আমার হায়াতি পর্ব-০৩

0
4

#আমার_হায়াতি
পর্ব : ৩
লেখিকা : #Nahar_Adrita

সুন্দর সকাল মানে শুধু একটি সময় নয়—এটি একটুকরো প্রশান্তি, নতুন শুরুর আশ্বাস। যখন সকালের আলো জানালার ফাঁক দিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে, বাতাসে থাকে শিশিরের স্নিগ্ধতা, পাখির কুজন শোনা যায়, তখনই তাকে বলে “সুন্দর সকাল।”

হায়াতের সকালটায় শুরু হলো সুন্দর একটি মেসেজের মাধ্যমে। সাদাদ আদিব চৌধুরী আইডি থেকে একটি মেসেজ এসেছে,
– জান ঘুম ভেঙেছে। লাভ ইউ বউজান।
হায়াত ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে লিখলো,
– হু।
– খেয়েছো।
– উহু। আপনি।
– আমিও না চলো ধামরাই রথে নিয়ে যাবো তোমায়, তারপর একসাথে কলেজে।
– সেটা কোথায়।
– ধামরাই থানা, আমি নিয়ে যাবো তোমার চিনতে হবে না।
– আচ্ছা, আমি কি পড়বো।
– কেনো বোরকা। বেবি তোমাকে পর্দা ছাড়া আমি তো বের হতে দিবোই না।
– তাই।
– হু,কজ তুমি আমার একটা মাত্র শখের নারী।

হায়াত ওঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো। সালেহা বেগমকে বললো,আদিবের সাথেই খেয়ে নিবে হায়াত। গেটের সামনে আসতেই দেখলো একটা কালো গাড়ি। মুচকি হেসে এগিয়ে গেলো হায়াত। আদিব হেসে বললো,
– উঠুন মেডাম।
– আব্ আ আমি কোথায় বসবো।
-কেনো সামনে, তুমি চাইলে আমার কোলেও বসতে পারো।
হতবাক হয়ে গেলো হায়াত। তাড়াতাড়ি করে সামনে আদিবের সাথে বসে পড়লো।সামান্য হাসলো আদিব।

গাড়িতে বসে হায়াত জানালায় পাশে মাথা হেলিয়ে প্রকৃতি দেখছিলো। ওর চোখে মুখে এক ধরনের প্রশান্তি। গাড়ি চলছিল ধীরে, ধামরাইয়ের গ্রামের রাস্তা পেরিয়ে রথযাত্রার দিকে। জানালার বাইরে সোনালি রোদে ভেজা ধানক্ষেত, হালকা বাতাস, আর হায়াতের চুপচাপ থাকা—সব মিলিয়ে এক নিঃশব্দ গল্প বলছিল যেন।

আদিব হঠাৎ গ্লাভ বক্স থেকে মোবাইলটা বের করে গাড়ির সাউন্ড সিস্টেমে একটা গান ছেড়ে দিল—
“স্টেশনের কোনো এক প্রহরে,,
দেখেছিলাম আমি তোমাকে ”

গানের প্রতিটি শব্দ যেন হায়াতের ভেতরকার আবেগকে ছুঁয়ে গেল। সে চুপচাপ, চোখ বুজে বসে রইল। আদিব একবার তার দিকে তাকিয়ে দেখল—তরল চোখ, কিন্তু শান্ত।হায়াত ধীরে ধীরে বললো,

— আপনি জানেন , এই গানটা শুনলে আমার মন কেমন যেন নরম হয়ে যায়,

আদিব হালকা হেসে বলল,
__ ইস জান না জেনেই তোমার পছন্দের গান ছেড়ে দিয়েছি।

চারপাশের মানুষ, উৎসব, রথ, ভিড়—সব যেন কিছুটা দূরে ছিল তাদের থেকে। ওই মুহূর্তে শুধু ছিল একটা চলন্ত গাড়ি, একখণ্ড গান, আর নীরব ভালোবাসা।
গাড়ি থেকে নামলো হায়াত আদিব। হায়াতের হাত ধরে হাটছে আদিব। একটা দোকানে এসে দাড়ালো দুজন।আদিব বললো,
– চাচা বউয়ের যা যা ভাল্লাগে সব দিন।
– আমার কিছু লাগবে না তো।
– হুসসস কোনো কথা না। যা লাগবে নিয়ে নাও।
– আচ্ছা।
এরপর হায়াত কিছু কাচের চুড়ি নিলো। দুজন আরেকটু ঘুরে কলেজের দিকে পা বাড়ালো। আদিব গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
– হায়াতি তুমি ক্লাসে যাও আমি একটু পর হয়তো তোমাদের ক্লাস নিবো।
– আচ্ছা স্যার।
– স্যার কে ?
– আব্ আপনি
– আমি তোমার আদিব। কি বলবে
– আ্ আদিব ভাইয়া।
– আদিবের সাথে ভাইয়া এড করছো কেনো।
– আদিব।
– হু ক্লাসে যাও। আর কেউ ডিস্টার্ব করলে বলবা, আমি আদিবের বউ। মনে থাকবে।
– হু।

কলেজ বিল্ডিংয়ের সামনে এসে একটু থমকে দাঁড়াল। এত বড় ভবন, এত অপরিচিত মুখ! কিন্তু মুখে সাহসী এক হালকা হাসি রেখে ধীরে ধীরে ক্লাসরুমের দিকে পা বাড়াল।

ক্লাসরুমে ঢুকতেই চারপাশে কয়েক জোড়া চোখ তার দিকে তাকালো। কারও মুখে বিস্ময়, কারও মুখে প্রশংসার ছাপ। হায়াত একটু লজ্জা পেলেও নিজেকে সামলে নিল। একটা খালি বেঞ্চ খুঁজে বসে পড়ল। পাশে বসা মেয়েটা নিজে থেকেই মুখ ঘুরিয়ে হেসে বলল,

— “হাই! আমি আরাবি । তুমি তো নতুন, তাই না?”

— “হ্যাঁ। আমি আফরা শিকদার হায়াত। আজই প্রথম ক্লাস।”

— “ওয়াও! ওয়েলকাম টু হেল!” আরাবি হেসে ফেলল।
— “মানে?” হায়াত চোখ গোল গোল করে তাকাল।

— “আরে, এই টিচাররা, এই নিয়ম, ক্লাসটেস্ট, সাজেশন–সব মিলিয়ে কলেজ লাইফ একটু ঝামেলার। তবে মজাও আছে অনেক!”

হায়াত হেসে ফেলল, অনেকটা স্বস্তি পেল মনে। প্রথমবারের মতো কলেজটাকে আপন মনে হলো। আরাবি জিজ্ঞেস করল তার স্কুলের কথা, হায়াত বলল তার স্বপ্নের কথা। এরপর গল্পে গল্পে সময় কেটে গেল।

হঠাৎ ক্লাসে ঢুকলেন ইংরেজি স্যার। গম্ভীর মুখে বললেন,

— “New student, right? What’s your name?”

হায়াত উঠে দাঁড়িয়ে একটু নার্ভাস হয়ে বলল,
— “Sir, my name is Hayat.”

স্যার হালকা মাথা নাড়িয়ে বললেন,
— “Okay Hayat, let’s see how you perform in class.”

হায়াত বসে পড়ল। পাশে বসে আরাবি হঠাৎ কানে কানে বলল,
— “এই স্যার কিন্তু খুব স্ট্রিক্ট। তবে ভয় পাস না, আমি আছি পাশে।”

হায়াতের মুখে ছোট্ট একটা হাসি ফুটে উঠল। আজকের দিনটা তার কলেজ জীবনের এক সুন্দর সূচনা হয়ে রইল—একটা নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধু, আর একরাশ নতুন সম্ভাবনা।

কলেজ শেষে গেটের সামনে ভিড় জমেছে। হায়াত আর আরাবি ধীরে ধীরে হেঁটে বাইরে বের হচ্ছিল। হালকা রোদে হায়াতের চুলগুলো উড়ছিল বাতাসে। হেসে হেসে কিছু বলছিল আরাবিকে—হাসিটা নিঃশব্দ অথচ প্রাণবন্ত।

ঠিক সেই সময় মাঠের দিক থেকে এক ছেলে এগিয়ে এলো। ক্লাসমেট, নাম রিফাত। চুপচাপ ছেলেটা, হঠাৎ আজ যেন সাহস জমেছে বুকের ভেতর। চোখে অদ্ভুত এক ভঙ্গি নিয়ে বলল,

— “হায়াত, আমি তোমাকে প্রথম দেখাই ভালোবেসে ফেলেছি। প্লিজ, না করো না। একটা সুযোগ দাও।”

হঠাৎ চারপাশে ছেলেমেয়েরা থেমে তাকিয়ে গেল। আরাবি থ হয়ে গেল, হায়াত হতবাক। সে কিছু বলার আগেই পেছন থেকে কঠিন পা ফেলে এগিয়ে এলো আদিব স্যার। চোখ জ্বলছে তার, মুখ কালো মেঘের মতো গম্ভীর।

— “এত সাহস! আমার সামনে এসব ? bastard

বুঝে ওঠার আগেই হায়াতের গালে ঠাসসসস করে একটা চড় মাড়লো আদিব।

সবাই চুপ।

হায়াত থমকে গেল। চোখে পানি চলে এলো, লজ্জায়, অপমানে, আর বেদনায়। রিফাত তো দৌড়ে পালাল। চারপাশে ফিসফাস।

আদিব স্যারের কণ্ঠ কাঁপছে রাগে,

— তুই কী ভাবিস, এই সব চলতে দেবো আমি ? নিজের সম্মানটুকু বুঝিস আগে,তোর আমি কি হয় কাউকে বললি না কেনো।

হায়াত এবার কিছু বলল না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। আরাবি ছুটে এলো, তার হাত চেপে ধরল।

— “স্যার ! হায়াত তো কিছু করেনি! ওই ছেলেই হায়াতকে প্রস্তাব দিলো।

আদিব থমকে গেল। হঠাৎ যেন বুঝে ফেলল সে একটু বেশিই করে ফেলেছে। কিন্তু মুখে কোনো দুঃখ নেই তখনো, কেবল ঠোঁট চেপে বলল,

— জড়িয়ে ধরো। ( ধমকে ওঠলো আদিব)
কি হলো কথা কানে জাচ্ছে না তোমার। আদিবের ধমকে কেঁপে ওঠে হায়াত। মাঠে সকলের সামনেই হেঁচকি তুলে কান্না করতে করতে জড়িয়ে ধরলো হায়াত।
– এভাবে না,ভালোবাসার মানুষকে যেভাবে ধরতে হয় সেভাবে ধরো।
হায়াত নিজের সর্বোচ্চ ভালোবাসা দিয়ে আদিবকে জড়িয়ে ধরলো। আদিবের চোখে মুখে হাসির রেশ দেখা গেলো।এরপর হায়াতকে নিয়ে সাভার রেস্টুরেন্টে এলো আদিব। মিষ্টি স্বরে হায়াতকে বললো,
– সরি হায়াতি, আমি বুঝতে পারিনি।আসলে রাগ ওঠলে আমার মাথা ঠিক থাকে না,বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছে করে তোমার গালে চড় দিই নি।
– হুহহহ মেরে ফেলতেন,এভাবে সবার সামনে অপমান না করে।

হায়াতের কথায় আদিব চুপসে গেলো।বুকে শক্ত করে চেপে ধরলো কিছুক্ষণ। এরপর পরম যত্নে হায়াতের কপালে চুমু খেলো আদিব।

হায়াতের গালে চুমু খেলো আদিব। সকলের উদ্দেশ্যে বললো,
– ও হচ্ছে আফরা সিকদার হায়াত। আমাদের কালকে এনগেজমেন্ট হয়েছে।ওর দিকে যে চোখ তুলে তাকাবে তার শরীরের মাংস কুকুরকে খাওয়াবো মনে রেখো।

চলবে….