আমার হয়ে যা পর্ব-০৫

0
324

আমার হয়ে যা_পর্ব- ৫
.
২. (১৮+ এলার্ট)

রাতে আয়না দেখলে মা বকেন, রাতে আয়না দেখলে না-কি অমঙ্গল হয়। নিষাদ চলে যাওয়ার পর তবুও আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে মনযোগ দিয়ে দেখলাম। সত্যিই কী আমি আগের থেকে আরও বেশি সুন্দরী হয়ে গেছি? না-কি নিষাদের চোখে অকারণই লাগছে। সত্যি বলতে আমি নিজের শরীর নিয়ে অবশিষ্ট বিশ্বাসটুকুও হারিয়ে ফেলেছি। যদি আমি সুন্দরী হই, তবে কেন সাহেদ অন্য মেয়েদের সাথে সারাক্ষণ চ্যাট, ফোনালাপ এমনকি পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত ছিল?
মা-বাবা সহ সবাই আমাকেই শুধু দোষা-রোপ করেন। আমি শিল্প-সাহিত্য নিয়ে না-কি ব্যস্ত থাকতাম। তাই সাহেদ এমন হয়েছে। ওর পরিবারেরও এই অভিযোগগুলো ছিল। অথচ যখন ওরা পুরো পরিবার আমাকে ফেইসবুক লাইভে যেতে নিষেধ করে, ছবি আপ্লোড করতে নিষেধ করে। এরপর থেকে আমি আর লাইভে যাইনি, ছবি আপ্লোড করিনি। বইয়ে অটোগ্রাফ দিতে ঢাকা যেতে হলে সাহেদ সঙ্গে যেতে চাইতো না। আমি একা গেলে আবার তাদের সমস্যা, তাই অটোগ্রাফ দিতেও শেষদিকে যাইনি। তবুও তো কোনোকিছু ঠিক হয়নি। এই বিষাক্ত সম্পর্ক থেকে আমার বের হয়ে আসতেই হয়েছে। সাহেদের শুরু থেকেই আমাকে নিয়ে নানান সমস্যা ছিল। আমার গো*পাঙ্গের কালচে ভাব নিয়ে বিয়ের এক সপ্তাহের মাথায় সে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল। আমি অবাক হয়ে যাই, এসব নিয়ে আমি কখনও ভাবিনি। আমার কালচে ভাব স্বাভাবিক না-কি অস্বাভাবিক আমি বুঝে উঠতে পারিনি। তবুও নেটে ঘাটাঘাটি করে বিভিন্ন প্রোডাক্ট কিনি। কিছুটা উন্নতি হলেও খুব হয় না৷ আমি ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়ি, হীনমন্যতায় ভুগি। কিন্তু এটাই শুধু শেষ না। যৌনতায় তার বিভিন্ন ধরনের বিকৃত চাহিদা ছিল। আমার কাছে বিরক্তিকর এবং বিকৃত মনে হলেও ধৈর্য ধরে মেনে নিই। কিন্তু একটা চাহিদা আমি কোনোভাবেই তার পূরণ করতে পারতাম না, আমার বমি চলে আসতো। প্রথম প্রথম সে রেগে গেলেও পরে আমাকে মা*রধর করে জোর করে কাজটা করতো। প্রথমবার এমন করলে আমি বাথরুমে গিয়ে বমি করে ফেলি। খাবার খেতে বসলে বিষয়টা মনে পড়লেই আর খেতে পারতাম না। আমি মানসিকভাবে একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে যাই। একবার ওর লি*ঙ্গে কভার পরে নিতে বললে সে জানায় এভাবে তার ফিল আসে না৷ ফলে এই বিকৃত কাজ আমার অসম্মতিতে চলতে থাকে। তবুও নানান কারণে সে সুখী হতে পারে না। আমিও হতাশা আর একাকীত্বে ভুগি৷ কবিতায় আশ্রয় নিই, লেখি। তাতেও ওদের নানান সমস্যা হয়। একবার আমি ইউটিউবে একটা চ্যানেলে ভিডিয়ো দেখতে পাই। সেখানে একটা প্রোগ্রাম হয়, ওরা দম্পতিদের নানান প্রশ্ন নেয়। সাথে উত্তর দিয়ে বুঝিয়ে বলে। আমি একদিন পরিচয় গোপন রেখে কল দেই, আমার প্রশ্নগুলো ডাক্তারকে করি। ওরা বিস্তারিত শুনে আমাকে বলে, ‘আপনার বর কি পর্নোগ্রাফি দেখে বা দেখতো?’

আমি ‘হ্যাঁ’ বলি, যুক্ত করে জানাই এখনও দেখে। কারণ সাহেদ আমার সামনেই এগুলো বের করতো। আমাকে ভিডিয়োতে সেসব মেয়েদের দেখিয়ে ছোট করে কথা বলতো। আমি সবকিছু খুলে বললাম ডাক্তারকে। ডাক্তার আমাকে বললেন, ‘আপনার সাথে যা ঘটছে, সেটা ছেলেদের সাথেও আজকাল ঘটে। কিছু মানুষ এসব ভিডিয়ো দেখে মনে করে বাস্তবেও নারী/পুরুষের বিশেষ স্থান এরকম ঝকঝকে হয়৷ ভাবে বাস্তবেও নারী/পুরুষ ভিডিয়োর মতো বিকৃত যৌনাচারে অভ্যস্ত। তাদের এক্সপেক্টেশন লেভেল বেড়ে যায়। ফ্যান্টাসিতে ভুগে। এটা শুধু ছেলেদের ক্ষেত্রে না৷ ছেলেরা স্ত্রীর কাছে প্রকাশ করলেও মেয়েরা করে না, তবে মনে মনে পর্নোগ্রাফির পুরুষদের সাথে মিলিয়ে বরকে নিয়ে হতাশায় ভুগে৷ মূলত বাস্তবে ভারতীয় উপমহাদেশের নারী-পুরুষের গো*পনাঙ্গ সেরকম ঝকঝকে হয় না৷ বাস্তবে ওষুধ ব্যতীত কোনো পুরুষও সেরকম দীর্ঘ সময় স*ঙ্গমে লিপ্ত হতে পারে না। সেসবে মেকআপ থাকে, এডিট থাকে। সেসব স্রেফ শ্যুটিং করে বানানো সিনেমার মতো ভিডিয়ো, সবই অভিনয়।’

আমি আশ্চর্য হয়ে যাই। কথাগুলো শুনে আমি বুঝতে পারি সাহেদের আসল সমস্যাটা। ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমি এখন কী করতে পারি?’

তিনি আমাকে পরামর্শ দিলেন, ‘আপনার বরকে বোঝাবেন এগুলো অবাস্তব ভাবনা। উদাহরণ হিসাবে বলবেন দেখো ভিডিয়োতে থাকা ছেলেদের মতো তুমি নিজেও পারো না। তাদের মতো সুঠাম, ঝকঝকে লি*ঙ্গ তোমারও না। এমনকি ওরা যে দীর্ঘ সময় ধরে স*ঙ্গম করে তুমিও তা পারবে না৷ কারণ এগুলো এডিট, শ্যুটিং, অভিনয়। আমাদের এসবের সাথে একে অন্যকে তুলনা করলে ভুল হবে। হতাশাগ্রস্ত হবো। বাস্তবতা একেবারে ভিন্ন।’

তাদের ব্যখ্যাগুলো শুনে আমি অভিভূত হই, এগুলো একদম বাস্তব এবং সত্য মনে হয়। কিন্তু হতাশার বিষয় হলো যার জন্য এতকিছু, তাকে বুঝানো গেল না। তাকে এগুলো বলতেই আরও চড়াও হয়ে গেল। রাগারাগি শুরু করলো।
বললো সে এমনিই শ্যামলা, তাই শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী তার সবকিছু ঠিক আছে৷ স*ঙ্গমের সময়ের ব্যাপারে তার ব্যখ্যা হলো ওষুধ খেয়ে সেও এরকম পারবে। সুতরাং তার কোনো সমস্যা নেই। এভাবে ওকে বুঝাতে গিয়ে উলটো ঝগড়া লেগে গেল। আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল আলাপ। আমার উদ্দেশ্য পথ হারালো। সে গালাগাল শুরু করলো। আমি চুপ হয়ে গেলাম, একা একা কাঁদলাম।

তবুও বিষাক্ত এই সম্পর্কের সব সহ্য করে, মেনে আর মানিয়ে নিয়ে দুই বছর সহ্য করার পর আবিষ্কার করি। সাহেদ একাধিক মেয়ের সঙ্গে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে চ্যাট করে, ফোনে কথা বলে। আমি এগুলো নিয়ে কিছু বললেই মা*রতে চলে আসে। কয়েকবার রাগারাগি করে এখানেও চলে এসেছি। মা আবার বুঝিয়ে আমাকে সেখানে পাঠান। আমিও সবকিছু সহ্য করে বাঙালি বধূর মতো মানিয়ে সংসার করে যাই। কিন্তু একদিন আমি পেইজে একটা কবিতা লিখলাম। কবিতাটা নিয়ে স্যেশাল মিডিয়ায় অশ্লীলতার একটা ট্যাগ লেগে যায়। সমালোচনা হয়। সেটা সাহেদেরও চোখে পড়ে। এই সুযোগে সে এবার আমার কবিতা লেখাও বন্ধ করে দিতে চাইল। অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল শুরু করলো। এর আগেও সে এগুলো বন্ধ করতে বলতো। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বলতো, ‘এই বালছাল লিখে কী লাভ? টাকা তো দুই-পয়সা আসে না৷ যত্তসব ফালতু কাজ।’

আমি সহ্য করে নিতাম৷ খুব টাকা-পয়সা তখন আসতো না তা ঠিক। কারণ ওদের কারণে আমি শান্তিমতো, স্বাধীনভাবে লিখতেও পারতাম না। কিন্তু অশ্লীলতার ট্যাগ লেগে গেলে, এটার সুযোগে সে আমার মোবাইল কেড়ে নেয়৷ ফেইসবুকে ঢুকতে নিষেধ করে দেয়। আমার প্রচণ্ড জেদ হলো সেবার। সিদ্ধান্ত নিলাম এই সংসার আর করবো না। আমি লেখালেখিই করবো, লেখালেখি থেকেই আয় করবো। আমি কবিতা আবৃত্তি করবো, লাইভ করবো, বই বের করবো, অটোগ্রাফ দিতে ঢাকা যাব। মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়বো। এরজন্য আমার এই বিষাক্ত সম্পর্ক থেকে মুক্তি পেতে হবে। এরপর আর আমি দ্বিতীয় কোনো ভাবনা ভাবিনি। বাড়িতে চলে আসি। ডিভোর্স নিই। কিন্তু তাতে আমার সব দোষ হলো লেখালেখির জন্যই আমি ডিভোর্স নিয়েছি৷ কেউ জানে না এর পেছনে আরও কত কারণ আছে। আমি এখন আর মানুষকে নিয়েও ভাবি না, বুঝাতেও যাই না। প্রায় দুইমাস থেকে আমি নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছি। পুরনো পেইজটা আবার জাগিয়ে তুলেছি। নিয়মিত লাইভে যাচ্ছি। কীভাবে যেন এখন হঠাৎ পুরাতন বইগুলো বি*ক্রি হতে শুরু করেছে। এই অনুপ্রেরণা থেকে নতুন আরেকটা বই লেখাও প্রায় শেষ। বইমেলায় আসবে সেটা। তবুও কী আমি এখানেও পুরোপুরি ভালো আছি? মোটেও না। এইযে নিষাদ রোজ আসছে৷ আমি প্রথমদিন থেকেই মানতে পারছি না। কিন্তু মা সব-সময় বুঝান, কাকে কখন দরকারে লাগবে বলা যায় না। নিষাদ এলে খারাপ ব্যবহার করবি না। তোর তো এভাবে সারাজীবন কেটে যাবে না। বিয়ে-শাদি করতে হবে। ও যেহেতু ডিভোর্স হওয়ার পরও আসছে, নিশ্চয় এখনও তোর প্রতি তার টান আছে।
আমি মাকে বলি, আমি আর বিয়ে-শাদি করবো না। অকারণ কেন ওকে প্রশ্রয় দেবো?
মা উলটো হেসে বলেন, এসব কথা তোর বেশিদিন থাকবে না। আজ না হয় কাল মাথা থেকে এই ভূত নেমে যাবে। তখন দেখবি কেউ বিয়ে করছে না। হেলায় এরকম একটা ছেলেকে হারাতে যাস না। তোর মন পালটাতেও পারে। তাই বলছি ও এলে ভালো ব্যবহার কর, কথা বল, আড্ডা দে। ভালো লাগলে পরে বিয়ে করবি।

আমি মাকে বললাম কিন্তু যদি আমার মন না পালটে, তখন কী হবে? নিষাদ ঝামেলা করবে না? সে যে স্বপ্ন দেখবে আমাকে নিয়ে।

মা আমাকে বকা দিয়ে বলেন, তুই তাকে স্বপ্ন দেখাতে যাবি কেন? তাকে কী তুই আসতে বলেছিস? সে আসে, বসে। তুই শুধু তোর মতো থাকবি। তাকে যদি তাড়িয়ে দিস তাহলে তো সমস্যা। এমনও তো হতে পারে তোর দুইদিন পর তাকে বিয়ে করতে মন চাইবে।

আমি তার কথা পুরোপুরি মেনে চলতে পারি না। মাঝে মাঝে নিষাদের প্রতি বিরক্ত হয়ে উঠি। কীভাবে ওকে এভাবে প্রশ্রয় দেবো যেখানে আমি বিয়েই আর করবো না? তাই আজ সবকিছু খুলেই বলে দিয়েছি ওকে। এলে এবার নিজে বুঝেশুনেই আসুক। নিষাদ অবশ্য ভালো ছেলে। তবে ওকে আমি আগেও সেরকম স্বামী রূপে ভাবিনি। আমাদের সম্পর্কই ছিল তুই-তোকারির। এখনও আমি ওকে অন্য চোখে দেখতে পারি না। সত্যি বলতে ও অনেক বোকা বোকা ধরনের ছেলে ছিল৷ এরকম ছেলে আমার পছন্দ নয়।
এখন অবশ্য ও এলে আমার ভালোই লাগে। হতাশা আর একাকীত্বের এই দিনগুলোতে কেউ সঙ্গ দিলে তো ভালো লাগবেই। তবুও আমার বারবার মনে হয় ওর জন্য না এটা আবার ক্ষতির কারণ হয়ে যায়।
মা পর্দা সরিয়ে এসে বললেন ‘খেতে আয়।’

– ‘আসছি যাও।’

তিনি না গিয়ে এসে বললেন, ‘দেখলি তো, ছেলেটার খরচের হাতও ভালো। নুডুলস বিস্কুট নিয়ে এসেছে। দুই হাতে টাকা কামায় এখন।’

– ‘আমার এসব শুনে লাভ নাই আম্মু।’

– ‘তোর লাভ ক্ষতি ভাবার দরকার নাই। সে আসে, তার মতো আবার চলে যায়। তুই শুধু তোর মতো থাক। দেখ আজ না হয় কাল ভালো লাগবে।’

– ‘জীবনেও লাগবে না দেখে নিয়ো, উলটো বদনাম হবে।’

‘তুমি বড়ো সুনাম কুড়াইতেছো’ ব্যঙ্গ করে বলে মা রাগ দেখিয়ে চলে গেলেন। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে খেতে গেলাম।
__চলবে….
লেখা: জবরুল ইসলাম