আমার হায়াতি পর্ব-১৫

0
9

#আমার_হায়াতি
পর্ব : ১৫
লেখিকা : #Nahar_Adrita

রাত ৮টা। ঘর জুড়ে নরম আলো, ছায়া-আলো মিশে একটা শান্ত পরিবেশ। আদিব আধশোয়া হয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। তার চোখে একটু ক্লান্তি, মুখে হালকা একটা প্রশান্তি।

হায়াত হাতে এক বাটি গরম স্যুপ নিয়ে কাছে এসে বসল। ধীরে ধীরে চামচে করে আদিবকে স্যুপ খাওয়াতে লাগলো। আদিব প্রথমে একটু অনাগ্রহ দেখালেও হায়াতের আদরভরা চোখের দিকে তাকিয়ে আর না বলতে পারলো না।

স্যুপ শেষ হলে আদিব মোবাইলটা হাতে তুলে নিলো।

– একটু খেলি হায়াতি…

বলে সে ফ্রী ফায়ার গেমে ডুবে গেলো। হায়াত পাশেই বসে রইলো চুপচাপ, তার চোখে প্রশ্রয় আর ভালোবাসা।

মোবাইলের স্ক্রিনে গেমের তীব্র শব্দ চললেও, ঘরের ভেতর এক অদ্ভুত শান্তির আবেশ। দু’জনের ভালোবাসা এই নীরব মুহূর্তেও স্পষ্টভাবে ধরা দেয়—যেখানে যত্ন, সঙ্গ আর একসাথে থাকার নামই ভালোবাসা।

হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। স্ক্রিনে ভেসে উঠলো “খুশিপু” নামটা। হায়াত ধীরে উঠে বিছানা থেকে বেরিয়ে বেলকনির দিকে এগিয়ে গেলো।

বাইরে হালকা ঠান্ডা হাওয়া বইছে, দূরে কোথাও কুকুরের ডেকে ওঠা, আর শহরের ব্যস্ততা ধীরে ধীরে থেমে যাচ্ছে। হায়াত বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে কলটা রিসিভ করলো।

— “হ্যালো খুশিপু, কেমন আছো ?” হায়াতের কণ্ঠে একরাশ আপনতা।

ওপাশ থেকে খুশির চঞ্চল গলা ভেসে এলো,
— তুমি কি করছিলে ? আমি ভাবলাম একটু কথা বলি… মনটা কেমন জানি করছে আজ।

হায়াত আকাশের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো।
— ওনাকে স্যুপ খাইয়ে দিছিলাম। এখন গেম খেলছে,
– তোমার ভাইয়া যে করে আসবে,আমার আর ভাল্লাগে না।
– ইসরে কি,, আমার আপাইটা ভাইয়াকে বুঝি খুব মিস করে।
– ফাজলামো করছো,আমি সিরিয়াস।
– আল্লাহ, আপাই আমিও ভীষণ সিরিয়াস।

হায়াত বেলকনিতে দাঁড়িয়ে এখনো ফোনে কথা বলছে, কণ্ঠে মাঝে মাঝে হাসি, মাঝে মাঝে সিরিয়াস গলা।

ঘরের ভেতর থেকে আদিব প্রথমে গেম খেলতে খেলতেই এক কান দিয়ে হায়াতের কথাগুলো শোনার চেষ্টা করলো। তারপর হঠাৎ গেমটা অফ করে দিলো।

মনে এক ধরণের অস্বস্তি—”কে হতে পারে? এত আপন করে কথা বলছে কেন?”

সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো। ফোনের চার্জ দেওয়ার অভিনয় করে ওদিক গেলো,কিন্তু চোখ পড়ে আছে বারান্দার দিকে।

হায়াত তখনো খুশির সাথে কথা বলছে, কিন্তু আদিবের তো কে খুশি আর কে খুশির ভাবি, এসব মাথায় নেই এখন।

এক সময় সে ধীরে ধীরে হায়াতের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। হায়াত তখনো কথা বলছে, আদিব চুপচাপ পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো।

হায়াত তাকিয়ে মুচকি হাসলো, চোখে একটু দুষ্টুমি,বললো,

— আমার খুশিপু এটা , এমনভাবে পেছনে ঘোরাফেরা করার মানে হয় কোন..

আদিব একটু ভান করলো, যেন কিছু না হয়েছে,

— না মানে, তুমি তো অনেকক্ষণ ফোনে… ভাবছিলাম কিছু হলো বুঝি।

হায়াত হেসে বললো,
— বাব্বাহ এতো সন্দেহ করেন।

– উহু বউ সন্দেহ করছি না,আমি তো এমনিই আসললাম।
– জানি জানি…

আদিব একটু লজ্জা পেয়ে হালকা হাসলো,
তারপর বললো,
— ঠিক আছে, এবার ফোন রেখে এসো। আমারও একটু দরকার আছে তোমার…

হায়াত হেসে ফোনে কথা শেষ করলো, আর ওদের নিঃশব্দ ভালোবাসায় আবার নতুন এক পরত যোগ হলো।
আদিব তারপর হঠাৎ চঞ্চল গলায় বললো,

— চলো জান, আজ তোমাকে ফ্রি ফায়ার খেলাটা শেখাই।

হায়াত তখন চুপচাপ বসে ছিলো, তার মুখে অবিশ্বাস আর অল্প রাগ মেশানো এক্সপ্রেশন। ভুরু কুঁচকে বললো,

— না না, আমি এসব গেম টেম খেলবো না !

– কেনো লাজুকপাখি।

– ওসব গোলাগুলি আমার একদম ভালো লাগে না!”

আদিব চোখ টিপে মুচকি হেসে বললো,
— আরে একবার খেলো না! আমি পাশে থাকবো, গুলি লাগবে না তোমার!

— বললাম না খেলবো না!

বলে হায়াত বিছানা থেকে উঠে দৌড় দিলো ঘরের বাইরে।

আদিব হেসে উঠলো,
— আরে দাঁড়াও না! শেখাবো না বলছি, এখন ধরবো!

এই বলে সেও উঠে পেছনে পেছনে ছুটলো। ঘরের এক মাথা থেকে আরেক মাথা, তারপর বারান্দা, তারপর সিড়ি দিয়ে রান্নাঘর—সারা বাড়িতে এক নিঃশব্দ ছোটাছুটি, মাঝে মাঝে হায়াতের হাসির ঠাঁই ঠাঁই শব্দ, আদিবের “একবার ধরলেই শেষ!” টাইপ চিৎকার।

দৌড়াদৌড়ির পরে হায়াত ক্লান্ত হয়ে হাফাতে হাফাতে সোফায় বসলো। আদিব পেছন থেকে এসে ধপ করে পাশে বসে পড়লো। তারপর হঠাৎ এক টানেই হায়াতকে নিজের কোলে টেনে বসিয়ে ফেললো।

হায়াত চমকে উঠে বললো —

– এই কি করছেন,নামান আমাকে।

আদিব হেসে বললো —

– না না, এখন তুমি এখানেই থাকবে। আমার ‘লাকি চার্ম’ হয়ে বসে থাকো, তাহলে গেমটা ভালো খেলতে পারবো!

হায়াত ভুরু কুঁচকে রাগ দেখানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু মুখের কোণে হাসিটা ধরা পড়ে গেলো।
সে বললো —
– আচ্ছা কিন্তু বেশিক্ষণ না।

আদিব চোখ নামিয়ে মোবাইলে গেম ওপেন করলো,

– ওকে লাজুকপাখি,তোমার মতো সুন্দর কেউ যদি কোলে বসে থাকে, তবে যতই শত্রু আসুক—সব জিতে যাবো!

হায়াত তার বুকে হেলান দিয়ে একটু মাথা ঝুকিয়ে বসে রইলো। আদিব গেমে ডুবে গেলো—ফ্রি ফায়ার-এর গুলি, কভার, হেডশট আর হাতের গতির সাথে তার মুখে টুকটাক বিজয়ের হাসি।

রাত এগারোটা, আদিবের কোলে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে খেলা দেখছিলো হায়াত। হঠাৎ কোমরে কিসের যেনো গুঁতা লাগছিলো,হায়াত ভ্রু কুচকে আদিবকে বললো,

– শুনছেন,আমার না কোমড়ে কিসের যেনো গুঁতা লাগছে,আপনার পকেটে হইতো কিছু রেখছেন।
– হু জান,তুমি কোলে বসছো না….. এর জন্য জেগে গিয়েছে।
– ছিহহ,সরুন তো বা’ল।
– ধুর গেম পড়ে খেলবো আগে রোমাঞ্চ করবো। এই বলে হায়াতকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে গেলো,গলায় ঝোলানো ওড়নাটা ফ্লোরে পড়ে রইলো। আদিব জুড়ে জুড়ে গলায় ঘাড়ে চুমু খেতে লাগলো। হায়াত ছুটাছুটির চেষ্টা করতে লাগলো,মিন মিন করে বললো,
– আপনি গেম-ই খেলুন না,আমাকে জ্বালাচ্ছেন কেনো।
– আরে বউ তোমার সাথেই তো খেলবো বুঝতে পারছো না কেনো।
– উহু সরুন, নামান আমাকে।
– হুস বউ After I’m gone, we won’t be able to be intimate anymore.

এই বলে হায়াতকে শুইয়ে দিয়ে পরনের জামাটা খুলে ফেললো, আদিবের কথা শুনে হায়াত আদিবকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললো,
– মানে।
– কি৷
– কোথায় যাবেন আপনি ?
– উফফ বউ আমেরিকা যেতে হবে, কিছুদিন পর অফিসের কাজে,তোমাকে বলা হয় নি।
– কেনো যাবেন।
– আরে পাখি, মিটিংয়ের জন্য যেতে হয়,আগের বার আব্বু গিয়েছে এবার আমি যাবো।
– কতো দিনের জন্য।
– মাস খানেক।
হায়াত এবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো,
– আর আমি,আমি কিভাবে থাকবো।
– বউ কয়টা দিনেরই তো বেপার, আর তেমন সমস্যা হলে তোমার বোন লামিয়াকে বা তার সাথে আরাবিকে এনে রাখবে।
– আপনার মাথায় কি গু নাকি।
– না বউ, আমার মাথা পরিষ্কার।
– বা’লললল পরিষ্কার, বা”’ললক বলে।
– না বউ আমি সত্যিই পরিষ্কার দেখো…
– চুপ, আম্মু আবারও চলে যাবে ঢাকায়,বাসায় আমি আর আপনি ছাড়া কে আছি,আেনি চলে গেলে একা কিভাবে থাকবো,মানকাম লামিয়া,আরাবি আসলো,তো কতো দিন-ই বা থাকতে পারবে।
– আচ্ছা পাখি রাগ করে না, আমি আগেই এসে পরবো। এখন আসো আদর করি। এই বলেই আদিব হায়াতকে আবার শুইয়ে দিল, সারা মুখে রসনা দিয়ে লেহন করতে লাগলো, জুড়ে জুড়ে ঠোঁটে কামড়াতে লাগলো, হায়াত আদিবের চুল গুলো খামঁচে ধরলো। হায়াত আদিবের গালে গলায় বুকে জুড়ে জুড়ে বাইট দিতে লাগলো,আদিব হাস্কি স্বরে বললো,
– মুখে নিবা।
– উহু।
– কেনো জান,দেখো কতো সুন্দর,কতো কিউট আরে দেখো লাল টুকটুকে তুমি ছুঁয়ে দিলে আরো সুন্দর হবে,কালো না তো জান,তুমি চাইলে আমার বন্ধু সাব্বিরের পিক এনে দিব,ওর টা কালো।এখন দেখবা….
– ছিহহহ,কি বলেন এসব, ওয়াকককককককক,আমি তার টা দেখবো কেনো।
– তাহলে মুখে নাও।
– হাহহ দিন। এই বলে হায়াত আদিবের শিশ্ন মুখে নিল। আদিব হাস্কি স্বরে বললো,
– জান আরো জুড়ে জুড়ে চু’ষতে থাকো। হায়াতের শরীর গরম হয়ে ওঠলো, আদিব হায়াতের রতি কেন্দ্রে জুড়ে জুড়ে জিহবা দিয়ে লেহন করতে লাগলো।মিনিট বিশেক পর, আদিব এক হাতে হয়াতের চুলের খোঁপা ধরে,,,,, আদিব অসংখ্য চুমু খেলো হায়াতের মুখ জুড়ে, দুষ্টু হেসে বললো,
– জান শুরু করবো তার আগে তুমি বলে ফেলো,
– উহহহহহহ,আপ্ আব আহহহহহহ আপনি বলুন।

– না তুমি,

– বিসমিল্লাহ, আল্লাহুম্মা জান্িব্নাশ্ শাইতান, ওয়া জানِّিবিশ্ শাইতানা মা রাযাক্তানা।

আদিব অমায়িক হাসি দিলো,ধীরে ধীরে এগিয়ে আসলো,আদিবের নিঃশ্বাস হায়াতের মুখে আছড়ে পড়লো, এমন ভাবে চাপতে লাগলো,হায়াতের মনে হলো,যেন শরীর নয়, আত্না কাঁপছে।

———-
রাত একটা। ঘরে নিস্তব্ধতা।
আদিবের বুকের ওপর মাথা রেখে হায়াত কোমল স্বরে বললো,
— একটা গান শোনান তো… খুব মন চাচ্ছে।

আদিব হালকা হাসলো, আঙুল দিয়ে হায়াতের চুলে বিলি কেটে বললো,
— “কী ধরনের গান শুনতে চাও জান ?

– যা ইচ্ছা শোনান।
– গান শোনাবো, কিন্তু একটা শর্ত,
– কি শর্ত।
– আরেকটু আদর করবো তোমাকে, সেই পজিশনে….
– সরুন তো।
– আচ্ছা বউ আর লজ্জা পেতে হবে না…..

ভালোবেসে এইবার আয় কাছে তুই,,!
সব ভুলে একবার আয় তোকে ছুঁই,,!
ভালোভাবে দুজনে
ডুবেছি অতল,,!আয় তবে
এইবার ভালবাসি চল,,! কে আছে বল
তোরি মতন এমন,,!কে বুঝে বল বুঝে আমার এ’মন,,………………………………..!!!!

পুরো গানটা শেষ করে আদিব যখন চোখ মেলে তাকালো, দেখলো হায়াত গুটি মেরে তার বুকে ঘুমিয়ে পড়েছে। নিঃশ্বাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হায়াতের কপালের চুলগুলো নড়ছে হালকা করে। আদিব মুচকি হেসে হাতটা আরও জড়িয়ে ধরলো, যেন এই ক্ষণটা চিরকাল ধরে রাখতে চায়। তারপর নিঃশব্দে লাইটটা বন্ধ করে দিলো। ঘরটা নিঃস্তব্ধ, শুধু দুটো ভালোবাসার নিঃশ্বাস মিলেমিশে এক হয়ে আছে।

—-

সকাল বেলা
সূর্যের নরম আলো জানালার পর্দা গলে এসে পড়ছে বিছানায়। পাখিদের ডাকে হালকা কাঁপছে সকালের নীরবতা।
আদিবের ঘুম ভাঙলো হায়াতের নরম চুলে মুখ লেগে থাকার আবেশে।
সে চোখ খুলে দেখলো, হায়াত এখনো ঘুমিয়ে আছে তার বুকেই গুটিশুটি মেরে।
একটা হাতে হায়াতের পিঠে হালকা করে আদর করতে লাগলো সে।

একটুখানি নড়েচড়ে হায়াত আধো ঘুমে চোখ মেলে বললো,
– সকাল হয়ে গিয়েছে ?
– হু পাখি চলো,গোসল করে আসি।
– ক’টা বাজে…
– সাতটা, চলো তো গোসল করবো।
এই বলে হায়াতকে কোলে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়লো আদিব।পরম আবেশে হায়াতকে চুমু খেতে লাগলো। আদিব একটু ভ্রু কুচকে বললো,
– জান এতো দাগ কেনো গলায় ?
– আপনিই তো করেছেন এসব।
– ইসস বউ এবার থেকে আস্তে আস্তে তোমাকে খাবো।

গোসল শেষে দুজন একসাথে রুমে ফিরে এলো।
আদিব পরেছে সাদা পাঞ্জাবি আর হায়াত হালকা গোলাপি শাড়িতে যেন সকালবেলার রোদ হয়ে উঠেছে।
দুজনই আয়নায় একে অপরকে একবার করে দেখে নিলো—চোখে চোখ, ঠোঁটে হাসি।হায়াত মিন মিন করে বললো,
– আমি একটু লম্বা হয়েছি তাইনা।
– হ্যা এখন তাও বুক অব্দি হয়েছো,আগে তো পে*নিস অব্দি ছিলে।
– এটা কেমন কথা আমি আগেও আপনার বুকের একটু নিচে ছিলাম,মজা নিচ্ছেন আমার সাথে।
– না বউ।

কথা শেষ হয়ে ওরা ড্রয়িংরুমে এলো।
মিসেস অরোরা ওদের দেখে এক গাল হেসে বললেন,

— আহা, আমার জামাই-বউকে দেখলে মন ভালো হয়ে যায়!

হায়াত একটু লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো, আর আদিব পাশে বসে বললো,
– মা, হায়াত আজকে শাড়িতে একেবারে রাজরানীর মতো লাগছে, তাই না?

মিসেস অরোরা হাসতে হাসতে বললেন,
— তোমার চোখে তো হায়াত সবসময় রানি বাজান।

টেবিলে তখন ভাপ ওঠা খিচুড়ি, বেগুন ভাজি আর ডিমের কারি।
তিনজন একসাথে খেতে বসলো।
আদিব এক চামচ তুলে হায়াতের প্লেটে দিয়ে বললো,
— বউ আজ আমি তোমাকে খাওয়াবো, কাল তুমি আমায়।
– আচ্ছা।

এমন সময় দরজার ওপাশ থেকে গলার শব্দ ভেসে এলো—
– আমাকে ছাড়াই খাওয়া হচ্ছে।

আদিব, হায়াত আর মিসেস অরোরা একসাথে মাথা ঘুরিয়ে তাকালো।
দেখলো, আদিবের বাবা—চৌধুরী সাহেব—দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন। পরিপাটি পাঞ্জাবি, চোখে চশমা, কিন্তু মুখে একটা চিন্তিত ভঙ্গি।

আদিব উঠে গিয়ে সালাম করলো, হায়াতও নরমভাবে সালাম জানালো।
চৌধুরী সাহেব সোফায় বসে এক গ্লাস পানি খেলেন। তারপর সোজা বললেন,
— বাজান, একটা কথা ছিল… নেহা আর আদনানের বিয়ের ব্যাপারে কিছু ভেবেছো ?

ঘরটা এক মুহূর্তের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে গেলো।

আদিব একটু চুপ থেকে বললো,
— ভাবছি আব্বু, সময়টাও তো গুরুত্বপূর্ণ। ওদের কি মত আছে নেহার বা আমি বললেই কি ও শুনবে।

চৌধুরী সাহেব হালকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
— নেহা ভেঙে পড়ুক তা চাই না,নেহা আমি আমার মেয়ের মতো ভাবি আর আদনানও চুপচাপ… তুই কথা বলে দেখ মতামতটাও দরকার।

হায়াত চুপ করে বসে শুনছিলো। মিসেস অরোরা ধীরে বলে উঠলেন,
— যা ভালো হবে ওদের জন্য, তাই হওয়া উচিত। শুধু মনে রেখো, সম্পর্ক মানেই দায়িত্ব।

আদিব একবার হায়াতের দিকে তাকিয়ে বললো,
— আমি কথা বলবো নেহা আর আদনান দুজনের সাথেই। জোর করে কিছু হোক সেটা আমি চাই না।

চৌধুরী সাহেব মাথা নেড়ে বললেন,
— ভালো বলছো।

আদিব একটু গম্ভীর মুখে কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললো,
— আচ্ছা আব্বু, দেখি আজই আদনানকে মুম্বাই থেকে আসতে বলি। সামনাসামনি কথা বললেই ভালো বোঝা যাবে ওর মনটা ঠিক কী বলছে।

চৌধুরী সাহেব চোখে প্রশংসার ঝিলিক নিয়ে বললেন,
— এটাই তো চাই বাজান। সম্পর্ক মানে শুধু মিল নয়, বোঝাপড়াও দরকার।

মিসেস অরোরা একটু দুশ্চিন্তার ছায়া নিয়ে বললেন,
— আসুক আগে, তারপর একসাথে বসে সব বুঝে-শুনে ঠিক করা যাবে। হুটহাট কোনো সিদ্ধান্ত নিলেই তো হয় না।
______

দুপুর বারোটা।
রোদটা এখন উজ্জ্বল, কিন্তু চৌধুরী বাড়ির ড্রয়িংরুমে এক শান্ত হাওয়া বইছে।
মিসেস অরোরা হাতে চায়ের কাপ রেখে মোবাইলটা কানে তুললেন। স্ক্রিনে নাম ভেসে উঠলো—”আপা”।
কল কানেক্ট হতেই বললেন,

— আপা, একটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম…

ওপাশ থেকে হাসিমুখে উত্তর এলো,

— হ্যাঁ, বলো না। হায়াত-আদিব তো আজকাল দারুণ সময় কাটাচ্ছে, শুনছি!

মিসেস অরোরা হালকা হাসলেন,
— হুম, এখন তো একেবারে প্রাণ ফিরে পেয়েছে ওরা। কিন্তু আজ তোমার আর আমার মেয়ের কথাই বলতে চাচ্ছি।
— “নেহা?”

– হ্যাঁ। আমি আর চৌধুরী সাহেব সিদ্ধান্ত নিয়েছি—নেহা আর আদনানের সব ঝগড়া মিটমাট করে, ওদের বিয়েটা এবার ঠিক করেই ফেলবো। অনেক হয়েছে, এবার শান্তি দরকার ওদের জীবনে।

ওপাশে এক মুহূর্তের নীরবতা, তারপর ভরা কণ্ঠে নেহার মা বললেন,
– তুই যা বলিস, তাতেই আমি রাজি। নেহা তো এখনো চিন্তাই করতে পারে না। যদি ওরা একসাথে ভালো থাকে, আমি তোকে বাঁধা দিতে পারি না বোন।

মিসেস অরোরা একগাল হেসে বললেন,
– তাহলে ধরে নিচ্ছি, আমাদের মেয়েটার বিয়ে এবার সত্যিই হবে।

– হ্যাঁ, ইনশাআল্লাহ। শুধু একবার ওদের বসিয়ে খুলে কথা বলতে দে। মন থেকে যে কষ্টগুলো জমে আছে, সেগুলো ঝরে যাক।

মিসেস অরোরা জানালার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– হয়েই যাবে। আদিব আজই আদনানকে ডেকে পাঠিয়েছে। এবার নতুন শুরু হোক, এক ভালোবাসার বন্ধনে।

বিকেল চারটা।
চৌধুরী বাড়ির উঠোনে গাড়ির হর্ন বাজলো।
হায়াত জানালার পাশে দাঁড়িয়ে চুল শুকাতে শুকাতে তাকালো, আর আদিব দরজার দিকেই এগিয়ে গেলো।
গেট খুলতেই দেখা গেলো, সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট, এক হাতে সুটকেস টেনে আদনান দাঁড়িয়ে আছে। চোখে চশমা, মুখে পরিচিত সেই গম্ভীর ভাব, তবে চোখের কোণে ক্লান্তি।

আদিব এগিয়ে গিয়ে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরলো,
– আসলেন তাহলে।

আদনান হেসে বললো,
— তুমি ডেকেছো, আর আমি না আসি? তোমার গলায় তো আজকাল হুকুমের সুর!

দুজনের হাসির মধ্যে একটা পুরনো বন্ধন জেগে উঠলো।
মিসেস অরোরা দরজায় দাঁড়িয়ে বললেন,
— আসো বাবা, আসল। তোমার জন্য তো দুপুর থেকে খাওয়ার অপেক্ষা করে আছি।

আদনান ঘরে ঢুকতেই হায়াত সালাম জানালো।
— কেমন আছেন ভাইয়া ?
আদনান হালকা হাসলো,
— ভালো, অনেক ভালো এখন তোমাদের দেখে।

সন্ধ্যার পর।
চৌধুরী বাড়ির বাতিগুলো জ্বলছে, আদিব আর আদনান একপাশে বসে চা খাচ্ছে। তাদের কথার ফাঁকে মাঝে মাঝেই চুপচাপ হয়ে যাচ্ছে আদনান।

এই ফাঁকে, মিসেস অরোরা নিজের ঘরে গিয়ে মোবাইলটা হাতে তুলে নিলেন।
স্ক্রিনে চাপ দিলেন “নেহা” নামটার ওপর।
দূরে একটা ফোন বাজতে শুরু করলো…

— হ্যালো ?
— নেহা মা…… মিসেস অরোরার কণ্ঠটা একটু কাঁপা-কাঁপা।
— আহ্ খালামনি ! কী হইছে।

— মা আমি একটু অসুস্থ লাগছে… গাঁয়ের হাওয়া সহ্য হচ্ছে না আর। তুই যদি একটু আসতি… আমার মনটাও ভালো হতো।

নেহা চুপচাপ হয়ে গেল।
—তুমি ঠিক আছো তো,হায়াত ওরা কি বাড়ি না ? আমি আসছি… আজই। এখনই বের হচ্ছি।

— আচ্ছা আম্মু সাবধানে আয়।

ফোন কেটে দেওয়ার পর মিসেস অরোরা চুপচাপ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন।
চোখে ছিল আশার দীপ্তি—
দুইটা মন ভাঙা, কিন্তু দুইটাই একে অপরের জন্য ধুকছে। এবার শুধু একটু সামনে আসার দরকার। বাকিটা সময়ই ঠিক করে নেবে।

#চলবে