আমার হায়াতি পর্ব-১৯

0
6

#আমার_হায়াতি
পর্ব : ১৯
লেখিকা : #Nahar_Adrita

( যারা রোমান্টিক পার্ট পছন্দ করেন না তারা দয়া করে দূরে থাকুন।🚫🙏)

হাসপাতালের সন্ধ্যা,,,ধীরে ধীরে ঘন হয়ে আসছে সন্ধ্যার ছায়া। হাসপাতালের কেবিনে একটানা কাঁপছে অক্সিজেন মেশিনের শব্দ। হায়াত বিছানায় আধশোয়া, মুখটা কেবল একটু-আধটু সাদা আলোয় ধরা পড়ে। শরীর দুর্বল, চোখে ক্লান্তির ছায়া। তবু একটা প্রশান্তি যেন চারপাশে—আজ হাসপাতাল ছাড়বে সে।

আদিব এক কোণে দাঁড়িয়ে,মিসেস অরোরা ব্যাগ গোছাচ্ছে, ভাঁজ করে রাখছে হায়াতের জামা-কাপড়, ওষুধের প্যাকেট, চার্জার, নেহা চুপচাপ জানালার পর্দা সামলাচ্ছে, যেন বাইরে সন্ধ্যার মৃদু আলো একটু ঢুকতে পারে। মিসেস অরোরা হায়াতের দিকে মুচকি হেসে বললো,
– আম্মু কিছু খাবে,খেলে এখনি খাও আদনান এসে পরবে তো।
– উহু, বাড়ি যাবো।
– হ্যা আম্মু এইতো এখুনি রওনা হবো আমরা।

আদিব স্মিত হেসে বললো,
– বউ আসো কোলে নিই।হেটে যেতে পারবে তো।

শাশুড়ী আর নেহার সামনে এমন লাগামহীন কথা বলায় হায়াত একটু নাক সিটকিয়ে বললো,
– আমার মাথায় আঘাত লেগেছিল পায়ে না।
– না, আমি তোমাকে নিয়ে কোনো রিস্ক নেবো না।
– সরুন তো ভাল্লাগে না।

নেহা আর মিসেস অরোরা দুজনেই মুখ টিপে হেসে রুমের বাইরে চলে গেলো। আদিব যেনো এবার একটু স্বস্তি পেলো। ছোট্ট নিঃশ্বাস ফুকে হায়াতের পাশে বসলো। মৃদু আওয়াজে আদিব হায়াতকে বললো,

– পাখি চকলেট খাবে, অনেকগুলো কিনে দিব কেমন, আচ্ছা তুমি আর কি কি খেতে ভালোবাসো আমাকে একটা লিস্ট করে দিও, আমি যাওয়ার সময় নিয়ে যাবো। আমার পিচ্চি বউ,একদম ছোট্ট হয়ে গিয়েছে মুখটা,ইসসস।
এই বলেই হায়াতের কপালে ছোট্ট করে চুম্বন একে দিলো আদিব। হায়াত পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নিল। আদিব সুন্দর করে তার লাজুকপাখির চুল গুলো আঁচড়িয়ে বেনুনি করে দিলো। পরনের ওড়নাটা ভালো করে গলায় পেঁচিয়ে দিলো, হায়াত মুগ্ধ নয়নে দেখছে আদিবকে। মনে মনে বললো,(আল্লাহ আমি যে কতোটা ভাগ্যবতী ওনার স্ত্রী না হলে টের-ই পেতাম না,আলহামদুলিল্লাহ।) আদিব আলতো হেসে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো।

মিনিট দশেক পরেই রুমে প্রবেশ করলেন আদনান সহ বাকিরা। মিস্টার চৌধুরী স্নেহভরা কণ্ঠে বললেন,
– বাজান হায়াতকে কোলে তুলে নাও, ওর শরীর এখনো বেশ দূর্বল,হেঁটে গেলেই মাথা ঘুরে পড়ে যাবে।
– থাক আব্বু আমি যেতে পারবো।
– বউ জেদ করে না,বাবা ঠিক কথায় বলেছে।
– হ্যা আম্মু তুুমি অসুস্থ, সুস্থ হও তারপর হাটাহাটি করবে কেমন।

রাকিব চৌধুরীর কথায় সকলেই নিঃশব্দে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। ঘরে যেন মুহূর্তেই এক নিরব, যত্নময় পরিবেশ ছড়িয়ে পড়লো।

সকলেই নিজ নিজ ব্যাগ হাতে তুলে নিল।
নেহা আগলে নিলো হায়াতের প্রেসক্রিপশনের ফাইল।
আদিব নিঃশব্দ কোমলতায় পরম যত্নে হায়াতকে কোলে তুলে নিলো।
হায়াত যেন লাজুক এক বেড়ালছানা—লজ্জায় মুখ লুকিয়ে নিল আদিবের উষ্ণ পাজরে। আদিব ঠোঁট কামড়ে দুষ্টু হেসে বললো,
– বউ তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো সকলের সামনে।
– হু।
– হুস এতো লজ্জা পেতে হবে না,কিছুদিন পর বেবি হলে এমনিতেও সকলে জেনেই যাবে আমরা কি করি। ফিসফিস করে বললো আদিব।

হায়াত লজ্জায় দূর্বল হাতে আদিবকে কিল ঘুষি মারতে লাগলো।

——
গাড়িটি এসে থামলো চৌধুরী বাড়ির সামনে।
নিস্তব্ধ রাতের আকাশে যেন এক প্রশান্তির ছায়া নেমে এলো।আদিব ধীরে, অতি যত্নে হায়াতকে কোলে করে নামিয়ে আনলো,মনে হচ্ছিল, যেন কোনো মূল্যবান ধন আগলে রেখেছে সে।

বাড়ির ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করতেই চোখে পড়লো রঙিন কাগজে হাতে লেখা —

“স্বাগতম আমাদের পিচ্চি হায়াত বুড়ি”

সবাই হেসে উঠলো স্নেহে, আর হায়াত লাজুক হাসিতে মুখ নামিয়ে নিলো আদিবের বুকে।মিন মিন করে বললো,
– আমি পিচ্চি না হুহ।
হায়াতের কথায় সকলে হো হো করে আরেক চোট হেঁসে ওঠলো। আদিব আহ্লাদী স্বরে বললো,
– খবরদার #আমার_হায়াতি – কে কেউ পিচ্চি বলবে না,,, আমার বউ ছোট্ট পুতুল।
– হ্যা হ্যা আমাদের হায়াত পিচ্চি না, ছোট্ট পুতুল।রাকিব চৌধুরীর কথায় সকলে সম্মতি জানালো।

একটু পর হায়াতকে কোলে করে আস্তেধীরে সিঁড়ি দিয়ে উপরে আসলো আদিব। পরম যত্নে কোলে থেকে নামিয়ে আলতো করে বিছানায় শুইয়ে দিল হায়াতকে,আলমারি থেকে ট্রাউজার আর টিশার্ট নিয়ে আদিব ওয়াশরুমে চলে গেলো।

হায়াত ফোনটা হাতে নিয়ে ওয়াইফাই অন করলো, এ যেনো এক নোটিফিকেশনের ঝড় ওঠে গেলো,লামিয়া, আরাবি,খুশিপুর অসংখ্য মেসেজ আসলো একের পর এক। হায়াত মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে আরাবির আইডিতে ঢুকলো,একের পর এক মেসেজ শো করতে লাগলো,একটু পরই আবারও মেসেজ আসলো ——–

আরাবি….
– এই জানু কই তুই,কেমন আছিস, কি হলো বল না…. পুরো পাঁচটা দিন হয়ে গেলো তুই অফলাইন, আমি সেদিন তোদের এলাকায় এসেছিলাম কিন্তু চৌধুরী বাড়ি খুজে পেলাম না।
– হসপিটালে ছিলাম।
– কিহ, কেনো কি হয়েছিলো বনু।
– সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছিলাম।
– ইস আমি কালকেই আসবো তুই লোকেশন পাঠিয়ে দে প্লিজ।
– আচ্ছা।

আরাবির সাথে আরও কিছুক্ষন কথা বলে ফোনটা রেখে গা এলিয়ে দিলো হায়াত। সদ্য গোসল করে ওয়াশরুম থেকে বের হলো আদিব। চুল গুলো থেকে টপ টপ করে কপাল বেয়ে পানি পড়ছে, হায়াত একদফা ক্রাশ খেলো আদিবকে দেখে। হায়াতের ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি,টানা টানা চোখ গুলো বড় করে আদিবকে দেখায় ব্যস্ত। আদিব হালকা হেসে বললো,
– আমি জানি আমি সুন্দর, কিন্তু তুমি কি এটা জানো ?
– কি ?
– এভাবে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে তোমারও ফরজ গোসল করার ব্যাবস্থা করে ফেলবো।
– সরুন তো।

রাত নয়টা পঁচিশ।চৌধুরী বাড়ির একজন কাজের লোক নিঃশব্দে এসে রেখে গেলো রাতের খাবার।
আদিব টেবিল থেকে থালাটা তুলে আনলো,
তারপর পরম যত্নে লাজুকপাখিকে খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে নিলো, ঔষধ খাইয়ে দিলো হায়াতের মুখ মুছিয়ে দিলো। হায়াত মাথা নিচু করে চুপচাপ থাকলো।
আদিবের চোখে তখন শুধু ভালোবাসার গভীরতা।আস্তে করে হায়াতের গালে পরশ একে দিলো।হায়াত আদিবের বুকে থেকে মাথা উঁচু করে বললো,

– আচ্ছা আমার কিছু হয়ে গেলে আপনি কিভাবে থাকতেন মাস্টার মশাই ?

– যার উপস্থিতি ব‍্যতীত জগতের সকল সুন্দর-ই অপূর্ন,সে থাকুক সদা অন্তরের সবচেয়ে নিকটে,বউ জান, আপনার কিছু হয়ে গেলে এই আদিব নিজেকে শেষ করে ফেলতো, আপনি আছেন বলেই আদিব আছে।

– জানেন আমাদের ভালোবাসাটা বিয়ের পরে শুরু হলেও আমি আপনাকে সেদিনই মনে জায়গা করে দিয়েছি যেদিন আপনি আমাকে প্রেমের প্রস্তাব না বরং বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। হ্যা আমি চাই আপনি থাকেন, আমার হইয়া থাকেন, ম্যালাদিন থাকেন। এই ধরেন আমি মইরা যাওনের আগ পর্যন্ত………

– না, মৃত্যুর আগ অবধি নয়— মৃত্যুর পরেও আমি তোমাকেই চাই।জান্নাতে আমার ভাগের সমস্ত হুর আল্লাহ যেন অন্য কাউকে দিয়ে দেন,
আমার চাহিদা শুধু একটাই— সেটা তুমি। #আমার_হায়াতি আমার শুধু তোমাকে প্রয়োজন,প্রতিটি সেকেন্ড, প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি নিশ্বাসে,বছর পেরিয়ে যাক তবুও যেনো তোমার প্রতি আমার মায়া, মোহ, মহব্বত,আত্নার মধ্য থেকে আসা ভালোবাসা কখনো না কমে, খুব ভালোবাসি তোমাকে।

– আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি, খুইবববববববববব।

– তাই জান।

– হু একটা গান শোনান এখন।

– রাত জাগলে তোমার মাথায় চাপ পড়বে পাখি,ঘুমাতে হবে তো।

– উহু আগে গান শুনবো।

– একটা প্রেমের নাম লিখেছি….
আর তাতে তোর নাম লিখেছি।
মাঝরাতে বদনাম হয়েছে মন,
যেইনা চোখের ইচ্ছে হলো,,,,,,,,,,,,,
তোর পাড়াতে থাকতে গেলো,
ডাক নামে তোর ডাকতে গেলো মন…….
কি করি এমন অসুখে,জমেছে মরণ এ বুকে…….(||)

এর মধ্যেই হায়াত আদিবের বুকে মাথা গুজে নিষ্পাপ মুখ করে ঘুমিয়ে গেছে। আদিব হালকা হেসে হায়াতকে আবেশের সাথে চুম্বন একে দিয়ে কাথা মুড়িয়ে দিলো।

———-

রাত বারোটা।চৌধুরী বাড়ির চারপাশে গভীর নিস্তব্ধতা, কেবল টিকটিকি আর ঘড়ির কাঁটার ক্ষীণ শব্দ।
ড্রয়িংরুমের কোণে রাখা ডিভানে বসে আদিব মনোযোগ দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছিলো,
চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ— তবুও দৃষ্টির দৃঢ়তা ভাঙেনি।

হঠাৎ…
একটা নরম গুঙানির শব্দ ভেসে এলো ঘরের ভেতর থেকে।
চেনা সেই আওয়াজ— হায়াতের!

আদিবের কপাল কুঁচকে উঠলো, সে দ্রুত ল্যাপটপ বন্ধ করে উঠে দাঁড়ালো,
হৃদয়ের কোথাও যেন অজানা একটা আশঙ্কা কাঁপন তুললো…হায়াত বিছানায় নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে, চোখ আধবোজা, ঠোঁট শুকনো।
সে এগিয়ে গিয়ে কপালে হাত রাখতেই যেন আগুন ছুঁয়ে ফেললো—
হায়াতের শরীর জ্বরে পুড়ছে, যেন প্রতিটি রগে আগুন দৌড়াচ্ছে।

আদিবের গলা শুকিয়ে এলো, চোখে ছায়া নেমে এলো দুশ্চিন্তার।কাঁপা গলায় হায়াতকে ডাকলো,
– জা…ন মাথায় পানি ঠেলে দিব।
_………….
আদিব ওয়ারড্রোব থেকে থার্মোমিটার এনে হায়াতের জ্বর মেপে হতবাক হয়ে গেলো। ১০৩° জ্বর। আদিব ওয়াশরুমে দৌড়ে গিয়ে তোয়েলা ভিজিয়ে আনলো,অতঃপর হায়াতের সারা শরীর মুছিয়ে দিলো। প্রেসক্রিপশন দেখে প্যারাসিটামল (৬৫০mg)খাইয়ে দিলো।

আদিব দ্রুত ডয়ার খুলে ভেতর থেকে একটা মোটা কম্বল বের করে আনলো।
শরীরটা কাঁপছিলো হায়াতের— জ্বরে গা যেন একবার আগুন, একবার বরফ।
আদিব আলতো করে কম্বলটা গায়ে ঢেকে দিয়ে পাশেই বসে রইলো।
তার চোখে তখন শুধু উৎকণ্ঠা আর না বলা ভালোবাসার এক অনন্ত আর্তি।

রাত একটা তখন,হায়াত পিট পিট করে তাকালো,চোখ গুলো যেনো ভীষণ জ্বালা করছিলো তার। কপাল কুঁচকে হালকা ওঠে বসার চেষ্টা করলো সে। আলতো গলায় আদিবকে ডাক দিলো,

– এই বেডা পানি দেএ্যা, পানি খাবো আমি।

হায়াতের কথা শুনে তড়িঘড়ি করে ঘুম থেকে জেগে ওঠলো আদিব। হতবাক হলো হায়াতের মুখে তুই তুকারি শুনে। তবুও স্থির হয়ে হায়াতকে পানি এগিয়ে দিলো। মনে মনে হাসলো,হ্যা তার বউ জ্বরের ঘোরে এসব বলছে,,,, আদিবকে আরো অবাক করে দিতে হায়াত আদিবের কোলে বসে পড়লো,বাচ্চাদের মতো মুখ করে বললো,
– জান গাছের পাতা কমলা রঙের তাইনা।
– হ্যা বউ,তুমি যেহেতু বলেছো তাহলে গাছের পাতা কমলা রঙের-ই হবে।
– এই আদি শোন আমার কথা।
– হ্যা পাখি বলো,আমি শুনছি তো বলো।
– আমাকে ক্যারামেল পুডিং কালারের জামা কিনে দিব্বি হ্যাআ্যা।
– কি কালার ?
– পুডিং কালারের, ডিমের পুডিং।
– আচ্ছা আচ্ছা দেবো পাখি।
– আদি, আদি সোনা, আমার কিত্তু পাই,আমার সুন্দল নাদান বাচ্চা,হট বেবি, আমার জান,তুই আমার শুধু।

আদিবের এবার পেট ফেটে হাসি বেড়িয়ে আসলো,গলা ফাটিয়ে হো হো করে হেসে ফেললো,এই দেখে হায়াত ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠে বললো,

– আমার কথা শুনে না এ্যাাাা,আমাকে ভালোবাসে না এ্যআ্যাাা, আমি রাগ করেছি এ্যা।

– না জান আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি,এইতো কথা শুনছি বলো,আর কি কি লাগবে।

– গু খা গা, যাহ আমার কথা শুনে না,ভালো লাগে না।

– শুনবো প্রমিজ জান।

– তাহলে বল,মুরগী কেনো ডিম পাড়ে,পিপঁড়া কেনো এতো ছোট,হাতি কেনো কথা বলে না,গরু কেনো ঘাস খায়।

হায়াতের প্রশ্ন শুনে হতবাক হয়ে গেলো আদিব। হা করে তাকিয়ে রইলো আদিব, একটু পর টের পেলো এখন আরো শীতল হয়ে যাচ্ছে হায়াতের শরীর, এখন একটাই উপায়……………………….।

আদিব ঠোঁটে ঠোঁট রাখে হায়াতের,হায়াত প্রশ্রয় দেয় তার শখের পুরুষকে।আস্তে আস্তে সময় গড়াতে থাকে, দুটি হৃদয় সম্পুর্ন পরিপূরক হয়ে ওঠতে ব্যস্ত।আদিবের গায়ের টি-শার্ট খুলে ফেললো হায়াত। আদিবও তার লাজুকপাখির পড়নের কাপড় আস্তে করে খুলে ফেললো,আলো আধারির খেলায় তার শরীর যেন ভাসছে নগ্ন জোয়ারে। আদিবের চোখ তৃষ্ণার্ত, হায়াত ড্যাব ড্যাব করে শুধু তাকিয়ে আছে, আদিব হালকা ঝুকে গেলো হায়াতের দিকে,হাস্কি স্বরে বললো,

– You’re a delicate soul, deeply unwell.
What I’m doing is only to ease your pain.
But tell me… will you be able to bear it ?

হায়াত চুপচাপ তাকিয়ে আছে,যেনো কিছু বুঝতে পারছে না সে। আদিবের ওষ্ঠ একে একে ছুঁতে লাগলো হায়াতের সর্বাঙ্গ।প্রতিটি ছোঁয়া যেনো ভালোবাসার সত্য, আহাজারি, ছন্দ। প্রতিটি স্পর্শ যেনো হায়াতের শরীর জুড়ে খেলা করছে,একটু পর পর কেঁপে ওঠে হায়াত।
আদিবের এক হাতের আঙ্গুল হায়াতের কোমড় থেকে আস্তে আস্তে একটানে নিচে চলে যায়। অন্য হাত বক্ষস্থল জুড়ে বিচরণ করছে। মুখ ডুবিয়ে দিলো সর্বাঙ্গে…………

হায়াতের প্রতিটি নিশ্বাস আছড়ে পড়ছে আদিবের বুকে। আদিব আস্তে আস্তে মত্ত হয় এক প্রেম লিলাময় খেলায়। আদিব ক্রমশ বাড়িয়ে দিলো ছন্দের জোয়ার।

হায়াতের চোখের কোনায় পানি জমে যাচ্ছে, মুখে হালকা ব্যাথাময় আওয়াজ। দুজনেই যেনো অমৃত সাগরের ঢেউয়ে মেতে ওঠলো।

বিছানার চাদরটা খানিক কুঁচকে গেলো,হায়াতের আঙ্গুল গেঁথে গেলো আদিবের পিঠে।হালকা কামড়ে ধরে তার কাধ।

হঠাৎ করেই নিস্তেজ হয়ে গেলো হায়াত। বেশ কিছুক্ষণ পর ব্যাপারটা বুঝতে পারলো আদিব। আস্তে করে হায়াতকে শুইয়ে দিলো নরম বালিশটা কোমড়ের নিচে দিলো।

——–

সকাল সাতটা। আগুনছোঁয়া রোদ যেন জানালার কাচ ভেদ করে ঘরে ঢুকে পড়েছে। গ্রীষ্মের রুক্ষ হাওয়ায় ঘুম জেগে উঠেছে শহর—একটা তপ্ত দিনের শুরু, সূর্য যেন রাগে ফুঁসছে। গরমে জমিন জ্বলছে, বাতাসও যেন উষ্ণ শ্বাস ফেলছে।
আড়মোড়া ভেঙে চোখ খুললো হায়াত। শরীরটা হালকা ব্যাথা করছে। ওঠে বসতে যেতেই খেয়াল করলো তার পড়নে কিছুই নেই। কাঁথা-টা ভালো গায়ে পেঁচিয়ে নিলো। ওঠে বসতে যাবে এমন সময় ওয়াশরুম থেকে বের হলো আদিব। মিষ্টি হেসে বললো,
– চলো আমি নিয়ে যায়, তবে দুই মিনিটে গোসল শেষ করবে।
– দুই মিনিটে গোসল হয় নাকি আবার ?
– এতো কথা জানি না গোসল করা ফরজ এজন্য দুই মিনিটে গোসল করার পারমিশন দিয়েছি, নাহলে এতো টুকুও দিতাম না।

এই বলেই হায়াতকে কোলে করে ওয়াশরুমে ঢুকলো আদিব। ঘড়ি ধরে ঠিক দুই মিনিট পরই হায়াতকে তোয়ালে দিয়ে পেচিয়ে আবার কোলে তুলে রুমে নিয়ে আসলো।হায়াতকে ডিভানে বসিয়ে আদিব সযত্নে তার লাজুকপাখির চুল গুলো মুছিয়ে দিতে লাগলো। আলমারি থেকে একটা সফেদ রঙের চুড়িদার বের করে হায়াতকে পড়িয়ে দিলো। হায়াত আদিবের দিকে চেয়ে রইলো বেশ কিছুক্ষণ।হায়াতের গালে পরম আবেশে চুম্বন করলো আদিব।মুচকি হাসলো হায়াত।

———-

আদিব অফিসের ফরমাল ড্রেসআপে, ধোপদুরস্ত শার্ট-প্যান্টে স্নিগ্ধ ও পরিপাটি। তবু ব্যস্ততা ভুলে সে হাতে তুলে নিল ভাতের বাটি। ধীরে ধীরে চামচে তুলে হায়াতকে খাইয়ে দিলো। হায়াত অসুস্থ, চোখে ক্লান্তির ছাপ—তবু আদিবের যত্নে মুখে এল হালকা প্রশান্তি। খাওয়ানো শেষে আদর করে জল খাইয়ে ওষুধটাও মুখে তুলে দিলো। যেন অফিস যাওয়ার আগে এইটুকু সময়ই তার ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ প্রার্থনা।

হায়াতের কপালে পরশ একে দিয়ে হাত দুটো নিজের পাজরের কাছে নিয়ে বললো,

– অফিস যাচ্ছি, যা প্রয়োজন হবে সব রুমেই রাখা আছে, সিঁড়ি দিয়ে একদম নামার চেষ্টা করবে না।

– আচ্ছা,আমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আইসেন।

– আচ্ছা শোন,ফোনে কোনো ছেলের সাথে কথা বলবে না,যদি দেখেছি কোনো ছেলে এড,ওইদিনই তোমার শেষ দিন মনে রেখো।

– Relax জান, আপনার নারী সর্বদা আপনার প্রতি লয়াল থাকবে, আপনি আছেন মানেই আমার সব আছে, তাহলে আমি আমার সব রেখে কেন অন্য দিকে নজর দিবো…..

– এই তো বুদ্ধিমান স্ত্রী আমার।

——
দুপুর বারোটা।
সাভার নিউ মার্কেটের পেছনের ছোট্ট গলিতে আরাবির বাসা।
সেখানেই থামলো চৌধুরী বাড়ির গাড়িটি—নির্বাক ভদ্রতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ড্রাইভার জানাল,
– ম্যাডাম, চৌধুরী সাহেব পাঠিয়েছেন। হায়াত ম্যাম আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন।

আরাবি জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকালো।
চোখে একধরনের আবেগ খেলে গেলো—অনেকটা অস্থিরতা, কিছুটা ভয়, আর প্রচণ্ড টান।

সকাল থেকেই মনটা অশান্ত।
হায়াত—তার কলেজ জীবনের ছায়াসঙ্গী, তার বেস্ট ফ্রেন্ড, আজ হাসপাতালে নয়, চৌধুরী হাউজে। অসুস্থ।
আরাবির মনে হচ্ছিল, দেখা না করলে কিছু একটা অপূর্ণ থেকে যাবে।

তাড়াতাড়ি ওড়নাটা সামলে, একটা ছোট ব্যাগ হাতে বেরিয়ে এলেন।
ড্রাইভার দরজা খুলে দিলো, গাড়িতে উঠে বসতেই গন্তব্যের দিকে চলতে শুরু করলো গাড়ি।

গাড়ির জানালার কাঁচে ভর দিয়ে আরাবি তাকিয়ে রইলো—পেছনে ফেলে আসা সেই ছোট্ট গলি, নিউ মার্কেটের চিরচেনা কোলাহল, আর সামনে এগিয়ে চলা এক নতুন আশঙ্কার দিকে।

চৌধুরী বাড়ি পৌঁছাতে সময় লাগলো প্রায় চল্লিশ মিনিট।
বড় গেট খুলে দিলো সিকিউরিটি গার্ড, মাথা নিচু করে গাড়িটিকে ঢুকতে দিলো।

আরাবি মনে মনে ভাবলো,
– আমার পাখিটাকে দেখতে অবশেষে আসতে পারলাম।

পা টিপে টিপে আরাবি হায়াতের রুমে প্রবেশ করলো, হায়াত চুপচাপ শুয়ে আছে। আরাবি গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
– জানু কি করছিস।
হায়াত যেন অবাকের সপ্তম আকাশে। খুশিতে চিৎকার করে ওঠলো সে।
– আরু তুই এসেছিস,আমি কি স্বপ্ন দেখছি।
– আরে এতো হাইপার হচ্ছিস কেনো বেবি,শান্ত হো নাহলে শরীর খারাপ করবে।

#চলবে