্ষণ দেখল ফাইয়াজ। আলতো হাতে স্নিগ্ধার চিবুক ধরে উঁচু করে ঠোট ছোয়ালো কপালে। আবেশে বন্ধ হয়ে গেল স্নিগ্ধার চোখ জোড়া।
বলল,, স্নিগ্ধপরী চোখ খোলো তাকাও আমার দিকে,,

পিট পিট করে চোখ খোলে স্নিগ্ধা, মুখে লজ্জা ভরা লাজুক হাসি নিয়ে তাকায় ফাইয়াজের দিকে,,

ফাইয়াজ বলে,, তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরি শক্ত করে?

স্নিগ্ধা লাজুক হেসে নিচের দিকে তাকিয়ে রয়,,

ফাইয়াজ আর অপেক্ষা করে না জড়িয়ে ধরে শক্ত করে, স্নিগ্ধার কানের সাথে ঠোঁট মিশিয়ে ফিসফিশিয়ে বলে,, তুমি আমার ভালোবাসা, আমার বিশ্বাস আমার আশা, আমার ভবিষ্যৎ। আমার স্নিগ্ধপরী।

সমাপ্ত