#আমার_হায়াতি
পর্ব : ৩৪
লেখিকা : #Nahar_Adrita
( যারা আমার গল্প পছন্দ করেন না, তারা দূরে থাকুন।)
তিন মাস পর…
দিন কেটে মাস হয়ে গেছে।
এই সময়টা যেন আদিবের জীবনে এক নতুন ছন্দ নিয়ে এসেছে। সকাল-বিকাল-রাত—সবই এখন প্রজেক্টের কাজে ভরে গেছে। ব্যবসার খুঁটিনাটি থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের কাজ—সবকিছুর দায় যেন ওর কাঁধেই এসে পড়েছে।
রাকিব চৌধুরী কয়েকদিন হলো কুমিল্লায়, নতুন প্রজেক্টের মিটিং নিয়ে সেখানে ব্যস্ত। তাই আদিবকে ঢাকার প্রজেক্ট সামলাতে হচ্ছে একাই।
আসিফও এখন কম যায় না। একসময় শুধু মজার ছলে বিদেশের সব কাজ দেখতো, কিন্তু এখন সে-ও যেন সত্যিই হয়ে উঠেছে আদিবের ডানহাত। অফিসে মিটিং হোক বা বাইরে সাইট ভিজিট,,
আসিফ সবসময় আদিবের পাশে থেকে সাহায্য করে।
এদিকে হায়াত আর আরাবির পড়াশোনার চাপ বেড়েছে, সামনে ফাইনাল পরীক্ষা তাই সবটুকু ধৈর্য আর মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছে।
আজ শুক্রবার হায়াত আর আরাবি দু’জন মিলে ছাদে বসে আছে। আরবির হাতে একটা বড় সাইজের জাম্বুরা, আর হায়াত ছুরি দিয়ে কাঁচা মরিচ কাটছে। আরবি কপাল কুঁচকে বলল,
— এই জানু, এত মরিচ কাটছিস কেন? আমায় কি তুই মেরে ফেলবি নাকি ঝাল খাইয়ে?
আরাবির কথায় হায়াত মুচকি হেসে বলল,
— ঢংয়ের কথা বলছিস কেন, বেবি ? তোর কাছে তো এইটুকু ঝাল কিছুই না..
— আরে ভাই, আমি শুকনা মরিচের ঝাল খেতে পারি, কিন্তু কাঁচা মরিচের না।
হায়াত আর আরাবি খুনসুটি করতে করতে সবকিছু কেটে জাম্বুরায় মাখিয়ে ফেলল। এরপর দু’জন একসাথে খেতে শুরু করল। কিছুক্ষণ পরে হায়াত আরাবির দিকে তাকিয়ে বলল,
— আচ্ছা দোস্ত, তোর আর আসিফ ভাইয়ার মাঝে কি সব ঠিক হয়েছে?
আরাবি কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
— মানে?
হায়াত আরাবির একটু পাশ এসে বসে বলল..
— মানে তোরা কি এখনো দু’জন দু’জনকে ভালোবাসিস না ?
আরাবি একটু লাজুক মুখ করে বলল,
— যাহ্ বাল, এটা কেমন প্রশ্ন ! আমার কি লজ্জা করে না ?
এরপর দুই বান্ধবী খুনসুটি করতে করতে কখন যে বেলা ১২টা পেরিয়ে দুপুর একটা বেজে গেল, টেরই পেল না। শেষে হায়াত আর আরবি দু’জনেই নিচে নেমে এলো। নিচে দেখল, মিসেস অরুরা আর সুফিয়া চৌধুরী রান্না করছেন। হায়াত আর আরবিকে দেখে দু’জন একসাথে হেসে বললেন,
— কই ছিলেন দুইজন এতক্ষণ ? গোসল করেন নি এখনো ?
শাশুড়ির কথায় হায়াত মুচকি হেসে বলল,
— আম্মু, আমিও কি রান্না করতে আপনাকে সাহায্য করব?
মিসেস অরুরা কাপড়ের আঁচল দিয়ে মুখ মুছে বললেন,
— না বাবু, যাও গোসল করে নাও। আজ তোমার আম্মু আর আরাবির আম্মুরা আসবেন। তখন না হয় খাবার পরিবেশন করবে। এখন যাও, গোসল করে দু’জন শাড়ি পরে নাও।
হায়াত আর আরাবি কিছু না বলে যার যার মতো করে রুমে চলে এলো। হায়াত রুমে এসে বসতেই, ব্যালকনি থেকে দৌড়ে এসে পায়ের কাছে বসল ক্লিও। হায়াত মিষ্টি হেসে ক্লিও কে কোলে নিয়ে আদর করে ফিসফিস করে বলল,
— এই আকাইম্মা বিড়াল, সারাদিন খাই খাই করিস! চল এক কাজ করি, তোর বাবাকে একটা কল দিই আর একটা শাড়ি সিলেক্ট করে নেই।
যেই কথা, সেই কাজ।
আইফোনটা হাতে নিয়ে হায়াত ঠোঁট কামড়ে আদিবের আইডিতে ঢুকল,
তারপর আদিবকে কল করল।
এদিকে আদিব সবে একটা প্রোজেক্টের কাজ শেষ করে কেবিনে ঢুকেছে। তখনই হোয়াটসঅ্যাপে কল এলো। আদিব জানে অফিস টাইমে হায়াত ছাড়া আর কেউ কল দেয় না জেনে সে সময় নষ্ট না করে ফোন হাতে নিল। দেখল, হায়াত ভিডিও কল দিয়েছে। আদিব মুচকি হেসে কল রিসিভ করল।
— কী হয়েছে বউ জান, এখন কল দিলেন যে…
হায়াত ইনোসেন্ট মুখ করে বলল,
— আর বলবেন না, আপনার বিড়ালটা আপনাকে ভীষণ মিস করছিল। বলছিল,,আমার বাবা কোথায় গেলো ? তাই আপনাকে কল দিলাম। হি হি…..বিশ্বাস না হলে ওকেই জিজ্ঞেস করুন।
আদিব কপালে আঙুল দিয়ে স্লাইড করে বলল,
— বউ, যে কারণে কল দিয়েছো সেটা বলো। একটু পরেই গুলশান যেতে হবে মিটিং এ্যাটেন্ড করতে।
হায়াত ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
— আসলে আজকে আম্মুরা আসবে তো, কোন শাড়িটা পরব বুঝতে পারছি না। আপনি একটু বলে দিন না।
আদিব মাথায় হাত দিয়ে হায়াতকে কয়েকটা শাড়ি দেখাতে বললো। প্রায় পাঁচ মিনিট পর অবশেষে একটা অফ-হোয়াইট শাড়ি হায়াতের জন্য পছন্দ করল। হায়াত খুশি মনে কল কেটে দিয়ে গোসল করতে চলে গেল।
দুপুর দুইটা নাগাদ হায়াত শাড়ি ঠিকঠাক পরে নিচে চলে এলো। মিসেস অরুরা আর সুফিয়া টেবিলে খাবার সাজাচ্ছিলেন। সেই সময় সিঁড়ি দিয়ে নামতেই হায়াতকে দেখে দু’জনের মুখ হা হয়ে গেল। যেন জান্নাতের হুরের মতো লাগছিল তাকে।
লম্বা চুলগুলো আধখোঁপা করা, কানে ছোট ছোট ঝুমকা, হাতে চিকন ডায়মন্ডের চুড়ি, নাকে ছোট্ট একটা ফুল ঝলমল করছে,সব মিলিয়ে যেন অমায়িক এক রূপ। মিসেস অরুরা এগিয়ে গিয়ে হায়াতের কপালে চুমু খেলেন, তারপর একটু কাজল নিয়ে হায়াতের গালের কোনায় লাগিয়ে দিলেন যাতে কারও নজর না লাগে। মিসেস সুফিয়াও এগিয়ে এসে হায়াতের প্রশংসা করতে লাগলেন।
এমন সময় সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামল আরাবি। তার পরনে কালো জামদানি শাড়ি, কোমর অব্দি খোলা চুল, একটু অভিমানি সুর নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলল,
— হ্যাঁ, সেই তো ! জানুকে সুন্দর লাগছে, আর আমায় একটুও লাগছে না।
নূপুর আর মিনহাজা ফিক করে হেসে দিয়ে বললো
— না ভাবি,তোমাকেও খুব সুন্দর লাগছে। মাশাআল্লাহ, আমার ভাবিদের ওপর কারও নজর না লাগুক।
ঠিক তখনই মেইন গেটের কলিং বেল বেজে উঠল। বাড়ির কাজের লোক রোজি দরজা খুলতেই হায়াতের মায়ের হাসি-উজ্জ্বল মুখ ভেসে উঠল।
হায়াত তড়িঘড়ি করে ছুটে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরল। আলিয়া বেগম মুচকি হেসে কাঁধের ব্যাগ নামিয়ে রেখে মেয়েকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।
দু’জনেই আবেগে ভেসে কাঁদতে লাগল। আলিয়া বেগম মেয়ের চোখ মুছে দিয়ে বললেন,
— আম্মু এসে গিয়েছি তো, এভাবে কেউ কাঁদে নাকি ?
হায়াত এবার শব্দ করে কেঁদে উঠল,
— এতদিন পর তুমি কেন এলে ? আমাকে কি একটুও ভালোবাসো না ?
আলিয়া বেগম শান্ত স্বরে বললেন,
— আফরা, এত বাচ্চামি করতে নেই মা। বাড়িতে অনেক কাজ ছিল, কী করব বলো?
হায়াত চোখ মুছে বাইরের দিকে তাকাতেই দেখল,তখনি দেখতে পেলো রাব্বির হাতে দুটো ব্যাগ।
ছুটে গিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরল। রাব্বি মিষ্টি হেসে পকেট থেকে পাঁচটা ডার্ক চকলেট বের করে বোনকে দিল।
হায়াত মুচকি হেসে বলল,
— এত চকলেট এনেছিস কেন ? দু’টা আনলেই তো হতো…!!
রাব্বি হায়াতের হাত থেকে একটা চকলেট নিয়ে আরাবির কাছে এগিয়ে গেল।
আরবি মিষ্টি হেসে রাব্বিকে আদর করল।
রাব্বি হাতে থাকা চকলেটটা আরবিকে দিয়ে বলল,
— আমি জানি আমার আরু আপুও চকলেট খায়, তাই আরু আপুর জন্যও এনেছি। আপা, তুই একা খাবি না, দুলাভাইকেও দিবি,,মনে যেন থাকে ।
দুই ভাইবোনের খুনসুটির মাঝে আরাবির বাবা-মাও ভিতরে প্রবেশ করল। সকলে কুশল বিনিময় করে, মিসেস অরুরা সবাইকে খেতে বসালেন। হায়াত ও আরাবি খাবার পরিবেশন করে নিজেরাও খেতে বসল।
সকলে খাওয়া–দাওয়া শেষ করে ড্রয়িং রুমে বসে কিছুক্ষণ গল্প করলেন; সন্ধ্যায় সবাই চলে গেলেন। হায়াত তার মা-কে থাকতে বলেও মা থাকলেন না; আর কী করার, হায়াত একটু উদাসিন হয়ে তার মা-কে বিদায় জানালো।
রাত প্রায় দশটা, চারিদিকে নীরবতা বিরাজ করছে; বাইরে হালকা ঝিঁঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। হায়াত মৃদু পায়ে বেলকোনিতে প্রবেশ করল। দুলনায় বসে ক্লিও কে কোলে নিয়ে বসে রইল। খানিকক্ষণ পরই গাড়ির শব্দ শোনা গেল,
হায়াত উঠে দরজার সামনে দাঁড়াল।
আদিবের হাতে চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে দরজায় নক করল। হায়াত দরজা খুলে দিতেই আদিব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল,
…….বউ, তোমাকে একদম নতুন বউয়ের মতো লাগছে! উফফ, চোখ ফেরানোই যাচ্ছে না !
এই বলেই আদিব ভেতরে এসে হায়াতকে কোলে তুলে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। ডিভানের উপর বসিয়ে দিয়ে শরীরের আঁচল ফেলে গলায় মুখ গুঁজে দিল। হায়াত মিষ্টি করে হেসে আদিবের গলা জড়িয়ে ধরল।
অন্যদিকে, রুমে বসে শাড়ির পিনগুলো একে একে খুলছিল আরাবি। এমন সময় দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করল আসিফ। আরাবিকে এভাবে দেখে খানিক থমকে গেল, মাথা নিচু করে নিল। আরাবি তাড়াতাড়ি শরীরের আঁচল বুকে গুঁজে নিল, লজ্জায় মাটি পাক করে ভিতরে ঢুকে যাওয়ার মতো অবস্থা বেচারার। আসিফ পিছন ঘুড়ে তখনও দাঁড়িয়ে আছে। আরাবি আলমারি থেকে একটা জামা নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই আসিফ ডেকে উঠল,
….. এদিকে আসো…
আরু মৃদু পায়ে আরাবি আসিফের সামনে এসে দাঁড়াল।
আসিফ আরাবিকে ইশারা করে দরজা লাগাতে বলল। মৃদু পায়ে দরজা বন্ধ করে সামনে এসে দাঁড়াল আরাবি।
আসিফ হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে বলল—
— শার্টের বোতামগুলো খুলে দেন মেডাম..
আরাবি কোনো কথা না বাড়িয়ে এক হাতে শাড়ির আঁচল বুকে জড়িয়ে, অন্য হাত দিয়ে শার্টের বোতামগুলো খুলতে লাগল।
এক মিনিট পর আসিফ ধীরে ধীরে আরাবির কোমরে হাত রাখল। হালকা কেঁপে উঠল আরাবি, লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলল।
আসিফ বাঁকা হেসে আরাবিকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিল।
দুই হাত পিছনে চেপে ধরতেই বুকের আঁচল ধপ করে ফ্লোরে পরে গেল। আসিফ তার তর্জনি আঙ্গুল দিয়ে কপাল থেকে গলা অবধি স্লাইট করতে লাগল।এর পরে আস্তে আস্তে গলার পাচঁ আঙ্গুল নিচে হাত চলে যেতেই আরাবি বড় বড় চোখ করে তাকালো
আসিফ মুচকি হেসে আরাবির দিকে ঝুঁকে যেতেই আরাবি বেলকনির দিকে ছুটে গেল।
আসিফ চুলে হাত চালাতে চালাতে আরাবির পিছন পিছন গেলো
আরাবি তখন বেলকনির এক পাশ থেকে শাড়ি ঠিক করে আঁচল টা বুকে দিচ্ছিল তখনি আসিফ এসে আরাবিকে দেয়ালের সাথে আটকিয়ে ফেললো
চোখের ঘন পাপড়ি জোরা কাঁপছে তার..
আরাবি আস্তে করে কপালে একটা টুকা মারলো……আস্তে আস্তে ওষ্ঠ এগিয়ে কপালে চুমু খেলো।
আরাবি বিস্ময় চোখে তাকালো আসিফের দিকে
আসিফ আরাবিকে আরেকটু চমকিয়ে দিতে চুলের মুঠি ধরে ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ পুরে দিলো,, জুরে জুরে ঠোঁটের স্বাদ নিতে লাগলো..
আরাবি যেন শ্বাস নিতে ভুলে গেছে
পুরা পনেরো মিনিট পর ঠোঁট ছেড়ে দিতেই আরুর কপালে মাথা ঠেকিয়ে জুরে জুরে নিশ্বাস নিতে থাকলো আসিফ
আরাবি যেন শ্বাস নিতে ভুলে গেছে আসিফ ব্যাপারটা লক্ষ করে এক ধমক দিয়ে বললো…
– নিশ্বাস নেও বেয়াদব…. এই বার রেসপন্স না করলে মাইর দিবো।
এর পর আবারও শুরু হলো ওষ্ঠের স্বাদ নেওয়া.. এইবার যেন আরাবি কি করবে বুঝতে না পেরে ভয়েই আসিফের সাথে তালে তাল মিলাইতে থাকলো।
—–
সকাল ৭টা বেজে ৪০ মিনিট, হায়াত আর আরাবি রেডি হয়ে নিচে আসলো। হায়াত লক্ষ্য করল আরাবির গলায় কেমন যেন একটা লাল দাগ। চোখ ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করল,,
— আরু, তুই না বলেছিলি তোর আর ভাইয়ার মাঝে কিছুই চলছে না, তাহলে তোর গলায় এটা কিসের দাগ ?
আরাবি একটু নড়েচড়ে উঠল, আদু আদু করে বলল,,
— না মা… মানে….কাল রাতে..
আর কিছু বলার আগেই মিসেস অরুরা আর মিসেস সুফিয়া ড্রয়িংরুমে এলেন।
আরাবি আর হায়াতকে খেতে নিয়ে গেলেন। তারপর খেতে খেতে হায়াতকে সব বলল আরাবি। হায়াত তো সবটা শুনে খুশিতে গদগদ হয়ে উঠল।
কলেজে আজ এক্সাম-এর রুটিন দেবে। একটা ক্লাস শেষে হায়াত আর আরাবি দু’জনেই রুটিন দেখছিল। ঠিক তখনই ক্লাসে প্রবেশ করল আদিব। দীর্ঘদিন যাবৎ পরে আসায় খুরশেদ স্যার আদিবের সাথে কুশল বিনিময় করলেন।
তারপর ঠিক হলো আজকের লাস্ট ক্লাসটা আদিব নেবে।
ক্লাস শেষে ১০ মিনিট ব্রেক দিতেই হায়াত আর আরাবি মাঠে গেলো । কিছু খাবার কিনে নিলো সঙ্গে করে।
বাইরে তখন প্রচণ্ড রোদ, হায়াতের হঠাৎ করেই মাথা ঘুরতে শুরু করল। আরাবিকে বলল,,
— আরু, পা… পানি খাবো প্লিজ, আমার মাথায় কেমন যেন লাগছে।
আরাবি দেরি না করে পাশের স্টল থেকে একটা ঠান্ডা পানির বোতল আনল।
হায়াত কিছুটা পানি খেয়ে মাথায় ঢেলে নিল। এমন সময় একজন মেয়ে এসে বলল,,
— আদিব স্যার তোমাদের ডেকেছে আপু ।
হায়াত আরাবির সাহায্যে উঠে দাঁড়াল। তারপর দু’জন অফিস রুমের দিকে পা বাড়াল। আরাবি আনমনে বকবক করেই যাচ্ছিল। ঠিক তখনই হায়াত মাথা ঘুরে পড়ে গেল।
আরাবি ভয়ে চিৎকার করে উঠল। কলেজের সকলে মাঠের বাম পাশে ছুটে এলো। কয়েকজন গিয়ে আদিবকে জানালো হায়াতের কথা।
এদিকে আদিব তখন স্যারদের সাথে কথা বলছিলো, এমন সময় জাকিয়া, সুমনা নামে দুটো মেয়ে ছুটে এসে জানালো হায়াতের অসুস্থ হওয়ার কথা। আদিব দৌড়ে আসলো মাঠে।
হায়াত এভাবে পরে থাকতে দেখে ভেতর কেমন মোচড় দিয়ে ওঠলো। কিছু না ভেবে হায়াতকে কোলে তুলে নিলো,আরাবিও পেছন পেছন গেলো।
গাড়িতে শুইয়ে দিয়ে আরাবিকে পাশে বসতে বললো,আর আদিব ড্রাইভ করতে লাগলো। একটু পর পরই লুকিং গ্লাসের দিকে তাকাতে লাগলো,আরাবি আশ্বাস দিতে বললো,
– ভাইয়া কোনো চিন্তা করবেন না,হায়াতের কিচ্ছু হবে না।
আদিব চিন্তিত স্বরে বললো,
– আরু হায়াত তো নিয়ম মতো ঔষধ খায়, তাহলে এমন হলো কেনো, আর গাধাটাকে কে বলেছিলো এই রোদের মধ্যে ঘাসে গিয়ে বসতে।
– ভাইয়া আসলে অনেকদিন পর এলাম এর জন্য বসেছিলাম,আমার একদম খেয়াল ছিলো না, হায়াতের যে এমন সমস্যা হবে।
আদিব আর কিচ্ছু বললো না, তাড়াতাড়ি গাড়ি চালাতে থাকলো।
প্রায় বিশ মিনিট পর গাড়িটি এসে থামলো সুপার হসপিটালের সামনে। হায়াতকে কোলে করেই ভেতরে নিয়ে গেলো আদিব। একটুপর এসে কয়েকজন মিলে হায়াতকে ভেতরে নিয়ে গেলো।
গাড়িটি এসে থামলো সুপার হসপিটালের সামনে। তাড়াহুড়ো করে আদিব কোলে তুলে নিল হায়াতকে, দ্রুত ভেতরে নিয়ে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাক্তাররা হায়াতকে ওয়ার্ডে নিলেন। চারপাশে অস্থিরতার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠলো।
প্রায় চল্লিশ মিনিট পর এক নার্স এসে নরম গলায় জানালেন,
– পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে।
খবর শুনেই আদিব ছুটে গেল ভেতরে। নিভু নিভু চোখে হায়াত তাকালো তার দিকে। সেই মুহূর্তে এক নার্স এগিয়ে এসে বললো,
– ড. লিয়ার কেবিনে আপনাকে যেতে হবে।
আরাবি তখন হায়াতের পাশে বসে রইলো, আর আদিব ধীরে ধীরে পা ফেলে ডাক্তারের কেবিনে প্রবেশ করলো।
ড. লিয়া তাকিয়েই ইশারায় বসতে বললেন।
— আপনি তার হাসবেন্ড ?
— জ্বি ডাক্তার, আমার স্ত্রীর কিছু হয়নি তো ?
ড. লিয়া টেবিল থেকে কয়েকটি আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট এগিয়ে দিলেন। বিস্ময়ে স্থির হয়ে গেলো আদিব। ডাক্তার মুচকি হেসে বললেন,
— অভিনন্দন, আপনি বাবা হতে চলেছেন। আপনার স্ত্রী তিন মাসের প্রেগন্যান্ট।
শুনে যেন স্তব্ধ হয়ে গেল আদিব। অবিশ্বাস ভরা চোখে কিছুটা নড়ে বসলো সে।
– কিন্তু হায়াতকে দেখে তো একেবারেই মনে হয় না।
ড. লিয়া শান্ত গলায় বললেন,,
– হ্যাঁ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনটাই হয়। আর একটি সুখবর আছে,আপনারা টুইন বেবির parents হতে চলেছেন। তবে খুব যত্নে রাখতে হবে। এতটুকু শরীরে দুটো জীবন বেড়ে ওঠা সহজ নয়। কোনো কাজ যাতে না করে, সেটা খেয়াল রাখবেন।
কাগজে ভরা আল্ট্রার রিপোর্ট আর প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে নুয়ে পড়া পায়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো আদিব।
হায়াত তখন আরাবির সাথে শুয়ে শুয়ে গল্প করছিলো, এমন সময় আদিব কেবিনে ঢুকলো। আদিবকে এমন গম্ভীর দেখে আরাবি এবং হায়াত দু’জনই অস্থির হয়ে ওঠলো।
গায়াত ওঠে হালকা বসলো, আদিবের হাতের দিকে তাকিয়ে একটু চিন্তিত হয়ে প্রশ্ন করলো,
– কি হয়েছে ? রিপোর্ট কি খারাপ এসেছে..!!
আদিব হায়াতের পাশে বসে,কপালে একটা চুমু খেলো,
– তুমি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমরা মা বাবা হবো জান। আমাদের খুব শীগ্রই টুইন বেবির আগমন ঘটবে।
হায়াত যেনো কথা বলতে ভুলে গেলো, আদিব আরও কিছু বলার আগেই আরাবি খুশিতে লাফিয়ে ওঠলো, আর হায়াত সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারালো।
#চলবে
#আমার_হায়াতি
পর্ব : ৩৫
লেখিকা : #Nahar_Adrita
সারা রুম জুড়ে পায়চারি করছে হায়াত। তার পেছন পেছন আদিবও সমান তালে হাটছে, দরজার বাইরে পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে আছে সকলে। হায়াত রাগী কন্ঠে বললো,
– এভাবে পেছন পেছন হাটছেন কেনো !
আদিব কেবলা মার্কা একটা হাসি দিয়ে বললো,
– তুমি যদি ব্যথা পাও এর জন্য।
– সরুন তো সামনে থেকে, আমার প্রচুর রাগ হচ্ছে।
হায়াত এবার আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো, পেটে হাত রেখে আয়না দিকে তাকালো, সরু চোখে তাকিয়ে আদিবকে বললো ,
– আপনার কি মনে হয় আমার পেটে সত্যিই দুটো বেবি আছে ?
– হ্যা বউ, তোমার যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে রিপোর্ট গুলো দেখো।
হায়াত এবার চেয়ারে বসে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করে দিলো। হায়াতের কান্না দেখে নুপুর, মিনহাজা,আরাবি, মিসেস অরোরা, সুফিয়া সকলে রুমে ঢুকে পরলো। হায়াত সকলকে দেখে আরও জুড়ে জুড়ে কান্না করতে লাগলো। আদিব ডিভানের পাশে রাখা জগ থেকে এক গ্লাস পানি এনে হায়াতকে খাইয়ে দিলো। মিসেস অরোরা হায়াতের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
– কি হয়েছে আম্মু আমাকে বলো,, তুমি কি বাচ্চা হওয়াতে খুশি না ?
আদিবও মিসেস অরোরার কথায় সম্মতি জানালো,
– হ্যা জান তুমি কি চাচ্ছো সেটা বলো,এভাবে কান্নাকাটি করলে তো আরো অসুস্থ হয়ে পরবে।
হায়াত এবার চোখের পানি মুছে আরাবির দিকে তাকিয়ে বললো,
– আমার কত্তো শখ ছিলো, আরুর আগে বেবি হবে তারপর আমার, ওর ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিবো। কিন্তু এটা কি হলো ওর আগে আমার-ই বেবি হবে, তাও নাকি আমি তিনমাস ধরে কনসিভ করেছি।
হায়াতের মুখে এমন বাচ্চাদের মতো কথা শুনে আদিব সহ সকলে হেসে দিলো, আরাবি ঠোঁট চেপে হেসে বললো,
– জানু এর জন্য কান্না করতে হয় ? চিন্তা করছিস কেন, আমরা আবার একসাথে বেবি নিব কেমন..!!
মিসেস সুফিয়াও বললেন,
– হায়াত মা ! আরাবি তো ঠিক কথায় বলেছে এর জন্য কেউ কান্না করে।
হায়াত একটু নড়েচড়ে বসে বললো,
–চাচী আম্মু আমার সমস্যা শুধু এইটা না….
আরাবী একটু চোখ ছোট ছোট করে বলল,
– তাহলে কী সমস্যা সেটা বল আমাদের কে।
– আসলে ২ টা বাচ্চা হলে আমাকে কেমন পান্ডার মতো লাগবে, গোল একটা ফুটবল লাগবে দেখতে, আমি তো ঠিক মতো হাটতেও পারবো না, আর তার চেয়ে বড় কথা আমি ওদের সামলাবো কী করে।
এই বলে হায়াত আবার কান্না করে দিলো,হায়াতের কথা শুনে সকলে হো হো করে হেসে দিলো। নুপুর হাসতে হাসতে বললো,
– ভাবি এতো চিন্তা করছো কেন। আমরা আছি তো আমরা সবাই মিলে কুটু পাখিদের সামলাবো।
আদিব হায়াতকে হালকা আদরের রেশে জড়িয়ে ধরে বললো,
– আফরা তুমি গলুমলু হলে আরো সুন্দর লাগবে তোমাকে দেখতে, আর এই টাইমে এতো কান্নাকাটি করতে নেই সোনা। আমি আছি তো আমি কি বলেছি তুমি মোটা হয়ে গেলে আমি তোমাকে আর ভালোবাসবো না ?
হায়াত চোখ মুছে আদিবের শার্টে নাক মুছে বললো,
– আমার চেহারা নষ্ট হয়ে গেলেও আমাকে ভালোবাসবেন, আগের মতো ?
– সৌন্দর্যের লোভে পরে আমি কি তোমাকে ভালোবেসেছি, তুমি জানো না ভালোবাসা আর সৌন্দর্যের মোহে ডুবে যাওয়া দুটো দুই জিনিস ৷
এই বলে আদিব হায়াতের কপালে পরশ একে দিলো। হায়াতের কান্না ততক্ষণে কমে গিয়েছে। নুপুর মিনহাজা হায়াতের কলেজ ড্রেসটা ওয়াশরুমে রেখে আসলো। মিসেস অরোরা হায়াতের গালে হাত রেখে বললো,
– আম্মু খুব সাবধানে থাকতে হবে তোকে, সারাদিন ফল ফ্রুটস খাবে, আর প্রয়োজন ছাড়া একদম রুম থেকে বের হবে না কেমন।
হায়াত চুপচাপ মাথা নাড়ালো। এরপর আস্তে আস্তে সকলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
দুই ঘন্টা আগে…………….
হায়াত পুনরায় জ্ঞান হারালো, আদিব আর আরাবি বুঝতে না পেরে হা হয়ে গেলো, যখন বুঝতে পারলো হায়াত জ্ঞান হারিয়েছে তখন ডাক্তারকে ডাকতে শুরু করলো, একজন নার্স ছুটে আসলো। নার্স হা হয়ে আদিবের দিকে তাকাতেই আদিব দাঁত বের করে হেসে বললো,
– আমি জানি, আমি যে অনেক হ্যান্ডসাম। তাই এভাবে তাকিয়ে না থেকে আমার স্ত্রীকে দেখুন।
– না মানে হি হি…. পেসেন্ট আবার জ্ঞান হারালো কেন। আপনারা কি উনাকে হাইপার করে ফেলেছেন ?
আরাবি হায়াতের কাছে এসে চিন্তিত গলায় বললো,
– আমি তো একটু আনন্দে চিৎকার করে ফেলেছিলাম, কিন্তু ভাইয়া যখন বললো জানুকে টুইন বেবির হবে, তখনই সেন্সলেস হয়ে গেলো।
নার্স কিছু একটা চেক করে মিনিট দশেক পর বললো,
– পেসেন্টের জ্ঞান ফিরবে একটু পরই, আর সাথে সাথে ড. লিয়ার কেবিনে নিয়ে যাবেন। ওহ হ্যা সাথে করে একজন মহিলাও পাঠাবেন।
এই বলেই নার্সটি চলে গেলো। আদিব হায়াতের পাশে বসে হাতের মুঠোতে হাত জোড়া নিয়ে বসে বসে ফেসবুক স্ক্রোল করতে লাগলো। আর আরাবি বাড়ির সকলকে খুশির সংবাদ দিয়ে দিলো।
প্রায় চল্লিশ মিনিট পর হায়াত চোখ খুললো। আদিব আর দেরি না করে হায়াতকে একটু পানি খাইয়ে দিয়ে কোলে তুলে নিলো। আর আরাবি হায়াতের ব্যাগ হাতে নিলো। কেবিনের সামনে এসে হায়াতকে নামিয়ে দিলো। আরাবি হায়াতের বাহু ধরে আস্তে ধীরে ভেতরে নিয়ে গেলো। আর আদিব বাইরে ওয়েটিং চেয়ারে বসে রইলো।
ড. লিয়া আরাবি আর হায়াতকে বসতে বললো,কিছু ফাইল বের করে বেশ কিছুক্ষণ দেখার পর বললো,
– আপনিই মিসেস চৌধুরী ।
– জ্বি ডক্টর……..
– আপনার মাসিক বন্ধ হয়েছে কয় মাস ধরে…………. এরপর হায়াতকে একে একে নানান প্রশ্ন করতে থাকলো, আর হায়াত তার জবাব দিতে লাগলো। আর আারাবি খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগলো।
ড. লিয়া এক গাল হেসে বললো,
– এতো অল্প বয়সে মা হচ্ছেন নিজের প্রচুর যত্ন করতে হবে কিন্তু। আপনার তাহলে তিন মাস পনেরো দিন চলছে প্রেগ্ন্যাসি জার্নির। আপনার বাচ্চার যাতে পুষ্টির ঘাটতি না পরে সে দিক লক্ষ রাখবেন।
– আমার পেট অনুযায়ী তো আমার কনসিভ হওয়ার কথা মিলছে না।
– রুলস ফলো করে চলুন, বাচ্চাদের পুষ্টির ঘাটতি হলেই সমস্যা এটা মনে রাখবেন ওকে।
আর কিছু না বলে আরাবিকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে গেলো হায়াত। আদিব হায়াতকে কোলে তুলে নিতেই হায়াত রাগে আদিবকে কিল ঘুষি মারতে থাকলো। নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আদিবের বুকে কিল ঘুষি মারতে থাকলো হায়াত। আদিব হায়াতকে গাড়িতে বসিয়ে আরাবিকে বললো,
– দেখেছো তোমার বেস্টুর পাগলামি, দুই ফুটের পিচ্চি মেয়ের ঝাঁজ কতো। অকারণে স্বামীর ওপর অত্যাচার করে।
আরাবির খুব মনোযোগ দিয়ে দু’জনের ঝগড়ার কারণ খুজে বের করতে চেয়েছিলো। কিন্তু আদিবের এমন হাস্যকর কথা শুনে আরাবি ফিক করে হেসে দিলো।
আরাবি অনেক খুঁচানোর পরও হায়াতের মুখ থেকে একটা কথা বের করতে পারে নি। আদিবও কথা না বাড়িয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। আদিব মনে মনে ভাবলো হায়াত হয়তোবা সেইদিনের ঔষধ খেতে না দেওয়ার কারণে রাগ করেছে।
রাত আটটা বেজে পঁচিশ মিনিট। গেটের সামনে এসে গাড়িটি থামলো। আরাবি হায়াতকে নিয়ে আস্তে আস্তে নামলো। চারদিকে নিস্তব্ধতা,রাস্তায় কিছু কুকুর ছাড়া আর কিছুই চোখে পরছে না। আদিব রফিক কাকাকে গাড়িটা পার্ক করতে বললো।
হায়াত মেইন গেটের সামনে এসে থেমে গেলো। আরাবি কপাল কুচকে বললো,
– কি হয়েছে থামলি কেন, ভেতরে চল।
– আমি যাব্বো নাআআআআ।
আদিব এগিয়ে এসে আরাবিকে ভেতরে যেতে বললো,আরাবিও চুপচাপ ভেতরে চলে গেলো। মনে মনে ভাবলো – হয়তো প্রেগন্যান্সির ব্যাপারেই দম্পতি আলোচনা করবে।
আরাবি দরজা খুলে ভেতরে যেতেই, হায়াত আদিবের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ রেখে বললো,
– আপনি এতো খারাপ কেন ?
– আমি কি করলাম বউ, আমার তো কোনো দোষ নেই।
হায়াত আদিবের পায়ের ওপর দাড়িয়ে রাগী কন্ঠে বললো,
– নিজে আকাম করে আবার বলে আমি করলাম, আমার তো কোনো দোষ নেই। খারাপ কোথাকার নির্লজ্জ।
এই বলেই হায়াত হনহনিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো। সকলে হায়াতকে অভিনন্দন জানালেও হায়াত সকলের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কান্না করতে করতে ওপরে চলে গেলো। এরপর সকলেই পেছন পেছন যেতে লাগলো, আদিবকে সবাই ভেতরে যেতে বললো।
বর্তমান *****
আদিব হায়াতকে আলতো করে কোলে তুলে নিয়ে শুইয়ে দিলো। হায়াতও চুপচাপ আদিবের দিকে তাকিয়ে রইলো। আদিব আস্তে করে হায়াতের পেটে মাথা রেখে ফিসফিস করে বললো,
– রঙমালা,কুদ্দুস মাম্মি কষ্ট দিবে না ঠিক আছে।
– কে, মানে কি নাম ?
– কেন, কুদ্দুস আর রঙমালা।
হায়াত অসহায় মুখ করে বললো,
– এই যুগে এসে এসব নাম কেউ রাখে। ছ্যাহ্ আমার বেবিদের মান সম্মান রান্না করে খেয়ে ফেললেন আপনি।
আদিব হায়াতের পেটে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বললো,
– কেনো বউ নাম গুলো তো সুন্দর, আমি আমার বাচ্চাদের এই নামেই ডাকবো, তোমার অসুবিধা হলে অন্য নামে ডাকতে পারো। উফ তুমি যখন আমাকে বলবে,এই কুদ্দুসের বাপ এদিকে আসেন, ইসস্ কত্তো সুন্দর লাগবে।
– আপনার মাথা লাগবে, চুপ করুন তো।
এই বলেই দুজনে হেসে ফেললো,হায়াতের ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ পুড়ে নিল আদিব। এরপর আস্তে ধীরে ওষ্ঠের সাধ নিতে লাগলো।
”
”
”
এদিকে আরাবির একটুও ঘুম আসছে না কিছুক্ষণ পড়াশোনার পর বিছানায় শুয়ে আছে। আসিফ ল্যাপটপে কাজ করছিলো, কপাল স্লাইড করে আরাবির দিকে ঝুঁকে গেলো। আরাবি ওপাশ হয়ে শুযে ছিলো, ডান পাশে ঘুরতেই আসিফের মাথার সাথে নিজের মাথায় টোকা খেলো।
আরাবি কপাল কুঁচকে ফেললো,
– এখানে কি করছেন,আমার ওপরে এসেছেন কেনো।
আসিফ আরাবির দিকে আরেকটু ঝুঁকে পরলো, নাকে নাক ঘসে বললো,
– কেনো তোমার কি খারাপ লাগছে ?
– না মানে ভাইয়া…..না না স্যরি স্যরি বামী আমার না ঘুম আসছে না, আমি তো ভাবছি হায়াতের বেবি হলে কি কি করবো।
আসিফ ওঠে বসে পরলো,এরপর রুমের লাইট অন করে মুচকি হেসে বললো ,
– করবো, ওদের চাচ্চুর পক্ষো থেকে বড় একটা সারপ্রাইজ পাবে। খিদে পেয়েছে তোমার ?
– না।
– লাইট অফ করে দিই।
– আচ্ছা।
আসিফ লাইট অফ করেই চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো, এদিকে আরু হাতে ফোন নিয়ে ফেসবুক স্ক্রোল করতে লাগলো। আসিফ কপাল কুঁচকে আরাবির দিকে তাকিয়ে দেখলো সে এখনো ঘুমাই নি, আরাবির হাত থেকে ফোন কেড়ে নিলো আসিফ,
– ফোন চালাচ্ছো কেনো ?
– আমি তো ফোনকে একটু সময় দিচ্ছিলাম,বেচারা সারাদিন একা থাকে,ওরও তো কষ্ট হয় নাকি।
আসিফ আরাবির ওপর রাগ দেখাবে না হাসবে কিছুই বুঝতে পারলো না,হো হো করে হেসে দিয়ে আরুকে এক টানে বুকের ওপর নিয়ে নিলো। লজ্জায় আরাবি চোখ বন্ধ করে ফেললো,বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে আরুর কাঁপা কাঁপা ওষ্ঠে ছুঁইয়ে দিলো আসিফ। বাঁকা হেসে বললো,
– তোমার লিপ গুলো খুব সফট। একদিন সাধ নিয়েই প্রেমে পরে গিয়েছি।
– অস্ অসভ্য লোক কিসব বলে, ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন।
আরাবি এই বলে আসিফকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু তা পারলো না,এক মিনিট পর বুকে মাথা রেখেই বললো,
– আপনার ভয়েসটা দারুন,আমাকে একটা শুনাবেন….. কথা দিচ্ছি ঘুমিয়ে পরবো।
আরুর কপালে চুমু খেয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো আসিফ। আরাবি হালকা কেপে ওঠলো। কাঁপা হাতে আসিফকে সরানোর চেষ্টা করতে চেয়েও পারলো না। এরপর ওষ্ঠে ওষ্ঠ পুড়ে নিয়ে জুড়ে জুড়ে সাধ নিতে লাগলো। আরাবিও সমান তালে রেসপন্স করতে লাগলো।
পাঁচ মিনিট পর আসিফ হাস্কি স্বরে বললো,
– তোমাকে একটু একটু করে টেস্ট করবো,যাতে আমাদের ভালোবাসাটা তাড়াতাড়ি জন্মায়।
আরাবি আসিফের কথা শুনে সামান্য হাসলো। এরপর আসিফ আরাবিকে কোলে নিয়ে বসে গান ধরলো,
hey yeh nesha
yaa hai zaaher
iss peyar ko hum…
kiya nam dein …
kab se adhuri hain….
ak dastaan….
aaja usey aaj
anjaam dein……
ততক্ষণে আসিফ তাকিয়ে দেখলো আরাবি ঘুমিয়ে গিয়েছে। স্মিথ হেসে কপালে বড় করে একটা পরশ একে দিয়ে বালিশে মাথা দিয়ে শুয়ে দিলো আরাবিকে।এরপর নিজেও হালকা জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলো।
”
”
রাত এগারোটা চল্লিশ হায়াতের এখনো ঘুম আসছে না,এদিকে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরেছে আদিব। হঠাৎ করেই গলাটা কেমন ভার হয়ে আসলো হায়াতের৷ মনে হলো পানি খাওয়া খুব প্রয়োজন,হায়াত আলতো করে বিছানায় থেকে ওঠে জগ হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। সিঁড়ির দিকটা ভীষণ অন্ধকার,ফোনটাও সাথে করে আনা হয় নি, কি আর করার দেয়ালের দিকে হাতরিয়ে একটা করে সিড়ি নামতে লাগলো।
ড্রইংরুমে আসতেই হঠাৎ কারো ছায়া দেখে ভয় পেয়ে গেলো হায়াত। যে- ই না চিৎকার করতে যাবে তখনি কেউ একজন এসে হায়াতের মুখ চেপে ধরলো। হায়াত ভয়ে কেঁপে ওঠে। তখনি কেউ একজন ফোনের ফ্ল্যাস অন করে বললো,
– ভাবি আমি, এতো ভয় পাচ্ছো কেন ? আর একটু হলেই তো পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলতে।
হায়াত মিনহাজার গলা চিন্তে পেরেই স্বস্তির এক নিশ্বাস ফুঁকে বললো,
– তুমি এখানে কি করছো এতো রাতে,আর মনে হলো তুমি বাইরে গিয়েছিলে ?
হায়াতের কথায় যেন মিনহাজা একটু অস্বস্তিতে পরে গেলো। মৃদু হেসে বললো,
– আসলে আমার খুব খিদে পেয়েছিলো, তাই কিচেন রুমে যাচ্ছিলাম। তখনই মনে হলো দরজাটা লাগানো হয় নি, কিন্তু আমি গিয়ে দেখি লাগানো আর তখনি তুমি নিচে নামলে।
হায়াত যেনো কিছুটা দ্বিধায় পরে গেলো, এভাবে না যেনে কাউকে সন্দেহ করতে নেই ছোট বেলায় তার আম্মু শিখিয়েছে। যাক গে হায়াত আর কিছু না বলে মিনহাজার সাথে কিচেন রুমে প্রবেশ করলো।
মিনহাজা ফ্রিজ থেকে কিছু ফল নিলো আর হায়াত এক জগ পানিতে একটু ঠান্ডা পানি মিশিয়ে নিলো। মিনহাজা কপাল কুঁচকে বললো,
– ভাবি আমি যতো দূর জানি প্রেগ্ন্যাসির সময় ঠান্ডা পানি খেতে নেই, তুমি পানি ফেলে দাও আর আমি নরমাল পানি দিচ্ছি।
হায়াত অসহায় মুখ করে বললো,
– না না একটুই তো খাবো, প্লিজ ননদিনী ফেলে দিও না।
– খাও খাও তবে কালকেই আমি ভাইয়াকে বলে তোমার ব্যবস্থা করবো।
দু’জনেই মজা খুনসুটির পর ওপরে চলে গেলো।
#চলবে