আমার হায়াতি পর্ব-৩৬+৩৭

0
5

#আমার_হায়াতি
পর্ব : ৩৬
লেখিকা : #Nahar_Adrita

সকাল ছয়টা বেজে পঁচিশ
মিনিট।

আফরা আড়মোড়া ভেঙে বসলো, সকালের দিকটাই পাখির কিচির মিচির আওয়াজ, চারদিকে সিন্গ্ধ বাতাস যেন হায়াতের খুব পছন্দের।

একটু নড়েচড়ে বসতেই অনুভব করলো পেটের দিকে, হ্যা ছোট শরীর এ তার ছোট্ট পেটে বড়ো হচ্ছে আর ও দুটো প্রাণ। মুচকি হেসে পেটে হাত ভুলিয়ে দিলো হায়াত।

আদিব ও তখন একটু নড়েচড়ে উঠলো।
হায়াতকে এভাবে আনমনে বসে থাকতে দেখে আসতে করে উঠে বসলো আদিব। পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো হায়াত কে, ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বলে উঠল,,

— গুড মর্নিং,আমার পিচ্চি জান।

হায়াত সামান্য ঘাড় বাকিয়ে বলল,

— আমি কী এখনো পিচ্চি রয়েছি? ২বাচ্চার মা হবো ৬ মাস পর,আর আপনি কী না আমাকে পিচ্চি বলছেন।

আদিব একটু ঝুকে পড়ল হায়াতের দিকে, উষ্ঠে উষ্ঠো পুরে দিয়ে আস্তে আস্তে চুমু খেয়ে বলল,

— আমার কাছে তুমি সারাজীবন ই পিচ্চি, বুঝলে জান।

— হু,এখন ছারুন তো,আমি এখন একটু হাটাহাটি করবো এতে বাবুরা একটিভ থাকবে।

আদিব হায়াতের দিকে নেশালো চোখে তাকিয়ে কপালে ছোট্ট একটা চুমু একে দিয়ে বলল,

— হ্যা যাও, আমি ফ্রেস হয়ে তৈরি হয়ে নিয়ে, অফিসে যেতে হবে।

— আচ্ছা ।

হায়াত আস্তে ধীরে বিছানা থেকে নেমে গেলো, আদিব একটু চিন্তিত মুখে হায়াতের দিকে তাকিয়ে ছিলো। হায়াত আদিব এর দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,

— আমার পেট এখনো বড় হয়নি, এত চিন্তা করবেন না তো,সবাই তো মা হয়।

— বউ তুমি অনেক ছোট, এই ছোট্ট শরীরে আর ও ২টা প্রাণ বেড়ে উঠছে, আমার খুব ভয় হয় তোমাকে নিয়ে, তুমি চাইলে আমি কাজের লোক রাখতে পারি একজন।

— আরে কি মুশকিল এখন হাটা-চলার জন্য ও নাকি কাজের লোক রাখবে,চুপ করুন তো।

দুইজনের কথা বলার মাঝেই দরজায় কেউ কড়া নাড়লো । হায়াত মৃদু পায়ে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই দেখলো আরাবী দাড়িয়ে আছে, হাতে এক গ্লাস দুধ আর অনেক ফলমূল।
হায়াত মুচকি হেসে বলল,

— জানু এতো সকালে তুই আমার জন্য ব্রেকফাস্ট এনেছিস।

— সর তো সামনে থেকে, আমি তোর জন্য আনিনি, আমি তো আমার দুটো সোনা মায়ের জন্য এনেছি।

আরাবীর কথায় হায়াত একটু রাগী মুখ করে বলল,

— হ্যা সেই তো, আমি তো কারো কিছুই হয় না, সবার শুধু কুটু বুড়িদের জন্য চিন্তা।

একটু আরাবী হায়াতকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে চুল গুলো আঁচড়িয়ে দিলো। হায়াত মুচকি হেসে আরাবীর সব কাজ কর্ম দেখছে, মাথার লম্বা চুল গুলো বেনুনি করে দিয়ে হায়াতকে বিছানায় বসিয়ে ফল গুলো খাওয়াতে শুরু করলো।

হায়াত নাক শিটকিয়ে ফল গুলো খেলো,এর পর দুধ হাতে নিতেই আরুর দিকে অসহায় মুখ করে থাকলো হায়াত,

— দোস্ত আমি দুধ খাবো না, প্লিজ ফেলে দে এটা।

আরাবী রাগী মুখ করে কিছু বলবে তার আগেই আদিব ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো,গলা খাকারি দিয়ে বলল,

— চুপ চাপ খেয়ে নাও, নাহলে এক ঘুসি দিয়ে নাক ফাটিয়ে দিবো।

আদিবের কথায় হায়াত একটু ভয় পেয়ে দুই আঙ্গুল দিয়ে নাক ধরে দুধ খেতে লাগলো আর আরাবী মুখ চেপে হাসতে লাগলো।

আরাবি খালি গ্লাস আর প্লেটটা নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। আর হায়াত মুখ মুছে ওয়াশরুমে চলে গেলো। হায়াত পানির ট্যাব ছেড়ে দিয়ে ফ্রেশ হতেই হঠাৎ করে মাথাটা ঘুরে গেলো।

চোখ মুখ কুঁচকে বেসিংয়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা করলো,

— আদি……আমার মাথা ঘুরছে।

আদিব হায়াতের চিৎকার শুনে ছুটে আসলো ওয়াশরুমে, হায়াতকে এই অবস্থায় দেখে আদিবের কলিজা ছ্যাত করে ওঠলো, হায়াত তাকিয়ে দেখলো আদিব দরজার সামনে ইনোসেন্ট মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।

হায়াত কিছু বলবে তার আগেই গল গল করে বমি করতে শুরু করে দিলো। হায়াতকে এভাবে বমি করতে দেখে আদিবের হুস ফিরে আসলো। তাড়াতাড়ি এসে হায়াতের কাধ ধরে দাঁড়া করালো,হায়াত বমি শেষে নেতিয়ে পরলো আদিবের বুকে, আদিব বেসিং থেকে একটু পানি নিয়ে হায়াতের মুখ মুছিয়ে দিলো,এরপর আলতো করে কোলে তুলে নিল।

হায়াত যেন শ্বাস নিতে ভুলে গিয়েছে। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে। হেঁচকি তুলে কান্না শুরু করে দিলো মূহুর্তের মধ্যেই।

— আদ্ আদির বাচ্চা তুই আগে গেব্ গেলে আম্‌ আমার আর এতো বমি হতো না।

হায়াতকে বুকে নিতেই হায়াত নাক শিটকিয়ে আদিবের থেকে একটু দূরে বসলো,

— আপনার শরীর দিয়ে না না, আপনার শার্ট দিয়ে কেমন যেনো গন্ধ সরুন আপনি।

— জান তুমিই তো বমি করে দিয়েছো।

আদিব আরও কিছু বলবে কিন্তু হায়াতের এমন কান্না দেখে কিছু না বলে শার্ট খুলে ফেললো তাড়াহুড়ো করে। ডেস্ক থেকে কিছু ঔষধ বের করে হায়াতকে জোর করে খাইয়ে দিলো আদিব।

খাওয়ানো শেষ হতেই হায়াত একটু এগিয়ে এসে আদিবের বুকে মাথা রাখলো, অসংখ্য চুমু খেলো বুকের মাঝে। আদিব তৃপ্তির হাসি ঝুলিয়ে বললো,

— আমার জান তোমাকে এখন কোনো কষ্ট দেবো না,একবার বাবু হোক। তারপর তোমাকে অনেক আদর করবো কেমন।

হায়াত কিছু না বলে চুপচাপ আদিবের বুকে মাথা রেখে নিশ্বাস নিতে লাগলো। আটটা বাজতেই অফিস থেকে কল আসলো আদিবের, রিসিভ করতেই জানতে পারলো বিশ মিনিট পর মিটিং, হায়াতের জন্য এতো দেরি হয়ে যাবে ঘুনাক্ষরেও জানতে পারে নি আদিব।

হায়াতকে মৃদু আওয়াজে বললো,

— লাজুকপাখি এখন তুমি রেস্ট নাও, আমাকে অফিস যেতে হবে তো।

— উহু, যেতে হবে না আজ।

হায়াতের চুলে হাত বুলিয়ে বললো,

— সোনা এমন বায়না করে না, আজ না গেলে বড় একটা প্রজেক্ট লস্ট হয়ে যাবে।

হায়াত আদিবের বুকে থেকে মাথা সরিয়ে নিলো। হালকা রাগী কন্ঠে বললো,

— ঠিক আছে ঠিক আছে, আমার জন্য আসার সময় ফুল,ভেলপুরি নিয়ে আসবেন।

— আচ্ছা বউ।

এই বলে হায়াতের সাড়া মুখে চুমু একে দিলো আদিব। আর হায়াতও আদিবের প্রশস্ত বুকে লক্ষ চুমু একে দিলো। আদিব হায়াতের কামিজ উচু করে উদরে চুমু একে দিয়ে ফিসফিস করে বললো,

— এখন থেকে টিশার্ট পরবে ওকে। কে কি বললো সেটা দেখার সময় নেই, আর প্লাজু পরবে একদম পেটের নিচের দিকে। আমার বেবিদের নিয়ে কিন্তু কোনো রিস্ক নেবো না আমি আফরা।

— একটু আগে না বললেন, আপনার দেরি হয়ে যাবে, তাহলে এখন আবার উপদেশ দিচ্ছেন কেনো।

আদিব ওঠে আরেকটা হোয়াইট শার্ট বের করে পরে নিলো। গাড়ির চাবি হাতে নিয়ে দরজা অব্দি যেতেই কিছু একটা মনে করে আবারও ঘুরে আসলো।

হায়াত সবে মাত্র ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তখনি আদিব এসে হায়াতের ওষ্ঠে ওষ্ঠ পুড়ে নিল। পাঁচ মিনিট পর ছেড়ে দিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো। একটু পর ছেড়ে দিয়ে হাস্কি স্বরে বললো,

— সারাদিনের এনার্জি নিয়ে গেলাম, ঘুমাও লক্ষি পক্ষি।

আদিব হায়াতকে চোখ টিপ দিয়ে তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে গেলো। হায়াত পেটে হাত দিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। মনে মনে ভাবলো এখন একটা আরামের ঘুম দেওয়া যাবে।

প্রায় বিশ মিনিট হায়াত ঘুমিয়ে নিলো। আর ঘুম আসছিলো না বলে বিছানায় থেকে ওঠে বেলকনিতে গেলো। ক্লিও বেচারি নিষ্পাপ মুখ করে দোলনায় বসে ছিলো। হায়াতকে দেখতেই এক লাফে হায়াতের কোলে ওঠে গেলো হায়াতও স্মিথ হেসে ক্লিওকে কোলে নিয়ে দোলনায় বসে পরলো।

বেশ কিছুক্ষণ পর হায়াত ওঠে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।

“””””””””””
এদিকে প্রায় এক ঘন্টা খানেক হবে আরাবি আর আসিফ ঝগড়া করছে। আসিফও কম যায় না দরজার পাশ থেকে একটু ও সরছে না। আরাবি হাতে সুই সুতার বক্স আর কিছু কাপড় নিয়ে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে আসিফের দিকে।

— এই বজ্জাত কি সমস্যা আপনার, আমাকে যেতে দিচ্ছেন না কেনো।

আসিফ বাঁকা হাসলো,

— যেটা চেয়েছি সেটা দাও নাহলে আমি যেতে দেবো না।

— দেখুন আমি কিন্তু চিৎকার করবো, এভাবে একটা নিষ্পাপ মেয়ের ওপর কিছুতেই অত্যাচার করতে পারেন না আপনি।

— কে নিষ্পাপ তুমি ?

আরাবি একটু মুখ বাকিয়ে বললো,

— হ্যা আমিই তো নিষ্পাপ ভার্জিন একটা মেয়ে, কোনো সন্দেহ ?

আসিফ নেশালো চোখে আরাবির দিকে তাকালো, আস্তে আস্তে এগোতে থাকলো আরুর দিকে।

— আসেন আপনার ভার্জিনিটি নিয়ে একটু খেলাধুলা করি….

আরাবি ভয়ে একটু পেছন দিকে হাটতে লাগলো। আসিফ আরাবিকে কোলে তুলে নিল। আরাবি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে শুকনো ঢুক গিলতে শুরু করলো। আরাবিকে আস্তে করে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে হাতে থাকা বক্স আর কাপড় গুলো এক সাইডে রেখে ওষ্ঠে ওষ্ঠ পুড়ে দিলো আসিফ। আরাবি চোখ বন্ধ করেই একটু একটু রেসপন্স করতে লাগলো।

প্রায় দশ মিনিট পর আসিফকে ধাক্কা দিলো আরাবি। মুখ সরিয়ে বললো,

— আব্ আপনি অফিস যাবেন না ?

আসিফ কপাল স্লাইড করে আরাবির গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো,

— উমম পরে যাবো, আদিব গিয়েছে তো, একটু পর গেলেও হবে।

আসিফের মুখ আস্তে আস্তে আরেকটু নিচে নামতেই আরু সরে গিয়ে হাতে সুতোর বক্স নিয়ে এক দৌড় মারলো। যাওয়ার সময় বলে গেলো…….. নিচে আসুন আম্মা খাবার বেরে রেখেছে, আমি কাজ করবো এখন।

আসিফ ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হেসে চুল গুলোতে আঙ্গুল চালিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

::::::::::::::::::::

এদিকে ধীর পায়ে নেমে আসলো হায়াত। মিসেস অরোরা হায়াতকে দেখেই আস্তে করে ধরে সোফায় বসিয়ে দিলো। সোফিয়া বেগম কিচেনের দিক থেকে তখনি আসলেন, হাতে তার কিছু ওটস। হায়াতের আর বুঝতে বাকি রইলো না তার চাচি আম্মু তার জন্যই নিয়ে এসেছে। অসহায় মুখ করে বললো,

— আম্মু,চাচি আম্মু আমি একটু আগেই বমি করেছি, আমার আর শরীর চলছে না। প্লিজ আমি খাবো না, নাহলে আবারও বমি আসবে।

— আম্মু এটা খেতেই হবে তোমাকে,আদিব অফিস যাওয়ার আগে বলে গিয়েছে তুমি নিচে নামলেই যাতে আমরা কিছু খাইয়ে দেয় তোমাকে।

হায়াত তার দুই শাশুড়ীর কথা যেন আর ফেলতে পারলো না। চোখ কুঁচকে আস্তে ধীরে খেতে শুরু করলো।

প্রায় মিনিট পাঁচেক পর কলিং বেল বেজে ওঠলো, বাসার কাজের লোক রোজি খালা গিয়ে দরজা খুলে দিতেই ডেলিভারি ম্যানের হাতে মস্ত বড়ো এক বক্স।

মিসেস সোফিয়া আর অরোরা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো কে অর্ডার দিয়েছে। তখনি লাফাতে লাফাতে আরাবি নিচে নামলো আর একটু পর তার পেছন পেছন আসিফ। লোকটার জিনিসটা সেট করতেই সকলের বুঝতে আর বাকি রইলো না এটা যে একটা সেলাই করার মেশিন। আরাবি এক গাল হেসে লোকটিকে সোফার বাম দিকে মেশিন রাখতে বললো, আর আসিফ এগিয়ে গিয়ে বিল মিটিয়ে দিলো। মিসেস অরোরা চিন্তিত মুখে বললেন,

— আম্মু তুমি এটা অর্ডার দিয়েছো ?

আরাবি দাঁত কেলিয়ে বললো,

— হ্যা মণিমা আমিই অর্ডার দিয়েছিলাম।

মিসেস সোফিয়া একটু আশ্চর্য হয়ে বললেন,

— আরু আমরা তো সবাই কেনা ড্রেস পরি, তাহলে এই মেশিন দিয়ে কি হবে।

— আম্মা এটা আমাদের জন্য না, এটা আমার কুটু পাখিদের জামা বানানোর জন্য এনেছি।

হায়াত একটু অবাক হয়ে গেলো,

— আরু তুই জামা কাপড় বানানোর কাজ কবে থেকে শিখলি।

— এইতো পাঁচ দিন হবে শিখেছি ইউটিউব দেখে দেখে, আমার অনেক শখ আমার বেস্টুর বেবিদের জন্য নিজের হাতের ড্রেস বানাবো আর এখন তো আমি ওদের ছোট মাম্মা ও হয়, তাহলে আমার কাঁধে আরো বেশি দায়িত্ব পরে গিয়েছে তাই না ?

আরাবির কথায় হায়াত সহ সকলে হেসে ওঠলো। এমন সময় মিসেস অরোরা আসিফের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— আসিফ চল খেয়ে নিবি বাবা।

— না বড় আম্মু আমি খাবো না।

মিসেস সোফিয়া একটু রেগে বললেন,

— কেনো খাবি না, দুপুর অব্দি কি অফিসের ওইসব বাইরের খাবার খাবি।

আসিফ ভ্রু কুচকে আরাবির দিকে তাকালো,

— আসলে সকাল সকাল মিষ্টি কিছু খেয়েছি তো, এখন আর কিছু খাওয়ার মুড নেই, আম্মু…. বড় আম্মু।

মিসেস অরোরা কি খেয়েছিস জিজ্ঞেস করবে, কিন্তু তার আগেই হায়াত বলে ওঠলো,

— ভাইয়া মনে হয় সকাল সকাল আরুকে খেয়েছে, এর জন্য এখন আর কিছু খাওয়ার মুড নেই।

কথাটা মুখ থেকে ফসকে বের হতেই হায়াত জিহ্বায় কামড় দিয়ে অন্য দিকে ঘুরে গেলো। আর মিসেস অরোরা, সুফিয়া দু’জনই লজ্জায় রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো। আসিফ বাঁকা হাসলো আরাবির দিকে তাকিয়ে। আর আরাবি পারছে না তো মাটি ফাঁক করে ভেতরে ঢুকে যেতে।

আসিফ চুপচাপ হাতে চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে গেট দিয়ে বের হয়ে গেলো। আর আরাবি এসে হায়াতের পাশে ইনোসেন্ট মুখ করে বললো,

— জানু তুই কি কাজটা ঠিক করলি, এভাবে সবার সামনে লজ্জা না দিলেও তো পারতি।

— হি হি, আসলে দোস্ত মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেলো। আমি কি করবো বল।

আরাবি আর হায়াত কিছুক্ষণ কথা বলতে বলতে হায়াত ওটস খেয়ে নিলো, আরু গিয়ে খাবার খেয়ে নিলো।

দুপুর একটা বেজে বিশ মিনিট , হালকা ঠান্ডার মাঝেও
গরম লাগছে হায়াতের, মনটা কেমন যেনো অস্থির অস্থির লাগছে। মনে মনে ঠিক করলো গোসল করে নামাজ পড়ে নিবে। তাই আলমারি থেকে জামা নিয়ে গোসল করতে ঢোকে গেলো।

পনেরো মিনিট পর গোসল করে বের হলো হায়াত। পরনে ঢিলা একটা গোল জামা। মিসেস অরোরা কালকে হায়াতের প্রেগন্যান্সির কথা জানতে পেরেই অর্ডার করেছিল কিছু ঢিলা ঢালা গোল জামা। হায়াত বেবি পিংক কালার জামা পরে ওযু করেই ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে গিয়েছে। এরপর সালাত আদায় করে জায়নামাজটা জায়গা মতো রেখে আস্তে করে বিছানায় বসে পরলো।

এমন ঘরে প্রবেশ করলো রোজি খালা, হায়াতকে দেখে সামান্য মুচকি হেসে বললো,

— মা খাবারটা খাইয়া নাও, কর্তামা তোমারে এই অবস্থায় একটু পর পরই নিচে যাইবার মানা করছে।

হায়াত কিছু একটা ভেবে বললো,

— আচ্ছা খালা, ওইযে একজন নতুন মেয়ে কাজ করতো আসিফ ভাইয়ার বিয়ের সময় আনা হয়েছিলো, নামটা যেনো কি…. হ্যা মনে পরেছে মারজিয়া ( কাজের লোকের নাম মনে নেই আমার) ও কোথায় ?

রোজি খালা একটু হাসফাস করে জবাব দিলো,

— আসলে মারজিয়ার বিয়ে হবে তো তাই চলে গিয়েছে।

এই বলে মুচকি হেসে কাজের লোক চলে গেলো। হায়াতের একটু অন্যরকম লাগলো রোজি খালার কথা গুলো। যাক গে আর কিছু না ভেবে হায়াত নিজের খাওয়াই মনোযোগ দিলো। দুই লোকমা খেতেই হায়াতের বমি বমি ভাব চলে আসলো। নাহ হায়াত আর তৃপ্তি করে তার পছন্দের ইলিশের লেজের ভর্তা খেতে পারলো না। তবুও লোভ সামলাতে না পেরে বিছানায় বসেই গল গল করে বমি করে দিলো।

পাঁচ মিনিট পর আরাবি রুমে এসেই হা হয়ে গেলো, হায়াত বিছানায় হা হয়ে শুয়ে আছে আর সারা ফ্লোর জুড়ে বমি। আরাবি তাড়াতাড়ি রোজি খালা কে ডাক দিলো, সাথে মিসেস অরোরা আর সোফিয়াও আসলেন, হায়াতকে এভাবে থাকতে দেখে সকলেরই কষ্ট লাগলো। রোজি সব পরিষ্কার করে চলে গেলেন।

মিসেস অরোরা হায়াতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, সোফিয়া বেগম এক গ্লাস পানি এনে হায়াতকে খাইয়ে দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিলেন,আরাবি হায়াতের পাশে বসে অস্থির স্বরে বললো,

— হায়াত তোর কি এমন আগেও বমি হতো ? না মানে ওই তিনমাস তো এমন হতো না, তাহলে এখন এমন হয় কেন ?

মিসেস অরোরাও হায়াতের দিকে তাকালেন, হায়াত জুড়ে জুড়ে নিশ্বাস ফুঁকে বললো,

— আগেও মাথা ঘুরতো কিন্তু বমি আসতো না, কিন্তু আজকে দুইবার বমি হলো,আমার ইলিশ মাছের লেজার ভর্তা আমি আর খেতে পারলাম না।

হায়াতের কথায় সকলে হেসে দিলো, এমন বেহাল অবস্থাতেও হায়াত লেজার ভর্তার কথা বলছে। সোফিয়া বেগম হায়াতের পিঠ দোয়াতে দোয়াতে বললো,

— থাক সোনা চাচি আম্মু আবার বানিয়ে দিবে, কিন্তু এখন তো তুমি আর খেতে পারবে না, আরও বেশি বমি হবে।

হায়াত লাফিয়ে ওঠলো, বসে বললো,

— কিহ্, আমি এতো গুলো মাস লেজার ভর্তা খাবো না, আমি খাবোই আমার যতো ইচ্ছে আমি খাবো।

আরাবি ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,

— আম্মা আমার মনে হচ্ছে বেবিরা হয়তো এইসব খাবার পছন্দ করে না, তাই হায়াত খাওয়ার সাথে সাথেই বমি হলো।

আরাবির কথা শুনে হায়াত পেটের দিকে তাকিয়ে রইলো, তারপর বলতে শুরু করলো,

— এই যে কদ্দুস আর রংমালা, তোদের জন্য এখন আমি না খেয়ে থাকবো নাকি, আমার যা ইচ্ছে খাবো তোদের কি মাম্মার জন্য একটু মহব্বত হয় না , মাম্মাকে কষ্ট দিতে খুব ভালো লাগে ?

হায়াতের কথায় সকলে আবারও হেসে দিলো। এমন সময় ঘরে প্রবেশ করলো নুপুর আর মিনহাজা। নুপুর ডিভানে বসে একটু কপাল কুঁচকে বললো,

— সবই বুঝতে পারলাম, তবে কদ্দুস আর রংমালা নামটা কেমনন যেনো হয়ে যায় না।

আরাবিও নাক মুখ কুঁচকে ফেললো,

— আসলেই তো এগুলো কেমন নাম জানু, তুই কি আগের যুগের নাম রাখবি কুটু পাখিদের।

সকলে হায়াতের দিকে তাকিয়ে রইলো হায়াতের উত্তর শোনার জন্য। তখনি হায়াত হো হো করে হেসে দিলো,

— না মানে ওদের বাবা এই নাম গুলো ঠিক করেছে,তাই আমিও বলি।

হায়াতের কথায় আবারও সকলে হেসে দিলো। বেশ কিছুক্ষণ সকলে গল্প করলো হায়াতের ডেলিভারির সময় কিভাবে কি করবে। হায়াত, মিনহাজা,নুপুর, আরাবি মিলে কয়েকটা নামও সিলেক্ট করে ফেললো। এরপর মিসেস অরোরা আর সোফিয়া মিলে হায়াতকে বুঝাতে লাগলেন কিভাবে কি কেতে হবে, মেনে চলতে হবে। আর হায়াতকে বলে দিলেন, এই কয়মাস আর জার্নি না করতে,ছাঁদে না যেতে আর রাত হলে বেকনিতে যাওয়াও নিষেধ।

হায়াত তার দুই শাশুড়ির কথায় মাথা নাড়লো। তবে ওর মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলো। তার মা পাশে থাকলে এভাবেই বুঝাতো। ঠিক তখনি মনে পরলো হায়াত তার মাকে এখনো কিছুই বলে নি।

এরপর সকলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো, আরাবি হায়াতের পাশে শুয়ে শুয়ে ফোন স্ক্রল করতে লাগলো। হায়াত পাশে থাকা ফোনটা হাতে নিলো। এরপর মায়ের নাম্বারে কল করলো, বেশ কিছুক্ষণ রিং বাজতেই রিসিভ করলো,

— আফরা…. মা কেমন আছিস।
— আম্মু,,,, তুমি নানি হতে চলেছো।

হায়াতের কথা শুনে মিসেস আলিয়া হা হয়ে গেলো, তার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করে চোখের পানি মুছে, এরপর হায়াতকে নানান জ্ঞান দিতে লাগলো। আর হায়াত মুচকি হেসে চোখের পানি মুছলো। হ্যা সে এই জ্ঞান টুকুই মিস করছিলো। আর কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দিলো।

আরাবি এতোক্ষণ ধরে মা মেয়ের সব কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো। হায়াত ফোন রেখে দিতেই আরাবি এগিয়ে আসলো হায়াতের দিকে। চোখ ছোট ছোট করে বললো,

— তুই এতো কান্না করলে আমার ছেলে মেয়েও এমন কাঁদুনি টাইপের হবে।

— হলে হোক, আমার মতো নরম স্বভাবের হবে।

আরাবি মুখ বাকিয়ে বললো,

— কচু হবে, তুই জানিস….

“ আমাদের জীবনে নানান ঝড় আসবে,
তবুও আমাদের পাথর হয়ে
সেই ঝড়ের সাথে লড়াই করতে হবে।
আমরা মেয়ে মানুষ, আমাদের সব কিছু সহ্য
করে নিজেকে পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে হবে। ”

আর তুই কি করিস, সামান্য আন্টির সাথে কথা বলতে গিয়েই কান্না করে শেষ হয়ে যাচ্ছিস, এর কোনো মানে আছে বল।

আরাবির কথায় হায়াত আর কিছু বললো না, এরপর দু’জন মিলে একটু লুডু খেলে ঘুমিয়ে পরলো আর আরাবি নিজের রুমে চলে গেলো।

« সুযোগ পাইয়া ঘরের ভেতর..
ডাইকা কেনো নেন, ও চেয়ারম্যান,,,
আঁচল ধইরা টান দিলেন কেন … 🎵»

গান গাইতে গাইতে আরাবি নিজের রুমে প্রবেশ করলো। বিছানা সুন্দর করে গুছিয়ে আলমারি খুলে নিজের একটা জামা হাতে নিতেই চোখ গেলো আসিফের শার্টের দিকে। মুচকি হেসে সেখান থেকে একটা সাদা শার্ট নিয়ে পরে ফেললো। আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো।

মনে মনে বললো,নাহ দেখতে মন্দ লাগছে না। উফ আরাবি তোকে দেখতে একদম আসিফ চৌধুরির বউ বউ লাগছে। আরাবি গান ছেড়ে পাগলাটে নাচ দিতে লাগলো, এমন সময় দরজায় নক করলো কেউ, আরাবি ভাবলো হয়তোবা হায়াত এসেছে, নাহলে এই টাইমে কে আসবে তার রুমে।

আরাবি মিন মিন করে গান গাইতে গাইতে দরজা খুলে দিতেই আসিফকে দেখে লাফিয়ে ওঠলো, লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেললো, আসিফ প্রথমে না বুঝতে পারলেও এখন বিষয়টা লক্ষ করলো, আরাবি তার শার্ট পরেছে।
ঠোঁট কামড়ে হেসে আরাবিকে উপর থেকে নিচ অব্দি দেখতে লাগলো। আরাবির পরনে একটা প্লাজু আর সাদা শার্ট আর কোমড় অব্দি চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া। আসিফ আরাবিকে কোলে নিয়ে ঘুরানো শুরু করলো, আরাবি মুচকি হেসে বললো,

— আপনি এখন বাসায় মানে আব্ আপনি তো এখন আসেন না।

আরাবির কপালে একটা চুমু খেয়ে আসিফ তাকে নিচে নামিয়ে, ফিসফিস করে বললো,

— আমার বউটাকে দেখে আমি একদম হর্নি হয়ে যাচ্ছি,কিন্তু এখন আমার টাইম নেই, একটা ফাইল ভুলে রেখে গিয়েছি সেটায় নিয়ে যেতে এসেছি।

— ওহ তাড়াতাড়ি যান, এমন বকবক না করে।

আসিফ অনেক কিছু বলতে চাইলেও আর বলতে পারলো না, তাড়াতাড়ি ফাইল হাতে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো, আরাবি একটু আগের ঘটনা মনে করে মুচকি হাসলো। এরপর একটা ড্রেস বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

বিকেল সাড়ে চারটা, সবে মাত্র ঘুম থেকে ওঠলো হায়াত। ঘুমু ঘুমু চোখে ফোনটা হাতে নিলো, নাহ এখনো কোনো মেসেজ আসেনি আদিবের আইডি থেকে। হায়াত হয়তো বুঝতে পারলো আদিব এখনো মিটিংয়ে। আর কিছু না ভেবে ওয়াশরুমে গিয়ে ওযু করে সালাত আদায় করে নিলো।

মনটা কেমন যেন করছে হায়াতের, কি যেন একটা নেই নেই লাগছে তার। আর কিছু না ভেবে নিচে চলে গেলো।

”””’

এদিকে আদিব মিটিং শেষ করে বের হলো। আসিফকে ডাকলে বললো আরো কাজ বাকি আছে তার জন্য একাই বেরিয়ে পরলো। আশুলিয়ার রাতায় এসে মনে পরলো হায়াতের জন্য ভেলপুরি আর কিছু গোলাপ নিতে হবে। তাই গাড়ি থেকে নেমে পরলো। রাস্তার এক সাইডে গাড়ি রেখে হাটতে শুরু করলো, ফ্লাই অভারআরেকটু দূরে বলে সোজা রাস্তায় হেটে চললো, রাস্তার মাঝখানে আসতেই হঠাৎ করে আদিবের ফোনটা বেজে ওঠলো।

পকেট থেকে ফোন বের করতেই দেখলো তার বাবা কল করেছে, কল রিসিভ করে কথা ‘ হ্যালো ’ বলছে ঠিক তখনি একটা গাড়ি এসে ধাক্কা দেয় আদিবকে। আদিব ছিটকে পরে গেলো রাস্তার সাইডে।

অন্য দিকে রাকিব চৌধুরী ওপাশ থেকে এমন শব্দ পেয়ে চিন্তায় পরে গেলো।

আদিবের মাথায় বেশ খানিকটা লেগেছে। গাড়িটা আস্তে চলাই তেমন ব্যথা পায় নি সে। তবুও কপালে কেটে গিয়েছে যা থেকে রক্ত বের হচ্ছে। সকলে ধরাধরি করে আদিবকে একটা ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে গেলো।

আর সেখান থেকে কেউ একজন পরে থাকা ফোনটা ওঠিয়ে আদিবের বাবাকে সবটা জানালো। আদিবের বাবা মাথায় হাত দিয়ে কেঁদে ওঠলেন, তার একমাত্র ছেলেটার এই অবস্থা সে কিভাবে দূরে থাকবে। বাড়িতে কিছু জানালে যদি হায়াত অসুস্থ হয়ে পরে তার জন্য সে ইমার্জেন্সি ছুটিতে সিলেট থেকে ঢাকায় রওনা হলো।

এদিকে আদিবের ছোট খাটো চিকিৎসা করে ফেললো ডাক্তার, দশমিনিট পর আদিবের জ্ঞান ফিরে আসলো। চোখ খুলে নিজেকে অন্য জায়গায় আবিষ্কার করলো। কপাল স্লাইড করে সকলকে বললো,

— আমাকে কেউ ফুল আর ভেলপুরি এনে দিবেন,আমার বউ প্রেগন্যান্ট, ওর এই সময় যা খেতে চায় তাই দিতে হবে, আমার কিচ্ছু হয় নি, আপনারা কেউ আমাকে ধরে একটু গাড়িতে বসিয়ে দিবেন,আমার বউ আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

আদিবের কথায় সকলে হা হয়ে গেলো। একজন বৃদ্ধ লোক তো বলেই ফেললো,এই যুগে এসেও যে কেউ কাউকে এমন ভালোবাসে তা জানা ছিলো না, ছেলেটা দাঁড়ানোর শক্তি পাচ্ছে না, কিন্তু অন্তঃসত্ত্বা বউয়ের আবদার মেটাতে কতো আহাজারি।

এরপর একটা ছেলে গিয়ে আদিবকে ফুল আর ভেলপুরি এনে দিলো। আদিবের পায়েও ব্যথা পাওয়াই ঠিক করে হাটতে পারছে না, তাই কয়েকজন মিলে ওকে ধরে রাস্তা পার করে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।

আরেকজন আদিবের বয়সি পুরুষ বললো সেই ড্রাইভ করে আদিবকে দিয়ে আসবে, এই অবস্থায় সত্যিই আদিব গাড়ি চালাতে পারবে না, তাই সেও না করলো না।

<<<<<<<<< এদিকে হায়াত সেই কখন থেকে আদিবের জন্য বসে আছে, আসিফ এসে পরলেও আদিব এখনো আসে নাকি, সকলে যে যার যার মতো নিজ রুমে ঘুমোচ্ছে। কিন্তু হায়াত এখনো অপেক্ষা করছে আদিবের জন্য। আসিফ ফ্রিজ থেকে এক বোতল পানি নিয়ে সিড়ি দিয়ে ওঠতে গিয়েই দেখলো হায়াত এভাবে বসে আছে। আসিফ হায়াতের কাছে এসে বসলো, একটু চিন্তিত গলায় বললো, — হায়াত এখনো বসে আছো কেন, আদিব এসে যাবে তো, বিকেল টাইমে তো একটু ঘুমোতে হয় নাকি। — ভাইয়া আমার ভীষণ চিন্তা হচ্ছে ওনার জন্য, ওনি বলেছিলো একটুও দেরি করবে না, তাহলে এতো দেরি হচ্ছে কেনো। হায়াত আদিবের জন্য আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে লাগলো। আসিফ আরাবিকে ডাকলো, আরাবি নিচে আসলো, আরাবিকে এক কাপ চা বানাতে বললো, আরাবি চা বানাতে চলে গেলো। আর হায়াতের উল্টো পাশে বসে আসিফ আদিবকে কল করলো। তিনবার রিং বেজে ওঠলো তবুও আদিব ধরলো না তখন আসিফেরও চিন্তা হতে লাগলো। আর তখনি সকলে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো আদিবকে কেউ একজন ধরে নিয়ে আসছে। আরাবি হাতের চা টেবিলে রেখে এগিয়ে আসলো। হায়াত একটু অবাক হয়ে হাটতে শুরু করলো আদিবের দিকে। কাপাঁ গলায় বললো, — আব্ আপনার কি হয়েছে। আর তখনি পাশে থাকা ছেলেটা বলে ওঠলো, — এক্সিডেন হয়েছিলো, অল্পের জন্য...... লোকটা আর কিছু বলার আগেই হায়াত জ্ঞান হারালো, ঠাস করে নিচে পরে গেলো। আরাবি চিৎকার করে ওঠলো, আসিফ এসে হায়াতকে ওঠালো। আদিব অসহায় চোখে হায়াতের দিকে তাকালো। আদিবকে ছেলেটা বসিয়ে দিলো সোফায় আর হায়াতকে কোলে করে এনে সোফায় শুইয়ে দিলো আসিফ। আরাবির চিৎকারে সকলে দৌড়ে নিচে আসলো। আদিবকে এভাবে দেখে কান্না করে দিল মিসেস অরোরা, আদিব এক ধমক দিয়ে বললো, — এভাবে কান্না না করে হায়াতের জ্ঞান ফেরানোর ব্যাবস্থা করো। তখন সকলের চোখ গেলো হায়াতের দিকে, মিনহাজা গিয়ে পানি নিয়ে আসলো, আর আরাবি হাতের তালু ঘষতে লাগলো। আদিব একটু এগিয়ে বসে বললো, — জান কিচ্ছু হয় নি আমার, দেখো আমি কথা বলছি। আফরা চোখ খুলো প্লিজ। হায়াত মিনিট পাঁচেক পর চোখ খুললো। সকলে স্বস্তির নিশ্বাস ফুঁকলো। এরপর আদিব সকলকে ঘটনাটা বলতে স্শুরু করলো। হায়াত একটু ওঠে বসলো, আদিবের মুখে হাত বুলিয়ে বললো, — আমার জন্য আপনার এমন হলো,আমি জদি এমন আবদার না করতাম.................. এই বলেই হায়াত হাও মাও করে কান্না শুরু করলো। আদিব আলতো করে হায়াতকে জড়িয়ে ধরলো, হায়াত পুনরায় ডুকরে কেঁদে উঠে। আদিবের সারা মুখে চুমু দিলো হায়াত। মিসেস অরোরা এক গ্লাস দুধ এনে আদিবকে খাইয়ে দিলেন। আসিফ আদিবকে ধরে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে নিয়ে গেলো। আর হায়াতকেও সকলে মিলে ওপরে নিয়ে গেলো। #চলবে......... #আমার_হায়াতি পর্ব : ৩৭ লেখিকা : #Nahar_adrita ( কোনো ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। 🙏❤️‍🩹) '''''''''''''''''''''''''''''' আদিবকে শুইয়ে দিয়ে সকলে একে একে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, আর হায়াত ক্লিওকে কোলে নিয়ে ডিভানে বসে আছে। মুখ গোমরা করে ক্লিওর শরীরে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সে, আদিব কপাল স্লাইড করে হায়াতকে ডাকলো, — “ বউ এদিকে এসো। ” হায়াত আদিবের কথায় কোনো উত্তর দিলো না। আদিব এভাবে তিনবার ডাক দিলো তবুও হায়াতের কানে যেনো কোনো কথা পৌঁছালো না। আদিব চোখ বন্ধ করে জুড়ে এক ধমক দিতেই হায়াত কেঁপে ওঠে। মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে এসে আদিবের পাশে বসলো বিছানায়। আদিব হায়াতের দিকে একটু কপাল কুচকে তাকালো, — “ আমার কিছু হয় নি , তাকাও আমার দিকে প্লিজ হায়াত। ” আদিবের কথা শেষ হতে না হতেই আফরা ডুকরে কেঁদে উঠে, আদিবের বুকে হালকা মাথা রেখে বললো, — “ আপনি অনেক ব্যথা পেয়েছেন তাই না। ” — “ না সোনা মাথায় একটু ব্যথা তাছাড়া কোনো ব্যথায় নেই। ” — “ সত্যি ” আদিব হায়াতের কপালে পর পর পাঁচটা চুমু দিয়ে বুকে শক্ত করে চেপে ধরলো, হায়াত পরম আবেশে আদিবের শার্টের বোতাম খুলে বুকে চুমু দিতে থাকলো, আদিব জানে হায়াত প্রচন্ড কষ্ট পেলেই এমন পাগলামি করে। আদিব হায়াতকে নিয়ে ওভাবেই শুয়ে শুয়ে মুভি দেখতে লাগলো। হায়াত বিড়াল ছানার মতো গুটি মেরে আদিবের প্রশস্ত বুকে মাথা রেখে মুভি দেখতে লাগলো। '''''' অন্যদিকে আরাবি ইউটিউবে দেখে দেখে খুব মনোযোগ সহকারে কাপড় কাটছে আর আসিফ হাতে ফিতা নিয়ে চেয়ারে বসে আছে। ইউটিউবে সুন্দর একটা অফ হোয়াইট কালার বাবুদের ফ্রক বানানোর ভিডিও চলছে। আর আরাবি সেটা দেখে দেখে কাটছে। আসিফ এতোক্ষণ অফিসের কাজ করছিলো। আদিবের এক্সিডেন হওয়ায় সব কাজ নিজের ঘাড়ে নিয়েছে সে। প্রায় বিশ মিনিট ধরে আরাবির কান্ড দেখছে আসিফ। —“ তুমি শিউর আমাদের মেয়ে বেবি হবে ? ” আরাবি কাপড়ের টুকরো গুলো নিয়ে মেশিনের ওপর রাখলো, ভেঙ্গচি কেটে বললো, — “ দেখুন মিস্টার...... — “ দেখার সুযোগ দিলে তো দেখবো। ” আসিফের কথায় আরু গাল ফুলিয়ে বললো, —“ এক লাইন বেশি বলেন কেনো,, আমার কথাটা আগে শেষ করতে দিন তো। ” — “ হ্যা বলো বলো..!! ” — “ আমাদের কুটু পাখিরা ইনশাআল্লাহ একজন মেয়ে একজন ছেলে হবে, আর নাহলে দুইটা মেয়ে হলে তো উফ কথায় নেই। ” আসিফ একটু ভাব নিয়ে বললো, — “ আর যদি আমাদের দু'টোই আব্বাজান হয় ? ” —“ না না আমাদের মেয়ে হবে, আমার কতো স্বপ্ন..!! ” —“ আরু একটা চুমু খাও তো, কাজ পরে করবে !! ” ''''''""""" দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে আরও চার মাস......... রাত প্রায় এগারোটা চল্লিশ, হায়াতের কিছুতেই ঘুম আসছে না, আর আদিব ক্লান্ত শরীর নিয়ে সেই কখন ঘুমিয়ে পরেছে। এতো ভারী পেট নিয়ে হায়াত এক পাশ হয়ে শুয়ে আছে। এই লাস্টের দিকে একটু নড়াচড়া করতেও ভয় লাগে তার। সাত মাসেই পেট-টা অনেকটাই বড় হয়ে গিয়েছে, টুইন বেবির আগমন ঘটবে আর দুইটা মাস গেলেই। হায়াত আস্তেধীরে ওঠে বসলো। পেটে হাত দিয়ে বিছানায় থেকে ওঠলো, মনে মনে ভাবলো একটু আচার খেলে মন্দ হয় না, হায়াতের মা আলিয়া বেগম এসেছিলো এক সপ্তাহ আগে, সে মেয়ের জন্য নিজ হাতে নানান রকমের আচার বানিয়ে এনেছে। হায়াত এখন খুব কমই সিড়ি দিয়ে ওঠানামা করে,বাড়ির সকলের কড়া আদেশ এতোবার নিচে ওঠানামা করা যাবে না। চার মাস আগে রাকিব চৌধুরী এসেছিলো আদিবকে দেখতে। আর হায়াতকে প্রাণ ভরে দোয়া করে গিয়েছে, হায়াতের পছন্দের সব খাবারও কিনে দিয়ে গিয়েছেন। হায়াত আস্তেধীরে খুব সাবধানে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলো, আর ঠিক তখনি আঁতকে উঠল দরজা খোলা দেখে, ভয়ে ঢোক গিলে এগোতে থাকলো। দরজার সামনে গিয়ে দেখলো কেউ নেই। কপাল কুঁচকে আরেকটু এগোতেই শুনতে পেলো কারো ফিসফিস করে কথা বলা। বাগানের কাছটায় যেতেই দেখলো মিনহাজা একটা ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে আপত্তিকর কাজ করছে, হায়াত নিমিষেই চোখ বন্ধ করে ফেললো। মিনহাজা ফিসফিস করে বললো, — “ আমাকে নিয়ে কবে পালিয়ে যাবে ইমন । ” — “ আরেকটু অপেক্ষা করো মিনু..! ” হায়াত যেনো পাথর হয়ে গেলো, এরা কি বলছে এসব। মিনহাজা কেনোই বা পালিয়ে যাওয়ার কথা বলছে। হায়াত আর চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে পারলো না। জোরে এক ধমক স্বরে বললো, —“ কি হচ্ছে এখানে ? ” মিনহাজা যেনো পরক্ষণেই আঁতকে উঠলো,দুইজনেই ভয়ে দুই দিকে সরে আসলো, হায়াতের দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে বললো, —“ বিশ্বাস করো ভাব্ ভাবি, আমরা তো জাস্ট....... ঠাসসসসস্.............★ ব্যাস !! মিনহাজা আর কিছু বলার আগেই বাম গালে সজোরে এক থাপ্পড় দিলো হায়াত, হায়াত এভাবে মারবে তা কাশমিন কালেও ভাবে নি মিনহাজা। রাগে দুঃখে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো, — “ তুমি আমাকে কোন সাহসে থাপ্পড় মারলে, এভাবে অভিভাবক গিরি দেখাতে এসেছো। ” ইমন এবার সামনে এগিয়ে আসলো, হায়াতের দিকে তাকিয়ে দাঁত কিরমির করে বললো, — “ আমার মিনুকে মারলে কেনো তুমি ? তুমি কে ওর গায়ে হাত তোলার ? ” — “ আমি ওর ভাইয়ের স্ত্রী, ও যদি ভুল পথে হাটঁতে শুরু করে তাহলে অবশ্যই শাষণ করবো, আর আজ এই চড়টা ওর প্রাপ্য ছিল, সেদিন তার মানে আমি ভুল দেখি নি, মিনহাজা তুমি সত্যিই বাইরে এসেছিলে, লজ্জা করে না তোমার একটা গা'ঞ্জা খোর ছেলের সাথে এসব করে বেড়াচ্ছো। হায়াতের হালকা শ্বাস কষ্ট হতে শুরু করলো, বড় করে একটা নিশ্বাস ফুঁকে আবারও বললো,, আর জিবন নাকি ইমন তুমি সেই না, যাকে প্রতিদিন রাস্তায় মাস্তানি করতে দেখি.....আর কি বললে ❝ আমার মিনুকে মারলে কেন ❞ ও তোমার মিনু কিভাবে হলো, তুমি তো কয়েক মাস আগেও দেখলাম অন্য একটা মেয়ের সাথে ন'ষ্টা..... এবার মিনহাজা চিৎকার করে ওঠলো, রাগে গিরগির করতে করতে হায়াতের গাল চেপে ধরলো, —“ বেশ অনেকক্ষণ ধরেই তোমার ফাউল মার্কা কথা শুনে যাচ্ছি,, —“ মিন্ মিনহাজা ছাড়ো আমাকে, আব্ আহ্ ব্যথা লাগছে........ হায়াতের গাল বেয়ে পানি পরলো, মিনহাজা মাটিতে একটু থুতু ফেললো, — “ তুমি আমার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে কথা বলার আগে নিজের চরিত্র ঠিক করে নাও। ” ইমন পরিবেশ অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে বলে অযথা একটা হাসি ঝুলিয়ে বললো, —“ বেবি আমি চলে যাচ্ছি, তুমি এই মেয়ের সাথে হিসাব নিকাশ করো কেমন। ” মিনহাজা মাথা নাড়ালো, হায়াত কপাল কুঁচকে মিনহাজার হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিলো,, —“ মানে কি, আমার চরিত্র এসব কি বলছো তুমি ? আর এটা কোন ধরনের ব্যবহার মিনহাজা ? ” —“ বাহ্ , আমারটা কোন ধরনের ব্যবহার তাই না, আর তুমি যে আমাকে চড় মারলে তার বেলায় ? ” হায়াত এবার গর্জে উঠে, —“ আমার চরিত্র নিয়ে তুমি কথা বললে কোন সাহসে,, তুমি এই পর্যন্ত কোনোদিন আমাকে খারাপ কাজ করতে দেখেছো। ” — “ হাহ্ খারাপ কাজ ? অন্যের বাচ্চা পেটে নিয়ে ঘুরা এটা কি খুব ভালো পবিত্র কাজ ? ” হায়াতের যেনো পরক্ষণেই মাথা ঘুরে গেলো, মিনহাজা এসব কি বলছে, " অন্যের বাচ্চা পেটে নিয়ে ঘুরা " এটার মানে কি, এটা তো আমার আর আদিব সন্তান। —“ মিব্ মিনহাজা কথা স্পষ্ট করে বলো, অন্যের বাচ্চা মানে তুব্ তুমি কি বুঝাতে চাইছো ? ” —“ থাক রুমে যাও ভাবি, পুরোনো কাশন্দি ঘেটে লাভ নেই। ” — “ না মিনহাজা, আমাকে সবটা খুলে তোমাকে বলতেই হবে, প্লিজ বলো তোমার এই কথার মানে কি ? ” মিনহাজা দাঁত কিরমির করে বললো, —“ মানেটা খুব পরিষ্কার,, এই বাচ্চা তোমার আর আদিব ভাইয়ার না। ” হায়াত অবাক হয়ে তাকালো মিনহাজার দিকে, রাগে গা দিয়ে যেনো আগুনের ঝলকানি বের হচ্ছে, তবুও স্থির থেকে মিনহাজার সব কথা শুনতে লাগলো। —“ আসলে এই বাচ্চার বাবা তো রাজ ভাইয়া, সাত মাস আগে ছোট ভাইয়া আর আরাবি ভাবির যখন বিয়ে হলো, সেদিন রাতে তুমি আর রাজ ভাইয়া এক রুমে ছিলে, যদিও তোমাকে নেশা করানো হয়েছিলো আর তোমার কিছু মনে নেই। তবে বাচ্চাটা কিন্তু রাজ ভাইয়েরই, শুনতে খারাপ লাগলেও তুমি একজন ন'ষ্ট মহিলা। আর তোমার পেটে অন্যের সন্তান বড় হচ্ছে, আমার বাড়ির মানুষ ভালো দেখে তোমাকে এখনো কিছুই বলে নি। হয়তো বাচ্চা হলেই তোমাকে বের করে দিবে। যাইহোক কথা গুলো বলার আমার কোনো ইচ্ছে ছিলো না কিন্তু তুমি বাধ্য করলে, আর আমার কথা তোমার বিশ্বাস নাই হতে পারে এই নিউসটা দেখো। এরপর মিনহাজা ইউটিউবে একটা নিউস দেখালো যা দেখে হায়াত পাথর হয়ে গেলো, ঠাস করে মাটিতে বসে পরলো। মিনহাজা বাকা হেসে বললো, — “ খুব তো এসেছিলে আমার বিষয় নিয়ে নাক গলাতে, এখন দেখো দিন শেষে কার চরিত্র কেমন। ” হায়াতকে ফেলে রেখেই মিনহাজা হনহন করে ভেতরে চলে গেলো। আর হায়াত নিজেকে যেনো বিশ্বাস-ই করতে পারছে না, কাঁপা কাঁপা হাতে পেটে আলতো করে চেপে ধরলো, —“ তার মানে সেদিন আমার আর ওনার মধ্যে কিছু হয়নি , রাজের সাথে আব্ আমি ই'ন্টিমেট হয়েছিলাম। আর এই বাচ্চা আমর আর আদির না, আব্ আমি এতো খারাপ, আমার সাথে এসব হলো আর আমি টের পেলাম না, আব্ আমি তো কলঙ্কিত হয়ে গিয়েছি। এই সন্তান গুলো আমাদের না, আমার আদি এই সন্তানের বাবা না। এই বলেই হায়াত ডুকরে কেঁদে উঠে, বিরবির করে বলতে লাগলো...... এই সন্তানের বাবা আদি না, আমার আদি বাবা না বাচ্চাদের, এগুলো আমার গর্ভের অভিশাপ, আমি কলঙ্কিনী নারী, আমি পাপ করেছি, আমি নিজেকে হেফাজত করতে পারি নি। হায়াত এভাবেই কান্না করতে করতে বেজে গেলো রাত বারোটা বিশ। হায়াতের নাক দিয়ে রক্ত পরতে লাগলো। মাথাটা প্রচুর ঘুরতে লাগলো। অনেক কষ্টে পেট ধরে ওঠে দাড়ালো, বিরবির করে ভেতরে প্রবেশ করে গেট লাগিয়ে দিলো, সিড়ি দিয়ে ওপরে ওঠতে লাগলো। °°°°°°°°°° অন্যদিকে আদিবের হঠাৎ করেই ঘুমের মধ্যে কেমন যেনো হতে শুরু করলো। কাশতে কাশতে ওঠে বসে পরলো।কাছেই রাখা জগ থেকে এক গ্লাস পানি খেয়ে ওপাশে তাকাতেই আঁতকে উঠল, হায়াত পাশে নেই আর দরজাও খোলা। সাত পাঁচ না ভেবে লাফিয়ে বিছানায় থেকে ওঠে গেলো। রুমের লাইট অন করলো, নাহ ওয়াশরুমেও নেই, আদিবের যেনো মাথা কাজ করতে বন্ধ হয়ে গেলো। দৌড়ে রুম থেকে বের হতেই দেখলো হায়াত কিছু একটা বলতে বলতে রুমের দিকে আসছে, আদিব যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচল। লম্বা একটা নিশ্বাস ফুঁকে দরজার সামনে দাড়ালো, হায়াত সামনে আসতেই আদিব যেনো পুনরায় আঁতকে উঠল। হায়াতের নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে, চোখ মুখ লাল। আদিব তাড়াতাড়ি হায়াতকে ধরে নিলো,আরেকটু হলেই হায়াত পরে যেতো। হাত দিয়ে নাকের রক্ত মুছে দিয়ে ডিভানে বসিয়ে দিলো, কিন্তু হায়াত তখনো মৃদু আওয়াজে কি যেনো বলছে। —“ কি হয়েছে লক্ষি, আমাকে বলো কোথায় গিয়েছিলে। নাক দিয়ে এতো রক্ত পরছে কেনো ? ” হায়াতের এবার হুস ফিরলো,, মনে মনে ভাবলো এই কল'ঙ্ক নিয়ে আমি কেনো আদিবের এতো কাছে রয়েছি, আমাকে দূরে থাকতে হবে, আমি তো ওনার যোগ্য নই,আমি একজন খারাপ স্ত্রী। এই ভেবেই হায়াত আদিবের থেকে দূরে গেলো, আদিব বুঝতে পারলো, হয়তো হায়াতের ভালো লাগছে না, প্রেগন্যান্সির সময় এমন মুড সুইং হয়। আদিব আলতো করে আরেকটু সরে বসলো৷ —“ জান ডাক্তার ডাকবো। ” হায়াতের চোখ থেকে আপনাআপনিই পানি গড়িয়ে পরলো, ঠোঁট চেপে কান্না আটকিয়ে বললো, —“ আমি ঘুমাবো, লাইট অফ করে দিন,কোনো কষ্ট হচ্ছে না আমার। ” আদিব আর কোনো কথা বলে লাইট অফ করে দিলো। আর হায়াত বিছানায় শুয়ে পরলো, মনে মনে ঠিক করলো কালকেই আরাবির মায়ের সাথে বেবি নষ্ট করে ফেলা নিয়ে কথা বলবে। ''''''''''' সকাল সাতটা,,,, হায়াত সাড়া রাত ঘুমাইনি বললেই চলে, বিছানা থেকে ওঠে পেটে হাত দিতেই মনে পরলো এগুলো তার গর্ভের কলঙ্ক। তাচ্ছিল্যের এক হাসি ঝুলিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো। আদিব আজ ছয়টার দিকেই রওনা হয়েছে অফিসের উদ্দেশ্য। আমেরিকা থেকে একজন কোম্পানির মিটিংয়ে আসবে সেই জন্যই তার আগে যাওয়া, এয়ারপোর্ট থেকে মি. ইবিডিয়ান - কে রিসিভ করে সোজা অফিস যাবে। আরাবি গুন গুন করতে করতে হায়াতের রুমে আসলো। আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল খোপা করতে লাগলো, ঠিক তখনি ওয়াশরুম থেকে বের হলো হায়াত। মুখ ভার করেই প্রশ্ন করলো, —“ ওনি অফিস গিয়েছেন কখন জানিস ? ” —“ হ্যা সকাল ছয়টায় গিয়েছে, কেন তুই জানিস না জানু !! ” হায়াত স্মিথ হেসে মনে মনে ভাবলো, আমাকে বলে যাবে কেনো, আমি তো পাপ কাজ করেছি, মানুষ খারাপ বলবে তাই বাচ্চা গুলো হওয়া অব্দি ওনি সহ প্রত্যেকে আমার সাথে নাটক করছে, আল্লাহ গো আমাকে মুক্তি দাও, আমার যে আর সহ্য হচ্ছে না। ....এই জানু, জানুরেএএএএএএ...... আরাবির ডাকে চমকে ওঠে হায়াত, মুচকি হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো, —“ আচ্ছা আরু আন্টি তো আজকে আসবে তাইনা.... আমি চাচ্ছিলাম আমার প্রেগ্ন্যাসির ব্যাপারে আন্টির সাথে একটু পার্সোনালি কথা বলতে, কখন আসবে আন্টি ? ” —“ আম্মু হয়তো সকাল সকালই আসবে, আবার চেম্বারে যেতে হবে তো, আচ্ছা তোকে এতো মনমরা লাগছে কেনো হায়াত, কি হয়েছে বেস্টুকেও বলা যায় না বুঝি..! ” হায়াত একটু মৃদু আওয়াজে বললো, —“ না না আমার আবার কি হবে, আসলে পেটটা বড় হয়েছে তো, তাই একটু অস্বস্তি হচ্ছে। ” আরাবি হায়াতকে আস্তেধীরে ডিভানে বসিয়ে দিয়ে মুচকি হপসে বললো, —“ তবে যায় বলিস জানু,তোকে না খুব সুন্দর লাগে, মানে তোর চেহারা আগের থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, কি সুন্দর গলুমলু হয়েছিস। ” হায়াত আগের মতোই মুখ ভার করে বসে আছে বলে আরু হায়াতের গালে চুমু দিয়ে বললো, — “ তোর কি খুব খারাপ লাগছে আজ, তাহলে শুয়ে থাক আমি আম্মু আসলে তোর রুমে পাঠিয়ে দিবো।” হায়াত কিছু না বলে রোবটের মতো ডিভানেই শুয়ে পরলো। আটটা বেজে পঁচিশ মিনিট, একটু আগেই রোজি খালা হায়াতের খাবার ওপরে দিয়ে গিয়েছে। হায়াত না খেয়ে ওভাবেই শুইয়ে ছিলো, হঠাৎ করে দরজা খোলার শব্দ পেয়ে হায়াত ওঠে বসলো। মিসেস আফসানা (নাম ভুলে গিয়েছি) মুচকি হেসে ভেতরে ঢুকতেই হায়াত তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। মিসেস আফসানা একটু চমকে ওঠলো হায়াতের কান্ড দেখে, তবুও কিছু বললো না, হায়াত তাড়াতাড়ি এসে মিসেস আফসানাকে ডিভানে বসিয়ে নিজেও বসলো। এরপর কান্নায় ভেঙে পরলো। —“ কি হয়েছে হায়াত, কান্না করছো কেন,আন্টিকে বলো। ” হায়াতের চোখ মুছে দিলেন তিনি। হায়াত পাশে রাখা গ্লাস থেকে ঢকঢক করে সবটা পানি খেয়ে বললো, —“ আন্টি তুমি কি আমাকে এমন ঔষধ দিতে পারবে, যেটা খেলেই বাচ্চা গুলো নষ্ট হয়ে যাবে৷ ” হায়াতের কথায় মিসেস আফসানা আশ্চর্যের সপ্তম আকাশ থেকে পরলেন যেনো। হা হয়ে গেলেন হায়াতের কথায়। —“ কি বলছো তুমি এসব,পাগল হয়েছে ? সাত মাসের প্রেগন্যান্ট অবস্থায় তুমি এমন কথা বলছো ? ” —“ তারমানে ওদেরকে আমি নষ্ট করতে পারবো না,ওরা জীবিত থাকবে। ” হায়াতের কথায় কেঁপে ওঠে মিসেস আফসানা। হায়াতের মতো মেয়ের মুখে এসব কথা শুনবে তা কল্পনাও করতে পারেন নি তিনি। —“ ওয়েট ওয়েট ! তোমার ফোনটা আমাকে দাও, এসব বেয়াদবি কথা আদিবকে জানাতে হবে তো। ” আদিবের নাম শুনতেই হায়াত একটু ভয় পেয়ে গেলো। চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস নিতে লাগলো। —“ না না আব্ আমি বাচ্চার ক্ষতি করবো না আন্টি, আপনি আদিকে বলবেন না ! ” মিসেস আফসানা হতবাক হয়ে তারিয়ে রইলো হায়াতের দিকে, —“ শুনো হায়াত, তোমার এইসময় অনেক অস্বস্তি হয় তা জানি, তবে এমন কথা আর মুখেও আনবে না কেমন। নেক্ট টাইম আমি যেনো আর এসব না শুনি। ভুলে যেও না তুমি ওদের মা। আমি আসি কেমন সময় কম চেম্বারে যেতে হবে। ” ❝ আমি ওদের মা, হ্যা সেই তো ওরা আমার গর্ভের ক'লঙ্ক,আমি আদির অযোগ্য ❞ ''''''''''' হায়াত অঝোরে কান্না করছে আজ সাতদিন হলো, আদিব কি করবে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না,কাছে গেলেই বলে চোখের সামনে থেকে সরুন । এই সময় ওকে বেশি জোড়াজুড়িও করা যাবে না,,সাত মাসের প্রেগন্যান্ট অবস্থায়ও ফ্লোরে বসে পাগলের মতো কান্না করছে পেট ধরে। আদিব অফিস থেকে কেবল আসলো, প্রতিদিনই বাড়িতে আসলেই হায়াতকে এভাবে কান্না করতে দেখে। বাড়ির সবাইকে জানালে তারা বলে এটা নাকি মুড সুইং, কান্না আসলে নাকি কান্না করতে দিতে হয়, এর জন্য আদিবও এতোদিন কিছু বলে নি, কিন্তু আজ প্রায় এক ঘন্টারও বেশি হবে, আদিব অফিস থেকে এসে এভাবে দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। আর হায়াত..... আল্লাহ আমি জঘন্য কাজ করেছি, আমাকে মাফ করে দাও এসব আহাজারি করে কান্না করছে। এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ হায়াত জুড়ে জুড়ে ফ্লোরে মাথায় আঘাত করতে লাগলো, আদিব ছোটে এসে হায়াতকে থামালো। হায়াত হাঁপিয়ে গিয়ে আদিবের বুকে মাথা রেখে জুড়ে জুড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে, আদিব হায়াতের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, —“ কোথায় কষ্ট হচ্ছে, কোথায় ব্যথা করছে বলো জান, আমি ঔষধ নিয়ে আসি ? ” হায়াত আবারও কান্না করে দিল, —“আত্নার ব্যথা ঔষধে সারানো যায় না। ” —“আমি জানি না তোমার কি নিয়ে এতো আহাজারি, তবে তুমি আমাকে নিরদ্বিধায় বলতে পারো, আমি তোমার জন্য দুনিয়ার সকল কষ্ট মুছে দিবো, তুমি শুধু একবার বলো। হায়াত আদিবের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো, —“নামাজ পড়ে আমার জন্য একটু দোয়া করবেন। ” আদিবের ভেতরটা কেমন যেনো ছ্যাত করে ওঠলো, কিছু না বলে ছুটে গেলো ওয়াশরুমে, এরপর ওযু করে এসে নামাজ পড়তে বসে পরলো। নামাজ শেষ করে হায়াতের সাড়া শরীরে দোয়া করে ফু দিলো আদিব। হায়াত চুপচাপ আদিবের দিকে তাকিয়ে রইলো। রাত এগারোটা চল্লিশ। আরাবি চিন্তিত মুখে আসিফের দিকে তাকালো, —“ আসিফ আপনার কি মনে হচ্ছে না, হায়াত কিছুদিন ধরে অস্বাভাবিক ব্যাবহার করছে। ” আসিফ ল্যাপটপ সোফার ওপর রেখে কফি হাতে নিল। —“ হ্যা হায়াত একটু চুপচাপ থাকে এখন আগের তুলনায়, তুমি একটু জানার চেষ্টা করবে তো। ” —“ আমাকে বললে তো, আমি কি কম চেষ্টা করেছি নাকি। ” আরাবি আর কোনো কথা বাড়ালো না, হায়াতের চিন্তায় অভাবেই শুয়ে পরলো। না জানি সামনে কি অপেক্ষা করছে,, হায়াতের মতো চঞ্চল স্বভাবের মেয়েটার এমন চুপচাপ হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো না। দেখা যাক সামনে কি আছে.......................... #চলবে