#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২৭
ত্রিশ মিনিটের মাথায় আমার মা-বাবা এসে হাজির হোন।তার মিনিট দশেক পরে আঙ্কেল।আঙ্কেল আসা মাত্রই খালামণি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন।এরইমাঝে আঙ্কেল খাবারদাবারের বন্দোবস্ত করে ফেলেন।তা হলো সব খাবারই রেস্টুরেন্ট থেকে আনবেন মনস্থির করেন।এখন রান্না করতে গেলে বাড়তি ঝামেলা।সময়ের প্রয়োজন।দেখা যাবে রান্না শেষ হতে হতে দশ/এগারোটাও বেজে যাবে।মেহমান ওত সময় বসে থাকবে না।তাই সময়,শ্রমের কথা ভেবে আঙ্কেল তাই করেন।পাত্রপক্ষ দের সাথে খানিক্ষন সৌজন্যতা সাক্ষাৎ সেরেই ছুটে যান বাইরে।খালামণি এবং মা ভেতরের হালকা পাতলা কাজে হাত দেন।আর বাবা মেহমানদের সাথে কথা বলতেছেন।পাঁচ মিনিট বাদে খালামণি আমার রুমে ছুটে এলেন।খালামণির পেছন পেছন একজন অপরিচিত মেয়ে এসে দাঁড়ান।অবশ্যি তাকে চিনতে পারলাম না।খালামণি তার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন,
“পারিসা?এ হলো রিতিকা।হৃদয়ের কাজিন।আর এখন রিতিকা তোমাকে সাজাবে।”
আমি মেয়েটিকে তৎক্ষনাৎ সালাম করে উঠলাম।মেয়েটা ফিক করে হেসে দিলো।ট্রলি হাতে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
“আমাকে সালাম দিতে হবে না ভাবী।হয়তো আমি তোমার সমবয়সী ই হবো।”
আমি মুচকি হেসে মাথা বললাম,
“সালাম ছোটবড় সবাইকে দেওয়া যায়।
“জ্বী।”
খালামণি দায়সারা ভাবে এবার বলে উঠেন,
“রিতিকা তাহলে সাজাও।গেলাম আমি।”
“জ্বী।”
খালামণি চলে গেলো।রিতিকা আমাকে সাজাতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লো।ত্রিশ মিনিটের ভেতর মেয়েটি আমাকে ঝটপট রেডি করে ফেললো।সাজিয়ে আয়নার সামনে নিয়ে দাঁড় করালো।বললো,
“দ্যাখো ত কেমন লাগছে তোমাকে,ভাবী? ”
কাঁপা কাঁপা পাতায় মাথা তুলে আয়নার দিকে তাকাই।গাঁয়ে গাঢ় গোলাপী-খয়েরী মিক্সড ইন্ডিয়ান কাতান শাড়ী,কপালে টিকলি।নাক থেকে কান পর্যন্ত টানা নাকফুল।গলায় সিতা হার।কানে দুল।হাতে চিকন চিকন ডজন করা অর্নামেন্ট চুড়ি।মুখের মেকআপটা ওতটা গর্জিয়া হয়নি।তবে একটা নিঁখুত লুক এসেছে।ঘরোয়া সাঁজটা খারাপ হয়নি।মোটামুটি ভালোই হয়েছে।
“ভাবী?ভাইয়া কিন্তু আজ তোমাকে দেখে একদম ফিদা হয়ে যাবে।জাস্ট সামলে নিও ভাইয়াকে।”
বলে রিতিকা হাসিতে ফেঁটে পড়ে।আমি লজ্জায় নতজানু হয়ে যাই।তা দেখে মেয়েটি আরো হাসে।
“ওহ,ভাবী লজ্জা পেয়ে লাভ নেই।মিথ্যে ত বলিনি।”
“রিতিকা সাজানো শেষ হয়েছে ?”
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কেউ একজন রিতিকাকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলে।রিতিকা সেদিকে ফিরে,
“হ্যাঁ,মা।এইতো হয়ে গেছে।”
“তাহলে দেরী করছিস কেন?জলদি বউমাকে নিয়ে বাইরে আয়।”
মা তৎক্ষনাৎ বসা থেকে উঠে দাঁড়াই।এগিয়ে উনাকে সালাম করি।উনি মিষ্টি হেসে সালামের জবাব নেন।তারপর আমাকে উনার দিকে টেনে আনেন।থুতনিতে আলতো স্পর্শ এঁটে বলেন,
“মাশাআল্লাহ কি মিষ্টি!হৃদয়ের পছন্দ আছে।”
৪২.
বিয়েটা সম্পূ্র্ণভাবে শেষ হয়। আজ থেকে নতুনভাবে আরেকটা জীবনে আলিঙ্গন করেছি।নতুন আরেকজনের অধিকারিণী হয়েছি।প্রথম বিয়েতে বাবার জোরে বিয়ে করলেও পরে নিজেকে সামলে সেই বাসরে অনেকটা প্রস্তুতি নিয়েই বসি।মনে ছিল অনেক চাপা উত্তেজনা।ছিল জল্পনা-কল্পনা।লজ্জায় সারা মুখ লালচে হয়েছিল।কিন্তু অভি ঢোকার পরমুহূর্তে তা একখন্ড কালো মেঘে ঢেকে গেলো।মেয়েরা কত স্বপ্ন নিয়ে বাসরে বসে।সেই স্বপ্নের বাসরে স্বামী যদি নতুন বউয়ের সাথে কোনোরকম কথা না বলা একজন স্ত্রীর জন্যে এটা কতটা বেদনাদায়ক হতে পারে একমাত্র সেই জানে।আজ তা একদমই নেই।মনে ক্ষিণ আশা নিয়েও বসে নি।
নতুন মানুষটিকে নিয়েও মনে তেমন কৌতূহল নেই।প্রথম জীবনটাই প্বেরঙ্গ হয়েছিল,এই জীবনটা কতটা রঙ্গিন হবে তার নিশ্চয়তা দিতে পারবো না।মিনিট ত্রিশেক হবে আমার রুমে এসে বসেছি।শুনলাম হৃদয় আজ আমাদের বাসায় ই থাকবে। তার পরিবার এবং আমার পরিবার তাকে এখানে থাকতে আজ সম্মতি দিয়েছে।তাই সে তাদের বাসায় তার পরিবারের সাথে যাচ্ছে না।তার পরিবার-পরিজন মিনিট চল্লিশেক হবে খাওয়াদাওয়া শেষ করে বিদেয় নিয়েছে।এখন রাত এগোরটা বেজে বিশ মিনিট।হঠাৎ আলতো দরজা খোলার মৃদু শব্দ কানে আসে।আমি হালকা নড়ে উঠে আলতো দরজার দিকে তাকাই।হৃদয় রুমে ঢুকেছে।আমি আবারো নড়ে বসে নিজেকে ধাতস্থতা করার চেষ্টা করি।হৃদয় পাঞ্জাবীর উপরের দুটা বোতাম খুলে আমার সামনে বসতে বসতে বলে,
“প্রচন্ড গরম লাগতেছে।এই শীতেও ঘামতেছি।ভাবা যায় পারিসা?”
আমার ঠোঁট মৃদু কম্পন করে উঠলো।তবে কিছু বলতে পারলাম না।বোধহয় এতক্ষণে নিজেকে বুঝতে না লজ্জাটা এবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো।হৃদয় হয়তো আমার দিকে এরমাঝে তাকালো।কয়েক সেকেন্ডস তাকিয়ে থেকে বললো,
“স্বাভাবিক থাকো পারিসা।এতটা লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।আমি ই তো।তাই না?”
তাও রেসপন্স করলাম না।হৃদয় ছোট্ট একটা শ্বাস ছাড়লো।
“এভাবে মাথা নুইয়ে রাখলে আমি কিন্তু আমার বউকে দেখতে পাবো না।অনেক আশা নিয়ে এসেছি এখানে।”
এবার আর চুপ থাকতে পারলাম না।ছটাং আরেক প্রসঙ্গ টানলাম,
“হুলস্থূল এভাবে কাজটা করা কি ঠিক হলো?সবকিছুর তো একটা প্রিপারেশন লাগে।”
“বিয়ের কথা বলছো?”
“জ্বী।”
বলে এবার ঘোমটা সরিয়ে হৃদয়ের দিকে তাকালাম।হৃদয় ফ্যালফ্যাল চোখে এবার আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।কিন্তু আমার কথার প্রতিউত্তর করলো না।বললাম,
“কথার তো জবাব দেবেন?এভাবে সবাইকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলা উচিত ছিল?আমি কি কোথাও হারিয়ে যাচ্ছি?বিয়েটা পরে করা যেত না?”
হৃদয় তাতেও উত্তর দিল না।আমাকে পিলে চমকে দিয়ে বলে উঠলো,
“অবশেষে বউটাকে আমার দেখলাম।বউটা আমার মাশাআল্লাহ! এতে কিউট আমার বউ।আগে তো কখনো ভালোভাবে খেয়াল করিনি।শুধুতো ভেবে এসেছি মায়াবতী।এখন মায়াবতী থেকেও রূপবতী! ”
সঙ্গে সঙ্গে আমার ভ্রু যুগল কুঁচকে এলো।এই ছেলেটা এতক্ষণ আমার কথার দিকে মনোযোগ দেয়নি?আমার মুখের দিকে মনোযোগ দিয়েছে?এ তো ভেরী ডেয়ারি?
“আপনি তো দেখছি আস্তা একজন নির্লজ্জ!মেয়ে মানুষের দিকে কেউ এভাবে তাকায়।”
আমার কথা শুনামাত্র হৃদয় এবার ঠোঁট ছড়িয়ে হেসে দেয়।আওয়াজ করে হেসে দেয়।এতদিন মৃদু হাসতো।আজকের হাসিটা তার বিপরীত।হাসিতে ফুঁটে উঠছে সে খুবই খুশি!আমি থমকে যাওয়ার মতন তাকিয়ে থাকলাম।সে হাসি থামিয়ে এবার স্বাভাবিকে ফেরে।এবার শান্ত এবং সুদৃঢ় স্বরে বলে,
“তোমাকে এতটাই ভালোবেসেছি যে তোমার অনুরোধ পাওয়া মাত্রই আর একটা সেকেন্ড তোমাকে দূরে রাখতে পারিনি।অনেক ভালোবাসি বউ।অনেক ভালোবাসি।”
আমি চোখের দৃষ্টি এবার কিছুটা নত করলাম।নতুন করলাম বলতে লজ্জা পেলাম।কি নির্লজ্জের মতন ছেলেটা কথা বলতেছে!ভালোবাসি কথাটা বলতেও বাঁধিতেছে না মুখে একটুও।
“বউ?”
“বলেন।”
হৃদয় আমার ডান হাতটা চেপে ধরলো।মুহূর্তে আমার মেরুদণ্ড বরাবর একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল।বুকের ভেতর ধুকপুক করে উঠলো।সারা শরীর মৃদু কম্পিত হলো।হৃদয় আরেকটু কাছে এগিয়ে এলো।আমি চোখজোড়া বন্ধ করে ফেললাম।জোরে শ্বাস ছাড়লো সে।ওর তপ্ত শ্বাসেরও আমার হিম সারা মুখটা মুহূর্তে উষ্ণতায় ভরে গেল।ঘোরের ভেতর বললো,
“ভালোবাসো আমাকে?”
আমি কাঁপা কাঁপা চোখের পাতা মেলে তাকালাম তার দিকে।তবে বেশিক্ষণ তাকাতে পারলাম না।দৃষ্টি নিচু হয়ে এলো।।হৃদয় আমার আরো কাছে আসতে থাকলো এবার।আরো কাছে।সে যখন আমার একদম কাছে,মানে ওরমাঝে যখন আমার এক বিন্দু পরিমাণও দূরত্ব নেই তখন আমার সৎবিৎ ফিরে আসে।আমি ওমনি তাকে এক ঝটকায় তাকে সরিয়ে দিয়ে নিজে সরে যেতে উদ্ভুত হলে সে পেছন থেকে আমাকে ধরে ফেলে।আমি আরো ছোটাছুটি করতে থাকি।ও মুহূর্তে আমার কোমর জড়িয়ে নেয়।আমি স্থির হয়ে যাই। চোখের দিকে তাকাই।ঘোরমাখা গলায় বলি,
“এসব ঠিক না।”
সে কিছু বললো না।ঠোঁটজোড়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো।তাকিয়ে থাকার মাঝে গভীর চুম্বন এঁকে দিল।সারা শরীরে আমার বিদ্যুৎ খেলে গেলো।টাল হারিয়ে দুই হাতে খাঁমচে ধরি মানুষটির পান্জাবীর কলার।
চলবে……