#আমার_হায়াতি
পর্ব : ৩২
লেখিকা : #Nahar_Adrita
( বিয়ে….✨)
সকাল সাতটা, দিনের একেবারে শুরুর দিক। রাতের কালো আবেশ তখনও পুরোপুরি কেটে যায়নি, আকাশে হালকা নীলের সাথে মিশে থাকে কুয়াশার সাদা পরত। পাখিদের কিচিরমিচির ডাক ভেসে আসে, বাতাসে থাকে ভেজা ঘাসের সুবাস। এই সময়টা নতুন করে শুরু করার, শান্ত অথচ প্রাণবন্ত এক আবহ তৈরি করে।
বাড়ির সকলে উঠেই যার যার কাজে লেগে পড়েছে। আদিব, রাজসহ সকলে মিলে আসিফকে আবারও হলুদ দিয়ে গোসল করাচ্ছে। দুপুরেই বিয়ে পড়ানো হবে বলে সকলে ব্যস্ত প্রস্তুতিতে। আদিব বাকা হেসে বললো,
ওদিকে হায়াতরা মিলে আসিফের রুম ফুল দিয়ে সাজাচ্ছে । ঠিক তখনই আরাবি একটি লাল গোলাপ তুলে নিয়ে নিজের কানে গুঁজে নিলো। হায়াতের চোখে পরতেই এক গাল হেসে বললো,
– দেখো নুপুর, রিয়া, মিনহাজা! আরুকে কতো কিউট লাগছে, তাই না ?
মিনহাজা মুচকি হেসে বললো,
– হ্যাঁ ভাবি, একদম পুতুলের মতো লাগছে।
তার কথায় বাকিরাও মাথা নাড়লো। নুপুর হেসে বলতে শুরু করলো,
– আমার যদি আরেকটা ভাই থাকতো, তবে আরাবিকেই ভাবি করে আনতাম।
রিয়া দুষ্টুমি করে বললো,
– হ্যাঁ, আমি ভাবছি রাজ ভাইয়ের সাথেই আমাদের আরুকে বিয়ে দিয়ে দিই। কেমন হবে, ভাবি ?
সকলের হাসি-ঠাট্টার মাঝে লজ্জায় আরাবি কাঁদো কাঁদো হয়ে গেলো । হায়াত এগিয়ে গিয়ে আরুর গালে আলতো একটা চুমু খেয়ে হাসতে হাসতে বললো,
– না না, আরুকে কখনোই রাজ ভাইয়ার মতো গোমড়া মুখো মানুষের সাথে বিয়ে দেওয়া যাবে না। আমাদের ডার্ক রোমান্স গল্প পড়ুয়া আরাবির জীবন তো শেষ হয়ে যাবে যদি এমন গম্ভীর মুখো কারো সাথে বিয়ে হয়ে যায় !
কথাটা শুনে সকলে আবারও হেসে উঠলো। কিছুক্ষণ আড্ডা শেষে সবাই আবার রুম সাজানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো।
এদিকে আসিফ গোসল সেরে রুমে ঢুকলো। ভেতরে ঢুকতেই দেখে চারপাশে ফুলের সাজ আর বোনদের হাসাহাসি। মাথা চুলকে গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
– তোদের এসব করতে কে বলেছে ?
হায়াত মুচকি হেসে জবাব দিলো,
– কে আবার ভাইয়া, আপনার ভাইয়ের কড়া আদেশ—বাসর ঘর সাজাতেই হবে।
রিয়াও হেসে মাথা নাড়িয়ে বললো,
– হ্যাঁ, আদিব তো ভোর পাঁচটায় উঠে ফুল কিনে এনেছে।
আসিফ তোয়ালে কাঁধে রেখে দাঁড়িয়ে রইলো। হঠাৎ চোখ গেলো আরাবির দিকে। কানেই তখনো সেই গোলাপ। আসিফের বুকের ভেতরটা কেমন যেন ধক করে উঠলো। মনে মনে ভাবলো,
মেয়েটা সত্যিই ভীষণ সুন্দর… সামান্য একটা ফুলেই কী অদ্ভুত মানিয়েছে তাকে।
সকাল দশটা। সকলে একে একে নাস্তা সেরে নিলো। খাওয়া-দাওয়া শেষ হতেই আদিবের দাদি সবাইকে গোসল সেরে তৈরি হতে বললেন। কথা মতো সকলে হাত-মুখ ধুয়ে যে যার মতো রেডি হতে চলে গেলো।
এমন সময় বাড়ির গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো আরাবির মা-বাবা। সবে মাত্র সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠছিলো আরাবি, কিন্তু বাবা মাকে দেখে আনন্দে দৌড়ে নেমে এলো নিচে। হায়াতও এক গাল হেসে দ্রুত নেমে এলো।
আরাবি ছুটে গিয়ে মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরলো, আর হায়াত ভদ্রভাবে সালাম জানিয়ে জড়িয়ে ধরলো। চারপাশে হাসির রোল উঠলো। মিসেস সুফিয়া আর
মিসেস অরোরা তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে অতিথিদের ডাইনিং টেবিলের দিকে নিয়ে গেলেন।
আরাবির মা একজন গাইনোকলজিস্ট বিশেষজ্ঞ, আর তার বাবা সাহানুর খান একজন ব্যাঙ্কার।
এদিকে আদিবের ঘোর বিপদ, পাঞ্জাবির একটি বোতাম খুলে গিয়েছে। অনলাইনে অর্ডার করা করলেও নতুন পাঞ্জাবি আসতে তিন দিন লেগে যাবে, এখন চাইলেও বাইরে গিয়ে কেনার সুযোগ নেই, সময়ও কম।
হায়াত পা টিপে টিপে রুমে ঢুকতেই দেখলো, আদিব চিন্তিত মুখে বসে আছে। কপাল কুঁচকে হায়াত বললো,
– কী হয়েছে ? গোসল করে পাঞ্জাবি পরছেন না কেনো, নাকি অন্য কিছু পরবেন ?
আদিব দীর্ঘশ্বাস ফেলে উত্তর দিলো,
– বোতামটা খুলে গেছে… নতুন কেনাও সম্ভব না।
হায়াত এগিয়ে এসে আদিবের কোলে বসল। আলতোভাবে ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। আদিব মুহূর্তেই লাজুকপাখি কে কাছে টেনে আবেশে ডুবে গেলো। প্রায় দশ মিনিট পর ছেড়ে দিয়ে হায়াত মুচকি হেসে বললো,
– অনলাইনে অর্ডার করুন তাহলে।
আদিব গলায় মুখ ডুবিয়ে ফিসফিস করে বললো,
– এটা তো খাবার না বউ, বললেই যে সঙ্গে সঙ্গে চলে আসবে।
হায়াত এবার বোঝলো সমস্যাটা আসলেই গুরুতর। সে ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ ভেবে ওয়ারড্রোব খুলে সুই-সুতা বের করলো। আদিবের হাত থেকে বোতামটা নিয়ে নিপুণভাবে সেলাই করতে লাগলো। তিন মিনিটের মধ্যেই কাজ শেষ।
হাতের কাজের নিখুঁত ফলাফল আদিবকে দেখিয়ে হায়াত মুচকি হেসে বললো,
– এবার আর কোনো সমস্যা নেই।
আদিব হেচকা টান দিয়ে হায়াতকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। গলায় নাক ডুবিয়ে আদিব প্রশংসা করলো,
– বাহ! আমার বউ দেখি সব কাজেই পারদর্শী।
হায়াত চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে হাসলো,
– হ্যাঁ, টুকটাক জানি। আচ্ছা, এবার যান তো, তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিন ।
আদিব আর কিছু না বলে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।
কিছুক্ষণ পর আরাবি, নুপুর আর অন্যরা রুমে এলো। হায়াত তখন বিছানার চাদর ঠিক করছিলো। সবাই ডিভানে বসলো। আরাবি হাতে শাড়ি নিয়ে বসে বিরক্ত মুখে বললো,
– এই জানু! আমাকে কেন শাড়ি পরতে হবে ? তোরা পর না !
হায়াত কাজ করতে করতেই বললো,
– না না আজকে সবাই পরবো তো তোকেও পরতে হবে।
কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে সকলে নুপুরের রুমের দিকে রওনা দিলো। হায়াত আলমারি থেকে একটি গাঢ় মেরুন রঙের শাড়ি বের করে নিয়ে বাকি মেয়েদের সাথে চলে গেলো।
মুহূর্তের মধ্যে হাসি-আনন্দে ভরে উঠলো রুম। একে একে সবাই সাজগোজ শুরু করলো। শাড়ির গুঁজে নিলো, টিপ পরে নিলো কপালে । হায়াত নিজে সেজে নিয়ে আরাবির খোপায় আলতো করে একটা লাল গোলাপ গুঁজে দিলো। মেয়েটাকে যেন আরও বেশি সৌন্দর্য্য ফুটে উঠলো।
এদিকে বাড়ির বড়রা—মা , চাচীরা—তরুণীদের সাথে তাল মিলিয়ে সেজে নিচ্ছেন।
একসময় সবাই একসাথে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো। ড্রইংরুম যেন ছোট্ট এক আনন্দ।
আদিবের চোখ হায়াতের উপর গিয়ে থমকে গেলো। হায়াতকে যেন আজ নতুন করে দেখছে,এতদিনের চেনা মানুষটা হঠাৎ অন্য এক জগৎ থেকে নেমে এসেছে যেন। একটু বেশিই সুন্দর লাগছে তার লাজুকপাখিকে।
ঠিক তখনই ড্রইংরুমে প্রবেশ করলেন রাকিব চৌধুরী আর জাকির চৌধুরী,, দুজনেই সাদা পাঞ্জাবিতে দারুণ লাগছিলো। হায়াত মিষ্টি হেসে বললো,
– বাবা, চাচ্চু, মাশাআল্লাহ আপনাদের অনেক সুন্দর লাগছে। অনেকদিন পর দেখলাম আপনারা সাদা পাঞ্জাবি পরলেন।
দুই ভাই হেসে হায়াতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। পাশে বসা মিসেস অরোরা আর সুফিয়া মুখ গোমরা করে বললেন,
– হ্যাঁ, তাদেরই শুধু সুন্দর লাগছে, আমাদের নয় নাকি ?
হায়াত হেসে তাড়াতাড়ি বললো,
– আরে না আম্মু, আপনাদেরও দারুণ লাগছে।
এই সময় রাজ এসে হাজির হলো আসিফকে নিয়ে। বিয়ের সাজে আসিফকে রাজপুত্রের মতো লাগছে। মিসেস সুফিয়া এগিয়ে এসে ছেলের কপালে চুমু খেলেন,
– বাজান, আম্মুর জন্য বউ না, একেবারে লক্ষ্মী মেয়েকেই নিয়ে আসো।
আসিফ মৃদু হেসে দৃষ্টি ফেললো,চোখ গিয়ে থমকালো আরাবির দিকে। কালো শাড়িতে মেয়েটি যেন একেবারে অপরূপা। নিজের অজান্তেই আসিফের বুকের ভেতর কেমন এক ধাক্কা খেলো ক্রাশ ! মনে মনে নিজেকে গালি দিতে লাগলো,
কখনো কোনো মেয়েকে এভাবে ভালো লাগেনি, এভাবে তাকিয়েও দেখি নাই। আজ হঠাৎ এ কেমন অনুভূতি?”
আসিফের ভাবনার মাঝে হঠাৎ আদিব তার পিঠে চাপড় মেরে বললো,
– এখনই বউ নিয়ে দিবাস্বপ্ন দেখার দরকার নেই স্যার, আগে চলুন বিয়ে করিয়ে বউ নিয়ে আসি।
আদিবের কথায় সকলে হো হো করে হেসে উঠলো। আরাবির মা-বাবাও এসে মেয়ের পাশে দাঁড়ালেন।
হঠাৎই রাকিব চৌধুরীর ফোনটা বেজে উঠলো। সবার দৃষ্টি ঘুরে গেলো তার দিকে। তিনি চশমাটা টেনে ঠিক করে কল রিসিভ করলেন। ওপাশে কী বলা হলো সেটা শোনা গেলো না, কিন্তু মুহূর্ত পরেই তার হাত থেকে ফোনটা প্রায় পড়ে যাচ্ছিলো।
ধপ করে মেঝেতে বসে পড়লেন রাকিব চৌধুরী।
বাবা….! বলে চিৎকার করে ছুটে গেলো আদিব, বাবাকে জাপটে ধরলো।
হঠাৎ পুরো ঘর স্তব্ধ। সাংবাদিকরা ব্যস্ত ক্যামেরা ক্লিক করতে, একজন তো ভিডিও করতেই শুরু করেছে। রাজ রেগে গিয়ে সবাইকে থামাতে লাগলো, শাহাদাত ছুটে গিয়ে দরজায় সামনে দাঁড়িয়ে গেলো।
রাকিব চৌধুরীকে সোফায় বসানো হলো সকলে মিলে । হায়াত দৌড়ে গিয়ে বরফ এনে তার মাথায় চাপালো,কারণ তিনি চিন্তায় পড়ে গেলে সহজেই ব্লাডপ্রেশার বেড়ে যায়।
আসিফ হাঁটু গেড়ে বসে কণ্ঠ কাঁপিয়ে বললো,
– কী হয়েছে চাচ্চু ?
জাকির চৌধুরী ভাইয়ের পিঠে হাত বুলিয়ে ফিসফিস করে বললেন,
– কিছু বলো ভাই, এতটা অস্থির কেন,কি হয়েছে।
আদিবও কেঁপে কেঁপে বললো,
– বাবা, কিছু হয়েছে ? অফিসে কোনো সমস্যা… আমি গেলে দেখি ?
অবশেষে কপালে হাত রেখে ভেঙে পড়া কণ্ঠে বললেন রাকিব চৌধুরী,
– কনের খবর এসেছে… বউ পালিয়েছে অন্য ছেলের সাথে। বাড়িতে কান্নার রোল উঠেছে। প্রেস-মিডিয়া পেছনে লেগে আছে। আমার ব্যবসার সর্বনাশ হয়ে যাবে। এখন বলো আমি কী করবো ?
কথা শেষ হতেই ঘরে একসাথে চিৎকার, কান্না আর অবিশ্বাসের শ্বাসরোধী আবহ। আসিফের মা ডুকরে কেঁদে উঠলেন। জাকির চৌধুরী রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে কনের বাবাকে ফোন করে ক্ষোভ উগড়ে দিতে লাগলেন।
সময় যেন থমকে ছিলো প্রায় এক ঘণ্টা। তারপর হঠাৎ নীরবতা ভেঙে মিসেস অরোরা চিন্তিত গলায় বললেন,
– আচ্ছা, চাইলে একটা কাজ করতে পারি…
সবাই তাকালো তার দিকে। তিনি চোখ সরালেন না, ধীরে ধীরে আরাবির মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
– আপা, একটা আবদার আছে… রাখবেন?
অবাক দৃষ্টিতে মিসেস সায়মা জবাব দিলেন,
– হ্যাঁ আপা, বলুন। চেষ্টা করবো।
মিসেস অরোরা এক দমে বলে ফেললেন,
– আসলে… এই বিপদের মুহূর্তে আমি চাই আপনার মেয়েকে আমাদের আসিফের সাথে বিয়ে দিতে। আপা বুঝতেই পারছেন, এতোক্ষণে নানান কথা রটতে শুরু করেছে।
মুহূর্তেই মিসেস অরোরার কথায় পুরো ঘরটা যেনো নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। কারও মুখে কোনো শব্দ নেই, শুধু চাপা নিঃশ্বাস আর অস্থিরতার আবহ।
জাকির চৌধুরী ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলেন আরাবির বাবার কাছে। তাঁর দুটো হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে কণ্ঠ ভারী করে বললেন,
– ভাই হিসেবে চাইছি… আপনার মেয়েটাকে আমাদের ঘরে দেবেন। কথা দিচ্ছি, কোনোদিনও ভালোবাসার ঘাটতি অনুভব করবে না। আরাবিকে নিজের সন্তানের মতো যত্নে রাখবো।
ঘরজুড়ে এক মুহূর্তের নীরবতা। সবার চোখ এবার ঘুরলো আরাবির দিকে। মেয়েটা চুপচাপ বসে আছে, চোখ নামানো, ঠোঁট কাঁপছে, কিন্তু কোনো কথা বলছে না।
হায়াত দম বন্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আরাবির মুখে। মনে মনে আতঙ্কে ভাবছে,
“যদি আরাবি আসিফ ভাইকে না মেনে নেয়…? যদি মাথা নেড়ে না বলে দেয় ?
সময় যেন থেমে গিয়েছিলো…………
প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে বোঝানো-সমঝানোর পর অবশেষে আরাবির মা-বাবা মাথা নিচু করে সম্মতি জানালেন। সবার মুখে স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস ছড়িয়ে গেলো।
রাকিব চৌধুরী কণ্ঠ দৃঢ় করে আদিবের দিকে তাকিয়ে বললেন,
– কাজিকে ফোন দাও, আদিব। এখানেই, এই মুহূর্তে ওদের বিয়ে পড়ানো হবে।
নীরব ঘরে হঠাৎ যেনো আলো জ্বলে উঠলো। সবার মুখে একে একে আনন্দের হাসি ফুটে উঠলো।
শুধু আসিফের মুখে ছিলো অন্যরকম এক মুচকি হাসি। যেন ভেতরে ভেতরে সে এটাই চাইছিলো—হাজারো অজুহাতের আড়ালে এই মুহূর্তটাই যেনো তার জন্য অপেক্ষা করছিলো।
হায়াত মুচকি হেসে বললো,
— ইসস আরু বেবি, তোর কি ভাগ্য রে! নিজের বাসর ঘরটা আজ নিজেই সাজিয়েছিস।
হঠাৎ কথা শুনে আরাবি বড় বড় চোখ করে তাকালো হায়াতের দিকে। কিছুক্ষণ পর হায়াত আর কিছু না বলে রান্নাঘরে চলে গেলো। বিকেল হয়ে আসছিলো, সকলে যেনো একটু চা খেলে ভালো লাগে।
চা বসিয়ে গুনগুন করতে করতে চামচ নাড়ছিলো হায়াত। ঠিক তখনই পেছন থেকে দু’টো বাহু এসে জড়িয়ে ধরলো তাকে। চমকে উঠে পেছনে তাকাতেই দেখলো আদিব। বুকের ওপর ঠেলা দিয়ে গম্ভীর মুখে বললো,
– ধুর, এভাবে হঠাৎ করে কেউ আসে ! জানেন , আমি কতো ভয় পেয়ে গিয়েছি …
আদিব ঠোঁটে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে কানে কানে বললো,
– তাই নাকি, লাজুকপাখি ?
– হু, তাই। কিন্তু আপনি এখানে কেনো…?
আদিবের চোখ নামলো হায়াতের বক্ষের দিকে। মৃদু গলায় মজা করে বললো,
– এইতো… একটু দুধ খেতে এলাম।
হায়াত অবাক হয়ে পাশে রাখা খুন্তি হাতে তুলে নিলো।
– কী বললেন আপনি ?
আদিব সঙ্গে সঙ্গে একটু দূরে সরে গেলো।
– আরে না না জান ! আমি বলতে চেয়েছিলাম, তোমার দুধ দিয়ে চা খাবো।
হায়াত চোখ কুঁচকে তাকালো।
– কিহহহহহ্ !
আদিব হাত নেড়ে তাড়াতাড়ি বললো,
– না না, দুধ চা! বউ, রাগ করলে নাকি ? আমি তো মজা করছিলাম। আচ্ছা আচ্ছা, তুমি থাকো, আমি যাচ্ছি।
কথা শেষ না হতেই আদিব সরে গেলো। আর হায়াত হো হো করে হেসে উঠলো।
দশ মিনিট পর গরম গরম চা নিয়ে হায়াত একে একে সবার হাতে ধরিয়ে দিলো। চায়ের পেয়ালার ভেতর ধোঁয়া উড়তে উড়তেই যেনো ঘরটা আরও উষ্ণ হয়ে উঠলো।
সেই সময় দরজায় টোকা পড়লো। কাজি সাহেব এসে পৌঁছেছেন। মুহূর্তেই সবাই গুছিয়ে বসলো। আসিফকে আর আরাবিকে ডেকে এনে দু’টো সোফায় বসানো হলো। পরিবেশ হঠাৎ থমথমে, শুধু সবার নিশ্বাস আর দোয়া-দরুদ পড়ার সুর ভেসে আসছিলো।
কাজি সাহেব নিয়ম মেনে দোয়া শেষ করে কবুল বলতে বললেন। আসিফ দৃঢ় কণ্ঠে এক নিঃশ্বাসে বলে দিলো,
– আলহামদুলিল্লাহ কবুল।
কিন্তু আরাবির ঠোঁট কাঁপছিলো। চোখ ভিজে উঠলো, দু’ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়লো গালে। তারপর কাঁপা গলায় সেও উচ্চারণ করলো,
– আলহামদুলিল্লাহ কবুল….
ঘরজুড়ে সবার মুখে তখন “আলহামদুলিল্লাহ” ধ্বনি। শুকরিয়া আদায় হলো, একে একে মিষ্টি মুখ করানো হলো সবাইকে।
কেউ খেয়াল করলো না—কোণের সোফায় বসে থাকা আসিফ নিঃশব্দে মাথা নিচু করে এক মুঠো হাসি চেপে রেখেছিলো। যেন এটাই তার কাঙ্ক্ষিত চাওয়া আজ পূরণ হওয়ার মুহূর্ত।
সকলে মিষ্টি মুখ করে নিলো। আস্তে আস্তে সকল আত্নীয় স্বজনদের খাওয়ানোর পর্ব শুরু হলো। আরাবি হায়াতের রুমে বসে আছে, আর হায়াত একে একে মিসেস সুফিয়ার দেওয়া গহনা গুলো আরাবিকে পরাচ্ছে। আরাবি একমনে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে, খানিক পর বললো,
– বুঝলি জানু……মানুষ বলে যেটা মন থেকে চাওয়া হয় সেটা নাকি সহজে পাওয়া যায় না,কিনৃতু আবার বেলায় ঠিক তার অন্যটা হলো।
হায়াত যেনো আরাবির কথা তেমন একটা বুঝলো না,তাই আনমনে সাজাতে লাগলো।
সাজানো প্রায় শেষ, এখন আরাবির দিকে হা হয়ে নুপুর, মিনহাজা, রিয়া। লাল টুকটুকে শাড়ি আর গা ভর্তি গহনাতে আরুকে বেশ আবেদনময়ী লাগছে।
সবাই মিলে আসিফের রুমে আরাবিকে বসিয়ে দিলো, আরাবি একটু ঘাবড়ে গিয়ে হায়াতের দিকে তাকালো। হায়াত আরাবিকে বুঝালে আসিফ কিছু বলবে না।
”
”
”
একটু পর আসিফকে নিয়ে আদিবরা আসলো, সকল মেয়েরা আসিফের দরজার সামনে দাড়ালো, আসিফ অনেকক্ষণ জোরাজুরি করার পর ১০ হাজার টাকা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।
আরাবি চুপচাপ বসে আছে, আসিফ গিয়ে মুচকি হেসে দরজা আটকে দিল।আরাবির ঘোমটা একটু উঠিয়ে আসিফ মুচকি হেসে মনে মনে ভাবলো, কি বলে কথা শুরু করবো,সে তো এখন আমার বউ৷
গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
– ভালো আছেন মেডাম।
আরাবি চোখ বন্ধ করে বললো,
– আমি ওয়াশরুমে যাবো।
আসিফ বুঝতে পারলো আরাবি একটু ঘাবড়ে গিয়েছে, তাই মনে মনে হেসে বললে,
– হ্যা যাও। ওইযে ওইখানে।
আরাবি দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকতে গিয়ে ধপাস করে পরে গেলো শাড়ির সাথে বেজে গিয়ে।
আসিফ পেছনে তাকাতেই হা হয়ে গেলো, আরাবি ফ্লোরে হা হয়ে পড়ে আছে। অনেক কষ্টে হাসি কন্ট্রোল করে আরাবিকে ওঠে বসতে সাহায্য করলো। আরাবি লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। আসিফ ঠোঁট কামড়ে হেসে বললো, বেশি ব্যথা পেয়েছো ?
আব্ নাহ…..
আসিফ আর কিছু না বলে আরাবিকে কোলে তুলে নিল। আরাবি যেনো আরও বেশি লজ্জা পেয়ে গেলো। আরাবিকে বিছানায় বসিয়ে আসিফ ড্রয়ার থেকে মলন এনে আরাবির পায়ে লাগিয়ে দিতে লাগলো ।
আরু একটু পর পরই পা সরিয়ে নিচ্ছে, আসিফ রাগী চোখে তাকালো।
আসিফ মলন লাগাতে লাগাতে হালকা গলায় বললো,
– তোমার কষ্ট হলে কিন্তু আমিই সবার আগে বুঝবো, মনে রাখবে, এমন করবে না ওকে ।
আরাবি মুখ লুকিয়ে ফিসফিস করে উত্তর দিলো,
– এত যত্ন নিচ্ছেন কেন?
আসিফ গম্ভীর স্বরে বললো,
– কারণ তুমি এখন শুধু আমার বউ নয়, আমার আমানতও।
ঘরটা যেন এক মুহূর্তে নরম আলোয় ভরে উঠলো। বাইরে থেকে সবার হাসি-ঠাট্টা ভেসে আসছে, কিন্তু ভেতরে দু’জনের নীরবতাই সবকিছুকে ছাপিয়ে গেলো।
আসিফ আস্তে করে আরাবির হাতের আঙুল ধরে বললো,
– ভয় পেয়ো না, আমি একদিনে সবকিছু চাই না। ধীরে ধীরে… তোমার সময় মতো…
আরাবি চোখ নিচু করে নীরব রইলো, কিন্তু ঠোঁটের কোণে লাজুক হাসি ফুটে উঠলো।
এদিকে রাজ মনে মনে কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসলো, সবার উদ্দেশ্য করে বললো,
আজ রাতে ছোট খাটো চা কফি, মিষ্টি দিয়ে আড্ডা দিলে খারাপ হয় না।
হায়াত কিছু বললো না,কিন্তু সকলে রাজি হয়ে গেলো, সকলে মিলে ঠিক করলো রাত দুটোর পর পার্টি শুরু হবে।
সকলে ফ্রেশ হতে রুমে চলে গেলো।
আদিব আর হায়াত রুমে এসে বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়লো। আদিব হায়াতের ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ পুড়ে নিল। মিনিট পাঁচেক পর বললো,
– বউ আজ আমার বড্ড প্রেম প্রেম পাচ্ছে।
হায়াত কপাল স্লাইড করে বললো,
– ওটা তো আপনার প্রতি ঘন্টায়ই পায়।
আদিব হেসে হায়াতকে বুকের ওপর নিয়ে বললো,
– ধুর পঁচা আমি ওটা বলিনি, আমি ভাবছিলাম চলো একটু লং ড্রাইভে যাবো।
এরপর গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরলো দুজন, আস্তে আস্তে চলতে শুরু করলো৷ আর আদিব একটা হিন্দি গান ছেড়ে দিলো, আদিব ড্রাইভ করছে টাঙ্গাইলের রাস্তায় আর হায়াত আদিবের কাধে মাথা দিয়ে গুন গুন করছে।
গাড়ির হেডলাইটে অন্ধকার পথটা আলোকিত হয়ে উঠছে। চারদিকে টাঙ্গাইলের নির্জন রাস্তায় হালকা কুয়াশা নেমে এসেছে। জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস হায়াতের শাড়ির আচলঁ উড়িয়ে দিচ্ছে।
হায়াত মাথা গুঁজে আছে আদিবের কাঁধে, গুন গুন করে গানের সুর মিলাচ্ছে। আদিব একবারের জন্যও চোখ সরাচ্ছে না রাস্তা থেকে, তবু হাসিটা লুকাতে পারছে না।
– বউ, জানো ? এই রাত … সবকিছু একেবারে সিনেমার মতো লাগছে,মনে হচ্ছে আমার চাওয়া পাওয়া সব পূরণ হচ্ছে, আজ রাতে আমরা বেবি নেওয়ার প্রসেসিং শুরু করবো..!
হায়াত চোখ মুদে আস্তে বললো,
– হুসস, বাড়ি গিয়ে ওটা বুঝবো, এখন মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালান।
”
”
টাঙ্গাইলের গ্রামের রাত দশটা, শান্তি সবদিকেই বিরাজ করছে। খোলা আকাশে চাঁদের নরম আলো পড়ছে ধানক্ষেতের উপর, যেখানে হালকা হাওয়া দুলছে ধানের গাছেদের পাতা। দূরে কুকুরের ভৌকন আর কেউ কোথাও ধীর আওয়াজে কথা বলার শব্দ শোনা যাচ্ছে। ঘরগুলোতে মৃদু আলো জ্বলছে, কেউ হয়তো রাতের খাবার খাচ্ছে, কেউ আড্ডা দিচ্ছে। বয়সী মানুষরা হয়তো বারান্দায় বসে দিনের ঘটনার গল্প করছেন, আর ছোট ছেলেমেয়েরা ঘরে খেলাধুলা শেষ করে ঘুমের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই সময় গ্রাম যেন এক শান্ত ও স্বপ্নময় আবহে ডুবে থাকে।
গাড়িটা থামলো একটা নির্জন চায়ের দোকানের সামনে। দোকানদার হাই তুলতে তুলতে গ্লাসে ধোঁয়া ওঠা চা ঢালছিলো। আদিব নেমে দু কাপ চা অর্ডার দিলো।
হায়াত গাড়ি থেকে নেমে চারপাশে তাকিয়ে হাসলো,
– আহা, রাতে গ্রামটা কি শান্ত তাইনা। কিন্তু এতো শান্ত পরিবেশ কেনো এই দিকে।
আদিব কাপ হাতে এগিয়ে এলো। দু’জন মাটির বেঞ্চে পাশাপাশি বসল। টিনের ছাউনিতে টুপ টুপ করে শিশির ঝরছে, আর দূরে জোনাকির আলো ঝিকমিক করছে। হায়াত চায়ের কাপে ফুঁ দিতে দিতে হেসে বললো,
– এই চায়ের স্বাদটা মনে হয় শহরেও রাতের বেলায় কোনোদিন পাওয়া যাবে না।
– হুম, শহরের কফিশপে লাখ টাকা বিল দিলেও এই স্বাদ আসবে না।
আদিব একটু হাসলো , আর হায়াতের কপালে আস্তে টোকা দিলো।
চা শেষ করে দু’জন নদীর ঘাটে গিয়ে দাঁড়ালো। চাঁদের আলো পানির ওপর ঝিকমিক করছে। হায়াত নিজের ওড়না দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া থেকে মুখ ঢাকলো। আদিব পাশে দাঁড়িয়ে হাতটা শক্ত করে ধরলো।
– জানো হায়াত, তোমাকে ছাড়া এই দৃশ্যটা কেমন যেনো ফাঁকা লাগতো। ফ্রেন্ডদের সাথে আসলেও এতো ভালো লাগতো না।
– ফাঁকা তো হবেই… আমি ছাড়া তো আপনার জীবনটাই ফাঁকা।
দু’জন হেসে উঠলো। তারপর নিস্তব্ধ রাতের মাঝে শুধু নদীর ঢেউ আর তাদের হাসির শব্দ ভেসে বেড়াতে লাগলো। আদিব আস্তে আস্তে হায়াতের দিকে ঝুঁকে পরলো, ছোট ছোট করে অসংখ্য চুমু খেলো হায়াতের সারা মুখে। হায়াতও আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো।
প্রায় মিনিট পাঁচেক পর হায়াত আর আদিব ওঠে পরলো নদীর পার থেকে। এরপর গাড়িতে ওঠে পরলো দুজন। হায়াত আর আদিব আস্তে ধীরে গাড়িটি চলতে থাকলো।
#চলবে
#আমার_হায়াতি
পর্ব : ৩৩
লেখিকা : #Nahar_Adrita
(লেখিকার নাম ছাড়া কপি/চুরি করা সম্পুর্ন নিষিদ্ধ 📌)
( কোনো গল্পের সাথে নাম,পদবি,স্থানের নাম মিলে গেলেই কপি বলে চিৎকার করতে আসবেন না,লেখিকা নতুন হলেও লেখার মর্ম বুঝতে পারে,তাই কপি করার মন মানসিকতা তার নেই। ❌)
( এই পর্বে কিছু গালি – গালাজ ব্যবহার হবে, এমনকি রোমান্টিকতার ছোঁয়া থাকবে, তাই নিজ দায়িত্বে পড়বেন,পরবর্তীতে লেখিকার নামে অভিযোগ দেওয়া যাবে না। আবারও বলছি আঠারো+ এলার্ট / যারা পড়বেন তাদের দায়ভার আমার না❗🚫
লেখিকা শালীনতার সীমা অতিক্রম করবে না যাতে পরবর্তীকালে তার নামে অভিযোগ আসে। 🙏)
*********************************
হায়াত আদিবের বুকে মাথা রেখে সারা রাস্তা ঘুমিয়েছে। বাড়ির সামনে এসে গাড়িটি থামিয়েই আদিব… হায়াতের দিকে তাকালো একবার। মনে মনে ভাবলো, তার লাজুকপাখিকে ঘুমালে একদম বিড়ালের বাচ্চার মতো লাগে দেখতে। একটা মানুষ ঘুমালেও যে তার গালে টোল পরে তা হায়াতকে না দেখলে কখনোই বিশ্বাস হতো না আদিবের। হায়াতের লম্বা কালো চুল গুলো একপাশে আধ খোপা করা, সামনের কয়েকটা কোঁকড়া চুল গুলো তাকে আরো মায়াবতী করে তুলেছে।
আদিব মনে মনে ভাবতে থাকলো হায়াতকে জুড়ে হাজারো কথা। ইস পিচ্চিটাকে যদি কলেজে না দেখতাম, তাহলে কখনোই এই গেস্ট টিচার সাদাদ আদিব চৌধুরী আবার প্রেমে পরতো না। আদিব আস্তে আস্তে ঝুকে গেলো হায়াতের দিকে। খুব কাছে থেকে লক্ষ করলো ডান চোখের ঘন পাপড়ির নিচে ছোট্ট একটা লাল তিল আছে হায়াতের। পরক্ষণেই হায়াতের চোখে আলতো করে চুমু দিয়ে সরে গেলো আদিব, সত্যিই তো এই চোখ জোড়ার প্রনয়ে পরেছিলাম।
আদিব মাথার চুল গুলো হাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে হায়াতের লম্বা সুরু নাকটা ধরে টেডি স্মাইল দিয়ে বললো,
– আমার লাজুকপাখি, আপনি যতোটা সুন্দর,তার থেকেও বেশি আকর্ষণীয় আপনার ঘন চুল গুলো,আর আপনার মায়াবী চোখ গুলো, যখন নেকাপের আড়াল থেকে প্রথম আমার চোখে চোখ রাখলেন তখনই আমি আপনার মোহে ডুবে গিয়েছি, তুমি যে আমার ভাগ্যে ছিলে, তাইতো কোনো কষ্ট ছাড়াই শশুর আব্বু তার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিয়েছে। তুমি কি জানো.. আমার ফ্রেন্ডরা জিজ্ঞেস করে – সিনেমার মতো কতো সহজেই তোমাকে আমি পেয়ে গেলাম। আসলে কি বলতো মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রতিদিন তাহাজ্জুদ নামাজের পর মোনাজাতে কেবল একজন নেক স্ত্রী চেয়েছি। যে কিনা আমি ব্যতিত অন্য পুরুষের সাথে এখন অব্দি হাত ধরেও কথা বলে নি। নেহা চলে যাওয়ার পর আর কোনো নারীর দিকে চোখ তুলেও তাকায়নি,, নেহা ছিলো আমার ভালোলাগা আর তুমি হলে আমার ভালোবাসা,তুমি #আমার_হায়াতি, আমার দুনিয়া, আমার কোনো হুর লাগবে না জান্নাতে গিয়ে, আল্লাহর কাছে বলে রাখলাম, মৃত্যুর পরও যেনো আমাদের স্বামী স্ত্রীকে একসাথেই জান্নাতে থাকতে দেন।
রাত তখন বারোটার কাছাকাছি , চারদিক নিস্তব্ধ। গেটের সামনে গাড়ি থামিয়ে দশ মিনিট ধরে হায়াতের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো আদিব। ঘড়ির কাঁটা যখন ১২:০০ ছুঁলো, টিকটিক শব্দে হঠাৎই হায়াতের আরমোড়া ভাঙলো।
চোখ মেলেই নাক-মুখ কুঁচকে আদিবকে দেখে বললো,
– আদি… আমরা এখানে কি করছি? আমার নরম বালিশটা কোথায় ?
আদিব হেসে ফেললো, বুঝে গেলো হায়াতের এখনো ঘুম কাটেনি। মৃদু স্বরে বললো,
– আফরা, আমরা ঘুরতে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে তুমি গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলে। যাইহোক, চলো পাখি সকলে ছাদে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
হায়াত একমিনিট ভেবে মাথায় হাত দিয়ে বলল,
– তাইতো! আমি একেবারেই ভুলে গিয়েছিলাম আমরা টাঙ্গাইল চা খেতে গিয়েছিলাম। ইস দিন দিন স্মৃতি শক্তি লোপ পাচ্ছে।
আদিব একটু রাগী কন্ঠে বললো,
– চুপ বেশি কথা বলে শুধু, আমি থাকতে কিচ্ছু হবে না তোমার।
তারপর সিটবেল্ট খুলে আলতো করে শাড়িটা ঠিক করলো। গাড়ি থেকে নামতেই দেখলো বাড়ির ছাদে হালকা আলো জ্বলছে, যেন সবাই তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
আদিব মুচকি হেসে বললো,
– চল, দেখি আজ রাতে রাজ আবার কী দুষ্টুমি প্ল্যান করেছে।
হায়াত হেসে মাথা নাড়লো,
– হু চলুন……
”
এদিকে ঘরটা নিস্তব্ধ। বিছানার দুই প্রান্তে দু’জন শুয়ে আছে।আরাবি চোখ বন্ধ করলেও ঘুম আসছে না। মনে মনে ভাবছে,
– ধুর, সারাজীবন একা ঘুমিয়ে এখন হঠাৎ একটা পরপুরুষের সাথে একই বিছানায়… না না, সে তো পরপুরুষ নয়, আমারই স্বামী। যদিও অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কবুল বলতে হয়েছিলো, তবুও কী আশ্চর্য! যাকে দেখে প্রথম ভালো লাগা জন্মেছিল, আল্লাহ তাকেই আমার ভাগ্যে লিখে দিয়েছেন।
অন্যদিকে আসিফ ফোন স্ক্রল করছিলো। হঠাৎ টের পেলো আরাবি ঘুমোচ্ছে না। উঠে একগ্লাস পানি খেলো, তারপর গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
– ঘুমিয়ে পড়েছো, নাকি এখনো জেগে আছো ?
আরাবি একটু কুণ্ঠিতভাবে উঠে বসলো, মুখে অসহায় ভাব টেনে বললো,
– আমার না কেমন জানি লাগছে ভাইয়া, এভাবে আপনার সাথে শোয়ে…
আসিফ মুহূর্তেই উঠে তার মুখোমুখি বসল। গম্ভীর গলায় বললো,
– এই মেয়ে, ভাইয়া আবার কী! আমি তোমার স্বামী।
আরাবি দাঁত বের করে হেসে মাথা নুইয়ে বললো,
– হ্যা হ্যা, সময়ের সাথে অভ্যাস হয়ে যাবে। নতুন তো, তাই…আরকি।
আসিফ মৃদু হেসে কাছে সরে এলো,
– শোনো আরু, আমি জানি আজ আমাদের বাসর রাত। কিন্তু আমরা তো আগে কোনো সম্পর্কে ছিলাম না… তাই হুট করে তোমাকে টেনে নিতে পারবো না।
একটু থেমে আবার বললো…..
– তবে এটুকু যেনে রাখো, আমি আস্তে আস্তে তোমাকে ভালোবেসে ফেলবো। আমি কাপুরুষ নই, তোমাকে দূরে রাখবো না।
আরাবি নিঃশব্দে সব শুনছিলো। চোখে ভাসছিলো প্রশান্তির ঝিলিক, ঠোঁটে খেলে গেলো ছোট্ট এক মুচকি হাসি।
আসিফ ফোনটা বালিশের পাশ থেকে তুলে নিয়ে বললো,
– এখন বাইরে গেলে রাজরা আবার টিজ করবে। তাই চলো, কিছুক্ষণ লুডু খেলি। যদি ঘুম না আসে, তবে হাটতে যাবো ছাদে।
আরাবি মাথা নাড়লো।
অল্পক্ষণের মধ্যেই দুজন মুখোমুখি হয়ে লুডুর খেলার ঘুঁটি সিলেক্ট করে সাজিয়ে বসলো।
এদিকে নুপুর আর রিয়া প্রায় বিশ মিনিট ধরে আসিফের রুমের দরজায় কান পেতে বসে আছে। হঠাৎ মিনহাজা এসে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো,
– কিরে, কিছু শোনা যায়?
রিয়া বিরক্ত মুখে উত্তর দিতে যাবে, তার আগেই ভেতর থেকে ভেসে এলো আসিফের কণ্ঠ,
– জলদি মারো, তারপর আমি তোমারটা খেয়ে দেবো !
পাশাপাশি আরাবির কণ্ঠস্বর শোনা গেলো,
– এ্যাহ! বললেই হলো নাকি ? আমি আগে আপনারটা খাবো।
আসিফ হেসে বললো,
– হুসস ! তুমি খাবে আর আমি বসে থাকবো নাকি ? আমিও তোমার সবগুলো খাবো।
এরপর একেবারে চুপ। আর কোনো আওয়াজ নেই।
তিনজনেই হা হয়ে একে অপরের দিকে তাকালো।
নুপুর হাঁ করে বললো,
– দেখেছিস, আমাদের ভাই কিন্তু কম যায় না! প্রথম রাতেই কী খাই-খাই করছে।
রিয়া ভেংচি কেটে উত্তর দিলো,
– শুধু আসিফ ভাইয়ের কথা বলছিস কেনো ? আমাদের আরুও তো কম যায়নি।
মিনহাজা বিরক্ত মুখে টেনে ধরলো,
– হয়েছে, থাম এখন ! গাড়ি পার্কিং-এর আওয়াজ পেলাম। মনে হচ্ছে ভাইয়া আর ভাবি এসে পড়েছে। চল চলো।
তিনজনেই তাড়াহুড়া করে ড্রইংরুমের দিকে চলে গেলো।
—
এদিকে রাজ ছাদের পশ্চিম দিকে স্টেজের পাশে দাঁড়িয়ে অদ্ভুত এক হাসি হেসে যাচ্ছিলো। এক প্লেট মিষ্টির ভেতরে আস্তে আস্তে ১২টা ট্যাবলেট গুড়ো করে মিশিয়ে দিলো। তার ভেতরে মধু আর গলানো চকলেট ছড়িয়ে দিলো, ওপর থেকে বাদাম দিলো যেন কোনো সন্দেহ না হয়।
রাজ ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি টেনে বললো,
– অতিরিক্ত সুগারেই যখন নেশা ধরে যায়, সেখানে এতোগুলো ট্যাবলেট… হুঁশ থাকবে না, ১২ কি ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত তো অসম্ভব !
মিষ্টিগুলো সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখলো রাজ, চোখে মুখে তখন শয়তানি খুশি খেলা করছে।
ড্রইংরুমে ঢুকতেই নুপুর দৌড়ে গিয়ে হায়াতের কানে ফিসফিস করে বললো,
– ভাবি, জানো ? আরু আর ভাইয়া লালা শুরু করে দিয়েছে।
হায়াত অবাক হয়ে তাকালো,
– কি! এতো তাড়াতাড়িই ? আচ্ছা, তুমি কীভাবে জানলে ?
নুপুর মুচকি হেসে বললো,
– আমি, রিয়া আর মিনহাজা দরজায় কান পেতে ছিলাম।
হায়াত চোখ বড় বড় করে বললো,
– আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না…
আরও কিছু বলার আগেই আদিব এগিয়ে এসে বললো,
– বান্দর গুলো , আর ফিসফাস না করে চলো। সকলে ছাদে চলুন।
হায়াত, আদিব আর বাকিরা ছাদে আড্ডার আসর জমিয়ে তুলেছে। রাজও এসে সবার সাথে যোগ দিলো। গোল হয়ে বসেছে সকলে,মিনহাজা, নুপুর, রিয়া, শাহরিয়ার, তন্ময়, আদিব, হায়াত আর রাজ।
প্রথমেই শাহরিয়ার গান ধরবে বলে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো, ঠিক তখনই ছাদের দরজা কট করে খুলে গেলো। ছাদে ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বেলে ভেতরে প্রবেশ করলো আরাবি আর আসিফ।
আদিব এক ঝটকায় বলে উঠলো,
– কি রে ব্রো, বাসর শেষ হয়ে গেলো নাকি এত তাড়াতাড়ি ? তোর যন্ত্রপাতি সব ঠিকঠাক কাজ করছে তো ?
আদিবের ইঙ্গিতমাখা কথায় সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। আরাবি লজ্জায় মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো আসিফের পাশে। আর আসিফ রাগে গজগজ করতে করতে আদিবের পিঠে কিল-ঘুষি মারতে লাগলো।
দুজনেই ফিক করে হেসে বললো,
– আরে ভাই, সব ঠিকঠাকই আছে । আমি তো শুধু একটু আরাবিকে নিয়ে ছাদে সময় কাটাতে চেয়েছিলাম, জানতাম না তোরা সবাই এখানে বসে আছিস!
রাজ মনে মনে দাঁতে দাঁত চেপে গালি দিতে লাগলো,
কখন সুযোগ পাবো, এখনও কাজটা সারতে পারলাম না।
চোখের কোণে বাঁকা হাসি টেনে বললো,
– বাদ দে এসব কথা, ভাবিকে নিয়ে আয়, এখানে বস। আর দোস্ত, একটা গান ধর না।
আসিফ একটু ইতস্তত করলেও, সবার জোরাজুরিতে শেষমেশ গান ধরলো। আদিব গিটার হাতে তাল মেলাতে লাগলো।
“কালো যতন কালো রতন
কালো জগৎ আলো…”
আরাবি চোখ বড় বড় করে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো আসিফের দিকে। গান শেষ হতেই চারপাশে হাততালি দিলো, আর তখন আরাবি আসিফের মোহে থেকে বের হলো।
ঠিক তখনই শাহরিয়ার দাঁড়িয়ে উঠলো,
– ব্রো, আমার না মনটা ভীষণ চা-চা করছে। গার্লস, তোমরা কি একটু চা করে আনবে ?
হায়াত হেসে বললো,
– আমি তো নিচে যাচ্ছি ফোনটা চার্জে দিতে, সাথে ফ্রেশও হবো। তোমরা বসো, আমি তানিয়াকে বলে চা পাঠিয়ে দেবো।
আদিব আর কিছু বললো না। জানতো হায়াত গাড়িতে এতক্ষণ ঘুমিয়েছে, ফ্রেশ না হলে মাথা ধরবে। চোখের ইশারায় যেতে ইঙ্গিত করলো।
রাজ মনে মনে শয়তানি হাসলো।
এদিকে তন্ময় গান ধরলো “অ” দিয়ে। বাকিরা গানে মেতে উঠলো।
হায়াত নিচে নেমে কাজের নতুন মেয়ে তানিয়াকে চা বানাতে বলে দিয়ে নিজের রুমে প্রবেশ করলো।
পাঁচ মিনিট পর রাজ সবাইকে বলে উঠলো,
– তোমরা গান গাও, আমি একটু ইম্পর্ট্যান্ট কল রিসিভ করে আসছি।
কেউ তেমন পাত্তা দিলো না। সবাই লুডু খেলায় মেতে গেলো। রাজ সুযোগ বুঝে আস্তে করে মিষ্টির প্লেট হাতে নিয়ে নিচে নেমে গেলো।
একতলায় নেমেই দেখলো, তানিয়া হাতে চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাজ মুখে কৃত্রিম হাসি এনে বললো,
– শোনো তানিয়া, চা দিয়ে এক সেকেন্ড দেরি করবে না। আর এই মিষ্টিগুলো হায়াতকে দিয়ে আসবে। ওকে বলবে,,
তার আম্মা পাঠিয়েছে, রিয়ার এক ফ্রেন্ডের বাবার বাসা থেকে। আর শোনো, বলবে সবাই টেস্ট করেছে, আদিবও রুমে দিয়ে আসতে বলেছে। ঠিকমতো মনে থাকবে তো ?
তানিয়া মাথা ঝুকিয়ে বললো
– জি, সাহেব।
রাজ ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকলো। তানিয়া সবার হাতে চা দিয়ে এসে রাজের হাত থেকে প্লেটটা নিলো।
তানিয়া ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো হায়াতের রুমের দিকে। ভেতরে তখন ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসেছিলো হায়াত। দরজায় কট করে নক হতেই হায়াত ভাবনাহীন কণ্ঠে বললো,
– ভেতরে আসো।
তানিয়া এক গাল হাসি ছড়িয়ে প্লেটটা এগিয়ে দিলো। গোলাপজামের মিষ্টি দেখে হায়াতের মুখ ঝলমল করে উঠলো।হায়াতের সবচেয়ে পছন্দের মিষ্টি এটা, মুচকি হেসে বললো,
– কে দিয়েছে তানি আপা ? সবগুলো কি আমারই ?
তানিয়া অনর্গল রাজের শেখানো কথাগুলো বলে গেলো। “মা পাঠিয়েছে” শুনেই হায়াতের বুকটা আনন্দে ভরে উঠলো। তানিয়া দরজা টেনে বেরিয়ে গেলো।
হায়াত আর দেরি না করে একে একে পাঁচটা গোলাপজাম খেয়ে ফেললো। তারপর দশমিনিট পর সামান্য পানি খেয়ে ফোনটা চার্জে দিয়ে দিলো ডিভানে। ঠিক তখনই মাথার ভেতর এক অদ্ভুত ঝড় বইতে লাগলো।
চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে, শরীর কেমন নরম তুলার মতো দুর্বল। এক মুহূর্তেই ধপ করে বিছানায় লুটিয়ে পড়লো হায়াত। শ্বাস দ্রুত হচ্ছে, হরমোনের স্রোতে শরীর যেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। গলার ওড়নাটা নিজের অজান্তেই হাত দিয়ে ফেলে দিলো মেঝেতে।
ঠিক সেই সময় দরজাটা আস্তে আস্তে খুললো। রাজ ভেতরে প্রবেশ করলো শিকারীর চোখে। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে বিছানার পাশে বসল।
হায়াত জ্ঞানশূন্য, চোখ আধখোলা, ঠোঁট শুকনো।
রাজ হাত বাড়িয়ে ওর গালে স্পর্শ করলো। ঠোঁট বাকা করে ফিসফিস করে বললো,,
– মাই আফরা… অনেক কষ্টে ফাঁদ পাতলাম, অবশেষে তোকে পেলাম। আজ তোর সর্বনাশ হবেই। তোকে ভোগ করবো আমি। আর যখন আদিব সব জানবে, তখনই তোকে বাড়ি থেকে বের করে দেবে। তখন তুই আমার,শুধু আমার। আমি তোকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবো, সুইটহার্ট।
এ কথা বলেই রাজ ধীরে ধীরে আঙুল বুলালো হায়াতের পায়ের পাতায়, স্লাইড করে আঙ্গুল ওপরে তুলতে লাগলো। হায়াত নিস্তেজ হয়ে শুয়ে, কোনো প্রতিরোধ করার শক্তি নেই।
…এদিকে ছাদে বসেও আদিবের বুক কেমন কেঁপে উঠছে। অকারণ অস্থিরতা ঘিরে ধরলো তাকে। মনে হলো,,এতক্ষণ হয়ে গেলো, হায়াত কেনো ফিরে এলো না ? মাথা ঘুরে পড়ে গেলো নাকি।
এই এক ভাবনা মাথায় ঢুকতেই আদিব ছুটে উঠলো চেয়ার থেকে। সকলের উদ্দেশ্য করে বললো
– আমি আসছি…!
আদিব আর কিছু না বলে দৌড়ে নামতে শুরু করলো নিচে। তার আচরণ দেখে বাকিরাও চমকে উঠলো। নুপুর, রিয়া, মিনহাজা, তন্ময়, শাহরিয়ার সহ সবাই চিন্তিত হয়ে পেছন পেছন নামতে লাগলো।
দৌড়ে এসে দাঁড়ালো হায়াতের রুমের সামনে। দরজাটা ভেতর থেকে আটকানো।
আদিব রীতিমতো হাঁপাচ্ছে। বুক ধকধক করছে।
আদিব কিছু না ভেবে সব শক্তি দিয়ে দরজায় এক লাথি মারলো। ধপাস শব্দে দরজাটা নিমিষেই ভেঙে খুলে গেলো।
ভেতরে ঢুকেই আদিব যেনো শ্বাসই নিতে পারলো না। চোখের সামনে রাজকে আর হায়াতকে এভাবে দেখক থ হয়ে গেলো।
হায়াত বিছানায় শুয়ে পাগলের মতো ছটফট করছে, গলার ওড়নাটা মেঝেতে পড়ে আছে। শরীরটা একেবারে অসহায়, অচেতন প্রায়। আর রাজ ঠিক পায়ের কাছটায় বসে, বিকৃত হাসি মুখে শার্টের বোতাম খুলতে যাচ্ছিলো।
আদিবের চোখে রক্ত নেমে এলো।
আকাশ কাঁপিয়ে জুড়ে এক চিৎকার দিলো আদিব।
…..কু’ত্তার বাচ্চা………..
সেই শব্দ শুনে আসিফ, শাহরিয়ার, তন্ময়, নুপুর, রিয়া, মিনহাজা সকলে দৌড়ে ভেতরে ঢুকলো।তার পরেই বাড়ির বড়রাও রুমে প্রবেশ করলো, মুহূর্তেই সকলে হা হয়ে গেলো ভয়ে আর আতঙ্কে।
এক সেকেন্ডও দেরি না করে আদিব দৌড়ে গিয়ে রাজকে প্রচণ্ড জুড়ে লাথি মারলো মুখে। ধপাস শব্দে রাজ ছিটকে মেঝেতে পড়ে গেলো। মুখ থেকে রক্ত ছিটকে বের হলো।
রাজের গায়ে লাগাতার লাথি মারতে লাগলো আদিব,
– ras’cal তোর সাহস কি করে হলো, আমার হায়াতের দিকে হাত বাড়ানোর।
টেবিলের ওপর থাকা কাচের জগটা দিয়ে জুড়ে রাজের মাথায় মারলো। রাজ মাথা ধরে ওঠে আদিবকে হাত দিয়ে মারতে যাবে তার আগেই আদিব জুড়ে জুড়ে ঘুষি দিতে লাগলো অন্ডকোষ বরাবর। রাজের মা কান্নার করতে করতে বললো,
– বাপ ছেড়ে দে, আমি জানি রাজ ভুল করেছে, আমি কথা দিচ্ছি ওকে নিয়ে চলে যাবো, ওকে মারিস না, ভাবি আদিবকে থামাও।
রাজের মার কথায় কেউ কিছু বললো না, সকলে জানে কতো বড় জঘন্য কাজ করতে যাচ্ছিলো রাজ। আর আদিব যে আজকে রাজকে মেরেই ফেলবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এমন সময় দরজার পাশে দাড়ালো রাকিব চৌধুরী আর জাকির চৌধুরী। দুই ভাই যানে এখন রাজকে আদিবের হাত থেকে বাচানো মুশকিল। তাই পুলিশকে কল করলো।
আরাবি কাঁপা গলায় বললো,
– ভাইয়া… হায়াত ঠিক নেই, ওকে আগে বাঁচান !
রাজ মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে, আর আদিব ফুঁসতে ফুঁসতে সামনে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে সেই ভয়ংকর দৃষ্টি যেটা দেখে সকলে স্তব্ধ হয়ে যায়। মেঝে থেকে ওঠিয়ে আরো জুড়ে জুড়ে নাক মুখে ঠাস ঠাস চড় দিতে লাগলো রাজকে,
– বা’ল ফালাইন্না তাঁতী বল আমার কলিজাকে তুই কি খাইয়েছিস, ও ওমন পাগলামি করছে কেনো বল bas’tard..
এরপর জুড়ে আয়নার সামনে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে লাথি মা’তে শুরু করলো। কাচের টুকরো গুলো রাজের সারা শরীরে গেথে গিয়েছে, বাচারঁ জন্য পাগলের মতো কান্না করছে রাজ। হায়াতের টেবিলের ওপর রাখা কম্পাস নিয়ে রাজের শার্ট ছিড়ে জুড়ে জুড়ে আঘাত করতে লাগলো,এরপর ডান হাতে ছুরি দিয়ে কু’প দিতে লাগলো,
– খা*কির ছেলে তুই আমার হায়াত যে হাত দিয়ে ছুয়েছিস সেই হাতই আমি কেটে ফেলবো। Mother fuc*ker তোর এতোই যখন নারীর দেহের খিদে তাহলে পতিতালয়ে যাচ্ছিস না কেনো।
রাজের বাবা ছোটে এসে আদিবের কলার ধরলো,
– আমার ছেলের মরে যাবো ছেড়ে দে ওকে জানো’য়ার।
আদিব রাজের বাবা মিস্টার সুফিয়ানের গালে ঠাস করে চড় মেরে এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। রাজকে ক্রমাগত অন্ডকোষ বরাবর লাথি মা’রতে শুরু করলো,
– If there’s nothing wrong with your blood, you son of a bitch, why would you want to do such a disgusting thing with your cousin-in-law ?
চো***নার পোলা, You betrayed your best friend so badly,..
রাজ বাঁচার চেষ্টা করছে, জুড়ে এক দৌড় দিতে গেলো তখনি আসিফ ধরে এক থাপ্পড় দিলো।আদিব ঝাঁপিয়ে পড়ে রাজকে কলার ধরে টেনে তুললো।
– I’ll….. I’ll slaughter you, you sl*ut !
হায়াত এদিকে বিছানায় অচেতন হয়ে নিস্তেজ শরীর নিয়ে ছটফট করছে, ঠোঁট শুকিয়ে যাচ্ছে। মিসেস অরোরা দৌড়ে গিয়ে হায়াতকে ধরে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
রাজ আধমরা অবস্থায় মেঝেতে পড়ে কুকাচ্ছে। তবুও আদিব যেনো নিজেকে থামতেই পারছে না, একের পর এক ঘুষি, লাথি, আছাড় আর ছুরি দিয়ে হাতে আঘাত করছে… চারপাশে শুধু বাড়ির সকলের ফিসফিস আর রাজের মার আহাজারির শব্দ।
ঠিক তখনই ভেতরে ঢুকলো পুলিশ। দুজন অফিসার তাড়াহুড়ো করে আদিবের হাত থেকে ছুরি আর কম্পাস কেড়ে নিলো। আরেকজন রাজকে মেঝে থেকে টেনে তুললো।
দৃঢ় গলায় বললো এক অফিসার,
– মিস্টার চৌধুরী, চিন্তা করবেন না। এর শাস্তি আমরা দেবো।
কিন্তু আদিব যেনো শুনছেই না, আবার ঝাঁপিয়ে পড়তে যাচ্ছিলো রাজের দিকে। ঠিক তখনই রাকিব চৌধুরী গম্ভীর গলায় ছেলেকে থামিয়ে দিলেন।
– আদিব…থামো। ওর নামে হাজারটা মামলা ঠুকে দিলাম, যত টাকা লাগবে আমি দেবো। কিন্তু আমি চাই এই জানো’য়ারটা যেনো আর কোনোদিন জেল থেকে বের হতে না পারে।
রাকিব চৌধুরীর কথা শুনে সবাই নিশ্চুপ হয়ে গেলো।
এদিকে কয়েকজন পুলিশ রাজকে ধরে টেনে বাইরে নিয়ে গেলো। রাজের মুখ বেয়ে রক্ত ঝরছে, তবুও তার চোখে একটা বিকৃত হিংস্রতা লেগে আছে।
হায়াতের দিকে তাকানো মাত্রই আদিবের চোখ গেলো খাটের পাশে রাখা মিষ্টির প্লেটটার দিকে।
এক নিমিষেই সবটা বুঝে গেলো সে। রাজই হায়াতকে নে’শাগ্রস্ত করে এ অবস্থা করেছে।
আদিবের বুকটা হুড়মুড় করে ভেঙে পড়লো।
হায়াত বিছানায় শুয়ে একটানা ছটফট করছে। এসি চলছে তবুও ঘামে ভিজে গেছে শরীর। ঠোঁট শুকিয়ে গেছে, বুক ওঠানামা করছে দ্রুত।
আর আরাবি? সে তো পাগলের মতো কাঁদছে, আসিফ একটু বুঝাতে লাগলো আরাবিকে।
আর রাগে দুঃখে রিয়া, রাজের মা, বাবা রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। আদিব হায়াতের হাত ধরে পাশে বসে ওড়নাটা ভালো করে বুকে টেনে দিয়ে তার ডাক্তার বন্ধুকে মেসেজ দিলো, সে কিছু একটা রিপ্লাই দেওয়ার পরই আদিব সবাইকে রুম থেকপ বেরিয়ে যেতে বললো, আর সকলে চুপচাপ বেরিয়ে গেলো।
আদিবের রুমের যা তা অবস্থা এখানে এভাবে কিছুই করা যাবে না তাই ঠিক করলে অন্য রুমে যাবে। হায়াতের গালে চুমু দিয়ে কোলে তুলে নিলো। এরপর সোজা ছাদের সাথে ছোট্ট রুমটাতে গেলো। দরজাটা নিমিষেই লাগিয়ে দিয়ে হায়াতকে শুইয়ে দিলো। হায়াত পাগলের মতো ছটফট করছে কিন্তু কোনো শক্তি পাচ্ছে না।
আদিব আস্তে আস্তে হায়াতের জামাটা খুলে ফেললো ফ্লোরে ফেলে দিলো। হায়াত আদিবের গাল খামচে ধরলো।আদিব হায়াতের ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ পুড়ে নিল। এরপর নিজে থেকেই পাগল করা চুমু খেলো। হায়াতের সব খুলে ফেললো এর পর সারা শরীর জুড়ে ঠোঁট চেপে ধরলো, আস্তে আস্তে নিজের শার্ট ও খুলে ফেললো। এরপর শুরু করলো আত্মার অভয়ারণ্যে এক গভীর খেলা। দুটি আত্মা অমরত্ব তৃষ্ণায় মেতে ওঠলো। হায়াত ব্যাথায় শক্তিতে সহ্য করতে না পেরে আদিবের পিঠে জুড়ে জুড়ে খামচাতে লাগলো।
এভাবেই পুরো রাত হায়াতকে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগলো, কিন্তু হায়াতের যেনো কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না,পুরো ছয়বার হায়াতকে আদর করলো আদিব। তবুও হায়াতের ছটফট কমছে না,এভাবে সারারাত চললে তো হায়াত মরেই যাবে। অলরেডি হায়াতের র’ক্ত বের হওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।
শেষ বারের মতো হায়াতকে শান্ত করতে সম্ভোগ শুরু করলো। আদিব অসহায় মুখ করে বললো,
– আমি অনেক স্যরি জান, আমি কখনোই বুঝতে পারি নি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে এমন জঘন্য কাজ করতে চাইবে। আমি নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না হায়াত। আর আজ তোমাকে অনেক কষ্ট দিলাম, আমি জানি তোমার খারাপ লাগছিলো…কিন্তু কি করবো বলো তোমাকে শান্ত করার এ ছাড়া আমার কোনো উপায় ছিলো না, এতো রাতে কি করতাম বলো।
হায়াতের কপালে অসংখ্য চুমু খেয়ে উপর থেকে নেমে হায়াতের র’ক্ত মুছে দিলো। হায়াতের গায়ে চাদরটা খানিক টেনে দিয়ে কি মনে করে যেনো আদিব একটা সেল্ফি তুলে নিল। এরপর ফ্লোরে থাকা প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো।
প্রায় দশ মিনিট পর বের হয়ে আয়নাতে নিজের পিঠটা দেখলো। অসংখ্য নখের আঁচড়ের দাগ। আস্তে আস্তে করে মলন লাগিয়ে শার্টটা পরে নিলো আদিব।
—
সকাল ঠিক সাতটা।
হায়াত আড়মোড়া ভেঙে চোখ মেলতেই কপালে ভাঁজ পড়লো। দরজার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলো,,,
আমি তো নিজের রুমেই ছিলাম… তাহলে এখানে কিভাবে ?
ওপাশে ঘুরে তাকাতেই দেখলো, আদিব বিছানার কোণে আধশোয়া হয়ে মোবাইলে নিচু গলায় কথা বলছে।
হায়াত কিছুক্ষণ নিঃশব্দে তাকিয়ে রইলো। তারপর অচেতন অবস্থা থেকে ফিরে আসা একরাশ দ্বিধার মাঝেও ঠোঁটে চাপা একটা মুচকি হাসি খেললো।
কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই থমকে গেলো,,
চোখে পড়লো, শরীরে কিছুই নেই। হুড়মুড় করে চাদর টেনে নিলো গায়ে, অসহায় মুখে তাকালো আদিবের দিকে।
আদিব হায়াতের সেই ভঙ্গিমা দেখে কিছুই বললো না। কেবল ফ্লোরে পরে থাকা জামার দিকে আঙুল তুলে হালকা ইশারা করলো,,গিয়ে গোসল করে নাও।
হায়াত ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নামলো। কিন্তু প্রথম পা ফেলতেই মাথাটা ঘুরে এলো।
আদিব আর দেরি করলো না, লাফিয়ে উঠে দু’হাত বাড়িয়ে হায়াতকে কোলে তুলে নিলো। নীরবে গিয়ে ওয়াশরুমের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো।
ঠিক সেই মুহূর্তে ঠক ঠক করে দরজায় কড়া নড়লো।
আদিব গিয়ে দরজা খুলতেই দাঁড়িয়ে আছে আরাবি। তার হাতে এক গ্লাস দুধ আর সকালের খাবার।
আদিব কোনো প্রশ্ন না করে শুধু খাবারগুলো নিলো।
তারপর খুব নিচু, কাঁপাহীন অথচ দৃঢ় গলায় বললো,
– কাকিকে বলবে আমার রুমটা যেন নতুন করে সাজানো হয়। দশটার মধ্যে সব শেষ চাই… হায়াত যেন কিছু টের না পায়।
আরাবি কোনো কথা না বলে শুধু নিঃশব্দে মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো।
সদ্য গোসল করে বের হলো হায়াত। আদিব তখন ল্যাপটপে কাজ করছিলে। হায়াত আদিবের কোলে বসতে চাইলো, কিন্তু আদিব একটু সরে বসলো। হায়াত কিছু মনে করলো না,ভাবলে কোনো ইম্পরট্যান্ট কাজ করছে, তাই বললো,
– আচ্ছা আমার শরীর এতো ব্যাথা কেনো, আপনি তো আমাকে প্রতিদিনই আদর……
হায়াতকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আদিব বললো,
– একটা ঔষধ খেয়ে নিও।
আদিব আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল আঁচড়ে নিচ্ছে এমন সময় হায়াত সোফায় বসে গুন গুন করে বললো,
– আচ্ছা আমরা এই রুমে কেনো।
আদিব জানতো হায়াত প্রশ্ন করবে, তাই বললো,
– আসলে কাল রাতে আমাদের ফ্যানটা খাটের ওপর পরে গিয়েছিলো আর তুমি জ্ঞান হারিয়েছিলে তাই ওপরে এসেছি।
– ওহ আচ্ছা।
আদিব অফিসের ফরমাল ড্রেসআপ করে নিলো, তখন হায়াত পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
তুমি বুকে টেনে নাও না প্রিয় আমাকে….
আমি ভালোবাসি…ভালোবাসি,,,,,
ভালোবাসি তোমাকে….!!
আদিব মুচকি হেসে পেছন ঘুরে হায়াতকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মনে মনে বললো,এই পাগলিটার কাছ থেকে কখনোই দূরে থাকবো না, আমার লাজুকপাখি যে ভালোবাসার কাঙ্গাল। আমি ওর শরীরে একটা ভুলের টোকাও পরতে দিবো না।
হায়াতের সারা মুখে চুমু খেতে লাগলো আদিব। এর পর ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ পুড়ে নিল। প্রায় পনেরো মিনিট পর ছেড়ে দিয়ে বললো,
– ভালো মেয়ের মতো দুধ টুকু খেয়ে নাও, আর সারাদিন কোনো দুষ্টুমি করবে না,একটু রেস্ট নাও।
– আপনি বরং দুধ খেয়ে যান।
আদিব দুষ্টু হেসে বললো,
– কার তোমার ?
হায়াত লজ্জায় আদিবের বুকে কিল ঘুষি দিতে লাগলো, আদিব হায়াত দুজনেই ফিক করে হেসে দিলো।
#চলবে