#আমার_হায়াতি
পর্ব : ২৪+২৫
লেখিকা : #Nahar_Adrita
( যারা অতিরিক্ত রোমান্টিক গল্প পছন্দ করেন না তারা দূরে থাকুন, অযথা সম্পূর্ণ পর্ব পড়ে লেখিকার চরিত্র নিয়ে কথা বলতে আসবেন না। 🚫 )
প্রত্যেক মানুষই জীবনের প্রতি এক অদ্ভুত টান অনুভব করে। এই পৃথিবীর রঙ, স্বপ্ন, আশা, ভালোবাসা—সবকিছুই তাকে বেঁধে রাখে বেঁচে থাকার মায়ায়। কিন্তু যতই আমরা জীবনের দিকে ছুটে চলি, একদিন না একদিন মৃত্যুর ছায়া আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। কেউ তা দেখে ভয় পায়, কেউ আবার শান্তভাবে মেনে নেয়। মৃত্যু কোনো হঠাৎ আগন্তুক নয়—সে জন্মের মুহূর্ত থেকেই আমাদের সঙ্গী, শুধু সময়ের অপেক্ষায় থাকে। মানুষ যতই অমরত্বের স্বপ্ন দেখুক না কেন, শেষমেশ তাকে মৃত্যুর আহ্বান গ্রহণ করতেই হয়। জীবন যেমন অবশ্যম্ভাবী, তেমনি মৃত্যু—এটাই চিরন্তন সত্য।
প্রায় তিনমাস চলে গিয়েছে হায়াতের বাবা মারা যাওয়ার পর। সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে গেলেও দুটো মানুষের মন এখনো স্বাভাবিক হয়ে ওঠে নি। হায়াতের মা মিসেস আলিয়া পাথরে পরিনত হয়েছে,তার চেহারার লাবণ্য কমে গিয়েছে, সারাক্ষণ জায়নামাজেই পড়ে থাকে, প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। অন্যদিকে হায়াত চুপচাপ থাকে,আগের মতো আর চঞ্চল নেই সে। আদিব সারাদিন এটা সেটা বলে হাসানোর চেষ্টা করলেও কোনো কাজে দেয় না। মা মেয়ে দুজনই বলতে গেলে পাথর হয়ে গিয়েছে।
আজ তারা গ্রাম থেকে সাভার চলে যাবে। আদিবের অফিসের চাপ বেড়েছে কাজের, এছাড়া কানাডার প্রজেক্টের জন্য মিস্টার চৌধুরী নিজেই চলে গিয়েছেন। এই প্রজেক্টকটা তাদের একমাত্র হাতিয়ার বাংলাদেশের মধ্যে ইন্ডাস্ট্রিতে নাম্বার ওয়ানে যাওয়ার। মিসেস অরোরাও চট্টগ্রাম গিয়েছেন আদিবের ফুপুর বাড়িতে কিছু দরকারে। কিছু মাস পরেই আবার নুপুর আর মিনহাজার একমাত্র ভাই আয়ানের বিয়ে। সব মিলিয়ে চৌধুরী পরিবার যেনো খুব ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে।
মিসেস আলিয়া হায়াতের জামা কাপড় গুছিয়ে দিচ্ছে। আর হায়াত জানালার দিকে মুখ করে বসে আছে। মেয়ের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ফুঁকলেন তিনি৷ গম্ভীর স্বরে বললো,
– তুমি কি আমার সাথে কথা বলবে না, এতো জেদ ভালো না আফরা।
হায়াত এবার মায়ের দিকে তাকালো,
– আম্মু তোমাকে আর কতো ভাবে বুঝাতে হবে, আমাদের সাথে গেলে তোমার ভালো লাগবে। একা থাকলে আরো কষ্ট লাগবে।
চোখে পানি নিয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন তিনি,
– কষ্ট…কষ্ট কি আমি একা পাচ্ছি তুই পাচ্ছিস না,যাই হোক আমি আমার স্বামীর ভিটা থেকে এক চুলও কোত্থাও যাবো না।
– মা আমি তোমাকে একেবারে নিয়ে যাচ্ছি না,তোমার যখন ইচ্ছে হবে বাড়িতে আসবে….
– না এটা হয় না আফরা, আমি জানি তোর শশুর বাড়ির সকলে কতো ভালো,তাই বলে কি আমি মেয়ের শশুর বাড়িতে ওঠবো, সমাজ কি বলবে সেটা একবারও ভাবছিস না, আচ্ছা ঠিক আছে তোর কথা আমি যেনো আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে ওঠি তাইতো,বেশ আমি আগের মতো হয়ে যাব তবুও তোর সাথে যাওয়া সম্ভব না মা…
হায়াত যেনো মায়ের কথা কিছুটা বুঝতে পারলো,ছোট্ট নিশ্বাস ফুঁকে মাকে জড়িয়ে ধরলো। খানিকক্ষণ মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে কান্নাও করলো,আলিয়া বেগম পরম যত্নে মেয়ের চোখের পানি মুছে দিলেন।
এমন সময় ঘরে প্রবেশ করলো আদিব, শাশুড়ীকে দেখে স্মিথ হেসে বললো,
– আম্মু আমি বলছি চলুন না।
– না বাবা সম্ভব না।
– আমি বলছি তাও যাবেন না, আমার কথাও কি রাখবেন না।
– আচ্ছা বেশ ! আমি তোমার ভাইয়ের বিয়েতে রাব্বিকে নিয়ে যাবো তখন নাহয় বেশ কিছুদিন থেকে আসবো। কথা দিলাম তোমাকে বাবা।
– আচ্ছা আম্মু,রাব্বির আগামী নয়মাসের পরীক্ষা ফি বেতন সব দিয়ে এসেছি কোনো সমস্যা নেই আর যা প্রয়োজন হবে আপনি আপনার এই ছেলের কাছে চাইবেন ইনশাআল্লাহ আমি আপনার ছেলে কখনো কোনো অভাব দেখতে দেবো না।
আলিয়া বেগম চোখের পানি মুছে বিছানায় বসলেন, তারপর আদিবকেও পাশে বসতে বললেন, স্মিথ হেসে আদিবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন,এই তিনমাসে আদিব পরিস্থিতি অনুযায়ী সব দিক দেখেছে। আসলেই সে মেয়ের জামাই না বরং নিজের ছেলের জায়গা থেকেই সব কিছু করেছে। মিসেস আলিয়ার চোখের পানি হলো সেই প্রাপ্তির পানি। পরম আবেশে আদিবের পিঠ দুইয়ে দিলেন তিনি। আদিব হালকা হেসে মিসেস আলিয়ার কোলে মাথা রাখলেন,
– মা একটু দোয়া করে দিন তো, যাতে আপনার মেয়েকে সবসময় সুখে রাখতে পারি।
– দোয়া তো করিই, সব সময় আমার মোনাজাতে তোমরা আছো আর থাকবে।
হায়াত এতোক্ষণ যাবত সব দেখছিলো এখন একটু কপাল কুচকে বললো,
– হ্যা হ্যা আমি তো কেউ না, আমাকে কি একটু আদর করা যায় না সব আদর ওনাকেই করছো।
আদিব ফাজলামো করে বললো,
– ছিহ বউ তোমার মনে এতো হিংসা, ভেরি ব্যাড হায়াতি।
কিছুক্ষণ কথা বলে আলিয়া বেগম ঘর থেকে বেড় হয়ে গেলো। আদিব একটু পর হায়াতের পাশটায় বসলো, হায়াত মাথা নিচু করে এফবি স্ক্রোল করছিলো। আদিব হায়াতের হাত নিজের হাতের ভেতর পুড়ে নিল। হায়াত আদিবের দিকে তাকালো। সে মুচকি হেসে লাজুকপাখিকে জড়িয়ে ধরলো। কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
– বউ বাসায় গিয়ে আমরা একটা নতুন গেম খেলবো ওকে।
– কেমন গেম ?
– বাসায় চলো আমি বুঝাবো।
– হু।
আদিব হায়াতের অধরে নিজের আয়ত্তে নিয়ে ফেললো, আজ প্রায় তিনমাস পর হায়াতকে ছুয়ে দেখলো সে, আর হায়াতও আদিবের সাথে তালে তাল মিলাতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষণ পর অধর ছেড়ে দিয়ে দুজনেই হাঁপাতে লাগলো। শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলো নিজের লাজুকপাখিকে।
আধা ঘণ্টা পর হায়াত বোরকা পড়ে হিজাব করে নিলো, আদিব বাইরে দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির চাবি নিয়ে। হায়াত ব্যাগ নিয়ে বের হলো। রাব্বি এগিয়ে এসে হায়াতের হাত থেকে ব্যাগটা নিলো, হায়াত হালকা হাসলো। আলিয়া বেগম তছবি গুনতে গুনতে ঘরে থেকপ বের হলো। হায়াত মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল। হায়াতের চাচা চাচী সবাই আসলেন, হায়াতকে আর আলিয়া বেগমকে শান্তনা দিতে লাগলেন।
আদিব হায়াতকে গাড়িতে ওঠার জন্য বললো,রাব্বিকে জড়িয়ে ধরে আদর করলো হায়াত। আদিব রাব্বির হাতে কিছু টাকা গুজে দিলো। আলিয়া বেগম আদিবের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে দিলেন, সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে ওঠলো দুজন।
বিকেলের শেষ আলোয় ভিজে থাকা গ্রামের সরু কাঁচা পথ বেয়ে গাড়িটি ধীরে ধীরে এগোতে লাগল। দু’পাশে ছড়িয়ে থাকা সবুজ ধানক্ষেত, মাঝেমধ্যে গাছের ফাঁক দিয়ে উঁকি দেওয়া মাটির বাড়িঘর আর দূরের টালিমারা ছনের চাল—সবকিছু যেন এক শান্ত, মায়াবী ছবির মতো ভেসে আসছিল। জানালার পাশে হায়াত গা এলিয়ে বসে, গভীর মনোযোগে বাইরের দৃশ্য দেখছিল; তার চোখে ছিল এক অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতি—হয়তো স্মৃতি, হয়তো অজানা কৌতূহল। আর ঠিক তার পাশেই বসে থাকা আদিব, নীরবে বারবার হায়াতের দিকে তাকাচ্ছিল; যেন প্রতিটি দৃষ্টিতে সে কিছু বলতে চাইছে, কিন্তু কথাগুলো ঠোঁট পেরিয়ে আসছে না, শুধু চোখের ভাষায় বয়ে যাচ্ছে।
ড্রাইভিং করতে করতে হায়াতের হাত এক পর্যায়ে নিজের হাতের মুঠোতে নিলো, হায়াত তাকালো। আদিব মায়া ভরা চোখে তাকালো৷ হায়াত একটু নড়ে চড়ে বসলো। কিছু একটা ভেবে প্রশ্ন করলো,
– আচ্ছা আব্বু যেদিন মারা গেলো সেদিন আপনি আসলেন কি করে।
– ইমার্জেন্সি ছুটিতে এসেছিলাম।
– ওহ। আর অফিসের ওনারা কিছু বললো না আপনাকে কিছু৷
– না বউ তোমাকে এতো কিছু নিয়ে ভাবতে হবে না।
– হু।
——–
রাত ঠিক আটটায় গাড়িটির ব্রেক চেপে থামিয়ে দিল আদিব,ঠিক তার পাশেই বিভোর হয়ে ঘুমাচ্ছে হায়াত । অন্ধকারে মোড়ানো শহর তখন প্রায় নিস্তব্ধ, কেবল দূরে কোথাও ঝিঁঝিঁ পোকার একঘেয়ে ডাক আর বাতাসে দুলে ওঠা গাছের পাতার মৃদু শব্দ শোনা যাচ্ছিল। সামনের দিকে ফিকে হলুদ আলোয় ভেসে উঠল চৌধুরী বাড়ির বিশাল ফটক— লোহার গেট, দারোয়ান কাকা গাড়ির শব্দ পেয়ে সজাক হয়ে ওঠলেন। মুচকি হেসে সালাম দিলেন। আদিব ঘুমন্ত হায়াতকে কোলে তুলে নিল। আর ব্যাগ নিলো এক হাত দিয়ে। দারোয়ান কাকা গাড়িটি পার্কিং-এ রাখলো।
চাবি দিয়ে গেট খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো আদিব। হায়াতকে পরম যত্নে সোফায় শুইয়ে দিল। ব্যাগটা এক সাইডে রেখে সারা বাড়ির লাইট জ্বালিয়ে দিলে, চোখ কচলাতে কচলাতে ওঠে বসলো হায়াত।
এদিকে আদিব ফ্রিজ থেকে কিছু ফল বের করে ধুয়ে কেটে আনলো হায়াতের জন্য। হায়াত আদিবের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। আদিব টেডি স্মাইল দিয়ে বললো,
– বরকে পরেও দেখতে পারবে আগে ফল গুলো খেয়ে নাও তো বউ।
– আমি আপনাকে দেখছিলাম না….
– ওহ এমনিই তাকিয়ে ছিলে তাই না বউ।
– হু আপনার মাথা।
হায়াত একটা আপেলের টুকরো হাতে নিয়ে এক কামড় খেলো, আরেকবার মুখে দেওয়ার সময় হায়াত কিছু একটা ভেবে আপেলটা কামড় দিয়ে মুখটা আদিবের সামনে নিল, আদিব দুষ্টু হেসে নিজেও মুখ এগিয়ে দিয়ে আপেলটা খেয়ে হায়াতের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট পুড়ে নিল। বেশ কিছুক্ষণ তারা এভাবে এই খেলায় মাতিয়ে নিলো নিজেদের।
খাওয়া শেষ করে হায়াত ব্যাগ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে চলে গেলো, আর আদিব দরজা আটকিয়ে দিলো সারা বাড়ির। সিড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার সময় সামান্য হোটচ খেলো , বুড়ো আঙুলটাই বেশ লাগলো যার ফলে রক্ত ও বের হলো, তবে আদিবের ব্যাথা পাওয়া নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথায় নেই সে আছে অন্য চিন্তায়। আজ বাড়িটা কেমন ভারী ভারী লাগছে যেনো মনে হচ্ছে কেউ আছে। এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ ওপরে রুমে থেকে হায়াতের চিৎকার ভেসে আসলো।
আদিব দৌড়ে রুমে আসলো, রুমে এসে অবাক হয়ে তাকালো হায়াতের দিকে, হায়াত জানালার ওপর ওঠে দাড়িয়ে আছে, আর একটা ধবধবে সাদা মোটা পার্সিয়ান বিড়াল ফ্লোরে বসে আছে, আদিব অবাক স্বরে হায়াতকে জিজ্ঞেস করলো,
– পাখি তুমি কি এই বিড়ালটাকে ভয় পাচ্ছো ?
হায়াত কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
– হ্যা এটাকে সরান প্লিজ, আমার অনেক ভয় লাগে বিড়াল দেখলে৷
আদিব হো হো করে হেসে দিলো, বিড়ালটাকে কোলে নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে নামিয়ে দিলো, বিড়ালটিও সুন্দর দোলনায় চড়ে বসলো। আদিব একটা টোনা ফিস লেখা প্যাকেট নিয়ে ওটা বিড়ালটিকে বের করে খাইয়ে দিতে লাগলো আনমনে।
এদিকে হায়াত জানালা থেকে নেমে আস্তে আস্তে বেলকনির কাচের গ্লাসটার সামনে দাড়ালো, আদিবের কান্ড দেখতে লাগলো। আদিব হায়াতকে দেখে মুচকি হেসে এক হাত দিয়ে চুল গুলো ব্রাশ করতে লাগলো।
– বউ ও কিছু করবে না আর এটা ভেকসিন দেওয়া ভয় নেই আসো।
– না না দরকার নেই, আমার ওনেক ভয় লাগে ছোটবেলা থেকেই, আচ্ছা এটা কার মিউ !
– এটা আমার মিউ, আমি ওনেক দিন আগে একটা পেজ থেকে নিয়েছি, এতোদিন মিনহাজার কাছে ছিলো, আজ তো ওরা গ্রামে গিয়েছে তাই আমার রুমে রেখে গিয়েছে।
– ওহ বুঝতে পেরেছি।
– হুম। কিছু খাবে তুমি জান ?
– উহু…. আচ্ছা এটার নাম কি ?
– ওর নাম ক্লিও।
– বাহ অনেক সুন্দর তো নামটা, যাইহোক বিড়ালটা মানে ক্লিও দেখতে কিন্তু অনেক সুন্দর। কিন্তু আমি কখনো ওকে কোলে নিব না,আর ওকে কিন্তু দূরে রাখবেন আমার থেকে ব্ বলে দিলাম।
– আরে পাখি চিন্তা করো না আমি তোমাকে বিড়ালকে কোলে নেওয়া শিখিয়ে ফেলবো চলো।
আদিব হায়াতের কাধ আগলিয়ে ডিভানে নিয়ে বসিয়ে দিলো, হায়াতও বাধ্য মেয়ের মতো বোরকা আর হিজাব খুলিয়ে বসে পড়লো।
আদিব একটা খাতা আর কলম নিয়ে আসলো, অসহায় মুখ করে বললো,
– আমি আজকে পড়তে বসবো না,আমার পরীক্ষা তো শেষ হয়ে গিয়েছে। আবার কিসের পড়াশোনা, মানলাম আপনি একজন গেস্ট টিচার তাই বলে কি আমাকে আগে থেকে সেকেন্ড ইয়ারের সব পড়া শেষ করাবেন।
– আরে বউ স্টপ। রেলগাড়ীর মতো কথা ছুটছে, একটু চুপ করো আমি বলছি ওকে৷
– হু…..
– এই কাগজ গুলো ছোট ছোট টুকরো করবা , তারপর বিভিন্ন কালের ছোট করে নাম লিখো।
আদিবের কথা মতো হায়াত কাগজের টুকরোতে একেক একেক করে কালারের নাম লিখতে শুরু করলো,
এরপর আদিবের কথা অনুযায়ী প্রত্যেকটা রংয়ের নামের নিচে টিশার্ট শার্ট লিখতে শুরু করলো। এইবার সবগুলো কাগজের টুকরো একেক করে ভা জ করতে শুরু করলো।
হায়াত মনে মনে ভাবতে লাগলে এসব দিয়ে কি হবে, আর আদিব যেনো হায়াতের মনের কথা এক নিমিষেই পড়ে ফেললো,
– সোনা তোমাকে চিন্তা করে মাথা ব্যাথা করতে হবে না, আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি গেমটা,
হায়াত মাথা নাড়লো। আদিব বুঝাতে শুরু করলো, প্রথমে সব গুলো কাগজ ভাজ করে কাঁচের বাটিতে নিয়ে এগুলোকে ভালো করে মিক্স করবে তারপর একেক কাগজে যে রংয়ের শার্ট বা টিশার্ট লেখা আছে তা পড়ে আসতে হবে,
একবার হায়াত আরেকবার আদিব, এভাবের প্রত্যেকটা টিশার্ট পড়ে গানে নাচতে হবে। এক রাউন্ড খেলার পর আবার আরেকটা গেম শুরু করবে।
হায়াত পুরু কথা মগজে গেঁথে নিলো। সম্মতি সরূপ মাথা নাড়ালো। আদিব কাগজের টুকরো গুলো বাটিতে নিয়ে নাড়তে লাগলো,
এরপর হায়াত একটা চিরকুট ওঠালো সেটার ভাজ খুলতেই চোখে ঝলমল করলো সেটাতে স্পষ্ট লেখা – এ্যাস কালার শুধু শার্ট পড়ে কামলি কামলি গানে নাচতে হবে এবং ছাপ্পান্নটা চুমু খেতে হবে শরীরের সব জায়গায় তাও নাচের মধ্যে ।
হায়াত আদিবের দিকে তাকালো।
আদিব ইশারা করলো আলমারি থেকে শার্ট নিয়ে পড়তে , হায়াত পা টিপে টিপে আলমারি থেকে একটা শার্ট বের করলো আর সেটা পড়লো, আদিব হা হয়ে তাকিয়ে আছে হায়াতের দিকে, এই লুকে আজ তাকে একটু বেশিই আবেদনময়ী লাগছে।
হায়াত চুলগুলোকে উচুঁতে বেধে নিলো, শুধু শার্ট পড়ে আছে সে, যা হাটু অব্দি লম্বা। আদিব টিভিতে কামলি সং চালিয়ে দিলো, হায়াত নাচতে শুরু করলো আর আদিব তা ভিডিও করছে, হায়াত একপর্যায়ে আদিবের কাছে আসলো, টিভিতে গান বাজছে আর সে আদিবের একটা একটা বোতাম খুলছে আদিব শুকনো ঢুক গিলতে শুরু করলো। হায়াত আদিবের বুকে একটা চুমু খেলো, অতঃপর গালে চুমু দিয়ে আস্তে আস্তে পেটের কাছটাই এসে চুমু খেয়ে করুন চোখে তাকালো আদিবের দিকে, সে এখন বুঝতে পেরেছে হায়াত কি করতে যাচ্ছে ।
হায়াত একপর্যায়ে আদিবের উদরের নিচে আস্তে করে চুমু খেলো আর আদিব হায়াতকে চেপে ধরলো, আর তখনি টিভিতে গান বেজে ওঠলো – রাত কা নেশা আভি, আখছে গেয়া নেহি…..
আদিব হায়াতকে কোলে করে বিছানায় নিয়ে গেলো, পাখির পরনের শার্টটা খুলে ফ্লোরে ছুড়ে মারলো। হায়াত ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে আছে আদিবের দিকে আর ততক্ষণে আদিব হায়াতের অধর নিজের অধরে পুড়ে নিলো। আর হাত বিচরণ করতে লাগলো পুরো শরীর জুড়ে। হায়াতের গায়ের লোম দাঁড়িয়ে ওঠলো, সামান্য কেঁপে ওঠে সে, অনেকদিনপর শখের পুরুষদের ছোঁয়া পেয়ে আবেশে মাতোয়ারা হয়ে গেলো হায়াত আর আদিব জুড়ে জুড়ে অধরের সাদ নিতে মরিয়া।
আদিব হায়াতের হাত বেল্ট দিয়ে বেধে নিলো,হাসফাস করতে লাগলো হায়াত, আদিব মুচকি হেসে হায়াতের সর্বাঙ্গে মধু ঢেলে দিলো, আস্তে আস্তে রসনা দিয়ে লেহন করতে লাগলো,খানিক সময় পরপরই হায়াত কেঁপে কেঁপে ওঠে। আদিব হাস্কি স্বরে বললো,
– Tonight I’ll savor the sweetness through honey… tell me, are you ready, my love?
হায়াত চুপ করে আছে,যার মানে সম্মতির লক্ষণ। বেশ কিছুক্ষণ আদিব সারা শরীর জুড়ে রসনা দিয়ে লেহন করতে লাগলো, এরপর আত্নার আকাঙ্ক্ষিত কামনা চালিয়ে যেতে থাকলো,আর হায়াত পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে তৃপ্তি নিতে থাকলো।
আদিব হাস্কি স্বরে বললো,
– Wifey, tonight I’ll be really intense, so please handle me carefully.
হায়াত চোখ খুলে আদিবের দিকে তাকালো,দুষ্টু মাখা স্বরে বললো,
– হু অবশ্যই আট মাসের মতো হতে চললো আপনাকে সামলাচ্ছি, প্রবলেম নেই।
– বিসমিল্লাহ…….
– Ah… it feels so good… slowly, please জান…
এভাবেই রাত নয়টা বেজে যাওয়া অব্দি তাদের আত্নার সংযোগ চলতে থাকলো।
”
হায়াতকে বুকে জড়িয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে আদিব,হায়াত ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে সেই কখন, আদিব হায়াতকে ভালো করে শুইয়ে দিলো, খানিক্ষন আগেই দুজন গোসল করে এসেছে।
আদিব পানি আনতে নিচে নামল। ঠিক সেই মুহূর্তে, মা-বাবার রুম থেকে অচেনা আওয়াজ এল। মৃদু পায়ে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সে দেখল, এক চোর আলমারির লক ভেঙে সব গহনা আর টাকাগুলো নিজের ব্যাগে ঢুকাচ্ছে।
হায়াতও তখন আদিবকে খুঁজতে নিচে নামছিল। সে আদিবকে সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, মুখ খুলে কিছু বলতে যেতেই আদিব দ্রুত তার মুখ চেপে ধরল।
হায়াতের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
– একদম কথা বলবে না, যা দেখবে তাতে একটুও চিৎকার করবে না ওকে।
হায়াত মাথা নাড়ালো, আদিবের কথা মতো মায়ের রুমের দিকে তাকিয়ে বেচারি হা হয়ে গেলো। আঁতকে উঠল সে আর আদিবের হাতে জুড়ে কামড় দিয়ে ফেললো,আদিব মৃদু আওয়াজ করলো,
– আহ্ পাখি এভাবে কেউ কামড় দেয়।
আদিব হায়াতকে ধীরে ধীরে ছেড়ে রুমের মধ্যে ঢুকল। চোরের দিকে তাকিয়ে চোখে রাগের অগ্নি জ্বলে উঠল। এক মুহূর্তের hesitation নেই, আদিব মুহূর্তের মধ্যে চোরের নাক বরাবর ঝড়ের মতো ঘুষি মারল। চোর হকচকিয়ে পিছনে লাফ দিল, ব্যাগের মধ্যে থাকা গহনা ছিটকে পড়ল। রুমে উত্তেজনার বীজ ছড়িয়ে পড়ল, হায়াত চিৎকার করতে চাইল, কিন্তু আতঙ্কে সে স্থির হয়ে রইল, চোখে ভয়ের ছাপ। আদিব দ্রুত চোরের দিকে এগিয়ে গেল, যেন কোনোরকম কৌশল ছাড়াই তাকে আটকাতে চায়।
চোর এখনও হকচকিয়ে ছিল, আর রুমের মধ্যে ভয় ও উত্তেজনা একত্রে ঘন হয়ে উঠল। আদিব তার চোখে কঠোরতা বজায় রেখে এগিয়ে গেল, আরো কয়েক খানা ঘুষি মারলে আর হাত বাড়িয়ে চোরকে আটকাতে চাইল। হায়াত তখন পিছনে দাঁড়িয়ে, রীতিমতো শ্বাস রুদ্ধ অবস্থায় দৃশ্যটি দেখছিল, চোরটা আদিবের পায়ে ধরে বললো,
– আমাকে মাফ কইরা দেন আমি গরীব মানুষ, আমি আর জীবনেও চুরি করুম না।
এদিকে হায়াত যেন একটু ভয়ে কাঁপতে শুরু করলো ব্যাপারটা লক্ষ করলো আদিব, সে যে কোনো সময় জ্ঞান হারাতে পারে। আদিব কিছু একটা ভেবে পাঁচ হাজার টাকা সেই মাঝ বয়সি চোরের হাতে দিলো এবং বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে বললো নাহলে পুলিশকে এখনি কল করবে। চোরটি ভয়ে পালিয়ে গেলো ।
হায়াত বড় করে একটা শ্বাস ছেড়ে আদিবের বুকে মাথা রাখলো। আদিব হায়াতকে বুকে আগলে রাখলো। মিনিট পাঁচেক পর হায়াত মুখ তুলে আদিবের দিকে তাকালো।
আদিব হায়াতকে কোলে তুলে নিল। এরপর সোফায় বসিয়ে দিয়ে কিচেন রুমে গিয়ে এক গ্লাস দুধ আর পাউরুটি নিয়ে আসলো। দুধ দেখেই হায়াত নাক মুখ কুচকে বললো,
– আমি গু খাবো না।
– এটা গু না তো বউ,এটা দুধ একটু খাও ভাল্লাগবে। শরীরে শক্তি প্রয়োজন আমি তোমাকে স্যালাইন দিব না তো দুইদিন পর জ্ঞান হারিয়ে পড়ে থাকবে এতে লাভ হবে না।
– গু হারাবো, আপনি গু খান গা।
আদিব এক ধমক দিলো হায়াতকে। বললো,
– স্যাট আপ, পাগলের মতো সারাদিন গু গু করে, এই তোমার কি গু এতোই পছন্দ নাকি।
– এ্যা আপনি আমাকপ বকলেন।
এই বলেই হায়াত কান্না শুরু করে দিলো। আদিক পরলো মহা ঝামেলায়। কপাল স্লাইড করে নেশালো কন্ঠে বললো,
– জান আমি যদি মিষ্টি করে দিই তাহলে কি দুধ খাবে।
– কিভাবে ?
আদিব দুধটুকু এক চুমুক মুখে নিয়ে হায়াতকে ইশারায় হা করতে বললো, আর হায়াত হা করতেই আদিব দুধ সমেত হায়াতের ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ পুড়ে নিল, পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে খেতে লাগলো হায়াত।
রাত গভীর হতে লাগল। খাবার শেষ করার পর হায়াত আর আদিব কিছুক্ষণ গেম খেলল, হাসি আর হালকা টানাপোড়েনের মাঝে সময় কেটে যাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পরই দু’জন আবার একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অনুভূতি ভাগ করতে লাগল, মৃদু আগ্রহ আর অন্তরের আকাঙ্ক্ষা একসাথে জেগে উঠল।
হায়াত আর আদিব একে অপরের দিকে ধীরে ধীরে এগোতে লাগল। বাতাসে রাতের শান্তি ভেসে আসছিল, আর জানালার ফিকে আলো তাদের ছায়া খেলায় মিশে যাচ্ছিল। হায়াতের চোখে কৌতূহল আর আগ্রহের ঝলক, আর আদিবের হাতে কোমল স্পর্শ—সব মিলিয়ে যেন রাতের নিস্তব্ধতাকে আরও ঘন করে তুলছে। কথার দরকার নেই, শুধুই নীরব বোঝাপড়া, যেখানে দু’জনের অন্তরের আকাঙ্ক্ষা নিঃশব্দে একে অপরকে খুঁজে পাচ্ছিল।
হায়াত হালকা শ্বাস ফেলে আদিবের দিকে তাকাল, আর ছোট্ট হাসি খেলল তার ঠোঁটের কোণে। আদিবও ধীরে ধীরে হায়াতের চোখে চোখ রেখে, নীরবভাবে প্রতিশ্রুতি দিল—শুধু তারা দু’জন, এই রাতের নিস্তব্ধতার মাঝে। বাতাসে রাতের ঠান্ডা মিশে গেল, আর তাদের অন্তরের উত্তেজনা এক গভীর নীরব আলোয় সিক্ত হয়ে গেল।
হায়াত আর আদিব ধীরে ধীরে একে অপরের দিকে এগোল। রাতের নিস্তব্ধতা তাদের চারপাশে ঘন হয়ে আসছিল, আর জানালার ফিকে আলো তাদের ছায়াকে নাচাচ্ছিল। প্রতিটি স্পর্শ, প্রতিটি চুম্বন যেন নীরব ভাষায় একে অপরের অন্তরের আকাঙ্ক্ষা জানাচ্ছিল। সময় যেন থেমে গিয়েছিল, কেবল তারা দু’জনই, তাদের মৃদু শ্বাস আর নীরব বোঝাপড়ার মধ্যে রাতের নিস্তব্ধতা আরও গভীর হয়ে উঠল।
—–
ডিসেম্বরের প্রায় শুরু, শীতের প্রথম কাঁপুনি বাতাসে লুকিয়ে আছে। ভোরের নিস্তব্ধতার মাঝে হায়াত গোসল করার জন্য ভাবছে, কিন্তু কপালে ঠান্ডার ছোঁয়া আর আঁধারের একাকিত্ব তাকে যেন ভয় পাচ্ছে। কল্পনায় শীতল পানি স্পর্শ করলেই শরীর কাঁপবে—এই ভয়ের মৃদু ছাপ তার প্রতিটি শ্বাসে লেগে আছে।
আদিব টাউজার পরে হায়াতের দিকে তাকালো সে এখনো কম্বলের ভেতর থেকে দুটো চোখ বের করে আদিবের দিকে চেয়ে আছে।
আদিব দাঁতকামড়ে হেসে চুলে হাত চালাতে থাকলো। হায়াত করুন চোখে আদিবের দিকে তাকালো।
– পাখি ভয় নেই চলো,এতো ঠান্ডা না তো পানি।
– উহু আমি সকালে করবো, আমি এখন পারবো না আমাকে প্লিজ এখন গোসল করতে বলবেন না।
আদিব ভ্রু কুচকে হেসে দিলো, হায়াতকে কোলে করে ওয়াশরুম প্রবেশ করলো, আর নিচে নামিয়ে ঝর্ণা ছেড়ে দিলো। ঝর্ণার পানি শরীরে পড়তেই,
– আল্লাহ গো তুমি এর বিচার করো, আমার স্বামী আমাকে মারতে চাই এর জন্য এখন গোসল করাতে এনেছে।
হায়াতের কথায় পেট ফেটে হাসি আসলো আদিবের। পরম আবেশে অধর নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো। এরপর আস্তে আস্তে কোমল অঙ্গে স্পর্শ করতে লাগলো।
#চলবে….
#আমার_হায়াতি
লেখিকা: #Nahar_Adrita
পর্ব : ২৫
সদ্য গোসলের পরে দু’জনই সতেজ আর শান্ত মনে রুমে ফিরে এসেছে। আদিব ডিভানের এক কোণে বসে মিটিং করছে, চোখের সামনে ল্যাপটপ আর কাগজপত্রের মধ্যে মনোযোগ ছড়িয়ে আছে। হায়াত বিছানায় বসে বইয়ের পাতায় ডুবে আছে, মাঝে মাঝে চোখ উঠিয়ে আদিবকে দেখছে, চরম বিরক্ত নিয়ে এবার বলেই ফেললো,
– আমি পড়বো না, আমি আরাবিদের বাসায় যাবো ওর সাথে বসে পড়বো নাহলে আমি কিছুতেই একা পড়বো না।
ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে এবার হায়াতের দিকে তাকালো আদিব, মুখে অস্ফুটস্বরে ‘চ’ শব্দ করলো,
– হ্যা জানি তো দুটো বান্দর এক সাথে হলে কতোই না পড়বে।
– এই আপনি আমাদের র বান্দর বললেন কেনো।
– তো কি বলবো, আর এই ঠান্ডায় বাইরে যেতে হবে কেনো।
– আমি কি বাইরে যাচ্ছি নাকি,আমি তো আরাবিদের বাসায় যাবো।
আদিব ফাইল গুলোর দিকে তাকিয়েই জবাব দিলো,
– না যেতে হবে না, আমি ওকে কল দিচ্ছি ও রেডি হয়ে থাকবে রামু কাকা গিয়ে ওকে নিয়ে আসবে।
হায়াত প্রচন্ড খুশি হয়ে এক লাফে বিছানা থেকে নেমে আদিবের পাশে বসলো,এমনকি পর পর নয়টি চুমু একে দিলো আদিবের গালে।
হায়াত দাঁত বের করে হাসতে লাগলো, তারপর এক দৌড়ে বেলকনিতে চলে গেলো আর তখনি এক বিপত্তি সৃষ্টি হলো, দৌড় দিয়ে ক্লিও এর লেজের ওপর দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো হায়াত, ক্লিও জুড়ে এক আঁচড় কাটলো হায়াতকে আর সাথে সাথে রক্ত বের হতে শুরু করলো। হায়াত ভ্যা ভ্যা করে কান্না করতে লাগলো, আদিব ছুটে আসলো বেলকনিতে। কপাল স্লাইড করে ক্লিওয়ের দিকে তাকালো, বেচারি ক্লিও হা করে তকিয়ে আছে হায়াতের দিকে। হায়াত পা ধরে বসে আছে আর চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। আদিব হায়াতের পাশে বসলো, রাগী কন্ঠে বললো,
– তুমি কি একটু স্থির হয়ে বসতে পারো না, সারাক্ষণ ছুটাছুটি করো।
– করে যে তুরু তুরু তুরু তুরু মন আমার, হয়ে যে শুরু শুরু মন আমার।
আদিব তাজ্জব বনে চলে গেলো, এই মুহূর্তেও নাকি পিচ্চিটা তার বাঁদরামি করছে হায়রে। হায়াতকে কোলে তুলে নিল আদিব। বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে বিছানার উপর বসিয়ে দিলো। কপাল কুচকে মুভ মলন খুজতে লাগলো, একটু পর তা পেয়েও গেলো। আস্তে আস্তে মলন লাগিয়ে দিলো, মুখে গাম্ভীর্য বজায় রেখে হায়াতকে বললো,
– এতো লাফালাফি করতে কে বলে তোমাকে।
– এ্যাাাা বকছেন কেনো, আমি চলে যাবো।
– কোথায় যাবে পাখি বা কতো দূরই যাবে, সাদাদ আদিব চৌধুরী তোমাকে পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকেই খুজে আনবে।
হায়াত কিছুক্ষণ আদিবের পেছন ঘুর ঘুর করে আবারও পড়তে বসলো,আর আদিব অফিসে যাওয়ার জন্য আয়নার সামনে রেডি হচ্ছে। হায়াত একটু কাছে এসে একটা চেয়ারে দাড়িয়ে আদিবের চুল গুলো ব্রাশ করে দিলো, মুচকি হেসে বললো,
– আপনি না আমার থেকে পিচ্চি হয়ে গেছেন।
– তাই ? তুমি কি যানো তোমার থেকে আমার ওইটার সাইজ অনেক বড়… আই মিন মন।
আদিব ঠোঁট কামড়ে হেসে হায়াতকে কোলে তুলে ওষ্ঠ নিজের আয়ত্তে এনে ফেললো,আস্তে আস্তে গলায় বাইট দিতে লাগলো। মিনিট বিশেক পর হায়াতের গালে পরশ একে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
আর হায়াত এখনো আদিবের বলা ওই কথাটাই ভাবছে। কথাটার মানে বুঝতে পেরে হা হয়ে গেলো,মনে মনে বললো- ছ্যাহ কি লুচু মার্কা বেডা, কি সব বলে একটু লজ্জাও করে না।
আস্তে আস্তে সারা রুম ঝাড়ু দিয়ে বিছানা গুছিয়ে ফেললো হায়াত। ক্লিও পা টিপে টিপে রুমে প্রবেশ করলো, হায়াত বসে বসে আরাবির সাথে মেসেজ করছিলো।
এমন সময় ক্লিও এসে হায়াতের পায়ের কাছে বসলো, হায়াত নাক সিটকে পা ওপরে তুলে ফেললো আর তকনি ক্লিও ইনোসেন্ট মুখ করে হায়াতের দিকে তাকালো। হায়াতের ভয় একটু কমলো, এতো মায়া ভরা চাহনিতে কার না ভয় দূর হয়।
হায়াত সাহস করে ক্লিওর শরীরে হাত বুলিয়ে দিলো, ক্লিও আদর পেয়ে এক লাফে হায়াতের কোলে ওঠে পড়লো, আর হায়াত আল্লাহ গো বলে চিৎকার করে চোখ বন্ধ করে ফেললো।চোখ টিপ টিপ করে ক্লিওর দিকে তাকালো,বেচারি ক্লিও হা করে চেয়ে আছে হায়াতের আদর খাওয়ার জন্য।
হায়াত যেন সব ভয় ভুলে গেলো আস্তে আস্তে ক্লিওর গায়ে আদর করতে থাকলো আর ক্লিও আদর পেয়ে মহা খুশি। হায়াতের হাতে পরম আহ্লাদে চা’টতে থাকলো,হায়াত নাক সিটকে বললো,
– তুই আর তোর বাবা এক, সুযোগ পেলেই আদর করতে চাস তাই না। এই তুই ছেলে নাকি পেয়ে দেখি একটু ।
এমন সময় ক্লিও হায়াতের কোলেই শিশি করে দিলো, হায়াত পুরো তাজ্জব বনে চলে গেলো। রাগে ফুসতে ফুঁসতে আরেকটা জামা নিয়ে গোসল করতে চলে গেলো, আর ক্লিও পুনরায় বেলকনিতে গিয়ে খাবার খেতে লাগলো।
বেলা এগারোটা। আরাবি রাস্তায়, হায়াত মুভি দেকার সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। কিছু একটা ভেবে আদিবকে কল করলো।
এদিকে আদিব সবে কেবিনে প্রবেশ করলো, একটানা দুই ঘন্টা মিটিংয়ে ছিলো সে। ঠিক তখনি ফোনে রিং হলো, স্ক্রিনে ঝলমল করছে #আমার_হায়াতি লেখা।মনে মনে ভাবলো, বাহ আমার বউ দেখি এখন আমাকে মিস ও করে, আহা কি সৌভাগ্য আমার। মুচকি হেসে কল রিসিভ করলো,
– হ্যা বউ বলো…
– আপনার ওই ক্লিও না ফিও ওটা ছেলে না মেয়ে, আমাকে একটু বলুন তো।
– কেনো কি হয়ছে বউ। ওটা তো একটা মেয়ে।
– ওহ যাক বেচে গেলো, নাহলে আজকে ওকে আমি বাসা থেকে বেরই করে দিতাম,জানেন ও আমার কোলে শিশি করে দিয়েছে, আবার আমার হাত চেটে দিয়েছে, ছ্যাহ।
– আচ্ছা বউ রাগ করে না ও ছোট তো এর জন্য বুঝে না,তুমি খেয়েছো।
– উহু আরাবি আসলে খাবো। আর শুনুন আমি আর আরাবি কিন্তু ওয়ার্শি ব্রিজে ঘুরতে যাবো আর সন্ধ্যায় আপনি আসলে মহেরা জমিদার বাড়িতে।
– আচ্ছা ঠিক আছে পাখি।
হায়াত খুশি মনে কল কেটে দিয়ে গেটের সামনে চলে গেলো। আর আদিবের ফোনে অচেনা এক নাম্বার থেকপ কল আসলো,আদিব কিছু না ভেবেই কল রিসিভ করলো।
– কি ব্রাদার শুনলাম বিয়ে করেছিস।
আদিব কিছুটা চিন্তিত গলায় বললো,
– হ্যা করেছি আট মাসের মতো হবে, তা আপনি কে…আমি তো চিনলাম না।
– বাহ নিজের জানের জিগারকে ভুলে গেলি, এই তোর বন্ধুত্বের প্রমান।
– রাজ ! রাজ তুই এই নাম্বার মানে তুই নতুন ফোন কিনেছিস, আর এতোদিন তোর ফোন বন্ধ ছিলো যে।
– হুম আমি রাজ, তা আমাকে রেখেই বিয়ে করলি ভেরি ব্যাড সাদাদ।
– আরে ঘরোয়া ভাবে বিয়ে করতে হয়েছে, আবার অনুষ্ঠান হবে,যাইহোক ফুপি কেমন আছে আর আসবি কবে।
– সবই বুঝলাম তা আমার ভাবিকে একটু কি দেখতে পারি ?
– না তোকে দেখানো যাবে না,তুই আমার বউয়ের দিকে শেষ মেশ নজর দিবি।
– আরে ভাই তোর বউ মানে তো আমার ও বউ,আর কিছুদিন পর তো আমি আসছিই তখন দেখবো তুই কি করে আমার হাত থেকে তোর বউকে বাঁচাস।
– যাহ বেডা এমন ফান করিস না, রাখ আমি অফিসে পরে কথা হবে।
– ওকে।
——
এদিকে আরাবি আর হায়াত কিছুক্ষণ মুভি দেখে নিলো, এরপর দুজন আয়েশি ভঙ্গিতে সোফায় বসে গল্প শুরু করলো, হায়াতের পায়ে মশা বসলো,
– তুম পাছ আয়ে,মশা ধরছে পায়ে… আগে যদি জানতাম কয়েল জ্বালিয়ে নিতাম।
– বাহ দোস্ত কি সুন্দর কবিতা বললি, ওহ স্যরি গান বললি।
– ধুরু এটা কোনো গান নয়, আমাকে সত্যিই মশা কামড়াচ্ছে।
হায়াত আর আরাবি মিলে কিছু পিক তুলে নিলো, এর পর দুজন বোরকা পড়ে রেডি হয়ে নিলো ওয়ার্শি ব্রিজে যাওয়ার জন্য। আজ তারা ঠিক করলো রিকশাতে করে ঘুরবে,যেই কথা সেই কাজ। হায়াত আর আরাবি মিলে রিকশাতে করে ওয়ার্শি ব্রিজে আসলো, দুজন মিলে ফুচকা খাচ্ছিল,হায়াত ফুচকাওয়ালা মামাকে বলতে শুরু করলো,
– মামা ঝাল দিন, ওনেক ঝাল দিবেন।
– হ্যা মামা ওর টাতে অনেক ঝাল দিন, যাতে ও আর কখনো ঝাল খাওয়ার বায়না না ধরে।
ফুচকাওয়ালা মামা প্রচুর ঝাল দিতে শুরু করলো কিন্তু হায়াতপর কাছে নাকি তা কোনো ঝালই লাগে না, এক পর্যায়ে সব মরিচকে হায়াতকে দিলো, আর হায়াত খেয়ে ঝালে অবস্থা শেষ হয়ে গেলো,পানি পানি বলে চিৎকার করতে লাগলো।
আরাবি আশে পাশে দেখলো কোথাও পানি নেই,এদিকে দূরে থেকে গাড়িতে বসে একটা ছেলে অনেক্ক্ষণ যাবত বিষয়টা খেয়াল করছিলো, পরনের নীল কালার শার্টটা হাতা গুটিয়ে কাছে রাখা ঠান্ডা পানির বোতলটা নিয়ে সামনে এগিয়ে আসলো।
এদিকে হায়াত নেকাপ উচু করে ঝাল ঝাল বলে কান্না করছিলো,ছেলেটা এগিয়ে এসে হায়াতকে পানি দিলো হায়াত আবেশে পানি খেতে লাগলো, ছেলেটা হায়াতকে একবার পরখ করে তাকিয়ে দেখলো, হায়াতে দুটো চুড়ি, নাকো ছোট্ট ফুল নাকের ডকাটা বেশ লাল হয়ে আছে।
ছেলেটা চোখ নামিয়ে ফেললো, এমন সময় আরাবি বললো,
– জানু মুখে পানি ছিটিয়ে দে খুব ভাল্লাগবে।
ছেলেটা এবার আরাবির দিকে তাকালো, শ্যাম বর্ণের মেয়েটা, মাথায় হিজাব করা, চোখ গুলো ছোটো ছোটো দেখতে ভীষণ মায়াবী। হায়াত পানি মুখে ছিটিয়ে ছেলেটাকে বোতলটা এগিয়ে দিলো।
– ধন্যবাদ, আপনি আজকে না থাকলে আমি বোধহয় জ্ঞানই হারিয়ে ফেলতাম।
ছেলেটা মিষ্টি করে হাসলো,বাকা হেসে বোতলটা নিয়ে চলে গেলো, আরাবি আর হায়াত হা করে চেয়ে রইলো,দুইজনেই এক সাথে বলে ওঠলো,
– কেমন ছেলেরে বাবা, একটা কথাও বললো না।
দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।বিল মিটিয়ে রিকশায় ওঠে পড়লো, আদিবও টাঙ্গাইল এসে হায়াতদের জন্য দাড়িয়ে আছে, ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়লো দুজন।
আরাবি আদিবকে দেখেই মুচকি হেসে বললো,
– দুলাভাই আজকে হায়াত যা করেছে না।
আরাবির কথা শুনে হায়াত চোখ বড় বড় করে তাকালো তার দিকে, যার অর্থ আদিবকে কিছু বলিস না প্লিজ। কিন্তু বোকা আরাবি বলতে শুরু করে দিবে ঠিক তখনি আদিবের একটা কল আসে আর আদিব মুচকি হেসে কল রিসিভ করে।
হায়াত যেনো অনেক বড় ঝামেলা থেকে বেঁচে গেলো।আরাবির পিঠে একটা থাপড় দিয়ে বললো,
– এই বেডি আমি কি তোকে বলেছি ওনাকে সব বলে দিলে।
– ওহ তারমানে দুলাভাইকে এসব বলা যাবে না ?
– না পাগল।
এমন সময় আদিব এক গাল হেসে আরাবিকে বললো,
– হ্যা শালিকা বলো কি যেনো বিচার দিচ্ছিলে আমার বউয়ের নামে।
– না না কিচ্ছু না আমি এমনিই ফাজলামো করছিলাম ভাইয়া,চলুন ভেতরে চলুন।
আদিবের চোখ গেলো নেকাপ পরিহিত হায়াতের দিকে, চোখ গুলো কেমন লাল হয়ে আছে। আদিব কপাল কুচকে বললো,
– বউ চোখের এই অবস্থা কেনো, ঝাল খেয়েছো নাকি ?
– উহু গরমে আলুর ভর্তা হয়ে গিয়েছি এর জন্য।
আদিব আর আরাবি দুজনেই হায়াতের কথায় হা হয়ে গেলো,এতো শীতেও নাকি হায়াতের গরম লাগছে। আদিব দুষ্টু হেসে হায়াতের কানে ফিসফিস করে বললো,
– বউ তুমি কি এখন আদর খেতে চাচ্ছো, যে গরম লাগছে তোমার ?
আদিবের কথায় হা হয়ে গেলো হায়াত, আর এদিকে এদের কান্ড দেখে মিটি মিটি হাসছে আরাবি। আদিব একটু ঠোঁট কামড়ে হেসে আরাবিকে বললো,
– শালিকা একটু ওইদিকে ঘুরে চোখ বন্ধ করো তো।
আদিবের কথা মতো আরাবি অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়ালো, আদিব হায়াতের গালে হাত দিয়ে নেকাপ একটু উঁচু করে হায়াতের গালে অধর ছুইয়ে দিলো। হায়াত লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেললো।
#চলবে….