আমার হয়ে যা_পর্ব- ৬
.
পরদিন সন্ধ্যায় আমার লাইভে যাওয়ার কথা। আমি সেটা ভুলে গিয়েছিলাম। বিকালে মডারেটর একজন স্বরণ করিয়ে দিল। তাড়াতাড়ি আমি পেইজে পোস্ট দিয়ে স্রোতাদের জানিয়ে দিলাম সন্ধ্যায় লাইভে আসবো। নিষাদকেও মেসেজ দিয়ে বললাম, ‘স্যরি রে, গতকাল তোকে আসতে বলেছিলাম, আসিস না আজ, আমি তখন লাইভে চলে যাব।’
সে ভয়েজ রেকর্ড দিয়ে জানালো, ‘সমস্যা নেই, আমিও তো তোর লাইভের অপেক্ষায় থাকি।’ মেসেজের রিপ্লাইয়ে ভয়েজ আমার কাছে কেমন বিশ্রী লাগে। আমি আর কোনো রিপ্লাই দিলাম না।
সন্ধ্যা হতেই চা খেয়ে আমার রুমের দরজা-জানালা সবকিছু বন্ধ করে দিলাম। মা’কেও জানিয়ে দেয়া আছে এই সময়ে ডাকাডাকি না করতে। নয়তো হঠাৎ দেখা যাবে আমি লাইভে আছি, সেটা না বুঝে গালাগাল করে আমার মান-সম্মান সব নষ্ট করে দিলেন। ঠিক সন্ধ্যা সাতটায় আমি লাইভ শুরু করলাম। ভালো-মন্দ কথা বলে আজ নিজের কবিতা না পড়ে পড়লাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতা।
তারপর সবার নাম সহ কমেন্ট পড়তে শুরু করলাম। পড়তে পড়তে সামনে রোজকার মতো নিষাদের কমেন্টও ভেসে উঠলো। ভুল বানানে কমেন্ট করেছে, ‘তুমার কবিতা এবং পাঠ অনেক সুন্দর হয়ছে।’
ও আমার কমেন্টে ‘তুই’ সম্বোধন না করে ‘তুমি’ বলে। সমস্যা হলো তার কমেন্টে অনেকগুলো হা-হা রিয়েক্টের সাথে একজন রিপ্লাইও লিখেছে, ‘আপু কবিতা পড়ার আগেই তো বলেছে এটা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা৷ এটা উনার কবিতা না।’
আমি নিষাদের কমেন্ট না পড়ে উলটো ডিলিট করে দিলাম। অকারণ সবাই ওকে নিয়ে হাসাহাসি করছে। আসলে সে তো মূর্খ না। অনলাইনে যারা কম থাকে এরা অনেক শিক্ষিত হলেও বানান ভুল করে, অসংলগ্ন আচরণ করে। অন্যের পোস্ট শেয়ার দিয়ে টাইমলাইন ভরে ফেলে। নিষাদও সেরকম মানুষ। কম বয়স থেকেই ব্যবসায় নেমে গেছে। এসব ফেইসবুক-অনলাইনে তার বিচরণ কম। ওর জন্য কেমন মায়া হয় আমার। কমেন্ট ডিলিট দিলেও একের পর এক কমেন্ট করে যাচ্ছে। রোজ এমন করে। আমি ওর কোনো রিপ্লাই দেই না তাও। ক’দিন আগে দেখলাম নিজের টাইমলাইন ভরে ফেলেছে আমার সবকিছু শেয়ার দিয়ে। এলাকার জুনিয়র ছেলে-মেয়েরা দেখে নিশ্চয় হাসবে। সে এসব ভাবেও না হয়তো। লাইভ শেষ করে দেখি প্রকাশক মেসেজ দিয়ে ফ্রী হলে কল দিতে বলেছে। আমি কল দিলাম তাকে। দীর্ঘ সময় কথা হলো। ব্যক্তিগত জীবনে সেও আমার মতো। নাম অর্নব আহমেদ। স্ত্রীর সাথে ডিভোর্স হয়েছে তিন বছর আগে। এখনও বিয়ে-শাদি করেনি। বয়স এখনও পয়ত্রিশের ঘরে। আমার ডিভোর্সের বিষয় জানার পর থেকে ফোন দিয়ে কাজের কথার থেকে অকাজের কথাই বেশি বলে। একাকীত্বের এই সময়ে ওর কথাবার্তা আমার মন্দ লাগে না। সব সময় সাহস, অনুপ্রেরণা দেয়। ওর কথা বলার ভয়েজটা ভীষণ সুন্দর। রসিকতার জন্যও ওস্তাদ। একেকটা কথা শুনে না হেসে পারা যায় না। ফোনে প্রায় এক ঘণ্টা নানান বিষয় নিয়ে কথা হলো। দু’জন সাহিত্যের মানুষ হওয়ায় কথা শুরু হলে যেন ফুরোতে চায় না। কে আজকাল কেমন লিখছে। কার বইয়ের কাটতি কেমন ইত্যাদি আলাপ। ফোন রাখার পর মা এসে খেতে ডাকলেন। আমি খেতে চলে গেলাম। খাওয়া-দাওয়া শেষে বিছানায় এসে মনে পড়লো ই-বুকে কিছু বই কেনা আছে। কিন্তু ডাউনলোড দেয়া হয়নি।
আজকাল ই-বুক প্ল্যাটফর্মেও বই পড়ার অভ্যাস হয়ে গেছে। কম দামে সঙ্গে সঙ্গে কিনে পড়া যায় বলে দ্রুত অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কিন্তু এপে গিয়ে একটা বই ডাউনলোড দিতে গিয়ে দেখি এমবি শেষ। বিকাশে গিয়েও দেখি টাকা নেই। বিকাশে টাকা ভরিয়ে রাখতে ভুলে গিয়েছিলাম। এখন এত রাতে ফ্লেক্সিলড কীভাবে পাই? মুসিবতে পড়ে গেলাম। খানিক ভেবে ইমারজেন্সি ব্যালেন্স এনে ইতস্তত করে নিষাদকে কল দিলাম। রিসিভ করেই ও যেন হাঁপানোর মতো ‘হ্যালো’ বললো।
– ‘নিষাদ, কি করছিস?’
– ‘খেয়ে এসে শুয়ে আছি, আজ তোর লাইভ অনেক সুন্দর হয়েছে। কিন্তু তুই হঠাৎ কি মনে করে কল দিলি।’
– ‘কেন আমি কল দিতে পারি না কল?’
– ‘পারবি না কেন, কিন্তু তুই সেলিব্রিটি মানুষ আমার হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজই দেখিস না। তাই বিশ্বাস করতে পারছি না।’
‘ভালোই ঢং করে কথা বলে শিখেছিস তুই। শোন নিষাদ, ইমারজেন্সি টাকা এনে কল দিয়েছি। আমার এই মাঝরাতে এমবি শেষ হয়ে গেছে। তোর বিকাশে কী টাকা আছে। কাল এলে দিয়ে দেবো।’
– ‘কত দেবো বল।’
– ‘আমি তো একমাসের জন্য করে নিই একেবারে। তুই এক হাজার দিয়ে দে। এক্সট্রা থাকলে কাজে লাগবে।’
‘আচ্ছা দিচ্ছি’ বলে কল রেখে মিনিট কয়েকের ভেতরে টাকা পাঠিয়ে কল দিয়ে বসলো।
– ‘হ্যালো, টাকা পেয়েছিস।’
– ‘হ্যাঁ এসেছে, ধন্যবাদ।’
– ‘এজন্য আবার ধন্যবাদ দিতে হয় না-কি। তা কি করছিস এখন।’
– ‘এইতো শুয়ে আছি।’
সে এবার একের পর এক প্রসঙ্গ টেনে কথা বলতে শুরু করেছে। ফোন রাখার নাম নেই। আমি বিরক্ত হচ্ছি। কল রাখতে চাচ্ছি। কিন্তু সরাসরি বলতেও পারছি না। মিনিট বিশেক পর বললাম, ‘নিষাদ, আমি এমবি করেছি কিছু ই-বুক ডাউনলোড দিয়ে পড়বো তাই৷ রাখি এখন, কাল আসিস সন্ধ্যায়।’
সে এবার ই-বুক নিয়ে শুরু করলো প্রশ্ন। ‘ই-বুক কী, ই-বুক কীভাবে পড়তে হয়।’
আমি তাকে বুঝিয়ে বললাম ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স এসবের মতো বইয়েরও একটা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। সেখানে টাকা পেমেন্ট করে বই কিনে পড়া যায়। সেও এবার পড়তে চাইলো ই-বুক। বিরক্তি চেপে রেখে কীভাবে ডাউনলোড দেবে সবকিছু তাকে বলে দিতে হলো। কলে থেকে প্লেস্টোর থেকে বইটই এপস ডাউনলোড দিল। আমার পছন্দের বইয়ের নাম জেনে নিয়ে সেগুলো কিনলো। ডাউনলোড দিল। এরপর আমি নিস্তার পেলাম। ফোন রেখে আমি বইগুলো ডাউনলোড দিয়ে একটা উপন্যাস পড়তে শুরু করেছি। মিনিট বিশেক পরই হোয়াটসঅ্যাপে নিষাদের মেসেজ আসতে শুরু করলো। উপন্যাসের কোথায় কি হচ্ছে, এটা ভালো লাগছে, ওর এই কথা শুনে আমি হাসতে হাসতে শেষ ইত্যাদি বলে কিছুক্ষণ পর পর মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে। আমি একপর্যায়ে ওকে হোয়াটসঅ্যাপে মিউট করে রেখে পড়ায় মনযোগ দিলাম। রাত একটায় প্রকাশক অর্নব আহমেদ ‘শুভ রাত্রি’ বলে মেসেজ দিয়েছে। সে আবার ই-বুকের ঘোর বিরোধী মানুষ, তাই ওকে এই বিষয়ে না বলে কেবল রিপ্লাইয়ে ‘শুভ রাত্রি’ জানিয়ে আবার বই পড়ায় মনযোগ দেই।
রাত তিনটার দিকে পড়তে পড়তে কীভাবে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি। আম্মুর ডাক শুনে ঘুম থেকে উঠে দেখি ফোন পিঠের নিচে।
– ‘কি হয়েছে আম্মু?’
– ‘তোর বাপের কী হইছে দেখতো আইসা। মাথা না-কি কেমন চক্কর দিতাছে। পইড়া যাচ্ছিল আগে, আমি ধইরা নিয়া বিছানায় শুইয়ে দিছি। ঠান্ডার জন্য মাথায় পানিও দিতে পারতেছি না।’
আমি জুতো পায়ে দিতে দিতে বললাম, ‘কেন? হঠাৎ কেন এমন করছে আব্বার?’
– ‘করবো না? তুই কি বুঝবি মা-বাপের যন্ত্রণা। মানুষটা তো সারাক্ষণ তোর চিন্তায় অস্থির।’
আমি আর কথা বাড়াতে গেলাম না। এখন দুনিয়ায় যা ঘটবে আম্মু সবকিছুরই দোষ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দেবেন। গিয়ে আব্বার পাশে বসে মাথায় হাত রেখে বললাম, ‘কি হয়েছে আব্বা? শরীর দূর্বল লাগছে না-কি? না প্রেসারের সমস্যা হলো?’
আব্বা গোঙানির মতো কেবল শব্দ করলেন। আব্বা জীবনের অর্ধেক সময় সৌদি কাটিয়েছেন। সেখানে থেকে জায়গা-জমি কিনলেন। গাড়ি দুইটা কিনে ভাড়া দিলেন আর এই বাড়ি বানালেন। সবশেষে আমাকে বিয়ে দিয়ে একেবারে নিশ্চিন্ত হয়ে দেশে ফিরলেন। কিন্তু দুশ্চিন্তা আর পিছু ছাড়েনি মানুষটার। আমি ক্ষীণ সময় ভেবে বললাম ‘আম্মু, বাজার থেকে ডাক্তার আনা দরকার। তাহলে প্রেসার-ট্রেসার মেপে দেখে গেল।’
– ‘ডাক্তারের তো নাম্বার নাই।’
আমি ক্ষীণ সময় ভেবে বললাম, ‘নিষাদকে কল দেই ও বাজারে আছে, ডাক্তারকে পাঠাতে পারবে।’
– ‘হ্যাঁ দে, কল দে ওকে।’
আমি নিষাদকে কল দিয়ে আব্বার অসুস্থতার কথা বললাম। সে শুনে অস্থির হয়ে গেল। আমি বারবার করে বললাম একজন ডাক্তারকে আমাদের বাড়ি কীভাবে আসতে হয় বলে পাঠিয়ে দিলেই হবে। তিনি রিকশা নিয়ে চলে আসতে পারবেন, তুই দোকান ফেলে সাথে আসতে হবে না। সে ভীষণ রাগারাগি করলো একথা শুনে।
চাচার অসুখ থেকে কী দোকান বড়ো হয়ে গেছে? আমার বাপের অসুখ হলে কী আমি দোকানে বসে থাকতাম। তুই ফোন রাখ আমি দেখছি।
আধাঘণ্টার ভেতরে একজন ডাক্তার বাইকের পেছনে নিয়ে এসে হাজির সে। ডাক্তার আব্বাকে দেখে স্যালাইন দিল। কিছু খাবার সাজেস্ট করলো। দুশ্চিন্তা কম করতে বললো। চা-নাশতা দিয়ে ফি দিলাম। নিষাদ আবার ডাক্তারকে বাইকে করে নিয়ে চলে গেল। সে যাওয়ার পর আম্মু আমাকে বললেন, ‘দেখলি তো ছেলেটা কত ভালো? দোকান ফেলে বিপদ শুইনা চইলা এসেছে। তারপরও তুই তাকে সহ্য করতে পারিস না। এমন পোলা লাখে একটা হয় বুঝলি…।’
আম্মুর বকবকানি আর না শুনে আমি উঠে নিজের রুমে চলে এলাম। ঠিক সন্ধ্যায় নিষাদ চলে এলো। আজ সে কালো একটা জ্যাকেট পরেছে, নিচে ব্লু কালার গেঞ্জি। রুমে ঢুকতেই পারফিউমের গন্ধ পেলাম। দেখতে ওকে মন্দ লাগে না আজকাল। চেয়ার টেনে বসলো সে। আমি বারান্দায় ছিলাম। এসে বিছানায় বসে বললাম, ‘তুই যে আসিস কেউ কিছু বলে না?’
– ‘না, কে কি বলবে? তাছাড়া আমি যে আসি কেউ তেমন খেয়ালও করে না।’
– ‘কী যে বলিস। মানুষ ঠিকই দেখবে। তাছাড়া আজ দিনে যে এলি সবাই তো দেখলো।’
– ‘তাতে কী হয়েছে? তুই এত ভয় পেলে আর আসবো না আমি।’
ও রেগে গেছে দেখে আমি ‘স্যরি’ বলে বললাম ‘বাদ দে, আয় খেলি আমরা’ বলে লুডু নিয়ে বিছানায় বসলাম। দু’জন কয়েক চাল দেয়ার পর নিষাদ পকেট থেকে তিনটা চকলেট বের করে বললো, ‘খেয়ে খেয়ে খেল।’
তাকিয়ে দেখলাম ডার্ক চকলেট একটা আর ডেইরি মিল্ক দুইটা। আমি রূঢ় গলায় বললো, ‘এসব কেন আনিস নিষাদ, আমার একদম পছন্দ না।’
সেও এবার রাগ দেখিয়ে বললো,
– ‘তুইই বেশি বাড়াবাড়ি করিস নূপুর, এগুলো কী বন্ধু হিসাবে খাওয়ানো যায় না? খা, খেলে তোর জাত যাবে না।’
আমি কিছু না বলে ডার্ক চকলেট ছিঁড়ে খেতে শুরু করলাম। হঠাৎ খেলা করে দেখি নিষাদ চাল না দিয়ে ‘হা’ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ফিক করে হেসে বললাম, ‘কিরে তুই এভাবে তাকিয়ে থাকলে তো পরে পেটে অসুখ করবে, তুই ডেইরি মিল্ক একটা খা।’
সে ঘোর লাগা গলায় বললো, ‘চকলেট তো ঠোঁটে লেগে আছে। দেখ বাচ্চাদের মতো লাগছে।’
আমি জিভ দিয়ে ঠোঁট চেটে নিয়ে বললাম, ‘ঠোঁটে চকলেট লেগে থাকলেই বুইড়া মেয়ে যদি বাচ্চাদের মতো হয়ে যেত। তাহলে সকল বুড়ো মহিলার পুরো মুখে চকলেট মাখিয়ে হাঁটতো।’
সে ঝটপট উত্তর দিল, ‘সবাই কী আর নূপুর?’
আমি মাথা তুলে ওর দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেলাম। ও আমাকে এত স্পেশাল ফিল করায় কেন? আমি কী আসলেই এরকম কেউ? তাহলে কেন সাহেদের কাছে অমন উপেক্ষার পাত্র ছিলাম? আমি দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বললাম, ‘তুই একটা বিয়ে কর নিষাদ, তোর বউ অনেক ভাগ্যবতী হবে।’
নিষাদ লাজুক হেসে বললো, ‘ধ্যাৎ, কোত্থেকে কোথায় চলে গেছে’ তারপর ক্ষীণ সময় পরে বললো ‘জানিস আমি আমাদের বাড়ির পেছনের দিকে আরও রুম বাড়াবো। বিয়ের পর আমার বউয়ের জন্য আলাদা একটা রুম থাকবে, সেখানে ওর জন্য অনেক বই রাখবো। সে যখন ইচ্ছা সেখানে গিয়ে শান্তিমতো বই পড়বে।’
আমি ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে বললাম, ‘বাবা, তাই না-কি? কিন্তু তোর বউ যে বই পড়ুয়া হবে তা কীভাবে বুঝলি?’
নিষাদ কেন যেন অপ্রস্তুত হয়ে গেল। ইতস্তত করে বললো, ‘যদি বই পড়ুয়া হয় আরকি।’
আমি আর কিছু বললাম না৷ ও কি আমাকে এগুলো বলে প্ররোচিত করতে চাচ্ছে? এগুলো নিয়ে আর কথা না বাড়িয়ে খেলায় মনযোগ দিলাম। নিষাদ ক্ষীণ সময় পর বললো, ‘তুই তো ওইদিন বললি বাসায় সারাদিন বোরিং লাগে। বেড়াতে যাবি কোথাও?’
– ‘কীভাবে?’
– আঙ্কেল অসুস্থ যেহেতু একা তো আর যেতে পারবি না। তুই চাইলে রেডি হয়ে রিকশা নিয়ে চাঁদগাও বাজার পার হয়ে যাবি। এরপর আমি হেলমেট পরে বাইক নিয়ে তুকে তুলে নিয়ে চলে গেলাম। তুইও মাস্ক বা বোরখা পরে নিলে কেউ চিনবেও না।’
ওর প্রস্তাব লোভনীয়। এভাবে বেড়াতে যেতে পারলে ভালোই লাগতো। তবুও নিষাদকে এত প্রশ্রয় দেয়া উচিত হবে না ভেবে আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, ‘না না, এভাবে আমি তোর সাথে বেড়াতে যেতে পারবো না। তুই কোত্থেকে একেকটা কথা বলিস বুঝি না।’
নিষাদের মুখ ম্লান হয়ে গেল। সে মলিন চেহারায় বললো, ‘আচ্ছা থাক, এমনিই বলেছিলাম আরকি।’
মা রোজকার মতো চা নিয়ে এলেন। আমাদের সঙ্গে বসলেন। গল্প করলেন। নিষাদ চা খেল। আবার খেলা শেষে চলে গেল। আম্মু ডেইরি মিল্ক দেখে বললেন, ‘নিষাদ এনেছিল না-কি?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘খেয়েছিস তুই?’
– ‘হ্যাঁ, তুমি খেতে হলে নাও একটা।’
আম্মু একটা ডেইরি মিল্ক হাতে নিয়ে বললেন, ‘ভুল করেছি, সাহেদের কাছে বিয়ে না দিয়ে ওর কাছে দিলেই ভালো হতো।’
আমি কিছু বললাম না। আম্মু আফসোস করে আরও কত কথা বলতে বলতে চলে গেলেন। আমার হঠাৎ তখন মনে পড়লো নিষাদের টাকাটা দেয়া হয়নি।
__চলবে…
লেখা: জবরুল ইসলাম